প্রদীপের নীচে অন্ধকার
কোনো আন্তর্জাতিক উৎসব বা বিদেশী অতিথি দেশে বেড়াতে এলে বাংলাদেশের সরকারগুলো ঘটা করে আদিবাসী [হালে “উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি”] নাচগান পরিবেশন করেন। এর মাধ্যমে সরকার হয়তো বহির্বিশ্বের কাছে এমন ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চায় যে, বাংলাদেশ একটি বহুভাষা, বহুজাতি, বহুধর্ম ও বহু সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধশালী দেশ; এদেশে বাংলা ভাষাভাষি বৃহত্তর বাঙালি জাতিগোষ্ঠির বাইরে নিজ নিজ ভাষা ও সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যবাহী আরো প্রায় ৭০টি [সরকারি হিসেবে ২৭টি] ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির বসবাস রয়েছে। বাঙালির পাশাপাশি এসব ভিন জাতির অবাঙালিরা নিজ নিজ নাগরিক অধিকার নিয়ে ভালোই আছেন!

কিন্তু আসলে কি তাই? রূঢ় বাস্তবতা বলছে, স্বাধীনতার আগে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তা পূর্ব বাংলা, তথা এখনকার বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গে যে নিষ্ঠুর অমানবিক শোষণ-নির্যাতন চালিয়েছিলো, একই কায়দায় একই শোষণ-নির্যাতন এখন স্বাধীন দেশের সরকারগুলোই আদিবাসীদের সঙ্গে করছে।

আদিবাসীর জমি-জলা-জঙ্গল-টিলা কেড়ে নিতে পাহাড়, কি সমতলে এই নিপীড়ন স্বাধীনতার পর থেকেই চলছে; পাশাপাশি রয়েছে সরকারি আস্কারায় বৃহত্তর বাঙালি জাতিগোষ্ঠির নির্যাতন-নিপীড়ন। এই সেদিনও উত্তরবঙ্গে জমি রক্ষার জন্য জীবন দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ হলেন সাঁওতাল নেতা আলফ্রেড সরেন। গণবিরোধী ইকো-পার্ক বন্ধের আন্দোলনে বনরক্ষীদের গুলিতে শহীদ হলেন গারো আদিবাসী নেতা পিরেন স্নাল। এক-এগারোর সেনা সমর্থিত অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যৌথ বাহিনী পিটিয়ে খুন করে মধুপুরের আরেক আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিলকে ।

অন্যদিকে আমরা দেখে আসছি, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান নিয়ে গড়ে ওঠা পার্বত্য চট্টগ্রামে সরাসরি সেনা, বিজিবি, ড়্যাব, পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, বনরক্ষীসহ সরকারি-বেসরকারি নিপীড়ন চলছে অন্তত চার দশক ধরেই। পাহাড়ে এই পাকিপনা এতোটাই স্পষ্ট যে, শান্তিচুক্তির আগে অন্তত ১৩টি গণহত্যার কোনো বিচার হয় না, শান্তিচুক্তির পরে সেনা-সেটেলার [অভিবাসিত বাঙালি, এদের প্রধান সংগঠন ‘সমঅধিকার আন্দোলন’] প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে আরো ডজন খানেক সহিংস হামলায় প্রতিনিয়তই আদিবাসী পাহাড়িরা খুন হন, ধর্ষিত হন, তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। অসংখ্য দেশি-বিদেশী সংবাদের সুবাদে পাহাড়ি নেত্রী কল্পনা চাকমার নাম বোধহয় এখন সচেতন নাগরিক মাত্রই জানেন। বিস্ময়ক এই যে কল্পনা চাকমা অপহরণের দেড় দশক পরেও সরকারগুলো অপহৃতর সন্ধান দিতে দীর্ঘ চাতুরির আশ্রয় নেয়; তারা একই সঙ্গে এ-ও বুঝিয়ে দেয়, এদেশের সরকারসমূহ এই অপহরণ মামলার অভিযুক্ত সেনা অধিনায়ক লেফটেনেন্ট ফেরদৌস ও তার দলের কেশাগ্র স্পর্শে নিতান্তই অক্ষম, অপহরণের বিচার তো দূরের কথা!

এ অবস্থায় এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম কি স্বাধীন বাংলাদেশের নয়া উপনিবেশ?

বাঙালি মুসলমানের মন
ওপরে যে সব ধারাবাহিক নিপীড়নের কথা বলা হলো, তারই যোগসূত্রে এরই মধ্যে ফিকে হয়ে আসছে, ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি এবং ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তিতে বর্ণিত মূল কথাটি: “পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী/উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল বলিয়া গন্য হইবে।”

শুধুমাত্র জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট করে দিতেই [পড়ুন, আদিবাসীর স্বায়ত্বশাসনের অধিকার গলা টিপে হত্যা করতে] জেনারেল জিয়া ও জেনারেল এরশাদের সরকার পার্বত্যাঞ্চালকে শুধু সামরিকায়ন করেই ক্ষান্ত হননি, সরকারি উদ্যোগে সেখানে ‘পুনর্বাসন’ দিয়েছেন রেশন নির্ভর কয়েকলাখ সেটেলার বাঙালিকে। বরাবরই এই সেটেলার ছিন্নমূল মানুষেরা কঠিন পাহাড়ি জীবন যাপনে অক্ষম। তাই জমি-জিরেত, বন, ব্যবসা যেখানে যতটুকু তারা পারছেন, তাই সর্বস্ব করে হাতিয়ে নিতে উন্মুখ। অশান্ত পাহাড়ে সাবেক গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনীকে দমন করতে সামরিক রণনীতির কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এই হাভাতে জনগোষ্ঠি; প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তাদের ভাবমানষ গড়ে উঠেছে সামরিক দর্শনজাত “শান্তকরণ” প্রকল্পের আদলে। এর একটি চরমতম বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে কৃত্রিম জমির বিরোধ সৃষ্টি করে পাহাড়ের সবক’টি সাম্প্রদায়ীক সহিংস হামলায় পাহাড়িদের বিরুদ্ধে সেটেলারদের “লেলিয়ে দেওয়া”। সঙ্গে ধর্মীয় উস্কানী এসব সহিংসতায় বারুদের মতো কাজ করে।

শান্তিচুক্তির পরে সেনা খবরদারি খর্ব তো হয়ইনি, বরং একই রকমভাবে জলপাই রঙা গিলাফে সেটেলার মনোজগত দখল করার প্রক্রিয়া চলে আসছে। আর শান্তিচুক্তি বিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক, তথা জাত্যাভিমানী ফ্যাসিস্ট বিএনপি-জামাতের টার্গেট গ্রুপ এই সেটেলাররা। পাহাড়ি জনপ্রতিনিধির বিপরীতে বাঙালি ভোটের সংখ্যা বাড়াতে তারাও মরিয়া। তাই তারা সব রকম ধর্মীয়, রাজনৈতিক, এমনকি অর্থনৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে সেনা-সেটেলার শক্তিকে। আত্নীয়তা ও আঞ্চলিকতার সূত্রে সেটেলাররা দিন দিন দলেবলে ভাড়ি হয়ে বাড়িয়ে তুলেছে চুক্তি বিরোধী বিএনপি-জামাত, এমনকি নাবালক বিপ্লবী গ্রুপ ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’– ইউপিডিএফ’র ভোট ব্যাংকও। সেনা-সেটেলার-বিএনপি-জামাত মিলে পাহাড়ে শক্তিধর বিষবৃক্ষটি ‘সম-অধিকার আন্দোলন’ নামে ক্রমেই দানবীয় রূপ নিচ্ছে।

সম্প্রতি এরই একটি ছোট মহড়া আমরা দেখেছি শাহবাগে বিসিএস’এ অকৃতকার্যদের কোটা বাতিলের তাণ্ডবে। সেখানে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের বদলে কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়া দাবিতে পোড়ানো হয়েছে চারুকলার ছাত্র-ছাত্রীদের নববর্ষের শোভাযাত্রার কাগুজে পাখি-বাঘ ইত্যাদি প্রতিকৃতি; জামাত-শিবিরের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনে এই তাণ্ডব থেকে “মুক্তিযোদ্ধার/উপজাতির দুইগালে, জুতা মারো তালে তালে” শ্লোগান দেওয়ার স্পর্ধাও দেখানো হয়েছে! আর পাহাড়ে এদের রূপ কতোটা ভয়াল হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। সমঅধিকারের হরতালে “জুম্ম [পাহাড়ি] ধরো, জবাই করো” একটি নিত্যনৈমিত্তিক শ্লোগান।

প্রসঙ্গত, চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের অনুসারি উপদল বাদে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীরা সমানকাতারে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, সশস্ত্র যুদ্ধ করেছে, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছে, এমন কি জীবন দিয়ে শহীদও হয়েছে। তাদের সকলের আশাই ছিলো সে সময় বৈষম্যহীন- শোষণমুক্ত স্বাধীন দেশ গড়ার। মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা বা স্বীকৃতি তারা কোনকালেই পাননি, এখন নতুন করে আদিবাসী বিতর্কে ইতিহাসের এই গৌরবময় অধ্যায়টিকেই মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

পাহাড়ে বরাবরই সক্রিয় বাঙালি ভাবমানষ প্রভাবিত করার পাশাপাশি গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করার [পড়ুন, সেটেলার সাংবাদিক কিনে ফেলার] সামরিক রাজকূট। সরাসরি গ্যারিসনের অনুদানে তিন পার্বত্য জেলায় গড়ে উঠেছে তিনটি সুরম্য প্রেসক্লাব। “পার্বতি”, “মৈত্রী” নামক স্থানীয় পত্রিকার পর এখন চলছে অমুক টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর মচ্ছব। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর থেকে সেখানে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের [৯ আগস্ট] আগে পাহাড়- পর্বত ছেয়ে ফেলা হয়, দামি সাদাকাগজে ছাপা চার রঙা পোস্টার-লিফলেটে। এসব প্রচারণার মূল কথা একটাই: “আদিবাসী” স্বীকৃতি দেওয়া চলবে না, দেশে কোনো আদিবাসী নেই, “উপজাতি”রা দুশ-আড়াইশ বছর আগে এদেশে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে, বাঙালিরাই এদেশের আদিবাসী, আইএলও’র সঙ্গা মতেও “উপজাতিরা” আদিবাসী নয়, “আদিবাসী”র স্বীকৃতি দেওয়া হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পূর্ব তিমুর হয়ে যাবে বা বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারতের অংশ হবে — ইত্যাদি ইত্যাদি। এ বছরও একই রকম পোস্টার পড়েছে খুব সম্প্রতি বান্দরবানে। আশা করা যায়, শিগগিরই রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি হয়ে পোস্টার ছেয়ে ফেলবে গত বছরের মতোই চট্টগ্রাম এবং ঢাকার প্রাণকেন্দ্র স্থলসমূহ।

আদিবাসী হয় কি বস্তু?
চলতি নোটে “আদিবাসী” বিতর্কের সুযোগ নেই, এই নোটের তা উদ্দেশ্যেও নয়, বরং পাঠককে বলি, আসুন আমরা নজর দেই হঠাৎ করে সেনা-সেটেলার তথা সম-অধিকারের এইসব প্রচারণার নেপথ্যে। খানিকটা পেছনে ফিরলেই আমরা দেখবো, একই রকম বেসামাল কথাবার্তা আমরা গত ১৫ বছর ধরে শুনে আসছি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসংখ্য বক্তৃতা-বিবৃতিতে। শান্তিচুক্তির পর “দেশ বিক্রির কালোচুক্তি” বাতিলের উদ্দেশ্যে বিএনপি পার্বত্যাঞ্চালের উদ্দেশ্যে লংমার্চের প্রচারণাতেও একই রকম কথাবার্তা আমরা শুনেছি। প্রতিবছর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের দিনে [২ ডিসেম্বর] পাহাড়ে কালো পতাকা উড়িয়ে সম-অধিকার আন্দোলনওয়ালারাও সভা-সমাবেশে একই রকম বক্তৃতা দেয়। কিন্তু আশংকার কথা, আদিবাসীর শেষ আশ্রয়স্থল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বলে দাবিদার আওয়ামী লীগ মহল থেকেও এখন একই কথা বলা হচ্ছে। গত বছর সংবিধান সংশোধনের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনিও একই সুরে কথা বলেছেন। আদিবাসীর সব দাবি নাকচ করে সংবিধানে আদিবাসীর নাগরিক পরিচয় একইসঙ্গে “বাঙালি”, “উপজাতি”, “ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠি”, “ক্ষুদ্র জাতি” উল্লেখ করা হয়েছে [১৯৭২ সালেও এই দাবি একদফায় নাকচ হয়েছে, যার পরবর্তী অধ্যায় ছিলো সাংসদ এমএন লারমার নেতৃত্বাধীন শান্তিবাহিনীর দীর্ঘ স্থায়ী গেরিলা যুদ্ধ]। শুধু তাই নয়, জাতি সংঘের অধিবেশনেও সরকারের প্রতিনিধি আম্লান বদনে একই কথা বলেছেন, দেশে কোনো আদিবাসী নেই, বাঙালিরাই আদিবাসী!

আওয়ামী লীগ “দিন বদলের সনদ” নামক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে “আদিবাসীর অধিকার” প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। বিরোধী জোটে থাকার সময় দলীয় প্রধান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদিবাসী দিবসের স্মরণীকায় বাণীও দিয়েছেন। এমনকি দীপু মনি নিজেও শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতির সভাপতি, সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমার সঙ্গে আদিবাসী দিবসের শোভাযাত্রায় অংশও নিয়েছেন। তাহলে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী দল আওয়ামী লীগ হঠাৎ করে কেনো রাতারাতি আদিবাসীর সঙ্গা পাল্টে দিলো? তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এখন সেনা-সেটেলার বলয়ের বাইরে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের কল্যানে পার্বত্যাঞ্চালের পাকিপনার খবর এখন বেশ জোরেশোরেই প্রচারিত হচ্ছে। অন্যদিকে, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল আদিবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনেক বেশী সোচ্চার। দেশের ভেতরে প্রগতিমনা অ-আদিবাসীরাও এখন অনেক বেশী আদিবাসীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুক্ত। তাই বাংলাদেশে, আরো বিশেষ করে পাহাড়ে “আদিবাসী আছে” স্বীকার করে নিলে সেনাবাহিনী কর্তৃক আদিবাসী নির্যাতনের দায়ে জাতিসংঘ মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাদ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই আশঙ্কা দূর করতে সবচেয়ে সহজপন্থা হচ্ছে, রাজনৈতিক চাতুরির অংশ নিয়ে স্ববিরোধীতা করা।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, আদিবাসী শক্তির পাশে দুই বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি-জামাত এবং শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগও নেই। ভূমির ওপর পাহাড়িদের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ শান্তিচুক্তির মূল শর্তগুলো বাস্তবায়নের তাগিদও এই দুই রাজনৈতিক শিবিরের নেই। বরং নতুন করে সরকারি পর্যায়ে “আদিবাসী” বিতর্ক তুলে দিয়ে উস্কে দেওয়া হয়েছে সেনা-সেটেলার পাকিপনা অপশক্তিকে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি-জামাত, হেফাজত এসব ইতিহাস ও বোধবুদ্ধি বিবর্জিত কুটতর্ক তো করছেই, উপরন্তু “আদিবাসী দিবস” পালন না করার সরকারি সার্কূলারে উগ্র জাত্যাভিমানী ও ধর্মান্ধ জোট আরো খানিকটা গতিপ্রাপ্ত হয়েছে। সেনা-সেটেলারের গ্যারিসন ও সম-অধিকারের মক্তব্যে এখন পাখিপড়ার মতো করে দীপুমনি-বুলি পড়ানো হচ্ছে:

দেশে কোনো আদিবাসী নেই। উপজাতিরা বহিরাগত। বাঙালিরাই এদেশের আদিবাসী।

উপসংহারের বদলে
সরকারি এ হেন প্রপাগাণ্ডায় বিরক্ত হয়ে সে সময় কোনো একটি নোটে লিখেছিলাম:

দীপু মনির কথা মেনে বাঙালিরাই যদি আদিবাসী হয়, তাহলে কি মজাই না হবে! উফ! ভাবতেই গা শিউরে উঠছে! তাহলে আদিবাসী অধুষ্যিত একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শিগগিরই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে!! আর তখন বহিরাগত “উপজাতিরা” এদেশে স্বসন্মানে বিদেশী নাগরিকের মর্যাদায় বাস করবেন!!

ওই নোটে একজন পাহাড়ি বন্ধুর মন্তব্য ছিলো এ রকম:

বাঙালিরাই যখন আদিবাসী, তাহলে তারাই নয় এবছর আদিবাসী দিবস পালন করুক!!

_______________
ছবি: পাহাড়ে বিতর্কিত পোস্টার, সম-অধিকারের তাণ্ডবের সতর্কবার্তা, আদিবাসী দিবসে দীপুমনির শোভাযাত্রা, ফেবু পেজ ও লেখকের নিজস্ব সূত্রে সংগৃহিত।