১.
চার নম্বর ক্রিমিন্যাল কোর্ট, নিউ ইয়র্ক সিটি।
আমেরিগো বোনাসেরা বসে আছে। অপেক্ষা করছে বিচারের রায়ের জন্য। তার মেয়েকে যারা নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়েছে, অমর্যাদাকর শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেছে তাদের প্রতি প্রতিশোধ নেবার প্রতীক্ষায় বসে আছে সে।
যিনি বিচারকার্য চালাচ্ছেন, তিনি একজন ভয়ালদর্শন বিশালদেহী লোক। কালো গাউনের হাতা গুটিয়ে আস্তিন পর্যন্ত উঠালেন তিনি। ফুলে উঠেছে সুঠাম বাহুটা। ভাবটা এমন যেন আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো দুই তরুণকে নিজের হাতেই পিটাবেন তিনি। পিটিয়ে উচিত শিক্ষা দিয়ে দেবেন। চোখ দুটো হীমশীতল, সেখানে একরাশ তীব্র ঘৃণা দুই আসামীর জন্য।
কিন্তু কোথায় যেন একটা ঘাপলা আছে। আমেরিগো বোনাসেরা ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করছে, কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছে না বিষয়টা ।
‘ ইতর বদমায়েশদের মত কাজ করেছো তোমরা।‘ গমগম করে উঠে বিচারকের গলা।
‘ঠিক, একদম খাঁটি কথা।‘ মনে মনে বলে আমেরিগো বোনাসেরা। ‘জানোয়ার, আস্ত জানোয়ার এগুলো।‘
বিচারকের এই ভয়ংকর আক্রমণে আসামী দুই তরুণের চোখে মুখে অনুতাপ ফুটে উঠে। মাথা হেট করে ফেলে তারা।
‘জঙ্গলের বুনো জন্তুর আচরণ করেছো তোমরা।‘ বিচারক তখনো বলে চলেছেন। ‘কিন্তু তোমাদের ভাগ্য ভালো যে তোমরা অসহায় মেয়েটার শ্লীলতাহানি করো নাই। করলে বিশ বছরের জেলের ঘানি টানিয়ে ছাড়তাম আমি তোমাদের।‘ থামলেন তিনি। ঘন ভ্রুর নীচে লুকিয়ে থাকা চোখ তুলে একঝলক তাকালেন আমেরিগো বোনাসেরার ফ্যাকাশে মুখের দিকে। তারপর চোখ নামালেন তাঁর সামনে রাখা একগাদা রিপোর্ট এর দিকে। ভ্রু কুচকে উঠলো তাঁর। কাঁধ ঝাকালেন যেন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু মেনে নিচ্ছেন তিনি। তারপর আবার শুরু করলেন তিনি।
কিন্তু তোমাদের অল্প বয়সের কথা চিন্তা করে, অতীতে তোমরা কোনো অপরাধ করো নি বলে, তোমাদের চমৎকার পরিবারের কথা বিবেচনায় এনে এবং আইন নিজে প্রতিহিংসা, প্রতিশোধে বিশ্বাসী নয় বলে, আমি তোমাদের তিন বছরের কারাবাসের দণ্ড দিচ্ছি। তবে, এই দণ্ড স্থগিত থাকবে।‘
চল্লিশ বছরের পেশাদারী আচরণের কারণের তীব্র হতাশা আর ঘৃণাটা দৃশ্যমান হলো না আমেরিগো বোনাসেরার চেহারায়। তার ফুটফুটে মেয়েটা ভাঙা চোয়াল নিয়ে এখনো হাসপাতালে গোঙাচ্ছে। আর এই দুই জানোয়ার মুক্ত হয়ে গেলো? পুরোটাই যে তামাশা!
আনন্দে আত্মহারা দুই তরুণের পিতা-মাতা গিয়ে জড়িয়ে ধরেছে তাদের সন্তানদের। সবাই কী ভয়ানক খুশি, কী চমৎকারভাবে হাসছে সবাই।
তিক্ত একটা দলা উঠে এলো বোনাসেরার গলায়। দাঁতে দাঁত চেপে রাখার পরেও মুখ বেয়ে বের হয়ে আসছে বমি। পকেট থেকে সাদা লিনেনের রুমালটা বের করে ঠোঁটে চেপে ধরেছে বোনাসেরা।
তার পাশ কাটিয়ে ছেলে দুটো চলে গেলো। চোখ দুটো ঠাণ্ডা এবং আত্মবিশ্বাসী। হাসছে। বোনাসেরার দিকে খুব একটা দৃকপাত করলো না তারা। সেও কিছু না বলে চুপচাপ তাদের যেতে দিলো। এখনো রুমাল চেপে ধরে আছে মুখের উপরে।
জানোয়ার দুটোর বাবা-মায়েরা এখন এগিয়ে আসছে। তার বয়েসীই, তবে পোশাকে আশাকে অনেক বেশি আমেরিকান। কিছুটা লজ্জিতভাবেই তারা বোনাসেরার দিকে তাকালো। কিন্তু চোখের গভীরে এক ধরণের বিজয়ের আনন্দ লুকিয়ে রয়েছে। বোনাসেরা সেটা লক্ষ্য করলো।
সামনের দিকে ঝুকে এলো বোনাসেরা। ফ্যাসফেসে গলায় চেঁচিয়ে উঠলো। ‘আমি যেভাবে কেঁদেছি, একদিন তোমরাও ঠিক সেভাবেই কাঁদবে। তোমাদের ছেলেরা আমাকে যেভাবে কাঁদিয়েছে, আমিও তোমাদের সেরকম করেই কাঁদিয়ে ছাড়বো।‘ মুখ থেকে রুমাল উঠে গেছে তার চোখে। হু হু করে কাঁদছে বোনাসেরা।
বোনাসেরার চিৎকার শুনে তরুণদ্বয় দ্রুত এগিয়ে এসেছে বাবা-মাকে বাঁচাতে। বিপদের আশংকায় আসামীপক্ষের উকিলেরাও বিদ্যুৎগতিতে কাছে চলে এসেছে। তারা চারপাশ দিয়ে দেয়াল তুলে ফেলে দুই তরুণ আর তাদের বাবা-মাকে ঘিরে। ওই রকম ঘেরাও করেই বাইরে নিয়ে যেতে থাকে তারা তাদের।
এক বিশালদেহী শেরিফ তাড়াতাড়ি উঠে এসেছে আমেরিগো বোনাসেরার পথ রোধ করে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু, এগুলোর কোনো কিছুরই প্রয়োজন ছিলো না। তার আমেরিকা জীবনের পুরোটা সময়েই আমেরিগো বোনাসেরা আইন আদালতের উপর ভরসা রেখে এসেছে। আর এভাবেই সে জীবনে উন্নতি করেছে। তারপরেও এখন তার মাথার মধ্যে ঘৃণার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। ইচ্ছা করছে একটা আগ্নেয়াস্ত্র কিনে দুই ছোকড়ার খুলি উড়িয়ে দিতে।
পাশে দাঁড়ানো বোনাসেরার স্ত্রী এখনো কিছুই বোঝে নি। হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মহিলা। বোনাসেরা তার দিকে ঘুরে বললো, ‘ওরা আমাদের বোকা বানিয়েছে।‘ তারপর চুপ হয়ে গেলো সে। ভাবছে কিছু একটা। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল সে। যত মূল্য দেওয়াই লাগুক, এই কাজটা সে করবেই।
ফিসফিস করে স্ত্রীকে বললো, ‘ন্যায় বিচার পেতে হলে আমাদের ডন কর্লিওনির কাছেই যেতে হবে।‘
২.
একটা কাঠের বেঞ্চে কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছেন তিনি। মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই কী ভাবছেন। নিরুত্তাপ এবং অনুভূতিহীন। চোখ দুটো গর্তে ঢোকানো। দেখা যায় না এমন। সে কারণেই কী ভাবছেন বোঝাটা বেশ কঠিন। কিন্তু, কেউ যদি খুব কাছ থেকে খেয়াল করার সুযোগ পেতো তাহলে দেখতো যে সুগভীর যন্ত্রণায় ছেয়ে আছে মলিন চোখদুটো।
নিরাভরণ শরীর। লালপেড়ে সবুজ শাড়ীটা শতছিন্ন না হলেও যথেষ্ট মলিনই। পায়ে স্যান্ডেল কিংবা জুতো কোনোটাই নেই। একেবারে খালি পা। সেই পায়ে দগদগে ঘা। কেউ জানে না, গত বিয়াল্লিশ বছর ধরে জুতো বা স্যান্ডেল কিছুই পরেন না তিনি। যে মাটির নীচে তাঁর খোকারা ঘুমিয়ে আছে, সেই মাটির উপর দিয়ে জুতো পরে হাঁটবেন কী করে তিনি? তাঁর বাচ্চারা ব্যথা পাবে না? তাই তিনি জুতো স্যান্ডেল কিছুই পরেন না। হাঁটেন বিড়ালের মত পা টিপে টিপে, আস্তে আস্তে। যতখানি কম চাপ দিয়ে হাঁটা যায়, ঠিক ততখানিই করেন। ধূলো-মাটির সাথে দীর্ঘ লড়াইয়ে পা দুটো পর্যুদস্ত, ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত। দগদগে ঘা হয়ে শোধ নিচ্ছে তাঁর উপর দিয়ে।
শুধু যে পায়ে স্যান্ডেল পরেন না, তা নয়। গত বিয়াল্লিশ বছর ধরে তিনি ভাতও খান না। তাঁর এক সন্তানকে যখন আর্মিরা ধরে নিতে আসে, তখন সে মাত্র ভাত খেতে বসেছিল। সেই সন্তান আর তাঁর কোলে ফিরে আসে নি কোনোদিন। সেই থেকে ভাত খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে তাঁর। বিছানাতেও ঘুমোন না তিনি, মেঝেতে শুয়ে থাকেন বিছানা-বালিশ ছাড়াই। জেল হাজতে এরকম করেই হয়তো তাঁর খোকাদের কত বিনিদ্র রাত কেটেছে।
আজ তাঁর সন্তানদের হত্যার বিচারের রায় হবে। এই বিচারের জন্য দিনের পর দিন তিনি ধর্ণা দিয়েছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। কত কত মানুষের পা চেপে ধরেছেন, বলেছেন, ‘বিশ্বাস করো, আমি প্রতিশোধ চাই না। তোমরা শুধু আমার সন্তানদের হত্যার ন্যায়-বিচারটা করে দাও। ওরা যে শান্তিতে ঘুমোতে পারছে না এইটুকুর অভাবে।’ কেউ কথা রাখে নি, কেউ ভ্রুক্ষেপ করে নি তাঁর আহাজারিতে। কিন্তু আজ সেই বিচারের রায় হচ্ছে। আজকের পরে তাঁর সন্তানেরা শান্তির ঘুম দেবে, তাঁর বুক থেকেও পাষাণভার নেমে যাবে। দীর্ঘকাল এই পাষাণভার টানতে টানতে তিনি ক্লান্ত, অবসন্ন। মুক্তি চান তিনি এই গুরুদায়িত্ব থেকে।
গম্ভীর মুখে তিনজন বিচারক বসে আছেন। সবার চোখে ভারি লেন্সের চশমা। প্রাজ্ঞ চেহারা তিনজনেরই। দেখলেই শ্রদ্ধা-ভক্তিতে মাথা নুয়ে আসবে যে কারোরই। বিচারকদের এরকমই ব্যক্তিত্ববান হতে হয়। বিচারপ্রার্থীরা এঁদের দেখে স্বস্তি পায়, আশ্বস্ত হয়।
ভিতরে ভিতরে অবশ্য কিছুটা উৎকণ্ঠিত তিনি। যদিও তাঁর উকিল বলেছে যে, ‘চিন্তার কোনো কারণ নেই, আমি সব লুজ এন্ডগুলোকে কষে টাইট করে দিয়েছি। এরকম ভয়ংকর ঘাতকের জন্য ফাঁসি ছাড়া আর কোনো রায় দেবার সাধ্য এখন আর বিচারকদের নেই।‘
আসামীর কাঠগড়ায় বসা ঘাতকের দিকে তাকালেন তিনি। হুইল চেয়ারে বসে আছে সে। শুনেছেন অসুস্থ নাকি। যদিও অসুস্থতার কোনো লক্ষণই তিনি দেখতে পাচ্ছেন না তার মধ্যে। চেহারাটার মধ্যে এক ধরণের রোশনাই ঝিলমিল করছে। সাদা পাঞ্জাবি আর লুঙি পরা। চোখে চশমা, মাথায় টুপি। সৌম্যদর্শন পুরুষ। এই চেহারা দেখলে কে বিশ্বাস করবে যে, এর আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর পৈশাচিক এক ঘাতক, এক ভয়ংকর উন্মাদীয় দানব। শুধুমাত্র হত্যার আনন্দে একের পর এক নরহত্যা করে গিয়েছে এই লোক। এই বুড়ো বয়সেও হারামিপনা কমে নি তার। অসুস্থতার মিথ্যা অজুহাতে কারাগারের বদলে হাসপাতালে বসবাস করে আসছে সে দীর্ঘদিন।
তাঁকে তাকাতে দেখেই হয়তো তার দিকে ফিরে তাকালো দানবটা। স্থির চোখে তিনি তাকিয়ে আছেন শুভ্র দাঁড়ির ঘাতকের দিকে। তাঁর এই চোখের দৃষ্টি সইবার ক্ষমতা খুনিটার নেই। দ্রুত তাই চোখ নামিয়ে নেয় সে। মেঝের দিকে তাকিয়ে ঝিম মেরে পড়ে থাকে।
রায় পড়ছেন প্রধান বিচারক। তিনি কান পেতে শোনার চেষ্টা করেন।
‘আসামীর বিরুদ্ধে আনীত পাঁচটি অভিযোগের সবগুলোই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি যে অপরাধ করেছেন তা মৃত্যুদণ্ডতুল্য।’ বিচারক একটু থামেন।
স্বস্তি আর আনন্দের একটা ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায় তাঁর সারা শরীর জুড়ে। তাঁর উকিলের সাথে আনন্দটা ভাগাভাগি করার ইচ্ছা হয় তাঁর। বেচারা অনেক কষ্ট করেছে। তিনি তাকান তাঁর দিকে। আশা করেছিলেন যে, উকিলও তাঁর দিকে ফিরে তাকাবে। কিন্তু তিনি তখনও তাকিয়ে আছেন বিচারকের দিকে। গভীর মনোযোগ দিয়ে রায় শুনছেন। উকিলের দিকে তাকানোর কারণেই, বিচারকের শেষ কথাগুলো প্রায় মিস করে যাচ্ছিলেন তিনি।
গুরুগম্ভীর স্বরে বিচারক বলে বলছেন, ‘যদিও তাঁর অপরাধ মৃত্যুদণ্ডতুল্য, কিন্তু তাঁর দীর্ঘ বয়স এবং শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে আমরা তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে নব্বই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করছি।‘
রক্তশূন্য মুখে স্থির বসে থাকেন তিনি। নড়ার কোনো সামর্থ্য তাঁর আর নেই। তাঁর বাচ্চাদের কী বলবেন তিনি এখন? তাঁর সম্মান বাঁচাতে, তাঁকে মুক্ত করতে কত কচি বয়সে ভয়ডরকে উপেক্ষা করে একেকজন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল। আর তাঁদের হত্যার বিচারটা হলো না এই দেশে। মা হয়ে তিনি কীভাবে এটা সইবেন?
রায় শুনে ঘাতকের মুখ অনাবিল হাঁসিতে উদ্ভাসিত হয়ে গিয়েছে। দুই হাতের কুৎসিত দুটো আঙুল তুলে বিজয় চিহ্ন দেখাচ্ছে সবাইকে সে।
কাগজপত্র গুটিয়ে তাঁর উকিল বেরিয়ে যেতে থাকেন তাঁকে পাশ কাটিয়ে। গম্ভীর, থমথমে মুখ। কোনো এক বিচিত্র কারণে উপেক্ষা করছে্ন তাঁকে। কারণটা ধরতে পারছে না তিনি।
দরজার কাছে যেতে না যেতে একগাদা সাংবাদিক ছেঁকে ধরে উকিলকে। অসংখ্য টিভি ক্যামেরা চারপাশে। সবাই উকিলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইছে।
রায় নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী মিঃ কাউন্সিলর?
‘আমরা সভ্য সমাজের বাসিন্দা। কোনো অপরাধীই, তা সে যত শক্তিশালীই হোক না কেন, আইনের উর্ধ্বে কেউই নয়। আজ এখানে এই আদালতে সেটাই আরেকবার প্রমাণিত হলো।‘
‘ফাঁসির অপরাধ সত্ত্বেও আসামীর ফাঁসির হুকুম না হওয়াটা কী আপনার জন্য পরাজয় নয় মিঃ কাউন্সিলর? আপনি কি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন? টাইট গেঞ্জি আর জিন্সের প্যান্ট পরা অল্প বয়েসী একটা মেয়ে কড়া গলায় প্রশ্ন করে। হাতে কোন এক প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের লোগো লাগানো মাইক্রোফোন।
মেয়েটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলান তিনি। মাথা ঝাকান এদিক ওদিক। একদম পছন্দ না তার এরকম বিশ্রি পোশাক। মেয়েদের বেলেল্লাপনা কিছুতেই সহ্য হয় না তার। নিজের মেয়ে হলে হয়তো চড় থাপ্পড় লাগিয়ে দিতেন এমন পোশাকের জন্য। চারিদিকে অসংখ্য ক্যামেরা, কোনো কোনো চ্যানেল লাইভ দেখাচ্ছে আদালত থেকে। নিজের অপছন্দ এবং বিরক্তিকে চট করে ঢেকে ফেলেন তিনি। হাসিমুখে মিষ্টি করে বলেন, ‘দেখুন, আপনারা জানেন, নানাবিধ কারণে এই মামলা আমরা দীর্ঘদিন আদালতেই নিতে পারি নি। আজ শুধু যে আদালতেনিয়েছি তাই নয়, এর রায়ও পেয়ে গিয়েছি। এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে নব্বই বছরের কারাদণ্ড আর কারো হয়েছে বলে আমার জানা নেই। অপরাধী তার অপরাধের সাজা পেয়েছে, এটাই সবচেয়ে বড় কথা। প্রমাণ হলো যে আমরা একটা সভ্য সমাজে বা রায় নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আপিল করবো কিনা তা এখনই বলতে পারছি না। শুধু এইটুকুই বলতে পারি যে, আমরা সন্তুষ্ট।‘
৩.
আমেরিগো বোনাসেরা তার উপরে যে অবিচার হয়েছিল তার প্রতিকারের জন্য সে গড ফাদার ডন ভিটো কর্লিওনির কাছে গিয়েছিল। প্রবল ক্ষমতাবান গড ফাদার তাকে নিরাশ করে নি। ভিটো কর্লিওনির পাঠানো গুণ্ডারা পিটিয়ে হাড্ডিগুড্ডি গুঁড়ো করে দিয়েছিল ওই দুই বদমায়েশ ছোঁড়ার। ঠিক যেরকমটা তারা করেছিল বোনাসেরার মেয়েটার উপর।
আমাদের লালপেড়ে সবুজ শাড়ির এই মায়ের সেরকম কোনো পরিচিত গড ফাদার নেই। তিনি যাঁদের বিশ্বাস করেছিলেন, আস্থা রেখেছিলেন যাদের উপরে, ভেবেছিলেন যারা তাঁর জন্য সুবিচার নিয়ে আসবে, তাঁরা সবাই গোপনে গোপনে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাঁর সাথে। কেউ লোভে পড়ে, কেউ শক্ত মেরুদণ্ডের অভাবে, কেউ বা নীতিহীনতায়। কী করার আছে এখন তাঁর আর? হাল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া।
গড ফাদার না থাকাটা কাজের কিছু না আসলে।
—————————-
মারিও পুজোর গড ফাদারের অংশটুকু আমার নিজের করা অক্ষম অনুবাদ। হাতের কাছে সেবা প্রকাশনীর বইটা না থাকাতে নিজেকেই অনুবাদের কাজটা করতে হয়েছে আমাকে। কাজেই, এর ভুল ত্রুটি, অসাবলিলতা, সবকিছুর জন্যেই আমিই সম্পূর্ণ দায়ী।
(Y)
তোমাকে বধিবে যে
গোকূলে বাড়িছে সে।
সে তো পৌরাণিক কাহিনীতে। কংসকে বধ করবে যে কৃষ্ণ সে গোকূলে বড় হয়েছিল। আমাদের প্রজন্ম কোথায় বাড়ছে!
গড ফাদারদের বধিবে যে
তাদের মনন গড়িবে কে?
স্বাধীনতার এত বছর পরে কি বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান হতে চলল? তাও আবার জাতির জনকের কন্যার নেতৃত্বে!
@তামান্না ঝুমু,
জাতির জনক আর জাতির জনকের কন্যা এক না। সময়টাও পালটে গেছে খুব।
গডফাদারের গল্পের সাথে বাস্তব ঘটনার এই মিলটা খেয়াল করি নাই। সাদৃশ্য নয়, গল্প আর বাস্তব পুরোপুরি মিলে গেলেই ভালো হত 🙁
@পৃথ্বী,
মিলে যেতো যদি আমাদের একজন ডন ভিটো কর্লিওনির মত গড ফাদার থাকতো।
একটি ব্যতিক্রমী লেখা। অনেক ভাল লেগেছে আবার কেমন যেন অদ্ভুত রকমের অস্বস্তি অনুভব করছি লেখাটা পড়ে।
@আমি কোন অভ্যাগত নই,
আমার হয়েছে প্রতারিত হবার অনুভূতি, সেই অনুভূতিরই বহিঃপ্রকাশ এটি।
হিহিহি দুর্দান্ত বইটা তাই না? আর এই রায়টাও খাপে খাপে মিলে গেছে গোলাম আজমের রায়ের সাথে । ভালই বাঁশ দিলেন বাংলাদেশের বিচারক বেচারাকে(বেচারাই তো, নিয়ন্ত্রক তো আসলে শাসন বিভাগ;-) কে।অসাধারন লিখেছেন। (F)
@দারুচিনি দ্বীপ,
বিচারকদের প্রিয় বই হয়তো এটা, কে জানে।
আমরা এই সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে অরণ্য রোদন ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনা। এটা আমাদের ভীরুতা নাকি কোন ভুল সিস্টেমের সাথে নিজেদের আটকে ফেলেছি জানিনা। এই রায় সরকারের দুর্বলতা এবং জামাতের সবলতা প্রমাণ করে :-Y
কোথায় যেন দেখলাম ইদের পরে জামাত ১২০ ঘণ্টা টানা হরতাল দিবে। আমি ভাবি এই রাজাকার এবং ওদের নাজায়েজ বাচ্চা গুলো কতটা ক্ষমতাশালী যে ওদের অপরাধের শাস্তি দিতে হলে আমাদের সাধারণ মানুষের জীবন, হাত, পা, জীবিকা বলি দিতে হয়। এটা সরকারের ব্যর্থতা। আচ্ছা সরকার কি পারেনা আইন করে হরতাল বন্ধ করতে। কিন্তু তা করলে ভবিষ্যতে নিজেদের ক্ষমতা দেখানর রক্তাক্ত পথ যে বন্ধ হয়ে যায়।
সেদিন খবরে দেখলাম পিকেটার দের কবলে পড়ে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারায় ফলে সাদিয়া নামের এক শিশু মায়ের সামনে মারা যায়। আরেক কিশোর ও নিরীহ পথচারী মারা গেছে। একজনের পা উড়ে গেছে। এই খবর গুলো যখন শুনি প্রত্যেকবার আমার মৃত্যু হয়। জানিনা আর কতবার মরব?????????
@আম্মানসুরা,
পত্রিকা পড়া আর টেলিভিশন দেখা ছেড়ে দিন, বার বার মরতে হবে না আর। শান্তিময় জীবন হবে তখন, গ্যারান্টিড।
ফরিদ ভাই, অসম্ভব সুন্দর একটি প্রতিকী লেখা। মারিও পুজোর গড ফাদার নিয়ে কিছু বলবো না, এক কথায় শিহরিত হয়েছি! ২য় আনুচ্ছেদে যা বর্নিত হয়েছে তার জন্যে গড ফাদারীয় প্রতিশোধের স্পৃহা আমার নেই, আজকের তরুণ প্রজন্মকে এই সুযোগে অনুরোধ করবো, যতো শীঘ্র সম্ভব মানুষ হিসেবে প্রতিটি রাজনীতিবিদ এর খোঁজ নিন, একেবারে নাড়ি-নক্ষত্রের খোঁজ। আগামী ইলেকশনে দল বা দলীয় আদর্শের ভিত্তিতে নয় রজনীতিবিদেরা কে কতটুকু মানুষ তার ভিত্তিতে নির্বাচিত করুন। হয়তো এখানেই আমাদের নেই কল্যাণের কিছুটা লুকিয়ে আছে!
@কেশব অধিকারী,
রাজনীতির মাঠ অনুভূতি মানুষ দিয়ে ভরে গেছে কেশবদা। আশার স্বল্পতায় ভুগছি এখন।
@কেশব অধিকারী,
পুরাই একমত।
অনুবাদের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই – মূলগ্রন্থ পড়ার অনুভব থেকে বলছি, লেখক মান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন|
যেহেতু দুটো লেখাই প্রাসঙ্গিক এবং প্রয়োজনীয়, মুক্তমনা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব নিয়মের ব্যতিক্রম করে তা প্রথম পাতায় রেখে দিতে|
আমি ব্যক্তিগতভাবে মৃত্যুদন্ড বিরোধী|
কিন্তু যে নরপশুগুলো জেনোসাইড চালায়, তাদের বার্ধ্যকের কারণে ছাড় দেওয়া দুরে থাক, মরে গেলে কবর থেকে হাড্ডি তুলে, ফাঁসিতে চরানো উচিত বলে মনে করি|
@অনামী,
মানবতা মানুষের জন্য, রক্তপায়ী পশুদের জন্য নয়।
@অনামী,
আমিও তাই মনে করি। কিন্তু আমরা হলাম পাবলিক। একে পাবলিক দুইয়ে রামছাগল।আমরা চাইলে কিবা হয়েছে আর কিবা হবে?
@অনামী,
(Y) (Y) (Y)
গোলাম আযমের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের দাবিতে শুক্রবার বিকেলে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিক্ষোভ সমাবেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন “সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচারের দাবি আদায় হবে। লড়াই চালিয়ে গেলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। যে লড়াই শুরু হয়ে গেছে, তা থামলে চলবে না। আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”
@তারিক,
ন্যায় বিচারের জন্য কার বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে চান ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ? তিনিতো রাষ্ট্রপক্ষেরই কৌঁসুলী ছিলেন।
@ফরিদ আহমেদ, কাদের মোল্লার ফাসিঁর দাবীতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, গোলাম আজমের ফাসিঁর দাবীতে সে আন্দোলনই চালিয়ে যেতে হবে। আর আমাদের রাষ্ট্রের কাছে সুবিচার প্রতিষ্ঠার এই দাবীতে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ একাত্বতা প্রকাশ করেন ।
@তারিক,
যে রাষ্ট্রের কাছে সুবিচার দাবি করতে হয়, সেই রাষ্ট্রের বিষয় আমার উচ্ছ্বাস একটু কম। রাষ্ট্রের দায়িত্বই হচ্ছে। সুবিচার করা। অবিচার করবে রাষ্ট্র আর জনগণকে বারবার সুবিচারের জন্য ধর্ণা দিতে হবে রাষ্ট্রের কাছে, এটা কেমন কথা বলুনতো।
@ফরিদ আহমেদ, আমাদের রাষ্ট্র হল শিশ্নবিহীন গরীব রাষ্ট্র । আর রাষ্ট্র যাদের বিচার করছে তাদের আছে শত শত কোটি ডলার এবং বিদেশী বন্ধু(দুনিয়ার রাজা)। তারপরও রাষ্ট্রের সু-বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হতো, যদি সর্বসাধারনের যে কঠিন আন্তরিকতা দৃঢ়তার প্রয়োজন ছিল তা থাকত। আন্দোলন করেই আমরা দেশ পাইছি, সু-বিচারও পাব । (FF)
মুক্তমনার প্রথম পাতায় এই মুহুর্তে আমার দুটো লেখা। খুব সম্ভবত এটি নীতিমালার বিরোধী। মডারেটররা চাইলে আমার আগের লেখাটাকে মূল পাতা থেকে সরিয়ে দিতে পারেন। আমার দিক থেকে কোনো আপত্তি থাকবে না।