যে যাই বলুক না কেন, জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ অথবা সন্দেহ থাকলে সাধারণত প্রথমেই কাউকে ‘গ্রেফতার’ করা হয় না। এ ধরনের সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ‘আটক’ করা হয়। এ অবস্থায় আটককৃত ব্যক্তির পরিজনের কাছে তিনি ‘নিখোঁজ’ থাকবেন এবং কোন সরকারী সংস্হা তাকে আটক করার কথা স্বীকার করবে না। আটককৃত ব্যক্তির কাছ থেকে সন্তোষজনক তথ্য উদ্ধার করার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাকে নিয়ে কি করা হবে। তাকে কোন ব্যবস্হা না নিয়ে ছেড়ে দেয়া হতে পারে আবার গ্রেফতার দেখিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করানো হতে পারে। গ্রেফতার দেখানোর আবার নানা রকম উপায় আছে। সেটা নির্ভর করবে কি রকম মামলা নিয়ে এক্ষেত্রে কাজ করা হবে। তবে, সাধারণত এক্ষেত্রে ‘হাতে নাতে’ বিস্ফোরক অথবা অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয় । বলাই বাহুল্য, এসব বিস্ফোরক অথবা অবৈধ অস্ত্র সরকারী মজুদ থেকেই সরবরাহ করা হয় যদি ঐ মুহূর্তে কিছু উদ্ধার করা সম্ভবপর না হয়। সত্যি সত্যি উদ্ধার করা সম্ভব হলে, উদ্ধারকৃত মালামাল যে কোন সময় পরে মামলায় ঢুকানো যায়। ‘স্টিং অপারেশনের’ ফাইল আগে থেকে তৈরী থাকলে , যাবতীয় সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করে পত্রিকা ওয়ালাদের খবর দেয়া হয় । তৃতীয় একটা সম্ভাবনার অস্তিত্ব অবশ্য বাতিল করে দেয়া যায় না যা সাধারণত কেউ প্রকাশ্যে স্বীকার করবেন না যেহেতু সাধারণ অবস্থায় যে কোন আইনেই এ ধরনের চর্চা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত। সেটা কি ? সেটা হচ্ছে আটককৃত ব্যক্তির চিরস্থায়ী নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। কেউ কোনদিক জানতে পারবে না , তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল। এক্ষেত্রে সরকারী সংস্থা চালাক হলে আটক অভিযান সাদা পোষাকে পরিচালিত হয় যাতে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করা যায় । অদক্ষ কিংবা দাম্ভিক সংস্থাগুলো (জনমতের থোরাই কেয়ার ! ) সাধারণত ইউনিফর্ম পড়েই এ ধরনের অভিযান চালায়। একজন ব্যক্তিকে সরকারীভাবে ( ইউনিফর্ম পরে) আটক করার পরে সেই ব্যক্তির নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার মত কেলেঙ্কারীর ঘটনা অনেক আছে। থানা খেকে বলা হয় যে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে কিন্তু আসলে তাকে অন্য সংস্হার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই এ ধরনের চর্চা অব্যহত আছে। বেসামরিক এবং গনতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পরে যথাশীঘ্র (রাষ্ট্র ভেদে সময়সীমা কমবেশী হতে পারে) বিচারকের কাছে হাজির করার আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। বিচারালয়ে হাজির করার পর বিচারক সিদ্ধান্ত নেন যে আটককৃত ব্যক্তিকে মুক্তি, জামিন কিংবা হাজতে প্রেরণ করা হবে। বিচারক চাইলে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য হস্তান্তর করতে পারেন যা বাংলাদেশে এবং ইংরেজ সাধারণ আইনে ‘রিমান্ড’ নামে পরিচিত। কিন্তু কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার না দেখিয়ে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গোয়েন্দা ইন্টারোগেশন সেলে অথবা সেফ হাউজে আটক রাখা হলে তাকে ‘রিমান্ড’ বলা যাবে না , বোঝার সুবিধার্থে এটাকে ডিটেনশন বলা যায় যদিও যে নামেই ডাকা হোক, জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টা এখানে ঠিকই থাকছে।
শারীরিক নির্যাতন নিয়ে কিছু কথা
প্রথমেই যে বিষয়টা আমি পরিষ্কার করতে চাই তা হলো , শারীরিক নির্যাতন তদন্তের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক। একজন বেদনায় কাতর রোগী যেমন তার চিকিৎসকের কাছে সঠিক অবস্হা তুলে ধরতে পারে না, তেমনি শারীরিক ব্যাথায় কাতর একজন বন্দীর কাছ থেকে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য আশা করা যায় না। এ ধরনের বন্দী নির্যাতন থেকে বাঁচার আশায় মিথ্যাকে সত্য এবং সত্যকে মিথ্যা বলে চালাতে কুণ্ঠিত হয় না।
“The barbarous custom of having men beaten who are suspected of having important secrets to reveal must be abolished. It has always been recognized that this way of interrogating men, by putting them to torture, produces nothing worthwhile.”
– Napoleon Bonaparte
বাংলাদেশে জনমনে রিমান্ডের সাথে শারীরিক নির্যাতনের একটা অবশ্যাম্ভী সম্পর্ক রয়েছে। খবরের কাগজে এ বিষয়ে প্রতিদিন কোন না কোন প্রতিবেদন চোখে পড়ে । সেসব প্রতিবেদনে বর্ননা করা হয় কিভাবে রিমান্ডের সময় আটককৃত ব্যক্তির উপর নানাবিধ বিচিত্র উপায়ে নির্যাতন চালানো হয়। এ রকম একটি প্রতিবেদনের অংশবিশেষ নিচে তুলে দিলাম ।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, রিমান্ডে নেয়া আসামিদের ১৪ ধরনের নির্যাতন করা হয়। সেগুলোর মধ্যে গিটা নির্যাতন, বাদুড় ধোলাই নির্যাতন, ওয়াটার থেরাপি নির্যাতন, উলঙ্গ করে নির্যাতন, সারা দিন না খাইয়ে নির্যাতন, বোতল থেরাপি নির্যাতন, ডিম থেরাপি নির্যাতন, ডিস্কো ড্যান্স নির্যাতন, সিলাই নির্যাতন, ঝালমুড়ি নির্যাতন, টানা নির্যাতন, বাতাস নির্যাতন অন্যতম।
আসামিদের হাত-পায়ের প্রতিটি জয়েন্টে লাঠিপেটা করার নামই হল গিটা নির্যাতন। এ নির্যাতনের ফলে হাড়-মাংস থেতলে যায়। কিন্তু বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায় না। চিৎ করে ফ্লোরে ফেলে দুই হাত, দুই পা বেঁধে মুখে গামছা বা কাপড় ঢুকিয়ে পানি ঢেলে মারধর করাকে বলা হয় ওয়াটার থেরাপি। নাকে-মুখে পানি দিতে থাকলে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পরে আসামিরা সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য বলে তথ্য দিতে থাকে। দুটি উঁচু টেবিলের মাঝখানে দুই হাত বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানোকে বলা হয় বাদুড় ধোলাই। এ রকমের নির্যাতন করলে যে কোন আসামি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। গরম বা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ডিম আসামিদের মলদ্বারে ঢুকিয়ে নির্যাতন করাকে বলা হয় ডিম থেরাপি। এ নির্যাতনের ফলে আসামির মলদ্বার ফুলে যায় এবং অনবরত রক্ত পড়তে থাকে। যতক্ষণ আসামিরা স্বীকারোক্তি না দেয় ততক্ষণ মলদ্বারে ডিম ঢুকাতে থাকে। পরে বাধ্য হয়ে স্বীকারোক্তি দিয়ে দেয়। হাত-পায়ে অবিরাম ইলেকট্রিক শক দেয়াকে বলা হয় ডিস্কো ড্যান্স থেরাপি। ইলেকট্রিক শক দিলে আসামি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে তাদের তথ্য প্রদান করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। হাত-পায়ের নখে মোটা সুঁই ঢুকানোকে বলা হয় সিলাই নির্যাতন। সুঁই ঢোকানোর পর হাত-পায়ের নখগুলো ফুলে যায়। চোখ-মুখ ও নাকে শুকনো মরিচ লাগানোকে বলা হয় ঝালমুড়ি নির্যাতন। নির্যাতনের ফলে আসামির চোখ নষ্ট হয়ে যায়। পায়ের পাতায় বেধড়ক পেটানোকে বলা হয় টানা নির্যাতন। সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে নির্যাতন করাকে বলা হয় বাতাস পদ্ধতি।সূত্র: দৈনিক যুগান্তর
http://jugantor.us/enews/issue/2011/12/13/news0739.htm । পড়তে অসুবিধা হলে পাঠক ইউনিকোড কনভার্টার ব্যবহার করতে পারেন এখানে http://thpbd.org/bangla/v1.0/index.html
মধ্যযুগে বন্দীদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর পেছনের মূল উদ্দেশ্য তথ্য উদ্ধার ছিল না। নির্যাতনের পেছনে যে দর্শন কাজ করত তা ছিল নেহায়েৎ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী , ধর্মদ্রোহী, ফৌজদারী অপরাধী এ ধরনের ব্যক্তিদের শায়েস্তা করা , প্রতিশোধ গ্রহন , ক্ষমতা প্রদর্শন এবং অবশ্যই বিকৃত আনন্দলাভ। আজকের মত সে সময়েও নির্যাতন চালিয়ে মর্জিমাফিক স্বীকারোক্তি আদায় করা হত। প্রমাণ না থাকলে প্রমাণ তৈরী করা হত – ঠিক এখনকার মতই। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ‘শারীরিক’ নির্যাতন চালানোর পেছনে মূলত দুইটি কারণ চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত , তথ্য অনুসন্ধান নয় বরং নির্যাতন চালানোই এখানে মূল উদ্দেশ্য। দ্বিতীয়ত , জিজ্ঞাসাবাদ পরিচালনাকারী সংস্হার অদক্ষতা এবং অব্যবস্হা। মূলকথা হলো নির্যাতন চালিয়ে তদন্ত সহায়ক তথ্য আদায় করা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে হাজার হাজার মানুষের জীবন মরণের প্রশ্ন জড়িত থাকে যায় উত্তর কেবলমাত্র সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। তবে ভুলে গেলে চলবে না , জিজ্ঞাসাবাদ একটা নোংরা কাজ । সেখানে তথ্য সন্ধানে মানুষকে(বন্দী) অধঃপতিত , নিজের কাছে খাটো এবং সর্বোপরি মানসিকভাবে অবনমিত করা হয়। একই ঘটনা জিজ্ঞাসাবাদকারীর ক্ষেত্রেও ঘটে ! এটা এমন এক ধরনের নোংরা কাজ যা শুধুমাত্র স্বচ্ছ মানসিকতার মানুষের দ্বারাই পরিচালিত হওয়া কাম্য। যারা বিকৃত মানসিকতার অধিকারী তাদের এ পেশায় আসাটা ঠিক নয়।
বাস্তব প্রেক্ষাপট এবং একটি অনুকল্প
Intelligence analysts sythesize. They do not describe , they interpret. They render the complex into simple. Conclusion > Data ; 1+1 = 3 !
মানবাধিকার আমার এ লেখার বিষয়বস্তু নয়। আমার এই লেখায় আমি মুলত পেশাদার গোয়েন্দা দৃষ্টিকোন থেকে আটক এবং জিজ্ঞাসাবাদ পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকব। ধরা যাক , ঢাকার একটি রাজনৈতিক দলের কিছু সংখ্যক সদস্য শতাধিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রেনেড সম্প্রতি সংগ্রহ করেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। গ্রেনেডের নাম ও ধরণ এবং কি উদ্দেশ্যে , ঠিক কারা ,কোথা থেকে, ঠিক কতগুলি গ্রেনেড সংগ্রহ করেছে সেটা এখনও জানা যায় নি। পরিস্থিতির গুরত্ব অনুধাবন করে এই অবস্থায় কাউন্টার টেররিজম উইংকে দায়িত্ব দেয়া হয় বিষয়টা যথাশীঘ্র খতিয়ে দেখতে। একই সময় পুলিশের একটা দল সিলেটে একটা গুদামের ভেতর থেকে মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত একটি গ্রেনেড রাখার বাক্স উদ্ধার করে। গুদামের মালিককে পাওয়া যায় নি। বিষয়টা সাথে সাথে ঢাকায় কাউন্টার টেররিজম উইংকে জানানো হয়। এমতাবস্থায় ওই গুদামের মালিককে আটক করা অপরিহার্য কেননা তাকে আটক করলেই জানা যাবে যে মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত একটি গ্রেনেড রাখার বাক্স তার কাছে কি করে এল এবং ঢাকার একটি রাজনৈতিক দলের কিছু সংখ্যক সদস্য শতাধিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রেনেড সম্প্রতি সংগ্রহ করেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে যে খবর পাওয়া গেছে, তার সাথে এই বাক্সের কোন যোগসূত্র আছে কি না। পুরো একদিন সার্ভেইলেন্স এবং রিকনেসন্স অপারেশন চালানোর পরে সেই ব্যক্তির অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হল এবং সেটা চট্রগ্রামে। সিদ্ধান্ত নেয়া হল যে , তাকে ( মফিজ মিয়া বলা যায়) আটক করে ঢাকায় ইন্টেরোগেশন সেলে নিয়ে আসা হবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। জিজ্ঞাসাবাদ পরিচালনা করবে কাবুল থেকে উড়িয়ে আনা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্হার একটি দল কিন্ত তাকে আটক করতে যাবে দেশীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্হার সদস্যরা – যদিও পুরো অভিযানের তত্বাবধান করবে মার্কিনীরা। এখন আমি আলোকপাত করার চেষ্টা করব যে এক্ষেত্রে আটক এবং জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কি ধরনের নীতিমালা এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া সাধারনত শুরু হয় গ্রেফতার দিয়ে। এর পর পদ্ধতিগত পর্যায়ে আছে আটকাদেশ , নির্জনতা বলবৎ পূর্বক সংজ্ঞাবহ উদ্দীপনা ( sensory stimuli) থেকে বঞ্চিত করা , কারাবাস অথবা সমধর্মী পদ্ধতি, ভয় ভীতি প্রদর্শন , দৌর্বল্য সৃষ্টি , বেদনা, চেতনানাশক পদার্থ এবং প্রণোদিত নির্ভরণ বা Induced regresion ।
আটক অভিযান
আটক অভিযানের ধরন এবং সময় জিজ্ঞাসাবাদকারী দলের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য অর্জনের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে নজর দেয়া হয় যাতে করে অভিযানের ধরণ এমন হতে হবে যাতে করে তা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত উপস্থিত হয়ে সর্বোচ্চ মানসিক অস্বস্থি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। যে মুহূর্তটায় গ্রেফতারের আশংকা সবচেয়ে কম থাকে এবং যখন মানসিক ও শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে – এরকম সময় আটক অভিযানের জন্য নির্বাচন করা হয়। সবচেয়ে আদর্শ সময় ভোরবেলায় কেননা এ সময় যে শুধু একজনকে হতভম্ব করে দেয়া সহজ , তা নয় , এ সময়টায় মানুষের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ে বিরাজ করে। ভোরবেলায় কোন কারণে অভিযান চালানো সম্ভবপর না হলে পরবর্তী আদর্শ সময় সন্ধ্যা বেলা। চলবে।
আগের পর্ব :
মাসুদ রানার রানালজী এবং বাস্তবের গোয়েন্দাবৃত্তি
মাসুদ রানার মামদোবাজী এবং বাস্তবের গোয়েন্দাবৃত্তি
তথ্যসূত্র :
১। Gannon, James – Stealing Secrets, Telling Lies: How Spies and Codebreakers Helped Shape the Twentieth Century. Washington, DC: Brassey’s, 2001
২। Herman, Michael – Intelligence Power in Peace and War. Cambridge, UK: Cambridge University Press, 1996
৩। Knightly, Phillip – The Second Oldest Profession: Spies and Spying in the Twentieth Century. New York: Penguin, 1988.
৪। O’Toole, G. T. A. The Encyclopedia of American Intelligence and Espionage. 1988
৫। ইন্টেলিজেন্স এবং কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের ওপর নেটো সশস্ত্র বাহিনীর বিবিধ এবং প্রাসঙ্গিক ফিল্ড ম্যানুয়ালস ও হ্যান্ডবুকস ।
আমাদের দেশে ডিটেনশন – এর সাথে একটি বিশেষ আইন জড়িত। স্পেশাল পাওয়ার এক্ট ১৯৭৪ এর ৩ ধারা মতে কাউকে সরকার অথবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ডিটেনশনের আদেশ দিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে সেফ হাউজে নয়, বরং জেল হাজতে রাখারই বিধান রয়েছে মনে হয়।
ডিটেনশন বাদে বাকী সকল ক্ষেত্রে কাউকে আটক রাখতে গেলে ২৪ ঘন্টার ভেতর ম্যাজিস্ট্রেট- এর সামনে উপস্থিত করতে হবে- সি আর পি সি তে এমনটিই বলা আছে। বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে এমনটি হয়ত ঘটে না।
আটক এবং গ্রেফতারের মধ্যে আপনি যে পার্থক্য দেখালেন- এর আইনগত ব্যবখ্যাটি জানতে ইচ্ছে করছে।
@পথিক পরাণ,
:)) আপনার কথাই ধরুণ , আপনার কেস ফাইল হ্যান্ডেল করছেন একটি বিশেষ সংস্হার একজন লেঃ কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা। উনি আবার স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্ট ১৯৭৪ এবং সি আর পি সি ১৮৯৮ তেমন একটা পছন্দ করেন না। একটা আইন নিয়েই মাঝে মধ্যে তিনি মাথা ঘামান এবং সেটা আর্মি এ্যাক্ট ১৯৫২ ! আপনি জিয়া ( থুক্কু শাহজালাল বিমান বন্দর!) থেকে বেরুনোর পর ৫০০ গজ পরই দেখবেন পাঁচ জন সাদা পোষাকধারী আপনার গাড়ী থামিয়ে তাদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তাদের গাড়ীতে উঠিয়ে বনানীর একটা অতিথি খানায় নিয়ে যাবে যাকে আপনি সেইফ হাউজ বলেন। এর আরেকটা নাম আছে – ব্ল্যাকহোল ! আপনার পরিবার থানায় যেতে পারেন , হাইকোর্টে যেতে পারেন লাভ হবে না। কারন সরকারী নথিতে আপনার অস্তিত্ব নেই এবং আপনি হাড়িয়ে গেছেন ‘ব্ল্যাকহোলের সিঙ্গুলারিটিতে ! এখণ কোন আইণ ব্যবহার ‘ব্লাকহোল’ ইউনুস নবীর মত আপনাকে উগলাবে ?
@সংশপ্তক,
আইনের বাইরে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে কিংবা হবে, সে বিষয়ে কিঞ্চিৎ অভিজ্ঞতা এবং জানাশোনা আছে। আমার মন্তব্যে সেবিষয়ে জানবার আগ্রহও রাখিনি।
প্রয়োগ না করতে পারলে আইন কেবল কাজীর গরু বৈ ভিন্ন কিছু নয়, এটুকু বুঝতে পারি। আইন জানা থাকলেই সব ব্লাকহোল থেকে বেড়িয়ে আসতে পারব- এমনটিও আমি বিশ্বাস করি না।
আমাদের সংবিধানে সর্বশেষ সংযোজিত সংশোধনীতে অবৈধ ক্ষমতা দখলের সব পথ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ৪২ বছর বয়েসি একটা দেশে, যেখানে কিনা কমসেকম ১৭ বছর অবৈধ ক্ষমতাধারীরা সংবিধানকে উর্দির নীচে চাপা দিয়ে আমাদের উদ্ধার করার মহান দায়িত্ব পালনের অভিনয় করেছে, কেবল সংবিধানের এরূপ সংশোধনীই কি তাদের নিবৃত্ত করবে বলে কেউ বিশ্বাস করবে? মনে হয় না।
আমি কেবল আটক এবং গ্রেফতারের মধ্যে আপনি যে পার্থক্য দেখালেন সেই পার্থক্যটি আইনের ব্যাখ্যায় জানবার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম।
প্রতি মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ।
@পথিক পরাণ,
ও হ্যা , এটাতো প্রবন্ধের শুরুতেই উল্লেখ আছে । লেখাটা যেহেতু বাংলাদেশ বিশেষ নয় সে কারনে আলাদা করে সি আর সি পি বিষয়টা উল্লেখ করা হয়নি :
@সংশপ্তক,
🙂 মনে হইতেসে ভাই দেশ ছেড়ে পালানই লাগবে।এই দেশে নাকি মাঝে মাঝে নির্বিষ লোকজনও ধরা খায়। ভয় তো জটিল ভাবেই দেখিয়ে দিলেন।তা এই ব্ল্যাক হোল কি অন্যদেশ থেকেও ধরে আনতে পারবে?
@অর্ফিউস,
নির্বিষ সাপ নিয়ে দেখেন নি শিশুরাও খেলা করে ? অন্যদেশে অপারেশন চালানোর মত সক্ষমতা তৈরী হতে এখনও বহুদূর যেতে হবে। বাজেট দিয়েই শুরু করা যাক। এজন্য নিজস্ব বরাদ্দ নেই , কোল্যাটারাল চাইলে অর্থ মন্ত্রনালয় ভিমরী খাবে !, পাছে না নিজেদের কোন নিকটাআত্নীয় ধরা খায় ! প্রশিক্ষন নেই – বিশেষায়িত জনবলের অভাব , ইত্যাদি ইত্যাদি। এক লোককে কানাডা থেকে আনতে অন্য একটা দেশের কাছে জনবল চেয়েও পাওয়া যায় নি। তবে , দেশে এদের পাল্লায় পড়লে খবর আছে। দূতাবাস কিছু করতে পারবে না যতই বিদেশী পাসপোর্ট থাক না কেন।
ইলিয়াসের গুম হওয়ার ব্যাপারটা কি এরকমই কিছু বলে মনে করেন? সরকারী সংস্থার পেশাদার সদস্যরা রাজনৈতিক কারনে কাউকে গুম করলে কি ধরে নিতে হবে তারা কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেন, নাকি এ কেবলই হুকুম তামিল?
@মনজুর মুরশেদ,
ইলিয়াসের ব্যপারে কোন মন্তব্য এখানে করবো না। সেসব কথা একসময় আপনার ওখানে বলা যাবে সামনা সামনি। 🙂
দেখুন যে কোন দেশেই , সামরিক – বেসামরিক আমলারা পেছন থেকে সরকার চালান যাদের একেক জনের এসব বিষয়ে কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণ থাকে। রাজনীতিকেরা কেবল আমলাদের বানানো প্রস্তাবগুলো আইনসভায় পাস করিয়ে আনেন। আমলারা হুকুম তমিল করেন কি না জানিনা তবে আমলাদের সহযোগীতা না পেলে কোন সরকারই বেশী দিন ঠিকতে পারে না , দেশ অচল হয়ে পড়ে। সাংবাদিকতা কিংবা ছাত্রাবস্হায় অনেকে বড় বড় কথা বলেন বটে । যখন সেই ছাত্র অথবা সাংবাদিক পরবর্তিতে আমলা হন , তিনি নিজের অতীত রোমন্হন করে কৌতুকবোধ করেন। পরীক্ষার হল আর মন্ত্রনালয় যে চালানো এক জিনিষ নয় সেটা বলাই বাহুল্য। প্রাইভেট সেক্টরের কথা বলি না কারণ সেখানে আবার টক আঙুরের প্রসঙ্গ এসে পড়বে। আমলা চাইলে বড় বহুজাতিক কোম্পানিতে বড় পদে যোগ দিতে পারেন, তাকে লুফে নেয়া হবে। প্রাইভেট সেক্টরের কেউ চাইলেই আমলা হতে পারবেন না। নিদেন পক্ষে উচ্চ পর্যায়ে রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকতে হবে সাময়িক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে হলে । মন্ত্রী আসে মন্ত্রী যায় কিন্তু আমলারা বহাল তবীয়তে থাকেন । এক সরকার ও এস ডি করলে অন্য সরকার এসে পদোন্নতি দেয়। এক সরকার চাকুরীচ্যুত ( খুবই কঠিন!) করলে অন্য সরকার চাইলে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করে পদোন্নতি দেয়।
কিছু আমলা রাজনৈতিক দলের অতিমাত্রায় লেজুরবৃত্তি করতে গিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে কিছু করলে সেখানে এর দায় দায়িত্ব আমি ঐ আমলাকেই দেব। অপরাধ বলুন আর জনহিতকর কাজ বলুন , সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে গড়পরতা রাজনীতিকের সময় , শিক্ষা , প্রশিক্ষণ কিংবা সদিচ্ছা কোনটাই থাকে না।
@সংশপ্তক,
অবশ্যই!! আগাম নিমন্ত্রন রইল! 🙂
আপনার আমলা-রাজনীতিক সম্পর্কিত মন্তব্য আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যায়। তারুন্যে খুব কাছের একজনের কারণে বিষয়টি সরাসরি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছি। ওএসডির ব্যাপারটায় সত্যি খারাপ লাগে। কিছু সিনিয়র, সৎ আর যোগ্য কর্মকর্তাকে জানি যারা রাজনৈতিক কারণে বছরের পর বছর অহেতুক ওএসডি হয়ে বসে আছেন। তবে আমার মনে হয় এসব কর্মকর্তাদেরও কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততা প্রদর্শনে আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কোন সরকারের সময় সুবিধা পাবার জন্য অতিরিক্ত মাখামাখি করলে সরকার পাল্টানোর পর খেসারত দিতে হবে বৈকি!
কি সর্বনাশ ভাই। এ যে ইনকুইজিশনের মত অবস্থা।অবশ্য ইনকুইজিশনে মলদ্বারে ডিম ঢুকানো হত কিনা জানা নেই।তবে এই সিস্টেম ওটা থেকে কোন অংশেই কম না।
@অর্ফিউস,
একটা বড় পার্থক্য আছে । মধ্যয়ুগে নির্যাতনে মৃত্যুর হার অনেক বেশী ছিল , নির্যাতনের উদ্দেশ্য হত্যা না থাকলেও। বর্তমানে আটককৃত ব্যক্তির যাতে মৃত্যু না হয় কিংবা বড় ধরনের দৃশ্যমান শারীরিক ক্ষতি যাতে না হয় , সেদিকে মনযোগ দেয়া হয়। মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও সেটার হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে বলা যায়। শুরু থকে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের উপস্হিতি পেশাদারী পর্যায়ে বাধ্যতামুলক। এ বিষয়ে রীতিমত ফিল্ড ম্যানুয়াল আছে যা হাজার বছরের ইমপিরিক্যাল জ্ঞানের উপরে গবেষণা করে লেখা হয়েছে। :))
@সংশপ্তক,
এইটাতো আরও মারাত্বক। চোরা মার। সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না।এই নির্যাতনের চেয়ে মনে হয় মরাও ভাল। 🙁
আমার জানা মতে , ঘুমন্ত মানুষকে বিছানা থেকে টেনে এক কাপড়ে ( যে কাপড় পড়া ছিল !) চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেককে উলঙ্গ অবস্থাতেই গাড়ীতে তোলা হয়। হাত মুখ ধোয়ার সুযোগ নেই। অনেক বড় বড় রথী মহারথীদের দেখা গেছে এসময় বাচ্চার মত কাঁদতে। তবে , যারা ‘অভ্যাসগত ভাবে’ ভোর বেলায় সব সময় উঠেন , তাদেরকে সন্ধ্যার যেকোন সময় ধরা হয়। একটা ব্যপার নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, ‘ব্ল্যাকহোলে’ সুবেহ সাদিকের সময় কারো শারীরিক ও মানসিক অবস্থা টাটকা ও সতেজ থাকার কোন সুযোগ নেই এবং সে সূযোগ দেয়া হয় না। পুলিশের গ্রেফতারের সাথে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার গ্রেফতারের পার্থক্য আকাশ পাতাল। সেখানে পুলিশকে দেবতাই মনে হবে !
আপনার সিরিজটি পড়ে আমাদের অনেক প্রচলিত ধারণা বদলে যাচ্ছে, সংশপ্তক ভাইয়া।
একদম একমত। আমার বরাবরই রিমান্ড নিয়ে সন্দেহ ছিল। রিমান্ডে নির্যাতন চালিয়ে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে দিয়েও অপরাধের স্বীকারোক্তি আদায় করে নেয়া যায়!
বুঝলাম না। ভোরবেলায় মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থাতো টাটকা ও সতেজ থাকার কথা!
সত্যি ভয়ে কাঠ হয়ে আছি! বাড়তি মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
@কেশব অধিকারী,
কেন ? ভীতিকে জয় করা মাঝেই তো লুকিয়ে আছে প্রকৃত মুক্তি ! যার ভীতি নেই তার হারানোর কিছু নেই ।
প্রতিবেদন পাঠপূর্বক প্রতিয়মান হচ্ছে, ‘ক্রস ফায়ারের গল্প’ বেশ আরামদায়ক।
কারণ “ন’মন ঘি-ও হবে না, রাধাও নাচবে না।”
@স্বপন মাঝি,
আজকাল ঘি এবং রাধা সবই আউটসোর্স করে দেয়া যায়। :))
আপনার এই পর্ব কি শুধু বাংলাদেশ বা সমমানের মানবাধিকার ওয়ালা দেশ স্পেসিফিক নাকি ইউনিভার্সেল?
এসপিওনাজ বা এই জাতীয় সন্দেহ ব্যাক্তিদের আটক, রিমান্ড, বিচার এসব মনে হয় সাধারন অপরাধ তদন্ত থেকে ভিন্ন।
মধ্যযুগের নির্যাতন সর্বস্বীকৃত হবার আরেকটি বড় কারন ছিল সে আমলে সকলেরই দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে এভাবে ভয়াবহ নির্যাতনের উদাহরন তৈরী করলে অন্য অপরাধীদের নিরুতসাহিত করবে। এই কন্সেপ্টেই এখনো কিছু দেশে প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়া মৃত্যুদন্ড এসব চালু আছে।
নির্যাতন করে কথা আদায় নিরপেক্ষ তদন্তদের জন্য ক্ষতিকর এটায় আধুনিক যুগের সব অপরাধ বিশেষজ্ঞই একমত হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ অবশ্যই তদন্তের স্বার্থে দরকার, তবে কোন রকম চাপ প্রয়োগে যেন কথা আদায় না করা হয় সেটা নিশ্চিত করা বিচার বিভাগের দায়িত্ব। আমেরিকায় বেশ কছবর আগ থেকেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ম্যান্ডেটরি করা হয়েছে যাতে কোন পক্ষই আদালতে ভিন্ন কিছু দাবী করতে না পারে। তবে এর পরেও আদালত কিছু ক্ষেত্রে শুধু তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রশ্নের ধরন ফরন থ্রেটিং ছিল বা বিধি সম্মত ছিল না এই বিবেচনাতেও স্বীকারোক্তি বাতিল করে দেয়, শারীরিক নির্যাতনের কথা তো অবান্তর। তারপরেও দুয়েকটি ক্ষেত্রে হতে পারে যেটা সিষ্টেমের দোষে নয়।
আমাদের দেশেও জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও করতে হবে এই আইন করলে মনে হয় কণ অপরাধেরই তদন্ত হবে না। ক’মাস আগে প্রথম আলোতে দেশের পুলিশী তদন্ত নিয়ে সিরিজ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল, সেখানেও নিশ্চিত করা হয়েছে এখনো পুলিশী তদন্তে সোজা বাংলায় ধরে নিয়ে বেধড়ক পিটুনী দিয়ে কথা আদায় করাই হল মূল পলিসি। এমনকি সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটও নাকি কাজ করে থাকে অনেকটা লোক দেখানো, টেকনোলজিও খুব নিম্নমানের, যত্নের সাথে এভিডেন্স সংগ্রহ করে, দেখা যায় যে সেসব আদতে কোন কাজেই আসে না।
স্বাভাবিকভাবেই যারা স্বীকারোক্তি ভিত্তিক মামলা আদালতে ঘাগু উকিল ধরলে টেকানো অত্যন্ত কঠিন। আমাদের দেশে নানান দ্বি-চারিতা দৈনন্দিন জীবনের অংশ। বিচার ব্যাবস্থা নিয়েও বড় ধরনের ভন্ডামি থানা পুলিশ, দুই পক্ষেরই উকিল মোক্তার, বিচারক, এমনকি সাধারন জনগন সকলেই করে। সংবিধানে আছে কোন রকম শারীরিক নির্যাতন করা যাবে না অথচ সকলের জ্ঞাতসারেই কাজটি করা হচ্ছে বছরের পর বছর। অভিযোগ আসলে প্রথমে চলে অস্বীকার, মিডিয়ায় বেশী লেখালেখি হলে তদন্ত, তদন্তে সাধারনত কিছু পাওয়া যায় না, আরো লেখালেখি চাপাচাপি হলে লোক দেখানো ক্লোজ করা জাতীয় কিছু। বিচারকের সামনেও পিটিয়ে আধমরা আসামী হাজির করা হলে বিচারকের তেমন ভাবান্তর হয় না।
যুগান্তরের কাটিং থেকে কিছু নুতন ধরনের টেকনিক জানলাম। তবে একটি বাদ গেছে নাকি এখন আর ব্যাবহার হয় না জানি না। পাকিস্তান আমলে থেকেই জনপ্রিয় একটি পদ্ধুতি ছিল ইটা পদ্ধুতি, এতে পুরুষাংগের সাথে ১০ ইঞ্চি ইট বেধে ঝুলিয়ে রাখা হত। এরশাদ আমলেও এর ব্যাবহার হত জানি।
@আদিল মাহমুদ,
ভালভাবে খেয়াল করলে দেখবেন যে, মানবাধিকারের অবস্হা স্ক্যান্ডিনিভিয়ান দু চারটি দেশ ছাড়া প্রায় পৃথিবীর সবখানেই মৌলিক পর্যায়ে বলবার মত নয়। যে দেশ জনগনের মৌলিক চাহিদার ( অন্ন , বস্ত্র , বাসস্হান , চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি ) গ্যারান্টি দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত দিতে পারে না , সে দেশে মানবাধিকার এমনিতেই অনুপস্হিত। তবে, আমার এ লেখা সাধারন ফৌজদারী অপরাধের আসামীদের নিয়ে নয়। আমি এখানে বিশেষভাবে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ সংক্রান্ত পরিস্থিতির উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি।
কিছু পার্থক্য দেশ ভেদে অবশ্যই আছে। তবে , তা কেবলই পদ্ধতিগত। যেমন , রাশিয়া , চীন , দক্ষিন আমেরিকা , এশিয়া সহ আফ্রিকা সাধারনত নিজেরাই নোংরা কাজ করে থাকে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে। কিন্তু ইউরো এবং উত্তর আমেরিকাকে তাদের আন্তর্জাতিক ইমেজের কথাও ভাবতে হয়। সেজন্য তারা এসব নোংরা কাজ আজকাল অন্যান্য গরীব দেশে ‘আউট সোর্স’ করছে এবং নিজেদের হাত সাফ রাখছে।। আপনার ক্রেডিট কার্ড কোম্পানীর কাস্টমার সার্ভিস যেভাবে ভারতে আউটসোর্স করা হয়েছে , ঠিক তেমনি জিজ্ঞাসাবাদের গুরু দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মরোক্কো,জর্দান, মিশরএবং পাকিস্তানকে। এই বিশেষ ব্যবস্হাকে বলা হয় , ‘একস্ট্রা অর্ডিনারী রেন্ডিশন’। নিচে হাজার হাজার উন্মুক্ত রিসোর্সের মধ্যে ড়ার জন্য কয়েকটি দিয়ে দিলাম :
Europe’s extraordinary rendition problem
Impunity at Home, Rendition Abroad
Extraordinary rendition: a backstory
@সংশপ্তক,
Rendition মুভিটা দেখার পর বুঝেছিলাম যে ব্যাবস্থাটা কত ভয়াবহ হতে পারে।
মাসুদ রানায় যে ট্রুথ সিরামের কাহিনী থাকত সেটা কি আসলে চাপাবাজি নাকি? ইনজেকশন দিলেই লোকে সুড়সুড় করে সত্য কথা বলে ফেলত? লাই ডিটেক্টর অবশ্য পুলিশ এফবিআই ব্যাপক হারে ব্যাবহার করলেও আদালতে গ্রহনযোগ্য নয়।
@আদিল মাহমুদ,
ভাল প্রশ্ন। আপনাকে আমি পছন্দ করি যে সব কারণে তার অন্যতম একটি যে আপনি চমৎকার প্রশ্ন উত্থাপন করতে সক্ষম। অনেকেই এটা পারে না।
ট্রথ সিরাম বলে কিছু অদ্যোবধি দুনিয়ায় আবিস্কৃত হয় নি এবং তার পেছনে বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক তাৎপর্য আছে। বৈজ্ঞানিক ভাবে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরও এরকম কিছুর অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি – খুবই সহজ জবাব। দার্শনিকভাবে ‘ট্রুথ’ কি সেটাই একটা বড় প্রশ্ন কারণ কেউ ভূল তথ্যকে সত্য বলে মনে প্রানে বিশ্বাস করলে সেটাই তার জন্য ‘ট্রুথ’। ফিল্ড এজেন্ডদের কাছ থেকে অনেক সময়ই অপারেশনের মূল উদ্দেশ্য গোপন রেখে তাদের অন্য কিছু বোঝানো হয় যাতে ধরা পড়লে কিংবা পয়সার লোভে তারা কিছু ফাঁস না করতে পারে। একজন ফিল্ড এজেন্টকে স্টিং অপারেশনের কথা বলে অনেক সময় আসল জিনিষ হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। সে মনে করবে যে , বিষ্ফোরণ ঘটবে না কারণ বোমাটা ডামি। কিন্তু তার অজান্তেই সে আসল বোমা ‘সাবজেক্টের হাতে তুলে দিয়েছে। এটা তখন আর স্টিং অপারেশন থাকে না। এটাকে বলা হয় ‘ফলস ফ্লাগ’। তবে, সাধারনত এরকম ঘটনা ‘সুইসাইড বম্বিংয়ের’ ক্ষেত্রে ঘটে এবং ‘সাবজেক্টের’ সাথে সাথে ফিল্ড এজেন্টও উপরে চলে যায় ওয়ান ওয়ে টিকেটে । 🙁
আসল পিটুনির চাইতে যেমন পিটুনির ভয় বেশী কাজ করে তেমনি কাজ হয় প্লাসিবোয় । জিজ্ঞাসাবাদে প্লাসিবো (placebo) সিরাম ব্যপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। নিশ্চয়ই জানেন যে , কমপক্ষে ৩০% মানুষের শরীরে যে কোন প্লাসিবো কাজ করে। সাধারণ অবস্হায় মতাদর্শগত কারনে কেউ কিছু স্বীকার করতে বা তথ্য দিতে না চাইলে প্লাসিবোর ব্যবহার তাদের এক ধরনের নৈতিক অজুহাত দান করে। “ভাই জানেন , আমারে ট্রুথ সিরাম না দিলে তাদের বাপের ক্ষমতা ছিল না আমার কাছ থিকা কথা বাইর করে , ইন্জেকশনটা যদি দ্যাখতেন ……..”। এরকম অনেকটা। 🙂
@সংশপ্তক,
নিজের প্রসংশা শুনলে খুবই ভাল লাগে 😀 । দিনটাই ভাল করে দিলেন, হারিকেন টর্নেডো ক’দিন ধরে চলা পঁচা বৃষ্টির বিষন্নতা কেটে গেল।
মাসুদ রানার প্রাথমিক আবেশ কাটার পর নিজেও মোটামুটু বুঝতে পেরেছিলাম যে ট্রুথ সিরাম গোছের কিছু থাকা অসম্ভব। মাসুদ রানার মত কাহিনীতে থাকে যে এই সিরাম পুশ করা হলে শরীরের অভ্যন্তরে প্রচন্ড চুলকানি গোছের কিছু হয় যাতে ব্যাটা সত্য কথা বলতে বাধ্য হয়ে যায়। খুবই হাস্যকর লজিক।
জিজ্ঞাসাবাদে প্ল্যাসিবো সিরামের কথা একেবারেই জানতাম না। এটা কি ড্রাগ জাতীয় কিছু নাকি মানসিক চাপের ব্যাবস্থা?
আশা করি আপনাকে বিসিআই সহসা কোন ফলস ফ্লাগ অপারেশনে প্যান্ট করবে না।
@আদিল মাহমুদ,
জিজ্ঞাসাবাদের সময় মূল লক্ষ্য থাকে বন্দীর মানসিক প্রতিরোধ সম্পূর্ণ রূপে অপসারণ অথবা দূর্বল করে ফেলা যাতে করে বন্দী কোন রকম বাধা ছাড়াই প্রশ্নমালার উত্তর দেয়। সব রকম মানসিক চাপ ব্যর্থ হলে প্লাসিবো ইন্জেকশন দেয়া হয় যা মামুলী ভিটামিন থেকে শুরু করে ডিস্টিলড ওয়াটার পর্যন্ত নির্দোষ যে কোন কিছু হতে পারে। তবে, এটা বন্দীকে জানিয়ে করা হয় মানসিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য। এ ছাড়াও আরেক ধরনের ব্যবস্হা আছে যেটাকে বলা হয় ‘ সাইলেন্ট ড্রাগ’ যা বন্দীর অজান্তে প্রয়োগ করা হয়। এগুলোকে নারকোটিক ড্রাগ বলতে পারেন। তবে, এটার জন্য সদর দপ্তরের অনুমতির প্রয়োজন হয়। বন্দীর ব্যাক্তিত্বের ধরণ এবং মানসিক প্রোফাইল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে পর্যালোচনা করিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক কোন জাতীয় নারকোটিক ব্যবহার করা হবে। এখানে নারকোটিকের ধরণের চাইতেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ বন্দীর ব্যক্তিত্বের ধরণ। এখানে অবশ্য কিছু ঝুঁকি থাকে কারণ পাগলে কিনা বলে আর ছাগলে কি না খায় । হ্যালুসিনেশনে অনেক আবোল তাবোল তথ্য বেড়িয়ে আসে যা মোটেও কাম্য নয়।
(Y)
আয় হায়, কন কি? এইটা কি টিপিক্যাল ইমপ্লান্ট না মাঝে মধ্যে ঘটে? পূর্বশর্ত কি জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ অথবা সন্দেহ না কি একটা হলেই হোল? দেশ ভেদের ব্যাপার আছে নাকি?
ওরেখ্-খাইছে, হুমায়ুন আহমেদও এত পদের মাইরের খবর জানতো না। জানলে হিমুর মুখে শুনা যাইতো। ড-রা-ই-সি 🙂
@কাজী রহমান,
আদিল সাহেবকে নিচে একই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি , দেখুন।
আমার মনে হয় মরহুম হুমায়ুন সাহেব উনার পাঠক কুলের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং হজম শক্তি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন।
অনেক ধন্যবাদ :clap কিন্তু এ রকম আংশিক লেখা দিলেন কেন? :-Y
পরের পর্ব কবে পাবো?
@মহন,
আপনার মন্তব্যটা অনেক দেরীতে ছাড় পেল। আপনি সবার আগে মন্তব্য করেছেন কিন্তু এটা প্রকাশিত হলো সবার পরে। 🙁
সিরিজ লিখতে বসে অনেক কিছু হিসবে রাখতে হয়। সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিটে যাতে একজন পাঠক আমার লেখা পড়ে শেষ করতে পারে সেদিকেও আমাকে লক্ষ্য রাখতে হয়। ব্লগে বিরক্তিকর মহাকাব্য লেখার কারণ আমি অধ্যবধি খুঁজে পাইনি। কিছু না পড়েই বা বুঝেই ‘ খুব ভাল রান্না হয়েছে !” এরকম মন্তব্য আমি আমার লেখায় আশা করিনা। আমি সব সময়ই চাই যে পাঠকেরা আমারা লেখায় নতুণ কেন মাত্রা যোগ করুক। পাঠ্সংখ্যা এখানে গুরুত্ত্বহীন। পরবর্তী পর্ব লেখা প্রায় শেষ , আগামী যে কোন মূহুর্তে মুক্তমনায় ছেড়ে দেব। যথারীতি আমন্ত্রন রইল ! (@) (@)