মহাবৃত্তের তৃতীয়বর্ষের প্রথম সংখ্যা

জীববৈচিত্র্য এক নতুন দার্শনিক চিন্তাধারার জন্ম দিয়েছে। যার মাধ্যমে মানুষ আরও স্বতন্ত্রভাবে বুঝতে পারছে নিজের অবস্থান। প্রকৃতিতে অন্যান্য প্রাণীর অধিকারকে নিশ্চিত করতে না পারলে নিজের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। তাই প্রকৃতিতে সবার সমানাধিকার প্রণয়নের দায়িত্বও আমাদের। সেই মূল্য বিচারের জন্যই ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৬১তম সাধারণ পরিষদে ২০১০ সালকে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ডিসকাশন প্রজেক্ট থেকে প্রকাশিত মহাবৃত্তের এ সংখ্যাটিও মূলত জীববৈচিত্র্যকে কেন্দ্র করে। এর সঙ্গে বিবর্তনবাদকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কেননা, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ছিল চার্লস ডারউইনের জন্মশতবার্ষিকী এবং একই বছর ২৪ নভেম্বর ছিল মৌলিক গ্রন্থ অরিজিন অব স্পিসিস গ্রন্থের দেড়শ বছরপূর্তি। ‘জীববৈচিত্র্যই আমাদের জীবন’ – এ স্লোগানকে সামনে রেখে এবারের মহাবৃত্ত সংখ্যাটি তৈরি করা হয়েছে। মহাজাগতিক সংস্কৃতির পথে… ধারণাটি বিজ্ঞান ও সংষ্কৃতির মেলবন্ধন সৃষ্টিতে কাজ করেছে।

রেড ইন্ডিয়ান আদিবাসীদের গোষ্ঠীপিতা সিয়াটলের মতো বলি, আমাদের সন্তানদের এই শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তারা জানে যে, এ পৃথিবীর মাটিতে মিশে আছে আমাদের পূর্বপুরুষের দেহাবশেষ। প্রজন্মের পর প্রজন্মের দেহাবশেষ উর্বর করেছে এই মাটি। সেই উর্বরতায় ফসল ফলিয়ে বেঁচে থাকি। তাই মাটি হলো মা। পুর্বপুরুষদের বিলীন হয়ে যাওয়ার একমাত্র ঠিকানা; আমাদের শিকড়। আসিফ সম্পাদিত মহাবৃত্তের এবারের সংখ্যায় শুভেচ্ছা সম্পাদকীয় লিখেছেন শিশুসাহিত্যিক সুব্রত বড়ুয়া। নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন খালেদা ইয়াসমিন ইতি। প্রবন্ধ হিসেবে আছে দ্বিজেন শর্মার ‘জীববৈচিত্র্য বিনাশের পূর্বাপর’; এ এম হারুন অর রশীদের প্রাকৃতিক নির্বাচনতত্ত্বের স্রষ্টা; সুধীর কুমার দত্তের লিনিয়াস :দ্য লিটল বোটানিস্ট; আহসান হাবীবের বায়োডাইভারসিটি; বন্যা আহমেদখান মুহম্মদের বর্ণবাদ এবং বংশগতি বৈচিত্র্য; অভিজিৎ রায়ের সমকামিতা :ব্যাখ্যায় ডারউইনের তত্ত্ব; পান্থ রেজার একজন চিকো মেন্ডিজের অপেক্ষায়; আসিফের পৃথিবীর পরিণতি কি শুক্রের মতো। অনুবাদে আছে জেকব ব্রনওস্কির লোয়ার দ্যান অ্যাঞ্জেলস।

এছাড়াও দেওয়া আছে ওয়ার্ল্ড মনিটরিং সেন্টারের করা পৃথিবীর প্রায় সবদেশের জীববৈচিত্রের পরিসংখ্যান। ৫০ হাজার বছরে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া মানুষের সংখ্যা। ড. আলী রেজার সুন্দর বনের ওপর সাক্ষাৎকার; পৃথিবীর সেরা ট্যাক্সোডার্মিস্ট মার্কো ফিশারের সাক্ষাৎকার। প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ বিভাগে আছে জাহাঙ্গীর আলম ও রুবাইয়্যাত মনসুর মুগলীর সুন্দরবন ও ডলফিন। ড. বিধান চন্দ্রের গবেষণা প্রতিবেদন উপেক্ষিতদের উপাখ্যান। খালেদা ইয়াসমিন ইতির সেন্টমার্টিন :প্রবাল দ্বীপের অন্তিম উপাখ্যান। সীমান্ত দীপুর নদীর বাঁকে বাঁকে।

এ ছাড়াও কেমন আছে দেশের অভয়ারণ্যগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন। নিবন্ধ বিভাগে তারেক অণুর প্রত্নতাত্ত্বিক ভ্রমণ আদি পুরুষের খোঁজে। রজনীশ সিংহর ভাইরাস বিস্ফোরণ। সাইফুল ইসলামের ঋতুবৈচিত্র্যে ভরা এই দেশ।

এবারের সংখ্যাটিতে মুক্তমনার নানাভাবে সহযোগিতা আছে। তাদেরকে জানাচ্ছি কৃতজ্ঞতা।

সংখ্যাটি প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দু:খিত।

২০০ টাকা মূল্যের ১৬০ পৃষ্ঠার মহাবৃত্তের জীববৈচিত্র্য সংখ্যাটির প্রচ্ছদ করেছেন আহসান হাবীব। পাওয়া যাবে আজিজ মার্কেটের তক্ষশীলা; ১৬৯/১ শান্তি নগরের কনকর্ড গ্রান্ট, তৃতীয়তলার ২০৯ রুম এবং পল্টন প্রিতম ভবনের সাহিত্য প্রকাশে। যোগাযোগ  –  ০১৬৭৪৪০৫৩৩০