( স্যাটায়ারটা বেড়িয়েছে কাফিলাতে ( English Blog), সত্যসাগর বলে এক ব্লগার লিখেছে। আমি ওর লেখাটাতে নিজের মশলা ঢেলেই লিখলাম)
-কমরেড-লোকটা জল চাইছে। ঠেকে গেছে-তৃষ্ণার্ত। তৃষ্ণার্ত লোককে জল দেওয়ার পার্টি লাইন কি কমরেড?
মোবাইলের অন্য লাইনে ক্ষণিকের নীরবতা। পার্টির মহান তাত্ত্বিক কহিলেন
– ওটা শোধনবাদি কার্যক্রম। তাকে বল আমরা শ্রেনী বিপ্লবের জন্য জীবন দিতে রাজী। কিন্ত তৃষ্ণার্তকে জল দেওয়ার মধ্যে একটা রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সুলভ ধর্মীয় লেবাস আছে যা প্রতিক্রিয়াশীলতার নামান্তর”
-এখুনি জল না দিলে, লোকটা কিন্ত পার্টি অফিসের দরজাতেই অক্কা তুলবে, কমরেড। বুর্জোয়া মিডিয়ার চেঁচামেচি তখন সামলাতে পারবেন?
-ঠিক। মিডিয়া আমাদের শত্রু। কিন্ত ওদের ঠিক ঠাক কভারেজ না পেলে, জনগণের কাছে পার্টি নিয়ে ভুল সংকেত যাবে। আচ্ছা এক কাজ কর-লোকটাকে জিজ্ঞেস কর ও জল সাপ্লাই এর প্রাইভেটাইজেশনের বিরোধি কি না।
-কমরেড লোকটা বলছে, ও প্রাইভেট আর পাবলিক জলের পার্থক্য বোঝে না। কারন পাবলিক সাপ্লাই এ জল নেই-আর প্রাইভেট সাপ্লাই এর দামী জল কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। ওর কাছে দুটোই সমান কমরেড।
-হুম। ঠিক। আচ্ছা ওকে জিজ্ঞেস কর ও এই জল না পাওয়ার জন্য আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের দোশর গ্লোবালাইজেশনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে রাজি কি না?
– কমরেড পেটে ভাত নেই, জল নেই। খুব দুর্বল। কথা বলার ক্ষমতাই নেই-তো শ্লোগান।
-বুঝলাম। এক কাজ কর। জিজ্ঞেস কর লোকটা সেকুলার কিনা। বা মার্কেট নিয়ে ওর দৃষ্টি ভংগী কি। বুঝতেই পারছ, না বুঝে শুনে ত জল দেওয়া যায় না। যদি কালকে জানা যায় লোকটা সংঘের লোক, তাহলে কান কাটা গেল আর কি।
– লোকটা ভগবানে বিশ্বাস করে। তবে ভগবান ভ্যাকেশনে গেছে-সুরাহা হয় নি । না খেতে পেয়ে মরছে। তাই পার্টি অফিসে এসেছে কমরেড।
– আমি এই ভয়টাই করছিলাম। মানে প্রতিক্রিয়াশীল পার্টিতে আগে ছিল। এখন এখানে ঢোকার চেষ্টা করছে। সুবিধাবাদি। ব্যপারটা নিয়ে পলিটবুরোতে আলোচনা দরকার।
– পলিটবুরোর মিটিং কখন হবে কমরেড?
– অর্ধেক মেম্বার ছুটিতে। জি এস এখন ইংল্যান্ডে তার শিক্ষক অধ্যাপক ডুরান্ড সাহেবের কাছে নিও ইম্পিরিয়ালিজম নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনাতে ব্যস্ত। ঠিক বলতে পারছি না কবে মিটিং ডাকা যেতে পারে।
– কমরেড, লোকটা বলছে, ওর সময় নষ্ট না করতে। জল না দিতে চাইলে যেন আমরা সাফ সাফ বলে দিই। ওই নতুন একটা আম আদমি পার্টি হয়েছে, সেখানে জয়েন করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। ওরা নাকি এত কিছু প্রশ্ন ছাড়াই জল দিচ্ছে।
– নতুন পার্টি? কি ধরনের? নিও লিবারালিজম, সাম্রাজ্যবাদ বা ধর জাতীয় ইস্যুগুলিতে এদের পজিশন কি?
– ওই পার্টির কোন পজিশন নেই স্যার। ওরা শুধু তৃষ্ণার্তকে জল দিচ্ছে।
– তাহলে আবার ওটা কোন পার্টি হল নাকি।
– ওরা বলছে-আসলে এই ইস্যু ভিত্তিক স্টান্ডিংটা খতরনাক। মানে একেবারে স্টান্ডিং পজিশনে ঠাঁই দাঁড় করিয়ে রাখে। মুভমেন্ট হয় না। তাই ওরা স্টান্ডিং না করে, প্রতিটা ইস্যুতে জনগনের কাছে মুভ করছে ।
– জনগন? কমরেড ভুলিও না ১৯১৭ সালের অক্টবর মাসে লেনিন কনস্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলি ধ্বংশ করেছিলেন। কমরেড লেনিন লিখেছিলেন জনগণ একটা ইল্যুউশনের মধ্যে থাকে-তাছারা অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সমাজ নিয়ে নিজেদের ভাল বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই। ফলে পার্টিই জনগণের জন্য ভাল সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। জনগনের জন্য জনগণের সিদ্ধান্ত এনার্কিজম। তুমি মার্কস বনাম বাকুনীন বিতর্ক ভালোই জান। ১৮৬৫ সালে মার্কস বাকুনীনপন্থীদের এই জনগন ভিত্তিক মহল্লাসভার বিরুদ্ধে যে পেপারটা লিখেছিলেন পড়ে নিও। তাহলেই বুঝবে যে এইসব নৈরাজ্যবাদিরা আসলেই শ্রেনী বিপ্লবের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
– কমরেড লোকটা মারা গেছে।
-ওর লাশ লালপতাকায় মুরে মিছিল বার কর। মিছিলে স্লোগান তোল আর দেখাও নিওলিবারলিজম এবং সাম্রাজ্যবাদের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে কিভাবে জল না পেয়ে সাধারন খেটে খাওয়া মানুষরা মারা যাচ্ছে।
-কমরেড, লাশ নিয়ে মিছিল আপনি আর আপনার পলিটবুড়োরা করুক। আমি আম আদমি পার্টিতে চল্লাম। এটলিস্ট সেখানে তৃষ্ণার্ত লোকেদের জন্য একটু জলের ব্যবস্থা ত আছে।
হা হা… স্যাটায়ারটা দারুণ 🙂
বিপ্লবদা, আম আদমীকে কি গ্লোবালাজেশনের ধাক্কা সামলাতে হবে না? এখনই সময় হয়নি পার্টি চরিত্র যাচাইয়ের মনে হয়। তবে জনপ্রত্যাশার স্রোতে জেগে উঠা রাজনৈতিক দর্শন এগিয়ে যাবার মাইলফলক বৈকি।
@কেশব কুমার অধিকারী,
আম আদমি পার্টি, দিল্লী রাজ্যে রিটেলে এফ ডি আই আউট করে দিয়েছে। গ্লোবালাইজেশনের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান। সুতরাং সেখানে সমস্যা কই? আমি অবশ্য গ্লোবালাইজেশনের পক্ষেই
@বিপ্লব পাল,
আম আদমী পার্টি অতি গোলমেলে বস্তু মশাই| এদের মধ্যে কেউ কেউ মধ্যম অবস্থানের বাম দিকে, কেউ কেউ ডান দিকে| কেউ কেউ গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী, কেউ কেউ দক্ষিনপন্থী উন্মুক্ত ও সরকারী খবরদারি ও নিষেদ্ধাজ্ঞাহীন বাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাসী| কেজ্রীওয়াল অবস্য বলছেন যে তিনি অত শত বোঝেননা| তিনি বোঝেন দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও এমন সরকার যা মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান করবে| ভালো কথা| কিন্তু দুর্নীতি এবং অপশাসন রোগ নাকি রোগের উপসর্গ মাত্র? ভারতের ইতিহাসে একটি পার্টির মধ্যে এত মতাদর্শগত ভিন্ন গোষ্ঠী এর আগে দেখা যায়নি| আমাদের রাজনৈতিক শিক্ষা হচ্ছে মতের অমিল হলে আরেকটি দল গঠন করে ফেল চটপট| স্রেফ তাত্ত্বিক কচকচির কারণে এত্তগুলো কমুনিস্ট পার্টি! আম আদমী পার্টিকে আগে একটা তাত্ত্বিক অবস্থানে আসতে হবে বলে মনে করি| তাদের ম্যানিফেস্টোতে এই তাত্ত্বিক অবস্থান স্পষ্ঠ নয় একদমই| এইটা না করলে, ঝড়ের মুখে ভাঙ্গন অবশ্যম্ভাবী!
এইবার প্রশ্ন উঠতে পারে যে স্রেফ রিয়েল পলিটিক কি একটা রাজনৈতিক দলের পক্ষে যথেষ্ট নয়? অবশ্যই যথেষ্ট| তামিল নাড়ুতে যে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো আছে, তাদের কৌনসা বড় মুখ করে বলার মত মতাদর্শ আছে? নেই তো!
তারা কি রাজ্যের উন্নতি করতে পারেনি? অবশ্যই পেরেছে| নানান ক্ষেত্রে তামিল নাড়ু ভারতের অগ্রগণ্য রাজ্য| শিক্ষা, কর্মসংস্থান , বিদ্যুত রাস্তা ঘাটে এগিয়ে আছে|
কিন্তু সেইখানে একটা বহুস্তরীয় অলিগারকি সৃষ্টি হয়েছে| তারা দুর্নীতিতে যথেষ্ট এগিয়ে| আর্থিক নয়ছয় থেকে শুরু করে নানাবিধ বদমাইসিতে পটুত্ব লাভ করেছে|
একইভাবে রোমান প্রজাতন্ত্র রোমকে এক বিশ্বশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল| তখনকার দিনে রোমের থেকে বেহেতর নগর এবং নাগরিক সুযোগ সুবিধা আর কিছু ছিলনা| কিন্তু দুর্নীতিতে এবং অন্যকে নিপীড়ন করতে এই রোমানরাই ছিল সিদ্ধহস্ত!
অন্যদিকে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কমুনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব তুলনামূলক ভাবে অনেক কম দুর্নীতিগ্রস্ত এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী| মানিক সরকারকে নিজের হাতে জামাকাপড় কেচে শুকোতে দিতে এই অধম নিজে হাতে দেখেছে| বিমান বসু আজও কমিউনে থাকেন এবং রান্না করে খান| দারওয়ান এবং আশেপাশের রিক্সাওয়ালাদের রেধে খাওয়ান| বুদ্ধবাবুর ব্যাঙ্ক একাউন্ট-এ হাজার বিশেকের বেশি টাকা কখনই থাকেনা| মোটের উপর বেশির ভাগ কর্মীরা গাম্বাট (pedantic ) হলেও সৎ, আদর্শবাদী এবং তুলনামূলকভাবে সহজ ও পরিশীলিত জীবন যাপন করেন|
এসত্ত্বেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুশাসন দিতে কমুনিস্ট পার্টিরা ভারতে অক্ষম হয়েছে|
************************************************************************
অনেক কথা বলে ফেললাম! কোনো মানে দাড়ালো কিনা কে জানে!
বরং এই পোস্টের সম্পূর্ণ একটা বিপরীত লেখা পড়ে ফেলুন বিপ্লব-দা!
http://pnachforon.blogspot.ch/2014/01/blog-post_19.html
@অনামী,
করাপশন রোগ না রোগের উপসর্গ সেটা জানার জন্য আপনাকে দেখতে হবে সোভিয়েত আমলের ডাচাগুলি অথবা চাওসেস্কুর প্রাসাদ নাহলে চন্দন বসুকে জিগ্যেস করতে পারেন।
কুমিরছানা দেখিয়ে লাভ কি? মানিক সরকারের আপন বোন ভুয়ো ইউনিভারসিটির ভুয়ো ডিগ্রী নিয়ে প্রধানশিক্ষিকা আর বিমান বসুর আত্মীয়রা তো শুনি কোটীপতি। সারদা কাণ্ডের আগে পর্যন্ত মানিক সরকার রোজ দুটো করে চিটফাণ্ডের অনুষ্ঠান করতেন আর জামাকাপড়তো জর্জ ফার্নান্ডেজ ও নিজেই কাচতেন। আর করাপশন কি শুধু টাকাপয়সার, না ক্ষমতার দাপটও একজাতের করাপশন। নন্দীগ্রাম কীভাবে হল?
পাঁচফোড়ন দেখি আবেগে একেবারে থইথই করছে, বিশ্বাস করবেন না আমার কীবোর্ড থেকে মনিটর পর্যন্ত কিরকম চটচট করছিল। তবে একখান কথা আছে, ওখানে মন্তব্য করার সুযোগ পাইনি তাই আপনাকেই বলছি। ওই রিকশাওয়ালা ৩৫ বছর ধরে রিক্সাই চালালো, কমরেডরা একটা ভ্যানোও কিনে দিলেন না।
আর আম আদমি পার্টি কোনও পার্টি নয়, A BUNCH OF JOKERS PRACTICING DIGNIFIED HOOLIGANISM , এর উপরে পুরো দলটাই ঈশ্বরবিশ্বাসী।