[ধর্মশিক্ষার উপরে ‘বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের’ নতুন পদক্ষেপের উপর ছোট একটা ফেসবুক নোট লিখেছিলাম দিন কয়েক আগে। ভেবেছিলাম এটা একটা সামান্য নোট। মানসম্মত কিছু নয়। কিন্তু মুক্তমনা ব্লগার তামান্না ঝুমু আমাকে এটি ব্লগে দিতে অনুরোধ করেন। তার অনুরোধেই দেয়া। ব্লগের জন্য এর কলেবর বাড়াতে হল একটু। তামান্না ঝুমুকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি চেপে ধরে লেখাটা ব্লগে আদায় করে নেয়ার জন্য। ]
এক
মুক্তমনা ব্লগার ওমর ফারুক লুক্সের একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে দেখলাম বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তৃতীয় শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ধর্মীয় বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে নাকি ‘নৈতিকতা’ বলে কি একটা নাকি জুড়ে দেয়া হয়েছে। পরে ন্যাশনাল কারিকুলাম এণ্ড টেক্সটবুক বোর্ডের সাইটে গিয়ে দেখি সত্যই তাই। প্রতিটি ক্লাসের ধর্মগ্রন্থগুলোর সাথে ‘ও নৈতিক শিক্ষা’ বলে দুটি শব্দ যোগ করা হয়েছে। যেমন আপনার ধর্ম যদি ইসলাম হয়, তাহলে সন্তানের জন্য বইয়ের শিরোনাম – ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’, ধর্ম হিন্দু হলে বইয়ের নাম ‘হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’, খ্রিষ্ট ধর্মের ক্ষেত্রে ‘খ্রিষ্ট ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’, বৌদ্ধ ধর্ম হলে শিরোনাম হবে – ‘বৌদ্ধ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’। এরকমের। তৃতীয় শ্রেণী থেকে শুরু নবম-দশম শ্রেণীর প্রতিটি ধর্মের বইয়েই এই অবস্থা। কার উর্বর মস্তিষ্ক থেকে এই নয়া পরিকল্পনা বেরিয়েছে, জানি না, তবে ধর্ম বইয়ের সাথে নৈতিকতা জুড়ে দেবার ব্যাপারটা বেশ মজার লাগলো। আর এটাই হল আজকের এই প্রবন্ধের খোরাক।
দেশের বিজ্ঞজনেরা স্কুলের শিশুদের ‘ধর্মীয় নৈতিকতা’ শেখাতে চান ভাল কথা, কিন্তু এই নৈতিকতা ঠিক কি জিনিস তা ধর্মগুলো ঠিকমত আগাগোড়া না পড়লে আর না জানলে বলা যাবে না। ধর্মগ্রন্থে আমরা বিবর্তন তত্ত্বের বদলে আদম হাওয়ার কথা পড়েছি। বিবর্তন খুব খারাপ,আর আদম হাওয়ার গল্প খুব ভাল। আমরা পড়েছি তাদের দুই সন্তান হাবিল, কাবিলের কথা। আমরা ধরে নিয়েছি দুটো মানুষ, তাদের সন্তানরা মিলে সারা পৃথিবী মানুষে মানুষে ছেয়ে ফেলেছে। তবে এখানেই থেমে না গিয়ে আরেকটু সামনে আগালে, আরেকটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই একটা গভীর প্রশ্নের সম্মুখীন আমাদের হতে হয়। তাদের সন্তান উৎপাদনটা ঠিক কীভাবে হলো? সে সময় ভাইবোনে সঙ্গম ছাড়া আমাদের মানবজাতি কি তৈরি হতে পারে? বোঝাই যায়, আদম হাওয়ার গল্প সত্যি হয়ে থাকলে পৃথিবীতে আমরা এসেছি ঠিক সেই পথ ধরে, যেটাকে খোদ ধর্মগুলোই ‘চরম অনৈতিক এক অজাচার’ বলে মনে করে। যদিও কাঠমোল্লা আর সদামোল্লা সাইটগুলো অজাচার, সমকামিতা, ব্যভিচার সব কিছুর পেছনে কেবল বিবর্তনকেই দায়ী করেন, কিন্তু ধর্মগ্রন্থগুলোতে আমরা যে সমস্ত নৈতিকতা আর মূল্যবোধের গল্প শুনি তাতে রীতিমত কানে আঙ্গুল দিতে হয়। সেই হাবিল কাবিলের কথাই ধরি। যদিও আদম হাওয়ার কয়জন ছেলে মেয়ে ছিল তা নিয়ে কেউ নিশ্চিত নন, কিন্তু ইহুদী ইতিহাসবিদ জোসেফাসের অনুমান, আদমের তেত্রিশজন পুত্র এবং তেত্রিশজন কন্যা ছিল। আবার কারো কারো মতে পৃথিবীতে আগমনের পর তাঁদের ১৪০ জোড়া সন্তান হয়েছিল। কেউ বা বলেন, তাদের সন্তান সংখ্যা ছিল ৩৬১টি – এর মধ্যে একমাত্র নবী শীস ব্যতীত সবাই নাকি জন্মেছিল জোড়ায়। আদম ও হাওয়ার গর্ভে প্রতিবার নাকি একটি ছেলে ও একটি মেয়ে জন্ম নিত। বয়ঃসন্ধি হবার পরে ছেলেটির সাথে পূর্বে জন্ম নেওয়া মেয়ের এবং মেয়েকে পূর্বে জন্ম নেওয়া ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া হতো। কিংবা তারা বিয়ে করতো যমজ বোনকেই। বাইবেলের মতে, কাবিল ও হাবিল দুজনেই নিজেদের যমজ বোনকে বিয়ে করেছিল। কিন্তু তৃতীয় বোন আকলিমাকে বিয়ে করা নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হলে, এবং ঈশ্বর কাবিলের দান প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিলে, কাবিল একটা সময় হাবিলকে হত্যা করে।পবিত্র বাইবেলেই এটাকে উল্লেখ করেছে মানবেতিহাসের ‘প্রথম হত্যা’ হিসেবে। কাজেই দেখা যাচ্ছে, বিবর্তন তত্ত্বকে হটাতে গিয়ে ধার্মিকরা যে গাল গপ্পের অবতারণা করছে, তাতে আর যাই থাকুক নৈতিকতা কিংবা মূল্যবোধ বলে কিছু নেই। এই রূপকথা সত্য হলে মানব জাতির উদ্ভব ঘটেছে অজাচার, কলহ, হত্যা খুন ধর্ষণ আর প্রতারণার মধ্য দিয়ে। এখন কথা হচ্ছে, গল্পের পেছনের নৈতিকতাগুলো কি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড শেখাবেন, নাকি চেপে যাবেন? তারা কি পারবেন আপন বোনের প্রতি কামাসক্ত হাবিল কাবিলের কথা, নারীকে শস্যক্ষেত্র বানিয়ে রাখার কথা, পালিত পুত্রের স্ত্রীর মোহে ধর্মপ্রচারকেরা কিভাবে লালায়িত হয়েছিলেন কিংবা প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়সে ছয় বছরের এক বালিকার পাণিগ্রহণের কথা কিংবা তাদের বিবিধ যৌন উন্মাদনার কথা ভণিতা না করে শিশুদের শেখাতে?
তবে ধর্মীয় নৈতিকতা শেখাতে গেলে হিন্দু ধর্মকে মনে হয় কেউই ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। হিন্দু পুরাণ টুরানে যতবার চোখ বোলাই, ততবারই রীতিমত অক্কা পাওয়ার উপক্রম হয়। হ্যাঁ ইসলামের প্রচারকের তার পুত্রবধূর সাথে সম্পর্ককে যদি অনৈতিক ধরা হয়, তবে ব্রহ্মার নিজ মেয়ে শতরূপার সাথে মিলনকে কিভাবে নেয়া যায়? মৎস্যপুরাণে লেখা আছে ব্রহ্মা নাকি একদিন তার নিজের মেয়ে শতরূপাকে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারেন নি। হিন্দুদের আদি মানব মনুর জন্ম হয় ব্রহ্মা আর শতরূপার মিলন থেকেই। শুধু ব্রহ্মাই নয়, নিজ মেয়ের সাথে মিলনের কাণ্ড ঘটিয়েছে দেবতা প্রজাপতিও। ঊষা ছিলেন প্রজাপতি কন্যা। প্রজাপতি ঊষার রূপে কামাসক্ত হন, এবং মিলিত হতে চান। তখন ঊষা মৃগীরূপ ধারণ করেন। প্রজাপতি মৃগরূপ ধারণ করে তার সাথে মিলিত হন (মৈত্রায়ন সংহিতা ৪/২/২২)।
হিন্দুরা ভগবান ডেকে যাকে পুজো করেন – সেই ভগবান ব্যাপারটাই অশ্লীল। ‘ভগবান’ বলতে ঈশ্বরকে বোঝানো হলেও এটি আসলে হচ্ছে দেবরাজ ইন্দ্রের একটি কুখ্যাত উপাধি। তিনি তার গুরুপত্নী অহল্যার সতীত্ব নষ্ট করায় গুরুর অভিশাপে তার সর্বাঙ্গে একহাজার ‘ভগ’ (স্ত্রী যোনি) উৎপন্ন হয় এবং তাতে ইন্দ্রের নাম ‘ভগবান’ (ভগযুক্ত) হয় (পঞ্চ পুরাণ, ষষ্ঠ খণ্ড, ৬৯০ পৃষ্ঠা, মহাভারত, কৃত্তিবাসী রামায়ণের আদিকাণ্ডের ৬৫১ পৃষ্ঠা) । ‘ভগবান শব্দটি তাই ইন্দ্রের ব্যভিচারের একটি স্মারকলিপি, নিন্দনীয় বিশেষণ।
সুধীরচন্দ্র সরকার সংকলিত ‘পৌরাণিক অভিধান’ থেকেও ইন্দ্রের এই ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায় –
‘মহাভারতে উল্লেখ আছে যে, গৌতম মুনির অনুপস্থিতিতে ইন্দ্র তার রূপ ধারণ করে স্ত্রী অহল্যার সতীত্বনাশ করেন বলে মুনির শাপে তাঁর সমস্ত দেহে সহস্র যোনি-চিহ্ন প্রকাশ পায়। ইন্দ্রের অনুনয়-বিনয়ে গৌতম ঐ চিহ্নগুলি লোচন চিহ্নে পরিণত করেন। এইজন্য ইন্দ্রের আরেক নাম সহস্রাক্ষ বা নেত্রযোনি’। (পৌরাণিক অভিধান, পৃঃ ৪৯)
আসলে হিন্দু ধর্মের শ্রদ্ধেয় চরিত্রগুলো – ইন্দ্র থেকে কৃষ্ণ পর্যন্ত প্রত্যেকেই ছিলেন ব্যভিচারী। জলন্ধরের স্ত্রী বৃন্দা ও শঙ্খচূড়ের স্ত্রী তুলসীকে প্রতারিত করে বিষ্ণু তাদের সাথে মিলিত হয়েছেন। সপ্তর্ষির সাত স্ত্রীকে দেখে অগ্নি একসময় কামার্ত হয়ে পড়েন। আসলে ওই বিকৃত কল্পনাগুলো করেছিল বৈদিক যুগের পুরুষেরা। তারা নিজেরা ছিল কামাসক্ত, বহুপত্নীক এবং অজাচারী; তাই তাদের কল্পনায় তৈরি দেব-দেবীগুলোও ছিল তাদের মতই চরিত্রের। এজন্যই সমস্ত হিন্দু ধর্মের বই পুস্তক গুলোতে শুধু অযাচিত কাম আর মৈথুনের ছড়াছড়ি। পান থেকে চুন খসলে সে সময়কার মুনি ঋষিরা রাগে কাঁপতে কাঁপতে শাপ দিতেন। বিয়ে করতেন। তারপরও রাজাদের আমন্ত্রণে হাজির হতেন রানিদের গর্ভে সন্তান উৎপাদন করতে। সুন্দরী অপ্সরা আর বারবনিতা দেখলে এতই উত্তেজিত হয়ে যেতেন যে রেতঃপাত হয়ে যেতো। আর সেখান থেকেই নাকি সন্তান জন্মাত। অগস্ত্য, বশিষ্ঠ, দ্রোণের জন্মের উদাহরণগুলোই এর প্রমাণ।
মুহম্মদের ২০/২২ জন স্ত্রী নিয়ে হিন্দুদের কেউ কেউ নরকগুলজার করেন, কিন্তু তারা হয়তো ভুলে যান, পদ্মপুরাণ অনুসারে (৫/৩১/১৪) শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীর সংখ্যা ষোল হাজার একশ। এদের সকলেই যে গোপবালা ছিলেন তা নয়, নানা দেশ থেকে সুন্দরীদের সংগ্রহ করে তার ‘হারেমে’ পুরেছিলেন কৃষ্ণ।
সে সময় রাজা থেকে সাধারণ মানুষ, দেবতা থেকে ঋষি – সবাই বেদের যুগে যৌন উচ্ছৃঙ্খলতায় মত্ত ছিল। বৈদিক সাহিত্য এ কথাই বলে। বিশিষ্ট প্রত্নতত্ত্ববিদ ও নৃতত্ত্ববিদ ডঃ অতুল সুরের কথায় – ‘মৈথুন ধর্মটাই সেকালের সনাতন ধর্ম ছিল’ (দেবলোকের যৌনজীবন, পৃঃ ৬২)। আর সেজন্যই সাহিত্যে দেখি ৩৩ কোটি দেবতার জন্য ৬০ কোটি বারবনিতা (অপ্সরা) নিয়ে ছিল স্বর্গের সাজানো সংসার। দেবতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য উর্বশী, মেনকা, রম্ভা, তিলোত্তমা, সুপ্রিয়ার মত ৬০ কোটি কাম-কলা পটীয়সী বারবনিতা ছিল। তারপরও ওই সব কামুক দেবতারা পরস্ত্রী দেখলেই অজাচারি ও ধর্ষক হয়ে পড়তেন। যেমনি হয়েছেন চন্দ্র। সাতশ টি বৌ আর ৬০ কোটি অপ্সরা নামের বারবনিতার দখল নেয়া সত্ত্বেও দেবগুরু তারার রূপে এমনই কামার্ত হয়ে পড়েন যে তাকে অপহরণ করেন। মহর্ষি উপথ্যের স্ত্রী ভদ্রাকে দেখে জলের দেবতা বরুণ কামনাপীড়িত হন, এবং অপহরণ করেন। এই সমস্ত অনৈতিক ব্যাপার-স্যাপার গুলোই ঐতিহ্যের নামে কালচারের নামে নানা রঙে, নানা ঢঙ্গে হিন্দু ধর্মের ঔদার্যের পায়েস হিসেবে জনগণকে ইদানীং খাওয়ানো হচ্ছে। আর বলা হচ্ছে হিন্দু ধর্মের উদারতার কোন শেষ নেই।হিন্দু ধর্মের উদারতা এতটাই বেশি যে, সেক্সের নামে ধর্ষণও জায়েজ। কোন নারী যৌনমিলন প্রত্যাখ্যান করলে বৃহদারন্যক উপনিষদ ( বৃহ, ৬,৪,৬,৭) বলছে তাকে জোর করে বাধ্য করা উচিৎ।
অশ্বমেধ যজ্ঞ বলে একটা যজ্ঞ প্রচলিত ছিল প্রাচীন কালে। এ নিয়ে কথা কিছু বলা যাক। বাজসনেয়ী সংহিতার ২২-২৩ অধ্যায় থেকে জানতে পারা যায়, অশ্বমেধ যজ্ঞে প্রধান জাদু পুরোহিত প্রধান রাণীর সঙ্গে প্রকাশ্যে যজ্ঞ-ক্ষেত্রের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে মিলনে মেতে উঠতেন। অন্যান্য রানি পুরোহিতরা যৌন-মিলনের নানা উত্তেজক দৃশ্যের বর্ণনা দিতে থাকতেন উচ্চস্বরে। সব মিলিয়ে (অশ্বমেধ যজ্ঞের) পরিবেশটা হল জীবন্ত খিস্তি-খেঁউড় সহযোগে তা রিলে করে যজ্ঞে হাজির নারী-পুরুষের মধ্যে যৌন-উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়া। পরবর্তী যুগে অশ্বমেধ যজ্ঞে পুরোহিতের জায়গা নেয় যজ্ঞের অশ্বটি। যজ্ঞে নাকি প্রধানা রানী অশ্বের লিঙ্গটি নিয়ে নিজের যোনির সাথে স্পর্শ করাতেন।
বাইবেলেও অজাচার তথা ‘ধর্মীয় নৈতিকতার’ অনেক কাহিনি আছে। হাবিল কাবিলের কথা তো এই প্রবন্ধের প্রথমেই বলেছি। এর বাইরেও আছে হাজারটা অজাচার প্রমোট করা উপাখ্যান। তার মধ্যে আব্রাহাম এবং সারার পরিণয়ের কথা উল্লেখ্য। সারা ছিলেন আব্রাহামের বোন (হাফ সিস্টার)। তাকেই বিয়ে করেছিলেন আব্রাহাম। বাইবেলে আয়াত উদ্ধৃত করি – ‘সারা আমার স্ত্রী, আবার আমার বোনও বটে। সারা আমার পিতার কন্যা বটে, কিন্তু আমার মাতার কন্যা নয়’(আদি পুস্তক, ২০:১২)। বাইবেলে আছে অম্রম এবং যোকেবদের কথাও। যোকেবদ ছিলেন অম্রমের পিসি এবং একই সাথে তার স্ত্রী (যাত্রাপুস্তক, ৬:২০)। বাইবেল (সামুয়েল ২ – ১৩) থেকে আমরা পাই অম্নোন এবং তামরের কাহিনি। অম্লোন ছিলেন দাউদের পুত্র এবং তামর ছিল তার বোন। অম্লোন তাকে মনে মনে কামনা করতেন। শিমিযের পুত্র যোনাদব অম্নোনের বন্ধু ছিলেন। যোনাদবের পরামর্শে অম্লোন একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন, তামর তার বাসায় সেবা সুস্রষা করতে আসলে সুযোগ বুঝে অম্লোন তাকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের পর বাড়ি থেকে বের করে দেয় (সামুয়েল ২:৮ – ১৫) । তবে সবচেয়ে জম্পেশ হচ্ছে লুত এবং তার কন্যাদের অজাচারের কাহিনি। এই কাহিনির সূত্রপাত যখন ঈশ্বর অনৈতিকতার অপরাধে সডোম এবং গোমরাহ নগরী ধ্বংস করেন। যদিও বাইবেলে কোথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই, মোল্লারা খুব নিশ্চিত হয়েই বলেন অনৈতিকতার কারণ ছিল ‘সমকামিতা’। তা ভাল। সমকামিতার কারণে নগর ধ্বংস করলেন যে ঈশ্বর, তিনিই আবার পিতা এবং কন্যাকে অজাচারে উৎসাহিত করে মানব জাতি টিকিয়ে রাখার সুমহান উদ্যোগ নিলেন, এবং একে উদযাপিত করলেন আনন্দের সাথেই।
ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় বাইবেলের আদি পুস্তকে (আদিপুস্তক ১৯: ২৯-৩৮)। কাহিনিটা এরকমের।
ঈশ্বর (সডোম এবং গোমরাহ)উপত্যকার সমস্ত নগর ধ্বংস করলেন। কিন্তু ঈশ্বর ঐ নগরগুলি ধ্বংস করার সময় অব্রাহামের কথা মনে রেখেছিলেন এবং তিনি অব্রাহামের ভ্রাতুষ্পুত্রকে ধ্বংস করেন নি। লুত ঐ উপত্যকার নগরগুলির মধ্যে বাস করছিলেন। কিন্তু নগরগুলি ধ্বংস করার আগে ঈশ্বর লুতকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
পয়গম্বর লুত যোয়ার শহরে গিয়ে এক পাহাড়ে দুই মেয়েকে নিয়ে বাস করতে লাগলেন। তিনি শহরে বাস করতে ভয় পাচ্ছিলেন আর আর সেই কারণে পাহাড়ের একটি গুহায় বাস করতে লাগলেন।
বড় কন্যাটি তার ছোট বোনটিকে বললো, “আমাদের পিতা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। এবং নগরী ধ্বংস হয়ে যাবার পর আমাদের সন্তানাদি দিতে পারে এমন অন্য পুরুষ এখানে নেই। চল আমরা আমাদের বাবাকে মদ খাইয়ে করিয়ে মাতাল করে ফেলি এবং তার সাথে সঙ্গমের বন্দোবস্ত করি – যাতে করে আমরা আমাদের বাবার বীজকে সংরক্ষণ করতে পারি। আমাদের পরিবার রক্ষা করার জন্যে আমরা এইভাবে আমাদের পিতার সাহায্য নেব!”
অতঃপর তারা সেই রাত্রে তাদের বাবাকে মদ্যপান করালো এবং প্রথম কন্যাটি তার সাথে রাত্রি যাপন করলো। কখন মেয়েটি আসলো, রাত্রি যাপন করলো এবং উঠে চলে গেলো, তিনি (পয়গম্বর লুত) কিছুই জানতে পারলেন না।
পরের রাত্রে প্রথম কন্যাটি তার ছোট বোনটিকে বললো, “গত রাত্রে আমি পিতার সঙ্গে এক বিছানায় শুয়েছি। আজ রাতে আবার তাঁকে দ্রাক্ষারস পান করিয়ে বেহুঁশ করে দেব। তাহলে তুমি তাঁর সঙ্গে যৌনসঙ্গম করতে পারবে। এভাবে আমরা সন্তানাদি পেতে আমাদের পিতার সাহায্য নেব। এতে আমাদের বংশধারা অব্যাহত থাকবে”।
অতঃপর সেই রাত্রেও তারা তাদের বাবাকে মদ্যপান করালো এবং ছোট কন্যাটি তার সাথে রাত্রি যাপন করলো। কখন মেয়েটি আসলো, রাত্রি যাপন করলো এবং উঠে চলে গেলো, তিনি (পয়গম্বর লুত) কিছুই জানতে পারলেন না।
আর এভাবেই পয়গম্বর লুতের দুই মেয়ে তাদের পিতার ঔরসজাত সন্তান গর্ভে ধারণ করলো। প্রথম কন্যার গর্ভে একটি ছেলে সন্তান জন্ম হলো – যার নাম রাখা হলো মোয়াব। তিনিই হলেন মোয়াবাইটস জাতির পিতা (অর্থাৎ তার বংশধরেরা মোয়াবাইটস নামে পরিচিতি লাভ করলো)। ছোট কন্যাটিও এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিল। তার নাম বিন্-অম্মি। বর্তমানে য়ে অম্মোন জাতি আছে তাদের আদিপুরুষ হলেন বিন্-অম্মি।
এই হচ্ছে বাইবেলের সুমহান নৈতিকতার কাহিনি। কিন্তু কেবল অজাচারই নয়, কেউ যদি পুরো বাইবেলটি পড়েন ঈশ্বরের নামে খুন, রাহাজানি, ধর্ষণকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। বর্বরতার কিছু উদাহরণ তো দেওয়া যেতেই পারে। যুদ্ধজয়ের পর অগণিত যুদ্ধবন্দিকে কব্জা করার পর মুসা নির্দেশ দিয়েছিলেন ঈশ্বরের আদেশ হিশেবে সমস্ত বন্দী পুরুষকে মেরে ফেলতে, আর কুমারীদের বাঁচিয়ে রাখতে যাতে তারা ইচ্ছে মত ধর্ষণ করতে পারে:
‘এখন তোমরা এই সব ছেলেদের এবং যারা কুমারী নয় এমন সব স্ত্রী লোকদের মেরে ফেল; কিন্তু যারা কুমারী তাদের তোমরা নিজেদের জন্য বাঁচিয়ে রাখ’ (গণনা পুস্তক, ৩১: ১৭-১৮)।
এই ভার্সের মূলকথাই হল,সবাইকে মেরে ফেল, কেবল কুমারীদের বাঁচিয়ে রাখ যাতে ইচ্ছে মত ধর্ষণ করা যায়। একটি হিসেবে দেখা যায়, মুসার নির্দেশে প্রায় ১০০,০০০ জন তরুণ এবং প্রায় ৬৮,০০০ অসহায় নারীকে হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়াও নিষ্ঠুর, আক্রমণাত্মক এবং অরাজক বিভিন্ন ভার্সসমূহের বিবরণ পাওয়া যায় যিশাইয় (২১: ৯), ১ বংশাবলী (২০:৩), গণনা পুস্তক (২৫: ৩-৪), বিচারকর্তৃগন (৮: ৭), গণনা পুস্তক (১৬: ৩২-৩৫), দ্বিতীয় বিবরণ (১২: ২৯-৩০), ২ বংশাবলী (১৪:৯, ১৪:১২), দ্বিতীয় বিবরণ (১১: ৪-৫), ১ শমূয়েল (৬:১৯), ডয়টারনোমি (১৩:৫-৬, ১৩:৮-৯, ১৩:১৫), ১ শমূয়েল (১৫:২-৩), ২ শমূয়েল (১২:৩১), যিশাইয় (১৩: ১৫-১৬), আদিপুস্তক (৯: ৫-৬) প্রভৃতি নানা জায়গায়।
বিশ্বাসী খ্রিষ্টানরা সাধারণতঃ বাইবেলে বর্ণিত এই ধরনের নিষ্ঠুরতা এবং অরাজগতাকে প্রত্যাখ্যান করে বলার চেষ্টা করেন, এগুলো সব বাইবেলের পুরাতন নিয়মের (ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ) অধীন, যীশু খ্রিষ্টের আগমনের সাথে সাথেই আগের সমস্ত অরাজগতা নির্মূল হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এটি সত্য নয়। বাইবেলের নতুন নিয়মে যীশু খুব পরিষ্কার করেই বলেছেন যে তিনি পূর্বতন ধর্মপ্রবর্তকদের নিয়মানুযায়ীই চালিত হবেন :
এ কথা মনে কোর না, আমি মোশির আইন-কানুন আর নবীদের লেখা বাতিল করতে এসেছি। আমি সেগুলো বাতিল করতে আসি নি বরং পূর্ণ করতে এসেছি’ (মথি, ৫: ১৭)।
খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারীরা যেভাবে যীশুকে শান্তি এবং প্রেমের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন, সত্যিকারের যীশু ঠিক কতটুকু প্রেমময় এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। যীশু খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন যে :
‘আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি এই কথা মনে কোর না। আমি শান্তি দিতে আসি নাই, এসেছি তলোয়ারের আইন প্রতিষ্ঠা করতে। আমি এসেছি মানুষের বিরুদ্ধে মানুষকে দাঁড় করাতে; ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে, মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে, বৌকে শাশুড়ির বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি’ (মথি, ১০: ৩৪-৩৫)।
ব্যভিচার করার জন্য শুধু ব্যভিচারিণী নন, তার শিশুসন্তানদের হত্যা করতেও কার্পণ্য বোধ করেন না যীশু:
‘সেইজন্য আমি তাকে বিছানায় ফেলে রাখব, আর যারা তার সঙ্গে ব্যভিচার করে তারা যদি ব্যভিচার থেকে মন না ফিরায় তবে তাদের ভীষণ কষ্টের মধ্যে ফেলব। তার ছেলেমেয়েদেরও আমি মেরে ফেলব ‘(প্রকাশিত বাক্য, ২: ২২-২৩)।
এই ধরণের শ্লোক এবং আয়াতগুলো সঠিকভাবে উল্লেখ করলে শিশুরা কি শিখবে? আমি চাই দেশের কেষ্টবিষ্টুরা আমাদের কোমলমতি শিশুদের যখন ধর্মীয় নৈতিকতা শেখানোর দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তখন, তাদের সবকিছু ঠিক ঠাক মত শেখানো হোক। তারা খণ্ডিত নৈতিকতা জেনে বড় হবে কেন!
আর নৈতিকতার ব্যাপার যখন আসছেই, যুদ্ধবন্দিনীদের ব্যাপারে ধর্মীয় যে আয়াতগুলো আছে সেগুলোরই বা কি হবে? ধর্মীয় নৈতিকতা শেখাতে গেলে কি সেগুলো আসবে না? মুহম্মদের প্রথম জীবনীকার ইবনে ইসহাক তার ‘সিরাত রসুলাল্লাহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, মুসলমানরা বানু হাওয়াজিন গোত্রকে পরাজিত করার পরে প্রায় ৬ হাজার নারী ও শিশুর দখল নিয়ে নেয়। যুদ্ধ থেকে সংগৃহীত নারীরা ইসলামী যোদ্ধাদের মধ্যে বন্টিত হয়। যেমন, রায়হানা নামের এক সুন্দরী ইহুদিনী নারীকে নবী নিজের জন্যেই নির্বাচিত করেন। রায়তা নামের সুন্দরী বন্দিনীটি হযরত আলী তার জন্য নেন, জয়নব নামের আরেক যুদ্ধবন্দী নারী পড়ে আবার হযরত ওসমানের ভাগে। হযরত ওমর আবার তিনি নিজে না নিয়ে ভোগ করার জন্যে তা প্রিয় পুত্র আব্দুল্লাহর হাতে তুলে দেন বলে কথিত আছে। শুধু রায়হানা নয়, জাওয়াহিরা এবং সাফিয়া নামের আরও দুই রক্ষিতা ছিল নবীর। জওয়াহিরা তার হাতে আসে বানু আল-মুস্তালিক অভিযান থেকে, সাফিয়া আসে খায়বারের বানু নাজির গোত্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান থেকে। এমনকি কিছু হাদিসে উল্লিখিত আছে যে, যুদ্ধজয়ের পর স্বামীর সামনে কিংবা জীবিতাবস্থায় স্ত্রীকে ধর্ষণেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন মহানবী (দেখুন এখানে)। একবার যুদ্ধজয়ের পরে কোন কোন সাহাবী বন্দিনীদের সাথে সহবাস করতে বিরত থাকতে চাইছিলেন, কারণ তাদের স্বামীরা ছিল জীবিত, কিন্তু মহানবী উপায় বাৎলে দিলেন, ‘তার যদি স্বামী জীবিত থাকে, বন্দী হওয়ার পর সে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে’। (কোরআন-৪:২৪, সহি মুসলিম-৮:৩৪৩২)।
সহি মুসলিম, বুক নং-৮, হাদিস নং-৩৪৩২ থেকে জানা যায়:
আবু সাইদ আল খুদরি (রাঃ) বলেছেন যে হুনায়েনের যুদ্ধকালে আল্লাহর রাসুল (দঃ) আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠান। তারা তাদের মুখোমুখি হলো এবং তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলো। যুদ্ধে পরাজিত করার পর কিছু বন্দী তাদের হাতে আসল। রাসুলুল্লার কিছু সাহাবি ছিলেন যারা বন্দিনীদের সাথে সহবাস করতে বিরত থাকতে চাইলেন, কারণ তাদের স্বামীরা ছিল জীবিত, কিন্তু বহু ঈশ্বরবাদী। তখন মহান আল্লাহ এ সম্পর্কিত আয়াতটি নাজেল করলেন- “এবং বিবাহিত নারীগণ তোমাদের জন্যে অবৈধ, তবে যারা তোমাদের দক্ষিণ হস্তের অধিকারে আছে তাদের ছাড়া”।
বলা বোধ হয় নিষ্প্রয়োজন, ‘তোমাদের দক্ষিণ হস্তের অধিকারে’ [Ma malakat aymanukum, ما ملكت أيمانکم)] একটি আরবি ফ্রেস, যার অর্থ দাস, দাসী এবং যুদ্ধবন্দিনী। ডিকশনারি অব ইসলাম থেকে জানা যায়, দাসী যদি বিবাহিতাও হয়, তাকেও অধিকারে নেয়ার ক্ষমতা আছে মনিবের – সুরা ৪:২৪; “তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী- আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাদেরকে বৈধ করেছেন”। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় জালালাইন বলেন- “অর্থাৎ, যাদেরকে তারা যুদ্ধের ময়দানে আটক করেছে, তাদের সাথে সহবাস করা তাদের জন্যে বৈধ, যদি তাদের স্বামীগণ জীবিতও থাকে’।
একই ধরণের হাদিস সুনান আবু দাউদ, বই ১১ হাদিস ২১৫০ এবং আরো বহু জায়গাতেই পাওয়া যায়। আবুল কাশেম একটা সময় তার গবেষণালব্ধ সিরিজ ইসলামে বর্বরতা (নারী-অধ্যায়—৯) এধরণের বেশ কিছু হাদিস সংকলিত করেছিলেন। পাঠকদের সেগুলো পুনর্বার পড়ার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি, কোরানের ৮:৬৯, ৪:৩, ৪:২৪, ২৩: ৫-৬, ৩৩:৫০, ৭০:২২-৩০, এবং সহি বুখারির ৫:৫৯:৪৫৯, ৮:৭৭:৬০০, ৩:৩৪:৪৩২; সহি মুসলিম ৮:৩৪৩২, ৮:৩৪৩৩, ৮:৩৩৭১, ; আবু দাউদ ২: ২১৫০, ১১: ২১৫০, ১১: ২১৫৩, ৮: ৩৩৮৩, ৩১:৪০০৬ প্রভৃতি আয়াতগুলো (দেখুন এখানে) পড়লে বোঝা যায়, পাকিস্তানী সৈনিকেরা একাত্তরে বাংলাদেশের নারীদের উপর যা করেছিলো তা ধর্মসম্মত এবং ধর্মপ্রচারকদের দ্বারা নির্দেশিত। কিন্তু স্কুলের শিশুরা সেগুলো জানবে না। তারা বড়জোর জানবে, কাদের মোল্লা কিংবা বাচ্চু রাজাকারদের মত লোকজন যারা বাঙালি নারীদের মালে গনিমত ভেবে দেদারসে ধর্ষণ করেছে, তাদের কাজ ছিল একেবারেই অনৈসলামিক। তারা জানবে না একাত্তরে মালে গনিমত কাদের বানানো হত, আর কেনই বা রাজাকারেরা বিধর্মী নারীদের ‘মালে গনিমত’ বানিয়ে হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিত, কিংবা নিজেরাই মনের সুখে ধর্ষণে ঝাঁপিয়ে পড়তো।
এভাবেই ধর্মগুলো টিকে থাকে। আক্রমণাত্মক, মানহানিকর, লজ্জাকর এবং অমানবিক আয়াতগুলো যেগুলো নারীদের অবদমনে, বিধর্মীদের কতল করতে কিংবা হানাহানি দাঙ্গা ফ্যাসাদে অহরহ ব্যবহৃত হয়, সেগুলোই আবার ধর্মের মাহাত্ম্য প্রচারের সময় সুযোগ বুঝে চেপে যাওয়া হয়, আর ভাল ভাল কথামালা ধর্মের নামে নৈবদ্য আকারে প্রচার করা হয়। কিন্তু তারপরেও শেষ রক্ষা হয় না। গৈরিক লেবাসের ফাঁক গলে বেরিয়ে পরে সত্যিকার নগ্ন চেহারা মাঝে সাঝেই। এমনি একটি চেহারার উন্মত্ত প্রকাশ দেখতে পাওয়া গিয়েছিল কিছুদিন আগে। মুক্তমনা ব্লগার আদিল মাহমুদ ‘ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ লিখছিলেন মুক্তমনায় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তিনি সেসময়কার বাংলাদেশের সরকারী শিক্ষা বোর্ডের নবম-দশম শ্রেণীর ‘ইসলাম-শিক্ষা’ বইটির (তখন বইটির নাম এ বছরের মতো ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ ছিল না) কিছু স্ক্যান করা পৃষ্ঠা উদ্ধৃত করেছিলেন, যা রীতিমত আতঙ্কজনক। বইটিতে ‘কুফ্র’ কী, ‘কাফির কারা’ এ সংক্রান্ত আলোচনা আছে, যা রীতিমত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপ্রসূত। অবিশ্বাসীরা হল কাফের; তারা অকৃতজ্ঞ, যাদের দুনিয়ায় কোন মর্যাদা নাই, তারা অবাধ্য ও বিরোধী, জঘন্য জুলুমকারী, হতাশ/নাফরমান।
একই বইয়ের ৫৩ পাতায় বেশ গুরুত্ব সহকারে জিহাদ সম্পর্কিত শিক্ষা বর্ণিত হয়েছে। শুধু জিহাদের সংজ্ঞা নয়, কিভাবে এবং কাদের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে তা স্পষ্ট ভাষাতেই বর্ণনা করা হয়েছে রেফারেন্স সহকারে –
বাংলাদেশের ইসলাম-শিক্ষা বইটির এই অংশটুকু পড়লে কিন্তু অনেকেরই মনে হবে বিন লাদেন, বাংলা ভাই, শায়খ রহমানদের সন্ত্রাসী বলা এই ধর্মশিক্ষার আলোকে মোটেই যুক্তিসংগত নয়। আদিল মাহমুদ যৌক্তিক ভাবেই প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বাংলা ভাই/শায়খ রহমানকে সন্ত্রাসী বলা এই ধর্মশিক্ষার আলোকে কতটা যুক্তিসংগত? বেচারারা তো পরিষ্কার আল্লাহর আইনই প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিকুল শক্তির বিরুদ্ধে জেহাদ করছিল’। বইটি পড়লে আরো মনে হবে ইসলাম শিক্ষা বইটি যেন ইমাম আল গাজ্জালির উগ্র আদর্শের আলোকে লেখা হয়েছে যিনি ইসলামের মধ্যে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী মোতাজিলাদের মুক্তবুদ্ধিকে এক সময় ধ্বংস সাধন করেন নির্মমভাবে।আদিল মাহমুদ আরো কিছু রেফারেন্স দিয়েছিলেন ইসলাম শিক্ষা বইটি থেকে। তার ভাষ্য মতে,
‘বইটিতে সবই যে এমন ধরনের কথাবার্তা আছে তা না, যে কোন ধর্মগ্রন্থতেই বেশ কিছু ভাল ভাল কথাবার্তা, সদুপদেশ যেমন পাওয়া যায় তেমন এখানেও আছে। সত নাগরিক, সুসন্তান,সুপ্রতিবেশী হবার সুপরামর্শ, দেশসেবা/সমাজ সেবার, গুরুত্ব এ জাতীয় বিষয় ধর্মের আলোকে জোর দেওয়া হয়েছে যেগুলি প্রশংসনীয়ই বলা চলে। যদিও এগুলির ফাঁকেও ফাঁকেও কায়দামত কিছু কিছু যায়গায় সাম্প্রদায়িক চেতনা ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে ঠিকই। যেমন ৫৬ পৃষ্ঠায় প্রতিবেশীর হক আলোচনায় মুসলমান প্রতিবেশীর হক বেশী এমন ধারনা সরাসরি দেওয়া হচ্ছে। ৭৪ পৃষ্ঠায় বন্ধু নির্বাচনের একটি গাইড লাইন হিসেবে মহাত্মা ইমাম গাজ্জালি (রঃ) এর রেফারেন্স দিয়ে বলা হচ্ছে যে লোক কোরান সুন্নাহর পরিপন্থী কাজে লিপ্ত তাকে ত্যাগ করা কর্তব্য বলে। এই গাইড লাইন মেনে পাশের বাড়ির পৈতা পরিহিত, মূর্তিপূজক হিন্দু কিংবা গলায় ক্রুশ ঝোলানো খৃষ্টানের সাথে বন্ধুত্ব করা নিশ্চয়ই সম্ভব নয়। পৈতা পরা, ক্রুশ পরা যে আল্লাহর কাছে অমার্জনীয় অপরাধ কুফরের লক্ষণ সেটা তো আগেই পরিষ্কার করা হয়েছে’।
আমার খুব ইচ্ছে করছিল আমাদের এত সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবারের নবম-দশম শ্রেণীর জন্য বরাদ্দকৃত ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইটিতে ঠিক কি ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে, বা আদৌ কোন কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা জানতে! কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ন্যাশনাল কারিকুলাম এণ্ড টেক্সটবুক বোর্ডের সাইটে গিয়ে নবম দশম শ্রেণীর বইটি নামানোর লিঙ্ক পাওয়া গেল না। অন্য সকল শ্রেণীর ইসলাম ধর্মের বইয়ের লিঙ্ক আছে, কিন্তু নবম দশম শ্রেণীরটা নেই। এ বড় অদ্ভুত ঠেকল আমার কাছে। তবে কি আত্মমণাত্মক আয়াত আর জিহাদি ব্যাখ্যা একটু মোলায়েম করার দরকার পড়েছে? বাংলা বইয়ের ডাউনলোডের লিঙ্ক না থাকলেও ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্রদের জন্য বরাদ্দকৃত বইয়ের একটা লিঙ্ক পাওয়া গেল (এখানে)। সেটাতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে খুব একটা ভিন্নতা যে পেলাম তা নয়। ৯ নং এবং ১০ নং পৃষ্ঠায় যথারীতি কাফিরদের ভর্ৎসনা করা হয়েছে। আদিল মাহমুদ উপরে যে বাংলা বইয়ের স্ক্রিনশট দিয়েছিলেন, সেই পয়েন্টগুলোই হুবহু ইংরেজিতে তুলে ধরা হয়েছে। কাফিরদের সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে অকৃতজ্ঞ,(Ingratitude), অবাধ্য ও বিরোধী (Disobidience)।কুফর একটি জঘন্য জুলুম (Promotion of Sinfulness),তারা অনৈতিকতা ছড়ায় (Spread of Immorality) তাদের জন্য রয়েছে হতাশা (Despair Raises)এবং অনন্তকালের শাস্তি (Eternal Punishment) ইত্যাদি। এর পর গেলাম বিখ্যাত জিহাদ অংশে। সেটা পাওয়া গেল ১০৬ – ১০৭ পৃষ্ঠার দিকে। গিয়ে একটু অবাকই হলাম। বাংলাতে যেভাবে ‘প্রকাশ্য জিহাদ’ আর ‘অপ্রকাশ্য জিহাদ’ বলে মোটাদাগে জিহাদ শেখানোর পায়তারা দেখেছিলাম, ইংরেজিতে যেন অনেকটা মোলায়েম। সেখানেও দুটো পয়েন্ট করে বর্ণনা আছে বটে, কিন্তু ‘প্রকাশ্য জিহাদ’ আর ‘অপ্রকাশ্য জিহাদ’ এর ইংরেজি হিসেবে যেরকম ভাবে direct Jihad এবং indirect Jihad গোত্রের কিছু অবধারিতভাবে আশা করছিলাম সেরকম কিছু নেই। তবে বাংলা বইয়ের দুটি পয়েন্টের বদলে ইংরেজি বইয়ে জিহাদের পয়েন্ট (প্রকারভেদ?) তিনটি। প্রথম পয়েন্টে জিহাদের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে এটা নিজের অশুভত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (To fight against one’s own evil self(Nafs))। ২য় পয়েন্টটা আরো মজার। এখানে জিহাদের ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হয়েছে ‘জ্ঞানের মাধ্যমে জিহাদ’ (To conduct Jihad with the help of knowledge) । তবে মজার ব্যাপার হল, জ্ঞানের মাধ্যমে যুদ্ধের আয়াত হিসেবে যা উদ্ধৃত হয়েছে তার সারমর্ম হল, অবিশ্বাসীদের অমান্য (disobey) কর আর তাদের সাথে বড় সড় যুদ্ধে (‘big fight’) যাও –
বিধর্মীদের প্রতি তীব্র আক্রমণাত্মক এই বাণী কি করে জ্ঞানার্জনের সাথে সম্পর্কিত হল তা আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বোধগম্য হল না। আর এ বইয়ে বলা হয়েছে কোরানের মতানুযায়ী এটা নাকি ‘গ্রেটেস্ট জিহাদ’ । বিন লাদেনদের কথা যদি বাদও দেই, বাঁশের কেল্লা আর আমার দেশের সম্পাদকেরা যে এ পয়েন্টের আওতায় বেহেস্তবাসী হবেন এটা নিশ্চিত।
তবে এখানে থামলেও না হয় চলত। বক্তব্য একটু ঘোলা হয়ে যাচ্ছে ভেবে এই দুই জিহাদের বাইরে আরেক জিহাদের আমদানি করা হয়েছে। এটাই সেই জিহাদ যেখানে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর গ্রন্থকারের মতে এটাই জিহাদের সর্বোচ্চ স্তর (highest level of Jihad)।
তবে মজার এখানেই শেষ নয়। এত যুদ্ধংদেহী কথাবার্তা বলতে গিয়ে কিছুটা ক্লান্তি অথবা অস্বস্তির কারণেই কিনা জানিনা, কিংবা মুক্তমনায় ইসলাম শিক্ষা বইটির সমালোচনা প্রকাশের কারণেই কিনা জানিনা, বইয়ের ১০৭ পৃষ্ঠায় ‘জিহাদ এণ্ড টেরোরিজম’ নামে একটি নতুন অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়েছে। সেই অনুচ্ছেদে ইনিয়ে বিনিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে জিহাদের সাথে সন্ত্রাসের আসলে কোনই যোগ নেই । যারা জিহাদের সাথে সন্ত্রাসকে এক করে দেখেন তাদের জ্ঞানগম্মি নেহাতই কম –
এখন কথা হচ্ছে জিহাদের সাথে সন্ত্রাসের কোন যোগ যদি নাই থাকে তবে এই ‘মূল্যবান অংশ’টি কেন কেবল জিহাদ নিয়ে আলোচনার পরেই যোগ করা হয়েছে? ১৭৮ পৃষ্ঠার এই দীর্ঘ বইটিতে আখিরাত, সালাত, ইবাদত, ফিতনা, ফ্যাসাদ, গীবত, আখলাক, তাকওয়া, কেয়ামত সহ এমন কোন বিষয় নেই যা আলোচনা করা হয়নি, অথচ কেবল জিহাদের পরেই হুড়মুড় করে ‘জিহাদ এণ্ড টেরোরিজম’ অনুচ্ছেদ যোগ করতে হল! শিশুদের নৈতিকতা শিখাতে গিয়ে ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনা’ সিন্ড্রোম প্রকাশ করে দিচ্ছেন না তো?
দুই
ছোটবেলায় একটা গল্প ছিল আমাদের পাঠ্যপুস্তকে। এক বুড়ি নাকি মুহাম্মদ (সাঃ)র চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো, প্রতিদিনই। মহানবী প্রতিদিনই কষ্ট করে পায়ের কাঁটা তুলে ফেলতেন, আর পথ দিয়ে হেঁটে যেতেন। তারপর একদিন পথ দিয়ে হাটতে গিয়ে দেখেন কোন কাঁটা নাই। মুহাম্মদ (সাঃ) বুড়ির বাসায় গিয়ে হাজির হলেন বুড়ি অসুস্থ কিনা জানার জন্য। যে বুড়ি মহানবীর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতেন, সে বুড়িকে ক্ষমা করে দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন নবী মুহম্মদ। মুশকিল হল, কিন্তু বড় হয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম, এই গল্পের কোন সত্যতা নাই। বরং জানলাম, মুহম্মদের বিরুদ্ধে স্যাটায়রধর্মী কবিতা লেখার ‘অপরাধে’ বরং তিনি আবু আফাক নামের এক শতবছরের বয়োবৃদ্ধ কবিকে হত্যা করেছিলেন। হত্যা করা হয়েছিল আসমা বিনতে মারওয়ান নামের আরেক নারী কবিকেও। নবীর নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিল ক্কাব ইবনে আশরাফকেও। বুড়ির ঘটনার কোন প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, উপরে উল্লিখিত কবিদের ঘটনাগুলোর সমর্থনসূচক হাদিস পাওয়া যায় অনেক। এগুলো সত্য বলেই মুহম্মদের পরবর্তীকালের অনুসারীরা মুহম্মদের প্রদর্শিত কাজগুলোই ভাইরাসের মত কপি করে করে একনিষ্ঠ-ভাবে পালন করেছেন বিভিন্ন সময়ে। ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ লিখার অপরাধে সালমান রুশদীকে হত্যার ফতোয়া দেয়া হয়েছিল খোমেনির পক্ষ থেকে ১৯৮৯ সালে। কয়েক বছর আগে আগে ডাচ চলচ্চিত্রকার থিও ভ্যানগগকে ও একইভাবে হত্যা করা হয় ‘ইসলামকে অপমান’ করার অজুহাতে। আমাদের দেশে হুমায়ুন আজাদ, আসিফ মহিউদ্দীন কিংবা থাবা বাবার উপর জিহাদি আক্রমণও এই ‘বিশ্বাসের ভাইরাসের’ই সংক্রমণ বললে অত্যুক্তি হয় না। অনেকেরই হয়তো মনে আছে, থাবা বাবা ওরফে রাজীব হত্যার পর পরই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। সে ভিডিওতে খুব স্পষ্ট করেই বলা হয়েছিল, নবী মুহম্মদ যেভাবে ক্কাব ইবনে আশরাফ, আসমা বিনতে মারওয়ানের মত কবিদের হত্যা করেছিলেন ইসলামের আর নবীর বিষেদগার করার শাস্তি হিসেবে, ঠিক একইভাবে ‘কুলাঙ্গার ব্লোগার’ (ঠিক এভাবেই উচ্চারিত হয়েছে ভিডিওতে) থাবা বাবাকে মেরে ফেলাও জায়েজ হয়েছে। আমি চাই এই নৈতিকতাগুলোর কথা বইয়ে আসুক।
যিনি সামান্য কবিতা লেখার জন্য এভাবে, এত নির্দয়ভাবে প্রতিপক্ষ কবিদের ধ্বংস করেছেন, বয়োবৃদ্ধ কিংবা নারী বলেও কোন করুণা দেখাননি – তিনি কাঁটা বিছানো বুড়িকে এক লহমায় ক্ষমা করে দেবেন তা বোধ হয় ভাবা যায় না। আসলে ধর্মের পরবর্তীকালের অনুসারীরা তাদের নেতাদের এই নির্দয় কাজ কর্ম দেখে লজ্জিত হয়েছেন বোধ হয়; তারা পরে অনেক ভাল ভাল কথা জুড়ে দিয়ে মিথ্যে একটা মানবিক রূপ দিতে সচেষ্ট হয়েছেন। তাদের এই পরবর্তী সংযোজনগুলো কেবল মিথ, কোন সত্যতা নেই। এরকম অনেক দৃষ্টান্ত আছে। যেমন, ছোটবেলা থেকে আমরা শুনে শুনে বড় হয়েছিলাম, মুহম্মদ (সাঃ) নাকি বলেছেন ‘“জ্ঞানার্জনের জন্য সুদূর চীনে হলেও যাও’। কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, এটা তিনি কখনোই বলেননি। এটা একটা জাল হাদিস। একই রকম ভাবে ‘মুসলিমদের ভেতর এমন একজন ব্যক্তিও নেই, যার গুনাহগুলো জুম্মার দিনে ক্ষমা করে দেয়া হয় না’ কিংবা ‘আমি হলাম জ্ঞানের শহর আর আলী তার দরজা’ – এই হাদিসগুলোও জাল। বুখারি, দাউদ, মুসলিম, মুয়াত্তা, কুদসি – কোথাওই এই হাদিসের অস্তিত্ব নেই এগুলো কেবল ছড়ানো হয়েছে ধর্মের বর্বরতাগুলো আড়াল করে একটা মানবিক রূপ দেওয়ার জন্য।
মনে আছে নিশ্চয় বাংলাদেশে নির্বাচনের পর যখন সংখ্যালঘু নির্যাতন শুরু হল, তখন কিছু মডারেট ধর্মবাদীরা কিছু হাদিসের উল্লেখ করে ফেসবুক সয়লাব করে দিলেন যাতে ‘প্রমাণিত’ হয় যে, হিন্দুদের উপর কত সদয় এই ধর্ম। কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম নয়। যে হাদিস নম্বর উল্লেখ করে ছড়ানো হয়েছে, সেই নম্বরে গিয়ে দেখা যায় সেরকম কোন হাদিস নেই। কাছাকাছি কিছু হাদিস আছে (ভিন্ন নম্বর), কিন্তু এগুলো সেগুলো ভিন্ন সময়ে (ধিম্মি সংক্রান্ত) ভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এসেছিল, হিন্দুদের ‘রক্ষা’ করার কথা ভেবে নয়। এব্যাপারে লুক্সের শেষ মন্তব্যটি দেখা যেতে পারে, কিংবা এখানে দুটো লিঙ্ক ( এক, দুই) আছে, কেউ চাইলে বিষদ দেখে নিতে পারেন।
একটা সময় ইন্টারনেট ছিল না। ছিল না কম্পিউটার। এসমস্ত শোনা কথাকে প্রমাণ ধরে মহাপুরুষদের মহিমা প্রচার করা হত, তাদের নবী, রসু্ল, পয়গম্বর, দেবদূত বানানো হত। রাখা হত পূজার আসনে বসিয়ে। আজ প্রযুক্তির গতি যেমন বেড়েছে সেই সাথে বেড়েছে মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি এবং সংশয়। এই যুগে মিথ্যে দিয়ে কি আর কালোকে সাদা বানানো যায়?
ধর্মহীন হলে কি সমাজ অনৈতিক হয়ে যাবে?
আমরা উপরে ধর্ম এবং ধর্মশিক্ষার সাথে নৈতিকতার সম্পর্ক দেখলাম। এবারে একটু বিপরীত চিত্র দেখি, কেমন? এক মাস আগে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে, যা হয়তো অনেকেরই চোখ এড়িয়ে গেছে। খবরের শিরোনাম – ‘অপরাধী কম, তাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারাগার’ । ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ০৩ তারিখে পত্রিকায় প্রকাশিত সেই সংবাদ থেকে জানা গিয়েছিল, সুইডেনের কারাগারগুলো নাকি সব ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিগত সময়গুলোতে কারাবন্দীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ার ফলেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে।
আমাদের মত দেশ যেটা দুর্নীতিতে শীর্ষস্থানীয়, যেখানে বিশ্ব-বেহায়া এরশাদের মত সুযোগসন্ধানী প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কিংবা রাষ্ট্রীয় নেতা হবার গৌরব নিয়ে থাকেন, যেখানে কেউ সুযোগ পেলেই অন্যের ঘার ভেঙে, চুরি চামারি কিংবা প্রতারণা করে টু-পাইস কামিয়ে নিতে চায়, তাদের হয়তো ব্যাপারটা অবাক করবে। হয়তো তারা আরো অবাক হবেন জেনে যে, সুইডেন পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নাস্তিক-প্রধান দেশ (দেশটিতে নাস্তিকের হার শতকরা ৪৫ থেকে ৮৫ ভাগ হিসেবে উঠে এসেছে বিভিন্ন সমীক্ষায়); এমনি একটি সমীক্ষা দেয়া হল পাঠকদের জন্য:
আমাদের দশের অনেকেই যারা ধর্ম এবং নৈতিকতাকে এক করে দেখেন, যারা মনে করেন ধর্ম না থাকলেই সমাজ উচ্ছন্নে যাবে, তাদের কাছে ‘প্রায় ধর্মহীন’ সুইডেনে কারাবন্দীদের সংখ্যা এভাবে কমে যাওয়ার উদাহরণটা হয়তো খানিকটা বিস্ময়ের বটে। এর কারণ আছে। সেই ছেলেবেলা থেকেই নৈতিক চরিত্র গঠনের মূলমন্ত্র হিসেবে তোতা পাখির মতো আমাদের শেখানো হয়েছে নীরক্ত বাক্যাবলী- ‘অ্যাই বাবু, এগুলো করে না। আল্লাহ কিন্তু গুনাহ দিবে’। ছোটবেলা থেকেই এইভাবে নৈতিকতার সাথে ধর্মের খিচুড়ি একসাথে মিশিয়ে এমনভাবে ছেলে-পিলেদের খাওয়ানো হয় যে তারা বড় হয়েও আর ভাবতেই পারে না যে ধর্ম মানা ছাড়াও কারো পক্ষে ভালো মানুষ হওয়া সম্ভব। কিন্তু সত্যিই কি ধর্মের সাথে নৈতিক চরিত্র গঠনের কোনো বাস্তব যোগাযোগ আছে?
ব্যাপারটির অনুসন্ধান করে আমি আমার সহলেখক রায়হান আবীরের সাথে মিলে বছর দুয়েক আগে একটা বই লিখেছিলাম ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ নামে। বইটি লিখতে গিয়ে একাডেমিয়ায় প্রকাশিত বেশ কিছু পরিসংখ্যান নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়েছে, পরিচিত হয়ে হয়েছিল গবেষকদের প্রাসঙ্গিক কাজের সাথে। সবচেয়ে আলোচিত ছিল ফিল জুকারম্যানের উদাহরণটি। ভদ্রলোক ক্যালিফোর্নিয়ার একটি কলেজের সোশিওলজি বিভাগের অধ্যাপক। তিনি ২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। সেসব দেশগুলোতে ঈশ্বরে বিশ্বাস এখন একেবারেই নগণ্য পর্যায়ে নেমে এসেছে। যেমন, সুইডেনের কথা আমরা আগেই বলেছি; সেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ ভাগ এবং ডেনমার্কে প্রায় ৮০ ভাগ লোক এখন ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না । অথচ সেসমস্ত ‘ঈশ্বরে অনাস্থা পোষণকারী’ দেশগুলোই আজ পৃথিবীতে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্থ এবং সবচেয়ে কম সহিংস দেশ হিসেবে চিহ্নিত বলে ফিল সাহেবের গবেষণায় উঠে এসেছিল। ফিল জুকারম্যান তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি বই লিখেছেন, ‘ঈশ্বরবিহীন সমাজ’ (Society without God: What the Least Religious Nations Can Tell Us About Contentment) শিরোনামে ।
তিনি সেই বইয়ে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন যে, ডেনমার্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আরহাসে থাকাকালীন সময়গুলোতে কোনো পুলিশের গাড়ি দেখেন নি বললেই চলে। প্রায় ৩১ দিন পার করে তিনি প্রথম একটি পুলিশের গাড়ি দেখেন রাস্তায়। পুরো ২০০৪ সালে মাত্র একজন লোক হত্যার খবর প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ, সেই ২০০৪ সালে পুরো বছর জুড়ে প্রায় পঁচিশ লক্ষাধিক মানুষ বসবাসকারী মেট্রোপলিটন শহর আরহাসে সংগঠিত খুনের সংখ্যা ছিল এক। এ থেকে বোঝা যায় এ সমস্ত দেশগুলোতে মারামারি হানাহানি কতো কম। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে ডেনমার্ক পৃথিবীর সবচেয়ে সুখীতম দেশ ।
মোদ্দাকথা হল – বেশিরভাগ ড্যানিশ এবং সুইডিশ আমাদের দশের মত ধর্ম দ্বারা সংজ্ঞায়িত ‘গুনাহ’ বা পাপ নামক কোনো ব্যাপারে বিশ্বাসী নন অথচ দেশ দু’টিতে অপরাধ প্রবণতার হার পৃথিবীর সকল দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন। এই দুই দেশের প্রায় কেউই চার্চে যায় না, পড়ে না বাইবেল। তারা কি অসুখী? ৯১ টি দেশের মধ্যে করা এক জরিপ অনুযায়ী, সুখী দেশের তালিকায় ডেনমার্কের অবস্থান প্রথম, যে ডেনমার্কে নাস্তিকতার হার মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা আশি ভাগ। স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় মাত্র ২০ শতাংশের মতো মানুষ ঈশ্বরের বিশ্বাস করেন, তারা মনে করেন ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশ্বাস করেন, মৃত্যুর পরের জগতে। আর বাকিরা স্রেফ কুসংস্কার বলে ছুঁড়ে ফেলেছেন এ চিন্তা।
‘ঈশ্বরহীন’ এইসব সমাজের অবস্থাটা তবে কেমন? দেশগুলো কি সব উচ্ছন্নে গেছে, যেভাবে আমাদেরকে ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়েছে? না, তা যায়নি। বরং, সমাজের অবস্থা মাপার সকল পরিমাপ- গড় আয়ু, শিক্ষার হার, জীবন যাপনের অবস্থা, শিশুমৃত্যুর নিম্নহার, অর্থনৈতিক সাম্যাবস্থা, লিঙ্গ সাম্যাবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, দুর্নীতির নিম্নহার, পরিবেশ সচেতনতা, গরীব দেশকে সাহায্য সবদিক দিয়েই ডেনমার্ক ও সুইডেন অন্যান্য সকল দেশকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে উপরে। তবে পাঠকদের আমরা এই বলে বিভ্রান্ত করতে চাই না যে, এইসব দেশে কোনো ধরনের সমস্যাই নেই। অবশ্যই তাদেরও সমস্যা আছে। তবে সেই সমস্যা সমাধানের জন্য তারা যৌক্তিক পথ বেঁছে নেয়, উপর থেকে কারও সাহায্যের অপেক্ষা করে না, কিংবা হাজার বছর পুরনো গ্রন্থ ঘেঁটে সময় নষ্ট করে না। ইহজাগতিক সমস্ত সমস্যার সমাধান ইহজাগতিকভাবেই সমাধানের চেষ্টা এবং উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
কেবল ফিল জুকারম্যানের কাজই নয়, অবিশ্বাসের দর্শন বইটিতে আরো অনেক পরিসংখ্যান নিয়েই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছিলাম। আরো কিছু পরিসংখ্যান আসবে আমার পরবর্তী ‘বিশ্বাসের ভাইরাস‘ (প্রকাশিতব্য, ২০১৪) গ্রন্থটিতে। গবেষকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে (মাইকেল শারমারের ‘The Science of Good and Evil’ বইয়ে এ ধরণের বেশ কিছু পরিসংখ্যানের উল্লেখ পাওয়া যাবে), আমেরিকায় নাস্তিকদের চাইতে পুনরুজ্জীবিত খ্রিস্টানদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার বেশি; এও দেখা গিয়েছে, যেসব পরিবারের পরিবেশ ধর্মীয়গতভাবে অতিমাত্রায় রক্ষণশীল সেসমস্ত পরিবারেই বরং শিশুদের উপর পরিবারের অন্য কোনো সদস্যদের দ্বারা বেশি যৌন নিপীড়ন হয় । ১৯৩৪ সালে আব্রাহাম ফ্রান্সব্লাউ তার গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন ধার্মিকতা এবং সততার মধ্যে বরং বৈরী সম্পর্কই বিদ্যমান। ১৯৫০ সালে মুর রসের গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, ধার্মিকদের তুলনায় নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদীরাই বরং সমাজ এবং মানুষের প্রতি সংবেদনশীল থাকেন, তাদের উন্নয়নের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি ১৯৮৮ সালে ভারতের জেলখানায় দাগী আসামীদের মধ্যে একটি জরিপ চালিয়েছিল। জরিপের যে ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল, তা ছিল অবাক করার মতো। দেখা গিয়েছে, আসামীদের শতকরা ১০০ জনই ঈশ্বর এবং কোনো না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাসী । আমেরিকায়ও এরকম একটি জরিপ চালানো হয়েছিল ৫ ই মার্চ, ১৯৯৭ তারিখে। সে জরিপে দেখা গেছে যে আমেরিকার জনসাধারণের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ (৮-১০%) ধর্মহীন হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে অপরাধ-প্রবণতা কম, সে তুলনায় ধার্মিকদের মধ্যে শতকরা হিসেবে অপরাধ-প্রবণতা অনেক বেশি। ফেডারেল ব্যুরোর দেয়া পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় জেল হাজতে নাস্তিকর মাত্র ০.২ ভাগ, বাকিরা সবাই ধার্মিক। আমাদের ধারণা আজ বাংলাদেশে জরিপ চালালেও ভারতের মতোই ফলাফল পাওয়া যাবে। ঈশ্বরে বিশ্বাস, পরকালে বিশ্বাস, বেহেস্তের লোভ বা দোজখের ভয় কোনোটাই কিন্তু অপরাধীদের অপরাধ থেকে নিবৃত্ত রাখতে পারে নি। আল্লাহর গোনাহ কিংবা ঈশ্বরের ভয়েই যদি মানুষ পাপ থেকে, দুর্নীতি থেকে মুক্ত হতে পারত, তবে তো বাংলাদেশ এতদিনে বেহেস্তে পরিণত হতো। কিন্তু বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমরা আজ কী দেখছি? বাংলাদেশে শতকরা ৯৯ জন লোকই আল্লা-খোদা আর পরকালে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও দুর্নীতিতে এই দেশ মাঝেমাঝেই থাকে পৃথিবীর শীর্ষে। ধর্মে বিশ্বাস কিন্তু দেশবাসীকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে পারে নি। পারবেও না। যে দেশে সর্বোচ্চ পদ থেকে বইতে শুরু করে দুর্নীতির স্রোত, যে দেশে গোলাম এরশাদ, শামীম ওসমান, গোলাম আজম, নিজামী, হাজি সেলিম,লালু ফালু, জয়নাল হাজারীর মতো হত্যাকারী, ধর্ষক, ছিনতাইকারী, ডাকাত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার দরুন শুধু রেহাই ই পায় না, বরং বুক চিতিয়ে ঘুরে-বেড়াবার ছাড়পত্র পায়, নেতা হবার সুযোগ পায়, সে দেশের মানুষ নামাজ পড়েও দুর্নীতি চালিয়ে যাবে; তারা রোজাও রাখবে, আবার ঘুষও খাবে। তাই হচ্ছে। এই তো ধর্মপ্রাণ, আল্লাহ-খোদায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা। অপরদিকে সুইডেন কিংবা ডেনমার্কের মতো ঈশ্বরবিহীন দেশগুলোর দিকে তাকালে বুঝতে পারি আমাদের দেশের ধর্মকেন্দ্রিক নৈতিকতার কলসিটা কতটা ফাঁপা।
আমরা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় দেখেছি কিছুদিন আগে। বিশিষ্ট এই ইসলামিস্ট রাজাকার বাংলাদেশের ইসলামিক রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। কাদের মোল্লা, নিজামী, গোলাম আজম, সাকা চৌধুরী কিংবা বাচ্চু রাজাকারের মতো মানুষেরা আমাদের বারবারেই মনে করিয়ে দেয়, যে ধর্মকে নৈতিকতার উৎস বলে মনে করা হয়, সেই ধর্মের নামে মানুষেরা কতটা নৃশংস হয়ে উঠতে পারে সুযোগ পেলেই। একাত্তরে রাজাকারদের কাজকর্ম আমাদের অনেক সময়ই চোখ আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় মানবিকতার চেয়ে ধর্মের সৈনিকদের কাছে ধর্মবোধটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। এদের মতো লোকদের কথা ভাবলেই নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ স্টিফেন ওয়াইনবার্গের বিখ্যাত উক্তিটি মনে পড়ে যায় –
‘ধর্ম মানবতার জন্য এক নির্মম পরিহাস। ধর্ম মানুক বা নাই মানুক, সবসময়ই এমন অবস্থা থাকবে যে ভালো মানুষেরা ভালো কাজ করছে, আর খারাপ মানুষেরা খারাপ কাজ করছে। কিন্তু ভালো মানুষকে দিয়ে খারাপ কাজ করানোর ক্ষেত্রে ধর্মের জুড়ি নেই’।
শুধু একাত্তর তো কেবল নয়, বছর কয়েক আগে গুজরাটে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দাঙ্গা, আর তারও আগে অযোদ্ধায় বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে শিবসেনাদের তাণ্ডব নৃত্য ধর্মের এই ভয়াবহ রূপটিকেই স্মরণ করিয়ে দেয়, যেটা প্যাস্কেল বহু আগে আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয় গেছেন –
‘Men never do evil so completely and cheerfully as when they do it from religious conviction.’।
উপরের পরিসংখ্যানগুলো দেওয়ার উদ্দেশ্য এটা প্রমাণ করা নয় যে, মানুষ নাস্তিক হলেই ভালো হবে কিংবা আস্তিক হলেই খারাপ হবে, বরং এটাই বোঝানো যে, ধর্মকে যে নৈতিকতার একমাত্র উৎস বলে ঢালাওভাবে আমাদের সমাজে প্রচার করা হয় সেটা বোধ হয় প্রশ্ন করার সময় এসেছে। ব্যবচ্ছেদ করার সময় এসেছে স্কুল কলেজের ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সম্পর্কযুক্ত বইগুলোকে। আমাদের শিক্ষা এবং চিন্তাচেতনা কেবল ধর্মমুখী না হয়ে বরং হয়ে উঠুক বাস্তবমুখী।
বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নতুন সংযোজন ‘ধর্ম ও নৈতিকতা’ লেখাটি ফেসবুকে দেয়ার পর থেকেই পাঠকদের নানা ধরণের মন্তব্য পাচ্ছি। এর মধ্যে রঞ্জন নন্দির করা মন্তব্যটি সত্যই চিত্তাকর্ষক, হয়তো জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্ণধারেরা আমলে নিতে পারেন –
ধন্যবাদ সবাইকে।
ধর্ম কে শিক্ষার থেকে বাদ দিতে হবে তবেই শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে। ১৯৭৯ আগের ইরানে সেখানকার শাহ মোহাম্মদ রেজা পাভ্লভি শিক্ষা থেকে ধর্ম কে বাদ দিয়েছিলেন, এবং তখন তেহেরান ইউনিভারসিটি খুব উন্নতি করেছিল।
দারুন লাগল লেখাটি।
একটা কথা জানাতে চাই, অনেক হিন্দি ভাষী রা আগ্রহী, এই মুক্ত মনার বাংলা ইংলিশ এর পাশাপাশি একটি হিন্দি সংস্করণ বের করুন।
ইন্দ্রনীল গাঙ্গুলী,
মুক্তমনা সম্পর্কে অনেক ফ্রেঞ্চ, জার্মান, সুইডিশ ভাষাভাষীরাও আগ্রহী। ভাষাজ্ঞানের স্বল্পতাজনিত যে সমস্যার কারণে আমরা এসব ভাষায় সংস্করণ বের করতে অসক্ষম, সেই একই কারণে হিন্দি কোনো সংস্করণ বের করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। এছাড়াও ভারতের বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর ইংরেজি ভাষায় চমৎকার দক্ষতা ও দক্ষিণ ভারতে হিন্দির অপ্রতুল ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করলে হিন্দিকে আলাদাভাবে অগ্রাধিকার দেবার কোনো কারণ নেই।
১। “সক্ষম” এর বিপরীত অক্ষম, অসক্ষম নয়।
এই লাইনে এই শব্দটি খুবই গুরুত্বপুর্ন, তাই বিকৃত বানানে দৃষ্টিকটু দেখায়।
২। কমরেডদের ছোট হজ ও বড় হজ করা দেখে মনে হচ্ছে, এই জেনারেশনে শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা থাকবেই।পরের জেনারেশনে বা আমুল্ভাবে পরিবর্তিত কোন রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি এই দাবী তোলা রইল।
টেক্সট বুক বোর্ড হয়ত নৈতিকতা বলতে ধর্মীয় নৈতিকতাকে বোঝায় নি। তবে ধর্ম শিক্ষার সাথে নৈতিকতাকে জুড়ে দেয়াটা চরম ভুল হয়েছে। কেননা ধর্ম কোন কালেও নৈতিকতা প্রচার করে নাই। একটু ভেবে দেখলে দেখা যাবে, নৈতিকতার ব্যাপারগুলো অনেকটা ইউনিভারসাল। এখানে
জাতীয় কথাগুলো সংগৃহীত করে আলাদা একটা নৈতিক শিক্ষার বই করা যেতে পারে। এর পরে সব ক্লাস থেকেই ধর্ম শিক্ষা উঠিয়ে দিতে হবে। ধর্ম যে কেউ তার নিজের বাসায় শিখবে। এর জন্য আলাদা করে স্কুলে পড়ানোর দরকার নেই। বাংলা-ইংরেজি-বিজ্ঞান-ইতিহাস-গণিত আমরা স্কুলে শিখি, কিন্তু ধর্ম যেন স্কুলে না শিখি, এমন একটা ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
😀 :rotfl: বেদম হাসি পেলো । আপনার আমার ভাবনার সীমারেখা একই শুধু তফাৎ আপনি সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পাড়েন আমি পারিনা । আমার সনদ পত্র বলতে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত আছে । কিন্তু নিজের চেস্টায় বিভিন্ন বই পড়ি । বানানেও কিছুটা দুর্বল । তাই তিন বছর ধরে মুক্তমনায় আমি উকি দেয় । আড়াল থেকে মুক্তমনার প্রচার করি বিভিন্ন ব্লগে বন্ধুদের মাঝেও । মুক্তমনায় লেখার তেমন যোগ্যতা নেই বলে লিখিনা ।আজ কেন যেন লোভ সামলাতে পাড়লাম না একটি ভুল বানানে পূর্ণ কমেন্ট ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে পড়ে নেবেন ।
‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’, ধর্ম হিন্দু হলে বইয়ের নাম ‘হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’, খ্রিষ্ট ধর্মের ক্ষেত্রে ‘খ্রিষ্ট ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’, বৌদ্ধ ধর্ম হলে শিরোনাম হবে – ‘বৌদ্ধ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’।
খুব সহজ অংক অনেক বড় করে লিখেছেন । এক ঘণ্টা ধরে পড়লাম ও আমাদের শিক্ষা এবং চিন্তাচেতনা কেবল ধর্মমুখী না হয়ে বরং হয়ে উঠুক বাস্তবমুখী এই চেতনা কে লালন করতে করতে আমার বয়স কমতে শুরু করেছে । আপনার আমার মতের কোণ মূল্যায়ন হবেনা কেন ? তা খুব সংক্ষেপে বোঝানোর চেষ্টা করছি । তবে এক কথায় বধিরের কানের কাছে সর্বচ্চ ডেসিবলের হর্ন বাজিয়ে কোন লাভ নেই । তারা বধির কিন্তু অন্ধ নয় , এগুলো মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে ফাইদা লুটার ছলচাতুরী মাত্র ।
আল্লাহর সাথে কারো তুলনা করা শিরক হয় সম্ভবত সুনেছেন ?
আল্লাহর পরিচয় জানতে চাওয়া পাপ জেনেগেছেন ? ঠিক আমাদের দেশের ক্ষমতাসীন সরকার বা বিরোধী দল ও ……… তাদের উদ্দেশে কিছু বলাও পাপ অন্যায় অপরাধ ।তবু আমি পাপ করি অপরাধ করি । যেমন দুই দলের দুই নেত্রীর ইস্তেমায় মোনাজাত নিয়ে ভাব নেয়ার সময় কর্কশ ভাবে অপমান করে দেয় । ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করা বন্ধের কথা বলি ?
ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা যদি হত তবে মনের দর্পণে একটি সুন্দর সকাল দেখতাম । কিন্তু সেটি হয়নি কারন গোবর গনেশ নারাজ হলে রাজনৈতিক ফায়দা লুটা সম্ভব নয় ।
আসলে আমরা অনেকে মনে করি প্রতিটি ধর্মের মূল বিষয় হলও মানুষের মগজ ধলায় করে ডাস্টবিনের ময়লা আবর্জনা ঢেলে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করে নেয়া ।কিন্তু প্রকিত পক্ষে এর চেয়েও নিকৃষ্ট প্রয়াস থাকে ধর্মের ছায়া তলে যা অনেকে লক্ষ করেনা ।আপনি অনেক কিছু সুনিপুর্ন দক্ষতার সাথে তুলে ধরেছেন ।তাই একটি আন্তরিক ধন্যবাদ ।
কিন্তু ধর্ম কি ? ধর্ম কেন কাঁদে ? ধর্মের মাফলার গলায় পেঁচিয়ে যারা ধর্মের রাজপুত্র সেজে আছে তারা কি কখনো শুনেছে ধর্মের কান্না ?
আমাদের দেশে ধর্ম মন্ত্রী আছে কি না জানিনা তবে ধর্মের অভিনেতা অনেক আছে ।
সবচেয়ে বড় কথা হলও আমরা ধর্ম সম্পর্কে কিছু জানিনা । যা জানি সব ভুল আর যেটা সঠিক সেটা আমরা মানতে পারিনা ।
বলতে লজ্জা করে অশারিরিক শক্তির আরাধনার পদ্ধতিকে আমরা সাধারণ ভাবে ধর্ম মনে করি । আর এই আরাধনার অনেক পদ্ধতি বের করেছে মাকড়সার দল ।তাই অনুসারিয়া বিভিন্ন দলে ভাগ হয়েগেছে ।
চায়ে একটু চিনি দেবার আগে বলে নেয়া প্রয়োজন । উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা সহজে উদ্ভিদ চেনার জন্য যেমন দশ টি ভাগে ভাগ করেছেন । তেমন ভাবে ধর্মের লেজ ধরতে পারলে ধর্মের কাঁধে বসা সহজ হয়ে যাবে । তাই ধর্মকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নিতে পাড়ি ।
১। অঞ্চল ভিত্তিক ২। বিশ্বাস ভিত্তিক ৩। উৎপত্তি ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ।
১। অঞ্চল ভিত্তিক – সেমেটিক , নন সেমেটিক , এরিয়ান, নন এরিয়ান , বেদিক , নন বেদীক ।
২। বিশ্বাস ভিত্তিক- একেশ্বরবাদী , বহু-ঈশ্বরবাদী, দ্বি-ঈশ্বরবাদী , সন্নাসব্রত , নৈতিক , প্রকৃতিবাদী , নাস্তিক ।
৩। উৎপত্তি ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে – Islam , Hinduism, Judaism, Zoroastrianism, Taoism, Buddhism, Jainism , Confucianism , Mandaeanism , Christian ইত্যাদি । (স্রষ্টার সন্ধানে পৃষ্ঠা ৮)
এসব কমন কথা বলে লাভ নেই । কে শুনে কার কথা অন্ধ প্রজার দেশে গাধারা যখন রাজা ।
“সত্য বলে জেন নাও, এই মানুষ লীলা।
ছেড়ে দাও নেংটি পরে হরি হরি বলা
মানুষের লীলা সব ঠাঁই
এ জগতের তুলনা নাই।
প্রমাণ আছে সর্বদাই।
যে করে সে খেলা
শাস্ত্র তীর্থ ধর্ম আদি
সকলের মূল মানুষ নিধি
তার উপরে নাইরে বিধি।
ভজন-পূজন জপমালা।
মানুষ ভজনের উপায়
দীনের অধীন দুদ্দু গায়
দিয়ে দরবেশ লালন সাঁইর দায়
সাঙ্গ করিয়ে পাল।”
[img]https://www.facebook.com/photo.php?fbid=615172251851788&set=a.100651169970568.1325.100000770564837&type=1&theater[/img]ভালো থাকবেন । শুভকামনা রইলো ।
(Y) (FF)
অসাধারন লেখা | এক নিঃশ্বাসে পড়তে হয় | নয়তো পিছিয়ে পড়তে হয় |
কিন্তু আমার মনে হয় এই ধর্মীয় লেখাগুলোকে সবসময়ই একটু পরিবর্তন করে প্রকাশ করা হয় | যেমন অনৈতিক, অবৈজ্ঞানিক বিষয়গুলোকে উল্লেখ না করা | আরও একধাপ এগিয়ে বলা যায়, ধর্মীয় লেখাগুলোকে এমন ভাবে পেশ করা হয় যা কিছু বিজ্ঞান, কিছু নৈতিকতা, কিছু দর্শন বলে মনে হয় | বাস্তবে পুরোটাই ধর্ষণ | ধন্যবাদ অভিজিৎ দা এবং যারা পোস্টটিতে মূল্যবান মন্তব্য রেখেছেন |
ধর্মশিক্ষা বই গুলোর নাম পরিবর্তন অভিজিৎ-দা জানতেন না এটায় কিছুটা অবাক হয়েছি। মাঝখানে ৯ম-১০ম শ্রেণীর “ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা” বইয়ে “দেবতাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত পশুর মাংস খাওয়া হালাল” এইরকম একটা লাইন থাকায় অনলাইনে ছাগুরা অনেক ম্যা ম্যা করেছে। পরে সরকার ঐ বই গুলো ফেরত নেয়।
অনেকে হয়তো জানেন না যে পুরো দেশের শিক্ষকরা ক্লাসরুমে সবচেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে ৯ম-১০ম জীববিজ্ঞান, ৮ম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে। এতদিন পর্যন্ত কোন বইয়ে ভুল তথ্য দেয়া থাকলে শিক্ষকরা ঝাড়ি দিয়ে বলতেন “বইয়ে প্লুটোকে গ্রহ বলছে তো পরীক্ষায় আসলে তাই দিবে” যদিও প্লুটোর গ্রহ স্ট্যাটাস কেঁড়ে নেয়া হয়েছে সেটা ক্লাসের সবাই জানে! মানে বইয়ের তথ্যের উপর কোন মা বাপ নাই, বইয়ে লেখা সবই সঠিক।
কিন্তু ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে যখন নতুন করে লেখা বইগুলোতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত প্রথমবারের মত “জীবের বংশগতি ও বিবর্তন” নামে আলাদা চ্যাপ্টার তৈরি হয়, তখনি হয়েছে মজা। মোটামোটি তরুণ শিক্ষকেরা চ্যাপ্টারটা পড়াতে চাইলেও অপেক্ষাকৃত বয়স্করা সর্বোপরি চেষ্টা করছে চ্যাপ্টারটি এড়িয়ে যাওয়ার। যেমন, আমার নিজের স্কুলে মর্নিং শিফটে নতুন যোগ দেয়া টিচার চ্যাপ্টারটা গুরুত্ব দিয়ে পড়াচ্ছেন, এবং যতটা শুনেছি ছাত্ররা বিপুল বিক্রমে প্রশ্ন করে করে প্রচণ্ড উৎসাহের প্রকাশ করছে। কিন্তু ডে শিফটের সিনিয়র শিক্ষক বলে দিয়েছে “এই চ্যাপ্টার থেকে ভালো প্রশ্ন আসবে না তাই চ্যাপ্টারটি তিনি পড়াবেন না!” আবার, কিছু শিক্ষক বলতে বাধ্য হচ্ছেন “যদিও বিবর্তন তত্ত্ব সঠিক না তবুও বইতে যেহেতু লেখা আছে পরীক্ষায় সেভাবেই উত্তর দিও। এটা শুধু পরীক্ষার জন্য পড়বা, বিশ্বাস করার দরকার নাই!!!
শিক্ষার্থীরা ক্লাসে শিক্ষককে, বাসায় মা বাবাকে ,বড় ভাইবোনদের, প্রাইভেট টিউটরদের “মানুষ কি সত্যি বানরের বংশধর?” এমন প্রশ্ন করে সারাক্ষণ ব্যতিব্যস্ত করছে। অনেকে আরও পড়তে চাচ্ছে, ইন্টারনেটে ঘাঁটছে, কখনো নিজেরদের মাঝে তর্ক করছে। সোজা কথা যারা বিবর্তন তত্ত্বকে নিতে পারছে না, টেক্সট-বইয়ে লেখা থাকায় তারাও একেবারে ফেলে দিতে পারছে না। নিজেরা ঘাটা ঘাটি করে অথবা অন্য কার কাছে কোন তথ্য জেনে আবার স্কুলে গিয়ে সেটা নিয়ে শিক্ষককে প্রশ্ন করছে। শিক্ষক ব্যচারা উত্তর না দিতে পেরে লজ্জায় উল্টাপাল্টা কথা বলে এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে, যেটা ফিচেলে ছাত্রদের বিনোদনের খোরাক হচ্ছে।
সোজা-কথা স্কুল লেভেলে বিবর্তন চ্যপ্টারটি সহযোজনের ফলে বিজ্ঞান নিয়ে কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক…
@রাফাত,
কি কন?? :-O :lotpot:
এটাই আসল কথা। যতই শিশু-কিশোরেরা বিজ্ঞানের বিষয়ে কৌতূহলী হবে ততই দ্রুত বিজ্ঞান মনষ্ক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। (Y)
ভারতেও এমন হচ্ছে যদিও আমাদের সংবিধানে নাস্তিকতার স্বীকৃতি আছে। দেখুন http://nirmukta.com/2014/01/11/on-a-prayer-and-a-petition/
আর মুক্তমনায় ডকিংসের আউট ক্যাম্পেইনর ব্যাপারে কিছু খুঁজে পাচ্ছিনা তাই একটা বাংলা অনুবাদ তুলে দিলুম লিংক http://nirmukta.com/out-campaign-declaration-translated-into-bengali/
নাস্তিকরা ইতিহাসে সর্বদা যুক্তিবাদী চিন্তার প্রসারে এক গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে l এবার আপনিও এই আদর্শকে বিশ্বের সামনে প্রস্তুত করতে পারেন OUT আন্দোলন এর সাহায্যে l
Come OUT
আমরা যা ভাবি তার থেকে নাস্তিকরা অনেক সংখ্যাগরিষ্ঠ, দরকার শুধু নিজের নাস্তিকতাটাকে প্রকাশ করার l তাই আর না লুকিয়ে নিজের অবিশ্বাসকে ব্যক্ত করুন. হয়ত আপনি আরো একজনকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন বেরিয়ে আসার জন্য l (তবে অন্য কাউকে ‘বার’ করার দায়িত্ব আপনার নয়, আপনি কেবল উদাহরণ স্থাপন করতে পারেন, বেরিয়ে সে নিজেই আসবে) l
Reach OUT
OUT আন্দোলনের আরেকটা উদ্দেশ্য হলো নাস্তিকদের বিচ্ছিন্ন না অনুভব করতে দেওয়া l তাই লোকের সঙ্গে কথা বলুন, এবং নাস্তিকদের সম্বন্ধে তাদের ভ্রান্ত ধারণাগুলো দূর করুন l পৃথিবী জানুক যে নাস্তিকরা চলে যেতেও আসেনি এবং তাদেরকে সহজে অবজ্ঞার অন্ধকারে ঠেলেও দেওয়া যাবে না l
Speak OUT
যত বেশি লোক এই OUT Campaign এর সদস্য হবে, তত লোকে ধর্মকে কম ভয় পেতে আরম্ভ করবে l আমরা দেখাতে পারি যে নাস্তিকরা সব রকম পরিবেশ থেকে আসে l আমরা শ্রমিক থেকে চাকুরে l আমরা কারুর মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদু, দিদা. সর্বোপরি, আমরা মানুষ (এবং আমরা বাঁদর থেকে উদ্ভূত) l আমরা একে অপরের ভালো বন্ধু এবং আমরা সৎ নাগরিক. আমরা সেই সব ভালো মানুষ যাদের কোনো অবাস্তবের সাহায্য নিয়ে বাঁচার দরকার হয় না l
Keep OUT
এবার সময় এসেছে যে আমরা ইস্কুল এবং রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সরব হই l নাস্তিকরা এবং লক্ষ লক্ষ অন্য লোকেরা আজ তিতিবিরক্ত হয়ে গেছে এই সমস্ত লোকেদের প্রতি যারা কিনা শিক্ষা, রাজনীতির নামে ধর্মের প্রচার করে, বাচ্চাদের ধর্মীকরণ করে, সরকারী ব্যবস্থার মধ্যেও ধর্মকে জড়িয়ে ফেলে l আর নয়. অবাস্তব জিনিসগুলো কে আমরা আর আমাদের বিবেক এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার চালন্শক্তি হতে দেব না l
Stand OUT
অনেক সুন্দর লিখেছেন দাদা (F)
মাধ্যমিক শ্রেণীর জীববিজ্ঞান বইটি দেখেছেন কি?? সেখানে এবার বহু বছর পর বিবর্তনবাদ যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু খুব চালাকির সাথে জীবনের উৎপত্তির ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছে। তবে যে দেশে নটরডেম কলেজের শিক্ষক ও উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান বই লেখক গাজী আজমল সাহেব বিবর্তনবাদকে গালি দেন, সেখানে মুক্তচিন্তার প্রসার হবে ভাবতেই আমার কষ্ট হয়।
তবে হ্যাঁ, পরিবর্তন হচ্ছে, খুব ধীরে, কিন্তু বিরতিহীনভাবে।
Such an scholarly article. I praise your background work for such an wonderful writing.
প্রাক্তন আঁধারে ভাইয়ের দেখিয়ে দেবার ফলে যজুর্বেদের ২৩ অধ্যায়ের ২১ থেকে ৩১ নম্বর আয়াত ( শ্লোক) পড়লাম।
আমার মনে হয় নাচতে নেমে ঘোমটা দেয়ার কোন মানেই হয় না। অভিদা একটা অসাধারন লেখা দিয়েছেন, কাজেই এখানে যেহেতু আমরা সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক, তাই বেশি রাখঢাক করার দরকার কি?যদি ধর্ম গ্রন্থের এইসব লেখা অশ্লীল না হয়, তবে উদাহরন দেয়া কেন অশ্লীল হবে?
এতে বরং আলোচনা করতে সুবিধা হবে, আর আলোচনা করে একটা জিনিসের সব কিছু জানাই ভাল বলে মনে করি।
আমি বই দেখে দেখে টাইপ করে দিচ্ছি। ২১ থেকে ৩৩ শ্লোক পর্যন্ত।
শুক্ল যজুর্বেদ অধ্যায় ২৩ :-
২১:হে বীর্ষবর্ষণকারী অশ্ব,তুমি বীর্ষ ধারণ কর,যা রমণীগণের জীবন ও ভোজন স্বরূপ।
২২: ক্ষুদ্র পক্ষীর মত কুমারী হলে হলে শব্দ করে যাচ্ছে।
২৩:অধ্বর্যুগণ,পক্ষীর মত তোমাদের মুখই শব্দ করছে, আমাদের প্রতি এরূপ বলো না।
২৪: তোমার মাতা ও পিতা কাষ্ঠময় কাষ্ঠময় মঞ্চকের অগ্রভাগ রোহন করেছিলেন
২৫: তোমার মাতা ও পিতা পুর্বে মঞ্চকের আগে ক্রীড়া করেছিলেন। তোমার মুখ যেন আরো বলতে চায়, হে ব্রাহ্মণ , আর বহু কথা বলো না।
২৬: পর্বতে ভারবাহী ব্যক্তি যেমন পর্বতের উপরে উঠে, সেরূপ একে একে উপরে তোল। ঠান্ডা বাতাসে কৃষক যেমন ধান ঝেড়ে উপরে রাখে,সেরূপ একে উপরে রাখ।
২৭: পর্বতে ভারবাহী ব্যক্তি যেমন পর্বতের উপর ভার রেখে উপরে উঠে, সেরূপ হে নর, উদ্গাতাকে উর্ধ্বে রাখ। শীতল বায়ুতে কম্পমান লোকের মত একে কাঁপাও।
২৮: জলপুর্ন গাভীর ক্ষুরে মৎস যেমন কাঁপে, সেরূপে হ্রস্ব ও স্থুল শিশ্ন, যোনি প্রাপ্ত হয়ে কাঁপে।
২৯: যখন দেবগন ক্রীড়া করে, তখন চোখে দেখা প্রত্যক্ষের মত নারীর উরু দেখা যায়
৩০:হরিণ ক্ষেত্রস্য ধান্য ভক্ষণ করলে ক্ষেত্রপতি যেমন সুখী হয় না,সেরূপ, শুদ্রা স্ত্রী বৈশ্যগামিনী হলে তার পতি সুখী হয় না।
৩১: হরিন ক্ষেত্রস্থ ধান্য ভক্ষন করলে ক্ষেত্রপতি যেমন সুখী হয় না, সেরূপ শুদ্র বৈশ্যা রমনীতে আসক্ত হলে বৈশ্য ক্লেশ অনুভব করে।
৩২: জয়শীল শীঘ্রগামী নরবাহক অশ্বের সংস্কারের জন্য আমরা যে অশ্লীল ভাষন করলাম, যজ্ঞ আমাদের মুখ সুগন্ধ করুক ও আমাদের জীবন বর্ধন করুক।
৩৩: হে অশ্ব,গায়ত্রী, ত্রিষ্টুপ, জগতী, পংক্তির সাথে বৃহতী, উষ্ণিকের সাথে ককুপ— এ ছন্দ গুলি সুচীর দ্বারা তোমার সংস্কার করুন!
শ্লোকগুলির প্রতিটি লাইনে লাইনে বোল্ড করে হাইলাইট করা যায়, কিন্তু তার দরকার দেখছি না তবে ৩২ তম শ্লোক টাকে হাইলাইট করতে বাধ্য হলাম।
সস্তা ইরোটিক গল্পের মত বর্ননা, আবার সেটাকে সগৌরবে স্বীকার করে নেয় কতটা সভ্যলোকের কাজ আমার জানা নেই। আবার দাবী করা হচ্ছে এবং আশা করা হচ্ছে যে এর ফলে যজ্ঞ তাদের মুখ সুগন্ধ করবে এবং জীবন বর্ধন করবে। তবে কি এইসব নৈতিকতাই আমাদেরকে বিশুদ্ধ মানুষ বানাবে?
তাহলে পাপ কর আর তারপর পাপ স্বীকার কর, যজ্ঞ কর, মাফ চাও, পবিত্র হয়ে আবার পাপ কর! এইটা কোন ধরনের নিচুস্তরের ভন্ডামী সেটা আমার মাথায় আসছে না।
তবে সমাজের ধর্ষন, ইভটিজ সহ যাবতীয় নারী নির্যাতন কে যে উৎসাহিত করা হচ্ছে নারীকে নিম্নস্তরের কামনা সর্বস্য এবং কামনা চরিতার্থ করার মেশিন হিসাবে এতে কি আর সন্দেহ থাকা উচিত?
খ্রিষ্ট ধর্মের ক্যাথলিক শাখা ব্যভিচার ছাড়া ডিভোর্স সমর্থন করে না, আর ডিভোর্স দিতে দিলেও নতুন করে বিয়ে করতে দেয় না। ফলে প্রতারক ( নর নারী নির্বিশেষে) আসলে মুক্তি পেয়ে যায়।কৌশলে সাজা দেয়া হয় নির্দোষ কে, কারন পাপ স্বীকার করলে করুনাময় সব পাপ নাকি মাফ করে দেন। কিন্তু মানুষের মন যে মাফ করতে পারে না, এইটা কি করুণাময় বুঝার দরকার মনে করেন না, নাকি মানুষকে তিনি গোনার মধ্যেই ধরেন না!!
ইসলামের উদাহরন আর নাই বা দিলাম, কারন ইসলামই একমাত্র ধর্ম যার অনুসারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকাশ্য ব্যভিচারে দায়ে পাথর নিক্ষেপের বিধান কার্যকরি রেখেছে। আর নারীদের কে ভোগ্য বানাবার যাবতীয় উপকরন হাতে কলমে প্রয়োগ করে চলেছে।
বি .দ্র. লিঙ্ক থাকলে বেদের শ্লোক নকলের ঝামেলায় যেতে হত না, সোজাসুজি কপি পেস্ট মারতে পারতাম। তবে এটুকুও বুঝলাম যে পরীক্ষায় নকল করে পাস করা সোজা কাজ না। এই সামান্য কয়েকটি লাইন দেখে লিখতেই আমার ঘাম ছুটে গেছে আর তাই কিছু বানান বা অন্য ভুল হতে পারে যা ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার অনুরোধ করছি।
@অর্ফিউস,
একেবারে ‘মাইখ্যা লাইসেন’ 🙂
@অভিদা, :)) ইয়ে মানে ..
অভিদা আপনার লেখাটি খুবই সময়পোযোগী ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেটা বলাই বাহুল্য। সেক্ষেত্রে এই লেখাটিকে স্টিকি করার অনুরোধ জানাচ্ছি। সম্ভব হলে মডারেটরপ্যানেল অনুরোধটি বিবেচনা করে দেখবেন।
@অর্ফিউস,
করে দেয়া হল।
ধন্যবাদ।
@মুক্তমনা এডমিন, আপনাকেও ধন্যবাদ। :-), অনুরোধটি বিবেচনা করার জন্য।
সামাজিক অগ্রগতির লক্ষে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। ই- বুক করে নূতনদের জন্য SAVE করে রাখা হোক।
তবে আমার মনে হয় রাজনৈতিক স্বার্থও ধর্মীয় কুসংস্কারকে পেলে রাখে।
প্রিয় অভিজিৎ,
লেখাটা বেশ বড় আকারের—–ভেবেছিলাম একটু সময় নিয়ে পড়ব, ধীরেসুস্থে। কিন্তু কি আশ্চর্য, পড়তে শুরু করে এমনই মগ্ন হয়ে গেলাম যে হাতের কাছে রাখা চায়ের কাপটির কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে তোমার এই অসাধারণ তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটি শেষ না করে তাতে একবারও চুমুক দেওয়া হল না। একেই বলেঃ এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা। কিছু তথ্য আমার নিজেরও জানা ছিল, কিন্তু অধিকাংশই একেবারে নতুন। অনেক পড়াশুনার পরিচয় রয়েছে এতে। অজস্র ধন্যবাদ তোমাকে এই মূল্যবান লেখাটি ‘মুক্তমনা’তে পোস্ট করার জন্যে। আমাদের সোনার দেশটি যে অদূর ভবিষ্যতে একটি ‘আধুনিক রাষ্ট্রে’ পরিণত হতে যাচ্ছে না সেবিষয়ে নিঃসন্দেহ হওয়া গেল। নির্বাচনের পর ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো হবে সেটা তো খুবই স্বাভাবিক—-অশিক্ষিত বর্বরেরা নয় কেবল, স্কুলকলেজে পাস-করা ছেলেমেয়েরাও তাই করবে, কারণ এটাই তো তারা শিখেছে তাদের ‘ধর্ম ও নৈতিকতা’র পাঠ্যপুস্তকে।
আশা করি অতঃপর কোনও বিবেকবান ব্যক্তি ভুল করেও আমাদের দেশটিকে একটি ‘সেকুলার’ রাষ্ট্র বলে আখ্যায়িত বলে অভিহিত করার প্রয়াস পাবেন না। সেকুলার রাষ্ট্রে কখনোই এভাবে ধর্মের নামে অধর্ম শিখিয়ে কচিকাচা ছেলেমেয়েদের মন কলুষিত করার চেষ্টা করবে না।
@মীজান রহমান,
মীজান ভাই, আপনার মন্তব্য পেয়ে খুব ভাল লাগল।
এ দেশের একাডেমিয়ার বড় বড় মস্তিস্কে এসব প্রশ্ন বোধ করি কখনো দানা বাঁধে না। কারণ এরকম চিন্তা মনে আনাটাইতো নাস্তিকতার নামান্তর! আমি বলি কি, একটা শিশু ধর্মের কি বুঝে? কেনো তাকে তার ৫ বছর বয়েস থেকে ধর্মের গাঁজাখুড়ি গল্পগুলো পড়তে হবে? এরা পরিবার সমাজ থেকেইতো নৈতিকতার পাঠ নিতে পারে। স্কুলের পাঠ্যসূচীতে ধর্মশিক্ষার কোন রকম সুযোগ থাকার কথা নয়। সম্ভবতঃ আমাদের অঞ্চল ব্যতীত উন্নত বিশ্বের কোথাও এর নজির নই। অথচ বিশ্বে আমরাই সবচেয়ে অধঃপতিত জাতি হিসেবে বিবেচিত। ধর্ম শিক্ষার যদি দরকার হয় তাহলে স্বাবালকত্ত্বের পরে উপাসনালয়ে দেবালয়ে তারা যাক না কেউ বাধা দেবে না। কিন্তু অসময়ে তাদের কচি মনে এধরনের অসূচীতা-অনৈতিকতার বীজ রোপনের কারন কি? শাসককূলের সাথে তথাকথিত ধর্মসেবকদের সেই প্রগৈতিহাসিক যুগ থেকেই একধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যোগসূত্র দৃশ্যমান। শাসককূলের স্বার্থে সেই সব ভ্রান্ত মিথ গুলো কি এখনো সচল থাকার সুযোগ আছে যেখানে বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে সবই ভ্রান্ত-কাল্পনিক হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে? অত্যন্ত চিন্তাজাগানীয়া লেখাটার জন্যে অভিজিৎ রায় কে অসংখ্য ধন্যবাদ।
পুরো ব্যাপারটা শুরুই হচ্ছে গলদ দিয়ে। নৈতিকতার উৎস যদি ধর্মই হবে তাহলে যে হিন্দু (হিন্দু বংশ জাত) সে একটু কোরান পড়ুক, সে একটু বাইবেল পড়ুক বা যে মুসলমান (মুসলমান বংশ জাত) সে একটু বেদ পড়ুক , একটু ত্রিপিটক পড়ুক বা যে বৌদ্ধ সে বেদ,কোরান পড়ুক । কারন এটা যদি বলা হয় যে মুসলমানদের নৈতিকতা কোরান-হাদিসে বা হিন্দুদের নৈতিকতা বেদ-গীতায় বা খ্রিষ্টানদের নৈতিকতা বাইবেলে তাহলে তো নৈতিকতার শিক্ষার কায়দাই ভুল দিয়ে শুরু হচ্ছে! তার মানে একে অন্যের ধর্ম গ্রন্থ অন্য ধর্মের নৈতিকতা শিক্ষার উৎস্য নয়! বাকি তত্ত্বতো অনেক দূরের কথা।
খাটি কথা।
“যে বৌদ্ধ সে বেদ,কোরান পড়ুক” এর স্থলে ” যে বৌদ্ধ (বৌদ্ধ বংশ জাত) সে বেদ,কোরান পড়ুক ” হবে।
দুঃখিত।
@নিমো,
ভাল বলেছেন। আমারো একই ধরনের প্রশ্ন: ধৰ্ম সৰ্ম্পকে জানার জন্যই যদি শিশুকিশোরদের স্কুলে ধৰ্মশিক্ষা বিষয়টি পড়ানো হয়, তাহলে তাকে শুধু নিজের ধৰ্ম সৰ্ম্পকে কেন পড়ানো হবে ?? 😕
ধন্যবাদ দাদা
চরম একটি লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।মহাম্মাদের পথে বুড়ির কাটা বিছিয়ে রাখার গল্পটা আমিও কোথাও পাইনি, তবে আমার মনে হয়েছে যদি এমন কোন ঘটনা ঘটেই থাকে তবে অবশ্যই তা ইসলামের মাক্কী জীবনে।মদীনার ইসলাম ও মক্কার ইসলাম আকাশ পাতাল পার্থক্য। মক্কায় ইসলাম যতটুকু কোনঠাসা ছিলো, মদীনাতে ততটুকু ঔদ্ধত্যপূর্ন।
যাই হোক দাদা আপনি মজা পেলেও আমি কিন্তু এই পরিবর্তনকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।অন্যান্ন ধর্ম অপেক্ষা ইসলাম বয়সে নবীন এবং একই সাথে অসহিষ্নু।তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর পরিবর্তনটা ধীরে ধীরেই হবে। মানুষ যখন ধর্মে পরিবর্তন টাকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারবে তখন আস্তে আ্স্তে ধর্ম একসময় কোন ঠাসা হয়ে পড়বে।হয়তো আরো ১০০ বছর লাগবে, তবুও মনে হয় কিছু একটাতো শুরু হয়েছে, শেষ একদিন হবেই।
সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।
ধর্মীয় নৈতিকতার আরও একটা উদাহরণ আমি এখানে যোগ করে দিলাম। ঃ)
একদিন নবী দাউদ (ডেভিড) প্রাসাদের ছাদে পায়চারি করা অবস্থায় দূরে সিবাকে (বাটসিবা – হিব্রু) গোসল করা অবস্থায় দেখতে পায়। সিবা তখন দাউদের সেনা বাহিনীর ছোটখাটো অফিসার উরিয়ার (নন-ইস্রায়েলী) বিবাহিত বউ ছিল। আর উরিয়া সেই মুহূর্তে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাথে রাব্বাহ নামক স্থানে যুদ্ধে ব্যস্ত। সিবাকে দেখেই দাউদের মনে কামনার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। লোক পাঠিয়ে সিবাকে ডেকে নিয়ে এসে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করে (অন্য কথায় ধর্ষন করে) এবং ফলশ্রুতিতে সিবা সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়ে। দুষ্কর্মের কথা জানাজানি হয়ে গেলে বিপদ হবে ভেবে ডেভিড রণাঙ্গন থেকে উড়িয়াকে ডেকে পাঠায় এবং উরিয়াকে আদেশ করে বাসায় যেতে। উদ্দেশ্য বাসায় গিয়ে উরিয়া স্ত্রীর সাথে সহবাস করবে এবং ভাববে বাচ্চাটা তার। কিন্তু বিধি বাম। তখনকার দিনের ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সৈন্যদের সহবাস করা নিষেধ ছিল যা ধার্মিক সৈন্যরা স্ট্রিক্টলি মেনে চলত। এ কারণে উরিয়া বাসায় যেতে অস্বীকার করে এবং প্রাসাদের সৈন্যদের সাথে থেকে যায়। উরিয়াকে বারংবার চেষ্টা করেও সিবার সাথে সহবাস করাতে না পেরে নবী দাউদ জেনারেল জবকে নির্দেশ দিল যে উরিয়াকে যেন যুদ্ধক্ষেত্রের একেবারে সামনের দিকে সবচাইতে ঝুকিপূর্ণ যায়গায় দায়িত্ব দেয়া হয় যেখানে তার মৃত্যু মোটামুটি ভাবে নিশ্চিত। ভাগ্যের পরিহাস হল দাউদ এই খবর উরিয়ার হাত দিয়েই জেনারেল জবকে পাঠায়। উরিয়ার মৃত্যুর পর ননী দাউদ উড়িয়ার সদ্য বিধবা স্ত্রী সিবাকে বিয়ে করে।
নবী দাঊদ এবং সিবার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন নবী সুলাইমান (সলোমন – হিব্রু)। সম্ভবত সুলাইমান ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান কারণ প্রচলিত আছে প্রথম সন্তান নাকি জন্মের পরপরই মারা গিয়েছিল।
@হোরাস,
দাউদকে নিয়ে ঘটনাটির উল্লেখের জন্য ধন্যবাদ। আসলে এ ধরনের ঘটনা এত বেশি যে, কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখব, তা নিয়েই বরং গবেষণা হওয়া উচিৎ।
সত্যি বলতে কি বাইবেলে কোন নৈতিক চরিত্র আমি খুঁজে পাইনি। সেখানে যাদের মহিমান্বিত করা হয়েছে, খুঁজলে দেখা যাবে, তারা সবাই নানা ধরনের অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিল। যেমন, নুহ ছিলেন মাতাল (মদ খেয়ে উলঙ্গ হয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে থাকতেন), আব্রাহাম ছিলেন মিথ্যাবাদী (অন্ততঃ দুইবার নিজের স্ত্রীকে নিয়ে মিথ্যে বলেছেন, এবং ঈশ্বর তাতে সম্মতি দিয়েছিলেন), মুসা ছিলেন গণহত্যাকারী (এখানে এবং এখানে), দাউদ ছিলেন ব্যভিচারী এবং হত্যাকারী (কিংবা এখানে), সলোমন ছিলেন বহুগামী (তার ৭০০ স্ত্রী এবং ৩০০ উপপত্নী ছিল), পিটার তলোয়ার ঘুরাতেন আর অহরহ মিথ্যে বলতেন, পল নারীদের চুপ করে থাকতে বলতেন ইত্যাদি।
অবশ্য ধর্মীয় নৈতিকতা শেখানোর সময় এগুলো বাদ দিয়ে পড়ানো হবে যতদূর সম্ভব।
সেজন্যই এই ইন্টারনেটের যুগে পাঠ্যপুস্তক পড়ে কেউ ধর্ম শেখে না, আমাদের দেশের শিশুরাও শিখবে না। তারা ধর্ম শিখবে পরে – চোখের সামনে যখন ধর্মের নামে অরাজগতা দেখবে, কিংবা বিভিন্ন জায়গায় বিতর্ক করতে গিয়ে। আপনার মত কেউ যখন চোখে আঙ্গুল দিয়ে হিপোক্রেসিগুলো দেখিয়ে দিবে। 🙂
রাষ্ট্রের মাধ্যমেও নাগরিক জীবনে ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া ভয়ঙ্কর এক বিপদের নাম। এটি ওয়ান-ওয়ে বা একমুখী। একবার ঢুকে গেলে আর বেরুবে না। এই মহাবিপজ্জনক বিষ অন্যায় ভাবে আরো প্রয়োগের আগেই তা থামাতে হবে। ধর্ম না-ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয় হোক। মগজ ধোলাই করতে পরিবার বা রাষ্ট্র কেন সেটা ব্যক্তি নাগরিকের ওপর চাপিয়ে দেবে?
খুব কাজের পোস্ট হয়েছে অভিজিৎ, ভালো কাজ হয়েছে।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা দাদা। লিখেছেন দারুণ, সেটা বলা বাহুল্য।
ধর্মগুলো যখন নৈতিকতায় ভরপুর এবং তা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরও জানা জরুরি তখন সকল ধর্মের নৈতিকতা যেগুলো ধর্মগ্রন্থগুলোতে লিখে দিয়েছেন বিভিন্ন ধর্মের প্রভুগণ; আপনি যা উল্লেখ করেছেন আপনার এই লেখায় সেগুলো ক্লাসে ক্লাসে ছেলেমেয়েদের মাধ্যমে প্র্যাকটিকেল করানোর জোর দাবী জানাচ্ছি। বিজ্ঞানের প্র্যাকটিকেল ক্লাস হলে ধর্মের কেন হবে না?
দাদা, এখানে কাজ করতে হয়েছে, এবং পরিচিত হতে হয়েছিল হবে না?
এখানে সহিংস’র জায়গায় অহিংস হবে না?
@তামান্না ঝুমু,
অনেক ধন্যবাদ, ঝুমু।
সবচেয়ে কম সহিংস দেশ মানেই তো অহিংস দেশ, তাই না? মানে বলতে চাইছি সুইডেন ডেনমার্ক প্রভৃতি ধর্মহীন দেশগুলোই কম দুর্নীতিগ্রস্থ এবং কম সহিংস (মানে এরা অহিংস) দেশ।
@অভিজিৎ,
হ্যাঁ দাদা। অনেক বড় লেখা তো, তাই পড়তে পড়তে মাথা একটু গোলমেলে হয়ে গিয়েছিল।
বরাবরের মতই তথ্য সমৃদ্ধ আর চিন্তা জাগানিয়া।তবে আমার মাথায় কিন্তু এ নিয়ে একটি ইতিবাচক চিন্তার উদ্রেক হয়েছে।
তা হল,র্ধমের সাথে নৈতিক শিক্ষা যোগ করেছে। পরের পদক্ষেপে হয়ত নৈতিক শিক্ষা থাকবে ধর্মটা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। হতে পারে না?
@গীতা দাস,
হতে পারে, তবে আমাদের দেশে এধরনের জিনিস জুড়ে দেয়া সহজ হলেও বাদ দেয়া ততোটা সহজ না। রাস্ট্রধর্মের ভুত সেই যে ঘাড়ে চেপে বসেছে, এখন তাকে বাদ দিয়ে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?
এই নুতন সিলেবাস প্রনয়ন কমিটিটে যতদূর মনে পড়ে জাফর ইকবাল স্যারও ছিলেন। নৈতিকতার উতস প্রচলিত ধর্ম এই ধারনাটাই তো বড় ধরনের ভুল। ধর্ম নৈতিকতার উতস হতে পারে মানি, তাই বলে ধর্ম বাদে আর সূত্র নেই এমন ধারনা কেন শিশুদের দেওয়া হবে?
এখানে আলোচিত আমার সেই সিরিজের আলোচনায় কেউ কেউ এমন একটি পয়েন্ট তুলেছিলেন যে ধর্ম বই এ স্কুলে কি শিক্ষা দেওয়া হয় না হয় সেগুলি কেউ সিরিয়াসলি নেয় না……
সত্য বলতে নৈতিকতা হাজার ইশপের গল্প বা ধর্মগ্রন্থের সুন্দর সুন্দর বানী পড়লে গড়ে ওঠে না।
কথাটায় কিছুটা সত্যতা থাকলেও এ কারনে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ন যে সরকারী ভাবে পাঠ্য পুস্তকাকারে ধর্মের নামে এসব বিষময় শিক্ষা প্রচার করে এ জাতীয় শিক্ষা, মূল্যবোধকে চমতকারভাবে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। আমাদের সময়ও জিয়া এরশাদের ইসলামী করনের স্বর্নালী দিনগুলিতে মনে পড়ে না ধর্মশিক্ষার নামে এতটা উগ্রতার শিক্ষা দেওয়া হত বলে। এখন সেক্যুলার দাবীদার আওয়ামী আমলেই যেই শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এরপর জামাত এবং বৃহত্তর জামাত বিএনপি ক্ষমতায় আসলে কি শিক্ষা দেবে কে জানে। এটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র কিভাবে চক্ষু লজ্জাহীন ভাবে রাখঢাক ছাড়াই সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রতা শেখানো শুরু করেছে, এবং বলাই বাহুল্য বিনা বাধায়। চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা কিংবা সামাজিকভাবে হেয় হতেই বা চাইবে কয়জনা? তার চাইতে এইই ভাল, ছেলেপিলে এসব পড়্রুক, হয়ত ভুলে যাবে, কিন্তু মনের ভেতর ঠিকই গেড়ে যাবে অপরাপর বিশ্বাসী/অবিশ্বাসীদের ঘৃনা করার সবক, ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তিতে মানুষ মানুষ ভেদাভেদের মন্ত্র। তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানিয়ে রাখা হবে বিধর্মীদের।
অষ্টপ্রহর নানান কায়দায় মালাউন, তারা মহাপাপী, অন্ততকাল দোজখে পূড়বে এসব কথাবার্তা কোন সম্প্রদায় সম্পর্কে প্রচার করা হতে থাকলে নিশ্চিত সেই সম্প্রদায় সম্পর্কে লোক কোনদিন স্বাভাবিক হতে পারে না। মানুষের অগচোরেই মনে হয় তারা মহা খারাপ লোক, ভাল হলে কেউ অনন্ত কাল দোজখে পূড়তে যাবে কেন? কেউ নিশ্চিত জেল খাটবে জানলে তার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক আমিও কি করতে যাব নাকি! কিছুদিন আগে এক বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াতে গিয়ে উচ্চশিক্ষিত এক ভদ্রমহিলার ভাষ্য শুনেছিলাম। উনি সার্টিফাই করছিলেন বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতের হিন্দুদের মত অতটা খারাপ নয়; উদাহরন দিয়ে উনি ব্যাখ্যা করলেন সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত নাকি প্রায়ই আল্লাহ নাম নেন। যে সমাজে ভাল খারাপ নির্ধারনের এমন অদ্ভূত স্কেল ব্যাবহৃত হয় সে সমাজে দূর্নীতি বাড়বে নাতো আর কোথায় বাড়বে?
সাম্প্রদায়িক হামলা হবে, হামলা নিঃসন্দেহে করবে অলপ কিছু দুবৃত্ত। এরপর অসাম্প্রদায়িক সংখ্যাগুরু সকলের দায়িত্ব শেষ হবে ডাক ছেড়ে জামাত শিবিরই যত নষ্টের গোড়া গাল দিয়ে চটকদার কিছু মিছিল চিঁড়া মুড়ি বিতরনের মাধ্যমে। কিভাবে চোখের সামনে সমাজে সাম্প্রদায়িকতার পাঠ রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে দেওয়া হচ্ছে এসব আলোচনায় কেউ ধরা দেবে না।
@আদিল মাহমুদ,
ধর্ম নৈকিকতার উৎস কখনোই হতে পারে না। বরং অনৈকিকতার ভালো উৎস হতে পারে। দুই একটা শস্তা টাইপ ভালো কথা সব ধর্মে আছে। এগুলো যেকেউই বলতে পারে চাইলে। এজন্য ধর্মের কাছে যাবার কোনো দরকার আছে কি?
@তামান্না ঝুমু,
ধর্মীয় সূত্রগুলিতে ভাল ভাল কিছু কথা অবশ্যই আছে, অস্বীকার করা যায় না। সেসব বানী পড়ে কেউ কেউ লাইফ ষ্টাইল বদলে ভাল মানুষ হয়ে যেতে পারে তেমন উদাহরন খুব বিরল নয়। অবশ্যই তাদের পিক এন্ড চুজ পদ্ধুতি অবলম্বন করতে হয় যেটা ভার্চূয়ালী সব ধার্মিকই কম বেশী করে। যতই গলাবাজি করুক, আল্লাহ ভগবান নানান ঈমানী কিতাব শতভাগ সঠিক, মহাপুরুষের বানী অবশ্য পালনীয় বলুক কোন না কোন পর্যায়ে সকলেই এসব মানে না।
কাজেই ধর্মীয় সূত্র যেমন নৈতিকতার একমাত্র, এমনকি প্রধান সূত্রও নয়, তেমনি আবার নৈতিকতার সূত্র কোন মতেই হতেই পারে না এমন কথাও সঠিক নয়।
ধর্মীয় সূত্র সমূহের সমস্যা হল একটি ভাল কথার ওপর সওয়ার হয়ে আরো বেশ কিছু বিভ্রান্তিকর, সংকীর্নতার মূলমন্ত্র জেঁকে বসে। এ কারনেই এমনকি শুধু ভাল কথা শোনাবার জন্যও ধর্মীয় সূত্রকে নৈতিকতার সূত্র হিসেবে পরিচয় করানো ভুল।
@আদিল মাহমুদ,
আমার মনে হয় আপনার কথা যেমন ঠিক, তামান্নার কথাও সেভাবে ভুল নয়। ধর্মীয় সূত্রগুলিতে ভাল ভাল কিছু কথা অবশ্যই আছে, কিন্তু সেটা নৈতিকতার উৎস কিনা আমার সংশয় আছে। আসলে ধর্ম আসার আগেও মানুষ গোল্ডেন রুলের চর্চা করত, সেগুলোই পরবর্তীতে বিভিন্ন ধর্ম আত্মীকরণ করে নৈতিকতার উৎস বলে প্রচার করেছে।
যেমন, যিশুখ্রিস্টের অনেক আগেই লেভিটিকাস (১৯:১৮) বলে গেছেন, ‘নিজেকে যেমন ভালোবাস, তেমনি ভালোবাসবে তোমার প্রতিবেশীদের।’ বাইবেল এবং কোরানে যে সহনশীলতার কথা বলা আছে, সেগুলোর অনেক আগেই (খ্রিস্টের জন্মের পাঁচশ বছর আগে) কনফুসিয়াস একইরকমভাবে বলেছিলেন- ‘অন্যের প্রতি সেরকম ব্যবহার করো না, যা তুমি নিজে পেতে চাও না’। আইসোক্রেটস খ্রিস্টের জন্মের ৩৭৫ বছর আগে বলে গিয়েছিলেন, ‘অন্যের যে কাজে তুমি রাগান্বিত বোধ করো, তেমন কিছু তুমি অন্যদের প্রতি করো না’। এমন কি শত্রুদের ভালোবাসতে বলার কথা তাওইজমে রয়েছে, কিংবা বুদ্ধের বাণীতে, সেও কিন্তু যিশু বা মুহম্মদের অনেক আগেই ।
কাজেই নৈতিকতার যে উপকরণগুলোকে ধর্মানুসারীরা তাদের স্ব স্ব ধর্মের ‘পৈত্রিক সম্পত্তি’ বলে ভাবছেন, সেগুলো কোনোটাই কিন্তু আসলে ধর্ম থেকে উদ্ভূত হয় নি, বরং বিকশিত হয়েছে সমাজবিবর্তনের অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে।
সমাজব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে মানুষ কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যকে ‘নৈতিক গুণাবলী’ হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে; কারণ ওভাবে গ্রহণ না করলে সমাজব্যবস্থা অচিরেই ধ্বসে পড়তো। বিখ্যাত নৃতাত্ত্বিক সলোমন অ্যাশ বলেন-
“আমরা এমন কোনো সমাজের কথা জানি না, যেখানে সাহসিকতাকে হেয় করা হয়, আর ভীরুতাকে সম্মানিত করা হয়; কিংবা উদারতাকে পাপ হিসেবে দেখা হয় আর অকৃতজ্ঞতাকে দেখা হয় গুণ হিসেবে”।
এমন ধরনের সমাজের কথা আমরা জানি না কারণ এমন সমাজ টিকে থাকতে পারে না। খুব সাদা চোখে দেখলেও, একটি সমাজে চুরি করা যে অন্যায়, এটি বোঝার জন্য কোনো স্বর্গীয় ওহি নাজিল হবার দরকার পড়ে না। কারণ যে সমাজে চুরি করাকে না ঠেকিয়ে মহিমান্বিত করা হবে, সে সমাজের অস্তিত্ব লোপ পাবে অচিরেই। ঠিক একইভাবে আমরা বুঝি, সত্যি কথা বলার বদলে যদি মিথ্যা বলাকে উৎসাহিত করা হয়, তবে মানুষে মানুষে যোগাযোগ রক্ষা করাই দুরূহ হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারগুলো উপলব্ধির জন্য কোনো ধর্মশিক্ষা লাগে না। আবার এমনও দেখা গেছে যে, শতাব্দী-প্রাচীন কোনো চলমান ব্যবস্থার পরিবর্তন মানুষ নিজে থেকেই করেছে পরিবর্তিত মূল্যবোধের কষ্টিপাথরে মানবতাকে যাচাই করে, এবং অনেকক্ষেত্রেই ধর্ম কী বলছে না বলছে তার তোয়াক্কা না করেই। দাসত্বপ্রথার উচ্ছেদ এমনি একটি ঘটনা। বলা বাহুল্য, কোনো ধর্মগ্রন্থেই দাসত্ব উচ্ছেদের আহ্বান জানানো হয় নি। শান্তির মূর্ত প্রতীক যীশু তো দাসদের পেটানো পর্যন্ত সমর্থন করেছেন –
‘য়ে দাস তার মনিবের ইচ্ছা জেনেও প্রস্তুত থাকে নি, অথবা য়ে তার মনিবের ইচ্ছানুসারে কাজ করে নি, সেই দাস কঠোর শাস্তি পাবে (চাবুক দিয়ে পেটানো হবে) [Luke 12:47]।
বাইবেলের নতুন কিংবা পুরাতন নিয়ম, কিংবা কোরান, অথবা বেদ, উপনিষদ, মনুসংহিতা- কোথাওই দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার কথা বলা হয় নি, বরং সংরক্ষিত করার কথাই বলা হয়েছে প্রকারান্তরে। কিন্তু মানুষ সামাজিক প্রয়োজনেই একটা সময় দাসত্ব উচ্ছেদ করেছে, যেমনিভাবে হিন্দু সমাজ করেছে সতীদাহ নির্মূল বা খ্রিস্ট সমাজ করেছে ডাইনি পোড়ানো বন্ধ। সতীত্ব সম্পর্কে প্রাচীন ধারণা, কিংবা সমকামিতা বা গর্ভপাতের অধিকার সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গিরও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে সারা পৃথিবী জুড়ে এ কয় দশকে। এ পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গির অনেকগুলোই ধর্ম কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
যাক, এগুলো আপনি সবই জানেন। আপনাকে বলার উদ্দেশ্যে নয়, কিন্তু অনেক সময় আমরা নিজেরাই ধর্ম আর নৈতিকতাকে মিলিয়ে ফেলি, অনেকে আবার ধর্মকেই নৈতিকতার একমাত্র উৎস মনে করেন। এগুলো কোনটাই আসলে ঠিক নয়, আমরাও তো ছোটবেলাতে শেখা গুরুজনের বানীই কমবেশি ধারণ করি। সেটা ভাঙ্গা দুষ্কর। যাউক কবিতা শুনেন একখান –
@অভিজিৎ,/তামান্না ঝুমু,
আমি কিন্তু দাবী করিনি যে নৈতিকতার উতস ধর্মগ্রন্থ।
ধর্মগ্রন্থে কিছু নৈতিকতা পাওয়া যেতে পারে আর নৈতিকতার উতস ধর্মগ্রন্থ মানে কোন ভাবেই এক নয়।
ধর্মভিত্তিক সমাজগুলিতে চোখ কান বন্ধ করে এই শিক্ষাই দেওয়া হয় যে নৈতিকতার যাবতীয় উতস ধর্ম। প্রমান হিসেবে ধর্মগ্রন্থের বাছা বাছা কিছু অংশ দেখিয়ে দেওয়া হয়, আজন্ম ধর্মীয় সংস্কৃতিতে গড়ে ওঠা মনের জন্য আর বেশী কিছুর দরকার হয় না।
@আদিল মাহমুদ,
আমি জানি আপনার পয়েন্ট অফ ভিউ। তবু বলছি, ধার্মিক ভালো মানুষের উদাহরণ যেমন বিরল নয় তেমনি হোমিওপেথী খেয়ে অসুখ সেরেছে, তাবিজ-কবজ করে সুস্থ হয়েছে, মাজার-দরগায় মানত করে কামিয়াব হয়েছে এমন মানুষের উদাহরণও বিরল নয় কিন্তু।
অসাধারন বিশ্লেষন অভিজিৎ ভাই। (Y)
আমি আসলে বুঝিনা মাধ্যমিক পৰ্যায়ে সবাইকে কেন জোর করে ধৰ্মশিক্ষা পড়াতে হবে? এই ধৰ্মশিক্ষা/নৈতিকতা শিক্ষার নাম করেই শিশু-কিশোরদের মস্তিষ্কে জোরকরে ঐ “বিশ্বাসের ভাইরাস” ঢুকানো হচ্ছে। যার ফলে পরবৰ্তীতে ঐসব শিশু-কিশোরের বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মস্তিষ্কে বিজ্ঞান ও যুক্তি কোনটাই প্রবেশ করে না।
সহমত।
@তারিক,
লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
দারুন! অসাধারন লেখা, ধর্মগুলির জন্য চাবুক মারার শামিল।
অভিদা একটা প্রশ্ন ছিল
কোন নারী বলতে কি বিবাহিত এবং অবিবাহিত দুই প্রকার নারীকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি শুধুই অবিবাহিত রা? যদি বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রচলিত থাকে, তবে এইটা কি তাদের স্বামীরাও মেনে নিত? মেনে তো নেয়ার কথা না বলেই মনে হয়!!
@অর্ফিউস,
আমার কাছে এই মুহূর্তে বৃহদারণ্যক উপনিষদ নেই, তবে, নেটে খুঁজে অনন্তের লেখা থেকে একটা রেফারেন্স পেলাম –
যা হোক, বিবাহিত হোক, অবিবাহিত হোক, স্বামী থাকুক আর নাই থাকুক – জোর করে যৌনসঙ্গমে বাধ্য করাটাই ধর্ষণের সামিল। তবে হিন্দু পুরানে নারীদের গাধা, শিয়াল, জোঁক থেকে শুরু করে এমন সব বিশেষণে বিশেষিত করা হয়েছে যে জোর করে যৌনসঙ্গম করা তো মামুলি!
@অভিদা,
সেটা ঠিক। তবে আমাদের দেশে আবার এইসব চিন্তাও অনেকে করতে পারে না। যেহেতু বউ, মানেই কেনা জিনিস।
এই কারনেই মনে হয় এইসব কান্ড হয় দেখেন। আজ পিসি খুলেই বিডি নিউজে এই জিনিস পেয়ে মুড টাই অফ হয়ে গেল।
মোড়লের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে এক মেয়েকে ধর্ষন
আমার ভাবতে একটু অসুস্থ লাগছে যে অন্যধর্মের ছেলের সাথে প্রেম করাই মেয়েটির জন্য কাল হয়ে গেল, আর পাড়া সম্পর্কের খালু, ভাই চাচা টাইপ লোকরাই এসে মেয়েটিকে ধর্ষন করল! এই কাজটা কিভাবে করতে পারল অতি পরিচিত এমন একটা মেয়েকে যে কিনা সেখানে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠেছে।
এক এলাকার ডাকাত নাকি নিজের এলাকায় ডাকাতি করে না কারন নিজের লোক থাকে তাই,অথচ মেয়েটি নিজেদের লোক হওয়া সত্বেও রেহাই পেল না। তাহলে এইসব ডাকাত বা অনেক মধ্যযুগীয় বর্বর রাও মনে হয় ধর্মদ্বারা ব্রেইনওয়াশ হওয়া লোকদের চেয়ে ঢের ভাল।
প্রায়শ্চিত্তের রাস্তা যদি সহজ হয়, তবে পাপ(যাকে তারা পাপ বলে) করতে সমস্যা কি? সারা জীবন খুন, ধর্ষণ করে পটল তোলার আগে একবার মক্কা দর্শন করলেই হলো। আর সনাতনী হিসাবটাতো আরও সরেষ, একবার ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম নিলেই নাকি বৈকুন্ঠধাম নিশ্চিত।ধর্মগ্রন্থে যখন সবই আছে, তখন বিবেককে কাজে লাগানোর কি দরকার….. :guru:
ভীষন ভীষন দরকারি লেখা। অাগেভাগেই বলে রাখছি, বারবার এখান থেকে তুলে নিতে হবে লড়াইর রসদ। :guru: :guru: :guru:
@সৌরভ শাব্দিক,
অনেক ধন্যবাদ। কোন সমস্যা নেই, যত ইচ্ছা রসদ তুলে নিন 🙂
নারী অবমাননায়ও হিন্দুধর্মের জুড়ি নেই। আমাদের দেশের শতকরা ৯৯ ভাগ পুরুষ মানুষ তাদের খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু দৈনন্দিন প্রতিটা কাজের জন্যই কোন কোন না নারীর ওপর নির্ভর করে,তারপরও নারীদের এরা প্রতিনিয়ত অপমান করতে থাকে।বিভিন্ন পবিত্র ধর্মগ্রন্থেও নানা ভাবে নারীদের অপমান করা হয়েছে।
শুক্ল যজুবেদের ৩০ অধ্যায়ের ১৩ ও ১৪তম শ্লোকে বলা হয়েছে,”যমের উদ্দেশ্যে বন্ধ্যা নারীকে যুক্ত করছি।যমের উদ্দেশ্যে যমজ সন্তানের মাতাকেও যুক্ত করছি।”
প্রশ্ন হল কেন?কেন বন্ধা নারী বা যমজ সন্তানের মাকে যমের কাছে বিসর্জন দিতে হবে?যমজ সন্তানের মা হওয়া অথবা বন্ধা হওয়া কিভাবে অপরাধ হয় যে তাদেরকে যমরাজের কাছের বিসর্জন দিতে হবে?
আর অশ্বমেধ যজ্ঞের কথাতো আপনি বলেছেন।শুক্ল বেদে এর বর্ণনা পাওয়া যায়।শুক্ল বেদের ২৩ অধ্যায়ের ২১ থেকে ৩১ নম্বর শ্লক পর্যন্ত চরম অশ্লীল ভাবে এই যজ্ঞের বর্ণনা করা হয়েছে।এর অনুবাদক কি বলছে শুনুন”টীকাঃএখানথেকে ৩১ কণ্ডিকা পর্যন্ত মহীধর ভাষ্যে অশ্লীল অর্থ করা হয়েছে।পবিত্র বৈদিক মন্ত্রে এ অশ্লীল অর্থ কেন তা আমাদের বোধগম্য হয় না।আমারা এখানে সাধ্য অনুযায়ী সাধরণ একটা অর্থ দিয়েছি।”খুব সাধরণ অর্থ করা হয়েছে তার পরও ২১ নং শ্লোকে বলা আছে “হে বীর্ষবর্ষণকারী অশ্ব,তুমি বীর্ষ ধারণ কর,যা রমণীগণের জীবন ও ভোজন স্বরূপ”আর এর পরের শ্লোকগুলোর যে অর্থ করা হয়েছে তা অত্যান্ত অশ্লীল হওয়ায় লিখছি না। কথা হল অশ্বের বীর্য কিভাবে নারীদের খাদ্য ও জীবন হয় তা বোধগম্য হলো না।
শ্রীরায় বিনোদ প্রণীত,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক প্রকাশিত “পদ্মপুরানের” দেবখণ্ড অধ্যায়ের “শিবের প্রেম নিবেদন”ও “পিতার প্রস্তবে মনসার দুঃখ” শিরোনামে পদ্য দুটি পড়লে দম হয়ে আসে।এখানে দেবতা শিব তার দুহিতা পদ্মবতীর সাথে চরম অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়।
আর দাদা, ব্রহ্মা ও দেবতা প্রজাপতি বোধহয় একই ব্যাক্তি।ব্রহ্মার আর এক নাম হল প্রজাপতি।
@প্রাক্তন আঁধারে,
এতো সিরিয়াস জিনিসরে ভাই। আগে জানতাম না। এটা কি শুক্ল যজুর্বেদের সংহিতা অংশে আছে? না থাকলে দয়া করে লিঙ্ক দ্যান একটু পড়ে দেখি। সংহিতা অংশে থাকলে অবশ্য লিঙ্ক লাগবে না, আমার কাছে আছে ঐগুলা।
@অর্ফি ভাই,
আমি এগুলো পেয়েছি শুক্লযজুর্বেদের ১৩ অধ্যায়ের ২১ থেকে ৩১ নম্বর শ্লোক পর্যন্ত।আমার শুধু বইটায় আছে কোন লিংক নেই।আর এই বইটা প্রকাশিত হয়েছে কলকাতার হরফ প্রকাশনী থেকে।অনুবাদ ও সম্পাদনা শ্রীবিজন বিহারী গোস্বামী।
@প্রাক্তন আঁধারে, ধন্যবাদ ভাই। বইটা মানে সংহিতা অংশ আমার কাছেও আছে। কালকেই ১৩ অধ্যায়ের ২১ থেকে ৩১ তম শ্লোক পড়ে নেব। আসলে বেদ কাছে থাকলেও শুধু ঋগ্বেদের খানিকটা ছাড়া আর কিছুই এ পর্যন্ত পড়ি নাই। বুঝতে পারতেছি পড়তেই হবে 🙂 । কত কিছুই না আমাদের অজানা থাকে।
@অর্ফিউস,
প্রাক্তন আঁধারেকেও বলেছি, আপনাকেও বলি, লিখুন এ নিয়ে। বইপত্তর তো আছেই আপনাদের কাছে।
@অভিজিৎদা, অনেক ধন্যবাদ দাদা আপনার উৎসাহ দেয়ার জন্য। দ্রুতই একটা সহজ বিষয় বেছে নিয়ে, একটা নুন্যতম মানসম্মত ( মুক্ত মনার সাথে যায় এমন নুন্যতম মান বজায় রেখে) লেখা লেখার ইচ্ছা আছে আমার। আপনার উৎসাহ অবশ্যই আমার নার্ভাসনেস আর ভীতি কাটাতে সাহায্য করছে।
@প্রাক্তন আঁধারে,
চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
অবশ্যই। আপনি শুক্ল যজুবেদ এবং অন্যান্য গ্রন্থ থেকে এক বিশাল রত্ন ভান্ডার উন্মোচন করেছেন, বলাই বাহুল্য। আপনাকে অনুরোধ করব, কেবল মন্তব্যে নয়, পূর্ণাঙ্গ লেখার আকারে প্রকাশ করুন। আপনি যেহেতু এগুলো নিয়ে খোঁজ খবর করছেন, এবং আপনার কাছে বইপত্তর আছে, আপনার উচিৎ হবে সেগুলো বর্ণনানুক্রমিকভাবে তুলে ধরা। নেটে হিন্দু ধর্মের ব্যাবচ্ছেদ করা লেখা খুবই কম। আবুল কাশেম ((হ্যা যাকে কথায় কথায় ‘ইসলামবিদ্বেষী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়, সেই আবুল কাশেম) একটা লিখেছিলেন একসময় (এখানে কিংবা এখানে)। রণদীপম বসুও কিছু লিখেছিলেন ( এখানে )। তারপরেও রিসোর্স অনেক কম। আপনাদের এগিয়ে আসা দরকার।
প্রজাপতি নিয়ে সমস্যা আছে। একেক জায়গায় একেক কথা বলে। হ্যা মনুসংহিতায় ব্রহ্মাকেই এই উপাধি দেয়া হয়েছে বটে, কিন্তু বেদে আবার ইন্দ্র, সাবিত্রী, সোম, হিরণ্যগর্ভ ও অন্যান্য দেবতাকেও প্রজাপতি বলা হয়।
আবার ব্রহ্মার মানসপুত্র দশজন ঋষিকেও কোথাও কোথাও প্রজাপতি বলা হয়েছে। সে হিসেবে মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত, পুলহ, ক্রতু, বশিষ্ট, দক্ষ, ভৃগু, নারদ – এই দশজন সপ্তর্ষিই প্রজাপতি।
এখানেই শেষ নয়, দশজন ঋষির সৃষ্টিকর্তা বলে স্বয়ম্ভু মনুকেও প্রজাপতি বলা হয়। এবার আপনি ঠিক করে নিন 🙂
@প্রাক্তন আঁধারে,
ভাই তাহলে আরো অশ্লীল ছিল, আম্নে এই রকম ইঙ্গিতপুর্ন নয়, বরং সরাসরি অশ্লীল ভাবেই কি সংস্কৃত বেদে শ্লোকগুলো লেখা ছিল?
সংস্কৃত তো আর বুঝি না, তাই বাংলা অনুবাদই ভরসা।
পড়ুন মানে এই রকম ইঙ্গিতপুর্ন নয়