সংখ্যালঘু যৌনপ্রবৃত্তির মানুষদের নিয়ে একটা বই লিখেছিলাম বেশ ক’ বছর আগে। আধুনিক একাডেমিক গবেষণার দৃষ্টিকোণ থেকে সমকামিতা, রূপান্তরকামিতা, উভকামিতা, উভলিঙ্গত্ব সহ সমান্তরাল যৌনতার বেশ কিছু বিষয় আলোচনা করার চেষ্টা করেছিলাম সেখানে। বইটা লিখতে গিয়ে সমাজের সংখ্যালঘু যৌন প্রবৃত্তির বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচিত হতে হয়েছিল, মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছিল তাদের দুঃসহ অভিজ্ঞতার সামনে, যেগুলো নিয়ে আমি এত গভীরভাবে পরিচিত ছিলাম না। বইটি মোটেও মেইনস্ট্রিম ধারার কোন বই ছিল না । তার উপর এ ব্যাপারগুলো আমাদের দেশের অনগ্রসর সমাজে ‘ট্যাবু টপিক’ হিসবেই পরিচিত। বইটি লিখতে গিয়ে দেখেছি – কেউই প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলতে চান না। এমনকি যারা প্রগতিশীল বলে সমাজে পরিচিত, তারাও এ ধরণের বই বুক শেলফে রাখার জন্য কিনবেন, তা আমার ধারণায় ছিল না। কিন্তু আমার ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করে বইটির সবগুলো কপি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে প্রকাশক সাহেব বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বের করার উদ্যোগ নেন। ফেব্রুয়ারির বইমেলায় বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বেরোয় । বইটি যেহেতু সংখ্যালঘু যৌনপ্রবৃত্তি সম্পন্ন মানুষদের অধিকারের কথা মাথায় নিয়ে লেখা হয়েছিল, স্বাভাবিকভাবে বইটির একটা বড় অংশ জুড়ে ‘হিজড়া’দের কথাও এসেছিল।
বইটি লিখতে গিয়ে এ কথা আমার বার বার মনে হয়েছিল যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা আর কলমজীবী বুদ্ধিজীবীরা যেমন যৌন-প্রবৃত্তি হিসেবে সমকামিতার স্বীকৃতি নিয়ে ভাবিত নয়, তেমনি ভাবিত নয় ‘হিজড়া’ নামে কথিত বাংলাদেশের উভলিঙ্গ মানবদের সমস্যা কিংবা তাদের অধিকার নিয়ে। তারা সমাজে অপাংক্তেয়, পরিত্যক্ত। বাংলাদেশে উভলিঙ্গ মানবদের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ বলে অনুমিত হয়। অথচ তাদের কোন সাংবিধানিক অধিকার নেই। ‘এই হিজড়া’ দের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে নানা রকম জটিলতা পোহাতে হয়। কারণ :
- তাদেরকে তাদের নিজেদের ‘স্বতন্ত্র’ পরিচয়ে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বা করা যায়নি; অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ছেলে বা মেয়ের লৈঙ্গিক পরিচয়ে, যেখানে যেটা সুবিধাজনক মনে হয়েছে সেভাবেই। ফলে সবকিছু থেকে বঞ্চিত এই সম্প্রদায়ের আদতে কোনো সামাজিক স্বীকৃতি মেলেনি। এ ছাড়াও প্রাসঙ্গিক যে ব্যাপারগুলো আছে, তার মধ্যে :
- বাংলাদেশে নারীর তুলনায় পুরুষের অনুপাত বেশি হবার কারণে আদমশুমারিতে এদের অধিকাংশকেই দেখানো হয় পুরুষ হিসেবে।
- এদের নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে নানা জটিলতা। ভিসা ফর্মগুলোতে এদের জন্য কোনো ঘর বরাদ্দ করা হয়নি। এদেরকে হয় পুরুষ কিংবা নারীর ঘরে টিক দিতে হয়, অভিবাসন বা ইমিগ্রেশন করতে গিয়ে পড়তে হয় অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি।
- বাংলাদেশে এদের জন্য পাসপোর্ট করতে হলেও পরিচয় দিতে হয় পুরুষ অথবা নারী হিসেবে।
- ভাসমান জীবনে অভ্যস্ত হওয়ায় আর স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় অনেকেই আবার পাসপোর্টও পায় না।
এই ব্যাপারগুলো বছরের পর বছর ধরে চলে আসছিল। রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা এই জটিলতাগুলোর সাথে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু সেগুলো নিরসনের কোন বন্দোবস্ত করেননি। আমার স্বল্প অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছিল, এই জটিলতার কারণ হচ্ছে আমাদের জেন্ডার অসচেতনতা এবং পাশাপাশি, ‘নারী’ ‘পুরুষ’ ছাড়া আর কোনো লৈঙ্গিক পরিচয় আমাদের সমাজে গ্রহণযোগ্য না হওয়া বা ‘স্বাভাবিক’ মনে না করার প্রবণতা। আমাদের দেশে উভলিঙ্গ মানবদের প্রাপ্য অধিকার ও মানুষ হিসেবে পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ আইনের দরকার হয়ে পড়েছে আজ, প্রয়োজন হয়েছে সনাতন লৈঙ্গিক বলয় ভাঙ্গার। এজন্যেই আজ অনিবার্য হয়ে উঠেছে ‘হিজড়া’দেরকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মানবিক দাবিটাও”।
সম্প্রতি ১১ই নভেম্বর তারিখে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর থেকে আনন্দের সাথে জানলাম, বাংলাদেশ সরকার সংখ্যালঘু মানুষদের এতদিনকার ঝুলে থাকা দাবীটি পূরণ করেছে অবশেষে – ‘হিজড়াদের লিঙ্গ পরিচয়কে’ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। আমি মনে করি সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়, যদিও এটা করা উচিৎ ছিল অনেক আগেই। পশ্চিমা বিশ্বের বহু জায়গায় কেবল নারী-পুরুষ – এই দ্বিলিঙ্গ-ভিত্তিক সমাজের অবস্থান ঘুচিয়ে দিয়ে বহুলিঙ্গ-ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াসের ব্যাপার লক্ষণীয়। শেরিল চেজ, এরিক শেনিগার, জিম সিনক্লায়ারের মতো ইন্টারসেক্স -সেলিব্রিটিরা সেখানে নিজ পরিচয়ই বাস করেন। এমনকি ভারতেও ‘শবনম মৌসি’ নির্বাচিত প্রতিনিধি হতে পেরেছেন। এমনকি অনেকেই হয়তো ওয়াকিবহাল নন যে, পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্রেও ‘হিজড়া’দের অন্যান্য নাগরিকদের মতো সমানাধিকার দেয়া হয়েছিল বছর কয়েক আগে। কাজেই, বাংলাদেশেই বা উভলিঙ্গ মানবরা তৃতীয় লিঙ্গ বলে বিবেচিত হবে না কেন – যুগের দাবির প্রেক্ষাপটে এ অতি স্বাভাবিক প্রশ্ন ছিল। সরকার সে প্রত্যাশা পূরণ করেছে, ধন্যবাদ এবং সাধুবাদ অবশ্যই প্রাপ্য তাদের।
তবে পত্রিকার খবরটিতে কিছু ব্যাপার যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, এ নিয়ে কিছু আলোচনা করা সমীচীন মনে করছি। ১১ই নভেম্বর প্রকাশিত স্বীকৃতি পেল ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ নামের বিডিনিউজে প্রকাশিত খবরে ‘হিজড়া’দের সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে এক জায়গায় বলা হয়েছে –
‘ক্রোমোজোম বা হরমনে ত্রুটি অথবা মানসিক কারণে কারো লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিলে বা দৈহিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে আচরণগত মিল না থাকলে তাদের চিহ্নিত করা হয় হিজড়া হিসাবে’।
পত্রিকার রিপোর্টে যেভাবে লেখা হয়েছে তাতে কিছুটা সত্যতার ছোঁয়া থাকলেও পুরোপুরি সঠিক বলা যায় না। এটা ঠিক, শারীরিক ত্রুটি সংক্রান্ত ‘অসঙ্গতি’র ব্যাপারটা হিজড়াদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, আর সেজন্য আমি আমার বইয়ে একটা বড় অংশ জুড়ে এ নিয়ে আলোচনাও করেছিলাম। এখানেও কিছুটা পুনরুল্লেখ করা যাক। ‘হিজড়া’দের সাধারণভাবে চিহ্নিত করা হয় হার্মফ্রোডাইট হিসেবে। সোজা বাংলায় উভলিঙ্গ। উভলিঙ্গত্বকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয় – প্রকৃত উভলিঙ্গত্ব (True-hermaphrodite) এবং অপ্রকৃত উভলিঙ্গত্ব (Pseudo-hermaphrodite)। প্রকৃত উভলিঙ্গ হচ্ছে যখন একই শরীরে স্ত্রী এবং পুরুষ যৌনাঙ্গের সহাবস্থান থাকে। তবে প্রকৃতিতে প্রকৃত উভলিঙ্গত্বের সংখ্যা খুবই কম। বেশি দেখা যায় অপ্রকৃত উভলিঙ্গত্ব। সাধারণত ছয় ধরনের অপ্রকৃত উভলিঙ্গত্ব দৃশ্যমান – কনজেনিটাল এড্রেনাল হাইপারপ্লাসিয়া (CAH), এন্ড্রোজেন ইনসেন্সিটিভিটি সিন্ড্রোম (AIS), গোনাডাল ডিসজেনেসিস, হাইপোস্পাডিয়াস, টার্নার সিন্ড্রোম (XO) এবং ক্লাইনেফেল্টার সিন্ড্রোম (XXY) । উভলিঙ্গত্বের বিভিন্ন প্রপঞ্চের উদ্ভব বিভিন্ন কারণে হয়। যেমন, মারিয়া প্যাতিনো নামে একজন অলিম্পিয়াডের জীবনের জটিলতার উদাহরণ দিয়েছিলাম, যার এন্ড্রোজেন ইনসেন্সিটিভিটি সিন্ড্রোম –এর কারণে শিশু বয়সে তাঁর দেহকোষ এন্ড্রোজেন সনাক্ত করতে পারেনি। এ ছাড়া ক্রোমোজোমের বিসদৃশতার কারণেও উভলিঙ্গত্ব প্রকাশ পেতে পারে। যেমন ক্লেইনফ্লেয়ার সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে পুরুষ শিশু একটি বাড়তি ক্রোমোজোম নিয়ে জন্মায় (অর্থাৎ, XY এর বদলে XXY))। টার্নার সিন্ড্রোমে আবার মেয়ে শিশুর একটি এক্স ক্রোমোজোম কম থাকে (XO)। এ গুলো ছাড়াও বিশেষ কিছু হরমোনের অভাবে উভলিঙ্গত্ব প্রকাশ পেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে জীবন ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকলেও অধিকাংশ প্রকরণগুলোই চিকিৎসাবিজ্ঞানের মাপকাঠিতে ক্ষতিকর কিছু নয়। যে সমস্ত ক্ষেত্রে সত্যিকার জীবন ঝুঁকি তৈরি হয়, সেগুলোতে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী চিকিৎসা করা অপরিহার্য, অন্যগুলো নিতান্তই কসমেটিক। প্রচলিত দৃষ্টিকোণ থেকে উভলিঙ্গত্বকে অস্বাভাবিক বলে মনে করা হলেও আমাদের মনে রাখতে হবে যে, প্রাণিজগতের একেবারে গোঁড়ার দিকে কিছু পর্ব হলো – প্রটোজোয়া, পরিফেরা, সিলেনটেরেটা, প্লাটিহেলমিনথিস, অ্যানিলিডা, মোলাস্কা ও কর্ডাটা। এই সমস্ত প্রাণীদের বেশিরভাগই উভলিঙ্গ বা হার্মাফ্রোডাইট (Hermaphrodite), কারণ এদের শরীরে স্ত্রী ও পুরুষ জননাঙ্গের সহবস্থান লক্ষ করা যায়। এদের জন্য উভলিঙ্গত্ব কোনো শারীরিক ত্রুটি নয়, বরং এটি পুরোপুরি ‘প্রাকৃতিক’। প্রকৃতিতে এখনো পালমোনেট, স্নেইল এবং স্লাগেদের অধিকাংশই হার্মাফ্রোডাইট। ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, মানব সমাজেও উভলিঙ্গত্ব বিরল নয়। প্রাচীন গ্রীসে সমকামিতা, প্রাচীন রোমে খোজা প্রহরী (Eunuch), নেটিভ ইন্ডিয়ানদের মধ্যে ‘দ্বৈত-সত্তা’ (two-spirits), আরব ও পার্সিয়ায় ‘বার্দাশ’ এবং ভারতবর্ষে ‘হিজড়া’দের অস্তিত্ব সেই সাক্ষ্যই দেয়। এ ছাড়া আছে ভারতের কোতি, ওমানের জানিথ, ইন্দোনেশিয়ার লুডরুক বান্টুট, মাসরি এবং রায়গ, মালয়শিয়ায় আহকুয়া, বাপুক, পোনদান কিংবা নাকনিয়া। তুরস্কে নসঙ্গা, মুস্তাক্নেৎ, আরবের মুখান্নাথুন, নেপালের মেটি, থাইল্যান্ডের কাথোই, চিনের তাংঝি, মালাগাসির তসিকাত্, মিশরের খাওয়াল, অ্যাঙ্গোলার চিবাদোস্, কেনিয়ার ওয়াসোগা, পর্তুগালের জিম্বাদা, পলিনেশিয়ার ফাফাফিনি, মেক্সিকোর জোতো/পুতো, ব্রাজিল এবং ইসরায়েলের ত্রাভেস্তি এবং ত্রান্সফরমিস্তা সহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে থাকা রূপান্তরকামী কিংবা উভলিঙ্গ সত্তা। হিন্দুদের পুরাণে আমরা পেয়েছি বৃহন্নলা কিংবা শিখণ্ডীর মতো চরিত্র, আছে (হরি) এবং শিবের (হর) মিলনের ফসল আয়াপ্পা। আনাতেলিয়া, গ্রীস এবং রোমার বিভিন্ন মন্দিরে ‘সিবিলি’ এবং ‘ডাইওনিসস’-এর পূজার কথা আমরা জানি । সিবিলির পুরোহিতেরা গাল্লি নামে পরিচিত ছিলেন। এরা নারীবেশ ধারণ করতেন। মাথায় নারীর মতো দীর্ঘ কেশ রাখতে পছন্দ করতেন। কিন্তু আধুনিক শহুরে মানব সমাজে যেহেতু জেন্ডার ইস্যু খুব প্রবল সেহেতু উভলিঙ্গ মানবদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তারপরেও ধ্যান ধারণা সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা পাল্টেছে। পশ্চিমা বিশ্বের বহু জায়গায় ইতোমধ্যেই কেবল নারী-পুরুষ – এই দ্বিলিঙ্গভিত্তিক সমাজ ঘুচিয়ে দিয়ে বহুলিঙ্গভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস নেয়া হচ্ছে। যেমন, যেমন, এ প্রসঙ্গে ১৯৯২ সালে সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত Anne Fausto-Sterling এর The Five Sexes: Why Male and Female Are Not Enough প্রবন্ধটি উল্লেখ্য। তিনি ‘নারী’ এবং ‘পুরুষ’ এই দুই পদের পাশাপাশি হার্মস ( ট্রু হার্মাফ্রোডাইট), নার্মস (মেল সুডো হার্মাফ্রোডাইট) এবং ফার্মস (ফিমেল সুডো হার্মাফ্রোডাইট) -এর প্রস্তাব করেছেন । এ প্রসঙ্গে লেখকের ‘সেক্সিং দ্য বডি’ বইটি পড়ে দেখা যেতে পারে। আমি এ নিয়ে একটা ব্লগপোস্ট দিয়েছিলাম মুক্তমনায় ২০০৯ সালের অগাস্ট মাসে – ‘চাই নারী-পুরুষ ছাড়াও অন্যান্য লিঙ্গের সামাজিক স্বীকৃতি’ শিরোনামে। সেখানেও পাঠকেরা চাইলে চোখ বোলাতে পারেন।
তবে এই সমস্ত ‘শারীরিক ত্রুটি’র বাইরেও একটা বড় ব্যাপার আছে যেটা পত্রিকার রিপোর্টে অনুল্লিখিত থেকে গেছে বলে আমি মনে করি। আমি দেখেছি – হিজড়া বলে কথিত এই প্রান্তিক মানুষদের একটা বড় অংশই হচ্ছে রূপান্তরকামী ( এদের ‘কোতি’ হিসেবে অনেক জায়গায় চিহ্নিত করা হয়, কোথাও বা ‘চিন্নি’)। এদের বিষয়ে এখানে একটু পরিষ্কার করা প্রয়োজন। আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ এবং সমীক্ষায় আমি দেখেছি, এঁদের অধিকাংশই উভলিঙ্গত্ব থেকে নয়, বরং জেন্ডার সংশয় (gender dysphoria) থেকে কিংবা নানা সামাজিক চাপ থেকে উভলিঙ্গ মানব বা ‘হিজড়া’ হয়েছেন। এদের মনোভাবটা অনেকটা এরকমের – “আমি ছেলে, অথচ আমি মেয়েদের প্রতি আকর্ষণবোধ না করে ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হই। তাহলে নিশ্চয় আমি মেয়ে। কিন্তু আমার শারীরিক গঠন তো ছেলের মত, তাহলে বোধহয় আমি হিজড়া”। এই মনোভাব থেকে অনেকে হিজড়া-পল্লীতে আশ্রয়গ্রহণ করলেও দেখা গেছে এঁরা আসলে মূলত সমকামী কিংবা রূপান্তরকামী।
রূপান্তরকামী মানুষদের মানসিক ব্যাপারটা বুঝতে হলে আমাদের সেক্স এবং জেন্ডারের আধুনিক সংজ্ঞায়ন এবং গবেষণার ক্ষেত্রগুলো একটু বোঝা দরকার। এ বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের ‘সেক্স’ এবং ‘জেন্ডার’ শব্দদুটির অর্থ এবং ব্যঞ্জনা আলাদা করে বুঝতে হবে। সেক্স এবং জেন্ডার কিন্তু সমার্থক নয়। সেক্স শব্দটির প্রতিশব্দ ‘লিঙ্গ’ করা হলেও জেন্ডারের সঠিক প্রতিশব্দ আমাদের ভাষায় অনুপস্থিত। অনেকে প্রচলিত ভাবে দুটোকেই লিঙ্গ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। সেক্স একটি শরীরবৃত্তীয় ধারণা। আর জেন্ডার মূলত নারী ও পুরুষের সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা। অর্থাৎ সোজা কথায়, সেক্স সমগ্র বিষয়টিকে ‘দেহ কাঠামো’ নামক ছোট্ট চৌহদ্দির মধ্যে আটকে ফেলতে চায়, যেখানে জেন্ডার বিষয়টিকে নিয়ে যেতে চায় সাংস্কৃতিক নীলিমায়। বাংলাদেশের জেন্ডার সচেতন লেখক এবং কর্মীদের অনেক বর্তমানে সেক্সকে জৈবলিঙ্গ এবং জেন্ডারকে সাংস্কৃতিক লিঙ্গ হিসেবে অভিহিত করছেন। অনেকে অবশ্য জেন্ডারের বাংলা জেন্ডারই রাখতে চান। সেলিনা হোসেন এবং মাসুদুজ্জামান সম্পাদিত ‘জেন্ডার বিশ্বকোষ’ (প্রথম খণ্ড)-এ জেন্ডার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে –
‘জেন্ডার শব্দটির আভিধানিক অর্থ সেক্স বা লিঙ্গ। কিন্তু উন্নয়ন অধ্যয়নে জেন্ডার এবং সেক্সের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পার্থক্য টানা হয়। অ্যান ওকলে এ দু’এর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য করেছেন। এই পার্থক্য অনুযায়ী সেক্স হচ্ছে প্রাকৃতিক বা জৈবিক কারণে সৃষ্ট নারী পুরুষের বৈশিষ্ট্যসূচক ভিন্নতা বা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নারী-পুরুষের স্বাতন্ত্র্য। এই স্বাতন্ত্র্য শারীরিকভাবে নির্ধারিত। ফলে তা অপরিবর্তনীয়। আর জেন্ডার হচ্ছে সামাজিকভাবে গড়ে ওঠা নারী-পুরুষের পরিচয়, নির্ধারিত নারী পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ক, যা সমাজ কর্তৃক আরোপিত। … নারী-পুরুষের জৈবলিঙ্গ (সেক্স) প্রাকৃতিক ঘটনা, কিন্তু সেই ভিন্নতা থেকে জেন্ডার ভিন্নতা সৃষ্টি হয় না, জেন্ডার ভিন্নতা বা বৈষম্য সৃষ্টি হয় সামাজিকভাবে।’
কাজেই যৌনতার শরীরবৃত্তীয় বিভাজন মেনে নিয়েও বলা যায়, সামাজিক অবস্থার (চাপের) মধ্য দিয়েই আসলে সমাজে একজন নারী ‘নারী’ হয়ে উঠে, আর পুরুষ হয়ে ওঠে ‘পুরুষ’। আমাদের রক্ষণশীল সমাজ নারী আর পুরুষের জন্য জন্মের পর থেকেই দুই ধরনের দাওয়াই বাৎলে দেয়। নানা রকম বিধি-নিষেধ ও অনুশাসন আরোপ করে। পোশাক থেকে শুরু করে কথা বলার ভঙ্গি পর্যন্ত সবকিছুই এখানে জেন্ডারগত বৈষম্যে নির্ধারিত হয়। এর বাইরে পা ফেলা মানেই যেন নিজ লিঙ্গের অমর্যাদা। কোনো ছেলে একটু নরমভাবে কথা বললেই তাঁকে খোঁটা দেওয়া হয় ‘মেয়েলি’ বলে, আর নারীর উপর হাজারো রকম বিধি-নিষেধ আর নিয়মের পাহাড় তো আছেই। ফলে দুই লিঙ্গকে আশ্রয় করে তৈরি হয় দু’টি ভিন্ন বলয়। কিন্তু সমস্যা হয় রূপান্তরকামী মানুষদের নিয়ে। এরা আরোপিত বলয়কে অতিক্রম করতে চায়। তারা কেবল ‘যৌনাঙ্গের গঠন অনুযায়ী’ লিঙ্গ নির্ধারণের সনাতনী প্রচলিত ধারণাকে মন থেকে মেনে নিতে পারে না। তারা শারীরিক লিঙ্গকে অস্বীকার করে বিপরীত সাংস্কৃতিক বা মানসিক লিঙ্গের সদস্য হতে চায়। তারা মনে করে দেহ নামক বাহ্যিক কাঠামোটি তাদের জন্য সঠিক লৈঙ্গিক পরিচয় তুলে ধরছে না; মনে করে সেক্স নয়, আসলে জেন্ডার অনুযায়ী তাদের লিঙ্গ নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন। আমি আমার বইয়ে মারিয়া প্যাতিনো, লেভি সুয়েদাম, নৃসিংহ মণ্ডল, আমেরিকার পুরুষ রূপান্তরকামী ক্রিস্টিন জরগেন্সেন, রেনি রিচার্ডস সহ অনেকের কেস স্টাডির উল্লেখ করেছিলাম। এমনকি এই কয়েকদিন আগেই উইকিলিকসের কাছে গোপন নথি পাচার করার দায়ে দণ্ডিত মার্কিন সেনা ব্র্যাডলি ম্যানিং-এর রূপান্তরকামী প্রবণতার কথা পত্রিকায় এসেছে। ম্যানিং বলেছেন, তিনি একজন পূর্ণাঙ্গ নারী হতে চান। তিনি তার নামও ঠিক করেছেন – চেলসি ম্যানিং। এ উদাহরণগুলো সমাজে বিরল নয়।
চিত্র: মার্কিন সেনা ব্র্যাডলি ম্যানিং-এর রূপান্তরকামী প্রবণতার কথা পত্রিকায় এসেছে, তিনি ব্র্যাডলি ম্যানিং থেকে চেলসি ম্যানিং এ রূপান্তরিত হতে চেয়েছেন।
আসলে বিংশ শতাব্দীর পর থেকে (বস্তুত বিগত কয়েক দশকে) পশ্চিমা বিশ্বে জেন্ডার সম্পর্কিত ধারণা যত ঋদ্ধ হয়েছে ততই লৈঙ্গিক বৈষম্যের প্রাচীর ভেঙে পড়ছে। এগুলোর পেছনে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণকে অস্বীকার না করেও বলা যায় – এ ধরনের চাহিদা বা অভিপ্রায় প্রকৃতিবিরুদ্ধ নয়। আর সে জন্যই, প্রখ্যাত রূপান্তরকামী বিশেষজ্ঞ হেনরি বেঞ্জামিন বলেন, আপাত পুরুষের মধ্যে নারীর সুপ্ত সত্তা বিরাজমান থাকতে পারে। আবার আপাত নারীর মধ্যে পুরুষের অনেক বৈশিষ্ট্য সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। তিনি বলেন – ‘Every Adam contains the element of Eve and every Eve harbors traces of Adam, physically as well as psychologically.’ হেনরি বেঞ্জামিন ছাড়াও এ নিয়ে গবেষণা করেছেন রবার্ট স্টোলার, এথেল পারসন, লিওনেল ওভেসে প্রমুখ। এদের গবেষণায় উঠে এসেছে দুই ধরনের রূপান্তরকামিতার কথা। শৈশবের প্রথমাবস্থা থেকে যাদের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ হবার সুতীব্র বাসনা থাকে তাদের মুখ্য রূপান্তরকামী বলা হয়। অন্যদিকে যারা দীর্ঘদিন সমকামিতায় অভ্যস্ত হয়েও নানারকম সমস্যায় পড়ে মাঝে মধ্যে নারীসুলভ ভাব অনুকরণ করার চেষ্টা করে তাদের বলে গৌণ রূপান্তরকামী। ১৯৬০ সালে মনোচিকিৎসক ওয়ালিন্দার রূপান্তরকামীদের উপরে একটি সমীক্ষা চালান। তাঁর এই সমীক্ষা থেকে জানা যায়, প্রতি ৩৭,০০০ এ একজন পুরুষ রূপান্তরকামীর জন্ম হচ্ছে অন্যদিকে প্রতি ১০৩,০০০-এ একজন স্ত্রী রূপান্তরকামীর জন্ম হচ্ছে। ইংল্যান্ডে এ সমীক্ষাটি চালিয়ে দেখা গেছে যে সেখানে প্রতি ৩৪,০০০-এ একজন পুরুষ রূপান্তরকামী ভূমিষ্ঠ হচ্ছে আর অন্যদিকে প্রতি ১০৮,০০০-এ একজন জন্ম নিচ্ছে একজন স্ত্রী রূপান্তরকামী। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে সেখানে ২৪,০০০ পুরুষের মধ্যে একজন এবং ১৫০,০০০ নারীর মধ্যে একজন রূপান্তরকামীর জন্ম হয় । ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায়, জোয়ান অব আর্ক থেকে শুরু করে আজকের প্রথিতযশা জীববিজ্ঞানী জোয়ান (জনাথন) রাফগার্ডেন কিংবা বাস্কেটবল লিজেন্ড ডেনিস রডম্যান সহ অনেকের মধ্যেই যুগে যুগে রূপান্তর প্রবণতা বিদ্যমান ছিল এবং এখনো আছে । উইকিপেডিয়াতেও খ্যাতিমান রূপান্তরকামীদের একটি আংশিক তালিকা পাওয়া যাবে (এখানে)। কাজেই আধুনিক গবেষকেরা রূপান্তরকামী, কোতি, কিংবা চিন্নি নামের হিজড়াদের অসুস্থ বা ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করেন না, বরং তাদের পৃথক সত্ত্বা হিসেবেই স্বীকৃতি দেন। হিজড়া বলে কথিত প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে লিখতে গেলে এ ব্যাপারগুলো মাথায় রাখা প্রয়োজন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমি একটু আলোকপাত করব বলে ভাবছি। পত্রিকার খবরে ‘হিজড়া’দের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে –
‘এর ফলে সরকারি নথিপত্র ও পাসপোর্টে তাদের লিঙ্গ-পরিচয় ‘হিজড়া’ হিসাবে উল্লেখ করা হবে’।
আরো বলা হয়েছে,
“এই সিদ্ধান্তের ফলে তথ্য সংগ্রহের সময় ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় হিসাবে ‘নারী’ ও ‘পুরুষের’ পাশাপাশি ‘হিজড়া’ হিসাবে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকবে। পাসপোর্টেও তাদের লিঙ্গ পরিচয় হবে ‘হিজড়া’। নথিপত্রে ইংরেজিতেও ‘হিজড়া’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে বলে মন্ত্রীপরিষদ সচিব জানিয়েছেন”।
আমি এই পর্যায়ে এসে একটা বিনীত প্রস্তাবনা হাজির করতে চাই। ‘হিজড়া’ শব্দটি আমাদের দেশে খুব তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত হয়। সেজন্য আমি তাদের বোঝাতে এই বইয়ে ‘উভলিঙ্গ মানব’ শব্দটি চয়ন করেছিলাম । আমার মনে আছে, প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদ একটি বইয়ে এ ধরণের রূপান্তরকামী মানুষের চরিত্র চিত্রণ করতে গিয়ে বইটির নাম রেখেছিলেন ‘বৃহন্নলা’। ব্যক্তিগত ভাবে বৃহন্নলা শব্দটি আমার বেশ পছন্দের (বৃহন্নলা আসলে মহাভারতের চরিত্র – ‘ক্লীব-রূপী অর্জুন’। এই ‘তৃতীয় প্রকৃতি’র রূপ অর্জুন পরিগ্রহ করেন যখন তিনি বনবাসে ছিলেন। তিনি বাইরে নারী, অন্তরে নর, আধুনিক ট্রান্সজেন্ডারের উদাহরণ যেন। এভাবেই তিনি বিরাট রাজের নগরে রাজকন্যা উত্তরা এবং অন্যান্য কুমারীদের জন্য নৃত্যগীতের শিক্ষক নিযুক্ত হন। এই সময় তাঁর কানে দীর্ঘ কুণ্ডল, হাতে শাখা আর সুবর্ণনির্মিত বলয় থাকতো। দুর্যোধন বিরাটরাজ্য থেকে গো-হরণ করলে বৃহন্নলা সেই গো-সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে উত্তরের সারথি হিসেবে যুদ্ধে যান। কিন্তু যুদ্ধের সময় এত বিপুল কুরু-সৈন্য দেখে উত্তর পালিয়ে যেতে চাইলে বৃহন্নলা তাঁকে নিবৃত্ত করেন এবং উত্তরকে তাঁর সারথি করে নিজেই যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং গো-সম্পদ উদ্ধার করেন)।
আমি সরকারের কাছে দাবী করব এ ব্যাপারটিতে একটু নজর দিতে। সারাবিশ্বই এখন বিশেষত সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে জেন্ডারগত শব্দচয়নের ব্যাপারে অনেক সতর্ক হচ্ছে। পশ্চিমে কালো অভিবাসীদের নিগ্রো কিংবা নিগার না বলে ‘আফ্রিকান আমেরিকান’ বলে সম্বোধন করা হয়, সমকামীদের ‘ফ্যাগ’ বা ‘হোমো’ না বলে ‘গে’ বা ‘লেসবিয়ান’ বলে অভিহিত করা হয়। এমনকি বাংলাদেশেও ‘উপজাতি’ শব্দটি – যা বেশ ক’বছর আগেও বহুল প্রচলিত ছিল, সেটা আর সেভাবে ব্যবহৃত হয় না, তাদেরকে আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কিংবা পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বলে অভিহিত করা হয়। হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ‘মালু’ হিসেবে লেখা হয় না। আমরা প্রতিনিয়ত ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আমাদের সনাতন মনমানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছি। এটা কিন্তু কম নয়। তৃতীয়লিঙ্গের ব্যাপারেই বা আমরা উদাসীন থাকবো কেন?
আমি মাননীয় সরকাররের কাছে আহবান জানাবো, দাপ্তরিক-ভাবে ‘হিজড়া’র বদলে ‘উভলিঙ্গ মানব’ কিংবা ‘বৃহন্নলা’র মতো কোন শব্দচয়ন করা হোক। এটা দরকার আমাদের অগ্রগামিতার স্বার্থেই।
আমার এই প্রস্তাবটি জানিয়ে বিডিনিউজ২৪ পত্রিকায় একটি লেখা লিখেছি – ‘হিজড়া, তৃতীয় লিঙ্গ বা বৃহন্নলা সমাচার’ শিরোনামে। সেখানেও আমি হিজড়া শব্দটি পরিত্যাগ করে অধিকতর মানবিক কোন শব্দচয়নের আহবান জানিয়েছি। প্রস্তাবটি কে কিভাবে নেবেন আমি এখনো জানি না। ফেসবুক এ নিয়ে আলোচনার সময় অনেকেই একে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে কিছু কিছু বিপরীত মতও উঠে এসেছে। যেমন আমার এক ফেসবুক বন্ধু বলেছেন, “হিজড়া শব্দটাই তাদের আইডেন্টিটি প্রকাশ করে। প্রচলিত শব্দ এটাই। এই শব্দকেই মর্যাদা দেয়া হোক।তাতেই তাদের প্রকৃত অধিকার স্বীকৃত হবে। আইডেন্টিটি চেঞ্জ করে স্বীকৃতি দেয়া যায় না”। উত্তরে আমি বলব, হিজড়া শব্দটিকে মর্যাদায় আসীন করতে পারলে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু বহু সময় শব্দের ব্যঞ্জনা কেবল গালাগালি, জাত্যভিমান কিংবা রেসিজমের আবর্তে ঘুরপাক খায়। পশ্চিমে ‘নিগ্রো’ বা ‘নিগার’ শব্দগুলো নিয়েও কেউ বলতে পারেন, ওটাই কালোদের ‘আইডেন্টিটি’। আসলে আঠারো বা উনিশ শতকের অনেক সাহিত্যেই ‘নিগ্রো’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনকি মার্ক টোয়েনের মত সংবেদনশীল লেখকও তার লেখায় দেদারসে ব্যবহার করেছেন। আগেকার বাংলা সাহিত্যে ‘মাগী’, ‘ম্লেচ্ছ’, ‘যবন’ প্রভৃতি শব্দের যথেচ্ছ উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। এমনকি বছর দশেক আগেকার পাঠ্যপুস্তকেও ঢালাওভাবে ‘উপজাতি’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা সেই সময়ে পড়ে নেই, আমাদের চিন্তাধারা অনেক বদলেছে। ব্যাপারটা ‘হিজড়া’ শব্দটির জন্যও প্রযোজ্য। আমি বহু জায়গাতেই দেখেছি কাউকে মেয়েলি প্রমাণ করার জন্য কিংবা অপমান করার জন্য ‘তুই ব্যাটা হিজড়া’ ইত্যাদি বলে তুচ্ছ করা হয়। শব্দটি ‘স্ল্যাং’-এর পর্যায়ে নেমে এসেছে। এ সমস্ত স্ল্যাং এবং গালিবাজির বাইরে তো একসময় উঠতে হবে আমাদের, তাই না?
আরেকজন বন্ধু বলেছেন, ‘মানুষকে শিক্ষিত না করলে ‘উভলিঙ্গ মানব’ শব্দটাও গালি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে’। সেটা সর্বাংশে সত্য। কিন্তু তারপরেও আমি বলব, মানুষকে শিক্ষিত করা আর পাশাপাশি নিজেরাও একটু জেন্ডার সচেতন হওয়া – ‘মিচুয়ালি এক্সক্লুসিভ’ তো নয়। আমাদের মানসিক চিন্তাধারার উত্তরণ সব সময়ই ঘটছে। ঘটবে। এবং এটা ঘটানো প্রয়োজন আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই।
ধন্যবাদ সবাইকে।
@অভিজিৎ, দাদা, প্রানঘাতী না হলেই কি কোনো disease সাভাবিক হয়েছে যায়। এমন লাখো disease আছে যা life threatening নয় কিন্তু সেগুলো রোগ।
রোগ হলে রোজগেরে চিকিতসা চাওয়া উচিত, রোগীর পুনর্বাসন করা উচিত। কিন্তু রোগের উপসর্গকে সাভাবিক বলে তা সুস্থ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া ততটুকু বিজ্ঞান সম্মত কাজ?
আমি আবারো বলছি. hermaphrodite সাভাবিক আর INTERSEX হল abnormal condition.
আপনার জন্য সুসংবাদ হল, আপনার বই এর জবাবে একটি বই আসছে ইনশাআল্লাহ।
@DrMahmud Mahi,
ভাই, জেনেটিক রোগের দুর্লভতার পরিমাপ (Degree of rarity) নির্ধারিত হয় দুইটি বিদ্যমান প্রক্রিয়ার সাংঘর্ষিক মিথস্ক্রিয়ায়। এদের মধ্যে একটি হলো পরিব্যক্তি বা মিউটেশনের মাধ্যমে সৃজন (Formation by mutation) এবং অন্যটি হলো প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বর্জনের হার (Rate of elimination by natural selection)। এই দুইয়ের প্রতিযোগিতায় নির্ধারিত হয় দুর্লভতার স্তর যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় পরিব্যক্তি-নির্বাচন ভারসাম্য (mutation-selection equilibrium)। এই নিরিক্ষার আলোকে দেখানো যায় যে, সমকামিতা, রূপান্তরকামিতা এমনকি উভলিঙ্গতের বেশ কিছু প্রকরণ মোটেই ডিফেকট বা ‘ডিজিজ’ হিসেবে চিহ্নিত হয় না, অনতঃ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে। কিন্তু আপনাকে বলে আর কি লাভ, একই বৃত্তেই ঘুরপাক খায় আপনাদের লজিক। ফেসবুকের নোটে আপনাকে উত্তর দেয়ার পরেও দেখলাম আপনার খ্যাতিমান বন্ধু ফারাবি আপনার কথাগুলোই আবার উদ্ধৃত করে আরেকটি স্ট্যাটাস নামিয়ে দিলেন। বৃত্তাকার পথে ঘুরতে চাইলে তো আমার কিছু করার নেই, শুভকামনা বলা ছাড়া।
শুনে চমৎকৃত হলাম। আশা করি বইটিতে “মানুষ ও জীন এর যৌথ মিলনজাত খুন্নাস” – নিয়েও জ্ঞানগর্ভ গবেষণা থাকবে। বইয়ের জন্য শুভকামনা রইলো।
উভলিংগ আর INTERSEX যে এক নয় দাদা তা কেন এড়িয়ে গেলেন?
medical science এ যে klinefelter’s আর Turner’s syndrome এর কথা বললেন এদেরকে INTERSEX বলা হয়, কখনোই hermaphrodite না।
জন্মান্ধ শিশুর জন্ম হলে তাকে পুনর্বাসন করতে হবে এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি এটাকে সাভাবিক বলে চালিয়ে দেয়াটা বোকামি।
ঠিক একই কথা হিজরাদের বেলায়ও প্রযোজ্য।
@DrMahmud Mahi,
উভলিঙ্গ আর ইণ্টারসেক্স এক আমি যেমন বলি নি, তেমনি এদের আলাদাও বলা ঠিক হবে না। এই দুই ডোমেইনের অনেক কিছুই একে অপরের উপর ওভার ল্যাপিং। চিরুনি চালান দিলে উভলিংগ আর INTERSEXকে আলাদা করতে চাইলে যেমন পয়েন্ট বের করা যায়, তেমনি এদের এক করে দেখতে চাইলেও অনেক পয়েন্ট আসবে। এরকম একটি লেখা এখানে দেখুন : Transgender Is Intersex।
যাহোক আমি আমার বইয়ে এরা এক না আলাদা এই অর্থহীন বিতর্কে না গিয়ে এদেরকে বৃহত্তর এলজিবিটি কমিউনিটির অংশ হিসেবে দেখিয়েছি। একাডেমিক এবং জেন্ডার গবেষণাগুলোতে তাই করা হয়।
ভাই এগুলো নিয়ে তো অনেক তর্ক বিতর্ক হল, আমি অলরেডি আমার ফেসবুক পেইজে আপনার পয়েন্টের উত্তর দিয়েছি (এখানে)। আমি বলিনি যে হিজড়ামাত্রই শারীরিকভাবে ত্রুটিমুক্ত। আমার বইয়ে আমি উভলিঙ্গত্বের বিভিন্ন সমস্যাকে শারীরিক সমস্যা হিসেবেই উল্লেখ করেছি, এবং বলেছি, ‘সেগুলোতে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী চিকিৎসা করা অপরিহার্য’। সেই সমস্ত চিকিৎসার মধ্যে সার্জারি সহ সব ধরণের চিকিৎসাই আছে। কিন্তু যেটা বলতে চেয়েছি সব ধরণের প্রকরণ জীবনের ঝুঁকি তৈরি করে না। অনেকগুলো কেবল কসমেটিক। মারিয়া প্যাতিনো তো এণ্ড্রোজেন ইনসেন্সিটিভিটি নিয়ে অলিম্পিকে পর্যন্ত দৌড়াতে গিয়েছিলেন। আরো একটা কথা ভুললে চলবে না। হিজড়াদের একটা বড় অংশ যারা হিজড়াপল্লিতে যায় তাদের একটা বড় অংশই সমকামী বা রূপান্তরকামী।
আপনার ইন জেনেরেল এলজিবিটি কমিউনিটির উপর যেরকম বিরাগ এবং ঘৃণা, তাদের পুনর্বাসনের কথা আপনার না ভাবলেও চলবে।
আইনটি পাশ হবার পর ‘হিজড়া’ শব্দটি নিয়ে অভিজিৎ রায়ের মত আমার আশেপাশের দুয়েকজনের আপত্তি শুনেছি। তবে তা এতটা গঠনমূলক ছিল না। যেন বলার জন্য বলা। এ লেখাটি পড়ে তা অনেক যৌক্তিক মনে হচ্ছে।
তবে এবং তবুও আমার মনে হয়, সাধারণ মানুষের কাছে হিজড়া শব্দটি বহুল পরিচিত। কাজেই শব্দটি পরিবর্তনের থেকে হিজড়া সম্পর্কে মনোভাব পরিবর্তনে বেশি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন ।
স্বীকৃতি দেবার সঙ্গে সঙ্গে এর আইনি দিকও লক্ষ্য রাখতে হবে। কেবল জন্মসূত্রে যারা লিঙ্গহীন/উভলিঙ্গ/ লিঙ্গ প্রতিবন্ধী (যৌন প্রতিবন্ধী নয়) তারাই যেন এ সম্পর্কিত আইনি অধীনে আসেন। অর্থনৈতিক কিংবা অন্যান্য উদ্দেশ্য স্বেচ্ছায় প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় যারা হিজড়া হন কিংবা মানসিক কারণে লিঙ্গান্তরিত/হিজরা হন তাদের এই আইনের আওতায় আনা যাবেনা। প্রয়োজন হলে অন্য আইন করা জেতে পারে। নতুবা মূল উদ্দেশ্যই পূরণ হবেনা।
শিখন্ডী শব্দটা কেমন?
জেন্ডার সিস্টেম বাদ দিলেই সবচেয়ে ভাল হয় । থাকবেনা লিঙ্গ থাকবেনা বৈষম্য
অনেক দেরীতে হলেও সরকারি এই উদ্যোগটি খুব দরকার ছিল। এখন চাই, সংখ্যালঘু লিঙ্গের মানুষদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। কাজটি কঠিন, বিশেষ করে আমাদের মতো পশ্চাৎপদ সমাজে তো বটেই, তবে এটি অসম্ভব নয়।
অভি দা’কে সাধুবাদ বিষয়টি আবারো নজরে আনার। চলুক। (Y)
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে কথাবার্তা আমাদের তথাকথিত ‘প্রগতিশীল’ সমাজেও খুব একটা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে হয় না। সেক্ষেত্রে অভিজিৎ রায় যে কী পরিমাণ সাহসী এবং আন্তরিক বিজ্ঞানী তা তাঁর লেখা প্রবন্ধ এবং বই ‘সমকামিতা’ পড়লেই বোঝা যায়। বইটি যখন ২০১০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় আমি দেশ থেকে বইটি নিয়ে আসার জন্য একজনকে অনুরোধ করেছিলাম। সে বইমেলাতে গিয়ে শুদ্ধস্বরের স্টল থেকে আমার লিস্টের অন্যান্য বইগুলো নিয়ে এসেছে কেবল ‘সমকামিতা’ ছাড়া। তার নাকি ‘লজ্জা’ করছিলো সবার সামনে বইটি হাতে নিতে। পরের বছর বইমেলায় নিজে গিয়ে বইটি কিনেছি। রাতে এক বন্ধুর বাসায় গেলে সে বইটি হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ পাতা ওল্টানোর পর খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তোর বিয়ে না করার পেছনে কি এটাই কারণ?” এরকম প্রশ্ন এড়িয়ে চলার জন্য অনেকেই হয়তো ‘সমকামিতা’ বইটিই এড়িয়ে চলেছেন। আসলে আমাদের মানসিকতায় অনেকগুলো ব্যাপার এখনো চেপে বসে আছে – যা থেকে মুক্তি পেতে আরো সময় লাগবে। কিন্তু সুখের কথা হলো আমরা একটু একটু হলেও এগোচ্ছি এবং আমাদের সাহায্য করছেন অভিজিৎ রায়ের মত লড়াকু মুক্তমনারা। তাই তো ‘সমকামিতা’ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বেরিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মত দেশে এখন তৃতীয় লিঙ্গ সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছে, এ ব্যাপারে আইনগত পরিবর্তন যা করা দরকার তাও করা হবে আশা করি। বিশেষ করে সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিয়ে ও সামাজিক উত্তরাধিকার এবং সবগুলো মৌলিক অধিকার।
খুবই প্রয়োজনীয় লেখা। একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি, সেটা হল –
বর্তমান মেশিন রিডাবেল পাসপোর্টের ক্ষেত্রে পুরুষ, নারীর পাশাপাশি অন্যান্য একটা অপশন আছে। শুধু তাই নয়, ধর্মের ক্ষেত্রেও অন্যান্য নামে একটি অপশন সাম্প্রতিক সময়ে যোগ হয়েছে। অনলাইনে মেশিন রিডাবেল পাসপোর্টের ফর্ম দেখতে ক্লিক করতে পারেন http://www.passport.gov.bd ।
[img]http://i44.tinypic.com/fw21kp.jpg[/img]
@নিলয় নীল,
বাহ, বেশ ভাল উদ্যোগ!
@নিলয় নীল, আমার এক অবিশ্বাসী বন্ধুর জন্ম হয়েছিল হিন্দু পরিবারে। পাসপোর্ট করার সময় সে মহা-সমস্যায় পড়ে গেল। ধর্মের ঘরে যে সকল অপশন আছে তার একটাও সে নয়। এমন কি নিধার্মিকতাও যদি থাকতো তাহলে তাও ঠিক হতো না। কারণ নাস্তিকতা তো কোনো ধর্ম নয়। শেষে নিরুপায় হয়ে তাকে অন্যান্যতে টিক দিতে হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য কোনো ধর্মের অনুসারীও সে নয়। আমার মনে হয় ‘অন্যান্য’ অপশনটির মাধ্যমে আন-কমন ধর্মগুলিকে অগুরুত্বপূর্ণ দেখাচ্ছে।কারণ ধর্ম আমাদের নিধার্মিকদের কাছে যতটা গুরুত্বহীন ধার্মিকদের কাছে ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। এর চেয়ে বরং অন্যান্যের জায়গায় যার যার ধর্মের নাম যদি প্রত্যেকের নিজের লিখে দেবার ব্যবস্থা থাকতো সেটা আরো অনেক ভালো হতো। সবচেয়ে ভালো হতো পাসপোর্টে ধর্ম লেখাটাই না থাকলে। পাসপোর্টে ধর্মীয় পরিচয়ের দরকার কি?
@তামান্না ঝুমু,
নীলের কথায় সহমত জানিয়েছিলাম, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আপনার কথা আরো বেশি যৌক্তিক। আর এটা তো খুব প্রবলভাবেই কাংক্ষিত –
(Y)
@অভিজিৎ দা,
আমার কথাও একই, দরকার কি? কিন্তু আমাদের দেশে মেশিন রিডাবেল পাসপোর্টে ধর্মের ঘরটি মেন্ডেটরি রাখা হয়েছে অর্থাৎ এটি পূরণ না করলে আপনার আবেদনই গ্রহণ হবেনা। তবে এটা যে আমাদের দরকার নেই তা কি আমরা জানিয়েছি বা প্রচার প্রচারণা চালিয়েছি? আমার তো মনে হয় এই ক্ষেত্রে আমাদের থেকে পাকিস্তান এগিয়ে। ওদের একাধিক আন্দোলন হয়েছে পাকিস্তানী পাসপোর্টে রিলেজিয়াস সেক্টর গুলো বাদ দেবার জন্য। ফেসবুকে এই নিয়ে একটা পেজও আছে দেখলাম – Remove Religion related sections from Pakistani passport applications।
@তামান্না ঝুমু,
আপনার সাথে আমি একমত। ভারতের পাসপোর্টে ধর্মের অপশনে মানবতা সংযোজিত হয়েছে বলে শুনেছি এবং এই ক্ষেত্রে হিউমানিস্ট এ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া ও ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সংগঠনের দীর্ঘদিনের অবদান রয়েছে বলে জানা যায়। আমাদের নিধার্মিকদের যদি একান্তই ধর্ম উল্লেখ করতেই হয় তাহলে ধর্ম হিসেবে মানবতাকেই আমি বেশী পছন্দ করবো। আমাদের যদি ধার্মিক বানাতেই হয় তাহলে প্রবীর ঘোষের ভাষায় বলবো –
আমার ধারনা যদি ভুল না হয় তাহলে বাংলাদেশে ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের পর তৃতীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠী হল তারা যারা ব্যাক্তিগত ভাবে ধর্মে চরম উদাসীন অথবা অবিশ্বাসী। তারা কি কখনো ভারতের কিছু সংগঠনের মতো বাংলাদেশে এই ধরনের দাবী করেছে যে পাসপোর্টে যদি ধর্ম উল্লেখ করতেই হয় তাহলে এর মধ্যে ধর্ম হিসেবে মানবতা অবশ্যই থাকতে হবে? আমার জানা মতে করে নি, ব্যাপারটা খুব তুচ্ছ বলে গুরুত্ব দেয়নি অনেকে। আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকটা এই রকম।
মেশিন রিডাবেল পাসপোর্টে আমার ধর্ম অন্যান্য দিতে আমিও বাধ্য হয়েছি, যদিও এই অন্যান্য দিয়ে আমি খুশী নই। বর্তমান মেশিন রিডাবেল পাসপোর্টে ধর্মের যে কয়টা অপশন আছে তা হল – Islam, Jainism, Judaism, Buddhism, Christianity, Hinduism, Sikhism, Others. আবার মেশিন রিডাবেল পাসপোর্টে ধর্মের ঘরটি মেন্ডেটরি রাখা হয়েছে অর্থাৎ এটি পূরণ না করলে আপনার আবেদনই গ্রহণ হবেনা। উপরের অন্যান্য অপশন থেকে যে কেউ বুঝতে পারবে যারা উল্লেখিত ধর্মের অনুসারী নয় তারাই অন্যান্য। অর্থাৎ এই অন্যান্য বুঝাতে কিন্তু আমাদের মতো মানুষদের বুঝানো হয়নি যারা নির্ধারিত কোন ধর্মের অনুসারী হতে নারায। তারপরও আমাদের মতো মানুষদের ঐ Others অপশনেই যেতে হয় যেহেতু আর কোন বিকল্প নেই। :-X হিন্দু মুসলমান হবার থেকে আমার কাছে কিছু না হওয়াই ভালো। :-Y
@নিলয় নীল,
মানবতা হচ্ছে মানুষের প্রকৃতি বা স্বাভাবিক গুণাবলী। এটা পাসপোর্টে উল্লেখ থাকা বাহুল্যতা মনে হয়। পাসপোর্টে যে ধর্মের ঘর আছে সেটা হচ্ছে Religion. আর আমরা যারা ধর্মহীন তারা মানবধর্ম কথাটি ব্যবহার করি মনুষ্য-প্রকৃতি হিসেবে। মানুষের গুণ বা বিশ্বাসের পরিচয় পাসপোর্টে লিখার কোনো প্রয়োজন দেখি না। বরং হাস্যকর মনে হয় সেটা। তাই আমাদের অন্দোলন ও দাবী হওয়া উচিত পাসপোর্ট থেকে যেন ধর্মের ঘরটিই উঠিয়ে দেওয়া হয়। সেটা জাতীয় পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রেও।
কী করবো! আমরা ধর্মহীনেরা তো ধার্মিক দেশে অধিকারহীন। আমাদের দাবী হচ্ছে মানুষে মানুষে সকল ভেদাভেদ ঘোচানো। আমাদের দাবী কে পুরুণ করবে?