আরেকটি বছর হারিয়ে গেল মহাকালের গর্ভে, সূচনা হল একটি নতুন বছরের।  গত বছরটি ছিল বহুলাংশেই ঘটনাবহুল। দেশের জন্য, মুক্তমনাদের জন্যও।  রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অস্থিরতা, হানাহানি, মারামারি বিরাজ করেছে পুরো বছরটা জুড়েই।  সাগর রুণি হত্যা, বিশ্বজিৎ হত্যা, ত্বকি হত্যা সহ বহু কিছুই ছিল সংবাদ শিরোনাম। এর মধ্যে বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার হলেও অন্যগুলো সম্ভবত ধামাচাপা পড়ে গেছে বিশেষ মহলের চাপে। সাভারে রানা প্লাজা ধ্বসে হাজার খানেক মানুষ মারা গেছে, হয়েছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সংবাদ শিরোনাম। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংক ও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনা, সরকারী ছাত্র সংগঠনের টেন্ডারবাজি এবং বছরের শেষ সময়ে এসে নারী আইনজীবিদের মাটিতে ফেলে প্রহার করার যে ছবি পত্রিকায় এসেছে, তা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। প্রশ্নবিদ্ধ করেছে একপেশে নির্বাচনের সিদ্ধান্তও। সরকারী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সাংসদ দের অনেকে রা ক্ষমতাকে ব্যবহার করে  এ ক’বছরে যে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন সেটাও দেশের জনগণ ভালভাবে নেয়নি।

এত হতাশার ভীরেও বড় কিছু অর্জন ঘটেছে ২০১৩ সালে। শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে অনলাইন ব্লগার এবং অ্যাক্টিভিস্টরা যে বিপুল আন্দোলন গড়ে তুলে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে সঠিক বিচারের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে সেটা একটা বিরাট অর্জন। বাংলাদেশের বেয়াল্লিশ বছরের ইতিহাসে এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। কাদের মোল্লার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে সূচনা হয়েছে আমরা আশা করব, এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে পরের বছরও।  বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় সরকার যে নিরপেক্ষতা দেখিয়েছে সেটাও আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে। কিন্তু সে অর্জনগুলো আবার হারিয়ে গিয়েছে শাহবাগ আন্দোলনের শীর্ষসময়ে রাজীব হায়দার হত্যা এবং  মৌলবাদীদের চাপে  প্রগতিশীল  ব্লগারদের  পাকড়াও করে দাগী আসামীদের মত করে উপস্থাপন, মাসাধিককাল ধরে তাদের জেল হাজতে আটকে রাখা, ফেসবুকে লাইক দেবার অপরাধে সিলেটে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের গ্রেফতার, নতুন করে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (সংশোধন) অধ্যাদেশের মাধ্যমে কালাকানুন প্রবর্তন প্রভৃতির উল্লেখ করা যায়।

গত বছর আমরা আন্তর্জাতিকভাবে আমরা বেশ কিছু খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বদের হারিয়েছি। পণ্ডিত রবিশঙ্কর, বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম, নেলসন মেন্ডেলা, জোহরা তাজউদ্দিন প্রমুখ ছিলেন অন্যতম। ব্লগেও আমরা হারিয়েছি মুক্তমনার অন্যতম সুহৃৎ, সেক্যুলার লেখক ই ড. এ এচ জাফর উল্লাহকে। আজকের দিনে আমরা তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।  আমরা তাদের মত ব্লগারদের লেখা থেকে বঞ্চিত হলেও পাশাপাশি নতুন নতুন লেখকদের পাদচারণায় মুক্তমনা প্রাঞ্জল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে কাদের মোল্লার ফাঁসির পর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এবং যুদ্ধপরাধীদের বিচারকেন্দ্রিক নতুন লেখকদের বিশ্লেষণমূলক লেখাগুলো মুক্তমনাকে ঋদ্ধ করেছে।  আমরা আশা করব সে ধরনের প্রয়াস আগামীতেও বজায় থাকবে।

সবাইকে নতুন বছরের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। নববর্ষ উপলক্ষে চমৎকার কিছু ব্যানার করে দিয়েছেন আসমা সুলতানা মিতা। তাকে মুক্তমনার তরফ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

মুক্তমনা মডারেটরবৃন্দ