বুবুজানের চিঠি (২য় পর্ব)
আকাশ মালিক
শ্রদ্ধেয় বুবুজান, বরাবরের মতো শত কোটি সালাম নিবেন। আশা করি দেশের মুক্তিকামী মানুষের চেয়ে ভাল শরীরে, মনে মানসে সুস্থ আছেন। পর সংবাদ, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ শনিবার টেলিভিশনে দেখলাম, নিহত ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের পরিবারকে সমবেদনা ও সান্ত্বনা দিতে আপনি মিরপুরের পলাশনগরে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। আসার পথে সাংবাদিকদের সামনে বলেছেন- জামায়াত-শিবিরের এদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। কথাটা আমার পছন্দ হয় নাই, তাই আরেকটা লেখা মধ্যপথে থামিয়ে এই চিঠিটি লিখতে হলো। কেন বুজান? এবার বুঝি জামাতকে নিষিদ্ধ করেই ছাড়বেন? জামাতকে যখন তখন নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা যে আপনার আছে বা ছিল তা আমি ভাল করেই বুঝি। বুঝলাম না শুধু ৯৬ এ কেন নয়, ২০০৮ এ কেন নয়, হঠাৎ করে ২০১৩ তে এসে এই আইডিয়াটা আসলো কেন আপনার মস্তিষ্কে? শাহবাগ আন্দোলন? এই কাজটা করতে রাজীব খুন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো? বুঝেছি, আপনি রাজনীতির দুনিয়ার মানুষ ভোটের হিসেবে কথা বলেন। আপনি হয়তো টেকনিক্যাল কারণে ৯৬ এ ২০০৮ এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থেকেছেন। আগে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে এদের সকল কর্মী বিএনপিতে যোগদান করতো এবং আওয়ামী লীগের জন্যে খতরনাগ হয়ে যেতো। এখন আর সেই অবস্থা নেই, শাহবাগ আন্দোলন রাস্থা ক্লিয়ার করে দিয়েছে। তা বুবুজান, লজ্জা করেনা দেখে যে,আজ নতুন প্রজন্মকে তাদের লেখা পড়া স্কুল-কলেজের কাজ, হাতের কাগজ কলম ছেড়ে দিয়ে আপনাদের সৃষ্ট আবর্জনা নর্দমা সাফ করার দায়ীত্বটা নিতে হলো? কিসের আইন, কিসের সংসদ, কিসের রাজনীতি, আর কিসের সংবিধান, এরা এ সবের তোয়াক্কা করে? দরকার নাই। তাহলে আপনি কোন জুজুর ভয়ে ভীত হয়ে দুই ট্যাকার মোল্লাদের সাথে হাত মেলান? প্রজন্ম চত্বরের ‘‘জয় বাংলা’’ শ্লোগানের মর্মকথা অনুধাবন করতে পেরেছেন? এর অর্থ হলো-৭১এর চেতনা/ হারিয়ে যেতে দেবোনা। এই চেতনাকে সমূলে বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে চল্লিশটি বছর যাবত। ধংসস্তুপের মাঝেও সুপ্ত অংকুরটি বিকশিত হওয়ার পরিবেশ খুঁজছিল বারবার। এবার কি বুঝেছেন যে, তাসবিহ হাতে ঘুরা আর হেজাব নেকাব পরার আপনার কোনই প্রয়োজন ছিলনা? কোন প্রয়োজন ছিলনা শরিয়া আইন নিয়ে কথা বলার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের সকল সুযোগ সুবিধে আপনাকে সংবিধান দিয়েছিল। কিন্তু আপনি ভুতের ভয়ে ভীত ছিলেন। আপনি নতুন প্রজন্মকে চিনতে ভুল করেছিলেন। আওয়ামী লীগের শত্রুরাও বিশ্বাস করে এই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একমাত্র আওয়ামী লীগের পক্ষেই সম্ভব। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা একমাত্র আওয়ামী লীগই রাখে। বাহাত্তরের সংবিধান হাতে ফিরে পেয়েও আপনি কেন আজ শুধু জামাতকে নিষিদ্ধ করবেন, ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ’ কেন নয়? কিসের ভয় আপনার? কার মন যোগাতে চান? জামাত ছাড়া কোন্ ইসলামী দলটা গনতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে একটু অঙ্গুলী নির্দেশ করুন তো বুবুজান। কেউ নাই। কোন্ ইসলামী দলটা আর কোন মাদ্রাসার ওস্তাদ-ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিল, বা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে নাই বলেন তো দেখি। চল্লিশটা বছর যাবত এতো বোমা এতো খুন এতো সন্ত্রাস, সবটার পেছনেই জামাতে ইসলাম ছিল, আর কোন ইসলাম ছিলনা? দেখেন বাকি সব ইসলামরা জোটবদ্ধ হয়ে কী বলেছেন- ‘ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, জামায়াত একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। আমরা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। দলের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেছেন, আমরা রাম ও বাম রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করছি’। (দৈনিক ইত্তেফাক, রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)
জানেন বুবুজান এই ইসলামী ঐক্যজোটে কারা? খেলাফতে মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, উলামা মশায়েখ পরিষদ, খতমে নবুওত সহ বাংলাদেশের সকল রাজনৈ্তিক ইসলাম। রাজনৈ্তিক ইসলাম একটা মারাত্বক বিষধর সাপ, এক মরণব্যাধি ক্যান্সারের নাম। এই বিষবৃক্ষকে লালন পোষণে আপনারও অবদান আছে, আমি এই সাক্ষী অবশ্যই দেবো। এই বিষবৃক্ষকে উপড়ে ফেলার, সমূলে ধ্বংস করার, কেটে ফেলার সুযোগ আপনার হাতে এসেছিল, আপনি সেই সুযোগ নেন নি। আজও আপনি মূল শেকড় জীবিত রেখে বৃক্ষের ডাল-পালা কাটছেন। কেন বু্বুজান কেন? আমাকে বলুন কেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে আপনি এ সব করেন?
সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম উঠাতে হবে. এমন দাবী এখন করবোনা, কারণ অনেক দেরী করে ফেলেছেন। পঁচাত্তর থেকে ছিয়ান্নব্বই। ৭৫ এ জন্ম নেয়া শিশু ৯৬ এ পূর্ণ যুবক। জন্মের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস, সংবিধানে সাম্প্রদায়ীক শ্লোগান ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ আর ‘বিসমিল্লাহ’ দেখে এসেছে। একুশ বছর নর্দমায় বসত করে আওয়ামী লীগও সেই দুর্গন্ধে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। একজন আওয়ামী মেয়র তো মরার আগে বলেই গেছেন যে, ধর্মনিরপেক্ষতায় তিনি বিশ্বাস করেন না। কথাটা আসলেই ঠিক। একজন মুসলমান ধর্মনিরপেক্ষ হয় কী ভাবে? সে তো তার ধর্মের পক্ষেই থাকবে। যাক সেদিকে আজ যাবোনা। মনে আছে বুবুজান, বাহাত্তরের সংবিধানের মাধ্যমে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সুযোগ আপনার হাতে দুইবার এসেছিল, কিন্তু আপনি তা দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন। ভন্ড জিয়ার পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হওয়ার পরেও পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৩৮ অনুচ্ছেদের টেইলারিং করে তার উপর ছুরি চাকু চালানোর কোন দরকার ছিল? সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আর বিসমিল্লাহ রেখে কী লাভটা হলো? কিচ্ছুই হয় নাই। আপনার হেজাব, নেকাব, তাসবিহ শো আপ, শরিয়ার আইনে যুদ্ধাপরাধীর বিচার, নারী উন্নয়ন নীতিতে শরিয়া বহির্ভুত আইন না করা, কোরান বিরোধী বিল পাশ না করার অঙ্গীকার, শাহজালালের নামে ইয়ার্পোর্ট, ওলীর নামে বিশ্ববিদ্যালয়, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আর বিসমিল্লাহ রাখা, এই সমস্ত ভন্ডামীর শাহবাগের নতুন প্রজন্মের কাছে কানা কড়ি দাম নাই।
জাতীয় ঐক্যের জুজু দেখায়ে কাল ক্ষেপন করা সঠিক হবেনা। জামাতে ইসলামের স্থান অন্য ইসলাম দখল করে নিবে, তখন আবার পস্তায়ে লাভ হবেনা। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা উঠলে কার গায়ে ফোসকা উঠে আমি জানি। হিন্দু নয়, বৌদ্ধ নয়, খৃষ্টান নয়, গায়ে জ্বালা ধরে রাজনৈ্তিক ইসলামের। সে নিষিদ্ধ হলে হিন্দুপাড়ায় আগুন দিবে কে, বৌদ্ধ মূর্তি ভাঙ্গবে কী ভাবে? আমাকে বহির্বিশ্বের ‘’অন্যান্য গনতান্ত্রিক দেশে ইউরোপ আমেরিকায় ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ নয়’’ এই বিধবার বারোমাসী শুনায়ে লাভ নেই। কোন্ দেশের কোন্ পার্লামেন্টে কোন্ ধর্মভিত্তিক দলের সদস্য আছেন, আমি সেই গানও শুনেছি।
আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেই, ১৯৭২ সালে মূল সংবিধানে ‘ধর্মভিত্তিক বা ধর্মীয় নামযুক্ত’ কোন রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ ছিল না। এ সম্পর্কে ‘৭২ সালের সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, “জনশৃংখলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে; তবে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী কোন সাম্প্রদায়িক সমিতি বা সঙ্ঘ কিংবা অনুরূপ উদ্দেশ্যসম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক অন্য কোন সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার বা তাহার সদস্য হইবার বা অন্য কোন প্রকারে তাহার তত্পরতায় অংশগ্রহণ করিবার অধিকার কোন ব্যক্তির থাকিবে না।” মূল সংবিধানের এই বিধানের কারণে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী ইত্যাদি রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়নি। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক দল বিধিমালা নামে অধ্যাদেশ জারি করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। একইসঙ্গে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জেনারেল জিয়া ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদকে বদলে দেন। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংযোজিত ৩৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়, “জনশৃংখলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ—সাপেক্ষে সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।” ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত যে শর্তাংশ ছিল জিয়াউর রহমান তা ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয় সামরিক ফরমান আদেশ নং—৪ এর মাধ্যমে বাতিল এবং পরবর্তীতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। এর ফলে ১৯৭৯ এর সংসদে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
আপনার মনে আছে বুবুজান, হাইকোর্ট ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জিয়াউর রহমান সরকারের জারিকৃত বিভিন্ন সামরিক আইন ফরমান আদেশ দ্বারা সংবিধানের যে সকল বিধান সংশোধন করা হয়েছিল সেগুলো অবৈধ ও বাতিল বলে ঘোষণা করে। পরবর্তীতে আপিল বিভাগ কতিপয় মার্জনা সাপেক্ষে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখে। তবে আপিল বিভাগ জিয়া সরকার কর্তৃক সংযোজিত ৩৮ অনুচ্ছেদের কোন মার্জনা দেয়নি। আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী ২০১১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করা হয়। পুনর্মুদ্রিত সংবিধানে ৩৮ অনুচ্ছেদটি ‘৭২ সালের মূল সংবিধানে যে রূপে ছিল সে রূপেই পুনঃস্থাপিত হয়। অর্থাৎ যে বিধানের কারণে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ হয়ে যায় সে বিধানটি সংবিধানে ফেরত আসে। পুনর্মুদ্রিত সংবিধান প্রকাশের পর আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর আর রাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ বলেই গণ্য হবে। কিন্তু আপনি, হ্যাঁ বুবুজান আপনি এক সমাবেশে বলেছিলেন, আপনার সরকারের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের কোন চিন্তা নেই। কেন বুবুজান কী হয়েছে আপনার? কেন আপনি বারবার একই ভুল করেন? পরবর্তীতে পঞ্চদশ সংশোধনীতে ‘৭২ সালের সংবিধানে ‘ধর্মভিত্তিক ও ধর্মীয় নামযুক্ত’ রাজনৈতিক দলের উপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত যে শর্তাংশ ছিল তা বাতিল করে দেয়া হয়। তার স্থলে অন্য কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। এতে বলা হয়, “জনশৃংখলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে; তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সঙ্ঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি— (ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। বা (ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয়।”
তো বুবুজান, রাজনৈ্তিক ইসলামের মনের ভেতরের উদ্দেশ্যে বুঝতে এতো মানুষের জীবন নিতে হলো, এতো বছর অপেক্ষা করতে হলো? আপনার মনে আছে, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও ন্যাপ এর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ এর কথা? মহাজোটের শরীক বামপন্থি দলগুলো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ সংক্রান্ত ‘৭২ সালের ৩৮ অনুচ্ছেদ সংযোজন ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এই বিধানটি বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছিল? কিন্তু আপনি এ দুটি বিষয়ে অনড় রইলেন।
একবার পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখুন তো বুবুজান, ১৭ আগষ্ট, ২১ আগষ্ট, সাতক্ষীরা, রামু, উদীচি, আদালত, সিনেমা, থিয়েটার, তাসলিমা, দাউদ হায়দার, হুমায়ুন আযাদ, শামসুর রহমান, আহমেদ শরিফ, আসিফ, লালন ভাস্কর্য, শাবির ভাস্কর্য এর কোথাও অন্য ধর্ম আছে কি না? সুতরাং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বললে রাজনৈতিক ইসলামের গায়ে আগুন লাগবে এটাই স্বাভাবিক। ইতিমধ্যে তাদের চুলকানী শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু আপনার ভয় কিসের? আপনার সাথে আছে বাহাত্তরের সংবিধান আর দুনিয়া কাঁপিয়ে দেয়ার মত ক্ষমতাধর প্রজন্ম চত্বরের সৈনিকেরা। যে শাহবাগ সারা বাংলাদেশকে তিন মিনিটের জন্যে স্তব্ধ করে দিতে পারে, তারা এক সংসদকে কী করতে পারবে বুঝতে পারেন না? জামাতে ইসলামের রাজনীতি নয়, নিষিদ্ধ করুন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি। ভুতের ভয় নিয়ে দেশ চালালে তো বুবুজান পদে পদে বিপদের সমুহ সম্ভাবনা আছে। ঘর থেকে ভুত তাড়ান, নইলে কত রাজিবের মাকে আপনি কতবার মিথ্যে সান্তনা দিবেন?
ইতি-
আপনার স্নেহধন্য ছোট ভাই
আকাশ।
ইংল্যান্ড, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
@ আকাশ মালিক
আপনি প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখলেন ,কিন্তু এই চিঠি ত প্রধানমন্ত্রী পড়বেন না ;পড়বেন কি ?না পড়লে লিখে কি লাভ হল ?একটু বুঝিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব ।
অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা, আর অভিনয়। এটাই হচ্ছে রাজনীতি।
@তামান্না ঝুমু,
@তামান্না ঝুমু,
(Y)বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আসলে তাই। খুব কম নেতাই পারেন ক্ষমতার মোহ কে দূরে রেখে শুধু দেশ ও জনগনের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে। আবার অন্যদিকে বলা যায় নেতার কাজ ঠিকভাবে করবার জন্যই তার ক্ষমতার প্রয়োজন। আসলে ক্ষমতার মোহ খারাপ কিছু না, কিন্তু ক্ষমতায় যাবার জন্য ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেয়া, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া, নীতির সাথে আপোষ করা অন্যায়।
মন্তব্যের জবাব দেওয়ায আপনাকে ধন্যবাদ।বেশিরভাগ বন্ধু বান্ধব আত্মীয সজনের কাছে আমি নাস্তিক হিসাবে পরিচিত। ধর্ম নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতে গিয়ে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরে এসব বিষয় নিয়ে ব্লগে লিখার চেষ্টা করলাম। কোন ব্লগে পোস্ট আটকে দেওয়া হল আর কোন ব্লগে পোস্ট লেখার পর করা হল গালাগালি। সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে তাদের গালাগালি থেকেই মুক্তমনা ব্লগের সন্ধান পেলাম। যা হোক অপ্রাসঙ্গিক বিষয়েই বেশি কথা হয়ে যাচ্ছে, এবার আসল কথায় আসি,
আমাদের দেশে একটা কথা আছে বাংলাদেশ হল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি দেশ। এখানের মানুষেরা অসাম্প্রদায়িক। কিন্তু দুঃখহনক হল আমার অবজারভেশন বলে এখানের বেশীরভাগ মানুষই সাম্প্রদায়ীক। তবে তাদের সে সাম্প্রদায়ীকতার বহিঃপ্রকাশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অহিংস।
আমিও একথা জানি।ধর্মের ব্যাপারে আসলে এক একজনের ব্যখ্যা একেক রকম। শুধু সাধারণ মানুষ নয় ধর্মীয় নেতাদেরও একেক জনের একেক মত। মূল বিষয়গুলো বাদ দিলে সৌদী আরবের ইসলাম আর ইরানের ইসলাম বা পাকিস্তানের ইসলাম আর বাংলাদেশের ইসলাম এক নয়। তবে এটুকু স্পষ্ট যে ইসলাম শুধু ব্যক্তি কেন্দ্রিক নয় বরং রাশ্ট্র কেন্দ্রিকও। একজন মানুষ যেমন নামায রোজা করবে তেমনি দূনিয়াতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদও করবে এটা ইসলামের স্পষ্ট বাণী। এখন প্রশ্ন হতে পারে ইসলামী শরীয়া আইন বর্তমান প্রেক্ষপটে যথাপযুক্তকিনা। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মত হচ্ছে মোটেই না। তবে কেউ যদি মনে করেন এটি যথাপযুক্ত এবং শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে মানুষকে তার চিন্তা চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে চান, তবে তার সে প্রক্রিয়াকে একজন মুক্তমণা হিসাবে আমি বাঁধাগ্রস্থ করতে চাই না।
শালীন এবং যুক্তিপূর্ণ আলোচনা সব সময় স্বাগত।
ঠিকই বলেছেন ধর্মের প্রবণতা হচ্ছে তার মতাদর্শ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া। তবে উন্নত বিশ্বে ধর্ম তার এই শক্তি হারিয়েছে, সেসব দেশে সে এখন বিষদাঁতহীন ধোড়া সাপ। সে সব দেশে ধর্মের কু প্রভাবের চেয়ে নুপ্রভাবই বেশি। একজন ধার্মীক মানুষকে বলার দরকার নেই যে তুমি অন্ধকারে আচ্ছ্ন্ন, বরং তাকে আলোকের সন্ধান দিন দেখবেন দুদিন আগে আর পরে সে ধর্মীয় আন্ধকার থেকে বের হয়ে এসেছে।
ঠিকই বলেছেন । তবে যুগযুগ ধরে শত কোটি মানুষ যে আচরণ পালন করে আসছে তা থেকে এবেবারে টেনে বের কবে আনাটা সহজ নয়, তাছাড়া একজন মানুষকে আলোকিত না করে উন্নত মূল্যবোধের সাথে পরিচয় না ঘটিয়ে তাকে একবারে টেনে বের করে এনে শূ্ন্যে দাঁড় করিয়ে দেওয়াটা মনে হয় সঠিকও নয়।সে কারণেই সংস্কারের প্রশ্ন।ধন্যবাদ।
@বিষন্নতা,
আমার অব্জারভেশনও একই রকম।দেশের বেশির ভাগ মানুষ আসলেই সাম্প্রদায়িক, এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অহিংস হলেও, এটা সহিংস হয়েও দাঁড়ায়, বিশেষ করে পারিবারিক,ভাবে।সম্ভবত লোকলজ্জার ভয়েও অনেক সময় বাবা মা, আত্মীয় স্বজন সবাই ধর্ম পালন না করা সন্তানটিকে মানসিক ভাবেই নিজেকে দূরে সরিয়ে দেন।এ ভাবেই অনেক সময় সেই ছেলেটি ( মেয়েদের কথা না হয় নাই বা বললাম) এক ঘরে হয়ে পড়ে আর সেই সাথে তার সামাজিক নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে, যেহেতু নিরাপত্তার প্রাথমিক উৎস, তার নিজের পরিবারই তার দিক থেকে মোটামুটি ভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
আর তাই খোলা মনে মানুষ যে ধর্মের ভুলত্রুটি গুলো নিয়ে আলোচনা করবে, সেই সাহসও অনেক সময় হারিয়ে ফেলে।খুবই দুঃখের বিষয় সন্দেহ নেই।
সেটাই, মানুষের মনের অন্ধকার একদিনে কাটে না।এখানে কিছু ছাড় দিতে হয়, কিছু পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে সুযোগ দিতে হয়, তা না করে ক্রমাগত পুর্বপুরুষের সংস্কারটিকে আঘাত করে গেলে তার ভিতর হয় একধরনের বিরূপ ভাব, না হয় হীনমন্যতা জন্ম নিতে পারে, এতে পুরো প্রক্রিয়াটাই একটা অর্থহীন সময়পচয়ে এবং ক্ষেত্রবিশেষে জাতিগত বিদ্বেষে রূপ নিতে পারে।
আর যখন মানুষ ধর্মের ভুল ত্রুটি গুলোকে সজ্ঞানে বা অবচেতন মনে এড়িয়ে চলতে শুরু করে, সেখানে তার বা তাদের দিকে কটুক্তি ছুঁড়ে না দিয়ে, তাদেরকে উৎসাহিত করা উচিত।দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কিছু মানুষ সেটি না করে, করে থাকেন উল্টোটা। আর এতেই হিতে বিপরীত হয় প্রায়শই।
কাজেই আমার মনে হয় যে সুস্থ আর মার্জিত , শালীন আর যৌক্তিক আলোচনাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করতে পারে। 🙂 । ধন্যবাদ আপনাকেও।
@ আকাশ মালিক
অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে যে বাংলাদেশের মানুষের মন মানসিকতা হয় আপনি জানেন না, না হয় জেনেও না বুঝার ভাণ করছেন। এ দেশের ৮০% লোক ধর্ম ভীরু। দেশের বেশিরভাগ মনুষ যুদ্ধাপরাধির বিচার চায় এটা সত্য, কিন্তু ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে দেশের অধিকংশ মানুষই একমত হবেনা। যদি ভেবে থাকেন শাহাবাগের আনেদালন এ দেশের মানুষের মন মানসিকতা পরিবর্তন করে দিয়েছে তাহলেও ভুল করবেন।প্রকৃত পক্ষে শাহবাগের আন্দলনের ইতিবাচক দিত হচ্ছে এটা তরুণ প্রজন্মের মধ্য একটি অসম্প্রদায়িক দেশপ্রেমের বীজ বুনে দিয়েছে। এই বীজ মহিরুহে পরিণত হতে অনেক সময় লাগবে। তাছাড়া শাহবাগের আনেদালনের সাথে একাত্ম নয় এমন লোকের সংখ্যাও এদেশে নেহায়েত কম না, পরিস্হিতির কারণে তারা চুপ করে আছে বা মিডিয়ার কাভারেজ পাচ্ছে না। এ দেশে ধর্ম ভিত্তিক দলগুলোর সমর্খক সর্খ্যাও কম নয়। বড় দুটো রাজনৈতিক দলের পরেই তাদের অবস্থান। বামপন্থী দলগুলোর এক্টিভিটি আছে, কিন্তু সমর্থক নেই বললেই চলে।
আমিও চাই সাম্প্রদায়িকতা দূর হোক, ধর্মীয় গোঁড়ামী দূর হোক কিন্তু আপনাদের মত তা অগণতান্ত্রিক উপায়ে হোক তা চাই না। মানুষকে শিক্ষিত করুন, সংস্কৃতিবান করুন তার মধ্যে থেকে ধর্মীয গোঁড়ামী স্বাভাবিক ভাবেই দূর হয়ে যাবে, কিন্তু জোর করে যদি কোন কিছু চাপিয়ে দিতে চাওয়া হয় তবে তা হিতে বিপরীতই হবে। এখন ধর্মীয় দল গুলোকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় তবে এরা স্বাভাবিক ভাবেই হয় আন্ডার গ্রউন্ড পলিটিকাল একটিভিটি চালাবে না হয়তো অন্য দলগুলোর ঘাড়ে সাওয়ার হয়ে সে দলগুলোকে আরো সামপ্রদায়িক করে তুলবে।
এ দেশের জন্য সেটা হবে আরো ভয়ঙ্কর।
আপনাদের কথা শুনলে মনে হয় বিশ্বে ধর্মই যেন একমাত্র সমস্যা , তাই যদি হতো তাহলে কমুনিষ্ট দেশ গুলোতে সুখের বন্যা বয়ে যেত।
প্রকৃতপক্ষে ধর্মের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুই দিকই আছে, সংস্কারের মধ্যমে এর নেতিবাচক দিক গুলো স্মরিয়ে ইতিবাচক দিক গুলো তুলে আনলে ধর্মের মাধ্যমেও মানুষের কল্যান সাধন সম্ভব। একজন অশিক্ষিত লোক ধর্মের পাঁকে অর্ধেক নিমজ্জিত অবস্থায় জীবন যাপন করে এ কথা সত্য, কিন্তু তাকে শিক্ষিত না করে,উন্নত মূল্যবোধের সাথে পরিচয় না করিয়ে দিয়ে যদি তার ধর্মকে কেড়ে নেওয়া হয় তবে সে পাঁক মুক্ত হবে না বরং তাতে সম্পূর্ণ ভাবে নিমজ্জিত হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।
@বিষন্নতা,
ধর্মভীরু সেটা ঠিক আছে, তবে ধর্মান্ধ কি?
যদি সেটা না হয় তবে
কেন ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা যাবে না?ধর্ম নিজের ঘরে আর উপাসনালয়ে থাকুক না, এটা নিয়ে রাজনীতি করে মাঠ গরম করে কি লাভ?ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা আর ধর্ম পালন নিষিদ্ধ করা কিন্ত্রু মোটেও এক জিনিস না তাই না?
সুন্দর বলেছেন। (Y) আসলেই জোর করে চাপিয়ে দেয়া জিনিস মানুষ গ্রহণ করে না, তবে ধর্মের ত্রুটি বিচ্যুতি গুলো খোলা মন নিয়ে আলাপ করতে নিশ্চয়ই আপনি অস্বস্তি বোধ করবেন না? 🙂
না ধর্ম একমাত্র সমস্যা না। সমস্যা হল ধর্মান্ধতা। আপনি ব্যক্তিগত ভাবে কারো উপরে ধর্ম না চাপিয়ে দিয়ে যদি নিজে ধার্মিক থাকতে চান, তবে ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম। এটা আপনার অধিকার।
খুবই সত্যি কথা বলেছেন। ধর্ম সংস্কারই একমাত্র ধর্মের নেতিবাচক দিক অনেকটাই দূর করতে পারে, তবে সমস্যা হল যে ধর্মে আছে মানুষের উপর তার নিজের মতাদর্শ চাপিয়ে দেয়ার প্রবনতা।এটা দূর করতে পারলেই মনে হয় না যে ধর্ম পালন কারী, অথবা ধর্ম না পালনকারী দের মধ্যে কোন দ্বন্দ থাকে।
আর হ্যাঁ, ধর্ম সংস্কার করার মাধ্যমে ধর্ম পালন করেও যেমন মানুষের কল্যান করা যায়, তেমনি ধর্ম পালন না করেও কল্যান করা যায়।মুল কথা হল যে ভাল মানুষ, বা খারাপ মানুষ হতে গেলে ধর্ম মানা টা আবশ্যক না, আবার মানলেও সমস্যা নেই।শুধুই ব্যক্তিগত পর্যায় অন্যকে সমস্যা সৃষ্টি না করে ধর্ম কেউ পালন করতে চাইলে, কোন প্রকৃত মুক্ত মনের মানুষেরই মাথাব্যথা থাকা উচিত না। 🙂 ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।
@অর্ফিউস,
সাবাস, আমারো একই বক্তব্য। একারনে আমি আর নূতন করে কিছু লিখার প্রয়োজন মনে করলামনা।
আমার আবারো বক্তব্য-
যার যার ধর্ম শুধু মাত্র তার তার গৃহে ও উপাসানলয়ে সীমাবদ্ধ রাখলে উভয়কুলই রক্ষা হবে।
কারো ধর্মের সামান্যতমও ক্ষতি হইবেনা।
রাজনৈতিক অশান্তিও হইবেনা।
অন্য ধর্ম বা বিশ্বাষের প্রতি মারমুখী আচরন করে সমাজে অনর্থ অশান্তির আগুন জালাবার ও সুযোগ থাকবেনা।
বস্তুতঃ আমাদের মত দেশ গুলীতে ধর্মীয় ক্যাচাল দেশের অগ্রগতির জন্য একটা প্রধান অন্তরায়। জ্ঞ্যান বিজ্ঞানের দিকে যত টুকু দৃষ্টি তার চাইতে ধর্মীয় হিংস্রতার আরো যেন বেশী গুরুত্ব।
মূলত যারা ধর্মের নামে চরম হিংস্রতায় নেমে পড়েছে, তারা নিজেরাও ধর্মীয় মৌলিক নীতিগুলীরও ধার ধারেনা।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
অসাধারন বলেছেন চাকলাদার সাহেব! সততার সাথেই বলছি যে,আপনার মত বিজ্ঞ মানুষের কাছ থেকে আমি এইসব মন্তব্যই আশা করি;একপেশে ভাবে কোন লেখা বা বক্তব্যকে সমর্থন করা না। আশা রাখি ভবিষ্যতে এই বিষয়গুলো নিয়ে আরো ভাল করে ভাববেন।শুভেচ্ছা রইল আপনার প্রতি!! (F)
@অর্ফিউস,
ভালো এবং যুক্তিপূর্ণ কথা বলেছেন। অত্যন্ত ভালো লাগল। (Y)
@আফরোজা আলম, ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
@বিষন্নতা,
আমি বলিনি, আপনি আপনার ইসলামের প্রতি আনুগত্যের কারণে মনের দুঃখ থেকে বলছেন। আমি বিশ্বের কথা বলিনি ধর্মের কথাও বলিনি। হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ধর্মকে আমি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করতেও দেখিনি, সাতক্ষীরা-রামুতেও দেখিনি, লালনের ভাষ্কর্য, শাবির ভাষ্কর্য ভাঙ্গতেও দেখিনি, দেখেছি রাজনৈতিক ইসলামকে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী মানে ইসলাম নিষিদ্ধ করা আর হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে প্রায়রিটি দেয়া যারা মনে করেন, তাদের অন্তর জ্বালাটা কোথায় তা বুঝতে খুব কষ্ট হয়না।
তথাস্তু। ইতিমধ্যে দু একটা আযাদ, আরিফ, আসিফ, রাজিব যদি মরেই যায়, কিছু ইসলাম বিদ্বেষী তাসলিমা, হায়দার যদি দেশান্তরী হয়েই যায়, কিছু ভাষ্কর্য-মূর্তি যদি ভেঙ্গেই পড়ে, যদি কথিপয় মালাউনের ঘর বাড়ি পুড়েই যায় যাক। চলুন আমরা সেই দিনের অপেক্ষায়ই থাকি, যে দিন স্বাভাবিক ভাবে সপ্নের সুখপাখি এসে আমাদের ঘরে ধরা দেবে।
@আকাশ মালিক,
অনেক কিছু বলার ছিল, কিন্তু শুধু শুধু তিক্ততা বাড়িয়ে কোন লাভ নাই। আপনি বাংলাদেশের জনগণকে চিনতে যেমন ভুল করেছেন, তেমনি ভুল করেছেন আমার ক্ষেত্রেও। ইসলামের প্রতি অনুরাগ বা অন্য ধর্মের প্রতি বিরাগ আমার নাই। শুধু একটি কথা বলবো, মুক্তমনা হতে হলে শত্রু, মিত্র সবার ক্ষেত্রে হতে হবে, অন্যথায় তা হবে হিপোক্রেসি।ধন্যবাদ।
@বিষন্নতা,
পারফেক্ট! (Y) (Y)
@আকাশ মালিক,
আপনার পত্র অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে। দেখা যাক পত্রের উত্তর কেমন আসে। (F)
@আফরোজা আলম,
খুব একটা আশানুরুপ হবে তা আশাও করিনা। কিন্তু বলতে তো হয়, ক্ষোভ-দুঃখ বুকে রেখে লাভ নাই প্রকাশ করাই ভাল। তুমি রাজিবের স্মৃতিচারণে রণদীপম বসুর লেখাটা পড়েছো? চোখে জল এসে যায়। তুমি শাহবাগ নিয়ে কিছু লিখনি?
[img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/RAJIB_zps4cc9dbcf.jpg[/img]
@আকাশ মালিক,
ভাই,
ব্যক্তিগত ভাবে লিখেছি। তবে মডারেশনে আছি বলে আমার আশংকা লেখা প্রকাশ হবে কিনা তাই দেয়া হয়নি। আজ একটা কবিতা পোষ্ট করেছি, যে কবিতার রচয়িতা ভারতীয় এক সাংবাদিক।
আমাকে তিনি উপহার দিয়েছেন। মডারেশনের আওতা পেরিয়ে প্রকাশের আশায় আছি। মডারেশন তুলে দিলে হয়তো অনেক লেখায় ইতোমধ্যে দিতে পারতাম। যাক, অন্যরা লিখছে এইটাই আনন্দের কথা।
@আফরোজা আলম,
তুমি লিখো আর পোষ্ট করতে থেকো, মন্তব্য ও কবিতা যখন পেয়েছি তোমার লেখাও এসে পৌছুবে ইনশাল্লাহ।
সহমত, কারণ ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করলেই. জামাত-শিবির পঙ্গু।
ধর্মীয় কাজ কারবার সীমাবদ্ধ থাকুক যার যার গৃহে ও উপাসনালয়ে। রাজপথে বা রাজনীতিতে নয়।
ইউরোপ,আমেরিকা,ভারতে এর চেয়েও অধিক সংখ্যক এবং এদের চাইতেও আরো জোরাল ইমান্দার মুসলমানেরা ধর্ম-রাজনীতি না করেও খুব ভাল ভাবেই মুসলমানিত্ব বজায় রাখতেছেন।
ধর্ম-রাজনীতির ব্যবসা বন্ধ হোক। আর ধোকাবাজী নয়। মুসলমান জাতিকে একটু রেহাই দিন।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
এইতো সাবাস (Y) , এতক্ষনে কাজের কথা বলেছেন।এইটা সত্যি দারুন কথা। তা না আগে কি সব বলতেন যে এই সব অন্যায় অপকর্ম সব ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে ঠিকই আছে!! এইসব না বলে, আজ যেভাবে বললেন, এইভাবে একটু বলেন ভাইজান, মুসলিম রা আস্তে আস্তে বুঝে যাবে।সব কিছুতেই সময় লাগে। হুটপাটা করে কিছুই হয় না।
বুবুজান এই লেখাটা যদি পড়তো তবে নিশ্চয় বুঝতে পারতো তার পায়ের নিচে মাটি নাই। সেই আশ্রয় পেতে তাকে কি করতে হবে। কিন্তু তিনি তার তেলবাজদের দ্বারা সব সময় পরিবৃত্ত থাকেন। তাই মানুষের আকাঙ্খার কথা বুঝতে দেরি করেন।
@ডাইনোসর,
তাদের মাথায় কিছুটা যে ঢুকছে আজকের মখা আলমগীর আর ভখা (ভুদ্ধু) কামরুলের বিবৃতিতে বুঝা গেছে। কিছুটা সহ্য কিছুটা অপেক্ষা তো করতেই হবে, যাবার যে আর জায়গা নেই। বি এন পি সাফ জানিয়ে দিলো তারা জামাতের সাথে থাকবে। জামাতের প্রতি যে সকল ইসলামী দল বাহিরে ঘৃণা দেখায় ভিতরে তারা সব এক খুঁটিতে বাঁধা, আওয়ামী লীগ তাড়াও ফাকিস্তান কায়েম করো। আমরা সব তালেবান বাংলা হবে আফগান। ‘জয় বাংলা’ ধ্বনির কেমন ফজিলত দেখেছেন? ‘জয় বাংলা’ শুনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের ট্রাউজার ভিজে নাজেহাল অবস্থা।
লেখাট পড়ে মন্তব্য করার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
“বহির্বিশ্বের ‘’অন্যান্য গনতান্ত্রিক দেশে ইউরোপ আমেরিকায় ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ নয়’’ এই বিধবার বারোমাসী শুনায়ে লাভ নেই। কোন্ দেশের কোন্ পার্লামেন্টে কোন্ ধর্মভিত্তিক দলের সদস্য আছেন, আমি সেই গানও শুনেছি।”
এই গান শুনিয়ে লাভ নেই কেনো? আপনি কি বাংলাদেশে বিশ্বের একমাত্র সহি গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা চান, যাহা ৭২ এর কোরান শরীফের উপরে ভিত্তি করে গঠিত?
@সফিক,
কোরান শরীফের উপরে ভিত্তি করে নয় বলেই তো আমাদের সংবিধানে ১৫ বার সংশোধনী আনা হয়েছে, সময়ের প্রয়োজনে আরো হবে। কোরান শরীফ তো বদলায়না কারণ সেটা আল্লাহর হাতের লেখা!
আপনি বোধ হয় জানতে চাইছেন ‘’অন্যান্য গনতান্ত্রিক দেশে, ইউরোপ আমেরিকায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ নয়’’ বাংলাদেশে কেন হবে? ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বলতে যে রাজনৈতিক ইসলামকে বুঝানো হয় সে কথা লেখায় উল্লেখ আছে। প্রথমত এই ইসলাম বাংলাদেশের জন্মটাই অস্বীকার করে, অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চার মূল মন্ত্রকেও। গনতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সবটাই ইসলামের নীতি ও আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক। বিগত চল্লিশ বছর যাবত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের মানবতাবিরোধী মর্মকান্ড, সংখ্যালঘু নাগরিকের উপর সাম্প্রদায়ীক আচরণ অত্যাচার, ধর্মীয় সন্ত্রাস এর প্রমাণ। অন্যান্য গনতান্ত্রিক দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি থাকলেও ইসলামের শরিয়া আইনের কুখ্যাত হুদুদ আইন, চোরের হাত কাটা, ভ্যাবিচারীকে মাটিতে পুঁতে পাথর মেরে হত্যা, বোরকা পরা বাধ্যকতা এ জাতীয় কোন ধর্মীয় আইন সেই রাষ্ট্রে প্রয়োগ করতে পারবেনা। বাংলাদেশের ব্যাপারে বিষয়টা ভিন্ন। এখানে সংখ্যাগরিষ্ট অশিক্ষিত দরিদ্র সহজ সরল ধর্মভীরু মানুষের অসচেতেনতা ও ধর্মানুভুতিকে পুঁজি করে রাজনৈ্তিক ইসলাম সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়ীকতা চাষ করার উর্বর ক্ষেত্র পেয়ে যায় যা ইতিমধ্যে প্রমানীত। এখানে গনতান্ত্রিক অধিকার বা বাকস্বাধীনতার নামে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া যায়না। তাকে নিষিদ্ধ করতে হবে দেশ ও নাগরিকের স্বার্থ বা নিরাপত্তার কারণেই।
@আকাশ মালিক,আপনার কথামতো,
কেবল মাত্র মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে, কারন রাজনৈতিক ইসলাম গোখরা সাপ, রাজনৈতিক হিন্দু-ক্রিশ্চিয়ান রা ঢোড়া সাপ।
ইসলামী দলগুলি শরিয়া কায়েমের কথা বলে কিন্তু খ্রীস্টান, হিন্দু, ইহুদী দলগুলো বাইবেল, বেদ কায়েমের কথা বলে না।
বাংলাদেশে বসে সমাজতন্ত্র মানতে চায় না এমন কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। ধর্মনিরপেক্ষতা অস্বীকারকারী তো দূরের কথা।
বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশের অখন্ডতা অস্বীকারকারী কারো রাজনীতি করার অধিকার নেই, যেমনটি ছিলো না পাকিস্তানে।
বিগত চল্লিশ বছরে দেশের মধ্যে যেসব দল খুন-খারাবী অত্যাচার করেছে তাদের মধ্যে কেবল ইসলামীরাই রাজনীতি করাতে পারবে কেবল পারবে না।
আপনি ঠিকই বলেছেন বাংলাদেশের মতো সংখ্যাগরিষ্ট অশিক্ষা কুশিক্ষার দেশে গনতান্ত্রিক অধিকার বা বাকস্বাধীনতা বা মুক্তচিন্তা এসব চলতে পারে না। ঐ সকল ইউরোপ, আমেরিকার কথা এখানে চলবে না।
@সফিক,
গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আকাশ মালিককে ধন্যবাদ বিষয়টি তোলার জন্য। ঠিক এই বিষয়টিই আমি অভিজিৎ ভাইয়ের সাথে আলোচনা করতে চাচ্ছিলাম, সফিক সাহেব ওখানেও অংশগ্রহণ করেছিলেন।
আকাশ মালিক যে কনসার্নগুলো দেখিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের এক্সেপশান তৈরি করতে চাচ্ছেন, সেগুলো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। ওগুলোকে অগ্রাহ্য করা যায় না।
সেক্যুলারিজমের অর্থ বুঝতে বাঙালি ব্যর্থ। রাজনৈতিক স্পেসে সেক্যুলারিজম বলতে এনলাইটেনমেন্টের সেক্যুলারিজম বোঝায়। যেটার অর্থ ধর্মের উপর থেকে রাষ্ট্রের আর রাষ্ট্রের উপর থেকে ধর্মের কালো হাত সরিয়ে নেয়া। এতে রাষ্ট্রের ধর্মীয় আগ্রাসী অনাচার থেকে মানুষ মুক্তি পেলো।
বাংলাদেশে এসে সেক্যুলারিজম হয়ে গেলো সকল ধর্মের প্রতি সম্মান, নয়তো ইহজাগতিকতা। এর কোনোটাই রাজনৈতিক দর্শন নয়। সেক্যুলারিজম রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে দূরে রাখে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে না। এবং এটা সত্যিই কাজে দিয়েছে। যদিও এটা প্রতিষ্ঠার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্তও রাজনৈতিক খ্রিস্টান ধর্ম সমান দন্ত নখরযুক্ত ছিলো। থমাস জেফারসন বলছেন –
সেই রাজনৈতিক খ্রিস্টানের দন্ত নখর ভেঙে দেয়ার জন্যে কিন্তু রাষ্ট্রের হাত ভেঙে দেয়াটাই যথেষ্ঠ ছিলো। রাষ্ট্র তার সিদ্ধান্তে ধর্মীয় বিবেচনা আনতে পারবে না। পিরিয়ড। সংবিধান যদি এই নিরাপত্তাটি নিশ্চিত করে, তাহলে কোনো ধর্মীয় দল নির্বাচিত হয়ে আসলেও তার ম্যানডেট নেই ধর্মীয় বিবেচনায় রাষ্ট্র পরিচালনা করার।
এখন রাজনৈতিক ইসলামের দন্ত নখর ভেঙে দিতে হলেও কি এই এনলাইটেনমেন্টের সেক্যুলারিজমই মোক্ষম হবে? নাকি আরো আগ বাড়িয়ে পৃথিবীর গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক্সেপশান তৈরি করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন পড়বে? লক্ষ্য করুন জামাত শিবির নিষিদ্ধ করা আর ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা কিন্তু এখানে হুবহু একই বিষয় নয়।
এখন প্রশ্নটার উত্তরে দুঃখজনকভাবে সফিক সাহেবের উত্তরটা প্রাসঙ্গিক হয়ে যায় –
এই কথাটা দুঃখজনক। আমি নিশ্চিত উনি যথেষ্ট দুঃখ নিয়েই কথাটা বলেছেন। আমি এটা মানতে চাই না। কিন্তু কথাটা কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার দৈন্য দশার প্রতিই ইঙ্গিত করে। বলে যে, যেখানে এনলাইটেনমেন্টের থিংকাররা রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের জন্যে অধিকারকে আরো সম্প্রসারণ করেছেন (যেমন heresy করার, ধর্মকে ব্যক্তির ইচ্ছাধীনভাবে সম্প্রসারিত করার অধিকার দিয়েছেন) সেখানে আমরা সমাধান করতে কেবল নিষিদ্ধ করার কথা চিন্তা করি। আমাদের ভাবনা হলো নিষিদ্ধ করা আমাদের সমস্যার সমাধান দিবে। এবং সত্যি কথা বলতে আমাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার যে দশা, সামাজিক সাংস্কৃতিক যে বিকাশ, সেখানে সত্যিই এই নিষিদ্ধকরণ বা খোজাকরণই বাস্তব সমাধান হয়ে দেখা দেয়। সংশপ্তক অন্য লেখায় ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তোর যে উপায়টার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেটার কথাই ভাবুন। কমিউনিস্ট পার্টির ব্যর্থ ক্যুয়ের বদলা হিসেবে কমিউনিস্ট কর্মী আর তাদের সাথে লতায় পাতায় জড়িত সশস্ত্র ও নিরীহ ব্যক্তি সহ মোট আধা মিলিয়ন মানুষকে সিআইয়ের সহায়তায় স্রেফ খতম করে দিয়ে সুহার্তো সাহেব আরামেই ত্রিশ বছর শাসন করে গেছেন। দেশের ভিতরে “ক্ষতিকর” কমিউনিস্টদের এমনই দূরীভূত করেছেন যে ওনার পদত্যাগের পর তার বিচারও সম্ভব হয় নি। দেশের ভেতরে সেটা করার সমর্থন ছিলো না। সিআইয়ের দেশ যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের ভূখণ্ডে যে নীতি পালন করবে না, সেই নীতি ইন্দোনেশিয়ায় খাটিয়েছে। হয়তো বাস্তব মনে করেই।
আমি মনে করি, এই নিষিদ্ধতামূলক ভাবনা আমাদের প্রজ্ঞার অভাব। আমাদের প্রয়োজন ধর্ম ও রাষ্ট্রের সেপারেশান। সেটা আওয়ামী লীগকে চাইতে হবে। আওয়ামী লীগ সেটা চায় না। সে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলেও করতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রে ধর্মের ব্যবহার থেকে সে সরে আসবে না। যেভাবে শেখ মুজিব ওনার “ধর্মনিরপেক্ষ” বাংলাদেশে মদ জুয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। ওআইসিতে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে আঁতাতের অভিযোগে ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামিক একাডেমি পুনরায় চালু করেছিলেন। ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ হওয়া বাংলাদেশেও তেমনি ধর্মের জুজুতে ইউটিউব বন্ধ থাকবে। রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের যে প্রণয়ের সম্পর্ক, সেটার ঘটক আওয়ামী লীগ নিজেই হতে চান। ওনারা রাষ্ট্রের সাথে ধর্ম প্রণয়কে নিষিদ্ধ করতে চান না, নিজের বাইরে অন্যান্য ঘটকদের কেবল নিষিদ্ধ করতে চান। দুঃখবশত আমাদের লক্ষ্য সেদিকে নিবিষ্ট নয়। এ কারণেই আমাদের “বাস্তব সমাধান” আধুনিক গণতন্ত্রের চেয়ে আলাদা হতে চলছে।
@রূপম (ধ্রুব),আমি কিন্তু ‘বাংলাদেশের মতো সংখ্যাগরিষ্ট অশিক্ষা কুশিক্ষার দেশে গনতান্ত্রিক অধিকার বা বাকস্বাধীনতা বা মুক্তচিন্তা এসব চলতে পারে না’ এই কথাটি ironically ব্যাংগার্থে বলেছিলাম। আমি এই ধরনের চিন্তায় একদম বিশ্বাসী নই, হলে খামোকা মুক্তচিন্তার ওয়েবসাইটে খামোকা ঘুরঘুর করতাম না।
আসলে আপনার মতো আমিও তথাকথিত এনলাইটেনমেন্ট অনুসারীদের মধ্যে নিষিদ্ধের ফতোয়াবাজীর উৎসাহ দেখে কিছুটা হতাশ। এই নিষিদ্ধ করনের উৎসাহ দেখে ইসলামিস্টরা বলতেই পারে যে তাহলে তাদের ধর্মানুভুতি আঘাতকারী কথাবার্তা নিষিদ্ধ করার চেষ্টার সাথে মুক্তমনাদের পাব্লিক প্লেসে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার উৎসাহের পার্থক্য কোথায়। গনতন্ত্রে মানুষ রাজনীতি করে যে মতবাদ, পলিসি রাষ্ট্র ও সমাজ চালানোর জন্যে শ্রেষ্ঠ মনে করে সেটাকেই প্রচার করে জনসমর্থন আদায় এর চেষ্টাকরে। ইসলামিস্ট, ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট, শিবসেনা-আরএসএস এরা মনে করা ধর্মীয় মূল্যবোধের মধ্যেই রয়েছে দেশ-সমাজ চালানোর সবচেয়ে সেরা তরিকা। রাজনৈতিক স্পেসে তাদের মোকাবেলা না করে সরাসরি নিষিদ্ধ করা প্রচলিত রাজনীতির দূর্বলতাকেই স্পষ্ট করে তুলবে। তুরস্কে তো কামাল আতাতূর্ক এর এনফোর্সড সেক্যুলারিজম এর প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া সেক্যুলারিজমের ফলশ্রুতিতে দূর্বল গনতন্ত্রে বহুদিন ধরে সামরিক বাহিনীর আধিপত্য এবং অবশেষে সেকুলার শক্তি এত দূর্বল যে ইসলামী পার্টি গনতান্ত্রিক পথেই ক্ষমতায় এসে ১০ বছর ধরে এমন বিপুল ভাবে জনপ্রিয় যে অচিরেই তাদের ক্ষমতা থেকে সরার কোনো সম্ভাবনা নেই।
জামাত একটি দেশবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী অর্গানাইজেশন। সুতরাং ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন হিসেবেই তাদের নিষিদ্ধ করা একদম সহজ ও যৌক্তিক পথ। কিন্তু যে বৃহত্তর মতবাদের ছত্রছায়ায় তারা সেইসব অপরাধ করেছে, সেই ইসলামী রাজনীতি কে নিষিদ্ধ করা কোনো গনতন্ত্রের পক্ষে সহজ নয়।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর জার্মানীতে ক্রিমিনাল অর্গানিজেশন হিসেবে নাৎসী পার্টি নিষিদ্ধ হয়েছে ঠিকই কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদী ডানপন্থী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি। কারন একটা মতকে নিষিদ্ধ করা মানে সেই মতকে পুরো এস্টাবলিশমেন্ট বিরোধীতার তকমা দিয়ে ভবিষৎ জনপ্রিয়তার রাস্তা বানিয়ে দেওয়া।
@সফিক,
দয়া করে বলবেন, যে অপরাধে জামাতে ইসলাম দোষী সেই একই অপরাধে অন্য ইসলাম দোষী হবেনা কেন, আর যে অপরাধে জামাতে ইসলাম নিষিদ্ধ হবে সেই একই অপরাধে অন্য ইসলাম নিষিদ্ধ হবেনা কেন?
@আকাশ মালিক,আপনি মূলত একজন ফ্যাসিস্ট মৌলবাদী, আপনাকে শত চেষ্টা করেও মুক্তচিন্তা-গনতন্ত্র শেখানো যাবে না। আমি বার বার বলেছি, সংগঠন নিষিদ্ধ করা যায়, মত নিষিদ্ধ করা যায় না।
আজকে যদি কেউ ইসলামী রাজনীতির নামে নতুন কোন সংগঠন করে, যার সাথে ৭১ এর কোনো সংশ্রব নেই, তাদেরকে কি বলে ঠেকাবেন? বলবেন ইসলামের নামে দেশবিরোধী, মানবতাবিরোধী কাজ অতীতে হয়েছিলো? তাহলে তো বলা যায় কমিউনিজমের নামেও এই দেশে দেশবিরোধী, মানবতাবিরোধী আপরাধ হয়েছিলো। সমাজতন্ত্র ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করায় আপনার সম্মতি আছে কি? বাংগালী জাতীয়তাবাদের নামেও মানবতাবিরোধী কাজ ৭১ এবং পরবর্তীতে হয়েছে, সুতরাং বাংগালী জাতীয়তাবাদকেও নিষিদ্ধ করা হউক।
@সফিক,
আপনিই প্রথম নন, ইসলামের সমালোচনা করি বলে এই উপাধী ইসলামিষ্টরা আমাকে অনেক আগেই দিয়ে রেখেছে।
আপনি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দেন নাই। আমি মত নিষিদ্ধ করার কথা বলিনি, বলেছিলাম- যে অপরাধে জামাতে ইসলাম দোষী সেই একই অপরাধে অন্য ইসলাম দোষী হবেনা কেন, আর যে অপরাধে জামাতে ইসলাম নিষিদ্ধ হবে সেই একই অপরাধে অন্য ইসলাম নিষিদ্ধ হবেনা কেন?
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মা’নে মত নিষিদ্ধ করা ভাবছেন কেন? আপনার ইসলামী মতটা রাষ্ট্রের উপর চাপিয়ে না দিলেই হয়। আপনি সারা দুনিয়াকে আপনার মতের অনুসারী করে ফেলুন কেউ বাধা দিবেনা, রাষ্ট্রকে সেই দায়ীত্ব নিতে হবে কেন? তাবলিগ জামাতও তো একটি মত প্রচার ও প্রকাশ করে, অন্যান্য ধর্মের মানুষেরাও করে। কিন্তু তাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় বা রাজনীতিতে আসতে হবে কেন, অন্য কথায় রাষ্ট্রকে তাদের মত অনুসরণ করে চলতে হবে কেন?
আর গনতন্ত্র? গনতন্ত্রের ঠিক উলটো পথের নাম ইসলামী রাজনীতি। ইসলামে সকল আইন ও সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ, আর গনতন্ত্রে দেশের জনগন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে গেলে নতুন নামে ইসলামী রাজনীতি আসার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
@আকাশ মালিক,ইসলাম একটি মত, ইসলাম একটি সংগঠন নয়। ‘অন্য ইসলাম’ নামক কোনো সংগঠনের নাম আমি শুনিনি।
আপনি শিশুর মতো বারবার এক কথা বলেন, মনে হয় বুঝেও বোঝার ভান না করেন। গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অগনতান্ত্রিক মতকেও রাজনীতির সুযোগ দিতে হয়। নিজের মতকে অন্যের উপরে চাপিয়ে দেয়া যদি রাজনীতিতে নিষিদ্ধের পর্যায়ে ফেলতে হয় তবে আপনার মহানবী এবং আর তার দলটিকেও বাংলাদেশে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হয়।
@সফিক,
মূল টপিকটা ছিল শুধু জামাতে ইসলামের রাজনীতি কেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ নয় কেন? ইসলাম একটি মতই নয়, ইসলাম একটি সংগঠনও। সেটা ব্যাখ্যায় এখন আর যাচ্ছিনা।
আমি শুনেছি। নেজামে ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফতে ইসলাম, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, হরকাতুল জিহাদ, হিজবুত তাহরির, জামাতুল মুজাহিদিন, ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন ইত্যাদি। এরা কেউই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না, এরা কেউই বাংলাদেশের সংবিধান মানেন না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন না। এরা যদি বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারে জামাত কেন পারবেনা, এটাই ছিল আমার মূল প্রশ্ন।
এখানে আর তর্ক বাড়াবোনা। আপনি ভাল থাকুন, ধন্যবাদ।
@সফিক,
আমিও সেটাই মনে করি।হিন্দুরা ঢোড়া সাপ না হতে পারে তবে খ্রিষ্টান রা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে হালে পানি পাবে না।সেই দিন পার হয়েছে অনেক আগেই। আপাতত মুসলিম সহ সব দেশ গুলো তেই ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা জরুরী,কারণ খোদ বিজেপি ও জামাতের মত নীতি নিয়ে চলে না বলেই মনে হয়।
তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো তে নিষিদ্ধ করা এতো সহজ হবে না।
বেশি দূর যাবার দরকার নেই, আমাদের বাংলাদেশেই দেখবেন, যত ঐক্যই আজ থাকুক না কেন, ধর্মের ব্যাপারটায় সবাই খুব স্পর্শকাতর এখনও রয়ে গেছে।
জামাত ছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলোর বিলুপ্তি এখনই মনে হয় না মেনে নেয়ার মত মানসিক অবস্থা বাংলাদেশীদের তৈরী হয়েছে।