উপরের আলোকচিত্রটি আফ্রিকায় আদিম মানুষের ব্যবহার করা ১২ লক্ষ বছরের একটি পুরনো প্রস্তরকুঠারের, তাঞ্জানিয়ার পাওয়া অসাধারণ যন্ত্রটি এখন আছে লন্ডনে অবস্থিত ব্রিটিশ জাদুঘরে। মনে পড়ে ধোঁয়াটে শৈশবে স্কুল বইতে ছিল আদিমানুষের ব্যবহৃত পাথরের অস্ত্রের কিছু হাতে আঁকা ছবি, তাতে যেন বেশ দায়সারা ভাবে তৈরি কিছু ছুঁচালো পাথর খণ্ড- অস্ত্রের নিপুণতা নেই সেখানে। বিশেষ করে সাধারণ জ্ঞানের একই বইতে মনে হয়েছিল স্রেফ একটা ডিমভাজার ছবি কোনমতে বসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু গত মাসে যখন সামনাসামনি এই অসাধারণ সৃষ্টিটির মুখোমুখি হলাম, অবাক বিস্ময়ে দেখলাম কি ধারালো সেই আগ্নেয়শিলায় তৈরি কুঠারের ধার গুলো, কত যত্নের, পরম মমতায়, বিপুল সময় ব্যয় করে নিখুঁত করে তোলা হয়েছে প্রতিটি ইঞ্চি। আমাদেরই আদিপুরুষরা বন্ধুর পরিবেশে টিকে থাকার জন্য আবিস্কার করেছিলেন এমন মহাস্ত্র। তাঞ্জানিয়ার বিখ্যাত ওলডুভাই গর্জে পাওয়া গেছে বলে কুঠারটির নাম
সেই স্থানের নামেই রাখা হয়েছে, আর এখানে আছে কয়েক মিনিটের এক চমৎকার ভিডিও-
http://www.bbc.co.uk/ahistoryoftheworld/objects/I3I8quLCR8exvdZeQPONrw
কিন্তু ব্রিটিশ জাদুঘরের সবচেয়ে প্রাচীন বস্তু কিন্তু এই প্রস্তরকুঠার নয়, সেটি ওলডুভাই গর্জেই পাওয়া ১৮ লক্ষ বছরের নিচের ছবির পাথরের যন্ত্রটি, যার সাহায্যে মূলত শিকারের চামড়া ছিলে মাংস কাটা হত। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী লুই লিকি ১৯৩১ সালে ওলডুভাইতে অভিযান চালানোর সময় এটি খুঁজে পান, এবং সেই অভিযানের স্পন্সর ব্রিটিশ জাদুঘরের কাছে সমর্পণ করেন।
কুঠারটির নিচে লেখা আছে যে এটি ব্রিটিশ জাদুঘরের প্রাচীনতম সংগ্রহ এবং ছবির ও চিত্রকর্মের সাহায্যে বোঝানো হয়েছে যে কি করে এটি ব্যবহার করা হত।
বাকী ৩টে প্রস্তরকুঠারই যত দূর মনে পড়েছে ৫০,০০০ থেকে ৭০,০০০ বছরের প্রাচীন ( কাঁচের পিছনে থাকায় হয়ত হলদেটে ভাব এসেছে কোন ছবিতে) –
আমাদের আদিপুরুষদের সেই সংগ্রামময় অবস্থা পাড়ি দেবার হাতিয়ার তৈরি করেছিল তারা নিজেরাই পাথর কুদে, বৈরী অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তাদের প্রচেষ্টা দেখে জাদুঘরেই মাথার ভিতরে ফেনিয়ে উঠেছিল অক্ষয় কুমার বড়ালের মানববন্দনা কবিতাটি-
১
সেই আদি-যুগে যবে অসহায় নর
নেত্র মেলি ভবে,
চাহিয়া আকাশ পানে-কারে ডেকেছিল,
দেবে না মানবে?
কাতর আহ্বান সেই মেঘেমেঘে উঠি
লুটি গ্রহে গ্রহে,
ফিরিয়া কি আসে নাই, না পেয়ে উত্তর ধরায় আগ্রহে?
সেই ক্ষুব্ধ অন্ধকার, মরুত গর্জনে,
কার অন্বেষণ?
সে নহে বন্দনা-গীতি, ভয়ার্ত-ক্ষুধার্ত
খুঁজিছে স্বজন!
২
আরক্ত প্রভাত সূর্য উদিল যখন
ভেদিয়া তিমিরে,
ধরিত্রী অরণ্যে ভরা, কর্দমে পিচ্ছিল
সলিলে শিশিরে।
শাখায় ঝাপটি পাখা গরুড় চিৎকারে
কাণ্ডে সর্পকুল,
সম্মুখে শ্বাপদ-সংঘ বদন ব্যাদানি
আছাড়ে লাঙ্গুল,
দংশিছে দংশক গাত্রে, পদে সরীসৃপ
শূন্যে শ্যেন উড়ে;-
কে তাহারে উদ্ধারিল? দেব না মানব-
প্রস্তরে লগুড়ে?
৩
শীর্ণ অবসন্ন দেহ, গতিশক্তিহীন,
ক্ষুধায় অস্থির;
কে দিল তুলিয়া মুখে স্বাদু পক্ব ফল,
পত্রপুটে নীর?
কে দিল মুছায়ে অশ্রু? কে বুলাল কর
সর্বাঙ্গ আদরে?
কে নব পল্লবে দিল রচিয়া শয়ন
আপন গহ্বরে?
দিল করে পুষ্পগুচ্ছ, শিরে পুষ্পলতা,
অতিথি সৎকার!
নিশীথে বিচিত্র সুরে বিচিত্র ভাষায়
স্বপন সম্ভার!
৪
শৈশবে কাহার সাথে জলে স্থলে ভ্রমি
শিকার-সন্ধান?
কে শিখাল ধনুর্বেদ, বহিত্র চালনা
চর্ম পরিধান?
অর্ধদগ্ধ মৃগমাংস, কার সাথে বসি’
করিনু ভক্ষণ?
কাষ্ঠে কাষ্ঠে অগ্নি জ্বালি কার হস্ত ধরি
কুর্দন নর্তন?
কে শিখাল শিলাস্তূপে, অশ্বত্থের মূলে
করিতে প্রণাম?
কে শিখাল ঋতুভেদ, চন্দ্রে-সূর্যে মেঘে
দেব-দেবী নাম?
৫
কৈশোরে কাহার সাথে মৃত্তিকা কর্ষণে
হইনু বাহির?
মধ্যাহ্নে কে দিল পাত্রে শালি অন্ন ঢালি’
দধি-দুগ্ধ-ক্ষীর?
সায়াহ্নে কুটিরদ্বারে কার কণ্ঠ সাথে
নিবিদ উচ্চারি?
কার আশীর্বাদ লয়ে অগ্নি সাক্ষী করি’
হইনু সংসারী-?
কে দিল ঔষধি রোগে, ক্ষতে প্রলেপন-
স্নেহে অনুরাগে?
কার ছন্দে-সোম গন্ধে-ইন্দ্র অগ্নি বায়ু
নিল যজ্ঞ ভাগে?
৬
যৌবনে সাহায্যে কার নগর পত্তন,
প্রাসাদ নির্মাণ?
কার ঋক্ সাম যজুঃ চরক সুশ্রুত,
সংহিতা পুরাণ
কে গঠিল দুর্গ, সেতু, পরিখা, প্রণালী,
পথ, ঘাট, মাঠ?
কে আজ পৃথ্বীরাজ-জলে স্থলে ব্যোমে
কার রাজ্য পাট?
পঞ্চভূত বশীভূত, প্রকৃতি উন্নীত
কার জ্ঞানে বলে?
ভুঞ্জিতে কাহার রাজ্য-জন্মিলেন হরি
মথুর কৌশলে?
৭
প্রবীণ সমাজ পদে, আজি প্রৌঢ় আমি
জুড়ি দুই কর,
নমি, হে বিবর্তবুদ্ধি! বিদ্যুৎ-মোহন,
বজ্রমুষ্টিধর!
চরণে ঝটিকাগতি ছুটিছ উধাও
দলি নীহারিকা।
উদ্দীপ্ত তেজসনেত্র-হেরিছ নির্ভয়ে
সপ্তসূর্য শিখা।
গ্রহে গ্রহে আবর্তন-গভীর নিনাদ
শুনিছ শ্রবণে?
দোলে মহাকাল-কোলে অণু পরমাণু
বুঝিছ স্পর্শনে?
৮
নমি, হে সার্থক কাম! স্বরূপ তোমার
নিত্য অভিনব!
মর দেহ নহ মর, অমর অধিক
স্থৈর্য ধৈর্য তব?
লয়ে সলাঙ্গুল দেহ, স্থূলবুদ্ধি তুমি
জন্মিলে জগতে!
শুষিলে সাগর শেষে, রসাইলে মরু
উড়ালে পর্বতে!
গড়িলে আপন মূর্তি-দেবতালাঞ্ছন
কালের পৃষ্ঠায়!
গড়িছ ভাঙ্গিছ তর্কে, দর্শনে, বিজ্ঞানে
আপন স্রষ্টায়!
৯
নমি, হে বিশ্বগ ভাব! আজন্ম চঞ্চল,
বিচিত্র, বিপুল!
হেলিছ-দুলিছ সদা, পড়িছ আছাড়ি;
ভাঙ্গি সীমা-কূল!
কি ঘর্ষণ-কি ধর্ষণ, লম্ফন-গর্জন,
দ্বন্দ্ব মহামার!
কে ডুবিল-কে উঠিল, নাহি দয়ামায়া,
নাহিক নিস্তার!
নাহি তৃপ্তি, নাহি শ্রান্তি, নাহি ভ্রান্তি ভয়।
কোথায়-কোথায়!
চিরদিন এক লক্ষ্য,-জীবন বিকাশ
পরিপূর্ণ তায়!
১০
নমি তোমা নরদেব, কি গর্বে গৌরবে
দাঁড়িয়েছ তুমি!
সর্বাঙ্গে প্রভাতরশ্মি, শিরে চূর্ণ মেঘ,
পদে শষ্প ভূমি।
পশ্চাতে মন্দির-শ্রেণী, সুবর্ণ কলস,
ঝলসে কিরণে;
কলকণ্ঠ-সমুত্থিত নবীন উদ্গীথ
গগনে পবনে।
হৃদয-স্পন্দন সনে ঘুরিছ জগৎ,
চলিছে সময়;
ভ্রূভঙ্গে-ফিরিছ সঙ্গে-ক্রমব্যতিক্রম
উদয়-বিলয়।
১১
নমি আমি প্রতিজনে,-আদ্বিজ চণ্ডাল,
প্রভু, ক্রীতদাস!
সিন্ধুমূলে জলবিন্দু, বিশ্বমূলে অণু;
সমগ্রে প্রকাশ।
নমি কৃষি-তন্ত্রজীবী, স্থপতি, তক্ষক,
কর্ম, চর্মকার।
অদ্রিতলে শিলাখণ্ড-দৃষ্টি অগোচরে,
বহু অদ্রি-ভার!
কত রাজ্য, কত রাজা গড়িছ নীরবে
হে পূজ্য, হে প্রিয়!
একত্বে বরেণ্য তুমি, শরণ্য এককে.-
আত্মার আত্মীয়।
খুব ভালো লাগলো পোস্টটি। অনেক কিছুই জানার আছে আপনার পোস্ট থেকে। আপনার ডানাগুলো আরও আকাশমুখী হোক। শুভেচ্ছা
অসাধারণ পোস্ট, অণু ভাই। বিষয়বস্তুর সাথে ছবি, ভিডিও, আর কাব্য সংযোগে আলাদা মাত্রা পেয়েছে লেখাটা। মানববন্দনা কবিতাটা খুব সম্ভবত টেক্সবুকে ছিল, আর আজ আপনার লেখার সাথে চমৎকারভাবে মিলে গেছে কবিতাটার অন্তর্নিহিত ভাব।
আসলেই আমাদের পাঠ্যবইগুলোর অবস্থা কিছুডা ‘ডিমভাজা’ গোছের ছিল। মনে পড়ছে, এইরকম অর্থহীন ছবি আর এসো নিজে করির ধাক্কায় বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষন ক্রমেই ভীতিতে রূপান্তরিত হয়েছিল, যা বিজ্ঞানের ছাত্র না হওয়ার একটা বড় কারণ ছিল (অর্থনৈতিক কারণের পাশাপাশি)। যেখানে কলেজের লেভেলের বিদেশী বইগুলো গল্পের মত করে লেখা হয়, সেখানে আমাদের দেশের বাচ্চাদের বইগুলো পর্যন্ত বিষয়ের ভারে ভারাক্রান্ত করে ফেলা হয় বর্ননা সংক্ষিপ্ত করে। আমাদের শিশুদের ইমাজিনেশন বাড়াতে মৌটেও সহায়ক নয় বইগুলো।
ছবির সঙ্গে সেই মাপের লেখা না থাকায় হতাশ হলাম; যদিও এ বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে প্রচুর। মুক্তমনার সঙ্গে এই ফটো-পোস্ট (?) টি আদৌও যায় না। 😛
তারেক অণু,
চমৎকার এক চিমটি মিশ্রিদানার মতো লেখাটার সাথে ততধিক সুন্দর শৈশবের পড়া কবিতাখানি মিলেমিশে যে আবহ তৈরী করেছে, অসাধারন! আর অভিজিৎ রায়ের লিঙ্কায়িত নিউজিল্যান্ডের কেন্টারবেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেনিস ডাটন এর লেকচার, না শুনলে/দেখলে একাডেমিক লেকচারের সৌন্দর্যটাই মনে হয় মিস্ করতাম! আপনাদের দুজনকেই ফুলেল শুভেচ্ছা!
@কেশব অধিকারী , অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মানব বন্দনা কবিতাটি কি টেক্সট বইতে ছিলো? পড়েছি মনে হচ্ছে।
আমি মাঝে মধ্যেই প্রাচীন জীবনের কথা ভাবি, কী অদ্ভুত একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছে আমার আপনার মতই মানুষেরা! তারপর আবার ভাবি, আজ থেকে হাজার বছর পরে আমাদের কথাও এভাবেই ভাববে কেউ!
@তানভীরুল ইসলাম, স্কুলের বইতেই ছিল, তবে কিছু অংশ।
সেটাই স্বাভাবিক, হয়ত বলবে কি আজব ছিল ২০১২র মানুষেরা, সব কাজ নিজেরাই করত কিন্তু কৃতিত্ব দিত কল্পলোকের ঈশ্বরকে!
ভাল লাগল।
অস্ত্রের উন্নয়নে মানব বুদ্ধিবৃত্তি মনে হয় একটা পর্যায় পর্যন্ত বেশ স্থবির ছিল।
১২ লক্ষ বছর আগেকার বর্শা ফলকের মত ফলক অনেক অনেক দিনই প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহৃত হয়েছে মনে হয়। মাত্র ৫/৬ হাজার বছর আগেও একই ধরনের ফলক ব্যাবহৃত হয়েছে।
তবে ১৮ লক্ষ বছর আগের মানব পূর্বপুরুষ পাথরের যন্ত্র বানিয়ে পশুর ছাল ছাড়াচ্ছে নিঃসন্দেহে বেশ উচ্চমানের বুদ্বিবৃত্তিরই পরিচায়ক।
@আদিল মাহমুদ, নিঃসন্দেহে!
দেখি আদি মানুষের অন্য ধরনের অস্ত্রের ছবি পেলে তাদের বর্ণনা নিয়ে একটা পোস্ট দেবার চেষ্টা করব।
@তারেক অণু,
তাড়াতাড়ি দেন, লোক আমি মোটামুটি শান্তিপ্রিয় হলেও কেন যেন প্রাচীন কালের অস্ত্রপাতির প্রতি উতসাহিত বোধ করি।
(Y)
@সবুজ পাহাড়ের রাজা,
অনুদা, এই পাথরগুলোর বয়েস বের করার পদ্ধতিও কি সেই কার্বন-১৪ ? কোথায় যেন শুনেছিলাম কার্বন-১৪ সবসময় নির্ভুল হিসেব দেয়না। কারো কি জানা আছে ব্যাপারটা ?
@ম্যাক্স ইথার, সম্ভবত সেই পদ্ধতিই, কিন্তু পুরোপুরি জানা নেই।
(Y)
ধন্যবাদ।
@সৈকত চৌধুরী, এসে গেছি! বলেছিলাম না !
(Y)
@ভক্ত, 🙂
আহ দুর্দান্ত। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত তাঞ্জিনিয়ার ওল্ডুভাই গর্জে পাওয়া প্রাচীন অ্যাকুলিয়ান হ্যান্ড অ্যাক্স নিয়ে আমি আমার ‘ভালবাসা কারে কয়’ বইটায় একটা বড় অংশ লিখেছি।
আপনার দেয়া ছবির এ প্রাচীন হাতিয়ারগুলোই কিন্তু আমাদের মানবেতিহাসের সবচেয়ে পুরোন শিল্প। ব্যবহারিক অস্ত্রের এই বিমুগ্ধকর নান্দনিক রূপান্তর প্রাগৈতিহাসিক মানুষের কারিগরী দক্ষতা তুলে ধরে। ডারউইনীয় দৃষ্টিকোন থেকে ‘হ্যান্ড এ্যাক্স’ সভ্যতার নতুন এক ধাপের প্রতীক। দেখে মনে হয় এই হাতিয়ারগুলো তৈরিই হয়েছে একধরণের প্রচ্ছন্ন ‘ফিটনেস সিগন্যাল’ দেয়ার জন্য, যে সিগন্যালের মধ্যে প্রকাশ পায় নির্মাতার বুদ্ধি, কর্মনিপুণতা, সচেতনতা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পণা এবং দূরদর্শিতা।
অনেক বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীই মনে করছেন ব্যাপারটির উৎস আসলে বিবর্তনমনোসঞ্জাত। আমাদের পূর্বপুরুষেরাও এমনি ভাবে পাথুরে হাতিয়ার, প্রবালের নেকলেস প্রভৃতি বানিয়ে জয় করতে পেরেছিলো বিপরীত লিঙ্গের আকর্ষণ, জাগাতে পেরেছিলো অন্যদের চিত্তচাঞ্চল্য। প্রায় দেড় মিলিয়ন বছর আগে হোমো ইরেক্টাসরা শুরু করেছিল পাতলা পাথরের ফালি বানানো। এগুলো দেখতে ডিম্বাকৃতির, কখনোবা ত্রিভুজাকৃতির পাতার মতোন বা ‘টিয়ার ড্রপ’ আকারের । এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকা সহ পৃথিবীর যেখানেই হোমো ইরেক্টাস আর হোমো ইরগাস্টারদের যাতায়াত ছিল, সেখানেই পাওয়া গেছে হাজার হাজার একুলিয়ান হ্যান্ড এ্যাক্স। সবচেয়ে পুরোন ‘অ্যাকুলিয়ান হ্যান্ড এক্স’ এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে ১.৮ মিলিয়ন বছর আগেকার ।
অনেকেটা পেখমওয়ালা ময়ূরের মতোই অস্ত্র বানানোয় দক্ষ পুরুষ আকর্ষণ করতে পেরেছিলো আদিম সমাজে নারীদের অনুগ্রহ। আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে যাদের এ গুণগুলো ছিলো তারা আকর্ষণ করেছিলো অধিকমাত্রায় বিপরীত লিঙ্গের সান্নিধ্য, তারাই রেখে গেছে অধিক হারে উত্তরসূরী। যারা এই কারিগরীবিদ্যা রপ্ত করতে পারেনি, তারা বিপরীত লিঙ্গের চোখে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেনি, তারা প্রজননগতভাবে সফল ছিলো না। নিউজিল্যান্ডের কেন্টারবেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেনিস ডাটন (৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৪৪ – ২৮ ডিসেম্বর, ২০১০) একটি বই লিখেছেন ডারউইনীয় দৃষ্টিকোন থেকে আমাদের সৌন্দর্যপ্রিয়তা এবং শিল্পের প্রতি অনুরাগ বিশ্লেষণ করে । তার একটি চমৎকার লেকচার আছে টেড ডট কম সাইটে এবং ইউটিউবে । সেখানেও তিনি এটার কথা উল্লেখ করেছেন। ভিডিওটা মাস্ট সি টাইপের 🙂
দেখুন এখানে।
ধন্যবাদ লেখাটির এবং ছবির জন্য।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ দাদা। আমার একটু আগ্রহ আছে যৌনতার বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা নিয়ে। এই ব্যাপারে স্টাডি করার কোনও লিঙ্ক দিতে পারেন কি ?
@ম্যাক্স ইথার, Evolution সিরিজের ১১টি পর্বের একটা ছিল সেক্স নিয়ে, দেখেছেন কি? না হলে আমার কাছ থেকে কপি করে নিতে পারেন।
@ম্যাক্স ইথার,
ইংরেজীতে অনেক বই আছে। আমার খুব ভাল লেগেছে ম্যাট রিডলীর ‘রেড কুইন‘ নামের বইটা।
জিওফ্রি মিলারের ‘মেটিং মাইন্ড‘ বইটাও দুর্দান্ত।
আমার ‘ভালবাসা কারে কয়‘ বইটাতেও অনেক উপাদান পাবেন আশা করি।
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ দাদা। চমৎকার ফিডব্যাক দিলেন। দেখি তাদের তৈরি আরও কিছু জিনিসের ছবি দিয়ে একটা পোস্ট দেয়া যায় কিনা। শুভেচ্ছা