আঘাত
আঘাত মূলত দুই প্রকার: শরীরে আঘাত আর সম্পদে আঘাত। শরীরে আঘাত হলো, যেমন, আপনি সজোরে আমার হাতে মারলেন, বা মুখে মারলেন, আমি আহত হলাম, এমন কি আমার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়ে গেলো। সেটা হতে পারে কাটা দাগ, বা রক্ত জমাট বাঁধা কিংবা হাড় ভাঙা, ইত্যাদি। সম্পদে আঘাত হলো, যেমন, আপনার ঘরে আপনার বিনা অনুমতিতে কেউ জোর করে ঢুকে পড়লো, কিংবা আপনার খাবারটা কেউ আপনার হাত থেকে ছিনিয়ে নিলো। শরীরে আঘাত করা যে খারাপ তা কমনসেন্স থেকে সহজেই উপলব্ধি করা যায়। সম্পদে আঘাতের সমস্যা নিয়ে মানুষের মাঝে দ্বিমত কিছুটা বেশি। তবে এমনও মানুষ আছে যারা অনাক্রমণশীলের শরীর আর সম্পদ উভয়তেই আঘাতের পক্ষপাতী।
এর বাইরে আরেক রকম আছে যাকে অনেক সময়ই আঘাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যদিও সত্যিকার অর্থে সেটা কোনো আঘাত নয়। কোনো প্রকার স্বাভাবিক সহজাত চিন্তা থেকে একে আমি আঘাত বলে মনে করতে পারি না। কিন্তু অনেকে যেহেতু একে আঘাত বলে, ফলে একে আমি অন্তত ছদ্মআঘাত বলতে রাজি আছি। আর সেটা হলো অনুভূতির ‘আঘাত’।
অনুভূতির নির্ধারণ সমস্যা
হ্যাঁ, মানুষ কষ্ট পায়, নির্ঘাত। আমি তা অস্বীকার করছি না। কিন্তু মানুষের শরীর বা সম্পদে ‘আঘাত’ করাকে যেভাবে সরাসরি চিহ্ণিত করা যায়, মানুষের কষ্ট পাওয়াটা তার চেয়ে অনেক বেশি গোপনীয়, ব্যক্তিক ও অনির্দিষ্ট। অর্থাৎ শরীর কিংবা সম্পদে আঘাতের ঘটনাটার নৈর্ব্যক্তিক আবেদন আছে। দশজন মানুষ সহজে একমত হবে – কীসে শরীর ও সম্পদে আঘাত ঘটে আর কীসে আঘাত ঘটে না সে বিষয়ে। সেটার উচিত অনুচিতের প্রশ্ন উহ্য রেখেই সেটা করা সম্ভব।
যেটা কঠিন ও প্রায় অসম্ভব, সেটা হলো মানুষের ব্যক্তিক যে অনুভূতি, সেটাকে এতোটা নিশ্চিতভাবে চিহ্ণিত করা। আমি কারও কোনো কথায় কষ্ট পেলেই দাবী করতে পারি যে আমার অনুভূতি আহত হয়েছে; যেজন কথাটা বলেছে, সে আমার অনুভূতিতে ‘আঘাত’ করেছে। কিন্তু কষ্টটা আমি হয়তো নাও পেতে পারতাম। এমন কি কষ্টটা না পেলেও আমি একইভাবে বানিয়ে বানিয়ে দাবী করতে পারতাম যে আমার অনুভূতি আহত হয়েছে।
শরীর বা সম্পদ আহত হলে সেটার চিহ্ণ যতোটা সহজে রয়ে যায়, অন্য দশজনে সেটার সাক্ষ্য দিতে পারে, অনুভূতিতে কষ্ট পাবার সাক্ষ্য তার চেয়ে ঢের কঠিন, প্রায় অসম্ভব। দ্বিতীয় আরেকজন কখনো নিশ্চয়তার সাথে সাক্ষ্য দিতে পারে না যে আমি সত্যিই কষ্ট পেয়েছি কি না। এটা একান্তই ব্যক্তিক অনুভূতি।
অনুভূতির কার্যকারণগত অনির্দিষ্টতা
এমন কি প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে অনুভূতির কষ্ট যদি নিশ্চয়তার সাথে নির্ণয় করার যায়ও, ঘটনার সময়ে আমি ওই প্রযুক্তির ব্যবহার যদি না করে থাকি তাহলে সেই অগ্রগতিটা এইক্ষেত্রে কোনো কাজে আসবে না। তার চেয়ে বড়ো কথা, যদি ধরেও নেই যে প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে মস্তিষ্কের অনুরণনের ঠিক বিশেষ কোনো প্যাটার্নকে নিশ্চিতভাবে কষ্ট পাওয়া হিসেবে চিহ্ণিত করা গেলো, একজনের মুখের কথার (বা লেখার বা ছবি আঁকার) সাথে সেই কষ্ট পাওয়াটার কার্যকারণগত সম্পর্ক স্থাপন করাটা তারপরেও অত্যন্ত কঠিন থেকে যায়। এমন হতে পারে যে কষ্ট পাওয়া ব্যক্তিটি অতিরিক্ত সংবেদনশীল, ফলে যেকোনো সামান্য কথাতেই কষ্ট পাওয়াটা তার জন্যে খুব কঠিন নয়। এছাড়া – যার কথায় অনুভূতিতে কষ্ট লেগেছে, কষ্ট দেওয়াটা তার উদ্দেশ্য ছিলো কিনা, সেটাও প্রায় সমান অনির্ণেয়। এর চাইতে মানুষের শরীরে বা সম্পদে অন্য মানুষের সহিংস আক্রমণ বা আঘাতকে ঢের বেশি নিশ্চয়তার সাথে নির্ধারণ করা সম্ভব।
তারপরেও ধরুন – এমন কেইস থাকতেই পারে, যেখানে নিশ্চিতভাবে আমরা জানি যে বক্তা কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যেই কথাটি বলেছে এবং যে লোকটি কষ্ট পেয়েছে বলে দাবি করছে, তার আচরণ দেখে নিশ্চিতই বোঝা যাচ্ছে যে সে সত্যিই কষ্টটা পেয়েছে। এমন ঘটাটা একেবারে অসম্ভব তো নয়। তো এক্ষেত্রে আমি কি রাজি হবো একে অনুভূতির ‘আঘাত’ হিসেবে মেনে নিতে? হয়তো। কিন্তু ব্যাপারটা তারপরেও মানুষের শরীরে কিংবা সম্পদে আঘাত করার চেয়ে ঢের বেশি ভিন্নই থেকে যায়। কীভাবে ভিন্ন? এটা বোঝার জন্যে আমাদের বুঝতে হবে কোনটার ফলাফল কী? শরীর কিংবা সম্পদে আঘাত করলে কী ঘটে তা অতি সহজেই নির্ণয় করা যায়। আমার হাত ভাঙলে সেটা আগের অবস্থায় ফিরে পাওয়া যে কঠিন সেটা নিয়ে অল্পই সন্দেহ থাকে। আমার হাত থেকে খাবারটি কেড়ে নিলে সেটা আমি খেতে পারবো না, বা বিক্রয় করতে পারবো না। আমাকে অতিরিক্ত শ্রম দিয়ে সেটা পুনরায় অর্জন করতে হবে। ফলে ক্ষতিগুলো খুব সহজেই নির্ণয়যোগ্য।
অনুভূতির ‘আঘাতের’ ক্ষতি?
শরীর ও সম্পদের তুলনায় অনুভূতিতে ‘আঘাত’ দেবার ফলশ্রুতিটা অনেক বেশি অনিশ্চিত। এটা ঠিক যে অনেক ‘অনুভূতিতে কষ্টপ্রাপ্ত’-কেই দেখা গেছে যে তাদের উৎপাদনশীলতা কমে গেছে বা জীবনের পথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। এটা অসম্ভব নয়। কিন্তু আবার এমনও দেখা গেছে যে একই পরিস্থিতিতে অন্য অনেকের ব্যাপারটা তেমন গায়েই লাগে নি, বরং সেটা সহজেই এড়িয়ে তারা এগিয়ে গেছে। এই অনিশ্চয়তাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পরিসংখ্যান ব্যবহার করে সম্ভাব্যতাগুলো হয়তো যাচাই করা সম্ভব, কিন্তু আমরা এখানে মূলত আপেলের সাথে কমলার তুলনা করছি। একজনের শারীরিক আঘাতে অপরজনের শারীরিক ক্ষতিটা নিশ্চিত কার্যকারণ দ্বারা আবদ্ধ, এই পর্যায়ে পরিসংখ্যানের ব্যবহার প্রায় বাতুলতা। অন্যদিকে একজনের মুখের কথার কারণে অনুভূতিতে কষ্ট পেয়ে অপরজনের ক্ষতি হওয়ার আলামত পাওয়াটা বড়জোর একটি পরিসংখ্যানগত সম্পর্ক। এবং আমরা জানি যে পরিসংখ্যানগত সম্পর্ক কোনো কার্যকারণ নয়। ফলে শরীরে বা সম্পদে আঘাত বা বস্তুগত আঘাতের সাথে মনোজাগতিক যে কষ্ট পাওয়ার ঘটনা, এরা তুলনীয় নয়।
ফলে অনুভূতিতে ‘আঘাত’-এর কারণে শাস্তি বা প্রতিকার হিসেবে শারীরিকভাবে প্রত্যাঘাত করাটা একটা অসমানুপাতিক সমাধান। অত্যন্ত অসমানুপাতিক। তথাপি এরকম সমাধান মানুষের অনেক সমাজেই দেখা যায়। কেনো? সেসব সমাজে মানুষের শরীর ও সম্পদে আঘাত করাটাকে কি গুরুত্বের সাথে দেখা হয় না? তা কিন্তু নয়। বরং অধিকাংশ সমাজে সহজাতভাবেই মানুষের শরীর ও সম্পদে আঘাত করাটাকে নির্ঘাত অন্যায় হিসেবে দেখা হয়। কারণ ব্যাপারটা যে খারাপ, অন্যায় বা ক্ষতিকর তা উপলব্ধি করা অত্যন্ত সহজ। আমি মনে করি ওই একই সমাজগুলোতে অনুভূতিতে আঘাতকেও যে অন্যায় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়, তার পেছনে ধর্মীয়, সামাজিক মূল্যবোধ ইত্যাদির প্রভাব ছাড়াও বস্তুগত বিবেচনাও অনেকাংশে বিরাজ করে। ধর্মীয় বা সামাজিক মূল্যবোধের অবদান এখানে হয়তো সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সমস্যাটা মূলত এখানে হয় যে সেই মূল্যবোধ ধারণকারীরা অনুভূতিতে ‘আক্রান্ত’বোধ করলে সহিংস হয়ে ওঠে, কেননা তাদের মূল্যবোধ অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সম্ভবত অসহনশীল। আর এই সহিংসতার কারণে সমাজ সার্বিকভাবে আক্রান্ত হয়, বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, অর্থাৎ সমস্যাটা শেষে গিয়ে বস্তুগতও।
এখন এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমি/আমরা (হয়তো সাথে আপনিও) ভাববো – যে ধরনের বায়বীয় মূল্যবোধ মানুষকে বিনা আক্রমণে এমন সহিংস হবার সুযোগ দেয়, সেই মূল্যবোধকে পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কিন্তু সেই মূল্যবোধের উপরেই যে সমাজ দাঁড়িয়ে আছে, তার জন্যে তেমনটা ভাবাটা কঠিন। তার জন্যে অনেক সহজ এটা ভাবা যে – সমস্যার ‘সূত্রপাতকারী’, উত্তেজক-কথা বলনেওয়ালাটাকেই শাস্তিযুক্ত করাটা শ্রেয়। কেউ যদি মূল্যবোধে আঘাত না দেয়, তাহলে কেউ উত্তেজিত হবে না, সমাজে অশান্তিও ঘটবে না। কিন্তু ব্যাপারটা তো এতোটা কার্যকারণযুক্ত নয়। যে মূল্যবোধটার অধীনে বিনা আক্রমণে সহিংস হয়ে ওঠাটা এতোটা সহজ, সেখানে চুপ থাকলেও সহিংসতা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? উপরে আমরা দেখতেই পেয়েছি যে একজনের মুখের কথার কারণে আরেকজনের অনুভূতিতে কষ্ট লাগা এবং তার ফলশ্রুতিতে বস্তুগত ক্ষতি হওয়ার মাঝখানে অঢেল ও অজস্র অনিশ্চয়তা, অনির্ণয়যোগ্যতা বিরাজ করে। ফলে সহিংসতাবান্ধব মূল্যবোধটির এখানে অঢেল সুযোগ এই অনিশ্চয়তাগুলোকে কাজে লাগিয়ে অনুভূতিতে ‘আঘাতপ্রাপ্ত’ হবার ও ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ হবার ভান করার। এবং সেগুলো ব্যবহার করে অন্যের উপর আগ্রাসী হবার। ফলে সমাজ বরং মূল্যবোধের এই অসম ব্যবহারের জন্যেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মুখের কথার দায় তাতে অল্পই।
উত্তরাধুনিক
ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধগত কারণের বাইরেও আরেকটা কারণে অনুভূতির ‘আঘাতকে’ অধুনা সামনে আনা হয়েছে। যারা এনেছে, তারা মূলগতভাবে কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি অনুগত নয়। মোরাল রিলেটিভিজম, কালচারাল মার্ক্সিজম, এন্টি-রিয়েলিজম, পোস্টস্ট্রাকচারালিজম, ক্রিটিকাল থিওরি, ইত্যাদি নানা মতবাদ থেকে এই মুভমেন্টটা দেখা গেছে।
আমরা যে আপেল আর কমলা সমান নয় বলছি, এদের কাছে এসে সে দুটোই একাকার হয়ে গেছে। রিলেটিভিজমের মূলে হলো এই বোধ যে পৃথিবী ও জীবন যদি উদ্দেশ্যহীন হয়, কোনো কিছুরই যদি বিশেষ কোন মাহাত্ব্য না থাকে, তাহলে শরীর ও মনেরও যে পার্থক্য আমরা করি, সে-ও রিলেটিভ, তুলনামূলক। এর কোনো পরমত্ব নেই। আমাদের কাছে লাগছে দেখে আমরা তেমনটা বলছি। অন্য কেউ যদি থাকে যার কাছে ঠিক উল্টোটা সঠিক মনে হয়, তাহলে তার কথাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একজনকে ভুল বলে অন্যজনকে ঠিক বলার উপায় নেই। এর সাথে কালচারাল মার্ক্সিজম এসে যুক্ত হলে ক্ষমতায় দুর্বলপক্ষের স্বরটিকে সমর্থন করাটা বরং বেশি কাজের বলে প্রতীয়মান। তাতে দুইপক্ষের ক্ষমতার যে অসমতাটা সেটা দূরীভূত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
বস্তুজগতকে মনোজগতের সাথে সমান বিবেচনা করাটা এদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনুভূতিতে আঘাতকে হাইলাইট করাটা শরীরে ও সম্পদে আঘাতের গুরুত্বকে দুর্বল করে। বিশেষ করে যখন অনুভূতিতে আঘাতের শাস্তি হিসেবে শরীর বা সম্পদে আক্রমণ করাকে ন্যায় গণ্য করা হয়। এটাকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হিসেবে ভাবা যেতে পারে। অর্থাৎ মূলত শরীর ও সম্পদে আঘাত করাকে খাটো করে দেখার জন্যেই অনুভূতিতে আঘাতকে ফলাও করা বা সামনে নিয়ে আসা।
এই কাজে এরা তাই অনেক সময়েই সহিংস ধর্মীয় বা সামাজিক মূলবোধ সম্পন্ন সমাজের সাথে গাঁটছড়া বাঁধে। অনেক কম্যুনিস্ট চিন্তক তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্যে অনাক্রমণশীলের শরীরে কিংবা সম্পদে আঘাত করাটা তথা সহিংসতা করাটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেন। এর উদাহরণ ইতিহাসে দেখা গেছে।
অধুনা ফরহাদ মজহার বাংলাদেশে এই মতের একজন চিন্তক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। না, উনি এই চিন্তাধারায় নতুন বলছি না। বরং ব্যক্তির শরীর ও সম্পদ সংরক্ষণের বিরুদ্ধে ওনার লেখনী অনেক আগে থেকেই সোচ্চার। একেবারে সমসাময়িককালেও তিনি অসহিংসতার দর্শনের সমালোচনা করেছেন। এখন ওনাকে আমরা সহিংস ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে গাঁটছড়া বাঁধতেও দেখছি। এইসব অনেকের কাছে খামখেয়ালিপূর্ণ মনে হলেও তাত্ত্বিকভাবে এগুলো অত্যন্ত সঙ্গত গতিবিধি।
শরীর ও সম্পদে আঘাতকে খাটো করে দেখানোর জন্যে অনুভূতিতে আঘাতকে সামনে নিয়ে আসতে গিয়ে সহিংস ধর্মীয় কিংবা সামাজিক মূল্যবোধের সাথে গাঁটছড়া বাঁধাটা অনেকটা ডুবে যাওয়ার কালে খড়কুটো ধরে বাঁচার চেষ্টার মতো। সভ্যতা অত্যন্ত সঙ্গতির সাথে অগ্রসর হচ্ছে, এবং সমাজের উৎপদানশীল অংশ খুব সহজাত উপায়ে সমাজকে বিবর্তিত করছে, যার সাথে সুপ্রাচীন ও বদ্ধ ধর্মীয় বা সামাজিক মূল্যবোধ অসঙ্গতিতে থাকে। ফলে এই দুই অংশের সাময়িক সংঘাত এবং দ্বিতীয় গোষ্ঠির পরিবর্তন কিংবা পতন অনিবার্য। ফলে এদের গোঁড়ামিকে আরও সুপুষ্ট করাটা আত্মহননকে আরও তরান্বিত করার শামিল। তথাপি, এর মোকাবিলায় সমাজের উৎপাদনশীল অংশ দ্বারা চালিত স্বাভাবিক বিবর্তনের উপর নির্ভর না করে যতো বেশি সহিংসতার আশ্রয় নেয়া হবে, সমাজে প্রতিক্রিয়াশীল সদস্যের সংখ্যা বরং তাতে আরও বাড়বে এবং উৎপাদনশীল ও অসহিংস অংশ ততো ক্ষুদ্র হবে।
এখন কথা হচ্ছে রিলেটিভিস্টরা শরীর ও সম্পদের আঘাতকে খাটো করতে চাইলেও যে সহিংস ধর্মীয় বা সামাজিক মূল্যবোধধারীদেরকে তারা ব্যবহার করছে, তারা কিন্তু তেমনটা মোটেও চায় না। স্বাভাবিক সামাজিক বিবর্তনে গড়ে ওঠা প্রায় সকল সমাজই শরীর ও সম্পদ সংরক্ষণের গুরুত্বকে সহজাতভাবে উপলব্ধি করে। এই সহজাত মূল্যটা বর্তমান থাকা তাদের সমাজের সুস্থ বিকাশ ও বর্ধনের জন্যেই জরুরি। ফলে রিলেটিভিস্টদের সাথে গাঁটছড়া বাঁধাটা তাদের জন্যে, তাদের সমাজের জন্যে বরং ক্ষতিকর। তাদের প্রয়োজন পরিবর্তিত এই সমাজের সাথে তাদের পিছিয়ে পড়া মূল্যবোধের সমন্বয় ও অভিযোজন। সংঘাতের হাতছানি তাদেরকে সেই সুযোগ থেকেই বঞ্চিত করছে।
সমাপ্তি
সভ্যতার বিকাশ ও তার অগ্রগতি সভ্যতার ধ্বংসের সাথে সহবাস করবে এমন যদি সত্য না হয়, তাহলে নির্মম সত্য এটাই যে – হয় সভ্যতার বিকাশ সভ্যতার ধ্বংসকারীর উপর জয়লাভ করবে, নয়তো ধ্বংস বিকাশকে গ্রাস করে নেবে। সভ্যতার অগ্রগতি যে অপ্রতিরোধ্য, এ নিয়ে আমি অল্পই সন্দিহান।
আমি মনে করি – বস্তুগত ক্ষতির সাথে অনুভূতিগত ‘ক্ষতি’র সংঘাত অনিবার্য নয়। অনুভূতির সংরক্ষণ নিশ্চয়ই কাম্য। কিন্তু অন্যের লেখা তার সদরে গিয়ে পড়ে কষ্ট পাওয়া, কিংবা সেটা পড়ার পর সহিংসতা করা, এই সবের দায়-দায়িত্ব সরাসরিই লেখাটা যে পড়বে তার। প্রযুক্তি ও অর্থনীতির বিকাশ মানুষকে বস্তু জগতের সাথে মনোজগতের এই সুতীব্র পার্থক্যটা এবং দায়দায়িত্বের এই বোধটা সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই সচেতন করে তুলবে। সেই বোধ সত্যিই পরম নাকি ‘রিলেটিভ’, সে বিষয়ের ধার না ধেরেই।
পূর্বপাঠ: যে জ্ঞান কাজের: অধিবিদ্যা বনাম বিজ্ঞান
রূপম, আপনার সাথে কিছু আলাদা কথা বলার আছে। এখানে আপনার ইমেইল পেলাম না। আপনি কি আমার সাথে একটু যোগাযোগ করবেন?
আমার ইমেইল- [email protected]
@সফিক,
ওকে।
লেখাটা স্টাইলে অন্যরকম; কিন্তু ভালই লাগলো।
অনুভূতির আঘাত টু ফরহাদ মাযহার বিষয়টা মাথার উপর দিয়ে গেলো 😕
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় প্রতিটা দাঙ্গা যা ধর্মঅবমাননার নামে করা হয়েছে তার পেছনে আসলে কারন ছিল অন্য। বেশীরভাগ সময় তা ছিল স্বার্থ লোভী মানুষের চক্রান্ত অথবা রাজনৈতিক :-s
সাধারণ মানুষ যতদিন ধর্ম নামক দোকান আর ঈশ্বর নামের মূলাতে বিশ্বাস করবে ততদিন এইসব অমানুষ তাদের স্বার্থ ধর্মের নামেই আদার করে নেবে 🙂
অপেক্ষায় আছি সেই দিনের যেদিন মানুষ ধর্মগ্রন্থ দেখতে যাদুঘরে যাবে আর মসজিদ-গির্জা-মন্দির নামের দোকান গুলো বিদ্যালয় কিংবা পাঠাগারে রূপান্তর করা হবে :))
@এম এস নিলয়,
বিষয়টা উত্তরাধুনিক। 🙂
“অনুভূতির আঘাত” থেকে ফরহাদ মাযহার বিতর্কে মোড় নেয়া লেখাটার জন্য সঠিক নয় বুঝেও বলছি, ফরহাদ মাযহার একজন সুক্ষ্ণ চালবাজ যে বাঙালি সংস্কৃতিকে ইসলামী কৃষ্টিতে পরিণত করতে বহুদিন যাবৎ সন্তর্পনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ভাষায় শব্দ ব্যবহারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপে।
@গীতা দাস,
আমার কাছে বেঠিক মনে হয় নি, বরং আমি লেখায় যে দর্শনটিকে সমর্থন করেছি, উনি তার ঠিক বিপরীত দর্শনটিকে সমর্থন করেন ও অন্যান্য বিপরীত পক্ষের সাথে গাঁটছড়া বাঁধেন বলে উনি এখানে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
আপনার মনে হচ্ছে উনি বাঙালি সংস্কৃতিকে ইসলামী কৃষ্টিতে পরিণত করতে চাচ্ছেন, আমার মনে হয় উনি (প্রথমে) বাঙালি ও (পরে ব্যর্থ হয়ে) ইসলামি সংস্কৃতিকে সার্বিক কালেক্টিভিজমের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। এখানে ইসলামি সংস্কৃতিকে অ্যাগ্রেসর আর বাঙালি সংস্কৃতিকে ভিক্টিম দেখানোটা অপলাপ মাত্র। আসলে এখানে কালেক্টিভিজম অ্যাগ্রেসর আর ইসলামি সংস্কৃতি ভিক্টিম।
তো কেউ যদি এমন থাকে যে ইসলামি সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করে না কিন্তু শরীর ও সম্পদের উপর আঘাতকে খাটো করে দেখানোর জন্যে সন্তর্পণে কাজ করে যায় সেক্যুলার ঘরানার ভেতরে থেকেই, তাদেরকে সূক্ষ্ম চালবাজ বলবেন না? নাকি কেবল ধর্মে হাত দিলেই পরে চালবাজ হয়?
শরীর ও সম্পদকে সংরক্ষণের অসহিংস দর্শনকে খাটো করে দেখানোটা কালেক্টিভিস্টদের আদি লক্ষ্য। ফরহাদ মজহার সাহেব সেই লক্ষ্যপাণে অটল আছেন। ওনার সাথে সেক্যুলার ঘরানার কালেক্টিভিস্টদের পার্থক্য হলো উনি ধর্মকে ব্যবহার করেন, আর সেক্যুলার ঘরানাররা করেন না। তো এই তফাতেই যা গড়বড় হয়ে গেলো? তার মানে উনি সেক্যুলার ঘরানার ভেতরে থেকে অসহিংসতার দর্শনকে খাটো করা কালেক্টিভিজমটা করলে সেটাকে কি তখন ঠিকই মনে করতেন? এই ব্যাপারগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
@রূপম (ধ্রুব),
আপনার লেখার এই ইনসাইট টা সত্যই অসাধারন। “শরীর ও সম্পদকে সংরক্ষণের অসহিংস দর্শনকে খাটো করে দেখানোটা কালেক্টিভিস্টদের আদি লক্ষ্য। ফরহাদ মজহার সাহেব সেই লক্ষ্যপাণে অটল আছেন।” আরেকবার কনগ্র্যাচুলেশনস।
বাংলাদেশে আসলে যাবতীয় সামাজিক-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কালেক্টিভিস্টদের সাথে কালেক্টিভিস্টদের। ডান বাম, ধার্মিক নাস্তিক, আওয়ামী বিএনপি যে রকমেরই মেরুকরন করুন না কেনো শেষ পর্যন্ত দ্বন্দ্বটা ওরকমই দেখা যায়।
এছাড়া আরেকটা গুরুত্বপূর্ন কথা, ” যে ধরনের বায়বীয় মূল্যবোধ মানুষকে বিনা আক্রমণে এমন সহিংস হবার সুযোগ দেয়, সেই মূল্যবোধকে পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কিন্তু সেই মূল্যবোধের উপরেই যে সমাজ দাঁড়িয়ে আছে, তার জন্যে তেমনটা ভাবাটা কঠিন”. এটাও বোঝা অত্যেন্ত গুরুত্বপূর্ন। অযৌক্তিক মানেই অপ্রয়োজনীয় নয়। আমাদের সমাজ কাঠামো অনেক রকম কন্ট্রাডিকশনের বিল্ডিং ব্লকের উপরে দাড়িয়ে আছে। কিছু না ভেবে হঠাৎ করে কয়েকটি ব্লক সড়িয়ে ফেললে যে ধরনের পরিবর্তন শুরু হবে, সেটা করোই কাম্য না হতে পারে।
@সফিক,
মোক্ষম।
ফরহাদ মাজহার একজন রেভলিউশনারি (রোমান্টিক বলা যায়). এই ধরনের রেভলিউশনারিদের কাছে শরীর-সম্পদের চেয়ে আইডিয়া-অনুভুতি সবসময়েই বেশী গুরুত্বপূর্ন। আইডিয়া-অনুভুতিই এদের নিত্যদিনের মালমশলা।
কিন্তু আপনি যেভাবে বলছেন , ” এখন কথা হচ্ছে রিলেটিভিস্টরা শরীর ও সম্পদের আঘাতকে খাটো করতে চাইলেও যে সহিংস ধর্মীয় বা সামাজিক মূল্যবোধধারীদেরকে তারা ব্যবহার করছে, তারা কিন্তু তেমনটা মোটেও চায় না”- এ ব্যাপারে আমার একটু দ্বিমত আছে। সহিংস বাদীরা রিলেটিভিস্ট নয় বরং তারা এবসলিউটিস্ট, কিন্তু তারাও একরকমের রোমান্টিক রেভলিউশনারি .
এক পার্ফেক্ট আইডিয়া নিয়ে তাদের কাজ কারবার, সেই আইডিয়া বাস্তবের শরীর-সম্পদের সাথে রিলেট করার তাদের অনেক অনাগ্রহ। শরীর-সম্পদ তাদের কাছেও অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
@সফিক,
আই মিন সকল ধর্ম বিবর্তনগতভাবেই এই ধারণা কিঞ্চিৎ হলেও কিন্তু ধারণ করেছে যে শরীর বা সম্পদে আঘাত করা খারাপ। সেইসব সহজাত রুল গ্রন্থেও এ কারণে লিপিবদ্ধ হয়। মজহার সাহেবদের কালেক্টিভিজম তার চেয়ে ঢের গুণ বেশি। ব্যক্তির শরীর সম্পদকে রীতিমত ঘৃণা করা তাদের ধ্যান জ্ঞান। ফলে ধর্মের কালেক্টিভিজম বরং আর্টিফিশাল কালেক্টিভিজমের চেয়ে (তুলনামূলকভাবে) খানিক স্বস্তিকর বলা চলে। মজহার সাহেবেরা এই অর্থে ধর্মের মুক্তির শেষ সুযোগটা ধ্বংস করছেন।
আরো কয়েকটা পয়েন্টে দ্বিমত আছে। ক্ষমতার ব্যালান্স করার এতোই ইচ্ছা যদি থাকতো তাইলে সে সবার আগে নাস্তিকদের পক্ষেই দাড়াইতো। বাংলাদেশে থাকে মাত্র প্রতিটা নাস্তিক জানে সে-ই সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়; তাদের খোলা রাস্তায় জবাই করা চলে…নিজের হলে ভেতরেই কোপানো যায়। ফরহাদ মজহার এসব নিয়ে টু শব্দটা করেছেন? সে যে তত্ত্বের আদর্শ থেইক্যা সইর্যা গেছে তারই আরেকটা প্রমাণ এইটা।
সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো নিয়েও কী ফরহাদ মজহার কিছু বলছে? ইসলাম এখনও ততটা বিপন্ন নয় যে হেফাজতে ইসলামের দরকার কিন্তু সবাই দলে দলে ইন্ডিয়া পালাইছে চোখের সামনে দেখছি। ২৫% থেকে এখন ৮% হিন্দু আছে, সামনে নির্বাচনে বিএনপি গেলে তো হইছেই…দু’চাইর পারসেন্ট থাকে কিনা, তাইলে ‘হেফাজতে হিন্দু’ ক্যান হইলো না? ফরহাদ সাহেব এসব নিয়েও তো কথা বলেন না…তাইলে তারে কীভাবে বলি সে তত্ত্বের উপর আছে এখনও?
@টেকি সাফি,
তার যেটুকু সঙ্গত আমার কথাটা সেটুকুতেই সীমাবদ্ধ। এর বাদ বাকি বাইরের প্রসঙ্গে বক্তব্য দেই নি।
লেখাটা ভালোই লাগছিলো, কিন্তু উদ্ধৃত অংশে এসে মুখ থুবড়ে পড়ছে। আমার দাবীর পক্ষে ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত…বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে পারছি না, আপাতত ছোট করেই বলি।
উনি এই চিন্তাধারায় নতুন না এইপর্যন্ত একমত, আগের সব ব্যাখ্যাগুলো নিয়েও তেমন আপত্তি নাই কিন্তু যখন বলতেছেন, এগুলো তাত্ত্বিকভাবে সঙ্গত তখনই আমাকে দ্বিমত পোষণ করতেই হবে। উনার বর্তমান কার্যকলাপ মোটেও তাত্ত্বিকভাবে সঙ্গত নয়। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিয়ে পরিস্কার করি…
যে রিলেটিভ মূল্যবোধের অধিকারের উপর এইসব তত্ত্ব দাঁড়িয়ে, সেইসব তত্ত্বই তার হেফাজতিকর্মীদের অধিকার দেয় না, একজন নারীকে পোষাকের জন্য লাঞ্ছিত করার। খেয়াল করুন, টুপির কারণে লাঞ্ছিত হচ্ছে, এটাকে উনি তাত্ত্বিকভাবে ডিফেন্ড করতেছেন অথচ একজন নারী সাংবাদিককে পেটানো হলো…সেই নারী সাংবাদিকের মূল্যবোধকে কমপ্লিটলি অস্বীকার করা হচ্ছে এখানে অথচ কই উনি এসব গোপন করে যাচ্ছেন। এখানেই আপনার পর্যবেক্ষনের সাথেও দ্বিমত পোষণ করতে হচ্ছে, এই স্কুলের সদস্য ফরহাদ মজহারই একলাই নয় কেবল; আরো দু’চারজন আছেন বাঙলায়। তারা কিন্তু ঠিকই প্রতিবাদ করতেছেন, তত্ত্বকে কীভাবে সুবিধা আদায়ে টুইস্ট করা হচ্ছে সেটা নিয়েও কথা হয়েছে নানাস্থানে।
ফরহাদ মজহার একজন উচ্চমানের তাত্ত্বিক এজন্যই তার সাথে আমরা সবটি মিলেও পেরে উঠছি না; কারণ তত্ত্বকে সে মানুষের কাছে ব্যাকা-ত্যাড়া কইর্যা উপস্থাপন করতে পারছে। আমরা সোজা কইর্যাও পারি নাই…আপনিও একই জায়গাতেই ব্যর্থ হইলেন।
এই তত্ত্বের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার সত্ত্বাকে অস্বীকার করে, ফরহাদ মহজার এখন একটা একপেশে দিক প্রচার করতেছেন কেবল। একটা স্কুলে পিটাইয়া পোলাপাইনদের হাড্ডি ভাঙা হয় কিন্তু মানসিক সব স্বাধীনতা থাকে আর আরেকটা স্কুলে মানসিক কোনো স্বাধীনতা নাই…তবে সেখানে শারিরিক আঘাত নিষিদ্ধ; এভাবে বছরের পর বছর চলবে। পোলাপাইন কোন স্কুলকে ভালবাসবে বলতে পারেন? কোন স্কুলে সুইসাইডাল প্রবণতা বেশী থাকতে পারে বলে আপনার ধারণা? মোটাদাগেই প্রশ্ন করছি…মোটাদাগেই উত্তর দিতে পারেন। এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে ফরহাদ মহজারের তত্ত্বে যাওয়া যায় কিন্তু ফরহাদ মহজারে যাওয়া যাবে না। সে আর তার তত্ত্বে দাঁড়াইয়া নাই।
ফরহাদ মজহার, আল-মাহমুদ এরা তো কম প্রজ্ঞাবান না তাদের আগের লেখাগুলো তা-ই প্রমাণ করে। এরা খুব ভালো করেই বুঝে নাস্তিক আর ইসলাম বিদ্বেষীর মধ্যে পার্থক্য কী; কারণ সেই একই তত্ত্ব, নাস্তিক হবার পূর্ন অধিকার যে কারোরই আছে সেটা তার তত্ত্বই বলে কিন্তু সেটাকে একটু টুইস্ট করে ঘৃণা প্রচারে ব্যবহার করেছে মাহমুদুর গং এর সাহায্যে।
সোজা কথায়, আপনি তত্ত্বটাকেই দোষী করতেছেন আর ফরহাদ সাহেবকে তত্ত্বের প্রতি নিষ্ঠাবান হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করতেছেন কিন্তু কীভাবে তার বর্তমান কার্যকলাপ তার তত্ত্বের সাথে সংহতি প্রকাশ করে সেটা পরিস্কার ব্যাখ্যা করেন নি। কিন্তু আমরা বলছি, উদাহরণ দিয়ে দেখানো যায় তার কার্যকলাপ তারই তত্ত্বের বিরুদ্ধে যায়। ফরহাদ মজহারের স্কুলের বাকি বুদ্ধিজীবিরা যাদের অনেকেই তার বিরোধীতা করতেছে তাদের কী বলবেন? তারা তত্ত্ব বুঝে না 😀
প্রজ্ঞার একটা পর্যায়ে গিয়া মানুষ লজিককেও ইচ্ছামত কান ধইর্যা ঘুরাইতে পারে, ফরহাদ মজহার সেই টাইপ ঘাগু তাত্ত্বিক আর এই সত্যটা যতদিন না বুঝবে মানুষ ততদিন এক ফরহাদ মজহারকেই ট্যাকল করতে আমাদের পক্ষের বুদ্ধিজীবিদের হাস-ফাঁস করতেই হবে। এইসময় একজন হুমায়ূন আজাদের খুবই দরকার ছিলো…
@টেকি সাফি,
আমি যতো বড় বক্তব্য রেখেছি ভাবছেন, আমার বক্তব্য কিন্তু তার চেয়ে অনেক অল্প। সব রিলেটিভিস্ট একই ছাতার নিচে তা কিন্তু বলি নি। বরং একজন কালচারাল মার্কিস্ট হিসেবে ফরহাদ মজহারের সহিংস ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে গাঁটছড়া বাঁধাটা যে অস্বাভাবিক কোনো মুভ নয়, সেটাই বলছি। এরকম উদাহরণ বাংলাদেশের বাইরেও বেশ কয়জন আছে, যাদের অবস্থানের পক্ষে মোটামুটি শক্ত (কিন্তু আমার সম্পূর্ণ বিপরীত) তত্ত্ব আছে।
এর মানে কি এই যে সকল রিলেটিভিস্ট এনাদের সাথে একমত হবেন? বা অন্য রকম রিলেটিভিস্ট হওয়া সম্ভব নয় যাদের পক্ষে সহিংস ধর্মীয় মূল্যবোধের বিপক্ষে তাত্ত্বিকভাবে দাঁড়ানো সম্ভব নয়? সেই রকম স্ট্রং কোনো বক্তব্য কিন্তু দেই নি।
তত্ত্বের সঙ্গতি খুব আহামরি কোনো ব্যাপার না। নৈতিকভাবে খুন করারও সুসংহত তত্ত্ব আছে। এইসব দেখে শঙ্কিত হবার কারণ নেই। যুক্তিবিদের কাজ বিপরীত যুক্তির সম্পূর্ণ সিস্টেমটা (অ্যাক্সিআম, প্রিমাইস ও কনক্লুশানটা) অনুধাবন করা।
মজহারের সকল যুক্তি সম্পূর্ণ সুসঙ্গত এমন মনে করাও হাস্যকর হবে। কিন্তু শরীর ও সম্পদের উপর আঘাতকে খাটো করার জন্যে (আপাত দুর্বল ক্ষমতার) সহিংস অনুভূতিশীলদের সামনে নিয়ে আসা একটা গ্লোবালি বিদ্যমান মুভমেন্ট। উনি যে পশ্চিমের সেইসব লেখা পড়েন সেটা ওনার লেখার যেকোনো মনোযোগী পাঠক উপলব্ধি করবেন বলে মনে করছি। ফলে ওনার এই প্রচেষ্টার মূলে কী রয়েছে সেটা উপলব্ধি করাটা জরুরি। এখানে উনি মূলত সভ্যতার বিকাশের স্বাভাবিক যে প্রক্রিয়া, যেটা এনলাইটেনমেন্টের চিন্তারাজি দ্বারা সুসংহত করা হয়েছে, সেটার বিপক্ষে নানা রকম এটা সেটা দাঁড় করাচ্ছেন। এই অর্থেই কেবল এটা সঙ্গতিপূর্ণ।
বাট, বিষয়টা সামনে আনাটা জরুরি ছিলো, ব্যাখ্যা করার সুযোগ পাবার জন্যে।
ধন্যবাদ।
@রূপম (ধ্রুব),
ফারহাদ মাজহার সাহেবের কথাটা উঠলোই যখন তার কিছু উক্তি স্ম্বরণ করা যেতে পারে। কাথাগুলো সাম্প্রদায়ীক উষ্কানি ছাড়া আমার কাছে আর কিছু মনে হয়নি। তিনি বলেছেন-
তিনি আরো বলেছেন-
তার এহেন কার্যকলাপ কথাবার্তা তাত্ত্বিকভাবে সঙ্গত না অসঙ্গত বা এ সব যুক্তির কোন সিস্টেমে পড়ে তা পাঠকেরা বিবেচনা করবেন।
@আকাশ মালিক,
উক্তিগুলো সামনে আনার জন্যে ধন্যবাদ।
ইসলাম এক প্রকার নয়, ইসলাম বহু প্রকার।
তাত্ত্বিক অসঙ্গতি বর্জনীয়। তবে তাত্ত্বিক সঙ্গতি মাত্রই আহামরি কোনো ব্যাপার নয়।
ওনার তত্ত্বে অসঙ্গতির অভাব নেই। কিন্তু আধুনিক কালেক্টিভিজমের থেকে ইসলামি কালেক্টিভিজম মাত্র কয়েক কদম দূরে।
(Y)
সহমত । :-s
ভালো বলেছেন ।
আবার এর পাশাপাশি এও বলা যায় অন্যের লেখা তার সদরে গিয়ে পড়ে কষ্ট পাওয়া এবং লেখকের অনুমতি ছাড়া তার লেখা পত্রিকায় প্রকাশ করে ঐ পত্রিকার পাঠকদের বিশেষ অনুভূতিতে আঘাত করে সহিংসতা সৃষ্টির দায়-দায়িত্ব সরাসরি লেখাটা যে পড়বে এবং তা পত্রিকায় প্রকাশ করবে তারই বহন করতে হবে ।।।
@তারিক,
আমার মনে হয় আপনার এই যুক্তিধারায় অনুমতিটা অপ্রাসঙ্গিক। তবে
এ ব্যাপারে আমি দ্বিমতে থাকি। আমি মনে করি সহিংসতা (অর্থাৎ শরীর বা সম্পদে আঘাত বা তার হুমকি) যার হাতে ঘটে, দায় তার। মুক্তমনায় ছাপানো আপনার একটা লেখা পড়ে কে কী কী করার সামর্থ্য রাখে সেটা না আমরা জানি, না আমরা জানতে চাই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লেখা যে ছাপায় তাকে ধরাটা একরকম অর্থে মূল সহিংসতাকারীকে অসহায় দেখিয়ে প্রটেকশান দেয়ার অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
লেখা ছাপানোর সাথে সহিংসতার কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেখানোটা অত্যন্ত কঠিন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহিংসতা যে করা, দায় সরাসরি তার। লেখা পড়ে যে খুন করতে যায়, খুন করার সম্পূর্ণ দায় যদি তার না হয়, তাহলে কোনো কর্মের দায়ই তার না। একই যুক্তিতে তাহলে বলা যায় লেখা প্রকাশ করার দায়ও প্রকাশকের না। মূল যে লেখক, তারও না। মূল দোষ বিগ ব্যাঙের।
@রূপম (ধ্রুব),
সবাই সব ব্যাপারে একমত হবে না সেটাই স্বাভাবিক । তবে আমার যুক্তিতে যে প্রকাশক ঐ ধরনের লেখা ব্লগ(ছোট পরিসর) থেকে বহুল প্রচারিত পত্রিকায় প্রকাশ করে এবং ৰ্ধমান্ধ মানুষকে উষকানী দেয় , সেও সহিংসতাকারীদের ঐ সহিংসতার জন্য সমান দায়ী ।
(*)
উত্তম লেখা! সুখপাঠ্য! আপনার কাছ থেকে এরকম চিন্তাজাগানিয়া আর মননশীল লেখাই প্রত্যাশিত, রূপম ভাই!
লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে কোন কথা নেই। লেখকের সঙ্গে অনেক ব্যাপারেই একমত। কিন্তু প্রবন্ধটা পাঠ্যবইয়ের ইস্টাইলে ও ভাষায় লেখা যা শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাস করার জন্যই দাঁতে দাঁত চেপে পড়া যায়। খুব সরাসরি অনুভতি নিয়ে কথা বলা যেতো। ধর্মানুভূতি নিয়ে এখন মুসলমানদের যে বাড়াবাড়ি এই লেখা প্রাসঙ্গিক। কিন্তু কমতি যেটা, লেখায় রস প্রয়োজন ছিল।
@সুষুপ্ত পাঠক,
আপনাকে পাশ মার্ক দেওয়া গেলো। :))
@রূপম (ধ্রুব), :))
@সুষুপ্ত পাঠক,
নানান অনুভূতির মাঝে ধর্ম কেবল এক প্রকার। সমান বা তার চেয়েও আগ্রাসী অনুভূতিও কিন্তু সমাজে বহাল আছে, যেটায় হাত পড়লে মাথায় বাড়ি পরে। জাত্যানুভূতির জন্যেও দাঙ্গা হয়।
তাছাড়া রাষ্ট্রের রাষ্ট্রানুভূতি বলেও একটা জিনিস আছে। আপনি ধরুন কারও ঠ্যাঙও ভাঙলেন না, কারও পকেটও কাটলেন না, কিন্তু আপনার কোনো ফেইসবুক স্ট্যাটাস বা মুখের কথা রাষ্ট্র বা তার সংবিধান বা তার পদাধিকারীর ‘সম্মানে’ গিয়ে নাড়া দিলো। তখন সেটা শারীরিক শাস্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাটাও তো অনুভূতিতে ‘আঘাত’কে মোকাবিলা করারই একটি ফর্ম।
এই ধরনের রাষ্ট্রানুভূতিশীলতা আমাদের রাষ্ট্রের মনে স্বল্প ফর্মে বিরাজ করে, তবে প্রকাণ্ড আকার ধারণ করেছে, তেমনটা বলা যাবে না। কিন্তু ধরুন কিউবা, যেখানে কিনা ব্যক্তির রাজনৈতিক অবস্থান রাষ্ট্রের মনঃপুত না হলে কারাদণ্ড মেলে, সে তো পার্টি-অনুভূতি রক্ষারই তরে। পার্টির বিরুদ্ধে কথা বললে তো কারও শরীরেও আঘাত আসে না, কারও সম্পদও নষ্ট হয় না। এখন ধরুন, এমন কিউবার যারা ভক্ত, তারাও মনের ভেতর সেই পার্টি-অনুভূতিই তো লালন করে বেড়ায়, যেটা ক্ষমতা পেলে গুরুর মতে চটে উঠবে। ধর্মানুভূতিধারীদের চেয়ে তারা কি কম অবুঝ? এই সকল অনুভূতিধারীর তরেই লেখাটা নিবেদিত।
@রূপম (ধ্রুব), বুঝলাম।