আইনের এখতিয়ার এবং প্রয়োগরীতিঃ

    ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫
    ( ২০০৫ সনের ১১ নং আইন ) [১৫ মার্চ, ২০০৫]

পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহণে ধূমপান নিষিদ্ধ

৪৷ (১) ধারা ৭ এর বিধান সাপেক্ষে, কোন ব্যক্তি কোন পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহণে ধূমপান করিতে পারিবেন না৷

১[ (২) কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন করিলে তিনি অনধিক তিনশত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরণের অপরাধ সংঘটন করিলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হইবেন।]

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই আইনটি কতটা কার্যকর? কতজন অসচেতন বা অর্ধ-সচেতন ব্যক্তি বাসে বা পাবলিক পরিবহণে ধূমপানের জন্যে এই দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন? কারো জানা আছে কি? এইদিকে কোন ব্যবসায়ী বা দোকানদার একটা সরকারী জমি লিজ নিয়ে খোলা পরিবেশে সীসা বা ধূমপানের আধুনিক (!!) কোন ব্যাবস্থা করলে কি ঐ নির্দিষ্ট স্থানে এই রাষ্ট্রীয় আইন কি বলবত থাকবে? থেকেছে কি? কথাগুলো এইজন্যেই বলা যে আসিফ মহিউদ্দিন যেমন কোন মাজার বা মাদ্রাসায় গিয়ে তার ভাব করবে না, করা উচিৎ না ঠিক তেমনি রাজীব, আসিফ কিংবা রাহী’র সাথে ফেসবুকে করা তর্ক সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা উচিৎ না। এমন পরিস্থিতিতে একটা উক্তিই মনে পরে, “Violence is the last refuge of the incompetent.”—Isaac Asimov

    ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নিয়মাবলী এবং প্রয়োগরীতিঃ

এইদিকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নিয়মাবলী এবং রাষ্ট্রীয় আইন দুটো এক করে কখনই এমন কিছু হওয়া উচিৎ না যা মানুষের অফলাইনের বাস্তব জগতকে ক্ষতিগ্রস্ত বা বাধাগ্রস্ত করে। এই ধরণের প্রতারণার জন্যেও তাহলে আইন থাকা উচিৎ। কেননা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আড্ডায় বা বিতর্কের অথবা বন্ধুমহলের আলোচনার কোন অংশ বিশেষ যদি মাদ্রাসা বা মাজারের সামনে বিলি করা হয় তবে নৈতিক হঠকারিতা এবং অন্যায় হবে।

ব্লগ অর্থ নাকি ব্যক্তিগত দিনলিপি। আগের দিনের ডাইরির সাথে আজকের একই ধারার দিনিলিপির সাথে এইটাই মৌলক পার্থক্য। আজ আপনার দিনের মনের কথাটি সম্পর্কে আপনার বন্ধুমহল কিংবা ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুদের সাথে তা বিনিময় করতে পারেন এতেকরে তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয় যা ব্যক্তির ভাবনার পরিবর্ধন, পরিমার্জণ, সংশোধন এবং পরিষ্কার করে এমনকি পরিবর্তনও হতে পারে। এই ব্যক্তিগত দিনলিপির অংশ বিশেষ তাই অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত মহলে ছড়িয়ে ব্যক্তিকে হেনস্তা করা হলে তাকেই বরং প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত করা উচিৎ। নীতিশাস্ত্র, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধে কি আমরা আজও অসভ্য জাতি রয়ে গেলাম? এইদিকে সহজেই দেশের প্রথম সারির সবকটি দৈনিক কিছু ফান ম্যাগাজিন বের করে যেখানে বাস্তব জগতের কেউ নিজের সাথে মিল পেয়ে আঘাত প্রাপ্ত হলে তাকে অনভিপ্রেত কাকতালীয় ব্যাপার কথাটার দোহায় দিয়ে পত্রিকাগুলো দায় মুক্ত হয় অথচ, একটু ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নীতিমালা (Facebook Principles) দেখলেই বুঝা যায় ফেসবুকের কোন বিষয় নিয়ে বাস্তব জীবনে থানা-পুলিশ কিংবা মামলা-মুকদ্দমাই অনভিপ্রেত কাকতালীয় ঘটনা।

১০ টি সেবার বর্ণনায় স্পষ্ট থেকে স্পষ্ট ধারণা ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দিয়ে দিয়েছে। এই নীতিমালার সর্বত্রই ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সামগ্রিক অর্থেই চিন্তার স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা দেয়া আছে। ভার্চুয়াল জগতের এই ফেসবুক সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমের ব্যাবহারকারীর যে কোন বিষয়ে মতামত প্রকাশ করা বা শেয়ার করার এই শাশ্বত বিধান অভিনব এক যুগের উত্তরণের মাধ্যম ধরা যেতে পারে। এইবার ৫ নম্বর ধারাটি একটু লক্ষ্য করিঃ

5. Social Value

People should have the freedom to build trust and reputation through their identity and connections, and should not have their presence on the Facebook Service removed for reasons other than those described in Facebook’s Statement of Rights and Responsibilities.

Statement of Rights and Responsibilities

এইবার ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সেইফটি বিষয়ক অনুচ্ছেদটি একটু দেখিঃ

3. Safety

We do our best to keep Facebook safe, but we cannot guarantee it. We need your help to keep Facebook safe, which includes the following commitments by you:

1. You will not post unauthorized commercial communications (such as spam) on Facebook.
2. You will not collect users’ content or information, or otherwise access Facebook, using automated means (such as harvesting bots, robots, spiders, or scrapers) without our prior permission.
3. You will not engage in unlawful multi-level marketing, such as a pyramid scheme, on Facebook.
4. You will not upload viruses or other malicious code.
5. You will not solicit login information or access an account belonging to someone else.
6. You will not bully, intimidate, or harass any user.
7. You will not post content that: is hate speech, threatening, or pornographic; incites violence; or contains nudity or graphic or gratuitous violence.

8. You will not develop or operate a third-party application containing alcohol-related, dating or other mature content (including advertisements) without appropriate age-based restrictions.
9. You will follow our Promotions Guidelines and all applicable laws if you publicize or offer any contest, giveaway, or sweepstakes (“promotion”) on Facebook.
10. You will not use Facebook to do anything unlawful, misleading, malicious, or discriminatory.
11. You will not do anything that could disable, overburden, or impair the proper working or appearance of Facebook, such as a denial of service attack or interference with page rendering or other Facebook functionality.
12. You will not facilitate or encourage any violations of this Statement or our policies.

৬ নং উপধারার শব্দত্রয় কি লক্ষ্য করুণ- bully, intimidate, or harass…

এমন সকল ক্ষেত্রেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়মাবলী আছে। এমন পরিস্থিতিতে কি করা যায় বা করা উচিৎ। “ফেসবুক সম্প্রদায় মানদণ্ড” এবং “নিরাপত্তা একটি আলোচ্য বিষয়” শিরোনামের নিয়মাবলী পড়লে এইটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে কোন বিষয়ে বা কোন ব্যবহারকারীর কনটেন্টে কেউ বিরক্ত হলে আপনি যা করতে পারেন তা হচ্ছে ‘যে কেউ আপনাকে অবাঞ্ছিত এবং বিরক্তিকর বার্তা পাঠালে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করুন এবং অবরোধ করুন।’

সে ক্ষেত্রে মুক্ত বিশ্বের এই স্বাধীন, প্রকৃত অর্থেই অনলাইনের স্বাধীন দুনিয়ায় এমন ফেসবুক, টুইটার বা অনুরূপ কোন মাধ্যমের কোন আলোচনাকে বা কারো দেয়া স্ট্যাটাসকে অথবা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে যদি বাস্তব জীবনের চলাফেরা বা সকল কিছুকে নিয়ন্ত্রণ বা বিধিনিষেধ জারী করা হয় তবে আমাদের সংবিধানে রাখা মৌলিক মানবাধিকারের বিষয়টি খেয়াল করা উচিৎ।

    সাংবিধানিক মৌলিক মানবাধিকারঃ

    গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
    তৃতীয় ভাগঃ মৌলিক অধিকার
    অনুচ্ছেদ ৩৮: চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা

(১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।
(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধের সাপেক্ষে-
-(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং
-(খ) সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার, নিশ্চয়তা দান করা হইল।

আমাদের সংবিধানিক অধিকার বলে কেমন মনেহয় ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা’কে? সামগ্রিক অর্থেই কি আমরা চিন্তা এবং বাক স্বাধীনতা ভোগ করছি? করতে পারছি? এইদিকে কারো কোন লিখা যদি কারো কথিত অনুভূতিকে এত আঘাত করে তবে আমাদের শিক্ষাব্যাবস্থার পাঠ্যসূচিতে ব্যাপক পরিবর্তন করতে হবে। কেননা কবি সাহিত্যিক বা সকল ধরনের শিল্পীদের শিল্পকর্ম অনেকের বিশেষ করে যারা তীব্র সংবেদনশীল তাদের অনুভূতিতে মোলায়েম পরশ থেকে শুরু করে তীব্র থেকে তীব্রতর আঘাত করতে সক্ষম। দর্শনের দান্দিক অবস্থান বা বিতর্ক ছাড়া মানব ইতিহাসে কোন সভ্যতার, দর্শনের বা শিল্পের উম্মেষ ঘটে নি এই বাংলায়ও ঘটবে না। অতএব ফেসবুক, ব্লগ কিংবা টুইটারের কোন বিষয় নিয়ে বাস্তব জীবনকে টানার কোন যৌক্তিক কারণ দেখছি না। একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাই যে বর্তমান সরকার এবং প্রধাণমন্ত্রী এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে নিয়ে কট্টর দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক সংগঠনগুলো ব্যাপক নোংরা এবং অসত্য অপপ্রচার চালালেও সরকার বা সাধারণ মানুষ তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। তাহলে কেন বারবার তরুণ ব্লগারদের বা অনলাইন এক্টিভিস্টদের ২০০৬ সালে করা জামাত-বিএনপি’র কালো আইনের ফাঁদে পরতে হবে। এই নিয়ে বোধহয় এই পর্যন্ত ৮ জন সাধারণ ছাত্র বা ব্লগার এবং রাষ্ট্রের জন্যে ঝুঁকি নয় এমন ব্যক্তিকে কারাবরণ করতে হয়েছে। একটা ব্যাপার আমরা লক্ষ্য করছি না। ৬৩ জেলায় বোমা হামলা থেকে শুরু করে হালের মতিঝিলের হেফাজতীয় তাণ্ডব ও সহ ব্যাপক সন্ত্রাসী ধ্বংসযজ্ঞও সুশীল পরিচয়ধারীদের বিবেকে নাড়া না দিলেও কিছু নিরীহ ব্লগারের আক্রমণাত্মক লিখায় তাদের চরম সংবেদনশীল অনুভূতি প্রচণ্ড থেকে তীব্রতর ঝাঁকুনি খায়। কারণ তাদের হাতে আছে সেই কালো আইন। একটু দেখে নিন কি আছে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে?

    তথ্য প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এবং এর অপব্যবহারঃ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ ( ২০০৬ সনের ৩৯ নং আইন ) [৮ অক্টোবর ২০০৬]
অষ্টম অধ্যায়ঃ অপরাধ, তদন্ত, বিচার, দন্ড ইত্যাদি

অনুচ্ছেদ ৫৭: ইলেক্ট্রনিক ফরমে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ ও উহার দণ্ড
(১) কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক দশ বত্সর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন ।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর এই দণ্ডবিধি সংবিধানের মূল চেতনার সাথে সামাঞ্জস্য পূর্ণ না। সরকারের উচিৎ জনস্বার্থে এই দণ্ডাদেশ বাতিল করা বা সংশোধন করা। কেননা আমাদের এমন আইন থাকা উচিৎ না যা আমাদের জাতীয় কবির লিখা থেকে শুরু করে অনেক শিল্প সাহিত্য স্থাপত্যশিল্প বা চিত্রশিল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং শিল্পীকে শাস্তিযোগ্য অপরাধী গন্য করে। একটা সহজ উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন, যেমন জাতীয় কবির ‘মানুষ ‘ কবিতাটির কথায় ধরিঃ

‘মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ নাও জোর ক’রে কেড়ে,
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে,
পূজিছে গ্রন’ ভন্ডের দল! মূর্খরা সব শোনো,
মানুষ এনেছে গ্রন্থ;-গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো।
আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মাদ
কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর,-বিশ্বের সম্পদ,
আমাদেরি এঁরা পিতা-পিতামহ, এই আমাদের মাঝে
তাঁদেরি রক্ত কম-বেশী ক’রে প্রতি ধমনীতে রাজে!

তাই অনুভূতি আক্রান্তের অভিযোগে শিল্পীর শিল্পানুভূতিতে আঘাত করা বা শিল্পীর শিল্পের গণ্ডি নির্ধারণ করে দেয়া কোন রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অগ্রগতির জন্য একটা পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া কিছুই না। আর সমাজে যখন এক শ্রেণীর মানুষ তাদের ধর্মীয় অনুভূতির দোহায় দিয়ে ধ্বংসলীলা আর জঙ্গিপনা করে তখন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষার আক্রমণাত্মক অহিংস ব্লগার বা লেখকের উত্থান অবধারিত। তাই রোগের প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ উত্তম এই চিরন্তন সত্যকে আমলে নিয়ে রাষ্ট্র এগিয়ে আসবে এমনটা হওয়ায় উচিৎ।

সর্বশেষ এই কালো আইনের শিকার ২ কিশোর ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিস্ট। এরই মধ্যে কাজী রায়হান রাহী। তাকে নিয়ে রাজীব হত্যার মূল হোতা এবং রাজীবের জানাজার ইমামকে হত্যা করার হুমকি দেয়া সেই বিকারগ্রস্ত ‘ফারাবী’। অনেক ঘেঁটে আপাদমস্তক ক্রিকেট পাগল এই কিশোর রাহীর মূল লিখালিখির যায়গা নিয়ে তার কিছু লিখার স্ক্রিনশট দেখি, যা সে বিভিন্ন সময়ে ‘ক্রিকেটখোর‘ পেইজে পোস্ট করেছিল।

    তথ্য-প্রযুক্তি আইনে প্রশ্নবিদ্ধ মৌলিক মানবাধিকারঃ

১৭ বছর ২ মাসের দুই কিশোরকে (রাহী এবং উল্লাস) ফারাবীর লেলিয়ে দেয়া অমানুষেরা তার এইচএসসি পরীক্ষার ঠিক ৫ দিন আগে এডমিট কার্ড সংগ্রহ করতে গেলে চট্টগ্রাম কলেজের সামনে থেকে তাদের অমানবিক নির্যাতন করে এবং জনরোষ সৃষ্টি করে চকবাজার থানায় ৫৭ ধারায় মামলা দেয়। তার আগে থেকেই ঐ সন্ত্রাসী চক্র সকল আয়োজন সম্পন্ন করে রেখেছিল। প্রমাণঃ

এই অপরাজেয় সংঘ (Oporajeyo Shongo) গ্রুপটি কেবলই সমাজের জন্যে হুমকি নয় একই সাথে রাষ্ট্রের অগ্রগতির বাধা। এরাই একসময় উদীচী আর পহেলা বৈশাখে বোমা মারবে। এইখানে উল্লেখ্য এই অপরাজেয় নামের গ্রুপটির বেশীরভাগ মেম্বারও রাহীদের সমবয়সী। যে বালক ১৭ বছর বয়সে উগ্রধর্মীয় মৌলবাদে আক্রান্ত হয়ে নিজের ক্লাসমেটদের এতোবড় সর্বনাশ করতে পারে তাদের হাতে দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপদ না। এদের মত নির্দয় এবং নৃশংস পশু বর্তমান জমানায় আসলেই কম। পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলাবাহিনী যেখানে এমন আক্রমনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিবে সেখানে তারা মৌলবাদের শিকারদের জেলে পরীক্ষার ব্যবস্থা করল। হাইরে প্রশাসন… আজ ছেলেদুটো জেলখানা থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে।

অথচ ১৯৭১ এ আমাদের সংগ্রাম ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে মুক্তি ও জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম। আজও আমাদের জনসাধারণের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটেনি আর চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা আজও সুদূরপরাহত। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে সবচে বড় দাবীদার রাজনৈতিক সংগঠনটি আজ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আজ মুক্তচিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা এইভাবে বারবার নির্যাতিত এবং নিষ্পেষিত হচ্ছে। এইদিকে সরকার এবং রাষ্ট্রকে ভুলে গেলে চলবে না আজও সেই হানাদারের দোসর রাজাকার আর তার সাঙ্গোপাঙ্গরা দেশের ও মানুষের সর্বাত্মক উন্নতি আর মুক্তির ও চিন্তা ও বিবেকের পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফারাবীরা রায়হান রহমান [রাহীর নামঃ কাজী মাহমুদুর রহমান রায়হান (রাহী)] নামের একটা আইডি তাদের ব্লগ বিডি টুডেতে খুলে অবিরত উল্টাপাল্টা পোস্ট দিচ্ছে। যার স্ক্রিনশটও তারা ঘটনার দিন তাদের লিপলেটে ছাপিয়েছিল। দেখুন তার প্রমাণঃ

একই প্রক্রিয়ায় ফারাবী’রা খুন করেছিল রাজীবকে। নতুন করে তারা মাঠে নেমেছে। কাউকে লিখতে দিবে না তারা। রাহীর একটা ফেসবুক নোট যা কিছুটা কাব্যের ঢঙ্গে লিখা তা একটু পড়ে দেখুন তারপর ভাবুন রাহী কি দোষী না নির্দোষ। এই আইন কি কালো আইন না ভাল আইন? এইটা জনকল্যানকর নাকি মানবতার মুক্তি বিরোধী?

জামাত-বিএনপির প্রসব করা ২০০৬ সালের ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন’টি সরকার বলবত রেখে ব্লগারদের মুক্তচিন্তা এবং সামগ্রিক অর্থে চিন্তার স্বাধীনতাকে রুখে দিতে চাচ্ছে যা ‘গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান’ এর “তৃতীয় ভাগঃ মৌলিক অধিকার” এর ‘অনুচ্ছেদ ৩৮: চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা’র সাথে কোন অবস্থাতেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

অবিলম্বেই এই কাল আইনের বিলুপ্তি চাই এবং এই দুই কিশোর ব্লগার রাহী-উল্লাসের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে তাদের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হোক।
আমাদের সংবিধানিক মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা চাই।

    বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ


ফেসবুকের নীতিমালার (কিছুটা অন্য প্রসঙ্গে) বিষয়টি নজরে এনেছেন রাহীরই সহপাঠী ইলোসিয়া মৌনিন রাইন, আর স্ক্রিনশট দিয়ে সাহায্য করেছন ডন মাইকেল এবং অর্ফিয়াস রিবর্ন (রাহীর সহপাঠী)