যে কোন জাতির গঠনেই শিক্ষা ব্যাবস্থা অন্যতম গুরুত্বপূর্ন উপাদান। যথাযথ শিক্ষার অভাব হতে পারে ভয়াবহ, তার থেকেও ভয়াবহ হতে পারে শিক্ষার নামে অশিক্ষা/কুশিক্ষা শিক্ষা দেওয়া; যা একটি জাতিকে করে তুলতে পারে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে পংগু। যেমন ধর্মশিক্ষা/সংস্কৃতির নামে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের সূতিকাগার বানাবার এক জ্বলন্ত উদাহরন হল পাকিস্তান। ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ববোধের অহংকারে সে দেশে স্কুলের কচি শিশুদের মন বাল্যকাল থেকেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিষিয়ে তোলা হয় ধর্মের নামে জাতিগত বিদ্বেষের বিষ ঢেলে। যে দেশে এ ফর আলিফ বি ফর বন্দকু শিক্ষা দেওয়া হয় সে দেশ থেকে পাইকারী হারে খুনে পাক আর্মি, জেহাদী নামের সন্ত্রাসী বেরুবে না মাদার টেরেসা বা ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলরা বেরুবে তা বুঝতে তেমন কষ্ট হবার না। পরধর্ম, পরসংস্কৃতি ঘৃনা করার শিক্ষা এখন সে দেশে কেবল ধর্মশিক্ষার মাঝেই সীমিত নেই, ছড়িয়ে গেছে অন্যান্য বিষয়তেও।
আমাদের দেশে তূলনামূলনক ভাবে অবস্থা এখনো অতটা প্রকট না হলেও চিন্তিত হবার যথেষ্ট কারন আছে। নৈতিকতা শিক্ষার একমাত্র উপায় ধর্ম বলে সাধারন ভাবে আমাদের দেশে এখনো বদ্ধমূল ধারনা, সে ধর্ম শিক্ষার নামে কিছু মৌলিক নীতিকথার সাথে সাথে সাম্প্রদায়িকতার মৌলিক পাঠ এখন দেওয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই, সরকার প্রনোদিত জাতীয় পাঠক্রমের সিলেবাসের আওতাতেই, গন্ডগ্রামের কোন কওমী মাদ্রাসা জাতীয় প্রতিষ্ঠানে নয় যাকে বিচ্ছিন্ন বলা যেতে পারে। আমাদের সময়ে মোল্লা আলেম, ধর্ম শিক্ষক গোছের লোকজনেরা মুখে মুখে কিছু উগ্র সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলে থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মনে পড়ে না এভাবে সরাসরি সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ঢালা হত বলে। হয়ত তখনো কিছুটা চক্ষু লজ্জা ছিল যা এখন নেই, তাই মনে হয় কাজটি করা যাচ্ছে এক রকম বিনা বাধাতেই।
বেশ ক’বছর আগ থেকেই মাধ্যমিক পর্যায়ে ধর্মশিক্ষা আবশ্যিক করা হয়েছে। আজকাল ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেটেই পাওয়া যাচ্ছে দেশের সরকারী শিক্ষা বোর্ডের যাবতীয় বইপত্র। সেখান থেকে নবম-দশম শ্রেনীর ইসলাম-শিক্ষা বইটির [১] কিছু অংশ নিয়ে এই আলোচনা। বইটির প্রথম অধ্যায় হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন -‘আকাইদ’ অধ্যায়; কারন এটি ইসলামের মূল ভিত্তি। মূল ভিত্তি বলেই মনে হয় তেমন লুকোছাপার আশ্রয় নেওয়া হয়নি, অবিশ্বাসীদের অবস্থান ইসলামী দৃষ্টিভংগীতে সামগ্রিকভাবে কিভাবে দেখতে হবে তা পরিষ্কারভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য বর্ননা দেওয়া হয়েছে। ইসলামী পরিভাষায় সেই ‘কুফর’ বা অবিশ্বাসের পরিচয় দেওয়া হয়েছে বেশ ষ্পষ্ট ভাষায়ঃ [১] (পৃষ্ঠা ৩/৪)
নিঃসন্দেহে এই অধ্যায় থেকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম নৈতিকতা শিক্ষার, বৃহত্তর সমাজে পদচারনার এক মূল্যবান ধারনা পাবে। এই উচ্চমানের নৈতিক শিক্ষায় বলীয়ান হয়ে কোন ছেলে যদি তার হিন্দু সহপাঠিকে সরাসরি বলে, “কি হে, চরম অকৃতজ্ঞ অবাধ্য কাফের; পরকালে যে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে সে খেয়াল আছে?” তবে সে ছেলেকে কতটুকু দোষ দেওয়া যাবে? তাকে কি এই শিক্ষা সরাসরি দেওয়া হচ্ছে না? আমাদের ছেলেবেলায় আমরা হিন্দু সহপাঠীকে দেখিয়ে দেখিয়ে ‘হিন্দু’ পিপড়া বলে লাল পিপড়া নিধন করতাম, তেমন ব্যাবস্থায় মনে হয় কুলোচ্ছিল না।
কি উচ্চমানের নৈতিকতা শিক্ষা; ইসলামী বিশ্বাসের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতে অবিশ্বাসীরা হল কাফের; যারা নাকি অকৃতজ্ঞ, যাদের দুনিয়ায় কোন মর্যাদা নাই, তারা অবাধ্য ও বিরোধী, জঘন্য জুলুমকারি, হতাশ/নাফরমান। কাফেররা এতসব জঘন্য অপরাধের পরেও দুনিয়ায় মনে হয় নিতান্ত দয়া পরবশ হয়েই ধর্মশিক্ষকরা সরাসরি শাস্তির বন্দোবস্ত এখনো করছেন না, তবে তাদের জন্য আখেরাতে যে অন্ততকাল ভয়াবহ পরিনতি অপেক্ষা করছে তা কোরানের বানী সহ প্রমান করে মানসিক স্বস্থি পাচ্ছেন। কাফের ঠিক কারা তা পরিষ্কারভাবে এখানে বলা হয়নি মনে হয় কায়দা করে। কারন সরাসরি অপর কোন ধর্মের নাম বলে দিলে আবার যদি আমাদের মত ইসলাম বিদ্বেষী বা কম ঈমানের লোকে যদি ‘অমূক’ ধর্ম অবমাননা করা হয়েছে বলে শোরগোল তোলে, তাই সাধারন ভাবে ‘অবিশ্বাসী’ দিয়ে কর্ম সারা হয়েছে, কোন বিশেষ ধর্মের লোক আর অভিযোগ করতে পারল না। তবে পরিষ্কার ইংগিত দেওয়া হয়েছে যা থেকে শিক্ষার্থীরা ধারনা করে নিতে পারে সংজ্ঞায়িত কাফের কারা। যারা ক্রুশ, পৈতা পরিধান করে তাদের প্রতি আমাদের নুতন প্রজন্ম নিঃসন্দেহে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে তাকাবে আশা করাই যায়, ধর্মশিক্ষা বাদে এতবড় নৈতিক শিক্ষা নির্বিকারভাবে এবং বিনা প্রতিরোধে আর কেই বা দিতে পারে? আমি এতেও নিঃসন্দেহ যে অনেক ধার্মিক ভাই অবিশ্বাসী বা কাফের প্রজাতির প্রতি এহেন সব মূল্যবান বিশেষন শিক্ষাদানেও সাম্প্রদায়িকতার কোনই ছাপ পাবেন না। হাজার হোক এখানে কাফেরদের বৈশিষ্ট্য বর্ননা করা হয়েছে, কিন্তু ঘৃনা করতে হবে তা কোথায় বলা হল?? দূঁদে উকিলের মত চ্যালেঞ্জ করা হবে ঘৃন্য বলা হয়েছে, তবে ঘৃনা করতে হবে কোথায় বলা হল?? এই মিথ্যা অভিযোগ তো আমাদের মত ইসলাম বিদ্বেষীরা বানিয়ে দিচ্ছে। এহেন যুক্তির বিরুদ্ধে আসলে বলার কিছু থাকে না। এত সব মধুর বিশেষন কারো ওপর জাতিগত ভাবে লেপন করলে ভালবাসা হয়ত হয় না, তবে তাদের সম্পর্কে খারাপ ধারনা কি আর হতে পারে নাকি।
বইটিতে সবই যে এমন ধরনের কথাবার্তা আছে তা না, যে কোন ধর্মগ্রন্থতেই বেশ কিছু ভাল ভাল কথাবার্তা, সদুপদেশ যেমন পাওয়া যায় তেমন এখানেও আছে। সত নাগরিক, সুসন্তান,সুপ্রতিবেশী হবার সুপরামর্শ, দেশসেবা/সমাজ সেবার, গুরুত্ব এ জাতীয় বিষয় ধর্মের আলোকে জোর দেওয়া হয়েছে যেগুলি প্রসংশনীয়ই বলা চলে। যদিও এগুলির ফাঁকেও ফাঁকেও কায়দামত কিছু কিছু যায়গায় সাম্প্রদায়িক চেতনা ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে ঠিকই। যেমন ৫৬ পৃষ্ঠায় প্রতিবেশীর হক আলোচনায় মুসলমান প্রতিবেশীর হক বেশী এমন ধারনা সরাসরি দেওয়া হচ্ছে। ৭৪ পৃষ্ঠায় বন্ধু নির্বাচনের একটি গাইড লাইন হিসেবে মহাত্মা ইমাম গাযালী (রঃ) এর রেফারেন্স দিয়ে বলা হচ্ছে যে লোক কোরান সুন্নাহর পরিপন্থী কাজে লিপ্ত তাকে ত্যাগ করা কর্তব্য বলে। এই গাইড লাইন মেনে পাশের বাড়ির পৈতা পরিহিত, মূর্তিপূজক হিন্দু কিংবা গলায় ক্রুশ ঝোলানো খৃষ্টানের সাথে বন্ধুত্ব করা নিশ্চয়ই সম্ভব নয়। পৈতা পরা, ক্রুশ পরা যে আল্লাহর কাছে অমার্জনীয় অপরাধ কুফরের লক্ষন সেটা তো আগেই পরিষ্কার করা হয়েছে। এরপরে যা আসছে তার তূলনায় মুসলমান প্রতিবেশীর হক, অমুসলমানের সাথে বন্ধুত্ব ইস্যু আলোচনার যোগ্যও নয়। কিছু কিছু হাস্যকর তথ্য, তূলনাও আছে যেগুলি নিয়েও আলোচনার সময় আপাতত নেই, দরকারও নেই।
৫৩ পাতায় বেশ গুরুত্ব সহকারে জিহাদ সম্পর্কিত শিক্ষা বর্নিত হয়েছে। আল্লাহর দ্বীন ইসলাম ধর্মকে জয়ী করা বা প্রতিষ্ঠা করা জিহাদ এভাবে অধ্যায়ের শুরু। ভাল কথা। জিহাদ সম্পর্কিত কিছু প্রাথমিক তথ্যের পর জিহাদের প্রকারভেদ বর্ননা করা হয়েছে, কিভাবে এবং কাদের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে আল্লাহর মনোনিত দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে তা মোটামুটি ষ্পষ্ট ভাষায় বর্ননা করা হয়েছে কোরানের রেফারেন্স সহকারে। [১] (পৃষ্ঠা ৫৪)
কি মূল্যবান চিরশান্তির শিক্ষা, পাঠ করলেই মনে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করে। আমাদের ছেলেমেয়েরা শিখল যে তার পাশের বাড়ির নিরীহ ভালমানুষ রামলাল কাকা যে হয়ত ছেলেবেলা থেকে তাকে কোলে পিঠে করে নিজের বাবার মতই স্নেহ করেছে সে আসলে তার প্রিয় ধর্ম ইসলামকে দুনিয়া থেকে মুছে ফেলার চিরস্থায়ী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কাফের প্রজাতির লোক। শুধু তাই নয়, এই আল্লাহ বিরোধী লোকের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া যুদ্ধ করা হল তার পবিত্র ধর্মীয় দায়িত্ব জেহাদ যা প্রিয় নবীজি শিক্ষা দিয়ে গেছেন। ভাগ্য ভাল যে ধর্মসূত্রের শিক্ষা লোকে যতটা না ভাব দেখায় তার কানাকাড়িও আসলে গুরুত্ব দেয় না।
এর আগে জিহাদের গুরুত্ব বর্ননা করা হয়েছে, ইসলাম ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করা বড় ইবাদত বলে বর্ননা করা হয়েছে। এর অন্তর্নিহিত শিক্ষা কি? শায়খ রহমান বাংলা ভাইরা দেশের সেক্যুলার ধারার আদালত মানতে চায়নি, বোমা মেরে বিচারক হত্যা শুরু করেছিল কারন সেগুলি ইসলামী শরিয়া সম্মত আইন কানুনের ধার তেমন ধারে না, তাদের ভাষায় সেগুলি তাগুতের (শয়তানের) আইনে চলে, আল্লাহর আইনে নয়। বাংলা ভাই/শায়খ রহমানকে সন্ত্রাসী বলা এই ধর্মশিক্ষার আলোকে কতটা যুক্তিসংগত? বেচারারা তো পরিষ্কার আল্লাহর আইনই প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিকুল শক্তির বিরুদ্ধে জেহাদ করছিল। কাফেরিয় ছায়ার মনুষ্য সৃষ্ট সেক্যুলার আদালত ধ্বংস করে ইসলামী আইন আদালত প্রতিষ্ঠার নিয়তকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে? তাদের বোমা মারা/মানুষ হত্যা নিয়ে হয়তবা কথা হতে পারে, তবে পদ্ধুতিগতভাবে ভূল হবার সম্ভাবনা থাকলেও নীতিগতভাবে তো তারা দেখি ঠিকই ছিল। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় প্রতিকুল শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।
লাদেন গং এবং তাদের সমমনারা যেহেতু ২০০১ সাল থেকে (আসলে ২০০১ থেকে নয়, ঠিক কবে থেকে বলা মুশকিল) বিশ্বের নানান দেশে (এমনকি বেশ কিছু মুসলমান প্রধান দেশও জেহাদি বোমার কবল থেকে রেহাই পায়নি) ইসলামী বিশ্বাসের পরম পবিত্র কোরান হাদীসের কিছু রেফারেন্স কোট করে নানান সন্ত্রাসী ততপরতা চালাচ্ছে। সেহেতু জিহাদ শব্দটি আসলেই ইসলামে কি অর্থে ব্যাবহার হয়েছে তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা, আগুন গরম বিতর্ক। কোরানে উপরোক্ত আয়াতের মত বেশ কিছু আয়াত আছে যেগুলি বিধর্মীদের প্রতি বেশ উত্তেজক, এসব আয়াত সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য মনেপ্রানে বিশ্বাস করে বসে থাকলে বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব বা শান্তিপূর্ন সহাবস্থান দূরের কথা, তাদের সাথে সদা সর্বত্র যুদ্ধ করে যাওয়াই ফরজ বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক যেভাবে আমাদের জ্ঞানী ধর্মশিক্ষকরা শিক্ষা দিচ্ছেন। লাদেন জাতীয় চরমপন্থীদের ইন্টারপ্রেটেশন তেমনই। এর বিপরীতে যারা ইসলাম ডিফেন্ডার বা মডারেট তাদের আর্গুমেন্টের মূল যুক্তি থাকে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার দায়ে অভিযুক্ত আয়াতগুলির ভুল/বিকৃত ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কারন তাদের মতে কোরান হাদীস জাতীয় সহি ইসলামী সূত্রে নিরপরাধ, নির্দোষ, নিরীহ মানুষের ওপর হামলাবাজি করা একেবারেই নিষিদ্ধ; যেসব উত্তেজক জেহাদী আয়াত কোট করা হয় সেসব আয়াত প্রকৃতপক্ষে কেবলমাত্র আক্রান্ত হলেই প্রযোজ্য যা উপযুক্ত কন্টেক্সট কিংবা যথাযথ ইসলামী জ্ঞান থাকলে বোঝা যায়। কোরান হাদীসের আলোকে এমনকি বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করাতেও কোন সমস্যা নেই যদি না তারা ইসলামের সাথে শত্রুতা না করে। তত্ত্বীয়ভাবে এ জাতীয় ব্যাখ্যা মন্দ নয়, কেউ আমার ওপর হামলা করলে আমি তাকে নিশ্চয়ই রসগোল্লা খাওয়াবো না, আমিও আত্মরক্ষার্থেই পালটা আঘাতই করব। ব্যাখ্যার সাথে সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবধারিতভাবে শোনা যায় যে ইসলাম ধর্মের উগ্রবাদের এসব অভিযোগ ইসলাম বিদ্বেষীদের আবিষ্কার। আরেকটু উদারমনা ধার্মিকরা ইসলাম বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্র হয়ত সেভাবে পান না তবে তারা পান পলিটিক্যাল ইসলামের গন্ধ; মানে লাদেন, বাংলা ভাই, কিংবা জামাত শিবির, হরকতুল জিহাদ জাতীয় রকমারি চরমপন্থী ধর্মীয় সংগঠনগুলি কোরান হাদীসের বিকৃত ব্যাখ্যা করছে তাদের বস্তুগত স্বার্থে, ধর্মের সাথে যাদের কোন সম্পর্ক নেই (যেমন আমাদের দেশে কিছু লোকে ’৭১ সালে রাজাকার বদর কেন হয়েছিল তার প্রচলিত সরল ব্যাখ্যা হল টাকা পয়সা ক্ষমতার লোভ)। আর কিছু মোল্লা আলেমও কেন এ জাতীয় উগ্র ধ্যান ধারনা প্রচার করে তারও ব্যাখ্যা সরল-তারা আসল ইসলাম জানে না, আসল ইসলাম জানতে প্রচুর পড়াশুনা করতে হয় যার জন্য বড় বড় প্রসিদ্ধ ইমাম আলেমনের শরনাপন্ন হতে হবে…ইসলাম সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে উপযুক্ত যোগ্যতা থাকতে হবে…এসব কথায় যুক্তি আছে, যোগ্যতা না থাকলে ব্যাখ্যা কেন গুরুত্ব দিতে হবে। এই বইতে যোগ্যতা সম্পন্ন আলেমদের অন্য ধর্ম ও বিধর্মীদের সম্পর্কে ধারনা কেমন তার কিছুটা আলামত পেয়েছি, তাদের কথা ভুল হতে পারে এ সম্ভাবনা মাথায় রেখে যথা সময়ে বিধর্মীদের সম্পর্কে ইসলামী জগতের কিছু অতি জনপ্রিয় হাই-প্রোফাইল বুজুর্গ ব্যাক্তিত্বের কথা শুনেও আমরা তূলনা করার চেষ্টা করব।
ইসলাম ডিফেন্ডার/মডারেট ভিউতে জিহাদের প্রকৃত মানে আত্মশুদ্ধি বা নিজের মনের কুপ্রবনতার (নফস) বিরুদ্ধে লড়াই (বই এ বর্নিত অপ্রকাশ্য জিহাদ), যুদ্ধবাজির যে জিহাদ (বই এর প্রকাশ্য জিহাদ) সেটা হলেও হতে পারে, কেবল মাত্র আক্রান্ত হলেই। মোদ্দা কথা লাদেন গং এর জিহাদের সাথে আসল প্রকৃত ইসলামী জিহাদের কোন সম্পর্ক নেই। এখন এ জাতীয় ইসলাম ডিফেন্ডিং যুক্তির সাথে কি উপরোক্ত কোট করা আয়াত, এবং তার সাথে ধর্মশিক্ষকদের দেওয়া ব্যাখ্যার তেমন মিল পাওয়া যায়?
প্রকাশ্য জিহাদের সংজ্ঞায় পরিষ্কার বলা হয়েছে যে কাফির, মুশরিক, ইয়াহুদিরা হল ইসলামের চিরশত্রু। এই সংজ্ঞা পড়ে কাফের, মুশরিক, ইহুদীরা জাতিগতভাবে মুসলমানের চিরশত্রু এই ধারনার বাইরে আর কোন কিছু কিভাবে পাওয়া যেতে পারে কেউ ব্যাখ্যা করতে পারেন? এখানে কিন্তু নমনীয় ব্যাখ্যাকাররা যেভাবে ব্যাখ্যা করেন যে এসব আয়াত জেনারেলাইজড নয়, কেবলমাত্র আক্রমনকারী বিধর্মীদের বা যুদ্ধকালীন অবস্থার কথাই বলা হয়েছে তেমন বোঝা কিভাবে সম্ভব? তেমন কোন ক্লজ কি মাননীয় শিক্ষকরা ইংগিত করেছেন? বর্নিত আয়াতের রেফারেন্সে বিধর্মীরা জাতিগতভাবেই ইসলামের চিরশত্রু (সরল মানে এখানে ব্যাক্তি ব্যাপার নয়, গুরুত্বপূর্ন হল তাদের ধর্মীয় পরিচয়) তারা ইসলামকে দুনিয়া থেকে মুছে দেবার ষড়যন্ত্রে সর্বদা লিপ্ত- কাজেই এসব আল্লাহ বিরোধী শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা জেহাদ করা পবিত্র দায়িত্ব এই শিক্ষা কি দেওয়া হছে না? এখানে কোথায় আক্রমনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা আর কোথায় কেবলমাত্র “মন্দ” বিধর্মী, ভালদের সাথে কোন সমস্যা নেই এমন কনসেপ্ট? আল কায়দা, হরকতুল জেহাদ এদের জেহাদী ধারনার সাথে আমাদের ধর্মশিক্ষা বই এ বর্নিত জেহাদী ধারনার পার্থক্য ঠিক কতটা? নুতন প্রজন্ম তাহলে প্রথম অধ্যায়ে শিখল কেন কাফের বা অবিশ্বাসী/বিধর্মীরা ভয়াবহ ধরনের ঘৃন্য, পরবর্তিতে আরো শিখল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না, এরপর অবশেষে শিখল যে কাফের, মুশরিক, ইয়াহুদিরা জাতিগতভাবেই তাদের চিরশত্রু কাজেই এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হল পবিত্র ধর্মীয় দায়িত্ব জিহাদ যা আল্লাহ কোরানে সর্বকালের জন্য নির্দেশনা হিসেবে নাজিল করেছেন। এর সমর্থনে যে আয়াত দেওয়া হয়েছে তা অবশ্য সম্পূর্ন আয়াত নয়, অসম্পূর্ন আয়াত কেন দেওয়া হল তা পরিষ্কার নয়। সম্পূর্ন আয়াতের বংগানুবাদ (ইউসুফ আলী)ঃ [২]
হে নবী ! অবিশ্বাসী ও মোনাফিকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম [জিহাদ] কর, এবং তাদের প্রতি কঠোর হও। জাহান্নাম হবে তাদের বাসস্থান, উহা কত নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থান।
ধর্ম ডিফেন্ডারগনের দায় অস্বীকারের ক্ষমতা অসাধারন। আগেই বলেছি যে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে তাদের অনেকে এমন সব চরম সাম্প্রদায়িক শিক্ষার ভেতরেও নিশ্চিত কোন সমস্যা দেখবেন না। তারা এসব প্রচারনাকে তাদের ধর্মীয় অধিকার হিসেবে মনে করেন এবং নানান শব্দমালার আড়ালে এড়িয়ে যান, পরিশেষে সিদ্ধান্ত হয় যে অভিযোগকারিই হল মহা বদমায়েশ ইসলাম বিদ্বেষী। এবার ধরা যাক, হিন্দু ধর্মের ছেলেমেয়েদের ধর্মশিক্ষা বই খুলে পাওয়া গেল; “যারা ৩৩ কোটি দেবদেবীতে বিশ্বাস করে না তারা সব নরাধম (নরাধম কিন্তু গালি নয়, যেহেতু দেবদেবীদের চোখে এরা অতি ঘৃনিত তাই নরাধম),অকৃতজ্ঞ, অবাধ্য ও বিরোধী, নাফরমান, হতাশ, দুনিয়ায় এদের কোন মর্যাদা নাই পরকালেও তারা অন্ততকাল পূন্যম নরকে জ্বলে ছাই হবে। সুন্নতি কায়দার টুপি, দাঁড়ি, চোখে সুরমা দেওয়া,বোরখা/হিজাব পরিধান হল চির ঘৃনিত নরাধমদের বৈশিষ্ট্য।” এরপর ধরেন, “একশ্বেরবাদীরা তাদের ধর্মের জন্মলগ্ন থেকেই হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত বহু কোটি মানুষের অতি আবেগের ৩৩ কোটি দেবদেবী আদিষ্ট মহান পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাস বাতিলের জন্য প্রকাশ্যে আহবান জানিয়ে আসছে, এমনকি দেশে দেশে মহান পবিত্র দেবদেবীর মূর্তি ভাংগায়ও লিপ্ত আছে। কাজেই পৌত্তলিকদের চিরশত্রু একশ্বেরবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে প্রকাশ্য জিহাদ বলা হয়। ৩৩ কোটি দেবদেবী একশ্বেরবাদীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার ও কঠোর হবার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন।“ – এই কথাগুলিকে নির্দোষ ধর্মীয় বিশ্বাসের আওতায় কোনভাবে ফেলা যাবে? কোনভাবে কথার মারপ্যাঁচে কিংবা নানান ভুজং ভাজং দিয়ে প্রমান করার উপায় আছে যে ধর্মশিক্ষার আড়ালে এসব বিশুদ্ধ সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়?
আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য কোরান হাদীসে কতটা সাম্প্রদায়িকতা আছে কি নেই তা নয়, মূল উদ্দেশ্য হল মুশরিক, খ্রীষ্টান, ইহুদিরা মুসলমানদের চিরশত্রু, তারা সদা সর্বত্র ইসলাম ধ্বংস করার চক্রান্ত্র লিপ্ত আছে এই জাতীয় সাম্প্রদায়িকতার সহজ পাঠ কিভাবে বিনা প্রতিবাদে সরকার কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থের মাধ্যমে কচি ছেলেমেয়েদের মাথায় বছরের পর বছর ঢোকানো হচ্ছে সেটা আলোচনা করা। এই প্রশ্ন অবশ্যই যারা মনে মনে বা প্রকাশ্যে বিশ্বাস করেন যে এসব শিক্ষায় কোন সমস্যা নেই কিংবা এসব প্রচারনা তাদের ধর্মীয় অধিকার তাদের জন্য নয়। তাদের সাথে আমার কোন বিরোধ নেই, কারন তাদের মধ্যে অন্তত ভন্ডামি নেই। কেউ যদি সরাসরি স্বীকার করেন যে তার ধর্মে বিধর্মীদের ঘৃনা করার কথা আছে কিংবা বিধর্মীদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তার ধর্মীয় দায়িত্ব তবে তার সাথে কথা বাড়াবার আমার অন্তত কোন দরকার নেই। তবে ইসলাম ডিফেন্ডার যারা আছেন তাদের মধ্যে স্বনামখ্যাত আন্তর্জাতিক মানের স্কলার থেকে শুরু করে একটু কম বিখ্যাত বাংলা ব্লগের লেখকগন সকলেইকড়া সুরে এ জাতীয় আলোচনায় ইসলামে জাতিগত বিদ্বেষ/ধর্মবিদ্বেষ এ ধরনের কিছু আছে এমন অভিযোগ নাকচ করে দেন। প্রায় অবধারিতভাবে তারা মত দেন যে এসব অভিযোগের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, ইসলাম বিধর্মীদের ধর্মাধিকার রক্ষার ও তাদের সাথে সদ্ভাব রাখার নির্দেশ দেয়,অকাট্য প্রমান হিসেবে বিধর্মীদের প্রতি কোরানের অন্য কোন নমনীয় আয়াত কোট করে কিংবা বিধর্মীদের সাথে নবীজি কিংবা সাহাবীদের ভাল ব্যাবহার/উক্তি জাতীয় কিছু হাদীস/ঘটনা কোট করে প্রমান করে দেন যে ইসলামের শত্রুরাই এই ধরনের অভিযোগ করে। আসলে ব্যাপারটা কি? বিধর্মীদের প্রতি ভাল ব্যাবহার করার কিছু কোরানিক নির্দেশনা, নবীজি কিংবা হাই-প্রোফাইল খলিফাদের উদারতার ভাল কিছু নিদর্শন অবশ্যই আছে। মুশকিল হল একই ভাবে বিধর্মীদের প্রতি বিদ্বেষ সূলভ আয়াত, নির্দেশনাও আছে এবং সুপার হাই-প্রোফাইল বিজ্ঞ আলেমগন যাদের ইসলামী জগতে সকলে পরম শ্রদ্ধা করেন তাদের লিখিত কোরানের ব্যাখ্যা, ইসলামী বিধিবিধানের পুস্তক ঘাটাঘাটি করলে চরম বিদ্বেষ সূলভ সুরের পরিষ্কার প্রাধান্য দেখা যায়, যার সামান্য প্রমান এই ধর্মশিক্ষা বই এ দেখা যায়। আমি নিশ্চিত এই ধর্মশিক্ষা গ্রন্থের রচনাকারীদেরও ইসলাম ধর্মে পরধর্মের সাথে কিংবা বিধর্মীদের সাথে কোন রকম বিদ্বেষসূলভ ধারনা আছে কিনা প্রকাশ্যে জিজ্ঞাসা করা হলে তারাও সরাসরি অস্বীকার করে বসবেন, ইসলাম বিধর্মীদের ব্যাপারে কত উদার তা নিশ্চিতভাবে নানান কায়দায় প্রমান করে দিতে পারবেন।
ধরা যাক ইসলাম ধর্মে আসলেই সাম্প্রদায়িকতা নেই, অন্য ধর্মবিশ্বাস কিংবা সেসব ধর্মে বিশ্বাসীদের সাথেও ইসলামের কোন সমস্যা নেই। এ ধরনের অভিযোগ সবই ইসলাম বিদ্বেষীদের মিথ্যা প্রচারনা কিংবা বড়জোর অশিক্ষিত কাঠমোল্লাদের অজ্ঞাতপ্রসূত কথা। কথা হল এই ধর্মশিক্ষা গ্রন্থের কোট করা অংশগুলি যারা বয়ান করেছেন, ওনারা কি ইসলামের শত্রু কিংবা তাদের ধর্মজ্ঞান নেই? এর যুক্তিসংগত উত্তর কি হতে পারে? ধর্মজ্ঞান যদি না থাকে তবে খুবই যুক্তিসংগত প্রশ্ন আসবে যে সেক্ষেত্রে দেশে প্রকৃত ইসলাম ধর্মে পন্ডিত এত এত মোল্লা আলেম কেন প্রতিবাদ করেন না? তারা সালমান রুশদি কঠিন ইংরেজীতে ইসলাম বিদ্বেষী কি লিখেছে (আমি নিজে সেই দাঁতভাংগা বই শুরু করেও শেষ করতে পারিনি) সেসব না পড়েও প্রসংশনীয় কড়া প্রতিবাদ করতে পারেন, আর নিজ দেশের স্কুলে বিশুদ্ধ বাংলায় ইসলামের নামে এমন ভুল/মিথ্যা শিক্ষার প্রতিবাদ কেন করেন না? নাকি প্রতিবাদ করে আসছেন, আমিই আসলে জানি না? এই ধর্মশিক্ষার বই প্রথম বেরিয়েছে ’৯৬ সালে, এরপর এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে এর প্রকাশনা চলছে, লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভুল ইসলাম শিখে আসছে আর প্রকৃত ইসলাম জানা আলেম স্কলার সকলে নীরব এটা কিভাবে সম্ভব? ব্লগের সদা জাগ্রত ইসলাম রক্ষক ভাইরা আজ পর্যন্ত ইসলামের নামে এই ভয়াবহ মিথ্যাচার, ঝুটা আঞ্জাম লেপনের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে কটা কলাম লিখেছেন, সেগুলি কোথায়? নাকি ওনাদের সকলের মূলনীতি আসলে আদিলের মত লোকের যখন কোরানের কোন সরল বানী পড়ে মনে হয় যে মুসলমানদের সাথে বিধর্মীদের বন্ধুত্ব নিষেধ করা হয়েছে তখন ইসলাম বিদ্বেষীদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সদলবলে কলম জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়া, কিন্তু সুবিখ্যাত সব কোরান তাফসিরকারক, ইমামগন আরো ভয়াবহ সব কথা বললে পরম ইসলাম হিতৈষী? ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড কোন ধর্মবোধের ভেতর পড়ে? এত বছরেও চোখে না পড়ে থাকলে এবার কি তারা সরকারের শিক্ষা বোর্ডের কাছে সংশোধনের আবেদন জানাবেন? ধর্মশিক্ষার নামে ইসলাম বিকৃতকারীদের ব্যাপারেই বা করনীয় কি হতে পারে? প্রতি বছর লাখ লাখ ছেলেমেয়েকে ভুল ইসলাম শেখানোর দায় কি সহজ অপরাধ বলে মানা যায়? ইসলামে সাম্প্রদায়িকতা, পরধর্ম বিশ্বাস অপমানের মত কিছু নেই আর দেশের সরকার প্রকাশিত ইসলাম ধর্মশিক্ষা বইতে বছরের পর বছর কিভাবে এসব মিথ্যাচার করা হচ্ছে দেখে ইসলাম বিদ্বেষীদের ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের জাল সম্পর্কে আর সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে?
বর্তমান কালে মূল ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার প্রবনতা সবচেয়ে বেশী ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের মাঝে। এ ধর্মের বিশিষ্টতা এখানেই, এর ফলোয়াররা মনেপ্রানে বিশ্বাস করেন যে ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মত স্রেফ একটি বিশ্বাসই নয়, এটা সৃষ্টিকর্তা মনোনিত একমাত্র, এবং পূর্নাংগ জীবনবিধান যার প্রতিটি আদেশ নির্দেশ কোন রকমের সংশয় প্রকাশ ছাড়া মেনে চলার সাথে কোন রকম আপোষ করা যাবে না। এই নিয়ম লঙ্ঘনের পরিনতি পরকালে হবে অতি ভয়াবহ, যা সম্পর্কে তাদের বাল্যকাল থেকেই নানান ভাবে অবহিত করা হয়। কাজেই এসব ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং বিধিবিধান সম্পর্কে প্রশ্নাতীত আনুগত্য ইসলামী বিশ্বাসের অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য। ইসলামী জীবন বিধান মূলত কোরানে বর্নিত নানান আদেশ নির্দেশ, এরপর হাদীস, কখনো বা দুয়ের সমন্বয়, এ দুয়ের মাঝে কোন বিধান না পাওয়া গেলে বিশিষ্ট আলেম স্কলার প্রদত্ত রায় বা ফতোয়া যার ভিত্তি হতে হবে কোরান হাদীস বা ইসলামী মহাপুরুষদের নানান নজির বিশ্লেষন। কোরান হাদীস পড়ে বোঝা অতটা সরল নয়, এর জন্য দরকার নাজেল হবার সময়কার প্রেক্ষাপট বিবেচনা, অন্য আয়াত বা কোন হাদীসের সাথে কখনো বা সম্পর্ক আনয়ন, সাথে গভীর আরবী জ্ঞান। সোজা কথায় কোরান বুঝতে হলে শুধু কোরানের আক্ষরিক অর্থ বোঝাই যথেষ্ট নয়, কোরানের ব্যাখ্যা বা তাফসির পড়া আবশ্যক। অনেক সময়ই কোরানের কোন আয়াত সাদা চোখে পড়ে যা মনে হতে পারে বড় বড় তাফসিরকারকের ব্যাখ্যায় হুবহু তেমন অর্থ নাও হতে পারে। বাস্তব হল ইসলামী বিশ্বাস যাইই হোক কোরানের সব নির্দেশনামূলক আয়াত, সহি হাদীসে বর্নিত মহানবী ও তাঁর সরাসরি পবিত্র সাহচার্য প্রাপ্ত সাহাবীদের জীবন বিধান সব যুগে মেনে চলা যায় না। কম বেশী আপোষ করতেই হয়, যে কারনে কোরানে বর্নিত অনেক বিধান আমাদের দেশে তো বটেই এমনকি কট্টর শরিয়া আইন মেনে চলা দেশেও পালন করা হয় না। হাদিসের তো কথাই নেই। উদাহরন এত বেশী যে বলার দরকার পড়ে না। বলাই বাহুল্য যে খোদ মুসলমানদেরই কোরান হাদিসের কিছু বিধিবিধান/মূল্যবোধের সাথে এহেন আপোষের কারন শয়তান বা বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র নয়, যুগের সাথে সামাজিক বিবর্তনের অলংঘনীয় ধারাই। মুশকিল হল সামাজিক পরিবর্তনের ফসল হিসেবে কোরান হাদীসের সব বিধিবিধান/মূল্যবোধ মানা যায় না এটা সরাসরি স্বীকার করা আবার ইসলামী মূল বিশ্বাসের পরিপন্থী, কারন তাহলে স্বীকার করে নিতে হবে যে কোরান হাদীসের বিধিবিধান যুগের সাথে অচল হয়ে যাচ্ছে, সেগুলিতে সীমাবদ্ধতা আছে।
একজন মুসলমানের জন্য এমন সরল স্বীকৃতি সরাসরি দেওয়া অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার, এতে তার মুসলমানত্ব চলে যায় কিনা তা অবশ্য জানি না, তবে খুব একটা কমও বলা যায় না। ইসলাম ঘটিত যাবতীয় যেসব সমস্যা বা বিতর্ক আমরা দেখি সেগুলির মূল সমস্যা আমার মতে নিহিত আছে এখানেই। ইসলামী নীতিমালার সাথে কতটা আপোষ করা যায় তা কেন্দ্র করে নিজেদের ভেতরেই গড়ে মৌলবাদী, মডারেট নানান গ্রুপ। যেহেতু সরাসরি সব প্রাচীনপন্থী বিধিবিধান আবার সমর্থনও করা যায় না আবার বাতিল বলে ঘোষনাও করা যায় না তাই নানান রকমের কায়দা করে এ দুরূহ সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়; নিজের মনকেও প্রবোধ দিতে হয় আবার সমালোচনাকারীদেরও জবাব দিতে হয়। এসব কায়দার মধ্যে ডিফেন্সিভ পদ্ধুতি হল ‘আমাদের ঈমান নষ্ট হয়ে গেছে’ গোছের কথা বলা। অফেন্সিভ ধরনের হল নানান রকমের বাক চাতুরীর আশ্রয় নেওয়া, আরবী ভাষার নানান শব্দের নিজ দরকার মোতাবেক ব্যাবহার করা, কোরান বুঝতে আক্ষরিক অর্থই যথেষ্ট নয় ঘোষনা দিয়েও কোরানের মূল তাফসিরকারকদের এড়িয়ে আধুনিক কালের কিছু ভিডিও স্কলার যারা উকিলী দক্ষতার সাথে সব কূল রক্ষা করা মতামত দিতে পারেন তাদের শরনাপন্ন হওয়া, সর্বোপরি সরাসরি দ্বি-চারী বা ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড নীতির আশ্রয় নেওয়া (যেমন আমার কোরানের আয়াত পড়ে ইহুদী/খ্রীষ্টানের সাথে বন্ধুত্ব মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ মনে হলে আমি বিরাট বদমায়েশ কিন্তু একই কথা কিংবা আরো ভয়াবহ কথা নিজেদের অতি শ্রদ্ধ্বেয় প্রিয় আলেমগন বয়ান করলে তারা হলেন অতি শ্রদ্ধ্বেয় হযরত, সেসব বয়ান ভক্তি ও নিষ্ঠার সাথে প্রচার করা), এবং অবধারিতভাবে অসংগতি উত্থাপনকারীদের নানান ভাষায় ঐক্যতানে গালাগাল করে গায়ের ঝাল মেটানো। আমাদের আলোচিত ধর্মশিক্ষা বই এ বিনা বাধায় সাম্প্রদায়িক শিক্ষা বছরের পর বছর ধরে চলে আসার পেছনেও মূলত দায়ী এই ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড নীতি। ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড নীতিতে আক্রান্ত কেউ কেউ জেনেশুনে কাজটি করেন, তবে বড় সংখ্যক করেন কিছুটা নিজের অজান্তে। পরবর্তি পর্বে এসব কিছুই জলন্ত উদাহরনসহ ইসলামী দৃষ্টিতে পরধর্ম/বিধর্মী বিষয়ে কিছুটা আলোচনা করব। সাথে সাথে এই নীতির বাস্তব প্রোডাক্ট কেমন তার দুয়েকটা উদাহরন স্বল্প পরিসরে দেখব।
[লেখাটি সাম্প্রতিক সময়ের নবী মোহাম্মদকে নিয়ে বানানো কুরুচিপূর্ন ছবি বিতর্কের অংশ নয় বা সেটার পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হয়নি]
সূত্রঃ
২. মাওলানা আবদুল্লাহ ইউসুফ আলীর ইংরেজী তাফসীর অনুসরনে অনুবাদ – অনুবাদে, অধ্যাপিকা হোসনে আরা খান।
ইসলাম ধর্ম বই তো আগেই পড়েছিলাম কিন্তু হিন্দু ধর্মে বইতে ও যে জিহাদের কথা বলা হয়েছে সেটা আজকে জানলাম। ধন্যবাদ হিন্দু ধর্ম বইয়ের কথা উল্লেখ করায়।
@রায়হান,
হিন্দু ধর্ম বই সম্পর্কে আমার তেমন ধারনা নেই, এখানে তেমন কিছু বলেছি বলে মনে পড়ছে না। একটু আলোকপাত করবেন কি?
@আদিল মাহমুদ, অসাধারণ লেখাটির জন্য শুভেচ্ছা।পরের পর্বগুলিও পড়ব যত দ্রুত সম্ভব।
আমার মনে হয় রায়হান হয়ত আপনার লেখার নিচের কথাগুলোই পুরোটা না পড়ে এবং হয়ত বুঝে অথবা না বুঝেই মন্তব্য করে বসেছেন।
“আর একটা লেখা পুরোটা না পড়ে বা না বুঝে মন্তব্য করাটাই দুঃখজনক।”
মনে হয় এই কথাগুলোর ভিতর শুধুমাত্র বোল্ড অংশটুকুই তার( রায়হানের) চোখে পড়েছে; আগের ও পরের লাইনগুলো তিনি পড়ার দরকার মনে করেন নি।যাক আমার কাছে এটাই লেখাটার সবথেকে আকর্ষনীয় অংশ এটুকুই মনে হয়েছে।
আসলে আপনি( আদিল মাহমুদ) খুব বাস্তব একটি কথা বলেছেন ধর্ম ডিফেন্ডারগনের দায় অস্বীকারের ক্ষমতা অসাধারন।আর মুসলিমদের ভেতরেই এই প্রবণতা বর্তমানে সত্যি খুব বেশি মাত্রায়। এরা অন্য সব ধর্মকে ইচ্ছা মত ব্যাশ করবে, আর বলবে যে এটা তাদের ধর্মীয় অধিকার।অথচ দেখুন যদি একই ভাবে অন্যরাও সেই তথাকথিত অধিকারের বলে ওইভাবে তাদের ধর্ম শিক্ষা বই লিখতে থাকে তাহলে ফল্টা কি হতে পারে হিন্দু অথবা অন্য কোন জাতি ভাগ্যে তা খুব সহজেই অনুমান করা যায়। সামান্য ইউটইউব ভিডিও কে কেন্দ্র করে যে কাণ্ড হয়ে গেল, সেখানে যদি সত্যি হিন্দু আর খ্রিষ্টান রা তাদের ধর্ম গ্রন্থে সেই কথা গুলি লিখে থাকে, তবে তাদের পরিনতি কত ভয়ানক হতে পারে সেটা ভেবেই গা শিউরে ওঠে।আমি শুধু এটাই ভাবি আর অবাক হই যে , ছোটবেলা থেকেই আমারদের কিসের আশায় এই ঘৃণা আর বিদ্বেষ শেখানো হয়েছে!(আমি আমি কিছুতেই এটা বলব না যে ৭০টি যুবতি নারীর লোভে, কারণ আমাদের অনেকেককেই ছোটবেলায় শিখানো হত যে মেয়ে আর ছেলের এলসাথে কথা বলা পাপ, এতে নাকি মারাত্মক পাপ হয়। আজো আমার মাথায় এটা আসে না যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের ভিতর কি এমন পাপ বোধ হতে পারে।)এর পিছনে অবশ্যই যেতি কাজ করে তা হল বিজাতীয় বিদ্বেষ। কিন্তু এমনটি কেন হয় তা আমার অজানা। মধ্য যুগে তো মুসলিম রা মোটামুটি ভালই ছিল। আমি যতদুর পরেছি তা হল ইনকুইজিশনের যুগে মুসলিম অটোমান সাম্রাজ্য খুবই উন্নত আর উদার ছিল সেই যুগের স্টান্ডার্ড অনেসারে।তাহলে পরবর্তীতে কোন জিনিসটা মুসলিমদের ভিতর এই বিজাতীয় বিদ্বেষের জন্ম দিল সেটাই ভাবছি। এটা কি ইসলাম ধর্মের রুট নাকি শুধুই পরবর্তি যুগের মোল্লাদের কাজ। যদিও কোরানে অনেক সহিংসতার বর্ননা আছে কিন্তু ওল্ড টেস্টামেন্ট এও তো সে গূলি ভুরি ভুরি আছে। খৃস্টানরা অনেক আগেই সে থেকে বেরিয়ে এসেছে। শুধু মুসলিম দের মধ্যেই এটা দিন দিন আরও শক্ত ভাবে আসন গেড়ে বসছে, আর এজন্য কেউ কোন অনুশোচনা দূরে থাক স্বীকারও করতে চাচ্ছে না যে এগুলো অমানবিক। বরং উলটাপালটা ব্যাখ্যা দিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।আর সবথেকে বাজে ব্যাপার হল এই সব ধর্মান্ধতায় সবথেকে বেশি ভুগছে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজ।অথচ এই শ্রেণীর লোকদেরই দায়িত্ব ছিল সভ্যতাকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টোটা। এদের কারনেই মুসলিম সমাজ আরো পিছিয়ে যাচ্ছে!
@অর্ফিউস,
ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য।
ধর্মকেন্দ্রিক ক্যাঁচাল আমার মহা বিরক্তিকর মনে হয় ধর্মের কারনে যতটা না, ধর্ম ডিফেন্ডারগনের হিপোক্রেটিক চেহারা দেখলে। ছেলেমানুষের মত গোয়ার্তুমি আর অসততার আশ্চর্য মিশেল দেখা যায়। ধর্ম বই এর যে অংশগুলি এখানে সরাসরি তুলে ধরেছি সেগুলি আপনি খোলা কোন ব্লগে লিখে শুধু মন্তব্য করুন “ইসলামী শিক্ষা”……অমনি দেখবেন ঈমান্দার বান্দারা হাজির হয়ে আপনি কত বড় ইসলাম বিদ্বেষী, ইসলামের মত মহান উদারতার ধর্মের নামে কত বড় মিথ্যা অপবাদ কাফের নাছারা ইহুদীদের পয়সা খেয়ে দিচ্ছেন তা প্রমান করে দেবে। কিন্তু বছরের পর বছর লাখ লাখ ছেলেমেয়েকে স্কুলের সিলেবাসে এসব শিক্ষা দিচ্ছে সে বেলায় কেউ টুঁ শব্দটাও করে না। এসব হিপোক্রেট বেহেশতে গেলে সেই বেহেশতে আমার না গেলেও চলবে। পরের পর্বে গেলে দেখবেন কত রকমের চেহারা এই চক্র বিভিন্ন যায়গায় দেখাতে পারে তার একটা প্রমান শুধু দিয়েছি।
– মধ্যযুগে সামগ্রিক হিশেবে খৃষ্টানদের ইনকুইজেশনের দিক চিন্তা করলে অবশ্যই মুসলমান সমাজ উন্নত ছিল। তবে সেটা মনে হয় অঞ্চল ভেদেও ভ্যারি করে। যেমন একই মোঘল বংশেও উদার, অনুদার দুই প্রকারেরই বাদশাহ ছিলেন। হুমায়ুন, আকবর, জাহাংগীর উদার ছিলেন। আবার আওরংগজেব ছিলেন প্রচন্ড নিষ্ঠুর, গোঁড়া এবং ধর্মোন্মাদ। অটোমান আমলেও কিছু অতি কলংকময় অধ্যায় আছে যেমন Devsrime. এসবের দায় ধর্মের কতটা তা অবশ্য প্রশ্নবিদ্ধ।
বিদ্বেষ অনেক সময় জন্ম নেয় হীনমন্যতা থেকে। বর্তমান যুগে আমার ধারনা এর প্রভাব আছে ব্যাপক। খৃষ্টানদের সাথে তূলনার যে কথা বললেন সেটা খুবই প্রকাশ্য। এর কারন অতি সোজা। মুসলমানরাই এখনো ধর্মগ্রন্থের প্রতিটা বানী মেনে জীবন চালাতে হবে এই ধারনা পালন করুক আর নাই করুক বিশ্বাস করে, অন্য ধর্মগ্রন্থের ফলোয়াররা এই ধারনা থেকে বেরিয়ে এসেছে বহু আগে। এই কারনেই ইসলামী বিশ্বাসের অধিকারীরা দেশের আইন বা ভদ্রতার স্বার্থে সরাসরি না বলতে পারলেও অন্য সব ধর্মকেই বাতিল বলে বিশ্বাস করে, যাবতীয় বাতিল ধর্মাবলম্বিদের নিজ ধর্মে আনা তাদের পবিত্র দায়িত্ব হিশেবে নেয়। এ কারনেই ইসলামে কনভার্শনের গুরুত্ব এত বেশী দেওয়া হয়।
– একদম আমার বড় হতাশার কথাই বলেছেন। এ কারনেই সহসা তেমন পরিবর্তনের আশা নেই। আরো অনেক ভুগতে হবে, তারপর যদি মুক্তি মেলে। অনেকের ধারনা যে ধর্মকেন্দ্রিক সমস্যাগুলি কেবল কিছু অশিক্ষিত মোল্লা হুজুর আর জামাত শিবির টাইপ ভন্ডদের বানানো। এই ধারনা আসলে সম্পূর্ন ভুল। সহজ মুক্তির আশা অতি ক্ষীন, বিশেষ করে যারা নিজের সাথে নানা রকমের হিপোক্রেসি করে চলে তাদের।
@আদিল মাহমুদ,
আসলেই এগুলি খুব বিরক্তিকর আর হতাশাব্যঞ্জক।
আর এইসব বাবা মা দের দেয়া ধর্ম শিক্ষাটাই কিন্তু আমাদের সমাজে জন্ম নেয়া নিষ্পাপ শিশুকে করে তোলে নাফিসের মত সন্ত্রাসী।আমি বুঝিনা যে কি ভাবে সচেতন মানুষ ধর্ম শিক্ষার নামে নিজের বাচ্চাকে এইসব পড়তে দেয় যত্ন করে!
আপনার পরের পর্ব আশা রাখি আজকেই পড়ব। আমার বিশ্বাস , আরেকটা অসাধারন পর্ব পড়তে যাচ্ছি ।
এটাই প্রধান সমস্যা। মুসলিমরা এটা কিছুতেই বুঝতে চায় না যে পরিপুর্ন জীবন বিধান বলে আসলে কিছু নেই। মানুষের জীবনযাপনের পদ্ধতি সময়ে সাথে পরিবর্তন হতে বাধ্য।৩০ পারা কোরানের আইন দিয়ে বর্তমান দুনিয়ে চলবে না। সবচেয়ে বিশ্রি ব্যাপার হল যে বেশিরভাগ তথাকথিত শিক্ষিত মুসলিম বিশ্বাস করে যে কাফির রা নাকি কোরান পড়েই সব আবিষ্কার করেছে।আর মুসলিম রা নাকি কোরানকে অবহেলা করে ঠিকমত পড়েনা, আর তাই তারা বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে এত পিছিয়ে আছে!!এটা নাকি আল্লাহ তার বান্দাদের কে শাস্তি দিয়ে খাঁটি সোনা বানিয়ে নিচ্ছেন। :-s
এইসব কথায় আগে হাসি আসত ,এখন বিতৃষ্ণা বোধ হয়। তাই আমিও আপনার এই কথায় মোটামুটি একমত
আদিল ভাই, যথারীতি অসাধারন লিখেছেন। আপনার লেখা খুব মিস করি। আপনি বোধহয় অনেক বিজি হয়ে গেছেন। এনিওয়ে, যেটা বলতে চাই, এই ধর্ম বই গুলোর কারনে ছোট বাচ্চাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি হচ্ছে। আমার কয়েকটা ছোট কাজিনদের দেখেছি যে কোন ব্যাপারে তারা হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান দিয়ে বিচার করে। আমার স্পষ্ট মনে আছে ছোট বেলায় ধর্ম প্রশ্নের হিন্দু ধর্ম অংশ এক ধরনের অসুস্থ আনন্দ নিয়ে হিজিবিজি করে দিতাম। তবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি এই কারনে যে, যে কোন কারনেই হোক এক সময় মনে হল কাজটা বোধহয় করা ঠিক হচ্ছে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোন টীচার বা বড় কোন মানুষ কখনো এই কাজটা নিষেধ করেনি। এই দেশে সাম্প্রদায়িকতা পরিবার থেকে শিক্ষা দেয়া হয়। সম্ভবত এটা না বুঝেই করা হয় কিন্তু এর ফল ভাল হতে পারে না। অলরেডি এর ফলাফল আমরা কিছুটা দেখতে পাচ্ছি। এই দেশে কোন বাচ্চা অন্য ধর্মের মানুষ সম্পর্কে খারাপ কিছু বললে কোন মানুষ ই তাকে শুধরে দেয় না। আমি জানিনা দেশের অন্য যায়গায় কি অবস্থা কিন্তু আমি যেখানে থাকি সেখানের মানুষ সব সাম্প্রদায়িক। আমার ফ্যামিলির মানুষ সব ই বলতে গেলে সাম্প্রদায়িকতা। তারা অন্য ধর্মের মানুষদের মানুষ বলে মনে করে না। এ দেশে হিন্দুর সংখ্যা কমে যাবে এটা আমার কাছে স্বাভাবিক এবং লজিক্যাল। জানিনা, আমি বোধহয় বেশি জেনারালাইজ করে ফেললাম। কিন্তু আমার আশেপাশের মানুষদের জন্যে এটা ১০০ ভাগ সত্যি।
@মিয়াও,
আপনি এখানে অর্ধেক হয়ে গেলেন কিভাবে?
আমার ছোটবেলার স্মৃতিও অনেকটা আপনার মতই; দল বেঁধে আশে পাশের বিধর্মী ছেলেপিলেদের নানান রকমের মানসিক নির্যাতন করে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পেতাম। এ ব্যাপারে সমাজ সরাসরি এসব কর না বললেও সামগ্রিক পরিবেশই ছিল এসব করার ইন্য যথেষ্ট উষ্কানিমূলক। খুব বেশী শিক্ষার দরকার নেই; মাথার ভেতর যদি আমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং অপরে নিকৃষ্টতম এবং চিরকাল দোজখে পুড়বে এই ধারনা সমাজ দেয় তবে সে সমাজে তেমন আচরনই প্রত্যাশীত। বড় হয়ে ভদ্রতা বশত মানসিক যন্ত্রনা দেবার প্রবনতা দূর হলেও সেই বিদ্বেষের বীজ মনে রয়েই যায়, এর থেকে সহজ মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয় না। আপনার মাথায় যদি ঢোকে যে কেউ ভয়াবহ অপরাধী যে অন্ততকাল নরকে পুড়বে তবে তার প্রতি যে লেভেলেরই হোক এক ধরনের করুনা, বিদ্বেষ আপনার মনে থাকতে বাধ্য। জেল খাটা দাগী অপরাধীর সাথে ভদ্রতা বশত ভাল ব্যাবহার করা যায়, তবে তাকে আপন কোনদিন করা যায় না, তার বিপদ আপদ ঘটলে তাতে সহানুভূতিশীলও সেভাবে হওয়া যায় না।
এ কারনেই দেশের সাম্প্রদায়িক গোলযোগগুলি যতটা ভয়াবহ দেশের ধার্মিক মনে সেভাবে ছাপ ফেলে না।
আকাশ মালিক যথার্থই বলেছেন যে বিশ্বাসের ভাইরাস দূর করার জন্য বিজ্ঞানের এন্টিভাইরাসই লাগবে। এক্ষেত্রে বিবর্তন তত্ত্ব মূখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে বলেই আমার ধারণা। পাকিস্তান আমলেও উচ্চমাধ্যমিকে আমাদের পাঠ্য ছিল, বর্তমানে যা নেই। এই সরকারের আরও যে কদিন সময় আছে, এটা এখনও সম্ভব। জাফর ইকবাল ও রাশেদ খান মেনন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলেই আমার মনে হয়। আর মুক্তমনার অনেকের সাথেই এই দুইজনেরই ভাল সম্পর্ক আছে।
এ প্রসতাবটা আমি আগেও একবার রেখেছিলাম, কেউ গা করেনি, চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের আশেপাশে আমার নিজেকে বড় একলাটি মনে হ্য়। আমার আগাম শুভেচ্ছা কারোর এগিয়ে আসার জন্য।
@আব্দুল হক,
বিবর্তনবাদ বিজ্ঞানের বিষয়, এটাকে ধর্মের কাউন্টার হিসেবে কিংবা বিরুদ্ধে ব্যাবহার করা ঠিক হবে না। এতে হীতে বিপরীত হবে, বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবেই এটাকে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, এ থেকে যে যা বোঝে তা তার তার ব্যাপার।
আমার হতাশা লাগে এখানেই যে ইসলাম ধর্ম প্রচারের আবশ্যিকতা হিসেবে কেন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ঢালাও ভাবে ছড়ানো হয়। ধর্ম শেখাতে হলে ইসলামে সাম্প্রদায়িকতা ছাড়াও তো আরো বহু ভাল ভাল বিষয় আছে, সেগুলিই শুধু শেখাক না। এর জবাব অবশ্য ইসলামের মূলেই আছে, ইসলামের আবির্ভাবই ঘটেছে অন্যান্য ধর্ম বাতিল কিংবা সরাসরি অসম্মানের ভেতর দিয়ে। কিন্তু বর্তমান যুগে ইসলামের এই অংশ না এড়িয়ে সরাসরি প্রচার করলে নিজেদেরই ক্ষতি সবচেয়ে বেশী, এই সোজা কথাটা ধর্মপ্রানদের মাথায় প্রবেশ করে না।
@আদিল মাহমুদ,
বিবর্তনবাদ বিজ্ঞানের বিষয়, এটাকে ধর্মের কাউন্টার হিসেবে কিংবা বিরুদ্ধে ব্যাবহার করা ঠিক হবে না। এতে হীতে বিপরীত হবে, বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবেই এটাকে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, এ থেকে যে যা বোঝে তা তার তার ব্যাপার।
একমত
বিজ্ঞানের বিষ য় হিসাবেই নবম শ্রেনীর সাধারণ বিজ্ঞানও প্রাণী বিজ্ঞান বই য়ে অর্ন্তভূক্ত করার মত কোনউদ্যোগ কি আমাদের মুক্তমনা সদস্য ভাই বোনেরাএগিয়ে আসতে পারে না। আমার প্রত্যাশা কি খুব বেশী?
আমার স্বল্প জ্ঞানে শুধুএই টুকুই বুঝি যে মিথ্যার অন্ধকার দূর করতে সত্যের আলো ফেলাটা জরুরী। আমার অভিজ্ঞতা বলছে মানব মস্তিষ্কে স্থাপিত ভুল প্রোগ্রাম মুছা যায় না, কেবল সঠিকটি প্রতিস্থাপনে কিছুটা সুফল আশা করা যায়।
ধন্যবাদ।
@আব্দুল হক,
ধৈর্য ধারন করতে হবে। যে জঞ্জাল হাজার হাজার বছর ধরে জমেছে তা রাতারাতি দূর করা যাবে না, সেটা করতে গেলে হীতে বিপরীত হবে। আমরা তারা এভাবে গ্রুপ টার্গেট করা ঠিক নয়, যাদের বিচার বুদ্ধিতে জড়তা আছে, দ্বি-চারিতা আছে তাদের সেটা বোঝাতে হবে, তাদের সকলে একদিনে বুঝে যাবে না। তবে ধীরে ধীরে বুঝতে বাধ্য, কারন মানুষ চূড়ান্তভাবে যুক্তির পথেই আসে।
ভুল প্রোগ্রাম প্রতিস্থাপন সঠিক প্রোগ্রাম দিয়ে করতে হবে ঠিক। তবে আগে যদি ব্যাবহারকারীদের ভালভাবে বোঝাতে না পারেন ভুল প্রোগ্রামের সমস্যাটা কোথায় বা তারা যে আদৌ ভুল প্রোগ্রাম ব্যাবহার করছে সেটাই না বোঝাতে পারেন তবে তারা সঠিক প্রোগ্রামে আস্থা রাখবে কিভাবে? কাজেই সঠিক প্রোগ্রাম আনয়নের পূর্বশর্ত ভুল প্রোগ্রামের ত্রুটিগুলি দেখানো। সেটা সফল ভাবে ধৈর্য্যের সাথে কথা গেলে সঠিক প্রোগ্রাম আপনাকে কষ্ট করে দেখাতে হবে না, কোন প্রোগ্রাম সঠিক হলে সেটা আপনিই লোকে বেছে নেবে।
@আদিল মাহমুদ,
একজন আলেম মানুষ হয়ে এমন কথা বলতে পারলেন? কোরানের কিছু মানবেন আর কিছু মানবেন না? এটা যারা করে, ইসলাম তাদের জন্যে কঠোরতম শাস্তির ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
আল-কোরান, সুরা বাকারাহ, আয়াত ৮৫।
@আকাশ মালিক,
এই আয়াত দেখে আমি সত্য সত্যই মনে অসীম শান্তি পাই। কারন এর দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমান হয় যে আমি কোরানে পূর্ন বিশ্বাসী না হবার ভয়াবহ অপরাধে একাই শাস্তি পাব না, আমার সাথে অন্তত এই যুগের প্রায় শতভাগ কোরানে বিশ্বাসী দাবীদারই কঠোরতম শাস্তি পাবেন। কারন জগতে এমন কোন মুসলমান মনে হয় না পাওয়া যাবে বলে যিনি শতভাগ কোরান মানেন বলে। মুখে দাবী করি আর কাজে অন্য এমন ষ্ট্র্যাটেজি নিজেদের মন ভোলাতে সক্ষম হলেও আল্লাহ নিশ্চয়ই আসল ব্যাপার ঠিকই জানেন। মোনাফেক শব্দটা আল্লাহই ব্যাবহার করেন।
@আদিল মাহমুদ,
অন্য একটি ব্লগে পেলাম তাজ্জুবী এক খবর। একটু খোঁজ খবর নিয়ে দেখুন তো ঘটনা কিতা? আমাদের নতুন প্রজন্ম যদি একটা সম্প্রদায়কে খাসি হিসেবে দেখতে শিখে, তাদেরকে খাসি বলে ডাকে, একদিন কোন এক কোরবাণীর মাসে হয়তো দেখা যাবে বাংলাদেশে সত্যিই সংখ্যালঘু শেষ ব্যক্তিটিও আর নাই।
পঞ্চম শ্রেণী-
পরিবেশ পরিচিতি : সমাজ
ষোড়শ অধ্যায়
বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তা
‘খাসি’
পৃষ্ঠা– ১৪০ থেকে ১৪১
পরিমার্জিত সংস্করণ : আগস্ট , ২০১১
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড , ঢাকা ।
@আকাশ মালিক,
প্রাইমারী পাঠ্যপুস্তকের সাইট কাজ করছে না, “খাসি” রহস্য সরেজমিনে তদন্ত করা গেল না। দেখেন পারেন কিনা।
বিজাতীয় প্রানীর মত খাসিদের শারীরিক বর্ননা শিশুদের শেখানোর তাৎপর্য বুঝলাম না। আমাদের সময়ও ক্লাস ফাইভের সমাজ বিজ্ঞানে আদিবাসীদের সম্পর্কে সচিত্র বড়সড় অধ্যায় ছি, তবে শারীরিক বর্ননার কথা মনে পড়ে না।
@আদিল মাহমুদ,
এখানে দেখুন কিছুটা নমুনা। ম.ওয়াজিহ উদ্দিন সহকারি শিক্ষক হাতিডহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জকিগঞ্জ, সিলেট, বাংলাদেশ।
আরো কিছু এখানে-
বিবর্তনের মাধ্যমে ধর্মের উদ্ভব হয়, মোহাম্মদও যখন ইসলাম ধর্ম প্রতিস্টা করেন তখন সনাতন ধর্ম গুলির তত্ত্ব ও ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করে একটি নতুন বিবর্তিত ধর্মের সূচনা করেন ।তার পরে সাহাবীরা এবং পরবর্তীতে ইসলামিক চিন্তাবিদরা নিজস্ব চিন্তা দর্শন দিয়ে ইসলামকে আর বিবর্তন করে দিয়েছে ।একটু নজর দিলেই দেখা যায় সুন্নি,শিয়া,হাম্বলি, মোহাম্মদিয়া ,কাদিয়ানি ইত্যাদি মতালম্বি আছে যারা নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করলেও একে অন্যকে মুরতাদ দাবি করে ।এছাড়া চার ইমামের মতাদর্শ চারদিকে প্রভাবিত ।সুফিয়ানা এবং মারফতি চলে গেছে অন্যদিকে ।কউমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যাবস্থা আর আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষা কখনোই মিলেনা ।তবলীগ পন্থি আর মাজার পন্থির দন্ধ সারা জীবনের ।এতো মতাদর্শের ফলে মূল মুসলিম ধর্ম খণ্ডিত হয়ে একদা দুর্বল হয়ে যাবে ।বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে দেখা যায় সাধারণ ধারায় শিক্ষিত বেশিরভাগেই ধর্মের অনুশাসন মানেনা আবার ধর্ম ছাড়তেও পারেনা ।সামাজিক বা পারিবারিক অবস্থার কারনে হোক কিংবা শিশু কালে মগজে ডুকিয়ে দেয়া ভয়ের কারনেই হোক যদি এদেরকে মুক্তমনা বা সাদৃশ্য ব্লগ ধরিয়ে দেয়া হয় তবে চিন্তার প্রকাশ ঘটবেই ।ধন্যবাদ 😉
@নিগ্রো,
ধন্যবাদ চমতকার মন্তব্যের জন্য। আসলেই তাই, ইসলাম তূলনামূলক ভাবে অনেক আধুনিক ধর্ম হলেও সামান্য ভেতরে গেলেই দেখা যায় যুগের সাথে বাতিল মূল্যবোধের সমাহার, এরপর পাঠ করার পদ্ধুতিতেও পদে পদে জোড়াতালি, লুকোচুরি খেলা আর অসংলগ্নতা যার কারনে নিজেদের ভেতরেই অসংখ্য গ্রুপ আছে, প্রত্যেকের দাবী তারাই প্রকৃত মুসলমান এবং বাকিরা বাতিল দলের বা সরাসরি কাফের। আবার পরিস্থিতি এসব নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তখন আমাদের ভেতর কোন ভাগ নেই, সকলেই মুসলমান গোছের মহাপুরুষের বক্তব্য দিয়ে সাময়িক ভাবে গোলযোগ এড়ানো…
আপনার প্রবন্ধ পড়ে আমার হতাস লেগেছে। কারণ আপনার কথার সাথে আমি সম্পূর্ণ এক মত। আমি প্রায়ই শুনি, রাস্তা ঘাটের মানুস এবং আমাদের বাসার পাশের মসজিদের হুজুর, সরাসরি বলে ইসলাম ব্যতিত সকল ধর্মই ভুয়া, তারা কাফের, তারা ইসলামের জিবন বিধান মানে না, তারা মুসলিম দের শত্রু, তারা জাহান্নামে যাবে না ইত্যাদি। বলদ হুজুর একদিন কথা প্রসঙ্গে বলে উঠলেন, আল্লার বেশি ক্ষমতা নাকি ভগবানের বেশি ক্ষমতা, সুনে আমার অনেক হাসি পেয়ে ছিল। তাছাড়া বর্তমানে জাকির নায়েকের কথায় আকৃষ্ট হয়ে যখন কিছু লোক মসজিদে যায়, তখন এই হুজুর গুলা তাদের পেয়ে বসে, আর তাদের মধ্যে জিহাদি জোশ ডুকিয়ে দেয়। তখনি সাধারণ মানুষ গুলা উল্টা পাল্টা শুরু করে।
আপনাকে এই গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। অনেক কিছু জানতে পারলাম।
ভাল থাকবেন। (F)
@জম,
আপনার নামটা যথেষ্ট ভীতিকর।
রাস্তাঘাটের হুজুর মোল্লা বা মাঠে ময়দানের ওয়াজ মাহফিলে যা বলে সেটা এক কথা, হয়তবা সত্যই তারা আসল ইসলাম জানে না, ধর্মব্যাবসায়ী, অশিক্ষিত ইত্যাদী।
তাই বলে সরকারী বাধ্যতামূলক টেক্সট বইতে একই ধরনের কথাবার্তা এ নিয়মে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? তাও আবার ১৬ বছর ধরে বিনা আপত্তিতে চলে আসছে? আসল ইসলাম জানা ওয়ালারা টূ শব্দটাও করেন না এটা কিভাবে সম্ভব আমি অন্তত কিছুতেই বুঝি না। কেবল একভাবেই সম্ভব সেটা হল আসল ইসলাম প্রকৃত পক্ষেই এসব শেখায়।
@আদিল মাহমুদ,
আল্লাহ কোরানে বলছেন-
এই আয়াতের বিপরীতে আল্লাহর এক বান্দা বলছেন-
কোরআন বোঝা কি এত সোজা!!!
এদেরকে স্বয়ং আল্লাহ বোঝাতে পারছেন না, মানুষ বোঝাবে কী ভাবে?
পাঠ্যপুস্তকের এই জিহাদী বাণী, সাম্প্রদায়ীকতার সবক সম্মন্ধে এরা অবগতই শুধু নয়,সমর্থনও করে। সমর্থন না করে কোন উপায় নেই। ট্রজান হর্স ভাইরাসে আক্রান্ত কম্পিউটারের অবস্থা দেখেছেন? এদের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ এর দখলে। রাবি,চবি,শাবি বা বুয়েট পাশ করা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসার এমন কি বিজ্ঞানী হতে পারে কিন্তু অন্ধ বিশ্বাসের বৃত্ত অতিক্রম করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবেনা। তাই আপনি যা দেখেন তারা তা দেখতে পায়না।
@আকাশ মালিক,
সোজা করে দেওয়ার পরেই যেই বিপত্তি, কঠিন করে দিলে জানি কি হত।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার লেখার সাথে প্রাসঙ্গিক বিধায় আবারও একটু ওয়াজ শুনাতে হলো। হুজুর এক প্রশ্নের উত্তরে বলছেন-
প্রশ্নঃ- কোরআনের বক্তব্যগুলো সমাজের প্রচলিত ধারণার বিপরীত – ব্যাখ্যা করলে উপকৃত হই।
জবাবঃ-
(কী বুঝলেন? এটা ট্রোজানহর্স ভাইরাসের শক্তি বা বল। হুজুর এরপর কারণ ব্যাখ্যা করছেন) –
(উদাহরণটা আরো ইন্টারেষ্টিং)-
বুঝ অইছেনি ভাইসাব? কাফির বিজ্ঞানীরা ভিডিও আবিষ্কারের ধারণা কোরানের সুরা যিলযাল থেকে পেয়েছে। এর নাম ত্যানা পেচানী। ঘুরে ফিরে ভাইরাস তার সেই নির্ধারিত পেইজটাই মস্তিষ্কের সামনে তোলে ধরে। এই সুরার ৭ নং আয়াত পাঠ করার পরই অণু-পরমাণু atom- neutron আবিষ্কার হয়, ‘জাররা’ শব্দের অর্থ নাকি অণু। (এই হুজুর যদিও এর অর্থ বিন্দু লিখেছেন) মাদারবোর্ড সহ মেমরি কার্ড, গ্রাফিক্স কার্ড, মাউস, কী-বোর্ড, হার্ডওয়ার, সফটওয়ার সব ভাইরাসের দখলে আপনার কিছুই করার নেই। ভাইরাস ডিলিটের জন্যে আন্টি ভাইরাস বিজ্ঞান আছে, কিন্তু সেটাও সব সময় সকলের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ভাইরাসমুক্ত করতে সক্ষম হয়না। অন্ধ-বিশ্বাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের প্রফেসাররা এর উত্তম প্রমাণ।
@আকাশ মালিক,
বলপূর্বক দাবী শুরু করলে যা খুশী করা যায়। দুনিয়া তো শুধু দাবীর ফাঁকা আওয়াজের দিকে তাকিয়ে থাকে না, ফলাফল বিচার করে। এই সত্যটা বাকি সকলে বুঝলেও এনারা এখনো বোঝেননি, এখনো ধরে নিচ্ছেন যে ৪০ বছর আগের মত নীল আর্মষ্ট্রং এর মত কেচ্ছা কাহিনী বানিয়ে যুগ যুগ ধরে লোককে ধোঁকা দেওয়া যাবে। এসব কেচ্ছা কাহিনীর গুমর ফাঁস হলে যে নিজেদের ক্রেডিবিলিটি আরো কমে এই সহজ বোধ এখনো আসেনি, হয়তবা অধিকাংশ ঈমান্দার এখনো সোয়াবের আশায় মিথ্যাচারেও সরাসরি প্রতিবাদ এখনো করছে না দেখে।
ঈমান্দারদের ট্রানজিশন পিরিয়ড কাটতেও খুব বেশী দিন লাগবে না।
@আকাশ মালিক,
ভালো বলেছেন।
প্রয়োজনীয় একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন। এই ব্যাপারটি নিয়ে আমিও লিখছিলাম, বিশ্বাসের ভাইরাস নামের একটা প্রবন্ধে (লেখাটি পরে আমাদের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়)। আমার কেন যেন মনে হয়, যে হিংসাবৃত্তির কথা বলছেন, কাফির নাসারা হিন্দুদের বিরুদ্ধে ঘৃণার কথা বলছেন সেগুলোই ধর্মের মুলমন্ত্র। আর সেগুলোকে ঢেকে রাখার জন্য দরকার হয় সদুপদেশ এবং অন্যনায় ভাল ভাল কথার। ধর্মগ্রন্থের যে অংশগুলোতে জিহাদের কথা আছে (২:২১৬, ২: ১৫৪), উদ্ভিন্নযৌবনা হুরীদের কথা আছে (৫২: ১৭-২০, ৪৪: ৫১-৫৫, ৫৬:২২), ‘মুক্তা সদৃশ’ গেলমান দের কথা আছে (৫২:২৪, ৫৬:১৭, ৭৬:১৯) সে সমস্ত ‘পবিত্র বাণী’গুলো ইসলামিয়াত বইয়ে ফলাও করে প্রচার করে ছোটবেলা থেকে মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে কিংবা বছরের পর বছর সৌদি পেট্রোডলারে গড়ে ওঠা মাদ্রাসা নামক আগাছার চাষ করে বিভিন্ন দেশে তরুণ সমাজের কিছু অংশের মধ্যে এক ধরণের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ তৈরি করা হয়েছে, এ ধারণা অমূলক নয়।
তবে একটি কথা এ প্রসঙ্গে বলব, যে ঘৃণার চাষ বপনে হিন্দু মুসলিম কেউই কম নয়। প্রসঙ্গত বলি, আমার ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ লেখাটি মুক্তমনায় প্রকাশের পর দিগন্ত সরকার ‘বিশ্বাসের ভাইরাস এবং আনুষঙ্গিক’ নামের একটি সম্পূরক প্রবন্ধে ভারতের আর এস এস পরিচালিত স্কুলগুলোর পাঠ্যসূচীর নানা উদাহরণ হাজির করে দেখিয়েছিলেন কিভাবে ছেলেপিলেদের মধ্যে শৈশবেই ভাইরাসের বীজ বপন করা হয় প্রায় একই কায়দায়। বিদ্যা ভারতী নামের এই স্কুল ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে – সংখ্যায় প্রায় ২০,০০০। প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থী এতে পড়াশোনা করে – যাদের অধিকাংশই গরিব বা নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের। পড়াশোনা চলে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী অবধি। তিস্তা সেতালবাদের প্রবন্ধ In the Name of History Examples from Hindutva-inspired school textbooks in India থেকে অসংখ্য দৃষ্টান্ত হাজির করে দিগন্ত দেখিয়েছেন কিভাবে সত্য-মিথ্যের মিশেল দেওয়া ইতিহাস পড়িয়ে এদের মগজ ধোলাই করা হয়। কিছু উদাহরণ –
ভারতের স্কুলের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে বিন কাসিম, ঘৌরী বা গজনীর মামুদ বা তৈমুল লঙ্গ কিভাবে হিন্দুদের হত্যা করেছিলেন তার বিস্তারিত বর্ণনা হাজির করে বাচ্চাদের মাথায় অঙ্কুরেই ‘মুসলিম বিদ্বেষ’ প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। দেশ বিভাগের জন্য একতরফা ভাবে মুসলিমদের দায়ী করে ইতিহাস লেখা হয়। আর.এস এস-এর মত সন্ত্রাসবাদী সাম্প্রদায়িক দলকে প্রকৃত স্বাধীনতাকামী একটি সংগঠন হিসাবে তুলে ধরা হয়। সবথেকে মজার কথা, মহাত্মা গান্ধী যে এই সংগঠনের একজনের হাতেই মারা গিয়েছিলেন, সেকথাও বেমালুম চেপে যাওয়া হয়। সামগ্রিকভাবে, পাঠক্রম এমনভাবে সাজানো যাতে সবার মধ্যে ভাব সৃষ্টি হয় যে তাদের পূর্বপুরুষেরা মুসলিম ও খ্রীষ্টানদের হাতে অত্যাচারিত। তাদের ঘাড়ে দায়িত্ব বর্তায় তার প্রতিশোধ নেবার।
আসলে ধর্মের শিক্ষা আসলে কম্পিউটারের ভাইরাসের মতই। কখনো কোন কোন সফটওয়্যার উপকারী ছদ্মবেশ নিয়ে ‘ট্রোজান হর্স’ হয়ে কম্পিউটারে ঢুকে পড়ে। এরা সূঁচ হয়ে ঢুকে, আর শেষ পর্যন্ত যেন ফাল হয়ে বেরোয়। যতক্ষণে এই ভাইরাসগুলোকে সনাক্ত করে নির্মূল করার ব্যবস্থা নেয়া হয় – ততক্ষণে আমাদের হার্ডওয়্যারের দফা রফা সাড়া। এই বিশ্বাসের ভাইরাসের বলি হয়ে প্রাণ হারায় শত সহস্র মানুষ – কখনো নাইন-ইলেভেনে, কখনো বা বাবড়ি মসজিদ ধ্বংসে কখনো বা তাজ হোটেলে গোলাগুলিতে, কিংবা কখনো বৌদ্ধ মন্দির জ্বালিয়ে। কম্পিউটার ভাইরাসগুলোর মতই আপাতঃ মধুর ধর্মীয় শিক্ষাগুলো কিভাবে সমাজের জন্য ট্রোজান হর্স কিংবা ওয়ার্ম ভাইরাস হিসেবে কাজ করে তিলে তিলে এর কাঠামোকে ধ্বংস করে ফেলতে চায়।
@অভিজিৎ,
কথা সত্য, ধর্মকে যতই জীবন যাপনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে ব্যাবহার করা হবে, নৈতিকতা শিক্ষার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে দাবী করে যাওয়া হবে ততই এ জাতীয় সমস্যা দেখা যাবে। যে সমাজে ধর্ম নিয়ে আদিখ্যেতা নেই সে সমাজে এসবের প্রকোপ একেবারে নেই না বলা গেলেও ধর্তব্যের মধ্যে তেমন পড়ে না। আমেরিকার মত দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও কে কোন চার্চে যায় তা গুরুত্বপূর্ন হয়। যত্তসব ছাগলামি।
ভারতের যেসব উদাহরন দিলেন সেগুলি আমিও কিছুটা জানি। যতদুর জানি যে ‘৯০ সাল থেকে বিজেপি সরকারে আসার পর থেকে তারা সেখানে এই প্রজেক্ট হাতে নেয়। আগেও নিঃসন্দেহে কিছু মাত্রায় ছিল, কারন হিন্দু-মুসলমান টেনশন এই অঞ্চলে মধ্যযুগ থেকেই আছে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে কিন্তু মাত্রাগত তফাত আছে। তাদের মূল ভাষ্য হল মধ্যযুগের মুসলমান শাসকদের কোনই ভাল অবদান নেই, সকলেই ছিল অত্যাচারী, হিন্দু বিদ্বেষী। এগুলি মূলত পলিটিক্যাল ঘটনার ভিত্তিতে সামাজিক যে প্রতিযোগীতা তার আউটকাম, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ব্যাবহার হলেও সরাসরি ধর্ম ধরে টান দেয় না। ভারতে মুসলমান শাসক আসার পর থেকেই হিন্দুদের ক্ষোভ ছিল, মুসলমানদের চিরকালই বহিরাগত হিসেবেই দেখা হত। আবার ইংরেজ আসার পর থেকে মুসলমানরা ক্ষমতা হারালো তো বটেই, আবার কালের সাথে সাথে পিছিয়ে পড়ল আধুনিক পড়াশুনা জ্ঞানার্জনকে হেলা করে, হিন্দুরা গেল এগিয়ে। ভারতের দিকের শিক্ষাক্রমে আমার মনে হয় একচ্ছত্র ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ববোধে জারি করা থেকে এ কারন বেশী ভূমিকা রেখেছে।
ভারতীয়দের শিক্ষাক্রমে সন্দেহ নেই এক পক্ষীয় ইতিহাস, বিকৃতিও আছে, তবে আমাদের বা পাকিস্তানের মত সরাসরি ধর্মগ্রন্থের বানী কোট করে অপর ধর্মের লোকজনকে ঘৃনা কর কিংবা তারা সদা সবর্ত্র তোমার শত্রু এমন ধারনা প্রচার করা হয় এমন কিছু এখনো পাইনি। এ কারনেই আমাদের দেশে মাটির ময়নার মত সিনেমা দেখাতেও শিক্ষিত ধার্মিক সম্প্রদায়ের গায়ে জ্বালা ধরে অথচ ভারতীয় ছবিতে উগ্রবাদী হিন্দুদের হাতে নিরীহ মুসলমান কচুকাটা হচ্ছে দেখানো যায়, “ব্রাক্ষন্যবাদী” ভারতে মুসলমান হজ্জ্বযাত্রীদেরও রাষ্ট্র অর্থ সাহায্য দেয়।
আমেরিকান গবেষক ইয়েভেট ক্লেয়ায়ের ৩ উপমহাদেশীয় দেশের শিক্ষাক্রম নিয়ে বিশাল গবেষনা আছে, সেখানেও ভারতে এই সমস্যা তুলনামূলক ভাবে অনেক কম বলেই মনে হয়েছে।
জাতীয়তাবাদ ও হিন্দুত্ববাদ এগুলো শুধুই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনীত ধারণা .. এইসব হিন্দুত্ববাদের প্রচার যে কি দুর্বল মনের আর অজ্ঞানতার প্রকাশ বোঝাতে পারব না .. এইসবের মাঝে আসল জীবন দর্শন, উপমহাদেশের মানুষের চিন্তাধারা হারিয়ে যায় .. আমার মনে হয় এক পৃষ্ঠায় ধর্ম বই শেষ করে দেওয়া যায় , নিচের এই বাক্যগুলো থেকে ..
১. সংগা: “ধর্ম রক্ষতি রক্ষিত” .. অর্থাত ধর্ম রক্ষিত হলে মানুষ রক্ষিত হয় .. অর্থাত ধর্ম হলো মানুষের রক্ষা কবচ ..
সরলীকৃত সংগা: “কর্মই ধর্ম” .. অর্থাত মানুষ যা নিজ ও অন্যানের জন্য করে তাই ধর্ম ..
২. মানুষের প্রকৃতি বোঝা .. নিজেকে জানা, অন্যকে জানা .. আত্মনিয়ন্ত্রনের কৌশল জানা ..
এ সম্পর্কে আমি খুবিই অজ্ঞ, তবে আমি এখানে কিছু জীবন দর্শন ও ধারণা তুলে ধরব ..
– চর্চা মানুষকে পরিবর্তন করতে পারে ..
# ভালো কিছু চর্চা করলে মন সুন্দর আর স্থির হবে, খারাপ কিছু চর্চা করলে মন দ্বিধাগ্রস্থ চঞ্চল হবে .. বারংবার চর্চা মানুষকে সুস্থভাবে বাচতে সাহায্য করে ..
# সুস্থ মনের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুস্থ সাস্থ্য .. সুতরাং বাল্যকাল থেকে বৃদ্ধবয়স পর্যন্ত উপযোগী শরীরচর্চা গুরুত্বপূর্ণ ..
– কি খেলে কি হয়, এই ধারণাগুলো থাকা দরকার .. মানুষ খাবারের মাধ্যমে তার মনের পরিবর্তন করতে সক্ষম ..
৩. মানুষ ও প্রানীকুলের একতাবদ্ধতার পরিচয় তুলে ধরা .. এটুকু বোঝা যে মানুষ অপরের দুঃখে সমব্যথী হয়, অপরের সুখে সুখী হয় ..
শেষমেষ বলতে চাই, ধর্মে ঈশ্বরের প্রয়োজন কেন আসছে ? কেন আমার ধর্ম বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে ঈশ্বরকে নিয়েই শুধু আলোচনা ..
ইসলাম শিক্ষার এই নতুন সংস্করণ অনেক আগেই দেখেছি নবম শ্রেণীর ছাত্রকে পড়াতে গিয়ে। ভবিষ্যতে আসলেই ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
@মহাপুরুষ,
সময়মত সূস্থ বিবেকবুদ্ধির লোকেরা এগিয়ে না এলে আসলেই সামনে খবর আছে।
বাংলাদেশ, পাকিস্থান সহ মুস্লিম অধ্যুসিত দেশগুলোর পাঠ্যপুস্তকে ওপেনলি এইসমস্ত সাম্প্রদায়ীকতা এবং ঘৃণা ছড়ানো তো জন্মগত অধিকার। আমেরিকা, কানাডার মত দেশেও এরা চামে চিকনে ইসলামিক স্কুলগুলোতে ধর্মশিক্ষার নামে এইসব সাম্প্রদায়ীক শিক্ষা ছড়ানোর চেষ্টায় আছে। চারমাস আগে (মে, ২০১২) এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু হলে ইসলামীক স্কুল কতৃপক্ষ মাফ টাফ চেয়ে তড়িঘড়ি করে সিলেবাস থেকে কিছু অংশ বাদ দেয়ার অঙ্গীকার করে। কিন্তু কানেডিয়ানরা বুঝতেছে না এতে লাভ কিছু হবে না। কারণ কোরানের অংশগুলো ধর্মগ্রন্হএর হিসাবে মাফ পেয়ে যাচ্ছে।
সূত্র ১:
সূত্র ২:
@হোরাস,
এগুলি কিছু উদাহরন পরে আসবে সমস্যাটি যে আমাদের দেশ স্পেসিফিক নয় তা দেখাতে।
যেকোন ধর্মবিশ্বাস অপর জাতিকে ঘৃনা করার শিক্ষা প্রচার করলে সেটাকে ধর্মবিশ্বাস বলে খাতির করার কোন হেতু নেই।
(Y)
অনেকদিন পর লেখা দিলেন!
খুব ভালো কাজ করেছেন ধর্মশিক্ষার বইটা ঘেটে। খুবই খারাপ লেগেছে “ইসলামের চিরশত্রু কাফের, মুশরিক, ইয়াহুদী—- যুদ্ধ করাকে প্রকাশ্যে জিহাদ বলা যায়।” এই বাক্য কয়টিতে। এরকম স্পষ্ট ঘৃনা আর ভায়োলেন্স এর ইন্ধন দেয়া কিভাবে সরকারী টেক্সটবুকে থাকতে পারে?
আসলে মৌলবাদীদের সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্য হলো এদের মধ্যে বিন্দুমাত্র সেলফ এওয়ারনেস নেই আর মানুষের সামাজিক নৈতিকতার মূল ভিত্তি গোল্ডেন রুল তারা মানতে চায় না। অন্যের প্রতি তুমি সেই আচরন করবে যেরকম তুমি তাদের কাছে প্রত্যাশা করো। আজকে যদি ভারতের টেক্সটবুকে এরকম লেখা হতো “মুসলমানরা ভারত ও হিন্দুধর্মের চিরশত্রু। মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হিন্দুদের মৌলিক কর্তব্য”,
তাহলে আমাদের মুসলমান ভাইদের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যেতো।
চুপ করে থাকার সময় আর নেই। আমি নিজে মনে করি যে মুসলমানদের নিজেদের স্বার্থেই তাদের অযৌক্তিক বিশ্বাস ও আচড়নের উপরে পৌনপুনিক আঘাত আসা দরকার। বাংলাদেশের সরকারী টেক্সটবুকে এরকম একটা লাইন আছে এটা বিশ্বের কাছে জানানো দরকার। বিশেষ করে আমাদের এক্সপোর্ট আয়ের উৎস দেশগুলোতে। এরকম একটা ক্যাম্পেইন শুরু করা প্রয়োজন, খামোকা নিজেদের ফোরামে কথা বলে আর লাভ নেই।
@সফিক,
আমি নিজেও প্রথম যখন সরাসরি বিধর্মীদের বিরুদ্ধে এমন ঢালাও জেহাদি শিক্ষা সরকারী টেক্সট বুক বইতে দেখি রীতিমত চমকে গেছিলাম। দেশে তো সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ এসবের প্রতিবাদে কথা বলার লোক একেবারে কম নেই। এত বছরে কেউ এ নিয়ে টূঁ শব্দ করেন না ঘটনা কি? ঘটনা সম্ভবত এই যে এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে এক পর্যায়ে সরাসরি মূল যায়গায় হাত দিতে হবে। সেটা কে করতে যায়? তার চাইতে নিজেদের ভবিষ্যত প্রজন্মের মাথায় বিষের থলি প্রবেশ করানো অনেক নিরাপদ। আফটার অল মূলধারার সকলেঈ তো সংখ্যাগুরু।
ধর্মপ্রেমিকদের দায় এড়ানোর ক্ষমতা ঈর্ষনীয়। তাদের বোঝার সুবিধের জন্যই আমি হাইপোথিটিক্যাল একটি উদাহরন দিয়েছিঃ
এবার ধরা যাক, হিন্দু ধর্মের ছেলেমেয়েদের ধর্মশিক্ষা বই খুলে পাওয়া গেল; “যারা ৩৩ কোটি দেবদেবীতে বিশ্বাস করে না তারা সব নরাধম (নরাধম কিন্তু গালি নয়, যেহেতু দেবদেবীদের চোখে এরা অতি ঘৃনিত তাই নরাধম),অকৃতজ্ঞ, অবাধ্য ও বিরোধী, নাফরমান, হতাশ, দুনিয়ায় এদের কোন মর্যাদা নাই পরকালেও তারা অন্ততকাল পূন্যম নরকে জ্বলে ছাই হবে। সুন্নতি কায়দার টুপি, দাঁড়ি, চোখে সুরমা দেওয়া,বোরখা/হিজাব পরিধান হল চির ঘৃনিত নরাধমদের বৈশিষ্ট্য।”এরপর ধরেন, “একশ্বেরবাদীরা তাদের ধর্মের জন্মলগ্ন থেকেই হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত বহু কোটি মানুষের অতি আবেগের ৩৩ কোটি দেবদেবী আদিষ্ট মহান পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাস বাতিলের জন্য প্রকাশ্যে আহবান জানিয়ে আসছে, এমনকি দেশে দেশে মহান পবিত্র দেবদেবীর মূর্তি ভাংগায়ও লিপ্ত আছে। কাজেই পৌত্তলিকদের চিরশত্রু একশ্বেরবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে প্রকাশ্য জিহাদ বলা হয়। ৩৩ কোটি দেবদেবী একশ্বেরবাদীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার ও কঠোর হবার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন।“ – এই কথাগুলিকে নির্দোষ ধর্মীয় বিশ্বাসের আওতায় কোনভাবে ফেলা যাবে? কোনভাবে কথার মারপ্যাঁচে কিংবা নানান ভুজং ভাজং দিয়ে প্রমান করার উপায় আছে যে ধর্মশিক্ষার আড়ালে এসব বিশুদ্ধ সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়?
দেশের লোকে নীরব থেলে ক্ষতি করছে আসলে নিজেদেরই, কাফের নাছারার কিছুই হচ্ছে না। ‘৭১ সালের ঘটনা চোখের সামনে দেখেছে, পাকিস্তানের বর্তমান পরিনতি দেখেও যদি সতর্ক না হয় তবে আর কিসে হবে কে জানে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
@আদিল মাহমুদ,আমরা নিজেরা কথা বলে কোনো পরিবর্তন হবে না। দেশের ৯৯% শিক্ষিত লোক মুক্তমনার মতো ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলে এখানে ঢুকলে মাথা নষ্ট হয়ে যাবে এই ভয়ে। আমাদের টেক্সটবুকে এভাবে স্পষ্টভাবে ঘৃনা আর ভায়োলেন্স এর ইন্ধন দিচ্ছে এটা দেশের মানুষকে জানানো দরকার। কিভাবে এটা সম্ভব এ সম্পর্কে কোনো আইডিয়া?
@সফিক,
আমি যতটা বুঝি প্রথম পদক্ষেপ লোককে বোঝানো যে ধর্মের নামে অনেক কিছুই তাদের অকপটে হজম করানো হয় যেগুলি রাবিশ ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ন। আপনার কি মনে হয় যে ধর্মগ্রন্থের আলোচিত এই অংশগুলি বিগত ১৬ বছরে কোন বিবেকবান লোকজন দেখেননি? সে সম্ভাবনা শূন্য।
দেখার পরেও কেন কেউ এত বছরে টূঁ শব্দটিও করছেন না? – এখানেই হল সমস্যার প্রাথমিক ধাপ। দেশের অধিকাংশ লোকের কাছে তাদের ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে এসব উগ্র প্রচারনা খুবই স্বাভাবিক, তারা এগুলির মাঝে যে আপত্তিকর বা ক্ষতিকর কিছু আছে সেটাই অধিকাংশ সময়ে বোঝে না। কারন তারা নিজেরাও ছেলেবেলা থেকে সেভাবেই সংস্কৃতিগত ভাবে শেপড হয়ে এসেছে। এ দেশে মোল্লা আলেম সমাজের সংস্পর্শে এসেছে, নানান ধর্মীয় জলসা/ওয়াজ মাহফিল এসবে শরিক হয়েছে অথচ বিভিন্ন মাত্রায় এ জাতীয় উগ্র জেহাদি হুংকার নানান রূপে শোনেননি এমন বান্দা কয়জন আছেন? সাধারন ধার্মিক মানসে এসবের মাঝে তেমন অস্বাভাবিকত্ব নেই, তারা নিজেরা ধর্মের তেমন কিছুই জানে না, ধর্মগুরুদের ধরে নেয় ধর্ম প্রফেশনাল। প্রফেশনাল যা শেখাবে তাইই তারা জানবে।
লোকজনকে প্রথম বোঝাতে হবে যে এ ধরনের উগ্র মানবতা বিরোধী শিক্ষা ইহকালে ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছু আনে না। নিজেদের ছেলেমেয়েদের সাম্প্রদায়িকতার বিষ্ময় জগতে প্রবেশ করানো নিজেদের পংগু বানানো ছাড়া আর কিছু নয়। পরকালেও আল্লাহ/গড গোছের কেউ থেকে থাকলে তিনি মানুষকে বিচার করবেন তার কর্ম দিয়ে, কে উত্তরাধিকারসূত্রে কোন ধর্মের নাম বহন করছিল সেটা দিয়ে নয়।
এটা নিজেদের লোকদেরই বোঝানো না গেলে পরবর্তি আর কোন পদক্ষেপ কাজে আসবে না।
@আদিল মাহমুদ,আমি জানি আপনিও জানেন যে ৯৯.৯৯% মুসলমান ইসলাম ধর্মকে পুরোপুরি সিরিয়াসলি নেয় না। তারা যদি তা নিতো তবে দিনরাত জায়নামাজের উপর উপুড় হয়ে থর থর করে কাপতো।
মানুষের মনে কগনিটিভ ডিসোনেন্স নরম্যালাইজেশনের এর অপূর্ব ক্ষমতা রয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষিত মুসলিম জানে কোরান-হাদিসে অনেক বিতর্কিত কথা বার্তা আছে। এর কোরান হাদিসে এসব ঘৃনা-বিদ্বেষপূর্ন কথা পড়েছে এবং তা ঠিকই কনভিনিয়েন্টলি ভুলে গেছে কিংবা মগজের কোনো পেছনের ছোট কুঠরীতে ফেলে রেখেছে। দেখেন কয় জন মুসলিম কোরান অর্থ সহ পড়তে যায়? যেখানে কোরান পড়লে কোটি কোটি বছরের পুরষ্কার সেটা ফেলে হুমায়ুন আহমেদ নিয়ে কেনো বসে? মুসলমানদের তো উচিৎ ছিলো প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা কোরান নিয়ে বসা। অবচেতন মনে অধিকাংশ শিক্ষিত মুসলিম জানে কোরান একটি ভীতিকর বই। এটা পড়ে মনে শান্তি আসা তো দূরের কথা অনেক অস্বস্থির উদ্রেক হবে। আর হাদিস নিয়ে তো কথাই নেই। হাদিস নিয়ে বসলে যে কোন বিবেকবান মানুষের মনে তীব্র বিকর্ষন হবে। ৯৯% মুসলিমকে পয়সা দিয়ে হাদিস পড়তে বললেও কিছুদুর পড়েই পালাবে।
আসলে অধিকাংশ শিক্ষিত মুসলিম জানে ধর্মশিক্ষায় বিতর্কিত কথা থাকার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এগুলো তারা কনভিনয়েন্টলি অবচেতনেই রেখে দেয়। এসবই হলো কগনিটিভ ডিসোনেন্স নরম্যালাইজেশনের ফল। এই রকম নরম্যালাইজেশন প্রতিটি মানুষ প্রতিদিন করছে।
আমার মনে হয় যখন বাইরে থেকে কেউ এই গোপন ডার্টি লন্ড্রীর উপরে টর্চ ফেলে তখনই কিছু মুসলমান নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য হয়। এই কারনেই আমি মনে করি বাইরে থেকেই পৌনপুনিক আঘাত আসা প্রয়োজন।
@সফিক,
একমত। কগনিটিভ ডিসোনেন্স নরম্যালাইজেশনের ক্ষমতা যে কোন প্রথাগত ধর্ম ফলো করে দাবীদারদের সকলেরই থাকতে হবে। নইলে ঈশ্বর বিশ্বাস হয়ত থাকবে, তবে কোন ধর্মগ্রন্থে আপত্তিকর বা অচল/আজগুবি কোন উপাদান নেই এমন দাবী আঁকড়ে বসে থাকা সম্ভব নয়। ইসলাম তো ইসলাম, হিন্দু ধর্ম এ যুগে নইলে কারো আঁকড়ে বসে থাকা সম্ভব নয়।
অবশ্য কেউ যদি সরাসরি সীমাবদ্ধতা মেনে বর্জনীয় অংশ বাদ দিতে পারে তার কথা আলাদা। ইসলাম ধর্মে মুশকিল হল এর কোন অপশন নেই, এখানেই মৌলবাদী থেকে শুরু করে সাধারন মুসলমান যে জুমার নামাজেও মসজিদ মাড়ায় না সেও ধরা। কোরানেরই একটি আয়াত আছে যাতে আল্লাহ কোরানের কোন অংশ ইচ্ছেমত গ্রহন অপর অংশ বর্জন এমন প্রবনতার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন (2-85-86), কাজেই কোরানের এক আয়াতও না মানা মানে ইহকালে লাঞ্জনা এবং পরকালে ভয়াবহ শাস্তি যা লাঘব করা হবে না বলে আল্লাহই ঘোষনা দিয়েছেন। আমি ব্লগের বাঘা একজন ইসলামিষ্ট ভাইকে প্রশ্ন করেছিলাম যে এ আয়াত অনুসারে কি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমানই কোরান অস্বীকারকারি হয় না? বলাই বাহুল্য এর সোজা দেওয়া ওনার বা তেমন কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। নিজে সহ সব মুসলমান আসলে জেনে শুনে কোরান মানে না এটা কিভাবে স্বীকার করা যায়? তবে কোন ভাবে মনকে প্রবোধ দেওয়া গেলেও সত্যটা যেহেতু মনে মনে ভালই জানেন কাজেই এ ধরনের কূটপ্রশ্ন যারা করে তাদেরকে মনে হয় শয়তানের অবতার, ভয়াবহ সব ইসলাম বিদ্বেষী। ওনাদের প্রিয় সাইটে মাঝে মাঝে দেখি এক ভদ্রলোক কোরান বয়ানের ওপর সিরিজ লেখেন যাতে হিট/মন্তব্যর পরিমান অতি নগন্য। কোরান আসলেই এত গুরুত্বপূর্ন মনে করলে এটা কিভাবে সম্ভব? কোরানের আয়াত দিয়ে বয়ান হয় যে মুসলমানের জন্য খ্রীষ্টান/ইহুদীকে অভিবাবক মানা নিষিদ্ধ, অথচ আমেরিকায় ইমিগ্র্যান্ট ভদ্রলোক এসব ব্যাখ্যাতেও সাবাশি দিয়ে যান। নিজে যে সাবাশি দেওয়া আয়াত মোটা দাগে মানেননি সেটা ঈমান্দার দিলে প্রবেশ করে না। যারা কোরান নিয়মিত পড়েও তারাও অধিকাংশই বিরাট জ্ঞানার্জন বা জীবন পদ্ধুতি শেখার জন্য পড়ে না, পড়ে পরকালে সোয়াব পাওয়া যাবে কিংবা শাস্তি থেকে বাঁচা যাবে এই আশায়, কোরান প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ আয়াত পড়া নাকি ফরজ (সত্যতা জানি না), কোরান না পড়ে তাকে ফেলে রাখলে নাকি গুনাহ হয় এই জাতীয় দর্শনের কারনে।
মোদ্দা কথা হল ধার্মিক মানুষ সরাসরি কোরান হাদিস পড়েও যখন দেখে যে বেশ কিছু বিষয় আছে যা স্বাভাবিক বিবেক মানতে বলে না তখন সে আশ্রয় নেয় আত্মপ্রবঞ্চনার; আমার ধর্মীয় জ্ঞান কম, আরবী জানি না তাই হয়ত বুঝছি না……জাকির নায়েক জাতীয় বিশিষ্ট আলেম মোল্লার শরনাপন্ন হওয়া যারা তাকে ধানাই পানাই করে বুঝ দিয়ে দিতে পারে, বুঝদার দিল তাতে বুঝেও যায়। নইলে ইসলামী দাসপ্রথা সে যুগের তুলনায় যত উন্নতমানেরই হোক সেটা ইউএন চার্টার থেকে উন্নতমানের ছিল এমন বক্তব্য কিভাবে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন লোকের পক্ষেও মেনে নিয়ে ঘাড় নাড়ানো সম্ভব?
বাংলাদেশসহ (আমার ফোকাস আপাতত বাংলাদেশ) অধিকাংশ মুসলমানই বোঝে না এই দ্বি-চারিতা পোষন ও প্রতিফলনের ফলে আসল ক্ষতিটা কার হচ্ছে। সেই ক্ষতিকর দিকটা মনে হয় চোখে আংগুল দিয়ে বোঝানো প্রথম কাজ। এই কাজটাও মোটেও এত সরল নয়। উদাহরন দেই। আজকাল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নুতন প্রজন্মের ছেলেমেয়ে দারুন ভাবে উজ্জীবিত হচ্ছে। এরা স্বাভাবিকভাবেই মৌলবাদ মোল্লাতন্ত্র বিরোধী, দেখে খুব আশা জাগে যাক আমরা না পারলে কি হবে আগামি দিনের প্রজন্ম নিশ্চয়ই পারবে। ব্লগে ব্লগে এরা ছাগু বিতাড়ক হিসেবে প্রসংশনীয়ভাবে সক্রিয়। কেউ পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থন করলেও এরা ঝাপিয়ে পড়ে, পাকিস্তানীদের ভাই ডাকলে আর কথাই নেই…মুশকিল হল এদের মধ্যেও বেশীরভাগ লোকে যে শিক্ষা বা মূল্যবোধ বাংগালীকে পাকিস্তানীদের ভাই ডাকতে উজ্জীবিত করে সেই শিক্ষা বা মূল্যবোধের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলার মত গাটস নেই। তখন উলটো শোনায় ‘কিছু লোকে টাকা পয়সা ক্ষমতার লোভে রাজাকার হয়’। হিল্লা বিয়ে ইসলাম সম্মত এটাও বিশ্বাস করে না, এটা নাকি কিছু গ্রাম্য মোল্লার মনগড়া ফতোয়া, ইসলামের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। আমি মুসললিম আইনের সরাসরি কোট করেও বোঝাতে ব্যার্থ হই যে এটা গ্রাম্য মোল্লাদের মনগড়া আবিষ্কার নয়। ধার্মিক মন আগে থেকেই সে যা বিশ্বাস করতে চায় তা খোঁজে।
মানসিক আঘাত অবশ্যই দরকার, তবে আমার মতে আঘাতটার লাইন এমন হওয়া দরকার যাতে কুফল চোখে আংগুল দিয়ে দেখানো যায়। আমি সেজন্য নবী রসূলের কাজ কারবার, কোরানে বিজ্ঞান নেই, এই ধরনের তত্ত্বীয় ব্যাপার সরাসরি তেমন টানি না, এসব আসতে পারে সহায়ক হিসেবে। মূল ফোকাস হওয়া উচিত ক্ষতিকর দিকের প্রভাব চোখে আংগুল দিয়ে দেখানো, যে কাজটা করার চেষ্টা করছি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
@আদিল মাহমুদ, আরব দেশগুলোর টেক্সটবই গুলোতে বিধর্মীদের ঘৃনা করা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রায়ই পশ্চিমা মিডিয়াতে আসে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সৌদী আরবের মতো দেশেও সরকার অনেক পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে কিংবা এটলিস্ট মিন মিন করে পরিবর্তন করবো বলে আশ্বাস দিয়েছে। আমি মনে করি বাইরে থেকে আলো না ফেললে এই ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। আজকেই দেখুন একটা নিউজ
http://www.thedailybeast.com/articles/2012/10/17/saudi-textbooks-incite-hate-say-leaders-in-american-publishing.html
এখানে দেখুন আপত্তিকর অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে
“The Jews and the Christians are enemies of the believers, and they cannot approve of Muslims.” An eighth-grade textbook says, “The Apes are the people of the Sabbath, the Jews; and the Swine are the infidels of the communion of Jesus, the Christians.” These are just two examples of a long list of hate-filled passages.
আপনি বাংলাদেশের যে টেক্সটবই টাতে যে অংশগুলো দেখিয়েছেন সেখানে এর চেয়ে কম বিতর্কিত কিছু নেই। আপনার যদি আপত্তি না থাকে তবে আমার মনে হয় বাংলাদেশের টেক্সটবই এর এই অংশগুলোর সংবাদ কয়েকটা জায়গায় পাঠানো দরকার। এমনিতেই চট্রগ্রামে বৌদ্ধদের উপরে হামলার কারনে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতা কিছুটা দুনিয়ার ফোকাসে আছে। আমাদের তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতার লীলাভূমি দেশে আসলে কি হচ্ছে এটা দেশের লোকদের দেখানোর জন্যেই বাইরে থেকে ফোকাস করা দরকার।
যেসব প্রতিষ্ঠান মুসলিম বিশ্বের এসব বিতর্কিত জিনিষ নিয়ে চিল্লাচিল্লি করে তাদের অনেকেই পরিষ্কার ভাবে মুসলিম বিদ্বেষী। কিন্তু তারা যে এফেক্টিভ এটা অস্বীকার করা যায় না। আমার মনে হয় কাটা দিয়ে কাটা সবচেয়ে ভালো ভাবে তোলা যায়।
@সফিক,
এই ব্যাপারগুলির কিছুটা সামনের পর্বে আসছে।
২০০১ এর ৯১১ এর পর থেকে জিহাদী শিক্ষার ব্যাপারে আমেরিকার টনক পড়ার পর তারা বন্ধু প্রতীম সৌদী সরকারকে তাদের সিলেবাস সংশোধন করে হেটফুল অংশগুলি বাদ দিতে বলে। সৌদী সরকার মূল অভিযোগ মেনে নিয়ে সন্মত হলেও তেমন কিছু সংশোধন করেনি, কেন কে জানে। হয়ত এসবের অনেক কিছুই ধর্মের মূলের সাথে সরাসরি জড়িত বলে তাদের মোল্লা আলেমরা বাদ দিতে রাজী নয়।
এতেও থেমে থাকলে না হয় হত। আরো মারাত্মক যা আমাকেও ভয় পাইয়েছে তা হল যে সৌদী সরকার, ইরান সরকার এরা এসব হেটফুল লেসন আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ডে তাদের অর্থায়নে পরিচালিত নানান ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারিকুলাম হিসেবে রফতানী করছে; আমে্রিকায় বসে ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রে মুসলমান ছেলেপিলে শিখছে খৃষ্টান/ইহুদীরা বানর ও শুকর তূল্য। এসব আলামত ভাল নয়। এনারা ঝাড়ে বংশে আরো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে পশ্চীমা টলারেন্সের সুযোগ নিয়ে পুরো সমাজই ডিজট্যাবিলাইজ করার পোটেনশিয়াল রাখে। সেটা হবার আগে এখানকার উগ্রবাদীরাও ছেড়ে দেবে না, ফলে ব্যাপক গোলযোগের আশংকা আছে।
বাংলাদেশের টেক্সট বই এ আজ ১৬ বছর এইসব আবর্জনা ছেলেপিলেকে শেখানো হচ্ছে অথচ কোন মহল থেকে কোন রকমের প্রতিবাদ নেই, ভাব সাবে মনে হয় যে এটা কোন ব্যাপারই নয়। জানি না, সকলেই কি একই সাথে নির্বোধ হয়ে গেছে কিনা। জাফর ইকবাল জাতীয় লোকজন তো কম হলেও কিছু আছেন, ওনারা শিক্ষা ব্যাবস্থার সাথেও জড়িত। ওনারা সামান্য সত সাহস না দেখাতে পারেন না?
সেই লেখার অংশ অন্য কোথাও কেউ ছাপালে আমার কোন আপত্তি নেই। কাজটা গাদ্দারি মার্কা হলেও এর দরকার আছে। আসলেই ১৬ বছরে যখন দেশের লোক বিনা প্রতিবাদে হজম করছে তখন মনে হয় বাইরে থেকে গুতো না খেলে হবে না।
কে বিদ্বেষী কে কি এসব প্রশ্ন আসলে অবান্তর, বড়জোর সেকেন্ডারী। কি তথ্য দিচ্ছে, তাতে কতটা সত্যতা আছে সেটাই হল কথা। সঠিক তথ্য দিলে বিদ্বেষী আর প্রেমিতে কি আসে যায়। আমি বিদ্বেষী বলব তখনই যখন দেখব জ্বলজ্যান্ত মিথ্যা কথা বলছে। পশ্চীমা দেশগুলিতে ইসলামকে থ্রেট হিসেবে কেউ দেখা শুরু করলে তাকে কতটা দোষ দেওয়া যায় তাতে ভাবার আছে, থ্যাংক্স টু সৌদী সরকার, আবদুর রহিম গ্রীন, আনজেম চৌধূরী জাতের মোল্লা আলেম এবং তাদের ব্রেইন চাইল্ড জেহাদী ভাইরা। বিশেষ করে তাদের কাছে যখন একদিকে শান্তির ধর্ম, লাকুম দ্বিনুকুম বানী, আরেক দিকে যুগ যুগ ধরে হেটফুল জেহাদী ইন্টারপ্রেটশন একাডেমিক পর্যায়ে চর্চার ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড সংস্কৃতি পরিষ্কার হবে তখন আসলেই বিদ্বেষী হয়ে উঠবে।
@আদিল মাহমুদ,
আপনি খুবই সঠিক কথা বলেছেন।এখানে আমি দেখছি যে দুই ধরনের লেখক আছেন। প্রথম দল এই ব্যাপারটা অনুভব করে, আর ২য় দল সেটা না করেই একটু বেশিই সোজাসাপ্টা কথা বলে ফেলেন, যা অনেক সময়ে না বলাটাই ভাল।এ ব্যাপারে তাঁদের আরো সহনশীল হতে হবে। “সত্য কথা বলছি” এই অজুহাতে যদি প্রথম থেকেই মানুষজনের ইগোতে আঘাত দিতে শুরু করেন( কিছু লেখক) তবে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনাই বেশি। কাজেই এই ব্যপারটা অন্যরাও যদি বোঝেন আর অনুভব করেন ,তাহলেই মানুষের ভুল বোঝার পরিমানটা কমে যাবে, এবং তাদের কনভিন্স করা সহজতর হবে।
ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ ধর্ম শিক্ষার একটি অবধারিত ফলাফল।
আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলে মুখে ফেনা তুলি যদিও ধর্মীয় অনাচারের সময় আমরা জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ধর্মীয় বিশ্বাসেরই পুরহিত্ব করি। তখন আমরা দুর্বৃত্তপনাকে মানবিকভাবে না দেখে দেখি সাম্প্রদায়িকভাবে। ধর্ম আসলেই শক্তিশালী আফিম। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর লিখার জন্য।
——————————
@জটিল বাক্য,
মুশকিল হল আমরা অনেক সময় জানি না যে আমরা নিজেরা সাম্প্রদায়িক। যে লোক হয়ত হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করে সে দেখা যাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে কঠোর জাতীয়তাবাদী।
ধর্ম আসলেই শক্তিশালী আফিম। আমি যদি সাধারনভাবে বলি বিধর্মীদের বিরুদ্ধে লড়াই করা আমার দায়িত্ব তবে আমি সাম্প্রদায়িক, কিন্তু ধর্মগ্রন্থের সিল মেরে একই কথা প্রচার করলে সেটা ধর্মবিশ্বাস।
এই লেখা পড়ে শুধু আদিল মাহমুদ কে ধন্যবাদ জানানোর জন্য অনেক দিন পর মুক্তমনায় এলাম।
@ফরহাদ,
আপনাকেও ধন্যবাদ, অনেকদিন পর দেখা হল। আজকাল তো দেখি না।
ইতোমধ্যে আমরা মুশরিকদের ১২ মন্দিরসহ ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছি রামুতে।– ইসলাম এট ইটস বেস্ট।
ধর্ম বইয়ের যেসব উদাহরণ দিলেন- এটাই তো সত্য ইসলাম ধর্ম।
@বকলম,
সেটা সত্য ইসলাম হলে কেন অনেকে সরাসরি বলেন না সেটাই তো বুঝি না। বাধ্যতামূলক শিক্ষার বই আকারে প্রকাশ করে লাখ লাখ ছেলেপিলের মাথা বছরের পর বছর নষ্ট করা প্রকৃত ইসলাম যারা মনে করেন তাদের সাথে আমার কোন বিরোধ নেই।
তবে যারা দাবী করেন যে এসব ইসলামে আসলেই নেই তাদের চিন্তা করা দরকার ভুল ইসলাম কিভাবে ও কেন তারা যুগ যুগ ধরে শিখিয়ে যাচ্ছেন।
@আদিল মাহমুদ,
এ তো সুস্পষ্ট আওয়ামী লীগ আর ইসলামের বিরোদ্ধে সুক্ষ্ণ ষঢ়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। পল্টন ময়দানে মোবাহিলার আয়োজন করা হউক, শেখ হাসিনা বনাম আদিল মাহমুদ।
[img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/untitled6uj46.jpg[/img]
@আকাশ মালিক,
বিনানুমতিতে আমার ছবি বার করে কাজটা ঠিক করেননি।
অবস্থা আসলে তেমনই দাঁড়াচ্ছে। ‘৯৬ সালের নির্বাচনের আগে কালো হিজাব পরে তসবিহ হাতের নুরানী ছবি দিয়ে শুরু………আমাদের অগতির গতি, সেক্যুলার আওয়ামী লীগের নেত্রী এখন বিধর্মীদের কিভাবে ইসলামের ছায়াতলে আনা যায় সে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিন্তাভাবনায় নিমগ্ন আছেন। মনে হয় দেশে সংখ্যালঘুদের হার এখনো শূন্য হয়নি কেন এটা তাকেও পীড়া দেয়। বড় বড় আলেম ওলামাদের যে ৪০ বছর আগের কোন কি কারনে জেল জুলুম করে অত্যাচার ইসলামের ক্ষতিই করছে এটাও কোনদিন বুঝে যান এই আশংকাও এখন হয়।
মূল্যবান একটি লেখা। ধন্যবাদ।
@মোল্লা ভাই,
অনেকদিন পর দেখা হল। আপনি কি আগেও এখানে এসেছিলেন নাকি?
@আদিল মাহমুদ, মাঝে মধ্যে ঢুঁ মারি। আগের জায়গা থেকে বেশির ভাগ চেনা-জানা লোক ফেসবুকসহ অন্যত্র হিজরত করেছে, তাই এদিক-ওদিক কিছু সময় কাটাই।
@কাঠ মোল্লা,
🙂
এদিক সেদিকের মধ্যে এদিকে একটু সময় বেশী দেন, সকলেই উপকৃত হই। এই যায়গা মাঝে মাঝে বড় বেশী রসকস হীন মনে হয়।
ভাইজান,
আপনি যে কি সব লিখলেন মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। কোরান হাদিসে যে ভাবে বলা আছে ঠিক সেভাবেই তো ইসলামি শিক্ষা কিতাবগুলো লেখা। আমি তো কোন ভুল ভ্রান্তি কিছু দেখলাম না।
কোরান হাদিস বার বার বলেছে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে , তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহন না করতে- ইসলামি কিতাবে সেসবই সুন্দরভাবে বর্ণিত আছে , এখানে সমস্যাটা কোথায় ? এছাড়াও কোরান হাদিস বলেছে- অমুসলিমরা হলো নিকৃষ্ট জীব, ইদুর বানরের সমতূল্য, ইসলামি কিতাবে সেটাই বলা আছে, তাহলে?
আপনি কি ভাইজান ইসলামের নতুন সংস্করন চালু করতে চাইছেন ? কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। মহানবী বলে গেছেন- আমি দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তার অর্থ অত:পর তার বিধি বিধানের কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন করা যাবে না , তার দ্বীনি ব্যবস্থা চলবে কেয়ামত পর্যন্ত।
@ভবঘুরে,
আপনি মনে হয় বুঝতে ভূল করেছেন আমার মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে। আমি ধর্ম সমালোচনা কিংবা ধর্ম ডিফেন্ড কোনটাই করতে বসিনি। এটা কিন্তু আমি লেখায় উল্লেখ করেছি।
আমার মূল বিষয় হল ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে কেমন করে এক রকমের বিনা প্রতিরোধে, নানান ভয়াবহ রকমের অশিক্ষা কুশিক্ষার বিষবাষ্পে জাতিকে যুগ যুগ ধরে কলুষিত করা হচ্ছে সেটা আলোচনা করা। সাম্প্রদায়িকতা সেসব কুশিক্ষার কেবল এক অধ্যায়, এ ধারাতেই নারী অধিকারও আলোচনা করা যায়। বলাই বাহুল্য এসব আলোচনায় বহু কথা লিখতে হয়, ইচ্ছে করেও সাইজ কমাতে পারছি না।
ধর্ম (এখানে ইসলাম) যারা ডিডেন্ড করেন তারা দাবী করেন (কোরান হাদিসের রেফারেন্স সহ) যে আসলে প্রকৃত ইসলামে সাম্প্রদায়িকতা, নারী অধিকার ঘটিত সমস্যা এসব কিছুই নেই। মুশকিল হল তারা যাদের বড় বড় আলেম বুজুর্গ মানেন তাদের ধর্ম সম্পর্কিত নানান ব্যাখ্যা, ঈমান গঠনকারি বই পুস্তক পড়লে দেখা যায় উলটা। এই কন্ট্রাডিকশন কেন সেটা ফোকাস করাই আমার মূল লক্ষ্য, সে হিসেবে ধর্মগ্রন্থের আলোচনা কিছুটা আসবেই। ইসলাম ধর্মে আসলেই সাম্প্রদায়িকতা, নারী অধিকার সংক্রান্ত নানান সমস্যা এসব না থাকলে যেসব আলেম মোল্লা ভুল ইসলাম শিক্ষা দিয়ে চলেছেন বছরের পর বছর তাদের শিক্ষা কেন বাতিল বা ভুল বলে ধর্ম ডিফেন্ডারগন একটি লাইনও লেখেন না উলটা পরম শ্রদ্ধা করেন, ভুল শিক্ষার বই পুস্তক যাবতীয় ইসলামী সাইটে পরম যত্নের সাথে প্রচারিত হয় সে বিষয়টা আলোকপাত করলে কন্ট্রাডিকশনটা বোঝা যেতে পারে। ইসলামের নামে যুগ যুগ ধরে কিভাবে অশিক্ষা কুশিক্ষা প্রচারিত হয়ে মানুষের স্বাভাবিক বিবেকবোধের পথ রুদ্ধ করছে সেটার মূল আছে এখানেই, এখন সেগুলি আসলেই ইসলাম সিদ্ধ কিনা সেটা বিচারের দায় আমার নয়, ইসলামের প্রতি যাদের দরদ আছে তাদের।
আমার দৃঢ়বিশ্বাস আমি কতটা ইসলাম বিদ্বেষী সে গবেষনা বাদ রেখে এসব নির্জলা সত্য একটু নিরপেক্ষ মনে চিন্তা করলে উদারমনা ধার্মিকরাও উপকৃত হবেন, বিশেষ করে যারা আসলেই বিশ্বাস করেন যে তাদের ধর্মে কোন সমস্যা নেই, কেবল কিছু অশিক্ষিত কাঠমোল্লা (নীচের কাঠমোল্লা নন) আর ধর্মব্যাবসায়ীরা ধর্মের নামে অধর্ম ছড়াচ্ছে তারা। আর যাদের নীতি হল কোরানে বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ আছে এটা আদিল বললে সে বিরাট বদমায়েশ কাফের নাছারার টাকায় জীবিকার্জন করে, কিন্তু নিজেদের প্রিয় আলেম বুজুর্গরা একই ধরনের কথা বললে তাদের সাবাশি দেওয়া তাদের জন্য অবশ্যই এই লেখা নয়। এমন উদাহরন আছে।
– ধর্ম ডিফেন্ডার ভাইরা তো এসব মোটেও মানেন না, উলটা অভিযোগকারীদের ইসলাম বিদ্বেষী থেকে শুরু করেন নানান মধুর অভিধায় সিক্ত করেন। পরের পর্বে কিছুটা উদাহরন আমরা দেখব, সাথে তূলনা করব সুপার হাই-প্রোফাইল আলেম ওলামাদের সংশ্লিষ্ট বক্তব্য। এসব বিশিষ্ট আলেম ওলামাগন কিভাবে ভুল ইসলাম শিক্ষা দিয়ে অতি সম্মানিত আর আমি ঘৃনিত এই প্রশ্নের জবাব মনে হয় এক আল্লাহই জানেন।
@আদিল মাহমুদ,
না ভাই আপনার লেখার প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছি তবে আপনি ইসলামিষ্টদের কৌশল হয়ত বুঝতে ভুল করেছেন। ইসলামে একটা অনুমোদিত প্রথা আছে তাকিয়া( taqya)। এ তাকিয়া হলো – আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করার জন্য সকল রকম মিথ্যা কথা বলা বা প্রতারনা করা বৈধ। স্বয়ং নবীও এটার চর্চা করে গেছেন ও তার অনুসারীদেরকে পালন করতে বলে গেছেন। তাই স্কুল লেভেলে যখন কচি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা দেয়া হয় তখন তাতে সঠিক ইসলামই শিক্ষা দেয় কিন্তু বাস্তবে যখন প্রচার প্রচারনা করা হয় তখন অনেকগুলো ফ্যক্টর কাজ করে। দেশীয় শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মনোভাব, সংখ্যালঘিষ্ঠ মানুষদের মনোভাব, গণতন্ত্র ইত্যাদি একটা ফ্যক্টর হিসাবে কাজ করে আর তখনই শুরু হয় তাকিয়ার প্রয়োগ। তখনই জিহাদ হয়ে যায় শুধুমাত্র আত্মশুদ্ধির যুদ্ধ, ইসলাম হয়ে যায় চুড়ান্ত শান্তির ধর্ম, ইসলাম হয়ে যায় নারীদেরকে চুড়ান্ত রকম সব মর্যাদা দেয়ার একমাত্র ধর্ম ইত্যাদি। কিন্তু যারা প্রকৃতই ইসলাম পন্থী, তারা এসবের ধার ধারে না যেমন- বাংলা ভাই, আব্দুর রহমান, লাদেন, তালেবান এরা। এরা এসব তাকিয়ার ধার ধারে না, ইসলামকে সহজ ভাবেই বোঝে ও সেভাবেই প্রয়োগ করে। সমস্যা হয়েছে জাকির নায়েকদের মত তথাকথিত শিক্ষিত ধান্ধাবাজদের নিয়ে। এদের প্রভাবেই বাংলাদেশেও অনেক আলেম ওলামারা তাকিয়াকে আশ্রয় করে সমস্ত রকম মিথ্যাচার করে যায়, কোরানের অপব্যখ্যা করে, এমন কি কোরানের অর্থ পর্যন্ত পাল্টিয়ে ফেলছে ইদানিং।
আর দেশের সরকারের কি দোষ? সরকার যারা চালায় এরা কি মঙ্গল গ্রহ থেকে এসেছে নাকি ? এরা যতই নিজেদেরকে আধুনিক মনে করুক না কেন, মনে মনে ভীষণভাবে ইসলামী। তারা ঠিকই মরার পরে দোজখের ভয়ে ভীষণরকম ভীত যদিও তা থেকে বাঁচার জন্য যে সব কাজ করা দরকার তা তেমন একটা করে না- যে কারনে ঘুষ, দুর্নীতি তাদের প্রধান কাজ। তবে এসব কাজ যে গুনাহ তা তারা ঠিকই বোঝে , বোঝে বলেই কিন্তু তারা মসজিদ মাদ্রাসাতে বহু দান খয়রাত করে, কিন্তু তাদের ভোট দরকার, তাই মাদ্রাসা বা স্কুলে ধর্মের নামে কি পাঠ করানো হচ্ছে তা নিয়ে মাথাব্যথা খুবই কম। এরও যে মূল কারন তা হলো- তাদের নিজেদের ছেলে মেয়েরা এসবে পড়া শুনা করে না, সুতরাং এটা নিয়ে চিন্তারও কিছু নেই। বিষয়টা এতটাই সেন্সিটিভ যে এটা নিয়ে তারা টু শব্দ করতেও রাজী নয়।
@ভবঘুরে,
– ঘটনা তো আসলেই তাই। তাকিয়া বালিশ যাইই হোক সেটা সরাসরি স্বীকার করলেই তো হয়। তাহলে কে আর তাদের সাথে সময় নষ্ট করে তর্ক বিতর্ক করতে যায়? আগেই বলেছি, লাদেন, বাংলা ভাই, তালেবানদের সাথে আমার কোন বিতর্ক নেই, আমার লেখার টার্গেট গ্রুপ তারা নয়। তারা অন্তত যা বিশ্বাস করে মুখে তাই বলে, কাজেও করে দেখায় যদিও সমস্যা এই করে দেখানোতে। তাকিয়া বালিশ ওয়ালারা বিশ্বাস করে এক রকম, আর যায়গা বুঝে এক এক যায়গায় এক এক চেহারা দেখায়। এরা লাদেন গং থেকেও বেশী ক্ষতিকর।
(Y)
ধর্মবইয়ের সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে এরকম বিস্তারিত লেখা আগে পড়েছি বলে মনে পড়েনা। ইসলাম শিক্ষা বইয়ে জাহান্নাম নিয়ে যে বর্ণনা আছে সেটা ভয়াবহ রকমের অরুচিকর,শিশুদের বইয়ে কিভাবে এসব লেখা হয়? সাম্প্রদায়িকতার প্রথম ভিত তৈরি করে এই বইগুলো, এথেকেই শিশুরা মানুষকে “হিন্দু”,”মুসলিম” হিসাবে আলাদা করতে শেখে,সবাইকে মানুষ ভাবতে শিখেনা। বইগুলো খুবই দ্রুত সংস্কার করা দরকার কিন্তু কার ঘাড়ে ২টা মাথা আছে যে এই কাজ করবে?
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আমার মূল ফোকাস অবশ্যই বাংলাদেশ, তবে এই রোগ কম বেশী নানান মাত্রায় মুসলমান প্রধান সব দেশেই মনে হয় আছে। পাকিস্তানের কথা সামান্য বলেছি, আরো দুয়েকটা উদাহরহন প্রাসংগিক হিসেবে দেব যাতে বোঝা যাবে যে প্রবনতা কেবল বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।
পাকিস্তানেও নিশ্চয়ই সকলে সাম্প্রদায়িক তালেবান মানসিকতার নয়। সে দেশেও তালেবানী সমর্থন বড় আকারে থাকলেও এখনো উলটো ধারার লোকই সংখ্যার হিসেবে বেশী বলে আমি জানি। সংখ্যায় বেশী হলেও সূস্থ ধারার লোকেরাও সব ধর্মের প্রতি অবসেশনের কারনে সরাসরি প্রতিবাদী সময়মত হননি। আরো ঘাড়ের চিন্তা করেছেন। এর মাশুল দিতে হচ্ছে তাদের নিজেদেরই, কয় জেনারেশন দিতে হয় সেটা হল কথা। আমাদের দেশেও তাই, সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকে সূস্থ বিবেক যা করতে বলে তা সরাসরি করলে আমি বিশ্বাস করি না যে ঘাড় নামানো গ্রুপের বাবার ক্ষমতা ছিল কিছু করার। এই গ্রুপের শক্তি আসলে ঘাড় নামানোতে নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের ধর্মের প্রতি অবসেশন। সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রুপ মৌলবাদী বলে কিছু গাল দিলেও সেই মৌলবাদীদের কাছেই নিজের ছেলেমেয়ে পাঠাবে পরকালের পাথেয় জোগাড় করতে, নৈতিকতার পাঠ নিতে।
@রামগড়ুড়ের ছানা, সংস্কার না, পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। স্বর্গ-নরকের লোভ, ভয়ভীতি দেখিয়ে আর যাই হোক, নৈতিকতার পাঠদান চলে না। নৈতিকতা শিক্ষা দিতে চাইলে ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দিয়েও সেটা সম্ভব। আর ধর্মের মোড়কে নৈতিকতা শিক্ষার অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছি চোখের সামনে। যে জিনিসের নৈর্ব্যক্তিকতা নেই, বিভিন্ন ধর্ম, সংষ্কৃতিতে যার চিত্র একেক রকম (যেমন- খাদ্য, পোশাক-আশাক, শালীনতা ইত্যাদি) সেসব ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে নির্মোহভাবে শেখানো সম্ভব না। ভেবে দেখেন, ধর্ম বইতে কেবল নারী-পুরুষের পোশাকের ব্যাপারেই যা বলা হয়েছে, সেটা মেনে নিলে ছেলেদের ফুটবল বলেন আর মেয়েদের বিচ ভলিবল, সবই অনৈতিক অশ্লীল। সার্বজনীন নৈতিকতার পাঠ যেকোন ধর্ম-সংষ্কৃতি নির্বিশেষে একই হওয়া উচিত।
@অভিষেক,
একমত,আসলেই সংস্কার করে শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ হবেনা,তবে আমি এটা বলেছিলাম বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে। সংস্কার করা যেখানে দূরহ সেখানে বাতিল করাতো আরো দূরের ব্যাপার। তবে এটাও ঠিক সংস্কার করলেও সাম্প্রদায়িকতা থেকেই যাবে কারণ নরকের শাস্তি,অন্য ধর্মের অনুসারীদের পথভ্রষ্ট বলা ছাড়াতো ধর্ম প্রচার অসম্পূর্ণ! ধর্ম দিয়ে যে নৈতিক উন্নয়ন সম্ভবনা এই সত্যটা স্বীকার করে নেয়ার সময় এসেছে,সম্ভব যদি হতো তাহলে ধর্মের অনুসারী দেশগুলোতে এতো দুনম্বরী থাকতো না।
@অভিষেক,
আসলে সমস্যা হল ধর্মকে ধর্মের যা গন্ডি অর্থাৎ ব্যাক্তিগত বিশ্বাস যা মানসিক শান্তি আনয়নের কাজে সহায়ক হতে পারে সে গন্ডির বাইরে টেনে নিয়ে জীবন যাপনের একমাত্র ও নিখুত মাধ্যম বলে চিন্তা করলে। এখান থেকেই যাবতীয় সমস্যার শুরু। ধর্মগ্রন্থে বর্নিত যাবতীয় মূল্যবোধ/কালাকানুন সব যুগের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না, কাল হল পরিবর্তনশীল, ধর্মগ্রন্থের বিধান স্থিত। দুয়ের মিল যৌক্তিক কারনেই সম্ভব নয়। যেমন এখানে ইসলাম ধর্মের আলোচিত সাম্প্রদায়িকতা ইস্যু। কোরানের যেসব আয়াত কোট করে ধর্মশিক্ষক, মোল্লা আলেমগন সরাসরি অপর ধর্ম ঘৃনা করার সহজ পাঠ দিচ্ছেন সেসব আয়াত নাজিলের সময় চিন্তা করলেই বোঝা যায় কেন সেসব নাজিল হয়েছিল। কোন জাতির কে কয় হাজার বছর আগে কার নবীকে হত্যা করেছিল, কারা কাকে ইশ্বরপুত্র মনে করেছিল, কে কাকে কোন যায়গা থেকে বহিষ্কার করেছিল এসবের জের ধরে সেসব জাতির ৫০০ পুরুষ পরের প্রজন্মকে ঘৃনা করতে হবে এমন অসূস্থ চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া ধর্মগ্রন্থের সব বানী চিরকালের জন্য অবশ্য পালনীয় এই আজগুবি বিশ্বাস মাথা থেকে দূর করতে না পারলে কোনদিন সম্ভব নয়। যারা ধর্মগ্রন্থের বানী অস্বীকারও করতে পারেন না আবার সরাসরি সাম্প্রদায়িকতাও সমর্থন করতে পারেন না তাদের অবস্থা হয় ভূতে বিশ্বাস করি না তবে ভুতে ভয় পাই এই ধরনের।
ধর্মের সাথে কতটা আপোষ করা যায় সে নিয়ে তৈরী হয় মৌলবাদী, মডারেট নানান মাত্রার গ্রুপ। সবচেয়ে সহজ এবং নিরাপদ সমাধান ধর্মগ্রন্থের যে গন্ডি তাকে সেখানেই রাখা।