১
কী ঘটেছে সেদিন?
হেফাজতের চেহারা ২০১০ এর দিকে প্রথম দেখা গেলেও হিসাবে নেয়ার মত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মাত্র মাস দুয়েক আগে থেকে। কিন্তু এই দুই মাসেই এরা পত্রিকার শিরোনাম! শত শত ব্লগের শিরোনাম! এমন কি মূর্খ শ্রেনির ফেসবুকাররাও বিজ্ঞ মতামত দিয়ে চলেচে একের পর এক। যেটা বিনোদন হিসাবে ইতিহাসে নাম লেখাচ্ছে। যাই হোক, সর্বোপরি হেফাজত ইজ হেফাজত এন্ড দে আর মেকিং সাম নয়েজ।
হেফাজতে ইসলামির সর্বশেষ যে পরিনতি আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি তা হল, তারা(অন্তত তাদের নামে) সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি সাপেক্ষে তাদের পূর্বে ঘোষিত ৫ই মে’র মহা সমাবেশ করতে ঢাকায় এসেছে। আরো নির্দিষ্ট করে বললে ঢাকা অবরোধ করতে এসেছে। তাদের এই মহাসমাবেশ বা অবরোধের কিছু দাবি দাওয়া আছে যেটা তেরো দফা দাবী নামে পরিচিত এবং সুস্থ চিন্তা সম্পন্ন যেকোন আদমের শরীরেই সেটা এলার্জি হয়ে জায়গায় জায়গায় মাংস ফুলে উঠতে সাহায্য করবে। “সুস্থ চিন্ত”র সংজ্ঞা নিয়ে আপাতত মাথা ঘামাচ্ছি না, কারন নিবন্ধের উদ্দেশ্য সেটা নয়। আমরা ইতিমধ্যে যেহেতু সকলেই জানি যার জন্য এখানে সেই তালিকা দেয়ার প্রয়োজন দেখছি না। কেউ চাইলে পরবর্তীতে দেয়া যাবে।
তাদের অবরোধ সম্পূর্ন শান্তিপূর্ন হবে বলে হেফাজতের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি ছিল। যদিও শান্তিপূর্ন অবরোধ কীভাবে সম্ভব সেই প্রশ্ন কোন কোন দুষ্টু লোক আগেই করেছিল। কিন্তু আমরা যখন দেখলাম সরকার দেশের রাজধানীকে অবরোধ করে রাখার জন্য সরকারী অনুমতি দিল(!), তখন সেই সন্দেহ কিছুটা হলেও লাঘব হল। কারন সরকারতো আর না জেনে রাজধানী সমস্ত দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে দেয় নি!
তো, অবরোধ করতে আসার পরে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত সফলতার সাথে ভাঙতে সক্ষম হয়েছে। তাদের শান্তিপূর্ন তান্ডবে মতিঝিল এলাকা ঝিলমতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ব্যাপক ভাঙচুর, আগুন জ্বালানোর ঘটনা আমরা টিভিতে দেখেছি। পরিবর্তিতে পত্রিকায় দেখেছি। অজস্র দরিদ্র দোকানদারের বইয়ের দোকান থেকে শুরু করে চায়ের টং-এর দোকান ভস্মিভুত হয়েছে। তাদের চোখের পানি আমরা দেখেছি। এবং নিশ্চিত করেই বলা যায় সেগুলো অভিনয় নয়।
এই ঘটনা যখন ঘটছে মতিঝিলে তখন বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা। বিকেলের দিকে, আমার যতদুর মনে আসে, আগে টিভিতে বলেছিল বিকেল ৩ টায় আওয়ামি লিগের ধানমন্ডির কার্যালয় থেকে তাদের(আওয়ামি লিগের) একটি সংবাদ সম্মেলন আছে। অবশ্য আমি যখন টিভির সামনে যাই তখন বিকাল ৫টা পেরিয়ে কয়েক মিনিট এবং তখনও সম্মেলন চলছিল। আমি জানি না দেরি করেই শুরু হয়েছিল কী না। যাই হোক, সৌভাগ্যবশত আমি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন বক্তব্যটাই পেয়ে যাই। আওয়ামি লিগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেছেনঃ
রাজাকার, আল-বদরের দোসর, তথাকথিত হেফাজতে ইসলাম আজকে ধর্মের নামে সারা বাংলাদেশে যে তুলকালাম ঘটিয়ে চলছে তা দেশের মানুষ বরদাশ্ত করবে না। এবারতো ঢাকায় আসছে আগামীতে ঢাকায়ও আসতে পারবে না। প্রয়োজন হলে ঘর থেকে বের হতে দেবোনা। আমি আহ্বান করবো, আজকে সন্ধ্যার মধ্যেই আপনারা ঢাকা শহর ত্যাগ করুন। যদি না ত্যাগ করেন, সরকার তার ব্যবস্থা করবে।
যে রাজাকারদের বিচার এই “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা”র সরকার করছে তাদেরই কেন এত বড় সমাবেশ করতে দিলো এই প্রশ্ন করা অধিকার কিন্তু পাঠক আপনার আছে। পাঠকের কাছে অনুরোধ করব সৈয়দ আশরাফের এই কথাটা মাথায় রাখতে, পরবর্তীতে এই কথাটা কাজে আসবে আমাদের এই লেখায়।
হেফাজতের কর্মীরা সৈয়দ আশরাফের কথায় কর্ণপাত না করে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাদেরকে সেদিন রাতের মধ্যে ঢাকা ছাড়া করতে হবে। হুশিয়ারে কান না দেয়ায় এই অগ্নিশপথে বলিয়ান হয়ে , পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির যৌথ বাহিনীকে প্রেরন করা হয় মতিঝিলে যেটা অলরেডি ঝিলমতি হয়ে রয়েছে। তখন সময় রাত দুটো পার হয়েছে।
এখানে কয়েকটা তথ্য দেয়া জরূরী মনে করছি। পল্টনের ঐ এলাকায় মোটামুটি সন্ধার পর পরই বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। দুটো টিভি চ্যানেল, দিগন্ত আর ইসলামিক টিভির সম্প্রচার সরকারের পক্ষ থেকে কোন কারন ছাড়া বন্ধ করে দেয়া হয়।
প্রশ্ন উঠতেই পারে এতো গোপনীয়তার প্রয়োজন কী ছিল?
অভিযান চলে ভোর পর্যন্ত। খবরে প্রকাশ মাত্র আধা ঘন্টার ব্যাবধানে সম্পূর্ন ঝিলমতি হেফাজত মুক্ত করে সরকারের হেফাজতে নিয়ে আসা হয়। বাঙলাদেশের আইন শৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনী সাধারনত ঘুষ খেতে পারদর্শী বলে যারা মনে করেন সেই সমস্ত দূর্মুখের মুখের উপরে চটকানা মেরেছে এই অভিযান।
আমরা জানতে পারলাম সেখানে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে, একজন পুলিশ সদস্যসহ।
ঘটনার পরবর্তী দিন থেকে শুরু হয় এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রদান। লক্ষনীয় হল, এই মতামত প্রদানে দুটো ধারা রয়েছে। প্রথমটি সরকার দলীয়, আর দ্বিতীয়টি বিরোধী দলীয়। কিন্তু আমরা আমজামকাঁঠাল জনতা রয়ে গেলাম অন্ধকারে। আমরা মুখে হাত দিয়ে একবার সরকারের দিকে একবার বিরোধী দলের দিকে মাথা ঘুড়াতে ঘুড়াতে ব্যাডমিন্টন খেলা দেখতে থাকলাম। বুঝলাম, রাজনীতি বড়োই প্যাচালো।
২
কেন ঘটল?
হেফাজতের এই ঢাকা অবরোধ আর হেফাজতের উপরে সরকারের এই অভিযানের ঘটনা বুঝতে আমাদের একটু পেছন ফিরে তাকাতে হবে। মহাজগতে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটে না। সুতরাং ঘটনার পরম্পরায় না জানলে এবং জেনে না বুজলে আমদের কাছে চলমান সংঘাত বোধ বুদ্ধির বাইরে থেকে যাবে। বোঝার সুবিধার জন্য আমি এখানে বুলেট আকারে দিচ্ছিঃ
ক.
কাদের মোল্লার রায় ঘোষনার পরে সৃষ্টি হয় গনজাগরন মঞ্চের। মানে হল জনগন বুঝতে পারল ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের সাথে জামাতের একটা প্রেম ভালোবাসা হয়েছে। যেটা আওয়ামি লিগের ভোট বাক্সে টান দেবেই। অন্তত দোদুল্যমান তরুন প্রজন্ম যারা খুবই ভাইটাল ফ্যাক্টর ব্যালটের জন্য। সুতরাং, আওয়ামি লিগ জামাতের সাথে লদকালদকি করাটা সেইফ মনে করল না।
খ.
অনেকেই মনে করে গনজাগরন মঞ্চের ফলে শুধু আওয়ামি লিগেরই সাহায্য হয়েছে। ভুল ধারনা। গনজাগরন মঞ্চকে আওয়ামি লিগের সাথে সাথে বিম্পি জামাতও ব্যাবহার করেছে। কীভাবে? সেই বিখ্যাত আস্তিক নাস্তিক থিসিসের মাধ্যমে। গনজাগরন মঞ্চ সমর্থন এবং জামাত বিরোধীতা, এই পর্যায়ে আওয়ামি লিগের জন্য সাধারন মানুষের কাছে ইসলাম বিরোধিতা বলে পরিচিত হল। গনজাগন মঞ্চে সমর্থনের মাধ্যমে আওয়ামি লিগ ভোট বাক্স সেইফ করলেও এইবার কিন্তু জামাত বিরোধীতা, ইসলামবিরোধীতার ব্যানারে পুনরায় ভোট বাক্স দুলিয়ে দিল। ভোট কি আওয়ামি লিগ এমনিতেই ছেড়ে দেবে? প্রশ্নই আসে না। তাহলে তার এমন একটা ধর্ম ভিত্তিক সমান্তরাল ফোর্স, এমন একটা দল প্রয়োজন ছিল যেটা এই ইসলামবিরোধীতার অপবাদ থেকে তাকে রক্ষা করতে পারে। ঘটনার এই পর্যায়ে আসে হেফাজতে ইসলাম।
গ.
হেফাজতকে যেহেতু নিয়ে এসেছে সুতরাং তাদের কিছু দাবী দাওয়া মেনে নেয়া এই আওয়ামি লিগের কর্তব্যের মধ্যে পরে। এটা অনেকটা বড় মাস্তানের পক্ষ থেকে ছোট মাস্তানকে উপহার দেয়ার মতন। বড়জন উপহার দেবে ছোটজন খুশি হয়ে চুপ থাকবে। ঘটনার প্যাটার্ন লক্ষ করেন, ঠিক সেভাবেই এগোচ্ছিল। ব্লগারদের গ্রেফতার তার সবচাইতে বড় উপহার ছিল। আরো যেগুলো ছিল, তাহল, তাদের দাবি বিবেচনা করে দেখার প্রতিশ্রুতি। তাদেরকে সমাবেশ করতে দেয়ার অনুমতি ইত্যাদি।
ঘ.
হেফাজত ঐতিহ্যগতভাবে জামাত বিরোধী হলেও চরিত্রগত দিক থেকে বা বৈশিষ্টগত দিক থেকে জামাত তথা ইসলামপন্থি অন্যান্য যে কোন দলের সাথেই প্রয়োজনে একজোট হতে বাধ্য। পাঠক, আপনাকে দিয়েই বিবেচনা করুন। বাঙালাদেশে আওয়ামি লিগ, বিএনপি না হয় মানতে পারেন, কিন্তু হেফাজত বা জামাতের শাসন কি মানতে পারবেন? ঠিক এই যুক্তিতেই, আওয়ামি লিগের থেকে জামাত, হেফাজতের কাছে অনেক কাছের এলাই। আর ঠিক এই কৌশলটাই জামাত নিয়েছে এবং হেফাজতকে পেয়ে বসেছে। হেফাজতের কার্যক্রম চলতে থাকে জামায়াত বিএনপির পরিকল্পনা অনুযায়ী। শফি পরিনত হয় ৯৩ বছরের একটি অথর্ব পুতুল হিসাবে।
ঙ.
মতিঝিলের সমাবেশে শফি যখন আসছিল তখন শফি একটা ফোনকল পেয়ে ফেরত চলে যায় বলে আমরা জেনেছি। শফিকে যে পুতুল বানানো হয়েছিল এটা তার সবচাইতে বড়ো প্রমান। শফি যে হেফাজতের কর্মীদের মতিঝিলে থাকতে বলেছে সেটা কোন ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন কেউ? এই কথা যে শফির মুখ দিয়ে বলিয়ে নেয়া হয় নি তার কোন প্রমান আছে কারো কাছে? নাই।
তাহলে ব্যাপারটা কী দাড়াল? হেফাজতের নামে যে সমস্ত কার্যকলাপ মতিঝিলে করা হয়েছে তার পেছনের সমস্ত স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান এসেছে জামায়াত আর বিএনপির কাছ থেকে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করেছে জামায়াত, কারন বিএনপি ঘরে বসে কফি খাওয়া দল। এরা কোনভাবেই জামায়াতের মতন মাঠে নেমে কাজ করার যোগ্যতা রাখে না।
বিএনপি জামায়াত যেহেতু স্বনামে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না, হেফাজত তাদেরকে সেই জায়গাটা দিচ্ছিল যেখানে দাঁড়িয়ে সে কথা বলতে পারে। অবশ্য হেফাজত তথা জামাত যদি আজকে পর্যন্ত মতিঝিলে থাকতে পারত, পরিস্থিতি কতটা ঘোড়ালো আর ভয়ঙ্কর হত সেটা মনে হয় আমরা কিছুটা অন্তত আন্দাজ করতে পারি।
সুতরাং মতিঝিলে হেফাজতকে অবস্থান করতে দেয়া মানে নিজের কবর নিজেই খোদা। যেটা আওয়ামি লিগ করতে পারে না। এবং সেটা নিজের অস্তিত্ত্ব রক্ষার জন্যই। পাঠক, এখানেই আপনাদের সৈয়দ আশরাফের কথাটা মনে করার জন্য অনুরোধ করছি।
আমি আহ্বান করবো, আজকে সন্ধ্যার মধ্যেই আপনারা ঢাকা শহর ত্যাগ করুন। যদি না ত্যাগ করেন, সরকার তার ব্যবস্থা করবে।
এবং সরকার তার ব্যাবস্থা গ্রহন করেছে।
আওয়ামি লিগের দ্বারা মাঠে চলে আসা হেফাজতের নামে বিএনপি জামাতের প্ল্যান মতিঝিলে বাস্তবায়ন করা হয়েছে জামাতের সরাসরি হস্তক্ষেপে। আর রাতে যে হত্যাকান্ড হয়েছে সেটা আওয়ামি লিগ করেছে তার নিজের অস্তিত্ব বাঁচাতে। সাথে সাথে হেফাজতের উপরে গড়ে ওঠা আক্রোশ মেটাতে। কারন ছোট মাস্তান বড়ো মাস্তানের কথা না শুনলে একটু পিট্টি দেয়া আবশ্যক বটে!
৩
আমজামকাঁঠালজনতার কী হল?
এক কথায় বললে কিছুই হল না। উপরের আলোচনায় আমাদের কাছে এটা পরিষ্কার হওয়া উচিত যে, এখানে প্রধানত দুটো ফোর্স কাজ করছে একটা পুরষ্কার নেয়ার জন্য। আসল উদ্দেশ্য মসনদে বসা। আর এই মসনদে বসার জন্য বাঙলাদেশের সবচাইতে বড় দুটো দল কুকুরের মত কামড়াকামড়ি করছে। ফলাফল, আজকে দেশের এই বেহাল দশা। এমন না যে এই ঘটনা শুধু বর্তমান সরকারের সময়েই ঘটছে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। আমরা তাদের নিজস্ব ব্যাক্তিগত লোভ মেটাতে তাদের শিখিয়ে দেয়া বুলি মুখস্থ বলে গেছি। একসময় ব্যাস্ত থেকেছি “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” নামক কিংবদন্তিতে, আবার কখনও স্বাধীনতার আসল ঘোষক কে এই প্রশ্নে। কিন্তু আমাদের তাতে কী হয়েছে? যে খেতে পায় নি, সে আজও পায় না। অন্য দিকে হাতে গোনা কয়েকজন দেশের সমস্ত সম্পদের মালিকানা দখল করে নিচ্ছে।
আজকে আমাদের দেশে সবচাইতে বড় আলোচনার বিষয় কী হওয়া উচিত? খুব ছোট কয়েকটা ইস্যু আমি উল্লেখ করতে চাই।
# আজকে হলমার্ক কেলেঙ্কারির হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের পরেও আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে শুনতে পাই, এই কোম্পানিকে আবারও নাকি ঋন দেয়া প্রয়োজন।
# আজকে তাজরীন ফ্যাশনস-এ যে গনহত্যা হয়েছে সেই শ্রমিকদের পূনর্বাসন নিয়ে সরকারের কোন রূপ রেখা আমরা শুনতে পাই না। আমরা দেখতে পাই, তাজরীনের মালিক গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
# আজকে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে, সেই সুন্দরবন যেটা আমাদের মা প্রকৃতি আমাদের দিয়েছে প্রাকৃতিক চাদর হিসেবে। আমাদের সরকার সেই চাদরকে ছিড়ে ফেলার মহোৎসবে লিপ্ত হয়েছে, কাদের লাভের জন্য?
# রানা প্লাজায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৮০০রও বেশি জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা চিৎকার করছি কাদের জন্য? যারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কয়েকটা লাশের বন্দোবস্ত করেছে তাদের বক্তব্য আমরা মুখস্ত আউড়ে যাচ্ছি।
# স্বাধীন মত প্রকাশ করতে যেয়ে আমাদের ঘুনে খাওয়া রাজনীতির নগ্ন শিকার হয়েছে আমাদের সহযোদ্ধা চার জন্য ব্লগার। তাদের মুক্তি কবে মিলবে আমরা জানি না।
আমরা সাধারন মানুষ তাহলে কী করব? দুই দলের কামড়াকামড়ির বাইরে আমাদের জায়গা কোথায়?
আমাদের বুঝতে হবে ক্ষমতার উৎস কারা। আমাদের বুঝতে হব আজকে যারা ক্ষমতার দম্ভে জনগনের কথা ভুলেছে তাদের ক্ষমতার উৎস কারা। বুঝতে হবে আজকে জনগন একসাথে হয়ে হিসু করে দিলে ঐ ক্ষমতার মসনদে সাইক্লোন বয়ে যাবে। আমদের বুঝতে হবে আসল ক্ষমতার উৎস জনগন। মেহেনতি জনগন। খেটে খাওয়া জনগম। কলে কারখানায় খেটে খাওয়া জনগন। দেশের কৃষক। এই ব্লগটি পড়তে থাকা অধিকার সচেতন জনগন। যারা বুঝতে পারে, বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যাবস্থা আমাদের শেখায় “ভোট দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব”। কারন এটা না শেখালে মসনদে যাওয়া সম্ভব নয়।
আমাদের বুঝতে হবে জনগনই পারে এই ক্ষমতার কেন্দ্র পরিবর্তন করতে। জনগনই পারে বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন করতে।
শুধু আগে ঠিক করতে হবে আমরা কী চাই। সেই চাওয়া পূরন করতে আমরা বাঙলাদেশ থেকে বিপ্লব পর্যন্ত হেঁটে যেতে প্রস্তুত কী না।
শুধু আগে ঠিক করতে হবে আমরা কী চাই। সেই চাওয়া পুরন করতে আমরা রক্ত ঝড়াতে রাজি আছি কী না।
না পারলে উত্তর পুরুষে আমাদের সচেতন ব্যার্থতার লিপিবদ্ধ আমলনামা লিখতে এখনই বসে পড়ি আসুন।
রানা প্লাজায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৮০০রও বেশি জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা চিৎকার করছি কাদের জন্য? যারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কয়েকটা লাশের বন্দোবস্ত করেছে তাদের বক্তব্য আমরা মুখস্ত আউড়ে যাচ্ছি।
What are you trying to say here ? Are you implying that Savar tregedy was planned to gain some political adavantge a political party ?
দুঃখিত, আপনার পোস্টের বেশ কয়েকদিন পরে কমেন্ট করছি, আশা করি বিরক্ত হবেন না। আপনার পোস্টের ২টা দিক নিয়ে কথা বলতে চাই।
প্রথমত আপনি বলেছেন,
দুটো টিভি চ্যানেল, দিগন্ত আর ইসলামিক টিভির সম্প্রচার সরকারের পক্ষ থেকে কোন কারন ছাড়া বন্ধ করে দেয়া হয়।
এরপরে আবার কমেন্ট পড়ে দেখলাম এর সাথে আপনি ব্লগারদের বাক স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। এই ব্যাপারটা ভাল লাগল না। আপনি যদি দিগন্ত টিভি দেখে থাকেন তাহলে অবশ্যই জানবেন এখানে কি পরিমাণ মিথ্যাচার হয়। সুব্রত শুভ বা বিপ্লব ভাই যদি ইসলাম বিরোধী কিছু লিখেও থাকে তবে তা অযৌক্তিক মিথ্যাচার ছিল না। তাদেরকে গ্রেপ্তার অবশ্যই বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। পক্ষান্তরে দিগন্ত টিভি সারাদিন যা দেখায় তা অনেকটা আম গাছে লিচু ধরার মত।
দ্বিতীয়ত, আপনি আপনার লেখায় আমজনতার প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি নিয়ে খুব বড় করেই লিখেছেন। সবাই আমজনতার কথা লিখে, তবে কি জানেন, আমজনতা এতই নিষ্ঠাবান হলে দেশের এই অবস্থা হত না। আমার এই কথায় হয়তো আমাকে কেউ কেউ গালি দিতে পারে কিন্তু নিজের আশেপাশের অনেক মানুষই যখন হেফাজতের দাবিকে সমর্থন করে, সকল নাস্তিকদের বিচার চায় (যারা জানেও না নাস্তিকের আসল অর্থ কি) তখন আর আমজনতার প্রতি কোন শ্রদ্ধা থাকে না। আমজনতাকে যে যা বুঝায় সে তা-ই বুঝে!!
আপনার সুন্দর একটি পোস্টে কিছু অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্যের জন্য আবারও দুঃখিত। পোস্টটা পড়ে ভাল লেগেছে, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরেছেন।
@অজ্ঞ মানব,
আপনার প্রথম অভিযোগের প্রেক্ষিতেঃ
আপনার আপত্তির জায়গাটা হল, আমি কেন ব্লগারদের গ্রেফতার আর দিগন্ত এবং ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ করাকে একসাথে বিবেচনা করলাম। যদিও আমি কিছুটা বলেছি উপরে তারিকের সাথে কথা বলার সময়। পড়ার পরেও আপনার দ্বিমত থেকে গেছে সেই প্রেক্ষিতে আপনার কাছে আমার জিজ্ঞাসা।
আমরা আগে এই প্রশ্নের উত্তর ঠিক করি তারপরে আলোচনায় যাই। কারন এই ক্ষেত্রে একমত না হলে আলোচনায় যাওয়াটা আমি ফলপ্রসু হবে বলে মনে করি না।
আপনার দ্বিতীয় অভিযোগের প্রেক্ষিতেঃ
এই লাইন ধরেই এগোচ্ছি যেহেতু প্যারাটার এটাই মূলকথা। আপনি যদি এই কথা বুঝে থাকেন তাহলে ঐ প্যরায় অন্য যে কথাগুলো বললেন তার তাৎপর্য আমি বুঝতে পারছি না! আমজনতা বলতে যদি আপনি “যে যা বুঝায় সে তা-ই বুঝে!!” এটা বুঝে থাকেন তাহলে তাদের উপরে শ্রদ্ধা হারানোর কী কারন থাকতে পারে সেটা অনেক ভেবেও কুল কিনারা করতে পারছি না। অর্থনৈতিকভাবে অবহেলিত একটা জনগোষ্ঠির মধ্যে, স্বাভাবিকভাবেই, উন্নত চিন্তা চেতনা, জ্ঞ্যানের আলো পৌছাতে পারে না যেটা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা আমরা অবিরত পেয়ে যাচ্ছি। তাদেরকে ভুলভাল বোঝানোর সহজ যেটা আপনি বুঝেছেন।
আচ্ছা, আপনার এই “অনেক মানুষই যখন হেফাজতের দাবিকে সমর্থন করে, সকল নাস্তিকদের বিচার চায় (যারা জানেও না নাস্তিকের আসল অর্থ কি) তখন আর আমজনতার প্রতি কোন শ্রদ্ধা থাকে না।” এই কথার উপরে একটা তুলনা টানি, আলোচনায় সুবিধা হবে।
আপনি আপনার অবস্থান থেকে দেখতে পাচ্ছেন হেফাজতিরা ভুল, জামাতিরা ভুল, ইসলাম ভুল, আল্লা ভুল, বৃহত্তর অর্থে এই ভাববাদী যে ডিসকোর্স, এই ডিসকোর্সটাই ভুল। আপনি এখানে ভুল করাকে অন্যায় হিসেবে দেখছেন। ঠিক? তা না হলে আপনি এদের উপরে শ্রদ্ধা হারাতেন না।
আচ্ছা, এবার আমরা আপনি যাদের উপরে শ্রদ্ধা হারিয়েছেন তাদের অবস্থান থেকে তাদের চিন্তা চেতনা বিরোধী মতবাদ এবং সেই মতবাদের সমর্থকদের তারা কীভাবে দেখবে সেটা বোঝার চেষ্টা করি। আপনি তাদের মতবাদ ভুল বলে সেই ভুল কে অন্যায় হিসেবে বিবেচনা করছেন এবং এই অন্যায় হিসেবে বিবেচনা করাটা তো আর আপনি মনে মনে করছেন না। এটা আপনি বা আপনারা জানান দিয়েই অন্যায় বলছেন এবং স্বাভাবিকভাবেই এর বিরোধীতা করছেন। তাহলে ঠিক উলটোভাবে তাদের মুভ কী হবে? আপনি যেহেতু আপনার বিরোধীপক্ষকে অন্যায় বলে এর বিরোধীতা করছেন, আপনার বিরোধীপক্ষের লোক তাহলে কী করবে? স্বাভাবিকভাবেই তারাও আপনাদের ভুল কে অন্যায় বিবেচনা করে আপনাদের বিরোধীতা করবে। এবং এক পর্যায়ে এটা(আপনার এবং তাদের মতবাদ) আর ভুল না সঠিক এই বিবেচনার থাকবে না, এটা হার এবং জিতের মামলা হয়ে যাবে। এবং আমরা এটাই দেখতে পাচ্ছি।
ওকে, এখন তাহলে সামারি করে যদি বলি, আমাদের দেশে দুটো পক্ষ বর্তমানে দাঁড়িয়ে গ্যাছে(যদি জেনারালাইজ করে বলি)। একপক্ষ এই বিচার কার্য সমাধা করতে চাচ্ছে, আরেকপক্ষ এটাকে বন্ধ করতে চাচ্ছে। আলোচনার এই পর্যায়ে আমাদের এটা মনে রাখা উচিত, আগে যেমন বলেছি, পরিস্থিত এখন আর ভুল বা সঠিক, এটা ঠিক করার সময় বা প্রেক্ষাপটে নাই। এখন ঠিক করা হচ্ছে কে জিতবে, কে হারবে। আপনি তার পক্ষে আর তারা আপনার বিপক্ষে।
এখন আমরা যদি ভাবতে বসি এই পরিস্থিত সৃষ্টির কারন কী, তাহলে কী পাই?
সমস্যাটা দুটো দলের ক্ষমতাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের ফলাফলস্বরূপ এসেছে। একপক্ষ(এই ক্ষেত্রে আম্লিগ) ৭১এর মুক্তিযুদ্ধের গনহত্যার বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে এবং অনেক দেন দরবার শেষে(এই দেন দরবার কাদের সাথে করেছে সেটা মূল লেখায় উল্লেখ করেছি) জনগনের চাপে পড়ে বিচার শুরু করেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে এই জনতার চাপ ব্যাপারটা কী। জনতার চাপ মানে ভোটের চাপ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আম্লিগ সরকারের বিচার শুরু করাকে আমরা আম্লিগের ভালো মানসিকতা বলে মনে করছি এবং প্রচার করছি। যাই হউক, বিচার শুরু করার পরে বিরোধিপক্ষের মুভ ছিল ধর্মের দোহাই দিয়ে জনগনকে দুইভাগ করে ফেলা(আপনার “আমজনতাকে যে যা বুঝায় সে তা-ই বুঝে!!” থিওরী মনে করতে বলব)। তারা করতে সফল হল। দেশ আস্তিক নাস্তিক দুইভাগে ভাগ হয়ে গেল।
এই সময়ে আমরা যদি প্রশ্ন করি, যারা “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা”র আওয়াজ দিচ্ছে দমে দমে এবং যারা “নাস্তিকতা”র আওয়াজ দিয়ে গলার রগ ফাটাচ্ছে, এই দুই পক্ষ আসলে কারা? তারা কাদের প্রতিনিধিত্ত্ব করে? তাদেরকেই বা কারা প্রতিনিধিত্ত্ব করে? সারফেস লেভেল থেকে দেখলে এদেরকে দ্বিখন্ডিত মনে হলেও এরা কিন্তু প্রকৃতার্থে দুটো বড় দলের ঘুটি হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে। এই জনগনের দুই পক্ষকেই শেখানো হচ্ছে তোমরা যা ভাবছ সেটাই সঠিক। এর বাইরে কিছু নাই। এই যখন পরিস্থিতি তখন খুব সংক্ষেপে স্বাভাবিকভাবে যখন আমরা বলি, “নিজের আশেপাশের অনেক মানুষই যখন হেফাজতের দাবিকে সমর্থন করে, সকল নাস্তিকদের বিচার চায় (যারা জানেও না নাস্তিকের আসল অর্থ কি) তখন আর আমজনতার প্রতি কোন শ্রদ্ধা থাকে না।” তখন আমাদের চিন্তা কতটা এই দলগুলো দ্বারা প্রভাবিত তা বোঝা যায়। দলগুলো দ্বারা প্রভাবিত বলতে আমি বোঝাচ্ছি না, যে আপনি আম্লিগ সমর্থন করেন। আমি বোঝাচ্ছি আপনার সামনে এমন টপিক আনা হয়েছে যে আপনি ঐ টপিক সমর্থন করেন মানেই দলের এজেন্ডা সমর্থন করেন এবং একটু ঘুড়িয়ে তাদেরই সমর্থন করে। ব্যাপারটা চমৎকার না? আমি তাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আপনি নিজেই জানেন না! ঠিক একই পরিস্থিতি করা হয়েছে আপনার এই “নাস্তিকদের বিচার চাওয়া” জনগনের সাথে। তাদের সামনেও এমন একটা টপিক আনা হয়েছে যেটা তারা সমর্থন করতে বাধ্য(এই ক্ষেত্রে ধর্ম) এবং এই বাধ্যতাই এক পর্যায়ে দলের সমর্থন হয়ে দাঁড়ায়!
সুতরাং এই দুই দলকে(জনগন) আপাত দৃষ্টিতে বিরোধী পক্ষ মনে হলেও এরা দুই দল আসলে এক। শুধু বৃহৎ শক্তির আড়ালে ভাগ হয়ে গ্যাছে।
আমাদের ভেবে দেখতে হবে আমরা কী এই দলেদের কৌশলের হাতিয়ার হব নাকি নিজেদের স্বার্থ নিজেরাই বুঝতে শিখব।
ধন্যবাদ।
কবি সাইফুল ইসলামের মত এ লেখায় রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাইফুল ইসলামকে খুঁজে পেলাম। আরও এমন লেখাই প্রত্যাশা করি।
@গীতা দাস,
আমরাও গীতাদির নতুন লেখা প্রত্যাশা করি। 🙂
শুরুতেই ভুল একটু বেমানান লাগে। তবে শুরুটা যেমনই হোক, শেষটা ভালই লিখেছেন।
একটা বিষয় আমি দেখলাম, সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে আমজনতার সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য।
শিশুদল/লীগ, বৃদ্ধদল/লীগ ছাত্রদল/লীগ, যুবদল/লীগ,কৃষকদল/লীগ, শ্রমিকদল/লীগ, পেশাজীবীদল/লীগ, বেকার/লীগ, ……nদল/লীগ ছাড়াও শিবির ও আরও অগনিত রাজনৈতিক সংগঠন ও অঙ্গসংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই আজ মুশকিল। ঘরে ঘরে রাজনীতিবিদ পৃথিবীর আর কোনো দেশে আছে কিনা আমার জানা নেই।
@অরণ্য,
“হপে” ইচ্ছে করেই লেখা। “হবে”র ব্লগিয় ফর্ম হল “হপে”। 🙂
আপনার পরের অভিযোগ আংশিক সত্য। ঘরে ঘরে আছে রাজনৈতিকভাবে অসচেতন রাজনীতিবীদ। যারা প্রত্যেক ঘটনাতেই মন্তব্য রাখে। কিন্তু সমাধানের দিকে নজর দেয় না। এটা অর্থনৈতিক অবস্থানের উপরে নির্ভর করে। যেমন একটা উদাহরন দেইঃ দুই দিন আগে যে হরতাল হল, হবিগঞ্জের এক দিনমজুরকে সাংবাদিক জিজ্ঞেস করল, কাজ কামের কী অবস্থা এই হরতালে। দিনমজুরের উত্তর ছিল, আইজকা হরতাল? জানি না ভাই। পেপারপত্র পড়ি না, ক্যামনে জানুম!
রাজনৈতিক কথাবার্তা বলা মধ্যবিত্তের বিনোদনের অংশ। কিন্তু যাদের কাছে এটা হাতিয়ার হবার কথা তাদের কাছে এর খবরাখবর পৌছায় না। এটাই হল ট্রাজেডি।
এই দুই জামাতী টিভি চ্যানেল ৫ই মে সন্ধ্যায় না , ৬ই মে ভোর ৫/৬টার সময় বন্ধ করা হয় অপপ্রচার বন্ধের লক্ষে ।
“মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” আমিও খুব একটা বুঝি না । কিন্তু গত ৪২ বছর ধরে লক্ষ লক্ষ শহীদ ও ৰ্নিযাতিতদের পরিবার যে বিচারের আশায় বুক বেধে আছে , তাকে অবহেলা করে আপনার দেখানো অন্য বিষয়গুলো নিয়ে এখন অন্তত আমার চিন্তা করার ইচ্ছা নাই । ভালো থাকবেন । ধন্যবাদ ।
@তারিক,
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং আরও একটা কারনে আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা আসলেই প্রধান বিষয় বাদ দিয়ে এদিক ওদিক ঝুকে যাচ্ছি। আমি নিজেও কখন ঝুকে পড়েছিলাম বুঝিনি।
@নাশিদ,
কোনটা প্রধান বিষয় সেটা নির্ভর করে আপনি আসলে কোন শ্রেনির প্রতিনিধিত্ব করেন তার উপরে এবং এই ক্ষেত্রে আপনার রাজনৈতিক অবস্থানও অত্যন্ত জরূরী বিষয়।
একজন রিকশাওয়ালার কাছে বর্তমানে দেশের সরকারের করনীয় প্রধান বিষয় দ্রব্য মূল্য হ্রাস করা।
একজন শ্রমিকের কাছে বর্তমানে দেশের সরকারের করনীয় প্রধান বিষয় মজুরী বৃদ্ধি করা।
একজন গার্মেন্টস মালিকের কাছে বর্তমানে দেশের সরকারের করনীয় প্রধান বিষয় সংলাপে বসে দেশের পরিস্থিত নিয়ন্ত্রনে আনা।
আম্লিগের রাজনীতি কর্মীর কাছে বর্তমানে দলের করনীয় প্রধান বিষয় নির্বাচনে জেতার জন্য যা যা করা দরকার তা করা।
বিম্পির রাজনীতিকর্মীর কাছে বর্তমানে দলের করনীয় প্রধান বিষয় নির্বাচনে জেতার জন্য যা যা করা দরকার তা করা।
একজন জামাতের রাজনৈতিক কর্মীর কাছে এখন প্রধান করনীয় বিষয় যুদ্ধাপরাধের বিচার যে কোনভাবে বন্ধ করা। দলের অবস্থান শক্ত করা।
একজন পেশাদার ব্লগারের কাজ ব্লগিং করে জনপ্রিয়তা যেকোন ভাবে বাড়ানো।
আমি কি বোঝাতে পারলাম? প্রধান কাজ কোনটা সেটা নির্ভর আপনি কোন শ্রেনির মানুষ তার উপরে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার সবাই চায়। কিন্তু এটাকে প্রধান করে দেখানো সত্যের অপলাপ। ৪২ বছরেও যুদ্ধাপরাধের বিচার হয় নি, তাতে করে আপনাদের মাথায় এটা প্রধান বিষয় হয়ে দেখা দেয় নি। দেশের সমস্ত “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা”র ঝান্ডা বহনকারী বুদ্ধিজীবি, ব্যাবসায়ী, মধ্যবিত্ত সুবিধাবাদীরা এই প্রধান বিষয় ভুলে ছিল। এমন কি “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা”র সোল এজেন্ড আম্লিগও এই প্রধান বিষয় ভুলে ছিল। দেশের কোন কেশ তাতে ছেড়েও নি, গজায়ও নি। কিন্তু আজকে যুদ্ধাপরাধীর বিচার আপনাদের কাছে, আমাদের কাছে, সবার কাছেই প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেমন কয়েকদিন আগে ছিল পদ্মা সেতু। এটা না হলে দেশ তো ডুবেই যাচ্ছিল প্রায়! অথচ স্বাধীনের পর থেকেই দেশে পদ্মা নদী থাকলেও ব্রিজ ছিল না এবং তাতে এমন কোন সমস্যা হয় নি যেটা এখন বড় করে দেখানো হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধীর বিচার দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা, এটা বলার দায়িত্ব ক্ষমতাসীন আম্লিগের। কারন এটার জিগির তুলে আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেনিকে বেশ চাগিয়ে তোলা গ্যাছে। আমরা মধ্যবিত্তরা দেশপ্রেমের কথা বলতে বেশ আগ্রহবোধ করি। আমার এক বন্ধুর ভাষায় বলা যায়, খাবারের পরে ঢেকুর তোলার জন্য মধ্যবিত্তের কিছু টপিকসে দরকার হয়। দেশপ্রেম হল এই টপিক। মধ্যবিত্তকে এই যুদ্ধাপরাধীর বিচার খাওয়ানো হয়েছে ক্যান্সারের ঔষধ বলে এবং আমরা সেটা নিয়ে মাতামারি করছি।
আমাদের আরেকটা যেটা বোঝার ভুল সেটা হল, প্রধান বিষয় আসবে তখনই, যখন আপনার কাছে রিসোর্স কম থাকবে কিন্তু করতে হবে অনেক কাজ। উদাহরন দিলে, মরুভুমিতে ১০ কিলো হাটতে হবে। আপনার কাছে অনেক খাবার আছে, কিন্তু আপনি মাত্র এক কেজি জিনিস নিতে পারবেন। এই সময় আপনি বিবেচনা করবেন কী কী না নিলেই নয়। মানে প্রায়োরিটি ঠিক করবেন। স্বভাবতই আপনি এক কেজির পানির বোতলই নিয়ে চাইবেন।
কিন্ত যুদ্ধাপরাধীর বিচারই প্রধান সমস্যা বলে আমাদের আমজামকাঁঠালজনতাকে যেটা বোঝান হয়েছে সেটা কতটুকু নগ্ন মিথ্যাচার সেটা বুঝতে আপনাকে ব্যারিস্টার হতে হবে না। আমরা টাকা পয়সা দিয়ে সরকার পালি। আইন বিভাগ করেছি, বসে বসে পান খাওয়ার জন্য না। আইনগত যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য।
যুদ্ধাপরাধের বিচার আইনগত সমস্যার ব্যাপার। আইন মন্ত্রনালয় আছেই এই কারনে। আমাদের টাকায় পালিত সরকারের শুধু এই একটা মন্ত্রনালয়ই নেই, এইটুকু জানাশোনা আপনার আছে বলেই মনে করি। তারমানে হল আমার তোলা অন্য সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রনালয় রয়েছে। তাহলে শুধুমাত্র আইন বিভাগের সামান্য একটা কাজকে কেন আমাদের কাছে প্রধান বিষয় বলে শেখানো হল? অন্য মন্ত্রনালয়গুলো কী এমন কাজে ব্যাস্ত যে তাদেরকে যে কাজের জন্য তৈরী করা হয়েছে সে কাজ করতে পারছে না?
তার উপরে “যুদ্ধাপরাধের বিচার”কে প্রধান সমস্যা বলে আপনারা সরকারের যে সরকারী কথার প্রতিধ্বনি তুলছেন সেই সরকারই কি এই বিচারের জন্য নিবেদিত? তাহলে শাহবাগের গনজাগরন মঞ্চ কেন সৃষ্টি হল?
দুইজন কুকুর মারামারি করে আমরা সারাদিন বাহবা দেই, উপভোগ করি। দিন শেষে দেখা যায়, আমরা আমাদের করনীয় কাজই করতে পারি নি।
ধন্যবাদ।
@সাইফুল ইসলাম,
কোন এক জায়গায় পড়েছিলাম এবং আমার ভাল লেগেছিল। সেটা এরূপ-
“যুদ্ধ অপরাধীর বিচার চাওয়া হলে মানুষ বলছে, পদ্মা সেতুর দূর্নীতি, সাগর-রুনির হত্যার বিচার ইত্যাদি এর কোন খবর নাই। এখন তোমাকে যদি বলা হয় তুমি তোমার বাবা-মার হত্যাকারীর বিচার এবং শাস্তি চাও আর তুমি যদি বল, বাড়ির ছাদ ফুটো, পানি পড়ে, গ্যাস নাই, বিদ্যুৎ নাই ইত্যাদি সমস্যার কথা। আমি জানতে চাইবো কোনটা বেশি গুরুত্ত্বপূর্ন তোমার কাছে? দৈনন্দিন সমস্যা আমাদের থাকবেই, তাইবলে যুদ্ধপরাধীর বিচারের সাথে সেগুলোকে মিশিয়ে ফেলা যায়না।”
তাছাড়া, অন্ততঃ যুদ্ধাপরাধীর বিচার এবং সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিটা প্রধান হবার জন্য রাজনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত জরুরী হওয়া উচিত নয়, বরং দলমত নির্বিষেশে সার্বজনীন হওয়া উচিত। তবে আপনার এই লেখাটিতে আমার উপরোক্ত মন্তব্যটি করা উচিত হয়নি। আসলে তখনকার দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আর হেফাজতের কাণ্ডকারখানা দেখে একটু বেশি বিচলিত হয়ে গিয়েছিলাম, পরে নিজেকেই বুঝ দেবার জন্য তারেক ভাইয়ের মন্তব্যের প্রতিত্তরে লিখেছিলাম ঐ কথা, যা
আমি এব্যাপারে আপনার সাথে এক মত হতে পারছিনা, কারন আমি নিজে জানি যে যুদ্ধাপরাধের বিচার সবাই চায়না।
সমস্ত ব্যবসায়ী, সুবিধাবাদী মধ্যবিত্ত আবার কবে থেকে “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা”র ঝান্ডা বহনকারী হল? যারা সুবিধাবাদী মধ্যবিত্ত বা ব্যবসায়ী, তাদের কাছে প্রধান বিষয়ই হল কিভাবে আরও বেশি টাকা কামিয়ে গাড়ি/ফ্ল্যাট কেনা যায় অথবা আরো কিভাবে অধিক ব্যবসায় মুনাফা লাভ করা যায়? কোন দল ক্ষমতায় আসতে পারে, সেটা বুঝে আগেভাগেই লাইন-ঘাট করে রাখা যায়। তবে মধ্যবিত্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ এবং সংখ্যায় কম হলেও এই একটা অংশেরই কিছু মানুষ মুল্যবোধ শব্দটি ধরে রেখেছে বলেই আমার বিশ্বাস আর সেকারনে এখনো দেশে সততা, পরোপকার নামক শব্দগুলো অর্থ বহন করে। দেশপ্রেম শুধুমাত্র টপিক নয় মধ্যবিত্ত শ্রেনীটির ঐ অংশের কাছে।
দেখুন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার ৪২ বছরে হয়নি নানা কারনে, যদিও আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। এই ৪২ বছরের মধ্যে হয়ে গেলে আজ এই জিকির উঠতোনা। আর তাছাড়া, অন্ততঃ আমি শাহবাগ বা আম্লীগ এটার জিকির উঠিয়েছে দেখে এটাকে প্রধান বিষয় করিনি বা এক কথায় হুজুগে মাতিনি। আমার জন্ম যুদ্ধেরও অনেক পরে। আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, তখন স্বাধিনতার সঠিক ইতিহাস অল্প অল্প করে আমার বাবার কাছে জেনেছি। তখন ইন্টারনেট ছিলনা, কম্পিউটার শব্দের নাম শুনিনি। এখনো মনেপড়ে, আব্বু বলতেন, শেখ মুজিবের কথা, ৭ই মার্চের ভাষনের কথা। আমি বলতাম, কোথায় তিনি? তার কোন ছবিনেই কেন? কোথাও তার কোন কথাইতো লেখা নেই, কেন? তবে আব্বুর কথার প্রমান পেলাম আরও পরে। এই যদি হয় দেশের ইতিহাসের অবস্থা তাহলে জনগনের কাছ থেকে বিচার চাইবার জিকির উঠতে সময়তো কিছু লাগবে বইকি। আমি আজ জিকির উঠেছে দেখে বিচার চাইছিনা, আমি বিচার চেয়েছি আরও আগে থেকেই আর এই কারনেই আমি এইবার আম্লীগকে সমর্থন করেছিলাম যেন কোন যুদ্ধাপরাধী এদেশের মন্ত্রী না হতে পারে এবং রাজাকারের বিচার যেন হয়। এর চেয়ে বেশি বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের কাছে আমার আর বিশেষ কিছু চাওয়া নেই। আর আমি এটা বুঝেছি বিম্পি আর যাই হোক, যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবেনা। আমি আব্বুর মুখ থেকে শোনা ইতিহাসকে বিশ্বাস করতামনা হয়ত, কিন্তু করেছি কারন আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার মুখ থেকে আমি ৭১ এর বিভিন্ন ঘটনা শুনতাম। শুনেছি পাকবাহিনী, রাজাকারদের অত্যাচারের কথা। পরে পড়ার সুযোগও হয়েছে। এসব শুনে কবে থেকে যে ওদেরকে ঘৃনা করতে শুরু করেছিলাম আমি নিজেও জানিনা। একজন মুক্তিযোদ্ধার সবচেয়ে বড় ক্ষোভ কি জানেন? যখন সে দেখে তারই স্বাধীন করা দেশে একটা রাজাকার ধনসম্পদ লুট করে দিনের পর দিন আয়েশে দিন কাটাচ্ছে। এগুলো শিখিয়ে দেয়া নয় সাইফুল ভাই। আমাকে কেউ শিখিয়ে দেয়নি, এইগুলো আমার দেশের ৩০ লক্ষ শহীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
যাই হোক যখন প্রথম রাজাকারের ফাসির রায় হলনা, আমার বাবার কাছে আমি কি জবাব দেব? আমি আর কি করব তখন? আমি একা কি করতে পারি? আইনমন্ত্রনালয়ের কথা যে বললেন, কই আইনমন্ত্রনালয়তো তার কার্যক্রম দেখিয়ে দিয়েছিল কাদের মোল্লার রায়ের মাধ্যমে। যখন শাহবাগ হল, জানিনা সেটা কোন দলের বা আদৌ কোন দলের কিনা, কিন্তু আমি আমার মত আরও কতগুলো মানুষকে পেলাম একজায়গায়, দেশের মানুষকে জানালাম, আমার বাবাদের মত মানুষকে জানালাম যে, আমরা আছি তোমাদের জন্য দেশকে এই পাপ থেকে মুক্ত করতে। কোন রাজনৈতিক দলকে এই রাজাকার নিয়ে পলিটিক্স করতে দেবনা। আমার বাবারা অনেক অনেক খুশি হয়েছিল কারন নতুন প্রজন্ম তাদেরকে সম্মান করেছে, তাদেরকে ভুলে যায়নি দেখে। একারনেই যুদ্ধাপরাধের বিচার শুধু আইনগত সমস্যার ব্যাপার নয়। তাহলে বহু আগেই এর সমাধান হয়ে যেত।
আর আইনমন্ত্রনালয়ের কথাই যদি বলেন, তাহলে বলি “ ৫ই মে এর ঘটনা বা হেফাজতে ইসলাম ইত্যাদি সামাল দেবার জন্যেওতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় আছে, তাদেরকেও টাকা দিয়ে রাখা হয়েছে এসব দেখার জন্য। কিন্তু তারপরও আমাদের চোখ কান খোলা রাখতে হয়, বলতে হয়, জানতে হয় এবং জানাতে হয়।
যাইহোক,আমি আমার কথাগুলো বোঝানোর চেষ্টা করেছি একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেনীর স্বল্প জ্ঞানধারী হিসেবে। ধন্যবাদ।
@তারিক,
টিভি চ্যানেল বন্ধের সময়টা লেখায় আলাদা করে দেয়া হয় নি। উল্লেখ করার জন্য ধন্যবাদ।
কী ধরনের অপপ্রচার? আপনি কি বলতে চাচ্ছেন সেখানে কিছু ঘটে নি?
অপপ্রচার একটা সুবিধাবাদী টার্ম। আমাদের ব্লগারদের গ্রেফতার করা হয়েছিল কীসের অভিযোগে মনে আছে তো? আল্লা রাসুলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, কুৎসা রটানোর জন্য। ধরে নিচ্ছি আপনি ব্লগারদের পক্ষের লোক। সরকার ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে ব্লগারদের গ্রেফতার করলে সেটা হয় বাক স্বাধীনতার উপরে হস্তক্ষেপ এবং সেটার বিরুদ্ধে আপনি আমি সবাই। কিন্তু দিগন্ত আর ইসলামিক টিভির সম্প্রচার যখন অপপ্রচারের অভিযোগে বন্ধ করে দেয় তখন আমরা আনন্দে বগল বাজাই। কেন?
আপনি বলতে পারেন, এই অপপ্রচারে দাঙ্গা হবার সম্ভাবনা আছে। সেই সম্ভাবনা তো ব্লগারদের ইসলামের বিরুদ্ধে “অপপ্রচারের” সময়ও ছিল। এবং সত্যি কথা বললে, সেই দাঙ্গা তো হয়েছে। তাহলে ব্লগার ধরে সরকার খারাপ কী করেছে? অথচ আপনি কিন্তু ব্লগারদের আটক করা সমর্থন করেন না। দিগন্তের বেলায় সরকারী প্রেসনোটে ঈমান আনেন। এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কেন?
@সাইফুল ইসলাম,
ভাই ঐ চার জন ব্লগার আল্লা রাসুলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার কিংবা কুৎসা রটায়নি আমি তাদের লেখা পরেছি । যেসব ব্লগার ঐ ধরনের লেখা লিখেছে তারা ঐ বিশেষ ৰ্ধমগ্রন্থ ও হাদীসের ত্রুটিৰ্পূন অংশ (কিন্তু সঠিক প্রমানসহ) তাদের লেখার মাধ্যমে সকলের সামনে নিয়ে এসেছে । এটা কি কোন ধরনের অপপ্রচার ??? অপপ্রচার হল প্রমান ছাড়া ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা ।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে ঐ দুই জামাতী টিভি চ্যানেল বিভিন্ন সময় প্রমান ছাড়া মিথ্যা তথ্য(গুজব) দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইবুনালকে তাদের ৰ্কমকান্ডের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে । আপনি নিশ্চয়ই জানেন বাক স্বাধীনতার ব্যবহার মানে গুজব ছড়ানো নয় ।
@তারিক,
অপপ্রচার কথাটার মানে হল, একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠি(ধরে নিলাম “ক”)র কাছে প্রমানিত কোন ঘটনা বা তাদের দ্বারা বিশ্বাসকৃত কোন ডিসকোর্স বা কথা, যখন অন্য কোন গোষ্ঠি(ধরে নিচ্ছি “খ”)র দ্বারা পূর্বোক্ত গোষ্ঠির(ক) ইচ্ছানুযায়ী প্রচার না করা। যেমন আম্লিগ ভাবাপন্ন একটা পত্রিকা বিম্পি সম্পর্কে কোন কথা ছাপালে সেটাকে বিএনপি অপপ্রচার বলতে পারে। আবার বিম্পি ভাবাপন্ন একটা পত্রিকা আম্লিগ সম্পর্কে কোন কথা ছাপালে সেটাকে আম্লিগ অপপ্রচার বলতে পারে।
এ জন্যই বলছিলাম অপপ্রচার একটা সুবিধাবাদী টার্ম। অপপ্রচার-এর দোহাই দিয়ে ক্ষমতাবানরা এই ক্ষেত্রে সরকার, হারামকে জায়েজ আবার জায়েজকে হারাম করতে পারে। এবং এই ক্ষেত্রে সেটাই করা হয়েছে।
ব্লগারদের কথাবার্তা কি অপপ্রচার নাকি সত্য সেটা কোনভাবেই সার্বজনগ্রাহ্য কোন ঘটনা নয়। ধর্মে বিশ্বাসী যে কারো কাছে সেটা অপপ্রচার মনে হতে পারে। যেমন এখন দিগন্তর সংবাদ পরিবেশন আপনার কাছে অপপ্রচার মনে হচ্ছে। কোনটা অপপ্রচার আর কোনটা অপপ্রচার না সেটা জনগনকে ঠিক করতে দিন। শুধুমাত্র আপনার কাছে ব্লগারদের লেখা অপপ্রচার মনে হয়নি বলেই সেটা সত্য আর দিগন্তের সংবাদ আপনার মন মত হয় নি বলেই সেটা অপপ্রচার, এইরকম অগভীর আর সুবিধাবাদী অবস্থান থেকে সড়ে আসুন।
এবার আসুন দেখি, এই অপপ্রচার নিয়ে সরকারের রাজনীতি। সরকার ব্লগারদের আটক করার সময় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেখিয়েছিল যে, তারা নাস্তিক। আল্লা, নবী আর ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং কুৎসা রটাচ্ছে। আপনি যদি অতীত প্রেক্ষাপট না দেখে এই ঘটনা বুঝতে চান তাহলে আপনার কাছে মনে হবে দেশটা আফগানিস্তান হতে দেরি নাই! বসে বসে আক্ষেপ করবেন।
১. ব্লগারদের যে অভিযোগে আটক করা হল, যাদের দাবীতে আটক করা হল, তাদের সেই তের দফা দাবী ভেবে দেখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হল প্রথম প্রথম।
২. কিছুদিন পরে আমরা শুনতে পারলাম, হাসিনা বলছে এগুলো মেনে নেয়ার দরকার নাই, কারন এর বেশির ভাগ সংবিধানেই নাকি আছে।
৩. তারও পরে শুনলাম, এই সমস্ত দাবী মেনে নিলে নাকি দেশ মধ্যযুগে ফেরত যাবে!!!!
সর্বশেষ কী দেখলাম?
ব্যাপক হত্যাকান্ডের মাধ্যমে তাদেরকেই সরিয়ে দেয়া হল, যাদের কথায় কিছু দিন আগেই অপপ্রচার এর অভিযোগে ব্লগারদের গ্রেফতার করা হয়ছে। যাদের দাবী ভেবে দেখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। তারাই আজকে এমন শত্রু হয়ে গ্যালো, যে হত্যা করে খেদিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা রইল না। বাহ! যাদের কথায়, অপপ্রচার এর উপরে সরকার ঈমান আনল, তাদের উপরেই আবার অবিশ্বাস এনে কুফরি করল সরকার!
অপপ্রচার নিয়ে এত রাজনীতি করার পরেও আপনি সেই সরকারী প্রেসনোটেই ঈমান আনছেন। কোন সন্দেহ করছেন না। আমিই প্রকৃত মুমিন! আল-আমিন!
সরকার অপপ্রচার এর রাজনীতি দিয়ে দুই পক্ষকেই ঘায়েল করে চলেছে আর আমরা, যাদের সরকারের এই পচা রাজনীতি বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কথা, তারা সরকারে পেইড এজেন্ডদের মতন ঈমানি স্লোগান তুলে যাচ্ছি। হুজুরদের স্লোগান, আল্লাহু আকবার, আর আমাদের স্লোগান, অপপ্রচার।
এটার উত্তর আপনিই দিয়েছেন এক লাইন পরেঃ
নির্বাচন জয়ের প্রোপাগান্ডা যদি না হয় তাহলে এই মূলো ঝুলিয়েছে কেন? বিচারের রায় নিয়ে টালবাহানা করেছে কেন? পাবলিকরে গনজাগরন মঞ্চ বানাতে হল কেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুজুন, তাহলে বুঝে যাবেন “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” “যুদ্ধাপরাধীর বিচার” এগুলো কী জিনিস।
আমারঃ
কথার পরে আপনি বলেছেনঃ
আমি উপরে কথাটা বলেছিলাম এই কারনেই যে, আপনি বললেনঃ
আমার লেখার কোথাও না কোথাও তো আপনি কিছু একটা দেখেছেন যেটা দেখে আপনার মনে হয়েছে আমি
“গত ৪২ বছর ধরে লক্ষ লক্ষ শহীদ ও ৰ্নিযাতিতদের পরিবার যে বিচারের আশায় বুক বেধে আছে , তাকে অবহেলা করে” আমার দাবী নিয়ে এসেছি। এই প্রেক্ষাপটেই বলেছিলাম, কেন আমার কথায় মনে হল আমি বিচার বাঞ্চাল করতে চাই? কারন এই সরকার বিগত দিনগুলোতে কেউ পাদ দিলেও বলেছে “যুদ্ধাপরাধের বিচার” বাঞ্চালের প্রচেষ্টা। এই জন্য সতর্ক থাকতে হয়। এই আর কী।
ধন্যবাদ।
@সাইফুল ইসলাম,
ব্যাপক হত্যাকান্ড ? সত্যিই কি ব্যাপক হত্যাকান্ড ???
যদিও এক কিংবা অনেক কোন হত্যাকান্ডকেই আমি সাৰ্পোট করি না তারপরও আপনার মত চিন্তাশীল লেখক এই কথা বললে আমার মত অবুঝ মানুষ তাকেই চিরন্তন সত্য ভাবতে পারে , আবার কেউ কেউ ১৯৭১ এর ২৫শে ৰ্মাচের কালরাত্রির সাথে ২০১৩ এর ৫ই মে’র তুলনাও করতে পারে।
এডলফ হিটলার তার মেইন ক্যাম্ফ(১৯২৫) বইতে বলেছেনঃ
“জনতার বৃহৎ অংশ একটা ছোট্ট মিথ্যার চাইতে বড় মিথ্যার শিকার হবে বেশি সহজে”।
আপনার অনুবাদকৃত আলি সিনার লেখায় উপরের উক্তিটি পড়েছিলাম । আপনার লেখা ভালো লাগে … তাই মনযোগ দিয়েই পড়ি ।
ভালো থাকবেন । ধন্যবাদ ।
@তারিক,
আপনার জানা মতে কতজন মারা গিয়েছে?
আরো কতজন মারা গেলে আপনার কাছে সেটাকে ব্যাপক হত্যাকান্ড মনে হত?
@সাইফুল ইসলাম, আমি মৃতের সংখ্যার ব্যাপারে জানতে কিংবা জানাতে আগ্রহী না । আপনি সাধারন বুদ্ধিতেই বুঝতে পারেন ৫ই মে দিবাগত রাতের উচ্ছেদ অভিযানে মৃতের সংখ্যা ব্যাপক নয় । আমি শুধু বুঝাতে চেয়েছি ৫ই মে’র উচ্ছেদ অভিযানের ব্যাপারে আমাদের ব্যাপক হত্যাকান্ড কিংবা গনহত্যা টাইপের “তকমা” ব্যবহার করা উচিৎ না । কারন এই “তকমা” গুলোকে ইদানিং অপব্যবহার করা হচ্ছে এবং কেউ কেউ বাঙ্গালীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ছোট-খাট বিষয়ের সাথে মিলিয়ে ঐ ইতিহাসকেই অপমান করছে । এই আর কি … ধন্যবাদ ।
@তারিক,
সেটা আপনার সরকারী প্রেসনোটে ঈমান আনা দেখেই বোঝা যায়। আপনার কী মনে হয়, ওখানে কী হয়েছে? গনসঙ্গম?
আপনার সাধারন বুদ্ধি আর আমার সাধারন বুদ্ধি এক কাতারের না। আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিঃ
আপনি ছুপা আম্লিগাররা যেভাবে পিছলে যায়, সেভাবে পিছলে গেছেন। এটার উত্তর দিন, আমি আমার সাধারন বুদ্ধি আপনার কাতারে নিয়ে আসব।
কে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে খাটো করছে সেই অজুহাতে আরেকটা হত্যাকান্ডকে লাইসেন্স দেয়ার অথোরিটি আপনাকে কে দিয়েছে? আপনি মুক্তিযুদ্ধের কথায় আবেগের লোম খাড়া করে ইতিহাসের পাঠ শেখাচ্ছেন, কিন্তু সরকারী বাহিনীর একটা নির্মম হত্যাকান্ডকে বৈধতা দিচ্ছেন “অপব্যাবহার” এর ধুয়ো তুলে। কিন্তু আপনিই যে আম্লিগের অপব্যাবহারের(অপপ্রচারের মানে বোঝার পরে হত এই শব্দটা আপনার কাছে গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে) সবচাইতে উৎকৃষ্ট শব্দ “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা”র দ্বারা ব্যাবহৃত হচ্ছে সেই খেয়াল আছে? নিজেরা আক্রান্ত হলেই “গনহত্যা” আর টুপি মাথায় অসহায় হুজুরদের হত্যা করা হলেই “চুপি চুপি বল কেউ জেনে যাবে” গাওয়া, মূর্খতা, সুবিধাবাদিতা আর সুশীলতার উৎকৃষ্ট উদাহরন। এই আগাছাগুলো নিজ শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলুন। জনগনের কাতারে থেকে চিন্তা করতে শিখুন।
জ্বি, আমিও। এই আর কি … ধন্যবাদ ।
@সাইফুল ইসলাম,
আমার কাছে অপপ্রচার মানে ৰ্পূবে যা ছিল এখনো তাই আছে । আপনি নিশ্চয়ই জানেন অপপ্রচার আর অপব্যাবহার শব্দের অৰ্থগত ৰ্পাথক্য।
আমি আগেই বলেছি এক কিংবা অনেক কোন হত্যাকান্ডকেই আমি সাৰ্পোট করি না । তবুও বলি ৫ই মে’র পুরো উচ্ছেদ অভিযানটি ছিলো আসলে একটি ‘সাইকোলজিক্যাল গেম’। হেফাজত কর্মীদের আতঙ্কিত করে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা। আর সেই গেম এ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মারাত্ত্বক ভাবে সফল হয়েছে । কারন অভিযানের সময় শাপলা চত্ত্বরে সর্বসাকুল্যে হাজার দশেক হেফাজত কর্মী ছিলেন যাদের অধিকাংশই শিশু , তারা খুবই ভীত-স্বন্ত্রস্ত ছিল। এদের নেতারা অৰ্থাৎ সফি বাহিনী’র সব নিষ্পাপ নেতারা আগে তল্পি-তল্পা গুটিয়ে ভেগেছে ।
শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতের মূল মঞ্চের কাছে ভ্যানের ওপর কাফনে মোড়ানো চারটি লাশ পাওয়া যায়। ধারনা করা হচ্ছে , ওই লাশ চারটি রোববার দুপুরে সংঘর্ষের সময় নিহতদের । ৫ই মে দিবাগত রাতের উচ্ছেদ অভিযানের সময় হেফাজত কর্মীদের হুরা-হুরি আর আইনশৃংক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর ডান্ডার আঘাতে কিছু হেফাজত কর্মী আহত হয় ,যাদের বেশীরভাগই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠে । এই আহত হেফাজত কর্মীদেরই বিভিন্ন জায়গায় মৃত হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে ।
এখন আপনি যদি এই আহত হেফাজত কর্মীদের কথা মাথায় নিয়ে ঝিলমতিতে “ব্যাপক হত্যাকান্ড” সংঘটিত হয়েছে বলেন তাহলে আর কি বলার থাকে ?
আমি আমার এই তথ্যের অনেক রেফারেন্স ও লিংক দিতে পারি , কিন্তু আপনি কি সেগুলো বিশ্বাস করবেন ??? আপনিতো আবার দিগন্ত এবং ইসলামী টিভির খবর ছাড়া আর কোন টিভি চ্যানেলের খবর বিশ্বাস করেন না ।
আর অল্প একটু বলি, দিগন্ত এবং ইসলামী টিভি সরকার কেন ৰ্নিদিষ্ঠভাবে ঐদিন রাতের বেলায় বন্ধ করলো তা আমারো বোধগম্য নয়। প্রথমত: বন্ধ করার কোনও দরকারই ছিলোনা। দ্বিতীয়ত: অপপ্রচার এবং দায়িত্ত্বহীনতার যে অভিযোগে টেলিভিশন দু’টি বন্ধ করা হলো, তা তো তারা অনেক আগে থেকেই করে আসছিলো। এই অভিযানের সময় হঠাৎ বন্ধ করার কোন্ও কারন দেখি না (যাহাকে সরকারের দূরৰ্দশীতার অভাব বলা যায় )। তবে, এই যুক্তি দেখিয়ে যারা হেফাজত কর্মীদের ব্যাপক হত্যাকান্ড কিংবা গনহত্যা টাইপের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে উচ্ছেদের কথা বলছেন-তারা আসলে গনমাধ্যম সম্পর্কে ধারনা রাখেননা। এতো বড় একটি ঘটনা ঘটলে কোনও গণমাধ্যম-ই চেপে যাবেনা। কেউ বাড়িয়ে বলবে, কেউ কমিয়ে বলবে, কেউ সঠিক বলবে। কিন্তু সবাই বলবে। এ হচ্ছে বাস্তবতা।
ভাই আমি জনতার কাতারেই আছি কিন্তু আম্লিগ কিংবা বিম্পির কাতারে নাই ।
ধন্যবাদ। :guru:
একটা লিংক দিলাম :
http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2013/05/130506_pg_motijheel_operation.shtml
@তারিক,
বিশ্বাস করতে পারলে সুখি হতাম। কিন্তু আপনি মৃতের সংখ্যা নিয়ে যে নির্জলা নির্লজ্জতা করলেন সেটা দেখে বিশ্বাস করতে পারলাম না বলে দুঃখ প্রকাশ করছি। যেখানে সরকারী প্রেসনোটে বলছে ১১ জন মৃতের খবর সেখানে আপনি বলছেন চার জনের কথা। কে জানি লিখেছিল “রাজা যত বলে পারিষদ বলে শতগুন”!
তারপরেও আমি যদি শুধু চার জনের কথাই ধরি, এই চার জনের মৃত্যুর হিসাব কে দেবে?
আমি দিগন্ত টিভি বা ইসলামিক টিভি কেন, টিভিতে প্রচারিত কোন সংবাদই “এমনি এমনি খাই” না যেমনটা আপনি খাচ্ছেন বলে দেখা যাচ্ছে। আর কি আমি দিগন্ত বা ইসলামিক টিভির কোন সংবাদের কথা উল্লেখ করেছি এখানে? আমি এমন কি সংখ্যার কথাও বলি নাই। অন্তত বলার প্রয়োজন মনে করি নাই, কারন সংখ্যাটা ১১ থেকে ২৫ এর মধ্যে এটা সম্পর্কে সবাই বেশ অবগত। দেখা যাচ্ছে আপনি সে সম্পর্কে ঈমান আনতে নারাজ। কিন্তু সরকারী কথাবার্তায় আল-আমিন। যদিও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সেখানেও আপনি আপনার স্কেপটিক মাইন্ডের পরিচয় দিয়েছেন। সরকার বলে ১১, আপনি বলেন ৪!!
আমিও আরো অল্প একটু বলি, আপনার এই কথাই প্রমান করে কতটুকু সংকীর্ন মনমানসিকতা নিয়ে আপনি এই ঘটনার বিচার করতে বসেছেন। rab পুলিশ আর বিজিবির যৌথ অভিযানের সময় দুটো টিভি সম্পূর্ন বিনা কারনে বন্ধ করে দিল আর এটাকে আপনি দেখছেন “সরকারের দূরৰ্দশীতার অভাব“। বাহ! ভালো তো। ভালো না?
আমিও আপনাকে একটা লিঙ্ক দেইঃ
মারনাস্ত্র কি ব্যাবহার হয়েছিল নাকি হয় নি, এই লিঙ্ক থেকে কিছুটা হলেও ধারনা নিতে পারবেন। আরো দেখতে পারবেন সরকারের ইচ্ছা কী ছিল। পরিষ্কারভাবেই এই লেখাতে আছে প্রানহানির সম্ভাবনা থাকলেও অভিযান চালাতে হবে। কতটুকু নিরুপায় সরকার হয়েছিল সেটা এই কথা থেকেই বোঝা যায়। এই লেখা পড়তে হলে আপনাকে সরকারী ঈশ্বরে অবিশ্বাস আনতে হবে। যদিও বোঝাই যায় আপনার মত মুমিন বান্দাদের জন্য সেটা খুবই কষ্টকর! 🙁
লিঙ্ক এখানে
@সাইফুল ইসলাম,
আমি স্পেসিফিকলি ৫ই মে দিবাগত রাতে উচ্ছেদ অভিযানের পর শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতের মূল মঞ্চের কাছে ভ্যানের ওপর কাফনে মোড়ানো চারটি লাশ পাওয়া যায় তা বুঝাতে চেয়েছি । আর সরকারী প্রেসনোটে যা বলছে তা হল ৫ই মে সারাদিন ও ৬ই মে ভোরে হেফাজতের তান্ডবের(নাকি ইসলামের ৰ্ববরতা) কারনে টোটাল ১১ জন মৃত্যুবরন করেছে ,যার মধ্যে ৩জন পথচারী ও ১ জন পুলিশ সদস্য ছিল।
এটাই আসল প্রশ্ন । সরকার এই মৃত্যুর দায়ভার এড়াতে পারে না । আবার অন্যদিকে হাটাজারীর ৰ্মূখের দল ও কুচক্রান্তকারী বিরোধী দল যারা এসব ৰ্ধমান্ধ লোকগুলোকে ভুল বুঝিয়ে নিজের দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়েছিল তাদেরও ঐসব মৃত্যুর দায়ভার নিতে হবে ।
@তারিক,
দুঃখিত, বাকি অংশের জবাব দেয়া হয় নি। আপনি বলেছেনঃ
আমার কোন কথায় মনে হল আমি এই বিচার বাদ দিয়ে আমার কথাগুলো বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি?
হেফাজতের ঘটনার বিশ্লেষন আপনার কাছে যুদ্ধাপরাধের বিচার “বাঞ্চাল” এর প্রচেষ্টা কেন মনে হল?
@সাইফুল ইসলাম,
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুধুই কি আম্লিগের ৰ্নিবাচন জয়ের প্রোপাগান্ডা ?
অন্য কোন মত/দলের মানুষ ঐ রাজাকারদের বিচার চায় না ?
আম্লিগ আগেও “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” নামক মুলা ঝুলাইছে , কিন্তু এবার বাংলার মানুষ সত্যিই বিচার চায় ।
এই ব্যাপারে আমি কোন কথা বলি নাই । এই ব্যাপারে আপনার ও আমার বিশ্লেষন একই । ধন্যবাদ ।
এই লেখাটি পড়ে মনে হল, হেফাজতের উত্থানের পেছনে আসলে আওয়ামীলীগের হাত আছে বলে লেখক বলতে চেয়েছেন। কিন্তু তাহলে এটাকে জামাত-বিএনপি তাদের কাজে লাগিয়েছে বলেই আমার মনে হয়েছে পুরো পরিস্থিতি দেখে। তাহলে আম্লীগ কেন একটা শক্তির উত্থান করাবে যেটাকে জামাত-বিম্পি তাদের কাজে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে এবং যেটা তাদের জন্য হুমকি স্বরূপ? পরিস্থিতি ঐদিন যতখানি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছিল, তা কিভাবে ইচ্ছাকৃত হতে পারে? আর তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে জামাত-বিম্পি আম্লীগের এই প্ল্যানের কিছুই বুঝেনি? অবশ্য আমি আম জনতা, আমার বিচার বুদ্ধিও তার বেশিনা। আমার আপনাদের মত গোপন তথ্য পাবার ক্ষমতাও নেই। যা বুঝেছি, সাধারন বিচার বুদ্ধিতে বুঝেছি। আর খুনের ব্যাপারে ঠিক কতমানুষকে মারা হয়েছে বলে মনে করেন?
@নাশিদ,
হ্যা, হেফাজতের উত্থানের পেছনে আম্লিগের হাত ছিল, এই কথা আমি পরিষ্কার ভাবেই উল্লেখ করেছি লেখায়। আপনি ঠিকই বুঝতে পেরেছেন।
হ্যা। এটাও পরিষ্কারভাবেই বলেছি লেখায়।
আপনি সম্ভবত আমার লেখাটা সমস্তটা, মূলত আসল জায়গাটা ঠিকভাবে পড়েন নি। তাহলে মনে হয় এই প্রশ্ন আসত না আপনার মনে। আপনি আরেকবার লেখার দ্বিতীয় অংশটুকু পড়ুন। সব কথার উত্তর পেয়ে যাবেন আশা করি। তারপরেও না বুঝলে আবার আলোচনা করা যাবে। কোন সমস্যা নাই।
এদের সকলেরই মূল উদ্দেশ্য চলমান একটি বিশেষ বিচার প্রক্রিয়াকে বানচাল করা । একটি বিশেষ মতবাদ যতদিন পৃথিবীতে টিকে থাকবে পৃথিবীর মানুষকে এরা শান্তিতে থাকতে দেবে না । এদের দোসর হচ্ছে কতগুলো ‘মডারেট…` (আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আবিষ্কৃত) । এই মডারেটরা মানুষকে ইনিয়ে-বিনিয়ে বিশেষ মতবাদের সপক্ষে সত্য-মিথ্যা সাফাই গাইবেন, যেমন এদের ১৩ দফার সমর্থনে এই মডারেটগুলো অনেক বিবৃতি দিচ্ছে । আমি সাবধান করে দিয়ে স্মরণ করাতে চাই ইরানী নারীদের অভিজ্ঞতার কথা, এই মতবাদ রাষ্ট্রীয় মতবাদে পরিণত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁরা বিপুল জনপ্রিয়তা দেখিয়েছেন, আজ তাঁরা স্বীকার করেন তাঁরা জানতেন না এর ভয়ঙ্কর দিকগুলোর কথা ।
@khurshid,
সহমত । (Y)
প্রথমে ১৩ দফা এরপর দফায় দফায় দফা নাযিল হবে ।
@khurshid,
আবজাব কথাবার্তা ছাড়া আর কী বলতে বাধা দিয়েছে মুক্তমনা? আপনি কী বলতে পারেন নি?
আপনার বলা এই “সকলেরই” কারা? আমার জন্য একটু বিস্তারিত বললে ভালো হয়।
আমার দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দু বেলা খেতে পায় না। আপনার এই বিশেষ মতবাদ যদি পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নেয়া হয় তাহলে কি আমার দেশের মানুষ পেট ভরে খেতে পারবে?
আমার দেশ দূর্নীতিতে বিশ্বের প্রথম সারিতে থাকে সবসময়। আপনার এই বিশেষ মতবাদ যদি পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নেয়া হয় তাহলে কি আমার দেশের দূর্নীতি বন্ধ হবে?
আমার দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ অন্য দেশের ব্যাবসায়ীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে নিয়মিত। আপনার এই বিশেষ মতবাদ যদি পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নেয়া হয় তাহলে কি আমার দেশের সম্পদ আমার দেশেই থাকবে?
আমার দেশের বিল্ডিং ধ্বসে হাজার হাজার শ্রমিক হত্যা করা হলে এক মন্ত্রী বলে বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা বিল্ডিং-এর স্তম্ভ ধরে নাড়াচাড়া করার ফলে বিল্ডিং ধ্বসে পড়েছে এবং আরেক মন্ত্রী বলে, এটা তেমন কোন গুরুতর ব্যাপার না। আপনার এই বিশেষ মতবাদ যদি পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নেয়া হয় তাহলে কি আমার দেশের এই বিল্ডিং ধ্বসে পড়া বন্ধ হবে? মন্ত্রীরা লাউ কদু বেঁচা বন্ধ করে সঠিক পথে আসবে?
আমার দেশে এমন আরো অনেক সমস্যা আছে। আমার দেশের মানুষের শান্তি নাই। আপনার এই বিশেষ মতবাদ যদি পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নেয়া হয় তাহলে কি এই সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে? মানুষের মনে শান্তি আসবে?
উত্তর যদি হ্যা হয় তাহলে ঠিক কী উপায়ে আপনি এটা অর্জন করবেন সে ব্যাপারে আলোকপাত করুন। আপনার কথা মনযোগ দিয়ে শোনার অপেক্ষায় রইলাম।
মুক্তমনাতেও এখন সবকিছু বলা সম্ভব নয় । আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয় যাঁরা মিথ্যা চ্যালেঞ্জ দিয়ে জোরপূর্বক ইরিটেট করার চেষ্টায় রত ।
ধন্যবাদ , অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে । এত সুন্দরভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ইতিপূর্বে দেখিনি । ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্রের যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে । ভারতের UPA এবং NDA জোটের মাঝে সকল খেটে খাওয়া মানুষ ঘুর পাক খাচ্ছে । এখানে উভয় জোট এবং আরও আঞ্চলিক দল (যারা বাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাসী ) বৃহৎ পুঁজি মালিকদের পক্ষেই দেশের সমস্ত পলিসি গ্রহণ করে ।
@সামসুদ্দিন,
ধন্যবাদ পাঠের জন্য।
:)) হা হা হা হা হা … হ্যা, এইটাই হলো বটমলাইন। সব কথার শেষ কথা নাগরিক মানুষ যদ্দিন না তার নাগরিক অধিকার চর্চা করে, আই মিন রিয়েলি, নাগরিক অধিকার চর্চা করা শুরু না করে তদ্দিন এই সব ক্ষমতা ক্ষমতা খেলা চলতেই থাকবে।
@কাজী রহমান,
“নাগরিক” কথাটা সমস্ত শ্রেনীর প্রতিনিধিত্ব করে না। ইনুস সাব নাগরিক, মোল্লা ইনুসও নাগরিক। কিন্তু সামাজিক ব্যাবসার ইনুস আর মোল্লা ইনুস দুই ভিন্ন নাগরিকের কথা ইঙ্গিত করে। এদের দাবী কখনোই হবে না। ভিন্ন হতে বাধ্য। সুতরাং নাগরিক চর্চাটা ঠিক সঠিক পথ বলে মনে করি না। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
আমি যা বুঝি:
সুনাগরিক=আম কাঠাল জনগণ=জনগণ= নাগরিক=দেশের প্রকৃত মালিক, সংখ্যাগুরু এবং সকল ক্ষমতার উৎস।
এই মানুষেরাই তাদের নাগরিক অধিকার চর্চা করে কু-নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ করবে। এই সংখ্যাগুরু জনগনের সবাই যে সব বোঝে তা তো নয়, তাই বোঝাবার নাগরিক দ্বায়িত্ব যাদের; তাদেরকে উপযুক্ত আচরণ করতে হবে।
@কাজী রহমান,
ঠিক।
আপনার বিগত দু’টি লেখার চেয়ে এই লেখার ধরন, গুনগত মান, উৎকর্ষতা, ঘটনা বিশ্লেষণ ও ভাষাগত বিচারে যথেষ্ট মান সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি এই ধারা অব্যাহত রাখবেন আগামী দিনগুলোতে। (Y)
সরকার যদি হেফাজতিদের সমাবেশ করার অনুমতি না দিত তাহলে আমার মনে হয় দেশের অনেক নগ্ন ধার্মিক আমজনতার বোধে আসত না হেফাজত কি অমূল্য রতন! কি মহান তাদের আধ্যাত্মিক চেতনা! তাদের ভয়ঙ্কর স্বরূপ দেখার সৌভাগ্য বঞ্চিত হত ধর্ম ভীরু দেশের লাখো আমজনতা।
গভীর রাতে হেফাজতিদের ঊর্ধশ্বাসে পালাতে দেখে অবিশ্বাস মনে ফিরে পেলাম অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতি পূর্ণআস্থা। কারন লোকে বলে- ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্য করেন 🙂
আর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আমরা কি এভাবে কাঁদতে দেখতাম ইসলামের হেফাজত কর্তা বাবু নগরীকে।
@রাজেশ তালুকদার,
আমাদের ইচ্ছাতো পূরন হল, হেফাজতিরা লৌকিক ঈশ্বের ঠাঁ ঠাঁ গুলির সামনে পায়জামা তুলে মাদ্রাসায় ফেরত গেল। আমাদের ফায়দা কী হল? আমাদের লাভের জায়গাটা কোথায়? আমরা আবার আগের জায়গায় ফেরত আসলাম এটাই কি আমাদের নিট লাভ?
বাবুনগরীর কান্নায় আমি আনন্দ পাই না। আমি এটাকে ঘটনা বোঝার আলামত হিসাবে দেখি। বিনোদনের জন্য অমি পিয়ালরা খাড়া অবস্থায় আছে। বাবুনগরীরা বিনোদন নয়, এটেনশন দাবী করে।