এফ্লুয়েঞ্জা শব্দটার সাথে হয়তো অনেকেই কম-বেশী পরিচিত। দুটো ইংরেজি শব্দ, এফ্লুয়েন্স ও ইনফ্লুয়েঞ্জা-এর সমন্বয়ে ইংরাজী ভাষায় শব্দটির আবির্ভাব হয়েছে। শব্দটির উদ্ভাবক তারাই, যারা এর অন্তর্নিহীত ভাবটাকে আকার দিয়েছেন। কি আছে এই শব্দটার ভিতরে, যা আজকের দিনে ভীষন ভাবে প্রাসঙ্গিক? আরো চাই, আরো চাই করে পাগল হয়ে যাওয়া একটা সামাজিক অবস্থা যা সর্ব ক্ষেত্রে ভারাক্রান্ততা, ঋন, বিষন্নতা এবং অপচয়ের মত উপসর্গ নিয়ে সংক্রমিত করে চলে এক থেকে বহুতে- এফ্লয়েঞ্জার ধারনা অনেকটা এরকমই। ইংরাজী ভাষাভাষী মানুষের ভিতরে একটা খুব চালু প্রবাদ আছে-‘কিপ আপ উইথ জোনসেস’। সামাজিক কৌলিন্য রক্ষার কারনে কোন একজন প্রতিবেশীকে মাপকাঠি ধরে সেভাবে চলার প্রবনতা থেকে প্রবাদটির উদ্ভাবন ঘটেছে। জোন্সের সঙ্গে থাকতে না পারাটা একটা আভিজাত্যের পতন। যেভাবেই হোক বিশেষ মাপকাঠি অনুসারে আভিজাত্যটা ধরে রাখতে হবে- এমন একটা অযৌক্তিক প্রচেষ্টা, বাড়তি মনোচাপ ও কাজ, অপচয় ও ঋন কোন দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে একমাত্র উপায় এমন রাষ্ট্রীয় দর্শনের প্রয়োগ অথবা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আত্মবিদ্ধংশী আসক্তি সামাজিক মহামারি হিসাবে এফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে।
এফ্লুয়েঞ্জার প্রবক্তারা মনে করেন- বস্তবাদী উন্নতির সীমাহীন বর্ধন ও ভোগ যদি বেশী বেশী কাঙ্খিত ও পুরস্কৃত হয় তবে একটা সুন্দর ও শান্তিময় জীবনের স্বপ্নের চেয়ে একটা সর্বব্যপি অতৃপ্তি ও অর্থহীনতা বেশী প্রকট হয়ে উঠে। এই ধরনের একটা নেতিবাচক মানষিক অবস্থা এফ্লুয়েঞ্জার মত একটা ব্যাধির জন্ম দিতে পারে। এই রোগের শিকার যারা তারা একটা গোষ্ঠি বা দল যারা এমন একটা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অবস্থার ভিতর দিয়ে প্রভুত সম্পদের মালিক হয়, যারা অনেক বস্তুগত ভোগ সামগ্রী পাবার পরেও নিজেদের অতৃপ্ত ও ক্ষুধার্থ হিসাবে আবিস্কার করে শুধুমাত্র আরো বেশী পাবার দুর্ণিবার আকাঙ্খা পোষণ করার কারণে। এভাবে এক সময় দেখা যায়, এই রোগে আক্রান্ত লোকেরা তাদের ভোগ্য সামগ্রী থেকে তৃপ্তি পেতে ব্যর্থ হয়, যার ফলে তাদের চিন্তা ও সময়কে বস্তু গ্রাস করে ফেলে আগ্রাসী হয়ে। তখন ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা এবং সুখ-শান্তির অনুভূতির গুরুত্ব তদের কাছে ঔজ্জল্য হারায়।
বৃটিশ মনোবিজ্ঞানী অলিভার জেমস মনে করেন- বস্তুগত উন্নতির বৈসাম্যের সাথে এফ্লুয়েঞ্জার আগ্রাসনের একটা অন্তরগত সম্পর্ক রয়েছে। সমাজে যত বেশী অর্থনৈতিক বৈসাম্য থাকবে, সেখানে ততো বেশী সুখ ও শান্তিহীনতা বিরাজ করবে। এই অবস্থাটার ফায়দা লোটে বিজ্ঞাপণী সংস্থাগুলো। তারা তাদের ম্যানিপুলেটিভ বৈশিষ্টের দ্বারা বৈসাম্য জর্জরিত মানুষের ভিতরে কৃত্রিম উপযোগ বা চাহিদা তৈরী করে। সেইসব উপযোগে সাড়া দেয় মানুষ, অনেকটা নিরুপায় হয়ে, অগ্র-পশ্চাত অতকিছু না ভেবে, অনেক সময় সামাজিক একটা স্ট্যাটাস বা কৌলিন্যের মানদন্ড রক্ষার কারনে। এই ভাবে বিজ্ঞাপন ভোক্তার আর্থ-সামাজিক চরিত্র গড়ে তোলে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অসাম্যের মাত্রা ও রকমফের ভেদে জেমস পৃথিবীর বড় বড় শহর যেমন- সিডনি, সিঙ্গাপুর, অকল্যান্ড, মস্কো, সাংহাই, কোপেনহেগেন, নিউইয়র্ক প্রভৃতি নগরীর মানুষের সাথে কথা বলে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছেন- তীব্র ভোগবাদী সমাজে অতি মাত্রায় মানষিক বৈকল্যের একটা অন্যতম কারন তাদের ভোগের পিছনে মাত্রাতিরিক্ত দৌড়ের প্রবণতা। বিভিন্ন উতস থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে জেমস মানষিক অসুস্থ্যতার ব্যপকতার বিপরীতে আয়ের বৈসাম্য বসিয়ে একটা গ্রাফ তৈরী করেন, যেখানে তিনি দেখাতে সক্ষম হন ইউরোপের মূল ভূখন্ডের লোকদের থেকে ইংরেজী ভাষাভাষী লোকদের ভিতরে ইমোশনাল বা আবেগীয় বৈকল্য অনেক বেশী- প্রায় দ্বিগুন। এর কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি দেখতে পান ইংরেজী ভাষাভাষী মানুষের ভিতরে অর্থ, সম্পদ, স্থাবর-অস্থাবর, চেহার ও আভিজাত্য, এবং প্রসিদ্ধিকে সবার উপরে রাখা হয় এবং বিশেষভাবে মুল্যায়ন করা হয়। বাজার বিন্যাসে উদার রাজনৈতিক সরকারি নীতি, যা ইংলিশ ভাষাভাষী রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত এবং ‘স্বার্থপর পুজিবাদ’ ব্যবস্থার ধারক ও বাহক। মূলত এমন একটা আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাই ইংরাজী ভাষাভাষী রাষ্ট্র সমূহে এফ্লুয়েঞ্জার ব্যপকতার জন্য দায়ী। অপেক্ষাকৃত কম ‘স্বার্থপর পুজিবাদ’ ব্যবস্থার ইউরোপের মূল ভূখন্ডে এফ্লুয়েঞ্জার আগ্রাসন তুলনামূলক ভাবে তাই অনেক কম।
কিভাবে এফ্লুয়েঞ্জা নামের এই সামাজিক ব্যাধি থেকে বেরিয়ে আসা যায়, কোন উপায়ে? মনোবিজ্ঞানীদের কাছে এর হয়তো কোন ক্লিনিক্যাল সমাধান রয়েছে, কিন্ত এই লেখায় সে বিষয়ে আলোকপাত করার সুযোগ কম। মোটা দাগে আমাদের সাধারন বিচার বুদ্ধিতে যে সমাধান দেয়, তা হলো- নিজেকে প্রশ্ন করার অভ্যাস, অন্য কথায় আত্মজিজ্ঞাসার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সমাজের ঘাড়ের উপর চেপে থাকা ভোগবাদের নেতিবাচক ভুতগুলো ঝেড়ে ফেলা যেতে পারে, যদি কি না মানুষ ভিতর থেকে জেগে উঠা প্রকৃত চাহিদা আর উড়ে এসে জুড়ে বসা কৃত্রিম অভাবের ভিতরে পার্থক্য করতে শিখে ফেলে- যদি কিনা তারা প্রথমটাকে দ্বিতীয়টার উপরে স্থান দেওয়ার সাহস ও ইচ্ছা পোষন করে। আত্মজিজ্ঞসা প্রকল্পে সাহসের কোন বিকল্প নেই।
বলা যত সহজ করা ততো সহজ নয়। একটা গড্ডালিকা প্রবাহে পরিভ্রমনরত মানুষ কিভাবে বুঝবে কোনটা তার প্রকৃত চাহিদা আর কোনটা তার কৃত্রিম অভাব? মনে হয় এখানে একটা বাস্তব উদাহরন দিয়ে বিষয়টাকে পরিস্কার করা যেতে পারে। ধরা যাক, দবির আর খবির দুই প্রতিবেশী। দবির কাজ করে একটা সফটঅয়ার কম্পানীতে। ভীষন ব্যস্ত, কথা বলার সময় পায় না- কাজ করতে হয় বারো থেকে চৌদ্দ ঘন্টা। মাইনে সে ভালই পায়। আর খবিরের অবস্থা একেবারে ভিন্ন। তার বাবা অঢেল অর্থ-সম্পদ রেখে গেছে তার জন্যে। কোন কাজ তাকে করতে হয় না, করেও না সে তেমন কিছু। তাই তার কোন ব্যস্ততাও নেই। ওদিকে রাত জেগে কাজ করাতে প্রতিদিন দবিরের দেরী হয়ে যায় আপিস যেতে। অথচ সকাল বেলায় নাস্তা করে যাওয়া কতটাই না জরুরী। দবির তাই একদিন একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিনে ফেললো। এখন সে নিয়মিত সকালের নাস্তাটা করে যেতে পারে। ওভেনটা তার অনেক কাজে আসছে। সে সুখী। খবিরের ব্যপারটা বেশ একটু আলাদা। সকাল বেলায় তার কোন তাড়া নেই- যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন ওঠে সে। ব্যাস্ততা না থাকলে কি হবে, প্রতিবেশীর দেখাদেখি সেও কিনে ফেললো আরো সুন্দর একটা মাইক্রোওয়েভ অভেন। যন্ত্রটাই এখন বিরাট বিরক্তির কারণ হলো খবিরের জন্য। আগে সকালের নাস্তা বানাতে দেরী হতো, তখন বেশ রয়েসয়ে শরীরটাকে নেড়েচেড়ে খেলিয়ে ক্ষুধা লাগিয়ে তারপর প্রাতরাশ সারতো। এখন আর সেই উপায় নেই। এখন ঘুম থেকে উঠতে না উঠতে খাবার তৈরী হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি খেয়ে নেবার তাড়া আসে। যন্ত্রটা কিনে তৃপ্ত হওয়া দূরে থাক, ওটার উপরে তার একটা বিরক্তি এসে যায়। কি আর করা অবশেষে মনটাকে প্রবোধ দেয় এই বলে- জিনিসের একটা ইজ্জত আছে না, তা না হলে জাতে উঠতো সে কিভাবে? খবিরের ব্যাপারটা যে কৃত্রিম অভাব আর দবিরেরটা প্রকৃত চাহিদা এটা বুঝতে মনেহয় রকেট-সাইন্স জানার দরকার হবে না।
বাংলাদেশীয় প্রেক্ষাপটে এফ্লুয়েঞ্জার স্থিতি এবং বিকাশ কোন মার্গে তা একবার বিশ্লষন করে দেখা যেতে পারে। এদেশের সমাজে অর্থনৈতিক বৈসাম্যটা প্রকট এবং বিভতস রূপে দৃশ্যমান। অন্য কথায়, ধনী ও গরীবের ভিতরে অর্থনৈতিক ব্যবধান বিপুল। জীবনের মৌলিক উপাদান সংগ্রহে একজন সর্বোচ্চ ধনী আর একজন সর্বনিন্ম দরীদ্র মানুষের সক্ষমতার যে বিপুল ব্যবধান তার থেকে একটা ধারনা নেয়া যেতে পারে এদেশে এফ্লুয়েঞ্জার প্রকটতার। বাঙালী সমাজে এরোগের বিস্তার জানতে হলে শ্রেনীচরিত্রের ব্যপারটা এসেই যায়। এখানে প্রতিটা মানুষের ভিতরে সুবিধা ও স্বার্থের ভিত্তিতে অগুনিত শ্রেনীতে বিভাজিত হয়ে এক একটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল উপদল গঠন করে টিকে থাকার প্রবনতা দেখা যায়। মোটা দাগে সম্পদের ভিত্তিতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত এই তিন শ্রেনী থাকলেও পেশাভিত্তিক শ্রেনী অগুনিত। এছাড়াও আছে লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্ম, বয়স, ভাষা, শিক্ষা প্রভৃতির ভিত্তিতে বিন্যাস্ত শ্রেনী সমূহ। শ্রেনী থাকলে শ্রেনীসংগ্রামও থাকবে। তাই দেখা যায় এক শ্রেনীর অন্য শ্রেনীর উপরে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রবনতা। অভিজাত-কুলিন কে না হতে চায়! তাই প্রতিটা শ্রেনীর মানসপটে কৌলিন্যের যে মান দন্ড তা প্রায় একরকম হলেও সেসবের একটা ঐতিহাসিক পটভূমিতো আছেই। এক এক আমলে আভিজাত্য রক্ষার উপকরন সমূহ ভিন্ন ভিন্ন হলেও সমাজের কাছে তার আবেদন সব কালে এক ও অভিন্ন। জাতে উঠার জন্য বাঙালী তাই লড়াকু, কুলিন হবার আকুতি তার সারা অন্তর জুড়ে। বিজ্ঞাপন ওলারা তার আকুতি মেটাতে এগিয়ে আসে তাই দরাজ হাতে। গন্তব্যে পৌছানোর পথ বাতলে দেয় বিচিত্র ভঙ্গিতে। পথ বাতলে দেয় সে সবাইকে- সামার্থ্য যার আছে তাকে আবার যার নেই তাকেও। এক্ষেত্রে এফ্লুয়েঞ্জা বাসা বাঁধে দুই শ্রেনীর মানুষেরই মনে। তবে দুই শ্রেনীতে তার প্রতিকৃয়া ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশ পায়। সামর্থ্যবানেরা ভোগে তৃপ্তি খুজে খুজে অতৃপ্ত থেকে যায়, আবার সামার্থ্যহীনেরা ভোগ করার জন্যে হাহাকার করে যায়। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বেসরকারী খাত মোটামুটি চাঙ্গা হওয়ায় শ্রমজীবি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শ্রেনীর হাতে পয়সা এসেছে। ফলে বেশ বড় একটা শ্রেনীর মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তে উত্তোরণ ঘটেছে। এবার তাই বিজ্ঞাপনের স্বর্গে আর তাদের মনের হাহাকার মেটানোয় কোন বাধা নেই। তাই ঠিক মোক্ষম সময়ে দুরারোগ্য মহামারী আক্রমন করে বসে।
হঠাত করে কেউ প্রশ্ন করতে পারে- যার পয়সা আছে সে কিনবে, খাবে তাতে কার কি ক্ষতি? ক্ষতি একজনের না, ক্ষতি সবার, ক্ষতি সারা পৃথিবীর। কম ভোগ পরিবেশ বান্ধব- একথা বোধকরি কাউকে আর ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে হয় না। খাবার কথাই ধরা যাক- বেশী খাবার খেলে শরীর থেকে কঠিন, তরল, বায়বীয় বর্জও বেশী নির্গত হয়, ঠিক পরিমান মত খেলে যা হতো না। সব ভোগের ব্যপারেও একই কথা প্রযোজ্য। ভোগের সাথে প্রকৃত চাহিদার কোন সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক আছে এফ্লুয়েঞ্জার সাথে। অতিভোগ এফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ যা অসুস্থ্য প্রতিযোগীতা বাড়ায়, বাড়ায় দুর্নীতি, হানাহানি, মানুষের অন্তর্গত সুখের জগতে তোলে মরুভূমির লু হাওয়া। তাই যে পশ্চিমে একদিন এফ্লুয়েঞ্জার জন্ম সেখানেই পরিবেশ বাচানোর স্বার্থে গড়ে উঠেছে এন্টি-কঞ্জিউমেরিস্ট সোসাইটি, সিম্পল লাইফ মুভমেন্ট, এন্টি-গ্লোবাল মুভমেন্ট সহ আরো অনেক কল্যানকর প্রতিষ্ঠান।
আমাদের ইচ্ছার উপরে এফ্লুয়েঞ্জার স্থিতি এবং প্রলয়। আমারা ইচ্ছা করলে একে পুষে রাখতে পারি আবার ইচ্ছে করলে তার করলে তার খতম তারাবীও পড়তে পারি। তাই এটা একটা সখের অসুখ। নীচের প্রামান্য ভিডিওটা অসুখটাকে বুঝতে সহায়ক হতে পারে।
https://www.youtube.com/watch?v=sLv7kA5MDC4
তথ্যসূত্রঃ
উইকিপেডিয়া
গুগোল সার্চ
ভাল লাগল! চলুক।
@কাজি মামুন,
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমাদের বাঙালী সমাজে এই এফ্লুয়েঞ্জা একটা ভয়াবহ মহামারীর আকার নিচ্ছে ধীরে ধীরে। এই রোগের প্লাবন ঠেকাতে সরকারী এবং বেসরকারী উভয় খাতে প্রচেষ্টা থাকতে হবে, তা না হলে জাতির সুষম এবং দীর্ঘ মেয়াদী উন্নতির পথ রুদ্ধ হবে।
কিন্তু মানুষই তো ইনফ্লুয়েঞ্জা পছন্দ করে। সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৮০ সালেও যে ঘড়ি ব্যাবহার করা হতো, তা ১৯৩০ মডেলের। নীতি নির্ধারকরা ভেবেছিল ঘড়ি তো সময় দেখার জন্য, মডেল তো সেখানে গৌন। কিন্তু আমজনতা সে কথায় ভোলে না। বাংলাদেশ থেকে যারা মস্কো, কিয়েভ, তাসখন্দে পড়তে যেত, তারা যাবার সময় জিন্সের প্যান্ট, কোকের ক্যান, ক্যালকুলেটর নিয়ে যেত, তার বিনিময়ে অনেক সুবিধা অর্জনও করতো। মৌলিক কোন চাহিদা অপূর্ন ছিল না, তবুও মূলতঃ জাঁকের আকর্ষনেই ভেঙ্গে পড়লো সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা।
@চলনামৃত,
মানুষের এই জাঁকের স্বভাব শিল্প বিপ্লবের পর থেকে আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করে আজ এই পর্যায়ে এসে পৌছেছে। যখন এই এফ্লুয়েঞ্জাটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে পশ্চিমের লোকজন নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে। ব্যক্তি উদ্দোগে অনেক কাজ হচ্ছে, রাষ্ট্র পর্যায়ে নিরবতা আছে, কারন রাষ্ট্র তার বাজারের স্বার্থে এখনো এসব আমলে আনছে না। কিন্ত আমার মনে হয় খুব বেশী দিন নেই তাদের হাতে। কিছু একটা করতে তাদের হবেই।
অসাধারল লাগল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়টির ওপর লেখার জন্য। ভোগবাদ আসলেই বর্তমান বিশ্বের এক বড় সমস্যা, আমাদের দেশে এর মাত্রা আরো ব্যাপক বলেই আমার বিশ্বাস। দেশ থেকে আত্মীয় স্বজন এমন মডেলের সেল ফোন পাঠাতে বলে যা এখানের অতি ধনীরাও ব্যাবহার করে না। অত দামী ফোনের কোনই দরকার নেই, স্রেফ লোকে দেখানো, নিজেকে আপ স্কেল মনে করা বা অন্যর ব্যাবহার করা দেখে হীনমন্যতায় ভোগা। এই মানসিকতা আনছে ব্যাপক অশান্তি, অপ্রয়োজনীয় শিল্পের বিকাশ…পরিবেশ বিপর্যয়…পূঁজিবাদের চরম কুফল।
এ নিয়ে আরো লেখালেখি খুবই দরকার, সমস্যা আসলে মানসিক, অনেকটা মাস হিষ্টিরিয়া টাইপের। পূঁজিবাদের সাথে মিডিয়া ব্যাবহার করে মগজ ধোলাই এর কুফল। ধর্মওয়ালারা দাবী করে ধর্মের প্রভাব কমে যাবার কুফল এটা, কিংবা নাস্তিক্যবাদের কুফল। তাদের কথায় কিছুটা হলেও যুক্তি আছে বলেই মনে হয়।
ভোগবাদের বিপরীতে আরেক মতবাদ গড়ে উঠছে মিনিমালিজম। অনেক মিনিমালিষ্ট অপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র খেদিয়ে সরল জীবন যাপন করে সুখ পাচ্ছেন। বহু সাইট আছে তাদের প্রচারনার। http://mnmlist.com/minimalist-faqs/
আমি এ নিয়ে ভেবে কোন কূল পাই না। কার কি প্রয়োজন সেটার স্কেল ঠিক কিভাবে নির্ধারন করা যাবে? কারো কোটি টাকা থাকলে সে সিংগাপুর থেকে টয়লেট পেপার আনাবে, আমি ঠিক কিভাবে তাকে থামাবো বা মোটিভেট করব? আইন কানুন করে তেমন লাভ হবে না। দর্শনগত পরিবর্তন দরকার। গভীর ভাবনার ব্যাপার আছে।
@আদিল মাহমুদ,
আমার মনে হয়, ভোগবাদী ব্যপারটা চিরন্তন। তবে মানুষ এখনো অবাধ তথ্য প্রবাহের আওতায় আসেনি। ফলে ব্যপার গুলো আপনি যেভাবে দেখতে পারছেন অন্যেরা (বাংলাদেশের আপামর মানুষজন, আমাদের মতো গুটি কয়েক বাদে) সেভাবে পারছে না। সেই জন্যে উপলব্ধিতে একটা ব্যবধান থেকেই যাচ্ছে। তার উপরে ভোগ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন বাণিজ্যতো আছেই। অতএব যা হবার তা হচ্ছে। আমার ছোটবেলার স্কুলের এক স্যারের কথা বলি। যতোদূর মনে পড়ছে উনি শিহাব স্যার। ব্যক্তিগত জীবনে মৌলানা। আমাদের অংক করাতেন। ক্লাশে বলতেন, জামার কলারে একটা বাড়তি বোতামের কি দরকার? টাই পড়বে বলে? ঐ একটুকরো ন্যাকড়া গলায় ঝুলালে সাহেব বনে যাওয়া যায় বলে? আল্লাহ আমাদের মানুষ করে পাঠিয়েছেন। এই সৌন্দর্যটুকু কি জীবনের জন্যে যথেষ্ট নয়? ঐ ন্যকড়াটুকু আর বাড়তি বোতামটুকু থাকলে আর একটি মানুষের দেহের আচ্ছাদন হতে পারতো, কাজেই সংযমী হও। নবীজি গরুর রাখাল ছিলেন, কবি নজরুল রুটি বেলে পয়সা রোজগার করতেন, গান্ধীজি নেংটি পড়ে আর ছাগলের দুধ খেয়ে জীবন কাটিয়েছেন, টাই পড়লে কি আরো বড়ো হতেন? টাই পড়ে কেউ কি এঁদের চেয়ে বড় হয়েছেন? যাই হোক মৌলানা স্যার সেই যুগে এমন করে আমাদের জ্ঞান দিতেন, আজ প্রেক্ষাপট পাল্টে গিয়েছে। কিন্তু শিশুদের মনে এভাবে দাগ কাটার মতো করে বোধ করি আর শিক্ষকেরা বলেন না। আর সেই জন্যে বাণিজ্যিক মিডিয়ার ঘাড়ে চড়ে চটকদার বিজ্ঞাপনের তোড়ে গোটা ব্যবস্থাটাই ভাসছে। আত্মপোলব্ধিটাই এখানে বড়। সামর্থ্যবান আর সামর্থ্যহীন উভয়েই আজ প্রতিযোগীতায় রত। যাকে বলে এফ্লুয়েঞ্জা! লেখাটির জন্যে শাখা নির্ভানাকে ধন্যবাদ।
@কেশব অধিকারী,
ভোগবাদ চিরন্তন কোন সন্দেহ নেই। এটা হঠাত করেই আজ শুরু হয়নি। কিংবা ধর্মের প্রভাব রাষ্ট্র থেকে যাবার পরেঈ এই আবির্ভাব হয়েছে এমন ভাবনাও পুরো সঠিক নয়। ধর্ম যখন ইউরোপে সরাসরি রাজ্য নিয়ন্ত্রন করত তখনো সেখানে ভোগবাদী লোকজন প্রচুর মজা করেছে, তখন বরং এর মাত্রা ছিল আরো ভয়াবহ। শ্রেনী বৈষম্য ভয়াবহ থাকার কারনে কেবল অতি সীমিত সংখ্যক লোকেই ছিল খাদক, বাকিরা ছিল তাদের সেবক। এখন অন্তত খাদক আর সেবকের অনুপাত কিছুটা হলেও ব্যালেন্স হয়েছে।
আমারো মনে হয় যে এর জন্য শিক্ষনীয় পর্যায়ে কিছু করা উচিত। আমারো মনে পড়ে আমাদের সময়ের কিছু শিক্ষক মাঝে মাঝে এমন ধরনের কথা বলতেন যার কিছুটা হলেও সুফল আমাদের অনেকের মাঝেই কম বেশী আছে। মুশকিল হল তাতে আবার শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, এপ্লয়মেন্ট কমে যাবে এসব দিকও চলে আসবে। গড়ে ওঠা চক্র ভাংগা অত্যন্ত কঠিন।
– এটাই বর্তমান যুগের ভোগবাদের সবচেয়ে বাজে দিক। যার সামর্থ্য আছে সে করলে তেমন সমস্যা নেই। যার নেই সেও বলপূর্বক সেই প্রবাহে গা ভাসালে মহা মুশকিল। আমেরিকা কানাডায় অনেকের জীবন দেখতে খুবই চকচকে লাগে, চোখ ধাঁধানো বাড়ি, দামী গাড়ি…অথচ খোঁজ নিলে ভেতরে দেখা যাবে চাকচিক্যময় জীবন চলছে পুরোপুরি ক্রেডিট কার্ডের ওপর। পরিবারের আয়ের চাইতে ব্যায় বেশী। ধারের মূল টাকা দেওয়ার খবর নেই, মাসে মাসে কেবল সুদ গুনে চলেছে।
মিডিয়ার ভূমিকা ব্যাপক, বলতে গেলে অংগাংগি। চটকদার এড দিয়ে লোকের মাথা খারাপ করার সবচেয়ে ভাল উপায়। কিছুদিন আগে দেখেছিলাম চীনের এক ছেলে আই ফোন কেনার জন্য নিজের কিডনী বিক্রি করেছে। নিজের কিডনীর দাম আই ফোনের চাইতে সশ্তা এ শিক্ষা সমাজ থেকেই তো সে পেয়েছে।
ভাল আলোচনার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি আরো ভাল আলোচনা হবে।
@আদিল মাহমুদ,
এটা একটা অদ্ভুত আর্থ-সামাজিক ব্যাধি যার সাথে জীবনের অনেক প্যারামিটার জড়িত। তবে এই ভোগবাদী অসুখটা যেমন একদিনে তৈরী হয়নি তেমনি একদিনে এটা যাবারও নয়। আপনার দেয়া লিংকটায় মিনিমালিস্টদের উপর বেশ কিছু প্রশ্ন উত্তর পড়ে অনেক বিষয় জানতে পারলাম। এই ধরনের আদর্শবাদী ব্যাবস্থা মানুষ ব্যাপক হারে কিছুতেই গ্রহন করবে না, যদি কিনা তাতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না থাকে।
@শাখা নির্ভানা,
মিনিমালিষ্ট ব্যাবস্থাটা ভোগবাদের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকরি এতে আমার সংশয় আছে। তবে এর প্রচারনা আরো ভালভাবে করা গেলে কিছুটা কাজ হতেও পারে। স্বাভাবিকভাবেই করোপরেট বিশ্ব চাইবে না লোকে এসব ভাবধারা গ্রহন করুক, তাহলে তারা নিত্য নুতন ফাউ পন্য বাজারে এনে বিক্রি করবে কিভাবে? কাজেই এর প্রচারনা মূলধারায় সেভাবে আসবে না। রাষ্ট্র বা বড় ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা অবশ্যই লাগবে। মুশকিল হল তখন শিল্প সংকোচন, আন-এমপ্লয়মেন্ট এমন অনেক ইস্যুর মোকাবেলা অবশ্যই করতে হবে।
আমেরিকার ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর সেখানে প্রতিরক্ষা বাজেটে বড় ধরনের সংকোচন প্রস্তাব করেও করা যাচ্ছে না এ কারনে। কারন ডিফেন্স বাজেট কমালে প্রতিরক্ষার সাথে গড়ে ওঠা বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে বহু লোকে বেকার হবে। কোন মানে হয় এসবের। সহজ মুক্তি নেই।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার কথা ঠিক। তবে মনে হয় সবকিছু একটা অশুভ চক্রে বাঁধা। কৃত্রিম অভাব মেটানোর উপায়-উপকরনের সাথে এমপ্লয়মেন্ট-অর্থনীতি-সব জড়িয়ে গেছে। এই চক্রের থেকে বেরোন কঠিন হলেও সম্ভব। আমার মনে হয়- শিক্ষা ব্যাবস্থের ভিতর দিয়ে কিছু একটা করা যায়। আজকের দিনে কোন রাষ্ট্র আর ওপথে যাবে না। জনতাকে এগিয়ে এসে সরকার-যন্ত্রের উপর চাপ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ধর্ম অলাদরও অনেক দায়-দায়িত্ব আছে। তাদের কথা এখনো মানুষ বেশ শোনে। কিন্ত তারা আছে অন্য স্বার্থ নিয়ে। জাগতিক কল্যান নিয়ে তাদের তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই। ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্যে।
@আদিল মাহমুদ,
একমত যে এটা নিয়ে বেশী লেখালেখির দরকার । আমি নিজেও এ ব্যাপারে তীব্র ভাবে অনুভব করি। সে কারণে মুক্তমনা ব্লগে “এফ্লুয়েঞ্জা এক সর্বানাশা সামাজিক ব্যাধির নাম” শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। এর আগে ২০০৩ এর “New Age” পত্রিকার ঈদ সংখ্যা ফীচারে ওটার ইংরেজী সংস্করণ ছাপানো হয়েছিল। তবে ধর্মের প্রভাব কমে যাওয়া বা নাস্তিক্যবাদের কুফল এটা নয়। ইউরোপের মূল ভুখন্ডে নাস্তিকদের সংখ্যা ইংল্যান্ড বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে অনেক বেশী। কিন্তু ভোগবাদ ইউরোপের মূল ভুখন্ডে ইংল্যান্ড বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে অনেক কম। আমাদের সমাজে ধর্মের মাতামাতি এখন অনেক বেশী আগের থেকে। কিন্তু ভোগবাদ না কমে বাড়ছেই। বোরখা পরেও দামী দামী বিলাস দ্রব্য কিনছে নারীরা, আর তাদের পুরুষ প্রতিপক্ষরা কিনছে দামী সেল ফোন, লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে দুম্বা কিনে এনে কুরবানী দিচ্ছে (এটাতে বাংলাদেশের বৈদেশীক মুদ্রা কিছুটা হলেও ব্যয় তো নিশ্চয় হচ্ছে)। আরো উদাহরণ দেয়া যায়। ধর্মের কিছু আয়াতে অবশ্যই মিতাচারের কথা কথা আছে। তবে সেই আয়াতগুলির তেমন ব্যাপক প্রচার নেই।
আইন করে ও সামাজিক ভাবে (স্কুল ও পারিবারিক শিক্ষার দ্বারা) সুটোই দরকার এটা কমাতে। কিন্তু যারা আইন করবে বা যারা আজ বাবা মা তারা তো নিজেরাই এটা আর চায় না। তারা নিজেরাই ভোগবাদকে সমুন্নত রাখছে বা লিপ্ত হচ্ছে। পারিবারিক স্তর একটা কঠিন বর্তমান বাস্তবতা হল ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীরা বাবা বা স্বামীকে সদা চাপের মুখে রাখে এটা কিনে দিতে ওটা কিনে দিতে। মিতাচারের মূল্যবোধের কথা শুনলে তারা হাসবে আর মুখের উপর বাবা বা স্বামীকে অকর্মন্য বলে হেয় করবে। অনেক বাবা বা স্বামী তো নিজেরাই আগ বেড়ে লোক দেখানো (বা দর্প ভরে বলে বেড়ানীর জন্য) দামী দামী বিলাস সামগ্রী কিনছে কালো টাকায় বা ঋণের টাকায়। যেটা বলছিলাম ইচ্ছে থাকলে আইন দিয়ে কিছুটা কমানো যায় । যেমন যেটা দেশে পাওয়া যায় বা তৈরী হয় এমন জিনিষ বিদেশ থেকে আমদানী নিষিদ্ধ করা। টাকা থাকলেও সিংগাপুর থেকে টয়লেট পেপার আনা যাতে সম্ভব না হয় । কিন্তু এগুলো এক অবাস্তব আশা। কোন সমাধান আপাতত দেখছি না।
@অপার্থিব,
আপনার লেখাটা আগে পড়া হয়নি, এখন পড়ে নিচ্ছি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন সামাজিক ব্যাধি, এর থেকে সহনীয় মাত্রায় উত্তরন সভ্যতার প্রয়োজনেই দরকার। প্রথম কাজই হতে পারে জনগনকে মোটিভেট করা। বিলাসিতার ধরাবাধা সংজ্ঞা হতে পারে না। এটা সামাজিক দর্শন হিশেবে প্রচার করা উচিত শখ আহ্লাদ মেটাও ভাল কথা; তবে যা তোমার সাধ্যের বাইরে কিংবা স্রেফ অপরের সাথে পাল্লা দিতেই দরকার সেটা বর্জন কর।
যদিও এই দর্শনও আসলে মানব মননে তেমন কাজ করে না। নীচে চলনামৃত যেমন সোভিয়েতের উদাহরন দিয়েছেন।
আমাদের দেশ বাদ থাক। শরিয়া আইনে চলার দাবী করা আরব অঞ্চলে বিলাস বহুল জীবন আমরা সকলেই জানি। ধর্ম সেখানে বিলাসিতাকে মোটেও থামাতে পারেনি। ধর্মওয়ালা সমাজগুলিতেও মানুষ মানুষ সমান এর প্রয়োগ কেবলমাত্র মসজিদের লাইনেই দেখা যায়। এমনকি হজ্জ্ব করার সময়েও আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ব্যাবস্থা। যাদের টাকা আছে তারা বিলাস বহুল অত্যাধুনিক হোটেলে থেকে হজ্জ্ব করে। যাদের নেই তাদের অবস্থান বারোয়ারি।
– এটা কিন্তু সম্ভব করে দেখিয়েছে আমাদের প্রতিবেশী ভারত। স্বাধীনতার পর নেহেরুর বিচক্ষনতায় এভাবেই তারা দেশী শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছে। বিদেশী বিলাস পন্য, এমনকি উচ্চমানের পন্য বর্জন করে দেশী নিম্ন মানের পন্য বানিয়ে ব্যাবহার করেছে। প্রতিবেশী পাকিস্তান জন্ম থেকেই বিলাসিতার পথে হেঁটেছে, ফলাফল তো দেখাই যাচ্ছে। ‘৭১ সালেও কলকাতায় যাওয়া অনেক শিক্ষিত বাংগালীকে ভারতীয়রা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল তোমরা এত ভাল আছ, এত চাকচিক্যময় জীবন, তাও কেন সুখী নও, কিসের অভাব? আমাদের জীবন দেখো কত ম্যাড়মেড়ে। ছেলেবেলায় পাকিস্তান আমলের আনা বিশাল বিশাল আমেরিকান গাড়িতে আমিও চড়েছি। আর ভারতীয় পন্যের নিম্নমান নিয়ে হাসাহাসি করতে দেখেছি বড়দের। তখন সকলে হাসাহাসি করত ভারত বানায় সবই, তবে একটিও মানের নয়। এখন ধীরে ধীরে মান সম্পন্ন প্রোডাক্টই তারা বানাচ্ছে।
তবে বর্তমান মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে এই নীতি বজায় রাখা আরো বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বিলাস দ্রব্যের ওপর উচু হারে ট্যাক্স অবশ্যই বসানো যায়। এজন্য সুক্ষ্ম শ্রেনী বিন্যাস দরকার। যেমন সেল ফোনকে সাধারন হিশেবে ধরে কম ট্যাক্স ধরা যায়, আইফোনকে ধরা যেতে পারে বিলাস পন্য।
মূল সমাধান মনে হয় আইনী পথে না। সোশাল মোটিভেশনেই।
@আদিল মাহমুদ,
সেটা তো আছেই। বর্তমান সরকার তো কমলার রসকে বিলাস দ্রব্য ঘোষণা দিয়ে বাড়তি আমদানী কর বসিয়ে দ্বিগুণ দাম করে দিয়েছে। অরেঞ্জ জুস বাংলাদেশে তৈরীও হয় না, আর আমার মতে বিলাস দ্রব্যের সংজ্ঞায়ও পড়ে না। কিন্তু আসল কথা হল কর বসানো মূল সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ বিত্তবানেরা কর দিয়েও বিলাস সামগ্রী কিনবে। তাতে শ্রেণী বৈষম্য আরো প্রকট ও দৃষ্টিকটু হবে কারণ কম বিত্তবানেরা বাড়তি কর দিতে না পেরে আগে যা কিনতে পারত তা এখন আর কিনতে পারবে না। আর বিলাস দ্রব্য আমদানী করলেই তো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হবে, বাড়তি কর আরোপ করলেও।
পাকিস্তান আমলে গাড়ি আমদানী হলেও তা সংখ্যায় নগন্য ছিল। এখন যে হারে গাড়ী আমদানী করা হচ্ছে তাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে, যা গার্মেন্টস রপ্তানী ও প্রাবসীদের আয় থেকে আসছে। পাকিস্তানে এক মডেলের গাড়ি অ্যাসেম্বল করা হত, চট্টগ্রামে, ভক্সহল ভিভা নামে। পঞ্চাশ বছর পরেও বাংলাদেশে গাড়ি অ্যাসেম্বল করার কোন কারখানাই বসানো হল না। কিছুটা হলেও বৈদেশিক মুদ্রাতো বাঁচত, কর্মসংস্থান তো হতই।
@আদিল মাহমুদ,
যদিও আইনি পথটা সেকেন্ডারী তার পরেও দুটো উপায়ই এক সংগে হাত ধরাধরি করে চললে এক সময় লক্ষে পৌছান যাবে।
কিউবার উদাহরন দেয়া যেতে পারে এক্ষেত্রে। সেখানে মানুষের ভিতরে অতিভোগ না করতে পারার হাহাকার আছে এবং থাকবেও তারপরেও সরকারী নিয়ন্ত্রনের ফলে এই বিলাসী রোগ থেকে কিছুটা হেফাজতে আছে।
@অপার্থিব,
আপনার দেয়া লিঙ্ক ধরে মুক্তমনায় আপনার এফ্লুয়েঞ্জা উপর লেখাটা পড়লাম। আনেক বিস্তারিত লেখাটা পড়ে একটা বিষয়ে অবগত হলাম- এই মহামারিকে প্রতিরোধ করতে অনেক দেশেই বেসরকারী ব্যক্তি পর্যায়ে কাজ শুরু হয়ে গেছে অনেক আগেই। বাংলাদেশে কি এটা শুরু করা যায় না? আমার মনে হয় সময় এসে গেছে এই বিষয়টার উপর কাজ করার।
@আদিল মাহমুদ,
দামী ফোনের জন্য চিটাগং-এর মাকে দুই বাচ্চা সহ জীবন দিতে হলো, এই হলো ভোগ-বিলাসের সামগ্রীর প্রতি দেশের লোকদের দুর্নিবার আকর্ষনের নমুনা। এটি মনে হয় সমাজে সংক্রামক একটি ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে,পরিত্রানের আশা সুদুর পরাহত।
ধর্মের অভাবে এটা হচ্ছে এই ধারনার উলটোটি মনে হয় আমার কাছে,তার প্রমান দেশে এখন ধর্মের প্রভাব বেড়ে চলছে, পাল্লা দিয়ে ভোগ-বিলাসের মাত্রাও প্রকট হচ্ছে। কারন ধর্ম-কর্ম পালন করে বিভিন্ন অপকর্মকে জায়েয করে নেওয়ার একটা বিধান মানুষের মনে কাজ করে,তাই অসুদুপায়ে অর্জিত অর্থের দ্বারা ভোগ-বিলাস ধর্ম প্রধান এলাকায় মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।
ভোগবাদের বিপরীতে গড়ে উঠা মিনিমালিজমও সমাধান নয় কারন দুটোই এক্সট্রিমিজমের উদাহরন আর এক্সট্রিমিজম কোন সমাধানের সহায়ক নয়।
আমার মনে হয় রাষ্ট্রেরই সেটা নির্ধারন করার দরকার। রাষ্ট্রের নিয়ম-নীতি বলে দিবে জনগনের প্রয়োজনটা কোন লেভেলে থাকা দরকার আর সেটা হবে একটি দেশের মংগলের কথা বিবেচনায় রেখে।
শাখা নির্ভানার এই লেখাটিতে বেশ চিন্তার খোরাক আছে। আলোচনা চলুক। (Y)
ভালো বলেছেন।
@ইয়াসিন,
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অপ্রয়োজনীয় পণ্যের একটা তালিকা তৈরি করলেই চোখ কপালে উঠে যাবে। তখন শর-শয্যায় শায়িত পৃথিবীর কষ্ট বুঝতে কারো কষ্ট হ’বার কথা নয়।
সময় পেলে চোখ বুলাতে পারেন, বোধকরি ভাল লাগবে।
http://www.facebook.com/yahoo#!/photo.php?fbid=10151128509563457&set=a.355850433456.154128.535613456&type=1&theater
ভেবেছিলাম কিছুদিনের জন্য নীরব হয়ে যাবো। তা আর থাকা হলো না।
@স্বপন মাঝি,
ধন্যবাদ স্বপন মাঝি ভাই। প্রবন্ধ আমার ভাল আসে না, তারপরেও লিখলাম। অনেক তথ্য দেয়া যেত আরো- আর বানানের সমস্যাতো আছেই। জিনিস-পত্র নিয়ে মানুষের অযথা লম্ফ জম্ফ দেখলে বড় বিরক্ত লাগে- লেখাটা সে কারনেই। আচ্ছা লিঙ্কের একটু বলবেন? অনেক চেষ্টা করেও ইউটিউবের লিঙ্কটা জ্যান্ত ধরে দিতে পারলাম না। প্রসেসটা কি? পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
@শাখা নির্ভানা,
মেঘে মেঘে বেলা তো কম হল না, অথচ সামান্য একটা লিঙ্ক দিতে গিয়েও ব্যর্থতার কাঁদাজলে। কি আর করা? চেষ্টা। তাই হোক।
লিঙ্ক
http://stephaniemcmillan.org/2012/11/01/economic-components/
@শাখা নির্ভানা,
পড়তে পেরেছিলেন কি? আলোচনায় অংশগ্রহণ করার খুব ইচ্ছে ছিল…।
@স্বপন মাঝি,
হ্যা, পড়লাম। বেশ সুন্দরভাবে প্রডাকশ নের সাথে লেবার, লাভ, অর্থনীতি ইত্যাদির সম্পর্ক সুন্দর ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ধন্যবাদ লিংটার জন্য। এফ্লুয়েঞ্জার প্রশমনের জন্য কাজ করা একটা দীর্ঘ মায়াদী কাজ। বাংলাদেশের উতপাদন, লেবার, প্রফিট, বাজার ব্যবস্থা এবং আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উপর ব্যপক গবেষনার প্রয়োজন।