কোরাণ যখন একটা, বিশ্বব্যাপী ইসলামও একই রকম হবে এবং সকল মুসলমান একই ইসলামী আইনের পক্ষে কথা বলবে,-এরকমই হওয়ার কথা। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ইসলামিক চিন্তাবিদ বা ওলামারা প্রায়ই ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে নতুন নতুন ব্যখ্যা দিয়ে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছেন এবং মুসলমানদের মধ্যে নতুন নতুন দল তৈরীতে ভূমিকা রাখছেন। দেড় হাজার বছরের পুরাতন বর্বর, সাম্প্রদায়িক ও অবৈজ্ঞানিক এই ধর্মটিকে ওলামারা আধুনিক ও গ্রহনযোগ্য করার নামে বরং ইসলামকে আরো বিতর্কিত এবং বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য নতুন নতুন অশান্তির কারন তৈরী করছেন। পাকিস্তান সহ উপমহাদেশে এমনকি বিশ্বের বেশীর ভাগ মুসলমানদের শিক্ষার দূরাবস্থার সুযোগ নিয়ে এসব তথাকথিত ওলামারা বা ধর্মব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে এবং সুবিধা মতো ব্যখ্যা দিয়ে মুসলমানদের ইসলামের ঘোল খাওয়াচ্ছেন, ইসলামকে আরো বেশী হাস্যকর ধর্মে পরিণত করছেন।
ইসলামী শরিয়া আইনের কারনে অন্ধকার নরকে পরিণত হওয়া দেশ পাকিস্তান এখন বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠন এবং যে কোনো মানবতাবাদী মানুষের জন্য দূশ্চিন্তার এক বিরাট কারন। দেশটিতে এখনো প্রায়ই ব্যভিচারের অভিযোগে পাথর মেরে মধ্যযুগীও ইসলামিক উপায়ে হত্যা করা হচ্ছে নিরীহ নারীদেরকে। উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতিতে গতকাল (৫ই মে ২০১৪) পাকিস্তানের ওলামা পরিষদ (পিইউসি) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছে- ‘সম্মান’ রক্ষায় নারী বা মেয়েদের হত্যা করা অনৈসলামিক। তারা আরো বলছে,-“অবিবাহিত মেয়েদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হলেও এবং কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য দিলেও তাদের হত্যা করা যাবে না।”- যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। পাকিস্তানের ওলামা পরিষদ (পিইউসি) একটি মিথ্যাবাদী, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি ও ব্যবসা করা সংগঠন। এরা মিথ্যা কথা বলে এবং ভুল ব্যখ্যা দিয়ে ইসলামকে বিকৃত করে নিজেরা রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে।
আমি এ বিষয়ে কোরাণ হাদিস আর শরিয়া আইন কি বলে,-তা আলোকপাত করছি।
ব্যভিচার কি এবং এ ব্যাপারে ইসলামী বিধান:
ব্যভিচার বা পরকীয়া হলো বিয়ে বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক।
যে কোন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষের পক্ষেই ব্যভিচার ও অবিবাহিত প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে যৌন সম্পর্কের কারনে শাস্তির বিধানকে মেনে নেয়া অসম্ভব। পাশ্চাত্যে প্রাপ্ত বয়স্ক অবিবাহিত প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে যৌন সম্পর্ককে আদৌ কোনো অপরাধ হিসেবে দেখা হয় না, বরং তা একেবারেই স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত ব্যাপার বলে দেখা হয়, এবং যৌনতা মানুষের মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু ইসলামে তা এখনো ভয়াবহ অপারাধ বলে গণ্য হয়।
কোরাণে ব্যভিচারকে বর্জন করার সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে।
”আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।”- (সুরা বনি ইসরাইল ৩২)
”হে নবী, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু।”- (সূরা আল-মুম্তাহিনা ১২)
ব্যভিচারিণীদের শাস্তি হিসেবে বলা আছে আজীবন ঘরে বন্দী রাখতে অথবা আল্লাহ অন্য কোন পথ নির্দেশ না করা পর্যন্ত।- সুরা নিসা, আয়াত ১৫।
সরা নূর এ আছে ব্যভিচারী নারী পুরুষকে একশ’ করে চাবুক মারার নির্দেশ।
”ব্যভিচার বা বিবাহ-বহির্ভুত যৌনকর্মের দোষে দোষীদের প্রত্যেককে এক শত বার কষাঘাত কর, তাদের প্রতি আল্লাহর শাস্তি দানের ব্যাপারে তোমাদের হৃদয়ে যেন মায়া-মমতা না জাগে, যদি তোমরা আল্লাহর ও শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস কর এবং বিশ্বাসীদের তাদেরকে শায়েস্তাকরণ দেখতে দাও। -(সুরা নূর, আয়াত-২)।
অথচ শারিয়া আইনে আছে বিবাহিত বা বিবাহিতা অপরাধীর শাস্তি জনগণের সামনে পাথরের আঘাতে মৃতুদণ্ড, যাকে রজম বলা হয়। আর যার বিয়ে হয়নি তাকে একশ’ চাবুক মারার নির্দেশ।
(সূত্র: হানাফি আইন হেদায়া পৃষ্ঠা ১৭৮, বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড, ধারা ১২৯, পাকিস্তানের
হুদুদ আইন ৭, ১৯৭৯, অর্ডিন্যান্স ২০-১৯৮০ দ্বারা পরিবর্তিত, আইন নম্বর ৫ (২) এর “অ” ইত্যাদি)।
অর্থাৎ এ আইন কোরাণকে লঙ্ঘন করেছে। অনেকে এ আইনের সমর্থনে হাদিস পেশ করেন (মিশকাত ২৬ অধ্যায়ের ১ম পরিচ্ছেদ)
আর সহি বোখারী থেকে (হাফেজ মুহাম্মদ আবদুল জলিল সম্পাদিত বাংলায় বোখারি শরীফের হাদিস নম্বর ১২৩৪ থেকে ১২৪৯ পর্যন্ত মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন খানের অনুবাদ ও মাওলানা আজিজুল হকের অনুবাদ ২৬৮ নম্বর হাদিস)।
এসব হাদিসে বলা আছে, নবীজী বিবাহিত বা বিবাহিতাদের মৃতুদণ্ড, আর অবিবাহিত বা অবিবাহিতাদের একশ’ চাবুক ও এক বছরের নির্বাসন দিয়েছিলেন।
তাহলে আমরা দেখছি, কোরাণের আয়াতের সঙ্গে হাদিসগুলো মিলছে না। কেন এমন হচ্ছে? তাহলে নবী মুহম্মদ কি সুরা নূর নাজিল হবার আগেই পরকীয়ায় বিবাহিত বা বিবাহিতাদের মৃতুদণ্ড দিয়েছিলেন? এ প্রশ্নের জবাব আছে সহি বোখারী ১২৪২ নম্বর হাদিসে, সাহাবী বলেছেন,-তিনি তা জানেন না। আমরা ধরে নিতে পারি যে নবীজী রজম করে থাকলে এসব আয়াত নাজিল হবার আগেই করেছিলেন, পরে নয়। কেননা পরে করলে তা কোরাণের বিপক্ষে যেত, সেটা সম্ভব নয়।
এবার একটা বিখ্যাত হাদিস দেখা যাক। সহি বোখারি হাদিস ১২৩৭, ১২৩৮, ১২৩৯, এবং মিশকাত ২৬ এর ১ (“মুসলিম জুরিসপ্রুডেন্স অ্যাণ্ড দ্যা কোরাণিক ল’ অফ ক্রাইমস” থেকে)
এ হাদিসে উল্লেখ আছে:
১. মায়াজ নামের সাহাবী নবীজীকে বলল তাকে পবিত্র করতে।
২. নবীজী তাকে হাঁকিয়ে দিলেন এই বলে, দূর হও, অনুতাপ কর ও ক্ষমা চাও।
৩. মায়াজ ফিরে গিয়ে আবার ফিরে এসে একই কথা বলল। নবীজী একই কথা বললেন।
৪. তিনবার এটা ঘটার পর নবীজী জিজ্ঞেস করলেন ব্যাপার কি। মায়াজ বলল সে ব্যভিচার করেছে।
৫. তারপর নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, মায়াজ কি পাগল? নেশা করেছে? লোকেরা বলল, না।
৬. নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, মায়াজ কি বিবাহিত? লোকেরা বলল, হ্যাঁ।
৭. তখন নবীজী তাকে পাথর মেরে হত্যা করতে নির্দেশ দিলেন।
ব্যভিচারীদেরকে পাথর ছুড়ে হত্যার ঐতিহ্যের সূচনা ইসলামের জন্মলগ্ন থেকেই এবং আজও বেশকিছু মুসলিম দেশে এর প্রচলন আছে। যদিও অনেক মুসলিম দেশ পাশ্চাত্যের প্রভাবে এ বর্বর শাস্তির প্রথাটি পরিহার করেছে। বর্তমান বিশ্বে ইরান, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অংশ বিশেষ এবং ইসলামপন্থীদের নিয়ন্ত্রিত সোমালিয়ার অঞ্চল বিশেষে ব্যভিচারের দায়ে পাথর ছুড়ে হত্যা আইনি শাস্তি হিসেবে চালু আছে। ২০০৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে ব্যভিচারীদেরকে পাথর ছুড়ে হত্যার আইন চালু করা হয়। শরিয়া শাসিত দেশ, যেমন ইরান ও সৌদি আরবে পাথর ছুড়ে হত্যা আইনি বিধান হওয়ায় দোষীদেরকে নিয়মিত পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু বহির্বিশ্বে তা সামান্যই প্রচার পায়। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যভিচার ও বিবাহ-বহির্ভূত যৌনাচারের দায়ে দোষীদেরকে পাথর ছুড়ে হত্যার খবর পাওয়া যায় সুদান, সিরিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ থেকে, যা অনেক সময় আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে স্থানীয় আদালতে ঈমামদের নির্দেশে কার্যকর করা হয়।
আমরা জানি ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে কোরাণ ও হাদিস; এবং ইসলামী আইন বা শরিয়া রাষ্ট্রগুলো পরিচালিত হয় কোরাণ ও হাদিস এর উপর নির্ভর করে প্রনয়ণ করা শরিয়া আইনের মাধ্যমে। যা প্রতিটি শরিয়া রাষ্ট্র যথাযথভাবে পালন করতে বাধ্য। এই মধ্যযুগীয় বর্বর ও অমানবিক শরিয়া আইনটিরও কিছু সুনির্দিষ্ট ধারা আছে এবং সেই ধারাগুলো কোরাণ ও হাদিসের আলোকেই তৈরী করা। কিন্তু এই শরিয়া আইন এর ধারাগুলোকে নিয়ে প্রায়ই মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরী হতে দেখা যায়। যার কারন হচ্ছে, কখনো কখানো কোরাণ এবং হাদিসের মধ্যে একই বিষয় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নির্দেশনা পরিলক্ষিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে ব্যভিচারীদেরকে পাথর ছুড়ে হত্যার চিরাচরিত বিধান সত্ত্বেও আজকের প্রায়শ পাশ্চাত্যে বসবাসকারী অনেক শিক্ষিত মুসলিম দাবী করেন যে, ব্যভিচারের জন্য পাথর ছুড়ে হত্যার বিধান ইসলামের পরিপন্থী। কেননা পাথর ছুড়ে হত্যা সম্পর্কে কোরাণে কিছুই বলা হয় নি। এটা সত্য যে, ব্যভিচারের শাস্তির ব্যাপারে পাথর ছুড়ে হত্যা সম্পর্কে কোরাণে কোন আয়াত নেই। যদিও পাথর ছুড়ে হত্যা, পেছন দিক থেকে হাত পা কেটে ফেলা, ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যার মত বর্বর শাস্তি কোরাণে আল্লাহর চোখে বৈধ শাস্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে (কোরাণ ৫/৩৩,৩৮)। অথচ অনেক আধুনিক ও শিক্ষিত মুসলিমরা মুহাম্মদের কথা, তার জীবনী তথা হাদিসকে কোরাণের মত সমান গুরুত্ব সহকারে মান্য করতে নারাজ। তারা আল্লাহর নির্দেশ অগ্রাহ্য করে দাবী করেন যে, একমাত্র কোরাণই হচ্ছে ইসলামের পরিপূর্ণ ভিত্তি, হাদিস মানার ব্যাপার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আর এভাবেই মডারেট মুসলমানরা ব্যভিচারের দোষে নবী মুহম্মদের জীবনে অনেককে পাথর ছুড়ে হত্যার কাহিনী এবং তা হাদিসে বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও ইসলামে ব্যভিচারীদেরকে পাথর ছুড়ে হত্যার বিধানকে অস্বীকার করে। তাদের মতে ইসলাম মানেই শুধু কোরাণ, হাদিস হচ্ছে মিথ্যা এবং ইসলামে এর কোন গুরুত্বই নেই।
আমি বলতে চাচ্ছি,- শুধু শরিয়া আইনই নয়, পুরা ইসলামই একটি মধ্যযুগীও, বর্বর ও অমানবিক ধর্ম এবং জীবন-ব্যবস্থা। শরিয়া আইনের ধারায় উল্লেখিত এবং গত দেড় হাজার বছর ধরে চলে আশা মৃত্যুদন্ডের বিধান বা প্রথাকে ঘষে মেজে ঠিক করার চেষ্টা করে সভ্য পৃথিবীতে ইসলামকে গ্রহনযোগ্য করা যাবে না। ধর্মকে আধুনিক করা যায় না, একে বর্জন বা প্রয়োজনে নিষিদ্ধ করতে হবে।
(হাসান মাহমুদ এর শরিয়া আইন বিষয়ক গ্রন্থ ”শরিয়া কি বলে আমরা কি করি”, এবং http://wikiislam.net/wiki/Honor_Killing_Index থেকে তথ্যগুলো নেয়া হয়েছে)
ইসলাম #ব্যভিচার তথা জিনাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করলেও ইসলামি ব্যভিচার এবং ব্যভিচার নিয়ে বর্তমান কালের দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় ।
Adultery বলতে বোঝায়,
Voluntary sexual intercourse between a married person and a partner other than the lawful spouse. লিঙ্ক
অর্থাৎ বিবাহিত কোন পুরুষ তার আইনগত বিয়ে করা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক রাখলেই তাকে ব্যভিচারী বলা হবে । কিন্তু কোরআনের আয়াত ৪:২৪, ২৩:৫-৭ অনুসারে একজন মুসলিম পুরুষ তার মোহর প্রদান করা স্ত্রীগণ ও অধিকৃত দাসীর সাথে যৌন সম্পর্ক রাখতে পারবে । এক্ষেত্রে সেই অধিকৃত দাসী হতে পারে যুদ্ধে আহরিত অথবা ক্রয়কৃত । মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইসলামের দৃষ্টিতে এধরনের যৌনতা বৈধ, এবং তা কোনভাবেই ব্যভিচার নয় ।
ইবনে কাথির সুরা নিসার আয়াত ২৪ এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে,
তাফসীর আল-জালালাইন থেকেও অনুরূপ বক্তব্য পাই,
সুরা আল-মুমিনুন আয়াত ৫-৭ এর ব্যাপারে ইবনে কাথির থেকে প্রাপ্ত তাফসীর,
আল-জালালাইন থেকে প্রাপ্ত তাফসীর,
দেখা যাচ্ছে, একজন মুসলিম পুরুষ, হোক সে অবিবাহিত কিংবা এক বা একাধিক নারীর স্বামী, যৌন সম্ভোগের উদ্দেশ্যে নিজ ইচ্ছাধীন যে কয়জন খুশী দাসী রাখতে পারেন । আর এক্ষেত্রে তাকে উক্ত ক্রীতদাসীদের সাথে কোনরূপ চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন নেই । একজন দাসীর কোন অধিকার নেই প্রভুর আদেশ অস্বীকার করার, কিংবা তার যৌন-ডাক উপেক্ষা করার, যতক্ষণ না সে গুরুতর কোন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে । ইসলাম শুধুমাত্র তখনই কাউকে ব্যভিচারী গণ্য করবে যখন সে পুরুষ বিবাহিত হয়েও কোন স্বাধীন মুসলিম নারীর (বিবাহিত কি অবিবাহিত) সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয় । নিজ বাড়ীতে অধিকৃত দাসীদের সাথে যৌনতা ইসলামের দৃষ্টিতে খারাপ নয়, বরং তা অনুমোদিত, আর সেটা কোন ভাবেই ব্যভিচারী কিংবা জিনা বলে গণ্য হবে না । মনে রাখা প্রয়োজন যে কোন স্ত্রীরও অধিকার নেই তার স্বামীকে এই নিয়ে প্রশ্ন তোলার ।
দাসী সঙ্গম যে ব্যভিচার নয় তা জানতে পারবেন ইসলামি পণ্ডিতদের দেওয়া ফতোয়া 20802 তে,
Intercourse with a slave woman is not regarded as zina (adultery)
ভালো লাগলো, কোরান ও হাদিসের মাঝেও যে মতভেদ থাকতে পারে, তা জানতামনা। ধন্যবাদ লুক্স ভাই।
ধর্মের আফিমে চরমভাবে আসক্ত পাকিস্থানীদের সম্মান রক্ষার্থে ব্যভিচারী নারীদের হত্যা প্রসঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে PEW-এর একটা জরীপের ফলাফল দেখেছিলাম। PEW-এর ঐ জরীপের মতে প্রতি দশ জন পাকিস্থানীর মধ্যে চার জন(40%) মনেকরে সম্মান রক্ষার্থে ব্যভিচারী নারীদের হত্যা সর্বক্ষেত্রেই সমর্থনযোগ্য; আবার প্রতি দশ জন পাকিস্থানীর মধ্যে তিন জন(30%) মনেকরে ব্যভিচারী নারীদের ক্ষেত্রে অনার কিলিং “প্রায়” ক্ষেত্রেই সমর্থনযোগ্য এবং প্রতি দশ জন পাকিস্থানীর মধ্যে এক জন(9%) মনেকরে সম্মান রক্ষার্থে ব্যভিচারী নারীদের হত্যা “কিছুকিছু” ক্ষেত্রে সমর্থনযোগ্য। :-O
পাকিস্থানে যেহেতু সম্মান রক্ষার্থে নারীদের হত্যার এত বিশাল জনসমর্থন আছে আর ধর্মের সাহায্যে ধার্মিকদের ঐসব হত্যাকান্ড সমর্থনযোগ্য প্রমানের সুযোগও আছে, সেহেতু পাকিস্থানের ওলামা পরিষদ সম্মান রক্ষার্থে ব্যভিচারী নারীদের হত্যাকে অনৈসলামিক ঘোষণা করলেই কি ঐসব হত্যাকান্ড বন্ধ হয়ে যাবে? 😕
“অনার কিলিং” বন্ধ করতে হলে আগে সমাজে ধর্মীয় উন্মাদনা কমাতে হবে, মানুষকে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং সমাজে নারীদের স্বাধীনতা ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
——————————–
PEW-এর জরীপের লিংক: http://www.pewresearch.org/fact-tank/2014/05/30/four-in-ten-pakistanis-say-honor-killing-of-women-can-be-at-least-sometimes-justified/
ধর্ম যে মানুষকে নিষ্ঠুর অমানবিক প্রাণী করে তোলে তার প্রমাণ এই অনার কিলিং।গত বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঘটা একটা ঘটনার কথা মনেপড়ে।ঘটনাটা একটা নিউজ চ্যানেলে দেখেছিলাম।মোবাইল ক্যামারার তোলা।প্রকাশ্য রাস্তায় একটা ছেলে হেটে যাচ্ছে আর তার পেছন থেকে ভিডিও করা।ছেলেটার এক হাতে একটা লম্বা দা আর অন্য হাতে কিছু লম্বা চুল মুঠো করে ধরা,যার নিচে ঝুলছে একটা মেয়ের দেহবিহীন মাথা।
এটা ঘটেছিল সকাল বেলা একটা তিন রাস্তার মোড়ে।মেহতাব উদ্দিন নামের ঐ যুবক যাকে হত্যা করেছিল সে ছিল তার আপন বোন।মেয়েটি পরিবারের অমতে তার স্বামীকে তালাক দেয়।এতে নাকি ঐ পরিবারের সম্মানহানী হয় এবং মেহতাব তার নিজের বোনকে হত্যা করে পরিবারের সম্মান পুনঃউদ্ধার করে!পরে মেহতাবকে যখন পুলিশ ধরে গাড়িতে তুলছিল তখন সে, গাড়ীর পাশে জড়ো হওয়া লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে হাত নাড়ছিল এবং লোকগুলোও হাত নেড়ে তাকে সমর্থন জানাচ্ছিল।
অনার কিলিং বা সম্মান রক্ষার্থে হত্যা হল: কাউকে নিজের পরিবার বা গোত্রের সম্মানহানির দায়ে ঐ পরিবার বা গোত্রের অপর ব্যক্তি কতৃক হত্যা করা, যার মাধ্যমে এই সম্মান হানির উপযুক্ত প্রতিকার হয়েছে বলে মনে করা হয়।
সম্মান রক্ষার্থে হত্যাকান্ডে বিশেষ করে নারী ও সমকামীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত করা হয়। বিভিন্ন কারণে সম্মান রক্ষার্থে হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় যেমন:
পারিবারিকভাবে নির্ধারিত একটি বিবাহ সম্পর্কে জড়াতে অস্বীকার করা, পারিবারিকভাবে অননুমোদিত একটি সম্পর্কে জড়ানো, বিবাহ বর্হিভূত যৌন সম্পর্কে জড়ানো, ধর্ষণের শিকার নারী যারা বিবাহের অনুপযুক্ত বলে গণ্য হয়, সামাজিকভাবে দৃষ্টিকটু পোশাক পরিধান করা, সমকামী সম্পর্কে জড়ানো, … ইত্যাদি!
লেখার টপিকের সাথে বিষয়বস্তুর প্রাসংগিতার অভাব রয়েছে।
অনার কিলিং নিয়ে মুক্তমনায় আগে ভাল ভাল লেখা এসেছে। আমার একটা পুরনো লেখা দেখলে হয়ত বুঝতে পারবেন কেন প্রাসংগিকতার অভাবের কথা বলছি।
অনার কিলিং টপিক হলেও লেখাটায় ইসলামী আইনের দূর্বলতা, ঈমান্দারগনের সমালোচনার মুখে পড়লে নানান কায়দায় সুবিধেমত ব্যাখ্যা করে পাশ এড়ানো এসব গুরুত্ব পেয়েছে মূল টপিকের বাইরে।
যাহোক, নবীজি বড় বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি আফিম ভালই ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা পৃথিবীতে। আর তার ছড়ানো গাছের ফল থেকে এত বীজ হয়েছে যে তা থেকে আরও আরও গাছ হচ্ছে। কাজেই এর মূলোৎপাটন অসম্ভব।
@গীতাদি, বাজারে পণ্যের কাটতি ভালো না থাকলে কিন্তু কালক্রমে আফিম চাষ বন্ধ হয়ে যাবে এমনিতেই । এখন যেটা দরকার মানুষকে ভালো পণ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে । আর তাহলেই কেবল এ ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব ।
প্রেম ব্যভিচার, ধর্ষণ সুবিচার।
ব্যভিচারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বাইবেলে আছে। তফাত হচ্ছে বর্তমান যুগে শুধু কিছু মুসলিম দেশে দেওয়া হয়
Quote from New American Standard Bible:
Leviticus 20-10
‘If there is a man who commits adultery with another man’s wife, one who commits adultery
with his friend’s wife, the adulterer and the adulteress shall surely be put to death.