লিখেছেন – সাকীব হাসান

“ অন্যায্য আইন কোন আইন ই নয়।–” সন্ত অগাস্টিন।
“অন্যায্য রায় কোন রায় ই নয়।” সমগ্র বাংলাদেশ

পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ হল গণহত্যা। আমাদের দেশে ১৯৭১ এ গত শতকের অন্যতম নারকীয় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিলো। পাকিস্তানী মিলিটারি টানা ৯মাস চালিয়েছিল নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ আর ধ্বংসযজ্ঞের তাণ্ডবলীলা। আর এদেশের যে বিশ্বাসঘাতক, নরপশুদের সর্বতোভাবে সহযোগিতার জন্য তারা এটা করতে সক্ষম হয়েছিলো, তারা হচ্ছে এই রাজাকার, আলবদর,আলশামস।৭১ এর সেই ক্ষতের দাগ এখনো শুকায়নি। আমরা এতটা বিস্মৃতিপরায়ণ নই যে আমাদের পূর্বসূরিদের হত্যাকারী আর ধর্ষণকারীদের পরিচয় আমরা ভুলে যাবো।
পৃথিবীর আর কোন দেশে কি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে নগ্ন ভাবে পরিহাস করার কথা ভাবতে পারে? নরপশু কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ভয়াবহ সব যুদ্ধাপরাধ (যেগুলোর বর্ণনা গা শিউরে উঠার মত) প্রমাণিত হওয়ার পর ও যখন তাকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয় না, তখন সর্বোচ্চ শাস্তির অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন জাগাই কি স্বাভাবিক না ? কতোটা নিশ্চিত এই নরপশু যে ক্ষমতা বদল হলেই সে তার সমস্ত পাপ থেকে অব্যাহতি পেয়ে যাবে? আমরা আমাদের ইতিহাস থেকে জানি রাজনীতি এখানে কতটা কপটতাপূর্ণ। বাইরের বিশ্বের মানুষের পক্ষে সেটা হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন। তবু যখন তাদের মানবতার দোহাই শুনি খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে, নিজেদের ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধীদের উনারা কি শাস্তি দিয়েছিলেন? প্রমাণিত নাৎসি গণহত্যাকারীদের কি মৃত্যুদণ্ড দেন নি?

অনেকেই লিখে জামাত-শিবিরের অপপ্রচারের প্রতিবাদ করছেন। তাদের সবার প্রতি শুভকামনা।

যে আন্দোলন এখন বাংলাদেশে হচ্ছে তা অভূতপূর্ব। একটা প্রজন্ম, যদি তারা বিশেষভাবে সৌভাগ্যবান হয়, তবে হয়ত এক জীবনে একবার সুযোগ ঘটে এমন আন্দোলনে অংশ নেয়ার। রূপকথা সৃষ্টি হচ্ছে আজ বাংলাদেশে, লেখা হচ্ছে নতুন ইতিহাস। আমার সৌভাগ্য আমার প্রজন্মের সুযোগ হয়েছে এমন আন্দোলনের অংশ হওয়ার। আমার দুর্ভাগ্য যে আমি সশরীরে অংশ নিতে পারছিনা।

কিন্তু যারা অংশ নিচ্ছেন, তাদের সবার প্রতি আমি আর আমার মত প্রবাসে নানা দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রতিটা বাংলাদেশীর আত্মিক সমর্থন, বুকভরা ভালোবাসা আর ইস্পাতদৃঢ় সংহতিতে কোন খাঁদ নেই। আমরা আছি আপনাদের সাথে, থাকবো।

এরকম গনআন্দোলনের শুরুটা কঠিন। সেটা খুব সফলভাবে হয়েছে। এখন মূল চ্যালেঞ্জ হল এটা ধরে রাখা। দাবি আদায় করে নিতে হয়, কেও অনুগ্রহ করে কখনো দিয়ে যায় না। এ সত্য পূর্ব বাংলার মানুষের চাইতে ভালভাবে আর কে জানে? ইতিহাসের অদ্ভুত ইশারায় যেন আমরা আবার ফেব্রুয়ারী মাসে একত্রিত হয়েছি, প্রিয় ভাষায় আমাদের বিশ্বাস আর চেতনাকে পরিণত করেছি বিশুদ্ধ কবিতার মত অপূর্ব সুন্দর অথচ অপার্থিব শক্তিশালী স্লোগানে। ৫২, ৬৯, ৭১ এর এই মহাকাব্যিক পুনর্মঞ্চায়নের কাজটি যারা করছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানাবার ভাষা আমার জানা নেই। তাদেরকে উপদেশ দেয়ার ধৃষ্টতা দেখাব না। শুধু অতীত থেকে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে বলব। যখন কি কোন ন্যায়সঙ্গত গণ আন্দোলন এরকম দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে আর পরিণত হয় তীব্রভাবে শক্তিশালী বিপ্লবে, তখনি চেষ্টা করা হয় এতে বিভেদ সৃষ্টির। আমরা যেন এই ফাঁদে পা না দেই। গণআন্দোলন তো কোন ড্রয়িংরুমে বসে গরম কফির পাত্র হাতে ইউটোপিয়ান সমাজপরিবর্তনের পরিকল্পনা নয়, এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে সব শ্রেণীর মানুষ। অবশ্যই আমাদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকবে, কিন্তু আমরা যেন আমাদের মূল উদ্দেশ্য বিস্মৃত না হই।

সবশেষে বাংলাভাষীদের চিরন্তন আশ্রয় যে মহান জাদুকর, তার কাছেই ফিরে যাই

“তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শক্তি।“