প্রচন্ড রাগ, অসীম ক্রোধ এবং দ্বীধাহীনভাবে গালাগালি করার প্রত্যয় নিয়ে যারা আবারো গার্মেন্টেসে আগুন, এ হত্যাকান্ডের দায় নেবে কে? লেখাটি পড়েছেন, মন্তব্য করেছেন এবং করবেন তাদের সাধুবাদ জানাই আদিল মাহমুদের পক্ষ হতে, আগুন জালানোই ছিলো মূল লক্ষ আর লেখক তাতে সফল। ধন্যবাদ লেখককে তথ্যসমৃদ্ধ এই লেখার জন্য। পরের কথাগুলো পাঠকদের জন্য…

সমগ্র বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অবঃ জয়েন্ট সেক্রেটারি আবু আহমেদ কাদির একদিন আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন যে দেশের সবচেয়ে বড় গুন্ডা কে বা কারা? জবাবটা একটু পরে জানা যাবে…

জাতীয় সংসদ মূলত একটি আইন সভা যেটি বিদ্যমান সংবিধান যাকিনা রাষ্ট্রের সফল পরিচালনার জন্য অত্যাবশ্যকীয় অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক কর্মকান্ড(social, economic and, socio-economic)সম্পাদনে প্রয়োজনীয় নীতিমালা(আইন) প্রনয়ন করবে এটা বিরোধঅযোগ্য শর্ত মেনে যে তা কোনোক্রমেই সংবিধান কর্তৃক সংজ্ঞায়িত জনসাধারনের মৌলিক অধিকার সংরক্ষন, বাস্তবায়ন এবং এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক না হয়।

এই হিসাবে দেশের যেকোন সমস্যা তা বাসস্ট্যান্ডে বাস না থাকা থেকে শুরু করে আশুলিয়ার অগ্নিকান্ড, চট্টগ্রামের ফ্লাইওভার কান্ড সবকিছুর জন্য সংসদ সদস্যগন অথবা সাধারনভাবে বলতে গেলে রাজনীতিবিদরাই দায়ী এবং আমি নিজেও এই মতের বিরুদ্ধে না।
কিন্তু আপনারা কি কিছু মিস করছেন না?

যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং তা বিশ্লেষন করে সীমিত সম্পদের শ্রেষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত করে বিবেচ্য পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল। এই নীতি বাসার বাজার কি হবে তা নির্নয় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

আইনপ্রনেতারা যখন কোনো নীতিমালা প্রনয়নে উদবুদ্ধ হন তখন তারা মুখ ফিরান সংস্লিষ্ট মন্ত্রনালয় তথা প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রের সেই অঙ্গ যা আইনসভাকে কোন নির্দিষ্ট সময়ে সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, তার বিশ্লেষন এবং মত সরবরাহ করে থাকে। এই প্রশাসনই আবার সেই নির্ধারনকৃত নীতিমালা বাস্তবায়ন করে থাকে। মূলত একটি রাষ্ট্রের পরিচালনা করে থাকে প্রশাসন, আইনসভা তথা জাতীয় সংসদ তথা রাজনীতিবিদরা দিনের শেষে তাদেরই দেখানো পথে পা বাড়ান এমনকি জুতা পড়ে হাটবেন নাকি শুধু মোজা পড়ে দৌড়াবেন নাকি মোজা ছাড়া জুতা পড়ে হামাগুড়ি দিবেন সবই প্রশাষন ঠিক করে, রাষ্ট্র পরিচালনার মুলনীতি সাধারন ভাষায় বলতে গেলে এমন কিছু একটাই হবে।

গত ৪২ বছর এবং তার আগের ২১৪ বছরের কালের বিবর্তনে আমাদের দেশে আইন সভা এবং প্রশাসনের ক্ষমতার ভারসাম্যযে অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে গাছে তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যে দেশের আইনসভার অর্ধেকেরও বেশি প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসায়ীক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তারা যে পূজিঁর মালিক তথা নিজ এবং স্বগোত্রীয়দের নিন্মাংগ চোষন, লেহন এবং রাগমোচনে নিজেদের জিহবা, ক্ষমতার পূর্ন ব্যবহার করবে তা অতি স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেচ্ছাচারী আইন ও নীতিগুলো প্রনয়ন করছে যে প্রশাসন তাদের কথা কি আমরা সাধারন জনগন একবারও ভাবছি? শহরের ভিতরে গার্মেন্টস এর অনুমতি দিয়েছে কে? লুঙ্গি ব্যবসায়ীকে ফ্লাইওভার বানানোর তত্ত্বাবধায়নে বসানোর সুযোগ দিয়েছে কে? প্রশাসনে দলীয়করনের সুযোগ দিয়েছে কে? সুত্রাপুর থানার ১০০ গজের মধ্যে কেরু কোম্পানির মদের গোডাউন(কাশ্মির স্টোর, বি. কে. দাস রোড, সুত্রাপুর, ঢাকা-১১০০) বসানোর অনুমতি দিয়েছে কে? ঢাকা মেডিকেলে বাংলাদেশের সবথেকে দামি MRI মেশিন থাকা সত্বেও তা নষ্ট খবর প্রচার করে ৩০০০ টাকার MRI প্রাইভেটে ৯৪০০ টাকায় করাতে বাধ্য করছে কে? BRTA থেকে অবৈধ মোটরসাইকেলের বৈধ কাগজ বের করতে দিচ্ছে কে?ঢাকা-নারায়নগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলাচল করা বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন সেবা যেটা তালিকা ভাড়া ৫ টা এবং যারা ইঞ্জিনের সামনে বসে/দাঁড়িয়ে/ঝুলে ২টাকা হারে ভাড়া দিয়ে ৪৫ মিনিটের মধ্যে গন্তব্যে পৌছাতে পারছে(বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে আমার) তাদের সুবিধার্থে(!!) ট্রেন সংখা না বাড়িয়ে বেসরকারি বাস সার্ভিস যা কিনা ন্যুনতম ৩৫/৪০ টাকা ভাড়া নিয়ে দেড় ঘন্টাতেও গন্তব্যে পৌছাতে পারছেনা তার সংখা বাড়ানোর পেছনে কাজ করছে কে?

এইরকম প্রশ্নের তালিকা বাড়ালে আমার আয়ূ শেষ হয়ে যাবে, কথা শেষ হবেনা। উত্তরটা সবার মুখে মুখে। ঠিক বলেছেন, পলিটিশিয়ান, পাঁচে পাঁচ। এইবার উত্তর দেন এই প্রশ্নগুলার, আমি, আপনি যখন কোন কাজ করতে যাই যেটা সরকারি প্রসেসিং এ পরে, তাতে OK সই করে কে? পলিটিশিয়ান নাকি প্রশাসনিক কর্মকর্তা? দিনের শেষে যেকোন সরকারি পরিকল্পনার ছাড়পত্র সই করে কে? পলিটিশিয়ান নাকি প্রশাসনিক কর্মকর্তা? একটা প্রকল্প শেষ হয়েছে। সেটা কি ছাড়পত্র পাওয়া পরিকল্পনা মোতাবেক না হওয়া সত্বেও ক্লিয়ারেন্স সই পায় তা কে দেয়? পলিটিশিয়ান নাকি প্রশাসনিক কর্মকর্তা? ৩,৫০,০০০ টাকার বিনিময়ে বর্ডার হতে অবৈধভাবে আসা YAMAHA R15 যার বর্তমান বাজার মুল্য ৫,৩০,০০০ টাকা(সকল বৈধ কাগজ সহ) আপনার ঘরের নিচে বৈধ কাগজসহ আসবে(আমাকে সাধা হচ্ছে যে ১০টা বিক্রি করিয়ে দিলে আমরও একটা হবে), এটার মূল হয়ত পলিটিসিয়ানরা কিন্তু ম্যানেজ করে কে? পলিটিশিয়ান নাকি প্রশাসনিক কর্মকর্তা?

কাদির সাহেবের প্রশ্নে ফিরে যাই। দেশের সবচেয়ে বড় গুন্ডা হচ্ছে পুলিশ। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের নিরাপত্ত্বা বিধানে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলা ফেরা করার ক্ষমতা রাখে। শুধু তাই না, তারা দেশের প্রশাসনের একটি অঙ্গস্নগঠন যা যেকোন উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য যেমন প্রশাসনের অন্যান্য বিভাগের সহযোগিতা কামনা করতে পারে তেমনি সহযোগিতা করতেও পারে। তো দেশের সবচেয়ে বড় গুন্ডা পালা প্রশাসনিক বেশ্যাগুলা(কর্মকর্তা) কি করছে? সৎ, যোগ্য লোকগুলো যারা গুরুত্বপূর্ন পদগুলোর মূল দাবিদার তাদের মাইনকার চিপায়(এমন কিছু পদ যেখনে দিনের শেষে কিছুএ করার থাকেনা) ফেলে নিজেদের আধিপত্য ও প্রভাব বজায় রাখার ক্ষমতার মুল্য হিসাবে সমগ্র দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা সরবরাহকে চরম হুমকির মুখে ফেলে দেয়ার জন্য যে সকল আইন প্রনয়ন করা হচ্ছে তার পেছনে প্রত্তক্ষ মদদ যুগিয়ে চলছে। তারা এইটা খুব ভালো করে যানে যে দিনের শেষে সবাই দুষবে সংসদকে, তাই সময় বুঝে কখনো হাকে জয় বাংলা, কখনও বাংলাদেশ জিন্দবাদ, তবে সবসময়েই কথা শুরু করা স্লামালাইকুম দিয়ে, ধর্মযে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার ছাড়া আর কিছুও না এই হাইপোথিসিসের বাস্তব প্রমান তারাই দিয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে। কে বলে সামাজিক বিজ্ঞানের মডেলের রিয়েল লাইফ টেস্টিং সম্ভব নয়!!!

এত কথা বলার উদ্দেশ্য একটাই, সমস্যার পরিপূর্ন সমাধান চাইলে তার গোড়ায় মনোযোগ দিতে হবে। ৩০০ জন সংসদ সদস্য দেশ চালায়না। ৩০০ জন লোক মিলে গার্মেন্টসে আগুন দেয়নি। ৩০০ জন লোক মিলে ১০০ টন গার্ডার ফেলে সাজ্জাদকে খুন করেনি।