প্রাচীন ভারতে নারী জীবন সংসার তথা বিবাহ দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত ছিল। নারীর শৈশব-যৌবন-বার্ধক্য যথাক্রমে পিতা-স্বামী-পুত্রের দ্বারাই নির্ধারিত থাকতো। এর ফলে পুরুষ অধীনতা নারীর জন্য হয়ে পড়ে অপরিহার্য। হিন্দুধর্মের থেকে অপেক্ষাকৃত আপাতদৃষ্টিতে উত্তম ধর্ম হিসেবে বৌদ্ধধর্মের আগমন ঘটে এই ভারতে। হিন্দুধর্মের জাতিভেদ থেকে শুরু করে ঈশ্বরের প্রচলিত আরাধনার মতো অনেক কিছুই এখানে অনুপস্থিত ছিল বলে একে আপাতদৃষ্টিতে উত্তম ধর্ম বলেই গণ্য করেন অনেকে।
বৌদ্ধ শাস্ত্র যতখানি অধ্যায়ন করার সুযোগ হয়েছে তাতে আমি দেখেছি আর সব প্রচলিত ধর্ম মতের মতোই বৌদ্ধ ধর্মে বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে রয়েছে সমসাময়িকতার প্রবল প্রভাব। আমাদের আলোচনার বিষয় বৌদ্ধ ধর্মের দার্শনিক তত্ত্ব নয় বরং আজকে আমরা আলোচনা করবো বৌদ্ধ ধর্মে পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতাবলয় নিয়ে। এই আলোচনা করার অন্যতম কারণ হল, আমাদের বাঙ্গালীদের মধ্যে অনেকেরই বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনেই এই ধর্মের প্রতি এক ধরনের বিশেষ অনুরাগ কাজ করে। তাছাড়া বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে বাংলা ভাষায় বিশেষ করে অনলাইনে ততোটা আলোচনা বা সমালোচনা আমার খুব বেশী দেখার সুযোগ হয়নি যতটা ইসলাম বা হিন্দু ধর্ম নিয়ে হয়েছে।
গৌতম বৌদ্ধ বিতৃষ্ণ ছিলেন তৎকালীন সাংসারিক জীবনাবর্তে। এই জন্য তিনি তার স্ত্রীকেও ত্যাগ করেন। যেহেতু সংসারে বসে অষ্টাঙ্গিক মার্গ পালন করে নির্বাণ লাভ করা সম্ভব নয়, সেহেতু অবশ্যই সাংসারিক মায়া ও কাম ত্যাগ করে গৃহত্যাগী হতে হবে। আর সাংসারিক মায়া ও কাম ত্যাগ করার প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে নারীকে চিহ্নিত করেন গৌতম বৌদ্ধ। তিনি বলেন, “নারী যেহেতু গৃহের মোহ তৈরি করে তাই নারী অবশ্যই পরিত্যাজ্য।”
সমগ্র বৌদ্ধ বানীকে তৃতীয় মহাসঙ্গিতি সূত্র, বিনয় ও অভিধর্ম নামে অভিহিত করা হয়। এদেরকে একত্রে বলা হয় ত্রিপিটক। যেহেতু আমরা বৌদ্ধ ধর্মে নারীদের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করবো সেহেতু আমাদের বেশীর ভাগ আলোচনাই হবে সূত্রপিটকের খুদ্দক নিকায়ের অন্তর্গত জাতকের কাহিনীতে আলোচিত নারীর প্রতি গৌতম বৌদ্ধের নির্দেশনামূলক বক্তব্য। জাতক কাহিনীতে নীতিকথা সম্পন্ন হয় সাধারনত তিনটি পর্যায়ে যথা-
১) বর্তমান বস্তু (এখানে কোন সংকট উপস্থাপিত হয়েছে শাস্তা বা পথপ্রদর্শকের কাছে।)
২) অতীত বস্তু (এখানে সংকট মীমাংসার জন্য অতীতের দৃষ্টান্ত প্রদান করেন শাস্তা।)
৩) সমাধান (অতীত বাস্তবতার আলোকে বর্তমানের টীকাভাষ্য রচনা করে দিকনির্দেশনা দেন শাস্তা।)
কথা না বাড়িয়ে আমরা শাস্ত্রে চলে যাই, প্রথমে আলোচনা করবো বৌদ্ধশাস্ত্রের ৫৩৬ নম্বর জাতক যার নাম কুণাল জাতক। এই জাতকের প্রধান চরিত্র হল কুণাল যার মুখ নিঃসৃত বানী থেকে আমরা নারীদের সম্পর্কে জানতে পারি । কুণাল বলেন নারী কখনই বিশ্বাসযোগ্য নয়, নারী স্বভাবতই বিশ্বাস ঘাতিনী। নারী কোন ভাবেই প্রশংসার যোগ্য নয়। পৃথিবী যেমন সকলের আধার তেমনি নারীও কামাচারে পাত্রাপাত্র বিচার করে না। কুণালের মুখে উচ্চারিত হয় নীতি গাথাঃ
“সদা রক্ত মাংস প্রিয়, কঠোর হৃদয়,
পঞ্চায়ুধ, ক্রূরমতি সিংহ দুরাশয়।
অতিলোভী, নিত্য প্রতিহিংসা পরায়ণ,
বধি অন্যে করে নিজ উদর পূরণ।
স্ত্রীজাতি তেমতি সর্বপাপের আবাস,
চরিত্রে তাহাদের কভু করো না বিশ্বাস।”
তারমানে আমরা বুঝলাম পুরুষের অবশ্যই কখনো নারীর চরিত্রে বিশ্বাস করা উচিত নয়। শুধু কি বিশ্বাস? কুণালের মতে, নারীকে বেশ্যা, কুলটা বললেই সব বলা হয় না, নারী প্রকৃত পক্ষে এর অধিক কিছু। নারীরা হল-
@ উন্মুক্ত মলভাণ্ডের মতো দুর্গন্ধ যুক্ত।
@ বিষমিশ্রিত মদিরার মতো অনিষ্টকারী।
@ কুটিলা সাপের মতো দুই জিহ্বা বিশিষ্ট।
@ পাতালের ন্যায় অতল গভীর।
@ রাক্ষসীর ন্যায় সন্তোষহীন।
@ অগ্নির ন্যায় সর্ব গ্রাসিনী।
@ নদীর ন্যায় সর্ব বাহিনী।
@ বায়ুর ন্যায় যথেচ্ছা গামিনী।
@ বিষবৃক্ষের ন্যায় বিষফল প্রসবিনী।
নারীরা কীভাবে মলের মতো দুর্গন্ধময় এ সম্পর্কে কুনাল বলেন,
“নারী হল উন্মুক্ত মলভাণ্ডের ন্যায়। উন্মুক্ত মলভাণ্ড দেখিলে মাছি সেখানে ঝাপ দিবেই তাকে রোহিত করা কষ্টকর। কিন্তু একজন জ্ঞানী মানুষ সব সময় এই মলভাণ্ডের দুর্গন্ধ উপলব্ধি করে তা এড়িয়ে চলে। তদ্রূপ নারীরুপ মলভাণ্ডে মাছিরূপ পুরুষ ঝাপ দিবেই কিন্তু একজন জ্ঞানী ভিক্ষু এই উন্মুক্ত মলভাণ্ডরূপ নারীদের দুর্গন্ধ উপলব্ধি করিয়া তাদের সদাই পরিত্যাগ করেন।”
খবরদার আবার আপনারা দাবী করবেন না যেন, বৌদ্ধধর্মে নারীকে মল বলা হয়েছে। আপনাদের বুঝতে হবে বৌদ্ধ ধর্মে বলা হয়েছে নারী মলের মতো। আল্লামা শফি যেমন তেতুলের মতো বলেছেন বলে অনেকে দাবী করেন তেতুল বলেছেন যা নাকি ঠিক নয়। আপসুস নারীরা তেঁতুলের মতো না মলের মতো এটা বিবেচনার দায়িত্ব নেয় আমাদের ধার্মিক পুরুষেরা আর এভাবে নারীকে বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষায়িত করে। এখন দেখবো কুণাল তার নিতিগাথায় কি বলেন-
“চৌর, বিষদিগ্ধসুরা, বিকত্থি বণিক
কুটিল হরিণ শৃঙ্গ, দ্বিজিহ্বা সর্পিণী
প্রভেদ এদের সঙ্গে নেই রমণীর।
প্রতিচ্ছন্ন মলকুপ, দুষ্কর পাতাল
দুস্তোস্যা রাক্ষসী, যম সর্বসংহারক
প্রভেদ এদের সঙ্গে নাই রমণীর।
অগ্নি, নদী বায়ু, মেরু (পাত্রাপাত্রভেদ
জানে না যে) কিংবা বিষবৃক্ষ নিত্যফল
প্রভেদ এদের সঙ্গে নাই রমণীর।”
(চলবে)
আসলে সব কিছুতেই পজিটিভ-নেগেটিভ ব্যাপার আছে। যুগেরও একটা ব্যাপার আছে…… এ যুগে নারী স্বাধীনতার স্বর্ণযুগ ধরা হয় আবার এ যুগেই নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মিস ওয়ার্ল্ড, মিস ইউনিভার্স কিংবা সোসাইটি ডেব্যুটেন্ট প্রকারান্তরে পুরুষ শ্রেষ্ঠত্বরই বহিঃপ্রকাশ। সমস্ত কাজেই (মুম্বাই মাসালার আইটেম সং থেকে শুরু করে গাড়ীর বিজ্ঞাপন এমনকি ডিনার পার্টিতেও অনেককে অর্থের বিনিময়ে হাজির করা হয়) “গ্ল্যামার” আনার জন্য নারীকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু কিছু নারী যারা দাবী করে “ইন্ডেপেন্ডেন্ট” এবং “ওমেন এম্পাওয়ারমেন্টে” বিশ্বাসী তারা স্বেচ্ছায় এসব কাজ করছে – মেধা নয় মূলত শরীরকে পুঁজি করে।
এর মাঝেও হাজার হাজার নারী নিজ মেধা-গুণে শীর্ষে পৌঁছে যাচ্ছেন। চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নারী।
@সংবাদিকা,
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে আপনি যদি এইসবের বিরুদ্ধে কথা বলতে যান, তবে আপনার দিকে আঙ্গুল তোলা হবে যে আপনি নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নন! গুগল করেন এইসব নিয়ে দেখবেন বিকিনির বিপক্ষে কেউ কিছু লিখলে ( খুব কম মানুষই লেখে পশ্চিমা দেশগুলিতে), ধুয়া ওঠে যে এইসব যার যার স্বাধীনতা, আর এতে অসুবিধা কি!!
এবং তারপর প্রশ্ন কারী কে বিদ্রুপ বানে আর কটু কথায় ভরিয়ে দেয়া হয়। ইয়াহু আনসার ঘাঁটেন পেয়ে যাবেন অনেক কিছু এমন।
আপনার এই কথার জন্য আপনাকে, এবং আমি ( বা অন্য কেউ) কথাটাকে সমর্থন করি বলেই আমাকেও হয়ত তিতা কথা শুনতে হবে। শুনতে হবে নানা যুক্তি, যেমন ধরেন যে এখানে শরীর কে পুঁজি করার কি আছে!!
আমার ভয় হয় যে একদিন হয়ত এই ধুয়াও উঠবে যে এটা নারীর নিজের শরীর,তাই এটাকে সে যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারবে।নেট ঘেটে দেখেন, পর্ন সাইট না, অনেক ভাল সাইটেও ( ভাল বললাম কারন ওগুলোকে পর্ন সাইট বলে মনে হয়নি) আজকাল অনেকেই দাবী করে যে, যেহেতু ভালবাসা আর সেক্স এক না কাজেই নিয়ের পরেও কেন অন্য কারো সাথে সেক্স করা যাবে না। এরা হয়ত সংখ্যায় একেবারে নগন্য। কিন্তু দেখেন একসময় বিকিনি পড়ুয়ারাও নগণ্যই ছিল, আর আজ যেন এটা পাশ্চাত্য বা প্রাচ্যের কিছু দেশেও প্লেগের মত ছড়িয়ে পড়ছে।
আর এইসব কথা বললেই আমাকে প্রতিক্রিয়াশীল বলা হতে পারে। দিন যাচ্ছে পুরুষের ড্রেস লম্বা আর মেয়েদের ড্রেস ছোট হচ্ছে। না আমি এ ব্যাপারে কিছু বলি নি, ব্যাপারটা ভুলে যান, আমি এইবার মৌলবাদী খেতাব পেতে চাইনা এখানে। আর মেয়ে মানুষের কাপড় ধরে নাচানাচি করি, এমন অপবাদও জুটবেই।
আমি শালীনতার পক্ষে। তবে শালীনতা মানে বোরকার নামে প্যাকেট করা নয়। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, জিন্স, ফতুয়া, টি শার্ট সবই আমি মেয়েদের জন্য শালীন মনে করি। তবে শর্টসকে আর ট্যাঙ্ক টপস বা টিউব টপস কে শালীন বলতে আমার আপত্তি আছে। এজন্যে আমাকে শুনতে হবে যে শালীনতার মানদণ্ড কি, বা এটা কে ঠিক করবে। খুব জটিল প্রশ্ন তাই না? এর উত্তর দেয়া হয়ত সম্ভব, তবে পালটা উত্তরও তৈরি আছে।
কাজেই এটা এমন এক বিতর্ক যে শেষ হবে না। এমন কি একদিন হয়ত এই বানীও শুনতে হবে যে সমাজে নৈতিকতার দরকার নেই, অথবা নৈতিকতা কি জিনিস।
দুনিয়া দিন দিন চার্বাক দর্শনের বিকৃত ব্যাখ্যার মাধ্যমে , খাও দাও ফুর্তি কর, এটাকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই কথার অর্থ যে একদিন বদলাতে বদলাতে কোথায় চলে যাবে আমার জানা নেই। আপনি লিখলেন তাই দুটা কথা বললাম না হলে যেচে পড়ে কে বাঁশ খেতে চাইবে? আমিতো চাইব না। তবে এইটুকু মনে প্রানে চাই যে আমার জীবদ্দশাতে যেন বাংলাদেশ পাশ্চাত্য না হয়ে যায় পুরোপুরি। এদের কালচারকে আমি ঘৃণা করি না, তবে আমার ঠিক সয়না, অ্যালার্জী আছে।
নারী দেহ যেভাবে মল বলা হয়েছে নিজ দেহকেও সেভাবে বিষ্ঠাময়ও বলা হয়েছে। মুদ্দাকথা হচ্ছে ইহজাগতিক দেহ ক্ষণস্থায়ী তার উপলব্ধি।
নিলয় নীলকে মুক্তমনায় স্বাগতম।
বৌদ্ধ ধর্মের অজানা বিষয় তুলে ধরার জন্য লেখককে সাধুবাদ। সকল ধর্মই প্রচণ্ডমাত্রায় নারী বিদ্বেষী, পুরুষতান্ত্রিক, সেদিক থেকে প্রাচীন ভারতের বৌদ্ধধর্মও ব্যতিক্রম নয়।
চলতি নোটটি বেশ কিছুটা অগভীর মনে হচ্ছে। কারণ এতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ টীকা-টিপ্পনি যুক্ত করা প্রয়োজন ছিলো, যার অভাবে প্রাচীনকালের একটি ধর্মীয় দর্শনের আদ্যপান্ত না হোক, অন্তত সমসাময়ীকতা বোঝা সম্ভব নয়। এর অভাবে পুরো বিষয়টি খুব খাপছাড়া ঠেকছে। যেমন–
লেখক বলছেন:
বৌদ্ধধর্ম মূলত সন্ন্যাস ধর্ম, তাই এটি নারী ও সংসার বিবোর্জিত জীবন দর্শনের কথা বলবে [কামের আধার?], এটিই তো স্বাভাবিক। পুরো নোটে এই ভাবনার অবতারণাটি করা হয়েছে খুবই ঠুনকোভাবে। এর পাশাপাশি সংসারী মানুষদের প্রতি বুদ্ধ ধর্মের নির্দেশনা চলতি নোটে অনুপস্থিত।
উপরন্তু লেখক বলছেন:
এ ক দ ম ই ন য়। বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাই, গৌতম বুদ্ধ সর্ম্পকে এই ভ্রান্ত তথ্য প্রচারের কারণ কি? এটি কি নিছকই আপ্তজ্ঞান, নাকি অতি সরলীকরণ?
প্রকৃত সত্য হচ্ছে, অন্য সব সন্ন্যাসীদের সঙ্গে বুদ্ধের পার্থক্য এখানেই যে, ‘সংসার ধর্ম আর ভালো লাগছে না’ এই বোধ থেকে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেননি। বরং “দুঃখ, দুঃখের কারণ, প্রতিকার” এর স্বরূপ জানার জন্যই রাজকুমার সিদ্ধার্থ দ্বন্দ্বের উৎপত্তির রাত্রেই ঘুমন্ত স্ত্রী, পুত্র, পরিবারকে নিঃশব্দ বিদায় জানিয়ে প্রাসাদ ত্যাগ করেন।
এছাড়া “বৌদ্ধ ধর্ম” বলে এখন যা প্রচলিত, তা গৌতম বুদ্ধের সৃষ্ট নয়, তার অনুসারীদের সৃষ্ট, গৌতম বুদ্ধ শুধু ধর্মীয় জীবন দর্শনই প্রচার করেছেন, এখনকার “বৌদ্ধ ধর্ম” একেবারেই নয়। এ কারণে তিনি শিক্ষিতজন হয়েও তার নিজস্ব ভাবনা বা বাণী কোনোটিই লিপিবদ্ধ করেননি। এগুলো বহু বছর মুখে মুখেই প্রচলিত ছিল। ধারণা করা হয়, বুদ্ধের মৃত্যূর প্রায় দুশো বছর পর হিন্দু ধর্মের প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য ব্যপকভাবে বুদ্ধ পূজা ও বুদ্ধের বানী লিপিবদ্ধ হতে থাকে, ধর্মটির বিকাশও। একই সঙ্গে এই ধর্মে যুক্ত হয় বুদ্ধের অনুসারীদের নানা আচার। এ কারণে, প্রচীনকালেই বুদ্ধের বাণী ও দর্শন ত্রিপিটক আকারে লিপিবদ্ধ হলেও কোন জাতকগুলি প্রাচীনতম, বুদ্ধেরই বলা, আর কোনগুলি পরবর্তী সংযোজন, তা বলা কঠিন।
এ সব বিষয়, তথা সামগ্রিক প্রেক্ষাপটের বিচার চলতি নোটে একেবারেই স্থান পায়নি।
গুরুতর বিষয়ে গুরুতর লেখনি প্রয়োজন।
@বিপ্লব রহমান,
ধন্যবাদ আপনাকে, সম্ভবত আমি বেশ তাড়াহুড়া করে মূল বিষয়ে চলে এসেছি যেটা আপনার কাছে ঠুনকো মনে হয়েছে। আমি বৌদ্ধ ধর্ম অথবা বৌদ্ধর জীবন নিয়ে খুব বেশী আলোকপাত করতে চাইনি কারণ এখানে অনেকেই সেই বিষয়ে অবগত। যেটুকু না করলে শুরু করা যায়না সেটুকুই করেছি যা আপনার কাছে ঠুনকো মনে হতেই পারে।
আমার লেখায় ছিল “গৌতম বৌদ্ধ বিতৃষ্ণ ছিলেন তৎকালীন সাংসারিক জীবনাবর্তে। এই জন্য তিনি তার স্ত্রীকেও ত্যাগ করেন।” আমার এই লেখার সাথে আপনার মন্তব্যের অমিল আমি পাই না। যদি আমার লেখা অতিসরলীকরণ হয় আর আপনার তা এই সরলীকরণের বিশ্লেষণ হতে পারে। কি কারণে বৌদ্ধ সংসার ত্যাগ করছেন এটা বৌদ্ধই ভালো জানেন আপনিও না আমিও না। তবে নিন্দুকের মুখে বলতে শুনেছি তিনি নাকি নপুংসক ছিলেন সেই কারণে সংসার ত্যাগ করেছেন। :lotpot: যাইহোক নিন্দুকের এই সব কথা প্রমাণ করার কোন সুযোগ আমার কাছে নেই।
এই বিষয়ে আপনার সাথে আমি শতভাগ একমত। আবারো ধন্যবাদ আপনার গঠনমূলক সমালোচনার জন্য।
@নিলয় নীল,
আপনার মাত্রাজ্ঞানটি পরিস্কার করার জন্য ধন্যবাদ।
অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ লেখা। আসলে বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে নিলয় নীলের চমৎকার ফেসবুক নোটগুলো দেখেই তাকে মুক্তমনায় লেখার আহবান জানাই আমি। আমি আনন্দিত যে নীল এই সিরিজটির মাধ্যমে মুক্তমনায় যাত্রা শুরু করেছেন। তাকে মুক্তমনায় স্বাগতম।
যে ব্যাপারটি ফরিদ আহমেদ আলোচনা করেছেন সেটার গুরুত্ব আমিও তুলে ধরতে চাই। মুক্তমনা তৈরি করা হয়েছিল কেবল ইসলামের সমালোচনা করার জন্য নয়, বরং সকল ধরণের ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধেই আমাদের সদস্যদের সোচ্চার থাকা দরকার। আপাতভাবে বৌদ্ধধর্মকে ‘প্রগতিশীল’ ‘শান্তিময়’ হিসেবে চিত্রিত করা হলেও আড়ালে যে সেই একই নারীবিরোধী পুরুষতান্ত্রিক উন্নাসিকতা কাজ করছে সেটা এই ধরনের সিরিজের মাধ্যমে সামনে আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি শুধু ধর্মের সমালোচনা নয়, বরং মহাপুরুষদের অমহাপুরুষসুলভ বিভিন্ন কাজের আলোচনা কিংবা সমালোচনা করাটাও কিন্তু মুক্তমনাদের ‘ক্রিটিকাল থিংকিং’ এর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ফরিদ আহমেদ কৌস্তুভের জাতক ও কামিনী লেখাটির লিঙ্ক দিয়েছেন। আমি আমাদের সাইটের ‘নির্মোহ এবং সংশয়ী দৃষ্টি : মুক্তমনের আলোয়’ বিভাগটির কথাও জানিয়ে দিতে চাই। সমস্ত গোঁড়ামির উর্ধ্বে উঠে সংশয়ী দৃষ্টি অক্ষুন্ন থাকুক মুক্তমনায়।
অনেক ধর্মনিরপেক্ষ যুক্তিবাদী মানুষকে দেখি তারা অন্যান্য ধর্মের কঠোর বিরোধিতা করেন, কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি তাদের কেমন একটু গদগদ ভাব আছে। আমার নিজেরও একটু কোমল কোমল ভাব ছিল এই ধর্মের প্রতি, এবং গৌতম বুদ্ধের প্রতি। মনে হতো, আহা কতো মহান ব্যাপার স্যাপার!
কিছু ভালো দিক রয়েছে। যেমন, সেই আমলেই তিনি বলেছিলেন ঈশ্বরহীনতা কথা, বলেছিলেন, উপাসনা হচ্ছে সময় নষ্ট। বলেছিলেন, জীব হত্যা না করতে। অবশ্য গাছের প্রাণ তখনও আবিষ্কৃত হয়নি। এ রকম কয়েকটি ভালো জিনিসের কথা বলা যায় বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপারে।
কিন্তু নারীর ব্যাপারে সেই একই সুর অন্যান্য ধর্মের মতন। নারী নিকৃষ্ট, নারী ঘৃণ্য। অন্যান্য ধর্মগুরুগণ যেখানে নারীকে পুরুষের ভোগ্যপণ্য হিসেবে বিবেচনা করেছেন সেখানে বুদ্ধ নারীকে একেবারে বাদই দিয়ে দিয়েছেন। নারী একেবারেই পরিত্যাজ্য। নিজের স্ত্রীকে তিনি রাতের আঁধারে কাপুরুষের মত ছেড়ে পালিয়েছিলেন, এবং অন্যান্যদেরকেও সেই ত্যাগমন্ত্রে উৎসাহিত করেছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, যে সকল মহানুভব পুরুষ বুদ্ধের মহানুভব ব্রত পালন করছেন তারা কি জন্মেছেন পুরুষের জঠরে? এই মহানমন্ত্রে ব্রত্রী হয়ে সকল মহান পুরুষ যদি নারীসঙ্গ ত্যাগ করেন
তাহলে মহান পুরুষেরা পৃথিবীতে জন্মাবেনই বা কীকরে?
বৌদ্ধ ধর্মের সমালোচনা সাধারণত কম হয়। ধন্যবাদ এ বিষয়ে লেখার জন্য।
যে সব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মুক্তমনার জন্ম হয়েছিলো, তার মধ্যে অন্যতম একটা ছিলো প্রচলিত সকল ধর্মের বিরোধিতা করা। কিন্তু, মুক্তমনার সেই সুবিস্তৃতি ধর্মবিরোধী প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে একদল অন্ধ ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে অনবরত। তাদের মনের যত ঘৃণা, আক্রোশ, সব উগড়ে দিতে চেয়েছে এখানে। যদিও খুব একটা সুবিধা করতে পারে নি তারা কখনোই। আমাদের হাতে রাম ধোলাই খেয়ে বিভিন্ন সময়ে ভেগে গিয়েছে তারা। কেউ কেউ এখনো আছে, তবে ভোল পরিবর্তন করেছে, সুর পালটে ফেলেছে যথাযথ সঙ্গীর অভাবে। তারপরেও, কিছুটা হলেও মুক্তমনার ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে তারা। এই ধরণের লেখা সেই ক্ষতির জায়গাগুলোতে পরশ বুলোবে বলেই আমার ধারণা। আপনার এই প্রচেষ্টাকে তাই সাধুবাদ জানাই।
কৌস্তুভের লেখা জাতক ও কামিনী টা পড়ে দেখতে পারেন।
মুক্তমনা কি এবার বৌদ্ধ ধর্মের পেছনে লাগল !!!! কিছুদিন আগে “বৌদ্ধ ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, চরমপন্থা কিংবা সন্ত্রাসবাদ” শীর্ষক একটি রচনা পড়লাম…… এখন এই সিরিজ।
আদিল মাহমুদ, বিপ্লব পাল, অভিজিৎ, আকাশ মালিক, আলোকের অভিযাত্রী, বোকামেয়ে কিংবা ভবঘুরে ইত্যাদি লেখক এতদিন ইসলাম, হিন্দু, খ্রিশ্চিয়ান ইত্যাদি ধর্ম নিয়ে এবং এসব ধর্ম নিয়ে যারা ব্যবসা করে তাদের নিয়ে লিখেছিলেন। এখন এই সিরিজ…… আশা করা যাচ্ছে ইহুদি, শিখ, জৈন কিংবা শিন্তোও বাকি থাবেনা। আচ্ছা টাও এবং কুনফুসিয়াজমও কি ধর্মের কাতারে ফেলা যায়… এদের সমালোচনা যদি থাকত ভাল হত।
@ইমরান খান,
মুক্তমনায় প্রকাশিত সকল লেখা এবং মন্তব্যের দায় একান্তই লেখকের। কারো লেখা বা মন্তব্যের জন্য কোনোভাবেই মুক্তমনাকে দায়ী করা যায় না।
@ইমরান খান,
বাকি আর রইলো কই? দেখুন মুক্তমনায় বিপ্লব পালের–
জৈন ধর্ম- ভারতীয় নাস্তিক দর্শনে অহিংসার সন্ধানে
@ইমরান খান,
সত্যি কথা বলতে কী, সংবাদিকার “বৌদ্ধ ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, চরমপন্থা কিংবা সন্ত্রাসবাদ” শিরোনামের লেখাটি পড়ার আগ পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্মের এই জঘন্য রূপটা সম্মন্ধে মোটেই জানতাম না। বৌদ্ধকে সবসময় একজন সমাজসংস্কারক হিসেবেই জানতাম। এর পর ইন্টারনেট, ইউটিউব ঘাটাঘাটি করে অনেক তথ্য পেয়েছি যা বৌদ্ধ ধর্ম সম্মন্ধে আমার পূর্বেকার ধারণা ও বিশ্বাস পুরোপুরি বদলে দেয়। তদ্রুপ খৃষ্টান ধর্মের হিংস্র রাজনৈতিক চেহারাটার পরিচয় পেয়েছি বিপ্লব পালের কিছু লেখায়। হিন্দু ধর্ম সম্মন্ধে বন্ধু বান্ধবের সাহায্যে যতটুকু জেনেছি তার কিছু কিছু বিষয় আমার বিভিন্ন লেখায় উল্লেখ করেছি। এভাবেই ধীরে ধীরে আমরা অন্যান্য ধর্মগুলোর ব্যাপারেও জানবো, যখন সেই ধর্মের উপর যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন এমন লেখক পাঠককে আমরা পাবো। ইসলামের সমালোচনায় এখন কোন লেখা যে এখানে চর্বিত চর্বণ হবে সে কথা বলেছিলাম আজ থেকে প্রায় এক বছর পূর্বে। ইসলাম সম্মন্ধে জানার জন্যে মুক্তমনার আর্কাইভই যথেষ্ট।
রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ আর ইদানিং রবীশংকর সম্মন্ধে যা জেনেছি তা এই মুক্তমনা থেকেই। রবীন্দ্রনাথের লেখা আমাদের জাতীয় সঙ্গীত আর তার ‘পুরনো সেই দিনের কথা’ গানটির সুর কোথা থেকে এসেছে তা আজও বাংলাভাষী কয়জন জানেন আমার সন্দেহ আছে। অন্তত আমি তো এর পেছনের কাহিনি মোটেই জানতাম না। সুতরাং সত্যের সন্ধানী যাত্রীদলের সাথী হয়ে মুক্তমনায় থাকুন,পড়ুন লিখুন।
মুক্তমনা নীতিমালা
২.১৫। প্রথম পাতায় একই লেখকের একটির বেশি লেখা সমীচীন নয়। একটি লেখা প্রকাশিত হয়ে গেলে লেখককে অপেক্ষা করতে হবে, একটি লেখা যখন প্রথম পাতা থেকে চলে যাবে তখনই কেবল আরেকটি লেখা লেখক পোস্ট করতে পারবেন।
আমি অনুরোধ করবো এই লেখাটি প্রথম পাতায় রেখে অন্যটি আপাতত সরিয়ে দিন।
@সংশপ্তক,
ধন্যবাদ আপনার পরামর্শের জন্য, এই লেখাটি রেখে অন্য লেখা ইতিমধ্যেই প্রথম পাতা থেকে সরানো হয়েছে। আমি মুক্তমনায় লেখক হিসেবে নতুন, তাই জানতে চাচ্ছি একই বিষয়ে পর্ব আকারে লিখলেও প্রথম পাতা থেকে লেখাটি চলে যাবার পর আরেকটি পর্ব লেখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে কিনা? :-s
@নিলয় নীল,
অবশ্যই । একই বিষয়ে পর্ব আকারে লিখলেও প্রথম পাতা থেকে লেখাটি চলে যাবার পরই আরেকটি পর্ব লেখার যাবে যদি নীড় পাতায় প্রকাশ করতে চান। তবে, নিজস্ব পাতায় লেখা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কোন সংখ্যাগত বিধি নিষেধ নেই। 🙂
@সংশপ্তক,
প্রদীপ দেবের ফাইনম্যানের ভালোবাসা – শেষ পর্ব আর আলফ্রেড নোবেলের বিস্ফোরক ভালোবাসা – প্রথমার্ধ এ মহূর্তেও একসাথে নীড় পাতায়। যদিও আমি তার লেখার খুব ভক্ত। আমি শুধু নীতিমালা প্রসঙ্গে বিষয়টি মনে করাতে উদাহরণটি দিলাম।
@গীতা দাস,
হুম। সম্পাদকেরা ভাল বলতে পারবেন এই ব্যতিক্রম কেন? :-s
নীতিমালা অনুযায়ী নীড়পাতায় একই লেখকের একাধিক রচনা থাকার কথা নয়।