প্রায় সোয়া শ’ বছর পূর্বে, আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে, প্রধানতঃ আট ঘন্টা কাজ, আট ঘন্টা বিশ্রাম ও আট ঘন্টা বিনোদন এর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যে সকল শ্রমিক আত্মবলিদান করেছিল, তাদের স্মরণ করার মধ্যদিয়ে, সারা দুনিয়ার শ্রমিকশ্রেণীর সাথে বাংলাদেশের শ্রমিকরাও মহান মে দিবস উদযাপন করেছে নানা আনুষ্ঠানিকতায়। স্বয়ং সরকার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে মে দিবস উদযাপন করেছে। তবে এবার মে দিবসের সকল অনুষ্ঠানাদিতে রানা প্লাজার বিপর্যয় গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। ধ্বসে পড়া গার্মেন্টস এ হতাহত শ্রমিকদের বিপন্ন জীবন-গাঁথা মুনাফালোভী গার্মেন্টস মালিকদের কুৎসিত চেহারা আবারো জাতির সামনে উম্মোচিত করেছে । জোরালো ভাবে উত্থাপিত হয়েছে রানা প্লাজার মালিক ও ধ্বসে পড়া গার্মেন্টস মালিকদের বিচার ও হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও পূণর্বাসনের দাবী।
মর্মান্তিক হল-১৮৮৬ ইং সালের হে মার্কেটের সে ঘটনার পর হতে অদ্যাবধি বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণী অনেকদূর এগিয়ে গেছে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এর পাশাপাশি শ্রমিকশ্রেণীর অধিকারও আজ উন্নয়নের মাপকাঠিতে পরিণত হয়েছে। দেশে দেশে মেহনতি শ্রমিকদের আট ঘন্টা কাজের অধিকারসহ আরো অনেক অধিকার অর্জিত হয়েছে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হল, বাংলাদেশের মেহনতি শ্রমিকদের আট ঘন্টা কাজ, আট ঘন্টা বিশ্রাম ও আট ঘন্টা বিনোদনের সে মৌলিক অধিকারটুকু আজও অর্জিত হয় নি-দেশের স্বাধীনতা অর্জনের চার দশক পরও । রানা প্লাজার ভবন ধ্বসে পড়ার দুর্ঘটনায় হাজার হাজার শ্রমিকের অসহায় জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে সে সত্য নগ্নভাবে প্রতিভাত হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে এসেও বাংলাদেশের শ্রমিকদের তুলনা করা যায় শ্রমদাসের সাথে। যেখানে জীবনের নিরাপত্তারই এহেন করুণ অবস্থা, সেখানে শ্রমজীবি মানুষদের অপরাপর অধিকার-নায্য মুজরী, যুক্তিসঙ্গত শ্রম ঘন্টা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে তাদের অবস্থান কত মানবেতর তা সহজে অনুমেয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ আজ আই,এল,ও (ILO) নামক আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থারও সদস্য। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, আই,এল,ও(ILO), একমাত্র আন্তর্জাতিক ত্রিপক্ষীয় সংস্থা, যা শ্রমিক, মালিক ও সরকারের প্রতিনিধিত্বের সমন্বয়ে গঠিত এবং যা প্রতিবছর একবার জেনেভা-সম্মেলনে (ILC) মিলিত হয়ে বিভিন্ন দেশের শিল্প-সম্পর্ক পরিস্থিতি এবং দেশে দেশে শ্রমিক শ্রেণীর অবস্থা ও তাদের আইএলও কনভেনশন ঘোষিত অধিকার সংরক্ষণ করা হচ্ছে কিনা পর্যালোচনা করে-তার ব্যতয় হলে সরকারকে রীতিমত জবাবদিহী করতে হয়-আন্তর্জাতিক আদালতে। সে আই,এল,ও, শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য এ পর্যন্ত ১৮৩ টি কনভেনশন প্রণয়ন করেছে, যার মধ্যে ৮ টি কোর কনভেনশনসহ (Core Conventions) বাংলাদেশ ৩৩টি কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে। সুতরাং বাংলাদেশকে যে কোন শ্রম আইন অনুসমর্থনকৃত আই,এল,ও এর কনভেনশন এর আলোকে প্রণয়ন করতে হবে। অথচ আমাদের দেশে সর্বশেষ প্রণীত “বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬” এ শ্রম ঘন্টা নির্ধারণ করা হয়েছে দৈনিক ১ ঘন্টার বিশ্রামসহ ১০ ঘন্টা-যা আইএলও কনভেনশনের পরিপন্থী । এতদ্ব্যতীত নতুন ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটিকে বর্তমান আইনে আরো জঠিল করা হয়েছে। বস্তুতঃ আইনে যে বিধানই থাকুক না কেন, ন্যুনতম মজুরীর কারণে এখনো প্রায় সকল শিল্প-কারখানায় শ্রমিকেরা দৈনিক ১২ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য হয়, অতিকাল মজুরীর আশায়। গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে এটাত নিত্যদিনের ব্যাপার এবং শিপম্যান্টের ছূঁতায় অনেকটা বাধ্যতামুলক। অথচ বাংলাদেশের অনুসমর্থনকৃত আইএলও এর ৮ টি কোর কনভেনশন এর মধ্যে কনভেনশান নং ১ এ দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের কথা বলা আছে । কনভেনশান নং ৮৭, যাতে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার এবং কনভেনশন নং ৯৮, যাতে যৌথ দরকষাকষির অধিকারের কথা বলা আছে। উল্লেখ্য যে, ১৯৪৮ ইং সালে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনার ২৩(ঘ) ধারায়ও শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়। আইএলও এর গঠনতন্ত্র মোতাবেক সংশ্লিষ্ট সদস্য রাষ্ট্র অনুসমর্থনকৃত কনভেনশন মেনে চলতে বাধ্য। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে শ্রমিক-কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত সে সকল অধিকার রহিত করা আছে। স্মর্তব্য যে, ইপিজেড অঞ্চলে স্থাপিত শিল্প-কারখানাগুলোতে ক্রমান্বয়ে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার দেওয়ার লক্ষ্যে ১৮ই জুলাই ২০০৪ সালে “ ইপিজেড শ্রমিক সংঘ ও শিল্প সম্পর্ক আইন, ২০০৪” প্রণয়ন করা হয়েছিল-বস্তুতঃবিদেশী ক্রেতাদের সন্তুষ্ঠ করার জন্য। সে আইনের বিধান অনুসারে ইপিজেডস্থ প্রত্যেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারীদের ভোটে নির্বাচিত হয় “শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব ও কল্যাণ কমিটি (WRWC)” । উক্ত আইনের বিধান অনুসারেই বিগত ১ লা নভেম্বর, ২০০৬ ইং থেকে ইপিজেড অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইপিজেডে অবস্থিত বিভিন্ন শিল্প-কারখানার কর্তৃপক্ষ সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারীদের উপরোক্ত আইন অনুসারে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন থেকে বিরত থাকার জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। এমনকি কোন কোন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ চাকুরীর ভয় দেখিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের নিকট থেকে ইউনিয়ন করতে ইচ্ছুক নয় মর্মে সাদা কাগজে স্বাক্ষর আদায় করেছিল। ১/১১ এর পরিবর্তনের পর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কতৃক জরুরী অবস্থা জারীর পর ইপিজেডস্থ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ বিদ্যমান আইনের তোয়াক্কা না করে “শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব ও কল্যণ কমিটির” নির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে চাকুরী থেকে ছাটাই করে দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে বিগত ১ আগস্ট, ২০১০ ইং তারিখে “ইপিজেড শ্রমিক কল্যাণ সমিতি ও শিল্প সম্পর্ক আইন, ২০১০” পাশ করা হলেও ইপিজেড গুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের অবস্থার ইতর বিশেষ পরিবর্তন হয় নি। শ্রমিক কল্যাণ সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনে এমন জঠিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে, যা অতিক্রম করে বস্তুত: কথিত কল্যাণ সমিতি গড়ে তোলা শ্রমিকদের পক্ষে সম্ভব হয় নি।
ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখব, এদেশের শ্রমিক-কর্মচারীরা কেবল তাদের অর্থনৈতিক দাবী-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে নি, স্বাধীনতা সংগ্রাম হতে শুরু করে সকল প্রকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তারা অত্যন্ত নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এদেশের শ্রমিকশ্রেণীর অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। অথচ স্বাধীনতার পর দেশের সকল প্রকার পশ্চাৎপদতা ও বিপর্যয়ের সবচেয়ে করুণ শিকার হয়েছে এদেশের মেহনতি শ্রমিকশ্রেণী। এদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকেরা এখনো মাত্র ১৬৫৫.০০ টাকা ন্যূনতাম মজুরীর ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য রাজপথে আন্দোলন করে, শ্রম-শিবিরের মত অবরুদ্ধ কারখানায় জীবন্ত দগ্ধ হয়ে শ’য়ে শ’য়ে জীবন বলি দেয়, নির্দিষ্ট শ্রম ঘন্টার বিপরীতে সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, মধ্যযুগীয় বর্বরতায় শারিরীক নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, কথায় কথায় চাকুরীচ্যুত হচ্ছে। ইপিজেড এর বাইরেও ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক প্রতিষ্ঠানে কোন ট্রেড ইউনিয়ন করতে দেওয়া হচ্ছে না, ট্রেড ইউনিয়ন করার চেষ্টা করলে নেমে আসে মালিকদের অমানবিক নির্যাতন।
ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও শ্রম আইন সংশোধন :
বর্তমান সরকার বিগত ২০০৬ ইং সালের ১১ অক্টোবরে প্রণীত “বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬” এর সংশোধনীর উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে তার একটি খসড়া প্রস্তাবও করা হয়েছে। “বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬” এ যেখানে পূর্বে বিদ্যমান শ্রমিক-কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারকে পূর্বাপেক্ষা সংকুচিত করা হয়েছে এবং যাকে আরো শ্রমিক-বান্ধব করার দাবী ছিল শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্য থেকে, সেখানে সংশোধনীর খসড়ায় যে ধরনের প্রস্তাব আনা হয়েছে, সেগুলো গৃহীত হলে তাতে অবস্থার ইতর বিশেষ পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। আমরা স্বীকার করি, দেশে বিদ্যমান রুগ্ণ রাজনীতির মত ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনও নানা রোগে আক্রান্ত । কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হল, এর জন্য যতটুকু দায়ী ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব, ততোধিক দায়ী দেশের সমসাময়িক অসুস্থ রাজনীতি। কারণ আমাদের দেশের স্বার্থপর রাজনীতিবিদরা নিজেদের দলীয় স্বার্থেই ট্রেড ইউনিয়নকে ব্যবহার করেছে এবং করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তাদেরই পৃষ্টপোষকতায় জাতীয়ভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনগুলো, কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রম ছাড়া, বস্তুত: বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লেজুড়ে তথা তাদের দলের শ্রমিকফ্রন্টে পরিণত হয়ে পড়েছে। তারা যতটুকু না শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থ নিয়ে উদ্বিগ্ন, ততোধিক উদ্বিগ্ন তাদের রাজনৈতিক ফায়দা লুঠায়। ফলত: রাজনৈতিক স্বার্থের বলয় অতিক্রম করে এদেশে সুস্থ ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনও গড়ে ওঠতে পারে নি। তাতে শুধু সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না, দেশে সুস্থ শিল্প-সম্পর্ক ও উৎপাদনশীলতাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে মুক্ত করার সদিচ্ছা যদি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো পোষণ করেন, তাহলে সত্যিকার শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইনী সংশোধনী আনার উদ্যোগ নিতে হবে সর্বাগ্রে। সংশ্লিষ্ট সকলের স্মরণ রাখা উচিত, স্ব স্ব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন করতে না দিয়ে যে সকল গার্মেন্টস শিল্পের মালিকেরা তাদের মুনাফাকে নিরঙ্কুশ ঝুঁকিমুক্ত ভেবেছিলেন, গার্মেন্টস সেক্টরের বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত নৈরাজ্যকর ঘটনা নিশ্চয় তাদের সে ভুল ভেঙ্গে দিয়েছে। গার্মেন্টস সেক্টরে সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে আর যাই হউক, কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার মত নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কখনো সৃষ্টি হত না এবং এ জাতীয় ঘটনার প্রতিকার চেয়ে স্যুট-টাই পড়া মালিকদের রাজপথের ধুলায় গড়াগড়ি খেতে হত না (২০০৭ ইং সালের ঘটনা স্মর্তব্য)। তদুপরি মুনাফা লোভী মালিকেরা বর্তমানে যেভাবে যত্রতত্র গামেন্টর্স কারখানা গড়ে তুলে অগ্নি সংযোগ, ভবন ধ্বস ইত্যাদির মাধ্যমে শত সহস্র শ্রমিক হয় জীবন্ত দগ্ধ নতুবা ভবন চাপা পরে মারা গিয়ে কেবল সাধারণ শ্রমিকদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে না, গার্মেন্ট শিল্পের ভবিষ্যতকে শঙ্কাযুক্ত করেছে, শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন থাকলে এ জাতীয় বিপর্যয় অনেকটা এড়ানো যেত।
এটা আজ প্রমাণিত সত্য যে, ট্রেড ইউনিয়ন নিষিদ্ধ করে রাখলে তা সুস্থ শিল্প সম্পর্ক ও উৎপাদনশীলতার জন্য সুফল বয়ে আনবে না। কারণ উৎপাদনশীল যে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে শিল্প বিরোধের উদ্ভব একটি অবজেকটিভ কন্ডিশান, আইন করে তাকে রোখা যাবে না, সমাজতাত্ত্বিকভাবে তার সমাধান করতে হবে, ট্র্রেড ইউনিয়ন যার একটি অনন্য হাতিয়ার। সংশ্লিষ্ট সকলের আরো স্মরণ রাখা উচিত-ট্রেড ইউনিয়ন ও রাজনীতি এক বিষয় নয়। ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারের পর্যায়ভূক্ত এবং তা মানবাধিকারও বটে। শুধু শ্রমিকদের পেশাগত অধিকার আদায়ের জন্য নয়,কাঙ্ক্ষিত শিল্পবিকাশ,টেকসই উন্নয়ন, এমনকি শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্যও ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি লাভ অপরিহার্য।
অতএব, মহান মে দিবসের চেতনা ধারণ করে এদেশের সকল ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনগুলোর উচিত আইএলও কনভেনশনের আলোক একটি গণতান্ত্রিক শ্রমিক-বান্ধব শ্রম আইন ও শ্রম নীতি প্রণয়নের দাবীতে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা। সরকার ও মালিক পক্ষের উচিত দেশের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সৃষ্টি করা-যা বস্তুতঃ দেশে শিল্প বিকাশের পথকেও সুগম ও টেকসই করবে। কিন্তু সেটা খুব আশাব্যঞ্জক নয়।
শ্রমিক শ্রেণীকেও মনে রাখতে হবে, কেবল যুক্তিসঙ্গত কর্মঘন্টা বা নায্য মজুরীই মে দিবসের আন্দোলনের বিষয় ছিল না-তা ছিল আন্দোলনের অভিব্যক্তি মাত্র, আন্দোলনের মর্মবস্তু ছিল সামগ্রিক অধিকার আদায়ের মাধ্যমে সার্বিক শোষণ থেকে মুক্তি-যা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণীকে আরো অনেক দূর যেতে হবে, করতে হবে আরো অনেক কঠিন লড়াই সংগ্রাম। এর কোন বিকল্প নেই।