বুবুজানের চিঠি (২য় পর্ব)

আকাশ মালিক

শ্রদ্ধেয় বুবুজান, বরাবরের মতো শত কোটি সালাম নিবেন। আশা করি দেশের মুক্তিকামী মানুষের চেয়ে ভাল শরীরে, মনে মানসে সুস্থ আছেন। পর সংবাদ, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ শনিবার টেলিভিশনে দেখলাম, নিহত ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের পরিবারকে সমবেদনা ও সান্ত্বনা দিতে আপনি মিরপুরের পলাশনগরে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। আসার পথে সাংবাদিকদের সামনে বলেছেন- জামায়াত-শিবিরের এদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। কথাটা আমার পছন্দ হয় নাই, তাই আরেকটা লেখা মধ্যপথে থামিয়ে এই চিঠিটি লিখতে হলো। কেন বুজান? এবার বুঝি জামাতকে নিষিদ্ধ করেই ছাড়বেন? জামাতকে যখন তখন নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা যে আপনার আছে বা ছিল তা আমি ভাল করেই বুঝি। বুঝলাম না শুধু ৯৬ এ কেন নয়, ২০০৮ এ কেন নয়, হঠাৎ করে ২০১৩ তে এসে এই আইডিয়াটা আসলো কেন আপনার মস্তিষ্কে? শাহবাগ আন্দোলন? এই কাজটা করতে রাজীব খুন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো? বুঝেছি, আপনি রাজনীতির দুনিয়ার মানুষ ভোটের হিসেবে কথা বলেন। আপনি হয়তো টেকনিক্যাল কারণে ৯৬ এ ২০০৮ এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থেকেছেন। আগে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে এদের সকল কর্মী বিএনপিতে যোগদান করতো এবং আওয়ামী লীগের জন্যে খতরনাগ হয়ে যেতো। এখন আর সেই অবস্থা নেই, শাহবাগ আন্দোলন রাস্থা ক্লিয়ার করে দিয়েছে। তা বুবুজান, লজ্জা করেনা দেখে যে,আজ নতুন প্রজন্মকে তাদের লেখা পড়া স্কুল-কলেজের কাজ, হাতের কাগজ কলম ছেড়ে দিয়ে আপনাদের সৃষ্ট আবর্জনা নর্দমা সাফ করার দায়ীত্বটা নিতে হলো? কিসের আইন, কিসের সংসদ, কিসের রাজনীতি, আর কিসের সংবিধান, এরা এ সবের তোয়াক্কা করে? দরকার নাই। তাহলে আপনি কোন জুজুর ভয়ে ভীত হয়ে দুই ট্যাকার মোল্লাদের সাথে হাত মেলান? প্রজন্ম চত্বরের ‘‘জয় বাংলা’’ শ্লোগানের মর্মকথা অনুধাবন করতে পেরেছেন? এর অর্থ হলো-৭১এর চেতনা/ হারিয়ে যেতে দেবোনা। এই চেতনাকে সমূলে বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে চল্লিশটি বছর যাবত। ধংসস্তুপের মাঝেও সুপ্ত অংকুরটি বিকশিত হওয়ার পরিবেশ খুঁজছিল বারবার। এবার কি বুঝেছেন যে, তাসবিহ হাতে ঘুরা আর হেজাব নেকাব পরার আপনার কোনই প্রয়োজন ছিলনা? কোন প্রয়োজন ছিলনা শরিয়া আইন নিয়ে কথা বলার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের সকল সুযোগ সুবিধে আপনাকে সংবিধান দিয়েছিল। কিন্তু আপনি ভুতের ভয়ে ভীত ছিলেন। আপনি নতুন প্রজন্মকে চিনতে ভুল করেছিলেন। আওয়ামী লীগের শত্রুরাও বিশ্বাস করে এই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একমাত্র আওয়ামী লীগের পক্ষেই সম্ভব। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা একমাত্র আওয়ামী লীগই রাখে। বাহাত্তরের সংবিধান হাতে ফিরে পেয়েও আপনি কেন আজ শুধু জামাতকে নিষিদ্ধ করবেন, ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ’ কেন নয়? কিসের ভয় আপনার? কার মন যোগাতে চান? জামাত ছাড়া কোন্ ইসলামী দলটা গনতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে একটু অঙ্গুলী নির্দেশ করুন তো বুবুজান। কেউ নাই। কোন্ ইসলামী দলটা আর কোন মাদ্রাসার ওস্তাদ-ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিল, বা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে নাই বলেন তো দেখি। চল্লিশটা বছর যাবত এতো বোমা এতো খুন এতো সন্ত্রাস, সবটার পেছনেই জামাতে ইসলাম ছিল, আর কোন ইসলাম ছিলনা? দেখেন বাকি সব ইসলামরা জোটবদ্ধ হয়ে কী বলেছেন- ‘ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, জামায়াত একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। আমরা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। দলের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেছেন, আমরা রাম ও বাম রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করছি’। (দৈনিক ইত্তেফাক, রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)

জানেন বুবুজান এই ইসলামী ঐক্যজোটে কারা? খেলাফতে মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, উলামা মশায়েখ পরিষদ, খতমে নবুওত সহ বাংলাদেশের সকল রাজনৈ্তিক ইসলাম। রাজনৈ্তিক ইসলাম একটা মারাত্বক বিষধর সাপ, এক মরণব্যাধি ক্যান্সারের নাম। এই বিষবৃক্ষকে লালন পোষণে আপনারও অবদান আছে, আমি এই সাক্ষী অবশ্যই দেবো। এই বিষবৃক্ষকে উপড়ে ফেলার, সমূলে ধ্বংস করার, কেটে ফেলার সুযোগ আপনার হাতে এসেছিল, আপনি সেই সুযোগ নেন নি। আজও আপনি মূল শেকড় জীবিত রেখে বৃক্ষের ডাল-পালা কাটছেন। কেন বু্বুজান কেন? আমাকে বলুন কেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে আপনি এ সব করেন?

সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম উঠাতে হবে. এমন দাবী এখন করবোনা, কারণ অনেক দেরী করে ফেলেছেন। পঁচাত্তর থেকে ছিয়ান্নব্বই। ৭৫ এ জন্ম নেয়া শিশু ৯৬ এ পূর্ণ যুবক। জন্মের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস, সংবিধানে সাম্প্রদায়ীক শ্লোগান ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ আর ‘বিসমিল্লাহ’ দেখে এসেছে। একুশ বছর নর্দমায় বসত করে আওয়ামী লীগও সেই দুর্গন্ধে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। একজন আওয়ামী মেয়র তো মরার আগে বলেই গেছেন যে, ধর্মনিরপেক্ষতায় তিনি বিশ্বাস করেন না। কথাটা আসলেই ঠিক। একজন মুসলমান ধর্মনিরপেক্ষ হয় কী ভাবে? সে তো তার ধর্মের পক্ষেই থাকবে। যাক সেদিকে আজ যাবোনা। মনে আছে বুবুজান, বাহাত্তরের সংবিধানের মাধ্যমে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সুযোগ আপনার হাতে দুইবার এসেছিল, কিন্তু আপনি তা দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন। ভন্ড জিয়ার পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হওয়ার পরেও পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৩৮ অনুচ্ছেদের টেইলারিং করে তার উপর ছুরি চাকু চালানোর কোন দরকার ছিল? সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আর বিসমিল্লাহ রেখে কী লাভটা হলো? কিচ্ছুই হয় নাই। আপনার হেজাব, নেকাব, তাসবিহ শো আপ, শরিয়ার আইনে যুদ্ধাপরাধীর বিচার, নারী উন্নয়ন নীতিতে শরিয়া বহির্ভুত আইন না করা, কোরান বিরোধী বিল পাশ না করার অঙ্গীকার, শাহজালালের নামে ইয়ার্পোর্ট, ওলীর নামে বিশ্ববিদ্যালয়, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আর বিসমিল্লাহ রাখা, এই সমস্ত ভন্ডামীর শাহবাগের নতুন প্রজন্মের কাছে কানা কড়ি দাম নাই।

জাতীয় ঐক্যের জুজু দেখায়ে কাল ক্ষেপন করা সঠিক হবেনা। জামাতে ইসলামের স্থান অন্য ইসলাম দখল করে নিবে, তখন আবার পস্তায়ে লাভ হবেনা। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা উঠলে কার গায়ে ফোসকা উঠে আমি জানি। হিন্দু নয়, বৌদ্ধ নয়, খৃষ্টান নয়, গায়ে জ্বালা ধরে রাজনৈ্তিক ইসলামের। সে নিষিদ্ধ হলে হিন্দুপাড়ায় আগুন দিবে কে, বৌদ্ধ মূর্তি ভাঙ্গবে কী ভাবে? আমাকে বহির্বিশ্বের ‘’অন্যান্য গনতান্ত্রিক দেশে ইউরোপ আমেরিকায় ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ নয়’’ এই বিধবার বারোমাসী শুনায়ে লাভ নেই। কোন্ দেশের কোন্ পার্লামেন্টে কোন্ ধর্মভিত্তিক দলের সদস্য আছেন, আমি সেই গানও শুনেছি।

আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেই, ১৯৭২ সালে মূল সংবিধানে ‘ধর্মভিত্তিক বা ধর্মীয় নামযুক্ত’ কোন রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ ছিল না। এ সম্পর্কে ‘৭২ সালের সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, “জনশৃংখলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে; তবে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী কোন সাম্প্রদায়িক সমিতি বা সঙ্ঘ কিংবা অনুরূপ উদ্দেশ্যসম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক অন্য কোন সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার বা তাহার সদস্য হইবার বা অন্য কোন প্রকারে তাহার তত্পরতায় অংশগ্রহণ করিবার অধিকার কোন ব্যক্তির থাকিবে না।” মূল সংবিধানের এই বিধানের কারণে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী ইত্যাদি রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়নি। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক দল বিধিমালা নামে অধ্যাদেশ জারি করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। একইসঙ্গে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জেনারেল জিয়া ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদকে বদলে দেন। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংযোজিত ৩৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়, “জনশৃংখলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ—সাপেক্ষে সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।” ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত যে শর্তাংশ ছিল জিয়াউর রহমান তা ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয় সামরিক ফরমান আদেশ নং—৪ এর মাধ্যমে বাতিল এবং পরবর্তীতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। এর ফলে ১৯৭৯ এর সংসদে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।

আপনার মনে আছে বুবুজান, হাইকোর্ট ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জিয়াউর রহমান সরকারের জারিকৃত বিভিন্ন সামরিক আইন ফরমান আদেশ দ্বারা সংবিধানের যে সকল বিধান সংশোধন করা হয়েছিল সেগুলো অবৈধ ও বাতিল বলে ঘোষণা করে। পরবর্তীতে আপিল বিভাগ কতিপয় মার্জনা সাপেক্ষে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখে। তবে আপিল বিভাগ জিয়া সরকার কর্তৃক সংযোজিত ৩৮ অনুচ্ছেদের কোন মার্জনা দেয়নি। আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী ২০১১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করা হয়। পুনর্মুদ্রিত সংবিধানে ৩৮ অনুচ্ছেদটি ‘৭২ সালের মূল সংবিধানে যে রূপে ছিল সে রূপেই পুনঃস্থাপিত হয়। অর্থাৎ যে বিধানের কারণে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ হয়ে যায় সে বিধানটি সংবিধানে ফেরত আসে। পুনর্মুদ্রিত সংবিধান প্রকাশের পর আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর আর রাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ বলেই গণ্য হবে। কিন্তু আপনি, হ্যাঁ বুবুজান আপনি এক সমাবেশে বলেছিলেন, আপনার সরকারের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের কোন চিন্তা নেই। কেন বুবুজান কী হয়েছে আপনার? কেন আপনি বারবার একই ভুল করেন? পরবর্তীতে পঞ্চদশ সংশোধনীতে ‘৭২ সালের সংবিধানে ‘ধর্মভিত্তিক ও ধর্মীয় নামযুক্ত’ রাজনৈতিক দলের উপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত যে শর্তাংশ ছিল তা বাতিল করে দেয়া হয়। তার স্থলে অন্য কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। এতে বলা হয়, “জনশৃংখলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে; তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি— (ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। বা (ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয়।”

তো বুবুজান, রাজনৈ্তিক ইসলামের মনের ভেতরের উদ্দেশ্যে বুঝতে এতো মানুষের জীবন নিতে হলো, এতো বছর অপেক্ষা করতে হলো? আপনার মনে আছে, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও ন্যাপ এর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ এর কথা? মহাজোটের শরীক বামপন্থি দলগুলো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ সংক্রান্ত ‘৭২ সালের ৩৮ অনুচ্ছেদ সংযোজন ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এই বিধানটি বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছিল? কিন্তু আপনি এ দুটি বিষয়ে অনড় রইলেন।

একবার পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখুন তো বুবুজান, ১৭ আগষ্ট, ২১ আগষ্ট, সাতক্ষীরা, রামু, উদীচি, আদালত, সিনেমা, থিয়েটার, তাসলিমা, দাউদ হায়দার, হুমায়ুন আযাদ, শামসুর রহমান, আহমেদ শরিফ, আসিফ, লালন ভাস্কর্য, শাবির ভাস্কর্য এর কোথাও অন্য ধর্ম আছে কি না? সুতরাং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বললে রাজনৈতিক ইসলামের গায়ে আগুন লাগবে এটাই স্বাভাবিক। ইতিমধ্যে তাদের চুলকানী শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু আপনার ভয় কিসের? আপনার সাথে আছে বাহাত্তরের সংবিধান আর দুনিয়া কাঁপিয়ে দেয়ার মত ক্ষমতাধর প্রজন্ম চত্বরের সৈনিকেরা। যে শাহবাগ সারা বাংলাদেশকে তিন মিনিটের জন্যে স্তব্ধ করে দিতে পারে, তারা এক সংসদকে কী করতে পারবে বুঝতে পারেন না? জামাতে ইসলামের রাজনীতি নয়, নিষিদ্ধ করুন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি। ভুতের ভয় নিয়ে দেশ চালালে তো বুবুজান পদে পদে বিপদের সমুহ সম্ভাবনা আছে। ঘর থেকে ভুত তাড়ান, নইলে কত রাজিবের মাকে আপনি কতবার মিথ্যে সান্তনা দিবেন?

ইতি-
আপনার স্নেহধন্য ছোট ভাই
আকাশ।
ইংল্যান্ড, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।