মীজান রহমান
২,০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমি ঢাকায়। সকালবেলা বোনের বাসায় সোফাতে বসে টেলিভিশন দেখছিলাম। প্রথম খবরটাই ছিল খুনের খবর—-যা আজকাল আমাদের দেশে ডালভাতের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মানুষ দ্যাখে, শোনে, একদণ্ড তাকায় হয়তবা, তারপর যে যার কাজে চলে যায়। যেদেশে আইনশৃংখলা কেবল নেতাদের বক্তৃতা ছাড়া অন্য কোথাও নেই, সেদেশে এরকম হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।
আমি ক্যানাডায় থাকি। খুনখরাবি এদেশেও হয়, কিন্তু আইনশৃংখলা প্রায় কখনোই নেতাদের বক্তৃতায় থাকে না, থাকে রাস্তাঘাটে যেখানে তার থাকার কথা, পুলিশের আওতায়, সাধারণ মানুষের নাগরিক কর্তব্যবোধ আর চেতনার মধ্যে। সেকারণেই হয়ত টেলিভিশনের খবরটি আমাকে খানিক উদ্গ্রীব করে তোলে সবটুকু জানার জন্যে। সাগর ও রুনি—একটি তরুণ মেধাবি দম্পতি। ছ’বছরের শিশুপুত্র। তারা দুজনই পেশা ও নেশা, উভয়তেই, সাংবাদিক। একই জায়গায় চাকরি করতেন। রাতের বেলা ওরা সবাই গভীর ঘুমে। এমন সময় অতর্কিত প্রবেশ আততায়ীর, বা আততায়ীদের। শিশুপুত্রটির বিস্ফারিত, আতঙ্কিত দৃষ্টিতে, তার বাবামাকে তারা কুপিয়ে খুন করে ফেলে যায়। কে জানে কেমন করে ঢুকেছিল তারা সেই আপাত-সুরক্ষিত ফ্ল্যাটভবনে। হয়ত দেয়াল টপকে, কিংবা দারোয়ানদের পকেটে মোটা খাম ঢুকিয়ে, কিংবা তাদেরই সাহচর্যে, কে জানবে সেরহস্য। পরের দিন সকালবেলার পত্রিকাওয়ালাদের রমরমা ব্যবসা—খুনের খবর আর সিনেমার নায়কনায়িকাদের প্রেমের খবর, এদুটোই তো প্রধান আকর্ষণ সাধারণ পাঠকদের।
টেলিভিশনে দেখছিলাম জনাবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে প্রবল প্রত্যয়ের সাথে ঘোষণা দিচ্ছেনঃ “আগামি আটচল্লিশ ঘন্টার মাঝে আমরা এই অমানুষিক হত্যাকণ্ডের অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের সামনে দাঁড় করাবো। এবং দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করব না”।আমি অস্বীকার আমি অস্বীকার করব না। আমাদের নেতানেত্রীদের মুখে এই “দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি” কথাটি শুনতে বড় মজা লাগে। ছোটবেলায় টার্জান ছবিতে দেখতাম, টার্জানের ‘হু-হুয়া হুয়া’ ডাক শোনার সাথে সাথে বনের যাবতীয় পশুরা এসে জমায়েত হত টার্জানকে বিপদ থেকে বাঁচা্নোর জন্যে। অনেকটা সেরকমই মনে হয় আমাদের মান্যগণ্য নেতানেত্রীদের “দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির” ডাকটি। দুটিতে তো প্রায় একইরকম গর্জন। তফাৎ এই যে একটিতে আর কিছু না হোক অন্তত বন্য জন্তুরা সাড়া দেয়, দ্বিতীয়টিতে কেবল সাংবাদিকরাই।
বলা বাহুল্য যে সেই ‘আটচল্লিশ ঘন্টা’র সময়সীমাটি এখনো অতিক্রান্ত হয়নি, ক্যালেণ্ডারে পাকা দুটি বছর পার হবার পরও। মন্ত্রীমহোদয়ার “দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি” যদি কাদের মোল্লার ৪২-বছর-বিলম্বিত শাস্তির মত “দৃষ্টান্তমূলক” হয় তাহলেও আমার উত্তরসূরীরা একদিন নিজেদের ধন্য বোধ করবে। কিন্তু সে-সম্ভাবনাটি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক আবহাওয়াতে একটু সুদূরপরাহত বলেই মনে হয়। কারণ বাংলাদেশে খুন সাধারণত দু’প্রকারের। এক, খুনির নিজের স্বার্থে। দুই, খুনির ওপরওয়ালা মুরুব্বিদের স্বার্থে। এই দ্বিতীয়প্রকারের খুনিদেরই সচরাচর “দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি” হয়, মানে কোনও শাস্তিই হয় না। সত্যিকার অপরাধীরা হয় হেলিপকটারে করে কোনও পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যায়, নতুবা ক্যানাডা-অস্ট্রেলিয়াতে অবৈধভাবে প্রবেশ করার পর আশ্রয়প্রার্থী হয়ে পরম আনন্দের সাথে সরকারি ভাতায় আরাম-আয়েসে জীবন যাপন করে।
এবার একটি সাম্প্রতিক ঘটনার কথা বলব যেখানে আরো একটি “দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি”র পটভূমি তৈরি হতে যাচ্ছে।
মেয়েটার নাম করবী। উচ্ছল, উদ্দাম একটি মেয়ে। যেখাণে যায় সেখানেই আলো জ্বালিয়ে দেয়। তার রূপ, তার হাসি, তার কথা বলার ভঙ্গি, উছলে পড়ে চতুর্দিকে। আমার যখন মন খারাপ হয় ওকে ডাকি। মন ভালো হয়ে যায়।
সেদিন তা হল না। উলটো আমারই মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভীষণ খারাপ। প্রথমেই শুনি তার কান্নাসজল কন্ঠ। কি হয়েছে গো, জিজ্ঞেস করি ওকে। বড় বিপদ হয়েছে আমাদের, মীজানভাই। আমার বুক কাঁপে। ওর ছেলেটার কিছু হয়নি তো? বা তার স্বামীর?
না, ওরা ঠিকই আছে। আমিই ঠিক নেই, বলল ও। দেশ থেকে দারুণ খারাপ খবর এসেছে। ও আর কথা বলতে পারছে না। একদণ্ড চুপ করে থাকল। কান্না চাপার চেষ্টা—-এমনই শক্ত মেয়ে যে কাউকে কান্না দেখাতে রাজি নয় সহজে। তারপর আস্তে করে বললঃ আমার বড় ভাইটিকে মেরে ফেলেছে তারা।
কে মেরেছে? কারা? কোথায়? কেন? বোকার মত প্রশ্ন করি। যার একটারও জবাব দেয়ার মত মনের অবস্থা তার নয় সেসময়।
আমার সবচেয়ে বড় ভাই। মাত্র ৪৫ বছর বয়স ছিল তার। তিনটে ছোট ছোট বাচ্চা। যুবতী স্ত্রী। আমার বাবামা, বৌদি, বাড়ির সবাই পাগল হয়ে গেছে। প্রতিবেশীদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটে বেড়াচ্ছে। সহানুভূতির জন্যে নয়, বিচারের জন্যে। থানার পুলিশ-দারোগার হাতেপায়ে লুটিয়ে পড়েছে—-বিচার চাই এ-হত্যার।
আস্তে আস্তে বৃত্তান্ত জানা যায়। ওরা, মানে গ্রামেরই চেনাজানা ছেলেরা। করবীর ভাইরা যাদের সঙ্গে খেলাধূলা করেছে একসময়। যারা ওর বাবার দোকানে চাকরি করেছে কোন-না-কোনও সময়। যারা বাবার বন্ধুদেরই ছেলে কিংবা ভাস্তে। যারা ক্ষেতখামারে কাজ করে না, ব্যবসাবাণিজ্য করেনা, স্কুলকলেজে যায় না। যাদের একমাত্র কাজ হল চাঁদাবাজি। রাজনীতির নামে অরাজ-নীতি।
করবীর বাবা-ভাই ব্যবসাতে পয়সা করেছেন, অবস্থা মোটামুটি ভালো। অতএব চাঁদার শিকার। সব দলেরই। বি এন পি’র রাজত্বকালে বি এন পি’র পাণ্ডারা আসে চাঁদা নিতে। আওয়ামী লীগের শাসনকালে আওয়ামী পাণ্ডারা। বাবা ওদের চাঁদা দিয়েছিলেন, কিন্তু ওদের মন তোষেনি—আরো দিতে হবে, দাবি তাদের। নইলে খবর আছে। বড় ভাই সেটা গ্রাহ্য করেননি। তাঁর যুক্তি ছিলঃ কেন, আমরা তো আওয়ামী লীগেরই লোক। আওয়ামী লীগকেই ভোট দিই সবসময়। আমাদের আবার এত টাকা দিতে হবে কেন। বোকা ভাইটা বোঝেননি যে ভোট দেয়া-না-দেয়ার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। মোট কথা হল ওদের বরাদ্দ টাকা দিতে হবে। না দিলে প্রটেকশন নেই। প্রটেকশন না থাকা মানে যে-কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সেই ‘দুর্ঘটনা’রই শিকার হলেন করবীর ভাইটা। দিনেদুপুরে, পাড়ার লোক সবাই দেখেছে সে-দৃশ্য, তারা ওর মাথায় বাড়ি দিয়ে মগজ বের করে ফেলেছে। তারপর লাশ ফেলে দিয়ে গেছে পুকুরের জলে। পাড়াপ্রতিবেশী কেউ টুঁশব্দটি করেনি। টুঁশব্দ করার ফলাফল তাদের জানা ছিল বলেই। তারা জানে এই ‘প্রটেকশন’ওয়ালাদের কোন ভয় নেই। পুলিশ ওদের পকেটে। জেলাপ্রশাসকরা তাদের ভয়ে কম্পমান। স্থানীয় রাজনীতিকরা তাদের মামা-চাচা-খালু-ফুপা। শহরবন্দরের বড় নেতারা বড়জোর একটা ফোনকলের দূরত্বে বসে আছেন। প্রটেনশনবাজদের প্রটেক্ট করার লোক আছে ঢাকায়।
প্রটেক্ট করার কেউ নেই কেবল করবীর বাবা-ভাইদের। তারা গ্রামের মানুষ। সাংবাদিকরা তাদের ক্যামেরা নিয়ে ঘিরে থাকেনা তাদের। তাদের কোনও মুরুব্বি নেই ঢাকা শহরে।
সবচেয়ে বড় কথা তারা হিন্দু। তারা ‘সংখ্যালঘু’। তাদের একমাত্র ভরসা ‘সংখ্যাগুরু’ প্রতিবেশীদের মনুষ্যত্ব।
এই মনুষ্যত্বটি আজকাল কোথায় পাওয়া যাবে বাংলাদেশে? তাইতো। ‘মনুষ্যত্ব’ নামক দুর্লভ বস্তুটিকে কেউ দেখেছেন ইদানিং?
করবীর গল্প শুনে আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেললাম। আমি বোবা। আমি অন্ধ। আমি বধির। আজকে আমার নিজেরই ‘মনুষ্যত্ব’ নিয়ে আর নিঃসন্দেহ হতে পারছি না। প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে মনে। জিজ্ঞেস করি নিজেকেঃ আচ্ছা, আমি যদি দেশে থাকতাম আজকে, আর আমার বয়সটি একাশি না হয়ে হত একুশ বা ঊনিশ, তাহলে আমি ঠিক কিভাবে আমার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতাম? করবীদের গ্রামে গিয়ে থানার মাঠে ঝাণ্ডা ধরে বসে থাকতাম? বা অনশন ধর্মঘট? আচ্ছা বলুনতো পূর্ববাংলার মুসলমানরা কখনো ‘অনশন ধর্মঘট’ করেছে কোনও মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে? না, আমার জানামতে কেউ করেনি। তাহলে আমি করব কেন? আমি কি বুঝি ‘মহৎ উদ্দেশ্য’ বলতে কি বোঝায়? না আমি বুঝি না। ‘মহৎ’ বলতে আমি বুঝি আল্লারসূলকে। ‘মহৎ’ বলতে আমি বুঝি আজমীর শরিফকে, বাগদাদের বড়পীরকে, হজরত শাহজালাল বা বাইজিদ বোস্তামিকে। ‘মহৎ’ আমাদের বড় মসজিদের ইমামসাহেব, ‘মহৎ’ আমার পিতামাতা, আমার পূর্বপুরুষ। আমি অনশন করি কেবল পবিত্র রমজানের মাসে যখন আসমানের ফেরেশতাগণ মর্ত্যলোকে ভ্রমণ করতে আসেন, মমিন মুসলমানদের সাথে বসে তারাবির নামাজ পড়েন। তাতে সোয়াব হয়। আমি কখনোই সোয়াব ছাড়া কোনও কাজ করি না। আমি কেন ‘কাফের হিন্দু’দের জানমাল রক্ষার জন্যে অনর্থক নিজেকে না খাইয়ে রাখব? এতে আমার কি ফায়দা?
না ভাই, দোহাই আপনার, আমাকে মনুষ্যত্বের কথা বলবেন না। শব্দটা ঠিক মানায় না আমাদের দেশে আজকাল। আগে ছিল, যখন আমরা বিপদে পড়েছিলাম। মনে আছে আপনার? সেই একাত্তর সালে? যখন ওই ‘কাফের হিন্দু’রাই তাদের মনুষ্যত্ব দিয়ে আমার মনুষ্যত্বকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন? জানি আপনি ভুলে গেছেন সেসব। এতদিনের পুরনো কথা কি মানুষের মনে থাকে? আর তাছাড়া, ওরা কি একবারে নিঃস্বার্থভাবে করেছিলেন সেসব? আমরা যেমন প্রতিটি কাজের ভেতর ‘সোয়াব’ খুঁজি ওরাও নিশ্চয়ই কোন-না-কোনও গোপন সোয়াবের ধান্ধায় ছিল—-নইলে দাদারা এমন উদার উন্মুক্ত হৃদয়ে খুলে দেবে কেন তাদের দুয়ার?
শুনেছি দেশের কোষাগারে এখন অঢেল পয়সা। এশিয়ার সর্বোচ্চ উন্নয়নশীল দেশ বলে পরিগণিত। আগামি দশবারো বছরের মাঝেই বিলেত-আমেরিকার পাশে দাঁড়াবার যোগ্যতা হবে। অতএব হে আমেরিকা, শয়তান আমেরিকা, সাবধান, আমরা আসছি। বাংলাদেশ আসছে, ইসলাম আসছে, তোমাদের গ্রাস করতে।
ভালো কথা, গর্বে বুক ফুলে যাচ্ছে। সবই করুণাময়ের ইচ্ছা। সবই ওই ‘হাজার বছরের’ পুঞ্জিভূত সোয়াবের ফল। কিন্তু, দয়া করে, পায়ে পড়ি আপনার, ভুল করেও আপনি আমাকে ‘মনুষ্যত্বে’র কথা শোনাবেন না। আজকে আমি করবী নামক মেয়েটির কাছে বাংলাদেশের ‘মনুষ্যত্বে’র কথা শোনাতে পারব না।
ভাবছি আমি যদি একুশ বছরের যুবক হতাম নতুন ঢাকার কোনও বনেদী পাড়ায় তাহলে কি আমি করবীর বাবা-মায়ের বুকভাঙ্গা কান্না শুনে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করতাম? করতাম কি দ্বিতীয় কোনও ‘শাহবাগ মঞ্চের’ সূচনা। এবার কি আমি সায়িদী-নিজামীর ফাঁসির দাবি মুলতুবি রেখে করবীর অভাগা ভাইটির খুনীদের ফাঁসির দাবিতে মুখর করে তুলতাম নগরীর রাজপথ? আমি কি চাইতাম দেশের যাবতীয় প্রটেনশনবাজদের প্রটেকশনদায়ী সাংসদ আর মন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের প্রটেনশন দেওয়া বন্ধ করুক সরকার? না, আমি তা চাইতাম না। সংখ্যালঘুদের প্রটেনশন দেওয়ার দায়িত্বটি আমার চেতনাতে প্রবেশ করেনি। সংখ্যালঘুদের জানমাল রক্ষার ব্যাপারটি আমার বিবেকের অংশ হয়ে ওঠেনি। সংখ্যালঘু প্রতিরক্ষার দায়িত্ব সরকারের, আমার নয়। সাধারণ নাগরিক সে-দায় থেকে মুক্ত। আমার মত তরুণদের দায়িত্ব হল দেশের সকল রাজাকারদের নির্মূল করে ফেলা। স্বাধীনতার শত্রুদের নিপাত করে ফেলা। আমার কর্তব্য হল দেশকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করা, ধনেজনে মানে সম্মানে।
কিংবা যদি হতাম আমি কোনও মধ্যবয়ষ্ক, পক্ককেশ, সদ্য হজফেরত বুদ্ধিজীবী, পত্রপত্রিকায় মূল্যবান লেখালেখি করে নিজেই মূল্যবান হয়ে উঠেছি, তাহলেই বা কি করতাম আমি? নিশ্চয়ই আরো গুটিকয় মূল্যবান কলাম লিখে সাড়া জাগিতে তুলতাম দেশে। আমন্ত্রণ পেতে থাকতাম ঢাকার বড় বড় চ্যানেলগুলো থেকে, ওঁদের মূল্যবান টকশোতে দর্শন দিয়ে দেশের যাবতীয় সমস্যার সমধান বাৎলে দিয়ে চারদিকে ‘ধন্য ধন্য’ রব তুলে দিতাম। কিন্তু তাতে কি করবীর সদ্য বিধবা-হয়ে-যাওয়া আদরের বৌদিটির অন্তহীন কষ্ট বিন্দুমাত্র লাঘব হয়ে যেত? তাতে কি চট্টগ্রামের বড়ুয়া পরিবারের ওপর দেশ ছেড়ে ইণ্ডিয়াতে চলে যাবার হুমকি বন্ধ হয়ে যেত? না, তা হত না। আমার তাতে কিছু এসেও যেত না। বুদ্ধিজীবী হিসেবে আমার কর্তব্য হল বুদ্ধি করে কথা বলা, বুদ্ধি খাটিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা লিখা—-কারণ বুদ্ধিই তো আমার জীবিকা, আমি বুদ্ধির পসরা করি, আমি বুদ্ধির বারবনিতা।
দুর্ভাগ্যবশত আমি সেই তরুণটি আর নই। আমি সেই পক্ককেশ, মধ্যবয়ষ্ক প্রখর বুদ্ধিজীবীটিও নই। আমি কেবলই এক অশীতিপর বৃদ্ধ। বিগত দিনের অস্তগামী অস্তিত্ব বই কিছু নই আমি। হয়ত সেকারণেই করবীর বাবামায়ের খবরের মত খবরগুলো আমাকে ভীষণভাবে বিচলিত করে। চট্টগ্রামের বড়ুয়া পরিবারের ওপর স্থানীয় গুণ্ডাদের উৎখাতের হুমকি আমাকে কুঞ্চিত করে দেয়। হিন্দু পরিবারের যুবতী মেয়েদের ওপর বাংলাদেশের যাবতীয় শ্বাপদ জন্তুদের আক্রমণ আমার শরীরে ক্রোধের আগুণ ধরিয়ে দেয়। এগুলো আমার বিবেকের মূলে, আমার আত্মসত্ত্বার মূলে নাড়া দেয় প্রচণ্ডভাবে। আমার মনে হয় যেন গোটা পৃথিবীর বোঝাটি আজ আমার মাথার ওপর। গোটা দেশটির লজ্জা, গোটা রুগ্ন ক্লিষ্ট সমাজটির সমস্ত গ্লানি ক্লেদ কর্দম আমার শরীরের প্রতিটি অনুপরমাণুর ভেতর প্রবেশ করে তাকে পঙ্গু করে ফেলছে, তাকে অক্ষম অবশ করে তুলছে। অথচ আমি কিছু করতে পারছিনা। কেবল নিজের একলা ঘরের শূন্যতার মাঝে বসে আমার অথর্বতাকে অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছি। আর মনে মনে বুনে যাচ্ছি আমার পরবর্তী রচনার প্লটটি।
ভণ্ড কি আমিই কম কিসে?
হ্যাঁ জানি কি বলবেন—-আমাদের দেশে হিন্দু-মুসলমান বৌদ্ধ-খৃস্টানের কোনও তফাৎ নেই। জানি, কাগজপত্রে তাই বলা হয়। সংবাদমাধ্যমে আর সরকারি ইস্তাহারে বারবার তা’ই স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় সবাইকে। বাইরের পৃথিবীতে প্রচার করা হয় যে আমাদের জাতিটি সহনশীল জাতি, ধর্মভীরু (যদিও আমি একে ধর্মভীরু না বলে বলতে চাই ‘ধর্মসর্বস্ব’, অর্থাৎ এছাড়া আর কোনও কাজই আমাদের কাছে তেমন মূল্যবান নয়) হলেও নরমপন্থী, ইত্যাদি বিভিন্ন বিশেষণ দ্বারা ভূষিত করা হয় আমাদের। কথা হল কথাগুলো বলছেন কারা? হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টানদের কাছে জিজ্ঞেস করেছেন? হিন্দু পরিবারের যুবতী মেয়েটির কাছে জিজ্ঞেস করেছেন? জায়গাজমি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবার নোটিশ পেলেন যে বৌদ্ধ পরিবারটি তাদের জিজ্ঞেস করেছেন? ‘জিজ্ঞেস করা’ বলতে আমি কি বুঝাতে চাইছি সেটা নিশ্চয়ই জানেন আপনি। মানে বড় রাস্তায় পাকড়াও করে টেলিভিশন ক্যামেরাতে জিজ্ঞেস করলে তারা মনের কথাটি বলবে না—কারণ তাতে বিপদ হতে পারে। এই যে ওদের প্রাণে ‘বিপদ হতে পারে’ নামক ভীতিটি, ওতেই তো বোঝা যায় সত্যিকার ছবিটা। ওদের মনের কথাটা জানতে চাইল দেশের বাইরে, কোনও সত্যিকার ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, যেমন ক্যানাডা-আমেরিকা-বিলেত-অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে, যেখানে তাদের ওপর ‘প্রতিশোধ’ নেবার ভয় থাকবে না, বাড়িঘর আগুণ লাগিয়ে পুড়িয়ে দেবার ভয় নেই, বাড়ির বড় ছেলেকে গুম করে ফেলার ভয় নেই। আজকে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় শতকরা আটের নিচে নেমে এসেছে, যা একসময় ছিল চল্লিশের ওপর। পরিসংখ্যানবিদদের ধারণা ২০২৫ সালের ভেতর তারা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এই একই পরিসংখ্যানবিদরা বলেন যে ২০২৫ সালের মাঝে বাংলাদেশ পূর্ণমাত্রায় একটি ডিজিটাল দেশ হয়ে উঠবে। তখন আর পশ্চিম বিশ্বের সাথে আমাদের দূরত্বটি প্রায় একেবারেই থাকবে না। আমার দৃষ্টিতে তার মানে হবে যে আমরা সৌদি আরবের মতই একটি অমুসলিমশূন্য ডিজাটালিত রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভের সম্মান অর্জন করব।
কথা হল সেরকম ‘সম্মানের’ স্বপ্নই কি দেখেছিলাম আমরা ১৯৭১ সালে? সেরকম স্বপ্নের কথাই কি শুনেছিলাম আমাদের নেতাদের কাছ থেকে? আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে? সেরকম স্বপ্নের কথা ভেবেই কি ত্রিশ লক্ষ বাঙালি, যাদের মাঝে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টানও ছিলেন প্রচুর, প্রাণ দিয়েছিলেন একাত্তরে? সেরকম স্বপ্ন নিয়েই কি ভারতের সৈন্যরা এসে প্রাণ দিয়েছিলেন আমাদের স্বাধীনতার জন্যে?
আমার মনে হয়না।
সভ্য দেশ বলতে কি বোঝায়? যেদেশ প্রচুর টাকাপয়সা বানিয়েছে? যেদেশ অন্য দেশের গরিব শ্রমিকদের তাচ্ছিল্যের সাথে আচরণ করার অধিকার অর্জন করেছে তাদের কোষাগারের অন্তহীন মুদ্রার বলে? সেটাই যদি ‘সভ্যতা’র মাপকাঠি হয় তাহলে তো সৌদি আরবও একটি সভ্য দেশ। না ভাই, দুঃখিত আমি এই দেশটিকে সভ্য দেশ বলে গণ্য করিনা। কিন্তু বর্তমান যুগের বাংলাদেশ যেন এই দেশটিকেই তাদের আদর্শস্থানীয় রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।
কিছুদিন আগেকার একটা লেখাতে আমি দেশের ভাগ্যাহত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টিকে নিয়ে লিখেছিলামঃ তারা পালাবে কোথায় বলুন। আজকে আমি তা বলব না। আজকে আমি ওদের আর পালাবার কথা বলব না। আজকে আমার প্রশ্ন ‘কোথায় পালাবে’ নয়, কেন পালাবে। এদেশ যেমন আমাদের দেশ তেমনি ওদেরও দেশ। না, ভুল বললাম। এদেশে ‘আমরা’ আর ‘ওরা’ বলে কিছু নেই। এদেশে আমরা আর ওরা মিলে একটি বৃহত্তর ‘আমরা’তে পরিণত হয়েছি। আমরা মুসলমান জাতি নই, আমরা হিন্দু জাতি নই, বৌদ্ধ বা খৃস্টান জতি নই, চাকমা বা সাঁওতাল জাতিও নই, আমরা ‘মানবজাতি’। আমরা একটি বাঙালি জাতি। আমাদের জাতিসত্বা এক, আমাদের নৃতাত্বিক পরিচয় এক, আমাদের বর্ণগোত্র সব এক। এমনকি আমাদের ধর্মও এক—সেই ধর্মের নাম ‘মানবধর্ম’। এই মানবধর্ম শব্দটি যাদের অভিধানের অন্তর্গত নয়, এই শব্দটি যারা উচ্চারণ করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়নি বা উচ্চারণ করতে অনিচ্ছুক, তারা আমাদের দেশে অবাঞ্ছিত, অনাদৃত। দেশ যদি কাউকে ছেড়ে যেতেই হয় তাহলে সংখ্যালঘুরা ছাড়বে না—-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান-চাকমা-সাঁওতালরা ছাড়বে না। ছাড়বে যাদের উপস্থিতি আমাদের পথের চলাকে বারবার, বার বার, প্রতিহত করেছে, আমাদের জাতীয় সম্মানকে খর্ব করে দিয়েছে, আমাদের জাতীয় পতাকাকে, জাতীয় সঙ্গীতকে, জাতীয় উচ্চাকাঙ্খাকে অপমান করেছে, তারা।
আধুনিক যুগের বিশ্বায়ত যান্ত্রিক পরিবেশে ‘সভ্য জাতি’ বলতে কি বোঝায়? আসলে সভ্যতা শব্দটারই বা অর্থ কি ? তার জবাব পেতে আপনি নিশ্চয়ই সৌদি আরবের বড় ইমামের কাছে যাবেন না যেমন করে যান ঈদের চাঁদ উঠল কি উঠল না তা জানার জন্যে? অথবা যাবেন না পাকিস্তান নামক একটি মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রের মনুষ্য-নামধারী বন্য পশুদের কাছে। এমনকি আমাদের স্বদেশেরই আরাম-আয়েসে জীবনযাপন করা হেফাজিতুল ইসলাম, না কিসব অদ্ভুত বিদেশী ভাষার নামধারী, তালিবান দাড়িমোছ আর পোশাকপরিহিত হুজুরদের কাছেও আপনি সভ্যতার সংজ্ঞা খুঁজতে যাবেন না, যতক্ষণ না আপনি নিজের কাণ্ডজ্ঞান হারিয়েছেন। সভ্যতার অর্থ খোঁজার জন্যে আপনি সভ্যদের কাছেই যাবেন। যেমন হ্যারিয়েট মার্টিনো ( ১৮০২-১৮৭৬) নামক এক বিদূষী মহিলা, যিনি ছদ্মনামে অনেক লেখালেখি করেছেন, এবং যাঁকে সমাজবিজ্ঞানের জননী বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয় পশ্চিম জগতে। তাঁর একটা কথা আছে এরকমঃ
“If a test of civilization be sought, none can be so sure as the condition of that half of society over which the other half has power”.
“ সভ্যতার সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মানদণ্ড যদি খুঁজতে হয় তাহলে আপনাকে দেখতে হবে সমাজের সেই অংশটির অবস্থা, যাদের ভালোমন্দের ওপর বাকি অংশটির পূর্ণ ক্ষমতা”।
অর্থাৎ ক্ষমতাহীনদের প্রতি ক্ষমতাবানদের আচরণ। সাধারণত তার মানে দাঁড়ায়ঃ সংখ্যালঘুদের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে ক্ষমতাশীল সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়টি কতখানি তৎপর। অনেকসময় দেখা যায় সংখ্যায় কম হয়েও তারা রাজত্ব করছে গোটা দেশের ওপর। যেমন সিরিয়া, ইরাক—-কিছুদিন আগ পর্যন্ত ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, রোয়াণ্ডা, জিম্বাবুই। তবে সেগুলো ব্যতিক্রম, নিয়ম নয়। নিয়ম হল সংখ্যার প্রাধান্য দিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর আধিপত্য স্থাপন করা। তাদের দয়াপরবশতার ওপর বেচারিদের সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল করে রাখা।
সেবিচারে বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়ায় বলতে পারেন কেউ? তার জবাব কে দেবে? আপনি, না, করবীর মত মেয়েরা যারা পরিবারের প্রিয় মানুষটিকে চোখের সামনে নিষ্ঠুরভাবে নিহত হতে দেখেছে, তারা? আপনি বা আমি, যার জন্ম হয়েছে একটি সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ে, এবং ওই একটিমাত্র নৈসর্গিক ঘটনার কারণে আজকে আমার বা আপনার মনে কোনও সাম্প্রদায়িক নিরাপত্তাহীনতার ভয় নেই, আমরা কি সে প্রশ্নের জবাব দেবার নৈতিক অধিকার ধারণ করি বলে মনে হয় আপনার? নাকি সে প্রশ্নের একমাত্র অধিকার কেবল তাদের যাদের ভাগ্যে সেই ‘যথাসময়ে ও যথাস্থানে’ জন্মলাভের ঘটনাটি ঘটেনি? যারা হাজার প্রতিকূলতার মাঝেও জন্মভূমির মাটিকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে, যারা বংশবংশানুক্রমে এই দেশটিকেই একমাত্র স্বদেশ বলে জেনে এসেছে, যারা এদেশের জন্যে জানমাল সবই বিসর্জন দিয়েছে জাতির চরম সংকটের সময়, অথচ আজ যাদের বাড়ি থেকে শক্তসোমর্থ ছেলেটিকে ধরে নিয়ে পরম অবলীলায় খুন করে পুকুরের জলে ভেসে যেতে দেওয়া হয়, যাদের যুবতী মেয়েকে ধরে নিয়ে যায় পাড়ার ছেলেরা, যাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয় যাতে তারা প্রাণের ভয়ে বিষয়সম্পত্তি সব ছেড়েছুড়ে পথের ভিখিরি হয়ে ছুটে যেতে পারে সীমান্তের বাইরে, তাদের?
আমি জানি বর্তমান সরকার জেনেশুনে সংখ্যালঘু নিগ্রহের নীতি সমর্থন করেন না, অন্তত সরকারিভাবে অবশ্যই না। কিন্তু নিগ্রহের নীতিকে সমর্থন না করা এক জিনিস, আর স্বীকৃত নীতিকে কার্যকরি করা আরেক জিনিস। সরকারের ওপরতলার মানুষগুলো খাতায় কলমে বা ভাষণে বচনে কি মহৎ উদ্দেশ্য প্রচার করেন তাতে কিছু আসে যায় না। বড় কথা হল তাঁদের সেই ‘মহৎ’ উদ্দেশ্যগুলো কতখানি চরিতার্থ হচ্ছে মাঠের পর্যায়ে। তাঁরা কি খবর রাখেন যে করবীর ভাইকে যারা খুন করেছে সেই খুনিদের মত খুনিরা নিয়মিতভাবেই ‘প্রটেকশন’ পেয়ে যাচ্ছে তাঁদেরই দলীয় নেতাদের কাছ থেকে? তাঁরা কি খবর রাখেন যে তাঁদের পুলিশবাহিনী, তাঁদের নির্বাচিত ও মনোনীত ব্যক্তিবর্গ, প্রায় কখনোই সত্যিকার অপরাধীদের গায়ে রাখতে দেন না কাউকে? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আমার অনুরোধ, দয়া করে একটু মনোযোগ দিন এদিকটাতে। আমাদের স্বপ্নের দেশটি যে দ্রুতগতিতে একটি দুঃস্বপ্নের নরক হয়ে উঠল বলে। সেই দুঃস্বপ্নের অভিশাপ থেকে, দয়া করে, আপনারা রক্ষা করুণ আমাদের।
অটোয়া, ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ‘১৪
মুক্তিসন ৪৩
আপনার অন্যতম সেরা লেখা এটা (Y)
দেশের নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান যাদের দায়িত্ব তাদের সবার দায়িত্বহীনতার কথা উঠে এসেছে এই প্রবন্ধে। সব শেষে আসে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সংখ্যালঘুদের উপরে দায়িত্ব। এই দায় সামাজিক, মানবিক এবং সভ্যতার। এই দায় এড়িয়ে আমরা কিছুতেই নিজেদের সভ্য বলতে পারি না।
অত্যন্ত মর্মস্পর্শী লেখা, মীজান ভাই। পুরো দেশটাই যেন এক জ্বলজ্যান্ত জাহান্নাম।
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
প্রকাশ্য মিডিয়ায় ডেড লাইন ঘোষনা করে আসামী ধরে ফেলার ঘোষনা আর কয়টি দেশে দেওয়া হয় আমার জানা নেই। ক্রিমিনাল ইনভেষ্টিগেশন সম্পর্কে যার ন্যূনতম জ্ঞান আছে সেইই জানে যে নিশ্চয়তা সহকারে ৪৮/৭২ ঘন্টার ভেতর প্রকৃত আসামী পাকড়াও করে ফেলার মত আত্মবিশ্বাস দুনিয়ার সর্বসেরা গোয়েন্দা পুলিশের মিলিতে বাহিনীও দিতে পারে না।
বর্তমান সরকারের সংখ্যালঘু নিপীড়নের অফিশিয়াল পলিসি না থেকেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না। সরকারী দলের সাথে জড়িতরাও আজকাল সংখ্যালঘু নির্যাতনে এগিয়ে এসেছে, উগ্র সাম্প্রদায়িকতার মাত্রা এতটাই ছড়িয়েছে।