স্বপ্নাক্রান্ত কোনো কবি কিংবা উদাসী গায়ক তাদের কবিতা অথবা গানে তাদের কল্পনার জগতে বিচরণ করতে করতে নিয়ে আসেন আগুনের তৈরী অগ্নিমাল্য। কিন্তু, সব কবিদের বড় কবি, সব গায়কের বড় গায়ক, আমাদের এই অগ্নিগর্ভা পৃথিবীর কি কল্পনায় রাজ্যে যাওয়ার প্রয়োজন আছে! বিপুল পরাক্রম আর রহস্যের জাদুকর সেই পৃথিবী শত-শত নয়, হাজার-হাজার মাইল নিয়ে বাস্তবের রাজ্যে তৈরী করে আগুনের মালা! প্রশান্ত মহাসাগরের অববাহিকায় প্রায় চল্লিশ হাজার কিলোমিটার জুড়ে সেই স্বপ্নীল বাস্তবের লীলাভূমি- প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ার। এখানেই আছে ৪৫২টি আগ্নেয়গিরি, যেটি বিশ্বের মোট সক্রিয় ও সুপ্ত আগ্নেয়গিরির অর্ধেকেরও বেশি।
- ছবিঃ উইকিপিডিউয়ার সৌজন্যে
ওয়াশিংটন। আমেরিকার একমাত্র স্টেইট, যেটি কোনো প্রেসিডেন্টের (প্রথম প্রেসিডেন্ট) নামে নামকরণকৃত। গ্রিন স্টেইট নামে খ্যাত এই ওয়াশিংটন এত বেশি পরিমাণে সবুজে আচ্ছাদিত যে, চারপাশ থেকে রীতিমত কষ্ট করে খোলা মাটি কিংবা অন্য রঙ খুঁজে নিতে হয়। আর, স্থলভাগ পেরিয়ে জলাধারের কাছে এলে প্রশান্ত মহাসাগের সুনীল জলরাশি। প্রকৃত অবিরত দু-হাত ভরে সৌন্দর্যস্নানে ধুয়েমুছে সর্বদা যেন এই জায়গাটিকে নিষ্কলঙ্কিত করে রাখার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত।
- ছবিঃ সিয়াটল শহরের স্কাইলাইন
বৃহৎ আর বিশালের প্রদর্শনী মেলা হলে, ওয়াশিংটন স্টেইট চলে আসবে একেবারে সামনের কাতারে। আমেরিকার সবচেয়ে বড় এবং সুবিখ্যাত কফি চেইন শপ স্টারবাকস্ এই ওয়াশিংটন থেকেই শুরু করে তাদের যাত্রা। এখানেই আছে আয়তনের হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভবন, যেখানে বোয়িং কোম্পানি সারা বিশ্বের জন্য প্রস্তুত করে থাকে যাত্রীবাহী বিমানগুলো। গালগল্পের মত শোনালেও প্রায় একশো একর জায়গার উপর নির্মিত সেই ভবনের একেকটা দরজা একেকটা ফুটবল মাঠের সমান। সেখানে গিয়ে তন্ময় হয়ে শুধু তাকিয়ে দেখেছি বিশালের সব সুনিপুণ আয়োজন। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিল গেইটস্ এর বাড়ী এবং তার কোম্পানি মাইক্রোসফট আছে এই ওয়াশিংটনেই।
- ছবিঃ সমস্ত স্টেইট জুড়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য জলাধার, যেখানে গড়ে উঠেছে মানুষের আবাসভূমি
কিন্তু, পৃথীবীর থেকে বড় স্থপতি এই পৃথিবীতে নেই। আর, হয়তো তাই এত সব বৃহতের মাঝেও সবচেয়ে বৃহৎ হয়ে ওয়াশিংটনের বুকে মাথা উঁচু করে, সবকিছুকে ছাড়িয়ে একপায়ে দাঁড়িয়ে রয়- মাউন্ট রেইনিয়ার। প্যাসিফিক ফায়ার অফ রিং এর যে অংশ আমেরিকা এবং কানাড়ায় পড়েছে, ক্যাসকেইড মাউন্টেইন নামে পরিচিত সেই অংশের সবচেয়ে উঁচু পর্বত মাউন্ট রেইনিয়ার।
- ছবিঃ মাউন্ট রেইনিয়ার এবং পরিপার্শ্ব
রৌদ্রজ্জল দিনে পুরো স্টেইটের যে কোনো জায়গায় দাঁড়ালে দেখা যায় বিপুল গাম্ভীর্য নিয়ে ঋজু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রেইনিয়ার। শুধু ওয়াশিংটন নয়, মেঘমুক্ত পরিষ্কার দিন হলে ১৪ হাজার ফুট উঁচু রেইনিয়ারকে দেখা যায় চারপাশের বাকী স্টেইটগুলো থেকেও।
- ছবিঃ পার্বত্য ফুল
শুধু উচ্চতা নয়, বৈচিত্রের বন্য প্রলেপ দিয়ে চারপাশের বিস্তৃত অঞ্চলে প্রভাব রেখে চলেছে লাখ লাখ বছর আগে সৃষ্টি হওয়া এই পর্বত। কত জানা অজানা ইতিহাসের নীরব সাক্ষী এই রেইনিয়ারের কোল ঘেঁষে বেড়ে উঠেছে রঙ-বেরঙের জনপদ। তার বুকে গড়ে উঠা সবুজ অরণ্যে বেড়ে উঠেছে কত প্রজাতির প্রাণী।
- ছবিঃ মাউন্ট রেইনিয়ার এবং পরিপার্শ্ব
রেইনিয়ারকে দেখতে যারা একটি বারের জন্যও তার কাছে যাননি, তারা বেঁচে গেছেন। আর, যারা একবার সেখানে গেছেন, তারা জড়িয়ে গেছে প্রণয়ের অবিচ্ছেদ্য বাঁধনে, ফিরে যেতে হয়েছে বারবার। ক্ষুদ্র সময়ের জন্য ওয়াশিংটনে থেকেও সেই প্রণয় প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব হয়নি আমার পক্ষেও। তাই, একবার নয়, বারেবারে ছুটে গেছি রেইনিয়ারের কাছে।
- ছবিঃ মাউন্ট রেইনিয়ারের বুকে বয়ে চলা জলপ্রপাত
জীবনের ব্যস্ততায় একসময় হয়তো দূরে চলে যাবো, কিন্তু, মনের দৃশ্যপটে ঠিকই ভেসে থাকবে মাউন্ট রেইনিয়ার, যেমন করে সেটি ভেসে থাকে ওয়াশিংটনের বুকে।
আরো পরিস্কার করে বলি, আমি “অতীশ দীপংকরের পাণ্ডুলিপি” নামে একটা থ্রিলার উপন্যাস লিখেছি। সেখানে আপনার, অনেকের ভীরে একজন পর্ব- ২, রুকসানা নামের যে লেখা টা আছে সেখান থেকে কিছু অংশ ব্যাবহার করতে চাই। কৃতজ্ঞতায় আপনার নাম, ব্লগ সহ সব কিছু উল্লেখ করবো। দয়া করে আমাকে অনুমুতি দিন। আমার লেখার ইতিহাস অংশের জন্য আপনার ওই লেখাটা ভীষণ ভাবে জরুরী।
আপনার ইমেইল দেখুন।
মইনুল রাজু ভাই, আপনাকে বিশেষ প্রয়োজন। দয়া করে আপনার ইমেইল এড্রেস টা পাওয়া যাবে ?
“প্রহেলিকা” শুনতে শুনতে লেখাটি পড়লাম। বেশ একটি মনমেদুর আবেশ ছড়িয়ে পড়লো যেনো চারপাশ। …
মুক্তমনায় এরকম ফটো ব্লগ খুব বেশী লেখা হয়নি। সেদিক থেকে আপনাকে সাধুবাদ আরেকবার। চলুক। (Y)
আপনার বেশ কিছু লেখা পড়ে যথেষ্ট মুগ্ধ হয়েছি…….বরাবরের মতই এ লেখাটাও ছবি আর বর্ণনার গুনে বেশ প্রাঞ্জল হয়ে উঠেছে…….বৈদেশের প্রেমে ফেলে দিচ্ছেন দিনকে দিন 🙂
সিলিকন ভ্যালির শুধু টেক ক্যাম্পাসগুলো নিয়ে যদি আরেকটা কাহিনি লিখেন তবে ষোলকলার পথে আরেকটা কলা পূর্ণ হয় বৈকি…….জায়গাটা পুরোটা ঘোরার শখ বহুদিনের
@নিটোল,
সিলিকন ভ্যালির ছোট্ট একটা জায়গায়, আমার বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার পথে ট্রেনে চড়ে আসতে আধ ঘণ্টা লাগতো। তখন বসে বসে আমি কাউন্ট করতাম কয়টা আইটি কোম্পানি আছে। পঞ্চাশটা হলে নিজেই হিসেব থামিয়ে দিতাম। সেখানে রাস্তার নাম জাভা ওয়ে, গুগল ড্রাইভ। দেখি সে-সব নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। 🙂
মইনুল, আমেরিকার প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট আসলেই এক অনন্য জায়গা। একই এলাকায় চিরসবুজ বন, বরফঢাকা পাহাড়, অসংখ্য শান্ত হ্রদ আর নীল সমুদ্রের এরকম কম্বিনেশন পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না।
ওয়াশিংটনে থাকার সময়ে কি ওরেগন, ওয়াশিংটনের কোস্টাল হাইওয়ে দিয়ে ঘুরে দেখেছ? এটাও আরেক অনন্য সৌন্দর্য। টানা কয়েকশ মাইল জুড়ে রাস্তার একদিকে সবুজ পাহাড়, আরেকদিকে নীল প্যাসিফিক।
[img]http://static.guim.co.uk/sys-images/Travel/Pix/pictures/2008/09/11/CorbisOwakiKulla4.jpg[/img]
@সফিক,
প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট দেখে আমি মুগ্ধ। কানাডা থেকে শুরু করে মেক্সিকো পর্যন্ত হাজার হাজার মাইল ওয়েস্টকোস্টের পুরোটাই দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। যতই দেখেছি মনে হয়েছে, কিছুই দেখা হলো না; একজীবনে এ-সৌন্দর্য দেখে শেষ করার মত নয়। মনে হয়েছে, হাজারতো দূরে থাক, শুধু একশ মাইলের সৌন্দর্য দেখতে গেলেই এক জীবন শেষ হয়ে যাবে।
এখানে লেখাগুলো আছেঃ
ওরিগন
স্যান ফ্রান্সিসকো
স্যান ডিয়েগো
লস অ্যাঞ্জেলেস
নাপা ভ্যালি
গোল্ডেন গেইট
সিলিকন ভ্যালি
যতবারই তাকাচ্ছি শেষের ছবিটার দিকে, ততবারই অভিভূত হচ্ছি! কি আশ্চর্য সুন্দর একটা ছবি এটি! অসাধারণ, মইনুল ভাই, আপনার ফটোগ্রাফির কাজ!
মুক্তমনার পাঠকদের জন্য ঈদের চাঁদ যেন আগেভাগেই উঠেছে! একের পর এক দুর্ধর্ষ পোস্টে পাঠকদের এখন দিশেহারা অবস্থা!
আসলেই মইনুল ভাই, আমাদের এই ধরণীর বুকে লুকিয়ে রয়েছে এত সৌন্দর্য, এত রহস্য, এত মাধুর্য যে, একদমই দরকার পড়ে না কল্পনার রাজ্য হাতড়ে হাতড়ে সৌন্দর্য অন্বেষণ। চোখ মেললেই ধানের শীষের উপর একটি শিষের বিন্দু! এ কারণেই কবি সবাইকে চলে যেতেও বললেও রয়ে যেতে চান তার নিজ বাসভূমে। কারণ উনি সৌন্দর্যের সন্ধান পেয়েছিলেন তার চারপাশের প্রকৃতির মাঝেই! আমেরিকার ‘রিং অব ফায়ার’ ও তেমনি সৌন্দর্যপিপাসুদের চোখ এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
একটি দরজাই এত বিশাল? দরজাটি দেখতে মন চাইছে, মইনুল ভাই!
এর কতটুকু প্রকৃতির দান, আর কতটুকুই বা পৃথিবীর সমৃদ্ধ-তম দেশ আমেরিকার হাতে তৈরি?
(Y) (Y)
@কাজি মামুন,
আপনি লেখা থেকে খুঁজে ঠিকই ভালো কিছু লাইন বের করে আনেন। সম্ভবত আমি নিজেও এত ভালো করে বের করতে আনতে পারবো না। লাইন গুলো দেখে ভালো লাগে। (Y)
মানুষের একটা ভূমিকা রাখতে হয়, সেটা হলো প্রকৃতি ধ্বংস না করা। অতএব, আমার মনে হয় এই স্টেইটে মানুষ এবং প্রকৃতি দুই-ই খুব সুন্দরভাবে নিজেদের ভূমিকা পালন করছে।আসলে সমৃদ্ধ নয়, সচেতন হতে হয়। 🙂