নাফিস আসলে ফেড উড়ানোর কথা চিন্তা করেনি, ওবামার দ্বিতীয় টার্ম নিশ্চিত করার জন্য নাফিসকে ব্যবহার করা হয়েছে।
নাইন-ইলেভেন আসলে আমেরিকার সাজানো ঘটনা, আফগানিস্তান এবং ইরাক দখলের জন্য ঘটানো হয়েছে।
শাহবাগ আসলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি হয়নি, বরং এটি সরকারের একটি পরিকল্পিত প্রজেক্ট, কাদের মোল্লার প্রথম রায়টি ছিল এই পরিকল্পনার ফসল।
অবরোধের ককটেলগুলো বিম্পি-জামাত নিক্ষেপ করেনি, সরকারই বিরোধী দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই ককটেলবৃষ্টি ঘটিয়েছে!
ফাইভ-ওয়ান পরবর্তী সাম্প্রদায়িক হামলা বিম্পি-জামাতের কাজ না, একদলীয় ইলেকশান থেকে আন্তর্জতিক মহলের দৃষ্টি ভিন্ন প্রবাহিত করার একটি সরকারী অপচেষ্টা।

উক্তিগুলো আমার না, বাংলাদেশের এক শ্রেণীর অতি শিক্ষিত ও জ্ঞ্যানি লোকের, যারা আমার-আপনার চেয়ে অনেক বেশী রাজনীতি বোঝেন! এমন না যে, উপরের মত করে ঘটনাগুলি ঘটতে পারে না। কিন্তু আমার-আপনার সাথে এই ক্রমবর্ধিষ্ণ রাজনীতি বুঝনেওয়ালা শ্রেণীটির পার্থক্য হলঃ আমরা সত্যি জানি না, কারা ঘটিয়েছে, কেন ঘটিয়েছে, তাই আমরা আপাত সহজ-সরল কারণ নিয়েই চিন্তা করি, অন্যদিকে রাজনীতি বুঝনেওয়ালারা কোন তদন্ত ছাড়াই শুধুমাত্র ‘রাজনৈতিক ব্রেন’ খাটিয়ে বলে দিতে পারে, এগুলি সব সাজানো। সব চক্রান্ত।

নাফিস ফেড উড়িয়ে দিত চেয়েছিল, কিন্তু কেন? খুব সহজ ব্যাখা ছিল, নাফিস শয়তান আমেরিকার ধ্বংস চায়। আমরা আমাদের চারপাশে কি নাফিসদের মত তরুনদের দেখি না, যারা আমেরিকাকে প্রচন্ড ঘৃনার চোখে দেখে? উঠতে-বসতে গাল দেয়? এদের অনেকেই আবার লাদেনকে কি ভয়ানক সমর্থন করে না আমেরিকাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য? এদের পক্ষে কি সম্ভব না, লাদেনবাদিদের দলে খুব সহজেই রিক্রুট হওয়ার? কিন্তু রাজনীতি বুঝনেওয়ালারা এই আপাত সহজ-সরল একটা সমাধানকে এক লহমায় উপেক্ষা করে কি ভয়ানক জটিল উপসংহার টানে দেখুনঃ ওবামার রিইলেকশান নিশ্চিত করতেই নাফিসের মত এক নিরীহ ছেলেকে বলির পাঁঠা হতে হল!! এমন না যে, আমেরিকা শয়তানি করে না, বা তাকে ঘৃনা করার মত কারণের কমতি আছে! কিন্তু রাজনৈতিক বুঝনেওয়ালাদের কোন ইনভেস্টিগেশন চালানোর দরকার পড়ে না, ঈশ্বর যেমন আগে থেকেই জানেন, তেমন তারাও আগে থেকেই জানে, নাফিস ঘটনাটা পুরাই সাজাইনা! সবচেয়ে হাস্যকর হল, নিজেকে ঈশ্বরভক্ত দাবীকারী লোকগুলোই এমন ঈশ্বরগিরি ফলায় সবচেয়ে বেশী!

কিন্তু কেন? নাফিসের ঘটনাকে সাজানো তকমায় আটতে কেন এত মরিয়া এই শ্রেণীটি? আমেরিকা শয়তান, সুতরাং, তাকে ঘৃনা বা তার বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ করা স্বর্গের টিকিট পাওয়ারই নামান্তর, তাই নাফিস তো এমন করতেই পারে, নাফিস করলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করাই তো সঠিক রাস্তা ছিল একজন ধর্মবিশ্বাসীর জন্য? কিন্তু জটিল রাজনীতি বুঝনেওয়ালারা আমেরিকাকে কখনো ওয়াকওভার দিতে চান না! আমেরিকা ইরাক আক্রমন করলে তারা নিন্দা অবশ্যই করবেন, কিন্তু আক্রান্তরা যদি খুব স্বাভাবিক কারণেই আবার আমেরিকা আক্রমন করে, তখন সেখানেও দুশমনের দুষ বের করার পায়তারা করবেন আমাদের বুঝনেওয়ালারা!! এই শ্রেণীটিই কিন্ত আমাদের উঠতে-বসতে সতর্কবাণী শোনান যে, আমেরিকার আগ্রাসন জঙ্গী ছড়িয়ে দেবে সারা বিশ্বে, অথচ নাইন ইলেভেনের জঙ্গী বারুদ যখন সত্যি সত্যি বিষ্ফোরিত হয়, তখন তাকে বলবেন সাজানো! স্বজাতির ঘাড়ে ছিটেফোঁটা কালিমা পর্যন্ত দেখতে প্রস্তুত নন এই শ্রেণীটি!

এবার এক পাড় বিম্পি সমর্থকের কথা শুনুন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাগুলোর পরই সে মনে মনে একটি সংবাদের লিংক খুঁজতে শুরু করে, সেই সময়টিতে যখন এমনকি বিম্পি মহাসচিবের “দৃষ্টি অন্যখাতে প্রবাহিত করার” স্টেটমেন্টও বের হয়নি। কোন সরেজমিন তদন্ত ছাড়াই তার ছাগু অন্তর আগেই জেনে ফেলে যে, এই সবগুলি ঘটনা ঘটিয়েছে আ’লীগ, অন্তর্জ্বালা তীব্র হয়ে দেখা দেয়, হবারই কথা, কোথায় একদলীয় ইলেকশানের তামাশা নিয়ে কথা কইবে লোকে, সেখানে টক অব দ্যা ব্লগ হয়ে গেল কিনা ‘হিন্দু নির্যাতন’!!!! হিন্দু নির্যাতন তার মনে একটুও বেদনা জাগাল না, বরং সরকারের সমালোচনার পরিবর্তে মানুষ যে ‘হিন্দু নির্যাতন’ নিয়ে কথা কইছে, এইটাই হল তার গাত্রদাহের কারণ। তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ল সে এবং খুঁজতে শুরু করল লিংক!

যাইহোক, যথারীতি ছাগুব্লগ থেকে সে পেয়ে গেল তার খাদ্য, কারণ সেখানকার ফ্যাক্টরিতে ঘন্টায় ঘন্টায় কাঁঠালপাতা উৎপাদন করা হয়, এবং কিভাবে উৎপাদন হয়, তা দিগন্তদা দেখিয়েছিলেন একবার।

হিন্দুদের কারা মেরেছে, হিন্দুরা তা জানে, কারণ আক্রমনকারীরা অন্যগ্রহের কেউ না, যারা মেরেছে তারা আক্রান্ত হিন্দুদের আশে-পাশের গ্রাম বা বাড়িতে থাকে। এই প্রতিবেদন টা পড়ে দেখতে পারেন। খবরটিতে কি আছে? হিন্দুদের ভোট দিতে না করা হয়েছিল, কিন্তু হিন্দুরা তাতে কর্নপাত না করায় তাদের উপর একযোগে হামলে পড়ে জামাত কর্মিরা! আমরা যারা রাজনীতি বুঝি না, তাদের কাছে এ খবরটি বিশ্বাসযোগ্যই মনে হয়। কারণ আমরা আমাদের আশেপাশে চলতে ফিরতে এমন অনেক সাম্প্রদায়িক মানুষ দেখি, যারা কথায় কথায় মালাউন, মালাউন বলে গাল দেয়, হিন্দুদের নিকৃষ্টতম জীব মনে করে! আমাদের সাধারণ চিন্তাশক্তি আমাদের বলে যে, বিএনপি-জামাত কর্মিদের আক্রমন করার রয়েছে আরও সহজ বুঝ্য কারণ, যেহেতু তাদেরকে সর্বান্তকরনে বিশ্বাস করানো হয়েছে যে, যুদ্ধাপরাধীর ফাসি হচ্ছে শুধুমাত্র হিন্দুদের সাক্ষ্যের কারণে, বা সরকার ক্ষমতা আকড়ে থাকতে পারছে শুধু হিন্দু ভারতের কারণে। কিন্তু আলোচ্য ‘রাজনীতি বুঝনেওয়ালা’ শ্রেণীটির দরকার নেই এসব সংবাদ প্রতিবেদনের। কারণ তারা আগে থেকেই জানে এমনটাই ঘটবে, সরকার একটি খেলা খেলবে!

সাঈদির রায়ের পর যখন হিন্দু নির্যাতন হয়, এক বুদ্ধিজীবি ব্লগার বলেছিলেন যে এইটা ইন্ডিয়ার কারসাজি। শাহবাগবিরোধীরা হাজার হাজার লোক নিয়ে অনেক শহীদ মিনার ভেঙ্গেছিল, কিন্তু পাড় বিম্পি সমর্থকরা আবিষ্কার করে ফেলল এক আ’লীগ কর্মিকে, যাকে নাকি দেখা গেছে শহীদ মিনার ভাঙতে। ঘটনাটি হয়ত সত্যি, কিন্তু এরপর থেকে যে আক্রমনই হোক না কেন, যত পরিষ্কারই হোক না কেন আক্রমনকারীদের পরিচয়, পাড় বিম্পি সমর্থকেরা শুধু ঐ সংবাদের লিংক দিতে শুরু করল। যেন বা সংবিধিবদ্ধ আইন তৈরি হয়েছে যে, একজন মাত্র আ’লীগ কর্মির শহীদ মিনার ভাঙনের দৃশ্য এ ধরনের যত ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটবে, তাকে ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট হবে।

যারা সাম্প্রতিক হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে সরব, তারা কেউ আ’লীগের হয়ে কথা বলেনি, সবাই শুধুমাত্র হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলোর নিন্দা করেছে, কিন্তু পাড় বিএনপি সমর্থকেরা আলাদা। তাদের কোন কষ্ট নেই আক্রান্তদের জন্য, বরং কেন এই ঘটনাটা এমন সময়ে ঘটল, তা নিয়েই মর্মজ্বালা তাদের। এ ঘটনা যে বিএনপি-জামাত ঘটায়নি, তা প্রমাণ করতেই শশব্যস্ত তারা।

নির্যাতনের ঘটনাগুলো যাদের উপর হয়েছে, তাদের উপরই আমরা ছেড়ে দেই না আক্রান্তকারী কারা? তারা যখন বলছে বিম্পি-জামাত ঘটিয়েছে, তখন আপনার-আমার আর কি বলার থাকতে পারে! তারা যদি আ’লীগের কর্মির কথা বলে, সেক্ষেত্রেও কি আমাদের কিছু বলার আছে? এমনকি আ’লীগ কর্মি যদি নাও করে থাকে, তবু কি আ’লীগ সরকার দায় এড়াতে পারে?? কারণ নিরাপত্তার দায়িত্ব তো তাদেরই যেহেতু তারা সরকারে আছেন?

আমরা সাধারণ মানুষ এমন করেই ভাবি। নাফিস তো জঙ্গি হামলা করতেই পারে, কারণ তার মত জঙ্গিমনা একেবারে কম নেই আমাদের দেশে, প্রসিকিউশান শক্তিশালী না হলে কাদের মোল্লার রায় তো বেঠিক হবেই, শাহবাগে তো স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সমবেত হবে, সরকারের দুর্বল রায়ের দুর্বল প্রসিকিউশানের বিরুদ্ধে তারা ফেটে পড়বে না? আমাদের অবুঝ মন এও বলে, বিম্পি-জামাত যেহেতু খুবই কোনঠাসা হয়ে পড়েছে, তাদের হতাশ কর্মিদের হাতে ককটেল খেলা করতেই পারে! এসব সাধারণ চিন্তা কিন্ত জটিল রাজনৈতিক বিশ্লেষনওয়ালাদের মাথা অব্দি কখনই পৌঁছুবে না, অ্যান্টেনা সাতআসমান অবধি বিস্তৃত তিনাদের!

কেন নির্যাতনের ঘটনাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের নিক্তি দিয়ে মাপবে একজন সুস্থ-স্বাভাবিক-সাধারাণ মানুষ, যখন তার আশেপাশে এমন অসংখ্য মানুষ দেখতে পায় সে, যারা হিন্দুদের এতটাই ঘৃনা করে যে, পারলে কচুকাটা করে! সুতরাং, যারা নির্যাতন করে, তারা বিদ্বেষ থেকেই করে, বিম্পি-জামাত করলে বিদ্বেষ ও ঘৃনা থেকেই করে, আম্লিগ কর্মি করলেও বিদ্বেষ থেকেই করে! কারণ আম্লিগের ভিতরেও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন লোক কম নেই। এই যখন অবস্থা, তখন কেন কষ্ট করে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খুঁজবে একজন সুস্থ স্বাভাবিক সাধারণ মানুষ??

দলান্ধরা সবকিছু দলীয় মগজ দিয়ে চিন্তা করে, এবং এ করতে গিয়ে তারা একসময় মগজশূণ্য হয়ে পড়ে। কথায় বলে, বুঝতে বুঝতে বোঝা, আমাদের দেশের দ্রুত বর্ধনশীল রাজনীতি-বুঝনেওয়ালা শ্রেণীটি খুব বেশী রাজনীতি বুঝতে গিয়ে যে ক্রমশ বোঝায় পরিণত করছেন নিজেদের, তা হয়ত তাদের জানা নেই। সবকিছুই ঈশ্বরের মত আগে-ভাগে বুঝে ফেলতে পারলেও শুধু এই বুঝটিতেই তাদের রয়ে গেছে যা কিছু ঘাটতি!