বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আদিবাসী পাহাড়ি চাঙমা বা চাকমা । তাদের রয়েছে হাজার হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য, রীতি-নীতি ও সংস্কৃতি; সমৃদ্ধশালী উপকথা, লোকগীতি, ছড়া, প্রবাদ-প্রবচন ও সাহিত্য। বহু বছর ধরে এই ভাষায় লেখা হচ্ছে অসংখ্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ; রাঙামাটির জুম অ্যাস্থেটিক কাউন্সিল (জাক) কয়েক বছর আগে চাকমা ভাষায় মঞ্চ নাটক করে দেখিয়ে দিয়েছে, এই ভাষাতে ভালোমানের নাটক সৃষ্টি করাও সম্ভব।
চাকমাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও বর্ণমালা। চর্চার অভাবে চাকমা লেখ্য ভাষাটি হারিয়ে যেতে বসেছিলো। তবে এখন আবার ধীরে ধীরে বাড়ছে ভাষাটির লিখিত ব্যবহার। উদ্যোগের অভাবে এতোদিন এই ভাষার ফন্টটি আন্তর্জাতিক বর্ণ সংকেতায়ন বা ইউনিকোডে রূপান্তরিত হয়নি; অথচ এখন ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো ভাষাকে প্রকাশ করার প্রধান পদ্ধতিই হচ্ছে ইউনিকোড। কিন্তু এতো দিন চাকমা ভাষার লিপি ইউনিকোডে না থাকায় সীমাবদ্ধতার আবর্তে আটকা পড়ে ছিল এই ভাষায় জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা ও ভাববিনিময়। এ অবস্থায় শিক্ষিত চাকমারা এত দিন বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ফেসবুক বা ই-মেইলে বাংলা বা রোমান হরফে নিজ ভাষায় লেখালেখি করতেন।
নিজ মাতৃভাষায় লেখালেখির এই সীমাবদ্ধতা দূর করতে দুবছর আগে যৌথভাবে প্রযুক্তিগত গবেষণা শুরু করেন জ্যোতি চাকমা এবং সুজ মরিজ চাকমা। রাঙামাটির তরুণ জ্যোতি চাকমা পেশায় কম্পিউটার প্রকৌশলী ও হিলবিডি ডটকম নামক ব্লগসাইটের নির্মাতা; তার বন্ধু সুজ মরিজ চাকমা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, তারও রয়েছে তথ্য-প্রযুক্তিগত জ্ঞান।
প্রথমে তারা দুজন ভাষা গবেষকদের সহায়তায় প্রাচীন চাকমা বর্ণলিপিটিকে সুসংহত করে এর নাম দেন ‘আলাম’ [চাকমাদের প্রাচীন বয়ন শিল্প কোমর তাঁতের নকশাশৈলীকে বলা হয় ‘আলাম’। জ্যোতি ও সুজ মরিজ সেখান থেকেই করেন ফন্টটির নামকরণ।] এই কাজে তাদের একবছর সময় লেগে যায়। পরের একবছর প্রচুর শ্রম দিয়ে তারা ফন্টটিকে ইউনিকোডে রূপান্তরের জন্য। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সম্প্রতি চাকমালিপি ইউনিকোডে রূপান্তরে সক্ষম হন তারা। জ্যোতি ও সুজ মরিজ যুগলবন্দী উদ্ভাবনের ফন্টটির নামকরণ করেছেন ‘রিবেং ইউনি’ [চাকমা ভাষায় ‘রিবেং’ কথাটির অর্থ গাছের মূল কাণ্ড; আর ইউনিকোডের সংক্ষিপ্ত রূপ ‘ইউনি’। সব মিলিয়ে সদ্য উদ্ভাবিত ফন্ট ‘রিবেং ইউনি’]।
এর সুবাদে উন্মোচন হতে যাচ্ছে চাকমা ভাষা চর্চা ও শিক্ষার অবারিত দুয়ার। খুব সহজেই আন্তর্জাল বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হবে এই ভাষা। ‘রিবেং ইউনি’ ব্যবহার করে অনলাইনে লেখালেখির পাশাপাশি সম্ভব হবে বিভিন্ন ওয়েব ও ব্লগসাইট, ই-বুক, অনলাইনপত্র ইত্যাদি নির্মাণ করা। বাংলা ভাষার পরই এ দেশের অন্য কোনো ভাষা এই প্রথম ইউনিকোডে রূপান্তর হলো।
বলা ভালো, আদিবাসী গবেষকদের মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৭৫টি ভাষাগত সংখ্যালঘু আদিবাসী বসবাস করে। তাদের জনসংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। এর মধ্যে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর পরই চাকমারা সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি ও ১৩টি আদিবাসী পাহাড়ি মিলিয়ে প্রায় ১৬ লাখ লোকের বাস। এদের প্রায় অর্ধেকই পাহাড়ি। আবার তাদের মধ্যে চার লাখেরও বেশি চাকমা জনগোষ্ঠী। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া ভারতের ত্রিপুরা, আসাম, অরুণাচল, মিজোরামসহ অন্যান্য অঞ্চলে অল্প কিছু চাকমা বসবাস করে।
চলতি বছর জানুয়ারির তথ্যানুসারে, বিশ্বে ১০০টি লিপি ইউনিকোডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নানা ভাষার এক লাখ দশ হাজার ১৮১টি অক্ষর স্থান পেয়েছে ইউনিকোডে।
‘রিবেং ইউনি’ উদ্ভাবকদ্বয়, বন্ধুবরেষু জ্যোতি ও সুজ মরিজ এই লেখককে জানান, তাদের নির্মিত ইউনিডট হিলএডু ডটকম – ওয়েবসাইটটি থেকে বিনামূল্যে চাকমা ইউনিকোড ফন্ট ও কিবোর্ড লে-আউট সফটওয়্যার ডাউনলোড করা যাবে। সাইটটি থেকে একই সঙ্গে পাওয়া যাবে কম্পিউটারে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে সেটিংস এবং ফন্টটির নানা খুঁটিনাটি তথ্যও। সাইটটিতে ‘রিবেং ইউনি’ ফন্ট ব্যবহারের নির্দেশাবলিও দেওয়া আছে। প্রযুক্তিগত সহায়তা ও ফন্ট নিয়ে আলোচনার জন্য সাইটে যোগ করা হয়েছে একটি বিশেষ পাতা।
তারা জানান, ভবিষ্যতে তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে রিবেং ইউনিকে পরিবর্তিত নতুন সংস্করণে নির্মাণ করা। ইন্টারনেটে রিবেং ইউনি ফন্টে লেখার টুলস্ সফটওয়্যার এবং মোবাইল ডিভাইস অ্যাপ্লিকেশনও নির্মাণ করতে চান তারা। এরই মধ্যে তারা চাকমা ভাষায় ইন্টারনেটভিত্তিক মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। তবে এসব কাজে প্রচুর অর্থ সহায়তা প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অপর দুই আদিবাসীর ভাষা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা ও সাঁওতালী উইকিতে যুক্ত হওয়ার কাজ এখন দ্রুত এগিয়ে চলছে।
মার্কিন প্রবাসী বিশিষ্ট কম্পিউটার বিজ্ঞানী, মুক্ত জ্ঞানের বিদ্যালয় শিক্ষক ডটকম – এর নির্মাতা, সহব্লগার রাগিব হাসান ‘রিবেং ইউনি’র সাফল্যকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, চাকমা ভাষা ইউনিকোডে রূপান্তর হওয়াটা দারুণ সুসংবাদ। চাকমা ভাষার ইউনিকোড এনকোডিং তৈরি হওয়ার মানে হলো এটি এখন আরো সহজে ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যবহার করা যাবে, নানা সাইটে এই ভাষার ব্যবহার বাড়বে। …আমার জানা মতে, বাংলা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো লিপি ইউনিকোডে যোগ হয়নি। কিছু ভাষা, যেমন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা বাংলালিপিতে লেখা হয়।
বাংলা ইউকি‘র প্রধান উদ্যোক্তা রাগিব হাসান মনে করেন, পৃথিবীর নানা জায়গায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাষাগুলো আজ বিপন্ন। ডিজিটাল তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারই এসব ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে, সংশ্লিষ্ট ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান বিকাশের কাজ ত্বরান্বিত করতে পারে। এ কারণে ‘রিবেং ইউনি’ উদ্ভাবনের পর চাকমা জনগোষ্ঠী নিজস্ব সংস্কৃতির গৌরব টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি আমরা এই ভাষাভাষীর কাছে চাকমা লিপিতেই নানা জ্ঞানবিজ্ঞান পৌঁছে দিতে পারি।
ইউনিকোডভিত্তিকি সাঁওতালি টাইপিং সফটওয়্যার ‘হড় কাথা’ ও সাঁওতালি উইকিপিডিয়ার প্রধান নির্মাতা, সহব্লগার সমর মাইকেল সরেন চাকমালিপি ইউনিকোডে যুক্ত হওয়ায় খুব খুশী। বন্ধুবরেষু সমর মনে করেন, এই নবতর প্রচেষ্টাটির মাধ্যমে আদিবাসীর ভাষা ও সংস্কৃতির গৌরব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিষ্ঠা পাবে আদিবাসীদের মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিটিও।
আমরাও চাই, চাকমা ভাষার মতো এদেশের পাহাড় ও সমতলের অপরাপর পশ্চাৎপদ, নির্যাতীত-নিপীড়িত আদিবাসীর ভাষা আন্তর্জালে জ্যোতি ছড়াক সারা বিশ্বে; অমর একুশের গৌরবের বাংলা ভাষার পাশাপাশি মাতৃভাষার শিক্ষাদীক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক আদিবাসী মানুষের।
________
সংযুক্ত: ‘রিবেং ইউনি’তে লেখা হবে চাকমা ভাষা, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ৬ অক্টোবর ২০১২।
ছবি: চাকমাদের বিঝু উৎসবে নৃত্যরত শিশু, টিটু চাকমা এবং চাকমা বর্ণমালা, লেখক, উইকিপিডিয়া।
অসাধারণ তথ্যবহুল লেখা বিপ্লব দা। আপনার কাছে কৃতজ্ঞ এই গৌরবের বিষয়টি তুলে আনার জন্য। ভাষার ঋদ্ধতা নিয়ে আমাদের সবার আরও কাজ করা উচিত।
@শনিবারের চিঠি,
আবারো সঙ্গে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। (Y)
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফন্ট ও টাইপোগ্রাফী সম্বন্ধে মুক্ত আলোচনা মুলক ওয়েবসাইট TYPOPHIL ফোরামে পোল্যান্ডের অধিবাসী Jan Żurawski রিবেং ইউনি চাকমা ইউনিকোড ফন্ট নিয়ে একটি টপিক লিখেছেন। নিচের লিংকে ক্লিক করে উক্ত ফোরামে আপনার মূল্যবান মন্তব্য লিখুন।
@জ্যোতি চাকমা,
শাবাশ! (Y)
I want to kind attention for all Visitor. Here is the “RibengUni” Chakma Font license confirmed massage by Adobe Corporation:
RibengUni Chakma Font License Information:
License URL: http://scripts.sil.org/OFL
Copyright (c) 2012, http://www.ribeng.net,
with Reserved Font Name RibengUni.
This Font Software is licensed under the SIL Open Font License, Version 1.1.
This license is copied below, and is also available with a FAQ at:
http://scripts.sil.org/OFL
———————————————————–
SIL OPEN FONT LICENSE Version 1.1 – 26 February 2007
———————————————————–
PREAMBLE
The goals of the Open Font License (OFL) are to stimulate worldwide
development of collaborative font projects, to support the font creation
efforts of academic and linguistic communities, and to provide a free and
open framework in which fonts may be shared and improved in partnership
with others.
The OFL allows the licensed fonts to be used, studied, modified and
redistributed freely as long as they are not sold by themselves. The
fonts, including any derivative works, can be bundled, embedded,
redistributed and/or sold with any software provided that any reserved
names are not used by derivative works. The fonts and derivatives,
however, cannot be released under any other type of license. The
requirement for fonts to remain under this license does not apply
to any document created using the fonts or their derivatives.
DEFINITIONS
“Font Software” refers to the set of files released by the Copyright
Holder(s) under this license and clearly marked as such. This may
include source files, build scripts and documentation.
“Reserved Font Name” refers to any names specified as such after the
copyright statement(s).
“Original Version” refers to the collection of Font Software components as
distributed by the Copyright Holder(s).
“Modified Version” refers to any derivative made by adding to, deleting,
or substituting — in part or in whole — any of the components of the
Original Version, by changing formats or by porting the Font Software to a
new environment.
“Author” refers to any designer, engineer, programmer, technical
writer or other person who contributed to the Font Software.
PERMISSION & CONDITIONS
Permission is hereby granted, free of charge, to any person obtaining
a copy of the Font Software, to use, study, copy, merge, embed, modify,
redistribute, and sell modified and unmodified copies of the Font
Software, subject to the following conditions:
1) Neither the Font Software nor any of its individual components,
in Original or Modified Versions, may be sold by itself.
2) Original or Modified Versions of the Font Software may be bundled,
redistributed and/or sold with any software, provided that each copy
contains the above copyright notice and this license. These can be
included either as stand-alone text files, human-readable headers or
in the appropriate machine-readable metadata fields within text or
binary files as long as those fields can be easily viewed by the user.
3) No Modified Version of the Font Software may use the Reserved Font
Name(s) unless explicit written permission is granted by the corresponding
Copyright Holder. This restriction only applies to the primary font name as
presented to the users.
4) The name(s) of the Copyright Holder(s) or the Author(s) of the Font
Software shall not be used to promote, endorse or advertise any
Modified Version, except to acknowledge the contribution(s) of the
Copyright Holder(s) and the Author(s) or with their explicit written
permission.
5) The Font Software, modified or unmodified, in part or in whole,
must be distributed entirely under this license, and must not be
distributed under any other license. The requirement for fonts to
remain under this license does not apply to any document created
using the Font Software.
TERMINATION
This license becomes null and void if any of the above conditions are
not met.
DISCLAIMER
THE FONT SOFTWARE IS PROVIDED “AS IS”, WITHOUT WARRANTY OF ANY KIND,
EXPRESS OR IMPLIED, INCLUDING BUT NOT LIMITED TO ANY WARRANTIES OF
MERCHANTABILITY, FITNESS FOR A PARTICULAR PURPOSE AND NONINFRINGEMENT
OF COPYRIGHT, PATENT, TRADEMARK, OR OTHER RIGHT. IN NO EVENT SHALL THE
COPYRIGHT HOLDER BE LIABLE FOR ANY CLAIM, DAMAGES OR OTHER LIABILITY,
INCLUDING ANY GENERAL, SPECIAL, INDIRECT, INCIDENTAL, OR CONSEQUENTIAL
DAMAGES, WHETHER IN AN ACTION OF CONTRACT, TORT OR OTHERWISE, ARISING
FROM, OUT OF THE USE OR INABILITY TO USE THE FONT SOFTWARE OR FROM
OTHER DEALINGS IN THE FONT SOFTWARE.
@Suz Moriz,
শাবাশ সুজ মরিজ। আপনাদের জন্য রইলো অনেক অভিনন্দন, শুভ কামনা। জয় হোক। (F) (Y)
ধন্যবাদ বিপ্লব দা,
আপনার কাছে আমরা আসলেই ঋণী হয়ে গেলাম। আপনার সহযোগীতা না পেলে হইতো এত প্রচার হতোনা। আপনার প্রচারের কারনে আমরা যথেস্থ সাড়া পাচ্ছি। আমরা প্রথমে রিবেং ইউনির যে ভার্শনটি প্রকাশ করেছি তা Preview Version। এতে কিছু চিহ্ন অপূর্ণ ছিলো। দু/তিন দিন আগে রিবেং ইউনি Final & Full Version এর কাজ শেষ করেছি। সাথে সাথে Copyright & OFL License ও করেছি। এই কয়েকদিন একটু ব্যস্থ থাকার কারনে Final & Full Version টি Upload করতে পারছিনা। আশা করি কিছু দিনের মধ্যে দিতে পারবো।
আরেকটি সুখবর হলো Microsoft Corporation আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে এবং আমাদের সহযোগীতা চেয়েছে। আমাদের জানিয়েছে পরবর্তী Windows Version এ Unicode 6.1 Version কাজ করবে এবং চাকমা Language যোগ করবে।
@জ্যোতি চাকমা,
সুপ্রিয়, ধন্যবাদ, অভিনন্দন তো আপনাদেরই প্রাপ্য। আমি নিছক পোস্টম্যান ছাড়া তো কিছু নই। অসাধরণ কাজ দেখিয়ে চলেছেন আপনারা। সর্বাত্নক সাফল্য কামনা। (F) (Y)
চাকমা ভাষাভাষীদের জন্য শুভকামনা রইল। আপনি চাকমাদের কখনো আদিবাসী আবার কখনো জনজাতি বলছেন, দুটো টার্মই ভারতীয় সূত্র থেকে ধার করা। আদিবাসী টার্মটি ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছিলাম, সে সমস্যা এখনও কাটে নি। জনজাতি টার্মটি প্রচলনের আগে সে বিষয়েও আগে থেকেই গভীরভাবে ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করি।
@চলনামৃত,
বিনীত পাঠ ও মতমতের জন্য ধন্যবাদ।
প্রচণ্ড দ্বিমত। চাকমাদের বরাবরই আদিবাসী পাহাড়ি বলে মনে করি, জনজাতি নয়; এই লেখার শুরুতে একবারমাত্র ভুলবশত: ‘জনজাতি’ কথাটি লেখা হয়েছিলো, সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে। আর ‘আদিবাসী’ কথাটি কখনোই ভারতীয় সূত্র থেকে ধার করা নয়, এমনকি প্রাপ্তও নয়।
বরং অখণ্ড ভারতবর্ষ আমল থেকে এই অভিধাটি ব্যবহৃত হচ্ছে, পূর্ব বাংলাতেও। যতদূর জানি, নিখিল ভারত কমিউনিস্ট পার্টি ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ বা সান্তাল হুল’কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে প্রথম ‘আদিবাসী’ অভিধাটি ইংরেজী ইন্ডিজিনাস/ট্রাইবাল শব্দের বদলে ব্যবহার করে; সেই থেকে অভিধাটি সর্বত্রই বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
‘আদিবাসী’ অভিধাটি ব্যবহারে কি ধরণের সমস্যার কথা বলছেন, ঠিক বুঝতে না পারলেও এটি পরিস্কার বাংলা ভাষায় অভিধাটি অন্তত সাত-আট দশক ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর পাবর্ত্য চট্টগ্রামের চাকমারা আভিধানিক অর্থে তো বটেই, এমন কি আক্ষরিক অর্থেও আদিবাসী। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
পশ্চিম বাংলা এবং হিন্দীভাষী উত্তর ও মধ্য-ভারতে মুন্ডা ও দ্রাবীর ভাষাভাষী ট্রাইবালদের আদিবাসী নামে অভিহিত করা হয় বহু আগে থেকে, এ বিষয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু পূর্ব বাংলায় মুন্ডা ভাষাভাষী সমতল বাসী এবং পাহাড়ে বসবাসকারী ট্রাইবালদের আদিবাসী বলা হতো না, বলা হতো উপজাতী। কারনটাও খুবই পরিস্কার, আক্ষরিক অর্থে এঁরা কেউই পূর্ব বাংলার আদিবাসী নয়। পশ্চিম বাংলার পুরুলিয়া, বীরভূম, মেদিনীপুরের কিছু অঞ্চলে মুন্ডারীরা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই বসবাস করে, সে হিসেবে তাঁরা অবশ্যই অভিধার দাবীদার, কিন্তু পূর্ব বাংলায় মুন্ডারীদের আগমন খুব বেশীদিন আগে নয়। সেন রাজাদের আমলে, প্রধানতঃ বল্লাল সেনের আমলে সাঁওতালদের নিয়ে এসে বাংলার বরেন্দ্র অঞ্চলে পত্তনী দেয়া শুরু হয়েছিল কৃষি শ্রমিক হিসেবে (সূত্রঃ গৌড় রাজমালা-অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, বাংলার সামাজিক ইতিহাস-দূর্গালাল সান্যাল)। সুতরাং পূর্ব বাংলার বাংলা ভাষায় আদিবাসী অভিধাটি অনেকদিন থেকে ব্যাবহৃত হচ্ছে না, কয়েক বছর হলো কয়েকটি এনজিও, প্রথম আলো এবং আপনাদের মত কিছু ব্যাক্তিবর্গ এটি ব্যাবহার করছে।
অপরদিকে বৃটিশরা স্বতন্ত্র চিটাগং হিল ট্রাক্টস ডিস্ট্রিক্ট প্রতিষ্ঠা করার আগে পর্যন্ত সমূদয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বৃহত্তর চট্টগ্রামের একটি অংশ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত ছিল। সমগ্র চট্টগ্রামের মধ্যে প্রথম বসতি স্থাপনকারী হলো মগ নামধারী জনগোষ্ঠী। তবে এই মগ বর্তমানের রাখাইন কিংবা মারমা নয়, তারা মূলতঃ ছিল মগধের(বর্তমান বিহার রাজ্য) হীনযানী বৌদ্ধ। হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থানের সময়ে তারা পালিয়ে এসে চট্টগ্রাম ও আরাকানে বসতি গড়ে, সেটা চতুর্থ-পঞ্চম খৃষ্টাব্দের কথা। এর পরে ধীরে ধীরে আদি মগেরা বিলুপ্ত হয়ে যায় আরাকানী বৌদ্ধদের মাঝে, আর চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত ও বিস্তারিত হতে থাকে প্রথমে হিন্দু, পরে মুসলমান বাঙালীরা। এসবের বহু পরে, অষ্টাদশ শতকে বর্মী রাজা আরকানে অভিযান ও তা দখল করে নিলে আরাকান থেকে চাকমা সম্প্রদায়ের একটি দল পালিয়ে এসে চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। তখন জনসংখ্যার স্বল্পতা হেতু এবং সমতলে ভূমির প্রাচুর্য হেতু বাঙালীরা কষ্টকর পাহাড়ী জীবন বেছে নিতো না। সূ্ত্রঃ ইসলামাবাদ-আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ, চাকমা জাতি-সতিশ চন্দ্র ঘোষ, ট্রাইবস্ এন্ড কাষ্ট অব বেঙল- মিঃ রিজলী। সুতরাং আপনি চাকমাদের সম্পর্কে কি মনে করেন সেটা মোটেই গুরুত্বপূর্ন কোন ব্যাপার নয়, ইতিহাস এবং বাস্তবতাই গুরুত্বপূর্ন।
@চলনামৃত,
চাকমা ভাষার ইউনিকোডে রূপান্তর প্রসঙ্গ থেকে বিষয়টি যদিও আদিবাসীর সঙ্গা বিষয়ক এড়ে তর্কের দিকেই যাচ্ছে, তবু দু-একটি কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি।
০১. আপনি আদিবাসীর সঙ্গা দিয়ে ভালোই করেছেন। কিন্তু এতেও প্রমাণিত হলো না যে, চাকমারা আক্ষরিক অর্থে তো বটেই, এমনকি আভিধানিক অর্থেই আদিবাসী নয়।
০২. বিশিষ্ট আদিবাসী লেখক মিথুশিলাক মুরমু বলছেন:
[লিংক]
০৩. এরপরেও না হয় মানলাম, চাকমরা আপনার ভাষ্যমতে বহিরাগত (?)। কিন্তু তারা উপজাতি হতে যাবেন কেনো? আর আপনার এই কথায় অনেকদিন পর খুব প্রাণ খুলে হেসেছি ভাই:
:lotpot:
০৪. এ পর্যায়ে আপনার বটম লাইনটি বোধহয় আপনার জন্যই প্রযোজ্য:
🙂
০৫.
আপনার এই কথাটি কী আরেকটু বিস্তারিত ব্যাখ্য দেবেন? নাকি সমস্যার কারণেই আদিবাসীরা এখন উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠি/বহিরাগত? আর বাঙালিরাই আদিবাসী? 😉
অনেক ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান,
এরকম হয়েছে, কারন আপনি এর মধ্যে অযাচিত ভাবে এর মধ্যে জনজাতি, আদিবাসী এই শব্দগুলো নিয়ে এসেছেন। এ বিষয়ে সময়মত সচেতন না হলে কি পরিণতি হয়, তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
এগুলো আদিবাসীদের বৈশিষ্ট? বইটা বোধ হয় বাংলায় লেখা তাই না? না হলে সেখানে “আদিবাসী” এই বাংলা শব্দটি থাকার কথা নয়।
আমি তো আর তাদের উপজাতি অভিধায় ভূষিত করি নি, তখনকার কোন অবিবেচক পন্ডিত ট্রাইবাল এর এই অর্থ ব্যবহার করেছিল, যেটা পরে প্রচলিত হয়ে গিয়েছিল। সেটা কোন শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হবে, সেটা ইচ্ছামত চাপিয়ে দিলে তো হবে না, শব্দচয়ন যুক্তিসম্মত হতে হবে।
আপনার কারনে অকারনে হাসির ব্যারাম দেখে আমার হাসি আসছে না, করুনা বোধ করছি।
@চলনামৃত,
তালগাছ আপনার। 😛
প্রথমে অভিনন্দন ‘রিবেং ইউনি’ এর উদ্ভাবকদের।
তবে চাকমা ভাষার পাশাপাশি মারমা,ত্রিপুরা,ম্রো সহ অন্যান্য ভাষারও বিকাশের সুযোগ হোক এ প্রত্যাশা। কারণ আমি এখন কর্মসূত্রে প্রায়শঃই পার্বত্য চট্টগ্রামে যাই এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠির সাথে কথা বলি। তারা মনে করে তাদের ভাষার বিকাশে অন্তরায় চাকমা ভাষার আদিপত্য বাংলার চেয়ে কম নয়।
@গীতা দি,
আপনার পর্যবেক্ষণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, হয়তো পাহাড়ে চাকমারা সংখ্যা বেশী বলে সেটি কোনো কোনো অঞ্চলের খুব ছোটমাপের আপাত কোনো সমস্যা। কিন্তু পাহাড় ও সমতলে সংখ্যাগুরু বাঙলা ভাষার নির্মম আধিপত্য সত্যিই তলিয়ে না দেখলে বোঝা মুশকিল। এটি কথ্য ভাষার ক্ষেত্রে তো বটেই; লিখিত ভাষার ক্ষেত্রে আরো বেশী। আর আদিবাসীর মাতৃভাষায় পাঠ গ্রহণের ক্ষেত্রে আধিপত্যটি আরো জটিল মনোস্তাত্ত্বিক।
আমার একটি লেখা থেকে খানিকটা উদ্ধৃতি দিচ্ছি, বিষয়টি আরো পরিস্কার করে বোঝার জন্য:
[লিংক]
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। (Y)
খুবই আনন্দের সংবাদ। ঠিক এই মুহূর্তে আমার স্কুল জীবনের বন্ধু দু’ভাইবোন শুভম দেওয়ান আর বুড়ির কথা মনে পড়ছে! সংবাদটা নিশ্চয়ই এতোক্ষনে ওদেরও গোচরীভূত হয়েছে। ওদের আনন্দের কথা ভেবে আমার আরোও ভালো লাগছে!
আমাদের দেশের প্রান্তিক ভাষাগুলোর ব্যপারে একটা সমন্বিত উদ্যোগ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে নেওয়া দরকার। যে ৭৫ টি আদিবাসী ভাষার কথা বললেন, সেই ভাষা গুলো যাতে হাড়িয়ে না যায় বরং নবরূপে ফিরে আসে আজকের ডিজিটাল জগতে সেই উদ্যোগের পেছনে কি ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে? সেরকম তথ্য কি আছে? এব্যপারে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের একটা সমন্বিত গবেষনা মূলক উদ্যোগ এই ছোট্ট দেশটির মানুষ গুলোর জন্যে কি একেবারেই অসম্ভব? সম্ভব হলে এব্যপারে বিস্তারিত জানার আগ্রহ রইলো।
@কেশব অধিকারী,
আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ। দেশের আদিবাসীর অধিকার আদায়ে যে সব রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো কাজ করছে, ভাষা নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ তাদের খুবই কম। লক্ষ্য করে দেখবেন, রিবেং ইউনি বা হড় কথা’র সব কাজই হয়েছে ব্যক্তি উদ্যোগে, নিজস্ব শ্রম ও অর্থের বিনিময়ে। সহযোগি সংগঠনগুলো এগিয়ে এসেছে অনেক পরে, তা-ও কাঙ্খিত মাত্রায় নয়, সীমিত আকারে। …
আসলে ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি রক্ষার আন্দোলনটি চাপা পড়ে গেছে আদিবাসীর অস্তিত্ব রক্ষার মূল লড়াইয়ের আড়ালে। এটিই এখন প্রধান ও আশু লড়াই। (Y)
মি. বিপ্লব, দারুণ লিখেছেন। তবে সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, ‘আলাম’ ফন্টির নামকরণ আমি করেছিলাম।
@Shuvra Jyoti Chakma,
প্রিয় শুভ্র, আপনাকে এখানে দেখে খুবই ভালো লাগছে। ‘আলাম’ নামকরণ আপনার তা জেনে আরো খুশী হলাম। নিশ্চয়ই রিবেং ইউনি’র সঙ্গে আপনার নামটিও সর্বত্র শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হবে। অভিনন্দন রইলো। (Y)