ইজরাইলের সাথে বাংলাদেশের কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
কেন?
কারণ, ইজরাইল ফিলিস্তিনীদের ভূমি কেড়ে নিয়েছে, বাস্তুচ্যুত ও গণহত্যা করেছে।

ইজরাইলের চেয়েও ভয়ংকর অন্যায় ও অমানবিক কাজ করার পরও পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
আমাদের তো এমনটি করা উচিত হয়নি। স্বজাতির রক্তের দায় ভুলে যাওয়া উচিত হয়নি। খুনী-নিপীড়ক পাকিস্তানের সাথে আমাদের কোন সম্পর্কই রাখা উচিত নয়।

‘৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করার পর একাত্তর পর্যন্ত চব্বিশ বছরে পাকিস্তান আমাদের শুধুই শোষণ করেছে।
আমাদেরকে পাকিস্তান তার ঔপনিবেশ বানিয়ে রেখেছিল। আমরা ছিলাম দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক, অচ্ছ্যুত। আমাদের দেশের ধন-সম্পদ লুন্ঠন করে পাকিস্তানকে উন্নত করা হতো। সরকারের বলয় থেকে দূরে রেখে বাঙালীদের দাস-দাসীতে পরিণত করেছিল। বাঙালীর উপর অত্যাচারের নির্মম স্টীম রোলার চলেছিল।

একাত্তরে বাঙালীর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানীরা ত্রিশ লক্ষ বাঙালীকে হত্যা করেছে, চার লক্ষ মা’কে ধর্ষণ করেছে। কোটি কোটি বাঙালী উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছিল; ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও মৌলিক চাহিদা হতে বঞ্চিত হয়ে অমানুষিক জীবন যাপন করছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছিল; যার ফলশ্রুতি চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ; যাতে কয়েক লক্ষ বাঙালী মারা যায়। অনেক কষ্ট আর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাঙালী পাকিস্তান হতে তার স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে।

দেশ স্বাধীন হবার পর পাকিস্তান বাংলাদেশকে নাজেহাল করার কম চেষ্টা করেনি।
একাত্তরের পরে আশির দশকের প্রায় শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান বাংলাদেশের সাথে লুজ-কনফেডারেশান করার চেষ্টা করেছিল। এই উদ্দেশ্যে আই.এস.আই. স্বাধীনতার পর প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশে নানান ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, পরবর্তীতে জিয়া-সরকারের অধীনে একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারকার্য স্থগিত করে দেয়া ও তাদের পুর্নবাসন করা, বিএনপি’র ৯১-৯৫ সময়কালে গোলাম আযমকে বাংলাদেশে পুন:প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সূচনা ও সম্প্রসারণ; সবকিছুর সাথে পাকিস্তান ও তার গোয়েন্দা সংস্থা আই.এস.আইয়ের সরাসরি সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ রয়েছে।
বাংলাদেশ যখন নব্বইয়ের দশকে ইউরোপ-আমেরিকায় বাণিজ্যে বিশেষ সুবিধা আদায় করার চেষ্টা করছিল, পাকিস্তান সেসময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।

স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পরে যখন একাত্তরের নরপশুদের বিচারকার্য শুরু হয়েছে; তখন, পাকিস্তানীরা বারবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করলে সেই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি জিয়া ইস্পাহানি বাংলাদেশ সফর করে।
এসময় জিয়া ইস্পাহানি বলেছিল, “আমরা অবশ্যই যুদ্ধাপরাধী বিচারের ইস্যুতে যাব না। কারণ, আমরা বাংলাদেশের সাথে অন্যান্য ইস্যুতে পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে উভয়েই লাভবান হতে পারি। আমাদের সামনের দিকে তাকানোর সময়, পিছনের দিকে নয়”।
পরে, একই বছরের মে মাসের ১৩ তারিখ, পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় একাত্তরে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ সর্ম্পকে বিবৃতি দিয়ে বলে, “ঢাকা অতীতের ঘটনা ভুলে যাবে ও আমাদেরকেও ভুলতে দিবে এবং বাংলাদেশের দাবীকৃত হত্যা সম্পর্কে পাকিস্তান কিছু জানে না। বাংলাদেশের দাবিকৃত ত্রিশ লক্ষ শহীদের সংখ্যাটি অযৌক্তিক। একটি দেশের প্রায় ০৫% জনগনকে নয় মাসে হত্যা করা অসম্ভব। এছাড়া, কিছু দেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাংলাদেশকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ককে শীতল করার চেষ্টা করছে।”
একই বছরের ০৮ জুন, পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সচিব মাসুদ খালি একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলে, “বাংলাদেশ যদি বিচার পক্রিয়ার দিকে যাত্রা অব্যাহত রাখে; তবে, পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক শীতল হতে পারে”।

গত ১২ ডিসেম্বর, একাত্তরের ঘাতক-দালাল কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে। এটি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের প্রথম ফাঁসি।
এর পর পরই কসাই কাদের মোল্লা ও প্র-পাকিস্তানী বাংলাদেশীদের জন্য পাকিস্তানের কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায়।

জামায়াতের পাকিস্তান শাখা কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ আখ্যায়িত করে এবং পাকিস্তান সরকারকে বাংলাদেশ আক্রমণের আহবান জানায়।
তেহরিক-ই ইনসাফ দলের প্রধান কসাই নিয়াজীর আত্মীয় সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান বলে, “একাত্তরে হত্যা-ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা নির্দোষ ছিল”।
বাংলাদেশকে নিয়ে এখনো পাকিস্তান-ফেডারেশানের স্বপ্ন দেখতে থাকা পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান কাদের মোল্লার ফাঁসিতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলে, “বাংলাদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত এক ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের একজন অকুণ্ঠ সমর্থক ছিলেন কাদের মোল্লা। তার মৃত্যুতে প্রতিটি পাকিস্তানি শোকার্ত ও মর্মাহত।”
‘ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের একনিষ্ঠ সমর্থক’ কাদের মোল্লার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ড হওয়ায় সোমবার (১৬/১২/২০১৩) জামায়াতের (পাকিস্তান শাখা) পার্লামেন্ট সদস্য শের আকবর খান কাদেরের পরিবারের প্রতি সহমর্তিতা জানিয়ে পাকিস্তান পার্লামেন্টে শোক ও নিন্দা প্রস্তাব আনে; যা পাকিস্তান সংসদে পাস হয়েছে।

সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর পর্যন্ত পাকিস্তান আমাদেরকে দাসের মত ব্যবহার করেছে।
একাত্তরে পাকিস্তান আমাদের জাতিগত ধোলাই করেছে; হত্যা করেছে ত্রিশ লক্ষ বাঙালী, আমাদের চার লক্ষ বাঙালী মা’কে ধর্ষণ করেছে, আমাদের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে চেয়েছে।
একাত্তরে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর আজ পর্যন্ত পাকিস্তান যখন যেভাবে পেরেছে বাঙলা ও বাঙালীর ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে।
বাংলাদেশে চলমান যুদ্ধাপরাধীর বিচারকার্য পন্ড করে বাঙলায় পাকিস্তানীদের প্রতিনিধি “একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা ও জামাত-শিবিরকে” বাঁচানোর হেন চেষ্টা নেই, যা পাকিস্তান করেনি।
বর্তমানে পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধী-কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির ইস্যুতে বাঙলা-বাঙালীকে নাজেহাল ও অপমান করার চেষ্টা করছে।

পাকিস্তান তার জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙলা ও বাঙালীর ক্ষতি করেছে।
আমাদের ত্রিশ লাখ স্বজাতির হন্তারক, চার লক্ষ মায়ের ধর্ষক, দেশের চরম শত্রুর সাথে কূটনৈতিক-অকূটনৈতিক কোন প্রকার সম্পর্ক আমাদের রাখা উচিত নয়।

আসুন সবাই দাবি তুলি, পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সকল সম্পর্ক ছিন্ন করা হোক…

পোস্টটি লিখতে যেসব উৎস থেকে সহযোগীতা নেয়া হয়েছে: ০১, ০২, ০৩

[নজরুল ভাইয়ের পোস্টটি এই ব্লগপোস্টটি লিখতে উৎসা্হিত করেছে। তাই, নজরুল ভাইয়ের পোস্টের ছায়া এই ব্লগপোস্টে পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু হবে না।]