কী ঘটেছে সেদিন?

হেফাজতের চেহারা ২০১০ এর দিকে প্রথম দেখা গেলেও হিসাবে নেয়ার মত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মাত্র মাস দুয়েক আগে থেকে। কিন্তু এই দুই মাসেই এরা পত্রিকার শিরোনাম! শত শত ব্লগের শিরোনাম! এমন কি মূর্খ শ্রেনির ফেসবুকাররাও বিজ্ঞ মতামত দিয়ে চলেচে একের পর এক। যেটা বিনোদন হিসাবে ইতিহাসে নাম লেখাচ্ছে। যাই হোক, সর্বোপরি হেফাজত ইজ হেফাজত এন্ড দে আর মেকিং সাম নয়েজ।

হেফাজতে ইসলামির সর্বশেষ যে পরিনতি আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি তা হল, তারা(অন্তত তাদের নামে) সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি সাপেক্ষে তাদের পূর্বে ঘোষিত ৫ই মে’র মহা সমাবেশ করতে ঢাকায় এসেছে। আরো নির্দিষ্ট করে বললে ঢাকা অবরোধ করতে এসেছে। তাদের এই মহাসমাবেশ বা অবরোধের কিছু দাবি দাওয়া আছে যেটা তেরো দফা দাবী নামে পরিচিত এবং সুস্থ চিন্তা সম্পন্ন যেকোন আদমের শরীরেই সেটা এলার্জি হয়ে জায়গায় জায়গায় মাংস ফুলে উঠতে সাহায্য করবে। “সুস্থ চিন্ত”র সংজ্ঞা নিয়ে আপাতত মাথা ঘামাচ্ছি না, কারন নিবন্ধের উদ্দেশ্য সেটা নয়। আমরা ইতিমধ্যে যেহেতু সকলেই জানি যার জন্য এখানে সেই তালিকা দেয়ার প্রয়োজন দেখছি না। কেউ চাইলে পরবর্তীতে দেয়া যাবে।

তাদের অবরোধ সম্পূর্ন শান্তিপূর্ন হবে বলে হেফাজতের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি ছিল। যদিও শান্তিপূর্ন অবরোধ কীভাবে সম্ভব সেই প্রশ্ন কোন কোন দুষ্টু লোক আগেই করেছিল। কিন্তু আমরা যখন দেখলাম সরকার দেশের রাজধানীকে অবরোধ করে রাখার জন্য সরকারী অনুমতি দিল(!), তখন সেই সন্দেহ কিছুটা হলেও লাঘব হল। কারন সরকারতো আর না জেনে রাজধানী সমস্ত দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে দেয় নি!

তো, অবরোধ করতে আসার পরে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত সফলতার সাথে ভাঙতে সক্ষম হয়েছে। তাদের শান্তিপূর্ন তান্ডবে মতিঝিল এলাকা ঝিলমতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ব্যাপক ভাঙচুর, আগুন জ্বালানোর ঘটনা আমরা টিভিতে দেখেছি। পরিবর্তিতে পত্রিকায় দেখেছি। অজস্র দরিদ্র দোকানদারের বইয়ের দোকান থেকে শুরু করে চায়ের টং-এর দোকান ভস্মিভুত হয়েছে। তাদের চোখের পানি আমরা দেখেছি। এবং নিশ্চিত করেই বলা যায় সেগুলো অভিনয় নয়।

এই ঘটনা যখন ঘটছে মতিঝিলে তখন বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা। বিকেলের দিকে, আমার যতদুর মনে আসে, আগে টিভিতে বলেছিল বিকেল ৩ টায় আওয়ামি লিগের ধানমন্ডির কার্যালয় থেকে তাদের(আওয়ামি লিগের) একটি সংবাদ সম্মেলন আছে। অবশ্য আমি যখন টিভির সামনে যাই তখন বিকাল ৫টা পেরিয়ে কয়েক মিনিট এবং তখনও সম্মেলন চলছিল। আমি জানি না দেরি করেই শুরু হয়েছিল কী না। যাই হোক, সৌভাগ্যবশত আমি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন বক্তব্যটাই পেয়ে যাই। আওয়ামি লিগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেছেনঃ

রাজাকার, আল-বদরের দোসর, তথাকথিত হেফাজতে ইসলাম আজকে ধর্মের নামে সারা বাংলাদেশে যে তুলকালাম ঘটিয়ে চলছে তা দেশের মানুষ বরদাশ্‌ত করবে না। এবারতো ঢাকায় আসছে আগামীতে ঢাকায়ও আসতে পারবে না। প্রয়োজন হলে ঘর থেকে বের হতে দেবোনা। আমি আহ্বান করবো, আজকে সন্ধ্যার মধ্যেই আপনারা ঢাকা শহর ত্যাগ করুন। যদি না ত্যাগ করেন, সরকার তার ব্যবস্থা করবে।

যে রাজাকারদের বিচার এই “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা”র সরকার করছে তাদেরই কেন এত বড় সমাবেশ করতে দিলো এই প্রশ্ন করা অধিকার কিন্তু পাঠক আপনার আছে। পাঠকের কাছে অনুরোধ করব সৈয়দ আশরাফের এই কথাটা মাথায় রাখতে, পরবর্তীতে এই কথাটা কাজে আসবে আমাদের এই লেখায়।

হেফাজতের কর্মীরা সৈয়দ আশরাফের কথায় কর্ণপাত না করে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাদেরকে সেদিন রাতের মধ্যে ঢাকা ছাড়া করতে হবে। হুশিয়ারে কান না দেয়ায় এই অগ্নিশপথে বলিয়ান হয়ে , পুলিশ, র‍্যাব এবং বিজিবির যৌথ বাহিনীকে প্রেরন করা হয় মতিঝিলে যেটা অলরেডি ঝিলমতি হয়ে রয়েছে। তখন সময় রাত দুটো পার হয়েছে।

এখানে কয়েকটা তথ্য দেয়া জরূরী মনে করছি। পল্টনের ঐ এলাকায় মোটামুটি সন্ধার পর পরই বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। দুটো টিভি চ্যানেল, দিগন্ত আর ইসলামিক টিভির সম্প্রচার সরকারের পক্ষ থেকে কোন কারন ছাড়া বন্ধ করে দেয়া হয়।
প্রশ্ন উঠতেই পারে এতো গোপনীয়তার প্রয়োজন কী ছিল?

অভিযান চলে ভোর পর্যন্ত। খবরে প্রকাশ মাত্র আধা ঘন্টার ব্যাবধানে সম্পূর্ন ঝিলমতি হেফাজত মুক্ত করে সরকারের হেফাজতে নিয়ে আসা হয়। বাঙলাদেশের আইন শৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনী সাধারনত ঘুষ খেতে পারদর্শী বলে যারা মনে করেন সেই সমস্ত দূর্মুখের মুখের উপরে চটকানা মেরেছে এই অভিযান।
আমরা জানতে পারলাম সেখানে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে, একজন পুলিশ সদস্যসহ।

ঘটনার পরবর্তী দিন থেকে শুরু হয় এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রদান। লক্ষনীয় হল, এই মতামত প্রদানে দুটো ধারা রয়েছে। প্রথমটি সরকার দলীয়, আর দ্বিতীয়টি বিরোধী দলীয়। কিন্তু আমরা আমজামকাঁঠাল জনতা রয়ে গেলাম অন্ধকারে। আমরা মুখে হাত দিয়ে একবার সরকারের দিকে একবার বিরোধী দলের দিকে মাথা ঘুড়াতে ঘুড়াতে ব্যাডমিন্টন খেলা দেখতে থাকলাম। বুঝলাম, রাজনীতি বড়োই প্যাচালো।



কেন ঘটল?

হেফাজতের এই ঢাকা অবরোধ আর হেফাজতের উপরে সরকারের এই অভিযানের ঘটনা বুঝতে আমাদের একটু পেছন ফিরে তাকাতে হবে। মহাজগতে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটে না। সুতরাং ঘটনার পরম্পরায় না জানলে এবং জেনে না বুজলে আমদের কাছে চলমান সংঘাত বোধ বুদ্ধির বাইরে থেকে যাবে। বোঝার সুবিধার জন্য আমি এখানে বুলেট আকারে দিচ্ছিঃ

ক.
কাদের মোল্লার রায় ঘোষনার পরে সৃষ্টি হয় গনজাগরন মঞ্চের। মানে হল জনগন বুঝতে পারল ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের সাথে জামাতের একটা প্রেম ভালোবাসা হয়েছে। যেটা আওয়ামি লিগের ভোট বাক্সে টান দেবেই। অন্তত দোদুল্যমান তরুন প্রজন্ম যারা খুবই ভাইটাল ফ্যাক্টর ব্যালটের জন্য। সুতরাং, আওয়ামি লিগ জামাতের সাথে লদকালদকি করাটা সেইফ মনে করল না।

খ.
অনেকেই মনে করে গনজাগরন মঞ্চের ফলে শুধু আওয়ামি লিগেরই সাহায্য হয়েছে। ভুল ধারনা। গনজাগরন মঞ্চকে আওয়ামি লিগের সাথে সাথে বিম্পি জামাতও ব্যাবহার করেছে। কীভাবে? সেই বিখ্যাত আস্তিক নাস্তিক থিসিসের মাধ্যমে। গনজাগরন মঞ্চ সমর্থন এবং জামাত বিরোধীতা, এই পর্যায়ে আওয়ামি লিগের জন্য সাধারন মানুষের কাছে ইসলাম বিরোধিতা বলে পরিচিত হল। গনজাগন মঞ্চে সমর্থনের মাধ্যমে আওয়ামি লিগ ভোট বাক্স সেইফ করলেও এইবার কিন্তু জামাত বিরোধীতা, ইসলামবিরোধীতার ব্যানারে পুনরায় ভোট বাক্স দুলিয়ে দিল। ভোট কি আওয়ামি লিগ এমনিতেই ছেড়ে দেবে? প্রশ্নই আসে না। তাহলে তার এমন একটা ধর্ম ভিত্তিক সমান্তরাল ফোর্স, এমন একটা দল প্রয়োজন ছিল যেটা এই ইসলামবিরোধীতার অপবাদ থেকে তাকে রক্ষা করতে পারে। ঘটনার এই পর্যায়ে আসে হেফাজতে ইসলাম।

গ.
হেফাজতকে যেহেতু নিয়ে এসেছে সুতরাং তাদের কিছু দাবী দাওয়া মেনে নেয়া এই আওয়ামি লিগের কর্তব্যের মধ্যে পরে। এটা অনেকটা বড় মাস্তানের পক্ষ থেকে ছোট মাস্তানকে উপহার দেয়ার মতন। বড়জন উপহার দেবে ছোটজন খুশি হয়ে চুপ থাকবে। ঘটনার প্যাটার্ন লক্ষ করেন, ঠিক সেভাবেই এগোচ্ছিল। ব্লগারদের গ্রেফতার তার সবচাইতে বড় উপহার ছিল। আরো যেগুলো ছিল, তাহল, তাদের দাবি বিবেচনা করে দেখার প্রতিশ্রুতি। তাদেরকে সমাবেশ করতে দেয়ার অনুমতি ইত্যাদি।

ঘ.
হেফাজত ঐতিহ্যগতভাবে জামাত বিরোধী হলেও চরিত্রগত দিক থেকে বা বৈশিষ্টগত দিক থেকে জামাত তথা ইসলামপন্থি অন্যান্য যে কোন দলের সাথেই প্রয়োজনে একজোট হতে বাধ্য। পাঠক, আপনাকে দিয়েই বিবেচনা করুন। বাঙালাদেশে আওয়ামি লিগ, বিএনপি না হয় মানতে পারেন, কিন্তু হেফাজত বা জামাতের শাসন কি মানতে পারবেন? ঠিক এই যুক্তিতেই, আওয়ামি লিগের থেকে জামাত, হেফাজতের কাছে অনেক কাছের এলাই। আর ঠিক এই কৌশলটাই জামাত নিয়েছে এবং হেফাজতকে পেয়ে বসেছে। হেফাজতের কার্যক্রম চলতে থাকে জামায়াত বিএনপির পরিকল্পনা অনুযায়ী। শফি পরিনত হয় ৯৩ বছরের একটি অথর্ব পুতুল হিসাবে।

ঙ.
মতিঝিলের সমাবেশে শফি যখন আসছিল তখন শফি একটা ফোনকল পেয়ে ফেরত চলে যায় বলে আমরা জেনেছি। শফিকে যে পুতুল বানানো হয়েছিল এটা তার সবচাইতে বড়ো প্রমান। শফি যে হেফাজতের কর্মীদের মতিঝিলে থাকতে বলেছে সেটা কোন ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন কেউ? এই কথা যে শফির মুখ দিয়ে বলিয়ে নেয়া হয় নি তার কোন প্রমান আছে কারো কাছে? নাই।

তাহলে ব্যাপারটা কী দাড়াল? হেফাজতের নামে যে সমস্ত কার্যকলাপ মতিঝিলে করা হয়েছে তার পেছনের সমস্ত স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান এসেছে জামায়াত আর বিএনপির কাছ থেকে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করেছে জামায়াত, কারন বিএনপি ঘরে বসে কফি খাওয়া দল। এরা কোনভাবেই জামায়াতের মতন মাঠে নেমে কাজ করার যোগ্যতা রাখে না।

বিএনপি জামায়াত যেহেতু স্বনামে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না, হেফাজত তাদেরকে সেই জায়গাটা দিচ্ছিল যেখানে দাঁড়িয়ে সে কথা বলতে পারে। অবশ্য হেফাজত তথা জামাত যদি আজকে পর্যন্ত মতিঝিলে থাকতে পারত, পরিস্থিতি কতটা ঘোড়ালো আর ভয়ঙ্কর হত সেটা মনে হয় আমরা কিছুটা অন্তত আন্দাজ করতে পারি।

সুতরাং মতিঝিলে হেফাজতকে অবস্থান করতে দেয়া মানে নিজের কবর নিজেই খোদা। যেটা আওয়ামি লিগ করতে পারে না। এবং সেটা নিজের অস্তিত্ত্ব রক্ষার জন্যই। পাঠক, এখানেই আপনাদের সৈয়দ আশরাফের কথাটা মনে করার জন্য অনুরোধ করছি।

আমি আহ্বান করবো, আজকে সন্ধ্যার মধ্যেই আপনারা ঢাকা শহর ত্যাগ করুন। যদি না ত্যাগ করেন, সরকার তার ব্যবস্থা করবে।

এবং সরকার তার ব্যাবস্থা গ্রহন করেছে।

আওয়ামি লিগের দ্বারা মাঠে চলে আসা হেফাজতের নামে বিএনপি জামাতের প্ল্যান মতিঝিলে বাস্তবায়ন করা হয়েছে জামাতের সরাসরি হস্তক্ষেপে। আর রাতে যে হত্যাকান্ড হয়েছে সেটা আওয়ামি লিগ করেছে তার নিজের অস্তিত্ব বাঁচাতে। সাথে সাথে হেফাজতের উপরে গড়ে ওঠা আক্রোশ মেটাতে। কারন ছোট মাস্তান বড়ো মাস্তানের কথা না শুনলে একটু পিট্টি দেয়া আবশ্যক বটে!



আমজামকাঁঠালজনতার কী হল?

এক কথায় বললে কিছুই হল না। উপরের আলোচনায় আমাদের কাছে এটা পরিষ্কার হওয়া উচিত যে, এখানে প্রধানত দুটো ফোর্স কাজ করছে একটা পুরষ্কার নেয়ার জন্য। আসল উদ্দেশ্য মসনদে বসা। আর এই মসনদে বসার জন্য বাঙলাদেশের সবচাইতে বড় দুটো দল কুকুরের মত কামড়াকামড়ি করছে। ফলাফল, আজকে দেশের এই বেহাল দশা। এমন না যে এই ঘটনা শুধু বর্তমান সরকারের সময়েই ঘটছে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। আমরা তাদের নিজস্ব ব্যাক্তিগত লোভ মেটাতে তাদের শিখিয়ে দেয়া বুলি মুখস্থ বলে গেছি। একসময় ব্যাস্ত থেকেছি “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” নামক কিংবদন্তিতে, আবার কখনও স্বাধীনতার আসল ঘোষক কে এই প্রশ্নে। কিন্তু আমাদের তাতে কী হয়েছে? যে খেতে পায় নি, সে আজও পায় না। অন্য দিকে হাতে গোনা কয়েকজন দেশের সমস্ত সম্পদের মালিকানা দখল করে নিচ্ছে।

আজকে আমাদের দেশে সবচাইতে বড় আলোচনার বিষয় কী হওয়া উচিত? খুব ছোট কয়েকটা ইস্যু আমি উল্লেখ করতে চাই।

# আজকে হলমার্ক কেলেঙ্কারির হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের পরেও আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে শুনতে পাই, এই কোম্পানিকে আবারও নাকি ঋন দেয়া প্রয়োজন।

# আজকে তাজরীন ফ্যাশনস-এ যে গনহত্যা হয়েছে সেই শ্রমিকদের পূনর্বাসন নিয়ে সরকারের কোন রূপ রেখা আমরা শুনতে পাই না। আমরা দেখতে পাই, তাজরীনের মালিক গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

# আজকে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে, সেই সুন্দরবন যেটা আমাদের মা প্রকৃতি আমাদের দিয়েছে প্রাকৃতিক চাদর হিসেবে। আমাদের সরকার সেই চাদরকে ছিড়ে ফেলার মহোৎসবে লিপ্ত হয়েছে, কাদের লাভের জন্য?

# রানা প্লাজায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৮০০রও বেশি জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা চিৎকার করছি কাদের জন্য? যারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কয়েকটা লাশের বন্দোবস্ত করেছে তাদের বক্তব্য আমরা মুখস্ত আউড়ে যাচ্ছি।

# স্বাধীন মত প্রকাশ করতে যেয়ে আমাদের ঘুনে খাওয়া রাজনীতির নগ্ন শিকার হয়েছে আমাদের সহযোদ্ধা চার জন্য ব্লগার। তাদের মুক্তি কবে মিলবে আমরা জানি না।

আমরা সাধারন মানুষ তাহলে কী করব? দুই দলের কামড়াকামড়ির বাইরে আমাদের জায়গা কোথায়?

আমাদের বুঝতে হবে ক্ষমতার উৎস কারা। আমাদের বুঝতে হব আজকে যারা ক্ষমতার দম্ভে জনগনের কথা ভুলেছে তাদের ক্ষমতার উৎস কারা। বুঝতে হবে আজকে জনগন একসাথে হয়ে হিসু করে দিলে ঐ ক্ষমতার মসনদে সাইক্লোন বয়ে যাবে। আমদের বুঝতে হবে আসল ক্ষমতার উৎস জনগন। মেহেনতি জনগন। খেটে খাওয়া জনগম। কলে কারখানায় খেটে খাওয়া জনগন। দেশের কৃষক। এই ব্লগটি পড়তে থাকা অধিকার সচেতন জনগন। যারা বুঝতে পারে, বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যাবস্থা আমাদের শেখায় “ভোট দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব”। কারন এটা না শেখালে মসনদে যাওয়া সম্ভব নয়।

আমাদের বুঝতে হবে জনগনই পারে এই ক্ষমতার কেন্দ্র পরিবর্তন করতে। জনগনই পারে বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন করতে।
শুধু আগে ঠিক করতে হবে আমরা কী চাই। সেই চাওয়া পূরন করতে আমরা বাঙলাদেশ থেকে বিপ্লব পর্যন্ত হেঁটে যেতে প্রস্তুত কী না।

শুধু আগে ঠিক করতে হবে আমরা কী চাই। সেই চাওয়া পুরন করতে আমরা রক্ত ঝড়াতে রাজি আছি কী না।

না পারলে উত্তর পুরুষে আমাদের সচেতন ব্যার্থতার লিপিবদ্ধ আমলনামা লিখতে এখনই বসে পড়ি আসুন।