সমস্যাটা অনেক পুরোনো। এ নিয়ে লেখালেখিও হয়েছে অনেক। গত কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে আবার লেখালেখি শুরু হয়েছে ব্যাপক হারে। বুঝতেই পারছেন বাংলাদেশে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে হিন্দুদের উপর মৌলবাদী মুসলমানদের হামলার কথাই বলছি। এই যাহ, হামলার সঙ্গে মুসলমানদের নাম চলে আসলো। বুঝতেই পারছেন মুসলমানদের সমালোচনা করবো। ধর্মের সমালোচনা করি, কারন ধর্মকেই এই সভ্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে হয়। তাই যে কোন সমস্যা বা অপ্রীতিকর ঘটনার পেছনে কোন ধর্মবিশ্বাস জড়িত আছে কিনা- সেটাই আগে তলিয়ে দেখি। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণের জন্য জামাতে ইসলামী বা তাদের সমমনা মুসলিম মৌলবাদীরাই দায়ী,- এটা আমাদের সবার জানা। এটা নতুন করে প্রমাণ করার কিছু নেই। এ হামলার পিছনে রাজনৈতিক কি উদ্দেশ্য বা কোন দলের কি স্বার্থ আছে, সে আলোচনায় যাচ্ছি না। তবে এই সাম্প্রদায়িক হামলার পেছনে ইসলাম আসলেই দায়ী কিনা তা তলিয়ে দেখা যাক।

বছরের শুরুতেই হিন্দুদের উপর হামলা শুরু হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে লিখেছিলাম,- বাংলাদেশে এরকম মুসলমানের অভাব নাই, যাদের অনেককে বলতে শুনেছি, প্রায়ই শুনি, মৌলবাদী মুসলিমরা বা জামাতের মতো সন্ত্রাসী ইসলামী দলগুলো যে হিন্দুদের উপর আক্রমন করছে, তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে,-এসব নাকি ইসলাম সম্মত নয়। ইসলাম নাকি অন্য ধর্মের মানুষের উপর আক্রমন করাকে সমর্থনই করে না। ভালো কথা। যারা এসব মন ভুলানো সুন্দর কথায় বিশ্বাস করেন, আমি তাদেরকে অনুরোধ করেছিলাম, ইসলাম অন্য ধর্মের মানুষদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে বলেছে,- এ সম্মন্ধে কোরাণের কিছু আয়াত বা হাদিস বের করে আমাকে দেখান।

সাড়া পেয়েছি ভালই। বিশাল হাদিসের ভান্ডার থেকে বের হয়ে এসেছে তিন চারটা সুন্দর সুন্দর হাদিস। ভালই মার্কেট পেয়েছে এই হাদিস গুলো। মডারেটরা খুব খেয়েছে। মডারেটদের গণহারে হাদিস কয়টা পোষ্ট করা দেখে মনে হলো,- এই হাদিস গুলো পড়ে দুনিয়ার মুসলিম উম্মাহ সভ্য আর মানবিক হয়ে যাবে একদিনেই। সমাধান হয়ে যাবে দেশের হিন্দুদের সব সমস্যা। কিন্তু ওনারা হাদিসগুলোকে পেয়ে এতই আনন্দিত হয়েছেন যে সেগুলোকে এ সম্পর্কিত কোরাণের আয়াতগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করেননি। এই কয়েকটা হাদিসের দাপটে কোরাণের অনেকগুলা আয়াত গুরুত্ব হারিয়েছে। কোরাণের প্রায় ৪০টার মতো আয়াতকে মিথ্যা প্রমাণ করতে সক্ষম এই তিন চারটা হাদিস তা মডারেটরা খেয়ালই করেননি। আমি বেচারা পড়েছি বিপদে। গতকাল কোনোরকম মন্তব্য ছাড়াই এই কোরানের আয়াতগুলা কপি-পেষ্ট করে যারপর নাই মৌলবাদিদের আক্রোশের শিকার হয়েছি। অনলাইনে সহী ইসলামিক গালাগালিও খেয়েছি আমাদের দেশের মডারেট মুসলিমদের কাছ থেকে। এদের কেউ কেউ আবার হৃদয়ে সৌদি আরব নিয়ে ডাক্তারী আর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত কাফেরদের দেশে। কিন্তু এদের যুক্তিজ্ঞান বা ভাষা উন্নত হয়নি।

ইসলামের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠলে মডারেটরা যে কথাগুলো বলেন,-হিন্দুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য ইসলাম দায়ী নয়, জামাত দায়ী।
জামাত তাহলে অন্য ধর্মের মানুষের উপর হামলা করা কোত্থেকে শিখলো?
জামাত পাকিস্তানী দল, অবশ্যই পাকিস্তানীদের কাছ থেকে শিখেছে।
পাকিস্তানীরা কার কাছে শিখেছে?
পাকিস্তানীরা শিখেছে আফগানিস্তানের তালেবানদের কাছে আর আফগানিস্তানের তালেবানরা কার কাছে শিখেছে?
তাদেরকে কেউ শিখায় নাই, আমেরিকা তাদেরকে সন্ত্রাসী হতে বাধ্য করেছে।
ভাই আমেরিকা তো মাত্র তিনশ বছরের পুরানা দেশ। আমেরিকানরাই কি কোরানেরা আয়াত গুলো লিখে দিয়েছিল।
আমেরিকার জন্মের আগে মুসলমানদেরকে কোন দেশ সন্ত্রাসী হতে বাধ্য করেছে?

মোহাম্মদের মৃত্যুর ২শ বছর পর হাদিস সংরক্ষণ শুরু হয়েছিল বলে যে মডারেটরা হাদিসই বিশ্বাস করেনা বলে এতদিন শুনে এসেছি, সেই তাদের কাছে ইসলামকে শান্তির ধর্ম প্রমাণ করার জন্য অতি মূল্যবান হাদিসগুলো দেখুনঃ-

১.সাবধান, যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব। -আবূ দাঊদ : ৩০৫২

২.যে মুসলিম কর্তৃক নিরাপত্তা প্রাপ্ত কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার ঘ্রাণ পাওয়া যায় চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব থেকে। -বুখারী : ৩১৬৬

৩.রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন,- “মনে রেখো যদি কোন মুসলমান কোন অমুসলিম নাগরিকের উপর নিপীড়ন চালায়, তাদের অধিকার খর্ব করে, তার কোন বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কেয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরূদ্ধে অমুসলিম নাগরিকদের পক্ষ অবলম্বন করব।” -আবু দাউদ

আর কোরাণের আয়াত পেয়েছি সেই দুটাই, যা সব মুসলমানদেরই ছোটবেলা থেকেই মুখস্থ,-

“ধর্মের ব্যাপারে কোন জোর জবরদস্তি নেই” -সূরা আল বাকারা, আয়াত ২৫৬।
“তোমার ধর্ম তোমার কাছে আর আমারটা আমার”,- সূরা কাফিরুন, আয়াত ৬।

প্রশ্ন হচ্ছে, কোরাণের এই দুইটা আয়াত আর হাদিসগুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে নীচের আয়াতগুলো মিথ্যা হবে না কেন?

কোরাণের এ সম্পর্কিত আয়াতগুলো দেখুন,-

-আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে।বস্তুত: ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি। ২-১৯১
-আর তারা যদি বিরত থাকে, তাহলে আল্লাহ্ অত্যন্ত দয়ালু। ২-১৯২

-আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহ্র দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অত:পর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)- ২-১৯৩

-তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর।বস্তুত: আল্লাহ্ই জানেন, তোমরা জান না।- ২-২১৬

-আল্লাহ্র পথে লড়াই কর এবং জেনে রাখ, নি:সন্দেহে আল্লাহ্ সবকিছু জানেন, সবকিছু শুনেন।- ২-২৪৪

-অতএব যারা কাফের হয়েছে, তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তি দেবো দুনিয়াতে এবং আখেরাতে-তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।- ৩-৫৬

-খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ, ওরা আল্লাহ্র সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন। বস্তুত: জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট।-৩-১৫১

-কাজেই আল্লাহর কাছে যারা পার্থিব জীবনকে আখেরাতের পরিবর্তে বিক্রি করে দেয় তাদের জেহাদ করাই কর্তব্য। বস্তুত: যারা আল্লাহ্র রাহে লড়াই করে এবং অত:পর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে মহাপুর্ণ্য দান করব।- ৪-৭৪

-তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহ্র পথে হিজরত করে চলে আসে। অত:পর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না।- ৪-৮৯

-গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান-যাদের কোন সঙ্গত ওযর নেই এবং ঐ মুসলমান যারা জান ও মাল দ্বারা আল্লাহ্র পথে জেহাদ করে,-সমান নয়। যারা জান ও মাল দ্বারা জেহাদ করে, আল্লাহ্ তাদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায় এবং প্রত্যেকের সাথেই আল্লাহ্ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ্ মুজাহেদীনকে উপবিষ্টদের উপর মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ঠ করেছেন- ৪-৯৫

-যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।- ৫-৩৩

-যখন নির্দেশ দান করেন ফেরেশতাদিগকে তোমাদের পরওয়ারদেগার যে, আমি সাথে রয়েছি তোমাদের, সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমূহকে ধীরস্খির করে রাখ। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।-৮-১২

-হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কাফেরদের সাথে মুখোমুখী হবে, তখন পশ্চাদপসরণ করবে না।- ৮-১৫

-আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহ্র সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ্ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন।-৮-৩৯

-সুতরাং যদি কখনো তুমি তাদেরকে যুদ্ধে পেয়ে যাও, তবে তাদের এমন শাস্তি দাও, যেন তাদের উত্তরসূরিরা তাই দেখে পালিয়ে যায়; তাদেরও যেন শিক্ষা হয়।- ৮-৫৭

-আর কাফেররা যেন একা যা মনে না করে যে, তারা বেঁচে গেছে; কখনও এরা আমাকে পরিশ্রান্ত করতে পারবে না।-৮-৫৯

-আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যরে মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহ্র শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ্ তাদেরকে চেনেন। বস্তুত: যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহ্র রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।- ৮-৬০

-অত:পর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ্ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।- ৯-৫

-যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ্ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন। -৯-১৪

-যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহ্র রাহে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জেহাদ করেছে, তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহ্র কাছে আর তারাই সফলকাম।- ৯-২০

-তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ্ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।- ৯-২৯

-ইহুদীরা বলে ওযাইর আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে ”মসীহ আল্লাহর পুত্র।” এ হচ্ছে তাদের মুখের কথা। এরা পূর্ববর্তী কাফেরদের মত কথা বলে। আল্লাহ্ এদের ধ্বংস করুন, এরা কোন উল্টা পথে চলে যাচ্ছে।- ৯-৩০

-হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহ্র পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প।- ৯-৩৮

-যদি বের না হও, তবে আল্লাহ্ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্খলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আর আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।- ৯-৩৯

-তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে এবং জেহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে, এটি তোমাদের জন্যে অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার।- ৯-৪১

-হে নবী, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করুন এবং মুনাফেকদের সাথে তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন।- তাদের ঠিকানা হল দোযখ এবং তাহল নিকৃষ্ট ঠিকানা।-৯-৭৩

-কিন্তু রসূল এবং সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে, তাঁর সাথে তারা যুদ্ধ করেছে নিজেদের জান ও মালের দ্বারা| তাদেরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহ এবং তারাই মুক্তির লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে।- ৯-৮৮

– আল্লাহ্ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহ্র রাহে: অত:পর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহ্র চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য।- ৯-১১১

-হে ঈমানদারগণ, তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক্ আর জেনে রাখ, আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।- ৯-১২৩

-বরং আমি তাদেরকে এবং তাদের বাপ-দাদাকে ভোগসম্বার দিয়েছিলাম, এমনকি তাদের আয়ুস্কালও দীর্ঘ হয়েছিল। তারা কি দেখে না যে, আমি তাদের দেশকে চতুর্দিক থেকে হন্সাস করে আনছি। এরপরও কি তারা বিজয়ী হবে? ২১-৪৪

-অতএব আপনি কাফেরদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের সাথে এর সাহায্যে কঠোর সংগ্রাম করুন। ২৫-৫২

-অত:পর যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গর্দার মার, অবশেষে যখন তাদেরকে পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল। অত:পর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করবে! একথা শুনলে। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান। যারা আল্লাহ্র পথে শহীদ হয়, আল্লাহ্ কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না।- ৪৭-৪

-অতএব, তোমরা হীনবল হয়ো না এবং সন্ধির আহবান জানিও না, তোমরাই হবে প্রবল। আল্লাহ্ই তোমাদের সাথে আছেন। তিনি কখনও তোমাদের কর্ম হন্সাস করবেন না।- ৪৭-৩৫

-অন্ধের জন্যে, খঞ্জের জন্যে ও রুগ্নের জন্যে কোন অপরাধ নাই এবং যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের অনুগত্য করবে তাকে তিনি জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত হয়। পক্ষান্তরে যে, ব্যক্তি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে, তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।- ৪৮-১৭

-মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন। তওরাতে তাদের অবস্খা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্খা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অত:পর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে আনন্দে অভিভুত করে-যাতে আল্লাহ্ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জবালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্খাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।- ৪৮-২৯

-আল্লাহ্ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।- ৬১-৪

-মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে?- ৬১-১০

-তা এই যে, তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্খাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ।- ৬১-১১

-তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য।- ৬১-১২

-হে নবী! কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্খান।-৬৬-৯

আয়াত গুলোর শুধু কপি-পেষ্টে মডারেটরা মানতে রাজী হলেন না। কোনো আলোচনায় এই আয়াতগুলো কপি পেষ্ট করে দিলেই যে কথাগুলো শুনতে হয়,-
-আমরা নাস্তিকরা কোরাণের আয়াতের মর্ম বুঝি না।
-কোরাণের আয়াতের মর্ম বুঝতে হলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মুসলমানদের মতো অশিক্ষিত হতে হয়, যারা জন্মের পর পরই লিখতে পড়তে শিখার আগেই কোরাণের আয়াতের মর্ম বুঝে ফেলে।
-কোরাণের আয়াত এমনি এমনি বুঝা যাবে না, শানে নজুল ও তফসির পড়তে হবে।
-তার মানে আল্লাহ মিথ্যা কথা বলেছে। আল্লাহ বলেছে,- ”আমি কোরাণ তোমাদের জন্য সহজ করে নাজিল করেছি যেন তোমরা তা বুঝতে পারো।”
-আলাদা আলাদা আয়াত দিলে হবে না, আগের আয়াত এবং পরের আয়াত দিতে হবে।
-আরে ভাই পুরা কোরাণ কি একসাথে নাজিল হয়েছিল? এইটুকু একটা বই লিখে শেষ করতে মোহাম্মদ তার জীবনের ২৩ বছর সময় ব্যয় করলে
আমাকে একদিনে পুরো কোরাণ কপি পেষ্ট করতে হবে কেন?

আরো সমস্যা আছে। দেশে মুসলমানরা যখন হিন্দুদের ঘরবাড়ি পোড়ায়, তখন মন্তব্যহীন কোরাণের আয়াতও ফেসবুকে কপি পেষ্ট করা যাবে না। এতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আরো বেড়ে যেতে পারে। তাহলে আমরা কি শিখলাম? আমরা শিখলাম, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা বুঝে কোরাণের এই সহিংসতা পূর্ণ আয়াত লুকিয়ে রাখতে হবে, যখন তখন পোষ্ট করা যাবে না। বছরের প্রতিদিন ধর্ম-কর্ম করা যাবে, কিন্তু প্রতিদিন ধর্মের সমালোচনা করা যাবে না। আর বাসায় কোরাণ সাজিয়ে রাখতে হবে, বিদেশে যাওয়ার সময় স্যুটকেসে একটা কোরাণ নিয়া যেতে হবে নিরাপদ ফ্লাইটের জন্য, আয়াতগুলা প্রতিদিন ৫ বার নামাজে বিড়বিড় করে আরবীতে পড়া যাবে, কিন্তু বাংলায় পড়া যাবে না। আর কোথাও কোরাণের আয়াত দেখলে সেটা নিয়া আলোচনাও করা যাবে না। আর নাস্তিকদের সঙ্গে যুক্তি-তর্কে না পারলে যুক্তিহীন আর অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে ইসলাম রক্ষা করতে হবে। আফিম খেয়ে দম বন্ধ করে বসে থাকতে হবে। আচ্ছা, কোরাণের আয়াত কি লুকিয়ে রাখার জিনিস? নাকি ধর্মান্ধ আর মূর্খ্য মানুষগুলোকে লুকিয়ে আফিম খাওয়ালেই আপনাদের ব্যবসা চলে ভালো? সরকার বাংলা কোরাণের ওয়েবসাইট খুলছে, পারলে সেটা বন্ধ করুন।

-আপনারা নাস্তিকরা কোরাণের এই কয়েকটা আয়াতই বার বার দেখান, ভালো আয়াতগুলা আপনাদের চোখে পড়েনা?
-কোরাণের সব আয়াত খারাপ,-এ কথা আমরা নাস্তিকরা কখনোই বলি না। আমাদের আপত্তি হচ্ছে কোরাণের সাম্প্রদায়িক, হিংস্র, অবৈজ্ঞানিক আর অসংলগ্ন আয়াত গুলো নিয়ে। কোরাণে কোথাও মুসলমানদেরকে মানবিক আর সভ্য হতে বলা হয়নি। বার বার মুসলমান হতে বলা হয়েছে, মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে, অন্য ধর্মকে আঘাত করতে বলা হয়েছে, তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিতে বলা হয়েছে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ ফরজ করা হয়েছে। বোকা-সোকা মানুষগুলোর আর কি দোষ? কোরাণই যেখানে ভুত। বুঝলাম, ইসলাম কখনো অন্য ধর্মের মানুষদের উপর অত্যাচার করতে বলেনি, তাদের খুন করতে বা ঘরবাড়ি পোড়াতেও বলেনি। তাহলে মুসলমানরা গত দেড় হাজার বছর ধরে সারা বিশ্বব্যাপি ইসলামের নামে এসব সন্ত্রাসী কাজ করার স্বভাব পেল কোন্ ধর্ম থেকে? আপনার ধর্মগ্রন্থ যদি মধ্যযুগীও, বর্বর আর হিংস্র হয়, তাহলে সে গ্রন্থকে বুকে ধারণ করে আপনি ভালো মানুষ হবেন কিভাবে?

এই মডারেটরাই আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন, অথচ তাদের অনেকে নিজেই সাম্প্রদায়িক মনোভাব মুক্ত নন, অথবা ”সাম্প্রদায়িকতা” শব্দের অর্থ বুঝেন না। যেমন,-তাদের প্রধান শ্লোগান হচ্ছে,- বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিষ্টান, বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালি। শ্লোগানে ধর্মহীন বা নাস্তিকদের কথা বলা হয় না। তারমানে নাস্তিকরা বাঙালি না, অথবা বাঙালি হতে হলে তার একটা ধর্মে বিশ্বাস থাকতেই হবে। আমার বন্ধুরা কেউ কেউ হয়ত বলবেন,- নাস্তিকদের অধিকারের কথা উচ্চারণ করার পরিবেশ এখনো দেশে তৈরী হয়নি অথবা অতটা সাহস আমাদের হয়নি। আপনারা না করলে নাস্তিকদের অধিকারের কথা বলার পরিবেশ তৈরী করবে কারা? আর সাহস না থাকলে ”সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী” আন্দোলনের নামে ভুল কথা বলার কি দরকার?

দেশে হিন্দুদের উপর জামাতী ও ধর্মীয় মৌলবাদীদের নির্বাচনোত্তর হামলার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কোরাণের আয়াত লুকিয়ে রেখে তিন চারটা শান্তির হাদিস পোষ্ট করে ইসলামকে রক্ষা করতে আমরা দেখেছিলাম বেশ কিছু মডারেট মুসলমানদেরকে। এবার যশোরের অভয়নগরে মালোপাড়ায় মণিরামপুর উপজেলায় দুই হিন্দু গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় তারা কি ধরণের হাদিস পোষ্ট করেন,- তা দেখার অপেক্ষায় আছি। বিধর্মী নারীদের প্রতি ইসলাম মুসলমান পুরুষদেরকে কি আচরণ করতে বলেছে,- সে বিষয়ে কোরাণের সুনির্দিষ্ট আয়াত বা হাদিস থাকবে না- তা তো হতে পারে না।

ওমর ফারুক লুক্স