তবে কি ফিরে আসছে সেই ভয়াবহ দিনগুলো?

আকাশ মালিক

Power tends to corrupt, and absolute power corrupts absolutely. Great men are almost always bad men.” (Sir John Dalberg-Acton) (10 January 1834 – 19 June 1902)

যখন কোন দল, প্রতিষ্ঠান, সরকার বা ব্যক্তি নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকারী হয়, তখন তার ক্ষমতা অপব্যবহারের ও দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এই প্রবণতাকে পরমবাদ বা কর্তৃত্ববাদ বলা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকারীর এই কর্তৃত্ব প্রবণতার প্রমাণ প্রচুর রয়েছে। একজন একনিষ্ঠ সমাজ সংস্কারক, দেশপ্রেমিক, সৎ চরিত্রবান ব্যক্তিও পরবর্তিতে আদর্শচ্যুত হয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ও ক্ষমতা অপব্যবহারের কারণে সমাজে ঘৃণিত নিন্দিত হতে পারেন। অনেক সময় এর চরম মাশুল দিতে হয় নিজের জীবন দিয়ে। আমাদের চোখের সামনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। দলটি তার দেশপ্রেম, আদর্শ, একনিষ্ঠতা, ত্যাগ-বিসর্জন দিয়ে বিপুল জনপ্রীয়তা অর্জন ও নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকার পায়, আবার এর অপব্যবহার করে জনপ্রীয়তার তলানিতে নেমে আসে। বাহাত্তর পূর্ববর্তি ব্যক্তি শেখ মুজিবের রাজনৈ্তিক জীবন, উদারতা, ত্যাগ, দেশপ্রেম বিবেচনায় রেখে, আমি বিশ্বাস করিনা তিনি অন্তরে মানসে, মনে প্রাণে একজন স্বৈরশাসক বা একনায়ক ছিলেন বা হতে চেয়েছিলেন। এ আমার নিতান্তই ব্যক্তিগত বিশ্বাস। কিন্তু বাহাত্তর পরবর্তি রাষ্ট্রনায়ক শেখ মুজিবকে তার নিরংকুশ ক্ষমতা ভুল পদক্ষেপ নিতে প্রেরণা যুগিয়েছিল আর তা তাকে জনমনে একজন কর্তৃত্ববাদী বা একনায়ক রূপে তুলে ধরেছিল। আমরা পেছনের ইতিহাসে যাবোনা, বর্তমান রাজনৈ্তিক হালচাল আর বিগত বছরগুলোর চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিকেশ নিয়ে আজকের এই আলোচনা।

চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অকল্পনীয় পরাজয়ের পর হতাশাগ্রস্থ আওয়ামী লীগ কোনভাবেই এই পরাজয়ের হিসেব মিলাতে পারছেনা। নিরংকুশ ক্ষমতা মানুষকে খুব সহজেই অল্প সময়ে দাম্ভিক আত্মম্ভরী করে তুলে। আওয়ামী লীগের আজকের সুচণীয় অবস্থার জন্যে তাদের নেতাদের দম্ভ-অহমিকা বহুলাংশে দায়ী। ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ নেতারা ধরেই নিয়েছিলেন যে এই ক্ষমতা চিরস্থায়ী। আজ তাদের আকাশচুম্বী অহমিকার পাহাড় ভেঙ্গে চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেছে। তাদের দম্ভ তাদেরকে এতই অন্ধ করে দিয়েছিল যে, তারা বিগত দিনগুলোতে জামাত, বি এন পির সীমাহীন প্রোপাগান্ডা, মিথ্যাচারের জবাব দেয়ার কোন প্রয়োজনই বোধ করেন নি। সাধারণ মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ঘুঁৎঘাত করেছেন উম্মাদ ঘাড় ত্যাড়া ষাঁড়ের মত। দলের আদর্শ ও গঠনতন্ত্রের অঙ্গীকার জলাঞ্জলি দিয়ে ধর্মকে সংসদে টেনে এনে চরম ভন্ডামীর পরিচয় দিয়েছেন। জনপ্রীয়তা হারানোর আরো একটি কারণ হলো তাদের অতিকথন, অসঙ্গতিপূর্ণ লাগামহীন কথাবার্তা। আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা ভুল কথা, প্রত্যেকটা ভুল পদক্ষেপের কথা মানুষের মনে থাকে। তা প্রচার হয় দ্রুত, এর সমালোচনা হয় প্রচুর। পক্ষান্তরে জামাত, বি এন পির ভুল, অশোভন কথা, এমন কি শহিদ মিনার ভাঙ্গা, পতাকা পুড়ানো, শত শত কোরানে আগুন দেয়া মানুষ বেশীদিন মনে রাখেনা। কারণ মানুষ মনে করে জামাত ও বি এন পি এই দল দুটোর কাছ থেকে এমনটি অপ্রত্যাশিত তেমন কিছু নয়। আওয়ামী লীগ কোরানের একটি পাতা ছিড়লে তেঁতুল শাফিরা রাজধানী কাঁৎ করে ফেলতো। এখানেই আওয়ামী লীগের সাথে অন্য দল দুটোর পার্থক্য। এ পার্থক্য জন্মগত। আওয়ামী লীগের জন্মের সাথে এ দেশের মাটি ও মানুষের নাড়ির সম্পর্ক। বলা হয়, জামাত, বি এন পি হারলে একটি দল হারে আর আওয়ামী লীগ হারলে একটি দেশ হারে। কথাটা আসলেই সত্য। তাই তাকে শুধরানোর জন্যেই তার সমালোচনার প্রয়োজন।

মনে পড়ে বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী নেতাদের কিছু অতিকথন আর ভন্ডামীর কথা-

‘সীমান্ত নিয়ে আমরা তেমন চিন্তিত নই’ । (আশরাফুল)

জনগন ভাবতেই পারে, কেন আপনারা চিন্তিত হবেন না? আমরা জনগন তো সীমান্ত নিয়ে ভীষন চিন্তিত। অথচ জোট সরকার আমলে সীমান্তের অবস্থা এর চেয়ে আরো বেশী অশান্ত ছিল। তুলনামূলকভাবে তাদের আমলে অনেক বেশী মানুষ মারা গিয়েছিল। কিন্তু আশরাফুলের এই দায়ীত্বহীন কথা পূর্বেকার সরকারের ব্যর্থতা দূর্বলতা চাপা দিয়ে নিজের দলের ব্যর্থতাই শুধু প্রকাশ করে দিল।

‘হেফাজতিরা লেজ গুটিয়ে ঢাকা থেকে পালিয়েছে’।

হেফাজত লেজ গুটিয়ে পালালো, না সকল সিটি নির্বাচনে আপনাদের লেজ কেটে দিল? কী দরকার ছিল এমন কথা বলার? অথচ এই হেফাজতিদেরকে আদরে সোহাগে আপনারাই বড় করেছেন, হেলিকপ্টার শাফিকে মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান বানিয়ে সন্মান দিয়েছেন। অবশ্য এর পেছনের কারণটা মহৎ ছিল। ২০১০ সালে শিক্ষানীতি প্রণয়নের বিরোধীতার লক্ষ্যে গঠিত হেফাজত সরকারের নিয়ন্ত্রাধীন থাকতে চায়নি। তাকে শিক্ষানীতির আওতাধীন রাখার উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করেছিলেন। তারপর সেই কমিটির আর কোন খোঁজ খবর নেই। এই সুযোগে জামাত তার বিষ ইনজেক্ট করেছে হেফাজতের মাথায়। হেফাজতের নিরীহ অবোধ রাজনীতি অসচেতন অল্প বয়সী কিশোর ছাত্রদেরকে সামনে রেখে জামাত শিবির রাজধানী তছনছ করে দিল। সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কৌশলে লক্ষ লক্ষ হেফাজতের মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে নিয়ে ঢাকা শহরকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করলো। এই অসাধারণ কাজটির জন্যে সরকার যখন প্রশংসিত হওয়ার কথা, সেখানে এই ভুল মন্তব্যটির কারণে দূর্নাম কুড়িয়ে নিল। হেফাজতের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, গরিবের দোকান-পাট ধ্বংস, হাজার হাজার বৃক্ষনিধন, সর্বোপরি কোরান পুড়ানোর জন্যে যেখানে সাধারণ মানুষের ঘৃণা ধিক্ষার পাওয়ার কথা, সেখানে আশরাফুলের এই ভুল দম্ভ দেখানোর কারণে মানুষ হেফাজতের প্রতি সহানুভুতিশীল হয়ে উঠলো। অত্যাচার না করেও অত্যচারী হলেন কারণ এ ভাষা অত্যাচারী শাসকের ভাষা।

‘মরিচের গুঁড়োয় কারো মৃত্যু আর কচুগাছে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যু সমার্থক’।

শুনা গেল, এমপিওভুক্তির আন্দোলনে একজন শিক্ষক পিপার স্প্রে’ আঘাতে মারা গেছেন। শিক্ষক তো মানুষই, নাকি? সরকার কেন বলে-‘গুঁড়ো মরিচের স্প্রে কী করে হত্যা করবে একজন মানুষকে’? কী করে হত্যা করে তা নিজের চোখে স্প্রে মেরে পরীক্ষা করে দেখতেই পারেন। ঘটনা সত্য হউক কিংবা মিথ্যা হউক, মখা আলমগীর কেন বললেন “যখন নৈরাজ্য বন্ধ করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করে তখন তারা ফুলের মালা নিয়ে যাবে না’? পুলিশের হাতে ফুলের মালা থাকেনা তা তো একটা পাগলও বুঝে। জনগনকে পাগল মনে করেছেন? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সারা দুনিয়াকে কী দম্ভ প্রদর্শন? জনতার ক্ষমতাকে তুচ্ছজ্ঞান করলে এর পরিণাম হয় ভয়াবহ।

‘বিশ্বজিত হত্যাকারীরা ছাত্র লীগের সদস্য নয়’।

এ কথা বলার মা’নেটা কী? ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনা?

‘বিরোধী দলকে প্রতিহত করতে ছাত্র লীগকে মাঠে থাকতে হবে’।

তো এখন খুনের দায়ভার নেবেন না কেন? শিবিরের পদাঙ্ক ছাত্র লীগ অনুসরণ করবে কেন?

‘চার হাজার কোটি টাকা বড় কোন টাকা না, হলমার্ককে আরও লোন দিতে হবে’।

নিরংকুশ ক্ষমতার কয় ছিলিম গাজা সেবন করলে একজন মানুষ এমন কথা বলতে পারেন?

‘বেডরুম পাহারা দেয়া আমাদের কাজ নয়’।

তো কার কাজ? ভোটাররা তো মনে করে তাদের একটা কুত্তার ঘর পাহারা দেয়া, একটা বিড়ালের নিরাপত্তা দেয়াও সরকারের কাজ।

‘প্রয়োজনে শারিয়ার আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবো। দেশ চলবে মদীনার সনদ অনুযায়ী। আওয়ামী লীগের আমলেই মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়ন হয়েছে জোট সরকারের আমলের চেয়ে অনেক বেশী। ইসলামের সেবা ও উন্নতির জন্যে কেউ কাজ করে থাকলে আওয়ামী লীগই করেছে। আর নামাজ রোজার দিক থেকেও যদি দেখেন, আওয়ামী লীগের লোকজনই বেশী নামাজ রোজা পালন করে। সংসদের মসজিদে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, বি এন পির কয়জন যায় আর আওয়ামীলীগের কয়জন যায়’।

ল্যাও ঠ্যালা। বাচাইছে আল্লায়, আওয়ামী মহিলাদের নামাজ রোজা, পর্দা-পুশিদা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বয়ান ফরমান নি। মদীনার সনদ আরবীতে পড়েছিলেন না বাংলায়? আমাদের সংবিধান যুদ্ধাপরাধীর বিচার আর দেশ চালনার যোগ্য নয়? বাবু নগরী সমাবেশ করে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন, শারিয়া আইন আর মদীনার সনদ অনুযায়ী দেশ চালালে প্রথমেই সুরঞ্জিত বাবুর হাত দুটো কেটে ফেলতে হবে। ‘সনদ’ বেশী কে বুঝে, পাবলিক তা ভাল করেই জানে। তাই আপনার কথা ভন্ডামী হিসেবে মানুষ গন্য করে। আপনি যখন নিজেকে তাহাজ্জুদ নামাজী হিসেবে মানুষের কাছে পরিচয় দেন, মানুষ তখন ভাবে ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’। কারণ এটা বিজ্ঞাপন দিয়ে পাবলিককে জানানোর কথা নয়। আপনি যখন নামাজে, খালেদা তখন বিউটি পার্লোরে। তারপরও খালেদা ধার্মিক আর আপনি ইসলাম বিদ্বেষী। কারণ খালেদা বেগম নামাজের সময় বিউটি পার্লোরে থাকবেন এটা প্রত্যাশিত কিন্তু ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ নেতা তার দলের ধর্মচর্চা নিয়ে সংসদে সেমিনারে রাস্তায় বয়ান দিবেন তা অপ্রত্যাশিত। সংসদে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের বিজ্ঞাপন টাঙ্গানো আওয়ামী লীগের সাজেনা। মানুষ জানে, আওয়ামী লীগ তার দলের নাম থেকে ধর্মের নাম কেটে ফেলেও সারা দেশের মানুষের মন জয় করতে পেরেছিল অনেক পূর্বেই।

গোলাম আজমের রায়ে খুশী বা সন্তুষ্টি ব্যক্ত করার কী প্রয়োজন পড়লো? ট্রাইবুনালের আইনানুযায়ী এই অপরাধের আসামীর দন্ড দানে বয়স বিবেচনায় আসতে পারেনা, তা কি সরকারের আইন বিশেষজ্ঞরা জানেন না? একজন প্রশ্ন রেখেছে, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শাস্তির ব্যাপারে যদি বয়স বিবেচনায় নিয়ে কারো শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়া না হতো তখন কি আপনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করতেন? দেশী-বিদেশী সীমাহীন চাপ-চক্রান্ত, ষঢ়যন্ত্র, হুমকি ধমকি সাহসের সাথে মোকাবিলা করে, চার বছরের কষ্টের সকল অর্জন হুট করে একটা হেয়ালী মন্তব্য করে কলঙ্কিত করে দিলেন। এ দিকে আবুল বিদায় নিলো মায়ের উপর সতীন তুলে। তাকে ‘দেশপ্রেমিক’ বলার দরকারটা কী?

‘পবিত্র কোরান শরিফে আগুন দিয়ে তারা কী ইসলাম রক্ষা করতে চান? পুরো ঢাকা শহরকে লন্ডভন্ড করে দেয়া হলো, নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা হল। প্রতিটি গাছের পাতা ‘আল্লাহ আল্লাহ’ জিকির করে। কিন্তু হেফাজতরা গাছ কেটে সেই জিকির বন্ধ করে দিল। ইতিমধ্যে গাছ থেকে নতুন করে পাতা গজাচ্ছে। আল্লাহ আমাদের আবার নতুন করে বাঁচার তাগিদ দিয়েছেন। এই গাছের পাতা হেফাজতদের জানান দিচ্ছে তোমরা অন্যায় করেছ। জুলুম করেছ। তোমরা আমাদের ধ্বংস করেছিলে আল্লাহ আমাদের ধ্বংস করেন নি। ৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের সময় রংপুরে শুধু পেটের দায়ে বহু সংখ্যক মহিলা যখন এফিডেবিট করে দেহ ব্যবসা শুরু করলেন, তখন আল্লামা শাফি কোথায় ছিলেন? জিয়া যখন প্রিন্সেস লাকী, জরিনাকে নাচালেন, মদ জুয়ার লাইসেন্স দিলেন, তখন শাফি কেন নিশ্চুপ ছিলেন’? – মতিয়া চৌধুরী।

সংসদকে ইসলামী জলসা বানানোর অধিকার আপনাদেরকে কে দিয়েছে? গাছের পাতার ‘আল্লাহ আল্লাহ জিকির’ আল্লামা শাফি, বাবু নগরীরা শুনলোনা, শুনলেন মতিয়া চৌধুরী। অগ্নিদগ্ধ কোরান দেখে দেশের কোটি কোটি মাদ্রাসার ছাত্র-ওস্তাদ, আলেম-ওলামা শেখ-মাশায়েখ কারো কান্না আসেনা, অশ্রুবারি ঝরে মতিয়ার চোখ থেকে। হেফাজত ভুল করলে জুলুম করলে তা রোধ করার, তাদেরকে জানানোর দায়ীত্ব আপনাদের, সবুজ গাছের পাতার নয়। এই ভান্ডামী ধরার জন্যে অক্ষর জ্ঞান লাগেনা। একটি এলাকার নারীদের বেশ্যা আখ্যা দিয়ে আরেকদল নারীর বৃত্তি-পেশাকে যে অপমান করে চলেছেন, ধর্ম ও ক্ষমতার আফিমাসক্ত মাতাল মতিয়া তা বুঝতেই পারেন নি।

‘নবীজী বলেছেন, তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা। অথচ আল্লামা শাফি কোরানের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন। এটা ষঢ়যন্ত্র, এ সময়ে নীরব থাকা যায়না’। ( বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী)

তো কী করবেন? ডাক দেন জেহাদের। আল্লামা তেঁতুল শাফিদের সাথে হয়ে যাক আল্লামা আওয়ামী নেতাদের মোবাহিলা পল্টন ময়দানে।

এরপর এডভোকেট তারানা হালিম, ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি, দিপু মণি, অপু উকিল, মতিয়া চৌধুরী, শেখ হাসিনা, তানিয়া আমীরের ‘ইসলামের প্রথম মুসলিম নারী ও প্রথম শহিদ নারী’ শিরোনামের একই ওয়াজের ভাঙ্গা সিডি বাজতে শুনেছি অনেকবার। এ সব ফাইজলামী ভন্ডামী তাদের অধঃপতনের বড় একটা কারণ।

ওয়াশিংটন টাইমসে বাংলাদেশবিরোধী নিবন্ধ লেখার কারণে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি তারই সাবেক উপদেষ্টা ও ‘আমার দেশ’ পত্ররিকা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহমুদুর রহমান তীব্র বিষোদগার করেছিলেন। খালেদা জিয়ার লেখায় স্বাধীনতা যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে তথ্য বিকৃতি, দেশের বিরুদ্ধে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ চাওয়া নিয়ে মাহমুদুর রহমান খালেদা জিয়ার তীব্র সমালোচনা করে বলেছিলেন,

‘বিএনপি নেত্রীর আর জনগণের প্রতি আস্থা নেই। এ লেখার মাধ্যমে তিনি পলিটিক্যালি ডেড হয়ে গেছেন। বিএনপির এখন গলায় দড়ি দেয়ার সময় হয়ে গেছে’। শুভ্র নামে এক সাংবাদিকের সঙ্গে টেলিফোনালাপে মাহমুদুর রহমান বলেন ‘ম্যাডাম একটি চিঠি লিখেছেন। কোথাকার কোন ওয়াশিংটন টাইমসে, ওয়াশিংটন পোস্ট না কিন্তু, যেখানে ম্যাডামের একটা চিঠি ছাপা হইছে। সে (খালেদা জিয়া) চিঠিতে মিনতি করেছেন বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের জন্য। ইংল্যান্ডের কাছেও কাকুতি মিনতি করেছেন। আজকে সম্ভবত আওয়ামী লীগ সংবাদ সম্মেলন করবে। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ তো আজ ম্যাডাম ও বিএনপিকে শোওয়াইয়া ফেলবে। আওয়ামী লীগ তো কমই করতাছে। আজ যদি শেখ হাসিনা এভাবে নিবন্ধ লিখত তাহলে আমার পত্রিকায় সাত কলামের হেডলাইন করতাম।’ ম্যাডামের ইংরেজী লেখার দক্ষতার বিষয়ে ওই সাংবাদিকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমান আরো বলেন, ‘যদি আমাদের বলত, আমি ইংরেজীতে অত ভাল না, বাংলা লিখতে পারি। তার পরেও যতটুকু ইংরেজী জানি ওর থেকে ভালো লিখতে পারতাম।‘ম্যাডাম তার ফার্স্ট ত্রি লাইনেই পলিটিক্যালি ডেড হয়ে গেছেন। শি ইজ ডেড। তিনি তো পলিটিক্যালি ডেড হয়ে গেছেন। এখন মনে হয় তাঁর আশেপাশে র’য়ের এজেন্টরাই এটা করেছে। প্রথমে তাঁকে ইন্ডিয়াতে নিয়েছে। সেখানে নিয়ে তাঁকে চুপ করে দিয়েছে। বাকিটা এখন করল। আমি তো এখন খালেদা জিয়ার নিউজই করি না। বরং আওয়ামী লীগ এ বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলে ছাপিয়ে দেব। আওয়ামী লীগ তো তাকে শোওয়াইয়া ফেলবে।’

আওয়ামী লীগ কি খালেদাকে শোয়াইতে পারলো? পারে নাই। শোয়াইবার প্রয়োজনই বোধ করে নাই। দম্ভ, অহমিকা। তারা মনে করেন আমরা তো ক্ষমতায় থাকছিই।

এবার হিসেবের ওপর পৃষ্ঠা দেখা যাক।

১) প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বেড়ে ৫ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। আর অর্থনীতির এ দুই সূচকের ওপর ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বেড়েছে আড়াই গুণ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই তিন সূচকই দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত রেখেছে। গত পাঁচ বছরে গড়ে ৬ শতাংশের উপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনেও রেমিটেন্স, রপ্তানি আয় ও রিজার্ভ বিশেষ অবদান রেখেছে। (বিডি নিউজ ডট কম)

২) এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) মনে করছে, চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে যা বিদায়ী বছরে ছিল ৬ শতাংশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও শক্ত অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও সরকারের নেওয়া নানা প্রণোদনাগুচ্ছের কারণে বাংলাদেশ স্থিতিশীল এই প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বলে এডিবি মনে করছে। (প্রথম আলো)

৩ ) আইএমএফ প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের দিক দিয়ে বিশ্বের ১৫০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম।” পূর্বাভাস অনুযায়ী এবার ভারত ৬ শতাংশ, পাকিস্তান ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, শ্রীলংকা ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, নেপাল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, মালয়েশিয়া ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ভিয়েতনাম ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ও চীন ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। এর আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৬ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৬ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয় বাংলাদেশের জন্য। (বাংলা নিউজ ২৪)

৪ ) মহাজোট সরকারের চার বছরের বড় সাফল্য হলো জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে ধারাবাহিতা। সরকার বাজেট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শেষ অর্থবছরেও ছয় শতাংশের ওপর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে এই চার বছরে দেশের মানুষের আয় দুই শ’ ডলারেরও বেশি বাড়াতে সমর্থ হয়েছে। (জনকণ্ঠ)

৫) মাথাপিছু আয় ১৯৭৩ সালে ৯০ মার্কিন ডলার থেকে ২০১১তে ৭৪৮ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু ক্রয়ক্ষমতা দিয়ে দেখলে দেখা যায়, ১৯৮০ এবং ২০১০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু ক্রয়ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়েছে, যা ৬৭৭ থেকে ১ হাজার ৪৮৮ ডলার হয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশেও ওই সময়ে মাথাপিছু ক্রয়ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়েছে। (সমকাল)

৭) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১০ সালের খানা জরিপ অনুযায়ী, দারিদ্র্য হার কমে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দারিদ্র্য হার কমার গতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুততর হয়েছে। যেমন ১৯৯১-৯২ এবং ২০০৫ সালে দারিদ্র্য হার কমেছে বছরে গড়ে ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ হারে; ২০০৫ এবং ২০১০-এর সময়কালে কমেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। আর ১৯৯১-৯২ এবং ২০১০ এই পুরো সময়কালে দারিদ্র্য কমার হার ছিল গড়ে বছরে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। চীন ও ভারতের পরে বাংলাদেশই দারিদ্র্য দূরীকরণে এতখানি অর্জন করতে পেরেছে। (সমকাল)

৮ ) বিশ্বব্যাংক মনে করে, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষে মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণ সম্ভব। লন্ডনের দৈনিক পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের মতামত নিয়ে লিখেছে, বাংলাদেশ ২০৫০ সালে পশ্চিমা বিশ্বকে ছাড়িয়ে যাবে। (প্রথম আলো)

৯) অর্থবছরে (২০১২-১৩) রফতানি আয়ের আগের অর্থবছরের (২০১১-১২) তুলনায় এ আয় ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। (সমকাল)

১০) ৪০ বছর আগে দেশে ১ কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো। বর্তমানে দেশে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টন। চার দশকে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন গুণ। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ২০ শতাংশ। ৪০ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে নয় গুণেরও বেশি। এ সময় জিএনআই ৯০ ডলার থেকে ৮১৮ ডলারে উন্নীত হয়েছে। ক্রয় মক্ষমতার ভিত্তিতে জিএনআই ১ হাজার ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। রেমিটেন্স আয়ের দিক দিয়ে বিশ্বের ষষ্ঠ স্থান বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১১ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। (জনকণ্ঠ)

(কৃতজ্ঞতা-প্রীতম, আমার ব্লগ)

রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা গ্রেফতার হয়েছে। সরকার দলীয় হওয়া সত্বেও সরকার তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করেছে। অথচ ২০০৫ সালে এমভি কোকো নামে লঞ্চ ডুবে যাওয়ায় অনেক লোকের সলিল সমাধি হয়েছিল। কিন্তু কোকোকে গ্রেফতার কি করা হয়েছিল? বিশ্বজিতের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ছাত্রলীগের নাম আর পদবী নিয়েও তাদের শেষ রক্ষা হয় নি। সরকার তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করেছে। লিমনের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো সরকার তুলে নিয়েছে। সাংবাদিক পেটানোর মামলায় আওয়ামী সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি কারাগারে। তবে এ সমস্ত উচিৎ কাজগুলো সময় মত করা হলোনা কেন? আওয়ামী লীগ শাসনামলে যুবলীগ ছাত্রলীগের চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, হল দখলদারী, মারাত্বক আকার ধারণ করে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। দূর্বল যুক্তি দেয়া হয়, কলেজ ইউনিভার্সিটি সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিবিরের সীমাহীন দৌ্রাত্ব্য, ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি প্রতিহত করতে ছাত্রলীগের প্রয়োজন। আমি সেটা মনে করিনা। জামাত, বি এন পি’র ক্যাডারের প্রয়োজন আছে আওয়ামী লীগের থাকতে পারেনা। সশস্ত্র বিপ্লব, সহিংস আন্দোলন নয়, অহিংস গনতান্ত্রীক আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধিকার কী ভাবে আদায় করে নেয়া যায় অতীতে আওয়ামী লীগ এর প্রমাণ দেখিয়েছে। আজ সেই আওয়ামী লীগ তার মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে, তাই তার ক্যাডারের প্রয়োজন পড়ে। ছাত্রলীগ যুবলীগের সকল অপকর্মের দায়ভার অবশ্যই আওয়ামী লীগের। শিবিরকে দমন করা সরকারের দায়ীত্ব ছাত্রলীগের নয়। এ ব্যাপারে সাংসদ মন্ত্রীদের প্রশ্ন করেছি অনেকবার, সদুত্তর পাই নি বরং বলেছেন ওরাও তো তেমন করে। আর আমি বারবার বলি, তুমি অধম বলে আমি উত্তম হবোনা কেন?

জামাত, বি এন পি’র বেঁচে থাকা সহিংসতা, মিথ্যাচার, প্রোপাগান্ডা, খুন, সন্ত্রাসের উপর নির্ভরশীল। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে বিরোদ্ধমতের রাজনৈতিক দলের নেতাদের, মুক্তিযোদ্ধাদের খুন করা মেজর জিয়ার প্রয়োজন ছিল শেখ মুজিবের নয়। এ পর্যায়ে এসে জামাত, তাদের সহযোগী সংগঠন ও সন্ত্রাসী শিবিরের আমলনামাখানা সংক্ষেপে পড়া যাক।

১৯৮১ সাল থেকে এ পর্যন্ত শিবিরের হাতে চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কতজন ছাত্রলীগ কর্মী খুন হয়েছে তার পূর্ণ হিসেব হয়তো আর পাওয়া যাবেনা।

১৯ ৮১- শিবির ক্যাডাররা চট্টগ্রাম সিটি কলেজের নির্বাচিত এজিএস ছাত্রলীগ নেতা তবারক হুসেনকে কলেজ ক্যাম্পাসেই কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিল। কিরিচের এলোপাতাড়ি কোপে মুমূর্ষ তবারক যখন পানি পানি করে কাতরাচ্ছিল তখন এক শিবির কর্মী তার মুখে পেশাব করেছিল। সেই থেকে এমন কোন বৎসর নেই যে শিবিরের পান্ডারা কলেজ ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র শিক্ষক খুন করেনি।

১৯৮২- চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৩ বাস বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে এসে শিবির ক্যাডাররা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। এই সহিংস ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

১৯৮৪- চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হলের ১৫ নম্বর কক্ষে শিবিরেরকর্মীরা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও মেধাবী ছাত্র শাহাদাত হোসেনকে জবাই করে হত্যা করে।

১৯৮৬- শিবির ডান হাতের কবজি কেটে নেয় জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতা আবদুল হামিদের। পরবর্তীতে ঐ কর্তিত হাত বর্ষার ফলায় গেঁথে তারা উল্লাস প্রকাশ করে।

১৯৮৮- চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ নেতা জালালকে তার নিজ বাড়ীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা।

১৯৮৮- সিলেটে শিবির ক্যাডাররা মুনীর, জুয়েল ও তপনকে বর্বরভাবে হত্যা করে।

১৯৮৮- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোঃ ইউনুসের বাসভবনে ছাত্র শিবির বোমা হামলা করে। এতে অধ্যাপক ইউনুস বেঁচে গেলেও তার বাড়ীর কর্মচারী আহত হয়।

১৯৮৯- নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে সন্ধ্যায় জাসদ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর শিবিরের বোমা হামলায় বাবু, রফিক সহ ১০ জন আহত হয়।

১৯৯০- ছাত্রমৈত্রীর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ সভাপতি ফারুকুজ্জামানকে শিবিরের ক্যাডাররা জবেহ করে হত্যা করে।

১৯৯২- শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে হরতাল কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে জাসদের মিছিল চলাকালে শিবিরের সশস্ত্র হামলায় সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে জাসদ নেতা মুকিম মারাত্মক আহত হন এবং ২৪ জুন তিনি মারা যান।

১৯৯৩- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালালে ছাত্রদল ও সাবেক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মিলে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ওপর শিবিরের হামলায় ছাত্রদল নেতা বিশ্বজিৎ, সাধারণ ছাত্র নতুন এবং ছাত্র ইউনিয়নের তপন সহ ৫ জন ছাত্র নিহত হয়।

১৯৯৪- পরীক্ষা দিতে আসার পথে তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনের রাস্তায় ছাত্রমৈত্রী নেতা প্রদুৎ রুদ্র চৈতীর হাতের কব্জি কেটে নেয় শিবির কমীরা।

১৯৯৫- জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কমীদের ওপর সশস্ত্র শিবির কমীরা হামলা করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছাত্রনেতা ফরহাদের হাতের কব্জি কেটে নেয়। এ হামলায় প্রায় ২৫ জন ছাত্রদল নেতা-কমীর হাত পায়ের রগ কেটে নেয় শিবির ক্যাডাররা।

১৯৯৬- জাসাস রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করে এবং ছাত্রদল নেতা ডুপ্লের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। এদের বাঁচাতে এসে দুইজন সহপাঠি ছাত্রী এবং একজন শিক্ষকও আহত হয়।

১৯৯৭- চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট দখল করার জন্য শিবির ক্যাডাররা ছাত্র সংসদের ভিপি মোহাম্মদ জমির ও কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদউদ্দিন আহমদকে গুলি করার পর পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।

১৯৯৮- শিক্ষক সমিতির মিটিং থেকে ফেরার পথে রাবি শহীদ মিনারের সামনে অধ্যাপক মোঃ ইউনুসের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্র শিবির। ছাত্র-কর্মচারীদের প্রতিরোধে অধ্যাপক ইউনুস প্রাণে বেঁচে গেলেও মারাত্মক আহত হন তিনি।

১৯৯৯- রাবিতে অবস্থিত ৭১ এর গণকবরে স্মৃতিসৌধ নির্মানের জন্য স্থাপিত ভিত্তি প্রস্তর রাতের আঁধারে ছাত্র শিবির ভাঙ্গতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী বাধা দেন। ফলে শিবির ক্যাডাররা তাকে কুপিয়ে আহত করে এবং ভিত্তিপ্রস্তর ভেঙ্গে ফেলে।

২০০০- চট্টগ্রামের বদ্দরহাটে শিবির ক্যাডাররা মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা ৮ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

২০০১- রাবি ছাত্রী হলে বহিরাগত অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত ছাত্রী বিক্ষোভে সশস্ত্র ছাত্র শিবির কমীরা কমাণ্ডো হামলা চালায় এবং ছাত্রীদেরকে লাঞ্ছিত ও রক্তাক্ত করে।

২০০২- রাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেতা সুশান্ত সিনহাকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয় শিবির কর্মীরা।

২০০২- হাওয়া ভবনের খুনীরা খুন করে প্রকৌশলী শফিক উল মাওলা টিপুকে।

২০০৪- অধ্যাপক মোঃ ইউনুসকে ফজরের নামাজ পড়তে যাবার সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যদিও এই হত্যা মামলায় জেএমবির দুইজন সদস্যকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তারপরও এলাকাবাসী অনেকেরই মতামত হচ্ছে ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররাই তাকে হত্যা করেছে। উল্লেখ্য, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে দুই দফায় ছাত্র শিবির তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।

২০০৪ সালের ২০ মে, জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ জেএমবির সশস্ত্র জঙ্গীরা নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার সিম্বা গ্রামের ইদ্রিস আলী ওরফে খেজুর আলী ও আব্দুল কাইয়ুম বাদশাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। খুনীরা হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বাদশার মরদেহ উল্টো করে গাছে ঝুলিয়ে রাখে আর খেজুর আলীকে টুকরো টুকরো করে রানীনগরের ভেটি জেএমবির ক্যাম্পে মাটিতে পুতে রাখে।


২০০৪- বরিশালের বাবুগঞ্জের আগরপুর ইউনিয়নের ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শামীম আহমেদকে শিবির ক্যাডাররা হত্যা করে।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী একুশে বই মেলা থেকে ঘরে ফেরার পথে ডঃ হুমায়ুন আযাদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালায় জোট সরকারের পোষা জামাতুল মুজাহিদীন ও হরকাতুল জিহাদ নামের ইসলামী জঙ্গীরা। চাপাতি’র আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক! দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে’র একজন শিক্ষকের উপর এমন আক্রমন জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জা’র।


২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সারা দেশে সন্ত্রাসী গ্রেনেড-বোমা হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে সুপরিকল্পিত ও ঘৃন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বীভৎসময় মৃত্যুপুরীতে পরিনত করেছিল। এই পৈশাচিক হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমান সহ চব্বিশ জন। আর আহত হয়েছিলেন প্রায় ৪০০ নেতা কর্মী।

২০০৫- সন্ধ্যায় জুবেরী ভবনের সামনে রাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এস এম চন্দনের ওপর হামলা চালিয়ে তার রগ কেটে নেয়ার চেষ্টা চালায় শিবির ক্যাডাররা।

২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট সারা দেশের ৬৩ জেলার ৫শ স্থানে প্রায় একই সময়ে বোমা হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবি। এই হামলায় মারা যান ২ জন, আহত হয় প্রায় শতাধিক। দেশ বিদেশে আলোচিত এই বোমা হামলার পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে জেএমবির আত্মঘাতি বোমা হামলায় বিচারক আইনজীবি পুলিশসহ নিহত হন ৩৩ জন।

২০০৬- বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাতপন্থী শিক্ষক মহিউদ্দিন এবং রাবি ছাত্র শিবির সভাপতি মাহবুব আলম সালেহীন সহ আরো দুইজন শিবির ক্যাডার মিলে একযোগে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে রাবির ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবু তাহেরকে হত্যা করে।

২০০৬- রাবিতে অনুষ্ঠিত সেকুলারিজম ও শিক্ষা শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেয়ার অপরাধে অধ্যাপক হাসান আজিজুল হককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে শিবির। প্রকাশ্য সমাবেশে তারা অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের গলা কেটে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়।

২০১০-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যা করে ম্যানহোলের মধ্যে ফেলে রাখে শিবিরের ক্যাডাররা।

ফেব্রুয়ারি ২০১৩, ইসলামী ছাত্রশিবিরের খুনীরা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।


এ সবই আজ ইতিহাস কিন্তু বিশ্বজিৎ হত্যা মানুষের চোখে চোখে। এর কারণ আওয়ামী লীগের প্রচারণার অভাব। এটাও আওয়ামী লীগের ইমেজ সংকটের একটি কারণ। সে নিজের সফলতা যেমন ভালভাবে প্রচার করতে পারেনা তেমনি অন্য দলের ব্যর্থতাও জনসমক্ষে তুলে ধরতে জানেনা। জামাত বি এন পি’র মিথ্যা ও প্রোপাগান্ডার দুষ্ট রাজনীতির খেলায় আওয়ামী লীগ এক অসম খেলোয়াড়। সুচতুর মাহমুদুর রহমান, তার আমার দেশ পত্রিকা ও বাঁশের কেল্লা ব্লগের নোংরা অপপ্রচারের বিপরীতে আওয়ামী লীগের কোন প্রচারসেল নেই, কোন কার্যকরী প্রতিরোধ নেই। তাদের প্রচার সেল বলতে আসলেই বোধ হয় কিছু নেই। ধর্মের নামে সারা দেশ জুড়ে যখন অধর্ম চলছে আওয়ামী লীগ তখন নিজের মুসলমানিত্ব প্রমাণে ব্যস্ত। রোম যখন পুড়ে নিরো তখন বাঁশি বাজায়। প্রচারণার অভাবেই আওয়ামী লীগের সাফল্যগুলো মানুষের নজর এড়িয়ে যায়, এবং বিরোধী শিবিরের ব্যাপক প্রচারণার ফলে আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট হয়। যে দেশের শতশত মানুষকে রাত প্রভাতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে ‘আকাশের চাঁদে সাঈদীকে দেখা গেছে’ বিশ্বাস করানো যায়, সেই সকল মানুষকে অবহেলা করে, তাদের থেকে দূরে থেকে, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত নিজ দলের কঠোর সমালোচনা করা দেখে আমার সহকর্মী বন্ধুরা মাঝেমাঝে আমাকে প্রশ্ন করেন, তাহলে আমি কেন আওয়ামীলীগ সমর্থন করি। আমি বলি বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত, স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী, ধর্মনিরপেক্ষবাদী আর অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সমর্থন করি। বাংলাদেশে এর বিকল্প বৃহৎ কোন দল এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি তাই আওয়ামী লীগকে ঘিরে এখনও সপ্ন দেখি।

এই বিপর্যয়, এই দূরবস্থা থেকে উত্তরণে আওয়ামী লীগকে কী করতে হবে ? কাঙ্গালের কথা হয়তো কেউ কানে তুলবেনা, তবে কথাগুলো বাসী হলে ফলতেও পারে। উত্তরণের চাবি কাঠিটা আছে শেখ হাসিনার হাতে-
– নিরংকুশ ক্ষমতার দম্ভ, অহংকার ত্যাগ করে জনগনের কাছে পৌছুতে হবে।
– অসম্পূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন না হওয়ার যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে হবে।
– বিরোধী দলের সকল অপপ্রচার, মিথ্যাচার, প্রোপাগান্ডার জবাব সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
– নিজেকে ধার্মিক পরিচয় দেয়ার কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
– ডঃ ইউনুস উপাখ্যান নির্বাচনী প্রচারণায় দূর রাখতে হবে।
– গ্যাস-বিদ্যুত উৎপাদনের অগ্রগতি বিগত সরকারের সাথে তুলনামূলক ব্যবধান জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে।
– চার পাশে ঘিরে থাকা চাটুকারদের ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে।
– অযথা অকারণে বঙ্গবন্ধুর গুনগান করা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কপচানো বন্ধ করতে হবে।

আওয়ামী লীগ ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এই দেশে আর কেউ করবেনা বা করতে পারবেনা, তা আওয়ামী লীগের জনমশত্রুরাও স্বীকার করবে। আওয়ামী লীগ নেই মা’নেই তো হাওয়া ভবন, ছেড়া গেঞ্জি ভাঙ্গা সুটকেসের ঔরসে যুবরাজ। তারেক, ফালু, মামুন, সাকার ইতরামী। হিংস্র লাল চক্ষুর বাংলা ভাই, মুফতি হান্নান, শায়েখ আব্দুর রহমান। জে এম বি, হরকাতুল জিহাদ, ১৭ আগষ্ট, ২১ আগষ্ট, বাবর, মুজাহিদ, জজ মিয়া নাটক, মাজারে, আদালতে, সিনেমা হলে বোমা। চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরে অনেকেই আগামী সাধারণ নির্বাচনে সিট গণনা করে বলে দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের অবস্থান। কেউ বলছেন ত্রিশ আর কেউ বলছেন তিন। কেউ কেউ আরেকটু আগ বাড়িয়ে এমনও মন্তব্য করছেন যে, গোপালগঞ্জের সিটটাও এবার গেল। অনেকেই দাবী করছেন, তারা আওয়ামী লীগের বিদায় ঘণ্টাধ্বনি স্পষ্টই শুনতে পাচ্ছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, অমুসলিম অবাঙ্গালী সম্প্রদায়, পাহাড়ের আদিবাসিদের মানসপটে জোটসরকারের শাসনামলের নৃশংস বিভৎস চিত্রগুলো আবার ভেসে ওঠতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিরোদ্ধে সাক্ষী দাতাগণ তাদের প্রাণের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিত হচ্ছেন। আজ যারা মানবতা বিরোধী জঘন্য অপরাধের জন্যে দন্ডিত হচ্ছেন, শাস্তি পাচ্ছেন, কাল তারা হয়তো সেই বিচারক, সেই যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবী উত্তোলনকারীদেকেই ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিবে। তাই আজ সঙ্গত কারণেই শঙ্কিত হই, তবে কি ফিরে আসছে সেই ভয়াবহ দিনগুলো?

আকাশ মালিক
ইংল্যান্ড, জুলাই ২০১৩।