ভারতের ২০১৪ এর এই নির্বাচন এবং নির্বাচনে মোদির ল্যান্ড স্লাইড বিজয়, ইতিহাসের একটা টার্নিং পয়েন্ট। প্রশ্ন এটাই-এই ফলাফল কি সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেবে? কারন মোদিকে কোন ভারতীয় মুসলিম ভোট দেয় নি। উনি সম্পূর্ন হিন্দুভোটের “জোটবদ্ধকরন” ফর্মুলাতে জিতলেন। এটা ঠিক সাম্প্রদায়িক মেরুকরন বলবো না-কারন উনি হিন্দুত্বর ভিত্তিতে ভোট চান নি। উন্নয়নের ভিত্তিতেই চেয়েছেন। উনার প্রচারকরা সফল ভাবে এটা প্রচার করতে পেরেছে উনি “বিকাশ পুরুষ”। গুজরাতে উনি উন্নয়ন এনেছেন তাই সারা দেশে উন্নয়ন আনবেন-এই প্রত্যাশাতেই অধিকাংশ হিন্দুরা তাকে ভোট দিয়েছে। যদিও ওদের “বেস” এখনো কট্টর হিন্দুত্বপন্থী স্বেচ্ছাসেবীরা। বিজয়ের খবর আসার সাথে সাথেই রাজনাথ প্রথমেই তাদের সমর্থকদের উদ্দেশে টিভিতে জানালেন কোন ভাবেই বিজয় উল্লাস মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে না যায় বা তাদের ক্ষুণ্ন না করে।
ভারতের ধর্মনিরেপেক্ষ পার্টি বা রাজনীতি বলে কিছু নেই। কংগ্রেস , সপা, সিপিএম এদের ভ্রান্ত ধর্ম নিরেপেক্ষ নীতি একদিন বিজেপিকে মহীরুহ করতই। দুর্নীতি, লাগাম ছারা খাদ্যদ্রব্যের দাম, চাকরির খোঁজ নেই- লোকে বিরক্ত হয়ে মোদির মতন একনায়কের প্রতি আশা ব্যক্ত করত একদিন না একদিন। উত্তর প্রদেশে জাতপাতের রাজনীতি করা পার্টি বহুজন সমাজবাদি সম্পূর্ন উড়ে গেল। কারন লোকে বুঝছে এই ধরনের জাত পাত ধর্মের রাজনীতি করা লোকেরা চোর ছারা কিছু না।
মোদি ধর্মের রাজনীতি করা লোক না ? আর এস এস এর হিন্দুত্ব থেকেই মোদির উত্থান। ২০০২ সালের গুজরাতে দাঙ্গা মোদিকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এর পরপরই মোদি দ্রুত বোঝেন, সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি নেমে যাবার সিঁড়ি। দ্রুত ভোল বদলিয়ে গুজরাতের উন্নয়নে মন দেন এবং যার ফল পাচ্ছেন আজ।
ভারতের রাজনীতিতে সম্পূর্ন অপ্রসাঙ্গিক হয়ে গেল বামেরা। পশ্চিম বঙ্গের ৪২ টা সিটের মধ্যে মোটে ৩ টে পাচ্ছে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত। ভারতে বামশক্তি দরকার। আশা এই যে নতুন বাম শক্তি অরভিন্দ কেজরিওলের আপের হাত ধরে উঠে আসছে যদিও এই নির্বাচনে, তাদের ফল ও আশাব্যাঞ্জক না। কিন্ত এটা পরিস্কার কংগ্রেস এবং বামেদের ভোট আস্তে আস্তে আম আদমি পার্টির হাতে জমা হচ্ছে। এটা হবে আমি বহুদিন থেকেই লিখে আসছিলাম-কারন ভারতীয় বামেরা এখনো সোভিয়েত ইউনিয়ানের গন্ধ নিজেদের গা থেকে নামাতে পারে নি।
কংগ্রেসও ভারতে অপ্রসাঙ্গিক হয়ে গেল। আগামী অতীতে হয়ত দেখব আআপ এবং বিজেপি ভারতের দুই বৃহত্তম শক্তি হিসাবে উঠে আসছে। সাথে সাথে স্থানীয় পার্টিগুলিও থাকবে ফেডারালিজমের জন্যে। এটা হবেই আগামী দুই নির্বাচনে।
মোদি কেমন প্রধানমন্ত্রী হবেন? দেখা যাক। গুজরাতের লোকেরা খুব বেশী অখুশী নয় তাকে নিয়ে। যদি হিন্দুত্বের তাস খেলতে থাকেন, খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাবেন। কারন লোকে তাকে ভোট দিয়েছে অর্থনীতি শুধরাতে। এখানে কি তিনি সফল হবেন? সংঘের চাপ থাকবে তার ওপরে। দেখা যাক। এখুনি কিছু বলা উচিত হবে না। তবে নির্বাচনে উনি হিন্দুত্বের তাস খেলে আসেন নি-এসেছেন অর্থনীতি শুধরাবেন এই আশা দিয়ে।
বাংলাদেশের বি এন পি এর থেকে একটা শিক্ষা নিতে পারে। আলীগের দুর্নীতি ও অনাচারে বাংলাদেশের লোক এত বিরক্ত ছিল, তারা যদি জামাত ছেরে মোদির মতন শুধু দেশের অর্থনীতি , দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন চালাত, আলীগ চলে যেত হিমঘরে।
আশাকরি মোদি বিদেশনীতিতে কোন উগ্রপ্রন্থা নেবেন না। বাংলাদেশের সমস্যাগুলি বুঝবেন। যদিও সে আশা কম। কারন বিদেশনীতিতে হিন্দুত্বের ছাপ থাকবেই। ভুল জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশের ইসলামিক দলগুলিকে অক্সিজেন জোগাতে পারে। আবার এটা ফালতু আশঙ্কাও হতে পারে।
তবে মোদি বাস্তববাদি ক্যামেলিওন । সময় বুঝে বদলাতে জানেন। এটা গুন এবং দোষ। এখন দেখি সামনে কি আছে।
না, তা বি এন পি পারত না। কারণ, তাদের সে নৈতিক জোর নেই। বি এন পি এর দুর্নীতি ও অনাচার কম নয়।
যাহোক, এসব বলে ভারতে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের বিষয়টিকে চাপা দেয়া কষ্ট হবে। শপথ না নিয়েই মোদির বর্ডারের দিকে আঙ্গুল।
মোদিকে ভারতের মুসলিমরা একদমই যে ভোট দেইনি তা ঠিক নয়, মুসলিমদের কিছু ভোট মোদিও পেয়েছে। আর মোদিকে নিয়ে এতো ভয় পাবার আমি কিছু দেখি না। ব্যক্তি মোদি বা সংঘের মোদির কিছুটা খামখেয়ালি থাকলেও, প্রধানমন্ত্রী মোদি বেশ সাবধানী হবেন, বা হতে বাধ্য হবেন।
কেননা, এ কথা উনি ভালো করেই জানেন, যে জনতা তাকে ভোটের জোয়াড়ে ভাসিয়েছে, তারাই তাকে ভাটায় টেনে নামাতে দেরি করবে না।
আধুনিক ভারতিয়রা আমার মনে হয় না ধর্ম নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায়। বিজেপির বিপুল বিজয় আসলে আমাদের দক্ষিণ এশিয় সংস্কৃতির কথাই মনে করিয়ে দেয়। সরকারি দল খারাপ! তাছাড়া গণতন্ত্রে নতুনত্ব আনা এবং মোদির চমকপ্রদ প্রচার প্রচারণা বেশ কাজে লেগেছে বলা চলে।
আরেকটা কথা, কংগ্রেসের ভড়াডুবি হয়েছে বলে বলা যাবে না, কংগ্রেস শেষ হয়ে গেছে। পূর্বেও কংগ্রেসের এমন অবস্থা এসেছিল এবং তা তারা উড়িয়ে দিয়ে সামনে এগিয়েও এসেছে।
@আদম অনুপম, ” মোদীকে ভয় পাওয়ার কিছু দেখিনা ” এই রকম কান্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য কেন ? ব্যাপারটা বুঝতে হবে মোদীর কথা কতটা চলবে ? সঙ্ঘ পরিবার আর. এস.এস. যা বলবে মোদী তা করতে বাধ্য,
@মহম্মদ মহসীন, কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য বলছেন আপনি কাকে বুঝলাম না। আপনি নিয়মিত কলাম পড়লে, বিবিসি শুনলে এ কথা বলতেন না। বুদ্ধিজীবীরা ব্যাপারটা নিয়ে কী ভাবছে সেটা বুঝতেন।
@আদম অনুপম,
” মোদীকে ভয় পাওয়ার কিছু দেখিনা ” এই মন্তব্যে পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলে ছিলাম , এটা না বোঝার মতো কিছু কি? বুদ্ধিজীবীদের কথা বলছেন , তাঁদেরই এক দল যাঁরা কিনা সংখ্যায় লঘু তাঁরাই মোদীর তথা R.S.S. ও শিবসেনা উত্থানে উদবিগ্ন।
আমার ধারনা, মোদী তার হিন্দুত্ত্ববাদীতা মগজ থেকে সরিয়ে পেন্টালুনের পকেটে আপাততঃ পুড়ে রাখতে বাধ্য হবেন। কারন বিশ্বঅর্থনীতি। মোদীর কাঁধে এখন গোটা ভারত, গুজরাট নয়। আর ভারতকে দক্ষিন এশিয়ায় সফল ভাবে টিকে থাকতে হলে চীন-জাপান সহ পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতিকে মোকাবেলা করতে হবে। আর সেই ক্ষেত্রে তাঁর যেমন আঞ্চলিক সহযোগীতা দরকার হবে ঠিক তেমনি দরকার হবে বিশ্বারাজনীতিতে গ্রহনযোগ্যতা। গোটা বিশ্বে তাঁর রাজনৈতিক বোধের নেতিবাচক ধারনা প্রচলিত আছে। মোদী হয় ভারতকে উঠাবেন নতুবা ডুবাবেন। আশাকরি মোদী তা বুঝেন। আর সেই কারনেই এমন কোন ঘটনা মোদী প্রতিহত করবেন, যেটা তাঁর ভাবমূর্তিকে আঘাত করবে; অথচ ভারতের অর্থনীতির চাকার গতি বাড়আতে হবে। এখন আমাদের দেখার পালা যে মোদী কতটা তথাকথিত ‘রাম রাজ্য’ প্রতিষ্ঠায় সফল হন!
মোদীর উত্থানে বাংলাদেশের আতি ডান জাতীয়তাবাদীরা উল্লসিত হলেও আমার ধারনা অচীরেই এই বেলুনটি চুপসে যাবে। পররাষ্ট্রনীতিতে মোদীর ভারতের বাংলাদেশের দিকে ইতিবাচক ভাবে এগিয়ে আশার সম্ভাবনাই বেশী। এর কারন পাকিস্তানের সাথে দূরত্ত্ব সম্ভবতঃ বাড়বে। মনোযোগ দিতে হবে চীনের ব্যাপারে। বাংলাদেশ সীমান্তের সেভেন সিস্টারকে বাঁচিযে রাখতে হলে বাংলাদেশ কেও ভাইয়ের মর্যাদা দিতে হবে মোদীকে। এর পরে আসবে পূর্ব এশিয়া সহ পশ্চিমে বানিজ্য সম্প্রসারনের প্রশ্ন। সাথে সাথে তাকে ভাবতে হবে বিশ্বরাজনৈতিক প্রক্ষাপট এবং তার নিরীখে রচিত বিদেশনীতিতে পথচলা।
মোদী আর বাংলাদেশের মৌলবাদীরা এক কথা না, বিজেপি আর জামাত বা বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলো এক কথা না- এটা বলা এখন বাংলাদেশে ভারতের ইলেকশানের পর খুবই রিস্ক “ভাদা” ট্যাগ খেতে হবে। তবে মোদিকে ভারতবাসী শুধু যে অথনৈতিক কারনে ভোট দিয়েছে, ধর্মীয় কারণে নয় তা নয়। সেখানেও বাংলাদেশের মত ধর্মান্ধ মানুষ তো কম নয়। মোদী কি ভারতের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে সরিয়ে ফেলতে পারবে? মনুর আইন বাস্তবায়ন করতে পারবে? সে এই ধরনের উক্তিই করতে সাহস করবে না। সে বার বার বলেছে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা। বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলো আল্লার আইন বাস্তবায়ন করার কথা ছাড়া একটাও বাস্তব জাগতিক কথা বলে কি?
@সুষুপ্ত পাঠক,
এই অঞ্চলের মানুষের মননে ধর্মের ভূমিকা প্রবল, এর থেকে সহজ পরিত্রান নেই। রাজনীতিতে এর অপব্যাবহার হবেই। ডানপন্থী মতবাদে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিশ্বাসী, তারা ধর্মভিত্তিক দলগুলির প্রতি পক্ষপাত দেখানোর ছূতা যেভাবেই হোক খোঁজে। ধর্ম ধর্ম করা দল একই অপরাধ করলে তারা কিছুটা হলেও ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখে, ধর্মনিরপেক্ষ দলের ক্ষেত্রে সেই টলারেন্স দেখায় না। এই সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েই ধর্মনিরপেক্ষ ধারার দলগুলির আত্মশুদ্ধি করা প্রয়োযন।
বাংলাদেশের বি এন পি এর থেকে একটা শিক্ষা নিতে পারে। আলীগের দুর্নীতি ও অনাচারে বাংলাদেশের লোক এত বিরক্ত ছিল, তারা যদি জামাত ছেরে মোদির মতন শুধু দেশের অর্থনীতি , দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন চালাত, আলীগ চলে যেত হিমঘরে।
শুধু বিএনপি নয় সবদেশের সরকার প্রারথি এবং বিরোধী পার্টি কখনই সংখ্যালঘু দের কে সুবিধা দিতে পারেনি। আমরা সকলেই চাই সাম্প্রাদায়িকা কে ডাস্টবিনে ফেলে দেশ কে ভাল ভাবে সামনে নিয়ে যাবে এবং আমাদের সাথে কূটনৈতিক সমস্যা গুলোর সন্তোষ জনক সমাধান দিবেন!!!
আমরা আর দেখতে চাই না ১৯৯২ কিংবা ২০০২ এর মোদীকে। চাইনা ভারতের মুসল্মান নিধনের আর কোন আইন টাডা অথবা পোটা এর মত কোন কঠোর আইন।
বাংলাদেশের মতই ভারতেও মৌলবাদী গোষ্ঠীর ক্ষমতায় যাবার পথ পাকা করার জন্য তথাকথিত সেক্যুলার দাবীদার দলগুলির ভূমিকাও কম নয়। সেক্যুলারিজম বলে আধুনিকতা দেখানোর নামে ঢালাও লুটপাট দূর্নীতি করে যাবে আর লোকে কেবল সেক্যুলার বলে ভালবেসে ভোট দেবে এমন আশা করা হাস্যকর। বাংলাদেশে ২০০১ সালের নির্বাচনে একই ঘটনাই ঘটেছিল। লোকে কে সেক্যুলার কে ধার্মিক এমনকি কে রাজাকার তাও ভাবেনি। শাসক পাল্টাতে হবে সেটাই বড় করে ভেবেছে।
ইরান বিপ্লব থেকে আরব বসন্তগুলিও মোটামুটি একই চিত্র দেখায়। সেক্যুলার শাসকদের অত্যাচার অনাচারে লোকে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামে; এমনিতেই সংস্কৃতির মধ্যে ধর্মের ভূমিকা প্রবল থাকায় তারা ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থাই সব সমাধান এই ধারনায় আবারো ফিরে যেতে যায়। যদিও সেটা যে অবাস্তব আশাবাদ সেটা সহজে বোঝে না, সেটা অন্য প্রসংগ।
এর ওপর তথাকথিত সেক্যুলার দলগুলিরও ধর্মের চাদর গায়ে জড়ানোর প্রানান্তকর চেষ্টা পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে, মৌলবাদ আরো ভালভাবে প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। ভারতেও কংগ্রেস এই পথে হেঁটেছে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগও একই পথে যাচ্ছে। নিজেদের যোগ্যতম দল প্রমানের চেষ্টার যায়গা এই জাতীয় জোকারি ক্ষতি ছাড়া কোন কাজে দেবে না। এর জন্য অবশ্য আমি আম জনতার ধর্মানুভূতি রোগকেই দায়ী করব। রাজনৈতিক দল লোকে যা পছন্দ করে তাইই করবে। নাংগা হয়ে রাস্তায় ডিগবাজী দেওয়া লোকে দেখতে চাইলে ভোটের রাজনীতির খাতিরে তারাও সেটাই করবে। উল্টোটা নয়।
বিজেপি শাসন ভারত অতীতেও দেখেছে। এবার তারা আরো অভিজ্ঞ, আশা করি বাস্তব সম্মত হয়েছে। এ কারনেই আমার নিজের আশাবাদ মুসলমান দল পীড়নের যেমন আশংকা করা হচ্ছে তেমন কিছু হবে না। বাংলাদেশের ডানপন্থী এবং মৌলবাদী দলগুলিও চাতক পাখীর মত অপেক্ষায় আছে, বিজেপির উত্থানে তারা বড়ই উল্লসিত। হিন্দুত্ববাদীর হাতে ভারতে মুসলমান নির্যাতন এই জাতীয় খবরের আশায় তারা এখন যাবতীয় সব মিডিয়ায় শ্যেন দৃষ্টি রাখবে। ব্লগ মোল্লাদেরও এখন পোয়াবারো।
দেখা যাক বিজেপি কেমন করে, বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশ নীতি কেমন হয় সেটাই আমাদের মূল চিন্তা।
@আদিল ভাই,
বাংলাদেশে প্রসঙ্গে ভারতের মানে মোদীর বিদেশ নীতি কি ধুপধাপ পরিবর্তন হতে পারে? :-s
মনমোহন সিং এর মত মোদীও নিশ্চয়ই চাইবে না যে, বাংলাদেশ পাকিস্থানের মত জঙ্গিবাদের আখড়ায় পরিনত হয়ে তাদের জন্য আরেকটা বিষফোড়ায় পরিনত হোক কিংবা বাংলাদেশ ভারতের চিরশত্রুদের পক্ষ নিয়ে তাদের দেশের বিচ্ছিন্নবাদীদের সহয়তা করুক !!! 😕 :-O
@আদিল মাহমুদ,
মোদি বিদেশনীতির ক্ষেত্রে হিন্দুত্ব্ তাস খেলবে। কারন বাংলাদেশের ৫০ লাখ হিন্দুর দুরাবস্থা বিজেপির বিরাট নির্বাচনী ইস্যু। সুতরাং বাংলাদেশের হিন্দুদের রক্ষা করার ব্যপারে বাংলাদেশের সরকারের ওপর চাপ দেবে বিজেপি।
মোদি পরিস্কার ভাবেই বলছেন প্রতিটি হিন্দুর দেশ ভারত-সুতরাং তার বিদেশনীতিতে যেখানে হিন্দুরা বিতাড়িত হচ্ছে-বাংলাদেশ, ফিজি, উগান্ডা-ইত্যাদি স্থলে উনি টাফ পজিশন নেবেন।
তার কাছ থেকে বাংলাদেশ কি পাবে-সেটা নির্ভর করবে বাংলাদেশের সরকার কিভাবে বাংলাদেশের হিন্দুদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিতে সক্ষম হবে। কারন সেটা হবে মোদির বেসের মাইলেজ।
@বিপ্লব পাল,
– এটা খুবই আশংকার কথা। আমি ভারতের আভ্যন্তরীন রাজনীতির খবর তেমন রাখি না, তবে ভারতের মত দেশে বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্থা খুব বড় ফ্যাক্টর এমন কোনদিন মনে হয়নি।
বাংলাদেশে এখন যা অবস্থা তাতে আওয়ামী সরকারের পক্ষেও হিন্দুদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। গত ৩ বছরে যত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তেমন রেকর্ড অতি বিরল। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু ধর্মীয় জোশ প্রবল ভাবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সফল ভাবে প্রবেশ করানোর ফলে সেই চেষ্টা তেমন আশাবাদী কিছু নয়। আইন থানা পুলিশ আদালতের ভয় দেখিয়ে দুই চার জন গ্রেফতার করে কোন সম্প্রদায়কে ঘৃনা করা ঠেকানো যায় না। অবস্থা এখন এতই খারাপ যে খোদ আওয়ামী লীগের সাথে জড়িতরাই বহু যায়গায় সংখ্যালঘু নির্যাতন বাঁধাচ্ছে। সিচুয়েশন মোটামুটি আউট অফ কন্ট্রোল।
আপনার কথা সত্য হলে বাংলাদেশের কপালে শনি আছে। আরো মনে রাখতে হবে উগ্র সাম্প্রদায়িক ডানপন্থী ধারার দলগুলি ঠিক এটাই চায়। ভারত বিরোধীতার কার্ড তাদের বড় অস্ত্র, তারাও নিঃসন্দেহে মোদির সাহায্যার্থে এগিয়ে আসবে। ইতোমধ্যেই তারা মোদির বিজয়ে প্রকাশ্যেই উল্লাস প্রকাশ করেছে।
মনমোহন সিং একবার বলেছিলেন, বাংলাদেশের শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ সাম্প্রদায়িক দলকে সমর্থন করে। সেটা শুনে এদেশের অতিসেকুলারদের কেউ কেউ এদেশবাসীর ইন্ডিয়ার কাছ থেকে সেকুলারিজম শেখা উচিত বলে খুব উচ্চবাচ্য করেছিল। কোন জাতির মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতা বেশি তা প্রমাণিত হয়ে গেল।
ভারতের এবারের নির্বাচনের ফলাফলে সেকুলারিজম নিয়ে চরমতম প্যারাডক্স এর উদাহরন পাওয়া গেল। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের রাজনৈতিক শাখা ভারতীয় জনতা পার্টি, যেটি মূলত আদর্শের দিক থেকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ও মৌলবাদী বলে চিহ্নিত; তারা নির্বাচনে জয়লাভ করল সম্পূর্ণ সেকুলার একটি ইস্যু তে – অর্থনৈতিক উন্নতি। গত ৩ বার ইষ্টনাম জপ করেও যে কাঙ্ক্ষিত বিজয় বিজেপির মেলেনি এবার সেই বিজয়ই তারা অর্জন করেছে বিগত দেড় বছর ধরে পাঁচ হাজার কোটি রুপি খরচ করে।
বিজেপির দলীয় প্রতীকে ভারতীয় রাজনৈতিক বোদ্ধারা এখন পদ্মফুলের পরিবর্তে রুপির প্রতীকের প্রচলন চাইতেই পারেন !
@এম এস নিলয়,
বাংলাদেশে ২০০১ সালের নির্বাচনে মানুষ সাম্প্রদায়িক রাজণৈতিক ধারার বিএনপি এবং চরম সাম্প্রদায়িকতার ধারক বাহক ‘৭১ এর গলাকাটা জামাতকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক বাহক এবং মুক্তিযুদ্ধের নের্তৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের বিপরীতে। এ থেকে কি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে বাংলাদেশের মানুষ আসলে সাম্প্রদায়িকতা এবং ‘৭১ এর গলাকাটা বিপুলভাবে সমর্থন করে?
২০০৮ সালের মধ্যেই আবার সেই সাম্প্রদায়িক মানুষ পুরো সেক্যুলার হয়ে গেল?
@এম এস নিলয়,
ভারতের জনগণ কিন্তু হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের জন্য কিংবা সংবিধানে “ওম শান্তি” ঢুকানোর জন্য মোদীকে নির্বাচিত করেনি! মোদীকে তারা নির্বাচিত করেছে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনের জন্য … মোদী যদি তাঁর হিন্দুত্ববাদী ট্রাম কার্ড খেলা শুরু করে ভারতের শিক্ষিত সচেতন জনগণই যে তাকে লাথি দিবে, এটাও মোদী অবশ্যই জানে !! :-O
ভারতের বিজেপি(ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল) এর সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী(ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো)’র তুলনা করা মোটেই উচিত না| বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ঐ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এই দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত !! 😕
মোদী তার নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রূতিগুলো পুরণ করতে সমর্থ হোক, এটাই প্রত্যাশা করি| কারন মোদী যখন তার নির্বাচনী প্রতিশ্রূতিগুলো পুরণ করতে পারবে না, তখনই সে তার আসল হিন্দুত্ববাদী রূপ দেখাবে এবং ভারতে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে উষ্কে দিয়ে মানুষের চিন্তা-চেতনাকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করে মানুষকে ব্যাস্ত রাখবে ! 😕
আর ভারতে যদি হিন্দু-মুসলমানদের মাঝে গন্ডগোল লাগিয়ে দেয়, তাহলে এর প্রভাব বাংলাদেশেও পরবে ! মোদীর জাত-ভাই জামাত-বিম্পিও তখন ইসলামী জোশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করবে ! আর অন্যদিকে সুশীল পিনোকিও এবং অতিসুশীল ওয়াহিদ টাকলারা সেই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে বিভিন্নভাবে জাস্টিফাই করা শুরু করবে !! :Y
তাই আমি মনেপ্রাণে চাইতেসি যে মোদী তার নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রূতিগুলো পুরণ করতে সমর্থ হোক | 🙂
@তারিক,
হতে পারে, নাও হতে পারে। গুজরাতে মোদি উন্নয়নের তাসেই জিতে চলেছেন। আশা করা যায় ভারতেও উন্নয়নের ধারা আনতে পারবেন এবং তা হবে ইনক্লুসিভ। কারন গুজরাতে দরিদ্রশ্রেনী ভাল নেই। তবে ভারতের বাকীদের থেকে হয়ত ভাল আছে, চাকরি বাকরি গুজরাতে বেশী তৈরী হয়েছে।