শাহবাগ আন্দোলন জনমনে যে আশার সঞ্চার করেছিল সেখানে এখন এক অনাকাঙ্খিত দুর্যোগের ঘনঘটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । জাতীয় যুদ্ধকে হাইজ্যাক করে সেটাকে এখন পরিনত করা হয়েছে ‘ইসলাম বনাম নাস্তিক’ যুদ্ধে। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র জামাতী প্রপাগান্ডা যন্ত্রের কৃতিত্বে – এমন মনে করাটা বোকামির নামান্তর। শাহবাগ আন্দোলনের সিংহভাগের সাথে নাস্তিকতার কোন সম্পর্ক নেই এটা যেমন সত্য তেমনি তাদের মধ্যে সক্রিয় হার্ডকোর ব্লগারের সংখ্যা বেশী নয়। ধর্মমত নির্বিশেষে শাহবাগ তথা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একাত্তরের যুদ্ধপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে – এটাই বাস্তব। এই বাস্তবতাকে শুধূ শাহবাগের চিত্র দিয়ে দেখলে ভূল করা হবে কারণ শাহবাগে উপস্থিত হতে পারেন নি এমন কোটি কোটি বাংলাদেশী যুদ্ধপরাধীদের শাস্তি কোন অংশে কম কামনা করেন না। কিন্তু একটা জাতীয় দাবী কোন ভেল্কিবাজিতে কেবলমাত্র নাস্তিকদের দাবীতে পরিনত হয়েছে এবং পুরো আন্দোলনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে ? আপনারা হয়তো জামাতী ঘরানার মিডিয়ার বিরামহীন প্রপাগান্ডাকে এর কৃতিত্ব দিতে চাইবেন । কিন্তু এর মধ্যে কতটুকু সত্যতা আছে ? আমরা কি আমাদের নিজেদের অপরিণামদর্শিতাকে এর জন্য বিন্দুমাত্র দায়ী করতে কুণ্ঠিত হব ? সাহেব সাধুরা বহু আগেই তো বলে গেছেন যে , চোর তো চুরি করিবেই , কিন্তু গৃহকর্তাকে সজাগ থাকিতে হইবে !

যে কোন জাতীয় আন্দোলনের সফলতা নির্ভর করে সর্ব শ্রেনীর প্রতিনিধিত্বের উপর । একটি দেশের আপামর জনগন যখন একটি আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে তখনই সেই আন্দোলনের সফলতার সূযোগ থাকে। বাংলাদেশের জনগন এখানে ধর্মমত নির্বিশেষে ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধপরাধের বিচার চাচ্ছে। শাহবাগে কত লক্ষ মানুষ সমবেত হয়েছে তার চেয়েও জরুরী সেখানে কোন কোন শ্রেনীর মানুষ প্রতিনিধিত্ব করছে । বাংলাদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ খেটে খাওয়া মানুষ যাদের জীবনে ইন্টারনেট সংযোগের চাইতে দিনের ভাত রুটির যোগান নিশ্চিত করাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ , নাস্তিকতা সেখানে অনুপস্থিত। এরা সবাই ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুপাতে এই শ্রেনীর মানুষের প্রতিনিধিত্ব আমাদের দেখাতে হবে আন্দোলনের প্লাটফর্মে। ধর্মীয় সমাজের একটা বিরাট প্রভাব বাংলাদেশের সমাজে আছে । এই ধর্মীয় সমাজে যারা প্রভাবশালী বলে পরিচিত – তাদের একাংশকে যে কোন উপায়ে শাহবাগ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। এতে করে শাহবাগ আন্দোলনের সাথে ধর্মের যে কোন সংযোগ নেই সেটা প্রমাণ হবে। প্রয়োজনে আলেমদের দিয়ে ফতোয়া দেয়াতে হবে। দেশের সবচেয়ে ‘শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর’ সমর্থন আদায় করতে হবে । ফাইট ফায়ার উইথ ফায়ার ! রাস্তার রাজনীতির সাথে আর্ম চেয়ার ব্লগের রাজনীতির বিস্তর পার্থক্য যে আছে তা নতুন করে বলে দেয়ার প্রয়োজন নেই। আর্মির সমর্থন না থাকলে কায়রোর তাহরীর আজ তাহরীর থাকতো না !

সবশেষে বাস্তববাদী হতে হবে । বৃহত্তর পরিসরে ইমেজ সংকট আছে এমন ব্যক্তি যদি জাতীয় আন্দোলনের সম্মুখভাগে অবস্হান নেন , তাহলে সেই আন্দোলনে একটা সময় পরে ইমেজ সংকট দেখা দিতে বাধ্য যা জামাতীরা নিজেদের অনুকূলে ব্যবহার করতে পিছপা হবে না। এই ধরনের ব্যক্তিগন তখন আর আন্দোলনের সম্পদ থাকেন না , উনারা তখন দায়ে পরিনত হন। ইতিহাস আমাদের এটাই সাক্ষ্য দেয় । আমরা নিজে নাস্তিক কি না সেটা শাহবাগে দেখানোর কি প্রয়োজন ? নিজামী – মোল্লা গংদের ফাঁসী দেয়ার জন্য রিচার্ড ডকিন্সকে কি আমরা এখন শাহবাগে নিয়ে আসবো ? শাহবাগের সামনে এখন অগ্নি পরীক্ষা এবং এই অগ্নি পরীক্ষায় শাহবাগকে যে কোন মূল্যে হারতে দেয়া যাবেনা কেননা শাহবাগের পরাজয় মানে সমগ্র বাংলাদেশের পরাজয় এবং একাত্তরের ঘাতকদের বিজয়। স্হান – কাল এবং পাত্র হিসেবে রেখে যারা লড়াই করে তাদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারে না। আসুন আমরা সময় থাকতেই নতুন উদ্যমে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি কারণ এখনও আমাদের যেতে হবে বহু দূর !