ইংরেজীতে “Historical Chauvinism” বলে একটা কথা আছে। এর বাংলা কোন প্রতিশব্দ আছে বলে জানা নেই, কাছাকাছি অর্থ করতে গেলে একে বলা যায় ‘ইতিহাসিক শ্রেষ্ঠত্ববাদ’ এর মতো কিছু। ইতিহাসিক শ্রেষ্ঠত্ববাদ কে সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায় বর্তমানে বসে অতীতের প্রতি নাক সিটকানো। আরেকটু বিশদভাবে বলতে বললে Historical Chauvinism অর্থ বর্তমান সময়ে বসে, অতীত ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে, বর্তমানের শিক্ষাদীক্ষা, বিজ্ঞান, মূল্যবোধ এসব কিছুর উত্তরাধিকারী হয়ে, বর্তমানের চোখ দিয়ে দেখে, অতীতের মানুষদের নৈতিকতা, যুক্তিবোধ, সমাজব্যবস্থা ইত্যাদিকে হীন করে দেখা। আরেকটু অন্যভাবে বলতে গেলে এর অর্থ অতীতের মানুষেরা, ‘ইশশ, ওরা কেমন করে এসব করতো’, এই ভেবে আত্মপ্রসাদ নেয়া।
এই রকম ইতিহাসিক শ্রেষ্ঠত্ববাদ আমরা সবাই কমবেশি লালন করি। এটি সবচেয়ে বেশী দেখা যায় যখন আমরা অতীতের বিভিন্ন রকমের সামাজিক, রাজনৈতিক প্রথার আলোচনায় বসি। বিশেষ করে হাজার বছর ধরে ক্রীতদাসপ্রথা, নারীদের প্রতি আচরন, সম্রাট-রাজাদের অমিতাচার, এই সব বিষয়গুলি হলো ইতিহাসিক শ্রেষ্ঠত্ববাদ এর সবচেয়ে উর্বর ক্ষেত্র। যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্রীতদাসদের প্রতি চূড়ান্ত অমানবিক আচরন এর কথা পড়ে আমাদের মধ্যে কে বা কারা ক্রীতদাসমালিক এবং সুবিধাভোগীদের প্রতি তীব্র ঘৃনাবোধ করি নি? আমাদের মধ্যে কে মনে করি নি যে মালিক এবং সুবিধাভোগীসমাজের মধ্যে নৈতিকতা-মানবিকতার তীব্র অভাব ছিলো? এখনকার দিনে আমাদের মধ্যে কারা আমাদের পূর্বপুরুষদের নারীদের প্রতি আচরন এর কথা জেনে তাদেরকে একটু হলেও হীনচোখে দেখি না? রবীন্দ্রনাথের মতো শ্রেষ্ঠ রুচি ও প্রতিভার মানুষও যখন দশ-এগারো বছরের মেয়েশিশুকে বিয়ে করে তার সাথে উপগত হন, তখন, রবীন্দ্রনাথের কণামাত্র প্রতিভা না থেকেও কেবল একশ বছর পরে জন্মের সৌভাগ্যের কারনে তার প্রতি একটু হলেও নাক সিটকাতে আমাদের কারো বাধে না। শুধু সামাজিক প্রথা আর ব্যাক্তি আচরনই নয়, অতীতের ইতিহাসে রাজা-রাজড়াদের স্বেচ্ছাচারিতা, সাম্রাজ্যবাদ, শোষন এই সবই কেমন করে অতীতের মানুষেরা মেনে নিতো এসব আমাদেরকে অনেক সময়েই আশ্চর্য করে। আমাদের সবার মধ্যেই এই ধারনাটি কমবেশী গেড়ে বসে যে বর্তমানের আমাদের তুলনায়, অতীতের মানুষজন ন্যায়নীতিবোধ, মূল্যবোধের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে।
http://www.theunknownpen.com/wp-content/uploads/2013/03/Tagore-with-wife-1883.jpg
বর্তমানের লেন্সে অতীতকে দেখা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কারন সবকিছুর উপরে আমরা সময়ের সন্তান। আমাদের বর্তমানের জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংষ্কৃতি, সমাজ সবকিছুই কয়েক হাজার বছরের এক্যুমুলেটেড সাংষ্কৃতিক বিবর্তনের ফল। বিবর্তন ও পুন্জীভবন (accumulation) মানুষের লিপিবদ্ধ সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয়। ঠিক এই জন্যেই কোন একটি সময়ে বসে অতীতের যেকোন সময়কে, সেই সময়ের দৃষ্টিতে দেখার কোনো উপায় নেই। আমরা শত চেষ্টা করলেও আমাদের এই সময়ের জ্ঞান, সংষ্কৃতি, মূল্যবোধকে ভুলতে পারবো না। ইতিহাস বিশ্লেষনের সময়ে ইতিহাসবিদদের এই বর্তমানের লেন্স বিষয়টি সম্পর্কে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। ইতিহাসবিদ্যায় এই জিনিষটির একটি বিশেষ নামও রয়েছে, Presentism, যার কাছাকাছি বাংলা বলা যায় বর্তমানবাদ। ইতিহাসবিদরা বর্তমানবাদ বলতে বোঝান মূলত দুটি বিষয়কে, (১) অতীতকে বর্তমানের সাপেক্ষে বিশ্লেষন আর (২) নিকট অতীত (খুব কাছাকাছি সময়ের ইতিহাস ৫০-১০০ বছরের মধ্যে) সময়ের অনেক বেশী রেকর্ড থাকার কারনে বর্তমান ও নিকট অতীতকে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন বিবেচনা করা। ইতিহাসবিদদের নিজেদের মধ্যেই অনেক বিতর্ক রয়েছে যে অতীত বিশ্লেষনে বর্তমানের দৃষ্টিভংগী কতটুকু এড়িয়ে থাকা সম্ভব তা নিয়ে। অনেকেই বলেন ইতিহাসচর্চার মূল দায়িত্ব সকল রকমের নৈতিক বিচার (moral judgement) এড়িয়ে কেবল নিস্পৃহ ঘটনা ও তথ্য বিশ্লেষন। আবার কেউ বলেন মানুষের সমাজ বিবর্তনের ইতিহাস বুঝতে হলে নীতি ও মূল্যবোধের বিবর্তন বোঝার চেষ্টা না করে উপায় নেই, সেটা যতই বর্তমানবাদ এর দোষে দুষ্ট হোক না কেনো।
নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের ইতিহাসের মধ্যে বিবর্তন, সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। স্বাভাবিক কারনেই এই বিষয়ে বিজ্ঞানের মতো কোনো যুক্তিগতভাবে সুসংহত ও পরিপূর্ন থিয়োরী দেয়া সম্ভব নয়। এর মূল কারন হলো মানবসমাজকে প্রকৃতির মতো রিডাকশনিস্ট ( Reductionist) দৃষ্টিতে বিশ্লেষন করা প্রায় অসম্ভব। তবু সমাজবিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেন ইতিহাসের মধ্যে সমাজ ও নীতিবোধের বিবর্তনকে কোন তত্বীয় কাঠামোর মাধ্যমে ব্যাখা করার। সামাজিক বিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিবর্তনের মধ্যে অনেক রকম মিল থাকায়, অধিকাংশ তত্বই প্রাকৃতিক বিবর্তনকে অবলম্বন করে দাড় করানো হয়েছে।
মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের যেমন বায়োলজিক্যাল ভিত্তি রয়েছে তেমনি নৈতিক সংগঠনে সমাজের ভূমিকাও রয়েছে অনেক। কিছু মৌলিক নীতিবোধ, যেমন পরিবারের প্রতি কর্তব্য, ন্যায় বিচার বোধ, পরোপকার, এই সবের পিছনে বায়োলজিক্যাল ভিত্তির ভূমিকা অনেক বেশী। আবার কিছু কিছু নীতিবোধ, যেমন অন্য জাতির প্রতি বিদ্বেষ-হিংসা, অন্যের অধিকারসচেতনতা, এসবের পিছনে বায়োলজীর সাথে সাথে সমাজ ব্যবস্থার ভূমিকাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর যেহেতু সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে সমাজব্যবস্থা পাল্টে যায়, সেহেতু মানুষের নীতিবোধের বেশকিছু অংশে পরিবর্তন ঘটতে থাকে সময়ের সাথে সাথে। প্রাকৃতিক বিবর্তনের চালিকাশক্তি হলো পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে জীবপ্রজাতির আভ্যন্তরীন পরিবর্তন (mutation) এর পারষ্পরিক মিথষ্ক্রীয়া। সামাজিক বিবর্তনের মূল চালক হিসেবে ধরা হয় সমাজের টেকনোলজী বা উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে বাহ্যিক পরিবেশের মিথস্ক্রীয়াকে।
এখানে টেকনোলজী বলতে আমি কেবল যন্ত্রপাতি বোঝাচ্ছি না, সমাজের টেকনোলজী মানে যন্ত্রপাতি, সিস্টেম, প্রথা, সম্পর্ক, জ্ঞান যা কিছু উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জড়িত, তাকেই বুঝিয়েছি। টেকনোলজী এবং সে সম্পর্কিত জ্ঞান-বিজ্ঞান আবার একটি পুন্জীভবন প্রক্রিয়া (Cumulative process)। অতীতের যাবতীয় আরদ্ধ জ্ঞানের কোন কোন অংশ সময়ের সাথে পাল্টে যায় নতুন জ্ঞানের আলোকে, বাকী অংশের অনেকটা থাকে অপরিবর্তিত আবার কিছু কিছু অংশ বিভিন্ন কারনে হারিয়েও যায়। টেকনোলজীর যখন বড়ো পরিবর্তন হয় তখন উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্যে সমাজও বিবর্তিত হয়। আর সমাজ বিবর্তনের সাথে মানুষের বিভিন্ন রকম মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে মূল্যবোধের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন সম্পর্ক রয়েছে।
একথা অবশ্যই বলা দরকার যে উৎপাদন ব্যবস্থাই সমাজ ও মূল্যবোধের একমাত্র নিয়ামক নয়, এটি ছাড়াও আরও অনেক ফ্যাক্টর আছে। সামাজিক বিবর্তন একটি পথ নির্ভর (path dependent) প্রক্রিয়া। কোন একটি সমাজ তার ইতিহাসে কি ধরনের পরিবেশে ছিলো, তাদের উৎপাদন ব্যবস্থা কিভাবে বিবর্তিত হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসই বা কি ছিলো এ সবই সেই সমাজের বর্তমান মূল্যবোধ ব্যবস্থার পেছনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। যেহেতু দুটি ভিন্ন সমাজের পথ পুরোপুরি এক হয় না সেহেতু দেখা যায় যে অনেকক্ষেত্রে দুটি ভিন্ব সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা কাছাকাছি হলেও সেখানে সামাজিক মূল্যবোধের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। চীন ও ভারতের অর্থনীতি যদি খুব কাছাকাছি রকমেরও হতো তবু চীন ও ভারতের সমাজের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য অবশ্যই থাকতো। কারন গত ৭০ বছরের মধ্যেই চীন ও ভারত সম্পূর্ন ভিন্ন দুটি রাজনৈতিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। তবে আধুনিক বিশ্বসমাজের বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ন দিক হলো যে দ্রুততর টেকনোলজী পরিবর্তন, দ্রুততর সামাজিক পরিবর্তন এবং দ্রুততর সংষ্কৃতির ছড়িয়ে পরা (Transmission)। এজন্যে বিভিন্ন দেশের মানুষের মূল্যবোধের convergence হচ্ছে দ্রুততর।
উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সাথে সমাজ এবং সেই সাথে মানুষের মূল্যবোধের পরিবর্তন কিভাবে হয় এটা বোঝার জন্যে ক্রীতদাস প্রথা এবং এর প্রতি মানুষের মনোভাব এর চেয়ে ভালো উদাহরন কমই হয়। পনেরো হাজার বছর আগে, যখন পৃথিবীতে মানুষের সবগুলি সমাজই ছিলো ছোট ছোট শিকারী-সংগ্রাহক (Hunter-Gatherer) এর দল তখন ক্রীতদাস বলে কিছু ছিলো না। কারন সেই জীবনে নিজের দলের বেচে থাকার জন্যে খাবার জোগাড় করাই এতো কষ্টকর ছিলো যে বাড়তি ক্রীতদাস পেলে তাকে খাওয়ানোর মতো সামর্থ্য কোনো দলের হতো না। সেকারনে এক দলের সাথে আরেক দল লড়াই হতো মূলত শিকারের জায়গার দখল নিয়ে। জয়ী দল পরাজিতদের দেশ ছাড়া করতো কিংবা সবগুলো পুরুষ আর শিশু মেরে ফেলে কেবল সন্তানজননক্ষম নারীদের নিজ দলে নিয়ে নিতো। ঠিক একই কারনে মানুষ কৃষিকাজ শুরু করার সময়েও দাসপ্রথার প্রচলন হয় নি। দাসের জন্য উদ্বৃত্ত খাবার ছাড়া আরো দরকার হয় দাসের শ্রমের প্রান্তিক মূল্য (Marginal Productivity) যথেষ্ট পরিমানে হওয়া। একজন দাস সারাদিন খেটে যদি কেবল নিজের খাদ্যের কাছাকাছি উৎপাদন করতে সক্ষম হয় তবে মালিকের শোষন করার মতো কোনো উদ্বৃত্ত থাকে না।
ধাতুর আবিষ্কার, কৃষিকাজে পশুশ্রম এবং এরকম আরো কিছু উদ্ভাবনের ফলে কৃষিকাজের শ্রমের Marginal Productivity অনেক বেড়ে গেলো এবং তখনই সমাজে দাস রেখে সবচেয়ে কষ্টকর কাজগুলো তাদের দিয়ে করিয়ে নেয়া সম্ভব হলো। দাসপ্রথার শুরু হলো নগর সভ্যতার পত্তন ও বিকাশের অন্যতম ফ্যাক্টর। দাসদের শ্রমেই প্রাচীন মিসর, ব্যাবিলনের নগর-পিরামিড, চীনের প্রাচীর, গ্রীসের পার্থেনন গড়ে ওঠে। প্রাচীন সভ্যতাগুলিতে (খ্রী ৪০০-৫০০ পর্যন্ত) দাসপ্রথ নিয়ে একটি জিনিষ উল্লেখ্য যে যেইসব রাজ্যগুলি বেশী পরাক্রমশালী ও সমৃদ্ধ ছিলো, সেখানেই দাসের ব্যবহার বেশী ছিলো এবং দাসদের প্রতি মালিকশ্রেনীর মূল্যবোধ ততটাই উন্নাসিক ছিলো। প্রাচীন গ্রীসে সবচেয়ে বিস্তারিত রাজ্য ছিলো এথেন্সের আর এথেন্সেই দাসদের অবস্হা ছিলো সবচেয়ে খারাপ। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রীতদাসের সহজলভ্যতাই এই ধরনের এটিচিউডের মূল কারন। এসময়ে অ্যারিস্টটলের মতো শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ দাসপ্রথাকে মানবসমাজের স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক নীতি বলেই গণ্য করতেন। দাসদের প্রতি ব্যবহার নিম্নতম পর্যায়ে নামে রোম সাম্রাজ্যের মধ্যগগনে (খ্রী পূ ১০০ থেকে খ্রী ২০০) এই সময়ে রোম সাম্রাজ্য তার সকল প্রতিবেশীর চেয়ে এতো শক্তিশালী হয় এবং আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধরে আনা লক্ষ লক্ষ দাস এতো সহজপ্রাপ্য হয় যে সবচেয়ে সবল শক্তিশালী ক্রীতদাসদের নিয়ে গ্ল্যাডিয়েটর খেলা নিয়মিত আনন্দ বিলাসে পরিনত হয়।
এখানে ইতিহাসে সাংষ্কৃতিক বিবর্তনের আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। খ্রী:পূ ৫০০ থেকে খ্রী ৫০০ এই সময়টিকে বলা যায় বিশ্বসভ্যতার প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মপ্রথার যুগ। এসময়েই সভ্যতার বৃহৎ ধর্মগুলি ফর্মালাইজড হয়ে উঠে। বিভিন্ন ধর্মের আবির্ভাব ও বিবর্তন মানুষের সভ্যতার পুন্জীভবন (accumulation) প্রক্রিয়ার স্পষ্ট উদাহরন। প্রতিটি ধর্মই এর আগের ধর্ম ও প্রথার উপরে ভিত্তি করে গড়ে উঠে এবং কিছু নতুন স্পষ্ট মতবাদ দিয়ে নিজেদের স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠা করে। এই সময়ে প্রাচ্য ও পশ্চিমে আসা ধর্মগুলি সাধারনত বড়ো বড়ো সাম্রাজ্যের প্রান্তসীমায়, যেখানে দাসদের সংখ্যা কম এবং যেখানে সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তির প্রকোপ কম, সেরকম এলাকাতেই প্রথমে বিকাশ হয়। নতুন ধর্মগুলি সবচেয়ে আবেদন রাখে গরীব, ভূমিদাস, ক্রীতদাসদের মধ্যে যাদের এই পৃথিবীতে প্রাপ্তির আশা কম। একারনে নতুন ধর্মগুলি সাধারনত দরিদ্র ও ক্রীতদাসের অধিকার নিয়ে কিছু ভালো নির্দেশনা দেয় যেনো এই শ্রেনীর লোকেরা এতে আকৃষ্ট হয়। এর পরেও ধর্মগুলি সাধারনত পুরো সমাজ অর্থনীতিকে পাল্টে দেবার মতো বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন, যেমন দাসপ্রথার পুরো বিলুপ্তি, এসবের কথা বলে না কারন এতে সমাজের মালিকশ্রেনী ছাড়াও রাজরোষ ধর্মের পানে ধেয়ে আসবে দ্রুত ও ব্যাপক ভাবে।
পন্চম শতকের পর থেকে পশ্চিমে রোম সাম্রাজ্যের পতনের পর ইউরোপ রাজনৈতিকভাবে খন্ডবিখন্ড হয়ে পড়ে কিন্তু মধ্য ও নিকট প্রাচ্যে অনেক বড় বড় সাম্রজ্য, যেমন বাইজেন্টাইন, আরব, গড়ে ওঠে। এইসব সাম্রাজ্য দাসপ্রথাও রমরমিয়ে চলে। তবে নতুন ধর্মগুলির প্রভাবে এসময়ে দাসদের সাথে ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক সহনীয় হয়। বিশেষ করে মালিক ক্রীতদাস যখন একই ধর্মের অনুসারী হয় তখন ক্রীতদাসকে কেবলমাত্র ব্যাক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে আচড়ন করা কঠিন হয়ে পরে।
এদিকে মধ্যযুগীয় ইউরোপে (খ্রী ৩০০ থেকে ১৪০০) কোন একক সাম্রাজ্য বিস্তার হয় নি। এই সময়ে ধীরে ধীরে পুরো মহাদেশই খ্রীস্টান হয়।অন্ধকার যুগ সভ্যতার বিকাশ বন্ধ হওয়ার ফলে জনসংখ্যাও কমে আসে রোম সাম্রাজ্যের তুলনায়। রাজা- জমিদারের কাছে গরীব প্রজাদের অর্থনৈতিক মূল্য বেড়ে যায়। সেই সাথে দাসের সরবরাহ কমে যাওয়া ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কারনেই ক্রীতদাস প্রথা এইসময়ে ইউরোপে বন্ধ হয়ে যায় যদিও ভুমিদাস প্রথা, যার মাধ্যমে কৃষকেরা একটি নির্দিষ্ট এলাকার ভূস্বামীর অধীনস্ত হয়ে থাকতো বংশের পর বংশ, সেটি পূর্নমাত্রায় বিকশিত হয়।
ষোড়শ শতাব্দীতে উ: ও দ: আমেরিকার নতুন মহাদেশ আবিষ্কারের পরে মানব ইতিহাসে নেমে আসে কলংকতম একটি অধ্যায়। নতুন মহাদেশের অজস্র সোনা, রূপা’র খনিতে, বিশাল বিশাল আখ, তামাক, তুলার খামারে কাজ করার জন্যে প্রয়োজন অজস্র শ্রমিক। কিন্তু আমেরিকার আদিবাসীদের অধিকাংশ ততদিনে গনহত্যায় আর বিভিন্ন বাইরের জীবানুর আক্রমনে নিশ্চিন্হ হয়ে গেছে। এই বিপুল সম্পদ আহরনের উপায় কি? আটলান্টিক এর ওপারেই রয়েছে আফ্রিকা নামের এক বিশাল মহাদেশে যেখানে রয়েছে কোটি কোটি শক্ত সমর্থ মানুষের এক অফুরন্ত ভান্ডার। শুরু হলো আটলান্টিক দাস চক্র (Atlantic Slave Trade). ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগীজ, ডাচ, ডেনিশ ইউরোপের সবদেশের ব্যবসায়ীরা ঝাপিয়ে পড়লো অত্যন্ত লাভজনক একটি অর্থনীতিতে। আফ্রিকা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক কিনে, জাহাজের খোলে যতদূর সম্ভব প্যাক করে ৫০-৬০ দিনের পথ পাড়ি দিয়ে আমেরিকা, ক্যারিবিয়ানের খনিতে খামারে উচ্চমূল্যে বিক্রি। আর তারপর সেইসব খনি আর খামারে বংশের পর বংশ খাদ্যের বিনিময়ে অমানুষিক শ্রম। এর বিনিময়ে ইউরোপে আসতে থাকলো সোনা, ধাতু, আর সস্তায় চিনি, তামাক, কাপড় এর অন্তহীন সরবরাহ।
http://www.informafrica.com/wp-content/uploads/2012/12/Transatlantic-slave-trade-of-Africans.jpg
এটা লক্ষনীয় যে এই আফ্রিকান ক্রীতদাসদের কিন্তু ইউরোপে নিয়ে যাওয়া হতো না। কারন ততদিনে ইউরোপের অর্থনীতিতে কৃষক, শ্রমিক, কারিগর এসব সাধারন মানুষের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। বাইরে থেকে ক্রীতদাস আনা হলে এই সব সাধারন মানুষের পেশার দাম কমে যেতো এবং রাজ-রাজড়ার বিরুদ্ধে অসন্তোষ বি্দ্রোহে পরিনত হতো। যেহেতু হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে দাসশ্রমের সুবাদে সস্তায় নানা রকম খাদ্য ও পণ্য পাওয়া যাচ্ছিলো সেহেতু নতুন করে আবার দাসশ্রমের ব্যাপক ব্যবহার ইউরোপ-আমেরিকার শ্বেতাংগ সাধারনের মধ্যে তেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি। যাও কিছুটা প্রতিক্রীয়া হতো সেটাকে দমিয়ে রাখার জন্যে চার্চের কিছু নেতা আর কিছু বিখ্যাত পন্ডিত এটা প্রচার করতো যে আফ্রিকানরা ঠিক পুরোপুরি আধুনিক পর্যায়ের মানুষ নয়। তাদের মধ্যে আত্মাই নেই অথবা থাকলেও সেটা পশুদের মতো নিম্ন পর্যায়ের (১) এজন্য জ্বালা-যন্ত্রনা, দু:খ-কষ্ট তাদের অনেক কম অনুভুত হয়। এমনকি আজকের দিনেও এর কাছাকাছি বিশ্বাস আছে এরকম লোকজন সংখ্যায় একেবার নগন্য নয়।
দাসশ্রমের লাভ ইংল্যান্ড ও ইউরোপে অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে শিল্পবিপ্লবের জন্ম ও প্রসারে অনেক ভুমিকা রাখে। কিন্তু শিল্পবিপ্লবের প্রসার আবার সমাজ ও অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করে। শিল্পবিপ্লব এর সাথে সাথে পুজিবাদী ও মুক্তবাজার অর্থনীতির দাবী ওঠে কারন সেই সময়ে শিল্পস্থাপনের মতো পুজি কেবল মাত্র ব্যবসায়ী শ্রেনীর হাতেই ছিলো, রাজা বা রাষ্ট্রের কাছে নয়। পুজিবাদী ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার বিকাশের জন্য মুক্তবাজার আর অবাধ বাণিজ্যের দাবী তোলে (২). এদিকে আমেরিকার বিভিন্ন রকম দাসভিত্তিক খনি, আখের প্ল্যান্টেশন এসব ছিলো ইউরোপ আমেরিকার অন্যান্য মুক্তশ্রমিক ভিত্তিক খনি, খামারের চাইতে অর্থকরভাবে অনেক অদক্ষ। কারন ক্রীতদাস কখনোই বেতনভিত্তিক মজুরের মতো কাজ করতে আগ্রহী ছিলো না। এইসব ক্রীতদাস ভিত্তিক ব্যবসা ও খামার গুলিকে ইউরোপ আমেরিকার সরকার বিভিন্ন রকম ট্রেড প্রটেকশনের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতো মালিকশ্রেনীকে খুশি রাখতে।
কিন্তু শিল্পবিপ্লবের সাথে সাথে নতুন শিল্পব্যবসায়ী শ্রেনী গড়ে ওঠে যারা সরকারকে চাপ দিতে থাকে দাসপ্রথার উপরের নির্ভরতা কমানোর জন্যে। সাধারন জনগন, যারা বাধ্যহতো দাসশ্রমের ফসল পণ্যগুলি উচ্চমূল্যে কিনতে, তারাও দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করে। শিল্পবিপ্লবের ফলে এমনিতেই ইউরোপ, আমেরিকার আধুনিক রাষ্ট্রগুলির অর্থনীতিতে দাসশ্রমের উপরে নির্ভরতা অনেক কমে আসে। এছাড়া এই সময়ে ফরাসী ও মার্কিন বিপ্লবের পর সাধারন মানুষের ন্যায়সংগত অধিকার নিয়েও সচেতনতা ছড়িয়ে পরতে থাকে। মানবাধিকার এর ধারনা দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের আলোচনার গন্ডী ছাড়িয়ে সাধারন মানুষের চিন্তাভাবনাতেও প্রসারিত হয়। একারনে উনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই দাসপ্রথা রহিতকরন এর আন্দোলন প্রসার পেতে থাকে। বৃটেন ও তার বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যের সর্বত্র দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হয় ১৮৩৪ সালে। ফরাসী রাষ্ট্র ও উপনিবেশেও তা নিষিদ্ধ হয় ১৮৪৮ সালে (২)।
আমেরিকার উত্তর পূর্বান্চলের স্টেটগুলি, যেটা নিউ ইংল্যান্ড বলে পরিচিত, সেখানে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হয়েছিলো ১৮০০ সালের আগেই। কিন্তু ১৮৫০ সালের মধ্যে যখন সভ্যজগতের প্রায় সর্বত্র দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিলো তখনো আমেরিকার দক্ষিনের স্টেটগুলি কেনো দাসপ্রথাকে আরো সজোড়ে, যেকোনো মূল্যে আকড়ে ধরে রাখতে চাইলো? দক্ষিনের স্টেটগুলির শ্বেতাংগ সাধারন জনগন ইতিহাসের অমোঘ যাত্রা চোখের সামনে দেখেও দেখছিলো না?
আমেরিকার বিখ্যাত লেখক-চিন্তাবিদ আপটন সিনক্লেয়ার (Upton Sinclair) এর একটি বিখ্যাত উক্তি আছে, “It is difficult to get a man to understand something, when his salary depends on his not understanding it.” কথাটির অর্থ হলো যে যদি কারো জীবিকা নির্ভর করে কোন একটি বিষয় না বোঝার উপরে তবে সেই বিষয়টি তাকে বোঝানো খুবই কষ্টকর হয়।
আমেরিকার দক্ষিনের অর্থনীতি অনেক বেশী নির্ভরশীল ছিলো দাসশ্রমিক ভিত্তিক তামাক আর তুলার প্ল্যানটেশনের উপরে অন্যদিকে উত্তরের রাজ্যগুলি ছিলো শিল্প আর ছোট খামার নির্ভর। ১৮৪০ সালে দুনিয়ার দুই তৃতীয়াংশই তুলাই উৎপাদিত হতো দক্ষিনের প্ল্যান্টেশনগুলিতে। আমেরিকার বিখ্যাত সিভিল ওয়ারের (১৯৬১-৬৫) এর আগে এবং এর পরে আজ অব্দি দক্ষিনের অনেক রাজনীতিবিদ, লেখক বলতেন যে ক্রীতদাস প্রথা জোর করে উঠিয়ে দেবার কোন দরকার ছিলো না। এমনিতেই শিল্পায়ন আর অন্যান্য কারনে দাসশ্রম অলাভজনক হয়ে উঠছিলো। উত্তরের রাজনীতিবিদ, চিন্তাবিদরা বেশী চাপ দেবার কারনেই, আত্মসম্মানের জন্যে দক্ষিন আলাদা হবার ঘোষনা করে যুদ্ধের সূত্রপাত করে।
আমেরিকার নোবেল পুরষ্কার পাওয়া বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ রবার্ট ফোগেল তার একটি খ্যাতনামা গবেষণা বই “Time on the Cross” (৩) এ দেখিয়েছিলেন যে সময়ের সাথে সাথে দক্ষিনের গৃহযুদ্ধপূর্ব দাসঅর্থনীতি অনেক দক্ষ হয়ে উঠেছিলো। তার গবেষনায় বেরিয়ে আসে যে দাসমালিকেরা তাদের ক্রীতদাসদের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদের মতই দেখতো। দাসরা যেনো শারীরিক-মানসিক ভাবে সুস্থ থাকে সেটাও ছিলো দাসমালিকদের বড়ো প্রয়োরিটি। দাসদের সর্বত্তম ব্যবহার করে দক্ষিনের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিও ইউরোপ ও আমেরিকার শিল্পসমৃদ্ধ অর্থনীতিগুলি সাথে পাল্লা দিতে সক্ষম হতো। একটি হিসাবে দেখা যায় যে যেখানে ১৮৬০ সালে গৃহযুদ্ধের আগে উত্তরের জনসংখ্যা ছিলো ২ কোটির কিছু বেশী ও দক্ষিনের জনসংখ্যা ছিলো ৯০ লাখ (অনুপাত ২.৩ : ১), সেসময়ে উত্তর ও দক্ষিনের সামগ্রিক সম্পদের অনুপাত ছিলো ১.৫ : ১ আর দক্ষিনের সম্পদের প্রায় অর্ধেকটাই ছিলো ক্রীতদাসদের মূল্য। সুতরাং ক্রীতদাস ছাড়া উত্তর ও দক্ষিনের সম্পদের অনুপাত হতো ৩ : ১ (৪)।
আমরা যখন দক্ষিনের অর্থনীতিতে দাসদের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি তখন এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে কি কারনে দক্ষিনের শ্বেতাংগ জনগোষ্ঠী ভয়াবহ রক্তপাত করে হলেও দাসপ্রথা টিকিয়ে রাখার জন্যে ছিলো বদ্ধপরিকর। রবার্ট ফোগেল পরিষ্কার মত দেন যে গৃহযুদ্ধ ছাড়া দাসপ্রথা বিলুপ্তি ঘটতে আরো অনেক বছর সময় লেগে যেতো।
আজকে যখন আমরা গৃহযুদ্ধপূর্ব দক্ষিনের দাসপ্রথা নিয়ে চিন্তা করি তখন আমরা আশ্চর্য হই দক্ষিনের লোকজন কি এতোটাই নিষ্ঠুর বিদ্বেষী ছিলো যে তারা এই দাসপ্রথার অমানবিকতা বুঝতে পারতো না? আমরা যে অমানবিকতা দিব্যচোখে দেখতে পারছি দেড়শ বছর পরে বসে, তার কি সেটা চর্মচোখের সামনে দেখেও বুঝতো না? প্রকৃতপক্ষে দক্ষিনের লোকজন দুনিয়ার আর সব এলাকার মানুষের মতই ছিলো, বেশী নিষ্ঠুরও নয়, বেশী অমানবিকও নয়। আসল কথা হলো আপটন সিনক্লেয়ারের সেই বিখ্যাত কথাটি, যখন কারো জীবিকা নির্ভর করে কোন একটি বিষয় না বোঝার উপরে তখন সেই বিষয়টি বুঝতে পারা তার পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পরে। দক্ষিনের লোকেরা ক্রীতদাস প্রথাকে জাস্টিফাই করার জন্যে নিজেদেরকে এবং বাইরের লোকজনকে নানা রকম বুঝ দিতো। কালো আফ্রিকানরা সহজ সরল, মালিকের নিয়ন্ত্রনেই তারা ভালো থাকে, স্বাধীনতা পেলে উচ্ছৃংখল হয়ে পড়বে, আফ্রিকায় স্বাধীন থাকার চেয়ে আমেরিকায় দাস হিসেবে অনেক ভালো আছে এরকম আরো অনেক কিছু। সেই সাথে বাইবেল থেকে নেয়া কিছু জাস্টিফিকেশন তো ছিলোই।
এছাড়াও তারা বিশেষভাবে উত্তরের লোকজনদের কে দেখাতো সেই সময়ে নগরগুলিতে শিল্পশ্রমিকদের করুন জীবন। উত্তরের কারখানাগুলোয় নারী, পুরুষ, শিশুদের ছুটি বিহীন ১২-১৫ ঘন্টা একনাগারে শ্রম, নামমা্ত্র বেতনে নোংরা বস্তিতে অপুষ্টিকর খাদ্য খেয়ে রোগে ভোগে মৃত্যুবরণ। দক্ষিনের লোকেরা বলতো যে এই সব শ্রমিকদের তুলনায় তাদের প্ল্যান্টেশনের দাসেরা অনেক সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর দীর্ঘ জীবন কাটায়। তাদের এই যুক্তির সারবত্তা অবশ্যই ছিলো অনেক। উত্তরের লোকেরা তাদের মধ্যে শিল্পশ্রমিকদের ভয়াবহ জীবন দেখেও না দেখার ভান করতো কারন উত্তরের অর্থনীতির ভিত্তিই ছিলো নানা ধরনের শিল্প আর খনি। যুদ্ধের পরে শিকাগোর হেমার্কেট এ পয়লা মে’র মতো আরও অনেক শ্রমিক অসন্তোষ এর পরেই শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে সচেতনতা আসে।
এতক্ষন ধরে দাসপ্রথা নিয়ে কথা বলার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিলো যে অর্থনীতি ও সাংষ্কৃতিক বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের সামাজিক মূল্যবোধ কিভাবে পাল্টে যায় সেটি দেখানো। এটা আলোচনার দুইভাগের প্রথম ভাগ মাত্র।
বছর দুয়েক আগে আমার নিয়মিত পড়া একটি ব্লগে (The Daily Dish -http://dish.andrewsullivan.com/) ইন্টারেস্টিং পোস্ট পড়েছিলাম। পোস্ট টর বিষয় ছিলো যে, আজকে যেমন আমরা Historical Chauvinism এর প্রভাবে, অতীতের বিভিন্ন সময়ের মানুষদের বিভিন্ন মূল্যবোধকে খুব হীনচোখে দেখি, ঠিক তেমনিই, আজ থেকে ৫০-১০০ বছর পরে আমাদের উত্তরাধিকারীরা, আমাদের আজকের কোন বহুলপ্রচলিত প্রথাকে সবচেয়ে ঘৃনার চোখে দেখবে? বিভিন্ন দিক আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত আসে যে আমাদের উত্তরাধিকারীরা আমাদের পশু হত্যা ও তার মাংস ভোজনকেই সবচেয়ে ঘৃনার চোখে দেখবে।
[অনেক খুজেও পোস্ট টির লিংক খুজে না পাওয়ায় দু:খিত। অনেক দিন ধরেই বেশ কয়েকবার সার্চ করে চেষ্টা করেছি তবু খুজে পাই নি]
আমার এই পোস্টের মূল উদ্দ্যেশ্য নিরামিষ ও মাংস ভোজনের দোষগুন নিয়ে আলোচনা নয়, মূল লক্ষ্য আমরাও কিভাবে Historical Chauvinism এর শিকার হবো সেটা তুলে ধরা। আর তার জন্যে প্রয়োজন মাংস খাওয়া কেনো ভবিষৎ এ অনৈতিক আর নিষ্ঠুর বলে প্রতিভাত হতে পারে সেটা উল্লেখ করা। আমি সংক্ষেপে আর দ্রুত কয়েকটি পয়েন্ট বলে যাচ্ছি।
আমাদের প্রধান খাদ্য যেসব গৃহপালিত পশু, গরু, ছাগল, ভেড়া ও শুকর, এসব প্রাণী আমরা যতটা কল্পনা করতে পারি তার চেয়েও অনেক বেশী বুদ্ধিমান আর সংবেদন শীল। বিখ্যাত প্রাইমেটোলজিস্ট আর নৃতত্ববিদ জেন গুডাল বলেছেন, ” Farm animals feel pleasure and sadness, excitement and resentment, depression, fear, and pain. They are far more aware and intelligent than we ever imagined…they are individuals in their own right — Jane Goodall.” (৫) এসব পশু যে শুধু স্নেহ, ভালোবাসা, ভয়, আতংক অনুভব করে না তাদের মৃত্যুভয়ও আছে। কোরবানী’র দিন সকালে যারা একের পর এক বাসার সামনে বেধে রাখা পশুদের ভয়ে, আতংকে বিস্ফোরিত চোখ দেখেছেন আর কিছুক্ষন পর পর আর্তনাদ শুনেছেন, তারা কেউ হলফ করে বলতে পারবেন না যে পশুদের মধ্যে আমাদের মতই সংবেদনশীলতা আর মৃত্যুভয় নেই। বিজ্ঞানীরা বলেন যে পশুরা ভবিষৎ চিন্তা করতে পারে, স্বপ্ন দেখে, নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করে, কিছু কিছু tool ব্যবহার করতে পারে এবং এই শিক্ষাগুলি পরবর্তী প্রজন্মকে যত্ন করে শেখায়ও।
দুনিয়ায় এই মুহুর্তে দেড়শ কোটির বেশী গরু, একশ কোটি ভেড়া-ছাগল আর একশ কোটি শুকর পালন করা হচ্ছে খাদ্যের জন্যে। গত দশ বছরে বিশেষ করে শুকরের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অনেক গবেষনা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলেন যে শুকর কুকুরের চেয়েও অনেক বেশী বুদ্ধিমান একটি প্রাণী। শুকরকে বুদ্ধিমত্তার দিক দিয়ে এখন ডলফিন, হাতী এদের সমকক্ষ ধরা হয়। একটা বহুল প্রচলিত কথা হলো যে একটি পূর্নবয়ষ্ক শুকর এর বুদ্ধিমত্তা একটি তিন বছরের মানব শিশুর সমতুল্য (৬) রিচার্ড ডকিন্স বলেছেন যে, “At very least, I conclude that we have no general reason to think that non-human animals feel pain less acutely than we do, and we should in any case give them the benefit of the doubt. Practices such as branding cattle, castration without anaesthetic, and bullfighting should be treated as morally equivalent to doing the same thing to human beings”।(৭)
প্রশ্ন উঠতে পারে যে মানুষ তো গৃহপালিত পশুদের নিয়মিত ভাবে ভক্ষন করছে দশহাজার বছরের বেশী সময় ধরে। আমাদের আজকের এই যুগ কি পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতায় বিশেষ বা অনন্য কিছু? হ্যা, আমাদের এই যুগ নিষ্ঠুরতায় সত্যিই একদম অনন্য। দশ হাজার বছর ধরে মানুষ পশু পালন করেছে তাদের খামারে চারনভূমিতে। এখানে পশুরা কিছুটা স্বাধীনভাবে জীবন কাটিয়েছে, নিয়মিত খাবার পেয়েছে, সমজাতীয় দের সাথে খেলাধূলা করে সামাজিকভাবে জীবন কাটিয়েছে। কেবল মৃত্যুর সময়ে সাময়িক এবং তীব্র যন্ত্রনা পেয়েছে। প্রাকৃতিক জীবনের সাথে তুলনা করলে এটা তেমন খারাপ কিছু নয়।
বিংশ শতাব্দীতে যন্ত্রসভ্যতার শিখরে উঠে মানুষ সৃষ্টি করে আরেকটি ভয়াবহ অধ্যায় Factory Farming. বিশাল, বন্ধ ঘরের মধ্যে, হাজার হাজার পশুকে সারাজীবন আটকে রেখে, মাংসের জন্যে প্রতিপালন। কল্পনা করুন যে একটা দুই ফুট বাই দুই ফুট বন্ধ জায়গার আপনাকে জন্ম থেকে নিজের মলমূত্রের মধ্যেই আটকে রাখা হয়েছে, প্রতিদিন আপনাকে জোর করে বিস্বাদ একটা ল্যাবড়া খাওয়ানো হচ্ছে, নিয়মিত বিভিন্ন ইন্জেকশন দেয়া হচ্ছে আপনাকে মোটাতাজাকরনের জন্যে, দিনরাত আপনার সমগোত্রীয়দের যন্ত্রনার আর্তনাদ শুনতে হচ্ছে, তারপরে কোন একদিন আপনাকে গুতামেরে দলবেধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আপনাকে মেরে ফেলার জন্যে। Factory Farming এর ভয়াবহতা নিয়ে বলে শেষ করা যাবে না। ইউটিউবে কেবল Factory Farming animal cruelty এসব নিয়ে সার্চ করলে অসংখ্য ভিডিও পাবেন যা আপনাকে সবচেয়ে ভয়ংকর Horror Science Fiction মুভির চেয়েও বেশী শিহরিত করবে।
এখন আবার প্রশ্ন উঠতে পারে যে ৭ বিলিয়ন মানুষকে মাংস খাওয়াতে হলে Factory Farming ছাড়া উপায় কি? এমন তো নয় যে আধুনিক মানুষ Factory Farming এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানে না। তবু নিজের প্লেটে মাংস আসবে বলে এই ভয়াবহতা আমাদের মনে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না। কয়েক লক্ষ বছরের বিবর্তনে মাংস খাওয়ার আকর্ষনের যে জেনেটিক উত্তরাধিকার আমাদের মধ্যে ঢুকে গেছে পাকাপোক্তভাবে, সেটাকে অগ্রাহ্য করা তো এতো সহজ নয়। আগামীর মানুষরাও মাংসের প্রতি আকর্ষন থেকে মুক্ত থাকবে এটা বলা যায় না। সুতরাং ভবিষৎ প্রজন্ম কি কারনে আমাদের ঘৃনা করবে Factory Farming এর জন্যে? এর সোজা উত্তর হলো টেকনোলজীর বিবর্তন।
উইনস্টন চার্চিল ১৯৩২ সালে তার একটি রচনা, “Fifty Years Hence” এ বলেছিলেন যে ভবিষৎ এ মানুষ আর মাংসের জন্যে আস্ত পশু পালন করবে না, “”We shall escape the absurdity of growing a whole chicken in order to eat the breast or wing, by growing these parts separately under a suitable medium.” (৮) অর্থাৎ মানুষ পশুর বিভিন্ন অংগ-প্রতংগ কারখানায় আলাদাভাবে তৈরী করে বড়ো করবে। চার্চিলের এই উক্তিটি গত ৭০ বছর ধরে বিখ্যাতদের হাস্যকর ভবিষৎবাণী দের তালিকায় সবসময়েই উপরের দিকে ছিলো (“I think there is a world market for maybe five computers.” Thomas Watson, president of IBM, 1943, “Television won’t be able to hold on to any market it captures after the first six months. People will soon get tired of staring at a plywood box every night.” Darryl Zanuck, executive at 20th Century Fox, 1946)। কিন্তু গত দশবছরের মধ্যে এই চিত্রটি হঠাৎ পুরো পাল্টে যায়। এখন আর কেউ চার্চিলের এই উক্তিটি হাসির জন্যে উথ্থাপন করে না বরং কিছুটা আশ্চর্য মিশ্রিত শ্রদ্ধার সাথেই স্মরন করে। এর কারন হলো কৃত্রিম মাংস (Artificial Meat).
http://theocruz.files.wordpress.com/2013/05/pigfigure_nature.png?w=468
এখন, একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে, বিশ্বের গবেষণাগারগুলিতে যেকোন পশু অথবা প্রাণীর মাংসখন্ড কৃত্তিম ভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব। গত দশ বছরে ল্যাবরেটরীতে কৃত্তিম মাংস তৈরীর প্রক্রিয়াটি অনেক এগিয়েছে। স্টেম সেল (stem cells) গবেষনার বিভিন্ন ব্রেক থ্রু’ই এই সম্ভাবনার নতুন দিগন্তকে উন্মোচিত করেছে। সবচেয়ে বহুল প্রচলিত পদ্ধতিটি সংক্ষেপে এরকম। জীবন্ত বা সদ্যমৃত পশুর শরীর থেকে পেশী ও অন্যান্য মাংসকোষের স্টেম সেল এর স্লাইস কেটে নেয়া হয় এবং এগুলোকে পুষ্টির জন্যে গ্রোথ মিডিয়ামে ডুবিয়ে রাখা হয় সংখ্যা বৃদ্ধির জন্যে। এখানে স্টেম সেলগুলো প্রকৃত পেশী ও অন্যান্য কোষে পরিনত হয়। এর পরে যেন কোষগুলি যেনো দ্রুত বৃদ্ধি পায় সেকারনে এদেরকে এমন একটি যন্ত্রব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয় যে কোষগুলি যেনো নিয়মিত নড়াচড়া করানো হয়। এর কারন মাংসপেশী যদি কোন রকম নড়াচড়া ছাড়া ফেলেরাখা হয় তবে সেটির বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে Muscle atrophy হয়। এর সাথে আলাদাভাবে জন্মানো চর্বি ও অন্যান্য কোষ যোগ করা হয় স্বাদ বৃদ্ধির জন্যে। পূর্ন বৃদ্ধি হলে মাংসখন্ডটি বের করে প্যাকেট করে ফেলা হয়। প্রথমে যে পশু থেকে যে stem cell নেয়া হয়েছে সেটি বার বার ব্যবহার করা যায়। সুতরাং একটি পশু থেকেই মানুষকে শত শত বছর খাওয়ানো সম্ভব, নতুন করে হত্যার কোন দরকার পরে না। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে থ্রী ডাইমেনশনাল প্রিন্টিং পদ্ধতিতে টিস্যু থেকে কৃত্রিম মাংস উৎপাদন করে সেটিকে আসল পশুর মাংসখন্ডের মতই স্বাদ ও টেক্সচার দেয়া সম্ভব হবে।
কৃত্রিমমাংস এখনই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষণাগারগুলিতে তৈরী করা হচ্ছে কিন্তু এখনো তা সফলভাবে বানিজ্যিকভাবে উৎপাদনের সম্ভাবনা কম। এখন সামান্য কয়েক আউন্স মাংস তৈরী করতেই লাখ ডলারের খরচ হয়ে যাচ্ছে। তবে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে ৫-৬ বছরের মধ্যে বাজারে কৃত্রিম মাংস বিক্রী করা সম্ভব হবে (৯) প্রথমদিকে এর দাম খুব বেশী হবে তবে ১৫-২০ বছরের মধ্যেই প্রতিযোগিতামূলক দামে উৎপাদন সম্ভব হবে।
কৃত্রিমমাংস নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। আশাকরি পরে কখনো এই বিষয়ে কেউ লিখবেন। এই টেকনোলজী যদি অচিরেই গবেষনাগারের চৌহদ্দী পেরিয়ে বাজারে নিয়মিত হয় তবে সেটা মানব ইতিহাসের অন্যতম যুগান্তকারী টেকনোলজী হিসেবে বিবেচিত হবে এটা নিশ্চিৎভাবেই বলা যায়। আমরা সংক্ষেপে একটু দেখি যে সমাজ ও জীবনে কৃত্রিম মাংস উৎপাদনের কি ফলাফল হতে পারে।
প্রথমেই আসা যাক প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে। আগেই বলেছি যে পৃথিবীতে এই মুহুর্তে মানুষের খাদ্যের জন্যে কয়েক বিলিয়ন পশু পালন করা হচ্ছে। আমরা অনেকেই যেটা জানি না সেটা হলো যে এই মাংস উৎপাদনের জন্য আমাদের কি পরিমানে মাশুল দিতে হচ্ছে। এক হিসেবে এক পাউন্ড ওজনের একটি গরুর মাংসের স্টেক তৈরী করতে খরচ হয় ২৫০০ গ্যালন পানি, ১২ পাউন্ড খাদ্যশস্য আর এক গ্যালন জ্বালানী তেল পরিমানে এনার্জি (১০) পৃথিবীর যাবতীয় চাষযোগ্য জমির তিরিশ শতাংশই ব্যবহার হয় পশুখাদ্য উৎপাদনে। কেবল দ: আমেরিকাতেই বছরে ৫০ লাখ একর জমি পরিষ্কার করা হয় পশুর চারনভূমির জন্যে। গাবাদিপশু থেকে নির্গত মিথেন গ্যাস গ্লোবাল ওয়ার্মিং এ ভূমিকা রাখছে পৃথিবীর যাবতীয় গাড়ী থেকে নির্গত গ্যাসের চেয়ে অনেক বেশী। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে যদি পশুর মাংস সম্পূর্ন বর্জন করে কৃত্রিমমাংস বিকল্প হিসেবে গৃহীত হয় তবে, পশুজনিত গ্রীনহাউস গ্যাস এর পরিমান কমে দাড়াবে বর্তমানের ৪%, মাংসের পিছনে এনার্জি খরচ হবে অর্ধেকেরও কম, জমির দরকার হবে বর্তমানের ১% আর পানির পরিমান ৪% (৮)।
মাংস কৃত্রিমভাবে উৎপাদন শুরু হলে প্রকৃতিতে অনেক প্রভাব ফেলবেই তবে তা তুচ্ছ হবে মানুষের মনোজগতের পরিবর্তনের তুলনায়। লক্ষবছরের বিবর্তনে আমরা জীনের দাস হয়ে ইচ্ছে করলেও মাংস খাওয়া ছাড়তে পারছি না। আমরা পশু পালন ও হত্যার নিষ্ঠুরতা জেনেও অগ্রাহ্য করি এটা সম্পূর্ন প্রাকৃতিক বলে, ঠিক যেমন অ্যারিস্টোটল আড়াই হাজার বছর আগে বলেছিলো দাস প্রথা সমাজের স্বাভাবিক অবস্থা। আমরা নিজেদের প্রবোধ দেই যে পশুদের সংবেদনশীলতা কম, তারা ভয়-যন্ত্রনা আমাদের মতো করে অনুভব করে না, ঠিক যেমনটি একসময়ে শ্বেতাংগ যাজক, নেতারা বলতো যে কালো আফ্রিকানরা ইউরোপীয়দের মতো যন্ত্রনা পায় না, তাদের আত্মাই নেই কিংবা থাকলেও নিম্নপর্যায়ের। যেমুহুর্ত থেকে আমাদের সামনে মাংসের বিকল্প চলে আসবে যে সময় থেকেই আমাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার ঢেউ শুরু হবে।
আমরা এতোদিন যারা পশুদের বুদ্ধিমত্তা, যন্ত্রনা, আতংক এগুলিকে অগ্রাহ্য করেছি সেগুলি তখন নতুন করে আমাদের মধ্যে আবেদন সৃষ্টি করবে। Factory Farming এর ভয়ংকরতা আমাদের সামনে নগ্ন হয়ে দেখা দিবে। পশুমাংস বিরোধীরা মিডিয়ায় ও পথে-রেস্তোরায় তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলবে। যারা এর পরেও পশুমাংস খেতে চাইবে তাদের অবস্থা হবে অনেকটা এখন কার দিনে জাপানের কিছু অন্চলের ডলফিনভোজীদের মতো। লোকচক্ষুর অন্তরালে, মিডিয়াকে ব্যান করে, গোপনে ডলফিন হত্যা করে ট্র্যাডিশন ধরে রাখার চেষ্টা করার মতো। সবচেয়ে বেশী বাধা আসবে ধর্মীয় পক্ষ থেকে। ধর্মের প্রথার দাবী তুলে তারা পশুহত্যা চালিয়ে যেতে চাইবে। কিন্তু তাদের অবস্থা হবে কদিন আগেও যারা বহুবিবাহ, শিশুবিবাহ, ক্রীতদাস প্রথা এসব চালিয়ে রাখতে চাইতো ধর্মের অজুহাত দেখিয়ে, তাদের মতো। বিশ্বের মানুষের জনমতের তীব্র চাপের বিরুদ্ধে চলা বেশীদিন সম্ভব হবে না।
এটা চিন্তা করতে বেশী কল্পনা করা প্রয়োজন পরে না যে আজ থেকে ৪০-৫০ বছর পরে হয়ত আজকের Factory Farming কে দেখা হবে নাৎসীবাহিনীর Concentration Camp এর Gas Chamber এর মতো। আর আমরা ভবিষৎ জেনারেশনের সামনে প্রতিভাত হবো সেই সময়ের সাধারন জার্মানদের চেয়েও অনেক নীচু হিসেবে। কারন সেসময়ে জার্মানরা কিছুটা জেনে, কিছুটা না জেনে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো ভয়ে এবং এটা তাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার নয় এই ভেবে। কিন্তু আমরা আজকে Factory Farming এর ভয়াবহতা জেনেও শুধু চোখ বুজে নেই, আমরা তার ফলাফল সানন্দে উপভোগ করছি খাবার টেবিলে। আজকে যেমন আমরা Django Unchained ছবিতে দাস মালিক ও তার পরিবার কেমন করে প্রতিহিংসাকামী দাসের হাতে উপযুক্ত শাস্তি পাচ্ছে, এটা দেখে শিহরিত হই, ঠিক এমন করেই হয়তো ৫০ বছর পরে আজকের Factory Farming মালিকের এবং সাধারন মাংসভোজী লোকজনের করুন পরিনতি চিত্রিত হতে দেখে তখনকার লোকজনেরা উল্লসিত হবে।
আমার এই দীর্ঘ লেখাটির উদ্দ্যেশ্য পাঠকদের মাংস বর্জন করে নিরামিশশাসী হওয়ার জন্যে উদ্ধুদ্ধ করা নয়। আমি নিজেও মাংসভোজী, তবে চেষ্টা করছি পশুমাংস যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া এড়িয়ে চলতে। এই লেখাটির চিন্তা মাথায় আসে সেই ইতিহাসিক শ্রেষ্ঠত্ববাদ এর চিন্তা থেকেই। আমরা যারা আজকের সময়ের খন্ডে বসে অতীতের মানুষের নৈতিক দীনতা নিয়ে চিন্তা করি, তারা এটা চিন্তা কমই করি যে ভবিষৎ এর মানুষও বর্তমানের আমাদেরকে এরকম হীনভাবেই দেখবে কোন না কোন দিক থেকে। আমাদের বোঝা উচিৎ যে আমরা সবাই সময়ের সন্তান. আমরা মানুষের সভ্যতার যাত্রার সময়প্রবাহের একটি ছোট্ট স্লাইসে বাস করছি। Presentism আমাদের চিন্তা অনেক বেশী আচ্ছন্ন করে রাখে। আমাদের অতীত ইতিহাস আর বর্তমান সমাজ আমাদের নৈতিকতা, মূল্যবোধ, মানসিকতার গঠনে বড়ো ভূমিকা রাখছে। কিন্তু ইতিহাসের দাস হলেও আমাদের মধ্যে ক্ষমতা রয়েছে সময় ও স্থানকে অতিক্রম করে যাওয়ার। এটাই মানুষের সভ্যতার সাফল্য। আমরা সংষ্কৃতির পুন্জীভবনের সুবাদে অতীতের মানুষের উপরে ভর করে পুরো মহাবিশ্বকে, তার অতীত-বর্তমান-ভবিষৎ নিয়ে ধারন করার চেষ্টা করতে পারি। আমাদের সেকারনেই চেষ্টা করা উচিৎ যে আমাদের বর্তমানের মানসিকতা, রীতি, নীতি, আচরন যেনো স্থান ও কালের আন্চলিকতায় বাধা না পরে যতদূর সম্ভব সময়ের সাথে শ্রেয়তর বলে বিবেচিত হতে পারে।
REFERENCES
(1) http://cghs.dadeschools.net/african-american/europe/slave_trade.htm
(2) http://www.nalis.gov.tt/Default.aspx?TabId=189&PageContentID=222
(3) http://www.nytimes.com/2013/06/12/business/robert-w-fogel-nobel-winning-economist-dies-at-86.html?pagewanted=all&_r=0
(4) http://www.measuringworth.com/slavery.php
(5) http://www.farmsanctuary.org/learn/someone-not-something/
(6) http://www.peta.org/issues/animals-used-for-food/pigs-intelligent-animals-suffering-in-factory-farms-and-slaughterhouses.aspx
(7) http://boingboing.net/2011/06/30/richard-dawkins-on-v.html
(8) http://www.guardian.co.uk/commentisfree/2012/jan/22/cultured-meat-environment-diet-nutrition
(9) http://www.earthsave.org/environment.htm
কৃত্রিম মাংসের গবেষনার জন্যে গুগলের সের্গেই ব্রিন, মাইক্রোসফটের বিল গেটস ছাড়াও আরও অনেক বিশ্বখ্যাত বড়লোক এগিয়ে আসছেন। সবাই জানেন সে এটা সফল হলে পৃথিবীতে কি যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে।
গত কয়েকদিনে মধ্যে কিছু সংবাদ
এরই মধ্যে প্রথম কৃত্রিম মাংসের বার্গারের নাম দেয়া হয়েছে গুগল বার্গার
Synthetic meat: is it ‘natural’ food?
The ‘Google burger’ has reignited the debate about where the fault line between processed and unadulterated food lies. What do the experts reckon?
http://www.theguardian.com/lifeandstyle/wordofmouth/2013/aug/06/synthetic-meat-natural-food-google-burger
http://www.washingtonpost.com/blogs/the-switch/wp/2013/08/06/sergey-brin-isnt-the-only-tech-entrepreneur-investing-in-artificial-meat/
http://www.economist.com/blogs/babbage/2013/08/artificial-meat
First reaction: lab-made burger short on flavor
প্রযুক্তি দিয়ে কৃত্তিম মাংশ উৎপাদন করে কোন এক সময় মানুষের হাতে পশু নিধন বন্ধ হবে এটা বিশ্বাস করি, কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহার করে যুদ্ধ-বিগ্রহ করে গোটা পৃথিবীতে এখনও যে মানুষের হাতে মানুষ নিধন হচ্ছে সেটা কি কখনও বন্ধ হবে?
@ব্রাইট স্মাইল্,
খুবই ব্রাইট একটা প্রশ্ন করেছেন 🙂 । এখানে অনেকেই পশুর যন্ত্রণার দুঃখে কাতর হয়ে আছেন, কিন্তু মানুষের কথাটি কারো মনে পড়েনি।খুবই পরিতাপের বিষয়।যুদ্ধের কুফল নিয়ে কেউ কিছু একটা লিখবেন এটা আশা করছি আমি।
কেন যেন, গরুর মাংস খেতে গেলেই বড় বড় চোখের কথা মনে পড়ে যায়। ভাবতে লাগলাম প্রানিজ প্রোটিন দরকার নেই। আবার মনে পড়ল উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে এবং ব্যথা অনুভব করতে পারে। আজ আবার পড়ছি উদ্ভিদ ব্যথা পায়না। তবে প্রানি হত্যা একসময় বন্ধ হয়ে যাবে বলেই মনে হয়। যাহোক লেখককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বিষয়টিকে আলোচনায় আনার জন্য। মানুষ স্বার্থের জন্য অনেক কিছুই করতে পারে। তারপরও আশা করি, একদিন আমরা আরও মানবিক আচরণ করতে শিখব। পশুকে না পারলেও মানুষকে অন্তত ভালবাসতে শিখব।
অসাধারন লেখাটা আগেই পড়েছিলাম, তবে সময় সুযোগের অভাবে মন্তব্য করতে পারিনি।
অসাধারন বললেও লেখার মূল্ কথা আমি ধর্মওয়ালা ভাইদের সঙ্গে যখন বাহাসের সুযোগ ছিল তখন কোরবানি বিতর্কে একাধিকবার বলেছিলাম। ধর্মের নামে পশুহত্যার জাষ্টিফিকেশনে অবশ্যই আপনিও মাংস খান……নাস্তিকরাও খায়……খালি ধর্মের নামে হলেই বিদ্বেষীদের আষ্ফালন এই যুক্তি অবধারিতভাবে আসে। এই যুক্তির মুখে বলাই বাহুল্য কিছুটা হলেও ফনা নামাতেই হয়। যদিও খাদ্যের প্রয়োযনে হত্যা আর নিছক আনন্দের জন্য হত্যা বা কোন কল্পিত দেবদেবীক্যা তাজা রক্ত দিয়ে খুশী করার মাঝে অবশ্যই যোজন যোজন তফাত আছে। যাই হোক, তখন আমি বলতাম যে আজ থেকে ৫০০ বছরেরও কম সময়ে মাংসের জন্য পশুহত্যার প্রয়োযন পড়বে না এমন সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল, তখন এই অগতির গতি যুক্তি কোন পথে যাবে?
মানুষের নৈতিকতার সংজ্ঞা যুগের সাথে আপেক্ষিক। নৈতিকতা বোধও জ্ঞান বিজ্ঞানের মতই ক্রম বিকাশমান। হাজার বছর আগের মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নিয়ে যেমন হাসিঠাট্টা করা যুক্তিসংগত নয় তেমনি তাদের নৈতিকতা বোধ কিংবা কিছু আচার আচরন ভিত্তি করে অসভ্য বর্বর রায় দেওয়াও খুবই অন্যায়। প্রাচীনকালের বিভিন্ন ধর্মীয় চরিত্রও এই সূত্রের বাইরে নন; যুগের সাথে সীমাবদ্ধতা নেহায়েত অন্ধবিশ্বাসী না হলে চোখ এড়ানোর উপায় থাকে না। তাই বলে তাদেরও সময়সীমা হিসেবের বাইরে রেখে একতরফা গালিগালাজ করা যায় না। দাস প্রথা মাত্র দেড়শো বছর আগেই দুনিয়াময় খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার ছিল। প্রচলিত ধর্মগ্রন্থগুলিতেও স্বাভাবিক কারনেই দাসপ্রথার স্বীকৃতি এসেছে। আজকের দিনে আমি নুতন ধর্ম প্রচার শুরু করলে নেহায়েত বদ্ধ উন্মাদ না হলে দাসপ্রথার স্বীকৃতি দেব না, দাসদের যতই মায়া মহবত করার বাই লজ যোগ করি না কেন।
অবশ্যই আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে সভ্যতা, জ্ঞান বিজ্ঞানের যতই উন্নতি হচ্ছে আমাদের ততই ভিশনারি ক্ষমতাও বাড়ছে, তার সদব্যাবহার করে সভ্যতাকে আরো এগিয়ে নেবার চিন্তা করাই যুক্তিসংগত। দুশো বছর আগের মানুষ আজকের সভ্যতা মনে হয় না চিন্তা করতে পারত আমরা যেভাবে হাজার বছর পরের কথা চিন্তা করতে পারি।
@আদিল মাহমুদ,ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার ও মন্তব্যের জন্যে। আসলে যেকোন সমাজেই খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষ পারে সেই সময়ের মূল্যবোধ, জ্ঞান-বিজ্ঞান এসবকে অতিক্রম করে বৃহত্তর দৃষ্টিকোন থেকে নিজের মূল্যবোধ ও আচরনকে নির্ধারন করতে। একারনেই আমরা ইতিহাসে যারা ভবিষৎ এর দিকদিশারী হতে পেরেছিলেন, তাদেরকে এত সম্মান করি।
বিজ্ঞান সমাজকে পাল্টে দেয় আর পাল্টে যাওয়া সমাজে মূল্যবোধও পরিবর্তিত হয়, এটা ইতিহাসের খুব সাধারন কিন্তু পরিষ্কার একটি শিক্ষা।
আপনার লেখা ও মন্তব্যের প্রত্যাশা করি সবসময়েই। ফেসবুকের ক্যাচাল সুচিন্তিত ব্লগ প্ল্যাটফর্মের বিকল্প কখনোই হতে পারে না।
প্রথম থেকেই “কৃত্তিম” এবং “ইতিহাসিক” শব্দ দুটো দৃষ্টিকটু লাগছিল।”কৃত্তিম” বানানটি সংশোধন করায় ধন্যবাদ।আমার মনে হয় “ইতিহাসিক” শব্দটিও ভুল, এটা হবে “ঐতিহাসিক”।
@বিষন্নতা, “ইতিহাসিক” ও “ঐতিহাসিক” শব্দের মধ্যে অর্থগত পার্থক্য রয়েছে। ইতিহাসিক হলো Historical, ঐতিহাসিক হলো Historic। দুটো কথার অর্থ আলাদা।
” কৃত্তিম” বানানটি চোখে লাগছে। বানানটি “কৃত্রিম”।
@সফিক ,
কৃত্রিম মাংসের সাথে কসাইয়ের কাছ থেকে খরিদ করা মাংসের দৃশ্যগত এবং স্বাদের পার্থক্যটা একটু বুঝিয়ে বলবেন ? ধরুণ আমি একেকটি হাফ পাউন্ডের রিব আই এবং সারলইন স্টেক কিনতে চাই BBQ এর জন্য।
@জয়া,এখন পর্যন্ত যেসব কৃত্তিম মাংস তৈরী সম্ভব হয়েছে সেটি কিছুটা চর্বিযুক্ত পেশীর মাংস। অর্থাৎ হাড্ডিবিহীন মাংসের যেসব টুকরা আপনি খাচ্ছেন ঠিক সেটাই। এখানে দেখায় ও স্বাদে কোনো পার্থক্য নেই।
হাড্ডি ও অন্যান্য প্রত্যংগসহ মাংশ তৈরীর টেকনোলজী এখনো অনেক দূরে।
@সফিক,
তবে আমি যতদূর জানি স্বাদে এখনো কিছুটা পার্থক্য আছে।
সফিক,
আমি গত দশ বছর মুক্তমনার পাঠক। তোমার এই লেখাটি শুধু অসাধারন ই না – সেরাদের ও সেরার তালিকাতে থাকবে।
আমি বহুদিন ধরে এই ধরনের চিন্তাশীল লেখা মুক্তমনাতে আশা করে বসে থাকি। আসে খুব কম।
আসল সত্য হচ্ছে এই-একদম সাসটেনেবল কৃষিকরে, পৃথিবীর ৬ বিলিয়ান লোক যদি তৃণভোজিও হয়, তবুও, আমরা তিনি বিলিয়ান লোকের বেশি লোককে খাওয়ানোর ক্ষমতা রাখি না – তিন বিলিয়ানের থেকে লোক বেশী হলে, পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হবেই। এবং সেটা হবে খাদ্যে জন্য অতিরিক্ত জল ও সার সেবনে। ভারত আর বাংলাদেশে প্রকৃতির যা ক্ষতি হয়েছে আনসাস্টেনেবল কৃষির কারনে, সেখানকার আগামী প্রজন্মর ভবিষ্যত অন্ধকার।
@বিপ্লবদা,
একদম ঠিক বলেছেন, বিপ্লবদা। মুক্তমনার মুক্তো হল বিজ্ঞান-দর্শনের লেখাগুলো, এই লেখাগুলোই মুক্তমনাকে অন্য ব্লগগুলো থেকে আলাদা করে চেনায়, বিজ্ঞান-দর্শনের জন্য ক্ষুধার্ত পাঠকদের দলে দলে টেনে আনে। অথচ বড়ই পরিতাপের বিষয়ঃ গত কয়েক মাসে এই ধরনের লেখা আশংকাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে।
আশা করছি, মুক্তমনার বিজ্ঞান-দর্শনের লেখকরা আবার সরব হবেন, পাঠকদের দীর্ঘদিনের ক্ষুধা নিবারণে এগিয়ে আসবেন।
এই সুযোগে চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দেয়া অনন্য লেখাটির জন্য সফিক ভাইকে আরেকবার কৃতজ্ঞতা……….বাদানুবাদের ডামাডোল থেকে উনিই আমাদের ক্ষনিক নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিয়েছেন।
@কাজি মামুন,
একদম ঠিক বলেছ, মামুন। মুক্তমনার বিজ্ঞান শিক্ষিত লেখকেরা ডুমুরের ফুল হওয়ায় বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত এ্যাকাউন্টিংয়ের অথবা অর্থনীতির ছাত্রদেরই বিজ্ঞান লেখায় এগিয়ে আসতে হবে। তাতে বিজ্ঞান না হোক কিছু না কিছু তো শেখা যাবে! বিজ্ঞানের দর্শনের উপর তুমিও কিছু লিখে ফেল !
@জয়া,
আপনি কে বলুনতো? আপনায় তো চিনলাম না!
বিদ্রুপ বর্ষিত হল কিনা, তাও তো বুঝলাম না!
ব্লগের দুনিয়া বড়ই আজিব! দূরকে আপন করে, আপনকে দূরে ঠেলে….. চেনাকে অচিন করে, অচিনকে চেনা করে……….
ব্লগের কি রূপ, দেখলাম না এই ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে………
@বিপ্লব পাল,ধন্যবাদ আপনাকে। এই লেখাটির চিন্তা মাথায় অনেকদিন ধরেই ছিলো, সময় পেয়ে এখন লিখে ফেললাম।
ভবিষৎ প্রজন্মের চোখে আমাদের বর্তমান আচরন কিভাবে প্রতিভাত হবে এটা যদি মানব সমাজের একটি বড়ো অংশ সবসময়ে মাথায় রাখতে পারে তবে পৃথিবী ও সভ্যতার প্রতি আমাদের দ্বায়িত্বশীলতা অনেক বেড়ে যেতো। একটা বই পড়ছি কদিন ধরে, Richard Heinberg এর The End of Growth। আমাদের ভোগ আর বৃদ্ধির পেছনে ছোটার কারনে পৃথিবীর পানি হতে শুরু করে সব রকমের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ যে কি দ্রুতহারে নি:শেষ হচ্ছে এটা জানতে পারলে আমাদের সন্তান-সন্ততির ভবিষৎ এর কথা ভাবতেই ভয় লাগে।
চরম একখান লেখা।
আমার ভাবনাটা ছিল অনেকটা এরকম – যে প্রাণীর জীবন আমার আহারের নিমিত্তেই এসেছে তাকে বধ করা যেতে পারে। গৃহপালিত পশুগুলোর পরিমাণ খুবই বেশি কারণ সেগুলো যত্ন সহকারে পালন ও প্রজনন করানো হয় কিন্তু এর তুলনায় বন্য প্রাণীর সংখ্যা নিতান্ত কম কারণ ওগুলোকে এভাবে তা করা হয় না। আমরা যদি প্রাণী আহার বন্ধ করে ফেলি তবে এই যে বিশাল গৃহপালিত প্রাণী-সম্ভার তা সম্ভব হত না। তবে হ্যা, আমি প্রচণ্ড বিরোধিতা করি factory farming এর নিষ্টুরতাকে। আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে মুক্ত পরিবেশে যেভাবে পশুপালন করা হয় সেভাবেই করা উচিত এবং তা সম্ভব।
আর হ্যা, প্রাণীকে কষ্ট না দিয়ে বা যন্ত্রণা একদম কম দিয়ে বধ করার প্রযুক্তি মানুষের কাছে এখন আছে। সেটার বহুল ব্যবহারের জন্য আমাদেরকে সচেষ্ট হওয়া দরকার। বর্বর উপায়ে প্রাণী পালন ও হত্যাকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার বিকল্প নাই।
লেখাটা অসাধারণ হয়েছে। অনেকেই প্রাণী হত্যার পক্ষে বলবেন, ধর্মের দোহাই দিবেন, কিন্তু তারপরও এই লেখাটি প্রত্যেকের কপালে চিন্তার ভাঁজ এনে দিতে সক্ষম হবে। এখানেই লেখাটির সার্থকতা ।
আচ্ছা উদ্ভিদেরওতো প্রান আছে তাহলে খাবারের জন্য কি উদ্ভিদের জীবন কে হত্যা করার পরযায়ে পরছে না ?
@আস্তরিন,
দেখুন ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস এগুলোরও জীবন আছে । আমরা এখানে ওগুলোকেও টানছি না।
এখানে সেসব প্রাণীর কথাই বলা হচ্ছে যারা প্রায় মানুষের মতোই যন্ত্রণা ভোগ করে। একটা মানবশিশু যেরকম আপনা আদর, স্নেহ বুঝতে পারবে একটা শূকর, কুকুর , গরু কিংবা ছাগলও কিন্তু সেরকম বুঝতে পারবে। একটা মানুষের নিকটা মৃত্যুযন্ত্রণা যেরকম উপরের প্রাণীগুলোর মৃত্যুযন্ত্রনা কি সেরকম নয়?
আর বর্তমানে ফার্মে যেরকম ভাবে এদের পালন করা হয় তাতে এদেরকে প্রায় জড়বস্তু হিসেবেই দেখা হয়।
অন্য দিকে উদ্ভিদ আসলে মৃত্যুযন্ত্রণা পায় কিনা সেটা স্পষ্ট নয়। যদিও উদ্ভিদও প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু একটা টিকটিকির লেজ কেটে গেলে ওই লেজটাও কিন্তু ছটফট করে। এর মানে কিন্তু এই না যে ওই লেজটাও যন্ত্রণা পাচ্ছে । অনুভূতি উপলব্ধির জন্য মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্র সম্ভবত অপরিহার্য।
নিপাট স্বাস্থ্যগত কিংবা অভ্যাসগত কারণ ব্যতীত- যারা জীব হত্যা থেকে নিবৃত থাকার নিমিত্তে ঘৃণা ভরে মাংস আহার হতে বিরত থাকে, উপরন্তু শাকাহারী তথা নিজেদের নিরামিষাশী দাবী করে তাদের আমার “মাঝে মাঝে” নয়, সর্বদা বাই ডিফল্ট পাঁড় ভণ্ড মনে হয়।
@সংবাদিকা,
যারা নিরামিষভোজী, তাদের কিছু যুক্তি আছে, দর্শন আছে, ইতিহাস আছে। কিন্তু আপনি যেভাবে বা যে ভাষায় আক্রমন করলেন, তা খানিকটা জাকির নায়েকের লেকচারের মত হল।
যাই হোক, আপনারও বলার ও মত দেবার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। তবে কিছুকে এভাবে খারিজ করতে হলে, সামান্য যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষন মুক্তমনার পাঠকরা আশা করতেই পারে।
পরিশেষে আবারো বলছি, আপনার মত দেবার অধিকারের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে মুক্তমনার পাঠকদের।
@সংবাদিকা,
কিছু মনে করবেন না। আপনার যুক্তি অনুসারে নৈতিকতার কথা যদি কেউ বলে তারা সকলেই বাই ডিফল্ট পাঁড় ভন্ড হতে বাধ্য। আমি যদি এখন মানবতার বুলি আওড়াই, তাহাও ভন্ডামীই হবে কারন আমি কিছু মানুষের কষ্ট লাঘবের কথা বলছি অথচ প্রতিদিন নিরীহ কিছু প্রাণীর নির্মম হত্যার কারন হচ্ছি। আমি হয়ত মানুষের মানবেতর জীবনযাপনের কথা বলছি অথচ ফার্মে অনেক প্রাণীর জড়বস্তুর ন্যায় জীবনযাপনের কারন হচ্ছি।
যাহোক আমি অবশ্য এখানে ভেজিটেরিয়ান হয়ে যাবার কথা বলছি না। আমি শুধু বলছি যে আমরা আসলে সবাই ভন্ড। 🙂 মহাজাগতিক দিক দিয়ে দেখতে গেলে ভেজিটেরিয়ানদের জীব হত্যা হতে নিবৃত্ত থাকা যেমন ভন্ডামী তেমনি আমাদের মানবতাবাদও তেমনি ভন্ডামি।
আমি যেমন আমার প্রয়োজনে প্রাণীহত্যা করি মাংসের জন্য, একজন ডাকাতও মানুষ হত্যা করতে পারে তার প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য। এবং আদিমকালে কিন্তু এক গোত্রের লোকেরা অপর গোত্রের লোকেদর খেয়েও ফেলত। তবে এখন এটা আপনার কাছে ভাবাও কষ্টকর।
@রনবীর সরকার,
উত্তম! খাসা!
মানুষ মানুষকে খাওয়ার কথা পাইনি, কিন্তু ‘ভোলগা থেকে গঙ্গা’য় ৬০০০ বৎসর পূর্বের পৃথিবীতে মানুষ ও অন্যান্য প্রানীর একে অপরকে খাদ্যে পরিণত করার তীব্র প্রতিযোগীতা ও সংগ্রামের ইতিহাস পাওয়া যায়।
@কাজি মামুন,
গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ লাগলে অনেক গোত্রই অন্য গোত্রের লোকদের খেয়ে ফেলত। কিছু গোত্রে আবার এমন অনুষ্ঠান ছিল যেখানে গোত্র প্রধানকে গোত্রের অন্যান্য লোকেরা খেয়ে ফেলত কারন তাদের ধারনা ছিল এতে গোত্রপ্রধানের শক্তি, বুদ্ধিমত্তা দলের সবার মধ্যে ছড়িয়ে পরবে।
এবং আশ্চর্যের ব্যপার হচ্ছে আধুনিক পৃথিবীতেও ক্যানিবালিজমের উদাহরন পাওয়া গেছে।
@রনবীর সরকার,
আশ্চর্যের কি আছে, রনবীরদা? যখন একজন ত্বকীকে হত্যা করা হয়, বা বিশ্বজিৎকে সবার চোখের সামনে মেরে ফেলা হয়, তখন কি বলবেন একে? এটাও কি আধুনিক ক্যানিবালিজমের এক প্রকার উদাহরণ নয়?
ধন্যবাদ চমৎকার একটি বিষয় উপস্হাপনের জন্য।আসলে ধর্ম, বর্ণ, সামাজিক প্রথা প্রায় সব মানুষকে অন্ধ করে রাখে। সমাজে খুব কম মানুষই জন্মে যারা তার ধর্ম, বর্ণ বা প্রথার ভ্রান্ত বা অমানবিক দিক গুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারে এবং এই কম সংখ্যক মানুষই ধিরে, ধিরে নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে সমাজ বা ধর্মের নানা প্রথার পরিবর্তন ঘটান। সমাজের বেশির ভাগ মানুষ যখন এ পরিবর্তন কে গ্রহণ করে নেয় তখনই পূর্বের প্রথা অমানবিক বা অসঙ্গত ছিল এ উপলব্দি জন্ম নেয়। আপনি যথার্থই বলেছেন তেমনি একটি প্রথা হচ্ছে পশু হত্যা প্রথা।নিচে এ বিষয়ে সামান্য কিছু ব্যাক্তিগত চিন্তা শেয়ার করলাম।
ছোট বেলায় মাংস খেলে পেটে ব্যথা করতো সে কারণে মাংস খেতাম না। এখন অবশ্য মাংস খেলে পেটে ব্যথা করেনা তবে এর অমানবিক দিকটি বিবেচনা করে মাংস খাই না, এমন কি বাজার থেকে কখনও কোন জীবিত মাছও কিনিনা। যদিও আমার এ আচরণ বেশির ভাগ পরিচিত জনের কাছে পাগলামী হিসাবে গন্য হয়।
আসলে পৃথিবীর পুরো খাদ্যচেন প্রক্রিয়ার মধ্যেই প্রকৃতিগতভাবে নিষ্ঠুরতা লুকিয়ে আছে।এখন মানুষ সভ্য হওয়ায় হয়তো প্রাকৃতিক এই নিষ্ঠুরতাকে উপলব্ধি করছে।তারপরও বলবো এক্ষেত্রে আমরা এখনও অসভ্য বর্বর রয়ে গেছি।
আসলে যে সমাজে যে প্রথা প্রচলিত সে সমাজের বেশির ভাগ মানুষ সেটাকে স্বাভাবিক হিসাবে গ্রহণ করে, মানবতার মানদণ্ডে তা যতই অমানবিক হোক।বহু বছরের পোষা মুরগীটির গলায় ছুরি চালালে কোন দোষ নাই, কিন্তু পোষা বিড়ালটির গলায় ছুরি চালালে সেটি প্রচণ্ড অমানবিক।
আমাদের বিভিন্ন উৎসবের রসনা মেটাতে বলি হতে হয় শত শত মুরগীকে। অনুষ্ঠানে রোষ্ট চিবাতে চিবাতে মুরগীটির কথা একবারও ভাবি না বরং একটা রোষ্টের জাগায় দুটো রোস্ট খেতে পারলে আনন্দের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
এ কথা সত্য বেঁচে থাকার জন্য বা নিজের রসনা তৃপ্ত করার জন্য মাংসের প্রয়োজন আছে। আপনার মত আমিও আশা করিনা যে পশুদের কথা চিন্তা করে সবাই নিরামিষ ভোজি হয়ে যাবে। তবে আমি পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে এ বোধটুকু জাগ্রত হলেও খুশি হতাম যে আমরা বাধ্য হলে পশু হত্যা করবো উৎসবের জন্য নয়।পশুদেরও মানুষের মতই দুঃখ আছে, কষ্ট আছে, যন্ত্রণা বোধ আছে, আমাদের মধ্যে এই বোধটুকু জাগ্রত হতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে!!
@বিষন্নতা,
হত্যা কিন্তু হত্যাই,সেটা উৎসবের জন্যেই করেন আর বাধ্য হয়েই।আর হত্যার দরকারো হয়না যদি ভিগেন হয়ে যান;যেহেতু গাছ গাছড়ারো প্রান আছে।কাজেই কেউ হত্যা করতে বাধ্য হয় না আর যদি নিজের একান্ত দরকারেই হত্যা করেন, তবে আমি বলব যে নিজে বাঁচার জন্য অন্যকে হত্যা করার অধিকার আপনাকে কে দিল?
আদিখ্যেতা ভালই জানেন।
এই বোধ জাগ্রত হলে কোন লাভ নেই যদি আপনি অন্যকে হত্যা করেন নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে।তারচেয়ে বরং নিজেই না খেয়ে মারা যান, অথবা স্বয়ংমৃত জিনিস খান।
এমনকি যদি উদ্ভিদের প্রাণ আপনার কাছে ভিন্ন কিছু মনে হয় তবে, ফসল ফলাতে কিটনাশক প্রয়োগ করাটাই হল সবচেয়ে বড় অপরাধ, কারন কীটের খাবারই ফসল, তাই নিজের পেট ভরাতে ফসল রক্ষার্থে আপনাকে কে অধিকার দিল অন্য একটি প্রান মেরে ফেলার?
মাঝে মাঝে নিরামিষাশীদের কে আমার কাছে ভন্ড আর দ্বি চারী মনে হয় এইসব কারনে।
আপনাকে একটি প্রশ্ন করি
ধরুন আপনি এখন থেকে দশ লক্ষ বছর পূর্বের এক গুহায় আছেন। আপনার দলের লোকদের সাথে গতকাল অন্য একটি গোষ্ঠির লোকদের সংঘর্ষ হয়েছিল যাতে আপনার দল জয়ী হয়। অন্য গোষ্ঠির কিছু লোকের মৃতদেহও আনা হয়েছে। আপনাদের কাছে ৩ দিন আগের কিছু শূকরের মাংসও আছে। কিছু শূকরের মাংস আর কিছু মানুষের মাংস আপনাকে দেয়া হল।
আপনি কি করবেন?
(i) দুটো মাংসই খাবেন?
(ii) শুধু শূকরের মাংসই খাবেন?
(iii) নাকি শুধু মানুষের মাংসই খাবেন?
**যদিও মানুষের মাংসের স্বাদ আমি জানি না। তবে কিছু কাহিনীতে শুনেছি যে মানুষের মাংসের স্বাদ নাকি অনেক বেশি।
@রনবীর সরকার,
প্রশ্নটি কি আমাকেই করলেন? নাম মুছেছেন আপনি আর আমি মেইল চেক করতে পারছিনা বলে বুঝতে পারছি না। তবু ধরে নিলাম যে আমাকেই করেছেন।
নরখাদকদের বিজয়উৎসবের কথা তুললেন তো?আমার ধর্মীয় উৎসবের পরিপ্রেক্ষিতেই কি তুলেছেন?সেক্ষেত্রে বলতে চাই যে ধর্মীয় উৎসব গুলও কিন্তু অনেক প্রাচীন, যেমন ইহুদিদের টা।
আমি ১০ লক্ষ বছর আগে হলে শুওরের মাংসটাই খেতাম। কিন্তু তার মানে এইনা যে বর্তমানে ধর্মীয় উৎসবের জন্য পশু জবাই নিন্দা করব।মানুষ মারা আর পশু মারা এক না।
আযটেক রা বা তারো অনেক আগ থেকেই নরবলির দিত কিছু সম্প্রদায়। কিন্তু সভ্য সমাজ কিন্তু নরবলিকে বর্জন করেছে। দেখেনতো রোমান সাম্রাজের সময়য়েও কিন্তু celtic প্যাগানদের ভিতর নরবলি প্রথা ছিল।
কিন্তু ঐতিহাসিক ভাবে রোমানদের কেই সভ্য ধরা হয় আর জার্মানিক গোত্র গুলো কে বর্বর।
কাজেই বুঝতেই পারছেন যে আমি সভ্য সমাজের রীতিনীতিই গ্রহন করব।
@দারুচিনি দ্বীপ,
হ্যাঁ। প্রশ্নটি আপনাকেই করেছিলাম।
আপনার মতো কিছু মানুষ সমাজে ছিল বলেই হয়ত আমরা নৈতিকতার এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। হয়ত আপনার মতো মানুষেরা সেসময় মনে কষ্ট পেলেও ওই প্রথাগুলোর বিরুদ্ধে খুব একটা উচ্চবাচ্য করার মতো পর্যায়ে ছিল না। কারন সেসময় আমরা এমন পর্যায়ে ছিলাম যে নৃশংসতা না করলে অন্য কেউ আমাদের উপর নৃশংসতা করবে। আপনি যেরকম ১০ লক্ষ বছর আগে শুওরের মাংসটাই খেতেন, সেরকম বর্তমানে কিছু মানুষ প্রাণীজ খাদ্য এবং উদ্ভিজ্জ খাদ্যের মধ্যে উদ্ভিজ্জ খাদ্য চয়েস করে।
আপনার “মানুষ মারা আর পশু মারা এক না” এই বাক্যটা যদি দ্বিচারিতা না হয় তাহলে ভেজিটেরিয়ানদের ” পশু মারা আর গাছ মারা এক না” এই বাক্যটা কেন দ্বিচারিতা হবে??
আপনার বাক্যটার মধ্যেই দ্বিচারিতা বেশি। কারন মৃত্যুর সময় পশুর মৃত্যুযন্ত্রনাটা আমরা বুঝতে পারি অপরদিকে গাছ আসলেই যন্ত্রণাভোগ করে কিনা সেটা আমরা জানি না। (না করার সম্ভাবনাই বেশি কারন যন্ত্রণা ভোগ করার জন্য স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্ক গাছের নেই)
মোঘল সাম্রাজ্যে খোজা প্রহরী রাখা হতো। তারা কিন্তু জন্ম থেকে খোজা ছিল না। তাদের কানে গলন্ত সীসা ঢেলে খোজা করা হত যাতে তারা গুরুত্বপূর্ন খবর শুনতে না পারে। আপনি মোঘলদের সভ্য না অসভ্য বলবেন?
আজ যদি এরকম কিছু আমরা শুনি তাহলে সর্বত্রই এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দাবাদ হবে। কারন আমরা মোঘলদের থেকে অধিক সভ্য। তাদের এরূপ কাজের জন্য আমি তাদের সভ্য বলতে পারি না।
ঠিক তেমনি আজ থেকে ১০০-২০০ বছর পরে আমাদের উত্তরসূরীরাও আমাদের নৃশংসতার জন্য আমাদের নিন্দা করতে পারে। অসভ্য বলতে পারে। ঠিক যেমন আপনার পূর্বপুরুষদের নৃশংসতার কারনে আপনি তাদের অসভ্য বলছেন এবং নিজেকে সভ্য দাবী করছেন।
সভ্যতার মানদন্ড পুরোটাই স্থান-কালে সীমাবদ্ধ। এর আসলেই কোন সার্বজনীন রূপ নেই। 🙂
@রনবীর সরকার,
আমি কিন্তু কথাটা “বিষণ্ণতা” সাহেব কে বলেছিলাম উনার উৎসবে হত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান কিন্তু নিজে খাবার জন্য হত্যাকে বৈধতা দানের কারনে( যদিও এতেও নাকি চোখের জল ফেলতে হবে;অবশ্য আমি নিশ্চিত যে উনি তা ফেলেন না সম্ভবত আমরা কোরাবনী তে গরু ছাগল জবাই করি সেটাই তিনি মিন করেছেন)।
তারপরেও বলতে হয় যে যদি গরু ছাগল কষ্ট পায়, তবে আপনার কি মনে হয় যে ইঁদুর কষ্ট পায় না?তবে আপনি ফসল রক্ষার জন্য ইঁদুর সহ আরো কীট পতঙ্গ মারেন কেন?গাছ গাছড়া খান আমার আপত্তি নেই। আমার আপত্তি একটাই, আর তা হল ইঁদুর মারা।
তাহলে আপনার কি মনে হয় না যে আমার(গাছের কথা বাদ দিন) “মানুষ মারা আর পশু মারা এক নয়” এইটার চেয়ে আপনাদের পশু মারা( খাবার জন্য) আর ইঁদুর মারা কি এক নয় কোনটা বেশি দ্বি চারিতা?
@দারুচিনি দ্বীপ,
এক্ষেত্রে হয়তবা ভেজিটেরিয়ানদের কথা হবে, আপনার ক্ষতি যদি কেউ করতে আসবে সেক্ষেত্রে নিজেকে রক্ষার জন্য হত্যা করলে সমস্যা নেই যদি অন্য কোন উপায় না থাকে। কিন্তু আপনি যেচে গিয়ে অপরের ক্ষতি করলেই সমস্যা। 🙂
ব্যপারটা অনেকটা এরকম যে আপনার বাসায় ডাকাত পড়লে আত্মরক্ষার জন্য আপনার শতভাগ অধিকার আছে ডাকাতকে হত্যা করার।(যদি না অন্য কোন উপায় না থাকে) কিন্তু আপনার কোন অধিকার নেই অপরের বাড়িতে ডাকাতি করতে যাওয়া। কিংবা নিজের অর্থের দরকার পড়লে অপরের ক্ষতি করে অর্থ উপার্জন করা।
@রনবীর সরকার,
ভেজিটেরিয়ানদের একটা বিশেষ উপায় বলতে পারি, কয়েকশ করে ইঁদুর ধরা কল পেতে রেখে আসতে পারে জমিতে।যেন ইঁদুর ধরা পড়ে কিন্তু মারতে না হয়।এতে একটু ঝামেলা আছে বৈকি তবু কি আর করা!ডাকাত কে না মেরে জেলে ভরার মত। :-s
@দারুচিনি দ্বীপ, রনবীর সরকার, অথবা ক্ষেতে নির্বিষ সাপ চাষ করা যেতে পারে, যেন তারা ইঁদুর খেতে পারে।কম খরচে সু ব্যবস্থা, বুদ্ধিটা ভাল হল কিনা জানাবেন। 😛
@দারুচিনি দ্বীপ,
হ্যা. এটা একটা খুবই ভাল বুদ্ধি। 🙂
@রনবীর সরকার,
ইসসিরে, ওই সাপগুলো যে ইঁদুরের সাথে সাথে নিরাপরাধ ব্যাঙ গুলিকেও খেয়ে ফেলবে এইটা ভাবলেন না? 🙁 । তবে পরের মন্তব্যে যদি প্রানী হত্যাটা বাদ দিয়ে দেন তবে আর তেমন কিছু বলার থাকে না।
আর যদি ব্যাপারটা বাদ না দেন তবে আমার আগের করা এই মন্ত্যবটার জবাব দিয়েন কেমন?নিচে আবার দিয়ে দিলাম। 🙂 । ভাল থাকবেন।
একদিকে ইঁদুরও মনে হয় ভেজিটেরিয়ান দের থেকে সদয় কারন বেচারারা ভেহিটেরিইয়ান দের ফসল নষ্ট করছে বাঁচার জন্য বাধ্য হয়ে, আর ভেজিটেরিয়ান রা বাধ্য হয়ে মারছে। কোনটা উত্তম বলেনতো?
@রনবীর সরকার,
আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। কীট পতঙ্গ আর ইঁদুর এদেরও তো বেঁচে থাকার দরকার তাই না? তাই তারা বাধ্য হয়ে জমির ফসল খায়। কিন্তু মানুষ আর ইদুরের মত না, তারা তাই ইঁদুরের জন্য বিকল্প খাদ্য ব্যবস্থা করতে পারে, অবশ্যই জমিতে শত শত ইদুর মারা কল পেতে।
আচ্ছা ইঁদুর জমির ফসল ডাকাতি করছে নাকি ভেজিটেরিয়ান রা ইঁদুরের খাবার শুধু ডাকাতিই করছে না, বরং মেরেই ফেলছে।একদিকে ইঁদুরও মনে হয় ভেজিটেরিয়ান দের থেকে সদয় কারন বেচারারা ভেহিটেরিইয়ান দের ফসল নষ্ট করছে বাঁচার জন্য বাধ্য হয়ে, আর ভেজিটেরিয়ান রা বাধ্য হয়ে মারছে। কোনটা উত্তম বলেনতো? বড়ই চিন্তার মধ্যে ফেলে দিলেন। :-s
@দারুচিনি দ্বীপ,
কিন্তু মানুষ আর ইদুরের মত না, তারা তাই ইঁদুরের জন্য বিকল্প খাদ্য ব্যবস্থা করতে পারে, অবশ্যই জমিতে শত শত ইদুর মারা কল পেতে।
আচ্ছা ইঁদুর জমির ফসল ডাকাতি করছে নাকি ভেজিটেরিয়ান রা ইঁদুরের খাবার শুধু ডাকাতিই করছে না, বরং মেরেই ফেলছে।একদিকে ইঁদুরও মনে হয় ভেজিটেরিয়ান দের থেকে সদয় কারন বেচারারা ভেহিটেরিইয়ান দের ফসল নষ্ট করছে বাঁচার জন্য বাধ্য হয়ে, আর ভেজিটেরিয়ান রা বাধ্য হয়ে মারছে। কোনটা উত্তম বলেনতো? বড়ই চিন্তার মধ্যে ফেলে দিলেন।
ঠিক তেমনি আজ থেকে ১০০-২০০ বছর পরে আমাদের উত্তরসূরীরাও আমাদের নৃশংসতার জন্য আমাদের নিন্দা করতে পারে। অসভ্য বলতে পারে। ঠিক যেমন আপনার পূর্বপুরুষদের নৃশংসতার কারনে আপনি তাদের অসভ্য বলছেন এবং নিজেকে সভ্য দাবী করছেন।
সভ্যতার মানদন্ড পুরোটাই স্থান-কালে সীমাবদ্ধ। এর আসলেই কোন সার্বজনীন রূপ নেই।
@রনবীর সরকার,
মন্ত্যব কোটেশনের জায়গায় আর কোটেশন মন্তব্যের জায়গায় চলে গেল দেখছি।
@রনবীর সরকার,
:-)ভাল। আমি এটাই শুনতে চাচ্ছিলাম আপনাদের কাছ থেকে।বিষণ্ণতাসাহেব মনে হয় না আর জবাব টবাব দেবেন, তেমন আলামত পাচ্ছি না।যাক কেউ বেশি দোষী কেউ কম দোষী।
মানে পশুগরু জবাই আর সোজা পশুর হৃদপিণ্ডে ছুরি চালানো। অবশ্যই ২য় দলের দোষ কম কারন আমার ধারনা জবাই করে মারার মত মারাত্বক যন্ত্রণার মৃত্যু আর হতে পারে না। দুঃখের বিষয় যে আমরা মুসলিমরা এভাবেই কাজটা করে থাকি।
@দারুচিনি দ্বীপ,
আসলে আল্লাহ ইচ্ছা করলেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। দেখেন পানি পানের জন্য কিন্তু আমাদের কাউকে কষ্ট দিতে হয় না। তেমনি আল্লাহ যদি আমাদের খাদ্যের জন্যও এরকম ভাল কোন ব্যবস্থা করে দিতে পারতেন তাহলে আর আমাদের এতটা আত্মগ্লানিতে ভুগতে হতো না।
সত্যি কথা বলতে কি মাংস খাবার সময় যেরকম প্রাণীটির কথা মনে আসে সবজী খাবার সময় ইদুরের কথা তেমন মনে আসে না। তাই বুঝতে পারি আসলে ভেজিটেরিয়ানরা কেন ভেজিটেরিয়ান।
@রনবীর সরকার,
যদি সত্যি এমনটাই হয় তবে আমি মুঘলদের অসভ্য আর বর্বর বলব।আমার কাছে মানুষের জীবন আসল, এবং গরু , খাসি, অথবা ইঁদুর( যা ফসল খায় কিন্তু মারলে ব্যাথাও অনুভব করে) থেকে অনেক বেশি মুল্যবান।
ধন্যবাদ।:-)
@দারুচিনি দ্বীপ,
এই পোস্টের মূলকথা কিন্তু এটাই। 🙂 আমরা তাদের অসভ্য বললেও তারা কিন্তু নিজেদের সভ্যই বলত। 🙂
তেমনি আমাদের ১০০ বছর পরের উত্তরসূরীরা কিন্তু আমাদের অসভ্য আর বর্বর বলতেই পারে ঠিক যেমন আপনি মোঘলদের বর্বর বলছেন।
@রনবীর সরকার,
সেটা তো সবাই বলে থাকে।যেমন আর্য কন্সেপ্টটা।চিরকাল জেনে এসেছি যে ইউরোপ থেকে নাকি আর্যরা এসেছিল ভারতে, এখন অনেকে বলে যে সিন্ধু সভ্যতাও নাকি আর্য সভ্যতা, আর এর ধ্বংসকারীরাও আর্য। হিটলারও নিজেকে আর্য তথা মহৎ দাবী করে গেছে।এতে তো আর সে মহৎ হয়ে গেলো না।ইয়াহিয়া খানও নিজেকে আর্যই দাবী করতে পারত বলে আমার ধারণা শুধুমাত্র মুসলিম বলে করেনি। গোলাম আজমের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।
কাজেই সভ্য দাবীদার মাত্রেই সভ্য এমনটা ভাবা যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে না আমার কাছে।
@দারুচিনি দ্বীপ,
সেটাই তো বললাম। আমরা যেমন তাদের সভ্য বলতে পারিনা, ঠিক তেমনি ভবিষ্যত প্রজন্মেরও প্রেক্ষিতে আমরাও সভ্য নাও হতে পারি। প্রাণীহত্যার ব্যপারটা বাদ ই দিলাম। আমাদের ভোগবাদী স্বভাবের জন্য আমরা যেইভাবে প্রকৃতির ক্ষতি করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটা উষর পৃথিবী উপহার দিতে যাচ্ছি, তাতে তারা যদি আমাদেরকে অসভ্য বলে এতে বিশেষ আশ্চর্য হবার কিছু নেই।.
@রনবীর সরকার,
আমার কথা হল আমরা যে নিজেদেরকে সভ্য বলে আত্মতৃপ্তি পাই সেটাই আসলে ঠিক নয়। তবে হ্যা একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই আমাদেরকে সভ্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবে। কৃষিকাজের উন্নয়নের ফলে আমাদের এখন আর বন্যপশু হত্যা করতে হয় না। এমনকি বন্যপশু-পাখী হত্যাকে আইন দিয়েও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
যদি একসময় কৃত্রিম মাংসের দাম আসল মাংসের দামের সমান হয়ে যায় তখন কিন্তু আমাদের সত্যিই আর প্রাণীহত্যার মতো নৃশংস কাজ করতে হবে না। আর উন্নত প্রযুক্তি আমাদের পৃথিবীর কোন ক্ষতি না করেই জীবন-যাপন করতে সহায়তা করবে।
@দারুচিনি দ্বীপ,
সংশোধন; ওপরের বোল্ড অংশে “যেহেতুর” স্থলে যদিও পড়তে হবে।
@বিষন্নতা,
পশুমাংস যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বা, … এর মাংসতো আমরা আমাদের দেহের প্রোটিন, এৰ্নাজি, … ইত্যাদি চাহিদা মেটানোর জন্য খাই। প্রোটিন, এৰ্নাজি, … ইত্যাদি চাহিদা মেটানোর বিকল্প ব্যবস্থা সহজলভ্য হলে পশুহত্যার প্রয়োজন হবে না ।
খুব গুরুত্বপূর্ণ আর আকর্ষণীয় একটি বিষয় নিয়ে লেখা। এই লেখায় এমন কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে, যার সাথে আমাদের অনেকের আগে পরিচয় ঘটেনি। বা বলা ভাল, আমরা এভাবে চিন্তা করেও দেখেনি।
তবে অনেক আগে একজনের সাথে বিতর্ক হয়েছিল কোরবানির সময় গো-হত্যা নিয়ে। আমার যুক্তিটা ছিল, আমরা আমাদের সভ্য ও সুসজ্জিত রাস্তায় গোহত্যা, রক্ত এগুলি দেখতে পছন্দ করি না, কিন্তু বাজার থেকে ব্যাগ-ভর্তি করে মাংস কিনে ডাইনিং রুমে বসে তা চেটেপুটে ভক্ষণ করতে খুব বেশি বিলম্বও করি না। আমাদের সভ্য মন কোরবানির সময় রাস্তায় রক্ত, নাড়ি-ভুঁড়ি দেখে বেদনায় আর্ত হয়, কিন্তু কত জংগল, কত চারণভূমি সাফ করে যে আমরা গড়ে তুলেছি আজকের এই ঝকঝকে চকচকে সভ্যতা, সুরম্য প্রাসাদ, চোখ ধাঁধানো রাজপথ, তা ভেবে কখনো ব্যাকুল হয় কি আমাদের হৃদয় ও মনন?
পশুদের খামারিকরণের যুগ তাহলে সমাপ্তির পথে? সেদিন বেশী দূরে নয় যে, এক একটা পশু খামার স্বরিত হবে, এক একটা গ্যাস চেম্বারের সাথে? আমি কিন্তু পরিষ্কার ছবি দেখতে পাচ্ছি…..এমনটা ঘটনার সম্ভাবনা শতভাগ।
তবে যে প্রশ্নটা মনে উঁকি দিয়েছে, তা হল: স্টেম সেল পদ্ধতিতে যে কৃত্রিম মাংস তৈরি করা হয়, তাকে কি বলব? শুধুই এক তাল মাংস? নাকি তার মাঝেও রয়েছে প্রাণ? আর যদি প্রাণ হয়, তাহলে তার ভক্ষণ কি শেষ-পর্যন্ত জীবন্ত প্রাণীরই ভক্ষণ নয়?
অসাধারণ এই লেখাটির জন্য কোন ধন্যবাদই যথেষ্ট নয়, সফিক ভাই!
@কাজি মামুন,ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্যে। কৃত্তিম মাংস টেকনোলজী এখনো গবেষনাগারের দরজা পার হতে পারে নি। যদি এটা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন সম্ভব না হয়, তবে হয়ত এর ইম্প্যাক্ট তেমন কিছু হবে না। কিন্তু সত্যিই যদি এটা সহজলভ্য করা সম্ভব হয় তবে এটা একটা যুগান্তকারী টেকনোলজী বিপ্লব হবে সন্দেহ নেই।
আর এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত মাংসের তালকে ঠিক প্রাণী বলা যাবে না। কারন প্রানের যে সংজ্ঞাগুলো আমরা দেখি, স্বয়ংসম্পুর্ন ক্লোজড সিস্টেম, প্রজনন ক্ষমতা, ভিতরে জৈবিক প্রক্রিয়া, এসব তো এখানে থাকবে না।
আসল কথা পশুমাংস ভোজনের বিরোধিতা প্রাণীভক্ষনের বিরুদ্ধে নয়, আমরা প্রতিমূহুর্তে এমনকি নি:শ্বাসের মাধ্যমেও অসংখ্য জীবানু শরীরের ভেতরে নিয়ে যেয়ে ইমিউন সিস্টেম দিয়ে মেরে ফেলছি। আসল অবজেকশনটা হলো সংবেদন শীল, বুদ্ধিমান প্রাণ যারা কিনা যন্ত্রনা ও মৃত্যুভয় বেশী উপলদ্ধি করতে পারে এদেরকে খাওয়ার বিরুদ্ধ। আমরা যেইসব প্রাণী খাই, যেমন মাছ, মুরগী, গরু, ছাগল এরা সবাই বেদনা স্পষ্টভাবেই অনুভব করে আমাদের চেয়ে কম নয়। কিন্তু বিজ্ঞানী প্রশ্ন করেন যে এই বেদনাটি উপলদ্ধিকরার মতো যথেষ্ট জটিল মগজ এদের আছে কি না? এটা আসলে এখনো অমীমাংসীত প্রশ্ন যে বেশী বুদ্ধিমান প্রাণী বেদনা, আতংক বেশী উপলদ্ধি করে কি না।
শুকর, গরু, ছাগল এসব খাওয়ার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠলেও হয়তো মাছ, মুরগী এদেরকে নিয়ে চিন্তাভাবনা অন্যরকম হতে পারে। রিসেন্টলি একটা গবেষণায় বেড়িয়েছে যে মাছের স্নায়ুতন্ত্রে বেদনা জন্যে রিসেপ্টর থাকলেও সেই বেদনাকে উপলদ্ধি করার মতো মডিউল মাছের মগজে নেই।
http://www.telegraph.co.uk/science/science-news/9797948/Fish-cannot-feel-pain-say-scientists.html
@সফিক, বিষয় বৈচিত্র ও ধারাবাহিক বর্ণনায় লেখাটি অনন্য।কৌতুহল বশত জানতে ইচ্ছে করছে যদি কৃত্তিম মাংস তৈরি ব্যাণিজ্যিকভাবে ব্যার্থ হয় তাহলে কি হবে? আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্ম কি আমাদেরকে ব্যেলেম করা বাদ দিয়ে আমাদের মতই মাংস খেয়ে যাবে?