লিখেছেন – পাভেল মাহমুদ
আসিফ মহিউদ্দীনকে জানুয়ারীতে যখন মৌলবাদীরা কোপায় আমি তখন দেশে। ফেইসবুকে ইভেন্ট খোলা হল প্রতিবাদ করতে শাহবাগে জাদুঘরের সামনে আসতে। আমি মিছিল-মিটিঙে গিয়ে অভ্যস্ত না। ভাবলাম, কয়জন আর যাবে। পরে দেখি ফেইসবুক ইভেন্টে কয়েক হাজার লোক going দেখাচ্ছে। আমিও গেলাম শেষ পর্যন্ত। গিয়ে দেখি বড়জোর ৫০ জন লোক হবে। তার মধ্যে আবার ৮-১০জন বাম নেতা, বক্তৃতা শুনে মনে হল তারা ঠিকমত জানেনও না তারা কেন এইখানে। দেশের সবচাইতে পরিচিত, সুখ্যাতি/কুখ্যাতি পাওয়া ধর্ম-বিরোধী আসিফ গ্রেফতার হলে যে সাধারণ মুক্তমনা, নাস্তিক, উদারমনারা দলে দলে রাস্তায় নেমে আসবেনা সেটা আমার ধারণা উনি ভাল করেই জানেন। তাহলে, প্রশ্ন হচ্ছে কেন হাসপাতাল থেকে বের হয়েই আবার সে লেখা-লেখি শুরু করল?
লেখা চুরি থেকে শুরু করে আসিফের বিরুদ্ধে অনেক ধরণের অভিযোগ আছে। আমি তার সবকিছু জানিওনা, যা জানি তার অনেক কিছুই সমর্থন করিনা। কিন্তু বাক-স্বাধীনতার যে ব্যাখ্যায় সে বিশ্বাস করে, এবং চর্চা করে, আমারও আস্থা সেটাতে। আমরা ধর্মকে, ধর্ম-গ্রন্থকে, ধর্ম-প্রবত্তাদেরকে কোন ধরণের সমালোচনা, স্যাটায়ার, মকারির উর্দ্ধে রাখিনা। কেউ আরজ আলী মাতুব্বর স্টাইলে ধর্মের সমালোচনা করতে পারে, কেউ আহমদ শরীফ স্টাইলে করতে পারে, কেউ তসলিমা, কেউ ডকিন্স, কেউ থাবা-বাবা স্টাইলের গালি-গালাজ। আমি হয়ত এদের কারো স্টাইলই পছন্দ করিনা, কিন্তু যতক্ষণ এদের বক্তব্য ডিরেক্টলি কারো ‘শারীরিক’ ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে কিংবা দাড়াতে পারে বলে মনে হয় আমি তাদের বলার অধিকারকে সম্মান করি। এই কথাগুলা বলতেছি কারণ অনেককেই দেখতেছি বলতেছে আসিফের এইটা বলা ঠিক হয় নাই, ঐটা করা ঠিক হয় নাই। এমন সব মানুষ আছেন এই দলে যারা নিজেদের মুক্তমনা বলে পরিচয় দেন। ব্যাপারটা আমার জন্য খুব হতাশার।
ফেরত আসি প্রথম প্রশ্নে। কেন আসিফ এত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও লিখে যান? কারণ, উনি এবং আমরা অনেকেই বেশ আগেই বুঝতে পেরেছি আমাদের দেশে ধর্ম হচ্ছে হালাল-সাবানের মত একটা ব্যবসায়ী প্রোডাক্ট। ‘৭১ থেকে ২০১৩, দেশের সমাজ এবং রাজনৈতিক জীবনে ধর্ম শুধু খারাপ উদ্দেশ্যেই ব্যাবহৃত হয়েছে। সামনে যে এইটা বাড়বে বৈ কমবে না আমরা সেইটাও বুঝেছি। এখন হালাল-সাবানের যে ব্যবসায়ী সেতো আর তার ব্যবসা বন্ধ করবেনা। করার আছে এখন একটাই, হালাল-সাবানের চাহিদা কমানো। মানুষকে বোঝানো যে হালাল-সাবান ব্যবহার সীমিত করুন, এর অনেক অপকারিতা আছে। এই জন্য আমাদের দেশে ধর্মের সমালোচনা করাটা খুব জরুরি। দয়া করে আবার সমালোচনা ঠিক আছে “কিন্তু”, “তবে”, “গালি-গালাজ” এইভাবে শুরু করবেননা। ইন্টারনেটে লক্ষ লক্ষ আর্টিকেল আছে মুহাম্মাদকে যাচ্ছে-তাই ভাবে গালি-গালাজ করে। কই আপনি তো সেইগুলা খুঁজে খুঁজে পড়েননা। তাহলে, আপনাকে কেন থাবা-বাবার থাবার নীচেই যেতে হবে?
বাংলাদেশে বহুদিন ধরেই ধর্মের সমালোচনা হয়ে আসছে। দেশকে বাংলাস্থানে পরিণত করলেও আপনারা সেটা বন্ধ করতে পারবেননা। আপনারা হুমায়ুন আজাদকে থামাতে পারেননি, আসিফকে পারেননি। আর আজকে ইন্টারনেট, ফেইসবুকের যুগে হাজার হাজার আসিফ বসে আছে কি-বোর্ডের সামনে। গ্রেফতার, মৃত্যুদণ্ড দিয়ে হয়ত দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারবেন, কিন্তু ভুলে যাবেননা দেশের বাইরেও মিলিয়ন মিলিয়ন লোক বাংলায় লিখতে জানে। ইংরেজিতে অসংখ্য আর্টিকেল তো আছেই, সময়ের সাথে সাথে বাঙালি ইংরেজিও পড়তে শিখবে। তখন কি করবেন? জাতিসংঘের কাছে অভিযোগ করবেন আপনার ধর্মানুভূতি আহত হয়েছে বলে? হেফাজতের হাতে দেশের বর্গা দিয়ে দিলে হয়ত ইন্টারনেট, ইংরেজি নিষিদ্ধ করে ৭০০ শতাব্দীতে ফিরে যেতে পারবেন। বাট, ইউ নো হোয়াট, ৭০০ শতাব্দীতেও পৃথিবীতে সাহসী পুরুষের জন্ম হয়েছে, যে অত্যাচার, অসম্মান কিছুই ভয় পায়নি। ঠিক আজকে যেমন আসিফ এবং আসিফের মত অসংখ্য মানুষ কোন কিছুকেই ভয় পায়না।
আমি আসিফ এবং অন্য ব্লগারদের মুক্তি দাবী করবনা, কারণ আমার দাবি কেউ আমলে নিবে আমি তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ না। শুধু আমার শ্রদ্ধাটুকু জানিয়ে গেলাম সকল সাহসী বাঙালী নারী-পুরুষের জন্য, যারা নিভে যাওয়ার আগে ঠিকমত জ্বলে উঠতে জানে।
আমার কথা হচ্ছে আমরা কেন ধর্মের অপ্রয়োজনিয়তা নিয়ে কথা বলতে পারব না????? এটা তো আমরা যুক্তি দিয়ে বোঝাচ্ছি লাঠি দিয়ে নয়।
আমরা ঈমানদার বা কাফের। এতো বুঝলাম। কিনতু আমরা মানুষ কিনা তাতো
বুঝলাম না ।
কেউ ্যদি লেখাতে তার মতামত জানান, তা মানতে বা না মানতে পারেন। সে´টা
পাঠকের ব্যাপার।লেখক খুন হয় কেন?
কিছুই বুঝি না? গলদ কোন খানে?
কেউ বোঝেন কি? দয়া করে একটু বোঝান?
পুর্ন সহমত। (Y)
(Y)
আসিফের ডিবি ভোগান্তি যতটা না ধর্মীয় কারণে তার চেয়ে বেশী আওয়ামী লীগের বিরোধিতার কারণে। থাবা বাবাকে খুন করার পরপরই যেমন তার লেখাগুলোকে কেটেকুটে নেগেটিভ অংশগুলোকে হাইলাইট করে ছাগুরা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছিল, আওয়ামী পেইড ব্লগাররা এখন আসিফকে সেই ছাগু স্টাইলে দানব বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ সেই ব্লগাররাই মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলতে মুখে ফেনা তুলে। নিজেদের স্বার্থ থাকলে তারা তা দিব্যি ভুলে যায়। আসিফের বিরুদ্ধে এই দুঃসময়ে বিশোদগার আখেরে জামাতিদের হাতেই অশ্র তুলে দেয়া হচ্ছে।
@হেলাল,
থাবার লেখার কোন অংশ গুলো আপনার নেগেটিভ মনে হয়েছে? এবং কেন?
আওয়ামীলিগ তো মনে হচ্ছে দেশটাকে মধ্য যুগে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে !!! গণতন্ত্রের লেবাসধারী ধর্মান্ধতার তোষণকারী আওয়ামী সরকারের প্রতি তীব্র ধিক্কার !!!!
@অমল রায়, উনারা গাছেরটাও খাইতে চায়, তলেরটাও খাইতে চায়। এত লোভীদের কাছে দেশ আর কী আশা করতে পারে।
আপনার লেখার যৌক্তিকতা ভালো লেগেছে। ব্লগে তর্ক বিতর্ক থাকবেই তাই বলে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমন হিসাবে নেবে মৌলবাদীরা, মুক্তমনা কোন মানুষ অবশ্যই তা করতে পারেনা। লেখার জন্য ধন্য বাদ। মনে রাখতে হবে বুদ্ধিজীবীর গলা টিপে ধরে জ্ঞান আর কৌতুহলের স্রোতকে থামানো যায় না।
@ছন্নছাড়া, আমি কোন ব্লগেই নিয়মিত না। কিন্তু ব্লগ, ফেইসবুক বিভিন্ন জায়গায় কম-বেশি ঘোরা-ঘুরি করে এইটা বুঝছি যে ৯৫% বাঙালীর কোন আইডিয়া নাই বাক-স্বাধীনতা কি জিনিস, এবং কোন কোন পরিস্থিতিতে এর ব্যতিক্রম থাকা উচিত। এমনকি নিজেকে মুক্তমনা দাবী করা অনেকেই ব্যাপারগুলা বুঝেনা। খুবই হতাশার কথা।
ওয়ান্ডারফুল, চমৎকার বাস্তবধর্মী একটা লেখা।
আসল রোগটা ধরেছেন। এদের ব্লগীয় নাম চুশীল। তবে বিয়াল্লিশ বছর পরে তাদের বোলও পাল্টেছে। বাট, ইট ইস টু—-লেইট নাও।
আজকের প্রথম আলো খুলে দেখুন হেফাজত যা দাবী করছে আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরাও সেটাই বলছে।
একই কথা আইনমন্ত্রীরও। কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দিতে পারেনা, সংবিধান সংশোধন করে ব্লগার লেখকদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড দিতে। ছিঃ আওয়ামী লীগ ছিঃ।
@আকাশ মালিক, ভাই, এইসব দেখে শুনে খুব মানসিক যন্ত্রণাতে আছি। দেশের বাইরে আছি, তাতেই এই অবস্থা। ভিতরে যারা আছে তাদের কথা চিন্তা করতে পারিনা।
নাস্তিকতা আর দেশপ্রম কি সাংঘর্ষিক? কোন নাস্তিকের দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের চেয়ে কি অলৌকিক শক্তিতে অবিশ্বাস প্রাধান্য পাওয়া উচিত?
@গীতা দাস,
সাংঘর্ষিক তো সরকারই করছে। একজন ব্যক্তি সে আল্লাহ মানলো কীনা, তার উপরে তো দেশ প্রেম নির্ভর
করেনা। আজকের প্রথম আলোতে একটা খবর পড়লাম
প্রিয় পাঠক,
এই কথাগুলো তুলে ধরার কারন, একজন ইসলামি কেবল দেশ প্রেমিক হবে আর অন্য কেউ নয়?
ইমরান নিজে যেচে গিয়ে এই সব প্রমান করতে গেলেন, কি অর্থ দাঁড়ায়?
আমি খুব বিস্মিত হলাম। আমার বিস্ময়ের ঘোর এখনও কাটছেনা।
@আফরোজা আলম, শাহবাগে কোরান বেদ ত্রিপিটক পাঠ দিয়ে শুরু, এখন লুঙ্গি খুলে মুসলমানিত্ব প্রমাণের অবস্থা। কে জানি বলছিল, “don’t try to beat stupid people in their game, they have more experience” এই টাইপের কিছু। কে কত বড় ধার্মিক এই কম্পিটিশন দিতে নেমে এখন ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি অবস্থা।
@গীতা দাস,
অত্যন্ত মূল্যবান একটি প্রশ্ন। উত্তরটি আমাদের সবার জানা। কিন্তু যে দেশের প্রশাসনের শিরোমনি থেকে সুউচ্চশিক্ষিতেরা ধর্মান্ধদের সাথে তাল মেলায় সেখানে তো এই সব নেতা ফেতাদের আর তথাকথিত শিক্ষিতদের হটিয়ে তারুণ্যের দায়িত্ত্ব গ্রহন ব্যতীত বিকল্প কিছু নেই। এদেশেই পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীরা নির্যাতীত হচ্ছে, সংখ্যা লঘু বলে যাদের পরিচয় দেওয়া হয় তাদের বাড়িঘর পোড়ানো হচ্ছে, উপাশনালয় ভাঙ্গা হচ্ছে; এতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়নি। কে কোথায় ধর্মের তথা বিশ্বাসের সমালোচনা করেছে তাতে ধর্মের অবমাননা হয়েছে! এসব ভড়ং কারা করছে ওদের চিনে রাখাটা জরুরী এই প্রজন্মের ছেলেদের। আর সেরকম প্রস্তুতিও দরকার। পিছু হটবার উপায় নেই। তারুণ্যকে এগিয়ে যেতেই হবে।
@কেশব অধিকারী,
দাদা, বড্ড জেন্ডার অসংবেদনশীল শব্দ প্রয়োগ। আমরা, মেয়েরা যে এখন বলি, আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত মেয়ে / শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি।
@গীতা দাস,
কেনো নয়, আমি আপনার অনুভূতির সাথেই আছি। বদলে দেবার পরে গানের লাইনটা কিন্তু ভালই শোনাচ্ছে! তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনো জেন্ডার নিয়ে পীড়িত হইনা দিদি। আমার মন্তব্যে ‘ছেলেদের’ বলতে জেন্ডার নির্বিশেষে এপ্রজন্মের সব তরুণ-তরুণীদের বুঝিয়েছি, ভিন্নরকম মনে হলে, অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির কারনে হাতজোড় ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আসলেই ব্যাপারটি খুব হতাশা জনক।আসিফ তার কিছু পোষ্টে অভিজিত দা সহ কিছু লেখকের লিখার কিছু অংশ ব্যবহার করেছেন এবং পরে তা স্বীকারও করেছেন। কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি বিভিন্ন ব্লগের কিছু ব্লগার একাট্ট হয়েই আসিফের সাথে পা মারিয়ে ব্লগে ঝগড়া বাধাতেন।কিন্তু এখন যখন আ্স্তিক নাস্তিক ভেদাভেদ ভুলে গ্রেফতার কৃ্ত সব ব্লগারদের পাশে দাঁড়াবার সময় তখনও সেই সব ব্লগারদের কেউ কেউ ফেইসবুকে পোষ্ট দিয়ে বলছেন আসিফের জন্যেই নাকি ব্লগারদের এই দুর্দশা। সত্যি হাস্যকর। দুর্ভাগ্য জনক হলে সত্যি এসকল মন্তব্যকারিদের কেউ কেউ আবার শাহবাগ আন্দোলনের নাকি জড়িত!
@জাহিদ রাসেল, আসিফের হাজারটা সমস্যা থাকতে পারে কিন্তু সে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করত। আপনি আমি চাই বা না চাই আসিফ এখন অনেকটাই বাক-স্বাধীনতার সিম্বল। যে যার অবস্থান থেকে এখন তীব্র প্রতিবাদ করা উচিত।