ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-১
ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-২
ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-৩
ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-৪
গত ক’বছর ধরেই নানান মৌলবাদী চরমপন্থী গোছের দলে অনেক ভাল ভাল নিরীহ ছেলেপিলে রিক্রুট হচ্ছে শোনা যায়। বুয়েটের সাম্প্রতিক আন্দোলনে শিবির ও হিজবুত তাহরিরের (হিতা) ভূমিকা নানান সূত্রে আলোচনায় এসেছে; সেই আন্দোলনের যৌক্তিকতা যাইই হোক, এটা বোঝা গেছে যে বুয়েটের ছাত্র শিক্ষক দুই লেভেলেই অনেকেই এসব দলের সমর্থক বা সাথে যুক্ত। শুধু বুয়েটেই নয়, আরো খবর দেখুন, “উগ্র মৌলবাদীদের আস্তানা হয়েছে নর্থ সাউথঃ পাঠচক্রের আড়ালে শিবির ও হিযবুতের বৈঠক” [১]। বুয়েটের খবরে তেমন অবাক হবার কিছু নেই, সেখানে বহু আগ থেকেই শিবির আছে, হয়ত আগে সেরকম সক্রিয় ছিল না। নর্থ সাউথে পড়ে সাধারনত অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলেরা, যারা আল্ট্রা মডার্ন নামে পরিচিত। এ ধরনের ছেলেপিলেরা কেন মৌলবাদী সংগঠনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে? বুয়েট কিংবা নর্থ সাউথ নয়, এমন রিক্রুটমেন্ট চলছে আরো বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই। “জঙ্গী সংগঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ! [২]”
শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নয়, এমনকি সেনাবাহিনীর মত অতি সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানেও মৌলবাদীরা অবস্থান নিচ্ছে এমন অভিযোগ এখন আর কেবল গুজব নয়, স্বীকৃত সত্য; “সেনাবাহিনীতে হিযবুত প্রভাব” [৩]। কয়েক দফায় ধরপাকড়ও হয়েছে। এরা এমনকি ক্যু করার মত শক্তি রাখে সেটাও কিছুদিন আগে প্রমান হয়েছে। সেনাবাহিনী থেকেই বলা হয়েছে ‘কিছু ধর্মান্ধ’সদস্য এর সাথে জড়িত ছিল, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী চরমপন্থী মৌলবাদী নানান দলের নিয়ন্ত্রনে এটা সকলেই জানি, এর জের ধরে সে দেশের কি অবস্থা সেটাও দিনের আলোর মত পরিষ্কার। আমাদের দেশেও কি সেই দিন সমাগত?
নানান গোয়েন্দা সংস্থা [৩] ও মিডিয়া রিপোর্টে দেখা যায় যে আধুনিক সব নামী দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহু ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষিত প্রফেশনাল শ্রেনীর অনেকে চরমপন্থী হিতার প্রতি ঝুঁকছে; যা মৌলবাদী প্যাটার্ন বদলে দিচ্ছে। এরশাদ আমলেও ইসলামী ছাত্র শিবিরের মিছিল বলতে দেখা যেত গত বাঁধা টুপি দাঁড়িওয়ালা চেহারার লোকজনের সমাহার। এর পরিষ্কার ও বিপদজনক ব্যাখ্যা হল মৌলবাদের গ্রহনযোগ্যতা বা জনপ্রিয়তা বেড়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত শ্রেনীর এই দলে ঝুঁকে পড়া অশনি সংকেত। মৌলবাদীর উলটো বলতে আগে বোঝা যেত আল্ট্রা মডার্ণ, এখন আর সে দিন নেই। এরা কি ভাষায় ও কিভাবে রিক্রুটমেন্টের কাজ করে তার একটি নমুনা দেখুন, “জিন্স, টি-শার্ট পরিহিত, কানে হেডফোন পরা অথবা ঝুলন্ত তরুণ আপনাকে লম্বা একটি সালাম দিয়ে হাতে লিফলেট ধরিয়ে দিল। সেখানে লেখা থাকতে পারে, যেমন ছিল ২০১১-এর ১৩ আগস্টের লিফলেটে‘কাফের–মুশরিকদে শাসকদের অপসারণ করে পবিত্র কোরানের শাসন, খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে’সমাবেশ ও মিছিল।“ [২]। পবিত্র কোরানের শাসন না হয় বোঝা যায়, যেকোন মুসলমানেরই কোরানের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিজের শরীক হবার কথা এবং অপরকেও আহবান জানানোর কথা, কিন্তু কাফের মুশরিকের দালাল শব্দটির গুরুত্ব কি? দেশের সরকার কাফের মুশরিকদের দালাল মানেটা কি? বর্তমান আওয়ামী সরকার ভারত ঘেঁষা বলে যে চিরন্তন কড়া অভিযোগ আছে সেটার পরিপ্রেক্ষিতেই কি এমন আহবান? ব্যাপারটা অত সরল নয়।
[৩] সূত্রের র্যাহব কর্মকর্তা একটি খুব গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিয়েছেন, “বাংলাদেশে যেখানে হরকাতুল জিহাদ বা জেএমবির মতো নিষিদ্ধ ঘোষিত অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদের কার্যক্রম শহরাঞ্চলের বাইরে অনেক বিস্তৃত, সেখানে হিজবুত তাহরিরের সদস্যদের অধিকাংশই বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীরা। র্যা বের মুখপাত্র কমান্ডার মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, এ সংগঠনটির বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়েও তারা এ বিষয়টিই বারবার লক্ষ্য করেন। তিনি বলেন, “অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনে গ্রেপ্তারকৃত অধিকাংশই ছিল অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত লোকজন। কিন্তু হিযবুত তাহরীরের গ্রেফতারকৃতদের শতকরা ৯৯ জনই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অথবা পেশাজীবী।”
হিতার রাজনৈতিক আদর্শের প্রচারনা [৪] পড়লেই পরিষ্কার হয় যে কাফের মুশরিকের দালাল তারা কেবল ভারত এমনকি আওয়ামী সরকার বিষয়ে বলেনি। তাদের ধর্মভিত্তিক ‘প্রকৃত’ ইসলামী রাষ্ট্রের রূপরেখা ঠান্ডা মাথায় কিংবা সিরিয়াসলি পড়া কষ্টকর হলেও সেটা পড়লে জানা যায় যে তাদের সেই আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র হল দুনিয়াময় সব মুসলমান প্রধান দেশ নিয়ে একটি খিলাফত; যার সাথে কিছু বিধর্মী দেশের সীমিতাকারে সম্পর্ক থাকতে পারে এবং কিছু দেশের সাথে কোন রকমই সম্পর্ক থাকা চলবে না। তবে সম্পর্ক যাইই থাক বিধর্মী কোন দেশের থেকে অর্থ বা অন্য কোন প্রকার সাহায্য সহায়তা নেওয়া যাবে না ইত্যাদী ইত্যাদী। এসব নীতিমালা তারা কোরান হাদীসের নানান বানী দিয়ে ব্যাখ্যা করেছে। তাদের চরম অবাস্তব, অমানবিক, সাম্প্রদায়িক সব নীতিমালা পড়ে অনেক সময় হাঁসি পেলেও ব্যাপারটা হালকা করে দেখার মত নয়। মাদ্রাসা শিক্ষিত তালেবানদের মত বলা যায় না যে আধুনিক শিক্ষা বিবর্জিত, প্রকৃত ইসলাম জানে না বলে এমন হয়েছে।
খুব গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন; নুতন প্রজন্মের আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক ছেলেমেয়ে, প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পেশাজীবি শ্রেনীর লোকে, এমনকি সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য কেন হিতার মত উগ্রবাদী সংগঠনে আকৃষ্ট হচ্ছে? মাদ্রাসা জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কিছু ছাত্র শিক্ষকদেরই আগে কেবল এসব সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট দেখা যে; পীর মতিউর (‘৮৯ সালের ঘটনা), বাংলা ভাই, শায়খ রহমান এরা সকলে মাদ্রাসা প্রোডাক্ট। এসবের কারন অনুসন্ধানে অনেকেই চট করে আমেরিকা ইসরাইল টেনে আনেন। আমেরিকা ইসরাইলের সাম্রাজ্যবাদের প্রতিক্রিয়ায় আধুনিক ধারায় পড়াশুনা করা ছেলেপিলে, পেশাজীবিরা হিতার মত দলে যোগ দিচ্ছে? আমেরিকা ইসরাইল ঘায়েল করতে এরা বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে ইসলামী বিপ্লব ঘটাতে চায়?
বিশ্বাসী মনে বিশ্বাস করতে না চাইলেও এসবের মূল কারন সেই ধর্মশিক্ষার এক ধরনের ব্যাখ্যার ভেতরেই আছে। ধর্ম কর্মকে যখন কেবল মাত্র মানসিক শান্তি বা আত্মিক মুক্তির মাধ্যম এভাবে চিন্তা না করে একমাত্র পরিপূর্ন জীবন বিধান হিসেবে গ্রহন করার শিক্ষা দেওয়া হয় সমস্যার সূত্রপাত হয় সে যায়গা থেকেই হয়। কারন বাস্তব জীবনে পরিপূর্ন ধর্ম মেনে জীবন যাপন চালানো সম্ভব নয়, ধর্মের সূত্র যতই পবিত্র হোক আপোষ করতেই হয়। ধর্ম শিক্ষা এক ধরনের জীবন যাপনের নির্দেশনা দেয় (অবশ্যই ধর্মীয় জীবন বিধানের সব কিছুই অগ্রহনযোগ্য এমন নয়) আর দৈনন্দিন জীবন চলে অন্য ধারায়। সোজা কথা ধর্মশিক্ষার ক্লাসে একজন শেখে যে কোরান হাদীসের সব বানী অভ্রান্ত, সেসব মেনেই জীবন চালাতে হবে, এসব পবিত্র সূত্রের জীবন বিধানের নির্দেশনার যৌক্তিতা চ্যালেঞ্জ করা চলবে না, মেনে চলতেই হবে। অন্যদিকে বাস্তব জীবনে দেখে কোরান হাদীসের বহু বানীই অগ্রাহ্য করা হচ্ছে, বড় বড় আলেম স্কলারগন কোরান হাদিস যেভাবে ব্যাখ্যা করে নানান ফতোয়া দেন প্রচলিত সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নীতি চলে তার উলটো ধারায়। সোজা কথায় দেশে ইসলামী হুকুমত চলছে না। এই পরস্পর বিরোধী দুই ধারা জন্ম দেয় এক মহা মানসিক দ্বন্দের। যার ভেতর ধর্মের প্রভাব যত বেশী তার মধ্যে এই দ্বন্দ্ব কাজ করে তত বেশী, এর প্রকাশ ঘটে নানান ভাবে। সেই দ্বন্দ্বের কারনে করতে হয় নানান দ্বি-চারিতা, নিতে হয় পরস্পর বিরোধী অবস্থান। এই দ্বিধা দ্বন্দ্বের চরম প্রকাশ শুধু তত্বীয় ধর্মচর্চাতেই সীমাবদ্ধ নয়, এর জের পড়ে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন (এখানে রাজাকারি মানসিকতার কথা বলছি না), রাজনীতি, দেশের প্রচলিত আইন, এমনকি খেলাধূলার মত বিষয়ের মধ্যেও। সবচেয়ে মারাত্মক কথা, এভাবে জন্ম হয়েছে এবং দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে পরস্পর বিপরীত দুই ধারা। না, এটা আস্তিক নাস্তিক ধারা নয়। খোদ ধার্মিকদের ভেতরেই জন্ম হয়েছে এই মেরুকরনের।
এই দ্বন্দ্ব আরো প্রবল মাত্রা পায় ধর্মের চোখে যাবতীয় সব সমস্যা মূল্যায়ন করতে গেলে। তখন মনে হয় যে দেশের ও জীবনের যাবতীয় সব সমস্যার মূলে হল ইসলামী শাসন না থাকা কিংবা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা থাকা। ইসলামী শাসন কায়েম করতে পারলেই সব মুশকিল আসান, কাজেই চাই ইসলামী বিপ্লব। রাজনৈতিক দর্শন হয়ে পড়ে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার মানে হল কাফের মুশরিকের দালাল (হিতার প্রচারনা যেমন), কারন ইসলামকে পূর্নাংগ জীবন বিধান হিসেবে মানতে গেলে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা মানা যায় না। সত্য কথা বলতে কেউ ইসলামকে ‘পূর্নাংগ’ জীবন ব্যাবস্থা মনেপ্রানে বিশ্বাস করলে তিনি আবার কিভাবে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা সমর্থন করতে পারেন তা আমিও বুঝি না, এই ধরনের দ্বন্দ্বে ভোগা বেচারাদের অবস্থা সবচেয়ে করুন, এরা পরীক্ষিত ইসলাম রক্ষাকারী হলেও হার্ডকোর ধার্মিকদের গালি খান, হজমও করে যান নীরবে কারন ইসলামের দৃষ্টিভংগী নিজেরা ভালই জানেন। নীরবে হজম করার কারন হল বিতর্ক শুরু করলে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থার সমর্থনে প্রকৃত সরল সত্য স্বীকার করতে হবে যে ইসলাম মেনে পূর্নাংগ জীবন যাপন সম্ভব নয়, ইসলামের বহু বিধিবিধানই বাদ দিতে হবে। সেটা কিভাবে সম্ভব? তখন আবার মুসলমান ষ্ট্যাটাস নিয়ে টান পড়বে। এজন্যই বলেছি যে ধার্মিকদের ভেতরেই দুই মেরূকরন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা নিয়ে বর্তমান। এই দ্বন্দ্বের বহু উদাহরন বাংলা ব্লগেই আছে।
দেশে ধর্মকর্মের বাহ্যিক রমরমা বেড়েছে, এমনকি এখন মাদ্রাসা জাতীয় প্রতিষ্ঠানও দরকার নেই, সাধারন শিক্ষালয় থেকেই সাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা পেয়ে আসছে তাই তারা অনেকে এমন আহবানে সহজে সাড়াও দিচ্ছে। কে এসব আহবানে সাড়া দেবে কে দেবে না তা নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর; যেমন তার নিজের জ্ঞান বুদ্ধি, পড়াশুনা (শুধুই স্কুলের বই নয়) ধর্ম সম্পর্কে ব্যাক্তিগত মূল্যায়ন, পারিবারিক পরিবেশ নানান কিছু। এটা বুঝতে হবে যে কোন অসত উদ্দেশ্যে নয়; তারা প্রকৃত ইসলামী ব্যাবস্থা কায়েম করে সুশাসন নিশ্চিত করে সব সমস্যার সমাধান হবে এ উদ্দেশ্যেই এসব উগ্রবাদী সংগঠনে আকৃষ্ট হচ্ছে। কারন তারা দেখছে যে বড় দলগুলি যারা ক্ষমতায় যায় তারা পরিপূর্ন ইসলামী শাসন কায়েমের কথা মুখেও আনে না। ধর্মীয় শিক্ষা যার মাঝে যত প্রবল, যে পূর্ন ইসলামী কেতায় দেশ চালানোর স্বপ্ন দেখে তার আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়া তো দূরের কথা, বিএনপির সমর্থকও হবার চাইতে জামাত বা হিতা জাতীয় দলের সমর্থক হবার সম্ভাবনা অতি প্রবল। বিশ্বাস না হলে আলেম সম্প্রদায়, মাদ্রাসা শিক্ষক ছাত্রদের মাঝে সমীক্ষা চালনো যেতে পারে। এখন অবশ্যই প্রশ্ন হতে পারে যে হিতা জাতীয় দলের দৌরাত্ম্য হঠাত সাম্প্রতিক সময়েই কেন দেখা যাচ্ছে? ’৭০ এর দশকেও কেন এদের দৌরাত্ম্য সেভাবে অন্তত আমাদের দেশেও ছিল না? ধর্মশিক্ষার নামে সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রতা, জিহাদী মাল মশলা তো সব সময়ই ছিল। ইবনে কাথিরের তাফসির, মারেফুল কোরান এ জাতীয় অজস্র বই পুস্তক বহু শতক ধরেই তো আছে।
এই প্রশ্নের জবাবও সহজ। এসব উগ্রবাদী ধ্যান ধারনা কেতাবের পাতায় সুপ্ত টাইম বোমার মত থাকলেও সে টাইম বোমা ডেটোনেট করে যায়গায় যায়গায় বসানোর কাজ করানোর মত সমন্বিত উদ্যোগ সেভাবে ছিল না। দিনে দিনে ধর্মের রমরমা বাড়ছে,এসব মাল মশলাও দ্রুত ছড়াচ্ছে; যেমন স্কুলের ধর্মশিক্ষার বই এ আবশ্যিক বিষয় হিশেবে পাঠ দেওয়া হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার। এর সাথে অতি অবশ্যই দরকার অর্থকড়ি, ট্রেনিং যেটা আসছে বাইরের কিছু দেশ থেকে। এই কারনেই হিতা সম্পর্কে র্যা ব কর্মকর্তার মূল্যায়ন খুবই সঠিক। জেএমবি বা হুজি মৌলবাদী চরমপন্থী দল হলেও এরা হল অনেকটা লোকাল প্রোডাক্ট, তাই এদের কার্যক্রম আঞ্চলিক ভাবেই সীমাবদ্ধ, এসব দলের ফান্ড বাইরে থেকে এখন আর সেভাবে আসে না, হিতার মত কোন রকমের পরিষ্কার রাজনৈতিক আদর্শও এদের ছিল না। অন্যদিকে হিতা ’৫০ এর দশকে মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিষ্ঠিত দল যার শাখা আছে বহু দেশে, এই দেশেও তাদের শাখা আন্তর্জাতিকভাবেই সম্পর্কিত, বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বেশ কিছু মুসলমান প্রধান দেশেও এরা নিষিদ্ধ হলেও বর্তমানে এদের অন্যতম ঘাঁটি ব্রিটেনে, ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা আসলেই তেমন কাজের নয়।
ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের একজন অধ্যাপক সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ধর্মভিত্তিক উগ্রপন্থী ছাত্র সংগঠনে বিপুল পরিমান ছাত্রছাত্রীর যোগদান বিষয়ে দীর্ঘ গবেষনা করেছেন [৫]। তার গবেষনাতেও দেখা যায় যে বিস্ময়কর ভাবে বাংলাদেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিপুল পরিমানে ছেলেমেয়ে ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী দলে, বিশেষ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরির (হিতা) এ যোগ দিচ্ছে। ব্যাপারটা আরো ব্যাপক কৌতূহলোপদ্দীক এ কারনে যে এই রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়ায় হিতার কাছে অনেক পিছিয়ে আছে মৌলবাদী স্বাধীনতা বিরোধীদের বড় সবচেয়ে বড় শক্তি ইসলামী শক্তি শিবির। খোদ রাজধানী শহরের আধুনিক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ছাত্রছাত্রীরা হিতার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে, কেনই বা শিবিরের মত সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠনও জনপ্রিয়তায় হিতার সাথে পেরে উঠছে না?
গবেষনাপত্রটিতে এর কারন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মূলতঃ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকাকে। এর ফলে ছাত্রছাত্রীরা অন্যান্য ছাত্র সংগঠন যেমন ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্রদল, ইউনিয়ন এসবে যোগ দিতে পারে না, উলটো দিকে হিজবুত তাহরি ধর্মীয় সভার আবরনে নিশ্চিন্তে ছাত্রছাত্রী রিক্রুট করতে পারে। অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে তবলীগ জামাতও এই গবেষনায় দেখা যায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ধর্মীয় বিষয় অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কর্তৃপক্ষও এসব ধর্মসভার নামে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বাধা দেয় না। ফলে হিতার সামনে অবারিত দ্বার, প্রায় প্রতিটি প্রাইভেট এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও বেশ কিছু অধ্যাপক আছেন এই দলের সাথে জড়িত। হিতায় যোগদান সম্পর্কে এই ব্যাখ্যা আমার কাছে কিছুটা অসম্পূর্ন মনে হয়েছে। মৌলিক কারন হিসেবে ছাত্রদের মাঝে ধর্ম ও রাজনীতিকে এক করে দেখার প্রবনতা চিহ্নিত করা হলেও অতি গুরুত্বপূর্ন এ বিষয়টা বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়নি। ধর্ম ও রাজনীতি একাকার করে ফেলার প্রবনতা কোথা থেকে আসল? এ দর্শনগত শিক্ষা কি আমাদের সমাজ থেকেই ছেলেপিলেরা পায় না? সংগঠন করতেই হলে অন্যান্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আরো নানান রকমের সৃজনশীল সংগঠন জনপ্রিয়তা না পেয়ে হিতার মত একটি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠন কেন জনপ্রিয়তা পাবে? বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ছাত্ররাজনীতির ওপরেই যেখানে প্রবলভাবে ভাল ছাত্রছাত্রীদের ভেতর অনীহা তৈরী হয়েছে? এই মৌলিক প্রশ্নগুলির জবাব এ গবেষনায় খোঁজা হয়নি।
ধর্ম নিয়ে উন্নাসিকতা যত চলবে; ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থা কায়েম করার শপথ যত শোনা যাবে ততই দিনে দিনে এ জাতীয় উগ্রবাদী ধর্মভিত্তিক দলের জনপ্রিয়তাও বাড়বে। সত্য কথা বলতে ’৭১ সালে ধর্মওয়ালা রাজনৈতিক দলগুলি রাজাকারি না করলে আজ দেশে এদেরই ক্ষমতায় দেখতে পাওয়া তেমন বিচিত্র কিছু ছিল না। বড় দুই দলে পরিবারতন্ত্রের অবসান হলে বড় ধরনের ভাংগনের সম্ভাবনা আছে, তখন সেই ভাংগনের রাজনৈতিক সুবিধে পাবে এরাই। বিশেষ করে ডানপন্থী ধারার বিএনপি সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যে এদের প্রতি সহানুভূতিশীল প্রচুর আছে, বর্তমান বিএনপির জামাত ঘেঁষা নীতি কিংবা যুদ্ধপরাধীদের বিচারের বিরোধী করা বিচ্ছিন্ন কিংবা বেগম জিয়ার একক সিদ্ধান্ত নয়, এটা আদর্শগত মেলবন্ধনেরই প্রমান। বিএনপি ধারার কোন বুদ্ধিজীবিই এ কারনে এই নীতির সমালোচনা কোনদিন করেন না, উলটো উল্লসিত হয়ে সাবাশি দেন। বর্তমানে নিষিদ্ধ বা মোট সংখ্যার তূলনায় কোন সাপোর্ট বেজ নেই বলে হিতাকে হেলাফেলা করা উচিত নয়। বেআইনী করন, অত্যাচার নীপিড়ন চুড়ান্ত সমাধান নয়। মিশরের ইসলামী ব্রাদারহুডকেও এক সময় নাসেরের সময় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, চালানো হয়েছিল গণ গ্রেফতার, আইনী বেআইনী নির্যাতন। বিতাড়িত হয়ে তারা আশ্রয় নিয়েছিল সৌদী আরবে। সেই নিষিদ্ধ দলই আজ সেখানে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছে। আমাদের দেশের অবস্থাও এক সময় এমন হবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। দেশে নানান পর্বতসম সমস্যা সব সময়ই থাকবে, আরো ক্ষমতায় যারা যায় সে সব দলই অসত, দূর্নীতিবাজ। কাজেই লোকে এক সময় বিকল্প খুঁজবেই, সেই বিকল্প হবে ইসলামী শাসন; কারন বাল্যকাল থেকে ধর্মশিক্ষার গুনে লোকে জানে যে এই শাসনই শ্রেষ্ঠ ব্যাবস্থা, এটা কায়েম করা যায়নি বলেই এতদিন এত দূর্ভোগ আর অনাচার। আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধান যে অতি জটিল বিষয় তা কে কাকে বোঝাবে। মিশরে ব্রাদারহুডের মুল্যায়নে আরো অনেক অপেক্ষা করতে হবে, তবে ইতোমধ্যেই সেখানে নানান কারনে জনতা তীব্র বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।
গভীর ইসলামী জ্ঞানে পরিপূর্ন কেউ আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি তো দূরের কথা, বিএনপির আধা ধর্মীয় আধা সেক্যুলার রাজনীতিরও সমর্থক হবার সম্ভাবনাও কম। মন্দের ভাল হিশেবে বিএনপিকে এরা হয়ত বেছে নেবে। দেশে এন্টি-আওয়ামী ধারার ভোট ব্যাংক থাকার কারন এখানেই নিহিত। যদিও এই ধারার লোকেরা অনেকে সরাসরি এই কারন বলেন না, ’৭১ পরবর্তি আওয়ামী নানান অপশাসনের নজির তুলে ধরেন। ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা প্রকৃতপক্ষে দেশে মুক্তিযুদ্ধের আবেশ কেটে যাবার পর অপসারিত হতে খুব বেশীদিন লাগেনি। মুক্তিযুদ্ধের আবেশ কাটার পর অনেকের মাঝেই ধর্মনিরপেক্ষ নীতি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব এসেছে স্বাভাবিক ভাবেই, এমনকি এদের মাঝে অনেক মুক্তিযোদ্ধাও আছেন যারা ’৭২ সালের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি মানতে পারেননি ধর্মীয় আদর্শগত কারনেই। মরহুম সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল, হামিদউল্লাহ, কাদের সিদ্দিকীর পরিবর্তিত রাজনৈতিক দর্শন পর্যালোচনা করলে এ দলের মনোভাব অনেকটা বোঝা যায়। এই দলের অনেকেই ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থা কায়েমের স্বার্থে চিহ্নিত রাজাকারদের সাথে জোট বাঁধতেও রাজী, মেজর জলিল সাহেব করেও দেখিয়ে গেছেন। ধর্মের এমনই মহিমা। বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির বাস্তবতা নিয়ে পরে লেখার ইচ্ছে আছে, সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ধর্মীয় শিক্ষার কোন ব্যাবহারিক মূল্য নেই এটা জেনেও লাখ লাখ ছেলেপিলেকে মাদ্রাসা নামক এক অদ্ভূত শিক্ষা ব্যাবস্থায় ঠেলে দেওয়া হয়। কোন রাজনীতিবিদ, নীতি নির্ধারক, বড় আমলা তো দুরের কথা, এমনকি ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতারাও দেখা গেছে তাদের ছেলেপিলেকে মাদ্রাসা নয়, সাধারন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই পড়ান। যেমন রাজাকার মান্নান মাওলানা নিজে সেই ’৭১ সাল থেকেই ছিল মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির নেতা, কিন্তু তার তিন ছেলের কাউকে সে মাদ্রাসায় পড়ায়নি। এই লোকের প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব এক সময় ছিল দেশের অন্যতম শীর্ষ জনপ্রিয় পত্রিকা, এমন মনে হয় কেবল আমাদের দেশেই সম্ভব।
কিন্তু এ শিক্ষা ব্যাবস্থা বন্ধ তো দুরের কথা, যুগোপযোগি করার সংস্কারের কথা বললেও সকলে তেড়ে আসেন, ইসলাম ধ্বংসের আলামত পেয়ে যান। আম জনতাও এই প্রবনতার খুব বাইরে তা নয়। কারন এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ে সমাজের নিম্নে আয়ের কিংবা যাদের কোন গতি নেই তারা, এদের কথা কে চিন্তা করবে? এরা মাদ্রাসায় পড়ে মোল্লা হয়ে মসজিদে আজান দেবে, মিলাদ পড়াতে আসলে দুই বাক্স মিষ্টি বেশী দিয়ে বলা হবে আলেমের সম্মান সকলের অগ্রে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়র বিজনেস প্রফেশনাল এদের হবার দরকার নেই, কারন এদের ভূমিকা আরো বিশিষ্ট; এরা পরকালে নিজেদের বেহেশতে যাবার সিঁড়ি হিসেবে কাজ করবে। কেবল নিজেদের ছেলেপিলেকে সেই সিঁড়ি বানানো কোনমতেই যাবে না। ধর্ম নিয়ে দ্বি-চারিতার আরেক উদাহরন এটা। এর মধ্যে সম্ভবত কায়েমি স্বার্থেরও ব্যাপার আছে। এমনিতেই দেশে প্রতিযোগীতা তীব্র, তার ওপর মাদ্রাসায় পড়া লাখ লাখ ছেলেপিলেও যুক্ত হলে কেমন হবে? এর চাইতে এদের পরকালের পাথেয় হিসেবে বুঝ দেওয়াই উত্তম। তারাও খুশী আল্লাহর পথে শিক্ষা লাভ করে, আম জনতাও খুশী নিজেদের ছেলেমেয়েকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়র ইত্যাদী প্রফেশনাল বানাবার রাস্তা ফাঁকা করে একই সাথে এতিম দরিদ্রদের আলেম মোল্লার বানিয়ে পরকালের সিঁড়ি হিসেবে ব্যাবহার করে। এক ঢিলে একেবারে তিন পাখি।
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মুনতাসীর মামুন বলেছেন, “মাদ্রাসা শিক্ষিতরাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বিরোধীতা করেছে,করছে এবং করবে। পাকিস্তান আদর্শের প্রতি তারা যতটা আত্মিক টান অনুভব করে, বাংলাদেশের আদর্শের প্রতি ততটা নয় [৬]।” ‘মাদ্রাসা ও মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয়ে একটি সমীক্ষায় লিখেছেন আবদুল মোমেন, “জাতীয় চেতনা বিহীন এই শিক্ষা আরো ভয়াবহ বিকৃতির প্রকাশ ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধের সময়। কি ওহাবী কি সুন্নী বাংলাদেশের প্রায় সকল মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র ছিল স্বাধীনতার বিপক্ষে। এ ব্যাপারে ব্যাতিক্রম একেবারে হাতে গোনা দু’চারটি। ……মাদ্রাসার বিকাশ ও বিস্তারের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের আবেগ ও আদর্শের বিরোধী চেতনার যেন শক্তি বৃদ্ধি ঘটেছে”। এর কারনও মোমেন ব্যাখ্যা করেছেন, “মাদ্রাসা শিক্ষিত মৌলানারা অধিকাংশ সামাজিকভাবে এমন এক রক্ষনশীলতার পক্ষালবম্বন করে থাকে যা কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও নানারূপ কুপমন্ডুকতাকে প্রশ্রয় দেয়” [৬]।
মুনতাসীর মামুন কিংবা আবদুল মোমেনের মূল্যায়ন মোটেও অবাস্তব বা অসত্য কিছু নয়। এমন মনে করার কোন কারন নেই যে ’৭১ সালের পর মাদ্রাসা ওয়ালারা ভুল স্বীকার করে নিজেদের সংশোধন করেছে, কিংবা সরকার থেকে কোন ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে আশায় গুড়ে বালি। হয়েছে আরো উলটো। ধর্ম, ধর্মীয় শিক্ষা সম্পর্কে অন্ধ অবসেশনের কারনে সকলে বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাধা তো দূরের কথা উলটো বেড়ালকে পূর্ন ননীযুক্ত দুগ্ধ দ্বারা পুষ্ট করার কাজেই স্বাধীনতার পর থেকেই লিপ্ত আছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করার পুরষ্কার হিসেবেই সম্ভবত স্বাধীনতার পর মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে পাক আমলেরও তিনগুন বরাদ্দ ধার্য করেন বংগবন্ধু সরকারই। ব্যাং এর ছাতার মত বাড়তে থাকে বেসরকারী কওমী মাদ্রাসার সংখ্যাও। বর্তমানেও অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যায় সাধারন শিক্ষার থেকে বেশী।
কওমী মাদ্রাসায় ছাত্ররা কেমনতর সাম্প্রদায়িক শিক্ষা পেতে পারে তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যেতে পারে কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের মহাপরিচালক মহোদয়ের ভাষ্য ঠেকেঃ Abdul Jabbar, Director-General of the Koumi Madrasa Board, told the Banglanews24.com.bd, “As our National Anthem is written by a Hindu poet, being a citizen of a Muslim majority country we cannot allow Tagore’s song as the national anthem. [৭]” এসব লোকে দেশের লাখো ছেলেপিলেকে শিক্ষা দেবার দায়িত্বে আছেন। মুনতাসীর মামুন আবুল মোমেনদের মূল্যায়ন কোনমতেই অগ্রাহ্য করা যায় না। যে শিক্ষা দেশের পরবর্তি প্রজন্মকে সরাসরি স্বাধীনতা বিরোধী চেতনায় কুশিক্ষিত করে সে শিক্ষা সম্পর্কে দেশের সব রাজনৈতিক দল,আম জনতার সরব ও নীরব সমর্থন, সর্বাধিক অর্থ বরাদ্দ মনে হয় কেবল মাত্র এই দেশেই সম্ভব।
মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার নিয়ে বহু প্রস্তাবনা ব্রিটিশ আমল থেকেই হয়েছে, কিছু কার্যকরি সংস্কার হয়েছেও। সে সংস্কার মূলতঃ সরকারী আলীয়া মাদ্রাসার কারিকুলাম যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ধর্মীয় কিছু বিষয় ইংরেজী, গনিত, বিজ্ঞান বিষয়ক কোর্স দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয়, এতে বহু মাদ্রাসা ছাত্র নিঃসন্দেহে মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন জাতীয় পেশার বাইরে সাধারন শিক্ষার্থীদের মত অন্যান্য পেশায় যাবার সুযোগ পাচ্ছে (যদিও পরিসংখ্যান বলে এই হারও অতি নগন্য)। কথা হল মাদ্রাসায় যেসব ধর্মীয় বিষয় শিক্ষা দেওয়া হয় সেসব কারিকুলামে ঠিক কি ধরনের মৌলিক শিক্ষা শিক্ষার্থীরা পায় সেসব মনে হয় না মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারে সেভাবে চিন্তা করা হয় বলে। নইলে মুনতাসীর মামুন কিংবা আবুল মোমেনদের কথা গুরুত্ব দেবার মত কিছু ছিল না। শুধু ইংরেজী, অংক, বিজ্ঞান যোগ করলেই শিক্ষা সংস্কার হয় না।
কওমি মাদ্রাসাগুলির ওপর সরকারী নিয়ন্ত্রন না থাকার কারনে তাদের সিলেবাসে বলতে গেলে শত শত বছরেও তেমন পরিবর্তন হয়নি। সরকারী নিয়ন্ত্রন বা অর্থায়ন নেই বলে যে কেউ দেশে খেয়াল খুশীমত বিদ্যালয় খুলে যা খুশী শেখাতে পারবে এটা কিভাবে মানা যায় আমি জানি না। আমি নিজের গাঁটের পয়সায় ধমাধম ধর্ম শিক্ষালয় খুলে শেখানো শুরু করলাম ধমাধম ধর্ম বাদে সকল ধর্ম বাতিল,ধমাধমে অবিশ্বাসীরা সকলে মহাপাপী যাদের বিরুদ্ধে জেহাদ করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব এবং এসব শিক্ষার আলোকে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী চেতনা গড়ে তোলা শুরু করলাম তো আমাকে সরকার বাধা দিতে পারে না, আমার শিক্ষার যে সব অংশ এসব সাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চেতনা গড়ে তুলে সেসব অংশ পরিমার্জনের অধিকার রাখে না? যে শিক্ষকরা প্রকাশ্যে মিডিয়ায় ‘হিন্দু’ কবির লেখা জাতীয় সংগীত অস্বীকার করতে পারেন তারা নিজেদের বিদ্যালয়ে ঠিক কি ধরনের চেতনা গড়ে তোলেন সেটা বুঝতে খুব কষ্ট হবার কথা নয়। মুনতাসীর মামুন, আবদুল মোমেনদের মূল্যায়ন তাইই প্রমান করে, অন্য আরো সূত্রও আছে।
প্রাচীনপন্থী সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ভিত্তিক শিক্ষা চর্চার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র শিক্ষকদের মাঝে স্বাধীনতা বিরোধী ধ্যান ধারনার চর্চা অত্যন্ত পরিষ্কার। আলিয়া মাদ্রাসাগুলিকে সরকারী নিয়ন্ত্রনে এনে অনেকটা বাস্তবমূখী কারিকুলাম ধার্য করা গেলেও সরকারী নিয়ন্ত্রনহীন কওমী মাদ্রাসাগুলির অবস্থা ভয়াবহ। আমি বেশী রেফারেন্স দিচ্ছি না; মাদ্রাসা, সাথে জাতীয় সংগীত জাতীয় পতাকা লিখে বাংলা বা ইংরেজীতে গুগল সার্চ দিন। দেখবেন গাদি গাদি সংবাদ সূত্র বার হচ্ছে মাদ্রাসায় বিজয় দিবস, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত অবমাননা, নিয়ে। এমনকি আদালতকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে এসব নিয়ে। আদালত, থানা পুলিশের ভয় দেখিয়ে কাউকে উদারতা, অসাম্প্রদায়িকতা বা স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করা তো যায় না, করতে হয় উপযুক্ত শিক্ষা ও মূল্যবোধ চর্চার ব্যাবস্থা করে। এটা আমরা কবে বুঝব?
মাদ্রাসা শিক্ষার আলোচনা আমার মূল বিষয় নয়। এ প্রসংগ এ কারনে এনেছি এটা ব্যাখ্যা করতে যে দেশে সাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মূল্যবোধ কোথা থেকে জন্ম নেয় সেটার জ্বলন্ত উদাহরন দেখাতে। কারন এসবের সূত্র নিয়ে মোটা দাগে ভুল ধারনা আছে, যার কিছু ইচ্ছেকৃত ভাবে সত্য এড়ানো আর কিছু অজ্ঞানতা বশতঃ। কিছুদিন আগে জাফর ইকবাল স্যার শিবির করা তরুনদের উদ্দেশ্যে একটি কলাম লিখে আবারো জামাত শিবির চক্রের রোষে পড়েছেন। সত্য বলতে সে কলাম পড়ে আমিও অনেকটা হতাশ হয়েছি। জাফর স্যারও মনে হয়েছে কেন ছেলেপিলে শিবির করে সে কারন হয় বোঝেন না কিংবা আরো অনেকের মত জেনেশুনে এড়াতে চান। ওনার সম্ভবত মনে হয়েছে যে শিবির করলে ভাল চাকরি বাকরি পাওয়া যায় সেটাই মূল কারন।
এটা সত্য যে শিবিরের অনেক ছেলেপিলে জামাত নিয়ন্ত্রিত অনেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি পায়। তবে সকলের চাকরিই এভাবে হওয়া সম্ভব নয়, মূল কারন চাকরি পাওয়া নয়। হিজবুত তাহরির যারা করে তাদের চাকরি বাকরি কে বা কারা দিচ্ছে? নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তাদের উলটো সরকারী চাকরি পাওয়া অসম্ভবের মত হবে, বহু দেশে উচ্চশিক্ষার ভিসাও পাবে না। যে কারনে আধুনিক শিক্ষা দীক্ষা পেয়েও ছেলেপিলে হিতায় যোগ দেয় সেই একই কারনেই জামাত শিবিরেও লোকে যোগ দেয়। টাকা পয়সা, ক্ষমতা, চাকরি বাকরি সেকেন্ডারি। এরা সকলেই খিলাফত ভিত্তিক আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখে, জামাত শিবির বেশী ধুরন্ধর বলে এখনো অনেকটা আপোষের নীতিতে আছে, হিতার ধৈর্য্য অতটা নেই। যেসব মুসলমান প্রধান দেশে প্রকাশ্য রাজনীতি আছে সেসব বেশীরভাগ দেশেই এই জাতীয় ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী দল আছে। মিশরের ব্রাদারহুড আর আমাদের জামাত শিবিরের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক আদর্শগত মিল স্যার জানেন না? ব্রাদারহুডের প্রাক্তন নেতারা এখন মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধপরাধী বিচার নিয়ে নানান কুতসা ছড়াচ্ছে। ব্রাদারহুড আজ ক্ষমতায় বসেছে টাকা পয়সা চাকরি বাকরি বিলিয়ে? এসবের দলের সব সদস্য চাকরি বাকরি, টাকা পয়সা পাবার কারনে এসব দলে যোগ দেয় নাকি আদর্শগত কারনে যোগ দেয় এ নিয়ে কোন সংশয় থাকা উচিত?
মাদ্রাসাগুলিতে সাম্প্রদায়িক চেতনা, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চেতনা কি টাকা পয়সা, চাকরির লোভ দেখিয়ে বিকশিত করা হয়? ধর্মীয় শিক্ষার সাথে রাজাকারি আদর্শের যোগ না থাকলে মাদ্রাসা শিক্ষিতদের মধ্যে ’৭১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত রাজাকারি আদর্শের চর্চা ও বিকাশ কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? The fundamentalist policies of Jamayate Islami were gradually spread throughout rural Bangladesh through the activities of its student wing (Bangladesh Islami Chhatra Shibir), Madrasah students and the maulanas [৮] এমনকি আলিয়া মাদ্রাসাগুলি, যেগুলি সরকার নিয়ন্ত্রিত সেগুলিতেও কেন একচেটিয়া শিবিরের রাজত্ব? আত্মপ্রতারনা আর কতদিন? ইসলামের সাথে রাজাকারি বা সাম্প্রদায়িক চেতনার কথা শুনলে কট্টর ধার্মিকরা তো বটেই, এমনকি অনেক মডারেট ধার্মিকও খেপে ওঠেন। কিন্তু এই প্রশ্নের জবাব দেন না যে কেন ইসলামী লাইনে পড়াশুনা করা মাদ্রাসা ছাত্র/শিক্ষক, আলেম সমাজের মাঝে রাজাকারি দল বা দর্শন এত জনপ্রিয়। ব্লগে যারা ছাগু নামে পরিচিত তাদের সাথে ধর্মীয় জ্ঞানের প্রতিযোগিতায় জাফর ইকবাল স্যার, অমি পিয়াল ভাই কিংবা মডারেট ধার্মিকরা পারবেন? যাইই মনে করুন, লোকে ধর্মচর্চার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষিত আলেম মোল্লার কাছেই যাবে, আপনাদের কাছে নয়; সেসব আলেম মোল্লাও জামাতিদেরই আপন মনে করবে। আজ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশে মসজিদ মাদ্রাসা থেকে যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবীতে ক’টা মিছিল বার হয়েছে? তারা কি মিছিল মিটিং পছন্দ করেন না? কটা বিবৃতি ওনারা এ বিষয়ে দিয়েছেন?
শুরুতেই বলেছিলাম যে বর্তমানে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত আল্ট্রা মডার্ন তরুন প্রজন্মের কাছে হিতা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে শিবিরের থেকে বেশী। এর একটি কারন অবশ্যই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতির বিধিনিষেধ। তবে অপর সম্ভবত জামাত শিবিরের ’৭১ সালের ভূমিকা। এর কিছুটা কৃতিত্ব অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিও দাবী করতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি বলতে একচেটিয়া তারা জামাত শিবিরকে লেবেল করেন, আসল সূত্র কোথায় সেটা কেউ কৌশলে বা কেউ অজ্ঞানতাশত এড়িয়ে যান। যুদ্ধপরাধের ইতিহাস বর্ননার সাথে এটাও প্রয়োযন তাদের রাজনৈতিক ধারা কেন ক্ষতিকর সেটা ব্যাখ্যা করা। যুদ্ধপরাধীদের দল থেকে খেদিয়ে দিলে জামাত শিবিরে আর সমস্যা থাকবে না? এর ফলাফল হল স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক চক্র সাইনবোর্ড বদল করছে, হিতার উত্থান এটাই প্রমান করে। তরুন প্রজন্মের ছেলেপিলে ইসলাম কায়েম হোক এ শিক্ষা পায়, আবার জামাতিদের বিশ্বাস করে না ’৭১ এর ভূমিকার কারনে। হিতার নেতা পাতি নেতাদের মাঝে চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীরা নেই, প্রচারনার লিফলেটেও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোন কথা নেই। এ অবস্থায় হিতা তরুন প্রজন্মের কাছে আদর্শ ইসলামী দল হিসেবে স্থান পেয়ে যাচ্ছে। সেই ইসলামী সমাজ কায়েমের নামে এরা নিষিদ্ধ দলে যোগ দিতেও দ্বিধা করছে না। হিতার রাজনৈতিক আদর্শ বর্তমান জামাতের থেকেও বেশী উগ্র।
হিতার সদস্য সংখ্যা এখনো কম কিংবা সংসদে জামাতিদের আসন কম বলেও উল্লসিত হবার কোন কারন নেই। জামাত হিতা জাতীয় দলের মূল সদস্যের চেয়ে এদের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেক বেশী থাকে। এই কথাটা আমি স্বাধীনতা বিরোধীদের সম্পর্কেও সবসময়ই বলি। এই তথ্য সেই গবেষনাপত্রেও [৫] আছে। বাস্তব উদাহরন আমাদের আশে পাশের ব্লগেই আছে। এইসব দলের মূল শক্তি এখানেই, এদের এক সারপ্রাইজ সাপোর্ট বেজ থাকে।
এটা বুঝতে পারি যে ফেসবুকে শিবিরের ছেলেপিলে বেজায় উতপাত করে, তাদের মোকাবেলা করতে হবে। তাই বলে মূল সমস্যা জামাত শিবির, এদের ধরে ধরে রাস্তাঘাটে ঠ্যাংগানী দিলে কিংবা গদাম দিয়ে ফেসবুক বা ব্লগ থেকে তাড়িয়ে দিলেই মুশকিল আসান এমন ধারনা অত্যন্ত ভ্রান্ত। মূল যায়গায় সরাসরি হাত না দিলে উপায় নেই। আপনি সন্তানদের ছেলেবেলা থেকে শেখাবেন ইসলামী শাসন কায়েম ছাড়া উপায় নেই, সিলেবাসে সাম্প্রদায়িক জেহাদী শিক্ষা দেবেন, এরপর বলবেন যে “ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সমস্যায় পরিণত হয়েছে” [৯]? দমন পীড়নে তারা আরো শক্তিশালী হবে, নৈতিক বল পাবে যে তারা সত্য পথে আছে বলেই ইসলাম বিরোধী শক্তি এসব দমন পীড়ন চালাচ্ছে। খেলার মাঠে পাকিস্তানের পতাকা গালে লাগিয়ে পাকিস্তানী ব্রাদারদের ‘উই আর সেম’ বলা যুবককে গালি দেবার কতটা অধিকার আমাদের থাকে যে সমাজে সকল মুসলমান ভাই ভাই শিক্ষা দেওয়া হয়? সকল মুসলমান ভাই ভাই মেনে নিলে পাকিস্তানীদের ভাই ডাক শুনলে উত্তেজিত হওয়ার মানে কি? অশ্রাব্য গালি দিয়ে কারো ভেতর থেকে ভ্রাতৃত্ববোধ দূর করা যাবে? ঊটপাখি নীতি গ্রহন করে কোন লাভ নেই। মেরুকরন তীব্র হচ্ছে, সঙ্ঘাত এক সময় হবেই, সেই সঙ্ঘাত বলপ্রয়োগে না হয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক হওয়াই মংগল। রাস্তাঘাটে লগি বৈঠা দিয়ে নৃশংসভাবে পিটিয়ে মানুষ হত্যার মত সমাধান কোন সূস্থ সমাজের লক্ষন হতে পারে না। রোগ সারানোর চাইতে রোগের প্রতিরোধ সবসময়ই উত্তম। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির জন্ম রোখা না গেলে উপায় নেই।
হিতায় চিহ্নিত যুদ্ধপরাধীরা নেই বলে শিবিরে যোগ না দিয়ে হিতায় যোগ দিলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমস্যা হচ্ছে না বা হবে না? একচেটিয়া জামাত শিবিরই একমাত্র স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি এমন প্রচারনার ব্যাপারে আরেকটু ভাবার অনুরোধ করি। আজকের চিহ্নিত যুদ্ধপরাধীরা বিচারে হোক আর স্বাভাবিকভাবেই হোক এক সময় ধরাধম ত্যাগ করবে। এরপর জামাত যুদ্ধপরাধীদের দল সে যুক্তিও অনেকটাই ফিকে হয়ে আসবে। আজকের দিনেই চোখের সামনেই এসব নৃশংস অপরাধীরা হাজির থাকতেও জামাত শিবিরের সমর্থকরা জাফর ইকবাল স্যারের লেখা পাত্তাও দেবে না। মরে ভুত হওয়া নেতারা ৫০ বছর আগে কে কি করেছে তাও আবার আদালতেও হয়ত যা প্রমান করা যায়নি সে ইতিহাস প্রবল ধর্মপ্রেমের কাছে একেবারেই ফিকে হয়ে যাবে। বাস্তব জীবনে তো বটেই, আশেপাশের সাইটেই দেখা যায় প্রবল রাজাকারি আদর্শের লোকজনকে বড় আলেম বলে ধর্মপ্রিয় লোকেরা কিরকম সম্মান করেন। জাফর ইকবাল স্যারের মত আবেগী কলামে এমন আলেম ভক্তি দূর হবে, সেই প্রিয় আলেমকে ব্লগাররা বলবে যে তুই রাজাকার দূর হ? হিতা, শিবিরের রাজাকারি আদর্শ, সাম্প্রদায়িক চেতনা এসবই আছে ধর্মীয় সূত্রের ব্যাখ্যা করে রাজনীতি ও দৈনন্দিন জীবন যাপনে প্রয়োগের মারাত্মক প্রবনতার ভেতর। এর বিরুদ্ধে সরাসরি কথা না বললে, চ্যালেঞ্জ না জানালে কেবল লগি বৈঠা আর গদামের ভরসায় থাকার উপায় নেই। সঙ্ঘাতের পথ কেবল চাপাতির কোপে বিশ্বজিতের মত নিরীহ প্রান ঝরানো কিংবা বড়জোর লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে জনাকয়েক শিবির কর্মী কমাতে পারে।
সূত্রঃ
১। উগ্র মৌলবাদীদের আস্তানা হয়েছে নর্থ সাউথঃ পাঠচক্রের আড়ালে শিবির ও হিযবুতের বৈঠক
২। জঙ্গী সংগঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক
৩। সেনাবাহিনীতে হিযবুত প্রভাব
৪। হিযবুত তাহরির
৫। Religion, Politics, and the Modern University in Pakistan and Bangladesh; Matthew J. Nelson – The National Bureau of Asian Research, NBR PROJECT REPORT, April 2009
৬। শান্তি কমিটি ১৯৭১ – মুনতাসীর মামুন, মাওলা ব্রাদার্স ।
৭। Taboo on national anthem in Koumi Madrasas continue
৮। MADRASAH EDUCATION AN OBSERVATION- Muzib Mehdy; Editor Rokeya Kabir Bangladesh Nari Progati Sangha, ( page-69)
৯। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সমস্যায় পরিণত হয়েছে
সাত বছর পরে দেশে যাচ্ছেন শুনলাম। শুভযাত্রা এবং নিরাপদ প্রত্যাবর্তন।
আশাকরি দেশে সবকিছু ভালভাবে পর্যবেক্ষন করবেন আর চিন্তাভাবনা গুলো রেকর্ড রাখবেন। ফিরে এসে আমাদের সাথে শেয়ার করবেন। আমার প্রায় প্রতি বছরই যাওয়া হয়েছে একারনে পরিবর্তন গুলো একবারে চোখে পড়েনি। অনেকদিন পড়ে কেউ গেছে জানলে তার প্রতিক্রিয়া জানতে খুব ইচ্ছে করে।
আমার কেনো জানি এখনকার বাংলাদেশে এইসব হিজবুত তাহরীর ছেলেমেয়েদের সাথে ৬০-৭০ দশকের বিশ্বসমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী ছেলেমেয়েদের অনেক মিল আছে মনে হয়। বুঝি নি, মিলটা জানতে চাই
@িশল্পভবন, আদিলভাই ব্যপারটা আরও বিশদভাবে বলতে পারবেন তবে স্বল্পকথায় হলো যে, অধিকাংশ শিক্ষিত তরুনদের জন্যে ১৮ থেকে ২৫ বছর সময়টা খুবই আদর্শিক হয়ে থাকে। এই সময়টাতে তারা জীবন কেবল চাকরী-বাকরী আর ঘর সংসার করার মধ্যেই সার্থক এটা মনে করে না। তারা জীবনের কোনো একটি বৃহত্তর আদর্শ খোজে। সেই আদর্শ অনেক সময়েই হয় চারিদিকের সমাজ-রাষ্ট্র রাজনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে আদর্শ কোনো ব্যবস্থার সন্ধান। যেসব সমাজে অরাজকতা-বৈষম্য-অনাচার যত বেশী সেখানে এই সন্ধান আরও ব্যপক আবেদন রাখে তরুনদের মধ্যে।
আর অনেক তরুনরাই তাদের স্বভাবগত উত্তেজনা এবং জ্ঞান-অভিজ্ঞতার অভাবের কারনে গনতন্ত্র-নিয়মতান্ত্রিক পথ- সামাজিক আন্দোলন এসব ধৈর্যসাপেক্ষ ধীর পরিবর্তনের পথে না যেয়ে দ্রুত র্যাডিক্যাল পরিবর্তনের মতের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বাংলাদেশে কলেজ-ভার্সিটির ছাত্ররা ৬০-৭০ এর দশকে এই কারনেই মাওবাদী বিপ্লব এর প্রতি এত আকৃষ্ট হয়েছিলো। ঠিক এই ধরনের আবেগই কাজ করছে আজকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের হিজবুত তাহরীর এর প্রতি। এইসব ছেলেমেয়েরা বাইরে থেকে আসা টাকাপয়সা, চাকরী-বাকরী কিংবা বেহেশতে যাওয়ার লোভে এই ধরনের এক্সট্রিম মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে এই চিন্তা করা হবে সবচেয়ে বড়ো ভুল।
শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নয়, এমনকি সেনাবাহিনীর মত অতি সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানেও মৌলবাদীরা অবস্থান নিচ্ছে এমন অভিযোগ এখন আর কেবল গুজব নয়, স্বীকৃত সত্য; কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে যায়ে, এ কথাটা বলতে আরও তথ্য দিতে পারেন,যেমন ওয়েকিলিস-এর কিছু তথ্য,—
২০১০ সালে ১৭ ডিসেম্বর ওয়িকিলিক্স-এর ফাঁস করা গোপন নথিতে বলা হয়,ডিজিএফ জংগিবাদি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামির (হুজি) সদস্যদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সমর্থন দিয়েছিল । ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন নেতৃত্ব এ রকম তৎপরতা চালিয়েছিল বলে মার্কিন নথিতে লেখা হয়েছে ।
নথিতে বাংলাদেশের মার্কিন স্থাপনায় হামলার হুমকিতে ভয় পাওয়ার কথাও আছে । আছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশিদের ওপর নজরদারির অভিপ্রায় ।
সে সময়কার নথিতে বলা হয়েছে, ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (আইডিপি) সদ্য আত্মপ্রকাশ করা একটা দল । ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) জ্যেষ্ঠ সদস্যরা নতুন এই দল গঠন করে । বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদফতর (ডিজিএফআই) হুজি-বিকে মূলধারার রাজনীতিতে নিয়ে আসার লক্ষে আইডিপি গঠনে সমর্থন দেয় এবং এর কর্মকাণ্ড তীক্ষভাবে পরযবেক্ষণ করে ।
@িশল্পভবন,
ধন্যবাদ, তথ্যগুলি আমার জানা ছিল না। তলে তলে আরো কি চলেছে কে জানে। পাকিস্তানের সাথে মিল পাওয়া যায়।
@িশল্পভবন,
আপনার এ বক্তব্যের ভিত্তি কি ? এ সম্পর্কে উইকিলিক্সের ‘ফাঁস করা তথ্য’ তরজমা ছাড়াই হুবুহু উদ্বৃত করতে পারবেন অথেনটিক উইকিলিক্সির সূত্র থেকে ? কোন তৃতীয় পক্ষের তরজমা ( আলু গ্রুপের পত্রিকা ) করা তথ্যের উপর ভিত্তি করে এরকম গুরুতর অভিযোগ আনা খুবই বিপজ্জনক ।
@সংশপ্তক,
উইকিলিক্সের সূত্রই যে ১০০% সঠিক এমন নাও হতে পারে। আমরা সকলেই কেন উইকিলিক্সে কিছু পাওয়া গেলে সেটাকেই ১০০% সঠিক ধরে নেই কে জানে।
তবে সম্ভাবনার বিচারে তথ্যগুলি সঠিক হবার সম্ভাবনাই বেশী, কারন এটা সকলেই জানি যে সে সময়টায় সেনা গোয়েন্দা সংস্থা জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলি কৃত্রিম উপায়ে রাজনৈতিক দল/নেতা গঠনে চেষ্টা চালাচ্ছিল। মৌলবাদী দলগুলি এক শ্রেনীর ইসলাম প্রিয় লোকের কাছে জনপ্রিয় এই সরল এজাম্পশন থেকে তথ্যগুলি সঠিক হবার সম্ভাবনা আছে।
@আদিল মাহমুদ,
যে বিশেষ অফিসারকে নিয়ে এই রটনা রটেছিল তার সাথে মৌলবাদীদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক যা জামাত সরকারের আমলে জোরদার হয়। তাকে অবশ্য ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেই প্রায় নিশ্ক্রিয় করে রাখার পর বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তার ভাগ্য ভালই বলতে হবে যে, তার সতীর্থের মত কপ্টার দূর্ঘটায় তাকে প্রান হারাতে হয় নি। এখন তিনি একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ মামলায় পলাতক আছেন ।
@সংশপ্তক,
কার কথা বলছেন বুঝতে পারছি। কেবল এই আশাবাদই করতে পারি যে এই রোগ মহামারীতে পরিনত হয়ে দেশকে আরেক পাকিস্তান বানাবে না। গত অভ্যুত্থানের ব্যার্থ চেষ্টা দেখে তেমন আশংকা খুব দূর মনে হয় না।
সেই ব্যার্থ অভ্যুত্থান খুবই বিচ্ছিন্ন কিছু যাতে একেবারেই সেনা সমর্থন ছিল না বা সফল হয়নি এভাবে চিন্তা করে স্বস্থি পাবার কিছু দেখি না। এ ধরনের ক্যু একবার সফল হয়ে গেলে সমর্থন পেয়ে যেতে দেরী হত না।
@সংশপ্তক,
http://en.wikipedia.org/wiki/Contents_of_the_United_States_diplomatic_cables_leak_%28Asia_and_Oceania%29
http://www.defence.pk/forums/bangladesh-defence/85192-wikileaks-bangladesh-intelligence-backed-islamists-political-wing.html
এই লিঙ্কগুলুতে তথের সত্ততা পেতে পারেন,
ধন্যবাদ
এর ফলাফল হল স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক চক্র সাইনবোর্ড বদল করছে, হিতার উত্থান এটাই প্রমান করে। তরুন প্রজন্মের ছেলেপিলে ইসলাম কায়েম হোক এ শিক্ষা পায়, আবার জামাতিদের বিশ্বাস করে না ’৭১ এর ভূমিকার কারনে। হিতার নেতা পাতি নেতাদের মাঝে চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীরা নেই, প্রচারনার লিফলেটেও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোন কথা নেই। এ অবস্থায় হিতা তরুন প্রজন্মের কাছে আদর্শ ইসলামী দল হিসেবে স্থান পেয়ে যাচ্ছে। সেই ইসলামী সমাজ কায়েমের নামে এরা নিষিদ্ধ দলে যোগ দিতেও দ্বিধা করছে না। হিতার রাজনৈতিক আদর্শ বর্তমান জামাতের থেকেও বেশী উগ্র।1\একমত
@িশল্পভবন,
হিতার উত্থান প্রমান করে যে এ দেশে মৌলবাদের জনপ্রিয়তা সবসময়ই আছে এবং শিক্ষা মূল্যবোধের বড় ধরনের পরিবর্তন না ঘটানো গেলে এই জনপ্রিয়তা থাকবেই।
হিতার আদর্শ ইসলামী সমাজে তারা নামাজ না পড়লে শাস্তি, হিজাব না করলেও শাস্তির ব্যাবস্থা রাখছে। উচ্চশিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগন এসব প্রচারনা প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছে। আরো বিস্ময়কর হল এই দলের এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য মহিলা।
জামাতের রাজনৈতিক দর্শন এদের চাইতে ভাল কিছু নয়। কিন্তু জামাত ধুরন্ধর বলে তাদের সীমাবদ্ধতা জানে, বিএনপি ভর করা ছাড়া তাদের ভোটের লড়াই এ অস্তিত্ব নাই। হিতার মত রাজনৈতিক ম্যানিফেষ্টো সরাসরি প্রচার করলে বিএনপিও তাদের মাথায় ছাটা মেলতে পারবে না। তারা ধীরে চলো নীতিতেই বেশ কিছুদিন আগাবে।
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলে পরিচিতরা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করো দাবী তুললেও কেন নিষিদ্ধ করতে হবে সেটা পরিষ্কার ব্যাখ্যা করেন না, কারন আসলে তাহলে ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগার প্রশ্ন এসে যাবে। তারা জামাত শিবিরের ‘৭১ এর ভূমিকা জোর দেন, যেটা আসলে যুক্তি হিশেবে খুবই দূর্বল। কোন মুক্তিযোদ্ধা আজ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠন করলে তাকে কি বলে ঠেকানো যাবে? মেজর জলিল তো করে দেখিয়ে গেছেন, কাদের সিদ্দিকীও খুব দূরে নন।
এসব লুকোচুরির আড়ালে মূল সমস্যা রয়েই যাচ্ছে।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার এই পর্বের কিছু অংশ নিয়ে বোধ হয় অন্য জায়গায়ও আলোচনা হয়েছিল। এই ধারায় আমার একটি লেখায়ও তর্ক হয়েছিল- বাংলাদেশের তাবলিগ জামাত সহ প্রায় সকল ইসলামী দল, মক্তব, মাদ্রাসা, মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। একদল লোক প্রশ্ন তুললেন, সেখানে ইসলাম কোথায় পেলেন, জামাত ইসলামী দল নয়। আমি কী বললাম আর আমার সারিন্দা কী বলে? আমি চোখে আঙ্গুল দিয়ে প্রমাণ সহকারে দেখালাম, জামাত ছাড়াও অনেক ইসলামী দল স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল, তারা প্রকাশ্যে মাঠে ময়দানে ইসলাম রক্ষার জন্যে মুক্তিযুদ্ধের বিরোদ্ধে অস্ত্র ধরার ডাক দিয়েছিলেন। অবাক লাগে যখন দেখি কিছু নাস্তিকও তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলে- সেখানে ইসলাম কোথায় পেলেন? এই যে অবক্ষয়, এই অধঃপতন, মাদ্রাসা শিক্ষা, হিজাব-টুপির ব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতার চাষাবাদ, সংখ্যালঘু নির্যাতন এ সব চোখের সামনে অহরহ ঘটছে আর একদল ব্যক্তিস্বার্থপর ভীরু কাপুরুষ তথাকথিত সুশীল শিক্ষিত সমাজ নীরবে চুপ থেকে পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে গেছে। কিন্তু একদিন এই বিষাক্ত সর্প তাদেরকেও রেহাই দেবেনা। তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই-
“First they came for the Communists, but I was not a Communist, so I said nothing. Then they came for the Social Democrats, but I was not a Social Democrat, so I did nothing. Then came the trade unionists, but I was not a trade unionist. And then they came for the Jews, but I was not a Jew, so I did little. Then when they came for me, there was no one left to stand up for me.” (Martin Niemoller)
@আকাশ মালিক,
এজন্যই মাঝে মাঝে দোয়া করতে ইচ্ছে হয় তালেবান জাতীয় কোন বাহিনী দেশ দখল করে নিক। তাহলে যদি বোধদয় হয়।
স্বাধীনতা বিরোধী বলতে কেবল জামাত শিবিরকে লেবেল করার মূল্য ইতোমধ্যেই দিতে হয়েছে অনেক, আরো দিতে হবে।
বায়তুল মোকারম মজসিদের পেশ ইমাম, লালবাগ শাহী মসজিদের পেশ ইমাম…মোদ্দা কথায় দেশের আলেম সম্প্রদায়, দেশের প্রায় সব মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক এনারাও সকলে জামাতি ছিলেন? এভাবে কাকে রক্ষা করা হয়, কার উপকার হয়?
জামাত শিবিরের মহিলা কর্মীরা হিজাব করে এটা যেমন ইসলামের জামাত ওনলি ভার্ষান নয় তেমনি বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমান শরিয়ত সম্মত হিজাব করে না মানেই হিজাব শরিয়তে নেই এমন নয়। মুক্তিযুদ্ধের কথা কোরান হাদিসে বহু মিরাকল থাকা সত্ত্বেও সরাসরি বলা নাই। যা কোরান হাদীসে সরাসরি বলা নাই তা জানতে হয় বিশিষ্ট আলেম মোল্লাদের কাছ থেকে। সাধারন মুসলমান যে কোরানের শতকরা ৫ ভাগও নিজ ভাষায় জানে না সে কিভাবে জানবে ইসলামের চোখে করনীয় কি? সে সময় একজন মুসলমানের কি করনীয় হত সেটা জানতে হলে তখনকার আলেম সমাজকে জিজ্ঞাসা করলেই জানা যেত। আলেম সমাজের মনোভাব কি ছিল সেটা ইতিহাসের অংশ, সেটা বদলানো যায় না। আজকের দিনে ফলাফল নির্ধারন হয়ে যাবার পর ইসলাম জালেমকে কোনদিন সমর্থন দেয় না এ জাতীয় কথা বলা সোজা, ততকালীন আলেম সমাজ এই সোজা কথা জানতেন না এটা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার।
রাজাকার বদরদের লেখা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বহু মিথ্যা বিকৃত তথ্য তারা দেয়, তবে এইখানে একটা সত্য ইতিহাস তারা বার বারই বলে ও জোর দেয়। মুক্তিযুদ্ধ ইসলামের চোখে সম্মত ছিল না বলেই আলেম সম্প্রদায় পাক সমর্থন করেছিল, একজন আলেমও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ভারতে পাড়ি দেয়নি। মুক্তিযুদ্ধে যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোন মুসলমান দেশের সমর্থন ছিল না সেটাও তারা মনে করায়। আজকে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানও ভাংগলে বাংলাদেশের অনেক মুসলমানই মনে কষ্ট পাবে।
আপনার এত সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।
আমাদের দেশের অধিকাংশ পরিবার গুলা ছোট বেলা থেকে তাদের সন্তানদের নামাজ পারার ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে কিন্তু নৈতিকতার বিষয়ে ততখানি কম গুরুত্ব দিয়ে থাকে, আর ছোট বেলা থেকে সুনে আসে ইসলাম সত্য ধর্ম, শান্তির ধর্ম আর অন্য ধর্ম ভোগাস…ইহুদী নাসারা আমাদের শত্রু…
তার পর এই ছেলেরা যখন বড় হয়, তাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক ছেলে হিতা’র মত কিছু জঙ্গি সংগঠন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন রকমের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়…… সবচেয়ে ভাল উদাহরণঃ নাফিস।
তাই আমার মনে হয় ধর্মীয় চর্চার পাশাপাশি নৈতিকাতার চর্চাও করা উচিত এবং বোমাবাজি আর জঙ্গি হামালার কুফক গুলো ছোট বেলা থেকে বাচ্চাদের সামনে তুলে ধরতে হবে, আর নাফিজকে উদাহরণ হিসেবে ছেলেদের সামনে তুলে ধরতে হবে। তাহলে নাফিজের মত ছেলেদের হয় তো’বা আর জন্ম হবে না……
আমি কথা গুলা খুব ভাল করে গুছিয়ে লিখতে পারি নি… আমার বিশ্বাস আপনি আপনার বুদ্ধি মত্তা দ্বারা বুঝে নেবেন।
ভাল থাকবেন।
আপানার জন্য রইল শুভ কামানা।
@(নির্জলা নির্লজ্জ),
ইসলাম ও অন্যান্য সব ধর্মেই সত জীবন যাপনের দর্শন আছে। কথা হল শুধু ধর্মের সত জীবন যাপনের নির্দেশ কতটা কাজে দেয়? অতীতে কতটা কাজ দিত সে প্রশ্ন বাদ দিলেও বর্তমান দিনে যে তেমন কাজে দেয় না সেটা বলাই বাহুল্য। দূর্নীতির তালিকায় মুসলমান প্রধান দেশগুলি যেগুলিতে ধর্মের রমরমা বেশী সেসব দেশগুলি বেশ এগিয়ে থাকে।
ইসলামে সত জীবনের নির্দেশ থাকলেও দূর্বলতা হল যে অসত কাজ করেও রেহাই পাবার উপায় আছে। নামাজ, রোজা, হজ্জের মত রিচ্যুয়ালকে ভিত্তি হিশেবে রাখা হলেও সত জীবনকে ভিত্তি হিশেবে রাখা হয়নি। ফলাফল যা হবার তাই, মুসলমান সমাজে নামাজ রোজার গুরুত্ব সত থাকার ওপরে বিবেচনা করা হয়। আপনি ঘুষ খেয়ে নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়লে আপনার মুসলমানিত্বে কেউ সংশয় প্রকাশ করবে না; কিন্তু আপনি ঘুষ না খেয়ে নামাজ রোজা ছেড়ে দিলে আপনার নিকটাত্মীয়রাই চিন্তিত হয়ে পড়বে আখেরাতে আপনার কি হবে বলে। এ কারনেই সম্ভবত দেশে নৈতিকতার অধঃপতনের সাথে সাথে ধর্মের রমরমাও বেড়ে গেছে। হাজির সংখ্যা এখন অনেক বেশী। কারন সম্ভবত হজ্জ্ব করে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে আসা, যেই নিষ্পাপ হয়ে আসার তাগিদ আগে সেভাবে ছিল না।
এক নাফিস নিয়ে মন্তব্য করা এখনো ঠিক হবে না কারন এখনো সেটা মামলাধীন, অনেক কিছুই আমরা জানি না যা আন্দাজে বানানো ঠিক না। তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে ধর্মের আফিমে অনেকেই জেহাদী বোমায় নানান অঘটনে পিছ পা নয়, যার শিক্ষা তারা ধর্মের এক ধরনের ইন্টারপ্রেটেশন থেকেই পায়। ধর্মীয় বহু সূত্র তাদের এসবের অনুপ্রেরনা দেয় যার কিছু উদাহরন প্রথম দু’পর্বে আলোচনা করেছি। মুসলমান সমাজের যারা গর্বিত ধর্ম ডিফেন্ডার তারা এসব সূত্র সম্পর্কে এক অদ্ভূত ডবল ষ্ট্যাণ্ডার্ড পালন করেন; একদিকে তাদের ধর্মে জেহাদী ধারনা কিছুই নেই বলে দাবী করেন আরেকদিকে এসব সূত্রেও রচয়িতাগনকে বিরাট আলেম বলে সম্মান করেন, সেসব ধর্মীয় সূত্র পরম শ্রদ্ধাভরে লালন পালন করেন। ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হলে আবার কোন জবাব না দিয়ে বিদ্বেষী, কার টাকা খেয়েছে, এসব গালাগাল শুরু করেন।
বাচ্চাদের সামনে নাফিস হাফিজ বোমাবাজির কুফল কিছুই তোলার দরকার নেই। শুধু ধর্মীয় সূত্রের বিষ তাদের না গেলালেই হবে। নিজ ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে অতিমাত্রায় সচেতন না করলেই হবে, একজন বিধর্মীর সাথে তার যে কোন মৌলিক তফাত নেই, কেউ যা জাতিগতভাবে কারো শত্রু হয় না এসব মাথায় না ঢোকালে কারো মাথায় জন্ম থেকে প্রবেশ করে না।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
জাফর ইকবালের লেখায় আরেকটি জিনিষ দেখলাম যে তিনি বলছেন,
“আজ থেকে কয়েক যুগ আগেও এই পৃথিবী যে রকম ছিল, এখন সেই পৃথিবী নেই। এই পৃথিবী অনেক পাল্টে গেছে। নতুন পৃথিবী তালেবান বা লস্কর-ই-তাইয়েবার পৃথিবী নয়। জামায়াতে ইসলামী বা শিবসেনার পৃথিবীও নয়। নতুন পৃথিবী হচ্ছে মুক্তচিন্তার পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক একটা পৃথিবী। এই নতুন পৃথিবীর মানুষেরা অসাধারণ, তারা একে অন্যের ধর্মকে সম্মান করতে শিখেছে, একে অন্যের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে উপভোগ করতে শিখেছে, একে অন্যের চিন্তাকে মূল্য দিতে শিখেছে। এই নতুন পৃথিবীতে মানুষে মানুষে কোনো বিভাজন নেই। দেশ-জাতির সীমারেখা পর্যন্ত ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে।”
অন্যদিকে হিজবুত-শিবির করা ছেলেমেয়েরা দেখছে মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক দেশে ঘৃনিত সেমিসেকুলার ডিক্টেটরের পতন ঘটে সরাসরি ইসলামী রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসছে (মিসর, তিউনিসিয়া, লিবিয়া)।
তারা দেখছে মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক ঘৃনিত রাজতন্ত্র জনরোষের ভয়ে কাপছে। তারা দেখছে তুরষ্কের মতো আধুনিক, সেকুলার, আধা-ইউরোপীয় দেশে একেপি’র মতো ইসলামী আদর্শের পার্টি বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে। তারা দেখছে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ায় দিনে দিনে ইসলাম পন্থী রাজনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। তারা দেখছে ইসলামিক রিপাবলিক ওফ ইরান আমেরিকা ইজরাইলের এত বাধা সত্বেও পারমানবিক শক্তি দিকে এগিয়ে চলেছে নিশ্চিত ভাবেই। তারা দেখছে ইউরোপ আমেরিকায় মুসলিম-অভিবাসীরা দিনে দিনে আরও ক্ষমতাশালী হচ্ছে।
বিশ্বরাজনীতির এইসব ধারা দেখে হিজবুত-শিবির আদর্শে অনুপ্রানিত শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের এটাই ভাবা স্বাভাবিক যে ইসলামী শাসনের গোল্ডেন এজ আমাদের সামনে, পেছনে নয়। তারা এটা ভাবতেই পারে বিশ্বখেলাফত একশ বছর পরে নতুনরূপে আরও অনেক শক্তিশালী আধুনিক হয়ে পৃথিবীতে আসছে। জাফর ইকবাল এইসব রিয়েলিটি কি জানেন নাকি জানেন না এটা আমি জানি না। তিনি মনে করে বসে আছেন একাত্তরে জামাতের ভূমিকাই সকল হিজবুত-শিবির মগজ ধোলাই এর বিরুদ্ধে অমোঘ দাওয়াই। জাফর ইকবাল এমনকি একাত্তরে কেবল জামাত নিয়েই কথা সীমাবদ্ধ রাখতে চান। সামগ্রিকভাবে ইসলামী দল ও সংগঠনগুলি নিয়ে ঘাটতে চান না।
আমি সবসময়েই মনে করে এসেছি যে হুমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবাল এই দুই অসম্ভব প্রতিভাধর ভাই, জনপ্রিয়তা আর মাস ইনফ্লুয়েন্সের লোভে বাংলাদেশের মানুষকে সবসময়ে একটি শিশুজাতির ( adolescent nation) মতো ট্রিট করেছেন যাদেরকে মিষ্টি মিষ্টি কথা আর আবেগের সুড়সুড়ি দেয়া কথা ছাড়া কোনোভাবে অনুপ্রাণিত করা সম্ভব নয়। এদিকদিয়ে হুমায়ুন আজাদ তাদের থেকে বহুগুনে সৎ। বাংলাদেশকে শিশুদেশ মনে করে তাকে সুন্দর কথায় ভোলানোর কোনো চেষ্টা করেন নি। যা মনে হয় সেটাই বলেছেন।
@সফিক,
একমত।
– ফলাফলের ব্যাপারে মোটামুটি একমত। তবে দুই ভাই এর মূল্যায়নে আমার ধারনা কিছুটা ভিন্ন। জাফর ইকবালের ধারনায় সরলতা অতি মাত্রায় প্রকট হলেও শস্তা জনপ্রিয়তার লোভে তিনি ইচ্ছেকৃতভাবে ভুল কিছু শিক্ষা দেন বা জেনেশুনে সত্য গোপন করেন এমন মনে হয় না, যেটা হুমায়ুন সাহেবকে মনে হয়। হুমায়ুন সাহেব যেভাবে জনপ্রিয়তা পাওয়া সম্ভব সবই করতে রাজী ছিলেন। কখনো পাখীর মুখে তুই রাজাকার ডাক শুনিয়ে, কখনো আবার হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলাকে স্বাভাবিক প্রতিপন্ন করা সবই উনি অবলীলাক্রমে একই হাতে লিখতে পারতেন। সব পক্ষকে একই সাথে খুশী রাখার বিরল গুন ওনার ছিল, শুধু শেষ জীবনে এসে দেওয়াল উপন্যাসের ক’টা অধ্যায় লিখে ফেঁসে যান।
জাফর ইকবাল স্যারের লেখায় থাকে তীব্র আবেগের বিচ্ছুরন, তবে গভীর বাস্তববাদী বিশ্লেষনের অভাব মাঝে মাঝেই মারাত্মক মাত্রায় প্রকট। আমি অবাক হয়ে গেছি চাকরি বাকরি পাওয়ার লোভে ছেলেপিলে শিবির করে এমন ধারনা উনি সিরিয়াসলি বিশ্বাস করেন পড়ার পরে। ওনারও আসলে বাংলাদেশের আর দশজন সাধারন ধার্মিকের মতই অবস্থা; আমার ধর্মে কোনই সমস্যা থাকতে পারে না, যা সমস্যা দেখা যায় তা সবই কিছু অশিক্ষিত মোল্লা ধর্মব্যাবসায়ীদের দোষ, আমার বাবাও শহীদ কিন্তু উনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন…
জাফর স্যারের এ জাতীয় আবেগময় লেখায় ভাল মন্দ দুটো দিকই হয়েছে। নুতন প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়ে অন্তত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আকৃষ্ট হয়েছে, মন্দ দিক হল তারা সাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি বলতে কেবল জামাত শিবির নামক এক রাজনৈতিক দলকে বুঝছে যাদের রাজাকারির কারন হল ধর্ম ভাংগিয়ে টাকা পয়সা ক্ষমতা লাভ করা। এই বদ্ধমূল ধারনা সমস্যার মূল এড়িয়ে সম্পূর্ন ভুল কনক্লুশনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
স্যারকে পরামর্শ দেবার মত উপায়ও আমার নেই, ধৃষ্টতাও নেই; নইলে বলতাম ভাল করে তত্ত্বীয় ধর্মতত্ত্ব পড়াশুনা করুন, ‘৭১ সালে জামাত শিবির বাদে আর কারা কিসের কারনে রাজাকারি দর্শনে বিভোর ছিল তা জানার চেষ্টা করেন, আজকের দিনেও এই চক্রের মানসিকতা কতটা পরিবর্তন হয়েছে তা নিরপেক্ষ ভাবে জানেন, রাজাকারদের লেখা আত্মজীবনি পাঠ করে তাদের মুখেই শোনেন কেন তারা রাজাকারি করেছিল, কেন আজো তারা তাদের দর্শনে কোন ভুল ছিল বা আছে বলে মনে করে না। উদাহরন স্বরুপ মেজর জলিলের পরিবর্তিত রাজনৈতিক দর্শন পড়েন, কি কারনে উনি হাফেজ্জী হুজুরের মত পরীক্ষিত রাজাকারের সাথে জোট বাঁধতে দ্বিধা করেননি এসব কোন কিছুই বিচ্ছিন্ন বা ব্যাতিক্রম নয়।
জাফর স্যাররা কিছুতেই বোঝেন না যে ;৭১ এর জামাতি নৃশংসতা এই আমলের শিবির/স্বাধীনতা চেতনা বিরোধী কর্মীদের কাছে ধর্মযুদ্ধে কাফের নিধনের সমতূল্য, যেমনটা ছিল নকশালীদের কাছে শ্রেনীশত্রু নিধন স্বাভাবিক ঘটনা। জামাতি নৃশংসতার গান গেয়ে কোন লাভ হবে না। আরো ২০ বছর পর যখন বদর নেতারা সব এমনিতেই অক্কা পাবে তখন কি বলে নুতন প্রজন্মের শিবির কর্মীদের নিষেধ করা যাবে? ৬০ বছর আগে তোমাদের দলে বেশ কিছু খুনে নেতা ছিল তাই এই দল করো না?
যে কারনে সব মুসলমান দেশেই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, ইসলামী শাসনের প্রতি লোকে দূর্বল হয় সেই একই কারনে জামাতি, হিতা এদের প্রতিও লোকে আকৃষ্ট হয়, সরাসরি সমর্থন করা দৃষ্টকটূ মনে হলে গোপন সহানুভূতি জানায় এই সরল কথা কেউ ইচ্ছে করে না বুঝতে চাইলে আর কিভাবে বোঝানো যাবে? জাফর স্যারের মনে হয় না যেসব মুসলমান প্রধান দেশের উদাহরন দিয়েছেন সেসব দেশের কথাও জানা আছে বলে।
লোকের সত্য এড়ানোর ক্ষমতা দেখলে মাঝে মাঝে মায়াই লাগে, মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ ফুদ্ধ নিয়ে লেখালেখিও আসলে সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সমর্থক হলে, তাদের ভাই ডাকলে তাকে পাল্লা দিয়ে গালিগালাজের বহর বয়ে যায়, তবে যে শিক্ষা থেকে সে এই ব্রাদারহুডের ধারনা পায় সে শিক্ষার নামে টুঁ শব্দও করে না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কিছুতেই মানা যাবে না, তবে ধর্মে কোন রকমের সমস্যা আছে তাও আবার মানা যাবে না। দেশ থেকে পিটিয়ে মেরে জামাত শিবির খতম করার শপথ নেওয়া হবে; জ্বলন্ত ফলাফল তো হাতেনাতেই দেখা গেল।
হুমায়ুন আজাদ আসলেই ছিলেন ব্যাতিক্রমী, ওনার লেখা খুব ভাল না লাগলেও শুধুমাত্র সোজাসুজি কথা বলার স্বভাবের জন্যই ওনাকে ভাল লাগত।
@আদিল মাহমুদ,জাফর ইকবাল আর হুমায়ুন আহমেদকে এক পাল্লায় ফেলা অবশ্যই ভুল হবে। হুমায়ুনের প্রতিভা সম্ভবত অনেক বেশী কিন্তু সেই সাথে ইন্টেলেকচুয়ালি সে অনেক বেশী অসৎ। জাফর ইকবালকে ইন্টেলেকচুয়ালি অসৎ মনে হয় নি কিন্তু মনে হয়েছে যে তিনি ৭১ এর যুদ্ধাপরাধ এবং বিশেষ করে জামতের ভুমিকাকে অবসেসিভলি টারগেট করার কারনে তার নিজের স্বীকারক্তি অনুযায়ীই অনেক সময়ে বৃহত্তর দৃষ্টিতে দেখতে পারেন না।
কিন্তু “ওনারও আসলে বাংলাদেশের আর দশজন সাধারন ধার্মিকের মতই অবস্থা; আমার ধর্মে কোনই সমস্যা থাকতে পারে না, যা সমস্যা দেখা যায় তা সবই কিছু অশিক্ষিত মোল্লা ধর্মব্যাবসায়ীদের দোষ, আমার বাবাও শহীদ কিন্তু উনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন…” এটাও কিন্তু আমার মনে হয় নি। তার জীবন এবং লেখালেখিগুলো থেকে আমার কিন্তু মনে হয়েছে তিনি ধর্মে গভীর বিশ্বাসী নন। তার ছোটদের লেখা উপন্যাসগুলোয় অধিকাংশ সময়েই মোল্লা টাইপের ক্যারেক্টারদের খুব ছোট করে উপস্থাপন করেছেন। নানারকম ধর্মীয় সংষ্কারকে বিভিন্নভাবে বিদ্রুপ করেছেন। তার লেখাগুলো যেহেতু বাংলার তরুন-কিশোরদের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয়, সেহেতু তরুনদের মধ্যে দ্বিধা সৃষ্টি করতে, ধর্মকে কোশ্চেন করাতে নিশ্চই তার ব্যপক ভূমিকা আছে।
আসলে আমার মনে হয় তিনি প্রথমেই স্ট্র্যাটেজিক্যালী ঠিক করেছিলেন যে ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঘাত না করে বাংলাদেশে মানবিকতার প্রচার এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারকে এগিয়ে নেবেন। যুদ্ধাপরাধের বিচার এ পর্যন্তু যতটুকু এগিয়েছে সেটাতে তার একক অবদান নি:সন্দেহে অনেক বড়ো। কিন্তু দেশে মানবিকতা আর মুক্তচিন্তার স্থায়ী বীজ রোপনে তার সাফল্যকে নিশ্চই প্রশ্ন করা যায়।
@সফিক,
জাফর ইকবালকে আমার ভাল লাগে তিনি অনেক বড় ইন্টেলেকচুয়াল, খুব বড় বড় নুতন কোন তত্ব কথা শুনিয়ে জাতির বিবেক জাগ্রত করেন এসব কারনে নয়; ভাল লাগে তার সহজ সরল বেপরোয়া কথাবার্তার জন্য। এটা বুঝি যে কিছু বিষয়ে তার অষ্পষ্টতা থাকতে পারে (এর কারন মনে হয় জীবনের এক উল্লেখযোগ্য সময় প্রবাস যাপন) কিন্তু তিনি যা বোঝেন তা ষ্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করেন, অগ্রজের মত সিজন মত রূপ বদলে ফেলেন না। যার কারনে হুমায়ুন সাহেবও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক লেখালেখি করেও, তুই রাজাকার গাল শিখিয়েও কখনোই মৌলবাদীদের হামলার শিকার তো হননি, এমনকি হুমকিও শুণেননি, পরের দিকে মৌলবাদীদের নয়নের মনি হয়ে উঠেছিলেন। অন্যদিকে জাফর ইকবালের বাড়িতে বোমাও পড়েছে, এক সময় অষ্টপ্রহর পুলিশ পাহারায় দিন কাটিয়েছেন, বোমা পড়ে সেই পুলিশী পাহারা অবস্থাতেই।
-আসলেই তাই। আমি আসলে তাকে একটু বেশীই জেনারেলাইজ করে ফেলেছিলাম। উনি এই পর্যন্ত কোন লেখাতেই আসলে মৌলবাদী ইস্যুতে ধর্ম দায়ী কি দায়ী না এ লাইনেই কোন কথা বলেননি। যে্মনটা সব ধার্মিকই বিশ্বাস করতে চায় যে ধর্মে কোনই সমস্যা নেই, কিছু লোকে ধর্মজ্ঞানের অভাবে কিংবা ব্যাবসার খাতিরে গোলমাল করছে এমন কোন কথা তিনি বলেন না। উনি যতদুর মনে হয় লোকের অনুভূতির স্বার্থে এ সম্পর্কে কোনই কথা বলেন না, কারন সত্য বলতে গেলে অনুভূতিতে আঘাত দিতেই হবে।
আসলেই তার বেশ কিছু লেখা, বিচ্ছিন্ন মন্তব্যে মনে হয় যে তিনি নাস্তিক না হলেও জগতে কোন ধর্মই ১০০% নিখুত এমন বিশ্বাস করেন না। জন্মসূত্রে মুসলমান পরিচয় বাদে মনে হয় না তার ধর্মকর্মে খুব বেশী উতসাহ আছে বলে।
কিন্তু ধর্মকে কোশ্চেন করতেও তিনি শিখিয়েছেন বলে আমার মনে হয় না। তিনি বিজ্ঞান মনষ্কতা, সাম্প্রদায়িকতা/মৌলবাদ ঘৃনা করতে শেখান; তবে সরাসরি ধর্মের পেছনে লাগার মত ইন্ধন দেন মনে হয়নি।
আসলেই তিনি গভীর ভূমিকা রাখলেও দীর্ঘ মেয়াদে সেই ভূমিকার ইম্প্যাক্ট তেমন থাকবে না, হুজুগে বাংগালী সবসময়ই আবেগ প্রবন কথায় তাড়িত হয়, সাথে আছি, স্যালুট এই জাতীর কমেন্ট করে…
আছে, আছে। ব্লগেই এরকম মোল্লা আছে তবে আমি এই কথাটার মাঝে তার গভীর জ্ঞানের পার্টটা নিয়েই সন্দিহান। আর সে কারনেই মনে হয় এরকম গোজামিল সম্ভব হয়েছে। 🙂
@হোরাস,
😀
ব্যাতিক্রম সব সময়ই কিছু থাকে। আজকাল আওয়ামী ওলামা লীগও আছে 🙂 । ধর্মকর্ম করার মাত্রার সাথে তাদের রাজনৈতিক সমর্থন গ্রাফে বসানো গেলে পরিষ্কার দেখা যাবে যে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে পিছায় আছে।
যার কথা বললেন সেই বেচারার অবস্থা কিছুদিন দেখছিলাম, খারাপই লাগে। যেই ভাবে রাজাকারের হাতে সাচ্চা মুসলমান হওয়ার সবক খাইতে হয় ওনারে আর মুক্তিযুদ্ধের রাজাকারি ইতিহাস আর বিশ্লেষন হজম করতে হয়।
সব দিকই রক্ষা করতে চাইলে এক পর্যায় এই হাল হতে বাধ্য, সঙ্ঘাত হবেই। একই সাথে ধর্মনিরপেক্ষ শাসনতন্ত্র আর পূর্নাংগ ইসলাম কায়েম করার স্বপ্ন দেখতে পারে হয় যার ইসলাম সম্পর্কে মৌলিক কোন ধারনাই নাই, আর নাহয় যে চরম ভাবে বিভ্রান্ত, আর নাহয় যে জেনেশুনে সব দিকই রক্ষা করতে চায় সে।
আমার কেনো জানি এখনকার বাংলাদেশে এইসব হিজবুত তাহরীর ছেলেমেয়েদের সাথে ৬০-৭০ দশকের বিশ্বসমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী ছেলেমেয়েদের অনেক মিল আছে মনে হয়। অধিকাংশ মানুষই জ্ঞান সচেতন হবার পরে জীবনে একটা higher purpose খোজে। একটা উদ্দ্যেশ্যবিহীন বিশ্বে জীবন কাটাচ্ছি, এই ভয়াবহ ভাবনার মুখোমুখি হতে অধিকাংশ লোকই চরম ভয় পায়।
যেইসব ছেলেমেয়ে মনে করে বাংগালী-বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেয়ে বিশ্ব ইসলামী জাতীয়তাবাদ অনেক বড়ো এবং গুরুত্বপূর্ন, তাদের কাছে জাফর ইকবালের লেখা কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে কিনা সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। যারা মনে করে বাংলাদেশের চেয়ে বিশ্ব খেলাফত বেশী গুরুত্বপূর্ন, তাদের কাছে দেশপ্রেমের বাণীর কি এফেক্ট হতে পারে? জাফর ইকবাল খুবই আশ্চর্য হয়েছেন যে একজন তরুন বাংলাদেশী কেমন করে প্রেম ভালোবাসা-দেশপ্রেম এসব ফেলে ইসলামী হুকুমত এর অনুসারী হতে পারে। আর সেইসব বিশ্ব ইসলামী হুকুমত এর ছেলেরা খুবই আশ্চর্য হয় যে আল্লাহর হুকুমের চিরন্তন বিশ্বজিহাদ ফেলে সামান্য ক্ষনিকের প্রেম-ভালোবাসা-দেশপ্রেমের প্রতি মানুষ কেমন করে আশক্ত হতে পারে।
@সফিক,
– আসলেই তাই। এই ব্যাপারটা বুঝতে ধর্মওয়ালারা, উদাসীন ধার্মিকরা, এমনকি ধর্মহীনরাও মোটা দাগে ভুল করেন। তারা সকলেই চিন্তা করতে ভালবাসেন (এমন চিন্তাধারার ইন্টারেষ্ট এক এক গ্রুপের ভিন্ন) যে এসব উগ্রবাদী দলে লোকে টাকা পয়সা ক্ষমতার লোভে ভেড়ে। জাফর ইকবাল স্যার পর্যন্ত এই দলে পড়েন। সমস্যার মূল কোথায় সেটা বুঝতেই ভুল করলে সমাধান কোনদিন সম্ভব নয়।
এটা বুঝতে হবে যে কোন অসত উদ্দেশ্যে নয়; তারা প্রকৃত ইসলামী ব্যাবস্থা কায়েম করে সুশাসন নিশ্চিত করে সব সমস্যার সমাধান হবে এ উদ্দেশ্যেই এসব উগ্রবাদী সংগঠনে আকৃষ্ট হচ্ছে।
– অনেকে প্রশ্ন করেন কোন ধর্মেই সন্ত্রাস সমর্থন দেয় না, বিনা যুদ্ধে নিরীহ মানুষ হত্যার নির্দেশ দেয় না ইত্যাদী। নকশাল জাতীয় সংগঠনের ছেলেপিলে যেমন শ্রেনী শত্রু খতমের নামে নির্বিকার ভাবে যাকে ইচ্ছে খুন করেছে তেমনি এসব উগ্রবাদী ধর্মীয় সংগঠনও সাচ্চা ধর্মীয় সমাজ কায়েমের লক্ষ্যে তাদের সাথে যারাই একমত না হবে তাদেরই খতম করে দেওয়াতে অন্যায় কিছু দেখবে না। জাফর ইকবাল স্যা্রের মত মডারেটরা এই সামান্য ফ্যাক্ট ধরতে পারেন না বলে অবাক হন কেমন করে বুদ্ধিজীবি হত্যার মত ঘটনা ঘটানো নিজামী মুজাহিদ চক্রের পেছনে নুতন প্রজন্মের আধুনিক ছেলেমেয়ে জুটে যায়। তারা কি এসব ইতিহাস জানে না? জানে ঠিকই, বাংগালী হত্যা, বুদ্ধিজীবি হত্যা এসবের ব্যাখ্যা তাদের কাছে ভিন্ন রকমের, ইসলামের শত্রু, মুশরিক ভারতের দালাল হত্যায় এই ধারার নুতন প্রজন্মও অন্যায় কিছু দেখে না, সমর্থনই দেয়।
৬০ এর দশকে শিক্ষিত নুতন প্রজন্মের মাঝে বামপন্থা চরম জনপ্রিয় ছিল। কারন তাদের কাছে সেটাই ছিল মানব মুক্তির শ্রেষ্ঠ উপায়। বামপন্থা আজ কার্যত মৃত। এই যুগে মুসলমান প্রধান দেশে স্বাভাবিক ভাবেই ইসলাম কায়েম বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে।
– সত্যি কথা। স্যারের এই লেখা পড়ে আমি নিশ্চিত একজন শিবির কর্মীও বিন্দুমাত্র প্রভাবিত হবে না। যার মাথায় ইসলামী জাতীয়তাবাদ, খিলাফত এসব ঢুকে তার মাথা থেকে এসব বার করা আসলে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কৌশল হতে হবে নুতনরা যেন এই ফাঁদে পাড়া না দেয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা। স্যারের লেখা এই ডিরেকশনে নয়। উনি কিভাবে যেন ধরে দিয়েছেন যে ‘৭১ এর জামাতের ভূমিকা আবেগময় সুরে বয়ান করলেই এই প্রজন্মের শিবির কর্মীরা ভুল বুঝে সুড় সুড় করে ইসলামী রাজনীতি বাদ দিয়ে দেবে। আমার মনে হয় স্যারেরও তত্ত্বীয় ধর্মতত্ত্ব আরো ভাল করে পড়া দরকার, এরপর দরকার বাজারে প্রচলিত রাজাকার আল বদরদের আত্মজীবনি পড়া, মেজর জলিলের মত বীর মুক্তিযোদ্ধার রাজনৈতিক আদর্শ কিভাবে ধর্মের সাথে প্যাঁচ খেয়ে রাজাকারদের সাথে ইসলাম কায়েমের লক্ষ্যে জোট বাঁধতে দ্বিধা করে না এসব বুঝতে চেষ্টা করা।
ঠিক কথা কথা বলেছেন ভাই।
আর তা ছাড়া-
নবীজি মুসলমানদের সর্বব্যাধির চিকিৎসার ব্যবস্থা বোখারী শরীফের book 71 এ দিয়ে দিয়ে গিয়েছেন।
কিন্তু অদ্ভুৎ ব্যপার হল একজন ইমান্দার বান্দাও এর উপর আস্থা রাখেননা। তার প্রমান এদের যে কেহই অসুস্থ হোকনা কেন এরা সাথে সাথেই কাফেরদের আবিস্কৃত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি পূর্ণ ঈমান (বিশ্বাষ) এনে এরপর পূর্ণমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে যান। যে নবিজীর কথায় জীবনটা পর্যন্ত উড়িয়ে দিতে প্রস্তুত আবার তার দেওয়া চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি ঈমান আনতে পারবনা, নির্ভর ও করতে পারবনা বরং কাফেরদের দেওয়া জ্ঞানের প্রতি বিশ্বাষী হব,তাদের শরণাপন্ন হব-
এটা কত বড় ভন্ডামী?
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
ধার্মিক মননের এই অংশ আসলেই গুরুত্বপূর্ন। ধর্ম সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার মূলে এই মনস্তত্ত্বই কাজ করে।
অদ্ভূত ব্যাপার হল যে আজকাল সাচ্চা ঈমান্দার সাইটেও শুনি যে সব হাদীসই নাকি সহি নয়। সব হাদীসই সহি না হলে কে কিভাবে বুঝবে কোনটা সহি কোনটা জালি? বোখারি সাহেবদের এত সাধ্য সাধনার ফসল আবার এডিট করার অথরিটি ওনারা কিভাবে পাচ্ছেন?
পাচ্ছেন আসলে সেই নিজের সূস্থ বিবেক বুদ্ধি ব্যাবহার করে যেটা ধর্ম থেকে পাননি, পাচ্ছেন আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে। এই সোজা কথা এরপরেও স্বীকার করবেন না।
এ কথাগুলোতো ধর্ম পাগললদের বুঝানো যায় না। তাদের মতে পরিপূর্ণি জীবন বিধান ধর্মে রয়েছে, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মে।
আপনার বিশ্লেষণসহ তথ্যসমুহ বহুল প্রচার প্রয়োজন।
@গীতা দাস,
এই দলের সকলেই পাগল নয়। ইসলাম ধর্মের ইউনিক বৈশিষ্ট্য হল একে পূর্নাংগ জীবন বিধান হিসেবে মানতেই হবে; এর সাথে কোন আপোষ করা যাবে না। এমন অবাস্তব বিশ্বাস দাবী করতে থাকা থেকেই যাবতীয় সমস্যা। কট্টর মোল্লা টাইপ লোকের কথা আলাদা, এরা আধুনিক জ্ঞান মূল্যবোধের অভাবেই সত্য হয়ত বুঝতে পারে না, মুশকিল হল যারা বুঝতে পারে যে ধর্মের সব কিছু পালন করা যায় না তারাও এটা সরাসরি স্বীকার করে না। কারন মুখে স্বীকার করে ফেললেই না আবার পরকালে ভয়াবহ শাস্তি পেতে হয়।
ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা নিয়ে ডবল ষ্ট্যান্ডার্ডও এই দ্বন্দ্বের এক উদাহরন। ধর্মে কোনই সমস্যা না থাকলে, ধর্মে ভাল ছাড়া মন্দ কিছুই না থাকলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সমস্যাটা কোথায়? যিনি ইসলাম পরিপূর্ন জীবন বিধান বলে মনেপ্রানে বিশ্বাস করেন, ইসলামের সবই অবশ্য পালনীয় এবং সেগুলিতে কল্যান ছাড়া অকল্যানের কিছু নেই দাবী করেন তিনি কোন যুক্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রনীতি চাইতে পারেন আমি বুঝি না। আমাদের হাসিনা বুবুর অবস্থাই দেখেন। উনি নাকি শরিয়াও চালু করবেন বলে চিন্তাভাবনা করছেন,আজকাল ইসলাম বিস্তারে উনি চিন্তাভাবনা করেন কিন্তু আবার ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে উনি ভীত। এই মানসিকতাকে কি বলা যায়?
কেবল জামাত শিবিরের ‘৭১ এর ভূমিকার কারনেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি খারাপ? এটা কোন যুক্তিই হতে পারে না। সে হিশেবে দেশে রাজনীতিই তো বন্ধ করা উচিত। জামাত শিবির বাদ দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে তাহলে আপত্তি থাকবে না? হিতার মত দল ঠিক এরই সুযোগ নিচ্ছে।
আদিল সাহেব,
বাংলাদেশে যে আধুনিক সভ্যতার মৌলিক বিষয়গুলো অনুপস্হিত সেটা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপীঠের গুরুদেবরাও স্বীকার করবেন না। এর কারণ আছে। তারা এসব জানলে তো বলবেন। তারা ইউরোপে ডক্টরেট করতে এসে আদমদের সাথে টুইন বেডে ঘুমিয়ে দেশে স্কলারশীপের টাকা বাঁচিয়ে এ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরীতে ফেরত গিয়ে ইউরোপ আমেরিকার অনেক গাল গপ্পো করলেও পশ্চিমের সভ্যতার মৌলিক বিষয়গুলো শিখে যান না বিধায় সেসব ব্যপারে মুখ খুলেন না। তাদের আবার স্যার স্যার বলতে অজ্ঞান হওয়া বিশ্ব বিদ্যালয় পাশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের কথা বলতে গেলে অনেক কথাই বলতে হবে। এদের হাতে বাংলাদেশের শিশু কিশোরদের ছেড়ে দেয়া হয়। বলাই বাহুল্য এসব শিক্ষকদের কাছে দর্শন যুক্তির চাইতে জিপিএ অনেক গুরুত্বপূর্ন এবং এদের বেশীরভাগেরই দর্শন এবং যুক্তি সম্পর্কে স্বচ্ছ কোন ধারণা নেই। বিশ্বাস না হলে এদের কাউকে এসব বিষয়ে কয়েক লাইন লিখতে বলুন, দেখবেন যে এদের লেখা থেকে কীট পতঙ্গ বেড়িয়ে আসছে। এরা ধর্ম শিখালেও যা না শিখালেও তা কারণ এদের হাতে শেষ পর্যন্ত মৌলবাদী তৈরী না হলেও অমানুষ ঠিকই তৈরী হয় যারা তাদের ‘প্রাচ্যের লজ্জা’ নামক মক্কায় দাড়িয়ে বিশ্বজিতদের এমনভাবে পিটিয়ে মারে যা জন্তুদের করা হয় না।
বাংলাদেশের যে অবস্হা সেখানে পুরো বাংলাদেশ নাস্তিকে পরিনত হলেও বাস্তবতার কেন পরিবর্তন হবে না। বাংলাদেশে একজন সাম্প্রদায়িক এবং নাস্তিক দুজনই ফরমালিন মেশানো খাবার খান অথবা দুজনই খাবারে ফরমালিন মেশান।
সামরিক এবং বেসামরিক সরকারী চাকুরীজীবিদের বিষয়ে ভাল জানি কারন আমি নিজেই ঐ শ্রেনীর প্রতিনিধিত্ব করি। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে প্রকাশ্যে নামায পরতে অস্বীকৃতি জানানোর নজীর নেই। সময় হলেই সবাই একসাথে নামায পড়েন – সমস্যার কিছু নয়। কিন্তু জামাত ক্ষমতায় গেলে এর বিরোধিতা করবেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তর : না । এর অর্থ বাংলাদেশে অন্তত সামরিক বাহিনী থেকে জামাত অথবা মৌলবাদীদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
বাংলাদেশে অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর অবস্হাও কম সাম্প্রদায়িক নয় , একই অবস্হা। এসব কমিউনিটির ডীপ লেভেলে চুপি চুপি ঢু মারলেই জানতে পারবেন।
@সংশপ্তক,
দ্বিমত নেই।
@গীতা দাস,
সম্প্রদায়ের ধারনা যেখানেই আছে সেখানে সাম্প্রদায়িকতা মাত্রা ভেদে থাকবেই, এর প্রকাশ সব সময়ই ক্ষতিকর এমন নয়। যেমন আমি প্রথম জেনারেশন ইমিগ্র্যান্ট হিশেবে যথেষ্ট কমিউনাল নিজের স্বার্থেই, কারন এখানে একজন আমেরিকান বা ইউরোপিয়ানের সাথে শেয়ার করার মত খুব বেশী কিছু আমার নেই। আমাকে সোশাল লাইফের জন্য বাংগালীই বার করতে হয়, এতে তেমন কিছু করার নেই। একই কথা একজন আমেরিকান ইউরোপিয়ানের জন্যও খাটবে। পরের জেনারেশনগুলির এই সমস্যা থাকবে না।
সমস্যা হবে আমরা যদি পরের জেনারেশনকে শিখিয়ে যাই যে অমূক জাত তোমার জাতিগত শত্রু, অমূকের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না, তোমার ধর্মকে বড় করে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এসব। সজ্ঞানে এসব শিক্ষা দেওয়ার মধ্যেই আপত্তির মূল কারন।
@সংশপ্তক,
দেশে আমাদের ডিপার্টমেন্টে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক ডক্টরেট করা শিক্ষক ছিলেন, এই নিয়ে তাদের বেশ গর্বও ছিল। একবার ডেনমার্ক থেকে এক প্রজেক্টে কাজ করতে আসা আরেক অধ্যাপক বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনায় মুখ ফসকে বলেই ফেলেছিলেন ওয়াট দ্যা বাষ্টার্ডস আর ডুয়িং ফর দ্যা কাউন্ট্রি?
পশ্চীমের থেকে কিছুই শেখা না ঠিক নয়। শেখে ভ্যালেন্টাইন দিবস পালন, আইফোনের লেটেষ্ট মডেল, ব্র্যান্ডের স্যুট পরা এসব।
শুধু আস্তিক নাস্তিক দিয়ে যুক্তি মনষ্কতা প্রমান হয় না। ভয়াবহ নাস্তিককেও দেখেছি কুসংস্কারে বিশ্বাসী হতে। ভন্ডামি ভড়ং এ কেউই কম যায় না।
সামরিক বাহিনীর ইসলামী করন যতটা জানি জিয়ার আমলেই শুরু হয়েছিল। অনেক আগেই শুনেছিলাম অফিসারদের প্রমোশনের পরীক্ষায় ২৫ নম্বরের আবশ্যিক ধর্মশিক্ষা যোগ করা হয়েছে। ধর্মের ঘনঘটা যেখানে চলে সেখানে মৌলবাদের অনুপ্রবেশ অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। বিডিআর বিদ্রোহে এই তত্ত্ব জোরেশোরে শোনা গেলেও বিশ্বাস করার মত প্রামান্য কিছু পাইনি। তবে সেনাবাহিনী থেকেই স্বীকার করা হয়েছে যে সেনাবাহিনীর ‘ধর্মান্ধ’ অংশ বলে কিছু আছে। ধর্মান্ধ বলতে ঠিক কি বোঝায় কে জানে।
সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব থাকলে সাম্প্রদায়িকতাও কম বেশী থাকবেই। এর ঐতিহাসিক ব্যাকগ্রাউন্ড এত গভীর যে এসব যেতে আরো বহু সময় লাগবে। বিশেষ করে অন্যরা সাম্প্রদায়িক হলে অপরদেরও টিকে থাকার খাতিরেই এক সময় সাম্প্রদায়িক হতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের বিরুদ্ধে সরাসরি সাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা আর কে বা কারা দেয় নিশ্চিত নই। ভারতেও সাম্প্রদায়িকতা ভালই আছে, এর কারনও ঐতিহাসিক, পুরোপুরি বা অন্তত সহনীয় মাত্রায় যেতেও সময় লাগবে। সে দেশের সরকার কি স্কুলের বই ছাপিয়ে কচি ছেলেপিলের ইসলামী বিশ্বাস কিংবা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন শিক্ষা দেয়?
আমেরিকা ইউরোপে তো সব সম্পদায়ের লোকেই আছে, ইমিগ্র্যান্ট বলেন আর ২/৩ জেনারেশন পুরনো বলেন। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বিরা এসেছে আরো আগে। তারাও সকলে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে। কিন্তু তাদের মাঝে আর কারা কারা মূলধারার ধর্মাবলম্বিদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা স্কুল খুলে শিক্ষা দেয় বলতে পারেন? এটা শুধু আমেরিকা ইসরাঈলের হামলাবাজি দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায় না।
@আদিল মাহমুদ,
লন্ডনে ৩য় প্রজন্মের একজন চীনা এবং একজন উপমহাদেশীয় মুসলিমের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে – চেহারা যাই হোক সেই চীনা মূলধারার ধর্ম নিরপেক্ষতায় জীবনযাপন করছে এবং উপমহাদেশীয় জিহাদী খাতায় নাম লিখিয়ে আফগানিস্তানে চলে গেছে। ধর্মকে যে অনেকে ভাইরাসের সাথে তুলনা করে আমি সেটাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে বংশগতির সাথে তুলনা করবো। প্রকৃত জীনগত বৈশিষ্ঠ সমূহ যেমন অনুকুল পরিবেশে আত্মপ্রকাশ করে , সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সঞ্চারিত হয় এবং দাপটের সাথেই ঠিকে গিয়ে বংশবিস্তার করে। এটাকে সংস্কৃতির প্রাকৃতিক নির্বাচন বলা যায়।
লন্ডনের মুসলিম পরিবারে মৌলিক পর্যায়ে উপমহাদেশীয় পরিবেশই বিরাজ করে। ইউসিএল কিংবা ক্যাম্ব্রিজ শিক্ষিত গৃহকর্তা হয়তো মদ নারী ভালবাসেন কিন্তু বাসায় ফিরে সন্তানদের মদে টলটল চোখে ঠিকই বলেন যে , সত্যিকারের ইসলামী সমাজ ব্যবস্হায় প্রকৃত মুক্তি লুকায়িত আছে , আরো আছে সকল সমস্যার সমাধান। আমার মত অনেকেই এসব সচক্ষে প্রত্যক্ষ করছেণ । সেই অক্সফোর্ড সন্তান বড় হয়ে তার নাস্তিক শেতাঙ্গ বান্ধবীকে গর্ভবতী বানিয়ে ঠিক পরের দিন সুইসাইড বোমায় আত্মাহুতি আরো দশজনকে মেরে।
এসব দেখে অনেক অবাক হলেও , বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে খুবই স্বাভাবিক। প্রাকৃতিক নির্বাচন কেবল ডি এন এর উপর কাজ করে এমন মনে করাটা ভুল। প্রকৃতির প্রতিটি দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য বস্তু(জীব ও জড়)এবং তাদের বৈশিষ্ট সমুহকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমেই প্রতি নিয়ত টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সারভাইবাল অব ফিটেস্ট সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও সমান প্রযোজ্য । যে সংস্কৃতির সবচেয়ে বেশী বাহুবল , পৃষ্ঠপোষকতা আছে সে সংস্কৃতিই প্রকৃতিতে টিকে যায়। জৈনরা কিংবা বৌদ্ধরা ভারতবর্ষের সবচেয়ে পুরোন সম্প্রদায়গুলোর একটি কিন্তু তাদের চেয়ে কয়েক হাজার বছরের নবীন মুসলমানদের সংখ্যা ভারতবর্ষে এদের চেয়ে বহুগুনে বেশী। বৃটিশরা না আসলে হয়ত হিন্দুরাও বিলুপ্ত হয়ে যেত। ভারতবর্ষের সরকারী ভাষা হত ফারসী যা এই সেদিন ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল ।
অতএব, ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতাকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখলে দেখবেন যে , এসব কিছুই সারভাইভাল কৌশল যা প্রকৃতিরই অংশ এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন কাউকে দয়া দেখায় না , বরই নিষ্ঠুর এবং প্রবল প্রতাপশালী। প্রকৃতির ৯০% উপর জীব এ পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে গেছে । মানুষও একদিন হবে । তাতে প্রকৃতির কিছু আসবে যাবে না। আমরা যদি টিকে থাকার কৌশল রপ্ত না করতে পারি প্রকৃতি আমাদের রক্ষা করবে না । একেকটি প্রজাতির একেক রকম টিকে থাকার কৌশন এবং শেষ পর্যন্তই SURVIVAL OF THE FITTEST , শুনতে ভাল লাগবে না যদিও অনেকের।
^^^^ পূনশ্চ: প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ যখন বলেছিলেন যে সব কিছুই নষ্টদের দখলে চলে যাবে , তিনি বিজ্ঞান বুঝেই একথা বলেছিলেন কারণ প্রকৃতিতে তথা প্রাকৃতিক নির্বাচনে ‘দুঃখজনকভাবে’ দুষ্টদেরই টিকে থাকার কৌশল সবচেয়ে বেশী কার্যকরী বলে প্রমানিত। :-s
@সংশপ্তক,
– কথাটা বেশ পছন্দ হয়েছে। মানবতা ফতা বাদ দিলে আসলে জোর যার মুল্লুক তার নীতিই প্রাকৃতিক নির্বাচনের নীতি, আমরা আইনের শাসন, মানবতা ফতা এসব জোরদার করে প্রাকৃতিক নির্বাচন বড় মাত্রায় ঠেকিয়ে রাখছি।
উপমহাদেশে জৈন কিংবা বৌদ্ধরা সবচেয়ে পুরানো হলেও তারাই মনে হয় ধর্ম প্রচারে সবচেয়ে পিছিয়ে। সত্য বলতে হিন্দু বা সনাতন ধর্মাবলম্বিরাও অনেকই পিছিয়ে, তারা প্রাচীন বা মধ্যযুগে ধর্ম প্রচারের স্বার্থে অন্য দেশ দখলও করেনি, আজকের দিনেও পশ্চীমা বিশ্বে তারা এগ্রেসিভ ধর্ম প্রচারের ধারে কাছেও নয় যেমনটা ইসলাম কিংবা খ্রীষ্ট ধর্মপ্রচারকরা করে থাকে। ইহুদীরাও মনে হয় প্রচারে পিছিয়ে আছে অনেকই। আমেরিকায় ৬০ এর দশকে কিছুদিন হরে কৃষ্ণার দল অবশ্য বেশ হিট করেছিল। হুজুগ কাটতেই সে ফ্যাশন চলে গেছে। ইসকনের প্রচার, রমরমা সেরকম দেখি না।
সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে এগ্রেসিভ হওয়া নিয়ে ঘটে কিছু থাকলে সতর্ক থাকা উচিত। মূল ধারার লোকের বিরুদ্ধে মাইনরিটি হয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো উদারতার স্বার্থে কতদিন ভাল মানুষের মত হজম করে সেটা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না।
@আদিল মাহমুদ,
শক্তি কখনও কখনও বড় দূর্বলতা হিসেবে আবির্ভূত হয়। ইতিহাসের বড় বড় সভ্যতা এভাবেই ধ্বংস হয়ে গেছে । রোমান সভ্যতার পতন ঘটে উত্তর থেকে আসা বর্বর জার্মানিক উপজাতীদের হাতে। প্রাকৃতিক নির্বাচন সবসময় উদারতার চাইতে ইস্পাত কঠিন দৃড়তাকে এ পর্যন্ত সমর্থন দিয়ে আসছে। সভ্যতা যখন বাস্তবে দূর্বলতা হিসেবে আবির্ভূত হয় , প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে দেয় যে , Your time is up ! I ইউরোপে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বর্তমান নেতিবাচক , যা প্রাকৃতিক নির্বাচনের সাথে সাংঘর্ষিক । ৪০ বছর পর , পেনশনাররাই হবে ইউরোপের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। বৃদ্ধ জনগোষ্টী নিয়ে যুদ্ধে তো বটেই উৎপাদন ( রাজস্ব!) কার্যক্রমে যাওয়ার মত লোকবল তাদের আর থাকবে না। এভাবেই প্রাকৃতিক নির্বাচনে একটা সভ্যাতা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির দিকে যায়। চালাক লোকেরা জন্ম নিয়ন্ত্রন করে , অন্যদিকে বর্বররা জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বাড়িয়েই চলে । শেষ পর্যন্ত চালাক লোকের সংখ্যা শূন্যে গিয়ে ঠেকে । প্রজননে পিছিয়ে পড়া মানেই প্রাকৃতিক নির্বাচনের কাছে একটা বড় মাইনাস খাওয়া যেটা বিগত কয়েক মিলিয়ন বছরে প্রমানিত। আজকের এই কৃত্রিম ‘মানবতাবাদের যুগ’ যার এক শতাংশও নয় !
@আদিল মাহমুদ,
সংস্কৃতি নিয়ে যা বলছেন তা একটু ব্যখ্যা করবেন নাকি?
@কাজী রহমান,
মুসলমান সমাজে সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রন হয় ধর্ম দিয়ে। অন্য সব সমাজেও কম বেশী ধর্মের ভূমিকা আছে।
ইসলাম ধর্ম পূর্নাংগ ভাবে মানতে গেলে পাক্কা মুসলমান ভাইদের বিধর্মী নিয়ন্ত্রিত সমাজে মাইনরিটি অবস্থায় থাকা কতদিন সম্ভব? দারুল ইসলামের তত্ত্ব তো জানেন। কোন ইমানদার ভাই কি বখতিয়ার খিলজীর বাংলা বিজয় খারাপ হয়েছে বলবেন? সত্য বলতে আমি কোন ধর্মকে শ্রেষ্ঠ বলে মনেপ্রানে বিশ্বাস করলে আমিও এই চেষ্টাই করতাম; মিষ্টি কথায় না পারলে শক্তি দিয়ে হলেও অপরদের যাদের বাতিল বা ভুল ধর্মের মনে করি তাদের সত্য ধর্মে আনার দায়িত্ব পালন করতাম। অন্যদের পাপের পথের যাত্রী, চিরকাল দোজখে পুড়বে বিশ্বাস করলে তাদের ভালর জন্যই হেদায়েত করে সত্য পথে আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতাম। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই।
এবার একটি সংবাদ দেখুন, PM go and ‘let the Muslims take over’
এই অসি আলেম কিন্তু পাকিস্তান আরব থেকে আসা ইমিগ্র্যান্ট নন,খাস জন্মসূত্রে অষ্ট্রেলিয়ান, কনভার্ট মুসলমান, মাদ্রাসা পড়ুয়া আমিনী হুজুর মার্কা মোল্লা নন, অষ্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা আর্কিটেক্ট। এমন ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকে এহেন দাবী কেন করেন?
এটি কি বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা? অনেকে তেমনই দাবী করতে পারেন তবে বিচ্ছিন্ন মোটেই নয়। লিঙ্ক রাখিনি, বছর দুয়েক আগের ঘটনা মনে হয়; সংবাদ হল প্রেসিডেন্ট ওবামা মুসলমান সম্প্রদায়কে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আমাদের দেশে একজন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে এক আধা ধর্মীয় সভায় এই রেফারেন্স তুলে আশাবাদ ব্যাক্ত করা হচ্ছে যে সহসাই একদিন হোয়াইট হাইজে ইসলামের পতাকা উত্তোলিত হবে। ওয়াইট হাউজে অবশ্যই একজন আমেরিকান মুসলমান নির্বাচিত হলে প্রেসিডেন্ট হয়ে আসতে পারেন, ইসলামের পতাকা উত্তোলনের আশাবাদ করার মানে কি? এই ধরনের আশাবাদ আমেরিকার মসজিদে নিজেও বহুবার শুনেছি, ধর্ম সম্পর্কে যখন কোন পড়াশুনা ছিল না, কেবল কয়েক লাইনের কিছু সুরা না বুঝে মুখস্ত করে নামাজ পড়ে আর ৩০ দিন উপোষ থেকে মনে করতাম আমিই ধর্ম ভাল বুঝি, এসব মোল্লারা এসব কি বলে না বলে।
কোন দেশে মাইনরিটি হয়ে সেসব দেশের মূলধারার লোকদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্কুল খুলে সাম্প্রদায়িক বিষ বাষ্প আর কারা কারা ছড়ায়? সব ধর্মেই সাম্প্রদায়িকতা আছে এসব কথার ব্যাবহারিক মূল্য সব সময় বিবেচনায় আনার দরকার পড়ে না।
সুন্দর লেখাটির জন্য ধন্যবাদ…কিন্তু মশাই দেশ নিয়ে তো চিন্তায় পড়ে গেলাম।
@সাগর,
ধন্যবাদ।
চিন্তার কারন আসলেই আছে,শুধু দেশ নিয়েই নয়।