প্রধানমন্ত্রী আপনার কুত্তাদের সামলান।

আকাশ মালিক

প্রথমে একটি পত্রিকার সংবাদ-

১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে আজ (রবিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১২) সকাল নয়টার দিকে ঢাকার জজকোর্ট এলাকা থেকে বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থিত আইনজীবীরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে গেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আইনজীবীদের ধাওয়া দেন। এ সময় ভিক্টোরিয়া পার্ক-সংলগ্ন একটি তেলের পাম্পের কাছে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। তখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পাম্পের দিকে ধাওয়া দিয়ে যেতে থাকলে আতঙ্কে পথচারী বিশ্বজিৎ দৌড়ে সেখানকার একটি ডেন্টাল ক্লিনিকের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে গিয়ে তাঁকে জাপটে ধরে এলোপাতাড়ি রড দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। গুরুতর আহত হয়ে পালাতে দৌড় দেন বিশ্বজিৎ। দৌড়ে শাঁখারীবাজারের একটি গলিতে গিয়ে ঢলে পড়েন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় এক রিকশাচালক বিশ্বজিৎকে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কিছুক্ষণ পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ওই হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার আবু তানভীর সিদ্দিক বলেন, আঘাত ও প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে বিশ্বজিৎ সবার ছোট। বড় ভাই উত্তম কুমার দাসের পরিবারের সঙ্গেই পুরান ঢাকার ঋষিকেশ দাস লেনের এক বাসায় থাকতেন তিনি। পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে তাঁর একটি দর্জির দোকান আছে। তাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার মসুরা গ্রামে। হাসপাতালের মর্গে বড় ভাই উত্তম জানান, প্রতিদিন হেঁটেই দোকানে যান বিশ্বজিৎ। আজ সকাল নয়টার দিকে দোকানের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। ১০ মিনিট পর দুর্ঘটনার খবর পান তিনি। তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, ছাত্রদলের কর্মী ভেবে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। অথচ শুধু বিশ্বজিৎ নয়, তাঁর পরিবারের কেউই কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।’

এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের একটি বক্তব্য-

আওয়ামী লীগ ও মহাজোটভুক্ত দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বিএনপির হরতাল প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেছেন, বিরোধী দল যেন বাস পোড়ানো, খুন-খারাপি কর্মকাণ্ড না করতে পারে তাই বঙ্গবন্ধুর সৈনিকের মতো অতন্দ্র প্রহরী হয়ে রাজপথে থাকতে হবে। সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার পক্ষে বিরোধী দলের এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করা সম্ভব নয়। তাই তাদের প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকার দলীয় লোকদেরও হরতালে মাঠে থাকতে হবে।

(সুত্রঃ বাংলানিউজটুয়েন্টিফোরডটকম, ২৮ এপ্রিল ২০১২)

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আদেশ পালন করতেই বঙ্গবন্ধুর সৈনিকের মতো অতন্দ্র প্রহরী হয়ে রাজপথে থেকে সরকার দলীয় যুবলীগ ছাত্রলীগ পথচারী নিরপরাধ বিশ্বজিৎ দাসকে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে হাজারো মানুষের চোখের সামনে কুপিয়ে খুন করেছে, আর আপনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা নীরব তামাশা দেখেছে। হরতাল অবরোধ প্রতিহত করতে যুবলীগ ছাত্রলীগ যদি ছুরি, চাকু, রামদা, পিস্তল নিয়ে রাজপথে নামবে, তাহলে সমস্ত পুলিশ বাহিনীকে ডেকে খোয়াড়ে নিয়ে দুবরা ঘাস খাওয়ান। বিশ্বজিৎ দাশ হত্যাকারীদের সারা দুনিয়া নিজ চোখে দেখলো, সাংবাদিকেরা ক্যামেরায় দেখালো, পত্রিকায় ছবি আসলো, ভিডিও ফুটেজ তাদের খুনের সাক্ষী হলো, আর সেখানে হত্যা মামলা হলো অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে। প্রথম আলো বলছে-‘

১০-১৫ গজ দূরে থেকে এ দৃশ্য দেখছিলেন লালবাগ অঞ্চলের উপকমিশনার (ডিসি) হারুনুর রশিদসহ অন্তত ৩০ পুলিশ সদস্য। হামলাকারীদের প্রতিহত করতে এবং বিশ্বজিৎকে রক্ষায় এগিয়ে আসেননি কেউ’।

এ কোন বর্বরতা, এ কোন অসভ্যতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? তদন্ত করে খুনীদের শাস্তি দিবেন কি, কয়টা কুত্তা ধরেছেন আগে সেই কথা বলেন। এতো তাড়াতাড়ি অতীত ভুলে গেলে চলবে? আমি আপনাকে কিছু অতীত স্বরণ করিয়ে দেই।

দীর্ঘ একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৯৬ সালে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে শুরু হয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তৎপরতা, আপনাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ভিত্তিতে, আপনাদেরই নির্দেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের সিট দখল, হল দখল, পাল্টা দখল, বন্দুকযুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ব্যর্থ হয়েছিলেন কারণ তিনি জানতেন আপনারাই এ সন্ত্রাসের প্রশ্রয়দানকারী। যদিও সেদিন আপনি বলেছিলেন সন্ত্রাসীদের অন্য কোন পরিচয় নেই এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধের চেষ্টা করছেন। আপনি আরো বলেছিলেন যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

২৯ ডিসেম্বরের সফল সাধারণ নির্বাচনের পরের দিন থেকে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে কমপক্ষে দুই শ জন আহত হয়েছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আধিপত্য বিস্তার, হল দখল, কক্ষ ভাঙচুর, তালা ঝুলিয়ে দেওয়া এবং লাঠি ও ইট-পাটকেল ছুড়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ৮ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে বন্দুকযুদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ হয় তিনজন। সেই “রক্তাক্ত যুদ্ধ” হয়েছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের মধ্যে। সেদিন শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের বহু অঞ্চলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ দোর্দন্ড প্রতাপে বাধাহীনভাবে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়েছিল। সেদিন রাষ্ট্র ছাত্রলীগ, যুবলীগকে সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছিল আর, এই ব্যর্থতার ফল আপনারা হাতেনাতে পেয়েছিলেন ২০০১ সালের নির্বাচনে।

আমরা ২০০১ সালে ছাত্রদলের সন্তাসী কর্মকান্ডের কথাও ভুলি নাই। মনে আছে, ২০০১ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ ও জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের দখলমুক্ত করতে ছাত্রদলের ক্যাডাররা লাঠিসোটা দিয়ে ভাঙচুরের পাশাপাশি গোলাগুলি করেছিল। পিস্তল ও কাটা রাইফেল নিয়ে ছাত্রদলের ক্যাডারদের হল দখলের বেশ কিছু ছবি সে সময় ঢাকার বিভিন্ন দৈনিকে ছাপাও হয়েছিল। জগন্নাথ হল দখল শেষে তৎকালীন ছাত্রদলের সভাপতি ও সাংসদ নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টু সেখানে হাজির হয়েছিলেন। তিনি ছাত্রদলের ক্যাডারদের সাফল্যে তাদের ধন্যবাদ জানান, উৎসাহ জোগান। তারপর তাঁর ক্যাডার বাহিনী পিস্তল আর বন্দুক নিয়ে জহুরুল হক হলের দখল নিয়েছিল। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পাঁচ বছর ধরেই তাদের অব্যাহত সন্ত্রাস, বন্দুকযুদ্ধ, অপহরণ, হত্যা, চাঁদাবাজি, জবরদখল চলছিল। এর পরিণতি কী হয়েছিল, তাও আমরা জানি। ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট মাত্র ৩১টি আসন পেয়ে লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হয়েছিল।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন ময়দানের কথাও আমরা মোটেই ভুলি নাই। ভুলি নাই শিবির নেতার সেই চিৎকার করে বলা ‘বন্ধুরা তোমরা বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ কর, তোমরা মরলে শহিদ বাঁচলে গাজী “। জামাত সেদিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম দখল করে সেখান থেকে নিরীহ মানুষদের গুলি করেছিল। কিন্তু এসব কিছুকে ছাপিয়ে আজ বিশ্বজিৎ দাসের মৃত্যু ১৫কোটি মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে, কারণ বিশ্বজিৎ কোন কুকুর দলের সন্ত্রাসী সদস্য ছিলেন না। তিনি ছিলেন সাধারণ কর্মজীবী মানুষ। আপনি আজ ক্ষমতাসীন, রাষ্ট্রের দায়ীত্বভার আপনার হাতে, এ হত্যার দায় আপনি, আপনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনার প্রশাসন কোন ভাবেই এড়াতে পারেন না।

আমরা সাধারণ পাবলিক ১৯৯৬ দেখেছি, ২০০১, ২০০৮ দেখেছি এখন ২০১২ দেখলাম। আজ যে আপনার চারপাশে অপদার্থ পা-চাটা কুকুর মস্তিস্কবিহীন পুলিশদের দেখছেন, তারা কাল আপনাকেও কামড়াবে সে কথা ২০০১, ২০০৮ আর ১৫ আগষ্টের একজন প্রত্যক্ষদর্শীর না বুঝার কথা নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই কুত্তা বিলাইর কামড়া কামড়ি খেলা আর কতদিন? এক মাঘে শীত তো আর যাবেনা, কুরবাণীর চাঁদ আগামীতেও উঠবে। মখা আলমগীর আর সায়েরা খাতুনকে তাড়াতাড়ি খোয়াড়ে ঢুকান। আপনাদের পোষা কুকুর দিয়ে মানুষ হত্যার জন্যে আমরা আপনাদেরকে ভোট দেই নাই। এই পাবলিক ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিতে যেমন জানে, জুতোর মালা পরিয়ে বর্জন করতেও জানে। তাই বলছিলাম, আপনার কুত্তাদের সামলান, আর অতি সত্তর সকল অপরাধীকে বন্দী করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করুন।