আমরা আগের পর্বে দেখেছি কিভাবে আরবের আর্থসামাজিক আন্দোলনের একজন নেতা, দুশো বছরের বিবর্তনে ক্রমশ এক রূপকথার প্রফেট চরিত্রে উত্তীর্ণ হলেন। কিভাবে ইসলামের মতনএকটি প্রগতিশীল আন্দোলন ক্রমশ শাসক শ্রেনীর যন্ত্রে পরিণত হয়ে, চূরান্ত প্রতিক্রিয়াশীল একটি ধর্মরূপে বিবর্তিত হল।
যেকোন ধর্মের জন্মর নাড়ি বাঁধা থাকে সমকালীন ইতিহাস এবং ভূগোলে। খ্রীষ্ঠ ধর্মের নড়ি বাঁধা প্রায় দুহাজার খৃষ্ঠপূর্বাব্দ ধরে চলে আসা মধ্যপ্রাচ্যের ধর্ম আন্দোলনের সাথে। ক্যানানাইট, পার্সিয়ান, গ্রীস, সিরিয়ান এবং ইহুদি ধর্মের ধারা এবং মিথগুলি (রূপকথা) একসাথে মিশে তৈরী হল খ্রীষ্ঠান ধর্ম।
তাহলে খ্রীষ্ঠধর্ম মহান ঈশ্বরের সন্তান জিশুর প্রচারিত ধর্ম না? একদম ই না। ইসলাম যেমন মহম্মদ প্রচলিত ধর্ম বলে তার মৃত্যুর দুশো বছর বাদে চালানো হল ( তৃতীয় পর্ব দেখুন ), যীশু খ্রীষ্ট্রের ধর্ম বলতে যা আজকে আমরা জানি-সেটাও যীশুর জন্মের দুহাজার বছর আগে থেকে চলে আসে মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় রূপকথাগুলির সংকলন ছাড়া কিছু না । এবং চালানোর কৃতিত্ব মোটেও যীশুর না -তা প্রাপ্য রোম সম্রাট কনস্টানটাইনের (৩০৬-৩৩৭)।
মূলত তিনিই রোমান সাম্রাজ্যবাদ টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে খ্রীষ্ঠান ধর্মের বর্তমান রূপের প্রবর্তক। যীশু সেই রোমান সাম্রাজ্যবাদের প্রয়োজনে জন্মানো ধর্মের এক কেন্দ্রীয় মিথিক্যাল চরিত্র।
যীশু বলে কি কেও ছিলেন? যীশু বলে একজনকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে জুডাইয়ার শাসক পন্টিয়াস পিলেট ৩৩ খৃষ্ঠাব্দে শুলে চড়িয়েছিলেন এটা রোমান ঐতিহাসিকরা লিখে গেছেন। এই যীশু ইহুদি শিক্ষক বা রাব্বাই ছিলেন। এই টুকুই শুধু ইতিহাস {[1] Van Voorst, Robert E. (2000). Jesus Outside the New Testament: An Introduction to the Ancient Evidence. Wm. B. Eerdmans Publishing Co.. ISBN 0-8028-4368-9 pages 65-68}।
খ্রীষ্ঠান ধর্মের আসল প্রবর্তক কনস্টান্টাইন
যীশু সম্পূর্ন এক কাল্পনিক চরিত্র
হোরাস-মিশরের দিনের দেবতা যিনি সব মধ্যপ্রাচ্যের প্রফেটদের পূর্বসূরী
বাকী ২৫শে ডিসেম্বর কুমারী মাতার গর্ভে জন্ম, ছুতোর পরিবারের যীশু, গরীবের বন্ধু যীশু, অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি যীশু-এর কোন কিছুর কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই। কিন্ত মিশরীয়, গ্রীস এবং পার্শিয়ান রূপকথা ঘাঁটলে দেখা যাবে, যীশু নামে যে রূপকথার পয়গম্বরকে আমরা জানি, সেই প্রফেট চরিত্র আসলেই মিশরের হোরাস, গ্রীকদের এটিস এবং পারস্যের জথুরাষ্ট্র [ ইরানের সূর্য উপাসক ধর্মের প্রফেট] , এই তিন চরিত্রের সংশ্লেষন। এবং সেই সংশ্লেষন কাল যীশুর জম্মের তিনশো বছর বাদে কনস্টানটাইনের রাজত্বকালে {[২] Peter Brown, The Rise of Christendom 2nd edition (Oxford, Blackwell Publishing, 2003) }
কেন এমন সিদ্ধান্তে এলেন, ঐতিহাসিকরা?
যীশুর মিথিক্যাল চরিত্রের সব থেকে কাছাকাছি মিশরের দেবতা হোরাস {[3]http://proud-a.blogspot.com/2012/09/jesus-vs-horus.htm /http://www.andrew.cmu.edu/user/jksadegh/A%20Good%20Atheist%20Secularist%20Skeptical%20Book%20Collection/Parallels_between_Jesus_and_Horus_an_Egyptian_God.pdfl}।
হোরাসের জন্ম ২৫ শে ডিসেম্বর। কেন ২৫ শে ডিসেম্বর?
হোরাস ছিলেন দিনের দেবতা । মিশরের লোকজন মনে করতে দিন রাত হয়- হোরাস নামে দিনের দেবতা আর অসিরিস নামে রাতের দেবতার যুদ্ধে। সকালে হোরাস জিতলে দিন , সন্ধ্যাবেলায় অরিসিস জিতে রাত নামে। হোরাস মিশর শুধু না-গ্রীক এবং রোমান যুগেও প্রভাবশালী দিনের দেবতা হিসাবে টিকে গেছেন। তবে রোমে হোরাসে নাম হয় এর পর থেকে মধ্য প্রাচ্যে যত প্রফেট এসেছে-সে আব্রাহাম ই হৌক বা জথুরাষ্ট্র হৌন, সবার ওপর হোরাসের পৌরানিক চরিত্রের প্রভাব অসীম।
কিন্ত ২৫ শে ডিসেম্বরে মধ্য প্রাচ্যের সব প্রফেটরা পাইকেরি হারে জন্মালেন কেন?
কারন সেই হোরাস। ২২ শে ডিসেম্বর দিন সব থেকে ছোট হয়। এরপর ২৫ শে ডিসেম্বর থেকে দিন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এটা মিশরীয়রা জানত-এবং তাদের থেকে গ্রীক-রোমানরাও শেখে। ২৫ শে ডিসেম্বরের বড়দিন হচ্ছে হোরাসে্র জন্মদিন। কারন সে দিনের দেবতা-আর ঐ দিন থেকে দিন বড় হতে থাকে বলে, মিশরীয়রা বহুদিন থেকে ২৫ শে ডিসেম্বরকে হোরাসের জন্মদিন বা পবিত্রদিন হিসাবে পালন করত। হোরাস যেহেতু গ্রীক-রোমান সভ্যতায় দেবতা হিসাবে ঢুকে পড়ে, সেহেতু মধ্যপ্রাচ্য, রোম এবং গ্রীসে খ্রীষ্ঠ জন্মের বহুদিন আগে থেকেই বড়দিন হচ্ছে সব থেকে পবিত্র দিন। রোমে ঐ দিন পালন করা হত ব্রুমালিয়া উৎসব হিসাবে [http://en.wikipedia.org/wiki/Brumalia] ।
তাহলে, যীশু ২৫ শে ডিসেম্বর জন্মালেন কি করে? এই মিথটার ইতিহাস সুলিপিবদ্ধ। যীশুর জন্মদিন ২৫ শে ডিসেম্বর পালন করা শুরু হয় তার জন্মের ৩০০ বছর বাদে। প্রথম খ্রীষ্ঠান সম্রাট কনস্টানটাইন, ২৫ শে ডিসেম্বরকে যীশুর জন্মদিন বলে চালিয়ে দিলেন । কিন্ত কেন ?
কনস্টানটাইন খ্রীষ্ঠান ধর্ম নিয়েছিলেন সাম্রাজ্যের স্বার্থে, নিজে ছিলেন ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ। আসলে বড়দিন রোমান সম্রাজ্যের একটা বড় প্যাগান উৎসব -ব্রুমালিয়ার দিন। কনস্টানটাইন ওইদিনটাতেই যীশুর জন্মদিন হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। উদ্দেশ্য রোমান প্যাগানরা যাতে সেই উৎসবে যোগ দিতে পারে । এমনিতেই রোমান প্যাগানরা তার খ্রীষ্ঠ ধর্মগ্রহনে বা চার্চের পেছনে রাজানুগ্রহে খুশী ছিল না । গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতন, ২৫ শে ডিসেম্বরের বড়দিনের উৎসব বাতিল করলে রোমান সম্রাজ্যে কনস্টানটাইনের জনপ্রিয়তা আরো নামত । ফলে যা ছিল দিনের দেবতার জন্মদিনের উৎসব -তা যীশু জন্মদিন হিসাবে রাজানুগ্রহে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যীশু নামে এক ধর্মপ্রচারকের মিথ, তার জন্মের তিনশো বছর বাদে বিবর্তিত হয়েছে।
এবার আসল প্রশ্নে আসা যাক। কিভাবে খ্রীষ্ঠান ধর্ম মধ্যযুগের রাজনীতিতে নির্নায়ক শক্তিতে রূপান্তরিত হল। কেন কন্সটানটাইন রোমান জাতীয়তাবাদ ছেড়ে খ্রীষ্ঠান জাতিয়তাবাদ বা সাম্রাজ্যবাদে এলেন? কি দরকার ছিল ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদে? কেন রোমান সাম্রাজ্যবাদের থেকে খ্রীষ্ঠান সাম্রাজ্যবাদ অনেক বেশি শক্তিশালী মনে হল কনস্টানটাইনের?
এটা বুঝতে আমরা বর্তমানের কিছু উদাহরনের দিকে তাকাতে পারি। ভারত বা বাংলাদেশের মুসলমানদের একটা বৃহত্তর অংশ, ইসলামের পালন বলতে বোঝে বোরখা পড়া, আরো লম্বা দাড়ি, আরবের প্রচলিত শরিয়া আইন, রমজান মাসে উপবাস ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রাক ইসলামিক ইতিহাসের ভেতরে ঢুকলে দেখা যাবে বোরখা পড়া থেকে রমজান মাসে উপবাস-এসব কিছুই আরবে ইসলামের পূর্বেও ছিল। যেহেতু ইসলামের জন্ম আরবে, সময়ের সাথে সাথে তা ইসলামিক সংস্কৃতি বা ধর্মীয় সংস্কৃতি হিসাবে ঢুকে গেছে।
কিন্ত মজার ব্যপার হচ্ছে, এই মধ্যযুগীয় আরবীয় সংস্কৃতিকে ভারত বা বাংলাদেশের ধর্মভীরু মুসলিমরা “ইসলামিক সংস্কৃতি ভেবে” নিজেদের দেশের, নিজের মাটির সংস্কৃতি ছেড়ে গ্রহণ করতে চাইছে। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতিকে কাফির বা বিধর্মী সংস্কৃতি ভাবা শিখছে।
কি আজব চিজ দেখুন! আরবদের একটুও যুদ্ধ বিগ্রহ করতে হচ্ছে না বাংলাদেশে বা পৃথিবীর যেকোন মুসলিম দেশে!! অথচ বিশ্বাসের ভাইরাস তারা এমনভাবে ইসলামের মধ্যে ঢুকিয়েছে- ইসলামের মধ্যে দিয়ে আরব সংস্কৃতি পৃথিবীর প্রতিটা মুসলিমপ্রধান দেশ গ্রহণ করছে। অর্থাৎ দেশগুলি আরবের সাংস্কৃতিক উপনিবেশ হয়ে গেছে বা হতে চাইছে!! মুসলিম দেশগুলি নিজেদের দেশের হাজার হাজার বছরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে “কাফির” বা বিধর্মী সংস্কৃতি বলে ঘোষনা করতে চাইছে!! এর থেকে একটি সাম্রাজ্যবাদি শক্তির বড় বিজয় আর কি হতে পারে ?
ইসলামের মধ্য দিয়ে এই সফল আরব সাম্রাজ্যবাদ বোঝা বেশ সহজ। এবং সেটা থেকে বোঝা যাবে কেন কনস্টানটাইন রোমান জাতিয়তাবাদ ছেরে খ্রীষ্ঠান সাম্রাজ্যবাদের প্রচলন করলেন। কেন “রোম মহান” থেকে “খ্রীষ্ঠ ধর্ম মহান” তার সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার হল।
সাম্রাজ্যবাদ মানে শুধু যুদ্ধে দেশ জেতা না । সেই দেশে শোষন বজায় রাখতে, ভৃত্য প্রভুর সম্পর্কটা সবল করার দরকার হয়েছে সব সময়। অর্থাৎ বিজিত দেশগুলি থেকে লাভ করতে হলে, সেই দেশে, এমন একটা শ্রেণী তৈরী করতে হবে-যারা হবে বিজয়ী দেশের তাবেদার। তারা যেন বোঝে বিজয়ীদেশ উন্নত এক সভ্যতা-তারা নিজেরা আসলেই অনুন্নত জাতি। এবং তাদের উন্নতির জন্য, বিজয়ী জাতির প্রভুত্ব বা অনুকরন মানা দরকার। ভারতের ইতিহাসে এটা আমরা বিশেষ ভাবে দেখেছি। জমিদার, ভারতীয় রাজন্যবর্গ, এবং তার সাথে আমাদের স্বনামধন্য রেনেসাস চরিত্ররা ( যার মধ্যে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ , স্যার সৈয়দ আহমেদ সবাই ছিলেন) বরাবর মনে করতেন, ভারতে বৃটিশ শাসন আর্শীবাদ। অভিশাপ না । এই “তাবেদার” শ্রেনীর নির্মান হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদি শক্তির সব থেকে বড় সফলতা ।
খ্রীষ্ঠান সাম্রাজ্যবাদ গ্রহণ করার আগে, রোম কিভাবে এই সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ ( যে রোমান শাসন হচ্ছে আর্শীবাদ-তা উন্নত সভ্যতার শাসন ) চালাতে সক্ষম হত? কি ছিল তাদের সাম্রাজ্যবাদি নিয়ন্ত্রনের ম্যাজিক গল, গথ, ভিসিগথ, জার্মেনিয়া, চেরোকি ইত্যাদি ইউরোপিয়ান আদিবাসিদের ওপর?
শুধু মিলিটারি দিয়ে এটা সম্ভব না । রোমানরা তা জানত বিলক্ষণ । যেসব আদিবাসি গ্রুপদের ওরা যুদ্ধে হারাত বা যারা রোমের বশ্যতা স্বীকার করত, রোমানরা এক অদ্ভুত “রোমানাইজেশন” প্রথা চালু করে তাদের জন্য। এইসব আদিবাসিদের নেতাদের সন্তানদের দশ বছর বয়সে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যাওয়া হত রোমে । আদিবাসি নেতাদের বাধ্য করা হত তাদের সন্তানদের রোমের অভিজাত মিলিটারি স্কুলে পাঠাতে।
উদ্দেশ্য? যাতে এই সব অভিজাত সন্তানরা তাদের সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রোমান অভিজাত মিলিটারি লিডার হিসাবে বড় হয় । রোমে এদের শিক্ষার অঙ্গ হচ্ছে-সেই তাবেদারি শ্রেনী তৈরী- রোম সভ্যতার সূর্য্য। আর এই অভিজাত সন্তানদল রোমান সভ্যতাকে রক্ষা সৈন্য হিসাবে নিবেদিত প্রাণ। তাদের নিজেদের জাতি হচ্ছে বর্বর । তবে তারা রোমান ! এরপর এরা রোমের সেনাবাহিনীর অঙ্গ হিসাবে যুদ্ধ করে নিজেদের প্রতিভা প্রতিষ্ঠা করার সু্যোগ পেত। রোমান বশ্যতা প্রদর্শনের নিরঙ্কুশ প্রমাণের পর – জন্মস্থানে রোমের গর্ভনর বা সহকারী গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত হত এই আদিবাসি রাজপুত্রের দল । তারা এসে তাদের স্বজাতিকে বোঝাত- রোম মহান-রোমের প্রতিবিশ্বস্ত থাকলে, তাদের উন্নতি। যেভাবে ভারতের রাজন্য এবং মধ্যবিত্ত বর্গ বৃটিশ শাসন নিয়ে বহুদিন আপ্লুত ছিল। আসলে এটাই সাম্রাজ্যবাদের চিরচারিত ট্যাকটিস এবং সব থেকে শক্তিশালী পিলার। বিজিত দেশের লোকেদের মধ্যে একটা অনুগামী শ্রেনীর সৃষ্টি। আমরা এটাই দেখব, এই শ্রেনীর সৃষ্টি ধর্মের মাদকে যত সফল ভাবে সম্ভব-অন্য কোন রাজনৈতিক ফর্মুলাতে তা অসম্ভব!!
কিন্ত নিয়ন্ত্রনের এই পদ্ধতি খুব যে ভাল কাজ করত তা না । উদাহরন জার্মেনিয়া বা জার্মানির আদি আদিবাসী গোষ্ঠি চাট্টিদের বাটাভি বিদ্রোহ (৬৯-৭০ খৃষ্টাব্দ)।
এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে এক “পরিবর্তিত রোমান” গায়াস জুলিয়াস সিভিলিস। যিনি ছিলেন বাটাভি রাজপরিবারের সন্তান । কিন্ত ছোটবেলায় তাকে রোমে মিলিটারী স্কুলে নিয়ে গিয়ে রোমান অভিজাত বানানো হয়। বয়স যখন ত্রিশ, রোমান গর্ভনর মামিয়াস লুপেক্রাসের সহকারি হিসাবে তিনি নিজের জন্মস্থান চাট্টিতে ফিরে আসেন। কিন্ত ফিরে এসে সিভিলিস দেখলেন, রোমান আইন আসলেই তাদের আইনের থেকে অমানবিক। রোমান সৈন্যরা, সমৃদ্ধ চাট্টিদের কাছ থেকে ট্যাক্সের নামে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। চাট্টি আইনে চুরি ডাকাতির জন্য মৃত্যদন্ড ছিল না- রোমানরা শুধু রুটি চুরির জন্য, চাট্টিদের শুলে চড়াত। সিভিলিস বুঝলেন শুধু রোমান চাকচিক্য থাকলেই সভ্য হয় না । চাট্টি আদিবাসিদের আইন, রোমান আইনের থেকে অনেক বেশি মানবিক এবং উন্নত । জার্মেনিয়ার আদিবাসি নেতারা কখনোই বুভুক্ষদের থেকে তাদের শেষ খাবারটা ট্যাক্সের নামে ছিনিয়ে নেয় না ।
জুলিয়াস সিভিলিস রোমের সৈন্যদল ত্যাগ করে চাট্টি বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিলেন। সিভিলিস রোমানদের যুদ্ধ কৌশল জানতেন। ফলে সম্মুখ সমরে না নেমে গেরিলা আক্রমনে মামিয়াস লুপেক্রাসের তিন লিজিয়ন সেনাবাহিনীকে ( প্রায় কুড়ি হাজার সেনা) সম্পূর্ন ধ্বংস করেন। এই মামিয়াস লুপেক্রাস ছিল, তার পালিত পিতার মতন । কিন্ত যিনি সাম্রাজ্যবাদের স্বরূপ একবার বুঝেছেন এবং স্বজাতির দুঃখকে অনুভব করেছেন, তিনি তার পালিত রোমান পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বাধ্য হলেন। জুলিয়াস সিভিলিস আজও জার্মানির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল চরিত্র। জার্মান জাতিয়তাবাদ জুলিয়াস সিভিলিসে মগ্ন ।যিনি জার্মানীকে রোমের কাছ থেকে স্বাধীন করেছিলেন।
সাম্রাজ্যবাদের সব থেকে বড় খেলাটা হচ্ছে কিভাবে বোঝানো যায় বিজিত জাতির সংস্কৃতি, আইন নিম্নমানের। যেমন বাংলাদেশ সহ সব মুসলিম দেশের ইসলামিস্টরা শরিয়া আইন চাইছে নিজেদের দেশে। শরিয়া আইনের সাথে কোরানের বিশেষ সম্পর্ক নেই। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে এই আইনের উৎপত্তি আসলেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন আইনের ধারা থেকে-যার মধ্যে ক্যানানাইট, সিরিয়ান থেকে আরবের ইসলামপূর্ব আইন ও অনেক আছে। অর্থাৎ শরিয়া বলে যা চালানো হচ্ছে তা আসলে মধ্যযুগীয় আরব আইন। কি যুক্তি শরিয়া প্রেমীদের? সেটা এই-বাংলাদেশের আইন হচ্ছে মানুষের তৈরী আইন। আর শরিয়া হচ্ছে আল্লার আইন (!) সুতরাং শরিয়া আইন শ্রেষ্ঠতর -এবং তা বাংলাদেশ ধর্ষনপূর্বক চালাতেই হবে!!!
শুধু কি তাই! অধিকাংশ ভারতীয় এবং বাংলাদেশী মুসলিমদের ধারনা, ভারতে মুসলিম আক্রমনের আগে এই দেশ ছিল বর্বর !! এই ধরনের হাস্যকর ধারনা প্রতিটি বিজয়ী সংস্কৃতির মধ্যেই থাকে। বাস্তব সত্য হচ্ছে বিজয়ী জাতিগুলি ছিল বর্বর -এবং বিজিতরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেক বেশি মানবিক উন্নত সভ্যতার অধিকারি ছিল। এটা রোম, স্পেইন, ইসলাম থেকে আর্য্য-সব বিজয়ীদের ইতিহাসে সত্য। এই সামরিক শক্তিগুলি আসলেই বর্বর লুটেরা শক্তি ছাড়া কিছু ছিল না । এরা উন্নততর সভ্যতাগুলিকে ধ্বংস করেছে -এবং বিজিতদের বর্বর আখ্যা দিয়েছে।
প্রিয় পাঠক এবার একবার ভাবুন। ভাবুন এই শরিয়া আইন, যা আসলেই আরবীয় আইন ছাড়া কিছু না -তা যদি আরবের লোকেরা বাংলাদেশের ওপর অস্ত্রের জোরে ” আরবের আইন ” বলে বলবৎ করত, তাহলে ফলটা কি দাঁড়াত? বাংলাভাষি প্রেমী মানুষরা নিসন্দেহেই আরবের আইন শুনলে হা রে রে করে তেড়ে এদের বিদায় করতেন!!
কিন্ত সেই আরবের আইনকে আল্লার আইন বলেতেই ধর্মভীরু মুসলিমদের মনে ঢুকছে ভয়। তারা ভাবছে, শরিয়া আইনে সাত পাঁচ ব্যাঙ ঘোঁড়া যা খুশি থাকুক না কেন তার বিরুদ্ধে যাওয়া হচ্ছে ধর্ম বিরুদ্ধ কাজ। কারন তা আল্লার আইন-আল্লার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া!!
অর্থাৎ নিজেদের আইনটাকে যদি “রোমান আইন” বলে না চালিয়ে, মামিয়াস লুপেক্রাস ঈশ্বরের আইন বলে চালাত- এই ধরনের আদিবাসি বিদ্রোহ হত না। কিন্ত শুধু ঈশ্বরের আইন বললেই হবে না । সেই ঈশ্বর আদিবাসিদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ও হতে হবে। শরিয়া আইন কৃষ্ণের আইন বলে চালালে হবে না-তা আল্লার আইন বলেই চালাতে হবে!! কারন বাংলাদেশের মানুষ আল্লাকেই একমাত্র আসল ঈশ্বর বলে মানে। নইলে কে ঔ মধ্যযুগীয় আরব আইনের হেফাজত করবে?
সুতরাং কনস্টানস্টাইন প্রথম শ্লোগান তুললেন এক সাম্রাজ্য-এক ঈশ্বর । সে হচ্ছে খ্রীষ্ঠান ঈশ্বর। হ্যা সবাই যদি খ্রীষ্ঠান ঈশ্বরকে একমাত্র সত্যকারের ঈশ্বর বলে মানে, তাহলে খ্রীষ্ঠান ঈশ্বরের আইনের নামে, ইউরোপের সব বিদ্রোহী আদিবাসিদের মধ্যে রোমান আইনের প্রচলন সম্ভব। রোমের আইন বললে কেও মানবে না । রোমের আইন লোকে তখন ই মানে যখন রোমান সেনাদের তারা ভয় পায়। কিন্ত রোমের তখন ক্ষয়িষ্ণু সেনাবল। শুধু সেনাবলের ভয়ে, আর রোমান সাম্রাজ্য টেকানো যাবে না এটা বুঝতেন কনস্টানস্টাইন। ফলে দরকার হল একেশ্বরবাদের ঈশ্বর বা আল্লার ভয়। ঈশ্বর বা আল্লা নামক সুপার মাফিয়ার ভয় টেকাতে কোন লজিস্টিক লাগে না । বিশ্বাসের ভাইরাসের মতন এই ভয় মানুষের মনে, সমাজের মনে একবার গেঁথে গেলেই হল। ব্যাস! এই মহান ঈশ্বর বা আল্লার নামে তখন নিজেদের আইন বলবৎ করতে সক্ষম হয় বিজয়ী জাতি। কনস্টানটাইন ঠিক সেটাই করলেন। রোমান সংস্কৃতি এবং আইন, আস্তে আস্তে খ্রীষ্ঠান আইনে রূপান্তরিত হল । খ্রীষ্ঠান সংস্কৃতি বলতে আজ আমরা যা বুঝি বা দেখি, তা আসলে রোমান সংস্কৃতি।
কিন্ত খ্রীষ্ঠান ধর্মকে বা খ্রীষ্ঠান ঈশ্বরকে কেন এক মাত্র সত্য ঈশ্বর হিসাবে চালাতে চাইলেন কনস্টানস্টাইন? সেটা কি খ্রীষ্ঠধর্ম প্রীতি?
কনস্টাইনের মা হেলেনা ছিলেন খ্রীষ্ঠান-কিন্ত খ্রীষ্ঠান ধর্মের আসল প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট কনস্টানটাইন মোটেও ধার্মিক টাইপের লোক ছিলেন না। ছিলেন বুদ্ধিমান রাজনীতিবিদ। রোমের অধিকাংশ লোক তখন ও প্যাগান। তাদের চটানোর উদ্দেশ্য কোন কালেই তার ছিল না। সম্রাটের রোমের সেনেটে যারা ছিল, তারা প্রায় সবাই প্যাগান।
তাহলে কেন গরীবদরদি ধর্মকে সাম্রাজ্যবাদের ধর্মে রুপান্তরিত করন?
সামাজ্যবাদের ধর্মকে গরীব দরদি হতেই হবে। কারন অধিকাংশ লোকের মধ্যে এই ধর্মের গ্রহণযোগ্যতা না এলে তারা এই ধর্মর ঈশ্বরকে সত্যিকারের ঈশ্বর বলে মানবে কেন? আমার ঈশ্বর সত্য, তোমার মিথ্যে-এটাই ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদের আসল চাবিকাঠি।
প্যাগান ধর্ম কোন কালেই আর্থ রাজনৈতিক না । হিন্দু জমিদাররা পূজো করে। গরীব প্রজারা দুদিন আনন্দ করে। আনন্দ আমোদ আহ্লাদ হচ্ছে প্যাগান ধর্ম। রোমেও প্যাগান ধর্ম বলতে সেই আনন্দ স্ফূর্তি। আর উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য বলি দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। তার মধ্যে সেই “সার্বজনীন” আবেদন কোথায় যা সবার , সব দেশের সব শ্রেনীর গরীব মানুষের নিজের ধর্ম হয়ে উঠবে? যার জন্য তারা, সেই ধর্মের ঈশ্বরকে সত্যকারের ঈশ্বর বলে মানবে? দেবী দূর্গাকে আদিবাসিদের মধ্যে দেবতা বলে চালানো কঠিন-কিন্ত যিশুকে সত্যকারের ঈশ্বরপুত্র বলে আদিবাসিদের মধ্যে চালানো অনেক সহজ। কারন খ্রীষ্ঠান মিথগুলি দাঁড়িয়ে আছে কিভাবে এই ঈশ্বরপুত্র গরীবদের, নির্যাতিতদের সেবা করেছেন-অত্যাচার থেকে বাঁচাতে। জমিদারদের বিলাস ব্যসনের বৈভবের দেবী দূর্গার মধ্যে কি খুঁজে পাবে আদিবাসিরা যাতে তারা দূর্গাপূজাতে অনুপ্রাণিত হবে? রোমেও সেকালে সমস্যা ছিল এক। রোমাণ প্যাগান দেবতারা রোমান অভিজাতদের আমোদ স্ফূর্তির দেবতা -তারা কোনকালে ইউরোপে আদিবাসিদের মধ্যে জনপ্রিয় হয় নি।
সেই জন্য খ্রীষ্ঠান এবং ইসলামের নির্মানে একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান- “আমরা শত্রু দ্বারা নির্যাতিত অপমানিত” ।
গোটা খ্রীষ্ঠান ধর্মটা দাঁড়িয়ে আছে সেই সেন্স অব ভিক্টিমাইজেশনের ওপর । এটি হচ্ছে ধর্মীয় একতার মূল নির্যাস। আমরা ভাল মানুষ, আমরা নির্দোষ, আমাদের শত্রুরা আমাদের ওপর নির্যাতন করে। ফলে এক সত্য ঈশ্বরের তলে এক হও! যীশুর ক্রসবিদ্ধ হওয়া থেকে পুরাতন টেস্টামেন্টের গল্পের সেই এক সুর-আমাদের ধর্মের লোকেদের ওপর অত্যাচার এবং অবিচার!!
আজকে গোটা বিশ্ব জুরে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের মূল নির্যাস ও এটাই। চেচেনিয়া, প্যালেস্টাইন, কাশ্মিরে মুসলিমদের পেটানো হচ্ছে-তাই সমস্ত ইসলামি ভাতৃত্ববোধ উছলে পড়ছে। অথচ এই কাষ্মীরেই, কাশ্মীরি পন্ডিতদের সম্পূর্ন ভাবে তাড়িয়েছে মুসলিমরা। বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের উচ্ছেদ ইতিহাসের ধারাবাহিক পক্রিয়া। পাকিস্তানে মাত্র ২% হিন্দু টিকে আছে-যা দেশভাগের সময় ছিল ২২%।
এসব মডারেট মুসলিমদের ও চোখে পড়ে না -চোখে পড়ে হাজার হাজার মাইল দূরে অন্যদেশের মুসলিমদের দুর্ভোগ। এটাই আসল শক্তি সেই সেন্স অব ভিক্টিমাইজেশনের। যা সব থেকে বেশি কাজে লাগিয়েছে খ্রীষ্ঠানরা।
কনস্টানস্টাইন যখন রোমের সম্রাট হলেন -বিশাল রোম সম্রাজ্য টিকিয়ে রাখায় মহাদায়। চারিদিকে ইউরোপের আদিবাসিরা বিদ্রোহ করছে পাইকেরি হারে। তারা স্বাধীনতার যুদ্ধে অবতীর্ন। সুতরাং রোম সেরা বলে সেই সাম্রাজ্য টেকানোর দিন শেষ। উনি দেখলেন খ্রীষ্ঠান ধর্মে সেন্স অব ভিক্টিমাইজেশন কাজে লাগিয়ে তৈরী হয় সেই ভাতৃত্ববোধ যা দিয়ে একটি সাম্রাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ রাখা যায়। আদিবাসিদের বশে আনা সম্ভব।
শুধু ইসলাম বা খ্রীষ্ঠানরা কেন? আজকের ভারতের হিন্দুত্ববাদিরাও সেই “সেন্স অব ভিক্তিমাইজেশন” কেই কাজে লাগাচ্ছে। ভারতে হিন্দুত্ববাদিদের প্রচারের মূল হাতিয়ার বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার, পাকিস্তানে হিন্দু মেয়েদের বলাৎকার আর কাশ্মীরে পন্ডিত বিতাড়ন। ঘরের পাশের মুসলিমটি যে আর্থ সামাজিক কারনে আরো বাজে অবস্থায় আছে-সে ব্যাপারে তার হুঁস নেই। তাহলে সেন্স অব ভিক্তিমাইজেশন বা হিন্দু ভাতৃত্ববোধ কাজ করবে না । আর এই ধর্মীয় ভাতৃত্ববোধ হচ্ছে ধর্মীয় রাজনীতির মূল শক্তি-যার উৎপত্তি খ্রীষ্ঠান ধর্ম থেকে। ইসলামে সেই ভাতৃত্ববোধ আর সেন্স অব ভিক্টিমাইজেশনের আর্টটা আরো উন্নত, আরো বেশী রাজনৈতিক। এই ব্যপারে লিখছি পরের পর্বে।
আগের পর্বগুলি ঃ
[৩] মহম্মদ-রূপকথা না আসল চরিত্র?
[২] রোমান এবং আদি ভারতের রাজনীতি
[১] পৃথিবীর প্রথম গণতন্ত্র গ্রীসের রাজনীতি
অসাধারণ!
আর কোন শব্দ এই মুহুর্তে মাথায় আসছে না।
আমাকে নতুন চিন্তার খোরাক দিলেন।
অনেক ধন্যবাদ।
ঐতিহাসিক ভাবে সিদ্ধ তত্ত্বদিয়েই আসলে যাচাই করতে হবে ঘটবার পরম্পরা। এই ক্ষেত্রে বিপ্লবপাল অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন এই পর্বে। যীশু খৃষ্টের আবির্ভাব যে সম্পূর্ন কাল্পনিক বা উপাখ্যান, বা এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই, এর পেছনের নির্মোহ এবং নিভর্রযোগ্য কোন ঐতিহাসিক অনুসন্ধান কি আছে?
বড়দিন উপলক্ষে এ লেখাটি স্টিকি করে দেয়া হল। ইংরেজি ব্লগে আরেকটি লেখা : Did a historical Jesus exist?, সেটিও এ সুযোগে পাঠকেরা পড়তে পারেন।
— মডারেটর।
ফার্টিলিটি কাল্ট উহ্য রেখে প্যাগান রিলিজিয়ন নিয়ে বললে অতিসরলীকরণ হয়। প্যাগান ধর্মকে রিপ্লেস করার ক্ষেত্রে অর্গানাইজড রিলিজিয়নের সবচেয়ে বড়ো বাধা মনে হয় ফার্টিলিটি কাল্টগুলি। সেই অ্যাস্পেক্টটা লেখক মাথায় রাখলে লেখাটা আরও সমৃদ্ধ হবে।
@সোমনাথ,
কোন ধর্ম বা সংস্কৃতির বিবর্তনের পেছনে, রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেসের ভূমিকাই সর্বাধিক। এই যে বাংলাদেশে হিন্দু ধর্ম গেল গেল রব-এর পেছনে কজন হিন্দু ভারতে আসছে বনাম হিন্দুদের ছেলে মেয়ে হওয়ার সংখ্যা কমা – এই দুটো শক্তরই হাত আছে।
এটা ঠিক রোমান প্যাগান সংস্কৃতিতে অনেক উৎসব ছিল শুধু মাত্র যৌনতার- যার মূল উদ্দেশ্য ছিল রিপ্রোডাকশন। ভারতীয় প্যাগান সংস্কৃতিও ব্যতিক্রম কিছু না। কিন্ত তবুও প্যাগানিজম হেরে গেছে সর্বত্র কারন তা মিলিটারী শক্তির জন্ম দিতে পারে নি। কোন ধর্ম বা সংস্কৃতি যদি শক্তিশালী মিলিটারী শক্তির জন্ম দিতে ব্য্ররথ হয়, সেই শক্তি ইতিহাসে বেশীদিন টিকতে পারে না।
দাদা লেখা গুলো খুব যুক্তি সংগত। এর পরের লেখা গুলোর অপেক্ষায় রইলাম
বিপ্লবদা, নিচের লিঙ্কের লেখাগুলো কতটা ভরসা করা যায়??
http://www.christianorigins.com/islamrefs.html
@yousuf,
এই লিংকগুলো আমি দেখে নিয়েই লিখেছি। এই লিংকগুলোতে এটাই প্রমান হয় মহম্মদ নামে আরবের এক নেতা ছিল-কিন্ত সে কি করেছে, তার মুখ দিয়ে কোরান বেড়িয়েছে, এগুলো, ৭০০ সালের আগে কোন লিংকে নেই। এসেছে পরে। এই লিংকগুলো, আমি তৃতীয় পর্বে যা লিখেছি, তার বক্তব্যকেই সমর্থন করে।
বিপ্লবদা,
নিচের লিঙ্কটা একবার দেখবেন…
http://www.rnw.nl/english/article/evidence-says-muhammad-existed
@yousuf,
আমি এই লিংকটা লেখার আগেই দেখে নিয়েছি। যে অধ্যাপক বলছেন মহম্মদ ছিল, উনি মিশরের প্যাপিরাস ঘেঁটে বলছেন, ওই নামে আরবের নেতা ছিল। কিন্ত সেখানে মহম্মদের জীবনী নিয়ে কি পাওয়া যায়? বা কি পাওয়া যেতে পারে?
ইজিপ্ট বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের হাতে ছিল-৬৩৪ সাল থেকে সেখানে ইসলামিক আক্ত্রমন শুরু হয়। মহম্মদের মৃত্যুর ঠিক পরপর।
যতক্ষন না উনি তার গবেষনা কোথাও প্রকাশ না করেছেন এবং বিদ্বতজন মেনে না নিয়েছে, এই নিয়ে লেখা অর্থহীন। উনি নিজেই বলছেন, পুঁথিগুলির অবস্থা এত বাজে, তার থেকে মানে বার করা কঠিন কাজ।
মহম্মদ বলে আরবের একজন নেতা ছিল, এটা নিয়ে কেও দ্বিমত করবে না-দ্বিমত করবে, মহম্মদের যে জীবনী মুসলমানরা জানে সেটা নেহাত পৌরানিক চরিত্র।
দাদা আপনার লেখাটি আমার খুবই পছন্দ হয়েছে।
তবে হিন্দু বলা হত সিন্ধু নদের তীরের সভ্যতার মানুষদের- এইটা একটু সংযোগ করে নেবেন আপনার কমেন্ট এ।
আর আপনার কি মনে হয়? খ্রীষ্ট ধর্মের ‘রেণেসাঁ’ আসতে তো ১৪০০ শতক লেগে গেছিল,তো ইসলাম এর রেণেসাঁ আসতে আর কতদিন লাগবে বলে আপনার মনে হয়??????
@চিরন্তন,
পার্সী ভাষায় বলত হিন্দু, আর গ্রীক ভাষায় সিন্ধু!
ধন্যবাদ উৎসাহ দেওয়ার জন্য।
@বিপ্লব পাল, দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরটা তো দিলে না দাদা………… :-s
@চিরন্তন,
মুসলমানদের মধ্যে রেনেসাস ত সেই অষ্ঠম শতাব্দিতেই এসেছিল-কিন্ত ইমাম গজ্জালি তা ধ্বংস করেন।
মুসলমান বিশ্বে ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক পক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে, এটা আসবে। আগামি দশকেই আসবে।
@বিপ্লব পাল,
নতুন জিনিস জানলাম আজকে।অথচ এই মুসলমানরা তাদের অতীত ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করে, আর এই গাজ্জালীকেই বড়পীর মানে আর তার দোষ চাপিয়ে দেয় ইহুদীদের ঘাড়ে। কি বিচিত্র এই গোষ্ঠী!
আচ্ছা এই ইমাম গাজ্জালী যে মুসলিমদের রেনেসাস ধ্বংস করেছিল এর কি কোন নির্ভরযোগ্য প্রমান আছে? থাকলে দেবেন দয়া করে।এটা আমার কাজে লাগতে পারে( আশেপাশে আমাকে কেউ প্রশ্ন করলে উত্তর হিসাবে)।
@অর্ফিউস,
এই লিংকে ডিটেলসে আছে। এই ইমাম গ্রীক দর্শন, গণিত এবং বিজ্ঞানের চর্চা হারাম এবং ইসলামের জন্য ক্ষতিকর বলে ফতেয়া দেন
http://www.suhaibwebb.com/islam-studies/imam-al-ghazali-on-studying-science/
কারনটাও উনি বলে গেছেন। যে বিজ্ঞান এবং দর্শনের চর্চা যারা করে, তাদের ইসলামের প্রতি ইমান কম হয়!! তারা ইসলামের বিরোধি হয়ে উঠতে পারে -উনি ছিলেন সে কালের জোকার নায়েক। এই জোকার নায়েকের মতন চরিত্ররা হচ্ছে ধর্মপ্রান মুসলিম সমাজের হিরো।
এই ধরনের ভুলভাল লোক হচ্ছে ইসলামিক সমাজের হিরো-ফলে মুসলিমদের অবস্থা জ্ঞান বিজ্ঞানের ব্যপারে এত গিয়ে গিয়েও পিছিয়ে গেল কেন বুঝতেই পারছেন।
এই ইমাম আল গজ্জালি এতটাই ক্ষতি করয়েছে ইসলামিক সভ্যতার তার সব থেকে বেশি ভুক্তভোগি মুসলিমরা নিজে। আর তারাই একে মহান বলে মানে।
@বিপ্লব পাল,
আমাদের দেশে ইদানিং যারা হিরো হয়েছেন তাদের চাইতে নায়েক সাহেব তো লক্ষ্য গুনে ভাল। আমাদের দেশে হাল আমলে জনপ্রিয়তার লাইম লাইটে আসা একজন শীর্ষ ব্যাক্তিত্বের আধুনিক শিক্ষা সম্পর্কে মূল্যায়ন হল “যত পাশ তত নাশ”……
@আদিল মাহমুদ,
না বোধ হয় আদিল ভাই। জোকার নায়েক সাহেবের পাবলিক প্রপার্টি তত্বটা শাফি হুজুরের তেঁতুল তত্বের চেয়ে কোনদিন দিয়ে ভাল বলেন? 🙂
@বিপ্লব পাল, ধন্যবাদ আপনাকে লিংকটা দেবার জন্য।
ঠিক, আর বর্তমানে জোকার নায়েক। কিন্তু মুসলিমরা যে কেন এটা বুঝে না কে জানে!মগজ ধোলাই কি এতটাই মারাত্বক হতে পারে??? কি জানি বুঝি না কিছুই আজকাল।
আপনার যুক্তিনিষ্ঠ বাক্যগুলোর বাস্তব প্রকাশ হওয়া দরকার। তবে তার জন্য আপনার ওপেন গ্যালারিতে সমবেত হওয়া সময়ের দাবী বলে মনে করছি। শুধু ব্লগিং করে নিরাপদ পরিধিতে বিশ্বাস ছড়িয়ে দেয়াটা গোড়ামীর শামিল। মুক্তমন নিয়ে সমকালীন জনপ্রিয় বিতার্কিকদেরকে ধরাশায়ী করতে পারলে মানুষ ব্রেইন ওয়াশ্ড হবে অতি তাড়াতাড়ি। তাছাড়া আপনার বিশ্বাস ও যুক্তি অতটা বেগবান হবে বলে মনে হয় না। ভেবে দেখবেন দাদা।
মুক্তমনায় আমার প্রথম মন্তব্য, জানিনা গৃহীত হবে কিনা। বিপ্লব দার কিছু লেখার ও চিন্তাচেতনার সাথে তীব্র ভিন্নমত পোষণ করলেও আজকের লেখার জন্য Hats off।চালিয়ে যান গুরু।
আপনার কি খ্রীষ্ঠধর্ম সম্পর্কে খুব ভাল ধারনা আছে? মনে হয় না। থাকলে আপনি কিভাবে এই সব লিখতে পারতেন না।মূলধারার খ্রিষ্টানরা কোনদিন দাবী করেনি যে খ্রিষ্ট ঘর্ম যীশু প্রচার করেছিলেন।
যীশু খ্রিষ্ট( গড দা হোলি সান) তিনি এসেছিলেন মানুষের আদি পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য ক্রুশবিদ্ধ হতে।
গুগল করেন পেয়ে যাবেন খ্রিষ্টান ওয়েবসাইট গুলোতে।
তিনি কোন ধর্ম প্রচার করেন নি বা করতে আসেন নি বরং মানবজাতি কে আদি পাপ থেকে মুক্ত করতে এসেছিলেন, বরং তাঁর কর্ম কান্ডগুলিকেই পরে তার শিষ্যরা লিপিবদ্ধ করে রাখে।গস্পেল অফ ক্রাইস্ট বলে কিছু আছে নাকি?আর থাকলেও তা নিউ কভেনান্টে নেই।
গস্পেল পরবর্তী নতুন নিয়মের বাকি অংশ যীশুর শিষ্যদের কর্মকান্ডের বিবরন, বেশিরভাগই পলের লেখা।
খুবই বিশ্বাসযোগ্য কথা, কারনটা হল যিশুর ভার্জিন বার্থ। পিতার তথার পিতার শুক্রানুর সাহায্য ছাড়া মানুষের জন্ম হতেই পারে না। কাজেই যিশু বা ইসার জন্মকে সহজেই রুপকথা বলা যায়। কিন্তু বাকিদের বেলায়( মুহাম্মদ, বুদ্ধ ইত্যাদি) একটু হিসাব করে কথা বলাই উচিত।
@অর্ফিউস,
সাধারন খ্রীষ্ঠানদের মধ্যে সার্ভে করে দেখেছেন, তাদের কজন আপনার সাথে সহমত হবে?
খ্রীশটান পন্ডিতরা এটা বহুদিন থেকেই জানেন-কিন্ত জনসাধারন ত সেভাবে জানে না।
যেসব স্বনামধন্য ঐতিহাসকরা মহম্মদ নিয়ে কাজ করেছেন, আমি তাদের কথাই লিখেছি। আমি ত ছাই প্রযুক্তিবিদ। আমি এত কিছু জানব কি করে :-Y
তাহলে আপনার বক্তব্য হচ্ছে এইসব ঐতিহাসিকরা সারাজীবন নিয়ে কাজ করে হিসাব করে কথা বলেন নি!! মুসলমানরা মহম্মদ নিয়ে যা জানে সেটাই লেখা উচিত ছিল :clap
আর বুদ্ধ মহম্মদের ৮০০ বছর আগে জন্মালেও তার অস্তিত্ব নিয়ে সেভাবে কোন প্রাচ্যবাদি প্রশ্ন তোলেন নি। কারন প্রচুর পুরাতাত্ত্বিক প্রমান আছে, আর বুদ্ধে শিষয়রা তার বানী “লিখে” গিয়েছিল। তবে কেও কেও আছে যারা মনে করেন” বুদ্ধ” উপাধি ছিল-ভারতের কোন নাস্তিক ধর্মের সেক্ট এর।
@বিপ্লব পাল,
সেটা আমি কিভাবে করব? দুনিয়াতে ২ বিলিওন খ্রিষ্টান আছে।আর বাংলাদেশে ৫ লাখও নেই। আমার এলাকাতে কিছু সংখ্যক আছে, যারা কেউই ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামায় না!
না আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন।মুহাম্মদ থাকুক বা না থাকুক তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।
তবে উইকিতে যে লিঙ্কের রেফারেন্স গুলো আছে, এ সবই ইংরেজিতে লেখা, কাজেই বাংলাদেশের উদারপন্থী মুসলিমরা এগুলো নিয়ে যাচাই বাছাই করতে আগ্রহী নাও হতে পারে।
তাই এইগুলার বঙ্গানুবাদ দরকার। না হলে সনাতন ধারনা মনে হয় না মুসলিমদের ভিতর থেকে এক বিন্দুও সরে যাবে। বাংলায় হলে হয়ত অনেকেই পড়ত।
বুদ্ধ খ্রিষ্টের জন্মের ৬০০ বছর আগে মানে মুহাম্মদের জন্মের ১১০০ বছর আগে জন্মেছিলেন না? সঠিক মনে নেই।অবশ্য মুহাম্মদ যদি কেউ নাই থাকে তবে তার জন্ম কবে হয়েছিল তা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা থাকা উচিত না।
@অর্ফিউস,
অধিকাংশ মুসলিমদের মনের দরজা জানালা বন্ধ। সেখানে খোলা বসন্তের বাতাস ঢোকার ফাঁক নেই-সে বাতাস ইংরেজি থেকেই আসুক বা বাংলা ভাষা থেকেই আসুক। একমাত্র ভবিষয়তের আর্থ সামাজিক বাস্তবতা-যে বুদ্ধিমান ও যুক্তিবাদি না হলে, তারা নতুন পৃথিবীতে প্রতিযোগিতায়, চাকরি, ব্যবসা বানিজ্যে পিছিয়ে পড়বে- সেই বাধ্যবাধকতাই পরিবর্তন আনবে। যা ভারতে কিছুটা এসেছে।
না, বুদ্ধের জন্ম ৫৬৩ থেকে ৪৮৭ খীঃপূ কোন এক সময়ে হয়েছে। অত নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যায় না।
@বিপ্লব পাল, আচ্ছা একটা কথা, হিন্দুরা বুদ্ধদেব কে ৯ম অবতার হিসাবে মনে করে না?উইকি তে মনে হয় ২ রকম লেখা আছে।বলরাম কে ৮ম ধরলে কৃষ্ণ কে নবম ধরা হয়।আর কৃষ্ণ কে ৮ম ধরলে তবেই বুদ্ধ কে নবম। অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেল হয়ত। তবু জানলে দয়া করে জানাবেন।এই জিনিস নিয়ে একটু ধন্ধে আছি আমি।
@অর্ফিউস,
হিন্দু ধর্ম বলে কিছু নেই। “হিন্দু” শব্দটা সংস্কৃতে নেই, কোন প্রাচীন ভারতীয় ভাষাতেও নেই। হিন্দু শব্দটা বহুপ্রাচীন পারসিক শব্দ। মুসলমানরা যখন ভারতে আসে, তখন ভারতে অনেক ধর্ম- তাদের সবাইকে মুসলমানরা হিন্দু ধর্মের লোক বলে ডাকত।
ধর্ম মানেই রূপকথা এবং মিথ। হিন্দুদের মিথে সংকরন পুরান-যা মূলত খৃঃপূঃ ৪০০ থেকে ৬০০ খ্রীষ্ঠাব্দে হয়েছে। অর্থাৎ বুদ্ধের জন্মের পরে, হিন্দু পুরান গুলো মূলত লেখা হয়েছে। সুতরাং সেই সব পুরানে বুদ্ধের থাকার সম্ভাবনাই বেশী-এবং বুদ্ধ বিষ্ণুর নবম অবতার হিসাবে অনেক পুরানেই উল্লিখিত। সেই পুরানগুলি হচ্ছে [ উকি থেকে]
Harivamsha (1.41)
Vishnu Purana (3.18)
Bhagavata Purana (1.3.24, 2.7.37, 11.4.23) [4]
Garuda Purana (1.1, 2.30.37, 3.15.26)[8]
Agni Purana (16)
Narada Purana (2.72)
Linga Purana (2.71)
Padma Purana (3.252) etc. (Dhere Ramchandra Chintaman) [9]
@বিপ্লব পাল, ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক কিছু জানতে পারলাম এই মন্তব্যটি থেকে।আচ্ছা আপনার পরের পর্বে কি জরথ্রুস্থ ধর্ম সম্পর্কে কিছু আসবে?
এই ধর্মটি সম্পর্কে আমার জানার খুব ইচ্ছা, যদিও বাংলাতে ভাল এবং নির্ভরযোগ্য কোন লেখা পাই নি।প্রাক জরথ্রুস্থ ধর্ম এবং জরথ্রুস্থ ধর্ম সম্পর্কে একটা লেখা পাবো আপনার কাছ থেকে এই আশা রাখছি।
আরেকটা কথা ঋগ্বেদ রচনার সঠিক সময় কোনটি?খ্রিষ্ট পুর্ব ১৫০০ সাল নাকি তারো পরে?
আমি এতদিন জেনে এসেছি যে আর্যরা ভারতে বহিরাগত কিন্তু আজকাল মাঝে মাঝে কিছু জায়গাতে পড়ি যে সিন্ধু সভ্যতাও নাকি আর্য সভ্যতা ছিল। এইখানে দেখেন কয়েকটি অধ্যায়ে ভাগ করে লেখা আছে।তাদের যুক্তিগুলও ফেলে দেয়ার মত নয় কিন্তু।
@অর্ফিউস,
হ্যা, পরে লেখার ইচ্ছা আছে। তবে আপাতত এই সিরিজ রাজনীতির ওপরে। কিন্ত আমাদের রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব এত বেশী, ধর্মীয় রাজনীতির ধারাবাহিক ইতিহাস না বুঝলে, এখনকার ধর্মীয় রাজনীতি বোঝা অসম্ভব। ফলে রাজনীতি নিয়ে লিখতে গিয়ে ধর্মের কাদায় আটকে আছে লেখা। কারন আমাদের রাজনীতিও ধর্মের কাদায় আটকে। ফলে রাজনীতি নিয়ে লেখা আর ধর্ম থেকে বেড়োবে কি করে?
ঋকবেদ প্রায় ২০০০ বছর ধরে লেখা হয়েছে। ঋকবেদ রচনার শুরু ৩০০০ খৃঃ পূ। আর এই গ্রন্থের শেষ স্তোত্রের সংযোজন সম্ভবত ১০০০ খৃঃপূঃ। প্রথম দিকরা স্তোত্রগুলি পার্বত্য এলাকার উপজাতিদের-খুব সম্ভবত সেন্ত্রাল এশিয়ার। পরের দিকের স্তোত্রগুলি নদীমাতৃক কৃষি সভ্যতার-যার জন্ম সিন্ধুনদের ধারে।
এগুলো সব হিন্দুত্ববাদি ঐতিহাসিকদের যুক্তি-যার মধ্যে ঐতিহাসিক প্রমানের অভাব আছে। ভারতীয়দের জেনেটিক গঠনে দুই ধরনের মিক্স আছে-একটি ককেশিয়ান, যা ইউরোপের সাদা অধিবাসীদের-অন্যটি আমাদের আদিবাসীদের যাদের সাথে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের আদিআসিদের জেনেটিক মিঊটেশন গঠনে মিল দেখা যায়।
এই নিয়ে অনেক গবেষনা আছে-ভারতীয়দের জেনেটিক পুলে ককেশিয়ান মিউটেশন এলো কোথা থেকে? সম্প্রতি একটি গবেষনাও তাই বলছে
http://www.livescience.com/38751-genetic-study-reveals-caste-system-origins.html
ল্যাটিন এবং সংস্কৃত ভাষার মিল ই বা এল কি করে?
@বিপ্লব পাল,
অনেক ধন্যবাদ। আমি লেখাটির অপেক্ষায় রইলাম। 🙂
ঠিক বলেছেন। এইটাই সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয়, বিশেষ করে বাংলাদেশে।ভারতে ব্যাপার পুরাটা জানা নেই তবে আশা করি যে সেটা বাংলাদেশের থেকে অনেক অনেক ভালই হবে।
ধন্যবাদ। আপনার দেয়া লিংকটা পড়ে দেখব। আসলে এই সব ধর্মীয় বাদী রাই ( যে ধর্মই হোক না কেন) সব কিছু তালগোল পাকিয়ে মানুষদের হয়ত বিভ্রান্ত করার তালে থাকে।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য(এবং অবশ্যই লেখাটার জন্য)। ভাল থাকবেন
ভাল লিখেছেন বিপ্লব পাল।তবে একটা কথা বলতে চাই গত পর্বে আপনি যে মুহাম্মদের ঐতিহাসিক প্রমান নিয়ে উইকি লিঙ্কটা দিলেন সেটা কি আসলেই নির্ভর যোগ্য?আমি নিজেই উইকি তে বাংলাদেশের আর্মী নিয়ে ২ ধরনের লেখা পেয়েছি।
যাক ধরেই নিলাম যে মুহাম্মদ বলে কেউ ছিল না।তবে বদর, অহুদ খন্দক এইসব যুদ্ধ কার নেতৃত্বে হয়েছিল?
@অর্ফিউস,
উকিতে এই প্রবন্ধে http://en.wikipedia.org/wiki/Historicity_of_Muhammad
৪৪টা রেফারেন্স এবং আরো ১০ টি বই এর নাম আছে। তাছারা আপনি ইসলাম নিয়ে যেসব প্রাচ্যবিদ গবেষনা করেছেন, তাদের লেখা, গবেষনা দেখুন। তাহলেই দুধ থেকে জল আলাদা হবে।
যুদ্ধগুলো যে হয়েছিল-সেটাই বা জানলেন কি করে? উৎস ত সেই হাদিস বা কোরান বা সিরা। আমি ত লিখলাম এই সব ওরাল বা মৌখিক ইতিহাস অধিকাংশ প্রাচ্যবিদ ইতিহাস বলে মনে করেন না। রোমানরা ইউরোপে প্রায় শখানেকের বেশী যুদ্ধ করেছে। সেই সব যুদ্ধ শুধু রোমান ঐতিহাসিকরা লিখেই যান নি-প্রত্নতাত্ত্বিকরা পরে খনন কার্য্য করে যুদ্ধভূমি থেকে অসংখ্য মৃত্ কংকাল, যুদ্ধাস্ত্র আবিস্কার করেছে। এই ভাবে তারা যুদ্ধের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে।
ঝুলি থেকে বেড়াল বেড়োনোর ভয়ে সৌদি আরব, খনন কার্য করতে হয় না। ফলে বদরের যুদ্ধ যেখানে হয়েছিল, সেখানে খনন করে যে কংকাল বা বাতিল অস্ত্র উদ্ধার করে আসল ইতিহাস জানা যাবে, তার উপায় নেই। আর নেই যখন তা নেই, তখন বদর বা আহুদ খন্দকের যুদ্ধে কি হয়েছিল, কে নেতৃত্ব দিয়েছিল এসব নিয়ে জানা উপায় নেই। সৌদি আরব ভয়ে সেসব দরজা বা জানালা বন্ধ করে দিয়েছে। সুতরাং মহম্মদ বা ইসলামের শুরুর ইতিহাস নিয়ে আপনি বা সমগ্র সমাজ যা জানে, তা মহাভারতের মতন আরেক রূপকথা। সৌদি খনন কার্য্য চালাতে না দিলে, সত্য জানার উপায় নেই।
@বিপ্লব পাল,
এটা অবশ্য ঠিকই বলেছেন। মুহাম্মদের কবরে নাকি আজো লাশ অবিকৃত আছে। তাই ধরেই নেয়া যায় যে এটা গাঁজাখুরি গল্প কারন ১৪০০ বছর কারো লাশ অবিকৃত থাকতে পারে না।
আর মুহাম্মদের কোন ছবিও নেই। কেউ মুহাম্মদ কে নিয়ে ছবি করলেই ( মন্দ হোক বা ভাল) মুসলিম রা তেড়ে আসে।এইসব অবশ্য সন্দেহ জনক।
ঝুলি থেকে বেড়াল বেড়োনোর ভয়ে সৌদি আরব, খনন কার্য করতে হয় না। ফলে বদরের যুদ্ধ যেখানে হয়েছিল, সেখানে খনন করে যে কংকাল বা বাতিল অস্ত্র উদ্ধার করে আসল ইতিহাস
হয়ত একদিন সৌদিআরব এই কাজটা করতে দিতে বাধ্য হবে। আমরা না জানলেও আমাদের উত্তরসুরীরা এটা জানবে।তখন হয়ত ইসলাম নিয়ে এই লম্ফ জম্ফ আর থাকবে না, তখনই হয়ত
ইসলামও বর্তমান খ্রিষ্ট ধর্মের মত নির্বিষ হয়ে পড়বে।
বিপ্লব, মোটাদাগে আপনার ইতিহাসের রূপরেখা ঠিক আছে কিন্তু নাম, ধাম, সন ,তারিখ এসবে অনেক গন্ডগোল আছে। জার্মানদের সেই হিরো’র নাম আরমিনিয়াস বা হারম্যান। আর সেই বিখ্যাত রোমান-জার্মান যুদ্ধ হয়েছিলো খ্রীস্টাব্দ ০৯ এ, যা ব্যাটল ওফ টিউটোবর্গ ফরেস্ট নামে পরিচিত।
রোম সাম্রাজ্য ও জার্মানদের সংঘর্ষ নিয়ে এই অংশটুকু দেখতে পারেন ইউটিউবে।
http://www.youtube.com/watch?v=HaJ9X7_dXhQ
@সফিক,
আমি এই ডকুটা দেখেছি। এই ডকুতে আরমিনিয়াস বলে একে উল্লেখ করা হয়েছে সেটাও জানি। আরমেনিয়াসকে রোমানরা গায়াস জুলিয়াস সিভিলিস নাম দিয়েছিল বলে বোধ হয় কোন তথ্যে পেয়েছিলাম। তবে সন তারিখটা আমার ভুল দেওয়া আছে। এই প্যারাগ্রাফটা পুরোটাই নাম ধাম ঠিক করে লিখতে হবে।
ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
@সফিক, আপনার এই ভিডিওটি লিঙ্কটি আনআ্যভেইলেবল দেখাচ্ছে!
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সংস্কৃতির সবই কি খারাপ হতে পারে। আপনার লেখায় কেন যেন মনে হল আপনার মতে কোন পক্ষ বিদেশী দখলদার শক্তি হলে তাদের থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহনের ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভংগী বেশ কঠোর।
– আপনি দেখা যাচ্ছে যাদের আমরা নানান সংস্কারের নায়ক বলে জানি তাদের আপনি পাইকারি হারে তাবেদার বলছেন। তাবেদার শব্দটা খুব একটা সম্মানসূচক নয়।
আপনার কি মনে হয় না যে ব্রিটিশের শাসনের ফলেই সনাতন হিন্দু সমাজ অনেক কুপ্রথা থেকে মুক্তি পেয়েছিল? ব্রিটিশের শাসন না এলে কি বহু মহিলাকে চিতায় পুড়তে হত না? আধুনিক শিক্ষার যে বিচ্ছুরন, টেকনোলজির উত্তরন আমরা আজ ভারতে দেখি সেটার পেছনে কি ব্রিটিশ শাসন, ইংরেজী সংস্কৃতির ভূমিকা নেই? ব্রিটিশ আমলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বলেই তাদের কিছুই আমরা গ্রহন করব না এমন নীতি আঁকড়ে ধরা উচিত হত? হয়ত আপনি পুরো ব্যাখ্যা করেননি, একটু ব্যাখ্যা করলে ভাল হয়।
আমি যা বুঝি সামগ্রিকভাবে সব কালচারেই ভাল মন্দ থাকে। যার যেটা ভাল সেটা গ্রহন করাই বিবেচকের কাজ। সেটা দখলদার শক্তির কালচারের হলেও।
@আদিল মাহমুদ,
সাম্রাজ্যবাদ রাজনীতি এবং রাষ্ট্রএর অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাম্রাজ্যবাদ সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিবর্তনের ও অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমন প্রথম সাম্রাজ্যবাদি আক্রমন-তার থেকে আমরা ইতিহাস লেখা, জ্যামিতি এবং গ্রীক দর্শন শিখেছিলাম। রোমান সাম্রাজ্যবাদের জন্য ইউরোপে সভ্যতার শুরু হয়-আজকের লন্ডন সব ইউরোপিয়ান শহরের পত্তন করেছিল রোমানরা। ইসলামের আক্রমনের সাথে সাথে ভারত তেমন কিছু পেয়েছে বলে মনে করি না। লাভের থেকে লোকসান হয়েছে অনেক বেশী-কারন ইসলামিক সভ্যতায় যে জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা হয়েছে, তা ইউরোপে গেছে, ভারতে আসে নি। আসলে হয়ত ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদ থেকে ভারতের লাভ হত। আপাতত সেই ইতিহাস লোকসানের। তারা নালন্দার মতন বিশ্ববিদ্যালয় পুড়িয়েছে, বিনিময়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোকিত অধ্যায় ভারতে তারা দিতে পারে নি।
বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ অবশ্যই ইউরোপিয় জ্ঞান বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে। কিন্ত তার জন্য তাদের নির্লজ্জ তাবেদার হতেই হত?
এখানে দ্বিমতের অবকাশ আছে। আমেরিকা বৃটেনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধ লড়তে পারল-আমরা পারলাম না -কেন জানেন?
আমি দেখেছি ওই স্বাধীনচেতা চরিত্রটাই ভারতীয় রক্তে নেই। বৃটেন, গল, জার্মেনিয়া একদিনের জন্য ও রোমানদের শান্তিতে থাকতে দেয় নি। জাতি এবং ধর্মে বিভক্ত ভারতীয়রা কোনদিন ই সেভাবে একতাবদ্ধ আন্দোলনে নামতে পারে নি গান্ধী আসার আগে। সিপাহি বিদ্রোহ সেই অর্থে সর্বাত্মক বিদ্রোহ না।
সুতরাং ওইসব মহান ভারতীয়দের অবদান স্বীকার করে নিয়েই, তাদের তাবেদার না বললে ঐতিহাসিক ভুল হবে।
@বিপ্লব পাল,
দারুন লাগল। একটআ ব্যাপারে সন্দেহ লাগছে। গ্রীক ইতিহাস আর জ্যামিতির চরচা কিন্তু ভারতে আসেনি সেই সময়। সুল্বসুত্রে জ্যামিতির চরচা ছিল, সে গ্রীক আক্রমন এর প্রায় ৪০০ বছর আগের কথা। আর ইউক্লিদের জ্যামিতির ভারতে আসার প্রমান নেই। ভারতীয় গনিতের সেরা সময়, এর প্রায় সাতশ বছর পরে। এই সময় য়ে গনিতের বিকাশ ভারতে হয় তা মুলত বীজগনিত। গনিত চরচায় ভারতের নিজস্য ঘরানা ছিল এবং সেটার ই বিকাশ হয়েছে। গ্রীক প্রভাব দেখা জায়না বল্লেই চলে। ইতিহাসের খেত্রে সমস্যা অন্য। ভারতে লেখা প্রথম ইতিহাস বই রাজতরংগঈনি, কলহ্নের। এটআ গ্রীক অভিজানের প্রায় হাজার বছর পরে লেখা। ভারতীয় সভ্যতায় গ্রীক প্রভাব অনেক খেত্রেই ইংরেজের তইরি মীথ।
অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ!!!!!
এখানে একটা ভুল আছে-চেরোকি টা চেলোমি হবে। চেরোকি রেড ইন্ডিয়ান ট্রাইব-আর চেলোমি হচ্ছে পর্তুগালডের পূর্বপুরুষ।
থাকবে আরো অনেক পরের পর্বে–আমি শুধু একটা এনালাইটিকাল চিন্তার বেস তৈরী করতে চাইছি।
গাজাখুরি গল্প বলাতে বিপ্লব সাহেব মশাই এর পান্ডিত্য দেখে হাসি ধরে রাখতে পারি না……………….হা হা হা হা হা………………………………………………….।
আপনার বর্তমান ডেমোক্রেসীর গোটা বিশ্বে কী যে নিদারুন অবস্থা তা আপনাদের কবে যে ঘুম ভাগবে?…………..
@হুতুমপেচা,
এটা দেখুন-পৃথিবীতে কোন দেশ কত সৎ তার লিস্ট। কোন দেশে লোক কত ভাল আছে, সেটা এই লিস্টের সমানুপাতিক।
http://cpi.transparency.org/cpi2012/results/
এখানে মুসলিম দেশগুলি কোথায়? আছে। একদম পেছনের দিকে। একমাত্র কাতার ২৭ নাম্বার পজিশনে। বাকি অধিকাংশ মুসলিম দেশগুলি পেছনের দিক থেকে প্রথম হয়েছে।
এবং এই লিস্টে পেছনের দিককার মুসলিম দেশগুলির লোকেদের একটাই কাজ-জন্মর পর থেকে কি ভাবে গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে কোন রকমে ভিসা পেয়ে, সেই দেশগুলিকে অবৈধ ভাবে থাকা যায়। তারা ইসলামকে যতই ভালবাসুক- তাদের মুসলিম দেশে থাকার কথা ভাবতেও পারে না!
এগুলির অধিকাংশই ব্যার্থ রাষ্ট্র। ইসলামের ওপর নির্ভর করে দেশ চালালে, সে রাষ্ট্র অধপতনেই যাবে।
গণতন্ত্র কোন রাজনৈতিক সিস্টেম না-গণতন্ত্র হচ্ছে সেই সিস্টেম যা বর্তমান সিস্টেমকে ভোটের মাধ্যমে ক্রমাগত উন্নতির সুযোগ দেয়।
তাই গণতন্ত্রের কোন বিকল্প নেই!
@হুতুমপেচা,
তো পৃথিবীর কোথায় কোন প্রান্তে পরিপূর্ণ কোরআন ভিত্তিক শাসন ব্যাবস্থা চালু আছে,আর তার কি সুঅবস্থা তা জানতে ইচ্ছে করে?
@হুতুমপেচা,
কেন প্রকৃত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লোকে খারাপ আছে নাকি?আমি তো দেখি যে মুসলিম দেশগুলোর তুলনায় তারা অনেক ভালই আছে।সেখানে আপনি নিদারুন অবস্থা কি দেখলেন ( গনতন্ত্রের) সেটা একটু বুঝিয়ে না বললে চলবে কেন?
আগের পর্ব সব পড়া হয়নি সময়ের অভাবে, এই পর্বটা দারুন লাগল। তবে আশা করেছিলাম খৃষ্টান ধর্মের প্রচারে সাম্রাজ্যবাদের আরো বিস্তারিত ঐতিহাসিক বিবরন থাকবে। হিন্দু ধর্ম কেন শুধু মূলত ভারত উপমহাদেশে সীমাবদ্ধ তার কারন সম্ভবত সাম্রাজ্যবাদী পথ অনুসরন করে এই ধর্মের প্রসার ঘটানো হয়নি।
নিজেদের সর্বদা ভিক্টিম,আক্রান্ত, এবং সর্বদা অপর ধর্মের লোকেরা তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এই মনোভাব যে মুসলমান মানস গঠনে কি ব্যাপক প্রভাব ফেলে তা আজীবন দেখে আসছি। সনাতন মুসলমান সমাজে মুক্তবুদ্ধির চর্চায় এই মানসিকতা পাহাড়সম বাধার মত দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের মানুষই এই মানসিকতার স্বীকার হয়েছে সবচেয়ে নির্মমভাবে ‘৭১ সালে। মুসলমান দেশগুলিতে বাংলাদেশের গনহত্যায় তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি। অধিকাংশ সরকার ছিল জেহাদী জোশে পাক সমর্থক, জনতা ছিল উদাস। এই মানসিকতার অলৌকিক মাজেজা এখানেই যে এসব কথা স্মরন করালে এখন বাংলাদেশের মুসলমানেই গোস্ম্যা করবে। ধর্মীয় নানান ইস্যু তো বটেই, পৌরনীতি সমাজ বিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতি, এমনকি বিজ্ঞানের মত বিষয়তেও চলে আসে বিধর্মী নাস্তিকদের ষড়যন্ত্র।
বাংলাদেশে যেই দলের সমর্থকই হোক, প্রবল ভাবে যারা ধার্মিক, ধর্ম ডিফেন্ডার বলে যারা পরিচিত তাদের লেখায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানান টপিক অবশ্যম্ভাবী ভাবে প্যালেষ্টাইন, ইরাক, আফগান, অধুনা মায়ানমার। নিজেদের দেশের সংখ্যালঘুরা কেন কিভাবে উজাড় হচ্ছে সে নিয়ে এক ছত্রও এদের কলম থেকে বেরুবে না।
এই মানসিকতার এক অন্যতম করুন এবং হাস্যকর বৈশিষ্ট্য হল বিধর্মী কারো সাথে যে কোন ধরনের ঝামেলা হলেই সেটাকে ধর্মের রং চড়িয়ে ধর্ম বিদ্বেষ, জাতির বিরুদ্ধে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র বের করে ফেলা। সেটাও না হয় কোনভাবে হতে পারে। হাস্যকর হল নিজেরা যখন নিজেদের পেটায় তখন দেখা যায় উদাস ভূমিকা পালন করতে। যেমন সাদ্দাম ইরাক দখল করার পর বিশ্বময় মুসলমান দেশগুলিতে কোন প্রতিক্রিয়াই হয়নি। সাদ্দামের যায়গায় শুধু দখলকারীর ভূমিকায় ভারত হলে আর দেখতে হত না।
হেফাজতের সাম্প্রতিক ঢাকা ঘেরাও কেন্দ্র করে ঢাকা শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে বহু কোরান পুড়ল, যা মুসলমান সমাজে ভয়াবহ ব্যাপার। প্রতি বছরই দুনিয়ায় কোরান পোড়ানো, অবমাননা কেন্দ্র করে স্থানে সাথে দক্ষযজ্ঞ চলে, প্রান যায় মানুষের। বিস্ময়কর ব্যাপার হল মুসলমান প্রধান দেশগুলিতে বাংলাদেশে কোরান পোড়ানোর কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এর কারণ হল সেই একই। কোরান পোড়ানো ধর্ম অবমাননা হবে তখনই যখন সেটা করবে বিধর্মীরা। নিজেরা করলে তেমন কোন সমস্যা নেই, অবমাননা, ষড়যন্ত্র কিছুই নেই। বাংলাদেশে কোরান পুড়িয়েছে হেফজত হোক আর আওয়ামী লীগ হোক তারা তো ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলমানই, কাজেই সমস্যা নেই। চরম বিস্ময়কর হল হেফাজতের প্রবল উত্থানের পেছনের কারণ তাদের ভাষ্যমত ছিল ধর্ম অবমাননা। সেই আন্দোলনের এক পর্যায়ে পুরো বিশ্বর চোখের সামনে রাজধানীতে কোরান পোড়ানোর মত ভয়াবহ ধর্ম অবমাননা ঘটল। অথচ হেফাজতি, তাদের সমর্থক কেউই দেখি এখন পর্যন্ত এই ভয়াবহ ধর্ম অবমাননার তদন্ত বিচারে টূ শব্দও করে না। কেবল আওয়ামী পান্ডারা করেছে বলে দায় সারে। ব্লগের কোন চিপার কে কবে কি বলেছে সেগুলি হল ভয়াবহ ধর্ম অবমাননা, তবে প্রকাশ্য রাজপথে কোরান পোড়ানো কোন ব্যাপার নয়। অনেক গুরুতর ব্যাপার অবশ্যই হত যদি কেবল কর্মসূচী হেফাজতের যায়গায় হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ গোছের কোন সংগঠনের কর্মসূচী কেন্দ্র করে ঘটত। তাহলে দুনিয়াময়ই মানুষ টের পেত প্রতিক্রিয়া কাকে বলে। এসব লোকের ধর্মানুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো যথেষ্ট কষ্টকর, মানসিক অত্যাচারই বলা ভাল।
বিপ্লব ভাই,
আপনার এই সিরিজটি অসাধারন হচ্ছে এবং এর থেকে অনেক কিছু শিখছি । আগামী পৰ্বের অপেক্ষায় আছি … :guru: