হুমায়ূন আজাদ ‘কেউ নারী হয়ে জন্মায়না, ক্রমশ নারী হয়ে উঠে’ বলতে সম্ভবত নারীর ক্রমে পিছিয়ে পড়া অর্থাৎ আত্মসমর্পণ করাকেই ইঙ্গিত করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে কেন সে ক্রমশ নারী হয়ে উঠে, কেন সে আত্মসমর্পণ করে আত্মউন্মোচনের বদলে? এই কেন’র উত্তর নিয়ে সুদীর্ঘ গবেষণা করেছেন লুইস হেনরি মর্গান। তবে উনি নারী ইস্যুতে গবেষণা করেননি, করেছেন সমাজ বিবর্তনের ধারা নিয়ে। যেটির উপর ভিত্তি করে অনবদ্য এবং দ্বান্দ্বিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন ফ্রেডরিক এঙ্গেলস তাঁর পরিবার, ব্যাক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি গ্রন্থে। বন্য অবস্থা, বর্বর অবস্থা এবং সভ্যতা এই তিন স্তরের ক্রম বিকাশ কিংবা বিবর্তনের ফাঁকে কিভাবে নারী আটকে পড়ছে বা আটকে গিয়েছে কিংবা আটকে ফেলা হয়েছে তা বুঝতে না পারলে যেকারোই মনে হতে পারে নারীর পিছিয়ে পড়াটা “সৃষ্টিকর্তার” ইচ্ছেতেই হয়েছে কিংবা প্রাকৃতিকভাবেই ঘটেছে।
সমাজ বিবর্তনের পথে মানুষ যখন উৎপাদন করতে শিখলো এবং পুনরুৎপাদনের গুরুত্ব অনুধাবন করলো তখনই ক্রমে শ্রম বিভাজন ঘটে যায় নর এবং নারীতে। নর ব্যস্ত হয় উৎপাদনে, নারী পুনরুৎপাদনে। নর বাইরে, নারী ঘরে। সমাজ বিকাশের সেই স্তরে শিশু বড় হতো সামাজিক ভাবে, গোত্র পরিচয়ে, মাতৃপরিচয়ে। প্রতিটি শিশু ছিলো সমাজের শিশু। শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেটিকে বর্তমানে ব্যভিচার মনে হয়, অনৈতিক মনে হয়, সেটি তখন ছিলো প্রয়োজনীয়।
ধীরে মানুষ উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ করতে শিখলো, সৃষ্টি হল উদ্বৃত্তের। প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করলো উদ্বৃত্তের উপর ব্যক্তিমালিকানা। বাইরে যখন উদ্বৃত্তের মালিকানা প্রতিষ্ঠা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ঘরে তখন ক্রমে আটকে পড়ছে নারী। নর- নারীর সম্পর্কগুলোও ছকে আসা শুরু হল ক্রমে। বহুনারী-বহুপুরুষ, একনারী-বহুপুরুষ, বহুনারী-এক পুরুষ এরকম স্তরগুলো ধীরে বিবর্তিত হতে থাকলো। উদ্বৃত্তের ব্যাক্তিমালিকানা স্থাপনের পথে উত্তরাধিকারের প্রশ্ন সামনে আসে উদ্ধৃত্বের ভবিষৎ মালিকানা প্রশ্নে। যে উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করছে সে ধাবিত হয় উত্তরাধিকার সৃষ্টিতে। যেহেতু উদ্বৃত্ত নরের নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তরাধিকারের প্রশ্নে সে-ই বেশি উৎসাহী। সমাজ মাতৃতান্ত্রিক অবস্থা থেকে ধীরে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ঢুকতে থাকে। সভ্যতার সেই স্তরে উৎপাদন এবং পুনরুৎপাদন দুটিই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। ছিলো শ্রমবিভাজনেরও প্রাসঙ্গিকতা। কিন্তু সেটির পথ ধরে এবং উদ্বৃত্তের উপর ভর করে সমাজ যেভাবে শ্রেণী বিভক্ত হয়ে পড়ে, তাতেই আটকে পড়ে নারী। নারী ক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে, নিয়ন্ত্রিত হতে শুরু করে উৎপাদন নিয়ন্ত্রকের দ্বারা, জীবন ক্রমে আটকে যেতে থাকে একঘেঁয়ে একই দিনের আমৃত্যু পুনরাবৃত্তিতে। নারীর পুনরুৎপাদন তাঁকে হয়তো পূজিত করেছে, একটা সময় পর্যন্ত কতৃর্ত্বও দিয়েছে সন্তানের উপর, সমাজের উপর, কিন্তু উদ্বৃত্তের ব্যক্তিমালিকানা স্থাপনের পর সমাজ কেবলই শৃঙ্খলিত করেছে নারীকে, বেঁধেছে আষ্টেপৃষ্ঠে। দ্য বোভেয়ারের মতে নারী ক্রমে হয়ে উঠে জরায়ু, ডিম্বকোষ কিংবা স্ত্রীলোকে কিংবা সন্তান সৃষ্টির যন্ত্রে।
প্রাগৈতিহাসিক সমাজ থেকে বর্তমান সভ্য সমাজে পৌঁছাবার দীর্ঘ সময়ে দেশে দেশে নারীর ভাগ্য একই রকম থেকেছে। ভুমির মালিক হবার সাথে সাথে পুরুষ নারী এবং সন্তানকেও ব্যক্তিমালিকানায় এনেছে। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায়, সমাজ বিবর্তনের ধারায় মানবিক সম্পর্কগুলো মানবিক থাকেনি। সভ্যতার বিকাশের বাঁকে সমাজে নির্মমভাবে ঢুকে পড়েছে ধর্মীয় কুসংস্কার। যেটি অনুশাসনের নামে প্রচণ্ডভাবে জেঁকে বসেছে নারীর উপর। অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে নারীর স্বাধীন স্বত্তাকে। মনুসংহিতায় বলা আছে কুমারীকালে পিতা, যৌবনে স্বামী, বার্ধক্যে পুত্ররা রক্ষা করবে নারীকে [ মনুসংহিতা ৯:৩]। নারীর কোনো স্বকীয় স্বত্তা এখানে নেই, সে কেবলই পরাশ্রয়ী, পরজীবী হিসেবেই চিহ্নিত। কোরানও বাদ দেয়নি, বলা আছে পুরুষ নারীর কর্তা [সুরা ৪:৩৪]। এতো গেলো কতৃর্ত্বের দিক। এবার দেখুন মুল্যায়ন- “নারী হচ্ছে ক্ষেত্র সরূপ এবং পুরুষ বীজ [মনুসংহিতা ৯:৩৩]। একই সুর কোরানেরও- “নারী হচ্ছে শস্যক্ষেত্র, তোমরা তাতে ইচ্ছেমতো বপন করো” [সুরা ২:২২৩]। ধর্মরক্ষার নামে নারীকে বাল্যবিবাহেও প্ররোচিত করেছে মনুসংহিতা। পড়ুন স্লোক ৯:৪, বলা আছে- তিরিশ বছরের পুরুষ বিয়ে করবে বারো বছরের কন্যাকে, চব্বিশ বছরের পুরুষ করবে আট বছরের কন্যাকে, নইলে ধর্ম নষ্ট হবে। শুধু বিয়েতেই শেষ নয়, স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁকে চিতায় তোলার বিধান ধর্মই দিয়েছিলো। সতীত্ব রক্ষার নামে।
ধর্মীয় অনুশাসনের এরূপ অনেক প্রথাই এখন উঠে গেছে সমাজ থেকে, ধর্ম উচ্ছন্নে যায়নি (থাকলে তো যাবে!), বাকীগুলো উঠে গেলেও সূর্য উঠবে, সাগরের ঢেউ থাকবে; বরং ফতোয়া নামক বর্বরতার হাত থেকে রক্ষা পাবে নারী। হিন্দু ধর্মের মতে সাতপাকে বাঁধা পড়া মানে জন্ম জন্মান্তরের জন্য নারী তাঁর স্বামীর দখলে যাচ্ছেন; অন্তত সাত জনম। অর্থাৎ স্ত্রী স্বামীর মাঝে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, স্বামী কিন্তু যাচ্ছেনা। ইসলাম ধর্মের বিধানও ব্যতিক্রম নয়, শরীয়া মতো চললে, সতী থাকলে মৃত্যুর পর সে স্বামীকে পাবে। যদিও সত্তুরটা উদ্ভিগ্ন যৌবনা হুর পরীর ভিড়ে পার্থিব স্ত্রী’তে স্বামীজী কতোটা নজর দিবে সন্দেহ! ধর্ম শুধু নারীকে নয়, পুরো মানব জাতিকে শৃঙ্খলিত করেছে, অনুশাসনের নামে সবাইকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী করার প্রয়াস রেখেছে প্রতি পদক্ষেপে।
অনেকেই হয়তো বলবেন নারী এখন অনেক স্বাধীন, প্রাগৈতিহাসিক সেইসব সংস্কার এখন আর সেভাবে নেই। স্বাধীনভাবে নারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে অনেকক্ষেত্রেই। বাস্তবতা কী বলে? বিয়ের কথাই ধরা যাক, যেটি নারীকে সবচে’ বেশী বিব্রতকর পরিস্থিতিতে এবং শৃঙ্খলিত পরিস্থিতিতে নিয়ে যায় রাতারাতি। ইসলাম ধর্ম অনুসারে বিয়ে একটা চুক্তি (হিন্দু ধর্মে এসবের বালাই নেই) এবং আইনগত ব্যাপার। এতে সম্মতি দেয়ার স্বধীনতা পাত্র- পাত্রী দুপক্ষেরই আছে। হ্যাঁ, কাগজে কলমে এই চুক্তি স্বেচ্ছামূলকই। কিন্তু ভাবতে হবে কতোটা স্বাধীনভাবে চুক্তিবদ্ধ হতে যাওয়া দু’জন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটি, কিংবা আদৌ স্বেচ্ছামূলকভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কিনা, যদি নেয় তবে কোন বিষয়গুলো তাঁকে প্রভাবিত করছে। নারীর ক্ষেত্রে সাধারণত পরিবার বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে মূল সিদ্ধান্ত নেয়, পরিবার বলতে বাবা কিংবা বড়ভাই। এবং যেদিক গুলো বিবেচনা করা হয় সেগুলো হচ্ছে পাত্রের আয়, সামাজিক অবস্থান, শিক্ষা, পারিবারিক ঐতিহ্য ইত্যাদি। হয়তো এটাই স্বাভাবিক সাধারণ দৃষ্টিতে। একজন নারীও খুব কম ক্ষেত্রেই এইসব দিক এড়িয়ে সিদ্ধান্ত নেয় বা নিতে পারে কিংবা নেয়ার সাহস দেখায়। অর্থাৎ অনেকগুলো অনুঘটক এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। পরিবার, ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি গ্রন্থে এঙ্গেলস চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন বিষয়গুলো। তাঁর মতে বিয়ের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা সাধারণভাবে তখনই কার্যকরী হতে পারে যখন পুজিবাদী উৎপাদন এবং তারই সৃষ্টিকরা মালিকানা সম্পর্ক বিলুপ্ত হয়ে সেই সব গৌণ অর্থনৈতিক হিসাবকে হটিয়ে দেয়, যেগুলো বিয়ের সঙ্গী নির্বাচনের উপর এতো প্রভাব বিস্তার করে। তখন পরস্পরের আকর্ষণ ছাড়া আর কোনো উদেশ্য থাকবেনা।
প্রচলিত সমাজ কাঠামোতে বিয়ে নারীকে অতি প্রায়শই জীবনভর নির্ভরতা, পরজীবিতা, ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠার শাস্তি প্রদান করে। পুরুষকেও ভুগতে হয়, কিন্তু তার জগতটা বিস্তৃততর, বিয়ে নারীর মতো পুরুষকে সীমাবদ্ধ করে তোলেনা। নারী ক্রমে গুটিয়ে পড়ে তার ইতিহাস অর্পিত দ্বায়িত্ব পালনে। ঘর, সংসার, সন্তান এসবেই সে আটকে যায় পুরোপুরি, তৈরি হয় বাইরের জগতের সাথে দূরত্ব, ছিটকে পড়ে উৎপাদন সম্পর্ক থেকে। এটি বাইরের জগতের প্রতি নারীর বিমুখিতা নয় বরং ব্যবস্থার যাঁতাকলে নিরুপায় আত্মসমর্পণ ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে নারী মুক্তি কোন পথে? প্রগৈতিহাসিক কালে ভেঙে পড়া আদিম সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার পর হাজার বছর ধরে জেঁকে বসা বন্ধনের ছেদ ঘটবে কিভাবে? অনেকেরই মতে শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক মুক্তিই দিবে নারীকে পুরুষের সমকাতারে সমঅধিকার নিয়ে দাঁড়াবার সামর্থ্য। অনেকাংশেই বিষয়গত ভাবে (subjectively) সত্যি। নারী পুরুষের সমতা আনতে গেলে মনোজাগতিক মানের নৈকট্য খুবই জরুরী। নেহাত জৈবিক মোহ নারী পুরুষের সাময়িক বন্ধুত্বের সৃষ্টি করলেও আবার সেই একঘেয়ে জীবনের আমৃত্যু পুনরাবৃত্তির ছকে আটকে পড়বে সম্পর্ক যদি তাঁদের মনোজাগতিক এবং বুদ্ধিভিত্তিক নৈকট্য সৃষ্টি না হয়। এই নৈকট্য সৃষ্টি করবে শিক্ষা। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার ক্ষেত্রেও শিক্ষা ভুমিকা রাখবে। সাথে সাংস্কৃতিক মানের উন্নয়নও অপরিহার্য্য। শিক্ষা, অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক মানের উন্নয়ন নারী পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করবে অনেকখানি। কিন্তু আমরা আলোচনা করছি ঠিক সমতা নিয়ে নয়, মুক্তি নিয়ে। সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনীতি, রাজনীতি যদি প্রতিকুল হয় তাহলে শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা যে বিষয়গত (subjective) আপাত মুক্তি নারীকে দিচ্ছে সেটি বিষয়ীগত (objective) মুক্তিতে পৌছুবেনা। পূর্বের আলোচনাতেই উল্লেখ করা হয়েছে উৎপাদনের ব্যক্তিগত মালিকানা কিভাবে উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে এবং নারী কিভাবে নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। ফলে উদ্বৃত্তের ব্যক্তি মালিকানা ভেঙে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। প্রচলিত ব্যবস্থায় শিক্ষিত এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি নারীও গার্হস্থ্য কাজে আটকে পড়ছে লম্বা সময় ধরে। সন্তান জন্মদান ও লালন পালন করাকে কেন্দ্র করে সে পিছিয়ে পড়ছে। বিষয়ীগত পরিবর্তনের জন্য সন্তানকে সমাজের শিশু হিসেবে সামাজিক ভাবে গড়ে তোলার সংস্কৃতি দাঁড় করাতে হবে। বর্তমানে অমুকের সন্তান, তমুকের সন্তান বলে যে আহ্লাদী ব্যবস্থা চালু আছে সেটির মূলে হচ্ছে সেই অমুক তমুক উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। উৎপাদন ব্যবস্থা সামাজিক হলে অমুক তমুকের ব্যক্তিমূল্য কমে যাবে। শিশুর নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, মানসিক বিকাশ, শিক্ষা এই বিষয়গুলোর সামাজিক নিশ্চয়তা বিধান করা গেলে সন্তানের প্রতি মায়ের আলাদা উদ্বেগের বিষয় থাকবেনা। ফলে আলাদা করে মায়ের দ্বায়িত্ব কমে যাবে। সেও সমভাবে অংশ নিতে পারবে উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। অনেকে হয়তো ভাববেন পরিপূর্ণ মাতৃস্নেহ ছাড়া সন্তান প্রকৃত মানুষ হবেনা। জেনে নিন রবীন্দ্রনাথ পুরো শৈশবটা গৃহভৃত্যদ্বারা মানুষ হয়েছে, এতে তাঁর প্রকৃত মানুষ হওয়া আটকায়নি।
ভাবনাটা স্রোতের বিপরীতে হলেও ভাবতে হবে। ভাবতে হবে মুক্ত মনে। বিষয়গত এবং বিষয়ীগতভাবে নারী মুক্তি তখনই সম্ভব যখন সমাজ কাঠামোতে পরিবর্তন আসবে। ব্যক্তিমালিকানার বদলে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে, মৌলিক চাহিদা গুলোর দ্বায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে। তবেই কেবল নারী পরিপূর্ণ স্বকীয়তায় ফিরতে পারে, রাখতে পারে স্বতঃস্ফুর্ত অবদান উৎপাদনে, উন্নয়নে।
কৃতজ্ঞতাঃ
পরিবার, ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি – ফ্রেডরিক এঙ্গেলস, প্যাপিরাস সংস্করণ
আদিম সমাজ – লুইস হেনরি মর্গান, অনুবাদ বুলবন ওসমান
ক্লারা জেটকিনঃ লেনিনের সাথে কথোপকথন
নারী – হুমায়ূন আজাদ
নারীদের মুক্তির জন্য নারীদের নিজেদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। অনেক বড় বড় কর্পোরেট নারীকে দেখেছি, যারা কিনা নিজেদের নামের শেষে স্বামীর নাম যুক্ত করে পরিচিত হতেই পছন্দ করেন। স্বামীর পরিচয়েই যদি পরিচিত হতে চান শেষ পর্যন্ত, তাহলে লাখ লাখ টাকা কামানোর অর্থই বা কি, আর তাদের স্বাধীনচেতা মানসিকতার অস্তিত্বই বা কোথায়…?
@শেহজাদ আমান,
নিশ্চয়ই। দেশের ‘মহান’ নারী নেত্রীরা যখন নির্বাচিত মহিলা সাংসদ হ’বার জন্য লাইন দেয় তখন সত্যি অদ্ভুত লাগে। সারা বছর এঁরা সরাসরি নির্বাচনের কথা বলে কিন্তু সময় এলে পিছনের দরজায় সাংসদ হতে চায়। এটা দুঃখজনক। সমাজ বা পুরুষ এঁদের পিছিয়ে রাখছেতো বটেই, নিজেরাও নিজেদের পিছিয়ে রাখছে। পদবীর বিষয়টা ধর্মিয় অনুশাসন থেকে এসেছে তাই ‘ধর্মপ্রাণ’ নারী কিংবা পুরুষ এটিতে হাত দিতে সহজবোধ করেনা।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
@শেহজাদ আমান,
নিশ্চয়ই। দেশের ‘মহান’ নারী নেত্রীরা যখন নির্বাচিত মহিলা সাংসদ হ’বার জন্য লাইন দেয় তখন সত্যি অদ্ভুত লাগে। সারা বছর এঁরা সরাসরি নির্বাচনের কথা বলে কিন্তু সময় এলে পিছনের দরজায় সাংসদ হতে চায়। এটা দুঃখজনক। সমাজ বা পুরুষ এঁদের পিছিয়ে রাখছেতো বটেই, নিজেরাও নিজেদের পিছিয়ে রাখছে। পদবীর বিষয়টা ধর্মিয় অনুশাসন থেকে এসেছে তাই ‘ধর্মপ্রাণ’ নারী কিংবা পুরুষ এটিতে হাত দিতে সহজবোধ করেনা।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
@দেব প্রসাদ দেবু, ঃ মেয়েদের নামের শেষে অলরেডি বাবার পদবি থাকে। বিয়ের পর দেখা যায় তারা স্বামীর পদবিও নামের সাথে যুক্ত করে নেয়। যেমন, আমার এক ক্লাসমেট ছিল যার নাম ছিল জুয়াইরিয়া হক। বিয়ের পর সে স্বামীর পদবিও জুড়ে দিল। এখন তার নাম হয়েছে ‘জুয়াইরিয়া হক ইফতেখার’। অথচ, মেয়েটা অনেক ভাল একটা কর্পোরেট জব করে।
একটা মেয়ের নামের সাথে দুটো পুরুষবাচক পদবী!
এটার মনে হয় প্রয়োজন নেই…।
চমৎকার লেখা। আমি ঠিক আশাবাদী হতে পারিনা মানুষের অন্তর্নিহিত স্বভাবের জন্য – আসলেই কী কোন এক সময় স্থায়ী ও টেকসই বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা কয়েম হবে? নারী ও পুরুষ এ দুটি সত্বা কোন এক সময় কী চিন্তা চেতনায় এক হয়ে মানবিক চেতনা তৈরী করবে? সম্পদগত, বর্ণগত, ধর্মগত বৈষম্যের মত লিঙ্গগত বৈষম্য কী কোন এক অজানা ভবিষ্যতে দূর হবে? সমাজতন্ত্রে কী নারী পুরুষ বলে কিছু থাকবে না? যদি থাকে তবে তবে নিশ্চয়ই মানুষ চিন্তায়ও সক্রিয় থাকবে। তাহলে এই বৈষম্য থেকে কী করে বেরিয়ে আসবে মানুষ?
@মোহন, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার মন্তব্যেই আপনি জবাব দিয়ে দিয়ে দিয়েছেন আশাবাদের মাধ্যমে-
সেই মানবিক চেতনাটা যেদিন সৃষ্টি হবে সেদিন নিশ্চয়ই মুক্তি আসবে, বেরিয়ে আসবে এই বৈষম্য থেকে। আমিও আশাবাদ রাখি-
‘দেরি হোক, তবু যায়নি সময়।’
দ্বিমত পোষণ করছি। তা হলে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবপ্সথায় নারী আন্দোলনের প্রয়োজন হত না।
@গীতা দি, আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আবারো বলছি আমি তত্ত্বগত দিকটি আলোচনা করেছি, প্রায়োগিক দিক নয়। তারপরও বলছি-
আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া, যেকোন ব্যবস্থায় আন্দোলন থাকবে বা থাকতে পারে। দেখতে হবে কোন ইস্যুতে আন্দোলন হচ্ছে। স্ট্যালিন নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে, আমিও করি। কিন্তু স্ট্যালিন যখন লেলিন গ্রাদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে কোন যৌন কর্মী নেই তখন বিশ্বের মোড়লরা পাল্টা চ্যালেঞ্জ করতে পারেননি। যেসব সমাজতান্ত্রিক দেশের উদাহরণ আপনি দেবেন সেই সব দেশ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছে বা করেছে, প্রতিষ্ঠা পায়নি। সেখানে আন্দোলন হওয়াটাই স্বাভাবিক, না হওয়াটা অস্বাভাবিক।
পুজিবাদী ব্যবস্থা যৌন ব্যবসাকে রাষ্ট্রীয় ভাবে লালন করে, প্রাতিষ্টানিক স্বীকৃতি দেয়। যেমন থাইল্যান্ডের জাতীয় আয়ের একটা বড় অংশ এই খাত থেকে আসে, যেটি বাংলাদেশের টোটাল উন্নয়ন বাজেটের সমান হবে। আমেরিকার মতো পুজিবাদের মোড়লরা পর্ণোগ্রাফিতে যে পরিমাণ ব্যয় করে , সারা বিশ্ব শিল্প সাহিত্যে সেই পরিমাণ ব্যয় করে কিনা সন্দেহ। মুনাফার খাত হিসেবে নারীকে পুজিবাদই উৎসাহিত করেছে এবং করছে। তাই দেখতে হবে কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহা্রে উৎসাহিত করছে।
প্রায়োগিক ব্যর্থতা তত্ত্বের নয়, প্রয়োগকারীর। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
দেবপ্রসাদ দেবুকে ধন্যবাদ নারী মুক্তি বিষয়ক তাঁর প্রবন্ধটার জন্য। অনেক সুন্দর সমাজতাত্ত্বিক এবং দ্বান্দ্বিক বিশ্লেষণ আছে দেবুর লেখায়। লেখার শেষে আশাবাদও আছে –
কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এটাকে আশাবাদ বলা যায় কিনা। কারণ সামাজিক মালিকানা ব্যাপারটা কী? ওটার প্রতিষ্ঠা কীভাবে হবে আমাদের দেশে? সমাজতত্ত্ব কি যতটুকু জটিল হওয়া দরকার তার চেয়েও জটিল হয়ে উঠছে ক্রমশ?
@প্রদীপ ‘দা, প্রবল আমিত্ব মিশ্রিত জটিল জীবনাচারে পিষ্ট সমাজব্যবস্থায় সমাজতত্ত্ব সত্যি যতোটুকু জটিল হবার কথা তারচে’ বেশি জটিল হয়ে যাচ্ছে বলেই আমার মনে হয়। সমাজ কেন এবং কিভাবে কাজ করে সেটি আমরা সমাজতত্ত্ব পড়ে শিখি। সমাজের বাকঁগুলো সমাজতাত্ত্বিক ভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা সমাজ চরিত্র বুঝার চেষ্টা করি। লেখাটিতে সেটিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।
সামাজিক মালিকানার বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করতে যে সাংস্কৃতিক বা মনোজাগতিক মানোন্নয়ন দরকার সেটি বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ।
রণ-কৌশলগত লক্ষ্য নিয়ে আলোচনাটা আমার উদ্দেশ্য ছিলোনা, কিংবা সেটি আলোচনার জন্য যে প্রজ্ঞা দরকার তার ধারে কাছেও আমি নেই! আমি শুধু ত্তত্বগত বিষয়টি আলোচনায় আনার চেষ্টা করেছি মাত্র।
ধৈর্য নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য এবং উৎসাহ দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।
@দেব প্রসাদ দেবু,
ব্যক্তিমালিকানা থাকলে কেন নারী স্বাধীন হতে পারবে না, ব্যাপারটি বুঝলাম না। তাহলে সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারের কথার তো আর প্রশ্নই আসে না। আমার মনে হয়, বরং নারী কোনো সম্পদের মালিক হলে তার ভিত্তি অনেক দিক থেকে তখন শক্ত হয়।
@তামান্না ঝুমু,
সমান অধিকারের প্রশ্ন না আসার কোন কারণ দেখছিনা। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার গুরুত্বটা কিন্তু স্বীকার করে নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। দেখুন-
আসলে মালিকানা শ্রেণি সৃষ্টি করে, শ্রেণি থাকলে শ্রেণি নিপীড়ন থাকবে। আলোচনাটিতে আসলে স্বাধীনতা বা অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ নিয়ে আলোকপাত করা হয়নি। মুক্তি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। স্বাধীনতা আর মুক্তি দুটি ভিন্ন জিনিস।
ব্যক্তিমালিকানা সৃষ্টি কিভাবে মনোজগতকে প্রভাবিত করে একটি উদাহরণ দিচ্ছি- সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর সবাই ধরে নিলো যে বাসস্থান যেটা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় আছে সেটি অর্থের বিনিময়ে ব্যক্তি মালিকানায় চলে আসবে দ্রুত। তখন প্রতিটি এলাকায় স্বপ্রণোদিত কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দাঁড়িয়ে গেলো। তাঁদের কাজ হচ্ছে যেসব অশীতিপর বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা একা আছেন তাঁদের দৈনন্দিন সেবাগুলো পৌছে দেয়া। যেমন বাজার করে দেয়া, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এইসব। বিনিময়ে ঐ বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাকে একটা কন্ট্রাক্টে সাইন করতে হবে, সেটি হচ্ছে তাঁর মৃত্যুর পর ঐ ফ্ল্যাটের অধিকার পাবে ঐ সংগঠন। যেহেতু ফ্ল্যাটের মালিক ঐ বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা ছিলোনা এবং তাঁদের কেউই ছিলোনা ফলে এটি তাঁর জন্য ভালো প্রস্তাব। কিন্তু নির্মম দিক হচ্ছে , দেখা যেতো সেই ফ্ল্যাটের আশায় ঐ সংগঠনগুলো বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাকে বিষ প্রয়োগে মৃত্যু তরান্বিত করতো।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
নারী দিবসের এই দিনে এই চমৎকার লেখাটি দেখে ভাল লাগল। ধন্যবাদ দেবু!
@অভিজিৎ ‘দা,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂