কোরিয়ান ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে বুক-সেলফ এ বইটা পেয়ে যাই হঠাৎ করে। এভাবে এই কাহীনি লিখতে বসবো ভাবার্থ আকারে, ভাবিনি। কিন্তু বসে গেলাম শেষতক। আদৌ শেষ হবে কিনা জানিনা। যতক্ষন শ্বাস, ততক্ষনই তো আশ। তাই শুরু করলাম। দেখা যাক কতোদূর গিয়ে থামতে হয়। কাহীনি পড়তে পড়তে মনে হয়েছে গোটা পৃথিবীর সংগ্রামী মানুষের জীবনালেখ্য প্রায় একই। তাই মুক্তমনা পাঠক কূলের সাথে ভাগাভাগি করার সিদ্ধান্ত নিলাম। তাৎক্ষনিক ভাবে তুলে দেওয়া বলে ভুলভ্রান্তি রয়েছে বিস্তর। দেখিয়ে দিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন। বইটা লিখেছেন এইচ, কে, সিন (H. K. Shin)। ইনহা ইউনিভার্সিটি প্রেস বইটি প্রকাশ করেছে ২০০০ সালে। আমি প্রেস এর সাথে যোগাযোগ করেছি, মৌখিক একটি অনুমতিও মিলেছে। তবে বইটির লেখক, যিনি ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বর্তমানে আমেরিকাতে রয়েছেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা আর গবেষনা কাজে। তাঁর কাছে লিখিত ভাবে অনুমতি চাওয়া হয়েছে, আশা করি মিলবে তা, প্রেস আমাকে আস্বস্ত করেছে। এই নিরীখে আজ উপক্রমনিকার একটি অংশ পাঠকবৃন্দের উদ্যেশ্যে নিবেদিত হলো।
কোরিয়া ১৯৫০: এক কিশোর সৈনিকের স্মৃতিগাঁথা
উপক্রমনিকাঃ
জাপানী দখলদারদের স্বরূপ, স্বাধীনতা এবং যুদ্ধ
কোরিয়ার অনেক কাল আগের কথা, অথচ ঠিক গতকালের ঘটে যাওয়া বিশুদ্ধ স্বচ্ছ ছবির মতোই আমার মনে আছে ১৯৫০, বাল্যকালের আরোও আরোও ঘটনার চাইতেও আনেক বিশুদ্ধ সে স্মৃতি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আজকের প্রৌড়ত্ত্বের ঘরে পৌঁছিয়েও সেই অর্ধশতাব্দীরও বেশী পুরানো ঘটনা গুলোকে আজো এতো জীবন্ত মনে হয় যেনো এই কয়েক ঘন্টা আগেই সেই ভয়াল মুহূর্ত গুলোকে আমি স্পর্শ করে এসেছি। আজো আমি কোরিয়া যুদ্ধের দুঃস্বপ্নের রাত গুলোকে অবিরাম ঘেমে নেয়ে অতিক্রম করি। নিজেকে আবিষ্কার করি যুদ্ধরত উত্তর কোরিয়ার কোন রণাঙ্গনে, দাঁড়িয়ে আছি সারি সারি খাঁড়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী কোন ধুলিময় নোংড়া পথের বাঁকে, অথবা হয়তো রয়েছি কোন মিলিটারী কনভয়ের ভেতরে যেখানে উদ্ধার করা হয়েছে কোন যুদ্ধাহতকে আরো অনেকের সাথে উত্তরের রাজধানী পিয়ংইয়ং এর রণাঙ্গন থেকে। কখনো হয়েছি গুলিবিদ্ধ উত্তরকোরীয় সৈনিকদের অব্যর্থ আঘাতে কিংবা হয়তো উঁচু পাহাড়ের ধার ঘেঁষে অবস্থান নেওয়া চীনা কমিউনিষ্ট সৈনিকদের আকস্মিক আক্রমনে, আর বার বারই সেই ছুঁড়ে দেওয়া বুলেট গুলো আশ্চর্য্যজনক ভাবে আমাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো যেনো আমার হাত এবং দেহ ছিলো বরফে আচ্ছাদিত নতুবা গ্রীজে সিক্ত। কখনো কখনো আমার কাঁধে ঝুলানো রাইফেলটাকে আঁকড়ে ধরেছি স্বজোরে, কিন্তু বার বার ওটা পিছলে সরে যাচ্ছিলো, যেনো আমি বরফাচ্ছাদিত কিংবা গ্রীজে মাখামাখি হয়ে পিচ্ছল হয়ে আছি। অথবা হয়তো আমি পড়ে গিয়েছি মাটিতে এক দুরন্ত বুলেট কিংবা চক্ চকে ধারালো একফালি ধাতবের আঘাতে। কিন্তু তবুও আমি প্রবল পরাক্রমে তখনো অবিরাম অতিক্রম করে চলেছি চড়াই-উৎরাই বুকে ভর করে নতুবা হামাগুড়ি দিয়ে। কোন অফিসার সেখানে নেই যে দিক নির্দেশনা দেবে আমাদের। আমার দুঃস্বপ্নের ভেতরে শুধু তারাই, যারা যুদ্ধের পোষাকে মাত্র কয়েকজন কিশোর অবিরাম প্রতিহত করছে প্রতিপক্ষ আর আগলিয়ে রাখছে একে অপরকে। সময়টি ছিলো শীতের স্বাভাবিক তুষারপাত আর ভয়ঙ্কর শীতের চাদরে মুড়নো। অথচ এতোটুকুও ঠান্ডার অনুভুতি ছিলোনা আমার। সাথীদের কেউ কেউ অনুভব করছিলো সাইবেরীয় শৈত্য প্রবাহের কঠিনতম প্রহর। আমার স্বপ্নভঙ্গ হতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য মত্যুঞ্জয়ী সৈনিকদের অসার দেহ অথবা কাৎরাতে থাকা আহত সৈনিককে টপকিয়ে আরেকজন আহত সঙ্গীকে টানতে টানতে যখন অতিক্রম করি কোন পাহাড়ি পথের বাঁক। কখনো কখনো আমি কথা বলতাম সেই সব মৃত্যুঞ্জয়ী সৈনিকদের সাথে যদিও জানতাম ওরা আর নেই আমাদের মাঝে। অঝোড়ে কাঁদতাম আমি এই বলে যে, ‘আমি চাইনি, সত্যি আমি চাইনি এই মৃত্যু-উপত্যকার জন্ম হোক’। এইসব মৃতদের ভীড়ে অনেক মুখই ছিলো আমার স্বজনের মতো পরিচিত, যুদ্ধের ময়দানেই আমরা বন্ধু হয়েছিলাম পরষ্পরের। আর যারা ছিলো, সংখ্যায় অগনিত, যাদের আমি দেখিনি কখনো আগে, কি যে মনোরম মুখখানা তাদের, ভাবলেশহীন ঘুমিয়ে থাকা কিশোরের মতো।
১৯৫০ এর মধ্য ডিসেম্বর, আমি তখন প্রজাতান্ত্রিক কোরিয়া সেনা বাহিনীর একজন কর্পোরাল হিসেবে সদ্য অগ্রগামী সেনা-পুলিশ যোদ্ধাদলের বি-কোম্পানীর দায়িত্ত্ব পেয়েছি, ঘাঁটি গেড়েছি কেসং শহরের অদূরেই, ৩৮তম সমান্তরাল রেখার একেবারেই কাছে। তখন আমার বয়স কতো হবে, ষোল। কোরিয়া যুদ্ধ শুরুর প্রায় ছ’মাস হলো, একটা বিতর্ক থেকে যে যুদ্ধের শুরু, ক্রমে তা বিস্তার লাভ করে হয়ে উঠলো সর্বগ্রাসী! ভয়ঙ্কর রূপ নিলো যখন চীনা কমিউনিষ্ট সেনারা আপ্রোক-কাং অতিক্রম করতে শুরু করলো। বিশেষ করে মধ্য ডিসেম্বরে প্রত্যেক কোরিয়ান নাগরিকের জীবন ধারন করে থাকাটাই দুষ্কর হয়ে উঠলো, ১৯৫০ এর এই যুদ্ধের ভয়াবহতায়। এই যুদ্ধে কোরিয়া উপত্যকা এক বিপদ সংকুল এলাকায় রূপান্তরিত হলো। কেউ কেউ বলতো আমেরিকান পুলিশের ক্ষিপ্রতা এবং দুর্ধর্স্যতার সংগেই কেবল তুলনীয়। সম্পূর্নটাই যেনো ছিলো সবকিছু ধুলিস্যাৎ করে দেবার মতো ভয়াবহ, প্রচন্ড ক্ষীপ্রতা আর মারাত্মক রকমের ভীতিকর ও বিভিষিকাময় প্রচন্ডতা। নভেম্বরের শুরুতে চীনা কমিউনিষ্ট সৈন্যেরা যখন সাধারনের উপরে আক্রমন শুরু করে, আমরা তখন উত্তর কোরিয়া প্রদেশের একেবারেই ভেতরে, রাজধানী সিউল পুনরুদ্ধারের পরে। এই সময় পর্যন্ত আমরা ভাবতাম শেষ পর্যন্ত আমরা শীঘ্রই যুদ্ধে জয়ী হতে যাচ্ছি! সম্মুখ সমরে আমার কোম্পানী বিভিন্ন স্থানে ঘাঁটি গাড়তে থাকে। পিয়ংইয়ং শহরের বাইরের চারদিক যখন চীনা সৈন্যেরা ঘিড়ে ফেলে, তাদের সেই প্রবল চাপে ডিসেম্বরের শুরুতে আমরা বাধ্য হই পিয়ংইয়ং থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে। পিয়ংইয়ং থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেবার সময় আমাদের দায়িত্ত্ব ছিলো, দক্ষিন থেকে পিয়ংইয়ং এর পথে মিত্র বাহিনীর রসদ সরবরাহ নিশ্চিত করা। কিন্তু রাস্তা ঘাট গুলো ছিলো জায়গায় জায়গায় কাটা এবং ভাঙ্গা। এসব জায়গায় আমাদের মিত্র বাহিনী প্রায়শঃই আগ্রগামী চীনা কমিউনিষ্ট সৈন্যদের দ্বারা আক্রান্ত হতো এবং বাধাগ্রস্থ হয়ে ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুক্ষীন হতো। চীনা সৈন্যরা অতি সাধারনতঃ যুদ্ধকৌশল মেনে চলতো, আমাদের মনে হতো- ওরা ছোট ছোট চৌকশ দলে বিভাজিত হয়ে সাধারন কৌশলে ক্ষীপ্রতার সঙ্গে প্রায়ই প্রাণঘাতী আক্রমন চালাত। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো অসংখ্য চীনা সৈন্যের মৃতদেহ আর তাদের ব্যবহৃত ধ্বংসপ্রাপ্ত যুদ্ধাস্ত্রের বহর। কিন্তু এসবের মধ্যে ভারী যুদ্ধসম্ভার ছাড়া আর কিছুই তারা ঝটিকা আক্রমনে কেড়ে নিতে আসতো না। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময়টাই এখন আমরা শুরু করেছি এই যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের মাতৃভূমির বুকে, যে ভুমিকে আমরা মাত্র কয়েকটি বছর আগেই মুক্ত করেছিলাম বর্বর, পিশাচ জাপানী দখলদারদের হাত থেকে।
দীর্ঘ ৩৫ বছরের দখলদারীত্ত্বের অবসান ঘটিয়ে জাপানীদের হাত থেকে আমরা মুক্ত হয়েছিলাম ১৯৪৫ সালের ১৫ই আগষ্ট। সেই স্বাধীনতা অন্ততঃ এক দশকের মানসিক এবং অমর্যাদাকর নির্যাতনের পরে আমাদের মাঝে বয়ে এনেছিলো অনেক আশা আর এক উজ্জ্বল স্বপ্নময় ভবিষ্যতের আকাঙ্খা। আমরা শুরু করেছিলাম আমাদের হর্ষোৎফুল্ল যাত্রা, আমরা উড়িয়েছিলাম আমাদের নিজেদের পতাকা (তেগুক্কি), যেটা এই প্রথম আমি দেখেছিলাম আমার দুচোখ ভরে আনন্দে-বিষাদে। এক ভাব-গাম্ভীর্যের সঙ্গে আমাদের কণ্ঠে জাপানী শব্দ “বানজাই! বানজাই!” এর পরিবর্তে নিনাদিত হতো আত্মমর্যাদার ভাষায় “মানসে! মানসে”!!
জাপান কোরিয়াতে তার সাম্রাজ্যবাদী বিস্তার সম্পন্ন করেছিলো ১৯১০ সালে। এই দখলদারীত্ত্বের বিরুদ্ধে হয়েছিলো অনেক আন্দোলন অনেক বিদ্রোহ। তবে স্মরনীয় রক্তাপ্লুত ব্যাপক বিদ্রোহটি হয়েছিলো ১৯১৯ সালের ১লা মার্চ। জাপানী সৈনিক এবং পুলিশ বাহিনীর বর্বরতম আক্রমনে সে বিদ্রোহ দমন করা হয়েছিলো সাময়িক ভাবে। সেসময় জাপানী কর্তৃপক্ষ জ্বালিয়ে দিয়েছিলো বহু বহু বাড়ি এবং গীর্জা। হত্যা করেছিলো অসংখ্য সাধারন মানুষ।
১৯৩৯ সালে জাপান সরকার আমাদের জাপানী নাম পরিগ্রহনে বাধ্যকরতে শুরু করে। এবং খুব শীঘ্রই সব ধরনের দাপ্তরীক কাগজপত্রে আমরা আমাদের কোরিয়ান নাম ব্যাবহারের অধিকার হারালাম। স্কুল-কলেজে আমাদের সব বিষয় গুলো পড়তে হতো জাপানী ভাষায়। ৮ই ডিসেম্বর ১৯৪১-এ দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধের প্রারম্ভ পর্যন্ত সপ্তাহে মাত্র দুই ঘন্টার কোরিয়ান পাঠ পেতাম, কিন্তু অবস্থা দ্রুত বদলে গেলো, আমরা এখন আর এতটুকুও কোরিয়ান পাঠ গ্রহনে অধিকারী নই। আমাদের অধিকাংশ শিক্ষকই ছিলেন জাপানী। যদি কোরিয়ান ভাষা আমরা ভুলেও কখনো স্কুলে ব্যবহার করেছি, তাহলেই ওরা আমাদের নাগরিক সারনীতে একটা টিক্ চিহ্ন দিয়ে প্রত্যেক শ্রেণীকক্ষের দেয়ালে তা ঝুলিয়ে দিতো। বিপদগ্রস্থ হতাম তখনই যখন কারো কপালে পাঁচটি টিক্ চিহ্ন জুটে যেতো! আমাদের বাবা-মা কে ডাকা হতো স্কুলে, অপদস্থ করা হতো ভীষন ভাবে। আমরা বাড়িতে কোরিয়ান ভাষা ব্যবহার করলেও এমনকি বাইরে খেলার মাঠেও জাপানী ভাষা বাধ্যতামূলক ছিলো।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে এসেছেন। আমি বিষয়গুলো জানতাম না, আপনার লেখার মাধ্যমেই এ বিষয়টি সম্বন্ধে প্রথম জানা হলো। আপনার জন্যে কৃতজ্ঞতা রইলো।
মার্জিনে মন্তব্য: লেখকের নামের ইঙরেজী বানানটা একটু দেবেন কি, দয়া করে?
@শনিবারের চিঠি,
ধন্যবাদ শনিবারের চিঠি। উপড়ে যেখানে মূল লেখকের নাম বাংলায় লিখেছি পাশে ইংরেজী নামটাও দিয়ে দিচ্ছি। আবারো ধন্যবাদ সময় দিয়ে পড়ার জন্যে।
বানজাই আর মানসে শব্দের অর্থ কি? আর বইটির অরিজিনাল টাইটেল কি?
যাহোক, কোরিয়া যুদ্ধ নিয়ে অনেকের মত আমারও আগ্রহ আছে। এই অনুবাদ সেই আগ্রহ মেটাবে বলে আশা করছি। আপনার অনুবাদ ভাল হয়েছে। তবে প্যারাগুলোর মধ্যে অসম স্পেস থাকা উচিত নয়।
পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় থাকছি।
@কাজি মামুন,
ধন্যবাদ কাজি মামুন পড়ার জন্যে। শব্দ দুটোর (‘বানজাই’, ‘মানসে’ [উচ্চারণ: মান্সে]; প্রথমটি জাপানী শব্দ, দ্বিতীয়টি কোরিয়ান শব্দ) মানে হলো “আমাদের পতাকার জয় হোক”। আর ‘তেগুক্কি’ এই কোরিয়ান শব্দটির মানে হলো জাতীয় পতাকা। আর বইটার অরিজিনাল টাইটেল হলো, “KOREA 1950: Memory of a boy soldier”. মনে হচ্ছে আমার কম্পিউটারের কারনে এমনটি হলো কিনা। আমি যদি স্পেস কমাতে যাই, তো সেটি স্পেস-বিহীন হচ্ছে! আর যেখানে কম আছে, সেখানে বাড়াতে গেলে আরোও বেড়ে যাচ্ছে। আবার দেখবো চেষ্টা করে। আপনার পরামর্শের জন্যে আবারো ধন্যবাদ।
ভাল লাগল।
বিষয়গুলি সেভাবে জানা ছিল না। জাপানিরা যে কোরিয়ানদের ওপর এত অত্যাচার করেছে জানা ছিল না।
দুই কোরিয়া কিভাবে ভাগ হল আশা করি তা সামনে আসবে।
@আদিল মাহমুদ,
ধন্যবাদ আদিল মাহমুদ, আশাকরি অচীরেই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে। আমিও জানতাম না এদের ইতিহাস সম্পর্কে তেমন। কিন্তু এদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইদানীং আলোচিত। তখন থেকেই একটা ইচ্ছে ছিলো এইরকম যে, যে কোরিয়াকে আমরা (তৎকালীন পাকিস্তান) ১৯৭০ এর দশকে খাদ্য সাহায্য দিয়েছি, সেই কোরিয়া সমস্ত বাধা গুলো অতিক্রম করে দাঁড়াতে পারলো, আর আমরা নিজেদের ঘড়ে আলোটাই জ্বালাতে পারলাম না! এর উৎস খুঁজতেই এ আমার সামান্য প্রয়াস।
@কেশব অধিকারী,
দক্ষিন কোরিয়া যতটুকু জানি উন্নতি করেছে কিন্তু গনতন্ত্রে নয়, একজন একনায়কের শাসনে। উত্তর কোরিয়া আমেরিকাকে যতই হুমকি ধামকি দিক, এটম বোমার ভয় দেখাক ভেতরের অবস্থা কিন্তু খুবই সংগীন, সাধারন লোকে মোটেও ভাল নেই।
আসলে গনতন্ত্র ফন্ত্র বড় কথা নয়, কিভাবে ব্যাবহার করা হচ্ছে সেটাই কথা। জনগনের মধ্যে কিছু মিনিমাম মৌলিক গুনাবলী না থাকলে যে কোন তন্ত্রই ব্যার্থ হতে বাধ্য। উল্টোদিকে এ কারনের গনতন্ত্র না থাকলেও স্বৈরাচারের অধীনেও অন্তত শুরুতে উন্নতি সম্ভব। আমরা আসলে আমাদের জাতিগত মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়ে চিন্তা না করে কেবল গনতন্ত্র কায়েম কর কায়েম কর বলে চেঁচাই। বহু কিছুই তো কাগজে কলমে পেয়েছি, ভাষা, স্বাধীনতা, গনতন্ত্র, সংসদীয় গনতন্ত্র, কেয়ারটেকার……তাতেও এখন পর্যন্ত একটি ভরসা করার মত সার্বজনীন ব্যাবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি।
@আদিল মাহমুদ,
একদম সত্যি কথা বলেছেন। আমারো উপলব্ধিটাতে কোন রকম ব্যতিক্রম দেখিনা। এই যে বললেন,
এটিই আসল কথা। কোরিয়াতে যখন স্বৈরনায়ক ক্ষমতা নেন তখন শুনেছি ৬০% ছিলো শিক্ষিতের হার। আর এই হার আমাদের দেশের মতো নয়, রীতিমতো গ্র্যাজুয়েট বা গ্র্যজুয়েট পর্যায়ে অধ্যয়নরত। রাস্তা কি করে পার হতে হবে তা পর্যন্ত ছিলো বাধাধরা নিয়মের আওতায়! সেই যে একটা অবশ্য পালনীয় জননীতি, প্রচারমাধ্যম গুলোতে এসব প্রচারের যে ধারাবাহিকতা, বিষয়বস্তুর পরিবর্তন হলেও আজও তা বহাল আছে! আর মানুষজন আজকের গনতান্ত্রিক পরিমন্ডলে তার যথারীতি সুফল ভোগ করছে। আমেরিকার প্রসিডেন্ট নির্বাচন সমাগত। গোটা বিশ্বের দেশে দেশে থার্মোমিটার আর ব্যারোমিটারের তাপ ও চাপমাত্রা চাঞ্চ্যল্যকর রকম বেড়েছে। এ দেশেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সমাগত। অথচ কোথাও এর কোন প্রতিক্রিয়া নেই, একমাত্র সংবাদ মাধ্যম গুলোতে তাঁদের (প্রার্থীদের, মাত্র ৩ জন!) দেয় (কোন বিশেষ ইস্যূতে) যুক্তি গুলো ছাড়া। আর ইস্যুগুলোও খুব সীমিত আর সুনির্ধারিত, যেমন বর্তমানে উত্তর কোরিয়া বিষয় এবং অথর্নৈতিক মন্দা মোকাবিলা। বাকি বিষয়গুলো ধারাবাহিক ভাবে চলবে।
সেইজন্যে আমার একটা সাধারন ধারনা এইযে, শিক্ষা এমন একটি বিষয় যা সরকারের নীতিনির্ধাকবৃন্দ যখন কোন সিদ্ধান্ত নেন তখন আপামর জনগনকেও সেই সিদ্ধান্তের সাথে সম্পৃক্ত হতে হয়। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারক মহলের ধারনা তাদের মস্তিষ্ক বিশেষ পদার্থে প্রস্তুত! আর জনগন সারমেয় শাবক! আবার উল্টোটাও ঠিক। পথে নামলে দেখবেন পথচারীদের হাবভাব! যেনো মহারারাধিরাজ! তার জন্যে কোন আইন কানুন যেনো প্রযোজ্য নয়! আমি মনে করি যথাযথ শিক্ষাই এই পরিস্থিতিকে পাল্টাতে পারে। অন্যকিছু নয়।
@কেশব অধিকারী,
শিক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ন কোন সন্দেহ নেই, আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত বাস্তবমুখী জীবনোপযগী, সর্বজনগ্রাহ্য কোন শিক্ষা নীতি বার করতে পারিনি যার মাশুল দিতে হচ্ছে এবং হবে পরবর্তি বহু প্রজন্মকে। সাথে ধর্মশিক্ষার নামে লাখ লাখ ছেলেপিলেকে পুরোপুরি অর্থহীন শিক্ষা ব্যাবস্থার মধ্যে ফেলা হচ্ছে বাকিদের বেহেশতের টিকেট কালেক্টর হিসেবে প্রস্তুত করার জন্য।
শিক্ষার সাথে সাথে সংস্কৃতিরও ভূমিকা আছে প্রবল, তবে শিক্ষা ব্যাবস্থা যথাযথ না হলে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও আসবে না। আমাদের সংস্কৃতির গভীরে কিছু বিষয় আছে যেমন মামা কালচার যেগুলি দূর না করা গেলে কোনদিন ফেয়ারনেস আসবে না। উচ্চশিক্ষিত লোকেও এসব কারনে সমাজের কোন কাজে তো আসেই না, অনেক সময় ক্ষতির কারন হয়। কালকের এক খবর দেখেন।
গনতন্ত্র ফন্ত্র অতসব গালভরা কথাবার্তা নিয়ে আলোচনার টেবিলে ঝড় না তুলে আগে উচিত এসব অতি মৌলিক দূর্বলতা কিভাবে দূর করা যায় সেসব নিয়ে ভাবা।
ধন্যবাদ চলনামৃত সময়টুকু দেবার জন্যে।
পড়লাম, ভাল লাগলো। চলুক………