(স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় দেওয়ায় উদ্দেশ্যে এই লেখা। ফাঁকে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। ভুল ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিয়েন।)

১৯৭১ সাল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে রুখে দাঁড়ায় বাঙ্গালীরা ভারত তাতে সক্রিয় সহযোগিতা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আমরা মুসলমান বা হিন্দু সাম্প্রদায়িক চিন্তার চেয়ে যে চিন্তা কাজ করে তা হলো বাঙালীত্বের মনোভাব হিন্দু, মুসলিম সবাই একযোগে কাজ করে। কিন্তু তাহলে কি হবে? বাংলায় তো মীরজাফর করে একটা ঘৃণ্য নাম আছে তার উত্তরসূরিরা তো কোন মহৎ কাজ বানচাল করতে পিছপা হবে না তাই স্বাভাবিক। হ্যাঁ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে একশ্রেণী তার ব্যতিক্রম ছিল না। যারা ইসলামের ধোয়া তুলে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে এবং পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয় শুধু তাই নয় বাংলার বিরুদ্ধে গিয়ে পাকিস্তানী সেনাদের সহযোগিতা এবং খুন ধর্ষণের মতো মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এরা। এই রাজাকাররা এবং পাকি সেনারা মিলে ৩ লক্ষ বাংলার মা-বোনকে নিষ্ঠুরভাবে ধর্ষণ করে এবং ৩০ লক্ষ নারী-পুরুষকে খুন করে।
এই মৌলবাদী রাজাকার বাহিনীর মির্জাফরির প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন বিদেশী লেখা থেকেও
পাকিস্তানী মাধ্যমিক শ্রেণীর ইতিহাস বইতে এই মৌলবাদী রাজাকারদের সম্পর্কে লেখা আছে, THE ARMED VOLUNTEERS OF JAMAT-E-ISLAMI also took part (in crackdown) and used the occasion to settle old scores with their political opponents. অর্থাৎ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়তায় স্বেচ্ছায় নিজ জাতির বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয় জামায়াত।
পাকিস্তানের বর্বর জেনারেল নিয়াজীতো তার বই উৎসর্গই করেছেন এই বর্বর রাজাকারদের উদ্দেশে।
১৯৭১ সালের ২৩ জুলাই ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ সাংবাদিক পিটার আর ক্যান এভাবেই বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী, শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর ভূমিকা।
একাত্তরে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের যে ধরনের জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের আর কোথাও তেমনটি ঘটেনি। মানবতা-বিরোধী এসব অপরাধে পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে এ দেশের কিছুসংখ্যক দালাল। এমনকি ওরা রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামে বিভিন্ন বাহিনী গঠন করে নিজেরাও হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ,লুটপাট, অগি্নসংযোগ প্রভৃতি অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। বিজয়ের আগমুহূর্তে ওরা দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের ধরে বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। মূলত জামায়াতে ইসলামীর আবেদনে এসব আধাসামরিক বাহিনী গঠন করেছিল পাকিস্তান সরকার। এসব বাহিনীর মূল শক্তি ছিল জামায়াতের ছাত্রকর্মীরা।
মার্কিন লেখক রবার্ট পেইন তাঁর ‘ম্যাসাকার’ গ্রন্থে লিখেছেন,
’…ধর্মান্ধ ছাত্রদের নিয়ে গোপনে তৈরি হলো আলবদর বাহিনী। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের গোপনে হত্যার চক্রান্ত করে। শুধু চক্রান্তই নয়, আলবদররা এই সব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল লোকচক্ষুর আড়ালে। একই উদ্দেশ্য নিয়ে সে সময় আরও একটি বাহিনী তৈরি করা হয়। এর নাম ছিল আলশামস।’ রবার্ট পেইন আরও বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর মতো সংগঠনের ধর্মান্ধ মানুষগুলোকে নিয়ে ধর্মরক্ষার নামে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ গোপনে গঠন করেছিল এ বাহিনী। এদের বিশ্বস্ত সহযোগিতায় আরও হত্যায় বিষাদক্লিষ্ট হয়েছে পূর্ব পাকিস্তান। এরা আওয়ামী লীগ নেতাদের ধরা বা হত্যা করার ব্যাপারে পাকিস্তানি সৈন্যদের ব্যাপক সহযোগিতা করেছিল।’
মৌলবাদী শক্তির সহযোগীটা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হয় নি পাকিস্তানের। ভারতীয় মিত্রবাহিনী এবং বাংলার মুক্তিবাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি হয়। রাজাকাররাও সাধারণ মানুষের সঙ্গে গা ঢাকা দেয়।
গা ঢাকা দিলে কি হবে? তাদের চরিত্র কি আর বদলে যাবে? তারাই তলে তলে বাংলাদেশকে বাংলাস্তান করার স্বপ্ন ছাড়তে পারলো না।
প্রথমে বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলাদেশকে একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসাবে উল্লেখ করলেও ক্ষমতার পালাবদলে ধর্ম নিরপেক্ষতার উপরে কাঁচি চালিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হল ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পরিবেশও তৈরি হয়ে গেলো। বাংলাদেশে ইসলামধর্ম পক্ষান্তরে রাষ্ট্রধর্মই হয়ে গেলো।
যতই যড়যন্ত্র হোক না কেন যারা এত কষ্টের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছেন যারা তাদের দেশকে ভালবাসেন তাদের মনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকে।
বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ধর্মান্ধতার বদলে মুক্তবুদ্ধির চর্চা শুরু হয়। আগ্নেয়াস্ত্রের বদলে অনেকে কলমকে অস্ত্র হিসাবে ধারণ করেন। বেরিয়ে আসেন বিভিন্ন ধর্মান্ধতা বিরুধী লেখক যারা ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের চরম নির্যাতনের শিকার হন। তার মধ্যে আছে প্রথা বিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরিন প্রমুখেরা। হুমায়ুন আজাদের ক্ষুরধার লেখার জন্য প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদীদের দ্বারা মারাত্মকভাবে তিনি আহত হন এবং পরে এই কারণে জামার্নিতে তিনি মারা যান। তসলিমা নাসরিনকে ধর্মবিরোধী লেখার দায়ে দেশ থেকে বিদায় করা হয়।
এই প্রসঙ্গে অনেক সময় মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী মানুষরাও আমার মতামত জানতে প্রশ্ন করেছেন – যে তসলিমা একজন স্বেচ্ছাচারিণী তাকে কি সমর্থন করা যায়? প্রত্যুতরে আমি বলেছিলাম – সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কারও লেখা বা যুক্তি যদি আমার পছন্দ না হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ফতোয়াজারী করতে পারি না তার বিরুদ্ধে অস্ত্র নেওয়া বা মেরে ফেলার মতো অন্যায় করতে পারি না। কারণ তিনি তো অস্ত্র নিয়ে কাউকে আঘাত করছেন না, শুধু মাত্র লেখালেখি করছেন। তার লেখা খণ্ডন করে প্রতি-লেখা আমি দিতে পারি। পাঠকরা পড়েই কোনটা ভাল কোনটা মন্দ গ্রহণ করবে।
ধীরে ধীরে ইন্টারনেট ব্যবস্থার প্রচলন হলো আর তা বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে শানিত করার রাস্তা আরও প্রশস্ত হলো। কারণ মুক্তচিন্তকরা বোঝতে পারলেন তারা একা নন। তাদের মতো চিন্তা করার মানুষ প্রচুর আছে। ব্লগে এবং সুস্যায়াল মিডিয়াতে তারা লেখালিখির মাধ্যমে একত্রিত হওয়ার সুযোগ পেলেন।
৪-৫ বৎসর ধরে অনলাইনে লেখালেখির সুবাদে পশ্চিম বাংলা এবং বাংলাদেশের অনেক মানুষের সঙ্গে মতের আধান প্রধান শুরু হলো এবং অনেকের সঙ্গেই আত্মিক একটা ভাবের সূচনাও হলো। তাই বাংলাদেশ যে আমার দেশের থেকে বাইরে চিন্তাও আমার মাথা থেকে উদাও হয়ে গেলো। কারণ তাদের সঙ্গে আমার ভাষা, সংস্কৃতির অদ্ভূদ মিলই এই কারণ।
আরও হয়তো আমি উগ্র জাতীয়তাবাদী নয় বলে। পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষকেই সমান চোখে দেখার চেষ্টা করি। পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষেরই মঙ্গল কামনা করি। আমার দেশের একজন নিপীড়িত মানুষের জন্য যেমন মন ভারাক্রান্ত হয় তেমনি পাকিস্থানের একজন নিপীড়িত মানুষের জন্য আমার মন ভারাক্রান্ত হয়।
যাইহোক এই অনলাইন মুক্তচিন্তকরা যে শুধু ভার্চুয়াল জগতে সীমাবদ্ধ তা নয় উনারা বিভিন্ন ইভেন্ট (গন ধর্ষণ থেকে শুরু করে নানা সামাজিক অনিয়মে বিরুদ্ধে) উপলক্ষে সভা সমাবেশ করার ব্যবস্থা করেন।
সেই সূত্রে নানা ইভেন্ট উপলক্ষে আমিও আমন্ত্রন পেতাম। যেহেতু আমি দূরে থাকি তাই সভা সমাবেশে যোগ দেওয়া সম্ভব হতো না। শুধুমাত্র তাদের কার্যক্রমকে সমর্থন করতাম।
সেইভাবে গত ৫ ফেব্রুয়ারী একটা ইভেন্টের সমাবেশে সব অনলাইন এক্টিভিস্ট , ব্লগারদের একত্রিত হওয়ার আহ্বান দেখতে পাই। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখলাম ৭১এর যুদ্ধাপরাধের আসামী মৌলবাদী জামাতে ইসালমী দলের নেতা রাজাকার কাদের মোল্লাকে ফাঁসির বদলে যাবত-জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়। যে এত খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত তাকে ফাঁসীর বদলে যাবৎজীবন কারাদণ্ড একটা আশ্চর্যজনকই ছিল।
তারপর এই অনলাইন এক্টিভিস্টরা এই রায়ের প্রতিবাদে শাহবাগে রাজপথে জড় হতে থাকেন। কিন্ত এখানে আরেকটা আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে এই সমাবেশকে সমর্থন করে বাংলাদেশের হাজার হাজার বাঙ্গালীরা জড় হতে থাকে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা কেউ বাকি জান নি এতে। টিভি এবং ইন্টারনেটে দেখলাম শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে যতটুকু চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। সেখানে ছোট একটা শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধটি পর্যন্ত শরীরে লিখে রেখেছেন ফাঁসী চাই। মুখে এক চিৎকার রাজাকারদের ফাঁসী চাই, বাঙ্গালী আর জয় বাংলা।
এই আন্দোলনের যে দাবীগুলি গঠিত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম –
১) সকল রাজাকারদের ফাঁসী সুনিশ্চিত করতে হবে।
২) ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট করতে হবে।
৩) জামাতি-ই-ইসলামী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
এই আন্দোলনে সংহতি জানাতে ভারতের গায়করা গান রচনা করে গান গেয়েছেন কবীর সুমন থেকে শুরু করে দোহার ব্যান্ড যা আন্দোলনকারীদের আরও সংঘবদ্ধ করেছে। শাহবাগে বাজছে এই গায়কদের গান।
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান কুর্শিদ বাংলাদেশ সফরে গিয়ে শাহবাগ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকারও এই আন্দোলনে নড়ে বসেছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল আইনের পরিবর্তন হয়েছে।
এদিকে মৌলবাদী শক্তিগুলিও বসে নেই। তারাও আন্দোলন প্রতিহত করতে উঠে পড়ে নেমেছে। এটাই স্বাভাবিক কারণ এটা যে তাদের টিকে থাকার লড়াই।
আন্দোলনকারীদের তথাকথিত‘নাস্তিক’ আখ্যা দেওয়া থেকে শুরু করে আন্দোলনকারী নারীদের ‘বেশ্যা’ আখ্যা দেওয়া কোন কিছুই বাদ দেয় নি তারা। ফেসবুক খুললে উপপ্রচার এখানে নাকি তরুন-তরুনীরা উশৃঙ্খলতা করতে গেছে। ফটোশপের কারসাজিতে সিনেমা জগতের কোন অশ্লিল ছবিকে এডিট করে দেখানো হচ্ছে শাহবাগে কিভাবে তরুন-তরুণীরা অশ্লিতা করছে। কোন একটা টয়েলেটে এডিটের মাধ্যমে কন্ডোমের ছবি দেখিয়ে দেখানো বলা হচ্ছে, শাহবাগে যে কত মা-বোন তাদের সতীত্ব হারাচ্ছেন?
হাস্যকর বটে! যারা খুন, ধর্ষন করতে পিছপা হয় না। তাদের আবার মা-বোনদের সতীত্বের চিন্তা!
অথচ মধ্যপ্রাচ্যে যে গণতন্ত্রের দাবীতে তাহেরের স্কয়ারে আন্দোলন হয়েছিলো সেখানেও নারীদের উপর যৌন হয়রানীর অভিযোগ ওঠেছিলো।
কিন্তু শাহবাগে এত-বড় একটা আন্দোলন এত দিন থেকে চলছে কিন্তু সেখানে একটা যৌন হয়রানির ঘটনাও নেই। নারীরা নিজ মুখে বলছেন – যে তারা শাহবাগে কোন নিরাপত্তা-হীনতায় ভুগছেন না। সেখানে কোন নিরাপত্তা কর্মী নেই তবু ঘরের মতোই নিরাপদ।
যাদের তথাকথিত ‘নাস্তিক’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে তারাই তো প্রকৃত ধার্মিকের কাজ করছেন। বরং অনেক সময় বিভিন্ন ধর্ম প্রতিষ্ঠান থেকেই যৌন হয়রানির খবর ব্যর হয়ে পড়ে।
এত অপপ্রচার চালিয়ে যখন আন্দোলনকে স্তিমিত করা যাচ্ছে না। তখন টার্গেট করা হলো ১৭ জন ব্লগারকে (অনলাইন লেখক) যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। একদিন ফেইসবুক খুলে দেখলাম রাজিব হায়দার ( যিনি থাবা বাবা নামে অনলাইনে লিখতেন) উনাকে নিষ্ঠুরভাবে কুপিয়ে এবং গলা কেটে হত্যা করেছে ছাগুরা (মৌলবাদীদের অনলাইনে ছাগু নামে ডাকা হয়। ছাগল থেকে ছাগু শব্দটির উৎপত্তি)।
প্রথমে বিশ্বাস করতে পারলাম না এই রাজীবের সঙ্গে একসময় ভাল সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে মতনৈক্যের জন্য সম্পর্ক না থাকলেও তার মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে।
তারা তো সফল হতে যাচ্ছে এদিকে অনেক ব্লগারের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে তারা নিরাপত্তা-হীনতায় ভুগছেন। চিন্তা করলাম এই কোন সমাজে আমরা বাস করি? যেখানে ধর্মীয় অনৈতিকতার বিরুদ্ধে যুক্তি সহকারে লেখার অপরাধে খুন হতে হয়। আমরা মুক্তচিন্তকরা তো মনে করি সবকিছুর যেমন প্রতিক্রিয়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে তেমনি ধর্মেরও আছে। তাই সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ধর্মের খারাপ দিকগুলি তুলে আনা প্রয়োজন। আজ হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা, রাজীব, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন আক্রান্ত কাল আমরা হবো না বলে বিশ্বাস কি?
যাইহোক বাংলাদেশ সরকার একটা প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং ১৬ জন ব্লগারকে নিরাপত্তা দান সহ যে সোনার বাংলাদেশ ব্লগে ১৭ জনকে হত্যার তালিকা প্রকাশ করে। সেই ব্লগকে নিষিদ্ধ করে দেয়।
এদিকে আমার উপরও নানা হুমকি আসতে থাকে অনেকে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে না লিখতে বলেন। আমি আমার একটা স্ট্যাটাসে লিখি -অনেকেই আমার ম্যাসেজে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মন্তব্য না করার জন্য বলছেন। যেহেতু আমি ভারতীয়। কিন্তু প্রথমেই আমি বলতে চাই মুক্তমনা, যুক্তিবাদীদের দেশ বলতে কিছু নেই এটা একটা সংকীর্ণতা, ধর্মীয় সংকীর্ণতা আর এর মাঝে ফারাক নেই। আমি মধ্যপ্রাচ্যের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে মন্তব্য করেছি, ব্লগ করেছি কেউ কিছু বলেন নি আমি পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মন্তব্য করেছি কেউ কিছু বলেন নি। তাহলে বাংলাদেশের ব্যাপারে বাঁধা কেন? এই দেশের সাথে তো আমার অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক। আমার প্রপিতামহ পূর্ববাংলার। ৭১এ আমার আত্মীয় স্বজন অত্যাচারিত হয়েছে পাকসেনা এবং রাজাকারদের দ্বারা। আমার দেশের সেনাদের কাটা মুণ্ডু নিয়ে বাংলাদেশে ঘুরেছে পাকসেনারা আর রাজাকাররা তাতে নেচেছে। বাংলাদেশকে সাহায্য করার অপরাধে আমার দেশে এই রাজ্য ত্রিপুরায় মিসাইল ফেলেছে পাকিরা যার প্রমাণ এখনও আছে। তবু আপনাদের অনুরূপে মন্তব্য বন্ধ করে ওয়েট এন্ড সি নীতি গ্রহণ করলাম।
এদিকে এই স্ট্যাটাসের পরিপেক্ষিতে অনেকেই আমাকে লেখালেখি চালিয়ে যেতে বললেন। তাদের অভিমত এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে পৃথিবীর বাঙ্গালীদের সাহায্য একান্ত প্রয়োজন। আর ভারতীয়দের সমর্থন তো আরও প্রয়োজন।
এদিকে খবর পেলাম কলকাতা থেকে কিছু ভারতীয় যুবক সাইকেল যোগে শাহবাগে সংহতি জানাতে গেছেন। আরও জানলাম পশ্চিম বাংলার শিল্প-সাহিত্যিকরা শাহবাগে সংহতি জানাতে এই বাংলায় অনুষ্ঠান করছেন। বোঝতে পারলাম কাঁটা তার আমাদের মনে কাঁটা তার দিতে পারে নি। আমরা অপার বাংলার টানে আমরা এক হয়ে যেতে পারি।
বাংলার মানুষ বুদ্ধিমানের কাজ করেছেন। তারা পাকিস্তান, আফগানিস্তান দেখে শিক্ষা নিয়েছেন, মৌলবাদীদের হাতে দেশ গেলে কি পরিণতি হতে পারে। কারণ আজ এই দুই রাষ্ট্র ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত।
এদিকে বাংলাদেশের অপশক্তিগুলিও বসে থাকছে না হরতাল, ঝটিকা হামলা চালাচ্ছে। গত ১৫ তারিখ জুম্মার নামাজের পর শাহবাগে আক্রমণ চালানোর উদ্দেশ্যে মৌলবাদীরা একত্রিত হতে থাকে। পরবর্তীতে পুলিশ যদিও রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে আক্রমণ প্রতিহত করে।
আজ লাগাতার আন্দোলনের ২১দিন। আন্দোলনকারীরা সফল হন এই কামনা করি। সব অশুভ-শক্তি পরাজিত হোক মুক্তবুদ্ধির জয় হোক। বাংলার মানুষ যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তা বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।