এই রাতে আল্লাপাক সাত আসমান হইতে প্রথম আসমানে নাইমা আসেন। আর ফিরিস্তাগো দেখাইয়া কয়, দেখো, দেখো মিয়ারা, আমার বান্দারা কেমুন আমারে ডাকতাছে! শিশুর লাহান চোক্ষের পানি ঝরাইতাছে। ঐ ফিরিস্তা, যা খাতা লইয়া আয়, অগো ভাইগ্য আইজকা আমি নিজের হাতে লিইখা দিমু। সবার ভাইগ্যে ভালা ছাড়া খারাপ লিখুম না…।
বলতে বলতে মোবারক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। তার সামনে চালের আটার রুটি আর গরুর মাংসের ঝোল। ঝোলের মধ্যে এক টুকরা মাংস, একটা হাড়, দুইটা আলুর টুকরা। অন্য বাটিতে সুজির হালুয়া। সে সুজির একটা বরফি খেয়ে দেখেছে। অপূর্ব হয়েছে তার স্বাদ! শবে বরাতের দিন আল্লাপাক এভাবেই তার বান্দাকে সৌভাগ্যবান করেন। সারাদিন খুব গোস্ত-রুটি খাইতে ইচ্ছা হইছে। এখন সন্ধ্যাবেলা দেখে সেই খানা তার সামনে! আল্লাপাকের কারবার দেখো! মোবারক কি খেতে চেয়েছে সে কথাও রাব্বুলআলামিন ভুলেন নাই! ঠিক ব্যবস্থা করে পাঠিয়ে দিছে। মোবারক সিজদায় যায়। আল্লাহ আকবর!
মোবারক আজ তার সবচেয়ে ভাল পাঞ্জাবিটা পরেছে। বিকেলবেলা গোসল করেছে লাইফবয় সাবান মেখে। আতরের শিশি থেকে তুলোয় ভরিয়ে গায়ে মেখে কানের খাঁজে গুজে রেখেছে। মোবারকের কয়েকজন ভক্ত এখন তাকে ঘিরে বসে আছে। বেশিরভাগই চোর-বদমাশ আর নেশাখোর। শবে বরাতের সন্ধ্যায় এদের মন আর্দ্র হয়ে উঠেছে। হঠাৎই মনে পড়ে গেছে বড় পাপ জমা হয়ে গেছে জীবনে। আল্লা-খোদার কাজ কিছুই করা হয় নাই। মোবারক ফকির মানুষ, তায় একই বস্তিতে তারা থাকে, তার সঙ্গে তারা অনেক বেশি নৈকট্য অনুভব করে। এই বস্তিতেই একটা বেড়ার মসজিদ আছে। সেখানে একজন ইমামও রাখা আছে। ফর্সা পাঞ্জাবি পরে থাকে। জয়তুনের ডাল দিয়ে দাঁত মাজে। বগলে আতর মাখে রোজ। চোখে সুরমা। এরা কাছে আসছে দেখলেই তার নাক কুচকে আসে অজান্তে। বড্ড গন্ধ এদের শরীরে!
মাওলানা ইদ্রিস আলীর মনে সুখ নেই। শেষ পর্যন্ত তাকে বস্তিতে এসে উঠতে হয়েছে। চাকরির বাজার খারাপ। সে না নিলে অন্য কেউ ছো মেরে এই চাকরিটা নিয়ে নিতো। বালিশ-তোশক ভাঁজ করে তাই সোজা চলে এসেছে বস্তিতে। বিশাল বস্তি। গুন্ডা-মাস্তান আর রাজনৈতিক নেতারা এটার মালিক। কি নেই এখানে? মদের দোকান, বেশ্যালয়, মিনি সিনেমা হল (বড় টিভি স্কিনে ব্লু ফ্লিম দেখানো হয়)। বস্তিবাসীর বিনোদনের জন্য বাইরে যাবার প্রয়োজন নেই। একটা মসজিদের অভাব ছিল সেটাও হয়ে গেছে। এখন অবশ্য বেড়ার ঘর, অচিরেই পাকা দালান হবে ইনশাল্লাহ! এইরকমই ঘোষণা দিয়ে গেছে বস্তির হর্তাকর্তা লিয়াকত-আশরাফরা।
মাওলানা ইদ্রিস আলীর এসব আশ্বাস শুনেও কিছু ভাল লাগে না। চাকরির জায়গা তার পছন্দ হয় নাই। একে বস্তি, মানুষগুলোও দুনিয়ার হারামী। আল্লা-খোদার নাম নেয়ার পর্যন্ত প্রয়োজন মনে করে না। বুড়ো মানুষগুলোও দুনিয়ার ইবলিশ। বসে বসে বিড়ি ফুঁকবে তবু নামাজ পড়তে আসবে না। আর এই বর্বর লোকগুলো সামনে দ্বিন-দুনিয়ার কথা বলেও কোন মজা নাই। নির্বোধগুলি কিছু বুঝে বলেও মনে হয় না।
চাকরিটা ছেড়ে দেবার কথা ভাবে ইদ্রিস আলী। কিন্তু উপায় নেই। এখানে যা হোক তিনবেলা খাবারটা আসে। মাস গেলে বেতনটা দশ তারিখের মধ্যে এসে যায়। টাকাটা তখন বাড়িতে পাঠাতে হয়। গ্রামে ছয়-সাতটা মুখ। তার বেতন সর্বসাকুল্যে চার হাজার টাকা। নিজের খরচ আছে। বাড়িতে কম করে হলেও তিনটি হাজার টাকা না পাঠালেই নয়। তাদের তিন পুরুষের ইমামী পেশা। জমিজিরাত নাই। ক্ষেতি-খামারী কাজ শেখে নাই কয়েক পুরুষ। নামাজ পড়িয়ে আজান দিয়ে পেটের ভাত জোটায়। এটা আল্লাপাকের একটা নিয়ামতও। ক’জনের ভাগ্যে আছে দ্বিনের পথে থেকে ইহকালের খেদমত করার!
এসব ভাবলে আবার মনটা বড় হয়ে যায়। কিন্তু এই বস্তির পরিবেশ তার সহ্য হয় না। নোংরা ড্রেন, তার মধ্যে মলমূত্র ভেসে বেড়াচ্ছে। অপরিষ্কার, রোগা কঙ্কালসার মানুষ সর্বক্ষণ ঝগড়াঝাটি মারামারি করছে নিজেদের মধ্যে। অশ্রাব্য ভাষায় মহিলারা ঝগড়া করছে সকাল-সন্ধ্যা। কে কার ঘরে গিয়ে শুয়েছে, কার বাচ্চা কে পেট খসিয়ে এসেছে এইরকম আরো নোংরা কথাবর্তা সর্বক্ষণ কানে আসে। নারী-পুরুষের গোপন অঙ্গ-পতঙ্গ নিয়ে গালি আর বুলি একাকার হয়ে গেছে।
বেদাতী আর শেরেকিতেও এই ইতর মানুষগুলি পিছিয়ে নেই। মোবারক নামের এক ভন্ড গাঁজাখোর আল্লা-খোদার নাম নিয়ে দিনরাত শিরক করে যাচ্ছে। আর এই ইতর লোকগুলো সেই ভন্ডটার ঘরে গিয়েই বসে থাকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর মোবারকের ঘরে গানের আসর বসে। হারামজাদা ওর ঘরের নাম দিয়েছে খানকা! সেই খানকার মধ্যে মাগী-মর্দা মিলে বাত্তি নিভিয়ে নাচানাচি করে জিকির করে। কয়, খোদারে ডাকি! মসজিদ কমিটিরে সে এইসব জানাইয়া নালিশ করছে মোবারকের নামে। আশ্চর্য কথা, এই কথা শুনে তারা হাসে। লিয়াকত কয়, বাদ দেন, পাগল-ছাগল মানুষ। কি কয় না কয়, অর কতার কোন দাম নাই।
মাওলানা ইদ্রিস আলী দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে যান। মদের দোকান যারা বস্তিতে বসিয়েছে তারাই মসজিদ বসিয়েছে বস্তিতে, মেবারককেও তারা বসিয়েছে একই উদ্দেশ্যে। তার না পোষালে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে পারে। তাকে কেউ আটকাতে আসবে না। কিন্তু উপায় নেই। এই কাজ ছাড়া আর কিছু শিখে নাই। বাকী জীবন এই করেই চলতে হবে। লিয়াকতের মত সমাজ বিরোধীদের দয়া-করুণায় বেঁচে থাকতে হবে। শুক্রবারের জুম্মা নামাজের মোনাজাতে তাদের নামে স্পেশাল দোয়া পড়তে হবে। তাদের বাড়ি থেকে আসা খানা খেয়ে জীবন ধারণ করতে হবে। তার বাপ, তার দাদা যেভাবে জীবন ধারণ করেছেন, তাকেও তাদের পথ ধরে একই তরিকায় হাঁটতে হবে।
মাওলানা ইদ্রিস আলী তার নিজের দুই ছেলেকেও গ্রামের মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছে। আশা আছে বড়টাকে শহরে এনে নিজের কাছে রাখবেন। সে মাশাল্লা এরই মধ্যে হাফেজ হয়েছে। সামনে রামজান মাস। কোথাও খতম তারাবিতে ঢুকিয়ে দিতে পারলে কিছু টাকা হাতে আসবে। গ্রামে পয়সা নেই। আল্লাপাকের অশেষ রহমত যে প্রচুর মসজিদ হচ্ছে চারপাশে। তার মধ্যে কোন একটায় ছেলেকে ঢুকিয়ে দিতে পারলে নিশ্চিন্ত। যেরকমভাবে একদিন তার বাপও তাকে ভিনদেশী এক গ্রামের মসজিদে ঢুকিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন।
মাওলানা ইদ্রিস আলী বিষাদ মনে শূন্য আকাশের দিকে চেয়েছিলেন। মাগরিবের নামাজ সবে শেষ হয়েছে। আজ লোক হয়েছে মোটামুটি। বিরিয়ানির ব্যবস্থা হয়েছে তোবারক হিসেবে। ভোররাতে বিলি করা হবে মুসল্লিদের মধ্যে। কিছু মরিচা বাতি এনে মসজিদকে সাজানো হয়েছে । বস্তিতে পটকা ফুটছে ধুমছে। পোলাপান-বুড়া-জোয়ান মিলে একরকম ঘর বানিয়ে আগরবাতি মোমাবতি জ্বালিয়ে জিকির করছে আল্লাহু আল্লাহু। শবে বরাতের রাইতে কেমুন হিন্দুগো মতন পূজা শুরু করছে। দুই-একজন গাঁজা খাইয়া বইসা আছে আজকার দিনেও। মাওলানা ইদ্রিস আলী মনে মনে গজরাতে লাগলেন। মোবারক নামের ভন্ডটা আজও মসজিদে আসে নাই। এই লোকটা জীবনেও মসজিদ কী জিনিস বলতে পারবে না। ঘরের সামনে লাল একটা নিশান লটকিয়ে রেখেছে। যতসব হিন্দু পৌত্তলিকগো কাম কারবার!
মন থেকে কিছুতে দুশ্চিন্তা দূর করতে পারছেন না মাওলানা ইদ্রিস আলী। মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছেলে মাশাল্লা কোরআনে হাফেজ। ছেলের বাবা মাওলানা রহুল কুদ্দুস নিজে মেয়ে দেখে ছেলের জন্য পছন্দ করেছেন। ছেলে বিয়ে করেই সৌদি যাবে ঠিক হয়ে আছে। এইরকম যখন অবস্থা তখন হঠাৎ দুঃসংবাদ। ছেলে বিদেশ যাবার কী সব ব্যাপারে পঞ্চাশ হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল, বিশ হাজার জোগার হয়েছে, এরমধ্যে বিয়ের খরচ… স্ত্রী ফোন করে বলেছে ছেলে পক্ষ ফোন ধরছে না। কেমন যেন এড়িয়ে যাচ্ছে…।
মাওলানা ইদ্রিস আলী দরিদ্র লোক। একসঙ্গে তিরিশ-চল্লিশ হাজার টাকা জোগার করা তার পক্ষে কতটা কষ্টকর সেটা তার মত ভুক্তভুগি ছাড়া কেউ বুঝবে। তিন-চার জায়গায় হাত পেতেছেন। এক জায়গায় সুদে টাকা ধার করতে হয়েছে। মনটা তার সেই থেকে ছোট হয়ে আছে। তিনি নিজে হাজার বার বলেছেন, সুদ খাওয়া আর নেওয়া দুটাই হারাম।… উপায় নেই। আল্লাপাক ক্ষমা করুক! এক অসহায় বাপ এছাড়া আর কি করতে পারতো? এতদূর কথা গড়িয়ে বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো মেয়েটার গায়ে দোষ লাগতো। গ্রামদেশে কথা রটে যায়। মেয়ের দোষ আছে। তাছাড়া ছেলেটা ভাল, ক’টা টাকার জন্য সম্বন্ধটা ভেঙ্গে যাবে? মাওলানা ইদ্রিস আলী এটা হতে দিতে চান না।
টাকাগুলো এনে সুটকেসের কাপড়ের ভাঁজে রেখে সেই যে গুম হয়েছেন তারপর আর মনটা ভালো হয়নি। জোহরের নামাজে একবার ভুল হয়ে গেলো। দু’রাকাতের সময় তার মনে হলো তিন রাকাত পড়া হয়ে গেছে? একবার সুরায় ভুল করে ফেললেন। কাল বাড়ি যাবেন। দুদিন থেকে আসবেন। টাকাগুলো দিয়ে আসাই প্রধান উদ্দেশ্য। সামনেই রমজান মাস, তারপর ঈদ। ঈদের পর মেয়ের বিয়ে। আশার কথা রোজার মাসে এক জায়গায় খতম তারাবী পড়ার কথা আছে। সাত হাজার টাকায় রফা হয়েছে।
মোবারকের “খানকা” থেকে গানের শব্দ আসছে। মাওলানা ইদ্রিস আলী জানেন তার ঈমানী দায়িত্ব কোনটি। এবার বাড়ি থেকে ফেরার পর তিনি এই ব্যাপারে যা করণীয় তাই করবেন। মসজিদের সামনে নাচানাচি-গানবাজনা তিনি সহ্য করবেন না। মোবারক তো মুসলমানই না। ওইটা একটা কাফের! আল্লাপাকের নাম নিয়া তামাশা করতাছে! অরে বস্তির লোকজন নিয়া উচ্ছেদ করতে হবে। এই বস্তি থিকা মোবারকরে খেদাতে হবে আল্লাপাকে ঘরের জন্যই। এইসব গানবাজনা অনৈসলামিক কাজকারবার আল্লাপাকের ঘরের আশে-পাশে ক্যান- কোত্থাও চলবে না। এইবার বাড়ি থেকে ফিরে মাওলানা ইদ্রিস আলী লোকজনকে এসব বুঝাবেন। লিয়াকতদের দিয়া হবে না। পাবলিক ক্ষেপলে ওরাও তখন কিছু বলবে না। শত হলেও ধর্মের ব্যাপারে অরা অহেতুক ঝামেলায় জড়াবে না।
মাওলানা ইদ্রিস আলী নিজের ঘরের দিকে এগুলেন। শবে বরাতে রুটি-হালুয়া আসছে কমিটির বাসা বাড়ি থেকে। এশার নামাজের পর ভাত খাবেন। এখন আর তাই কিছু খেলেন না। ভোর রাতে আখেরি মোনাজাত। এশার নামাজের শেষে ভাত খেয়ে একটু নফল নামাজ পড়ে তিনি শুতে গেলেন। ফজরের ওয়াক্তের আগে উঠবেন।
ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করতে লাগলেন ইদ্রিস আলী। বস্তিবাড়িতে তখন হাজার হাজার মানুষের হৈ হৈ চিৎকার। লাল অগ্নি শিখাটা বহু দূর থেকেও দেখা গিয়েছিল। দাউ দাউ করে আগুনের জিহ্বাগুলো গ্রোগ্রাসে গিলছিল শুকনো কাঁচা ঘরবাড়িগুলো। রাত দুটোয় আগুন লেগেছিল। মুহূর্তে সেটা ছড়িয়ে পড়ে পুরো বস্তিতে।
কেউ বলছে আতশবাজী থেকে লেগেছে। কেউ বলছে নাশকতা। কেউ বলছে ভেজা কাপড় গ্যাসের চুলায় শুকাতে গিয়ে। বৈদুতিক শর্টসার্কিট থেকেও লাগতে পারে। মাওলানা ইদ্রিস আলীর কানে এসব কিছুই যাচ্ছিল না। একটা লোহার শিক দিয়ে তিনি ধোঁয়া উঠা ছাই ঘেটে, উল্টে-পাল্টে দেখছেন। পুরো বস্তিই এখন একটা পোড়া শূন্য মাঠ। ধ্বংসস্তুপ থেকে ধোঁয়া উঠছে। থকথকে কাঁদায় হাঁটু গেড়ে মানুষ বিলাপ করছে।
অদূরেই মোবারক দাঁড়িয়ে ছিল। মাওলানা ইদ্রিস আলীর এরকম চেহারা সে কোনদিন দেখেনি। বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে। হয়ত সুরাটুরা পড়ছে। মোবারকের খানকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তার খানকাকে ইমাম সাব ভেঙ্গে দেবার কথা বলতেন সব সময়। এখানে বেদাতী অনৈসলামীক কার্যকলাপ চলে। এই পাপের ভাঁড়া গুড়িয়ে দিতে হবে। এখন ইমাম সাবের মসজিদ আর তার খানকা একাকার হয়ে গেছে। ইমাম সাব এখন বলতে পারবেন না কোনটা মসজিদ আর কোনটা পাপের আখড়া। মোবারক দেখছে ইমাম সাব খঁটে খুটে কি দেখছেন নিচু হয়ে। হঠাৎ স্থীর হয়ে গেলেন তিনি। তারপরই আকাশ ফাঁটিয়ে চিৎকার করে উঠলেন:
কোরআন পুড়ে নাই! কোরআন পুড়ে নাই!
আগুনে পুড়ে সর্বস্ব হারানো মানুষ প্রথমটায় বিহ্বল হয়ে পড়ল এই চিৎকারে। কিছু না বুঝে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল। তারপর ধাতন্থ হতেই তারাও দৌড়ে ইমাম সাবকে ঘিরে ধরলো।
একটা কোরআন, চারপাশটা পুড়ে গেছে, কিন্তু লেখাগুলো পড়া যাচ্ছে।
আল্লাপাকের কুদরত দেখো! সব পুইড়া ছাই হইছে কিন্তু পাক কালামের কিছু হয় নাই! ইমাম সাব শিশুর মত হাসছেন। তার চোখ চিকচিক করছে।
একটু একটু করে সবার চোখেই ইমাম সাবের মত চিকচিক করতে লাগলো। সবাই বলছে, কোরআন পুড়ে নাই! কোরআন পুড়ে নাই!
মোবারক চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। সে বুঝতে পারছে না তার কি করা উচিত। সে-ও কি তাদের সঙ্গে গিয়ে যোগ দিবে? সে তো পাপী মানুষ। জীবনে কোরআন পড়ে নাই। পশ্চিমদিকে মাথা গুঁজে নাই। ইমাম সাব বলছে মানুষের পাপে, এই বস্তির জাহেল মানুষের পাপে সব পুইড়া ছাই হইছে। কত শিশু মানুষ পুইড়া মরছে। দুধের শিশুগুলিও বাদ যায় নাই। আমার পাপে অরা মরলো। আমি পাপী গাঁজাখোর মানুষ। কিন্তুক অরা নিস্পাপ মাসুম বাচ্চা। আগুন কোরআনরে পুড়তে গিয়া জিবে কামুর দিয়া থাইমা গেছে। কিন্তুক শিশু গুলানরে দেইখা দয়ামায়া হয় নাই। আল্লাপাক আগুনরে কোরআন চিনাইছে মানুষ চিনাই নাই…।
মোবারক ভাবে, এত মানুষ সান্ত্বনা পাইতাছে। আল্লাপাকের নতিজা হাতে-নাতে দেখা যাইতাছে। সব পুইড়া ছাই হইছে কোরআন তো পুড়ে নাই! সে দেখছে, বস্তির হাজার হাজার মানুষ দেখছে। এইসব দেইখা তারা সব হারাইয়াও নতুন কইরা সাহস পাইতাছে। তার তাইলে অতশত ভাইবা লাভ কি? সে-ও ওদের সঙ্গে গিয়ে যোগ দিক…।
মোবারক তবু আশ্চর্য এক দ্বিধা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সে এগুতে চেয়েও পারে না, আবার পিছিয়ে যেতেও পারে না। শুধু থেকে থেকে তার কানের দুপাশে বাজতে থাকে: কোরআন পুড়ে নাই! কোরআন পুড়ে নাই…।
লেখকঃ সুষুপ্ত পাঠক
(Y) (F)
কিছুদিন আগে রেশমার জীবিত উদ্ধারের পরে আমার হোমপেজে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ভরিয়ে ফেলা হয়েছিলো; যেটার যৌক্তিকতা আমি বুঝতে পারিনি।
ভবন ধ্বসের জন্য যদি সৃষ্টিকর্তাকে গ্রেফতার ও বিচার না করে দোষী হিসেবে ভবনের মালিককে দোষী সাব্যস্ত ও গ্রেফতার করা হয় তবে রেশমাকে জীবিত উদ্ধারের কৃতিত্ব ও কৃতজ্ঞতা কোন যুক্তিতে উদ্ধারকারী কর্মীদের না দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে দেয়া হবে ???
যা ঘটার তা মানুষ ও মহাকাল ঘটায় কিন্তু দোষ মানুষের আর প্রশংসা কেন সৃষ্টিকর্তার হবে সেটা বুঝিনা বলেই কখনো সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি না :-s যা ঘটানো হবে তা ঘটবেই, তা সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করলেও ঘটবে না করলেও ঘটবে। কোন ঘটনাতেই সৃষ্টিকর্তার কোন হাত নেই তাই “একটা কোরআন, চারপাশটা পুড়ে গেছে, কিন্তু লেখাগুলো পড়া যাচ্ছে। আল্লাপাকের কুদরত দেখো! সব পুইড়া ছাই হইছে কিন্তু পাক কালামের কিছু হয় নাই!” টাইপ যুক্তি ও বিশ্বাস ভিত্তিহিন।
আপনার লেখার হাত চমৎকার :guru:
লিখে জান (Y)
ভাল লিখেছেন । (Y)
কয়েক দিন আগের ঘটনা :
“রেশমা” নামের এক সাধারণ বালিকা ১৭ দিন মরণের সাথে যুদ্ধ করলো এবং জয়ী হল । তারপরও আপনার গল্পে উল্লেক্ষিত মাওলানা ইদ্রিস আলীর মত কিছু মানুষেরা রেশমার অদম্য সাহস ও বুদ্ধিমত্তাকে তুচ্ছ মনে করে এই ঘটনা নাকি অলৌকিক ঐ ঈশ্বরেরই কুদরত তাই প্রমানে ব্যাস্ত !!! :-Y
@তারিক, এসব কথা শুনলে মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে :-Y
@সুষুপ্ত পাঠক, তাও ভালো এর পরের কাহিনী লেখেন নাই।এর পরের কাহিনী হবে
ইন্ডিয়ান মুভি “ওহ মাই গড” মনে পরে গেলো 😛
এমনই হয় (D)
@এম এস নিলয়,দ্বিতীয় পর্বটা আপনে লেখেন। (F)
:lotpot: exlonto :guru:
@firoj, :))
দারুণ লেখা।
বাঙ্গি ফাটাইয়া দিছেন Hit the bull’s-eye’ :clap :clap
@আকাশ মালিক, আপনি পড়বেন আশা করেছিলাম। আপনার মন্তব্য গুরুত্ব বিবেচণা করি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।