JIBONANONDO

বাংলা সাহিত্যে সর্বশেষ যে আন্দোলনটি হয়, এবং যার জোয়ার শেষে এখন ভাটা পড়েছে, তা হল ‘আধুনিকতাবাদ’। কাল সচেতন সাহিত্য পাঠকের কাছে ‘আধুনিকতাবাদ’ শব্দটি যেমন সুপরিচিত, তেমন অতিপরিচিত বাংলার পাঁচজন প্রধানতম আধুনিক কবি: জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু। আর্থগতিশীল ‘আধুনিক’ শব্দটির সাথে সর্বাগ্রে জড়িত তিরিশের এই কবিগণের মধ্যে জীবনানন্দ দাশ সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আলোড়িত-আলোচিত। রবীন্দ্রনাথ-মধুসূদনকে ব্যতিরেকে, বাংলা সাহিত্যে একজন: জীবনানন্দ দাশ, যিনি বিবর্তন-বিবর্ধন ঘটিয়েছেন বাংলা কবিতার। প্রাচীন-মধ্যযুগের প্রথাগত কবিতাকে মুক্তি দিয়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন অসামান্য একাধিক কবিতা; যা বাংলা কবিতাকে বিশ্বজনীন করে তুলেছে।

ক.
‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে,
কথায় না বড় হয়ে, কাজে বড় হবে।’
সত্যানন্দ দাশ (১৮৬৩-১৯৪২) সম্পাদিত ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকায় কুসুমকুমারী দাশের (১৮৮২-১৯৪৮) ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। আসলে কুসুমকুমারী দাশের ঘরেই ছিল সেই ‘আদর্শ ছেলে’। গম্ভীর স্বল্পবাক জীবনানন্দ দাশ, ডাকনামে ‘মিলু’ ছিলেন সত্যানন্দ দাশ ও কুসুমকুমারী দাশের জ্যেষ্ঠ সন্তান।
জীবনানন্দ দাশের পিতা সত্যানন্দ দাশ তৎকালীন সময়ের একজন নামকরা প্রাবন্ধিক ছিলেন। ব্রজমোহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে পরিচিত ছিলেন বরিশাল জেলা-শহরে। ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত ধর্ম-নীতি-শিক্ষা ও সমাজতত্ত্ব বিষয়ক পত্রিকা ‘ব্রহ্মবাদী’ এর আরেকজন লেখিকা জীবনানন্দ মাতা কুসুমকুমারী দাশ। এছাড়া ‘প্রবাসী’ ও ‘মুকুল’ পত্রিকায় তাঁর প্রায় সত্তরটি কবিতা প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সময়চিত্র অবলম্বনে রচিত এই কবিতাবলী কিশোর জীবনানন্দকে উৎসাহিত করে কবিতা লেখার প্রতি। মা-বাবার সাহিত্য চর্চা তাঁর গভীরে যে প্রভাব ফেলেছিল তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯১৯ সালে প্রথম প্রকাশিত কবিতা ‘বর্ষ আবাহন’ এর মাধ্যমে।

প্রকৃতপক্ষে জীবনানন্দ দাশের কৃতীপূর্ণ শিক্ষাজীবনই ছিল পরবর্তীতে অসামান্য সাহিত্য সৃষ্টির অন্যতম কারণ। পিতা সত্যানন্দ তাঁর সন্তানকে নিজের মত করে মানুষ করতে চেয়েছিলেন; শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন নিজের তত্ত্বাবধানে। এজন্য বেশ দেরি করে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল জীবনানন্দকে। ১৯০৮ এর জানুয়ারিতে একবারে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির পর ১৯১৫ সালে বরিশাল বজ্রমোহন বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯১৭ সালে প্রথম বিভাগে আই এ পাশ করার পর ১৯১৯ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বি এ পাস করেন। এই সময়ে তাঁর প্রথম মুদ্রিত কবিতা প্রকাশের মধ্য দিতে সাহিত্যজগৎ-এ প্রবেশ ঘটে। কবিতা রচনার পাশাপাশি পরবর্তী লেখাপড়া চালিয়ে যান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে। ১৯২১ এ তাঁর শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটে। যদিও তিনি ইংরেজির পাশাপাশি আইন পড়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন এবং পড়েওছিলেন কিছুকাল, কিন্তু পরীক্ষার আগে অসুস্থতার কারণে তাঁর এ ইচ্ছা পূর্ণ হয় নি। এভাবে শিক্ষাজীবনের স্তরগুলোতে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিতি করেছেন মেধাবীরূপে। যা সাহিত্যজীবনে তাঁকে অধিষ্ঠিত করেছিল সত্যিকার আধুনিকরূপে।

খ.
জীবনানন্দ দাশের সাহিত্য জীবনে আত্মপ্রকাশ ছিল ‘আধুনিকতা’ বহির্ভূত। ‘ব্রহ্মবাদী’তে প্রথম কবিতা প্রকাশের ছয় বছর পর ‘স্বর্গীয় কালীমোহন দাশের শ্রাদ্ধবাসরে’ শীর্ষক তিন পর্বের একটি গদ্য রচনা প্রকাশিত হয়। যদিও এ ছ’ বছর জীবনানন্দ নিশ্চুপ ছিলেন নিভৃতে। কিন্তু এর পর থেকে শুরু হয় তাঁর প্রকৃত কাব্যচর্চা। মূলত ১৯২৬ সাল থেকে তিনি দীনেশরঞ্জন দাস সম্পাদিত ‘কল্লোল’, প্রেমেন্দ্র মিত্র, মুরলীধর বসু ও শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘কালি-কলম’, বুদ্ধদেব বসু ও অজিত কুমার দত্ত সম্পাদিত ‘প্রগতি’ পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা প্রকাশ শুরু করেন। এ সময়ে তাঁর যেসকল কবিতা সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, সেগুলোর মধ্যে ‘নিলিমা’, ‘পতিতা’, ‘খুশ্‌-রোজী’, ‘পাখিরা’, ‘শকুন’, ‘বনলতা সেন’, ‘নগ্ন নির্জন হাত’, ‘হায় চিল’, ‘বেড়াল’, ‘’ক্যাম্পে, ‘হাওয়ার রাত’, ‘সমারূঢ়’, ‘আকাশলীনা’ ও ‘আট বছর আগের একদিন’ অন্যতম ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবনানন্দ প্রশংসনীয় ছিলেন সবার কাছে। ‘নীলিমা’ কবিতাটি কল্লোলে প্রকাশের পর দীনেশরঞ্জন লিখেছিলেন, “কল্লোলের তৃতীয় বৎসরে কয়েকজন লেখককে (বুদ্ধদেব বসু, অজিত দত্ত ও অন্যান্য) বিশেষভাবে পাওয়া গেছে। তাদের প্রতিভা জয়যুক্ত হোক”। তন্মধ্যে ১৯২৮ সালে ‘শনিবারের চিঠি’ নামক পত্রিকাটি জীবনানন্দের ‘ক্যাম্পে’ কবিতাটি নিয়ে একটি আপত্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। পত্রিকার ‘সংবাদ সাহিত্য’ অংশে সজনীকান্ত দাস ‘ক্যাম্পে’ কবিতাটিকে অশালীন-অশ্লীল হিসেবে উল্লেখ করে তীব্র সমালোচনা করেন।

গ.
জীবনানন্দ দাশের জীবদ্দশায় ‘কবি’ খ্যাতি সাহিত্যদর্পনে প্রকাশ পেলেও ততোটা খ্যাতি অর্জিত হয় নি, যা বর্তমান তাঁকে দিয়েছে। কেননা তৎকালের সমগ্র বাংলা সাহিত্য ছিল একমুখী, রবীন্দ্র নির্ভর। ফলে রবীন্দ্রের সাহিত্যধারাকে বর্জন করে নতুন কিছু সৃষ্টি করা সম্ভব, তা মেনে নিতে পারেন নি তৎকালীন অনেক কবি-সাহিত্যিক। কিন্তু যে নবীনের দল সূচনা করলেন রবীন্দ্রোত্তর সাহিত্য এবং যাঁরা মেনে নিলেন তাঁদের সাহিত্যকর্ম, তাঁরা খুঁজে পেলেন এক নতুন পথ; এক নতুন যুগ। যা বাংলা সাহিত্যে ‘আধুনিক যুগ’ বলে পরিচিত।

‘আধুনিকতাবাদ’, যা কোনো বাঙালির মৌলিক চিন্তাশক্তির ফলাফল নয়; পাশ্চাত্যের কতগুলো সাহিত্যান্দোলনের সামষ্টিক রূপমাত্র। যেটি বিভাজনে আমরা পাই;- বাস্তবতাবাদ, প্রতীকবাদ, চিত্রকল্পবাদ, পরাবাস্তববাদ, অস্তিবাদ, ইন্দ্রজাল বাস্তবতা, বাস্তবরূপবাদ, আকৃতিবিন্যাসবাদ ও অন্যান্য। মূলত এর সবই পশ্চিমের কোনো না কোনো সাহিত্য-শিল্পীর সৃষ্টি। এবং যথাযথভাবে যা আন্দোলনে রূপলাভ করেছিল ঐ সময়ে। ফলাফল: বাংলা সাহিত্যে তার আঁচ লেগেছিল প্রকট আকারে। সুতরাং আধুনিক বাংলা সাহিত্য বলতে যা বোঝায় বা যে কালের সাহিত্যকে বোঝায়, তা নিহিত ছিল সমকালের ইংরেজি সাহিত্যের মধ্যে। ইংরেজি কবিতার আধুনিকতার সূচনা করেছিলেন ভিক্টোরীয় যুগের কবি হপকিনস। বাক্যের গঠনশৈলী ও কাব্যের বিষয়বস্তুকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্ঠা ছিল তাঁর। The Poems of Gerard Manley Hopkins, যা ১৯১৮ সালে প্রকাশিত হয়। কিন্তু এর অনেক পূর্বে ১৮৮৯ সালে হপকিনস মারা গিয়েছিলেন। ফলে এই দীর্ঘসময় তাঁর আবিষ্কৃত নতুন তত্ত্ব অজানা বা অপ্রকাশিত ছিল। কিন্তু এই কাব্যসংগ্রহটি প্রকাশের পর ইংরেজি সাহিত্যের কাব্য প্রেমীরা নতুন স্বাদ পেলেন এক নতুন জগতের। হিসাব অনুযায়ী এথেকেই ইংরেজি সাহিত্যে ‘মডার্ণ’ যুগের সূত্রপাত হয়। এবং প্রায় বিশ শতকের আরম্ভ থেকে পরবর্তী ত্রিশ দশক পর্যন্ত ইংরেজি সাহিত্যে চলতে থাকে নানা নতুন আন্দোলন। জন্ম নিতে থাকে নতুন তত্ত্ব, নতুন ধারা। আর এসব কিছুর প্রতিফলন দেখা যায় কবিতা, চিত্রকলা, নাটক-এ। তবে আধুনিকতার স্পর্শে সর্বাধিক রূপান্তর ঘটেছিল কবিতার। প্রাচীনকালের কবিতা, মধ্যযুগের কবিতা এবং রেনেসাঁস ও পূর্ববর্তী কিংবা পরবর্তী, সমস্ত উল্লেখ্য-অনুল্লেখ্য কাব্যকালের মধ্যে গভীরতর পার্থক্য ও যোজন-যোজন ব্যবধান সৃষ্টি করে আধুনিক কবিতা। অষ্টাদশ শতকের রোমান্টিকতা এক অন্যরূপ লাভ করে বিংশ শতাব্দীর আধুনিকতায়।
সাহিত্য ইতিহাস আমাদেরকে নিশ্চিত করে এ ব্যাপারে যে- এ সবকিছুর মূলে ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এ যুদ্ধের ফলে ইউরোপের জীবনব্যবস্থায় যেমন পরিবর্তন এসেছিল, তেমনি শিল্পসাহিত্যে এসেছিল জোয়ার। মানবিক জীবনবোধের কতগুলো বিশ্বাস, যা অবিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়েছিল এই মহা সংকটকালে। কাব্যে বন্দনা আর স্তুতির পরিবর্তে উচ্চারিত হল বিদ্রোহ, মনোবিকার, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এবং দারিদ্র ও অন্যান্য পার্থিব ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়াদি। সমাজের নানা সমস্যা, জীবনের জটিলতা, মৃত্যু চেতনা অথবা জীবনের দীর্ঘ ক্লান্তিবোধের বিচিত্র চিত্র প্রতিপাদ্য হলো কবিতার। এভাবে একটি ‘যুদ্ধ’ পুরাতন সংস্কৃতিকে বাতিল করে জন্ম দিল আধুনিক সংস্কৃতির; আধুনিক জীবনবোধের।

জীবনানন্দ দাশ, সুদূর ইউরোপের সেই ভয়াবহ রূপান্তরকে গ্রহণ করেছিলেন। এবং রূপান্তর ঘটিয়েছিলেন আরেক এলাকার সাহিত্যের; কবিতার। বাংলার আধুনিক কবিতা এভাবেই জন্মলাভ করেছিল যুদ্ধোত্তর ইউরোপীয় কবিতার আলোকে, অনুপ্রেরণায়।

ঘ.
যদিও জীবনানন্দ দাশ আধুনিক বাংলা কাব্যের প্রাণপুরুষ হিশেবে পরিচিত, কিন্তু তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থে আধুনিকতার স্পর্শ ছিল না। ১৯২৭ সালে ‘ঝরাপালক’ প্রকাশিত হয়। যা ছিল সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮২-১৯২২), মোহিতলাল মজুমদার (১৮৮৮-১৯৫২) ও কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য রণনে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, ‘প্রথম দিকের কবিতায় তিনি [জীবনানন্দ] রবীন্দ্রনাথ ও সত্যেন দত্তের অনুকরণ করতে চেয়েছিলেন প্রাণপনে’। সেইসময় কল্লোলে সুকুমার সেন তাঁর কাব্যের সমালোচনা করে লিখেছিলেন, ‘ঝরা পালক এর একটি কবিতায় (পলাতক) দ্বিতীয়-তৃতীয় দশাব্দসুলভ পল্লী-রোমান্‌সের-অর্থাৎ করুণানিধান-যতীন্দ্রমোহন-কুমুদরঞ্জন-কালিদাস-শরৎচন্দ্র প্রভৃতি কবি ও গল্পলেখকের অনুশীলিত- ছবি পাই।’ তবে কালিদাস রায় (১৮৮৯-১৯৭৫) জীবনানন্দের গুণগ্রাহী ছিলেন। তিনি ‘স্মৃতিকথা’য় লিখেছিলেন,
‘বর্তমান যুগে তরুণরা যাঁকে সর্বশ্রেষ্ঠ কবি বলে মনে করেন, সেই জীবনানন্দ দাশ একদিন তাঁর ঝরা পালক নামক বইখানি নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করেন। সেই বইয়ের কবিতাগুলিতে তাঁর প্রতিভার অঙ্কুরের পরিচয় পেয়েছিলাম।’

জীবনানন্দ দাশের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে। মূলত এতেই প্রথম ব্যাপকাকারে আধুনিকতার স্ফুরণ ঘটে তাঁর। নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্রে তিনি লিখিছিলেন দীর্ঘ একেকটি কবিতা। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনি পূর্ণ স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারেন নি। ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ কাব্যগ্রন্থের একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা ‘মৃত্যুর আগে’-

দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হয়েছে হলুদ,
হিজলের জানালায় আলো আর বুলবুলি করিয়াছে খেলা,
ইঁদুর শীতের রাতে রেশমের মতো রোমে মাখিয়াছে খুদ,
চালের ধূসর গন্ধে তরঙ্গেরা রূপ হয়ে ঝরেছে দুবেলা
নির্জন মাছের চোখ;- পুকুরের পাড়ে হাঁস সন্ধ্যার আঁধারে
পেয়েছে ঘুমের ঘ্রাণ- মেয়েলি হাতের স্পর্শ লয়ে গেছে তারে;

জন কিটসের ‘Ode to Autumn’ কবিতাতে জীবনানন্দের কবিতার সাদৃশ্য লক্ষনীয়-

While barred clouds bloom the soft-dying day,
And touch the stubble pains with rosy hue;
Then in a willful choir the small gnats mourn
Among the river sallow’s, borne aloft
Or sinking as the light wind lives or dies;
And full-grown lambs loud bleat from hilly bourn;
Hedge-crickets sing and now with treble soft
The redbreast whistles from a garden-croft;
And gathering swallows twitter in the skies.

জীবনানন্দের মৃত্যুর পর ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থ। এ গ্রন্থের সবগুলো কবিতাই তাঁর জীবৎকালে অপ্রকাশিত ছিল। এবং মৃত্যুর পর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ এবং ‘রূপসী বাংলা’র মধ্যে এক নিগূড় যোগসূত্র রয়েছে। এখানে কবির গভীর স্বদেশপ্রীতি এবং ব্যক্তিগত প্রেমময় স্মৃতি প্রকটে প্রকাশ পায়। এছাড়া গ্রাম-বাংলার আবহমান প্রকৃতির সুচারু বর্ণনায় কবি ব্যবহার করেছেন কিছু প্রাচীন মিথ এবং প্রতীক। অবশ্য মৃত্যুকেও তিনি বিলাস-বাসনা হিসেবে খুঁজে নিয়েছেন প্রকৃতির মাঝে, এই কাব্যে।
‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের ‘এখানে আকাশ নীল’ কবিতাটিতে জীবনানন্দ ‘কাক ও কোকিল’-কে অবিনশ্বর ও প্রবাহমানতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন এভাবে-

মেঠো পথে মিশে আছে কাক আর কোকিলের শরীরের ধূল,
কবেকার কোকিলের জানো কি তা ? যখন মুকুন্দরাম, হায়,
লিখিতেছিলেন ব’সে দু’পহরে সাধের সে চণ্ডিকামঙ্গল,
কোকিলের ডাক শুনে লেখা তাঁর বাধা পায়- থেমে থেমে যায়;-
কবি কিটসের ‘Ode to a Nightingale’ এও নাইটিংগেল পাখিকে একই প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায়-

The voice I hear this passing night was heard
In ancient days by emperor and clown:
Perhaps the self-same song that found a path
Through the sad heart of Ruth, when, sick for home,
She stood in tears amid the alien corn.

জীবনানন্দের দাশের সবচেয়ে পরিচিত কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা সেন’-এর সংস্করণ দুটি। প্রথমটি ১৯৪২ সালে কবিতাভবন সংস্করণ এবং এর দশ বছর পর সিগনেট প্রেস-সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এ কাব্যগ্রন্থে জীবনানন্দের সময়বোধের নতুন ধারণা গভীরভাবে লক্ষনীয়। পূর্বের দুটি কাব্যগ্রন্থে ‘ঝরা পালক’ ও ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’, তিনি ইতিহাসকে লুকিয়ে রেখেছিলেন মৃত্যুবিলাসের মধ্যে। কিন্তু ‘বনলতা সেন’-এ এসে তিনি অকপটে প্রকাশ করেছেন ইতিহাস ও কালসচেতনতা।
‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং জীবনানন্দ দাশ বলতেই যে কবিতাটি আমাদের মস্তিষ্কে অনুরণিত হয়, তা হল- ‘বনলতা সেন’:

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ‘পর

এখানে জীবনানন্দ তৎকালীন সময়ের বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেছেন অন্তর্মুখে। উল্লেখ্য ১৯০৫ সালের দিকে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এর Special theory of relativity প্রকাশের পর শুধুমাত্র বিজ্ঞান সমাজে নয়, কবি-সমাজেও এক নিরব হৈচৈ পড়ে যায়। কারণ কবিতা লেখার উপকরণ হিসেবে ‘সময়’ বা ‘কাল’ একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেক্ষেত্রে আইনস্টাইনের তত্ত্ব প্রমাণ করেছে আমাদের চিরচেনা ত্রিমাত্রিক জগৎ আসলে ত্রিমাত্রিক নয়; প্রকৃতপক্ষে ‘সময়’ও এর সাথে যুক্ত আছে। অর্থাৎ ‘সময়’ সহ আমাদের জগৎটি চতুর্মাত্রিক। এর ফলে শিল্প-সাহিত্যে একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়; যা ‘subjective and relative reality’ দ্বারা নির্ধারিত। জেমস জয়েসের একটি উক্তি এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য-

“….time and space are artificial and that all its related, and that art should be a symbol of that relationship.”

জীবনানন্দও ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় ‘কবিতা প্রসঙ্গে’ লেখেন:

“মহাবিশ্বলোকের ইশারা থেকে উৎসারিত সময়চেতনা আমার কাব্যে একটি সঙ্গতিসাধক অপরিহার্য সত্যের মতো; কবিতা লিখবার পথে কিছুদূর অগ্রসর হয়েই এ আমি বুঝেছি, গ্রহণ করেছি। এর থেকে বিচ্যুতির কোনো মানে নেই আমার কাছে।”

এ থেকে স্পষ্ট হয়- জীবনানন্দ বর্তমানকে খুঁজে নিয়েছেন অতীতের মাঝে। এবং সেখানে রয়েছে ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক সৌন্দর্য্যের প্রাণপ্রাচুর্য। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, তাঁর এই গভীর চেতনালব্ধ কবিতার অনুরূপ রয়েছে অ্যাডগার অ্যালেন পো এর Helen এ-

Thy hyacinth hair, the classic face.

এবং জন কিটসের On First Looking into Chapman’s Homer এ-

Much have I travelled in the realms of gold,
And many goodly states and kingdoms seen;
Round many western islands have I been
Which bards in fealty to Apollo hold.

‘বনলতা সেন’ কাব্যের আরেকটি আলোচিত কবিতা হল-

হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে !
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে !
এই কবিতাটির সাথে ইয়েটস্‌ এর ‘He Reproves the curlew’ এর যথার্থ মিল রয়েছে-

O curlew, cry no more in the air,
Or only to the water in the west;
Because your crying brings to my mind
Passion-dimmed eyes and long heavy hair
That was shaken out over my breast
There is enough evil in the crying of wind.

১৯৪৪ সালে জীবনানন্দ দাশের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘মহাপৃথিবী’ প্রকাশিত হয়। অবশ্য এই গ্রন্থের বেশ কিছু কবিতা (নিরালোকে, প্রেম অপ্রেমের কবিতা, আট বছর আগের একদিন) ১৯৩৪ সালের দিক থেকে চতুরঙ্গ, কবিতা ও অন্যান্য বিভিন্ন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৩০ সালের দিকে পৃথিবী আক্রান্ত হয় দুর্ভিক্ষে। এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় শিল্প-সাহিত্যের কেন্দ্রস্থল পাশ্চাত্যের দেশগুলো। অর্থাভাব, কর্মহীনতা, বেকারত্ব ইত্যাদি নৈর্ব্যক্তিক সামাজিক অবক্ষয় প্রকট আকারে ধরা পড়ে দেশগুলোতে। এবং তার প্রভাব পড়ে ভারতীয় উপমহাদেশে। মানুষ স্বাভাবিক জীবনপ্রণালী থেকে বিচ্ছিন্ন বিচ্যুত হয়ে বেছে নেয় আত্মহনন। অথবা দীর্ঘ ক্লান্তি-হতাশা-অবসাদ এসে ভর করে অসহায় নিষ্প্রাণ জীবনগুলোতে। ফলে এ সবকিছুই প্রতিপাদ্য হয়ে ওঠে তৎকালের সাহিত্যে; কবিতায়। জীবনানন্দের ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতাটি সম্ভবত ‘বনলতা সেন’ এর পরে সার্বাধিক পঠিত। এই কবিতার নায়ক, যিনি বেছে নেন আত্মহননের পথ, এক দীর্ঘ দুঃসহ ক্লান্তি থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে। মূলত এ থেকে প্রতিভাত হয় ঐ সময়ের মানুষের জীবনের পীড়ন এবং যন্ত্রনাময় প্রতিবেশের গণ্ডি পেরোনোর চিত্রকল্প। কবিতাটির এ অংশ উল্লেখ্য-

জানি-তবু জানি
নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়-
আরো-এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে
ক্লান্ত-ক্লান্ত করে;
লাশকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হ’য়ে শুয়ে আছে টেবিলের ’পরে।

সম্ভবত জীবনানন্দীয় কাব্যে প্রথমবারের মতো বৃহৎ আকারে ‘আত্মহত্যা’ স্থান করে নেয়। এক্ষেত্রে উক্ত কবিতা সম্পর্কে জ্যোতির্ময় দত্তের মন্তব্য স্মরনীয়:

“ভাবতে অবাক লাগে জীবনানন্দের আগে বাংলা কবিতায় আত্মহত্যা প্রবেশ করে নি। স্থির বিশ্বাসে আত্মদানের নিদর্শন প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য আছে। কিন্তু আত্মহত্যার উদাহরণ নেই। এবং ইউরোপীয় সাহিত্যেও অকারণ আত্মহত্যা নতুন। জীবনানন্দের আগে সেই উট কি কোনো ভারতীয় আহ্বান করে নি ? দস্তয়ভস্কির আগে কোনো ইউরোপীয়কে ?”

জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে তাঁর জীবনচেতনা বা মৃত্যুচেতনা প্রসঙ্গত উঠে আসে। জেনে রাখা প্রয়োজন, জীবনানন্দ সম্পর্কে বাংলায় গবেষণা হয়েছে বটে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মার্কিন লেখক ক্লিনটন বুথ সিলি এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। যদিও জীবনানন্দের কবিতা পাশ্চাত্যের সুপরিচিত নয়, কিন্তু এ মার্কিন লেখক তাঁর শিক্ষক এডোয়ার্ড ডিমক এর কাছ থেকে জীবনানন্দের কথা জানতে পারেন। মূলত ডিমক ছিলেন সত্যিকার অর্থে একজন বাংলা সাহিত্যবোধ্যা। বৈষ্ণব সাহিত্য, রবীন্দ্র সাহিত্য এবং রবীন্দ্র সাহিত্যে লালনের প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে তিনি বিস্তর গবেষণা করেছেন। আর তাঁর সুবাদেই আমাদের বাঙালি কবি জীবনানন্দ কিছুটা হলেও পরিচিতি লাভ করেছেন বিশ্ব সাহিত্যে। ডিমক মনে করেন জীবনানন্দের ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতাটি তাঁর জীবনচেতনা সম্পর্কে গভীর রেখাপাত করে। এ নিয়ে ১৯৭৪ সালে ‘কবি যখন প্যাঁচা ও ইঁদুর’ শিরোনামে the journal of Asian studies পত্রিকায় তাঁর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। যেখানে তিনি রবীন্দ্র ও জীবনানন্দের জীবন-মৃত্যুর চেতনাগত দৃষ্টিভঙ্গির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছেন। রবীন্দ্রনাথের ‘মরণমিলন’ [উৎসর্গ:১৩১০] কবিতাটির অংশবিশেষ:

অত চুপিচুপি কেন কথা কও
ওগো মরণ, হে মোর মরণ,
অতি ধীরে এসে কেন চেয়ে রও,
ওগো একি প্রণয়েরই ধরন !
যবে সন্ধ্যাবেলায় ফুলদল
পড়ে ক্লান্ত বৃন্তে নমিয়া,
যবে ফিরে আসে গোঠে গাভীদল
সারা দিনমান মাঠে ভ্রমিয়া,
তুমি পাশে আসি বস অপচল
ওগো অতি মৃদুগতি-চরণ।
আমি বুঝি না যে কী যে কথা কও
অগো মরণ, হে মোর মরণ ।।
এখানে লক্ষ্যনীয় যে, ধ্রুপদীধারার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবন-মৃত্যুকে গ্রহণ করেছেন সহজভাবে। তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন পরম প্রশান্ত মনে। তাঁর চিরচেনা হাসিতামাসা সুলভ আচরণের ব্যতিক্রম এ বিষয়ে ঘটে নি। বিপরীতক্রমে জীবনানন্দ দাশ মৃত্যুকে গ্রহণ করেছেন জটিলতাপূর্ণভাবে। অবশ্য তিরিশের প্রতিটি কবিতা-ই এরকম জটিলতা সৃষ্টি করে। অধিকাংশ কবিতা জীবনের অর্থে গুরুগম্ভীর প্রকষ্ঠে আবদ্ধ। জীবন-মৃত্যু তাঁদের কাছে বিশৃঙ্খল কিংবা সহিংস। অনেক্ষেত্রে তা এক ‘আত্মঘাতী ক্লান্তি।’ কিন্তু অবশ্যই রবীন্দ্র ও তিরিশের কবিরা, প্রধানত জীবনানন্দ, জীবনদর্শের মূলগত চেতনা থেকে বিভক্ত হয়ে বৈসাদৃশ্য মতামত উপস্থাপন করেন না। উভয় সময়ের কবির কাছেই জীবন-মৃত্যু সময়ের অন্তর্গত প্রত্যাবর্তন ছাড়া আর কিছু নয়। তবে পার্থক্য ঘটে তাঁদের ‘সময়’ চিন্তায়। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় ‘মহাকাল’ এর যেমন প্রামাণিক অর্থ আছে, তেমন প্রকাশ্য সহজবোধ্য অর্থ জীবনানন্দের কবিতায় পাওয়া যায় না। জীবনানন্দের কাছে সময় হল এক অচেনা-অজানা বস্তু। যার নির্দিষ্ট কোনো ব্যপ্তি নেই। নেই নির্দিষ্ট কোনো পরিধি। তাঁর কবিতায় বর্তমান-অতীত-ভবিষৎ আসলে সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে না; স্বাতন্ত্রহীনতার বিচিত্রতায় সময়ের আবর্তন ঘটে মাত্র। আর এই বিচিত্র সময়ের উপাখ্যানে কখনো সরাসরি কিংবা কখনো অস্পষ্টে কবি মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেন। ‘আট বছর আগের একদিন’ এ কবি যেমন সরাসরি মৃত্যুকে এনেছেন, বিপরীতে এই কবিতায় তা এসেছে পরোক্ষভাবে:

সমস্ত পৃথিবী ভরে হেমন্তের সন্ধ্যার বাতাসে
দোলা দিয়ে গেল কবে !-বাসি পাতা ভূতের মতন
উড়ে আসে! কাশের রোগীর মতো ধুঁকে মরে মানুষের মন !

কবি শেলীর Ode de the West Wind কবিতার সাথে এ মৃত্যুভাবনার সাদৃশ্য লক্ষনীয়:

Thou, from whose unseen presence
The leaves dead
Are driven, like ghosts from an
Enchanter fleeing,
Yellow, and black, and pale, and
Hectic red,
Pestilence stricken multitudes:’

জীবনানন্দ দাশের সর্বশেষ দু’টি কাব্যগ্রন্থ হল ‘সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮)’ এবং ‘বেলা অবেলা কালবেলা’ (১৯৬১, তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত)। ‘সাতটি তারার তিমির’ কাব্যসংকলনে তিনি নগর জীবনের জটিলতা, সমাজ, বিশ্বইতিহাস, ধর্ম, দর্শন, বিশ্বরাজনীতি ইত্যাদি বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ‘মূয়খ’ পত্রিকায় তিনি বলেছিলেন,

“সমাজ ও ইতিহাস সম্পর্কেও আমার কবিতা চেতনা হয়তো দেখিয়েছে, আরো বড় চেতনার উত্তরপ্রবেশ চেয়েছে।”

অর্থাৎ এ সময়ে তাঁর কবিতায় উঠে আসে সমকালের সময়চিত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সমাজের চিত্ররূপ। তাঁর কয়েকটি কবিতা থেকে বিষয়টি স্পষ্টতা লাভ করে-

তবুও কোথাও কোনো প্রীতি নেই এতদিন পরে।
নগরীর রাজপথে মোড়ে মোড়ে চিহ্ন পড়ে আছে;
একটি মৃতের দেহ অপরের শবকে জড়ায়ে
তবুও আতঙ্কে হিম- হয়তো দ্বিতীয় কোনো মরণের কাছে।
(‘বিভিন্ন কোরাস’, সাতটি তারার তিমির)

চারিদিক বিকলাঙ্গ অন্ধ ভিড়- অলীক প্রয়াণ।
মন্বন্তর শেষ হলে পুনরায় নব মন্বন্তর;
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে নতুন যুদ্ধের নান্দীরোল;
মানুষের লালসার শেষ নেই;
উত্তেজনা ছাড়া কোনো দিন ঋতু ক্ষণ
অবৈধ সঙ্গম ছাড়া সুখ
অপরের মুখ ম্লান করে দেওয়া ছাড়া প্রিয় সাধ নেই।
(‘এইসব দিনরাত্রি’, সাতটি তারার তিমির)

মূলত ১৯৪২ এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আর যুদ্ধোত্তর মানুষের কঠিন যন্ত্রণাময় বাস্তবতাকে পুঁজি করে কবি লিখেছেন এই অসামান্য কবিতাগুলো।
‘বেলা অবেলা কালবেলা’ কাব্যগ্রন্থেও পাই একইরকম কবিতার আস্বাদ। তবে এখানে প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। ফলে কবিতার রূপ-আঙ্গিকও ভিন্নভাবে ধরা দেয়। ‘সাতটি তারার তিমির’ এ যেমন কবি কিছুটা দৃঢ় চিত্তে বলেছিলেন মানুষের দুর্দশার কথা, ঠিক বিপরীতে ‘বেলা অবেলা কালবেলা’য় তিনি প্রকাশ করেছেন চিন্তাচেতনা। অর্থাৎ এখানে তিনি খুব মৃদু, শান্ত এবং বিষণ্ণতার মধ্য দিয়ে লিখেছেন কবিতা।

কোথাও পাবে না শান্তি-যাবে তুমি এক দেশ থেকে দূর দেশে ?
এ মাঠ পুরানো লাগে- দেয়ালে নোনার গন্ধ-
পায়রা শালিক সব চেনা ?

যদিও প্রায় সকল ক্ষেত্রেই জীবনানন্দ দাশ ছিলেন চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর মতই কোমল এবং শান্ত, কিন্তু কিছুক্ষেত্রে তাঁর কবিতাতেও সমসাময়িক রাজনীতিক প্রতিবেশের কঠোর প্রতিবাদ ফুঁটে উঠেছে-

‘কাফের’ ‘যবন’ টুটিয়া গিয়াছে, ছুটিয়া গিয়াছে ঘৃণা,
মোসলেম বিনা ভারত বিকল, বিফল হিন্দু বিনা;
-মহামৈত্রীর গান
বাজিছে আকাশে নব ভারতের গরিমায় গরীয়ান।
(‘হিন্দু-মুসলমান’, বঙ্গবাণী)

এটি ১৯২৬ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার প্রতিবাদে লেখা। আবার ১৯৪৬-৪৭ সালেও একই বিষয়ে তিনি পুর্বাশা পত্রিকায় আরেকটি কবিতা প্রকাশ করেন:

যদি ডাকি রক্তের নদীর থেকে কল্লোলিত হয়ে
বলে যাবে কাছে এসে, ‘ইয়াসিন আমি,
হানিফ মহম্মদ মকবুল করিম আজিজ-
আর তুমি ?’ আমার বুকের ’পরে হাত রেখে মৃত মুখ থেকে
চোখ তুলে শুধাবে সে-রক্তনদী উদ্বেলিত হয়ে
বলে যাবে, ‘গগণ, বিপিন, শশী পাথুরঘাটার;
মানিকতলার, শ্যামবাজারের, গ্যালিফ স্ট্রীটের, এন্টালির-’
কোথাকার কেবা জানে; জীবনের ইতর শ্রেণীর
মানুষ তো এরা সব;…

ঙ.
জীবনানন্দ দাশ সত্যিকার অর্থে একজন আধুনিক কাব্যস্রষ্টা ছিলেন। এবং তিনি সফল প্রয়োগ করেছিলেন ‘আধুনিকতাবাদ’-কে তাঁর কবিতায়। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে- এ সকল কবিতা যে ভাবাদর্শ থেকে উৎসারিত, তা তাঁর মৌলিক চেতনালব্ধ নয়। পূর্বেই আমরা দেখেছি ‘আধুনিকতাবাদ’ এর উত্থান ঘটেছিল বিশ শতকের শুরুতে পাশ্চাত্যের কবিতায়। প্রাধানত তিন মার্কিন কবি ছিলেন এই নব্জাগরণের অগ্রদূত: অমি লাওয়েল, এজরা লুমিস পাউণ্ড ও টমাস স্টার্নস্‌ এলিয়ট। তন্মধ্যে অমি লাওয়েল, যিনি আমেরিকান মহিলা কবি, তাঁর নেতৃত্বে ১৯১৫ সালে আমেরিকায় ‘Imagist Group’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে টি এস এলিয়ট পরিপূর্ণরূপে আধুনিক কবির মর্যাদা অর্জন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগুলো হল: Prufrock and Other Observations (1917), Ara Vos Prec (1919), Poems (1920), The Waste Land (1922). এছাড়া ১৯২০ এ প্রকাশিত এজরা পাউণ্ডের বিখ্যাত কাব্য The Cantos আধুনিকতা ও মৌলিকতা প্রকাশ করে সর্বসাকুল্যে। এরপর উইস্ট্যান হ্যুগ অডেনের Poems (1930), স্টিফেন স্পেণ্ডারের Twenty Poems (1930), সিসিল ডে লুইসের Collected Poems (1935), রিলকের অর্ফিয়ুসের প্রতি সনেটগুচ্ছ, জয়েসের ইউলিসিস, লরেন্সের অ্যারন্স রড় প্রভৃতি থেকেই মূলত বিস্তার লাভ করে আধুনিক কবিতা। আর এর প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিল জীবনানন্দ দাশ ও তাঁর সমকালের অন্য আধুনিক কবিগণ। যাঁরা নিজস্ব মেধা ও প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে রূপান্তর ঘটিয়েছিলেন বাংলায় প্রচলিত কবিতার। এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হল: ‘কল্লোল’ এর পাঁচ প্রধান আধুনিক কবি, যাঁদেরকে পঞ্চপাণ্ডব বলা হয়, তাঁরা প্রত্যেকেই ইংরেজি সাহিত্যের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এবং যেহেতু ‘আধুনিকতাবাদ’ পাশ্চাত্য থেকে আগত, তাই তাঁদের পক্ষে এই নতুন ধারাকে গ্রহণ করা দুঃসাধ্য ছিল না। আধুনিক সাহিত্য বা কবিতা পূর্বের ন্যায় সহজ-সরল ছিল না, তুলনামূলক তা জটিতর ছিল। সাহিত্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষা এবং ইংরেজি সাহিত্যের সাম্প্রতিক বিষয়াবলি না জানলে আধুনিকতা বোঝা কষ্টকর ছিল। ফলে সনাতনপন্থীরা আধুনিক কবিতাকে গ্রহণ করতে পারেন নি সঠিকভাবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক্ষেত্রে সচেতনতার সাথে গ্রহণ করেছিলেন আধুনিক কাব্যধারা। এবং তিনি নিজেও এর দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। উল্লেখ্য যে, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন জীবনানন্দ দাশের প্রথম স্বীকৃতিদাতা। তাঁর একটি চিঠিতে পাই-

“তোমার কবিত্বশক্তি আছে তাতে সন্দেহমাত্র নেই।–কিন্তু ভাষা প্রকৃতি নিয়ে এত জবরদস্তি কর কেন বুঝতে পারিনে। কাব্যের মুদ্রাদোষটা ওস্তাদীকে পরিহাসিত করে। বড়ো জাতের রচনার মধ্যে একটা শান্তি আছে যেখানে তার ব্যাঘাত দেখি সেখানে স্থায়িত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ জন্মে। জোর দেখানো যে জোরের প্রমাণ তা নয় বরঞ্চ উল্টো।”

সত্যিকার অর্থে বাংলা সাহিত্যে যেসব কালে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে, তার সবটুকুই এসেছে ঐ পাশ্চাত্য থেকে। মধ্যযুগের পরে প্রথম মধুসূদনের কবিতা আধুনিকতার পথে যাত্রা করে। কিন্তু সে আধুনিকতা, যা বিশ্বপথে উন্নীত করেছে বাংলা কবিতাকে, তার জন্মদাতা বাঙালি নয়। হোমার, ভার্জিল, মিল্টনের কবিতার রূপরেখা এবং কলাকৌশলে প্রভাবিত হয়ে মাইকেল সৃষ্টি করলেন বাংলা কবিতা। এছাড়া তাঁর মহাকাব্য, পত্রকাব্য, চতুর্দশপদী কিংবা অমিত্রাক্ষর ছন্দ, এসবকিছুই পাশ্চাত্য প্রভাবের ফসল। রবীন্দ্রনাথ পূর্ববর্তী বাংলা কবিতায় আধুনিকতার ধারাকে যারা প্রসারিত করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে বিহারীলাল চক্রবর্তী, সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার, অক্ষয়কুমুর বড়াল, দেবেন্দ্রনাথ সেন, গোবিন্দচন্দ্র দাস, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এবং কামিনী রায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। প্রকৃতপক্ষে বিহারীলালের প্রকৃতি-প্রেম-বিষাদভাবনা প্রভৃতির উপর প্রভাব রেখেছে ওয়ার্ডস্‌ওয়ার্থ, কোলরীজ, শেলী, কীটস্‌। এছাড়া স্কচ ও আইরিশের কবিতা এবং টেনিসন-ব্রাউনিং, পেত্রার্কের কবিতা প্রভাব রেখেছে অন্যান্য কবিদের কবিতায়। বাংলায় রোমান্টিক যুগের একচেটিয়া সূত্রপাত ঘটালেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শুধুমাত্র রোমান্টিকতা নয়; মানবতাবাদ, প্রথাগতভাবে নারী মুক্তি, বিজ্ঞানবোধ, পরিপার্শের আধ্যাত্মবোধ প্রভৃতি সবকিছুই রবীন্দ্রনাথের একক সৃষ্টি এ বাংলায়। কিন্তু তাঁর পূর্বেই এসবকিছু সৃষ্টি হয়েছে উনবিংশ শতকের আমেরিকা, ইউরোপ, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানের সাহিত্যে। তাঁর কাব্যগ্রন্থে ধরা পড়ে ভিক্টোরীয় শিল্পের নবজাগরণ, ফরাশি রোমান্টিকতার বিলাস-বাসনা, ইংরেজ কবিদের ইন্দ্রিয়ানুভূতি। ফলে এ কথা অস্বীকার করা মূঢ়তা ছাড়া আর কিছু হবে না যে- প্রাচ্যের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে বিশ্বকবি হয়ে উঠলেন, তার পিছনে প্রতীচ্যের প্রভাব কম নয়। একইভাবে রবীন্দ্র সমসাময়িক বা পরবর্তী বাংলা সাহিত্য প্রধানদের মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, কালিদাস, মোহিতলাল মজুমদার, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্‌দীন, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত উল্লেখযোগ্য। তাঁদের প্রাতিস্বকতার পূর্ণতা পূর্বের মতই অপূর্ণ থেকে গেছে, যখন তাঁরা সৃষ্টি করলেন রবীন্দ্রধারার আলোকে, আবার কেউ কেউ ফ্রান্স-ইউরোপের হাইনরিশ হাইনে, হুইটম্যান, শেলী, বায়রন এর কবিতার আলেখ্যে। ত্রিশোত্তর বাংলা কবিতায় রাজনীতিক ঘটনাবলি এবং সামাজিক বৈষম্য প্রাধান্য পেয়েছে। এ কালের কবিদের মধ্যে সঞ্জয় ভট্টাচার্য, অরুণ মিত্র, অশোকবিজয় রাহা, দীনেশ দাস, সমর সেন, আহসান হাবীব, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রাধান্য পেয়েছেন। তাঁদের কবিতায় মার্ক্স, লেনিন, ডিমিট্রভ এর আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তার ছাপ স্পষ্ট। তাঁরা কবিতার মাধ্যমে রাজনীতিক অস্থিতিশীলতা, দাঙ্গা, পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের-ফ্যাসিবাদ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। এরপর থেকে বাংলা কবিতায় শুরু হয়েছে আরেক নতুন পর্ব: উত্তর আধুনিক যুগ।
সমসাময়িক, অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দীর শূন্য দশকের বাংলা কবিতা আধুনিকতা ও উত্তর আধুনিকতাকে উৎরে পৌঁছেছে অন্যধারায়। যেখানে কবিতার নির্মাণ কৌশল কিংবা যুক্তিবোধ লোপ পাচ্ছে অনেকাংশে। প্রতিটি কবিই তাঁর সময়ের প্রতি দায়বদ্ধ। কেননা তাঁকে তাঁর পূর্ববর্তী কবিদের কবিতা সম্পর্কে অবগত থেকে, তারপর সৃষ্টি করতে হয় নতুন কবিতা। এই দায়ভার বর্তমানের কবিদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে না। বিশেষ করে বর্তমানে প্রযুক্তির সীমাহীন ও মাত্রাতিরিক্ত অগ্রগতির ফলে সাহিত্য হয়ে উঠেছে যাচ্ছেতাই। এক্ষেত্রে প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্য খেলা’ প্রবন্ধটি স্মরণযোগ্য। যেখানে তিনি দেখিয়েছেন- সাহিত্য নিয়ে খেলা করার অধিকার ব্যক্তিমানসের সকলের রয়েছে। কিন্তু একাধিক খেলার মধ্যে প্রভেদ তখন গড়ে ওঠে, যখন খেলাচ্ছলে কোনো সাহিত্য-খেলোয়াড় শিক্ষা দিতে পারেন। তাই ‘সাহিত্য ছেলের হাতের খেলনাও নয়, গুরুর হাতের বেতও নয়।’ ফলে সাহিত্য নিয়ে খেলতে হলে থাকা চাই এ বিষয়ে বিস্তর জ্ঞান-গম্যি। তার সাথে মননশীলতা আর সৃষ্টিশীলতা যুক্ত হলেই তৈরি সম্ভব উৎকৃষ্টমানের সাহিত্য। আর তা সম্ভব না হলে তথাকথিত লেখকের ভাঁড় থেকে ছন্দবিহীন পদ্য, যুক্তিবিহীন গদ্য আর বোধবিহীন প্রবন্ধ বৈ আর কিছু সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না। অথবা মাইকেল-রবীন্দ্র-নজরুল আর জীবনানন্দকে অনুকরণ-অনুসরণ করতে হবে। অবশ্য এতে সাত নকলে আসল খাস্তা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি !

চ.
জীবনানন্দ দাশের কবিতা মূলত প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকের জন্য। তাঁর অধিকাংশ কবিতা এতই জটিলতাপূর্ণ, যে- সামগ্রিক অর্থে তা সাধারণ পাঠকের বোধগম্য হয় না। অবশ্য এ বোধগম্যহীনতা, অর্থাৎ যা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, হয়ত তার কারণেই তাঁর কবিতা সর্বাধিক জনপ্রিয়। কিটসের পাঠকদের মত বাঙালি-অবাঙালি পাঠকরা তার নিজের চিন্তাচেতনা এবং কল্পনা অনুযায়ী একটি চিত্রকল্প দাঁড় করানোর সুযোগ পায় জীবনানন্দ দাশের কবিতায়। স্বভাবতই মানুষ অজানাকে জানার নিরন্তর প্রচেষ্টা করে। আর জীবনানন্দের কবিতা হল অজানার এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। বাস্তব আর অবাস্তবের লীলাখেলায় মত্ত জীবনানন্দের কবিতার অর্থ আমাদের কাছে আলো আঁধারির খেলা করে। লালন ফকির যেমন বলেছিলেন- ‘ধরতে গেলে না যায় ধরা, জ্বলছে রে বিজরী’, তেমনি স্বাপ্নিক পরিমণ্ডলে ঘেরা জীবনানন্দ ও তাঁর কবিতা।

জীবনানন্দ দাশ, শুদ্ধতম-মহত্তম কবি, যাঁর কবিতা সৃষ্টি করেছে একক পরিধিস্থ বৃত্ত। যেখানে সকলে প্রবেশ করতে পারে না। আবার যে কেউ-ই সৃষ্টি করতে পারে না জীবনানন্দকে অনন্য কাব্যশৈল্যে। তিনি নিজেই বলেছিলেন-

“সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি।”

সম্ভবত এজন্য, জীবনানন্দ দাশ; সকলের কবি নন, কারো কারো কবি।