প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস গুলোতে প্রার্থনার মতো একটি ভ্রান্ত ধারনা বিদ্যমান। ধার্মিকরা ভাবেন প্রার্থনা তাদের জীবনের গতি প্রকৃতি, তাদের চাওয়া পাওয়ার পূর্ণতা ঘটাতে সম্ভব। ধর্মগুলোর আবির্ভাবের এবং টিকে যাবার পেছনেও প্রার্থনা পূরণ একটা বড় কারণ হিসেবেই মনে হয়। আসুন দেখি কেনইবা চাইলেই স্বয়ং স্রস্টার পক্ষেও কারও প্রার্থনা পূরণ সম্ভব না। একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাচ্ছি।
ধরুন আজ শুক্রবার ছুটির দিনে আমি আপনাকে ফোন করে আমার বাসায় নিমতন্ন দিলাম। আমার গৃহের উদ্দেশে আপনি যাত্রা শুরু করার প্রয়াসে ড্রাইভারকে গাড়ী বের করতে বললেন । ছুটির দিন বিধায় আপনার ড্রাইভারকে অনুরধ করতে হল, আপনার ড্রাইভার তার পূর্ব পরিকল্পিত প্ল্যান পরিবর্তন করতে বাধ্য হলো। আপনার স্ত্রীকে বললেন আজ আপনি বাসায় খাবেন না। আপনার স্ত্রী রান্নায় তার প্ল্যান পরিবর্তন করলো। আমার বাসায় আপনাকে নেমন্তন্ন করার পর আমার গিন্নিও তার রান্নায় পরিবর্তন আনলেন। আপনার গাড়ীটি রাস্তায় বেরোবার পর আপনার গাড়ীর গতিপ্রকৃতির সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আরও অনেক গাড়ীর গতিপ্রকৃতি পাল্টে গেলো। চতুর্মাত্রিক ভাবে এদের সবার অবস্থানের পরিবর্তনের জন্যও কিন্তু আপনার অবস্থান দায়ী। আর তাদের চতুর্মাত্রিক অবস্থান পরিবর্তনের কারণে তাদের সাথে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্ট সকলেরও চতুর্মাত্রিক স্থানিক পরিবর্তন ঘটলো। আপনার সাপেক্ষে এই পরিবর্তন পরোক্ষ। কিন্ত আপনার গাড়ীর একটা ছোট্ট মুভই হয়তো বাঁচিয়ে দিতে পারে কারও জীবন অথবা মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। আপনি যদি আজ গাড়ী না বের করতেন তাহলে আপনার গাড়ী রাস্তায় কোন চতুর্মাত্রিক স্থানকাল দখল করতনা। তাতে আপনার গাড়ী রাস্তায় থাকলে অন্য গাড়ীগুলোর যে গতিবিধি হতো আপনার গাড়ী না থাকাতে ভিন্ন গতিবিধি হবে। আর এই ভিন্ন গতিবিধি রাস্তায় থাকা সব গাড়ীর গতিবিধিতেই কিঞ্চিৎ পরিবর্তন আনবে। আর হয়তো এই কিঞ্চিৎ পরিবর্তনের উপরেই হয়তো কারও বাচা মরা নির্ভর করে।
বোঝাতে পারলাম কিনা জানিনা।
এখন সৃষ্টিকর্তা যদি সর্বজ্ঞানী হন… তাহলে তিনি জানেন আপনি আমার নেমন্তন্ন গ্রহণ করবেন, নাকি করবেন না। তিনি জানেন এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কারণে আরও অনেকের ( আসলে পৃথিবীর সকল প্রাণী, জড়, এমনকি পৃথিবীর ঘূর্ণন, সৌরজগতের ঘূর্ণন, ভবিষ্যৎ ) ভাগ্য নির্ধারিত। এমতাবস্থায় যদি আপনার ড্রাইভার দোয়া চাইতে থাকেন যেন আজ আপনি গাড়ী নিয়ে না বের হন, তাহলে শুধু মাত্র আপনার ড্রাইভারের দোয়া কবুল করতে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার পুরো প্ল্যানে পরিবর্তন আনতে হবে। এটা কি কোন বুদ্ধিমান সত্ত্বার কাজ হবে ?
যদিও আমি এখানে শুধুই গাড়ীর গতিপ্রকৃতি দিয়ে ব্যাপারটা বোঝাতে চেয়েছি কিন্তু আসলে ব্যাপারটা আরও জটিল। প্রত্যেকটা ডিসিশন একেকটা রিপল এফেক্ট তৈরি করে। প্রত্যেকটা একশন একেকটা রিপল এফেক্ট তৈরি করে। আর এই রিপল থেকে কেউ, কোনও কিছুই বাদ পড়েনা। আপনার একেকটা কার্যকলাপের সাথে আমার ভাগ্যও (!) জড়িত। শুধু আমার না … এই পুরো ইউনিভার্স এর। একটু ভালো বোঝার জন্য এমেরিকান একটা টিভি সিরিয়াল আছে। TOUCH । প্রথম পর্বটি দেখলেই চলবে। তাহলে বোঝাটা সহজ হয়ে আসবে হয়তো।
যখন আপনি এটা বুঝবেন তখন প্রার্থনা করে কিছু চাইবার উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। কারণ তখন মনে হবে সবকিছুই প্রি ডিটারমাইনড। অতএব আপনার চেয়ে লাভ কি? আর যদি আপনার চাওয়াটাও প্রিডিটারমিনেশন এর মধ্যে থাকে তাহলে ফ্রি উইল বলতে কিছুইতো থাকলোনা। অথচ ধর্মগ্রন্থগুলোতে ফ্রি উইলের উপরও বেশ গুরত্ত দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে দুটো বিষয় পারস্পর সাংঘরসিক।
মিরাকল বা অলৌকিক কাজকারবার ঘটা যে অসম্ভব সেটিও এখান থেকেই বোঝা যায়। সৃষ্টিকর্তা যদি কোনও অলৌকিক কিছু ঘটাতে চান তাহলে সেটার রিপল এফেক্ট বা চেইন রিএকশনগুলকেও অলৌকিক হতে হবে। কিন্তু সেরকম কোনও এফেক্ট আমরা এখনো পর্যবেক্ষণ করিনি।
ঘুরে ফিরে হকিং এর গ্র্যান্ড ডিজাইনের কথাই মনে পড়ছে। সবকিছুই হয়তো একটা সেট অফ ল’স অনুসরণ করে চলছে। ‘ অনুসরণ করে চলছে ‘ কথাটাও হয়তো ভুল। সৃষ্টির আদিতেই একটা সেট অফ ল’স ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। যেটার আউটকাম হচ্ছে আমাদের এই এখনকার ইউনিভার্স। তাই বলে ব্যাপারটা এমন নয় যে একই সেট অফ ল’স দিয়ে আরেকটা ক্রিয়েশন ঘটালে রেজাল্ট একই আসবে। পরিণতি ভিন্ন আসারই সম্ভাবনা বেশি থাকবে। তারমানে হয়তো আমরা একটা ইভল্যুশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন। স্রস্টার প্রয়োজনীয়তা কি ? শুধুমাত্র ল’স গুলো সেট করে দিয়েই কি তার কার্যক্রম শেষ হয়ে যায় না ? অথবা হতে পারে স্রস্টা সার্বজনীন। তিনি বিষ্ঠাতেও আছেন আবার বরাহতেও আছেন। এটি হয়তো একটি চেতনা বৈ কিছু নয়।
লেখাটিতে ভজঘট পাকিয়ে ফেললাম কিনা জানিনা । মন্তব্য আশা করছি। দেখা যাক প্রশ্ন উত্তর এর মধ্য দিয়ে আরেকটু পরিষ্কার করা যায় কিনা।
অন্য ধর্মের জ্ঞান ততোটা না থাকায় ইসলাম সম্বন্ধে বলি- ইসলামে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞানী। মিরাকল ঘটানো বা তার এফেক্ট হ্যান্ডেল করাটা তার জন্য কোন সমস্যা নয়। অতীতে অনেক মিরাকল ঘটেছে এবং তার প্রমান ও রয়েছে। তার পরেও সব কিছু ঠিকমতই চলছে। আসলে আমাদের সীমিত জ্ঞান নিয়ে সবকিছু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা বোকামি। এক পর্যায়ে আমাদের মেনে নিতে হয় যে এই বিষয়টি ব্যাখ্যাতীত অথবা হয়তো এবং যদির সাহায্যে একটি গল্প তৈরী করার চেষ্টা করতে হয়। বিশ্বাস সেক্ষেত্রে একটি সমাধান এ পৌছাতে সাহায্য করে মানুষকে।
আলোচনায় দেখলাম কেউ কেউ ভাবছেন মানুষ নতুন করে বিজ্ঞানের সূত্র তৈরী করছেন। আসলে কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয়। এই সূত্র গুলো মেনে যুগ যুগ ধরে বিশ্বব্রম্ভান্ড চলে আসছে। মানুষ এক পর্যায়ে সেই সূত্রটি জানতে পারে বা বুঝতে পারে। কারো ধারণা যে সৃষ্টির শুরুতেই এই নিয়মগুলো স্থাপন বা চালু করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কে করলো এটা? তিনিই কি সৃষ্টিকর্তা নন?
প্রিডিটারমাইন্ড বলতে কি আদৌ কিছু আছে? আর গড যদি হেল্প করতে চেষ্টা করেন তাহলে তাকে নিশ্চয়ই ফোটন বা অন্য কিছুতে করে নির্দেশ পাঠাতে হবে এবং তা মানুষের বোধগম্য হওয়ার জন্য আমাদের শরীরে আলাদা সেন্সর লাগবে যাতে বোঝা যাবে গড আমাকে এই কাজটি করতে মানা করছেন। আমার জানা মতে এ ধরনের কোন কিছু মানব দেহে নেই। কেউ জানেন কি,এ ব্যপারে?
অামার মনে হয় ফিজিক্সের “ল” গুলো মানুষের বানানো, কারণ কিছু বুদ্ধিমান মানুষের স্বভাব হল সব কিছুকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা, প্রকৃতি ঐসব “ল” গুলো তৈরী করেনি, সে কেবল সাম্য রক্ষা করে চলে, যেমন অাগুনের বেশি তাপ, কম উষ্ণ ঠান্ডা জলের দিকে প্রবাহিত হয়।
@অভিষেক, মনে হতেই পারে। কিন্তু মনে হওয়া দিয়ে তো ভাই কিছুই করা যায় না। প্রকৃতি যে সাম্য রক্ষা করে চলে সেটাই কাগজে কলমে নিয়ে এসে নাম দেয়া হয়েছে ‘ল … এইতো ব্যাপার তাইনা ?
ভালোই শুরু করেছিলেন, শেষের দিকে এলোমেলো করে ফেলেছেন মনে হচ্ছে।
এই লাইনটা আমি বুঝলামনা। ধরুন স্রষ্টা চাঁদ ৩টুকরা করে আবার জোড়া লাগিয়ে দিল আর অলৌকিক ভাবে চাঁদ এবং আশেপাশের কোনো কিছুর কোনো পরিবর্তন হলোনা, একদম আগের মতই সব থাকলো খালি কিছু মানুষ ঘটনাটা দেখে স্রষ্টায় বিশ্বাস আনলো। বিজ্ঞানের চোখে এটা অবশ্যই একটা গাজাখুরি গল্প কিন্তু আপনি chaos theory দিয়ে কিভাবে অসম্ভব বলছেন? হয়তো আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আমি বুঝতে পারিনি তাই প্রশ্নটা করছি।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
টেকনিক্যালি অসম্ভব। একটা পসিবিলিটি বলি, চাঁদ তিন টুকরো করলে পৃথিবী-চাঁদের আকর্ষনে তফাত ঘটবে সামান্য হলেও। এতে জোয়ারের পরিবর্তন হবে। ধরি জোয়ার একটু বাড়লো…একারনে একটা বাঁধ ভেসে পাশের একটা ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেলো, ক্ষেতের ধান নষ্ট হওয়াতে কৃষকের পেট চলছে না…সে সাহস করে একদিন চুরি করতে বেরুলো রাতের আধারে। চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লো…ব্লা ব্লা ব্লা যতদুর ইচ্ছা যেতে পারেন।
এখন কথা হচ্ছে, যে গড ইচ্ছা করলেই চাঁদকে তিন টুকরো করে ফেলতে পারেন সে গডের কাছে ফিজিক্সের ল আর এমন কী? দিলো প্যারামিটারগুলো অ্যাডজাস্ট করে…চাঁদ ভাংগবে কিন্তু আর কিছুই পরিবর্তন হলো না। অসম্ভব তো না কী বলেন?
হ্যাঁ অসম্ভব হতেও পারে। এজন্য প্রথমে আপনাকে ঐ গডের সংজ্ঞাটা কড়া করে বর্ননা করতে হবে। কিছু কিছু গডের ক্ষেত্রে এই আর্গুমেন্ট চলবেই না…যেমন যে গড সবই পারে। ফিজিক্সের ল ইচ্ছা করলেই…এডিট, ডিলেট, ক্রিয়েটও করতে পারে 😀
@টেকি সাফি, আপনার ব্যাখ্যাটি ভালো লেগেছে। আসলে ইফেক্ট গুলা আরও সুক্ষ থেকে শুরু হয়ে আরও ব্যাপকতার দিকে এগোবে। চাঁদকে টুকরা করলে চতুর্মাত্রিক স্থানকালের অবস্থান এর পরিবর্তনটি আমার মনে হয় বেশি সমস্যার। একটা ভুল সুত্র দিয়ে অঙ্ক শুরু করার বেশ কিছুক্ষন পর অঙ্কের যে অবস্থা দাঁড়াবে ব্যাপারটা অনেকটা সেরকম। এখন যদি সত্যি সত্যি চাঁদ তিন টুকরা করা হয় তাহলে এর চেইন রিএকশন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় আনার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে আরও অনেকগুলা মুলনিতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তখন আবার সেই পরিবর্তনের রিপল এফেক্ট সারানোর প্রয়োজন হয়ে পরবে। মোদ্দা কথা কোনও চূল পরিমাণও পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাহলে সব ‘ল গুলই পর্যায়ক্রমে ভেঙ্গে পড়বে।
@টেকি সাফি,
টেকনিক্যালি অসম্ভব সেটাতো আমিও মানছি। কিন্তু কেও যদি বলে অলৌকিক ভাবে সম্ভব তাহলে তাকে কি বুঝাবা? গড তার অলৌকিক শক্তি দিয়ে জোয়ারভাটা কিছু পরিবর্তন না করেও চাদ ৩ টুকরা করসে, গডের ক্ষেত্রে কোনো সাধারণ আর্গুমেন্ট খাটেনা। এইবার আমাকে কেমনে যুক্তি দিয়ে বুঝাবা? তালগাছটা আমার :)) ।
ক্যয়স থিওরীটাকে একটু আগে বিশ্লেষন করে নিলে ভালো করতেন।
সুন্দর লিখা। আর একটু বিস্তারিত হলে ভাল হত। ধন্যবাদ।
@আমিনুল, দেখি ভবিষ্যতে আরও বিস্তারিত পারি কিনা। আপনাকেও ধন্যবাদ ।
“এটা কি কোন বুদ্ধিমান সত্ত্বার কাজ হবে ?” আমি বুঝলামনা সত্ত্বা কিভাবে বুদ্ধি সম্পন্ন হয়? বুদ্ধি তো প্রাণীজ তাহলে সত্ত্বাও কি প্রাণীজ??????
আর প্রাণী মাত্রই কাম-বাসনা মত্ত হয়ত প্রকাশিত নতুবা গোপনে…………………।
@স্ফুলিঙ্গ, সৃষ্টিকর্তা সমন্ধে বলতে গেলে কোনও একটা বিশেষণতো ব্যাবহার করতেই হয়। আর সেক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা চলেই আসবে।
আরেকটু বিস্তারিত লিখলে ভালো হতো।
(F)
হ্যাঁ।
যেই সাধারন নিয়ম গুলো আমরা দেখি নিয়ম গুলো সে রকমই কেন?
মানে সেট অফ ল’স এরকম না অন্যরকমও তো হতে পারত
এর কোনও ব্যাখ্যা আছে