ছোট্ট একটি ঘটনা বলছি ,
৯৬ এর এর কথা , আমরা তখন কালিপুড়ে থাকি । বাসার খানিটা পেছনে হিন্দু পাড়া । রোজ সকালে দুতিনটি মেয়ে পুজোর ফুল তুলতে আসত । আমার সাথে বেশ ভাব তাদের । বাড়তি পাওনা ছিল নাড়ু ,সাদা সন্দেশ । ভারী ভাল লাগত ওদের । বাসার পাশেই ছিল বয়েজ হোস্টেল । এক দিন শুনলাম খুব হৈচৈ হচ্ছে । যতটা মনে আছে একটা ছেলের কাছে নিষিদ্ধ কোন চিঠি পাওয়া গেছে । তাই হোস্টেল সুপার ছেলেটাকে মারতে মারতে সিঁড়ি থেকে নিচে নামাচ্ছে । এর পর ছেলেটার কি হয়েছিল জানি না তবে ঐ দুতিন টা মেয়ে কে আর এদিকে আসতে দেখিনি কোন দিন ।
এত দিন পরে অনুমান করতে কষ্ট হয় না ছেলেটি তার চিঠিতে লিখেছিল , “ প্রথম সকাল হলে স্নানটি সেরে পূজার ফুল তুলে, পূজার ছলে আমারই কথা ভাবো” ।

প্রেম , বড্ড নিষিদ্ধ বস্তুর নাম । মদ, গাঁজা, বারবনিতা পর্যন্ত বাঙালি দেখেও না দেখার ভান করে কিন্তু প্রেম হলে পাড়ায় পাড়ায় রটে যায় “জলির বর্ষার” “তিশা ফারুকির । বাংলাদেশের হকার পর্যন্ত জানে প্রেমিক জুটিকে ব্লাকমেইল করা আবশ্যক । তাই তারা জুটিদের আশেপাশেই হাঁকডাকায় । কখনো পানির বোতল , কখনো চিপসের প্যাকেট নিয়ে হাজির হয় । আজকাল অবশ্য এলিট সোসাইটির জন্য কিছু বাড়তি সুবিধা আছে , পিজ্জা পাস্তা টাইপ খাবার খেতে খেতে বিরক্তি বিহীন আড্ডা দেয়া যায় । এটাও এক ধরনের হকারি তবে পার্থক্য হল ভদ্রতা মোটা পয়সায় মেলে ।
অনেকেই খানিকটা নাক উঁচু করে বলেন , কাঁচা বয়সের প্রেমে আবেগ থাকে, বিবেক থাকে না । আমি বলি , “দাগ না লাগলে শিখবে কি করে” , ভালবাসা শেখার কোন স্কুল তো নেই , যা শেখে দেখে দেখে শেখে । ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে পঁয়ত্রিশ টাকা খরচ করে কলার টিউন কেনে , মেয়েটা কে দেখেই বলে “ ইয়ে একটা কল দিবা । এক এক সময় এক ভাব আসে আর সেই ভাবের জোয়ারে ভালবাসা ভাসে । ভাসুক না ক্ষতি কি ?

ব্লু ফিল্মে আসক্ত হবার চেয়ে একটা মেয়ের সাথে খানিক সময় কাটালে সে অন্তত মেয়েদের প্রেম বিষয়ক মানসিকতা জানবার সুযোগ পাবে । বিশেষ করে আমাদের দেশে উঠতি বয়স্ক ছেলেদের খুবই জনপ্রিয় বিনোদন , ব্লু ফিল্ম । প্রযুক্তির কল্যাণে যুক্ত হয়েছে ফোন সেক্স , ক্যাম সেক্স নামের ভয়াবহ সব দুষিত অভ্যাস । আমি এই বিষয়টা এখনো বুঝি না, ফোনে কথা বলে কিংবা একটা মনিটর স্কিন দেখে কীভাবে যৌনতার অনুভূতি আনা সম্ভব !
এসবের প্রভাবে স্বভাবতই তাদের প্রথম কৌতূহলের বস্তু , নারী শরীর । মেধা বা মনন সেখানে গৌণ স্থানে থাকে । এখনো ছেলেরা কনে দেখার নামে দেখে নেয় মেয়ে তার চেয়ে স্মার্ট কিনা । যদি হয়, প্রথম দর্শনেই ,“আমি কি এই মেয়ে চেয়েছিলাম টাইপ” এক্সপ্রেশন দিয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যায় । ছেলেটার দোষ দেবার সুযোগ কম । ছেলে প্রেম শেখেনি , শিখেছে হিসাব নিকাশ করতে । দুই ছটাক ফর্সার সাথে তিন ছটাক সানি লিওন ও এক ছটাক শিক্ষা মেশালে কয় ছটাক সম্ভাব্য যৌনাবেদনময়ী অবলা মিলবে ।

ফিরছি প্রেমে , কিছু দিন আগে বাবার এক কলিগ মোটামুটি উদ্‌ভ্রান্তের মত বাসায় হাজির হল । যে ভাবে নিঃশ্বাস ফেলছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল, নাদুসনুদুস রুই মাছটাকে কে যেন ডাঙায় আছড়ে ফেলেছে । বাবা বেশ ভয় পেয়ে গেল , এই লোকের নাকি বাইপাস হয়েছে মাস খানেক আগে । একটু এদিক-ওদিক হলেই খালাস ।
যাইহোক পানি-টানি খাওয়ানোর পরে ভদ্রলোক যে বক্তব্য দিলেন তার সারসংক্ষেপ হল , তার মেয়ে এক ছেলের প্রেমে পরেছে এবং ঐ ছেলে কেই বিয়ে করবে । সব ভাল কিন্তু মেয়ের থেকে ছেলে দুই বছরের ছোট । তিনি এই মুখ কিভাবে সমাজে দেখাবেন এই চিন্তায় ওনার এই অবস্থা । এর পরে দু তিন ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস বৈঠক করে তিনি একটা সমাধানে এসেছেন। সেটা হল , ছেলের বয়স কাউকে জানানো হবে না । শুনতে পেলাম , যাবার সময় বাবা কে বলছিলেন – “ভাই মেয়ের জন্য শেষ পর্যন্ত গু হজম করলাম”

ভালবাসার এমন বিশ্লেষণে বাক রুদ্ধ হওয়া বাদ দিয়ে কর্ণ যুগল রুদ্ধ করে দিলাম । শত হলেও আমি ভালবাসাবাদি বাঙালি । ভালবাসার স্বাধীনতা চাই আবার বাঙালির সামাজিক চো** থুক্কু সঙ্কীর্ণতায় আবদ্ধ ।

অবশ্য প্রেম খুব ভাল বিজনেস । মোটামুটি একটা প্রেমানুভুতি টাইপ লেভেল সেটে দিতে পারলেই পণ্য হিট । সেটা হোক চটের বস্তা কিংবা হজমলা । প্রেম মানেই ব্রান্ড হিট । সেটা সচেতন কিংবা অবচেতন যে ভাবেই হোক ।
একটা গল্প মনে পরে গেল ,
এক ভণ্ড পীর গেল এক গ্রামে , গিয়েই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল এই গ্রামে ইসলাম দুর্বল তাই শান্তি কখনো আসবে না । ইসলাম রে সবল হইতে হবে , তাইলেই শান্তি আসবে । পরদিন গ্রামবাসী সবাই হাজির হল পীরের দরগায় । বলল বাবা আপনি তো মহান , এক্কেবারে জিন্দা পীর । পীর তো পুরাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে জিগ্যেস করল , কেন কি হইছে ? লোকজন উত্তর দিল , আমাগো ইসলাম আর শান্তির বহু দিনের প্রেম । কিন্তু শান্তির মায় এমন দজ্জাল যে এত দিন কিছু করার সাহস পায় নাই । গত কাল আপনার ওয়াজ শুইনা ইসলাম চেইতা গেছে , কয় কেডা কইছে আমি দুর্বল , বার খান বাচ্চা পয়দা কইরা দেখায়া দিমু । এই কথা শুইনা শান্তি ইসলামের লগে চইলা আইছে ।

পরিশেষে , প্রেমহীন জীবন কলাহীন কলাগাছ শুধু ভেলা বানানোর কাজ লাগে । বই পত্রের প্রেম দিয়ে সাময়িক ধারণা মিললেও অল্প বিদ্যার সাইড এফেক্ট হবার সম্ভাবনা থাকে । তাই উপকারিতা বিবেচনায় সামাজিক সঙ্কীর্ণতা মুক্ত পরিবেশ, অবশ্যই প্রেমময় পরিবেশ আবশ্যক ।