না, এটি কোন ভাবগম্ভীর প্রবন্ধ নয়। আমার ফেসবুকের একটা সামান্য স্ট্যাটাস ছিল এটি। দু’জন প্রভাবশালী মানুষ – যারা মানবতাকে অকুন্ঠভাবে সমৃদ্ধ করেছেন – তারা চলে গেলেন, কিন্তু ব্লগে কোন লেখা এলো না। তাই ব্লগেও দিয়ে দিলাম। লেখাটাকে কোন সাহিত্যিক মূল্যায়ন নয়, স্রেফ শোকগাথা হিসেবে নিলেই বাধিত হব।
:line:
আমার দু’জন পছন্দের মানুষ চলে গেলেন পর পর … কয়েক দিনের মধ্যে।
এদের একজনকে নিয়ে পত্র-পত্রিকায় তো লেখা হয়েছেই, আমার ফ্রেন্ডলিস্টের অনেকেই স্ট্যাটাস দিয়েছেন, কেউ বা প্রবন্ধও লিখেছেন। ইনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (মৃত্যু: ২৩ অক্টোবর, ২০১২)। বলতে বাধা নেই, সুনীলের অনেক কিছুই আমাকে প্রভাবিত করেছে। ‘প্রথম আলো’, ‘সেই সময়’, ‘পূর্ব পশ্চিম’, ‘মনের মানুষ’ এর মতো গল্প উপন্যাস তো আছেই, তালিকায় আছে অগনিত কবিতাও। ‘কেউ কথা রাখেনি’ কিংবা ‘আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ’ এর মত কবিতাগুলো আমাকে আচ্ছন্ন করতো, এখনো করে পুরোমাত্রায়। আমার মনে আছে আমার অবিশ্বাসের দর্শন বইটার ‘বিজ্ঞানময় কিতাব’ অধ্যায়টায় উল্লেখ করেছিলাম সুনীলের ‘একটা গাছ তলায় দাঁড়িয়ে’ কবিতার সেই বিখ্যাত লাইনগুলো –
‘ … এতগুলো শতাব্দী গড়িয়ে গেল, মানুষ তবু ছেলেমানুষ রয়ে গেল
কিছুতেই বড় হতে চায় না
এখনো বুঝলো না ‘আকাশ’ শব্দটার মানে
চট্টগ্রাম বা বাঁকুড়া জেলার আকাশ নয়
মানুষ শব্দটাতে কোন কাঁটাতারের বেড়া নেই
ঈশ্বর নামে কোন বড় বাবু এই বিশ্ব সংসার চালাচ্ছেন না
ধর্মগুলো সব রূপকথা
যারা এই রূপকথায় বিভোর হয়ে থাকে
তারা প্রতিবেশীর উঠোনের ধুলোমাখা শিশুটির কান্না শুনতে পায় না
তারা গর্জন বিলাসী … ’
সুনীলের পুরো কবিতাটি এক সময় ইংরেজীতে অনুবাদ করেছিলেন ড. জাফরউল্লাহ ইংরেজী ভাষাভাষী পাঠকদের জন্য। অনুবাদটি রাখা আছে এখানে।
আর দ্বিতীয়জন হচ্ছেন পল কার্জ [Paul Kurtz] (মৃত্যু: ২০ অক্টোবর, ২০১২)। ইনি হয়তো বাঙালীদের মধ্যে সেরকমভাবে পরিচিত নন। কিন্তু যারা যুক্তিবাদী এবং বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গঠনের আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত তারা পল কার্জকে খুব ভালভাবেই চেনেন। তিনি বিখ্যাত ‘Center for Inquiry’র প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ‘Committee for the Scientific Investigation of Claims of the Paranormal’ (যেটা CSICOP নামে পরিচিত)-এরও। ভারতে প্রবীর ঘোষরা যেমন, ঠিক তেমনি পাশ্চাত্যে সংশয়বাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিলেন পল কার্জ। তিনিই ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির জন্য সূচনা করেছিলেন ‘সেক্যুলার হিউম্যানিজম’ নামের শক্তিশালী আন্দোলনের। একটা সময় আইজ্যাক আসিমভ কিংবা আজকের দিনের ভিক্টর স্টেঙ্গর, জর্জ স্মিথ সহ বিখ্যাত লেখকদের মুক্তচিন্তার বইগুলো ‘প্রমিথিউস বুক হাউস’ থেকে বেরুচ্ছে সেই প্রমিথিউস বুক হাউসও কিন্তু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পল কার্জ। আমাদের মুক্তমনা আন্দোলনের সাথেও উনি প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে সবসময় ছিলেন। প্রথম দিকে আমার সাথে ইমেইলে যোগাযোগ ছিল। উনার প্রবন্ধগুলো অনুবাদ করার অনুমতি তিনি দিয়ে রেখেছিলেন মুক্তমনাকে। মনে পড়ছে খুব উৎসাহিত হয়ে আমি আর জাহেদ আহমদ মিলে একবার পল কার্জের একটা ইংরেজি লেখা ‘কেন আমি সংশয়বাদী?’ :pdf: শিরোনামে অনুবাদ করেছিলাম। লেখাটা প্রকাশিত হয়েছিল মুক্তান্বেষা পত্রিকায়। উনি পরে জানতে পেরে খুব খুশিও হয়েছিলেন। আজকে ধর্মান্ধরা যেভাবে রিচার্ড ডকিন্স কিংবা স্যাম হ্যারিসদের যমের মত ভয় পান, আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে তারা ঠিক সেভাবে ভয় পেতেন পল কার্জকে। মূলত: আজকের যুগের প্রবীর ঘোষ, রিচার্ড ডকিন্স, স্যাম হ্যারিস, স্টেঙ্গরেরা পল কার্জেরই কাজের সফল উত্তরসূরি। কার্জের একটি বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ছে –
“No deity will save us; we must save ourselves.”
হ্যা, তারা চলে গেছেন। কিন্তু এ চলে যাওয়া আমাদের কাছে ‘প্রস্থান’ নয়। বরং তাঁরা রয়েছেন আমাদের মত মুক্তমনাদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে।
সুনীল এবং পল কার্জের স্মৃতির প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
শ্রদ্ধা!
হয়তো মহাকালের বিচারে সুনীলের খুব অল্প কয়েকটি লেখাই টিকবে। এই বা কম কি! (*)
২০১০ সালে ‘মাউন্ট অলিম্পাসে’ থাকার সময় এই কবিতাটা রেকর্ড করেছিলাম :
সুনীল গাঙ্গুলী – কেউ কথা রাখেনি
@সংশপ্তক,
বাহ! সুন্দর!
@সংশপ্তক,
শুনতে পাচ্ছি না।
তাঁদের জন্যে শ্রদ্ধা আর লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা এই লেখাটির জন্য।
:candle:
@শনিবারের চিঠি,
আপনাকেও ধন্যবাদ!
সুনীল তো আস্তিক ব্রাহ্মণ ছিলেন তবে কবিতাটি ভাল লেগেছে……।।আপনার বিশ্বাস ও বিজ্ঞান বইতে ও আছে মনে হয়
@মেহেদি হাসান,
আপনি মনে হয় সুনীলকে না জেনেই, তার কোন বই না পড়েই মন্তব্য করেছেন । তিনি কোন ব্রাম্মন আস্তিক নন একজন ঘোষিত নাস্তিক ।
তার দু’টি উদ্ধৃতি-
‘আমি পৈতে ছাড়া, গরু-খাওয়া বামন,ভগবান নিয়ে কোনদিন মাথা ঘামাইনি। যে কোন আচার-আচরণ ও বিধি নিষেধ আমার কাছে হাস্যকর মনে হয় ।আমার ধর্ম আমার যুক্তি ।মানুষের ধর্ম মানবতাবাদ ।নিতান্ত আত্মরক্ষার কারনে ছাড়া অন্য কোন মানুষকোত করা উচিৎ নয়-এটাই আমার একমাত্র পালনীয় রীতি।
– ছবির দেশে কবিতার দেশে
‘যারা আস্তিক তাদের প্রতি আমার এই প্রশ্নটি করতে ইচ্ছ করে-তোমাদের ভগবান কি সত্যি সব মানুষকে ভালোবাসেন? এই যে একটা শহর –মনাকো-এখানে কিছু মানুষ নিছক জুয়া খেলাকে কেন্দ্রকরে দিব্যি সুখে আছে ,ভালো খাচ্ছে দাচ্ছে,সব রকম আরাম ভোগ করছেন । আর আমাদের দেশের একজন চাষা উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও দুবেলা খেতে পায় না । তবু তোমরা বলবে সব মানুষের মধ্যে ভগবান আছেন?
– সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
@সফিউদ্দিন আহমাদ,
(Y)
আমিও বলতে চাচ্ছিলাম, তবে আপনি আগেই বলে দিয়েছেন।
মুক্তমনায় স্বাগতম!
@সফিউদ্দিন আহমাদ,
যথার্থ। সুনীলের বহু কবিতায় মেঠেল গতরের কৃষকের রক্ত নির্ঝর বয়ে আনা বঞ্চনার করুণ কাহিনী ঊঠে এসেছে, ধর্মের বর্ম সেই ক্ষতে প্রলেপ দেয় নি কখনোই ।
চবৃত চর্বন – পুরনো একটা কবিতা শোনাই।
http://mukto-mona.net/Articles/keya/ekdin.mp3
@কেয়া রোজারিও,
খুব ভাল লেগেছে। মাঝে মধ্যে মুক্তমনার পাঠকদের চোখকে খানিকটা বিশ্রাম দিতে পারেন, মানে কিছুক্ষণ চোখ বুজেঁ, কিছুক্ষণের জন্য অন্য এক জগৎ দেখে আসা।
মুক্তমনায় কেন সুনীলকে নিয়ে কেউ লিখল না , এটি গবেষণার বিষয় হতে পারে ।কারণ তিনি তো মুক্তমনা দর্শণেরই মানুষ । অন্যদিকে তিনি আদ্যোপান্ত বাঙালি -নজরুলের পর দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় তিনি । মাসুদা ভাট্টির মন্তব্যের সাথে আমি একমত যে-‘ তিনি আমাদের কালের রবীন্দ্রনাথ।’ রবীন্দ্র পরবর্তিকালেএক বুদ্ধদেব বসু কে বাদ দিলে সুনীলের মত এত বিচিত্র বিষয়ে কেউ লেখেনি ।পরিমানেও হয়তো তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে । তার সম্পর্কে আর একটি বিষ্ময় যে তার লেখা একই সাথে জনপ্রিয় এবং শিল্পগুন সম্পন্ন ।জীবন্তকালেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তি ।একই সাথে প্রায় তিন জেনারেশন-পঞ্চাশ ধরে লিখে যাওয়া ,প্রত্যেক জেনারেশনের কাছে সমান জনপ্রিয় হতে পারা এক বিরল প্রতিভা ।
মুক্তমনায় তিনি অনালোচিত থাকা আমার কাছে অবাকই লেগেছে- অভিজিৎ এর মতই ।
বিদায় সুনীল। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোট্ট উপন্যাস “বৃষ্টি পতনের শব্দ” যাঁরা পড়েছেন তাঁরা জানেন বিজ্ঞানের প্রতি কীরকম আগ্রহ তাঁর ছিল। বিবর্তনের পক্ষে এত সরাসরি কথা আমি আর কোন জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখকের চরিত্রে পাইনি।
কিন্তু একটা ব্যাপার আমাদের খুব প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দেয়। এই যে সুনীল মৃত্যুর পর দেহ মেডিকেল কলেজে দান করার কথা বলে গিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রীও জানতেন এবং সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেডিকেল কলেজেই দান করা হবে – সেই সিদ্ধান্ত কেন সুনীল-পুত্র আমেরিকা থেকে ফিরে উলটে দিলেন? কেন সুনীলের দেহ পোড়ানো হলো হিন্দু স্টাইলে? হুমায়ূন আজাদের সময়েও আমরা একই ঘটনা দেখেছি। এটা কি ‘প্রদীপের নিচেই অন্ধকার’ টাইপের কিছু? নাকি অন্য?
@প্রদীপ দেব,
প্রশ্নটা আমারো। এক আপাদমস্তক নাস্তিক তার সন্তানের ধর্মভীরুতার কারণে নতি স্বীকার করলেন, তার শেষ ইচ্ছে অপূর্ণই থেকে গেল।
চলে যাওয়া আর প্রস্থান এর মধ্যে মরে গিয়েও যতটুকু উপস্থিতি, দেহগত নয়, চিন্তাগত।
অর্থাৎ ক্রিয়া।
ব্যক্তিগত ক্রিয়া-র সীমানা ভেঙে যারা, তাদের ক্রিয়ার বিস্তৃতি ঘটিয়ে যান সম্প্রদায় (স্বত্ব দানকারী) এর উর্ধ্বে, মানুষের ঐক্যতানে মুখর, নমস্য সেইসব মানুষদের কাতারে সুনীল কতটা, তার সাক্ষ্য দেবে আগামী। অনেক অনেক লেখা ভাল না লাগলেও “পূর্ব পশ্চিম” এখনো আমাকে কাঁদায়
ওহ, আরেকটা ব্যাপার আগে উল্লেখ করতে ভুলে গেছি,
সুনীলের ‘একটি গাছতলায় দাঁড়িয়ে’ শিরোনামের পুরো কবিতাটি এক সময় ইংরেজীতে অনুবাদ করেছিলেন ড. জাফরউল্লাহ ইংরেজী ভাষাভাষী পাঠকদের জন্য। অনুবাদটি রাখা আছে এখানে-
Standing beneath a shady tree [ Sunil Gongopadhaya, Translation: A.H. Jaffor Ullah]
কার্জকে জানতাম না, তবে সুনীল তো ঐ রকম একজন, যারা কখনো দেখা না দিয়েও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন। সুনীল এমন একজন যার সাথে আপামর বাঙালি পাঠকের নিত্য উঠবোস, যাকে এড়িয়ে যাওয়াটা খুব সহজ নয়। বলতে দ্বিধা নেই, অনেকের মত সুনীল আমারও নিকট আত্মীয় হয়ে উঠেছিলেন একটা সময়, উনার বই খুঁজে বেড়াতাম, আচমকা কোন বই হাতে এলে আনন্দে ভাসতাম, বইটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত একটা ঘোরের ভিতর থাকতাম। এমনই টেনে রাখার ক্ষমতা ছিল উনার! ইংরেজিতে ‘পেইজ টার্নার’ বলে একটা শব্দ ব্যবহৃত হয় নেশা ধরানো বইয়ের বর্ণনায়, সুনীলের অনেক বইয়ের জন্য শব্দটি দারুণ মানানসই। তবে হুমায়ুনের মত সুনীলের অনেক বই পড়েও খুব হতাশ হয়েছি, শেষ দিকে উনার বইয়ের প্রতি মোহ অনেকটাই হৃাস পেয়েছিল। তারপরও উনাকে কি অস্বীকার করা যায়? অনেক দিনের পুরনো আত্মীয়কে কি চাইলেই ভোলা যায়?
কার্জ ও সুনীলের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা! আর অভিজিৎ-দা’কেও ধন্যবাদ এই শ্রদ্ধার্ঘ রচনার জন্য!
(F)
@অভিজিৎ ভাই, সুনীলকে নিয়ে আরেকটা পূর্ণাঙ্গ/বড় লেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি
অভিজিৎদা, সুনীলের কবিতা উপন্যাস পড়ে যৌবন পার করেছি। কেউ কথা রাখেনি আর সত্যবদ্ধ অভিমান কবিতা আবৃত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটু আধটু সুনামও কুড়েছিলাম। বিশেষকরে অ্যালেন গিনেসবার্গ এর সাথে সুনীলের সম্পর্ক আর সাহিত্যে নতুন ধারার প্রচলন – আমাদের খুব প্রলুব্ধ করেছিল “সেই সময়”। লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।
@অসীম,
বাহ, আপনার কবিতা আবৃত্তি তাইলে শুনতে হয় একদিন!
হ্যা, তারা চলে গেছেন। কিন্তু এ চলে যাওয়া আমাদের কাছে ‘প্রস্থান’ নয়। বরং তাঁরা রয়েছেন আমাদের মত মুক্তমনাদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে। 🙁
পল কার্জের ‘কেন আমি সংশয়বাদী?’ পিডিএফের জন্য (F)
@সুব্রত শুভ,
আপনাকেও ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য।
আমার পক্ষ থেকে সুনীল গঙ্গোপধ্যায়ের জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি। আমার পড়া সুনীলের প্রথম বই ‘জীবন যে রকম’। পরে তো খুঁজে খুঁজে অনেকদিন সুনীল কিনেছি ও পড়েছি। আমার তো সেই সময়,প্রথম আলো আর পূর্ব পশ্চিম একটা সিরিজের মত মনে হয়।সময়কে ধরে রেখেছেন। পূর্ব পশ্চিম বইয়ে কলকাতার তুতুল আর বাংলাদেশের সিরাজুল আলমের প্রেমের সার্থক পরিণতি চাওয়ার মত অসাম্প্রদায়িক আবহ সৃষ্টি তো সুনীলের পক্ষেই সম্ভব।ধন্যবাদ অভিজিৎ রায়কে সুনীলকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ গীতাদি।
‘কেউ কথা রাখেনি’ আমি মাঝে মাঝেই পড়ি। পড়েছিও অনেক গুলো উপড়ে সফিকের যেমন হৃদয় ছুঁয়েছে, তাঁর ‘কর্ণ’ আমাকেও ফাঁকি দেয়নি। এই মাত্র মুক্তমনায় ঢুকে দুঃসংবাদটি পেয়ে খারাপ লাগছে। সত্যিই সমকালীন বাংলার অপূরণীয় ক্ষতি হলো। পল কর্জের কথা আমি শুনেছি কিন্তু তাঁর লেখা বলতে গেলে অভিজিৎ রায় আর জাহেদ অহমেদ এর অনুবাদটি ছাড়া পড়া হয়নি। এখন শুনে মনে হলো পড়ার উদ্যোগটার কথা আরো আগেই খেয়াল করা উচিৎ ছিলো।
@কেশব অধিকারী,
আপনার মন্তব্য পেয়ে ভাল লাগছে কেশবদা। পল কার্জ অপরিচিত বলেই সুনীলের পাশাপাশি তার কাজকেও সামান্য হলেও তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। হয়ত এভাবেই আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারব তাদের প্রেরণা।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
সুনীল আমার শোৈশব আর তারুন্যের সুখস্মৃতির একটা বড়ো অংশ দখল করে আছে। বার্ষিক আনন্দমেলায় কাকাবাবুর উপন্যাস তো আছেই। সেই সময়, পূব পশ্চীম, প্রথম আলো এই কয়টা উপন্যাসের জন্যেই তিনি বাংলার মানসপটে অনেকদিন জেগে থাকবেন। দুই বাংলার সামাজিক-রাজনোৈতিক ইতিহাসকে বলতে গেলে তিনিই সবার কাছে নিয়ে এসেছেন। আমরা এখনো উনিশ শতক, দেশবিভাগের আগের বাংলার কথা ভাবতে গেলে অনেকটা সুনীলের চোখেই দেখি।
তবে সুনীলের সবচেয়ে প্রিয় বই আমার ‘কর্ণ’।
ছোটবেলা থেকেই মহাভারতের কর্ণ আমার প্রিয়তম সাহিত্য চরিত্রগুলির মধ্যে একদম উপরে। অনেক পরে হঠাৎ করে যখন একদিন সুনীলের ছোট্ট বই ‘কর্ণ’ হাতে পেলাম, তখনই বুঝলাম সুনীলের চিন্তা-চেতনার সাথে আমার কতটা মিল আছে।
@সফিক,
খুব সুন্দর লাগলো আপনার মন্তব্যটি!
@অভিজিৎ,
মুক্ত-মনাদের জন্য দুসংবাদ হল সুনীলের ইচ্ছাপূরণ হয়নি। উনার শবের পরাজয় ঘটল। উনি উনার শব দান করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা দাহ করা হচ্ছে।জীবিত সুনীলের ছেলে,স্ত্রী, আত্মীয়রা তাঁর কথা রাখেনি।
@গীতা দাস,
হুমম… সুনীলের কবিতাই সত্য হল – কেউ কথা রাখে নি। 🙁
হুমায়ূন আজাদের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে …।
:candle:
এই দু’দিন ধরে তাকিয়ে ছিলাম মুক্তমনার দিকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে কেউ লিখবে এ আশায়। ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। আমার মনে হয় ইতিহাসকে ছবির মত করে আঁকতে সুনীল ছাড়া আর কেউ পারে না। আমার সব চেয়ে প্রিয় ঔপন্যাসিক তিনি।
:candle:
@তামান্না ঝুমু,
ইয়ে … মাঝে মধ্যে অন্যের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেই লিখে ফেলতে হয়। 🙂
আপনার মন্তব্যগুলো থেকে ভালভাবেই বুঝতে পেরেছি সুনীল যথেষ্টই পড়া আছে আপনার। তাঁকে নিয়ে লিখে ফেলতে পারেন কিন্তু!
@অভিজিৎ,
লেখার জন্যে মনে মনে নিয়ত করে ফেলেছিলাম।
সমকালীন বাংলা সাহিত্যের বড় ধরনের ক্ষতি হল, যদিও মনে পড়ে না শেষ কবে ওনার মনে রাখার মত কোন বই পড়েছি।
তবে আমার কাছে উনি চিরকাল বেঁচে রইবেন “সেই সময়” এর কারনে। ইন্টার এর পর সেবার মোহময় জগত থেকে বহি:জগতে বড় ধরনের পদার্পনের সেইই শুরু। সেই সময়, পূব পশ্চীম, প্রথম আলো এসব পড়ার কেবলই মনে হয় আমাদের দিকে এমন জিনিস দেবার মত কেউ নেই কেন।
কাকাবাবু সন্তু এখনো পড়ি।
ভদ্রলোক এক স্মৃতিকাহিনীতে বাল্যকালে দেবীমূর্তির মোহনীয় দেহবল্লরীর আকর্ষনে যৌন কামনা বোধ করতেন জাতীয় কিছু লেখার কারনে শুনেছিলাম মামলা খেয়েছিলেন 😀 । সেই মামলার বিস্তারিত আর জানি না।
@আদিল মাহমুদ,
সেটা একটা উপন্যাস নাম “একা এবং কয়েকজন”। উপন্যাসটি উত্তম ব্যক্তি কথনে লিখিত বলে অনেকেই এই উপন্যাসকে তাঁর স্মৃতিকাহিনী মনে করে ভুল করে থাকে। দেব-দেবীদের রূপকথার কাহিনী ত যৌনতা ও কামকেলিতে ভরপুর। তাদের দেখে কেউ মনে মনে কামনা বোধ করলেও মামলায় পড়তে হয় কেন?
@তামান্না ঝুমু,
আমার যতদূর মনে পরছে সুনীলও কিন্তু এটা যে তার স্মৃতিকাহিনি তা অস্বীকার করেননি। ভুল হতে পারে অবশ্য। অনেক পুরনো মামলা, নেটে এটা ছাড়া কিছু পেলাম না, যেখানে সুনীল বলছেন –
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, উনি নিছকই রসিকতার ছলে কৈশোরে সরস্বতীর মূর্তি দেখে ওনার কামভাব উদ্রেকের কথা খোলামেলা ভাবে বলেছেন তাই, ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, বরং উনি এবং ওনার প্রকাশক মামলাটি সর্ব শক্তি দিয়ে লড়বেন৷
আমি সুনীলের অবস্থান সমর্থন করি।
একজাক্টলি!! ইনসেস্ট, অজাচার, মৈথুন, কামকেলি – সবকিছুই পবিত্র ধর্মগুলোতে খুঁজলে পাওয়া যাবে। কিছু উদাহরণ দিয়েছিলাম এখানে কিংবা এখানে।
@অভিজিৎ,
সুনীলের ‘অর্ধেক জীবন’ অথবা ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ বইতে তিনি লিখেছেন, তাঁর বিয়ের সময় পাত্রীপক্ষ থেকে সামান্য আপত্তি উঠেছিল। কারণ সে পক্ষের কেউ কেউ একা এবং কয়েকজন বইটি পড়েছিলেন। পাত্র সম্মন্ধে তাদের মন্তব্য ছিল,ছেলের জীবনী পড়েই বোঝা যাচ্ছে ওর স্বভাব ভাল নয়। সুনীল লিখেছেন, ওরা তাঁর উপন্যাসটিকে জীবনকথা ধরে নিয়েছিলেন।
উনার শৈশবের কিছু স্মৃতি, কিছু ভাবনা, কিছুটা পারিপার্শিক অবস্থা তিনি হয়ত বাদল চরিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।
@অভিজিৎ, সরস্বতী মূর্তি দর্শনে যৌন ভাবনা আসার কথা লেখা বা মা কালী কে সাঁওতালি মাগী বলা সুনীল মহম্মদের নামে কুকথা লেখায় পশ্চিম বাংলা সরকারের তসলিমার বই নিষিদ্ধ করা কে সমর্থন করেছিলেন. তসলিমাকে কলকাতা থেকে তাড়ানোর বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করেন নি. হিন্দু ধর্মের ভন্ডামি নিয়ে সঠিক ভাবে লিখলেও (মার খাবার ভয় নেই)ইসলাম নিয়ে কোন সমালোচনা করেন নি (চাকু খাবার ভয় আছে).
@তামান্না ঝুমু, এছাড়া আরো একটা মামলা হয়েছিল। সেই সময় নামক উপন্যাসে। লাইনটা ছিল, আমি বুড়ি মাগী। আপত্তি তুলেছিল সুশীল সমাজ। পরবর্তীতে উনার ব্যাখ্যা ছিল, তখনকার সমাজ ব্যবস্হায় বিধবা মেয়েরা এ ভাষায় কথা বলতেন। সুশীলরা মানতে চাইনি। যতদূর মনে পড়ে তখন উনি কালীদেবীকে নিয়ে তখনকার সমাজ ব্যবস্হার একটা প্রচলিত উক্তি কোট করেছিলেন। সুশীলরা আরো ফুঁসে উঠল। মামলা হয়েছিল।
@তামান্না ঝুমু,
বাংলাদেশ এর পবিত্র সংবিধান এর ৩৯ দফা বাক- সাধীনতার, মুক্ত চিন্তার কথা বলে কিন্ত তবুও ড. আসিফ নজরুল এর মত আইন এর Teacher যুক্তিহীন ভাবে আসামী হয় !
তাই বলি সরস এখানে রূপকথা যাহা!!!!!!! :rotfl:
@তামান্না ঝুমু,
আমি কিভাবে বলি রে ভাই। মামলা তো আর আমি ঠুকি নাই :)) ।
তবে নীচে অভিজিতের কথা দেখেন, আমারো মনে পড়ে এটা উনি ওনার স্মৃতিকথা হিসেবেই চালিয়েছিলেন।
ধর্ম নিয়ে বেশী সিরিয়াস চিন্তাভাবনা, জীবনের প্রতি পদক্ষেপে টেনে আনতে গেলে মহা ভজঘট লেগে যেতে বাধ্য, প্রতি পদক্ষেপে গোলযোগ বাধবে।
আমি ঠিক করেছি বাংলাদেশের সব চিকিতসকের বিরুদ্ধে আমার ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগার মামলা ঠুকে দেব। আল্লাহ মানুষকে রোগ বালাই দিয়ে পরীক্ষা করেন সকলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আর এসব ডাক্তাররা আল্লাহর পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের জবাব জনগনকে চোরাই পথে জবাব সাপ্লাই করে পরীক্ষাই অনেক সময় প্রহসনে পরিনত করেন। এটাকে আল্লাহ বিরোধীতা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে। মানুষের পরীক্ষায় নক সরবরাহ করে পাশ করানো অপরাধ হলে আল্লাহর পরীক্ষায় নকল সরবরাহ কেন অপরাধ হবে না?
@আদিল মাহমুদ,
শুধু চিকিৎসক নয়, সকল শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও মামলা করা ফরয। কারণ আল্লার নবী-রাসুলেরা কেউ শিক্ষিত ছিলেন না, জীবনে কখনো স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা ভুলেও তারা উচ্চারণ করেননি। বিদ্যাশিক্ষা পুরোই আল্লা-রাসুল বিরোধি।
কবিতা আমার ওষ্ঠ কামড়ে আদর করে
ঘুম থেকে তুলে ডেকে নিয়ে যায়
ছাদের ঘরে
কবিতা আমার জামার বোতাম ছিঁড়েছে অনেক
হঠাৎ জুতোর পেরেক তোলে!
কবিতাকে আমি ভুলে থাকি যদি
অমনি সে রেগে হঠাৎ আমায়
ডবল ডেকার বাসের সামনে ঠেলে ফেলে দেয়
আমার অসুখে শিয়রের কাছে জেগে বসে থাকে
আমার অসুখ কেড়ে নেওয়া তার প্রিয় খুনসুটি
আমি তাকে যদি
আয়নার মতো
ভেঙ্গে দিতে যাই
সে দেখায় তার নগ্ন শরীর
সে শরীর ছুঁয়ে শান্তি হয় না, বুক জ্বলে যায়
বুক জ্বলে যায়, বুক জ্বলে যায়।
শ্রদ্ধাঞ্জলি– সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
@অনিমেষ,
চমৎকার কবিতাটির জন্য ধন্যবাদ!
সুনীলের লেখা বেশি পড়িনি তবে কাকাবাবু সিরিজের জন্য তিনি আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ছোটবেলায় কতদিন কেটেছে কাকাবাবু আর সন্তুর সাথে দুর্দান্ত সব অ্যাডভেঞ্চারে!! পল কার্জকে চিনতামনা ,আপনার স্ট্যাটাস পড়ে জানতে পারলাম। দুজনের প্রতি শ্রদ্ধা। :candle:
@রামগড়ুড়ের ছানা,
ওহ হ্যা – কাকাবাবুর এডভেঞ্চার যে কত পড়েছি ছোটবেলায়, তার ইয়ত্তা নাই।
গুগলে সার্চ মার। দেখবা নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট সহ সব পেপারেই উনাকে নিয়ে লেখা হয়েছে। খুব ইনফ্লুয়েনশিয়াল ব্যক্তিত্ব ছিলেন আশি আর নব্বইয়ের দশকে। উনার উইকি পেজটাও দেখতে পার –
http://en.wikipedia.org/wiki/Paul_Kurtz
@রামগড়ুড়ের ছানা,
ও হ্যা, ভুলেই গেছিলাম পল কার্জের একটা লেখা একবার অনুবাদ করেছিলাম, আমি আর জাহেদ মিলে। এখানে।