না গৃহী না সন্ন্যাসী
আমি গৃহের মাঝেই ছিলাম,
টলমলে শৈশব আর ঝলমলে কৈশোর জুড়ে
আমি গৃহের মাঝেই ছিলাম।
হঠাৎ একদিন মাধুদিকে দেখে
বুকের নাটাই টন করে উঠল,
আমার শুণ্যচারী ঘুড়িটা নেমে এলো
মাধুদির ঠোট ও চিবুকে।
আমি আহত হলাম,
আমি বিক্ষত হলাম
প্রেম ও সৌন্দর্যে।
আমি টের পেলাম,
এইমাত্র আমি যৌবনের প্রথম কদম মাড়ালাম
মাধুদির হাহাকার ভরা সুন্দরে।
আমি ঠিক তারপরই একটা চাঁদকে দেখে
প্রতিজ্ঞা করলাম,
ছেড়ে যাব ঘর
কেবল এ জোসনার লাগি।
আমার অন্তর্লোকে জন্ম নিল
এক প্রলয়ংকারী সন্ন্যাস
মাধুদি যার প্রসবিণী।
এরপর মাধুদি চলে যায়,
ঢেউয়ের মত নারীরা ভেঙে যায় কূল।
আমি কেবল বিহবল জোৎস্নায় অর্থ খুজি,
প্রেম ও সুন্দরের।
আমি একটা দপদপে মোমবাতিরও প্রাণ খুঁজতে থাকি।
আমি একঝাক উইপোকার ভেতরে হাতড়ে বেড়াই
আমার আজন্ম জিজ্ঞাসার নিবৃত্তি।
আমি ঘর বেধেও কি উল্লাসে ভেঙে দিতে চাই নিয়তি।
আমি হৃদয়কে ফাঁকি দিয়ে
কেমন ক্রমশ ক্ষয়ে যেতে ধরি।
আমি প্রতি প্রাত:রাশ এ ছুটে যেতে চাই ব্রহ্মপুত্রের যঠরে
যেখানে আমার আগবেলার ডুব সাতার।
আমি রমণীকে তুলো করে শুন্যে ছুড়ি,
আমি নবজাতককে ধিক্কার দিই জন্মের জন্যে,
আমি আগুনকে নেভাতে যাই
অগ্নিশিখা দিয়ে।
আমার তাপানূকূল যন্ত্র,
আমার মখমল শয্যা,
আমার টলটলে শাওয়ার,
আমার জামদানী নারী,
আমার ফুরফুরে সাফল্য,
আমাকে গলা চেপে ধরে গিলাতে চায় সভ্যতা।
আমি আপন মনে
আপন বস্ত্র হরণ করে
হঠাৎ উন্মাদ ছুটি চাঁদ কিংবা
ক্ষান্ত বর্ষণ পানে।
আমি নগ্ন, উদোম হয়ে চিৎকার করি
চন্দ্রাহত রাতের নির্জনতা ভাঙতে।
আমি আমার অশ্রুর হিসেব চাই
জোৎস্না ও আঁধারের কাছে।
আমি পাই পাই হিসেব চাই
আমার প্রত্যেকটা ঘুণে খাওয়া স্নায়ু কোষের।
আমি ধিক্কার দেই
আমারি আমাকে।
আমি তুমুল বর্ষণ শেষে
ফিরে আসি আপন গৃহে,
যেখানে একটি নারী
আমার অপেক্ষা করে,
যদিও আমি তাকে কখনই বলিনি
এমন আকূল অপেক্ষার কথা।
যেখানে একটা শিশু
বর্ণমালার বই হাতে ছুটে আসে
কারাগারের মত দুবাহু বাড়িয়ে।
আমি চিৎকার করে পেছনে তাকাই।
না।
পেছনে মায়া
আর সামনে ত্রাস।
মাঝখানে আমি,
আমি গৃহী
নাকি সন্ন্যাসী?
উত্তর পাইনা আর।
কবিতারা ভাল নেই
কাল থেকে আর বৃষ্টি না হলেও
অনেকের চলবে,
চলবে না হলে পাতার ফাঁকে চাঁদ।
কিছুই যাবে আসবে না কারোও
যদি না ডাকে ভোরের শালিক।
সভ্যতার এ লগ্নে,
চোখের জল যখন প্রতিস্থাপিত
গ্লিসারিন দ্বারা
তখন আর না হলেও চলবে বিহবল
কোন বধূয়ার আঁখি।
কাল হঠাৎ করেই পশ্চিমের আকাশ
লালচে না হয়ে উঠলেও
কারো মনটি খারাপ হবেনা বোধ হয়।
আর যাদের ভীষণ খারাপ হবে মন,
যাদের যাবে আসবে এ সকল পরিবর্তনে,
যাদের আর চলবেই না বৃষ্টি না হলে,
তারা মুছে যাবে মহাকালের হালখাতায়।
যারা এখনও নিরাপদ জোস্না চাই
কিংবা শালিকের জন্য “হ্যাঁ” বলুন বলবে,
তারাই ক্রমশ “না” হতে থাকবে
মানুষ ও সভ্যতার দ্বারা।
যে সভ্যতা মৃত কবিদের শ্মশানের বুকে,
যে সভ্যতা দলিত ঘাসফুলের ’পরে,
তার বুকে ক্রমশই সস্তাতর
মানুষের মন।
লালন যেখানে কফির মগে
সে কফির বিষাক্ত ধোয়ায় আজ
উড়ে যাবে কবিতার সুখ।
আজ কফিন মিছিল জানান দেবে
কবিতারা ভাল নেই।
বাউল
একটা বাউল বুকের ভেতর
একটা বাউল দেহে,
একটা বাউল রক্তচক্ষু
একটা বাউল সহে।
একটা বাউল উড়াল দূরে
একটা বাউল গৃহে,
একটা বাউল শান্ত রাগীন
একটা বাউল দ্রোহে।
একটা বাউল স্বপ্নচারী
একটা বাউল অন্ধ,
একটা বাউল হৃদয় খোলে
একটা করে বন্ধ।
লেখকঃ প্লাবন ইমদাদ
প্রকাশিত গ্রন্থঃ শাখের করাত(রম্য)
কাজী রহমান ভাই, আপনার মন্তব্যটা আরো বেশী ছোয়াচে, কিভাবে যেন কবি ও কবিতা দুটোকেই ছুয়ে গেলো… ধন্যবাদ।
সাইফুল ইসলাম, তোমাকে ধন্যবাদ কবতের এরাম সুন্দর বিশ্লেষণের জন্য। এক্কেরে হাচা ব্যাখ্যা।
বাউরে !!!
আধ্যাত্মিক কবিতা গান গুলো শুনলে উদাস হয়ে যাই।
আবারো হলাম 😕
নিজের কাছে প্রশ্ন করি “আমি গৃহী নাকি সন্ন্যাসী” ???
পুরাই চরম লাগল এই কবিতাটা। পুরাই চরম।
@সাইফুল ইসলাম,
‘তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা’ এর সাথে মিল পেলাম। জানি না, ঠিকমত মর্মোদ্ধার করতে পারলাম কিনা!
@কাজি মামুন,
শিল্পের ব্যাপারটাই এখানে, একেকজনের কাছে একেকভাবে ধরা দিবে।
আমার কাছে আপনার বলা গানের সাথে এই কবিতার অর্থ এক মনে হয় নাই। সহজভাবে বললে, গানটার মাঝে একটা না-জানা, সন্দেহ, বা হতবিহবল ভাবের ব্যাপার আছে। নিজের সত্তাকে চেনার যে আকুতি সেটা আছে। সত্তার দ্বৈততা নিয়ে প্রশ্ন আসে।
কিন্তু কবিতার ক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয়েছে, সত্তার দ্বৈততা নিয়ে নিঃসন্দেহ, এবং এই দ্বৈততার কাজকর্ম নিয়েই একটা হতাশাবোধ প্রকাশ করছে।
ঘরে থাকতে না চাওয়া একটা মনের টানাপোড়েন বা বাইরে বসে ঘরের প্রতি পিছুটানের যে অনুভুতি এখানে সেটা বলতে চাওয়া হয়েছে বলেই মনে করি।
তবে আসল কথা হল, কবিতা যে লিখেছে তিনিই বলতে পারবেন আসল কাহিনী কী।
বিচিত্র, অদ্ভুত, গতিময়, অন্যরকম, ছোঁয়াচে এবং চমৎকার (D)