কুণাল জাতকের পর এইবার আমরা আলোচনা করবো ৫৪৫ নম্বর জাতক যার নাম বিদূরপণ্ডিত জাতক। বিদূরপণ্ডিত জাতকের মূল চরিত্রে আছেন মহাপণ্ডিত বিদূর। এই মহাপণ্ডিত মহাপুরুষ বিদূরের ছিল মাত্র এক সহস্র ভার্যা এবং শপ্তশত গণিকা। যৌন সম্পর্কে অত্যাধিক অভিজ্ঞ পণ্ডিত বিদূরের কাছে আমরা জানতে পারি যৌন বিজ্ঞান সম্পর্কে। পণ্ডিত বিদূরের মতে অত্যাধিক নারীর সহিত মিলনে পুরুষের বীর্যক্ষয় হয়। যেহেতু একজন বীর্যবান পুরুষের কাছে সব থেকে মূল্যবান বস্তু হল তার বীর্য তাই যে কোন প্রকারেই হোক এই মহামূল্যবান বীর্যকে সংরক্ষণ করতেই হবে। আর পুরুষের অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে এই বীর্য সংরক্ষণের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হল নারী।
আসুন এখন কথা না বাড়িয়ে আমরা মহাপণ্ডিত বিদূরের কাছ থেকে নারী সম্পর্কিত নীতিগাঁথা গুলো শুনিঃ
“অত্যধিক স্ত্রী সংসর্গে হয় বীর্যঃক্ষয়
কাস, শ্বাস, দুর্বলতা, সর্বাঙ্গে বেদনা
বুদ্ধির বিলোপ আর এসব কুফল
দেখি স্ত্রী সংসর্গে সদা হয় মিতাচার।
ধনরত্নে পরিপূর্ণ বসুন্ধরা যদি
দেয় কেহ রমণীকে ভাবি ইহা মনে
আমিই ইহার প্রিয় অন্য কেহ নয়,
অবকাশ পেলে কিন্তু সেই নারী আবার
করিবে সে পুরুষকে তৃণবৎ জ্ঞান।
নারীর চরিত্রে হেন কলুষতা হেরি
অসতীর সঙ্গ ত্যাগ করে ধর্মবিদ।”
নারীরক্ষা পুরুষতন্ত্রের জন্য অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ। নারীদের যে কখনোই বিশ্বাস করতে হয়না তার দৃষ্টান্ত আমরা পাই ৩৯ নম্বর জাতকে যার নাম নন্দ জাতক। এই জাতকের অতীত বস্তুতে দেখা যায়, বৃদ্ধের তরুণী স্ত্রীর গর্ভে একটা পুত্র সন্তান জন্মায় আর এনিয়ে সে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং তার মতো বৃদ্ধের পক্ষে আসলেই উৎপাদন করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে মনে মনে সংশয় প্রকাশ করে। এছাড়া বৃদ্ধ বলে “আমার স্ত্রী যুবতী, আমার মৃত্যু হলে না জানি অন্য কোন পুরুষকে আশ্রয় করবে।” এভাবেই স্ত্রীকে সন্দেহ করে যাচ্ছে পুরুষ যদিও পুরুষকে সন্দেহ করার অধিকার পুরুষতন্ত্র দেয়নি নারীকে।
শত্তুভস্ত্রা জাতক নামক ৪০২ নম্বর জাতকের অতীত বস্তুতে দেখা যায়, এক ব্রাহ্মণ তার ভিক্ষালব্ধ জিনিষ অন্য এক ব্রাহ্মণের হেফাজতে রাখে কিন্তু দ্বিতীয় ব্রাহ্মণ তা খরচ করে ফেলায় আপন কন্যার সাথে প্রথম ব্রাহ্মণের বিয়ে দিয়ে শেষপর্যন্ত ঋণমুক্ত হয়। এখানে নারীকে বিক্রয় করা হয়েছে বললে অত্যুক্তি হবেনা। পিতা দায়মুক্ত হল ঠিকই কিন্তু কন্যার কথা চিন্তা করলেন না। যুবতী কন্যা বাবার বয়সী বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ সহবাসে তৃপ্ত না হওয়ায় এক তরুন ব্রাহ্মণের প্রতি প্রনয়াসক্ত হয়। আর এর মাধ্যমেই তরুণী যে কতো বড় বেশ্যা তা ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝানো হয়েছে এই জাতকটিতে।
পুরুষতন্ত্রের নিকট নারীর দুর্নামের ক্ষেত্রে মাতাকেও ছাড় দেয়নি বৌদ্ধ ধর্মীয় শাস্ত্র। আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করবো ৬১ নম্বর জাতক যাকে অশাতমন্ত্র জাতক বলা হয়। এই জাতকের বর্তমান বস্তুতে রয়েছে, গৃহকর্মে উৎসাহী ব্রাহ্মণ যুবককে তার পিতামাতা পুনর্বার গুরুর নিকট পাঠায় নারী চরিত্রের দোষ অনুধাবন করে সংসার-বৈরাগ্য লাভের উদ্দেশে। মাতাপিতার পরামর্শে সে গুরুর নিকট অশাতমন্ত্র দীক্ষায় প্রত্যাশী হয়। অশাতমন্ত্র বলতে সহজ ভাবে বুঝানো হয় অমঙ্গল বিষয়ে সচেতনতার বিদ্যা আর বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে নারীরাই হল এই বিদ্যার কেন্দ্র অর্থাৎ অমঙ্গলের মূল।
গুরুর বৃদ্ধ মাতা জীবিত ছিল এবং গুরুই তার সেবা করতো। এজন্য লোকে গুরুকে ঘৃণা করতো কিন্তু মাতৃসেবা কেন ঘৃণ্য বিষয় হবে তার কোন ব্যাখ্যা জাতকটিতে নেই। ব্রাহ্মণ পুত্রকে গুরু তার মাতার সেবায় নিয়োগ করলেন। ব্রাহ্মণ পুত্র সেবা করতে করতে গুরু মাতার প্রশংসা করতো এই ভাবেঃ “জরাগ্রস্ত হইয়াও আপনার কি অপরূপ দেহকান্তি, না জানি যৌবনকালে আপনি কীদৃীশি রুপলাবণ্যসম্পন্না ছিলেন।” এভাবে কিছুদিন রুপকীর্তন করার ফলে বৃদ্ধার মনে হল ব্রাহ্মণ পুত্র প্রণয় প্রত্যাশী।
বৃদ্ধ মাতা ব্রাহ্মণ পুত্রকে প্রণয়ে উৎসাহিত করলে ব্রাহ্মণ পুত্র তার গুরুভীতির কথা জানান। বৃদ্ধা মাতা তখন তার পুত্র অর্থাৎ গুরুকে হত্যা করার জন্য ব্রাহ্মণ পুত্রকে উৎসাহিত করেন। কিন্তু তাতে ব্রাহ্মণ পুত্র স্বীকৃত না হওয়ায় নিজেই কৌশলে নিজ পুত্রকে হত্যা করতে আগ্রহী হয়। জাতকের ভাষায় –
“ স্ত্রীজাতি এমনি অসতী ও নীচাশয়া যে এতো অধিক বয়স্কা বৃদ্ধাও কামভাবের বশবর্তী হইয়া বোধিসত্তের ন্যায় ভক্তিশীল ও শুশ্রষাপরায়ণ পুত্রের প্রাণসংহারের জন্য প্রস্তুত হইলো।”
কিন্তু ব্রাহ্মণ পুত্র তার গুরুকে তার মায়ের সব কিছু বলে দেয়। ব্রাহ্মণ পুত্রের প্রণয় না পেয়েই লজ্জায় অপমানে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় বৃদ্ধা মাতা। বৃদ্ধার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে গুরু তার বিদ্যার্থীকে জানায়ঃ “বৎস স্ত্রীজাতি মানেই অসতী এবং ইহাই অসতমন্ত্রের সারকথা। তোমার পরিবার আমার কাছে পাঠিয়েছে ইহার কারণ এই যে তুমি স্ত্রীজাতির দোষ জানিতে পারিবে। আমার মাতার চরিত্রে কি দোষ ছিল তাহা তুমি স্বচক্ষে দেখিতে পারিলে। ইহা হইতেই বুঝিতে পারিবে রমণীরা কীদৃীশি অসতী হতে পারে।” এরপর বিদ্যার্থী ব্রাহ্মণ পুত্র নারী বিষয়ে জ্ঞানলাভ করার পর সংসারে ফিরে না গিয়ে প্রব্রজ্যা (সন্ন্যাস) গ্রহণ করে। গুরু দ্বারা অশতমন্ত্র প্রাপ্ত হয়ে ব্রাহ্মণ পুত্রের মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে নীতিগাথাঃ
“নারীর চরিত্র হায়, কে বুঝিতে পারে?
অসতী প্রগলভা বলি জানি সবাকারে।
কামিনী কামাগ্নি তাপে জবে দগ্ধো হয়
উচ্চে নীচে সমভাবে বিতরে প্রণয়।
খাবার প্রস্তুতে বিচার নাই আগুনের ঠাই
নারীর প্রেমে পাত্রাপাত্র ভেদ জ্ঞান নাই।
অতএব ত্যাজি হেন জঘন্য সংসার
সন্ন্যাসী হইবো এই সংকল্প আমার।”
এইবার আমরা আলোচনা করবো বৌদ্ধ শাস্ত্রের ৬২ নম্বর জাতক যার নাম অন্ধভূত জাতক। এই জাতকের বর্তমান বস্তুতে শাস্তা এক উৎকণ্ঠিত ভিক্ষুর উদ্দেশ্যে বলেন- “রমণীরা নিতান্তই অরক্ষণীয়া। পুরাকালে জনৈক পণ্ডিত কোন রমণীকে তাহার ভূমিষ্ঠ হইবার সময় অবধি রক্ষণাবেক্ষণ করেও সৎপথে রাখিতে পারেন নি।” এই জাতকের অতীত বস্তুতে আমরা জানতে পাই, বোধিসত্ত্ব ছিলেন রাজা যিনি তার পুরোহিতের সাথে দ্যূতক্রিয়া করতেন। এই ক্রিয়ায় তিনি একটি মন্ত্র পাঠ করতেন এবং পুরোহিত প্রতিবারেই হেরে যেতো। মন্ত্রটার গাথা হল নিম্ন রুপঃ
“যাহার স্বভাব যেই,
সেই মতে চলে সেই,
কি সাধ্য কাহার করে প্রকৃতি লঙ্ঘন?
বনভূমি পায় যথা,
তরুরাজি জন্মে তথা,
আঁকা বাঁকা পথে সদা নারীর গমন।
পাপাচার পরায়ণ,
জানিবে রমণীগণ,
স্বভাব তাদের এই নাহিক সংশয়।
যখনই সুবিধা পায়,
কুপথে ছুটিয়া যায়,
ধম্মে মতি তাহার কভু নাহি হয়।”
প্রতিদিন হারতে হারতে পুরোহিত বুঝতে পারলো চরিত্র দোষ হয়নি এমন একজন নারী সংগ্রহ করতে পারলেই এই মন্ত্রের ক্ষমতা হারিয়ে যাবে। এজন্য সে সদ্যভূমিষ্ঠ কন্যা সংগ্রহ করে লালন পালন করতে লাগলো এবং মেয়েটি যৌবনে পদার্পণ করলে পুরোহিত তাকে নিজেই বিয়ে করলো। পরে একদিন রাজার সঙ্গে দ্যূতক্রিয়ায় প্রবিত্ত হয়ে পুরোহিত জিতে গেলো। রাজা মন্ত্র পাঠ করলেও জিততে না পেরে বুঝল যে পুরোহিতের গৃহে নিশ্চয়ই এমন কোন নারী আছে যে পতি ব্যাতিত অপর কোন পুরুষে আসক্ত হয়নি। রাজার অনুমান সত্য হওয়ায় নারীটিকে প্রলোভনের ফাদে ফেলে চরিত্রভ্রষ্ট করলো রাজা।
এরপর আবার দ্যূতক্রিয়ায় হেরে গেলো পুরোহিত। তখন পুরোহিত বুঝতে পারলো যে ইতিমধ্যেই তার রমণীর পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে। তখন রাজা বলেন “রমণীদের নিজের কুক্ষির অভ্যান্তরে রাখিয়া নিয়ত সঙ্গে লইয়া বেড়াইলেও রক্ষা করা অসম্ভব। জগতে বোধহয় এমন স্ত্রী নেই যে স্বামীভিন্ন পুরুষান্তরের সংসর্গে আসে নাই।“ রাজার বক্তব্য জানার পর পুরোহিত তার স্ত্রীকে প্রশ্ন করে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে অবগত হতে পারেনা, বরং নারীটি তার চারিত্রিক বিশুদ্ধতা প্রমাণের জন্য অগ্নি পরীক্ষা দিতেও প্রস্তুত হয়। এদিকে পরিচারিকার মাধ্যমে নারীটি পূর্বেই ধূর্তকে সংবাদ প্রদান করে এবং অগ্নিতে প্রবেশের পূর্বেই ধূর্ত নারীটির হাত ধরে ফেলে। নারীটি তখন ঝাপ না দিয়ে দাবী করে যে এই হাত ধরার মাধ্যমেই তার সতীত্ব নষ্ট হয়েছে। কিন্তু ব্রাহ্মণ বুঝতে পারে সবোই নারীটির কৌশল এবং এজন্য সে নারীটিকে প্রহারের পরে বিতাড়িত করে। জাতকের শেষাংশে রাজারুপী বোধিসত্তের নারী সম্পর্কিত নির্দেশনা উচ্চারিত হয় এভাবে,
নারীর স্বভাব এই দেখিবারে পাই,
চৌরী, বহুবুদ্ধি তারা; সত্যজ্ঞান নাই।
জলমধ্যে যাতায়াত করে মৎস্যগণ
কে পারে তাদের পথ করিতে দর্শন?
রমণী হৃদয় ভাব তেমতি দুর্জ্ঞেয়
মিথ্যা তারা সত্য বানায়, সত্য করে হেয়।
নিত্য নব তৃণ খোঁজে গাভীগণ যথা
কামিনী নতুন বর নিত্য চায় তথা।
ভুজঙ্গিনী খলতায় মানে পরাজয়,
চাপল্যে বালুকা ভয়ে দূরে সরে যায়।
পুরুষ চরিত্র জ্ঞানে অদ্বিতীয়া নারী,
নখদর্পণেতে আছে সংসার তাহারি।
(চলবে)
বৌদ্ধশাস্ত্রে পুরুষতন্ত্র (পর্ব ০৪) পড়ার মাধ্যমে শুরু করে বাকি গুলো পড়ার জন্য আর তর সহ্য হচ্ছিল না। এক নিশ্বাসে বাকিগুলো পড়াশেষ করে ফেললাম। দারুণ কাজে দিয়েছে এই লেখা। আমি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের ব্যাপারে আমার মনের কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম। আবার প্রমাণিত হল যে, পুরুষেরাই ধর্ম তৈরি করে অথবা ধর্মপ্রণেতা একজন পুরুষ। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের কোন একটি টেলিভিশনে একটি নাটক প্রচার করা হচ্ছিল নামটা সম্ভবত ‘ঘোড়ার ডিম’- যেখানে নারীতন্ত্রের একটা সমাজ কিরূপ হয় তা দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। অবশ্যই কাল্পনিক ভাবে। দেখে ভাবছিলাম নাটকটা মনে হয় চলতে দেয়া হবে না। হলও তাই– অসমাপ্ত ভাবেই নাটক টি বন্ধ হয়ে গেল। কিরকম পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজ– সেখানে নারীতন্ত্রের কল্পনা করাও পাপ। জব্বর লেগেছে ভাই আপনার লেখা। ধন্যবাদ। আরও এই রকম লেখার আশায় থাকলাম। (Y)
বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে অনেক দিন ধরেই ভ্রান্ত ভাবে ভাল ধারনা ছিল। আপনার লেখা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারছি। আমার কাছে সব সময়ই মনে হয় যে কোন জীবন দর্শন/ ধর্মকে মানবিকতার এবং ঐতিহাসিক ভাবে কষ্টি পাথরে যাচাই করতে চাইলে সে সম্প্রদায়ের নারীদের অবস্থান দেখাটা খুব জরুরী। এটাকে সে ধর্মের মানবিকতা / বোধ যাচাইয়ের মান দণ্ডও বলা যেতে পারে। সেই বিচারে আসলে কেউই পাশ মার্ক তুলতে পারে নিই। নারীকে সব ধর্মই কোন না কোন ভাবে দাবিয়ে রেখেছে / অপমান করছে । এটা নিঃসন্দেহে পুরুষতান্ত্রিকতার ফল। ভেবেছিলাম গৌতম বুদ্ধ সেটা থেকে আলাদা হবেন। তবে মা কে অপমান করার ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত। এমনটা কেন ভাবা হল ঐতিহাসিক ভাবে বিচার করে দেখা যেতে পারে। কারন সব ধর্মই মাকে উপরে রেখেছে তার কারন মানুষের মায়ের প্রতি বাড়তি কৃতজ্ঞতা। সেখানে এমন গল্প কেন এল সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে। আপনার লেখা জাতকের গল্প গুলোর লিঙ্ক পেলে ভাল হত।
@নিমো, দুঃখিত, জাতকের গল্প দিয়ে গৌতম বুদ্ধকে ভুল বুঝান হচ্ছে। জাতক এর সাথে বুদ্ধের ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। জাতক নিছক গল্প বা সাহিত্য ।আপনি বুদ্ধের জীবনী পরুন, কারন তিনি বলেছেন তাঁর জীবন্টাই ধর্ম। এবং প্রিতিবীর অনেক মনীষী তাঁর জীবনীতে মুগ্ধ । ভারতের দার্শনিক ড রাধাকৃষনান বলেছ্যেন ,তাঁর জীবনীতে এমন কোন ক্ষুদ্র নেতিবাচক কিছু পান নি, যাতে তাঁকে ভুল বোঝানো যায় । আপনি তাঁর লেটেষ্ট জীবনী পেতে চাইলে , ভিয়েতনামের বিখ্যাত জেন সন্যাসী থিক নাট হ্যান এর Old path white cloud বইটা পড়তে পারেন। বইটা পালি সংস্কৃত এবং চাইনিজ মূল টেক্সট অবলম্বনে রচিত । তাঁর বিখ্যাত কিছু সূত্র (discourse) আছে, যেমন kalama sutto, shigalabada sutto . পারলে ইন্টেরনেট এ পরে নেবেন। নারীকে তিনি আলাদা ভাবে কোন জায়গায় বসান নি। তবে জন্মের পর তিনি মাতৃ বিয়গের পর তাঁর দাই মা কে কীভাবে সম্মানীত করে,তাকে দিয়ে ভিক্ষুনি সঙ্গ প্রতিষ্টা করেছিলেন ,ইতিহাসে তা পাবেন। চাইলে বাণী বসু রচিত উপন্যাস ‘ মৈত্রেয় জাতক’ পড়ে নেবেন ।
গুরু ব্রাহ্মণপুত্র আর গুরুমাতার কাহিনী যে বৌদ্ধধর্মের সংসার ত্যাগকে উদ্ধুদ্ধ করার কারসাজি তা প্রমান করতে নারীবাদী গবেষক প্রয়োজন।
@গীতা দাস,
নারীকে নিয়ে বিভিন্ন ধর্ম অবমাননাকর কথা বললেও মায়ের ব্যপারে সব ধর্মই মোটামুটি সহানুভূতিশীল। তবে বৌদ্ধ ধর্ম মাকেও ছাড় দেয় নি।
@নিলয় নীল,
আপনি না জেনে অতিরিক্ত কথা বলছেন।
সব ধর্মই প্রবলভাবে পুরুষতান্ত্রিক।বৌদ্ধ দর্শন বা ধর্ম যা-ই বলুন এটাও তার ব্যতিক্রম নয়। শুধু জাতক নয়, ত্রিপিটকও বুদ্ধের মৃত্যুর অনেক পরে লিখিত বলে জানি। তাই ওসবে লেখা সকল কথার দায় কিন্তু বুদ্ধের উপর বর্তায় না। বুদ্ধ একজন দার্শনিক ছিলেন। ধর্মপ্রবর্তক না। বর্তমানে যদিও প্রায় সকলেই তাকে ধর্মপ্রবর্তক ও তার দর্শনকে বৌদ্ধ ধর্ম বলে চালিয়ে থাকে।
@তামান্না ঝুমু,
আমি বৌদ্ধর উপর কোন দোষ চাপাচ্ছি না। জাতক কাহিনী গুলো কতোটা বৌদ্ধ মুখ নিঃসৃত তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। আমি শুধু বৌদ্ধ শাস্ত্রের নারী বিরোধী লেখাগুলোর উল্লেখ করছি।
@তামান্না ঝুমু,
ধন্যবাদ .
সঠিক বলার জন্য
যতদুর জানি বৌধ্য ধর্মের দর্শন অনুযায়ী জীবন মানে অভিশাপ। জীবন মানে ব্যাধি, জরা এবং মৃত্যু। সুতরাং এই ধর্মে নারীর স্থান খুব উচুঁতে হবেনা এটা বোধয় প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু হিন্দু বা ইসলাম ধর্ম তো তা মনে করে না তা হলে এই ধর্মে নারীর স্থান এত নিচে কেন ? আমার মনে হয় বিবর্তনের মাধ্যমে সব ধর্ম ও সভ্যতা গড়ে উঠেছে সেখানে নারীর অবনমন অনিবার্য ছিল। ভেবে দেখুন, যেখানে বিশেষ করে জননিযন্ত্রনের কোনো ব্যবস্থা নেই সেখানে নারীকে অনেক সন্তানের জন্ম দিতে হয়, সেখানে তাদের স্বাধীনতা কেমন ভানে সম্ভব। তার ওপর সেই যুগে যুদ্ধে পুরুষদের হত্যা করে নারীকে লুঠ করে নিয়ে যেত বিজয়ীরা। সেই যুগে মনে হয় নারীর অবদমন অনিবার্য ছিল। তবে এখন আমরা সবাই এই সব বর্বরতা কিছুটা হলেও দমন করতে পেরেছি। এইটাই বোধয় পাওনা।
@Anindya Pal,
বৌদ্ধ নিজেই ছিলেন দুঃখবাদী দার্শনিক। তার দুঃখ দর্শনে নারীর স্থান খুব একটা ছিল না বললেই চলে। হিন্দু, ইসলাম সহ প্রায় সব ধর্মেই নারীর স্থান তথৈবচ। মুক্তমনাতেও হিন্দু ও ইসলামে নারীর অবস্থান নিয়ে প্রচুর লেখা আছে যদিও বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে ঐ ভাবে লেখা নেই। তাই এই ধরণের লেখার প্রচেষ্টা।
@Anindya Pal, জীবন মানে অভিশাপ, এ কথা বুদ্ধের কোন গ্রন্থে পাই নি । বরং পেয়েছি উল্টোটা ,যেখানে বুদ্ধ বলেছেন, কীভাবে জীবন কে সুন্দর করা যায়। তিনি বলেছেন মানবের একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হল সুখ এবং সেটা মনকেন্দ্রিক। তাই মন কে পরিচর্যা করার নিমিত্তে তিনি তাঁর precept গুলো দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জীবনে দুঃখ আছে ,দুঃখ সত্য এবং দুঃখের নিরোধ আছে । তিনি বলেছেন চরম কিছুই কল্যাণকর নয়,মধ্যপন্থা শ্রেয়, নন-ভাওলেন্ট ই মানুষকে সুন্দর করে । আপনার ব্যাখ্যা সঠিক নয় ।নারীর অবস্থান নিয়ে সন্দিহান হবার আগে , তার ইতিহাস দেখুন, তাদের সমাজ ব্যবস্থা দেখুন । আন্দাজ করে কিছু বলা ঠিক নয় । নারীকে কোথাও অসম্মান করা হয়েছে তার এভিডেন্স দেখছি না । তা যদি হতো তাহলে সেটা কন্টিন্যু করতো । কিন্তু বিশ্ব ব্যাপী কোন বৌদ্ধ পরিবারে তার ছিটে ফোটাও নেই ।
এজন্য লোকে গুরুকে ঘৃণা করতো কিন্তু মাতৃসেবা কেন ঘৃণ্য বিষয় হবে তার কোন ব্যাখ্যা জাতকটিতে নেই। ব্রাহ্মণ পুত্রকে গুরু তার মাতার সেবায় নিয়োগ করলেন।
@Sunny Le,
মাকে নিয়ে এই রকম কুৎসা রটনা আমি অন্য কোন ধর্মে দেখি নি। :-Y :-Y :-Y
বৌদ্ধশাস্ত্র সৰ্ম্পকে অনেক কিছু জানতে পারলাম।
আপনার কি মনেহয় বৰ্তমানে বৌদ্ধ ৰ্ধমাবলম্বীরা খুব বেশি পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব সম্পন্ন হয়?
আমি আশেপাশে যেসব বৌদ্ধ ৰ্ধমাবলম্বীকে দেখি তাদের আচরন দেখে খুব একটা গোঁড়া কুসংষ্কার আচ্ছন্ন মনে হয় না, বরঞ্চ তাদের দেখে শান্ত-নিরীহ-অবলা ধরনের মনে হয়। যেমন ধরুন, বৌদ্ধ পরিবারের মহিলারা স্বাধীনভাবে ঘরের বাইরে কাজ করছে মহিলাদের এই বাহিরে কাজ করা নিয়ে পরিবারের পুরুষদেরও খুব উচ্চবাচ্য করতে শুনিনি; কিন্তু মুসলিম পরিবারগুলোতে ঐ একই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ঝগড়া-ঝাটি, এমন কি মারা-মারি পৰ্যন্ত করতে দেখা যায়।
@হাসান,
বৌদ্ধরা অপেক্ষাকৃত শান্ত নিরীহ বলেই আমিও জানি। তবে আমাদের এখানে বৌদ্ধরা হল সংখ্যালঘু এই ব্যাপারটা তাদেরকে আরও বেশী শান্ত নিরীহ করে রাখে বলেই আমার মনে হয়। এই বৌদ্ধদের দ্বারাই মুসলমানদের উপরে অত্যাচারের অনেক কথা আমরা শুনি। আর বৰ্তমানে বৌদ্ধরা পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব থেকে অনেক খানি বের হয়ে এসেছে বলেই আমার মনে হয়।
@হাসান,
ঠিক
আচ্ছা জাতক কি বুদ্ধের বলা গল্প? নাকি এর প্রায় পুরোটাই পরবর্তীতে হিন্দুদের দ্বারা এডিট করা? কারন জাতকের বহু জায়গায় হিন্দুদের অনেক গল্প ভিন্ন মোড়কে আছে। এছাড়া অধিকাংশ জাতকেই বারানসীর রাজা ও ইন্দ্রের কথা পাওয়া যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়ত স্বর্গ, নরকের কথাও আছে। কিন্তু আমার জানামতে বুদ্ধতো স্বর্গ-নরক বিষয়ে কোন কথা বলেন নাই। তাই জাতক কি আসলেই বুদ্ধের আমলের নাকি পরবর্তীতে হিন্দুদের দ্বারা তৈরী?
হ্যা. নারী বিষয়ে বুদ্ধের কিছুটা শুচিবায়ু ছিল। কিন্তু এই জাতকগুলোতে যেরকম ভাবে বলা হচ্ছে আসলেই কি বৌদ্ধধর্মে নারীকে সেভাবে দেখা হত? কারন আমরা জানি পরবর্তীতে সংঘে নারীদের প্রবেশের অনুমতিও দেয়া হয়।
@রনবীর সরকার,
জাতক বুদ্ধের মুখ নিঃসৃত কিনা এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আর বৌদ্ধ ধর্ম হিন্দু ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত একটা ধর্ম। বৌদ্ধ নিজে আত্মা, ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক নিয়ে অজ্ঞেয়বাদী অবস্থানে থাকলেও কর্মফল, জন্মান্তরবাদের প্রভাব অস্বীকার করতে পারেন নি।
আর পরবর্তীতে এটা হিন্দুদের দ্বারা এডিট কিনা সে বিষয়েও আমি না জেনে আপনাকে নিশ্চিত ভাবে বলতে পারবো না। আর পরবর্তীতে নারীদের অস্বীকার করতে পারে নি বৌদ্ধ ধর্ম একথা ঠিক কিন্তু বৌদ্ধ বেচে থাকার সময়ে নারীদের স্থান খুব একটা হয়েছে বলে আমি দেখিনা।
গৌতম বৌদ্ধ বিতৃষ্ণ ছিলেন তৎকালীন সাংসারিক জীবনাবর্তে। এই জন্য তিনি তার স্ত্রীকেও ত্যাগ করেন। যেহেতু সংসারে বসে অষ্টাঙ্গিক মার্গ পালন করে নির্বাণ লাভ করা সম্ভব নয়, সেহেতু অবশ্যই সাংসারিক মায়া ও কাম ত্যাগ করে গৃহত্যাগী হতে হবে। আর সাংসারিক মায়া ও কাম ত্যাগ করার প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে নারীকে চিহ্নিত করেন গৌতম বৌদ্ধ। তাই নারীদের মায়া কাটাতে বৌদ্ধ ধর্মের সব সময়ই একটা প্রচেষ্টা ছিল। তবে এখন যুগ পরিবর্তন হয়েছে এই যা।
@নিলয় নীল,bouddho and buddha is not same .bouddho is a group of community ,while Buddha is a person . বুদ্ধ যে সব কিছুর মূলে নারীকে চিহ্নিত করেছেন, এসব কথা আপনি কোথায় পেলেন নিলয় নীল ?? তিনি তো বলেছেন, সংসার হচ্ছে আসক্তির উতস,চাই চাই চাই এর উৎস,also sex is the part of desire not whole issue । যেটা বাস্তব এখনও এবং সব সময়। সেই আসক্তি থেকে রেহাই পেতে তিনি সংসার ত্যাগ করেছেন। এভাবে বুদ্ধকে কেন মিস-ইন্টারপ্রিট করছেন ? অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলতে আপনি কী বুঝিয়েছেন ? সংসারের সাথে তো তার কোন বিরোধ নেই ? Those eight noble path is the tools of mind beautification .. আর কর্মফল তো একটা বৈজ্ঞানিক বা লজিক্যাল ফেনমেনন ,সেটা তে কিসের গন্ধ পেলেন ?বুদ্ধের জীবদ্দশায়, যে সকল নারীরা বুদ্ধ কর্তৃক সম্মানীত হয়ে ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছেন, তাদের কথা তো তদন্ত করে দেখলেন না । আর হিন্দুরা এডিট করেছেন, কথাটি এমন নয় । অনেক হিন্দু মহা পন্ডিত বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিতহয়েছেন। তৎকালীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সব বড় বড় পন্ডিত রা ছিলেন তাঁরা অধিকাংশই হিন্দু থেকে এসেছেন। নাগারজুন এর মতো খ্যাত পন্ডিত দের কথা ইতিহাসে আছে,মহাযান স্কুল কে তাঁরা সমৃদ্ধ করেছেন ।
খুব ভালো লিখেছেন। ভাল লাগ্লো। আমি এর মধ্যে কি যেনো এক দরশন খুজে পাচ্ছি।
@সেন্টূ টিকাদার,
কিসের দর্শন ভাই??? :-s :-s :-s