ইংরাজী ২০১৩ সাল ছিলো বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছু নতুন করে জানবার বছর। ২০১২ সালের শেষ দিক থেকে যে পরম্পরা শুরু হয়েছিলো অঘটনের, ২০১৩ সালেও তা প্রবাহিত হয়ে চলেছে।

ইতিহাসের দায়মুক্তি, বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসানে জনগনের দাবির মুখে লাথি দিয়ে ট্রাইব্যুনাল নিয়ে সরকারী নয়ছয় শুরু হয়েছিলো। বিচারপতি নাসিমের সরকারী ল্যাপটপ দুর্ভেদ্য সরকারী নিরাপত্তার ভেতরেও আড়িপাতা হলো, ভিনদেশী মিডিয়া তা নিয়ে কেলেঙ্কারীর অপচেষ্টাও করলো, সবই হলো সরকারী ঘৃন্য নীরবতার সামনেই।

তাপরে ২০১৩ সালে কাদের মোল্লার প্রমানিত অপরাধে লঘু শাস্তি নিয়ে বিজয়ীর বেশে কাঠগড়া থেকে নেমে আসার অপমানে অসহ্য বাঙালী ফুঁসে উঠলো। শাহবাগ বিষ্ফোরণ বাংলাদেশের একটা নতুন পরিচয় তৈরি করলো। ফলস্বরূপ সরকার (পড়ুন ইসলামিস্ট তাঁবেদার) আবারও সক্রিয় হলো জনগনকে দমন করতে।

হেফাজত নামের সরকারী আনূকুল্যপায়ী দাড়িয়াল বাহিনী আক্রমনের চেষ্টা করলো শাহবাগের মূল সুরকে। সউদি তাঁবেদার সরকার ইসলামিস্ট লবিকে খুশি করতে হেফাজতী দফা সমূহ মেনে নেবার ঢং আবারও ক্রুদ্ধ করলো জনগনকে। ওদিকে সরকারী আভাস ইঙ্গিত এবং নীরবতায় আমারদেশ নামক ইসলামিস্ট পত্রিকা নিরীহ ধর্মভীরু জনগনের পরকাল নিয়ে ক্রমাগত তাফালিং করতে থাকলো, গনযোগাযোগের অসংখ্য আইন ভঙ্গ হলেও মাহমুদুর রহমান নামক ইসলামিস্ট এজেন্ট থেকে গেলো সরকারী ছত্রছায়ার ভেতরেই। ফলস্বরূপ প্রচুর নিরীহ পুলিস মারা গেলো শিবিরের হাতে।

থাবা বাবাকে হত্যার মধ্য দিয়ে ইসলামিস্ট সরকার যেভাবে প্রগতিশীলদের ওপর আক্রমন শুরু করলো, তা বোধকরি প্রগতিশীলদের মাঝে নতুন করে বোধের সঞ্চার করলো। এই সরকার কতোটা ইসলামী পঁচনে ভেঙ্গে গিয়েছে, তার প্রমাণ আরো প্রকট হয়েছিলো আইসিটি আইন এক ধরনের ব্লাসফেমী আইনে পরিনত করবার মধ্য দিয়ে। বলা প্রয়োজন পাকিস্তান ঠিক এ পথে হেঁটেই আজকের পুঁতিগন্ধম্য ইসলামী ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশও হাঁটছে, তবে একটু স্লথ গতিতে, এই যা!

নাস্তিক্য আন্দোলন বাংলাদেশে আজ মৃত প্রায়। ব্যাক্তিগতভাবে আমার জন্য বোধোদয়ের বছর ছিলো ২০১৩।

সরকার অন্ততঃ বাকস্বাধীনতায় বাধা প্রদান করবে না, এই ভুল ভেঙেছে আমার। ধর্মব্যাবসা সরকার এবং জামাতেস্লামী সকলের জন্যেই ইসলাম একটু গুরুত্বপূর্ন বলদ প্রডাকশন সিস্টেম। যতোবেশি বলদ মাদ্রাসা এবং মক্তব থেকে বের হবে, ততোবেশি বোধ-বুদ্ধি-মানবিকতা হীন আওয়ামী গুন্ডা পয়দা করা সম্ভব হবে, এই বোধ থেকে আমাদের প্রকৃত মুসলমান হাসিনা বুবু মাদ্রাগুলিকে আরো রসদ জ্বালানী সরবরাহ করতে থাকলেন। বোকা মহিলার এই বোধটুকু নাই যে ভোটের জন্য নিজের শত্রুকে শক্তিশালী করতে থাকলে তা বুমেরাং হয়ে নিজের মাথাতেই আঘাত করবে।

ইসলাম নামক দগদগে ক্ষতে মলম না দিয়ে, সে রোগের উপশমের প্রচেষ্টা না নিয়ে আমাদের বর্তমান সরকার পুঁজ ঢাকা দিচ্ছে নানা রঙের পট্টি বেঁধে। কিন্তু এই পুঁজ এমনি অম্লীয়, যে সকল পট্টি পুড়িয়ে তা বের হয়ে আসে। যতোদিন সউদি/কাতারী লবি’র পদলেহনে ব্যস্ত থাকবে আমাদের ‘প্রকৃত ইসলামী’ সরকার, ততোদিন এই রাষ্ট্র পতনের দিকেই যেতে থাকেব।

আপামর জনসাধারন, প্রবাসী জনশক্তি এবং সেলাই দিদিমণিরা যতোই জীবনপাত করুন না কেন, সব অর্জন ভেসে যাবে যদি দেশ এই ইসলামিস্ট জঙ্গীবাদ থেকে মুক্ত না হয়। সরকার একদিকে ইসলামিস্টের সাথে বিছানায় যাবে, তারপর সকাল হলে তাদের বাধা দেয়ার নাটক করবে, এই দু-মুখো আচরন বাংলাদেশকে আবারও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে।

দেখা যাক, আমার এই আশংকা কতটুকু মিথ্যা প্রমাণিত হয়। পুরোটাই মিথ্যে হোক, সেই দুরাশাই করছি।

আবারও সবাইকে ইংরাজী নববর্ষের শুভেচ্ছা। আমরাই বাংলাদেশ ধরে রেখেছি, সউদি সাম্রাজ্যবাদের খপ্পর থেকে বের হয়ে, জনশক্তি নামের দাস সরবরাহকারী অন্যায় বন্ধ করে বাংলাদেশ যেদিন আত্মমর্যাদাশীল একটা স্বনির্ভর জনগোষ্ঠীতে পরিনত হবে, সেদিনই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলতে পারবো। সে লক্ষ্যেই যুদ্ধটা চলবে।