লিবার্টারিয়ানিজম তথা স্বাধীনতাবাদ নিয়ে রীতিমত পড়াশোনা করার ফলস্বরূপ ভাগ্য হয়েছে একে খুব সংক্ষেপে তিন পাতার মধ্যে জানার। অস্ট্রিয়ান স্কুল অব ইকোনমিক্সের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ মারি নিউটন রথবার্ডের বই “ফর এ নিউ লিবার্টি: দ্য লিবার্টারিয়ান ম্যানিফেস্টোর” দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরুর সেই তিন পাতা। এটা সেই স্বাধীনতাবাদ, যা মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথা বলে। এটাকে সমাজতন্ত্রের এ-ক-দ-ম স-ম্পূ-র্ণ বিপরীত মতবাদ বলা চলে।
বেশ কিছুদিন সমাজতন্ত্র, স্বাধীনতাবাদ এগুলো নিয়ে পড়াশোনার পরে মোটামুটিভাবে এই রাজনৈতিক অবস্থানগুলোকে দেখার দুটো উপায় পেলাম। একটা হলো অর্থনীতি (তথা কার্যকারিতা) সংক্রান্ত। আরেকটি হলো নীতি-নৈতিকতা (তথা তত্ত্ব) সংক্রান্ত। সমাজতন্ত্রের তুলনায় স্বাধীনতাবাদের আবেদনটা অর্থনীতি ও মানব বিবর্তনের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে অনেকটাই বেশি। মানুষের এ যাবৎকালের সভ্যতার অগ্রগতির পেছনে মানুষের সম্পদ অর্জন, সেটাকে ব্যবহার করে উৎপাদন আর অন্যের সাথে সেটার বিনিময়ের রয়েছে সুবিশাল অবদান। এর বিপরীতে, মানুষের গোষ্ঠিগত বলপ্রয়োগমূলক প্রতিষ্ঠানের কারণে যুদ্ধ, গণহত্যা, গণদাসত্ব, উৎপাদনের ধ্বংস সাধন, দুর্ভিক্ষের উদাহরণ অঢেল। ম্যাট রিডলি ওনার নতুন গ্রন্থ “The Rational Optimist: How Porsperity Evolves“-এ বিস্তারিতভাবে সেটা দেখিয়েছেন। আলোচনা করেছেন মানুষের বিগত এক লক্ষ বছরের ইতিহাস নিয়ে। কীভাবে যেই সমাজের ভেতরেই মানুষ নিজের সম্পদ ব্যবহার করে উৎপাদনে দক্ষতা বাড়িয়েছে ও অন্যের সাথে বিনিময় করেছে, সেখানেই সভ্যতার দ্রুত বিবর্তন ঘটেছে, বিকাশ ঘটেছে। আর কীভাবে নেতা আর ধর্মযাজকদের মতো পরগাছা শ্রেণী সর্বদাই ধর্ম, রাজনীতি ইত্যাদি ব্যবহার করে একেবারে কোনো প্রকার উৎপাদন না করেও পরগাছার মতো অন্যের উৎপাদনের উপর জীবন নির্বাহই কেবল করে নি, ছড়িও ঘুরিয়েছে। গোষ্ঠিগত বলপ্রয়োগ নয়, নিজের কাজে দক্ষতা বৃদ্ধি আর বিনিময়ই যে সভ্যতার অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি, সেটা সেই গ্রন্থে উল্লেখ করা অজস্র ইতিহাস ও রেফারেন্সে স্পষ্ট। আর এ সবই স্বাধীনতাবাদীদের অর্থনৈতিক মুক্তির দাবির পক্ষে যায়। সে বই নিয়ে ধীরে ধীরে লেখার ইচ্ছে আছে।
তবে আজকের আগ্রহ অন্য একটি আবেদন নিয়ে, যেদিকটি দিয়ে সমাজতান্ত্রিক ধ্যান ধারণা স্বাধীনতাবাদের চেয়ে মানুষের মনে এ যাবৎকাল পর্যন্ত বেশিরভাগ স্থানই দখল করে আছে। আর তা হলো নীতি-নৈতিকতার আবেদন। ব্যবসা লোভের নামান্তর, রাষ্ট্র কল্যাণময়, গরীব দুঃখীদের রাষ্ট্র দেখভাল করবে, “লুটেরাদের” প্রতিহত করবে, এসব কথা খুব সহজে মানুষের মন কাড়ে। প্রশ্ন হলো – উৎপাদন ও বিনিময়ের যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সেটার যদি সভ্যতার অগ্রগতির পেছনে এতোটাই অবদান থাকে, তাহলে জনমনে এর বিরুদ্ধে এতোটা বিদ্বেষ কেনো? অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে মানুষের এতোটা আগ্রহ কেনো? ব্যবসার প্রতি মানুষের কেনো এতোটা বিদ্বেষ? এটা বলা চলে অনেকটা সে কারণে, যে কারণে বিজ্ঞান মানব-সভ্যতার অগ্রগতির পেছনের অন্যতম মূল চালিকাশক্তি হওয়া সত্ত্বেও কয়টা দিন আগে পর্যন্তও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ ছিলো বিজ্ঞানবিমুখ, এমন কি বিজ্ঞানবিরোধীও। তারপরেও গুটি কয়েক মানুষ বিজ্ঞানে অবদান রেখেছে। আর এর সুফল ভোগ করেছে তারাও যারা এর বিপক্ষে সোচ্চার ছিলো। একই কথা উৎপাদন ও বিনিময়ের অর্থনীতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। উৎপাদন ও বিনিময়ের অর্থনীতির বিরুদ্ধের মনোভাবকে folk economics বলা চলে, যেটার পেছনে বিবর্তনীয় মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে – মানব প্রজাতি তার সুবিশাল সময় যে হান্টার গ্যাদারার যুগে কাটিয়েছে, সেখানে উৎপাদন ও বিনিময় সামান্যই ছিলো। সেখানে মানুষ সম্পদ আহরণ করতো, সে তুলনায় তেমন কোনো উৎপাদনই করতো না। ফলে একের অর্জনে অন্যের সম্পদের বিয়োজনের ঘটনা অঢেল ঘটতো, অর্থাৎ সেই সমাজে zero-sum game প্রকটভাবে উপস্থিত ছিলো।
অন্যদিকে ব্যবসা, অর্থাৎ উৎপাদন ও বিনিময় zero-sum game নয়। এখানে অংশগ্রহণকারী দুইপক্ষেরই লাভ হবার সুযোগ থাকে। কিন্তু ব্যবসা যেহেতু মানব প্রজাতির খুব আধুনিক একটি ঘটনা, ফলে মানুষের মধ্যে সেই হান্টার গ্যাদারারদের zero-sum game সমাজের মনোভাব এখনো রয়ে গেছে। ব্যবসায়িক বিনিময়ে, যেমন পণ্য কেনায়, মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলো, হয় আমার লাভ হয়েছে নয়তো বিক্রেতার। সংক্ষেপে, ব্যবসা মানে শোষণ। ব্যবসা নিয়ে মানুষের বিদ্বেষের যে folk economics, এর স্বরূপ অনেকটা এমনই।
Folk ecomonics নিয়েও বিস্তারিত আরেকদিন লেখা যাবে। আমাদের আজকের আগ্রহ হলো স্বাধীনতাবাদের নৈতিক ভিত্তিটাকে জানা। স্বাধীনতাবাদের বক্তব্য সংক্ষেপে বোঝার চেষ্টা করা, অর্থনৈতিকভাবে এর কার্যকারিতার প্রসঙ্গ না এনেই। সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি তথা কার্যকারিতা নিয়ে কারও স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও সমাজতন্ত্রের নৈতিক ভিত্তি প্রায় সবার কাছেই স্পষ্ট। একটা কেন্দ্রীয় পরিকল্পক সকলের দেখভাল করবে, পরিকল্পিতভাবে কল্যাণের সর্বোচ্চীকরণ করবে। সমাজতন্ত্রের বিপরীত ঘরানার নৈতিক ভিত্তি সে তুলনায় অনেকটাই অস্পষ্ট। অবাধ পুঁজিবাদের নৈতিক ভিত্তি বা বক্তব্যও আমরা সমাজতন্ত্রীদের মুখ থেকে শুনেই অভ্যস্ত। তারা বলে বেড়াচ্ছে, পুঁজিবাদের নৈতিক ভিত্তি নাকি survival of the fittest, লোভ, লুট, শোষণ, কিংবা অনেকে বলছে, এটার নৈতিক ভিত্তি নাকি দুর্বলের elimination। এই ধ্যান ধারণাগুলোর পেছনেও সেই folk economics এর প্রভাবটাই প্রবল। স্বাধীনতাবাদকে পরিষ্কারভাবে জানার উদ্দেশ্যে তাই এর নৈতিক-ভিত্তি সংক্রান্ত রথবার্ডের রচনা নিচে অনুবাদ করলাম। সহজ, সরল, স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করে বর্ণনা করা হলো – স্বাধীনতাবাদ কী।
অনাক্রমণের নীতি (মূল: Murray Newton Rothbard, গ্রন্থ: For a New Liberty: The Libertarian Manifesto)
অনুবাদ:
পুরো স্বাধীনতাবাদের (libertarianism) মতবাদটাই দাঁড়িয়ে আছে একটা মাত্র নীতির উপর ভর করে – আর তা হলো অনাক্রমণের নীতি। এই নীতিটি হলো – কোনো মানুষ বা তার গোষ্ঠি অপর মানুষের শরীর কিংবা সম্পদে আক্রমণ করতে পারে না। এখানে আক্রমণ বলতে শারীরিক আঘাত ও বলপ্রয়োগের কথা ভাবা যেতে পারে।
তো একজন মানুষ যেহেতু অন্য মানুষকে আক্রমণ করতে পারে না, তাই অন্যের আঘাত, আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকাটা প্রত্যেকটা মানুষেরই একটা অখণ্ড অধিকার। ফলে একজন স্বাধীনতাবাদী সর্বদাই নাগরিক স্বাধীনতার সম্পূর্ণ পক্ষে অবস্থান করে। বাক-স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সভা সম্মেলন করার স্বাধীনতা, এসবই এর মধ্যে পড়ে। কারও শরীর বা সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এমন সব “অপরাধ”, যেমন – “অশ্লীলতা”, পর্নোগ্রাফি, অর্থের বিনিময়ে স্বেচ্ছা যৌনতা, সামাজিকভাবে বিচ্যুতিপূর্ণ যৌন আচরণ, এই সকলও নাগরিক স্বাধীনতারই অংশ। সত্যিকার অর্থে, স্বাধীনতাবাদীরা এসব কাজকে কোনো “অপরাধ” বলেই মনে করে না। কেবল অন্যের শরীর কিংবা সম্পদে আঘাত করাটাই তাদের মতবাদ অনুসারে “অপরাধ” বলে গণ্য, অন্য কোনো কিছু নয়।
স্বাধীনতাবাদীরা সকল বাধ্যতামূলক জনসেবা ও সেনাসেবাকে গণদাসত্ব বলে মনে করে। আর যুদ্ধের, বিশেষ করে আধুনিক যুদ্ধের, একমাত্র পরিণতি যেহেতু গণমৃত্যু, স্বাধীনতাবাদীরা তাই সকল যুদ্ধকেই সম্পূর্ণ অন্যায্য ও গণহত্যার শামিল বলে মনে করে।
লক্ষণীয় যে, এই অবস্থানগুলো আজকাল “বামপন্থী” অবস্থান বলেই বেশি পরিচিত।
অন্যদিকে, স্বাধীনতাবাদীরা মানুষের ব্যক্তিগত সম্পদের উপর আঘাতেরও বিরোধী। ফলে মানুষের সম্পদের অধিকারে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপেরও তারা সমান বিরোধী। তারা মুক্ত বাণিজ্যের উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপন, ভর্তুকি, নিষেধাজ্ঞা, এই সব যাবতীয় হস্তক্ষেপের বিপক্ষে। কারণটা খুব সাধারণ। অন্যের আক্রমণ ও লুণ্ঠন থেকে নিজের সম্পদকে রক্ষা করা প্রতিটা ব্যক্তির যদি অখণ্ড অধিকার হয়, তাহলে তার সম্পদ যাকে খুশি তাকে প্রদান করাটাও (যেমন, সম্প্রদান কিংবা উত্তরাধিকার) তার অধিকার। কিংবা রাষ্ট্রের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ ছাড়াই অন্যের সাথে নিজের সম্পদের বিনিময় করাটাও (স্বাধীন চুক্তি এবং মুক্ত বাণিজ্য) নিঃসন্দেহে তার একান্ত অধিকার। স্বাধীনতাবাদীরা ব্যক্তিগত সম্পদ ধারণ এবং তা মুক্তভাবে বিনিময়ের সম্পূর্ণ পক্ষে। একে বলা যায় “অবাধ পুঁজিবাদ”।
সম্পদ ও অর্থনীতির ব্যাপারে স্বাধীনতাবাদীদের এই অবস্থানগুলো আবার “চরম ডানপন্থী” হিসেবে পরিচিত।
তো কিছু বিষয়ে “বামপন্থী” ও অন্য কিছু বিষয়ে “ডানপন্থী” হবার মধ্যে কোনো অসঙ্গতি আছে বলে স্বাধীনতাবাদীরা মনে করে না। বরং, তারা তাদের এই অবস্থানকে ব্যক্তিমানুষের স্বাধীনতার পক্ষে বস্তুত একমাত্র সঙ্গত অবস্থান বলেই মনে করে। কেনোই বা নয়? কী করেই বা একজন বামপন্থী রাষ্ট্রের যুদ্ধজুলুম আর বাধ্যতামূলক সেবার বিরোধিতা করার পাশাপাশি আবার রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আর বাধ্যতামূলক কর আদায়ের জুলুমকে সমর্থনও করে? আবার ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও মুক্ত বাণিজ্যকে সমর্থন করা ডানপন্থীরাও বা কী করে একই সাথে যুদ্ধ আর বাধ্যতামূলক সেবাকেও সমর্থন করে? অন্যের অনাক্রমণাত্মক আচরণ ও কার্যকলাপকেই বা কীভাবে তারা স্রেফ নিজেদের কাছে অনৈতিক মনে হয় বলে আইন করে নিষিদ্ধ করে রাখতে চায়? আবার, সামরিক-শিল্প প্রতিষ্ঠানের পেছনে যে প্রকাণ্ড ভর্তুকি, অনুৎপাদনশীলতা আর অদক্ষতা, সেটাকে না দেখার ভাণ করে থেকে একজন ডানপন্থী কী করে নিজেকে মুক্ত বাজার অর্থনীতির পক্ষের বলে ভাবতে পারে?
স্বাধীনতাবাদীরা ব্যক্তির শরীর ও সম্পদের উপর সকল ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠিগত আক্রমণের বিরোধী। এবং স্বাধীনতাবাদীরা লক্ষ্য করে যে – একটা কেন্দ্রীয় ও প্রধান আক্রমণকারী চরিত্র সমস্ত ইতিহাস জুড়ে এবং বর্তমানকাল অবধি মানুষের এই সকল অধিকারকে লঙ্ঘন করে আসছে। আর সেই চরিত্রের নাম হলো – রাষ্ট্র। বাম, ডান ও মধ্য – সকল -পন্থীরাই মানুষের উপর কোনো না কোনো প্রকার হস্তক্ষেপমূলক কর্মকাণ্ডের নৈতিক অনুমোদন রাষ্ট্রকে দিয়ে আসছে। কিন্তু এগুলো এমন সব কর্মকাণ্ড, যা রাষ্ট্র বাদে সমাজের দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠি করলে নির্ঘাত সেটাকে আমরা অনৈতিক, অবৈধ ও অপরাধ বলে গণ্য করে থাকি। স্বাধীনতাবাদীরা রাষ্ট্রকেও সে ধরনের কোনো অনুমোদন দিতে অপারগ। মানুষের সাধারণ নৈতিক বিধানসমূহ সকল মানুষের উপরেই সমানভাবে প্রযোজ্য বলে তারা মনে করে। কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে বিশেষ ছাড় দিতে তারা রাজি নয়।
রাষ্ট্রকে যদি আমরা নগ্নচোখে দেখি, তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, এমন সব কাজ করা রাষ্ট্রের জন্যে সর্বজনীনভাবে অনুমোদিত, যা অন্য যে কেউ করলে এমন কি অস্বাধীনতাবাদীদের কাছে পর্যন্ত সেটা গর্হিত অপরাধ বলে গণ্য হতো। রাষ্ট্র মাঝে মাঝেই গণহত্যা সম্পাদন করে, আর তার নাম দেয় সে “যুদ্ধ” কিংবা “দুষ্টের দমন”। রাষ্ট্র জোরপূর্বক তার সেনাবাহিনীতে দাস নিয়োগ করে, আর তার নাম দেয় সে “বাধ্যতামূলক সেনাসেবা”। এবং রাষ্ট্র তার জীবন নির্বাহ করে জবরদস্তিমূলক চৌর্যবৃত্তি আর লুণ্ঠনের মাধ্যমে, আর তার নাম দেয় সে “কর আদায়”। স্বাধীনতাবাদীরা দৃঢ়চিত্তে বিশ্বাস করে যে – সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ অনুমোদন দেয় কি দেয় না তার উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রের এইসব কর্মকাণ্ডের মর্যাদা পাল্টে যায় না: জনগণ অনুমোদন দিক বা না দিক, যুদ্ধ সর্বদাই গণহত্যার শামিল, বাধ্যতামূলক সেবা হলো দাসত্ব, আর কর আদায় হলো স্রেফ ডাকাতি। স্বাধীনতাবাদীরা যেনো গল্পের সেই বালকটি, যে কিনা চোখে আঙুল দিয়ে বার বার দেখিয়ে দেয় যে রাজার গায়ে আসলে কোনো কাপড় নেই।
সমগ্র ইতিহাস জুড়ে সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীশ্রেণী রাজাকে নানা রকম ছদ্মপোশাক সরবরাহ করে এসেছে। অতীতে বুদ্ধিজীবীশ্রেণী জনগণকে বোঝাতো যে রাষ্ট্র কিংবা তার শাসকেরা হলো দৈব ক্ষমতাপ্রাপ্ত, কিংবা তারা নিজেরাই স্বয়ং ঈশ্বর। ফলে সাদা চোখে যা নির্ঘাত স্বৈরাচার, গণহত্যা, আর প্রকাণ্ড লুণ্ঠন বলে চিহ্ণিত হবার কথা, সেটাকে দৈবের সদাশয় ও রহস্যময় আচরণ বলে মানুষ ভেবে এসেছে। অধুনা শাসকশ্রেণীর দেবত্বে যেহেতু টান পড়েছে, “রাজার” অলৌকিক পোশাক যেহেতু জীর্ণ হয়ে এসেছে, রাষ্ট্রের পোষা বুদ্ধিজীবীরা রাজার জন্যে এবার তাই আরো সূক্ষ্ম ছুতোর নতুন জাল বুনে এনেছে। মানুষকে এখন তারা বোঝাচ্ছে – রাষ্ট্র যা কিছু করে “গণ কল্যাণের” জন্যে করে, “সর্বসাধারণের মঙ্গলের” জন্যে করে। তারা বলে – কর আদায় আর সেটা ব্যয়ের যে প্রক্রিয়া, সেটা এক রহস্যপূর্ণ “বর্ধনের” মাধ্যমে অর্থনীতিকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে। তারা বোঝায় – রাষ্ট্র যে সেবা প্রদান করে, সেটা কোনোভাবেই সরকারের বাইরে মানুষের স্বেচ্ছাকৃত যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে সাধন করা সম্ভব হতো না। স্বাধীনতাবাদীরা এই সকল দাবিকেই অস্বীকার করে। তারা এই সকল অজস্র ছুতোকেই রাষ্ট্রের শাসনের পক্ষে মানুষের সম্মতি আদায়ের প্রতারণাপূর্ণ উপায় বলে মনে করে। সে দৃঢ়চিত্তে বিশ্বাস করে যে রাষ্ট্রের এই সকল সেবাই মানুষের ব্যক্তিগত ও যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে আরো অনেক দক্ষতা ও নৈতিকতার সাথে প্রদান করা সম্ভব।
ফলে স্বাধীনতাবাদীদের মূল শিক্ষামূলক কাজ হলো রাষ্ট্রের অভাগা শিকারের সামনে রাষ্ট্রের দেবত্ব মোচন ও রহস্য উন্মোচন। তার দায়িত্ব হলে বার বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যে কেবল “রাজারই” যে পরনে কাপড় নেই তা নয়, এমন কি “গণতান্ত্রিক” রাষ্ট্রের পরনেও আসলে কোনোই কাপড় নেই। সকল রাষ্ট্র তার জীবিক নির্বাহ করে মানুষের উপর শোষণমূলক বিধি জারি করে। সেই সকল বিধিই নৈর্ব্যক্তিক প্রয়োজনের বিপরীত যাকে বলে – ঠিক তা। রাষ্ট্র ও তার করারোপ বিধি মানুষের মধ্যে – শাসকশ্রেণী আর শাসিতশ্রেণী – এমন একটা শ্রেণীবিভাজন তৈরি করতে বাধ্য। আর এটা বেফাঁস করাটাই স্বাধীনতাবাদীদের সংগ্রাম। রাষ্ট্রের পোষা বুদ্ধিজীবীদের কাজই হলো রাষ্ট্রকে সমর্থন যোগানো, রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা রহস্যের জাল বুনে মানুষকে রাষ্ট্রের শাসন মেনে নিতে প্রণোদনা দেওয়া। এর বিনিময়ে এই বুদ্ধিজীবীরা রাষ্ট্রের অর্থ ও ক্ষমতার একটা ভাগ পায় – যেটা কিনা আবার জনগণের থেকে রাষ্ট্রের শাসকেরা মূলত লুণ্ঠন করেই এনেছে। আর এগুলো বেফাঁস করাটাই স্বাধীনতাবাদীদের কাজ।
যেমন ধরুন, কর আদায়ের চর্চাটি। রাষ্ট্রবাদীরা একে এক রকম “স্বেচ্ছামূলক” বলে দাবি করে এসেছে। কেউ সত্যি যদি ভেবে বসেন যে কর আদায়ের ব্যাপারটি এক ধরনের স্বেচ্ছামূলক ব্যাপার, তাকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি – একবার কর না দিয়ে দেখুন কী হয়! রাষ্ট্রের কর আদায়ের চর্চাকে বিশ্লেষণ করলে আমরা একটা অদ্ভুত জিনিস দেখতে পাই। সমাজের সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাষ্ট্রই একমাত্র যা বলপূর্বক ও সহিংসতার মাধ্যমে তার আয় উপার্জন করে। সমাজের অন্য সবাইকে উপার্জন করতে হয় অন্যের স্বেচ্ছাদান গ্রহণ (আশ্রম, দাতব্য সংস্থা, দাবা সমিতি) কিংবা পণ্য ও সেবা বিক্রয়ের মাধ্যমে, যা কিনা ভোক্তা স্বেচ্ছায় তার থেকে খরিদ করে। রাষ্ট্র ছাড়া অন্য যে কেউ কর আদায় করতে গেলে সেটাকে নির্ঘাতভাবেই বলপ্রয়োগ ও ছদ্মাবৃত্ত দস্যুতা হিসেবে চিহ্ণিত করা হতো। কিন্তু এইসব কার্যকলাপকে রাষ্ট্রপ্রভু তার রহস্যময় সাজপোশাকের আড়ালে এমনভাবে অবগুণ্ঠিত করে রেখেছে যে কেবল স্বাধীনতাবাদীদের পক্ষেই সম্ভব হয় কর আদায়কে তার প্রাপ্য অভিধাটি দেওয়া, আর সেটা হলো এই যে – কর আদায় স্রেফ একটা সংগঠিত ও আইনসিদ্ধ গণলুণ্ঠন।
(সমাপ্ত)
@রূপম (ধ্রুব),
তাহলে ইভ টিজিংও কি অপরাধ বলে গন্য নয়! নাকি বুঝতে ভুল হল আমার । 😕
@অর্ফিউস,
এখানে সমকাম, পায়ুকাম ইত্যাদি যৌন আচরণের কথা বোঝানো হয়েছে, যা সমাজে বিচ্যুতিপূর্ণ হিসাবে নির্ণীত হতে পারে, তথাপি দুজন স্বেচ্ছায় তাতে লিপ্ত হলে তা স্বাধীনতাবাদীদের কাছে অপরাধ বলে গণ্য নয়। তার বদলে যেসব কাজে মানুষের শরীর ও সম্পদের উপর আক্রমণ ঘটে বা তেমনটার হুমকি ব্যবহার করা হয়, তাকে স্বাধীনতাবাদীরা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে।
@রূপম (ধ্রুব), ওহ আচ্ছা ধন্যবাদ। তাহলে ইভটিজিং এখানে শারীরিক বা সম্পদের উপর আঘাতের ভিতরেই গন্য করা হচ্ছে? তাহলে ঠিক আছে। 🙂
@অর্ফিউস,
পড়ুন ইভটিজিং এখানে শারীরিক বা সম্পদের উপর আঘাতের হুমকির ভিতরেই গন্য করা হচ্ছে
@রূপম,
আমার মতে, যেকোন রাজনৈতিক অর্ডার প্রচলিত হওয়ার মানেই ভায়োলেন্স মনোপোলাইজড হয়েছে। মানে এটাই তার সংজ্ঞা। “রাজনৈতিক ক্ষমতা”-র অর্থই তাই। সেই ব্যবস্থা টোটালিটারিয়ানও হতে পারে, লিবারটারিয়ানও হতে পারে। মানুষের মধ্যে ফান্ডামেন্টাল মতবিরোধ সম্ভব, যার একমাত্র সমাধান অস্ত্র।
কাজেই ভায়োলেন্সের মনোপলি আর অন্য জিনিসের মনোপলি এক না।
@রৌরব,
এক হওয়া না হওয়া নিয়ে তো আপত্তি না। মনোপলি ইটসেল্ফ নিয়ে আপত্তি।
@রূপম (ধ্রুব),
যেহেতু (আমার কথা যদি ঠিক হয়) ভায়োলেন্সের মনোপলি রাজনৈতিক অর্ডারের সংজ্ঞার অংশ, কাজেই ওটাকে বাদ দিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবী করা সম্ভব না।
Apriori পৃথিবীতে যেকোন ব্যবস্থাই প্রচলিত হতে পারে। এতরকম ব্যবস্থার মধ্যে একটা বিশেষ ব্যবস্থা প্রচলিত কেন? ভায়োলেন্স (ইম্প্লিসিট হতে পারে)।
@রৌরব,
আপনার সংজ্ঞায় খাটে না, তাই বাস্তবে সম্ভব না?
“আছে” আর “হতে পারের” মধ্যে গুলাচ্ছেন না? কী আছে, সেটা তো আর কী হতে পারে কে নাকচ করে না।
@রূপম (ধ্রুব),
ওটাই বাস্তবতা সম্বন্ধে আমার দাবি।
@রৌরব,
দ্যেন, ডিসাগ্রি।
@রৌরব,
তাহলে আপনার মতে অনাক্রমণের নীতি কোনো রাজনৈতিক অর্ডার নয়?
নট অলয়েজ।
@রূপম (ধ্রুব),
না, ওটা তো অর্ডার নয়। এমন অর্ডার থাকতে পারে, যার ফ্রেমওয়ার্কের ভেতরে অনাক্রমনের নীতি প্রচলিত।
“আক্রমণের নীতি”-র বদলে “অনাক্রমনের নীতি” একটা সমাজে প্রচলিত কেন? আমার মতে এর উত্তর গায়ের জোর (ইমপ্লিসিট হতে পারে)।
@রৌরব,
অনাক্রমণের নীতি প্রচলিত নাকি? যেরকম “অনাক্রমণের নীতি” প্রচলিত আছে, সেটার মধ্যে তো যুক্তরাষ্ট্রও পড়ছে, স্টালিনের সোভিয়েত ইউনিয়নও পড়ছে। কোনোটাতেই ক্ষমতার মনোপলি নেওয়া প্রতিষ্ঠানটির বাইরে আর কারো পক্ষে অন্যের শরীর ও সম্পদে আক্রমণ করাটাকে নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মনে করা হয় না। আপনার এই ব্যাখ্যাটা ক্ষমতার মনোপলিঅলার গণ্ডী মিনিমাইজ করার পক্ষে তো কিছুই বলতে পারছে না। বলতে হলে রাষ্ট্রের তথা ক্ষমতার মনোপলির evil-ত্বের প্রসঙ্গে যেতে হবে। আগে এটা স্বীকার করতে হবে যে সুযোগ থাকলে ইন প্রিন্সিপল কারোই অনাক্রমণের নীতি লঙ্ঘনের বিশেষ ম্যান্ডেট থাকা উচিত না। স্বীকার করতে হবে, মনোপলি সুবিধের জিনিস নয়। আপনার ব্যাখ্যায় মনোপলির মর্যাদা প্রায় উল্টো দাঁড়াচ্ছে। মনোপলির মধ্যে আপনি একধরনের essentiality দেখতে পাচ্ছেন। যেটা দেখার আমি কোনো কারণ দেখি না। প্রায়োগিকতার খাতিরে কোনো প্রকারের মনোপলির অভাবে একটা অনাক্রমণের নীতিসিদ্ধ সমাজ গঠনের বাস্তবতা নিয়ে স্কেপটিক হওয়া যায়। কিন্তু এটা envisage করতে না পারার অর্থ এই নয় যে এটা অসম্ভব। মনোপলির necessity-টা আমাদের টপ-ডাউন ডিজাইনধর্মী চিন্তার সীমাবদ্ধতায় হয়তো প্রোথিত, but not necessarily in reality.
@রূপম (ধ্রুব),
না প্রচলিত না, প্রচলিত হলে গায়ের জোরেই হবে, সেটাই শুধু বলছি।
এটা আমি স্বীকার করছি না। তার কারণ আমি উপরে বলেছি, বাস্তবতা সম্বন্ধে আমার দাবি হল, “আক্রমণের” ভয় ছাড়া কোন পলিটিকাল অর্ডার সম্ভব না।
তা ঠিক। কারণ সেটা নিয়ে আমি আলোচনা করছি না। আমি নিজেই লিখেছি যে আমার ফ্রেমওয়ার্কে লিবারটারিয়ান রাষ্ট্রও পড়ে, টোটালিটারিয়ান রাষ্ট্রও পড়ে। আমি রাজনীতির বাস্তবতার ব্যাপারে একটা claim করছি।
কোন তত্বের অংশ হওয়া উচিত, কোনটা প্রায়োগিক, সেটা নিয়ে হয়ত মতভেদ আছে। আমি গায়ের জোর ছাড়া পলিটিকাল অর্ডারের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান। ওটা আমার তত্বেরই অংশ।
@রৌরব,
বাস্তবতা সংক্রান্ত আপনার এই তত্ত্বে আমি disagree করি।
ইন প্রিন্সিপল আমাদের কী স্বীকার করা উচিত, সেটার সাথে বাস্তবতা সংক্রান্ত দাবি প্রাসঙ্গিক করাটা আমার কাছে is-ought problem এ পড়ার লক্ষণ মনে হলো।
এটা বরং একটু বেটার লাগলো।
@রূপম (ধ্রুব),
is-ought নিয়ে পড়তে গেলে রাত ফুরিয়ে যাবে… 😛 …আমার মতে ought ও একটা is..
ইন প্রিন্সিপলও তো বাস্তবের একটা মডেলের ওপর ভিত্তি করে নাকি? নইলে তো যেকোন কিছুই ইন প্রিন্সিপল দাবী করা যায়। আমাদের পার্থক্য হল আমি ভায়োলেন্স সংক্রান্ত একটা পস্টুলেট প্রিন্সিপলের অংশ হিসেবে নিয়েছি, যে ব্যাপারে আপনি একমত নন।
@রৌরব,
বাই দ্য ওয়ে আপনার রাজনৈতিক অর্ডারের সংজ্ঞা অনাক্রমণের নীতির সাথে ইন কনফ্লিক্ট। আপনার রাজনৈতিক অর্ডারের সংজ্ঞাসিদ্ধ করার জন্যে অনাক্রমণের নীতিতে ব্যতিক্রম ঢুকিয়ে আপনি সেটা বলবৎ করছেন। আপনার এই ফ্রেইমওয়ার্ককে গ্রহণ করাটা বাস্তবিক বা তাত্ত্বিক কোনোভাবেই প্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে না। আপনার কথার সারসংক্ষেপ হলো বিশুদ্ধ অনাক্রমণ নীতি বাস্তবে প্রযোজ্য নয়। সেভাবে বললে সেটা নিয়ে তর্ক করা যায়। এটার জন্যে রাজনৈতিক অর্ডারের ফ্রেইমওয়ার্কের ঝালরঝুলর বাড়তি।
@রৌরব,
আপনার এই ডিটার্মিনিজমের কারণ কী? কেনো একটা (ধরি isolated) সমাজে সবাই অনাক্রমণের নীতিতে একমত হয়ে অনাক্রমণের নীতি বলবৎ করতে পারে না?
Spontaneous order of anarchism আপনি হয়তো উড়িয়ে দিচ্ছেন। আমি স্কেপ্টিক আছি। ফলে সম্ভাব্যতার পথ খোলা রাখতেও রাজি আছি।
@রূপম (ধ্রুব),
আমার determinism-ও tentative, প্রমাণ অন্যরকম মিললে মত পরিবর্তন করতে আপত্তি নেই।
হিউম্যান অ্যাফেয়ার্সে তো কঠিন প্রমাণ কিছুরই নেই, সবই কম-বেশি অনুমান।
@রৌরব,
যদিও ভার্চুয়াল, তবু ইন্টারনেটকে একটা উদাহরণ হিসেবে নিতে পারেন। ক্ষমতার মনোপলির অভাবে কীভাবে একটা spontaneous order তৈরি হয়েছে। আপনি এখানেও কি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অপরিহার্য ভাববেন? যদিও রাষ্ট্রেরই পেটে তৈরি, এটা এমন পর্যায় চলে গেছে যে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এখানে আর গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। কিন্তু মানুষের বটমআপ বিনিময় ও ব্যবসা এখানে প্রায় ইনটিগ্রাল। সত্যিকার অর্থে, ইনটারনেট পরিকল্পিত সমাজ ও অর্থনীতিকে অবসলিট করতে বসেছে। এখানে অচেনা মানুষের দেয়া ভালো আইডিয়া, পণ্য, সেবা পুরষ্কৃত হচ্ছে। ফ্রড চিহ্ণিত হচ্ছে কোনো একক কর্তৃত্বময়ের অস্তিত্ব ছাড়াই।
রাষ্ট্রের পক্ষে ebay ছিলো কল্পনাতীত। এটা ব্যবহার করে আমি ভারত থেকে বই আনিয়েছি। গ্যারান্টি কী যে সে টাকাটা মেরে দিতো না? কোনো গ্যারান্টি নেই কিন্তু! ফিডব্যাকের রেট্রোস্পেক্টিভ সিস্টেম ছাড়া। সেটার উপর আস্থা করেই মানুষ তারপরেও বিনিময় করছে এবং মোটের উপর ফিডব্যাকের এই সিস্টেমটা একটা spontaneous order-ই কিন্তু তৈরি করেছে। ফ্রডের রাজত্ব তৈরি হয় নি। সেখানে মানুষ ব্যবসা করছে সরকারী হস্তক্ষেপের প্রয়োজন ছাড়াই। নৈরাজ্যে কীভাবে শৃঙ্খলা তৈরি হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, এইসবেরই সংক্ষিপ্ত উত্তর এই রেট্রোস্পেক্টিভ ফিডব্যাক সিস্টেমের equilibrium-এ নিহিত।
চমৎকার লেখা। ততোধিক চমৎকার লাগল ধ্রুব, রৌরব, অপার্থিবের আলোচনা দেখে।
রাষ্ট্রের ব্যাপারটা এতোটা হেলা ফেলার নয় কিন্তু। এই যে সিডর, স্যাণ্ডি এগুলো দুর্বিপাকে বোঝা যায়, ফেডারেল বাজেট থাকা রাষ্ট্র বলে কিছু থাকাটা কতটা জরুরী। ক্রিস ক্রিস্টির মতো পাঁড় রিপাবলিকান পর্যন্ত ফেডারেল বাজেটের জন্য কান্নাকাটি শুরু করল, ওবামা রাষ্ট্রীয় বাজেট থেকে সেই স্টেটে পাঠানোর পর এবং নিজ উদ্যোগে সাহায্য করার নিশ্চয়তা দেয়ার ক্রিস্টি কেমন করে সেটার প্রশংসা করেছেন সেটা বোধ হয় দেখেছেন। ধরুন, রাষ্ট্র যদি না থাকে, ফেডারেল বাজেট বলে যদি কিছু না থাকে, তাহলে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো কি এই দুর্যোগের মোকাবেলা করবে? ব্যবসায়ী স্বার্থসিদ্ধির সাপেক্ষে এ ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজের একটা কনফ্লিকট থেকেই যাবে।
শুধু তাই না, অপার্থিবের প্রশ্নটা – রাষ্ট্রীয় কাঠামো ছাড়া “অবাধ পুঁজিবাদ” এ সবার প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে কে? – এ ব্যাপারটা কিন্তু ভেবে দেখার মত। শুধু “অবাধ পুঁজিবাদ” এর ক্ষেত্রে নয়, যে কোন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেই এখন সংখ্যালঘু মানুষেরা রাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয়। রাষ্ট্র না থাকলে ধরুন শক্তিশালী কিছু গ্রুপ একজোট হয়ে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার শুরু করতে পারে। তাদের ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা কিভাবে পাওয়া যাবে? আমি বলছি না, রাষ্ট্রই এর সমাধান, কিন্তু প্র্যাক্টিকালিটিটা কি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব?
তবে আমি শতভাগ লিবার্টেরিয়ান না হলেও এর ফিলোসফির অনেক কিছুই আমার খুব পছন্দের। রন পল নির্বাচনে দা৬রালে আমি আগ্রহ নিয়েই তার ডিবেট দেখি। যদিও তাকে বহুক্ষেত্রেই কেবল আদর্শিক বলে মনে হয়, আর তার চার্চের উপর আস্থা, সমকামীদের অধিকার না দেয়ার কিংবা এবোরশন নিয়ে প্লটিখাওয়া গুলোকে লিবার্টেরিয়ান ফিলোসফি দিয়ে কি ভাবে জায়েজ করা যায় তাও বুঝি না।
ম্যাট রিডলীর এই বইটা অনেকদিন ধরেই পড়ব পড়ব করেও পড়া হয়নি। ম্যাট রিডলী হার্ডকোর সায়েন্স ছেড়ে অর্থনীতি নিয়ে লিখেছেন এ ব্যাপারটা কৌতুহলোদ্দীপক। বেরুনোর পর থেকেই ভাবছিলাম বইটা পড়ব। আপনার লেখার পর সেটার চাহিদা আর বেড়ে গেল মনে হচ্ছে।
লেখাটা দিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটানোর জন্যই আপনার ধন্যবাদ পাওনা।
@অভিজিৎ,
এই লেখার পর অজস্র প্রশ্ন আসাটাই কাম্য। এটা এ নিয়ে তা আরো লেখার প্রণোদনাই যোগায়। 🙂
রন পলকে আমারও ভালোই লাগে। কিন্তু লিবার্টারিয়ান হবার পাশাপাশি আবার পলিটিশিয়ান বলে পলিটিক্সের অনেক কাঠামোকে যে তার মেনে নিতে হচ্ছে, সেটা একটা কন্ট্রাডিকশন উৎপন্ন করে। যেমন, গে রাইটস বা অ্যাবরশন প্রশ্নে সে বলছে যে স্টেট এ ব্যাপারে ডিসিশন নিবে। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী ঠিক আছে। কিন্তু সেটা তো একমাত্র কাম্য সমাধান নয়। লিবার্টারিয়ানরা তো বলছে অনাক্রমণাত্মক কোনো আচরণ বা কর্মকাণ্ডই অপরাধ নয়। সেটা তিনি জোর গলায় বলতে পারছেন না, যেভাবে তিনি জোর গলায় মারিজুয়ানা সহ সকল ড্রাগ্স আর প্রস্টিটিউশন লিগ্যাল করার কথা বলছেন। উনি খ্রিস্টান ধর্ম মানেন। কিন্তু চার্চের উপর আস্থাটা কতোটা ওনার রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে সেটা নিশ্চিত নই। উনি যে চ্যারিটিতে চার্চের অবদানের কথা বলেন, সেটা নিয়ে আমি কোনো দ্বিমত দেখি না। স্টেট আর চার্চ আলাদা হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ম নিয়ে আমি আর তেমন সমস্যা দেখি না। এর বেশি করতে গেলে চার্চ নিষিদ্ধ করতে যেতে হবে। চার্চ থাকলে তারা স্বেচ্ছায় চ্যারিটিও করবে, বাসায় মানুষকে বাইবেলের গল্পও পড়াবে। সেগুলো না করতে দেওয়ার মোরাল গ্রাউন্ড দেখি না।
ম্যাট রিডলির সেই অর্থনীতি কিন্তু বিগত এক লক্ষ বছরে মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসকে বেইজ করেই। ফলে ওনার সায়েন্সের প্রতি সেই বেন্ট থেকে বঞ্চিত হবেন না। আমার কাছে এটা পুরোদস্তুর বিজ্ঞান বই-ই মনে হয়েছে। পড়ে আপনার ভালো লাগবে সেটা আমি একদম নিশ্চিত। বাড়তি পাওনা এই যে, অর্থনীতি সম্পর্কে বিবর্তনীয় একটা পারস্পেকটিভ পাবেন। টপ-ডাউন ডিজাইন মানুষের প্রবৃত্তি। কিন্তু অর্থনীতি একটা বটম-আপ বিবর্তন, টপ-ডাউন ডিজাইন নয়। মাইকেল শারমারেরও এই নিয়ে একটা লেখা আছে দেখলাম। সমাজতন্ত্রের পরিকল্পিত অর্থনীতি কেনো বাউন্ড টু ফেইল, এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়াটা আমাদের জরুরি।
@রূপম (ধ্রুব),
রাষ্ট্রীয় কাঠামো ছাড়া “অবাধ পুঁজিবাদ” এ সবার প্রতি ন্যয়বিচার নিশ্চিত করবে কে? “অবাধ পুঁজিবাদ” বা Laissez-faire কে খেলার সাথে তুলনা করা যায়। রেফারী বা আমপায়ারের অবর্তমানে নিয়ম পালন কে বলবৎ করবে? বা নিয়ম তৈরী বা সংস্কার (নিয়ম তো ধ্রূব থাকতে পারে না) করবে বা নিয়ম ভঙ্গের জন্য শাস্তি দেবে? জবাবদিহিত্ব কিভাবে নিশ্চিত হবে? রাষ্ট্রের অবর্তমানেও অবাধ বানিজ্যের ফলে কেউ বেশী শক্তিশালী হবে, এবং এক পর্যায়ে শক্তিশালীরা মিলে একটা সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীও গঠন করতে পারে, নিয়মকে তাদের সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার করতে বিনা জবাব্দিহিত্বে। এগুলি কিভাবে রাষ্ট্রহীন দেশে সামলানো যায় এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। আমেরিকার সাব প্রাইম ক্রাইসিস তো এই অতিমাত্রায় স্বাধীনতা বা নিয়্মহীনতার (Deregulation) এর কারণেই হয়েছিল। অবশ্য সেটা ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের জন্য প্রজোয্য যদিও। রাষ্ট্রহীন দেশে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থাও থাকবে না ধরে নিচ্ছি। তবুও রেগুলেশান ছাড়া তো কোন বিকল্প নেই যে কোন ব্যবস্থায়। রাষ্ট্র অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে যুদ্ধে যায় আর বড় বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখে সেটা ঠিকই। কিন্তু এটা সমাধান করতে রাষ্ট্রকেই বাদ দিলে মাথা ব্যাথা সারাতে মাথা কেটে দেয়ার মত ব্যাপার হয় না কি। তাহলে সমাধান কি? একটা পদক্ষেপ হবে নির্বাচনে ব্যবসায় গোষ্ঠীর টাকা ঢালা একেবারে নিষিদ্ধ করা। আর কি কি?
@অপার্থিব,
রেগুলেশনের প্রয়োজন আছে কিন্ত সেটা রাষ্ট্রকেই কেন করতে হবে?
কমিউনিটি বা মার্কেট রেগুলেশনও ত চলতে পারে?
যেমন ধরা যাক ইল্যান্স বা ওডেক্সের মতন অনলাইন মার্কেট প্লেস-যেখানে কোন দেশের আইন চলে না যেহেতু পুরো ব্যাবসাটাই আন্তর্জাতিক। এখানে টাকা এস্ক্রো করে মার্কেট -ডিসপিউট দেখে মার্কেট। সব রুলস এবং রেগুলেশন মার্কেটের তৈরী। এমন অনেক মার্কেট আছে। যার যা রুল পছন্দ সে সেই মার্কেটে খেলে। নিজের আইনে। মার্কেটের আইনে অসন্তুষ্ট হলে লোকে চলে যায়। অন্য মার্কেটে।
সুতরাং কমিউনিটি ভিত্তিক বা মার্কেট ভিত্তিক রেগুলেশন সম্ভব যা রাষ্ট্রইয় না এবং তা এখনি বেশ চালু।
@বিপ্লব পাল,
অনলাইন ব্যবসা তো একটা দেশের সার্বিক ব্যবসা বা অর্থনীতির মডেল নয়। তাছাড়া এই “মার্কেট” যা নাকি রেগুলেশন বানাবে সেটা একটু ধোঁয়াটে ও অ্যাড হক মনে হচ্ছে। এর সুস্পষ্ট ধারণা, গঠনপ্রকৃতি জানা দরকার, শুধু অনলাইন নয়, সব ক্ষেত্রেই। আর ব্যবসা বানিজ্য তো সব নয়। আধুনিক যুগে অনেক কিছুই লাগে ব্যবসা ছাড়া। তাছাড়া এখন আন্তর্জাতিক বানিজ্য একটা বাস্তবতা। চীন থেকে অস্বাস্থ্যকর খেলনা বা খাদ্যদ্রব্য নজরদারী কে করবে? পুলিশ, আদালত, বিচার ব্যবস্থা সবই কি কমিউনিটি ভিত্তিক হবে লিবার্টারিয়ান দেশে? রাষ্ট্রও ত একটা কমিউনিটি ভিত্তিক ব্যবস্থাই। প্রকৃত গণতন্ত্রে (প্রতিনিধিত্বম্মূলক ও বড় ব্যবসায়ীদের প্রভাবমুক্ত) সেটাই তো হবার কথা? করের ব্যাপারটা জটিল সেটা পৃথক আলোচনার দাবী রাখে। ধরুন নির্বাচনে একজন লিবার্টারিয়ান ক্যান্ডীডেট দাঁড়ালেন। তাকে তো এইসব প্রশণের উত্তর আগে থেকেই জানিয়ে দিতে হবে। “মার্কেট” করবে এরকম ঘোলা কথায় আশ্বস্ত হয়ে গনতন্ত্র থেকে লিবার্টারিয়ানবাদে উত্তরণ করতে কজন রাজী হবে?
@অপার্থিব,
পার্থক্য এই যে, রাষ্ট্র বলপ্রয়োগমূলক ও মনোপলি। লক্ষ কোটি মানুষের একটা কমিউনিটি হয় না, বিভিন্ন বিষয়ে অজস্র কমিউনিটি হয়।
সরকার নেই তো নির্বাচন থাকবে কেনো?
@অপার্থিব,
ঠিক। বইটার সবগুলো অধ্যায় অনুবাদ করা যায়। সেখানে একটা রূপরেখা দেওয়া আছে। সংক্ষেপে, রাষ্ট্র যা কিছুতে মনোপলি ভোগ করে, সেগুলো ঐচ্ছিক ও একাধিক সংস্থার সেবায় পরিণত করা। প্রতিটি সেবা একাধিক প্রতিষ্ঠান অফার করবে। আপনি টাকা দিয়ে সেই সার্ভিস নেবেন। আপনি যদি মনে করেন সেই সেবা ছাড়াও আপনার চলবে, আপনি টাকা দিবেন না। সেখানে কেউ আপনার থেকে জোর করে টাকা নিলে সেটাকে নতুন মোরাল কোডে অন্যায় হিসেবেই দেখা হবে। কিন্তু রাষ্ট্র আমাদের থেকে জোর করে যে কর নেয়, সেটা বর্তমান মোরাল কোডে অন্যায় হিসেবে দেখা হয় না। স্বাধীনতাবাদ তথা অনাক্রমণের নীতি একটা অর্থরাজনৈতিক মোরাল কোড। এবং no wonder, মানুষ যতোদিন মনে করবে যে একটা প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতার মনোপলি থাকার দরকার আছে, কিছু সেবা কেবল একটা প্রতিষ্ঠানই দেওয়ার যোগ্য, একটা প্রতিষ্ঠান যে কারো উপর জোর খাটাতে পারে, ততোদিন এই মোরাল কোড বলবৎ হবে না। এটার প্রস্তাব ধর্মহীন পৃথিবীর মতোই প্রায় ইউটোপিয়া। তবে টেকনলজি, ইনটারনেট ও নেটওয়ার্কের টরেন্টে স্টেট নামক প্রতিষ্ঠানটি ক্রমশই স্থবির প্রতিপন্ন হচ্ছে। ইন্টারনেটে স্বাধীনতাবাদ বস্তুত কায়েম হয়ে গেছে। একই ব্যক্তি যে সাধারণ জীবনে রাষ্ট্র ছাড়া চলাকে অসম্ভব জ্ঞান করে, সেই ব্যক্তিই দেখুন ইনটারনেটে রাষ্ট্রের সামান্যতম হস্তক্ষেপকেও সন্দেহের চোখে, অপছন্দের চোখে দেখে। ফলে পরিবর্তন কামনা করার এখন সঠিক সময়।
greed এর কারণে সাব প্রাইম ক্রাইসিস হয়েছে, এরকমই একটা মিথ এটা। আপনার এই দাবির পেছনে রেফারেন্স থাকলে দিতে পারেন। অস্ট্রিয়ান স্কুল এই ক্রাইসিস ২০০১ সন থেকে প্রেডিক্ট করে আসছিলো। তাদের বিশ্লেষণে এই ক্রাইসিসে সরকারের নিয়ন্ত্রণের কনট্রিবিউশন রীতিমতো স্পষ্ট। নিয়ন্ত্রণগুলো মধ্যে আছে – সরকারের ফেডারেল রিজার্ভ দিয়ে নিয়ন্ত্রিতভাবে ইন্টারেস্ট কমানো, কংগ্রেসের প্রেসার দিয়ে এনটার্প্রাইজগুলোকে মর্টগেজ কিনতে বাধ্য করানো, বা Community Reinvestment Act ব্যবহার করে ব্যাংকগুলোকে চাপ দিয়ে স্বল্প আয়ের মানুষদের বাড়ির জন্যে ঋণ দিতে বাধ্য করানো। সরকার জোর করে ঠেলে ব্যাংক আর মর্টগেজের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়ির ব্যবসায় পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়ে কাড়িকাড়ি টাকা হাওয়া থেকে প্রিন্ট করেছে এই লোনের বন্দোবস্ত করার জন্যে। এগুলো অতিমাত্রায় স্বাধীনতা আর নিয়মহীনতার উদাহরণ?
ওবামা নিজে শতের উপর অঋণযোগ্যকে সাবপ্রাইম ঋণ দেওয়ার জন্যে ব্যাংকগুলোকে চাপ দিয়েছেন। আর আজকে উনি বলছেন, অনিয়ন্ত্রণ আর লোভ ছিলো সাবপ্রাইম ক্রাইসিসের পেছনে কারণ? এইসব মিথের সবসময়েই খুব চল।
@রূপম (ধ্রুব),
http://en.wikipedia.org/wiki/Financial_Crisis_Inquiry_Commission
রিপোর্টে বিনিয়ন্ত্রীকরণকে ঐতিহাসিকভাবে একটা গুরুত্বপূর্ণ কারন(একমাত্র নয়) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষতঃ
“The enactment of legislation in 2000 to ban the regulation by both the federal and state governments of over-the-counter (OTC) derivatives was a key turning point in the march toward the financial crisis”
তবে হ্যাঁ, সরলীকৃতভাবে দেখা উচিত নয়, অনেক কিছুই ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে
আর আপনার আরেক মন্তব্যে/প্রশ্নের উত্তরে এখানেই বলছি বাড়তি পোস্ট না দিয়েঃ
গণতন্ত্র থেকে লিবার্টারিয়ানতন্ত্রে যেতে হলে নির্বাচন ছাড়া কিভাবে সম্ভব? সশস্ত্র সংগ্রাম/বিপ্লবের মাধ্যমে? 🙂
@অপার্থিব,
সেটা অনাক্রমণ নীতির বিপরীতে যাবে।
এর উত্তরে উপরেই বলেছি – 🙂
আর ফেডারেল রিজার্ভকে বহাল রেখে এই রেগুলেশনের তর্ক একটা শাঁখের করাত। ব্যাংকিং সিস্টেম হেভিলি রেগুলেটেড। কিন্তু সমস্যার গোঁড়া ফেডারেল রিজার্ভে। এটাকে রেখে deregulation-ও সমস্যাই তৈরি করবে, কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুক্ত বাজারের আইন মানে না। সে রিস্ককে রিওয়ার্ডেড করে, ফেইল্ড রিস্ককেও। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আওতায় হেভি রেগুলেশন অবধারিত। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতোটাই stupid চরিত্রের প্রতিষ্ঠান যে এমন কি কতোটুকু রেগুলেশন ইনাফ, সেটারই তল খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। যদি প্রোগ্রামিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে দেখবেন কখনো কখনো জটিল একটা সিস্টেমকে আন্দাজের উপর প্রোগ্রাম করতে থাকলে, যেমন ননপ্রিন্সিপাল্ড উপায়ে দাবাড়ু প্রোগ্রাম তৈরি করতে গেলে if-else-if-else-if-else এর একটা জট লেগে যায়, তারপরেও এর তল খুঁজে পাওয়া যায় না। 🙂 ব্যাংকিং সিস্টেম এতোটা হেভিলি রেগুলেটেড থাকার পরও deregulation-কে দোষারোপ করাটা অনেকটা এরকমই। এরকম জগাখিচুড়ি সিস্টেমে no regulation is enough.
একটা প্রবাদ মনে পড়ল – “Love is eternal as long as it lasts. (@)
এই অবাধ পুঁজিবাদ সম্পর্কে সমাজতন্ত্রীদের একটা থিসিস হল পুঁজিবাদী রাষ্ট্র অন্য দেশের পুঁজি দখল করার জন্য সামরিকভাবে ততপর হতে বাধ্য, অর্থাত, সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদের অনিবার্য পরিণতি। স্বাধীনতাবাদ এই অভিযোগের কী জবাব দেয়?
@পৃথ্বী,
পুরো লেখাটি পড়েছেন তো?
“অবাধ পুঁজিবাদ” হলো “পুঁজিবাদী রাষ্ট্র” কথাটার বিপরীত ধারণা, এটা উপলব্ধি করতে হবে। পুরো লেখায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে। “পুঁজিবাদী রাষ্ট্র” অবাধ হতে পারে না। সেখানে রাষ্ট্র আছে, ফলে ক্ষমতার মনোপলি আছে। সে নির্ঘাত অর্থনীতিতেও হস্তক্ষেপ করে।
অবাধ পুঁজিবাদ মানে যেখানে রাষ্ট্র নেই, মানুষ নির্বিঘ্নে তার সম্পদ থেকে উৎপাদন ও বিনিময় করে। রাষ্ট্র নেই, তাই যুদ্ধে যাবার কেউ নেই। যেমন ধরুন ইরাক যুদ্ধ। তেলের কোম্পানিগুলো রাষ্ট্রকে মানুষের ট্যাক্সের টাকায় ইরাকে যুদ্ধে পাঠিয়েছে। রাষ্ট্রের মনোপলি স্ট্রাকচারের অস্তিত্বের কারণেই ইন দ্য ফার্স্ট প্লেস নানারকম ফাঁকি ভর্তুকি প্রণোদনা ব্যবহার করে কোনো “কোম্পানি” তেলের কোম্পানির মতো এতোটা মহীরূহ হয়ে উঠতে পারে। রাষ্ট্রহীন ব্যবস্থায় যেখানে ক্ষমতার মনোপলি নেই, সেখানে ধরা খাওয়া কোম্পানিকে কে বেইল আউট দিবে?
সেখানে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকও নেই। ইচ্ছে মতো টাকা প্রিন্ট করে মানুষের সেভিংসের মূল্য কমিয়ে সেই টাকা ব্যাংকগুলোকে এবং সেই সূত্রে কোম্পানিগুলোকে দেওয়ারও উপায় নেই। সেখানে টাকা বায়বীয় নয়। ফলে ব্যবসা হবে টাফ। ফলে, সেখানে মহীরূহ হওয়াও কঠিন। তারপরেও ধরি একটা তেলের কোম্পানি তো থাকবেই যে কিনা সবার থেকে বড় হবে। রাষ্ট্রের অবর্তমানে কোনো তেলের কোম্পানি নিজের টাকায় ইরাকে যুদ্ধ করতে কখনোই যেতো না। সেটা চরম অলাভনক ব্যবসায়ী পদক্ষেপ হতো। ব্যবসা যুদ্ধের প্রথম ঘণ্টায় লাটে উঠতো। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকার কারণেই কিন্তু সে মানুষের থেকে ট্যাক্সের বা লুণ্ঠনের টাকা দিয়ে যুদ্ধ করতে পেরেছে। যুদ্ধটা লুণ্ঠনের টাকায় হয়েছে বলেই এই যুদ্ধ থেকে মহীরূহগুলো লাভ কামাতে পেরেছে। বিনা বিনিয়োগে। রাষ্ট্রহীন ব্যবস্থায় তাকে ইরাকের স্থানীয় তেলের ব্যবসায়ীদের সাথে নেগোশিয়েট করতে হতো। ইস্ট ইনডিয়া কোম্পানি গুলোও ইংল্যান্ডের শক্তিশালী রাষ্ট্রের অস্তিত্বের অপরিমেয় সুফল ভোগ করেছে।
আশা করি অবাধ পুঁজিবাদ আর পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের পার্থক্য বোঝাতে পেরেছি। অবাধ পুঁজিবাদ হলো রাষ্ট্র বা ক্ষমতার মনোপলির অবর্তমানে পুঁজিবাদ। ক্ল্যাসিকাল লিবারেলরাই কিন্তু আদি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছিলো। স্বাধীনতাবাদীরা সাম্রাজ্যবাদকে রাষ্ট্রের চরম ভয়ঙ্কররূপ মনে করে।
সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদের ফল নয়। শক্তিশালী রাষ্ট্রের ফল। যে রাষ্ট্রে পুঁজিবাদ আছে, সে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়। ফলে সে রাষ্ট্রের পরগাছা ক্ষমতাভোগী শ্রেণীটাও যথারীতি শক্তিশালী হয়, কারণ রাষ্ট্রব্যবস্থা সেই অঞ্চলের উৎপাদন ব্যবস্থার উপর পরগাছার মতো টিকে থাকে। ফলে সেই রাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী হওয়া সহজ হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নে পুঁজিবাদ ছিলো না। কিন্তু সে ব্যাপক শক্তিশালী ছিলো। ফলস্রুতিতে সাম্রাজ্যবাদী সকল আচরণ সেও দেখিয়েছে। সেটা সম্পর্কে সমাজতন্ত্রীদের ভাষ্য কী?
পুঁজিবাদী “রাষ্ট্র” একটা সমস্যা। নো কোয়েশ্চেন অ্যাবাউট ইট। কিন্তু সেটা কীসের জন্যে? পুঁজিবাদ অর্থাৎ ব্যক্তির উৎপাদন ও বিনিময়ের জন্যে? নাকি রাষ্ট্র অর্থাৎ একটা গোষ্ঠির ক্ষমতার মনোপলির জন্যে? সাম্রাজ্যবাদ, যুদ্ধ, এইসবের সকল অঘটন ঘটে ক্ষমতার মনোপলিঅলা গোষ্ঠির হাতে। অথচ দোষারোপটা কেনো ব্যক্তির উৎপাদন আর বিনিময়ের বিপক্ষে? ম্যাট রিডলির rational optimist পড়ুন, জানবেন। রাষ্ট্রের পক্ষের বুদ্ধিজীবীরাই জনগণের চোখ রাষ্ট্রের থেকে ব্যবসার দিকে সরানোর জন্যে এটা-সেটা বলে। রাষ্ট্র তো কল্যাণময়, ওই ব্যাটা ব্যবসায়ীই এসবের জন্যে দায়ী।
সমাজতন্ত্রীরা ঠিক এই ভুলের শিকার। তারা রাষ্ট্রের পরম বন্ধু। তারা ব্যবসার দোষ দেখে, রাষ্ট্রের দেখে না। রাষ্ট্র কোনো এক রহস্যময় কারণে তাদের কাছে স-ব-কি-ছু-র সমাধান। তাদের সমাধান ফলে পুঁজিবাদহীন রাষ্ট্র। কিন্তু আপনি যদি উপলব্ধি করেন যে ব্যক্তির উৎপাদন ও বিনিময় সভ্যতার উৎকর্ষের জন্যে অপরিহার্য, ক্ষমতার মনোপলি যুদ্ধ, শোষণ, লুট, পরগাছার মতো অন্যের উৎপাদন ধ্বংস, গণহত্যা, এসব করে সেটাকে কেবল স্তিমিত করার চেষ্টা করেছে, তাহলে আপনার তো উল্টো সমাধানে আসার কথা।
রাষ্ট্র-ব্যবস্থার সমস্যা চিহ্ণিত করতে সমাজতন্ত্রীরা অপারগ। শুধু তাই নয়। তারাই প্রথম রাষ্ট্র ব্যবস্থার সেই ধারণাগুলো প্রদান করেছে, যেগুলো আপনার পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো গ্রহণ করার ফলে এখন ডুবতে বসেছে। যেমন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠন। গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড থেকে সরে এসে টাকাকে বায়বীয় করা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়ে ইচ্ছে মতো টাকা প্রিন্ট করা। এই আইডিয়াগুলো সমাজতন্ত্রীরা কিন্তু প্রদান করেছিলো কর্মঠ সঞ্চয়ী মানুষেরা যাতে সঞ্চয় করে পানিশ্ড হয়, আর রাষ্ট্রের উপর বেশি বেশি নির্ভরশীল হয়। আপনি ধরেন কষ্ট করে ১০০০ টাকা সেইভ করেছেন। সরকার ৯০% এক্সট্রা টাকা বাতাস থেকে প্রিন্ট করার ফলে কিন্তু আপনার ১০০০ টাকা এখন সত্যিকার অর্থে ১০০ টাকায় পরিণত হলো, কেনার ক্ষমতা অনুযায়ী। অর্থাৎ সঞ্চয়ীদের সঞ্চয়কে তার অ্যাকাউন্টে হাত না দিয়েও ধ্বংস করার উপায়।
কার লাভ হলো? যার অনেক ঋণ ছিলো। ঋণীর ১০০০ টাকা ঋণ থাকলে এখন আসলে ইফেক্টিভলি ১০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। কে সবচেয়ে বড় ঋণী? রাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণ। ফলে টাকা প্রিন্ট করার এই কাজে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় লাভ। তারপর লাভ তার দোস্ত প্রতিষ্ঠানদের, যাদেরকে রাষ্ট্র ঋণ দেয়। লস আপনার আমার।
অর্থাৎ আপনার পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্র অংশটা কিন্তু সমাজতন্ত্রীদের এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বায়বীয় টাকা, আর inflationism এর বুদ্ধিটা গ্রহণ করেই চলছে। এবং বারোটা বাজাচ্ছে। পুঁজিবাদ না থাকলেও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বায়বীয় টাকা, আর inflationism এর সবটাই থাকবে। সমস্যা কমবে না, আরো ঘনীভূত হবে।
পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের রাষ্ট্র অংশ essentially সমাজতন্ত্রী।
@রূপম (ধ্রুব), “সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদের ফল নয়। শক্তিশালী রাষ্ট্রের ফল।”খুব ভালো মন্তব্য, অবশ্য কিছুটা কোয়ালিফিকেশন দরকার মনে হয়। অর্থনোৈতিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো সবসময়েই সামরিক ভাবে শক্তিশালী হবার দরকার মনে করে না। অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্রই কালেক্টিভ সিকিউরিটির ছায়ায় কেবল অর্থনোৈতিক শক্তির দিকে মন দিতেই আগ্রহী। আন্তজাতিক সিকিউরিটি আর আগ্রাসন নিয়ে অনেক ইন্টারেস্টিং গেম থিয়োরীটিক মডেল গড়ে উঠছে।
লেনিন যখন পুজিবাদের সাথে সাম্রাজ্যবাদের অবশ্যাম্ভীতা দেখিয়েছিলেন, তখন সেটা ছিলো নিতান্তই একটা সময় নির্ভর একটা চিন্তা। বিশ্বব্যাপী ইউরোপীয় কলোনিয়ালইজম এবং ল্যাটিন আমেরিকায় মার্কিন পুজির আগ্রাসনের তুংগ মুহুর্ত। কিন্তু সেসময়েও দেখা গিয়েছে যে কলোনিয়ালিজমে লেট কামার জার্মানী উল্লেখযোগ্য কলোনী ছাড়াই বিশ্ব পুজি উৎপাদনে অনেক বড়ো শেয়ার দখল করে নিয়েছে।
দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীতে আমেরিকা-বৃটেন-ফ্রান্স ছাড়া আর কোনো উন্নত দেশই সামরিক হস্তক্ষেপে বেশী আগ্রহ দেখায় নি। জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানী এসব উন্নত পুজিবাদী দেশকে কোন ভিত্তিতে সাম্রাজ্যবাদী বলা যায় সেটা বোঝা মুশকিল। অনেকে বলেন যে বর্তমানে রাষ্ট্রের বদলে সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকায় নেমেছে বড়ো বড়ো বিশ্বকোম্পানীগুলো। কিন্তু এটাও একটা অতি সরল এবং মিসগাইডেড ইন্টারপ্রেটেশন বলেই মনে হয়।
যাই হোক, লেখাটা অসম্ভব ভালো লেগেছে। সময়ের অভাবে আলোচনায় অংশ নিতে পারি নি। আশাকরি উইক এন্ডে সময় করে বসা হবে। ততক্ষন পর্যন্ত, অভিনন্দন।
@রূপম (ধ্রুব),
এ কথাটা ঠিক বুঝলাম না। আমি কিছু পেশাদার সৈন্য যোগাড় করে যুদ্ধে নামতে পারি না? ইতিহাসে এরকম যুদ্ধ বা যোদ্ধার উদাহরণ তো প্রচূর।
তেলের জন্য একটা এলাকার কিছু লোক একজোট হয়ে ইরাক এলাকার লোকদের আক্রমণ করবে না কেন? এখানে কোম্পানীর অস্তিত্ব কি আসলেই মৌলিক ব্যাপার?
@রৌরব,
স্কারমিশ হতেই পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে যে ম্যাসিভ যুদ্ধ করেছে, তেলের কোম্পানি তার নিজের টাকায় সেই আকারের যুদ্ধ কখনো করতে যাবে না।
সাম্রাজ্যবাদে পুঁজিবাদের constribution নিয়ে আপনার ভাষ্যটা বলুন।
@রূপম (ধ্রুব),
এ ব্যাপারে ঠিক একমত হতে পারলাম না, বিশেষত স্কারমিশ দিয়ে শুরু হলেও অবশেষে যুদ্ধে উপনীত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যুচ্য মনে হচ্ছে।
সম্ভবত এখানেই একটা পার্থক্য রয়ে যাচ্ছে। হিংস্রতার কন্ট্রাডিকটরি ভূমিকা (হিংস্রতা কমানোর জন্য হিংস্রতার ব্যবহার), এবং এবং এফেকটিভ হবার জন্য হিংস্রতার ক্ষমতাকে একত্রিত করতে হবে, এদুটো আমার কাছে একটা মৌলিক ব্যাপার বলে মনে হয়। সেটাকে ঠিক বর্তমান রাষ্ট্রের মত কাউকে করতে হবে তা নয়, কিন্তু যেই করুক, “সবাই মিলে” করলেও অনাক্রমণের নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে (যদি না আপনি ধরে নেন সবাই একা একা সেটা করতে সক্ষম)।
@রৌরব,
এটা কিন্তু সমস্যা নয়। যে অনাক্রমণের নীতিকে লঙ্ঘন করবে, তাকে নিরস্ত করাই উচিত। কিন্তু এখানে রাষ্ট্রকে মনোপলি দেওয়ার ফলে সে তার ক্ষমতার যথেচ্ছা ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। আপনার থেকে বাধ্যতামূলক কর নিচ্ছে। নিরস্ত করার সংস্থা একাধিক থাকলে আর কেউ একটা না একটা সংস্থায় কর দিতে বাধ্য না থাকলে সেখানে এই মনোপলি থাকে না। আপনি যে সংস্থায় আপনার নিরাপত্তার জন্যে স্বেচ্ছায় টাকা দেন, আপনি কেনো আমাকে বাধ্য করবেন সেই সংস্থাতেই টাকা দিতে বা আদৌ দিতে?
@রূপম (ধ্রুব),
ওয়েইট, এটা আমার কাছে তত্বের অংশ বলে প্রতিভাত হয়নি, অন্তত functional অর্থে। moral অর্থে হয়ে থাকতে পারে।
ধরেন আপনি যে সংস্থাকে টাকা দিয়েছেন, তাদেরকে শুদ্ধ আপনাকে পৃথিবী থেকে হটিয়ে দিয়ে আপনার বাড়ি আমি দখল করলাম। আমি তো বুঝতে পারছিনা, আর পাঁচজন আমাকে এখন শাস্তি কিভাবে দেবে (অনাক্রমণের নীতি লঙ্ঘন করে)। এখানে পয়েন্টটা শুধু প্রাগমাটিক নয়। আমি তো কোন দার্শনিক অ্যাঙ্গেলই দেখছিনা যেখান থেকে আপনি আমার বিরূদ্ধে কোন (ভায়োলেন্ট) action justify করবেন।
@রৌরব,
লঙ্ঘন না করে।
@রৌরব,
ভায়োলেন্স তো এখনো আছে। ক্ষমতাবান যখন এভাবে ভায়োলেন্স করে, তখন রাষ্ট্র থাকলেও কী ঘটে? যেখানে সোশ্যাল নর্ম এরকম ভায়োলেন্স, সেখানে দেখবেন রাষ্ট্রও তেমন কিছু সাহায্য করতে পারে না। আবার যেখানে সোশ্যাল নর্ম নেই, সেখানে রাষ্ট্র ভালো হ্যান্ডেল করছে। অনেকে এখানে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের ভূমিকাকে বড় করে দেখতে পারে। আমি সোশ্যাল নর্মের ভূমিকাকেই বড় দেখছি। রাষ্ট্রের কারণেই আমরা শান্তিপূর্ণ থাকি, আমাদের এই পারসেপশনটা বেঠিক মনে করি।
ভায়োলেটরকে প্রতিরোধ করাটা অনাক্রমণের নীতি থেকে আসা একেবারে যায় না, সেটা দেখতে পারছি না। ফলে “কোন দার্শনিক অ্যাঙ্গেলই দেখছিনা” এমন আমার সাথে ঘটছে না।
@রূপম (ধ্রুব),
নীচে একটা সাধারণ মন্তব্য করছি।
@রূপম (ধ্রুব),
আমার ধারণা এ ব্যাপারে স্টেটিস্ট পুঁজিবাদের ভূমিকাই বেশি।
@রৌরব,
এখনো স্পষ্ট নয়। সাম্রাজ্যবাদ শক্তিশালী রাষ্ট্রের ফল নাকি পুঁজিবাদের ফল?
@রূপম (ধ্রুব),
আমি নিশ্চিত না। নির্বাচন করতে হলে রাষ্ট্রকে নির্বাচন করব।
পুঁজিবাদ বলতে কি অবাধ পুঁজিবাদ বোঝাচ্ছেন?
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে কিভাবে দেখেন?
@রৌরব,
স্টেট স্পন্সর্ড কোম্পানি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মনোপলি ওই স্টেটিস্ট পুঁজিবাদের লক্ষণ, অবাধ পুঁজিবাদের নয়। কিন্তু কোনো এক অবাক কারণে সমাজতন্ত্রীরা এখানে ব্যবসাকে মূলত দায়ী দেখতে পায়, কিন্তু রাষ্ট্রের ক্ষমতার মনোপলি থাকাটা ঠিক আছে।
@রূপম (ধ্রুব),
কিন্তু কোনটা মুরগী, কোনটা ডিম? আমি নিশ্চিত না, কিন্তু পুঁজিবাদই পালের গোদা হতে পারে তো? বুঝতে পারছি, এটা “অবাধ” পুঁজিবাদ নয়, কিন্তু ঠিক “স্টেটিস্ট”-ও না হতে পারে। সুযোগসন্ধানী পুঁজিবাদ, রেসিস্ট পুঁজিবাদ, ইত্যাদিও হতে পারে, হয়ত স্টেটিজমটা ফল, কারণ নয়।
@রৌরব,
সেটাই। এটাই আগে ডিসাইড করুন। আমি কারণ খোঁজার জন্যে এদের এসেন্সকে আলাদা করি। যেমন, আমার কাছে পুঁজিবাদের এসেন্স হলো ব্যক্তি বা যৌথ উদ্যোগে উৎপাদন ও বিনিময়। রাষ্ট্র হলো ক্ষমতার মনোপলি। যদিও অল্প কয়টি সিস্টেমেই এদেরকে বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। তারপরেও, একটা সুযোগসন্ধানী, রেসিস্ট, স্টেটিস্ট পুঁজিবাদী সিস্টেমের কারণে সাম্রাজ্যবাদ ঘটার পর আপনি যদি বলেন, স্টেটিস্ট পুঁজিবাদের কারণে বা রেসিস্ট পুঁজিবাদের কারণে এটা ঘটেছে, খুব বেশি এগোনো গেলো না। পুরোটা প্যাকেজে কী দেয় সেটা তো জানাই আছে। প্রতিটার আলাদা কনট্রিবিউশনই তো জানতে চাইছি।
ফলে প্রশ্ন হলো পার্টগুলো নিয়ে। আপনি কি মনে করে সাম্রাজ্যবাদ ক্ষমতার মনোপলির ফল? ব্যক্তি বা যৌথ উদ্যোগে উৎপাদন ও বিনিময়ের ফল? সুযোগসন্ধানের ফল? রেসিজমের ফল? নাকি সব একত্র না হলে হবে না? নাকি ব্যক্তি বা যৌথ উদ্যোগে উৎপাদন ও বিনিময় তথা পুঁজিবাদ পালের গোদা? এ নিয়ে সিদ্ধান্তে আসুন। আমার কাছে সাম্রাজ্যবাদে ব্যক্তি বা যৌথ উদ্যোগে উৎপাদন ও বিনিময় তথা পুঁজিবাদের কনট্রিবিউশন জ্ঞান প্রচারের কনট্রিবিউশনের সারিতে।
@রূপম (ধ্রুব),
যদিও এটা মূল আলোচ্য নয়, আমি ইরাক যুদ্ধে তেলের মূল-ভূমিকার গুরুত্বের ব্যাপারে সুনিশ্চিত নই। নিও-কনসারভেটিভরা কতটা তেল-বাজ, এটা পরিষ্কার নয়। বেশ সাধারণীকৃত অর্থে তারা সাম্রাজ্যবাদী, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তাদের নিজেদের মতামত সিরিয়াসলি না নেয়ার কোন কারণ পাইনি (এখানে মতামত বলতে বুশ কোন জাহাজে চেপে কি বলল, তার কথা বলছি না, নিও-কনসারভেটিভদের বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তির কথা বলছি)। এখানে বক্তব্যটা হল, এধরণের ইমপাল্স লিবারটারিয়ান পৃথিবীতে থাকবে না কেন?
@রৌরব,
কোনো সম্ভাবনাকে তো নাকচ করছি না। আদি প্রশ্ন দেখুন। সাম্রাজ্যবাদ অবাধ পুঁজিবাদের ফল এরকম একটা ডিটার্মিনিজম প্রস্তাব করা হয়। আমি ডিটার্মিনিজম নাকচ করছি, সাম্রাজ্যবাদ “পুঁজিবাদের” অবধারিতা এই তত্ত্বকে নাকচ করছি, সকল সম্ভাবনা নাকচ করছি না।
@রূপম (ধ্রুব),
ও, সে ব্যাপারে দ্বিমত নেই। কিন্তু উল্টোটা (রাষ্ট্রহীন রাষ্ট্রে যুদ্ধ থাকবে না) সে ব্যাপারে একমত নই।
অন্য ভাষায়, ভায়োলেন্সকে চরম লিবারটারিয়ানরা ঠিক মত হ্যান্ডেল করতে পেরেছেন বলে মনে হয়না।
@রৌরব,
:lotpot:
@পৃথ্বী,
ফলে সমাজতন্ত্রীদেরকে অবাধ পুঁজিবাদ নিয়ে সমালোচনা করতে এযাবৎ দেখি নি। আপনি দেখলে সূত্র দিতে পারেন। আমি তাদেরকে সবসময়ে রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে বর্তমান পুঁজিবাদের সমালোচনা করতে দেখেছি। কিন্তু উপরে তো দেখালামই, যে রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে বর্তমান পুঁজিবাদ তথা পুঁজিবাদী “রাষ্ট্রের” সমালোচনা স্বাধীনতাবাদীরাই করছে। সত্যিকার অর্থে, রথবার্ড বলেছেন, তার এই স্বাধীনতাবাদ যতোটা না সমাজতন্ত্রের সমালোচনা, তার চেয়ে বেশি পুঁজিবাদী “রাষ্ট্রের” সমালোচনা।
এটাকে বই এর রিভিঊ হিসাবে দিলে ঠিক হত। লিব্যারাল পলিটিক্সের জনক চীনের লাউজি। চীনের ওই সোনার যুগে ( শত চিন্তার দর্শন – হান্ড্রএড স্কুল অব থট – ৬৭০ খৃষ্টপূর্বাব্দ ) একসাথে এসেছে লিব্যারালিজমের প্রাথমিক ধারনা এবং তার বীপরিতে কনফুসিয়াসের সেন্ত্রালিজম। কনফুসিয়াস (এনালেক্ট), কৌটিল্য ( অর্থশাস্ত্র) এবং প্লেটো ( রিপাবলিক)-এরা সবাই দার্শনিক “রাজার” কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর পক্ষে ছিলেন। এর বিপরীতে প্রথম পদচারন সম্ভবত লাউজির এবং তার সুযোগ্য ছাত্র জুয়াংগি। লিব্যারাল দার্শনিকদের মধ্যে প্রণম্য মারে রথব্যান্ড, জেমস ডন্ড লাউজিকেই স্বাধীনতাবাদের প্রথম গুরু বলে স্বীকার করেছেন-
@বিপ্লব পাল,
Laozi এর কথা জানতাম না। তাকে নিয়ে রথবার্ডের দেখি গোটা লেখা আছে।
ঘ্যাচাং“উত্তরাধিকার” জিনিসটা প্রযোজ্য হয় মরার পরে, এটা কিন্তু স্রেফ দান নয়। কে এই অধিকার exercise করছে (দানকারী মরবার পরে)? কেন অন্যেরা এটা মনে রাখবে বা এর গ্যারান্টি দেবে?
@রৌরব,
উত্তরাধিকারকে সম্প্রদান হিসেবে ইনটারপ্রেট করতে পারেন। এতে আমার অমত থাকলে আমি তো অন্য কারো জন্যে উইল করেই রাখতে পারতাম।
তার আগে কিন্তু প্রশ্ন করা উচিত, রাষ্ট্রের অবর্তমানে কেন অন্যেরা জীবিত কারোই property rights আদৌ মান্য করবে? সেটার উত্তরেই এই প্রশ্নের উত্তর নিহিত।
@রূপম (ধ্রুব),
মোটামুটি একমত, কিন্তু পরিমাণগত পার্থক্য আছে। অর্থাৎ কেউ মানুষের প্রপার্টি রাইট মেনে নিয়েও জীবাত্মার প্রপার্টি রাইট না মানতে পারে। সেটা অস্বাধীনতাবাদী নয়, অন্তত obviously নয়। যেমন মানুষের শারীরিক স্বাধীনতার দাবী নিঃসন্দেহে প্রপার্টি রাইটের তুলনায় জোরালো। প্রপার্টি একটা সামাজিক কনস্ট্রাক্ট। সমস্যাটা সেখানেই। একদম বেসিক কিছু ব্যাপারের বাইরে গেলেই বাস্তবতা যথেষ্ট নুয়্যান্সড, যেটা রথবার্গীয় বিশ্লেষণে আমি উপস্থিত দেখতে পাচ্ছি না।
@রৌরব,
সেই অর্থে শারীরিক স্বাধীনতা যে সামাজিক কনস্ট্রাক্ট না, সেটাও বলা যায় না। এখানে আপনার পরিমাণগত পার্থক্যের দাবিটা বরং গ্রহণযোগ্য। প্রোপার্টি মানব সভ্যতার সাথে এতোটা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে গেছে (পরিধেয় বস্ত্র, ধারালো পাথরখণ্ড, কুকুর, গচ্ছিত অর্থ) যে মানুষের প্রোপার্টি রাইট্স ইন জেনারেল একটা বেসিক কন্সেপ্টই। কোনটা প্রপার্টি কোনটা না সেটা বরং নুয়্যান্সড। যেমন, মেধাসত্ত্ব প্রোপার্টি হতে পারে কিনা, নদী প্রোপার্টি হতে পারে কিনা, এগুলো তর্কের জন্যে উন্মুক্ত। অন্তত শরীর কিংবা বস্ত্রের মতো বিনা যুক্তিতে মানার বিষয় না। কিন্তু রথবার্ড সেই তর্কে এখনো যান নি। প্রোপার্টি বলতে যা কিছু বোঝাক, সেটার বেসিক কন্সেপ্টটাকে ধরে নিয়েই nonagression axiom-টা প্রস্তাব করেছেন।
আপনার লেখা পড়ি ধীশক্তি বাড়ানোর জন্য, আপনার লেখা পড়ি দর্শন বোঝার জন্য, আপনার লিংকগুলো এত অমূল্য সম্পদ যে, সেগুলো রেখে দিই যত্ন করে, ধীরে ধীরে সময় নিয়ে পড়ব বলে।
বুশ যখন ইরাক আক্রমন করেছিলেন, তখন উইপন অব মাস ডিস্ট্রাকশনের লজিকে হেরে গিয়ে শেষমেষ বলতেন, উই আর লিবারেটিং ইরাক। মানে, যুদ্ধ করে লিবার্টি! বুশ জংলি ছিলেন বলেই লিবার্টির মানে বুঝতেন না। কিন্তু আমার প্রশ্ন, রূপম ভাই, অন্যখানে। লিবার্টির জন্য যুদ্ধ কখনোই দরকার হয়নি, ইতিহাসে? এ ব্যাপারে লিবার্টিরিয়ানরা কি বলে?
মুক্ত বানিজ্যের সাথে উদারীকরনের যোগ আছে, আর উদারীকরনের সাথে সম্পর্ক আছে বামপন্থার। তাহলে মুক্ত বানিজ্য সমর্থনকারীদের কেন ডানপন্থী বলা হচ্ছে? ডানপন্থী নির্ধারনের ফর্মুলা কি?
সেক্ষেত্রে হস্তক্ষেপমুলক কর্মকান্ড বলতে কি বোঝায়, তা নিশ্চিত হতে হবে।
অস্বাধীনতাবাদীরা তো সবসময় হস্তক্ষেপে বিশ্বাসী। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র ছাড়া অন্য কেউ করলে গর্হিত অপরাধ বলে গন্য হবে, এমন উদাহরন দেখানো সম্ভব?
তাহলে চাঁদাবাজ, চোর-ডাকাত সমাজের বাইরের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান? আর রাষ্ট্র কি পণ্য বা সেবা বিক্রয় করে না? রাস্তা, ব্রিজ, পুলিশ, হাসপাতাল, স্কুল, বন্যা প্রতিরোধ, নদী ভাংগন- এগুলো কি?
আমার কিছু প্রশ্ন রথবার্ডকেই করা উচিত ছিল। যেহেতু উনাকে পাচ্ছি না, তাই আপনাকেই…..
@কাজি মামুন,
ইতিহাসের অধিকাংশ যুদ্ধ, এবং প্রায় সকল আধুনিক যুদ্ধ শুরু করেছে রাষ্ট্র তার প্রভুত্ব চাপিয়ে দেওয়ার জন্যে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও এর বাইরে নয়। ত্রিশ লক্ষ মানুষের গণহত্যার শুরু থেকে শেষ সর্বাংশের দায় পাকিস্তান রাষ্ট্র, তার সেনাবাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল বদর আল শামস বাহিনীর। বঙ্গবন্ধু সংগ্রামের জন্যে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন, যুদ্ধ শুরু করতে বলেন নি। বরং শেষ পর্যন্ত যে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশের মুক্তির পথ খুঁজছিলেন, সেটার দূরদর্শিতা অনেকে উপলব্ধি করে না। প্রায় সকল যুদ্ধের ইনিশিয়েটর শক্তিশালী রাষ্ট্র। মুক্তিকামী মানুষ নয়। ফলে আগ বাড়িয়ে যুদ্ধে যাওয়া যে গণহত্যার নামান্তর সেটা আগে অনুধাবন করতে হবে।
যা কিছু না করলে রাষ্ট্র বলপ্রয়োগ করে। যেমন, বাধ্যতামূলক সেনাসেবা অমান্য করলে, কর না দিলে, অনলাইন গণমাধ্যম খোলার জন্য পাঁচ লাখ টাকা না দিলে। সংবিধান পরিপন্থী “কথা” বললে।
ফর্মুলা চাইলে আমার রাজনৈতিক কুইজ লেখাটায় যেতে হবে। ওখানে বামপন্থী হলো যারা মানুষের সামাজিক মুক্তি চায়, কিন্তু অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ চায়। এটা যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত। কিন্তু এটা কি আমাদের দেশেও প্রচলিত নয়? যেকোনো “বামপন্থীকে” মুক্ত বাণিজ্যের কথা বলুন, কী শুনবেন বলে আশা করবেন? আমাদের দেশেও সকল বামপন্থী অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সোচ্চার।
রাষ্ট্র ফেইসবুকে কথা বলার জন্যে মামলা করে, দোষীও সাব্যস্ত করে জেলে পোরে। কর না দিলে জেলে পোরে। অন্য কেউ যদি ফেইসবুকে কিছু একটা বলার জন্যে তার ঘরে তালা মেরে রাখে, বা চাঁদা না দিলে আটকে রাখে অস্বাধীনতাবাদীরা সেটাকে বৈধ বলবে? কেউ বলবে না। এই অর্থে বলা হয়েছে যে। রাষ্ট্র এমন ভয়ঙ্কর সব কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত, যা অন্য যে কেউ করলে আমরা সবাই সেটাকে অপরাধ বলবো।
মনোযোগী পাঠক এখানে লক্ষ্য করবেন যে লেখায় চাঁদাবাজ, চোর-ডাকাতদের কথাই বলা হচ্ছে। :))
সেটা তো বক্তব্য নয়। বক্তব্য হলো একমাত্র কোন প্রতিষ্ঠানটি “বলপূর্বক ও সহিংসতার মাধ্যমে তার আয় উপার্জন করে”? রাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান এভাবে আয় করে না। এখানে আসলে আরও যোগ করা যায় যে, রাষ্ট্রের আয় উপার্জন ও ব্যয় নির্বাহের মূল উপায়ই হলো চৌর্যবৃত্তি, বলপ্রয়োগ ও সহিংসতা। পণ্য ও সেবা বিক্রয় দিয়ে ব্যয় নির্বাহ করে এমন রাষ্ট্র কোথায়? রাস্তা, ব্রিজ, হাসপাতাল, স্কুল, বন্যা প্রতিরোধ, নদী ভাংগন, এসব ভর্তুকিতে চলে, বিক্রয়ের আয় থেকে নয়। সেই ভর্তুকি আসে করের টাকা থেকে।
পুলিশ কী ধরনের সেবা? সেটার তো বিক্রয় হয় না। দেশের সবার থেকে বাধ্যতামূলক কর আদায় হয়, আর সেই টাকায় পুলিশ চলে। মোবাইল ফোন কোম্পানি যদি সবার থেকে জোরপূর্বক টাকা নিয়ে তারপর মোবাইল ব্যবহার করতে দেয়, সেটাকে আপনি পণ্য ও সেবা বিক্রয় বলতেন নাকি মাফিয়াতুল্য লুণ্ঠনী সিস্টেম বলতেন? রাষ্ট্র ছাড়া আর কোন প্রতিষ্ঠান তার আয়ের জন্যে বলপ্রয়োগ করে আর সেটাকে গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়?
আমি যে “পুরো” স্বাধীনতাবাদী নই, সেটা রথবার্ড বা অন্য ডান-অ্যানার্কিস্টদের লেখা পড়লে বুঝতে পারি।
সম্পদ কি? আমার তো মনে হয় গোষ্ঠীগত vantage point ছাড়া “সম্পদ” জিনিসটার সংজ্ঞাই দেয়া সম্ভব না।
@রৌরব,
পরের অনুচ্ছেদটাই property rights নিয়ে, যেটা মূলত John Locke-কে ভিত্তি করে আলোচনা করা হয়েছে। সম্পদ নিয়ে মানুষের বোঝাবোঝি আমরা যতোটা ভাবছি, তার চেয়ে অনেকটা বেশিই হয়েছে ইতোমধ্যে। আপনার প্রশ্নটা সম্পদ নিয়ে বিদ্যমান বোঝাবোঝির উদ্ঘাটন, এমন কি বিস্তারণও দাবী করে।
@রৌরব,
তবে এখানে যে আলোচনাটা করা হয়েছে, সেটা সম্পদের সংজ্ঞায়ন ব্যতিরেকেই ভ্যালিড কিনা সেটা প্রশ্ন। এখানে প্রস্তাব হচ্ছে, সম্পদের যেই সংজ্ঞাই করেন, রাষ্ট্র সেটা নিয়ে অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ করছে।
@রূপম (ধ্রুব),
ওয়েল, অসঙ্গতি এক জিনিস, আর রাষ্ট্র মৌলিক ভাবে অবৈধ এটা আরেক জিনিস। যদি আমরা ধরে নিই (কথার কথা) যে সম্পদ সংজ্ঞায়িত করার জন্য, বা কার কি সম্পদ সেটার তালিকা রাখার জন্যও একটা superstructure দরকার (এবং সেটা বজায় রাখার জন্য অল্প-বিস্তর কর আদায়েরও প্রয়োজন আছে), তাহলে (খুব সীমিত) সরকারের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় কি?
@রৌরব,
সেটা স্বেচ্ছামূলকভাবে হতে পারে (কীসের ভিত্তিতে ভাবতে যাবো যে পারেই না?)। কিন্তু রাষ্ট্র সেটা নয়। ফলে অসঙ্গতি তো এখানেও থাকছে। মিনিমাম রাষ্ট্র বহাল রাখার জন্যে আপনাকে অনাক্রমণের নীতির ব্যতিক্রম ঘটাতে হবে। অসঙ্গতি তৈরি করতে হবে। শাসক ও শাসিতের শ্রেণী বিভাজন করতে হবে। একদল লোকের হাতে বাধ্যতামূলকভাবে আপনার (সীমিত) দেখভালের দায়িত্ব বরাদ্দ থাকবে। সেটা আপনি অন্য যেখানে স্বাধীনতা আশা করছেন, সেখানেও তার ছড়ি ঘোরানোর অটোমেটিক ম্যান্ডেট দিবে।
সাময়িক প্রায়োগিকতার খাতিরে হয়তো এইসব অসঙ্গতি বরদাশত করা যেতে পারে, যেটা আমরা করি। কিন্তু তত্ত্বে অসঙ্গতি কীভাবে বরদাশত করবেন?
@রূপম (ধ্রুব),
আপাতত খুব সংক্ষেপে…
Mises এর মতের সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি। এটা হচ্ছে typical দার্শনিক চিন্তা যা অ-quantitative। Mises ধরে নিচ্ছেন যেকোন “serious” তত্বের একধরণের linearity থাকতে হবে, কোন if-then-else clause বা পরিমাণগত ভেদ থাকলে চলবে না। কেন?
@রৌরব,
কথাটা বুঝি নি। তবে এটা একটা সাধারণ পর্যবেক্ষণ বলে মনে হয়েছে। আপনি বলতে চাচ্ছেন – You can still make serious objections against further encroachment, even though you have admitted that it is the duty of government to protect you against your own foolishness? ভাবতে পারেন। আমার কাছে এই ভাবনাটা খুব naive, কিন্তু in principle অসম্ভব নয়, এমন লাগছে।
@রৌরব,
তবে minarchist দের সাথে anarcho-capitalist-দের তর্ক সামান্য বলেই জানি। অন্তত একমত হবার জায়গাই বেশি। রাষ্ট্র বা সরকার যে মূলত evil চরিত্রের, সেটা তাদের একমত হবার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এই লেখায় সেই evil-ত্ব উন্মোচনটাই প্রাধান্য পেয়েছে। এই লেখার রাষ্ট্র সংক্রান্ত “পর্যবেক্ষণের” সাথে একমত হয়ে “সিদ্ধান্তে” তফাৎ হয়ে যাওয়াটা খুব অকাম্য নয়। আপনি মূলত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দ্বিমত করছেন। লেখাটা মূলত পর্যবেক্ষণ নিয়ে। টুকটাক সিদ্ধান্তও আছে। তবে তৃতীয় অধ্যায় সম্পূর্ণই state নিয়ে, সেটাই আগে নামিয়ে ফেলবো নাকি?
@রৌরব,
আর
যদি লক্ষ্য করেন, লেখায় রাষ্ট্র মৌলিকভাবে অবৈধ কিনা সেটা মূল প্রস্তাব বা তর্ক নয়। যে অনাক্রমণের নীতি প্রস্তাব করা হয়েছে, রাষ্ট্র যে সেটার একমাত্র প্রধান ব্যতিক্রমকারী, কেবল সেটা দেখানো হয়েছে। এই প্রস্তাব ভ্যালিড কিনা এটাই বিচার্য। আপনি বলতে পারেন যে অমুক কারণে রাষ্ট্রের এই ব্যতিক্রম করার দরকার পড়ে। কিন্তু রাষ্ট্র অনাক্রমণের নীতির ব্যতিক্রম করে না, তেমনটা বলতে পারেন কি? প্রথমে এটা নিয়ে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি।
@রূপম (ধ্রুব),
করে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তবে, আক্রমণ সংজ্ঞায়িত করার জন্য একটা সামাজিক ফ্রেমওয়ার্ক দরকার, এটা একটা জটিলতা বলে প্রতিভাত হচ্ছে আমার কাছে। এখানে যে circularity থাকতে পারে সেটা ভাবার দরকার আছে।
এছাড়া প্রশ্ন হচ্ছে অনাক্রমণের নীতিটা কি পরিমাণগত ভাবে প্রয়োগ করা হবে, নাকি বাইনারী ভাবে? যেমন…
হ্যাঁ, কিন্তু in principle এমন হতে পারে যে রাষ্ট্র যে প্রধান ব্যতিক্রমকারী, সেটা রাষ্ট্র আছে বলেই। রাষ্ট্র না থাকলে ব্যতিক্রমকারীর চমৎকার distributed system আমরা দেখতে পাব। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র কি নীটে ব্যতিক্রমকারী?
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রের ভূমিকা এরকমটা, এরকম দাবী আমি এ পর্যায়ে করছি না। সম্ভাবনাটি গোণায় নেয়া উচিত, সেটি বলছি।
@রৌরব,
রাষ্ট্র না থাকলে ব্যতিক্রমকারীর চমৎকার distributed system-টা যে worse হবে তাও ভাবছি কেনো? Power এর মনোপলি power distribution এর চেয়ে বেটার হতে হলে মহাজন ফিদেল ক্যাস্ট্রো টাইপের ফেরেস্তা হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি। 😛 ফেরেস্তার অবর্তমানে monopoly না থাকাটা কাম্য। তবে সেসব ব্যাতিরেকে এখানে এটা প্রস্তাব যে, দেখুন, রাষ্ট্র একমাত্র ব্যতিক্রমকারী। অনেকের কাছে এটা অবাককর একটা পর্যবেক্ষণ। সেটা তাদের জানানো ভাল। ।তারা তাদের নিজেদের মতো একে rationalize তো করতেই পারে। সেটা still ব্যাপারটা লক্ষ্য না করার চেয়ে বেটার।
স্বাধীনতাবাদের উপর মুক্তমনায় অনেক গুলো লেখাই জমে গেছে। আরো কয়েকটা যোগ করে একটা বই বা ই-বুকের মত করা যায় নাকি?
@রৌরব,
স্বাধীনতাবাদের মূল যে পয়েন্টটা, অর্থনৈতিক ভিত্তি, সেটা নিয়ে লেখার অভাব আছে। ম্যাট রিডলির অন্তত কয়েকটা অনুচ্ছেদ আগে অনুবাদ করে নেই।
কিন্তু কপিরাইটের কী হবে? স্বাধীনতাবাদীরা তো কপিরাইট মানে না। তাই রথবার্ডের বইয়ের কপিরাইট তার কপিরাইট হোল্ডারের থেকে সহজেই, চাইতেই পেয়ে গেছি। কিন্তু ম্যাট রিডলি সাহেব কি চাইলেই দিবেন? নাকি অল্প কয়েকটা অনুচ্ছেদ করলে ফেয়ার ইউজের আওতায় পড়তে পারে?
@রূপম (ধ্রুব),
চেয়ে দেখা যায়। একটু পুরোনো লেখকদের ক্ষেত্রে দরকার নাও হতে পারে। পেইন, অ্যাডাম স্মিথ, এমা গোল্ডম্যান, অরওয়েল, লর্ড অ্যাকটন। হায়েক নিয়ে মুশকিল হতে পারে।