বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হল ধর্ষণ। সারা বিশ্বেই ধর্ষণের ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলেছে। আবার ধর্ষণের বিরুদ্ধে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন আইন, রয়েছে সচেতনতা আর মানবিকতার বুলি। কিন্তু তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না ধর্ষকদের, তারা যেন সকল আইন ও মানবিকতার ঊর্ধ্বে। এখনো সমাজে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে নারীদের সাথেই। বেশীরভাগ সমাজের পুরুষতান্ত্রিক চেতনায় নারী মূর্ত বা বিমূর্ত, ব্যাক্ত বা অব্যাক্ত ভাবে পুরুষের কাছে ভোগ্যপণ্য রূপেই পরিগণিত হয়। ফলে এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ঘরে-বাইরে এখনো নারীরা ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়।
যেহেতু ধর্ষণ প্রতিরোধে আইন বা মানবিকতা কোন কিছুই যথেষ্ট নয়, যেহেতু এগুলো দিয়ে প্রতিরোধ করা যাচ্ছেনা ধর্ষণকে তাই ভাবতে হচ্ছে বিকল্প নিয়ে। কীভাবে ধর্ষণের হাত থেকে নিজেদের বাঁচানো যায়, এ নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। আর গবেষণার মাধ্যমে বের হয়ে এসেছে বেশ কিছু প্রযুক্তি। নিম্নে ধর্ষণ প্রতিরোধে কয়েকটি প্রযুক্তি এবং একটি কৌশল নিয়ে আপনাদের সাথে সংক্ষেপে আলোচনা করছি।
পেন্টি প্রযুক্তিঃ ধর্ষণ প্রতিরোধে সম্প্রতি আমেরিকার বাজারে এসেছে এক ধরনের বিশেষ পেন্টি। নিউইয়র্কের রুথ ও জুভাল নামে দুই মহিলা বেশ কয়েক বছর গবেষণার পর এক ধরনের বিশেষ অন্তর্বাস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের মতে, ধর্ষণ ঠেকাতে বা এ ধরনের হুমকি মোকাবিলায় এই অন্তর্বাস সহায়ক হবে। এ ধরনের বিশেষ পেন্টিতে রয়েছে পাসওয়ার্ড সিস্টেম যা ধর্ষক টানা-হেঁচড়া করলে ছিঁড়বে তো নাই উল্টা বরং বৈদ্যুতিক শক দিয়ে দিবে। রাতের বেলা একা চলাচল করার সময় বা একা ভ্রমণে, নৈশ ক্লাবে যাওয়া-আসার সময় এ ধরনের অন্তর্বাস ধর্ষণ প্রতিরোধে খুবই সহায়ক হবে বলে প্রচার করা হচ্ছে। এজন্যে একটি প্রকল্পে ৫০ হাজার ডলার তহবিল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ১৭ দিনে সেখানে ৩৭ হাজার ডলারও মিলে গেছে। অনলাইনে এ ধরনের অন্তর্বাস বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়ার পর তা বিক্রিও হচ্ছে বেশ।
আংটি প্রযুক্তিঃ অন্যদিকে ভারতের কর্ণাটকের এক ফার্মাসিস্ট ধর্ষণ ঠেকাতে নতুন ধরনের এক আংটির কথা জানান; যা মহিলাদের সাহায্য করবে ধর্ষণ প্রতিরোধে। ফার্মাসিস্টের নাম ইমরান খান। ইমরান খান দাবি করেন, নারীদের নিরাপত্তা দেয়ার একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে কোনো পুরুষ কোনো নারীকে ধর্ষণ বা শারীরিক নির্যাতন করতে পারবে না। তিনি জানান, তিনি আবিষ্কার করেছেন একটি আংটি যার নাম স্ট্রিং বি সিলভার রিং। এতে ব্যবহার করেছেন একটি রাসায়নিক যৌগের তরল।
স্ট্রিং বি সিলভার রিং পরতে হবে নারীদের ডান হাতের তর্জনিতে। কোনো পুরুষ তাকে ধর্ষণে উদ্যত হলে বা শারীরিক নির্যাতনের চেষ্টা করলে আংটি থেকে বাঁটন পুশ করতে হবে আর সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়বে ওই পুরুষ। ইমরান বলেছেন, গত ১৬ ডিসেম্বরে দিল্লিতে যে গণধর্ষণ হয় তা তাকে এ ডিভাইস আবিষ্কারে উদ্বুদ্ধ করেছে। ইমরান খানের বয়স এখন ৩০ বছর। তিনি এই আংটির নাম দিয়েছেন স্ট্রিং বি। এটি সিলভারের একটি আংটি। এর সামনের দিকে আছে ক্যাপসাইসিন নামে একটি রাসায়নিক যোগ্য। এটি আংটির ভেতরে লুকানো অবস্থায় ক্ষুদ্র একটি চেম্বারে জমা রাখা থাকবে। এটি আক্রমণকারীর ওপর প্রয়োগ করলেই সে দুর্বল হয়ে পড়বে।
ব্রা প্রযুক্তিঃ এদিকে ভারতের তিন শিক্ষার্থী নারীদের জন্য অভিনব আরেক ধরনের ব্রা তৈরি করেছেন বলে জানা যায়। এটি পরিহিত কেউ আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে সে বার্তা চলে যাবে পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের কাছে। পাশাপাশি হামলাকারী পাবে উচ্চমাত্রার ইলেকট্রিক শক। বিশেষ এই ব্রা উদ্ভাবন করেছেন চেন্নাইয়ের এসআরএম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন প্রকৌশলী। তারা হলেন মনীষা মোহন, নীলাদ্রি বসু ও রিম্পি ত্রিপাঠি।
মনীষা বলেন, এই ব্রাতে থাকবে একটি ডিভাইস যেটা জিপিএস আর জিএসএম ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকা ছাড়াও এতে থাকবে শক প্রযুক্তি। ফলে ব্রার উপর অস্বাভাবিক চাপ পড়লে সেটা থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বার্তা চলে যাবে পুলিশ আর পরিবারের সদস্যদের কাছে। এছাড়া এটি হামলাকারীকে ৩,৮০০ কিলো-ভোল্টের শক দিতে পারবে। একবার দুবার নয়, ৮২ বার। বিশেষভাবে তৈরি এই অন্তর্বাসের দাম যেন সবার হাতের নাগালে থাকে সে চেষ্টাও করা হবে বলে জানান মনীষা। কারণ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নারীর সুরক্ষা, মুনাফা অর্জন নয়।
অণ্ড থেরাপিঃ তবে এতোসব প্রযুক্তি আমাদের মেয়েরা কবে পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। তাই ধর্ষণ প্রতিরোধে অন্যতম একটি কৌশলটি হল অণ্ড থেরাপি। পুরুষ দ্বারা ধর্ষণ যখন নিশ্চিত আর আপনি যদি তা সাকা চৌধুরীর মতো উপভোগ নাও করেন এবং বুঝেন যে ধর্ষক আপনার চেয়ে অনেক শক্তিশালী তাহলে তাকে আর বাধা দেবার চেষ্টা করবেন না। বরং তাকে সহযোগিতা করার অভিনয় করুন। একটা পর্যায়ে সুযোগ বুঝে তার অণ্ডকোষটা চেপে ধুরুন। শরীরের যত শক্তি আছে তা হাতে প্রয়োগ করুন। আপনার লক্ষ্য ২ টা, প্রথমত, লিঙ্গ থেকে অণ্ডকোষকে টেনে ছিঁড়ে ফেলে আলাদা করা আর দ্বিতীয়ত অণ্ডকোষের দুটি অণ্ডকে একেবারে পিশে গুঁড়িগুঁড়ি করে ফেলে এই ব্রহ্মাণ্ড থেকেই ধর্ষককে বিতাড়িত করা।
এই লক্ষ্যে আপনি মুখাভিনয় করে ধর্ষকের অণ্ডকোষ মুখের ভিতর নিয়ে দাত দিয়ে থেঁতলে দিতে পারেন যতটা সম্ভব। কতখানি পারবেন তা আপনার পারফর্মেন্সের উপর নির্ভর করবে তবে এইটুক বলতে পারি খুব শক্তিশালী কোন পুরুষও অণ্ডকোষে বড় রকমের প্রেশার পেলে মারা যেতে পারে। আর মোটামুটি প্রেসার পেলেই অজ্ঞান হয়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশী, আর অজ্ঞান না হলেও আগামী কয়েক ঘণ্টায় তার ধর্ষণ করার মতো কোন অবস্থাই থাকবে না।
এতোকিছু সম্ভব না হলে দাড়িয়ে ধর্ষকের দুই পায়ের সন্ধিস্থলে সর্বশক্তি প্রদান করে একটা লাথি মারুন । মনে রাখবেন আপনার লাথি অবশ্যই তার অণ্ডে লাগতে হবে। তার যেমন উদ্দেশ্য আপনার যোনী আর আপনার উদ্দেশ্য থাকবে তার অণ্ড। সকল নারীদের বলছি উপরের অণ্ড থেরাপি শুধুমাত্র ধর্ষকদের জন্য প্রযোজ্য। দয়া করে টেস্ট করার জন্য বা ফাজলামি করার জন্য বয়ফ্রেন্ড স্বামী বা অন্য কারো সাথে ইহার সামান্যতম প্রয়োগ করবেন না। মনে রাখবেন একটি দুর্ঘটনা কিন্তু সারা জীবনের কান্না।
লেখক দুটি লেখা পর পর প্রথম পাতায় প্রকাশ করেছেন যা মুক্তমনা নীতিমালা বিরোধী। এই লেখাটিকে প্রথমপাতা থেকে সরিয়ে লেখকের ব্যক্তিগত ব্লগে নিয়ে যাওয়া হল।
@ অভিজিৎ দা,
ধন্যবাদ আপনার গঠনমূলক সমালোচনার জন্য। স্বীকার করছি, কিছু জায়গায় অনাবশ্যক কিছু কথা লিখেছি যার আসলেই প্রয়োজন ছিল না। মুক্তমনায় নতুন তাই আপনাদের গঠনমূলক সমালোচনা আমাদেরকে আরও সচেতন ভাবে লিখতে উৎসাহিত করবে।
@নিলয় নীল,
তাহলে লেখাটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে নিয়ে অপ্রয়োজনীয় জায়গাটা এডিট করে নিন না?
এই সব যন্ত্রপাতি তো বাবা মারা তাদের মেয়েদের , অথবা স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করার জন্যও ব্যবহার করতে পারে যেমন মধ্যযুগে মেয়েদের লোহার জাঙ্গিয়া পড়িয়ে তালা দিয়ে রাখা হত । এখন তালার বদলে পিন কোড হয়ত ব্যবহৃত হবে যা কি না হ্যাক করা যায়! এসবে কোন নতুনত্ব নেই – সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতা।
[img]http://nla.gov.au/nla.pic-vn4740600-v[/img]
@সংশপ্তক,
জরুরী প্রয়োজনের সময় পিনকোড ভুলে গেলেতো আরেক সমস্যা !! (*)
সহমত।
ধর্ষণ একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এ বিষয়টি নিয়ে লিখতে গেলে একটু সংবেদনশীল হওয়া দরকার। আমি বলছি না এ নিয়ে লেখার গুরুত্ব নেই, কিন্তু যথেষ্ট সংবেদনশীলতা এবং উপস্থাপনায় সচেতন না থাকলে বক্তব্য হারিয়ে গিয়ে উলটো প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে যাবার সম্ভাবনা বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে ‘অণ্ড থেরাপি’ অংশটা যেভাবে লেখা হয়েছে তাতে গুরুত্বের চেয়ে হাল্কা রসিকতাই প্রাধান্য পেয়েছে বেশি বলে মনে হয়। যেমন ধর্ষণ উপভোগের ব্যাপারটা যেভাবে বলা হয়েছে তা লেখাটি সম্বন্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে বাধ্য –
এ লাইনগুলোর এহেন উপস্থাপনা দরকার ছিল না। আমি বুঝতে পেরেছি আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, কিন্তু বাক্যের ব্যবহারে মনে হতে পারে লেখক হয়তো ব্যাপারটা প্রতিকারের চেয়ে ‘উপভোগ’ ই করছেন।
আর প্রযুক্তির ব্যবহারের যে উল্লেখ রয়েছে, সেটাও কতটা কার্যকরী তা নিয়ে আমার সংশয় আছে। যেমন, ইমরান খানের আংটি প্রযুক্তি। বলা হয়েছে, বোতাম চাপার মাধ্যমে নিক্ষিপ্ত তরল আক্রমণকারীর ওপর প্রয়োগ করলেই সে দুর্বল হয়ে পড়বে। ভাল কথা। কিন্তু এই আংটি যে ধর্ষকেরাও ব্যবহার করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? হয়তো দেখা যাবে নারীকে আর দুর্বল করে শিকার ধরার জন্য ধর্ষণকারীরাই যথেচ্ছ ব্যবহার শুরু করেছে এর।
আসলে ধর্ষণ ব্যাপারটা নিয়ে লিখতে হলে সামাজিক বিশ্লেষণ আসাটা গুরুত্বপূর্ণ, যেটা এ লেখায় অনুপস্থিত। আশা করব ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সচেতন থাকবেন আপনি।
লেখাটির সমালোচনা করলাম বলে নিশ্চয় কিছু মনে করবেন না। অন্য ব্লগে এই ধরণের লেখা লিখলে হয়তো পিঠচাপড়ানোই পেতেন। কিন্তু মুক্তমনায় যেহেতু জেণ্ডারগত বিষয়গুলো নিয়ে লেখকেরা সচেতন থাকেন, সেজন্যই এভাবে বলা।
অণ্ড থেরাপির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। গণ ধর্ষণের ক্ষেত্রে অণ্ড থেরাপি খুব বেশী কার্যকর মনে হয়না।
@নিলয় নীল, আসলে আমার মনে হয় যে ধর্ষনের বিরুদ্ধে গনধোলাইটা হতে পারে সবচেয়ে ভাল অস্ত্র। এছাড়া যদি দেশের প্রচলিত আইনের প্রয়োগ থাকে, তবেই এই ধর্ষনের হার কমতে থাকবে আস্তে আস্তে। ইভ টিজিংটাও কিন্তু আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে বলেই জানি। ধর্ষকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক মদদে ছাড়া পেয়ে যায়, আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষিতার কপালেই বদনাম জোটে ( যেমন খারাপ মেয়ে,এমনকি এক্সট্রিম লেভেলে দেহপসারিণী হিসাবেও!) । এর চেয়ে দুর্ভাগ্য মনে হয় না এই জীবনে কিছু থাকতে পারে। পাপ করল অন্যকেউ, পাপের জন্য শাস্তি পেল ভুক্ত ভোগী!!
এই কৌশলটির বিষয়ে অনেক বন্ধুকেই বলেছি (যাদের সাথে ঘনিষ্ঠ)।
জরুরী একটা লেখা। (Y)
এসব বাদ দিয়ে সচেতন তা বৃদ্ধি করুন। যেন পুরুষ নিজে থেকেই ধর্ষণ থেকে বিরত থাকে।