বাংলাদেশের ভবিষ্যত ও আমরা

আকাশ মালিক

বাংলাদেশের ভবিষ্যত ভাগ্যনির্মাতা হেফাজতে ইসলামের সহ সেক্রেটারী জুনায়েদ হাবিবি ইংল্যান্ড এসেছেন সপ্তাহ দু এক আগে। ৫/ ৬ তারিখের শাপলা চত্বরে পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম নৃসংশ গনহত্যার বর্ণনা বয়ান করে করে এ পর্যন্ত প্রায় এক লক্ষ পাউন্ড সংগ্রহ করেছেন। যথারীতি আমাদের মসজিদেও এসেছিলেন, স্বতস্ফুর্থভাবে মুক্তহস্তে মানুষজন মোট তিন হাজার পাউন্ড তার হাতে তুলে দিয়েছেন। এর মধ্যে একজন আওয়ামী লীগার একাই দিয়েছেন ৫ শো পাউন্ড। টাকাগুলো খরচ হবে শাপলা চত্বরে শহিদ হওয়া হেফাজতের তিরিশ হাজার শহিদদের পরিবারের সাহায্যার্থে। তিরিশ হাজার সংখ্যাটা অবশ্য জুনায়েদ হাবিবি বলেন নি, বলেছেন তাদের সমর্থকেরা। উল্লেখ্য ৬ তারিখের গনহত্যায় এই জুনায়েদ হাবিবি শহিদ হওয়ার পর তার গায়েবানা জানাজা বাংলাদেশে একবার পড়া হয়েছিল যদিও তিনি এখনও জীবিত। গত সপ্তাহে এসেছিলেন হাবিবি আর এই সপ্তাহে এসেছেন তারেক মনোওয়ার। বিরাট বিরাট ইসলামী সম্মেলনের লিফলেট-পোষ্টারে আমাদের টাউনের সকল গ্রোসারী শপ, মসজিদ, সেন্টার সয়লাব হয়ে গেছে। দুই হাজার বাংলাদেশী মুসলমানের বসতি এই শহরে। প্রত্যেক ফ্যমেলির প্রায় সব ঘরেই ট্রান্সমিটার আছে, ৫ ওয়াক্ত মসজিদের আজান আর ওয়াজ এখন ঘরে বসেই শুনা যায়। ইসলামী সংস্কৃতি সচেতন আমাদের মহিলাগণ গুরুত্বপূর্ণ এ সব ওয়াজ শুনা থেকে মোটেই বঞ্চিত হচ্ছেন না। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, জুনায়েদ হাবিবি ও তারেক মনোওয়ার দুইজনই ৬ তারিখের শাপলা চত্বরের গনহত্যার কথা উল্লেখ করেছেন কিন্তু কেউই নিহতের আসল সংখ্যাটা একবারও বললেন না। জুনায়েদ বলেছেন, নিহতদের আত্মীয়্স্বজন নাকি ভয়ে মুখ খুলছেন না কারণ, যে কেউ তার খুন হওয়া আপনজনের খোঁজে পুলিশের কাছে গেলে সেও আর ফিরে আসেনা, তাকে সাথে সাথে রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। গুম হওয়ার ভয়ে পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন মিডিয়াগুলো শাপলা চত্বরের কোন খবর ছাপাতে সাহস করছেনা। হেফাজতের জুনায়েদ হাবিবি আর জামাতের তারেক মনোওয়ারকে আগে থেকেই চিনি, তাদের উভয়ের ওয়াজ অনেক শুনেছি। মিথ্যা বানোয়াট কাহিনি বর্ণনায় দুজনই বেশ দক্ষ পারদর্শী। এদের মিথ্যা কিচ্ছা কাহিনির বিশেষত্ত্ব হলো তাদের অনেক গল্পের নায়ক ও বাস্তব সাক্ষী তারা নিজেরাই। তাই সাধারন অশিক্ষিত মানুষ তা অবিশ্বাস করতে পারেনা কিন্তু ইউনিভার্সিটির বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, ফিজিক্সের ছাত্র-শিক্ষকেরা তা হজম করেন কী ভাবে আমি বুঝিনা। জুনায়েদ হাবিবি হাফেজজি হুজুরকে নিয়ে যে কিচ্ছাটি বললেন তা হুবহু মুহাম্মদের হিজরতের রাত্রির কাহিনিই। তিনি ওজুর ফজিলত আর হাফেজ্জি হুজুরের কেরামত যে ভাবে বর্ণনা করলেন তা মোটামুটি এরকম-

‘বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার হাফেজজি হুজুরকে গৃহবন্দী করে রেখেছে, বাসার চতুর্দিকে কড়া পুলিশ পাহারা। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটা পিঁপড়াও রাস্তা ক্রস করতে পারবেনা। হুজুরকে একটি মাহফিলে যেতে হবে আমরা তাকে ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছিনা। বেরুলেই তো গুলি করবে, না হয় এরেষ্ট করে জেলে নিবে। হুজুর বললেন, অজুর পানি আনো। ওজু করে হুজুর দু-রাকাত নফল নামাজ পড়লেন। বাহিরে রাস্তার দু-ধারে অস্ত্রহাতে লাইন বাঁধা পুলিশ। হাফেজজি হুজুর বললেন, মুসলমান শত শত দেশ জয় করেছে অস্ত্র ছাড়াই। মুসলমানের অস্ত্র হলো ওজু। হুজুর ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন আমরা তার পেছনে। তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আমরা কয়েকজন ঘরে ফিরে এলাম। হুজুর চলে যাওয়ার পর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন পুলিশ আমাদের কাছে এসে অনুরোধ করলো- ‘তোমাদের সাথে হুজুরের মোনাজাতে আমরা কি শরিক হতে পারি’? আমরা বললাম হুজুর তো ঘরে নাই। এর পর পুলিশের কাছে ওয়ারলেসে হাইকমান্ডের ওয়ার্নিং আসলো- ‘হাফেজ্জি হুজুর ওয়াজ মাহফিলে আর তোরা তার বাসায় কাকে পাহারা দিস’?

তারেক মনোওয়ারের বাঁদরামী ওয়াজ শুনলে মনে হয় যেন বাংলা সিনেমার মগজহীন জৌকারের অভিনয়। ইংল্যান্ডের এক ১০/১২ বছরের ইংরেজ বালক নাকি তার বাংলা ওয়াজ শুনে অশ্রুভরা নয়নে তার কাছে এসে মুসলমান হওয়ার মিনতি করেছিল। ঐ ইংরেজ বালকের মুসলমান হওয়ার কিচ্ছার কাছে আরব্য উপন্যাসের গল্প ফেইল্ড। ওয়াজ জীবনে অনেক শুনেছি, আপনারাও শুনেছেন কিন্তু আজ এমন একজনের ওয়াজ শুনাবো যিনি সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে সব চেয়ে আলোচিত, সম্মানিত ও সর্বশ্রেষ্ট আলেম হিসেবে পরিচত। হ্যাঁ, উনি বাংলার ষোল কোটি তাওহিদী জনতার সপ্নের আমিরুল মোমেনিন বাংলার ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম খলিফা হজরত আল্লামা শাফী, যাকে মসনদে বসানোর জন্যে বাংলার ১৬ কোটি মুসলমান শ্বাস-নিশ্বাস বন্ধ করে, দানা পানি প্রায় এক প্রকার ছেড়ে দিয়ে, নাকের জল চোখের জলে সিক্ত হয়ে নির্ঘুম দিবস রজনী অতিবাহিত করে চলেছেন। মহরম মাসে মানুষ যেমন হায় হোসেন হায় হোসেন বলে চিৎকার করে বুক চাপড়ায়, রক্তে রঞ্জিত করে সারা দেহ, তেমনি আজ কয়েক মাস যাবত ১৬ কোটি মুসলমান মাতম করছে, হায় হেফাজত হায় হেফাজত, হায় শাফি হায় শাফি বলে। তার ভক্তকুল ও তার দল হেফাজতে ইসলামের সমর্থকদের অসংখ্য তর্জন গর্জন, সরকার পতনের হুমকি, শরিয়া আইন কায়েমের হুংকার দেখে শুনে মনে হয়েছিল, নদী-নালা‍ খাল-বিলে ঘেরা এই সবুজের দেশে মরুভুমির বদর, ওহুদ, সিফফিন কিংবা কারবালা আসন্ন। আর তা যদি না হয়, খোলাফায়ে রাশেদিনের শাসন বা খলিফা ওমরের যুগের আরবের অবস্থাটা জীবিত থাকতেই দেখে যেতে পারবো। আমি মনস্ত করলাম এমন হুজুরের ওয়াজটা একবার শুনেই দেখি।

তার আগে একনজরে হেফাজতে ইসলামের সেই ঐতিহাসিক তেরো দফা দাবীগুলো দেখা যাক-

১। সংবিধানে ‘আল্লাহ্‌র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরান-সুন্নাহ্‌ বিরোধী সকল আইন বাতিল করতে হবে।
২। আল্লাহ্‌, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
৩। কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-র শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী কুলাঙ্গার ব্লগার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের সকল অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। ব্যক্তি ও বাক-স্বাধীনতার নামে সকল বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সকল বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৫। ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৬। সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সকল অপ-তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
৭। মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরীতে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
৮। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।
৯। রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
১০। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তকরণসহ সকল অপ-তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
১১। রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র এবং তৌহিদী জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।
১২। সারা দেশের কওমী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
১৩। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সকল আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদেরকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

দুঃখের বিষয়, শাফি সাহেব ও তার হেফাজত যুদ্ধাপরাধী বা রাজাকারের শাস্তি দাবী করে একটা দফাও লিখলেন না। উপরের দাবীগুলো নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে প্রচুর আলোচনা সমালোচনা হয়েছে, আমরা বরং হুজুরের ওয়াজেই চলে যাই। নিচের ভিডিওটির প্রথম ভাগের কিছু কথা যে ভাবে বুঝেছি তা নিম্নরূপ-

“এই মহিলারা আল্লাহর কোরানকে যদি বিশ্বাস করেন, কোরান বলতেছে এই মহিলারা ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে তোমরা থাক। ঘরের বাইরে ঘুরাফিরা কইরো না। উলঙ্গ হইয়া ঘুরাফিরা কইরো না, রাস্তাঘাটে হাটে মাঠে মার্কেটিং কইরতে যাইও না। স্বামী আছে ছেলে আছে, এদেরকে বইলবেন মার্কেটিং করার জন্য, তোমরা কেন মার্কেটে যাইবা। তোমরা শুধু অর্ডার কইরবা, আপনে কেন কস্ট কইরবেন। আপনে স্বামীর ঘরের ভিতর থাইকা স্বামীর আসবাব পত্র এসব গুলার হেফাজত কইরবেন, ছেলে মেয়েদের লালন পালন কইরবেন, এইগুলা আপনার কাজ, আপনে কেন বাইরে যাবেইন। আপনার মেয়েকে কেন গার্মেন্টসে দিছেন? ফজরে ৭-৮ টায় চলে যায়, রাত ৮-১০ টা ,বারটায়ও আসে না, কোন পুরুষের সঙ্গে ঘুরাফিরা করতেছে, তুমিতো যান না, কত জ্বেনার মধ্যে মুকতালা হচ্ছে। তোমার মেয়ে আর জ্বেনা কইরা কইরা টাকা রোজগার করতেছে, কি বরকত হইবে? আপনার মেয়ে স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে পড়তেছে। আরে, ক্লাস ৪/৫ পর্যন্ত লেখা পড়া করান, যাতে বিবাহ শাদী দিলে স্বামীর টাকা পয়সার হিসাব রাখতে পাইরবে, এমত এতটুকু। মেয়েরা হইলো তেতুলের মত। দেখলেই দীলের মইধ্যে লালা বাইর হয়। তেতুল গাছের নিছে দিয়া গেলে জিফরায় লালা আসে। এই মহিলাদের সঙ্গে লেখাপড়া কইরতেছেন দিল ঠিক রাখতে পাইরবেন না। যতই বুজুর্গ হউন মহিলাকে দেখলে, তাদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করলে তোমার দিলের মইধ্যেও কূভাব আইসা যাবে, খারাপ খেয়াল এইটা মনের জ্বেনা, দিলের জ্বেনা, দিলের জ্বেনা, হইতে হইতে এইটা আসল জ্বেনায় পরিনত হবে। কেউ যদি বলে,আমি বূড়া মানুষ, হুজুর মহিলাকে দেখলে আমার দিল খারাপ হয় না, কূ খেয়াল দিলের মইধ্যে আসে না, তা হলে আমি বইলবো’ এই ভাই, তোমার ধ্বজভঙ্গ বিমার আছে, তোমার পুরুষত্ব নস্ট হইয়্যা গ্যাছে। সেই জন্য মহিলা দেখলে তোমার কূভাব আসে না। আপনার বিবি ‘যাদের সঙ্গে বিবাহ হতে পারে……………..তাদের কাউকে দেখা দিতে পারবে না। আপনার বিবি যদি দেখা দেয় তবে যদি আপনে বাধা না দেন তবে আপনার জন্য বেহেস্ত হারাম হইয়া যাবে।”

উল্লেখ্য উনি ছেলেদেরকে বলেন ‘ফুয়া’ আর মেয়েদেরকে ডাকেন ‘ মাইয়া ফুয়া’। এটা হয়তো তার আঞ্চলিক ভাষা এতে দোষের কিছু নাই। কিন্তু নারীদের তেঁতুলের সাথে তুলনা করার পর থেকে আর বার্থ কন্ট্রোল নিয়ে শুরু থেকে তিনি আঞ্চলিক ভাষায় যা বলেছেন, আমি এর আগামাথা কিছুই বুঝি নাই। যদি কোন পাঠক পারেন তো এর উপর একটু আলোকপাত করবেন। আল্লামা শাফি সাহেবের লক্ষ কোটি ভক্তের ব্লগের পত্রিকার, ফেইসবুকের অগণিত বক্তব্য মন্তব্য থেকে একটি মাত্র মন্তব্য এখানে তুলে দিলাম-

দেশের আলেমওলামা তথা তাওহীদি জনতা এবং সাধারণ ধর্মভীরু জনগণের কাছে আল্লামা শফি একটি অতি সম্মানিত নাম। যাঁর এক ডাকে সারা দেশের এক এক জেলায় লক্ষ লক্ষ জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে তাঁর চেয়ে আলোকিত মানুষ আর কে হতে পারে ? এই মূহুর্তে বাংলাদেশের ইতিহাসে জনপ্রিয়তম একটি নাম হচ্ছে আল্লামা শফি। উনি এবং ওনার ডাকে মানুষ কাফন পরে শাহাদাতের জন্য তৈরি হয়ে যায়, এখনো ডাক দিলে আবার আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ হবে। একমাত্র ইসলামের খাঁটি দুশমন যারা তারা ছাড়া আর বাকি সবার কাছে উনি শুধু আলোকিত না, জ্যোতির্ময় একটি নাম।

জীবনে অনেক ওয়াজ শুনেছি, আমার মনে হলো সারা জীবনে এমন নিকৃষ্ট ভাষার, এত অশ্লীল নোংরা ওয়াজ আর কোনদিন শুনি নাই। যার ডাকে সারা বাংলাদেশ রাজধানীতে এসে জড়ো হয়, যিনি ৭১এর ৭ মার্চের সমাবেশের চেয়ে বড় সমাবেশ ঘটাতে পারেন, এই হুজুর কোরান হাদিস জানেন না, ওমরের শাসন বুঝেন না, রসুলের তরিকায় শরিয়ার আইনে দেশ পরিচালনা বুঝেন না তা বিশ্বাস করিনা। সেই আলোকিত, জ্যোতির্ময় ব্যক্তির পবিত্র মুখের পুণ্য ওয়াজের ভিডিও সরাসরি যারা দেখতে পারবেন না তাদের জন্যে লিংক।

এ রকম ওয়াজ শুনে শুনে এই শিক্ষা পেয়ে এই মানসিকতায় ধীরে ধীরে তিলে তিলে এক বিরাট জনগুষ্টি তৈরী হয়েছে আমাদের দেশে। তারা এই দেশের মাটির উৎপাদিত খাদ্য ফসল, ফলমুল শুধু ভক্ষনই করতে জানে কোনদিন এই মাটিতে একটি ধানের চারাও রোপণ করেনি। তারা শুধু দেশের ক্ষয় করতে জানে দেশটাকে কিছু দিতে জানেনা। অসৎ নষ্ট রাজনীতিবিদরা জাতীয় সংসদে বসে চুদুর বুদুর চুতমারানীর ভাষা জাতীকে শেখালো এই মানুষগুলোকে শিক্ষিত কর্মজীবি করে গড়ে তোলার চেষ্টা করলোনা। এদেরকে দুধ-কলা দিয়ে তাদের রাজনৈ্তিক স্বার্থে ব্যবহারের অস্ত্র হিসেবে শুধু পোষে বড় করেছে, আমরা আমাদের কষ্টার্জিত উপার্জনের টাকা দিয়ে তাদের ভরন-পোষন করেছি, আমাদের সুশীল সমাজের মগজ ব্যবসায়ী বুদ্ধীজীবিরা মুখ বন্ধ করে নীরবে তা হজম করেছেন। হে সুশীল ধর্মপিপাসু বঙ্গসন্তানেরা, তো বানিয়ে দেন শাফি সাহেবকে বাংলার প্রধান মন্ত্রী, যে আমাদের গার্মেন্টস কর্মচারী মা-বোনদের বুকের উপর পা দিয়ে কথা বলে, যে তার নোংরা মুখে আমাদের কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া কোমলমতি নিস্পাপ সন্তানদের অপমান করে। আজ স্বার্থক হউক আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জন আর তিরিশ লক্ষ শহিদের আত্ম্যত্যাগ।

(ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন)

আকাশ মালিক
ইংল্যান্ড-
জুলাই ২০১৩।