ফেসবুক ও ভার্চুয়াল দুনিয়াতে অনেক কুরুচিপূর্ণ মানুষ/পেজের স্ট্যাটাসের কল্যাণে এমন কথা দেখতে হচ্ছে “ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোষাকই দায়ী” কিংবা “যেদেশে সানি লিওন আছে সে দেশে গণধর্ষণ হবে না কি বাংলাদেশে হবে?” !
এটা তাদেরই কথা যাদের এসব বিজ্ঞাপন/সানি লিওনের ছবি দেখে লালা ঝরে, কামনা জেগে উঠে! কুরুচিপূর্ণ বিজ্ঞাপনকে আমি কুরুচিপূর্ণ-ই মানি…কিন্তু এটা ধর্ষণের মূল কারণ নয়।

দিল্লীতে ঐ মেডিকেলছাত্রী ধর্ষণের মাত্র ১২ দিন আগে ভারতের পার্লামেন্টে “বিয়ের পর কোনো পুরুষ তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না” শীর্ষক একটি বিল আনা হয়।(তথ্যসূত্র:http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-12-25/news/315911) যে দেশে আইন করে ধর্ষণকে বৈধ করা হয় সে দেশে কেন ধর্ষকরা নারীকে অত্যাচার করতে ভীত হবে?

নিশ্চয় ভাবছেন ভারতের পার্লামেন্টে এমন আইন পাশ হলো কি করে? আপনাদের জানিয়ে রাখি “ধর্ষণ ছাড়াও নারী নিগ্রহের অভিযোগ রয়েছে—ভারতে এমন ২৬০ ব্যক্তিকে নির্বাচনের টিকিট দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো !!”(তথ্যসূত্র: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-03/news/318454)। যে দেশে ধর্ষকরা এমপি হতে পারে,যে দেশের সংসদ অধিবেশন চলাকালে এমপি’রা মোবাইলে পর্ণ দেখেন সে দেশে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি টা কেমন তা কি আর বলে দেওয়া লাগবে?

ধর্ষণের আরো একটি মূল কারণ ধর্ষকদের অবাধে ছাড় পেয়ে যাওয়া। দেশের অনেকেই আঁতকে উঠেছিলেন গত বছরের ৯ এপ্রিল পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার আটরকছড়া ইউনিয়নের উল্টোছড়া প্রাইমারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ১১ বছরের সুজাতার লাশ দেখে। ধর্ষণের আলামতের সঙ্গে শিশুটির শরীরজুড়েই ছিল কাটা চিহ্ন। “আদিবাসী শিশু সুজাতা চাকমাকে ধর্ষণ এবং হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ইব্রাহিম এর আগে সুজাতার মামাতো বোনকে ধর্ষণ করে এবং ১১ মাস সাজা পাওয়ার পর জেল থেকে বের হয়ে প্রতিশোধ নিতেই সুজাতাকে ধর্ষণ করে ও হত্যা করে।”(সূত্র: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-05-19/news/258876)
ভারতের দিল্লীতে ও ধর্ষণের বিচার না হওয়ার চিত্রটা একইরকম। ভারতের নয়াদিল্লিতে বিদায়ী বছরে ৬৩৫টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। এতে মাত্র একজন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন !! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানা গেছে। (তথ্যসূত্র:http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-12-31/news/317428)

অত্যাচারের শিকার হওয়া এই মেয়েদের কষ্টের তীব্রতা বোঝার সামর্থ্য আমার নেই।শুধু এতটুকুই বলতে পারি,ধর্ষণে ধর্ষক নষ্ট হয়,ঐ ধর্ষণে সহায়তা দানকারী সমাজপতিরা নষ্ট হয়, অত্যাচারের শিকার হওয়া নিষ্পাপ মেয়েটি কখনোই নয়। কাজেই ধর্ষকদের সাথে সাথে ঐ ধর্ষণে সহায়তা দানকারী সমাজপতিদের ও প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হোক, যাতে তারা “পুরুষ” শব্দটিকে কখনো কলঙ্কিত করতে না পারে।

আমরা হয়তো ধর্ষণ পুরোপুরি নির্মূল করতে পারব না; কিন্তু আমরা অন্তত ধর্ষিতার জীবনটাকে দুর্বিষহ করে তোলা থেকে কিংবা তাকে মানসিকভাবে পুনর্ধর্ষণ করা থেকে বিরত থাকতে পারি, তাকে সহায়তা করতে পারি আগের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপনে।

যুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে মানসিক ও নৈতিকভাবে পরাস্ত করতে অনেক সময়ে গণধর্ষণকে ও গণহারে ধর্ষণকে একটি অস্ত্র হিসেবে নেয়।ইয়াহিয়া খান পাকি সৈন্যদের ধর্ষণের বৈধতা দিয়ে বলেছিলেন, ” দেশ থেকে এতো দূরে থেকে নিজের জৈবিক চাহিদা মেটাবার জন্য তারা এসব করতেই পারে “” !!!!

ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে ধর্ষিতাকে আরো অন্তত দুবার মানসিকভাবে ধর্ষিত হতে হয়; একবার ডাক্তারি পরীক্ষাকালে, আরেকবার এজলাশে! ফলে অনেক ধর্ষিতাই ধর্ষণের ঘটনাটা চেপে যান। অনেকেই ধর্ষিতাকে সান্ত্বনা দেয় এই ভাষায় — আহা! পশুটা ওর ‘ইজ্জত’ কেড়ে নিয়েছে কিংবা ‘সম্ভ্রমহানি’ করেছে কিংবা ওকে ‘নষ্ট’ করেছে! আমরা কেন বুঝি না এই বাক্যগুলো ধর্ষিতার জন্যে সান্ত্বনা তো নয়ই, উলটো যন্ত্রণা?আমরা হয়তো ধর্ষণ পুরোপুরি নির্মূল করতে পারব না; কিন্তু আমরা অন্তত ধর্ষিতার জীবনটাকে দুর্বিষহ করে তোলা থেকে কিংবা তাকে মানসিকভাবে পুনর্ধর্ষণ করা থেকে বিরত থাকতে পারি, তাকে সহায়তা করতে পারি আগের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপনে।

মুক্তিযুদ্ধে পাক শুয়োরের দল ও তাদের এদেশীয় ঘাতকদল কর্তৃক ধর্ষিত নারীদেরকে যখন তাদের স্বজনেরা গ্রহণ করছিল না, যখন তাদেরকে পুনর্বাসিত করতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছিল, যখন তাদের পিতা-মাতারা পর্যন্ত তাদেরকে অস্বীকার করছিলেন; তখন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে গিয়ে বলেছিলেন — ওদের বাবার নামের ঘরে আমার নাম লিখে দে, আর ওদের ঠিকানার ঘরে লিখে দে ‘ধানমণ্ডি ৩২’!

আমরা কি পারি না জাতির পিতার মতো হতে?